এক.
এই বছরের মার্চ মাসের উনিশ তারিখ আফগানিস্তানে এক মহিলাকে প্রকাশ্য দিবালোকে পিটিয়ে, পাথর মেরে হত্যা করা হয়েছে। মহিলাটির বিরুদ্ধে অ্যালিগেশান কোরআন পোড়ানো যদিও মৃত্যু নিশ্চিত হবার পর দেখা যায় কোরআন পড়ানোর মত কোন ঘটনাই সেখানে ঘটেনি।
এই খবরটি তখন আমাদের অনেকের নজরেই পড়েছে। আফগানিস্তানে এরকম অহরহই হয় চিন্তা করে নিয়ে আমরা খানিকটা আহত হলেও ব্যাপারটা নিয়ে তেমন একটা মাথা ঘামাইনি, যাচাই করিনি। এমনিতেই দেশের অবস্থা খারাপ, একের পর এক ব্লগারদের মৃত্যু এর মধ্যে এসব নিয়ে কথা বললে বিপদ হতে পারে। তাছাড়া আমাদের মাথা ঘামানোর মত অনেক অনেক ব্যাপার আছে- ক্রিকেট, ভারত-পাকিস্তান, রাজাকার, নির্বাচন… ইস্যুর তো আর অভাব নাই। কোথাকার কোন আফগান মহিলা কি না কি করেছে এসব নিয়ে এত মাথা ব্যাথা আমাদের নাই।
তবে আমার খানিক মাথা ব্যাথা করছে,
সত্যি করে বললে মাথা ছিঁড়ে যাচ্ছে ব্যাথায়…
কেন এত কিছু হচ্ছে সেটার একটা ব্যাখ্যা সম্ভবত আমি দিতে পারবো।
কোরান পোড়ানোর অভিযোগ এনে কাবুলে মারমুখী জনতা ফারকুন্দা নামে ২৭ বছরের যে যুবতীকে পিটিয়ে মেরে ফেলে সেই মহিলা আদতে কোরআন পোড়াননি এমনকি নাস্তিকও ছিলেন না বরং ধর্মীয় বিষয়ে বৈদগ্ধের অধিকারী ছিলেন বলেই জানা যায়। সত্যি খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে এলো সেই লালশালু। ফারকুন্দা যে এলাকার বাসিন্দা সেই এলাকার মসজিদের এক মোল্লার বিরাট ব্যাবসা পানি-পড়া আর তাবিজ-কবজের এবং সে স্থানীয় গরীব মহিলাদের এসব জিনিস কিনে নিতে বাধ্য করে। ফারকুন্দা সেই মোল্লার মুখোমুখি হয়ে তার এইসব কাজকর্মের প্রতিবাদ জানায়। তখন সেই মোল্লা এবং সাথের সমর্থক গোষ্ঠী ক্ষেপে ওঠে। ফারকুন্দাকে কাবুলের সবচেয়ে বিখ্যাত মসজিদের বাইরে একটি বাড়ির ছাদে মারধর করে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়, তাঁকে চাপা দিয়ে যায় একটি গাড়ি। প্রায় আধমরা অবস্থায় তাঁকে জ্বালিয়ে দেয় উন্মত্ত জনতা। তারপর তাঁকে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয় কাবুল নদীতে।
আচ্ছা আমাদের দেশের কোন ঘটনার সাথে মিল পাচ্ছেন কি?
আসুন দেখি তার মৃত্যুর পরবর্তী অধ্যায়।
মেয়েটির বাবা এরপর সংবাদ মাধ্যমে জানায় “ফারকুন্দা ছিলেন একজন বিশ্বাসী মুসলিমা এবং একটি স্থানীয় কলেজের ‘ইসলামিক স্টাডি’- বিষয়ের জনপ্রিয় শিক্ষিকা। তিনি নিয়মিত নামাজ পড়তো এবং এতটুকু বলতে পারি হৃদয় দিয়ে কোরআন পড়তেন।”
ফারকুন্দার মৃত্যুর পর আফগানের হাজার মানুষকে জড় হয় কাবুলের শাহ ধোসামসেরা মসজিদের সামনে, হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবার বিচার ও সাজা চায় দেশটির জনতা। আফগানের অনেক ধর্মীয় নেতাই এই হত্যাকান্ডে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
আফগানিস্তানে তালেবানেরা বরাবরই ব্লাসফেমির মত আইন প্রয়োগ করতে চায়। তালেবান পর্যন্ত চাহিদাটা ঠিকই আছে। ওরা এরকম চিন্তা করবে সেটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু গুরুত্বের সাথে আমাদের লক্ষ রাখতে হবে এই হত্যাকাণ্ডটা সম্পন্ন করেছে একদল উন্মত্ত সাধারণ জনতা। তারা একবারের জন্য ভেবেও দেখেনি আসলেই কি কোন কোরআন পোড়ানো হয়েছে কি না। “হুজুর বলেছেন; এবং হুজুর কখনো ভুল বলেন না”- এর বাইরে অন্য কোন কিছু চিন্তা করার প্রয়োজন পড়ে নি সেই উন্মত্ত জনতার।
আমাদের দেশেও এমন ঘটনা অহরহ ঘটে। ব্লাসফেমি আইনের একটা সেক্যুলার ভার্সন চালু আছে আমাদের দেশের যার নাম ৫৭ ধারা। একজন বুদ্ধিমান মানুষ মাত্র বুঝতে পারবেন যে ৫৭ ধারা আর ব্লাসফেমি আইনের ভেতর কার্যত কন তফাৎ নাই। বরং ৫৭ ধারার কিছু বাড়তি সুবিধা আছে- আর তা হচ্ছে ধর্মের বাইরে শুধু সরকারের বিরুদ্ধে যে কোন কথা বললেও দমন নিপীড়নের সুযোগ।
দুই.
আসুন ব্লাসফেমি নিয়ে কিঞ্চিত বিস্তারিত আলোচনা করি।
ব্লাসফেমি শব্দের অর্থ’- ‘ধর্ম নিন্দা’ বা ‘ঈশ্বর নিন্দা’
ব্লাসফেমির উদ্ভব হয়েছিল প্রাচীন ও মধ্যযুগে। এখন থেকে এক হাজার ৪৫০ বছর আগে রোমের সামন্ত রাজারা প্রতিক্রিয়াশীল মৌলবাদী খ্রিষ্টান ক্যাথলিক চার্চের যাজকদের সহায়তায় জনগণের ওপর ধর্মের নামে অত্যাচারের হাতিয়ার হিসেবে ‘ব্লাসফেমি’র ব্যবহার শুরু করেছিল। সে সময় রাজা বাদশাদের বলা হত ঈশ্বরের প্রতিনিধি, তাই রাজাদের বিরুদ্ধে কিছু বলা মানে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বলা,এইভাবে রাজার অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে জনগনের আন্দোলন যাতে গড়ে না উঠতে পারে সেই জন্য ওই সময় ব্লাসফেমি নামের এই কালো আইন তৈরী হয়েছিল। আধুনিক যুগে এসে যখন চার্চ ও রাষ্ট্রকে আলাদা করা হয়, তখন থেকে এ আইনের বিবর্তন ঘটে।
তবে ইসলামের ইতিহাসে ‘ব্লাসফেমি’ আইনের দেখা পাওয়া যায় না বলে মন্তব্য করেন জাভেদ আহমদ ঘাদামি। পাকিস্তানের প্রখ্যাত ইসলামিক পণ্ডিত জাভেদ আহমদ ঘাদামি বলেছেন, ইসলামের কোথাও ব্লাসফেমি আইনের সমর্থনে কিছু বলা নেই। কয়েকটি বিচ্ছিন্ন বেতিক্রম ছাড়াত বর্তমান পৃথিবীতে একমাত্র পাকিস্তানেই ব্লাসফেমি আইনের সম্পূর্ণ প্রয়োগ দেখতে পাওয়া যায়। পাকিস্তানের স্বৈরশাসক জেনারেল জিয়াউল হক ধর্মের বাতাবরনে স্বৈরশাসন টিকিয়ে রাখার স্বার্থে মধ্যযুগের এই বর্বর কালো আইনটিকে ধার করেছিলো, পাকিস্তানের দণ্ডবিধিতে ১৯৮২ সালে ২৯৫(খ) এবং ১৯৮৬ সালে ২৯৫(গ) ধারা সংযুক্ত করা হয়েছিলো।
এখনকার প্রেক্ষাপটে ব্লাসফেমি আইন আর ৫৭ ধারা সংখ্যালঘু আর বিরোধীমতের মানুষদের এক হাত দেখে নেয়া ছাড়া আর কিছুই নয়। পাকিস্তানের সংখ্যালঘু হিন্দু এবং খৃষ্টানদের ওপর নির্যাতনের প্রত্যক্ষ হাতিয়ার এই ব্লাসফেমি আইন। আর এই আইনের সাথে যেহেতু ধর্মের দোহাইকে জুড়ে দেয়া যায় ফলে সাধারণ জনগণ এই আইনের বিরুদ্ধে তেমন একটা সোচ্চার হতে পারে না। একই ঘটনা আমাদের ৫৭ ধারার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য- কেবল ধর্মের গায়ে আঘাতের দায়ে শাস্তির বিধান আছে দেখে সাধারণ মানুষ গোটা আইনের অন্য অংশগুলোরও প্রতিবাদ করে না। পাছে মানুষ ধর্ম বিদ্বেষী বলে।
যাই হোক;
ব্যর্থ রাষ্ট্র পাকিস্তানে ব্লাসফেমি আইনের কিছু প্রয়োগ দেখুন যাতে সবার কাছে ব্লাসফেমি আইনের স্বরূপটি উন্মোচন হবে।
১.
১৯৯১ সালের ১০ ডিসেম্বার পাঞ্জাবে পানির কল মেরামত সংক্রান্ত বিষয়ে দুই প্রতিবেশী সাজ্জাদ হোসেন ও গুল মাশীহের ঝগড়া হয়। তাদের মধ্যে সাজ্জাদ হোসেন মুসলান এবং গুল মাশীহ খৃষ্টান ধর্মের অনুসারী। ঝগড়ার পরে মিটমাট হয়, এমনকি দুজন শেষ পর্যন্ত করমর্দন করে স্থান ত্যাগ করেন। কিন্তু স্থানীয় ইমামের প্ররোচনায় সাজ্জাদ হোসেন গুল মাশীহের বিরুদ্ধে ব্লাসফেমি আইনে মামলা করে। তিনি দাবী করেন গুল মাশীহ ঝগড়ার সময় মহানবীকে কটূক্তি করে মন্তব্য করেছে। এই মামলায় তিনজন সাক্ষী ছিলো একজন ফরিয়াদি সাজ্জাদ হোসেন নিজে অপর দুইজন তাঁর প্রতিবেশী।
দুই প্রতিবেশীর একজন আদালতকে বলেন;
“আমার উপস্থিতিতে এমন কোন ঘটনা ঘটেনি”
আরেকজন বলেন;
“গুল মাশীহ নবী সম্পর্কে কোন কটূক্তি করেনি”
এই অবস্থায় শুধু অভিযোগকারীর সাক্ষ্যের ভিত্তিতে আদালত বলেন;
“সাজ্জাদ হোসেন ২১ বছরের যুবক, তার মুখে দাঁড়ি আছে এবং তাকে প্রকৃত মুসলমানের মত দেখায়। ফলে তাকে বিশ্বাস না করার কোন কারণ দেখি না।”
১৯৯২ সালের ২ নভেম্বর পাঞ্জাবের সারগোদা সেশন কোর্টে মাত্র একজন সাক্ষীর সাক্ষে (যে কিনা ফরিয়াদি নিজে) ৪২ বছর বয়স্ক গুল মাশীহকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে আদালত।
২.
১৯৯৩ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি লন্ড্রি কর্মচারী খৃষ্টান ধর্মানুসারি আনোয়ারের সাথে তার মুসলিম বন্ধু মোহাম্মদ আলমের ঝগড়া হয়। দুজনই ধর্ম নিয়ে কটূক্তি ও বাদানুবাদে লিপ্ত হয়। ঘটনা শুনে মৌলবাদী সংগঠন “আঞ্জুমান সিপাহি সাহাবা”র নেতা হাজী মোহাম্মদ তৈয়ব ব্লাসফেমি আইনে মামলা করে। আদালতে আনোয়ার তার অপরাধ স্বীকার করে নেয়, কিন্তু সাথে সাথে এও জানায় মোহাম্মদ আলমও তার ধর্মের যীশু ও মেরীকে উদ্দেশ্য করে অনেক অশ্লীল কথা বলেছে। মুলত খৃষ্ট ধর্মকে গালিগালাজ করার পরেই আনোয়ার ইসলাম সম্পর্কে কটূক্তি করে। আনোয়ার; মোহাম্মদ আলমেরও বিচার দাবী করে।
আদালত তাকে জানায়;
“ব্লাসফেমি আইনে শুধু মহানবীকে উদ্দেশ্য করে কটূক্তিকে অপরাধ হিসেবে গন্য করা হয়। কিন্তু অন্য ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা কিংবা অন্য ধর্মের ঈশ্বর সম্পর্কে কটূক্তি অপরাধ হিসেবে গন্য করা হয় না।”
৩.
১৯৯৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি পাঞ্জাবের এক কোর্টে ব্লাসফেমি আইনে বিকৃত মস্তিষ্কের আরশাদ জাভেদকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে আদালত। রায় শুনে সে আদালত জুড়ে নাচতে শুরু করে।
ঘটনা হচ্ছে কয়েক মাস আগে সালমান রুশদি লিখিত স্যাটানিক ভার্সেস বইয়ের বিরোধী ছাত্ররা মিছিল বের করে। সেই মিছিলের সামনে এসে জাভেদ নাচতে থাকে এবং দাবী করে সালমান যা লিখেছে ঠিক লিখেছে। ছাত্ররা তাকে মেরে থানায় সোপর্দ করে। দীর্ঘদিন আটক অবস্থায় তার চিকিৎসা হয় মানসিক হাসপাতালে। সরকার পক্ষের ডাক্তারও তাকে পরীক্ষা করে পাগল ঘোষণা করে।
কিন্তু আদালত বলে;
“ব্লাসফেমি আইনের কোথাও লেখা নেই যে একজন লোক পাগল হলে সে ধর্ম অবমাননা করতে পারবে”
৪.
সাজা ভোগ করে জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পরও রেহাই মেলেনা। ২০১২ সালে উত্তর পাঞ্জাবে একজন মানসিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি কুরআনের পাতা রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলেছে এই অভিযোগে গ্রেফতার হলে শতশত উগ্র জনতা পুলিশি হেফাজত থেকে তাকে কেড়ে এনে পিটিয়ে মেরে ফেলে। মেরে ফেলেই ক্ষ্যান্ত হয়নি তার মৃতদেহ আগুনে পুড়িয়ে ফেলে তারা।
তিন.
দেশের জনপ্রিয় ব্লগিং প্ল্যাটফর্ম সচলায়তনের প্রখ্যাত ব্লগার “সাঈদ আহমেদ” তার “আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা: ‘আইন কানুন সর্বনেশে!” –শিরনামের ব্লগে আমাদের দেশের আইসিটি সাতান্ন ধারা এবং তার ফাঁক-ফোঁকরগুলো এত সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন যে আমি আর পুনরাবৃত্তি না করে তার লেখা ঐ লেখাটা থেকেই একটা অংশ সরাসরি তুলে দিলাম।
“আইসিটি আইন ২০০৬-এর ৫৭ (১) ধারায় বলা আছে—
কোন ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েব সাইটে বা অন্য কোন ইলেক্ট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যাহা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেহ পড়িলে, দেখিলে বা শুনিলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হইতে উদ্বুদ্ধ হইতে পারেন অথবা যাহার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করিতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোন ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উস্কানী প্রদান করা হয়, তাহা ইহলে তাহার এই কার্য হইবে একটি অপরাধ৷
এবার আসুন আইনটির সমস্যাগুলো একটু দেখে নিই—
অপরাধের সংজ্ঞা: কী লিখবো, কী লিখবো না?
বাংলাদেশের পেনাল কোডে অপরাধের সংজ্ঞা এমনভাবে দেয়া হয় যেন অপরাধ করার আগেই একজন মানুষ বুঝতে পারে কী কী করলে তা অপরাধ বলে গন্য করা হবে। উদাহরন স্বরূপ পেনাল কোডের ১৭৭ ধারার কথা বলা যেতে পারে, যেখানে ইচ্ছেকৃত ভাবে ভুল তথ্য দেয়া বলতে ঠিক কী বোঝানো হয়েছে, তা স্পষ্ট করে শুধু বলাই হয়নি, দুইটি উদাহরন দিয়ে তার স্বরুপও ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
কিন্তু আইসিটি আইনের ৫৭ (১) অনুচ্ছেদে অপরাধের যে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে তা একেবারেই স্পষ্ট নয় এবং অভিযুক্ত হবার পূর্ব পর্যন্ত কোন লেখকের পক্ষেই বোঝা সম্ভব নয় যে কী লিখলে তা অপরাধ বলে গণ্য হতে পারে।
উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়েঃ
এখানে বয়স নির্বিশেষে এমনকি প্রাপ্তবয়ষ্ক কোন উদো’র ‘নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হইতে উদ্বুদ্ধ’ হওয়ার দায়ও তথ্য প্রকাশকারী বুদো’র উপরে চাপানো হয়েছে। অথচ কী ধরনের তথ্য প্রকাশ কাউকে ‘নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হইতে উদ্বুদ্ধ’ করতে পারে, তা উল্লেখ করে দেয়া হয়নি।
একই ভাবে কোন ধরণের মন্তব্যকে ‘কোন ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উস্কানী প্রদান’ বলে চিহ্নিত করা হবে, তারও কোন সীমারেখা টানা নেই।
আদৌ কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগলো কিনা, অথবা কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার আদৌ কোন উদ্দেশ্য লেখকের ছিল কিনা, তাও যাচাই করার সুযোগ রাখা হয়নি। ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করিতে পারে’ শুধু এমন অভিযোগেই শাস্তি প্রদানের সুযোগ রাখা হয়েছে।
অর্থাৎ, অনলাইনে কোন লেখা বা মন্তব্যের মাধ্যমে কাউকে উস্কানী দেয়া বা কারো অনুভূতিতে আঘাত করা যদি আপনার উদ্দেশ্য নাও হয়ে থাকে, এবং কারো অনুভূতি যদি আঘাতপ্রাপ্ত নাও হয়ে থাকে, তথাপি পুলিশ যদি মনে করে যে আপনার অনলাইন মন্তব্য কারো ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করিতে পারে’, সেক্ষেত্রেও আপনাকে ওয়ারেন্ট ছাড়াই গ্রেফতার করে অ-জামিনযোগ্যভাবে আটক করে রাখা সম্ভব।
অথচ কথিত অপরাধকর্মের পেছনে অভিযুক্তের আসল উদ্দেশ্য বিচার করা একটি স্বত:সিদ্ধ আইনি চর্চা।
উদাহরন স্বরূপ— যদি প্রমাণিত হয় যে ‘ক’ কোন একটি লেখা সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে লেখার পর ‘খ’ তার পত্রিকায় এটিকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে জনরোষ সৃষ্টির চেষ্টা করেছে, তাহলে উদ্দেশ্য বিচারে এখানে ‘ক’ কে নির্দোষ ও ‘খ’ কে দোষী সাব্যস্ত করার প্রচলন রয়েছে। কিন্তু আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায় পুরো দায় ‘ক’ এর উপর চাপানো হয়েছে।
শুধু তাই নয়, অবস্থা দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন অনলাইন অপরাধ দমনে নিজেদের ব্যার্থতা ঢাকতে গণভীতি সৃষ্টির মাধ্যমে সমস্ত অনলাইন মতপ্রকাশের উপরই এক ধরনের স্বনিয়ন্ত্রন আরোপের চেষ্টা করছেন।
অপরাধের অস্পষ্ট সংজ্ঞায়নের কারণে সাধারণ মানুষ হয়তো মতপ্রকাশে নিরুৎসাহিত হবে, কিন্তু আইপি লুকিয়ে বেনামে মতপ্রকাশ উৎসাহিত হবে, এবং অনলাইন অপরাধ বৃদ্ধি পাবে।
প্রমাণের আগ পর্যন্ত অপরাধীঃ
সাধারণত: কোন ব্যক্তির অপরাধ প্রমাণ হবার আগ পর্যন্ত তাকে নির্দোষ বিবেচনা করার রীতি আছে এবং কাউকে অপরাধী প্রমাণের দায় সাধারণত: অভিযোগকারীর উপরেই বর্তায়। কিন্তু এক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তির নামে যে কোন মিথ্যে তথ্য প্রকাশ করে তাকে হয়রানি করা সম্ভব। কিন্তু অস্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত ধারাগুলো আমলযোগ্য ও অজামিনযোগ্য করে দেওয়ায়, একজন ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত তাকে কার্যত: ‘দোষী’ হিসেবেই আটক থাকতে হবে। তথ্যপ্রকাশের কথিত অপরাধকে বিচারের আগেই অজামিনযোগ্য করে না দিয়ে তা বিজ্ঞ আদালতের সন্তুষ্টির ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত ছিল।
হাকিম হইয়া হুকুম করে, পুলিশ হইয়া ধরেঃ
কাউকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশকে সাধারনত: আদালতের কাছে অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু খুন, খুনের প্রচেষ্টা, ধর্ষণ বা ধর্ষণ প্রচেষ্টার মতন গর্হিত অপরাধকে ‘আমলযোগ্য’ বিবেচনায় আদালতের অনুমতি ছাড়াই পুলিশ সন্দেহভাজন কাউকে গ্রেফতার ও তদন্ত করতে পারে। আইসিটি আইনে অনলাইনে মতপ্রকাশকে ‘আমলযোগ্য’ করা হয়েছে। ফলে একজন পুলিশ কর্মকর্তা নিছক সন্দেহের বশবর্তী হয়ে বা ইচ্ছাকৃতভাবে অনলাইনে মতপ্রকাশের কারণে যে কাউকে ওয়ারেন্ট ছাড়াই গ্রেফতার করে এবং নির্দোষ প্রমাণের আগ পর্যন্ত জামিনবিহীনভাবে আটক রেখে কার্যত: একাধারে ‘জাজ, জুরি ও এক্সিকিউশনারের’ ভূমিকা পালন করতে পারেন। এখানে কোন কবিতা, গল্প বা প্রবন্ধের অর্থ বিচার করে তা ‘আমলযোগ্য’ অপরাধ কিনা, তার এখতিয়ারও বিজ্ঞ আদালতের বদলে পুলিশের হাতে দেয়া হয়েছে।
লঘু পাপে গুরুদন্ডঃ
ইলেক্ট্রনিক বিন্যাসে তথ্য প্রকাশের কারনে কারো কতটুকু মানহানি ঘটলো, বা আইন শৃঙ্খলার কতটুকু অবনতি ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হলো, তার মাত্রা পরিমাপের সুযোগ বিজ্ঞ আদালতকে না দিয়ে, এই আইনের ন্যূনতম সাজা সাত বৎসর রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে অতিস্বল্প মাত্রার অপরাধে কেউ দোষী হলে তাকে কমপক্ষে সাত বৎসর জেলে থাকতে হবে, যা লঘু পাপে প্রচন্ড রকমের গুরুদন্ডের সামিল।
কয়েকটা উদাহরন দিলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে-
বাংলাদেশে আপনি যদি মদ খেয়ে মাতাল হয়ে কারো বাড়িতে প্রবেশ করে (trespass) কাউকে বিরক্ত বা উত্যক্ত করেন, তাহলেপেনালকোডের ৫১০ ধারা অনুযায়ী আপনার শাস্তি হবে সর্বোচ্চ ২৪ ঘন্টার জেল বা ১০ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড (বিজ্ঞ আদালতের মতানুসারে সর্বনিম্ন শাস্তি আরো কম হতেই পারে)।
কিন্তু আপনি যদি অনলাইনে এমন কিছু প্রকাশ করেন, যা ‘মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় [এমনকি প্রাপ্তবয়ষ্ক] কেহ পড়িলে, দেখিলে বা শুনিলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হইতে উদ্বুদ্ধ হইতে পারেন’, তাহলে সংশোধিত আইসিটি আইন অনুসারে আপনার শাস্তি হবে সর্বোনিম্ন ৭ বছর থেকে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের জেল এবং অনধিক এক কোটি টাকা জরিমানা!
আপনি যদি কোন দাঙ্গা বা রায়টে যোগ দিয়ে সরাসরি কোন সহিংসতায় অংশগ্রহণ করেন, তাহলে আমাদের পেনালকোডের ১৪৭ ধারা অনুসারে আপনার সর্বোচ্চ শাস্তি হবে ২ বছরের জেল। এই দাঙ্গায় আপনি যদি এমন কোন মরণাস্ত্র নিয়ে বের হন যা দ্বারা কাউকে হত্যা করা সম্ভব, তাহলে পেনালকোডের ১৪৮ ধারা অনুসারে আপনার সর্বোচ্চ শাস্তি হবে ৩ বছরের জেল (সর্বনিম্ন শাস্তি বিজ্ঞ আদালত নির্ধারণ করবেন)।
কিন্তু আপনি যদি ‘ওয়েব সাইটে বা অন্য কোন ইলেক্ট্রনিক বিন্যাসে’ এমন কিছু প্রকাশ করেন যা থেকে আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটার ‘সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়’, তাহলে আইসিটি আইন অনুসারে আপনার শাস্তি হবে সর্বোনিম্ন ৭ বছর থেকে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের জেল এবং অনধিক এক কোটি টাকা জরিমানা!
আপনি যদি কোন ভাবে কাউকে চিঠি লিখে বা ফোন করে বা সরাসরি হত্যা করার বা ব্যপক ক্ষতিসাধন করার হুমকী প্রদান করেন, তাহলে পেনালকোডের ৫০৬ ধারা অনুসারে তার শাস্তি সর্বোচ্চ ২ বছর, আর যদি এই হুমকী বেনামে করে থাকেন, তাহলেপেনালকোডের ৫০৭ ধারা অনুসারে শাস্তি সর্বোচ্চ আরো ২ বছর। কিন্তু আপনার অনলাইন কোন লেখাকে কেউ যদি ‘উস্কানী’ হিসেবে নিয়ে থাকে, তাহলে আইসিটি আইন অনুসারে আপনার শাস্তি হবে সর্বোনিম্ন ৭ বছর থেকে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের জেল!
অথবা, আপনি যদি মুদ্রিত কোন মাধ্যমে কিছু প্রকাশ করে বা অন্য যে কোন উপায়ে কারো মানহানি করেন বা কুৎসা রটনা, তাহলেপেনালকোডের ৫০০ ধারা অনুসারে আপনার সর্বোচ্চ শাস্তি হবে ২ বছরের জেল (এবং সর্বনিম্ন শাস্তি বিজ্ঞ আদালত নির্ধারণ করবেন)।
কিন্তু অনলাইনে আপনার কোন লেখায় কেউ যদি প্রমাণ করে যে তার মানহানি ঘটেছে, তাহলে সংশোধিত আইসিটি আইন অনুসারে আপনার শাস্তি হবে সর্বোনিম্ন ৭ বছর থেকে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের জেল এবং অনধিক এক কোটি টাকা জরিমানা!
শুধু তাই নয়, সর্বোনিম্ন শাস্তি নির্ধারণে বিজ্ঞ আদালতের ক্ষমতা সীমিতও করা হয়েছে। এছাড়া, গ্রেফতারের অনুমতি ও জামিন দেয়ার ক্ষমতা রহিত করে আদালতের ক্ষমতা ব্যাপক ভাবে খর্ব করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হতে পারে।”
আশা করি ভয়বহতা টুকু বুঝতে পারছেন। সাঈদ আহমেদের পুরো লেখাটি এই-(sachalayatan.com/syeed_ahamed/50140) লিঙ্কে পাবেন।
চার.
লাহোর বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট সায়েন্স বিভাগের প্রোফেসর ইজাজ আকরামের ভাষ্যমতে,
“বেশীরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় এইসব মানুষ প্রকৃতই কি ঘটেছে সেটা না জেনে বা সঠিক ঘটনা না শুনেই কারো উস্কানিতে এরকম আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে এই ধরনের নৃশংস ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে। মব সাইকোলজি, এখানে একজন কারো উস্কানিতেই উত্তেজিত হয়ে আইন নিজের হাতে তুলে নেয়, সেখানে নিজের বিচার বিবেচনা কেউ খাটানোর কথা চিন্তাও করে না।”
একজন মানুষের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ আনলেই তাকে যাচাই না করেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলাটা আমাদের স্বভাব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আমাদের দেশের এক শ্রেণীর মানুষও স্বাধীনতার পর থেকেই ব্লাসফেমি আইন চালু করার প্রচেষ্টায় লিপ্ত। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত এবং জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা নিজামী পকিস্তান পার্লামেন্ট থেকে দাড়ি-কমা সহ আইনটি সংসদে উথাপন করে। হেফাজতে ইসলামের তের দফার একটি ছিলো ব্লাসফেমি আইনের প্রত্যাবর্তন।
এবং ৫৭ ধারার সেক্যুলার মোড়কে ব্লাসফেমি আইন এই দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
তবে সবচেয়ে ভয়ের কথা হচ্ছে আপনি কিছু বুঝে ওঠার আগেই শিকার হতে পারেন এমন একটি আক্রমনের যেটা কল্পনাও করতে পারছেন না। সঠিক ঘটনা না জেনে শুধু উস্কানিতে এসব নৃশংস ঘটনা বন্ধ হবে না ততদিন যতদিন আপনি-আমি-আমরা সবাই একত্রে আওয়াজ না তুলতে পারছি। কোন কিছুর সাথে ধর্মের দোহাইকে জুড়ে দেয়া হলেই আমরা ঘরের দরজাটা বন্ধ করে দেই, বিপদ ডাকতে চাই না।
অথচ আপনার কিংবা আমার নিষ্ক্রিয়তা যখন অন্য কারো জীবন কেড়ে নেয় তখন তার দায় কিন্তু আপনি কিংবা আমি এড়াতে পারি না।
সুত্রঃ
১)উইকিপিডিয়া
২)আল জাজিরা রিপোর্ট
৩)গলার কাঁটা ব্লাসফেমি আইনঃ প্রেক্ষিত পাকিস্থান; ডাঃ আতিক
৪)ব্লাসফেমি আইন সভ্যতা বিরোধী; খালেকুজ্জামান
৫)dailymail.co.uk/news/article-3008987/Afghan-woman-beaten-death-streets-murdered-dared-speak-against-superstitious-mullah-NOT-burned-Koran.html
৬)bbc.com/news/world-asia-32056593
৭)washingtonpost.com/news/morning-mix/wp/2015/03/23/afghan-woman-beaten-to-death-for-a-crime-she-didnt-commit-becomes-a-rallying-point-for-activists/
৮)abpananda.abplive.in/international/2015/03/23/article535483.ece/Young-lady-beaten-to-death-in-afghanistan-protestors-demand-for-justice.
৯)jugantor.com/ten-horizon/2015/03/22/238409
১০) sachalayatan.com/syeed_ahamed/50140
বিশ্ব মুসলমানদের উচিত কোরান হাদিস যুগোপোযোগি করা।কম বেশী সংস্কার সব ধর্মেই করে থাকে ।
এখন তো মাঝে মাঝে মনে হয় ৫৭ ধারা নিয়ে কথা বললেও বুঝি কেউ ৫৭ ধারার শিকার হবে । সত্যিই , ইসলামি শাসনতন্ত্র কায়েমে সরকার আপাতত সার্থক ।
একটা সময় ছিল যখন মনে হতো দেশে একটাও ধর্মে অবিশ্বাসী মানুষ নেই। এখন অনেককেই দেখি ধর্মের চশমায় নয় যুক্তি আর বিচার দিয়ে দেখেন ও চিন্তা করেন। ধর্ম নিয়ে সমালোচনা খালি দেখা যেত গুটিকয় অনুবাদ বইয়ে, এখন বাংলায়, বাংলার মানুষ লিখছে ধর্ম নিয়ে তাদের স্বাধীন চিন্তার কথা। একটু একটু করে সাধারন মানুষও জানছে যে বিষয়টাকে অভ্রান্ত একটা সত্য হিসেবে দেখা হতো সেসব নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। আমার মনে হয় এইসব একেবারে বিলীন হয়ে যাবার নয়। পথটা আর সহজ নেই, কিন্তু মনে হয়না এই পথ চলাটা থেমে যাবে।
সব সম্ভবের দেশ আমাদের দেশ। এই দেশ সেকুলার, আবার মদিনা সনদে চলে। এই দেশে জনগণের মতামতের কোন প্রধান্য নেই। এই তো সেদিন প্রধানমন্ত্রীর সাংবাদিক সম্মেলনে ব্লগার দের এক হাত দেখিয়ে নিলেন। উনার কথার সারমর্ম হল, মাথা ব্যথা হলে মাথা কেটে ফেল। ৫৭ ধারা হল মাথা কাটার আইন। আমরা লিখতেই পারি, বলতে পারি। এইটা তাদের প্রধান সমস্যা।
কিন্তু যখন মুক্তমনারই কোনো বিখ্যাত ও পুরনো সদস্য এই ব্লগেরই ধর্ম নিয়ে খোলাখুলি লিখতে অভ্যস্ত অন্য কোনো সদস্য সমন্ধে সরাসরি আমবাংগালী(তিনি আবার কট্টর বাংগালী জাতীয়তাবাদী) মডারেটদের মত মন্তব্য করেন তখন ৫৭ ধারাও ফিকে হয়ে যায় না? ‘তাদেরকে নাকি মৌলবাদীরা বা ধর্মান্ধরা নয় সাধারণ মানুষই পিটিয়ে মেরে ফেলবে যদি আসল নাম জানতে পারে’ কমেন্টের সারমর্ম এমনই ছিল। এ বছরের মে মাসের একটি পোস্টে আলোচনা ছিল।
যার কারণে এই অত্যন্ত সাহসী ব্লগটির অনেক সাহসী ব্লগারকেই এখন আর মুক্তমনায় দেখা যায় না।
এক পুরান কাসুন্দি আর কতবার ঘাটবেন। এটা সত্যি যে মুক্তমনায় সাময়িক একটা উদ্ভট পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিলো। কিন্তু তার পর সবকিছুই ক্লারিফাই করা হয়েছে। এ নিয়ে তর্ক বিতর্ক লেখালিখিও কম হয়নি। তাই যেসব ‘সাহসী’ ব্লগার মুক্তমনায় লিখছেন না সেটা তাদের নিজস্ব অভিপ্রায়। মুক্তমনার অবস্থান চুল পরিমান বদলায়নি।
আর মূল কারণটা ফেসবুক। ফেসবুকে এক দুই প্যারার জ্বালাময়ি স্ট্যাটাস ঠুকে যে হাজার হাজার লাইক, লাখ লাখ ফলোয়ার ফ্যান জোটানো যায়, মুক্তমনার একটা পরিপূর্ণ প্রবন্ধ লিখতে হলে তার চেয়ে অনেক ইফোর্ট দিতে হয়। এত ঝামেলা করবে কে?
:good:
সুরা বাকারা: আয়াত ১০৬। “আমি কোন আয়াত রদ করলে বা ভুলে যেতে দিলে তার চেয়ে আরও ভাল বা তার সমতুল্য কোন আয়াত আনি।”
সুরা বাকারা: আয়াত ১০৯। “… তোমরা ক্ষমা করো ও উপেক্ষা করো যতক্ষণ না আল্লাহ্ কোন নির্দেশ দেন।”
(নেয়া হয়েছে জাস্টিস হাবিবুর রহমানের করা অনুবাদ থেকে।)
এখানে কোট করা দ্বিতীয় আয়াতটিকে আল্লাহ্ রদ করেননি; আবার যেহেতু শেষ নবী এসে চলে গেছেন তাই নতুন করে কোন নির্দেশও আসবেনা। সুতরাং মহানবীর মৃত্যুর পর থেকে ইসলাম বিরোধীদের ক্ষমা ও উপেক্ষা করাই কি ইসলামিক নীতি তথা আল্লাহ্র নির্দেশিত পথ বলে গন্য হওয়া উচিত নয়? তাই যদি হয় তাহলে তো ব্লাসফেমী আইন (কোরান মতেই) পুরোপুরি ইসলাম বিরোধী। নয় কি?
প্রশ্নটা লেখকের প্রতি নয়। যারা কোনরকম মন্তব্য বা লেখালেখি না করে নিঃশব্দে নিয়মিত এই ব্লগের ওপর নজর রাখেন তাদের প্রতি। উত্তর আশা করছি না। ভাবতে অনুরোধ করছি।