১.
বিহারে একটা কথা প্রচলিত আছে, “তেরি ক্যাহহকে লুঙ্গা”। এর মানে হলো, ‘বলে-কয়ে তোর জান নেব’। যাকে খুন করবে, তাকে ধরে নিয়ে গুম করে দিলেই হয়। কিন্তু ঘোষণা দিয়ে খুন করার পিছনে যুক্তি কী সেটা নিয়ে আমি অনেক ভেবেছি। এই প্রবণতা শুধু ঐ বিহার অঞ্চলেই না, মানব ইতিহাসে নানান দেশে নানান সময়েই দেখা গেছে। একাত্তরে আমাদের দেশেও বুদ্ধিজীবি হত্যার আগে, আলবদররা নাম ধরে ধরে ‘মৃত্যুর পরোয়ানা’ ছাপিয়ে প্রকাশ করত। এই ঘোষণার পিছনে কী মনস্তত্ত্ব কাজ করে? উত্তরটা মনে হয় আমি পেয়েছি।
আর তা হলো জনমনে ত্রাসের সঞ্চার করা। যে ব্যক্তিকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে তাকে এবং তার পরিচিত জনদেরকে নিদারুণ অসহায়ত্বের মধ্যে ফেলে দেওয়া। এবং অন্যদের কাছে একটি সুস্পষ্ট বার্তা পৌছে দেওয়া, যে ‘এখন আমি-ই আইন’। আমি রাষ্ট্র, সমাজ, সার্বভৌমত্ব সবকিছু উর্ধ্বে। আমি সবার ধরাছোয়ার বাইরে। এবং আমি আজরাইলের মতই অনিবার্য। শুধু খুন করলে, একজনের মুখ বন্ধ করা যায়। কিন্তু সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ত্রাসের সঞ্চার করে, প্রচণ্ড প্রতাপ গড়ে তুলতেই এই বলে-কয়ে হত্যা। এতে নিজের অনুসারীদের মধ্যেও শ্রদ্ধা-ভক্তি বাড়ে। এ যেন রাষ্ট্রের মধ্যে একটা নিজস্ব ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার ঘোষণা।
তেমনই এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়ে গেছে বাংলাদেশে। ধর্মান্ধ জঙ্গিরা, বলে কয়ে খুন করছে আমাদের। ঠিক একাত্তরে যেমন করেছিলো। তফাত হল একাত্তরে এদের পৃষ্টপোষক ছিলো পাকিস্থানী হানাদার বাহিনি। আর এখন পৃষ্ঠপোষক হল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গঠিত সরকার। একাত্তরে লিস্ট করেছিলো নিজামী, মুজাহিদ, কামরুজ্জামানরা। আর এখন লিস্ট করছে বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগ। একাত্তরে অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সহায়তা করেছিলা পাকিস্থানি মিলিটারি। আর এখন, ‘এই আমরা চোখ বন্ধ করলাম, তোমরা যা খুশি করার করে নাও’ বলে সহায়তা করছে আওয়ামী সরকার। তার উপর, খুনিদের সাথে কন্ঠ মিলিয়ে এই সরকার আমাদেরকে নিয়ম করে বকেও দিচ্ছে, স্বাধীন দেশে কেন নিজের ভাবনাগুলো লিখি সেই দোষে।
শুধু এখানেই শেষ নয়, এন্টি টেররিজম সেল গঠন করার কোনো খোঁজ নেই। কিন্তু, ব্লগের উপর নজরদারির জন্য বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে। যেন কেউ লেখা-লিখি করে সরকারকে বিব্রত করতে না পারে। তার উপর আইসিটি ৫৭ ধারার মত বর্বর, হীন একটা আইনকে শক্তিশালী করে মানুষের কন্ঠোরোধের আয়োজন সুসম্পন্ন করা হয়েছে। চাপাতির কোপে ধড় না পড়লেও, ৫৭ ধারায় ঠিকই ধরা খেতে হবে। সাম্প্রতি হামলার শিকার আহমেদুর রশিদ টুটুল বলেছেন, তিনি সুস্থ হয়ে আরো বেশি বেশি বই ছাপাবেন। সরকারের উচিত হবে, অতিসত্তর বেঁচে যাওয়া এই তিনজন লেখক, কবি প্রকাশক এবং সর্বোপরি ব্লগারকে ৫৭ ধারায় গ্রেফতার করে ফেলা।
২.
আজ আমাদের মৃত্যুর পরোয়ানা জারি হয়েছে। জারি করেছে সরকারের নীরবতাধন্য আনসারুল্লাহরা, জারি করেছে সরকারের অনুগ্রহধন্য শফিহুজুররা। বিহারের সেই ‘ক্যাহকে লুঙ্গা’ বলার মতই একে একে বলে-কয়ে খুন করা হচ্ছে আমাদের। আমার খন্ডিত, ক্ষতবিক্ষত মাথা-ধড় দেখে আমার আব্বা-আম্মা কী করবেন, আমার ভাই বোন, কী করবে মনে মনে তার রিহার্সেল ও দিয়ে ফেলেছি। তবে জিডি করে, বিচার চেয়ে, নিরাপত্তা চেয়ে আর এই সরকারকে বিব্রত না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ সেই আবেদন হবে, পাক হানাদার বাহিনির কাছে আলবদরের থেকে নিস্তার চেয়ে আবেদন করার মতই হাস্যকর ও নিরর্থক। চাপাতি আর ৫৭ ধারার বিপরীতে আমাদের হাতে আছে সেই অতি পুরাতণ কলম, আর একালের কী বোর্ড। তা দিয়েই জীবনের শেষ ভাবনাগুলো লিখতে বসেছি। জানি সরকারের কর্তা-ব্যক্তিরা এসব পড়বেন না। কিন্তু যে কিশোর পড়বে, তার বুকের কোনো কোনে হয়তো কথাগুলো ঠাই পাবে। কিংবা পৃথিবীর কোনো নিভৃত কোনে যদি এই লেখাটা জমা হয়ে থাকে, তাহলে কয়েক প্রজন্ম পরে অন্ধকার কেটে গেলে হয়তো কেউ জানবে আমাদের কথা। আমরা যারা জন্মভূমিকে ভালোবেসে, মানুষকে ভালোবেসে নিজের জীবন দিয়ে গেলাম। তাদের কথা।
আমরা চাইলেই পারতাম, আটটা-পাঁচটা চাকুরী করে, দেশে-বিদেশে পড়াশুনা-কাজকর্ম করে এক রকম হাসিখুশি জীবন কাটিয়ে দিতে। কিন্তু পৃথিবীর এক ক্রান্তিলগ্নে যখন মৌলবাদ মাথা-চাড়া দিয়ে উঠছে দিকেদিকে তখন আমরা সেই অন্ধকারের বিরূদ্ধে সোচ্চার হবার সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছি। হয়তো বলবেন এ আমাদের বোকামি, এ আমাদের পাগলামি। কিন্তু সবিনয়ে স্বরণ করিয়ে দেব যে এই দেশটাকে যারা মুক্ত করেছিলো সেইসব ছাত্র-জনতাকেও একসময় এমন পাগলামির অপবাদ শুনতে হয়েছে। জীবন দিতে হয়েছে। একটু চোখ মেলে দেখুন, সিরিয়া, ইরাক, আফগানস্থান, পাকিস্থান, নাইজেরিয়া, সুদান, এমন অসংখ্য দেশে কী অদ্ভুত এক আঁধার নেমে এসেছে। দাস হিসাবে বিক্রি হচ্ছে কন্যা শিশুরা, গণহত্যার শিকার হচ্ছে ভিন্নমতাবলম্বীরা। নারীকে করা হয়েছে গৃহবন্দী। চলছে অশিক্ষা, আর অন্ধকারের মাতম। মুছে ফেলা হচ্ছে সভ্যতার সকল নিদর্শন। অস্ত্রের ঝনঝনানি সকাল বিকাল। আমরা এমন এক পরিণতি থেকে মানুষকে রক্ষা করতেই হাতে কলম তুলে নিয়েছিলাম। অন্ধকারকে দূর করতে লাঠির আঘাত নয়, বরং জ্বালতে হয় আলো। নিরাপদ জীবনের মায়া ছেড়ে সেই আলোর ফেরি করতে বেরিয়েছিলাম আমরা। নিজেদের বিলুপ্তি রুখতে সেই অন্ধকারের কীটরা তাই চাপাতি হাতে ঝাপিয়ে পড়েছে আমাদের উপর। এবং এবার তাদের দোসর পাকিস্থানী হানাদার বাহিনি নয়, ‘ছদ্ম সেকুল্যার’ দল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ গঠিত সরকার। সেই সরকারের প্রধানমন্ত্রী বরাবর আমার এই খোলা চিঠি।
৩.
প্রিয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা,
আইএস এর জঙ্গিরা, যখন কমলা পোষাক পরিয়ে শিরোচ্ছেদের জন্য একেকজন মানুষকে ক্যামেরার সামনে হাটু গেড়ে দাঁড় করায়। সেই সময় বন্দি ব্যক্তির মনে কী অনুভূতি হয় সেটা আপনার কারণে কিছুটা হলেও বোঝার দুর্ভাগ্য আমাদের হয়েছে। যে কোনো দিন গলার উপর নেমে আসবে মৌলবাদের চাপাতি। তাই কেমন যেন কিছুতেই আর কিছু যায় আসে না ধরনের একটা ভাব এসে গেছে মনে। সে কারণেই আপনাকে এই চিঠিটা লিখতে হাত কাঁপছে না একটুও। জানি এ চিঠি আপনার কাছে পৌছবে না। কিন্তু কিছু মানুষ হয়তো এই লেখাটা পড়বেন। আপনাকে বলার ছলে আসলে কথাগুলো তাদেরকেই বলা।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমরা প্রতারিত হয়েছি। আমাদের আওয়ামী বন্ধুরা আপনার দলকে ভোট দেওয়াই একমাত্র বিকল্প হিসাবে আমাদের সামনে উপস্থাপন করেছিল। কেননা আপনাদের বিপরীতে ছিলো, জামায়াত-শিবির-বিএনপি এর মত জোট। যারা প্রকাশ্যে নীতিগতভাবেই ধর্মান্ধ এবং সরাসরি বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী। বলা হয়েছিলো, ওরা ক্ষমতায় এলে এদেশে আবার প্রগতিশীল লেখক, সাহিত্যিক, শিক্ষক, ডাক্তার সহ সব শ্রেণীর বুদ্ধিজীবিদের বধ্যভূমি রচিত হবে। ওরা ক্ষমতায় এলে, হিন্দুধর্মালম্বীদের উপর নেমে আসবে নারকীয় অত্যাচার। বাংলাদেশ হয়ে যাবে মিনি-পাকিস্থান।
কিন্তু আপনার শাসনামলেও আমরা, লেখক, প্রকাশক, ব্লগাররা সেই খুন-ই হচ্ছি। দেশের সকল পত্রিকায় একযোগে ঘোষণা দিয়ে প্রকৌশলি, শিক্ষক, নাট্যকর্মী, চিকিৎসক, এবং সর্বস্তরের কর্মজীবী নারীদের প্রতিও হুশিয়ারী ও মৃত্যু হুমকি দেবার ব্যাপারে আনসারুল্লাহকে আপনারা ফ্রী পাস দিয়ে দিয়েছেন। এই কয়েকদিন আগেই, এক গর্ভবতী হিন্দু নারীকে পেটে লাথি দিয়ে তার সন্তানের গর্ভপাত ঘটিয়ে দিয়েছে আপনার আদরের ছাত্রলীগাররা। তারও কিছুদিন আগে আরেক গর্ভের শিশুকে গুলিবিদ্ধ হতে হয়েছে আপনাদের হাতেই। আপনার এমপিরাই নিরপরাধ পথচারী, ও শিশুদের উপর নির্বিচারে গুলি চালাচ্ছে। আপনাদের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের আর কী পার্থক্য রইলো সেটা প্লিজ বুঝিয়ে দিন। সংখ্যালঘুদের উপর সংঘবদ্ধ আক্রমন, তাদের সম্পদ আত্মসাৎ ইত্যাদির চ্যাম্পিয়ন হয়ে উঠেছে আপনার দলের নেতাকর্মীরা।
আপনার অর্বাচিন নেতারা হানিফ, সন্তান হারা পিতাকে কুৎসিত ভাষায় তিরষ্কার করছে। এবং সেই নেতাই কিছুদিন আগে, জামায়াতের লোকজনকে ফুলের মালা দিয়ে আপনার দলে বরণ করে নিয়েছে দেখিয়ে সচিত্র প্রতিবেদন বেরিয়েছে বিভিন্ন পত্রিকায়। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে কঠোরভাবে প্রতিহত করায় আপনারা সিদ্ধহস্ত হলেও, জামায়াতি অর্থপ্রতিষ্ঠানগুলো ফুলে ফেপে বড় হচ্ছে আপনাদেরই ছত্র-ছায়ায়।
আপনি এদেশের শিক্ষাব্যবস্থাটা ভেঙ্গে ফেলেছেন। উন্নত বিশ্বের অনেক দেশে যেখানে শিশুদের নির্মল শৈশব ও স্ট্রেস বিহীন পড়াশুনার পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রাইমারী, ও জুনিয়র হাই স্কুল লেভেলে বাৎসরিক পরীক্ষা নেওয়া, র্যাঙ্কিং করা, ইত্যাদি-ই উঠিয়ে দিচ্ছে সেখানে আপনি জেএসসি, পিএসসির মত উদ্ভট পরীক্ষা প্রণয়ন করে তাদের শৈশব ধ্বংস করেই খ্যান্ত দেননি, সেইসব পরীক্ষার প্রশ্ন ফাস করাকে প্রশ্রয় দিয়ে, সমগ্র জাতির শিশুদের দুর্নীতিতে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করিয়েছেন।
আপনার আমলে এসএসসি, এইসএসসি, এবন উচ্চশিক্ষায় ভর্তির পরীক্ষাগুলোতে প্রশ্নফাসে বিপ্লব ঘটে গেছে। মেধাবী, পরিশ্রমী শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে, আশাহত ও হতাশ হচ্ছে। এক অর্বাচিন জাতি গড়ে তোলার সকল প্রস্তুতিতে আপনার সরকার বিপুল সাফল্য দেখিয়েছে। এ নিয়ে প্রতিবাদ করতে গিয়ে পুলিশের লাঠির শিকার হচ্ছে কিশোর-কিশোরীরা। মনে রাখবেন এরা এবং এদের আত্মীয়রাই আগামীদিনের ভোটার।
দেশে যা প্রবৃদ্ধি এসেছে প্রবাসী অদক্ষ শ্রমিক, ও দেশে তরুনী গার্মেন্টস কর্মীদের কল্যানে। তাদেরও বঞ্চনার শেষ নেই। বেতন ভাতা নিয়ে টালবাহানা। বড় দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ, দোষীদের বিচার সবকিছু ঝুলে গেছে। অবশ্য এক হিসাবে মেলে। শিক্ষাব্যবস্থাটাকে এমন ভাবে আপনারা ভেঙ্গে ফেলছেন যেন এদেশে দক্ষ কর্মশক্তি আর গড়ে না ওঠে। আমরা যেন ওই মধ্যপ্রাচ্যের অদক্ষ শ্রমিক, আর গার্মেন্টেসের শ্রমদাস বনেই থাকি। এতেই হয়তো আপনাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে শস্তা শ্রমের সাপ্লাই নিশ্চিত হয়।
যে বিএনপি আজ স্রেফ জামায়াতের অংগসংগঠনে পরিণত হয়েছে, সেই বিএনপি-ই কিনা এক সময় বাংলা ভাইদের জঙ্গি সংগঠন ‘জেএমবি’ কে ঝাড়ে-বিনাশে বিলুপ্ত করে দিয়েছিলো কয়েক মাসের মধ্যে। কিন্তু আপনারা, তথাকথিত ‘সেকুল্যার’ আওয়ামীলীগ নাকি কিছুই করতে পারছেন না! নব্য জংগিবাদের অস্তিত্বই স্বীকার করছেন না। ওলামালীগ গঠন করে বরং তাদের সক্রিয় সহকারীতে পরিণত হয়েছেন। তার উপর আইসিটি আইনের অসংবিধানিক ৫৭ ধারাকে শক্তিশালী করে মত প্রকাশের সকল রাস্তাই রুদ্ধ করে তুলেছেন।
প্রিয় প্রধানমন্ত্রী, আপনাকে আমরা ভোট দিয়েছিলাম ৭২ এর সংবিধানে ফিরে যাবার প্রতিশ্রুতি পেয়ে। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি আপনি পুরোপুরি রাখেননি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রসংশনীয় উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু সরকার পক্ষের প্রসিকিউশনকে, লোকবল, অর্থবল কোনোকিছুই পর্যাপ্ত দেননি। বিচারকার্যে ইচ্ছাকৃত দীর্ঘ্যসুত্রিতার উদ্দেশ্য ছাড়া এর আর কোনো কারণ থাকতে পারে না। যুদ্ধাপরাধীদের বিরূদ্ধে সাক্ষীরাও, গুমখুন, ও প্রকাশ্য কোপাকুপির শিকার হচ্ছে অহরহ। উইটনেস-প্রটেকশনেরও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা আপনারা করেননি।
ধুর্ত শেয়ালের গল্প পড়েছিলাম, যে কুমিরের ১০টা বাচ্চাকে পাঠদানের কথা বলে ৯টিকেই খেয়ে ফেলে। পরে কুমির বাচ্চা দেখতে চাইলে, ১ টা বাচ্চাই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখায়। আপনি ও আপনার দল এই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকেই সেই কুমিরের বাচ্চার মত বার বার আমাদের সামনে এনে তুলছেন। আপনার বিপুল সৈন্য বাহিনি, অসংখ্য লোকবল। বাংলাদেশের রিজার্ভে এখন কাড়ি কাড়ি বৈদেশিক মূদ্রা। আমরা এখন মধ্যম আয়ের দেশ। এমতাবস্থায়, বিচারকার্য সুষ্ঠভাবে করার জন্য যা লাগে, জনসাধারণের নিরাপত্তাবিধানে যা লাগে, তার সবকিছু করার সামর্থ্যই আপনাদের আছে। স্রেফ স্বদিচ্ছাটা নেই।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে পচাত্তরে বাংলাদেশেরর ইতিহাসে যে কালো অধ্যায়ের সুচনা হয়। আপনার সরকার আসায় তার অবশান হবে সেই আশা করলেও এখন দেখছি এ যেন সেই কালো অধ্যায়েরই ধারাবাহিকতা। এর আগে যেসব অবৈধ স্বৈরশাসক রক্তের হোলিখেলার মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখল করেছে, তাদের পতনের দাবি ছাড়া তাদের কাছে আমাদের আর কোনো আশা-আকাংখা ছিলো না। বিএনপি ক্ষমতায় আসামাত্র হিন্দু ধর্মালম্বীদের উপর যে নারকীয় নির্যাতন করেছিলো তার পরে আর তাদের কাছে বাংলাদেশ নিরাপদ নয় বলে বুঝে নিয়েছিলাম আমরা। জামায়াত তো স্বঘোষীত রাষ্ট্রদ্রোহী দল, যাদের হেডকোয়ার্টার গোলাম আজমের কথা মতে, “তখনও ছিলো লাহোরে, এখনো লাহোরে।” তবে বাকি এইসব দলের মধ্যে এক ধরনের স্পষ্টতা আছে, তারা বলে-কয়ে স্বৈরাচার, বলে-কয়ে কম্যুনাল, বলে-কয়ে রাষ্ট্রোদ্রোহী কিংবা মৌলবাদী। নিজেদের পরিচয়ের ব্যাপারে তাদের কোনো ছলচাতুরি নেই।
কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার আমলে এসে যে আওয়ামীলীগকে আমরা দেখছি, তারা বর্ণচোরা। কারণ তারা মুখে দাবি করেছিলো যে তারা সেক্যুলার, উদারমনস্ক কিন্তু এখন কার্যক্ষেত্রে, স্বৈরাচারত্ব, কম্যুনালিটি, ও মৌলবাদ তোষণ সবকিছুতেই তারা চ্যাম্পিয়ন হয়ে উঠছে। প্রকাশ্য মৌলবাদের চেয়ে ছদ্ম-সেক্যুলার যে কত ভয়ঙ্কর সেটা জীবন দিয়ে টের পাচ্ছি আমরা। গল্পের শিয়ালের মত যুদ্ধাপররাধীদের ইচ্ছা করে প্রলম্বিত বিচার বার বার দেখিয়ে নিজেদের এই অকর্মন্যতা, মন্ত্রীসভার অপদার্থতা আর কতদিন ঢাকা দিবেন?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার দল হয়তো আরো বিশ, তিরিশ কিংবা চল্লিশ বছর ক্ষমতায় থাকবে। কিন্তু এই প্রজন্মের তরুণদের সাথে যে নজিরবিহীন প্রতারণা আপনারা করলেন তা স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে অক্ষয় হয়ে লেখা রইবে। তবে যে মৌলবাদ আজ আপনি তোষণ করছেন, ফুল দিয়ে বরণ করছেন নিজ দলে, মনে রাখবেন এরা একাত্তরে আওয়ামীলীগ মাত্রই কাফের/মুর্তাদ ঘোষণা দিয়ে নির্বিচারে হত্যা করেছিলো। এরা আপনাদের তোষামোদির প্রতিদানও একদিন চাপাতি দিয়েই দেবে। বাংলা সিনেমার মত করে বলতে হয়, দুধ-কলা দিয়ে যে কাল সাপ পুষছেন, সেই সাপ আপনাদেরকেই ছোবল দেওয়ার সুযোগ খুঁজছে প্রতি মুহুর্তে। এদের শ্রদ্ধা আপনি কখনোই পাবেন না। এখন প্রগতিশীল তরুণ প্রজন্মের শ্রদ্ধাটাও হারালেন।
বৈশ্বিক মৌলবাদের যে কালো ছায়া আমাদের প্রিয় জন্মভূমিতে পড়তে শুরু করেছিলো তার বিরূদ্ধেই আমরা কলম তুলে নিয়েছিলাম। সেই কলম-কীবোর্ড আপনারা আইন করে কেড়ে নিয়েছেন। সেই মৌলবাদ যখন আমাদের ঘাড়ে কোপ বসিয়েছে তখন আপনার মুখ ফিরিয়েছেন। উপরন্তু মৌলবাদের মন্ত্রই আওড়িয়েছেন তাদের সাথে কন্ঠ মিলিয়ে। আমার বয়সেই অসংখ্য তরুণ মুক্তিযোদ্ধা প্রাণ দিয়েছিলো, ধর্মনিরপেক্ষ ও স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য। আজ আমরাও আমাদের প্রাণটা দিয়ে দিলাম। শুধু শেষ বেলায় আপনার ও আপনার দলের এই বিশ্বাসঘাতকতার কথা লিখে রাখলাম এই খোলা চিঠিতে। ইতিহাস আপনাকে মনে রাখবে একজন ঘৃণিত ব্যক্তি হিসাবে।
ইতি,
একজন ব্লগার
টাইম ম্যাগাজিনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী, হত্যাকারীদের মৃদু ভর্ৎসনাও করেননি। বরং মুক্তমনাদের কঠোর ভাবে শাসিয়ে দিয়েছেন। সর্ষের মধ্যে ভূতটা কোথায় তার এর চেয়ে বড় প্রমাণ আর হয় না,
এই কথাটা আমি অন্য একটি ব্লগে ইতোমধ্যে বলেছি যে, পাকিস্তানি আদর্শে বিশ্বাসী বর্তমান আওয়ামী লীগের কাছে ব্লগার-লেখক হত্যার বিচার চাওয়া আর পাকিস্তানিদের কাছে একাত্তরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাওয়া একই কথা। আওয়ামী লীগ শুধু কথায় নয় কাজেও বারবার দেখাচ্ছে যে, তারা বিজ্ঞানমনস্ক, মুক্তচিন্তার, মুক্তবুদ্ধিচর্চার মানুষের পক্ষে নয়, তারা আসলেই মৌলবাদী আদর্শে বিশ্বাসী।
আসলে সবচেয়ে বিদারক ঘটনা হল, আওয়ামিলীগের তথাকথিত বুদ্ধিজীবীগন এখনও পেটের দায়ে হাসিনার চামচামি করেই যাচ্ছে…………….
আর হাসিনার একমাএ অগ্রাধিকার হচ্ছে জয় বাবাজিকে দেশের এক নম্বর ধনী বানানো, ভাতিজার ব্যাংক ব্যালেন্স এখন বিলিওন টাকার উপর….