সারাবিশ্বে সাংবাদিক নিগ্রহ ও এর বিচারহীনতার সংস্কৃতির অবসানে পদক্ষেপ নেবার আহবান জানিয়ে ২০১৩ সাল থেকে জাতিসংঘ প্রতিবছর ২রা নভেম্বর ‘International Day to End Impunity for Crimes against Journalists’ (IDEI)’ দিবসটি পালন করে আসছে। এই দিবসকে সামনে রেখে জাতিসংঘ আয়োজিত আলোচনা সভায় আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন বন্যা আহমেদ।

ইংরেজিতে মূল বক্তৃতা

Let me first thank UNESCO and Lithunia for inviting me to highlight the unthinkably horrific stories of impunity in Bangladesh, which are happening in front of our eyes, in broad daylight, in modern days of the 21st century.

Two days ago, 31st of October was a bloody day in Dhaka, the capital city of Bangladesh, again. This is the 6th incident since February of this year that Islamic terrorists have attacked bloggers, writers, and now publishers in front of thousands of people. Before, they used to attack in the dark. Now, the extent of impunity is so great that they attack us in broad daylight, in front of thousands of people or even inside the residences or offices of writers and publishers.

They killed 5 bloggers, writers, and publishers so far this year and wounded many others. My husband Dr. Avijit Roy and I were hacked in the middle of a crowded street in Dhaka, on Feb 26th while we were visiting our homeland for a book-signing event. Though I survived with 4 head injuries and a sliced off thumb, Avijit was not so lucky. He died in the hospital. A month later, they hunted down the writer/blogger Ananta Das on his way to work. They killed blogger Washiqur Rahman Babu in the street. Then they did not even hesitate to appear in blogger Niloy’s house and hack him to death in front of his partner.

But why stop at writers when these machete-wielding assailants know the Bangladeshi government will stay silent no matter what they do?

This time their targets were the two publishers who dared to publish the books of these writers on free thought, secularism, and Freedom of Speech. The situation is dire. These bloody days are becoming a norm, and hacking people with voices is becoming a monthly chore for Islamic terrorists. This weekend, they managed to kill Publisher Faisal Arefin Dipan, owner of Jagriti Publishers. The other publisher Ahmedur Rashid Tutul, owner of Shudhoshwar, got lucky and survived multiple machete stabs inside his office. Writer and blogger Ranadipam Bashu and Poet Tareq Rahim were with Tutul in his office at that time. Both of them were injured. Tarek Rahim’s situation is critical; he is still fighting for his life, facing multiple stabs and a bullet stuck in his abdominal area. We know the Islamists will come back for Tutul (I just talked to his wife before this event). Quite understandably, she is not feeling safe with their two little daughters while Tutul has lost his hearing because of the attacks in his neck, shoulder, and face.

You will make a mistake if you think we are facing attacks only from these religious fundamentalist killers. To make it even better, our own Government has implemented and amended the so-called Information and Communication Technology Act. This ICT Act outlaws any publications, broadcasts, or websites that are ‘fake and obscene,’ as well as any communication that ’causes to hurt or may hurt religious belief’, which are all incredibly vague terms. The new amended ICT Act has made the criticism of religion on the internet punishable with up to 14 years of imprisonment. And yes, the Government of Bangladesh has arrested quite a few people. You would think they must have arrested the killers, right? No, they instead arrested some of the bloggers under this act for hurting religious feeling in their writings. One of the journalists was arrested and harassed a few weeks ago for so called ‘embarrassment’ to one of the ministers of the current government.

Bangladeshi govt. stayed completely quiet after the first 3 murders. And then, when they were forced to say something after the fourth murder, they instead told us to be careful about what we write. They have openly said that they were walking a fine line because of the electoral politics, and that they cannot risk their alliance with the religious groups by supporting secular writers of the country. None of these real killers have been captured or tried yet by the government or the judiciary system. When some of these bloggers went to the police to notify about the threats, the police decided to remain silent and inactive. the police are not ashamed to provide indirect support to the killers this way, where the bloggers, writers, and journalists do not feel safe to express their views, and

I am pleading to the international community to pay attention before it gets completely out of control like some of the other countries we have heard about today. These brave journalists, writers, bloggers, and publishers love their country and want to make a difference in their own homeland. They are out, along with the citizens of Bangladesh, in the street today to protest these murders, the impunity, and the inaction of the Bangladeshi Government. We have been continuing our work knowing the threats. We are asking the international community to come forward to help us save our voices and help us maintain a healthy secular society. Thanks.

End Note:

I guess I have a request for the international community at this point. We are watching deaths one after another, the people who are trying to raise their voice and exercise their freedom to express are getting killed. They are getting hunted down in the streets. These writers, bloggers, publishers wanted to live in their country; wanted to make a difference there; but what choice do they have right now? There is such a great deal of impunity for the crimes against these voices. I will ask the international community to create and revamp their effort to build safe houses so that our writers can get to safety until the situation gets better. It’s not only in Bangladesh, we have heard about countries after countries, today, which are in the similar or even in worse situation. I had the luxury to leave the country after the attack, and we donated my husband’s dead body for medical research in Bangladesh. I left him there. But I was brought to the United States; I was given medical treatment and assurance of safety. But these people in Bangladesh do not have that. My co-bloggers, co-writers do not have that luxury today. I myself and other bloggers who reside outside of the country have gone from embassies to the embassies to the humanist organizations begging for a way to get these bloggers out of the country. There was a list of 84 bloggers presented to the government by the Islamic terrorists. They are killing people outside of that list as well. What we are hearing from the embassies and the consulates that if the international orgs can give us an invitation for a substantial amount of time, may be for a year, then they will grant them visas may be temporarily. So I will ask today to the international community and all of you here today to find a way to save these people if you can. Thank you.

বক্তৃতার বাংলা অনুবাদ

বক্তৃতার চুম্বক অংশ পাঠকদের জন্য অনুবাদ করেছে সিলেট টুডে ২৪। খুব দ্রুতই সম্পূর্ণ অনুবাদ মুক্তমনায় প্রকাশ করা হবে।

আজ থেকে দু’দিন আগে, শনিবার বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার জন্য একটি রক্তাক্ত দিন ছিলো। ফেব্রুয়ারির পর থেকে এটি ছিলো এ বছরের ষষ্ঠ ঘটনা, যেখানে ইসলামিক জঙ্গিরা দিনের বেলা ব্লগার বা লেখকদের এবং এবার এক প্রকাশকের ওপর হাজারো মানুষের সামনে হামলা চালালো।

এর আগে তারা আঁধারে লুকিয়ে হামলা করতো। কিন্তু হামলাকারীরা শাস্তি থেকে বারবার এতো সহজে বেঁচে যাচ্ছে যে, তারা এখন দিনের আলোতে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে, এমনকি অফিস বা বাসায় ঢুকে লেখক-প্রকাশকদের কোপাতে শুরু করেছে।

এ বছর এখন পর্যন্ত তারা ৫ জন লেখক, ব্লগার ও প্রকাশককে হত্যা করেছে এবং আহত করেছে আরো অনেককে। আমার স্বামী ড. অভিজিত রায় এবং আমাকে ঢাকায় গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ভরদুপুরে রাস্তার মাঝখানে কোপানো হয়। আমরা একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে আমাদের জন্মভূমিতে গিয়েছিলাম। মাথায় ৪টি আঘাত নিয়ে আর একটি আঙ্গুল হারিয়ে আমি বেঁচে গেলেও অভিজিৎ আমার মতো ভাগ্যবান ছিলেন না; হাসপাতালে মারা যান তিনি।

এর একমাস পর তারা আমাদের সহকর্মী লেখক, ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশকেও সকালবেলা কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার পথে মেরে ফেলে। রাস্তার মাঝে তাদের পরবর্তী শিকার হন ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু। এমনকি তারা ব্লগার নিলয়ের বাসায় ঢুকে সহধর্মিণীর সামনে তাকে কুপিয়ে হত্যা করতেও একবার দ্বিধা করেনি।

কিন্তু সেখানেই তারা থামবে কেনো? শুধু লেখক পর্যন্ত চাপাতির কোপ থামিয়ে রেখে কী হবে, যেখানে তারা জানে তারা যা-ই করুক না কেনো, বাংলাদেশ সরকার চুপ থাকবে। তাই এবার হামলাকারীরা দু’জন প্রকাশককে টার্গেট করলো যারা এসব লেখকদের মুক্তচিন্তা, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং বাকস্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর লেখা বই প্রকাশ করার দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন।

পরিস্থিতি বর্তমানে খুবই গুরুতর। এই রক্তাক্ত দিনগুলো যেনো একটা নিত্য বিষয়ে পরিণত হয়ে যাচ্ছে। প্রতিবাদের কণ্ঠ আছে এমন মানুষদের কুপিয়ে হত্যা ইসলামিক সন্ত্রাসীদের জন্য এখন একটা মাসিক কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই শনিবার তারা জাগৃতি প্রকাশনীর মালিক প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপনকে হত্যা করতে সফল হয়েছে। তার অপরাধ তিনি অভিজিত রায়ের দু’টি বই প্রকাশ করেছিলেন। আরেক প্রকাশক শুদ্ধস্বরের মালিক আহমেদুর রশীদ টুটুল নিজ অফিসে চাপাতির একাধিক কোপ খেয়েও ভাগ্যের জোরে বেঁচে যান। লেখক ও ব্লগার রণদীপম বসু এবং কবি তারেক রহিম তখন টুটুলের সঙ্গে তার অফিসে ছিলেন। তারা দু’জনেই আহত হন। তারেক রহিমের অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক। একাধিক চাপাতির আঘাতের ক্ষত এবং পেটে বুলেট নিয়ে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন তিনি।

আমরা জানি তারা আহমেদুর রশীদ টুটুলের জন্য আবার আসবে। আমি এই অনুষ্ঠানের ঠিক আগেই তার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বললাম। দুই মেয়েকে নিয়ে তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। কাঁধ, ঘাড় ও চেহারায় কোপের আঘাত পাওয়ার কারণে টুটুল শ্রবণশক্তি হারিয়েছেন।

আপনারা যদি মনে করেন আমরা শুধু এসব ধর্মীয় মৌলবাদী হত্যাকারীদের কাছ থেকেই হামলার শিকার হচ্ছি, তবে তা আপনাদের ভুল ধারণা। পরিস্থিতির ‘উন্নতি’ করতে আমাদের নিজেদের সরকারই তথাকথিত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন প্রণয়ন ও সংশোধন করেছে। এই আইসিটি আইন অনুসারে যেকোনো তথাকথিত ‘মিথ্যা’ ও ‘অশ্লীল’ প্রকাশনা, সম্প্রচার বা ওয়েবসাইট এবং ধর্মবিশ্বাসকে আঘাত করে বা করতে পারে এমন যেকোনো যোগাযোগকে বেআইনী ঘোষণা করতে পারে। আপনারা বুঝতেই পারছেন, এগুলো খুবই অস্পষ্ট ধারণা; এদের সংজ্ঞায়িত করা খুবই কঠিন।

নতুন আইসিটি আইন অনুসারে, ইন্টারনেটে ধর্মীয় সমালোচনা করলে ১৪ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। এবং হ্যাঁ, বাংলাদেশ সরকার বেশ কয়েকজনকে এই আইনের আওতায় গ্রেফতার করেছে।

আপনারা নিশ্চয়ই ভাবছেন সরকার অবশ্যই ব্লগার হত্যাকারীদের গ্রেফতার করেছে, তাই না? না। বরং লেখার মাধ্যমে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার অভিযোগে আইসিটি আইনের আওতায় তারা উল্টো কয়েকজন ব্লগারকে গ্রেফতার করে। বর্তমান সরকারকে অপমান করার অভিযোগে একজন সাংবাদিককে কয়েক সপ্তাহ আগে গ্রেফতার করে নির্যাতন করা হয়।

এ বছর প্রথম তিনটি হত্যাকাণ্ড হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার একেবারে চুপ হয়ে থাকে। আর চতুর্থ হত্যাকাণ্ডের পর যখন সরকারকে কিছু বলতে চাপ দেওয়া হয়, তারা আমাদের সতর্ক করে যেনো আমরা কী বিষয়ে লিখছি সে বিষয়ে সচেতন থাকি। সরকার খোলাখুলিই বলেছে, নির্বাচনী রাজনীতির কারণে খুব তারা সাবধানে চলছে। ধর্মনিরপেক্ষ লেখকদের পক্ষ নিয়ে সরকার ধর্মীয় দলগুলোর সমর্থন হারানোর ঝুঁকি নিতে পারবে না।

এখন পর্যন্ত কোনো প্রকৃত খুনীই গ্রেফতার বা বিচারের সম্মুখীন হয়নি। কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে, তবে তাদের বিচারের আওতায় আনতে আমরা এখনও দেখিনি। এদের কেউ কেউ আবার জামিনে মুক্ত হয়ে গেছে।

ব্লগাররা যখন তাদের কাছে সন্ত্রাসীদের পক্ষ থেকে আসা হুমকির বিষয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে গেছেন, পুলিশ তখন তাদের চুপচাপ এবং নিষ্ক্রিয় থাকার পরামর্শ দিয়েছে। এদের মধ্যে আবার কেউ কেউ পরামর্শ পেয়েছেন, দেশে নিরাপদ বোধ না করলে বিদেশে চলে যাওয়ার। এভাবে অপরাধীদের পরোক্ষ সমর্থন দেওয়ার জন্য তারা সামান্যও লজ্জিত বা বিব্রত না।

আমরা এমন এক দেশে বাস করি, যেখানে লেখক, ব্লগার, সাংবাদিকরা নিজের দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করতে এখন আর নিরাপদ অনুভব করেন না। ‘অন্য কিছু দেশের মতো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই’ তিনি ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ ব্যাপারে সচেতন হতে অনুরোধ’ জানান।

‘বাংলাদেশের সাহসী সাংবাদিক, ব্লগার, লেখক, প্রকাশকরা তাদের দেশকে ভালোবাসেন এবং মাতৃভূমির অবস্থায় পরিবর্তন আনতে চান। আমরা এখানে কথা বলার মুহূর্তেও তারা ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে রাস্তাঘাটে এসব হত্যা, হত্যার বিচারহীনতা এবং বাংলাদেশ সরকারের নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছেন। হুমকির মুখে থেকেও আমরা আমাদের কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের মুক্তকণ্ঠ, বাকস্বাধীনতা এবং একটি স্বাস্থ্যকর ধর্মনিরপেক্ষ সমাজকে রক্ষা করতে সাহায্য করার জন্য আমরা আন্তর্জাতিক কমিউনিটিকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।’

ধন্যবাদ।

বক্তব্যের ভিডিও