প্রাচীণ কালে নিজেদের পারিপার্শিক অবস্থানটুকুকেই সারা দুনিয়া মনে করা হত। তখন অনেক কিছুই অজানা ছিল। সেই সুযোগে চতুরের চাতুরতার মাধুর্য দিয়ে অন্যকে মুগ্ধ করেছে। অনেকেই নিজেদের হীন বুদ্ধিমত্তাকে শক্ত ভিতে দাঁড় করার জন্য কাল্পনিক ঈশ্বর সৃষ্টি করে বলেছে – সমস্ত কিছুর সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বর। আমি তার প্রতিনিধি বা অবতার। তার নির্দেশেই তার কথাই বলি। তোমরা শুনলে তোমাদের এই ভাল, সেই ভাল হবে। না শুনলে জঘন্যতম নরকে পচে মরতে হবে। এভাবেই সৃষ্টিকর্তাদের সৃষ্টি হয়েছে। ধর্ম সৃষ্টি হয়েছে। আপাতদৃষ্টে দুনিয়াটা সমতল। নড়ে না, চড়ে না। চতুর ঈশ্বরপুত্র সেটাই চালিয়ে দিয়েছে। ঈশ্বর সূর্যটাকে পূর্ব দিকে উঠায় এবং পশ্চিম দিকে ঘোলা জলে ডুবায়। চতুর লোকেরা বলেছে ঈশ্বর পর্বত সৃষ্টি করেছে মাথার উপরের আকাশটাকে খুটা হয়ে ধরে রাখার জন্য। সেই আকাশেই ঈশ্বরের নিবাস। তার নাম স্বর্গ। ঈশ্বরের আনুগত্যশীলরা মৃত্যুর পরে ঐ স্বর্গে সুন্দরীদের নাচ দেখবে। অবারিত যৌন সুখ অনুভব করবে। মদ্য পান করবে। সিল্কের কাপড় পড়বে। যারা অনুগত হবে না তাদের জন্য নরক যন্ত্রনার ব্যবস্থা আছে। মূলা এবং শাস্তি দুটোই দেখানো হল। উপজাতি সৃষ্টি হল। সাম্রাজ্য হল। সাম্রাজ্য বৃদ্ধি এবং রক্ষায় মানবতাশূন্য দূর্ধর্ষ তাবেদারের অভাব হল না। এটাই সংক্ষেপে ঈশ্বর এবং ধর্ম সৃষ্টির ইতিহাস।

কিন্তু বিজ্ঞানের আবিষ্কার ধর্ম বিশ্বাসকে আঘাত হানতে থাকল বার বার। ১৫৪৩ সালে প্রকাশিত কোপার্নিকাসের সূর্য-কেন্দ্রিক তত্ত্ব ধর্মীয় মুরুব্বীদের মাথায় বজ্রাঘাত হানল। তিনি বললেন – পৃথিবী স্থির বস্তু নয়। সূর্যকে কেন্দ্রে রেখে পৃথিবী তার চারদিকে ঘুরছে এবং নিজেও লাট্টুর মত ঘুরছে। ধর্মান্ধরা কোপার্নিকাসের ওপর খড়্গহস্ত হল। কিন্তু মেরে ফেলল না।

গ্যালিলিও গ্রহদের স্বরূপ উদ্ঘাটন করে চললেন। বের করলেন চাঁদের মত অন্যান্য গ্রহ কয়টা করে উপগ্রহ আছে। ধর্মীয় মাতব্বরদের মাথায় হাত পড়ল। গৃহবন্দী করে রাখল গ্যালিলিওকে।
ব্রুনো বললেন – আমরা সূর্য এবং এর গ্রহ-উপগ্রহ নিয়ে যে সৌরজগতে বাস করি, তা ছাড়াও প্রচুর সৌরজগত আছে। সব মিলিয়ে এদের কেন্দ্রবিন্দু বলতে কিছু নেই। ধর্মীয় পাঁঠাদের বদ হজম হতে শুরু করল। আর সহ্য করতে পারল না। ব্রুনোকে পুড়িয়ে মারল। ধর্ম এবং ঈশ্বর রক্ষা পেল। ধর্মান্ধদের হীন, নীচ অভিপ্রায় চরিতার্থ হল।

মহাবিশ্ব সৃষ্টি রহস্য, এর ব্যাপ্তি এবং সম্প্রসারণ তত্ব উদ্ঘাটনে পশ্চিমা বিজ্ঞানীদের অবদানই বেশী। ক্রমশঃ বিশ্বাসী মূর্খ, প্রতিবন্দীদের সংখ্যা কমে এল। ধর্মগুরুরা হীনবল হল। দুর্বল ধর্মগুরুরা তাই বিজ্ঞানের সাথে সংঘর্ষ এড়িয়ে চলতে শিখল।

কিন্তু হিন্দু এবং ইসলাম ধর্ম বাহকরা পিছিয়ে থাকল। কারণ এখনও এই ধর্মগুলোর প্রচুর আবাল, মূর্খ, বোকা-সোকা, প্রতিবন্দী বিশ্বাসীতে ভর্তি। কিন্তু ইদানীং এরাও শিখে গেছে বিজ্ঞানকে থামিয়ে রাখা যাবে না। তাই চতুর চাপাবাজ প্রতারকরা অধূনা একটা নতুন কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে – “আরে, এসব বিজ্ঞানের কথা তো ঈশ্বর অনেক আগেই আমাদের আদি ধর্ম পুস্তকে লিখে রেখেছেন।”

কিন্তু সত্য এবং মিথ্যা দুটো একসাথে কীভাবে গ্রহন সম্ভব? যে পুস্তকে লেখা আছে পৃথিবী স্থির এবং সমতল। সেই পুস্তকেই লেখা থাকা কি সম্ভব যে পৃথিবী গোল এবং সূর্যের চার দিকে ঘুরছে?

এখানেই অভিজিতের উপস্থিতি – ‘না ধর্ম গ্রন্থে কোন বিজ্ঞান নেই।’ একটি ইবুক সম্পাদনা করলেন – “ধর্ম এবং বিজ্ঞান – সংঘাত নাকি সমন্বয়।” সংঘাত তো বটেই। পৃথিবী চক্কর দিয়ে ঘুরে এসেও কি বিশ্বাস করতে হবে পৃথিবী সমতল? বিশ্বাস করতে হবে যে সূর্য প্রতিদিন ঘোলা জলে ডুবে আর পরের দিন পূর্ব দিক থেকে উঠে?

অভিজিৎ পৃথিবী ছাড়িয়ে মহা বিশ্ব সৃষ্টির প্রান্তিক তথ্য নিয়ে এলেন প্রাঞ্জল ভাষায়। বুঝিয়ে দিলেন মাত্র ৬০১৫ বছর আগে ধপাস করে মানুষ এই পৃথিবীতে আসেনি। সমস্ত প্রাণীজগৎ মিলিয়ন মিলিয়ন বছরের বিবর্তনের ফসল। তিনি জোড় গলায় জাকির নায়েকের দাবীকে অগ্রাহ্য করলেন। বেদে বিজ্ঞানের আবিষ্কারকে উড়িয়ে দিলেন। ক্ষিপ্ত হল দুদলই। একদল ধিক্কার জানাল। আর একদলের এক জঙ্গী বলল – “অভিজিৎ রায় আমেরিকায় থাকে। বাংলাদেশে আসলে তাকে খুন করা হবে।” ২৬শে ফেব্রুয়ারী ২০১৫ অভিজিৎ বাংলাদেশের মাটিতে খুন হলেন। ব্রুনো খুন হয়েছিলেন ১৭ই ফেব্রুয়ারী ১৬০০ খ্রিষ্টাব্দে রোমে । এই মহাপুরুষরা জীবন দিয়ে গেছেন মানবতার সেবায়। এদের হাতেই গড়ে উঠেছে মানব সভ্যতা। এরা সভ্যতা উন্নয়নের ইঞ্জিনীয়ার। যারা সভ্যতার উন্নয়ন চায় না তাদেরই দরকার ব্রুনো এবং অভিজিতদের খুন করার।

ডঃ অভিজিৎ রায় মূলত বিজ্ঞান লেখক ছিলেন। বিজ্ঞানের জটিল বিষয়গুলো বাংলাভাষীদের জন্য সহজ, সুন্দর এবং সাবলীল ভাষায় লিখেছেন। রেখে গেছেন অনেক অসাধারণ প্রবন্ধ এবং বই, যেমনঃ “আলো হাতে আঁধারের যাত্রী’, “মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে” “অবিশ্বাসের দর্শন”, “শুন্য থেকে মহাবিশ্ব”, “সমকামিতাঃ বৈজ্ঞানিক এবং সমাজ-মনস্তাত্বিক অনুসন্ধান”, “বিশ্বাসের ভাইরাস”, ইত্যাদি। মহাবিশ্বের ফিজিক্সের প্রতি তাঁর তীব্র আকর্ষণ ছিল। মহাবিশ্বটা যে কত বড় তার একটি সুস্পষ্ট ধারণা বাংলাভাষীদের দেওয়ার জন্য প্রচুর লিখেছেন। ৪ঠা জুলাই ২০১২ পরীক্ষাগারে হিগস্‌ বোসন কণা প্রমানিত হল। অনতিবিলম্বে অভিজিৎ তাঁর বিস্তারিত বিশ্লেষণ নিয়ে হাজির হলেন –( “সার্ন থেকে হিগস বোসন – প্রলয় নাচন নাচলে যখন আপন ভুলে )। লেখার শিরোনাম যেমন কবিত্বপূর্ণ, পুরো লেখাটাই তেমনই কবিত্বপূর্ণ। অথচ লেখায় আছে ফিজিক্সের সুক্ষ্মতম বিষয়। মহাবিশ্বময় ফার্মিয়ন এবং বোসন কণাদের রাজত্ব, বৈশিষ্ট ব্যাখ্যা সহ আছে সুইজাল্যান্ডের ২৭ কিলমিটার পেরিমিটার দীর্ঘ আন্ডারগ্রাউন্ড এক্সপেরিন্টাল টানেলে এক্সপেরিমেন্টের বিস্তারিত বিবরণ এবং ব্যাখ্যা।

আমরা যে মহাবিশ্বটায় বাস করি তা ১৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন বছর আগে প্রচন্ড বিস্ফোরণ থেকে শুরু। শুরু থেকেই মহাবিশ্বটি ক্রমান্বয়ে সম্প্রসারিত হয়েই চলেছে। এ ভাবেই নতুন নতুন মহাবিশ্বের জন্ম হচ্ছে। অনুমান করা হয় ১০^৫০০টি মহাবিশ্ব ইতিমধ্যেই সৃষ্টি হয়েছে।
প্রতিটি মহাবিশ্বই যে কত প্রকান্ড তা ভাবতেও পারা যায় না। কল্পানাতীত এত প্রকান্ড মহাবিশ্বে ঈশ্বরের স্থান কোথায়? এই প্রশ্নটি করলেই ধর্মে আঘাত লাগে। ধার্মিকরা মাতাল হয়ে উঠে। পরিকল্পনা শুরু হয় – অভিজিৎকে সরাতে হবে।

সাম্প্রতিক কালে হাবল টেলিস্কোপ আমাদের নিকটতম গ্যালাক্সি Andromeda এর আংশিক ছবি তুলেছে। প্রায় এক ট্রিলিয়ন (১০১২)সূর্য (নক্ষত্র) আছে Andromeda গ্যালাক্সিতে। অভিজিৎ বেঁচে থাকলে এতদিনে বিস্তারিত একটা লেখা বেরোত Andromedaএর তারকারাজি নিয়ে। এরকম নতুন একটা সংবাদ এলেই আমি অভিজিতের অভাব অনুভব করি।
আমরা আমাদের পৃথিবীরই কণার সমন্বয়ে সৃষ্টি। Andromedaএর কোন একটি জ্যোতিষ্কের (সূর্যের) কোন একটি গ্রহে যদি কোন প্রাণের উন্মেষ হয়ে থাকে তাদের শরীরেও আছে আমাদের শরীরের মত একই কণাসমূহ। অভিজিত এই কথাগুলোই সুন্দর করে লিখতেন।
আজ থেকে প্রায় দশ বছর আগে বাংলাদেশের একটি ছেলে লিখেছিল – “মুক্তমনা আমার বিশ্বাসকে বদলে দিয়েছে।” এটা একটা অসাধারণ সত্য কথন। অভিজিৎ হ্যামিলনের বংশীবাদক। অভিজিতের বাঁশীর সুর হাজার হাজার বাংলাভাষী তরুণের অন্তরে গেঁথে গেছে। এরা প্রতিবন্দিত্ব থেকে মুক্ত হয়েছে, হচ্ছে। অভিজিতের অভিযাত্রা থামানোর উপায় নেই।

অভিজিৎ বিজ্ঞানের প্রান্তিক গবেষনার খবরগুলো প্রাঞ্জল ভাষায় আমাদের কাছে তুলে ধরতেন। মহাবিশ্বের সৃষ্টিতত্ত্ব আমি বিষদভাবে শিখেছি অভিজিতের কাছেই। ছোটবেলায় স্কুল আমাদের মগজে ঢুকিয়ে দিয়েছে আদমই পৃথিবীর প্রথম মানুষ। হিসেব করলে দেখা যায় এটা আজ থেকে মাত্র ৬,০১৫ বছর আগের কথা। বলা হয় সেই আদম বেচেছিল ৯৩০ বছর। এসব যে ঠাকুরমার ঝুলি জাতীয় গালগপ্প এটা খেয়াল করে দেখলাম অভিজিৎ রায়ের লেখা থেকেই। ১৩.৭ বিলিয়ন (১৩,৭০০,০০০,০০০) বছর আগে অকস্মাৎ আমাদের মহাবিশ্বের সূচনা। খন্ডবিখন্ড অগ্নিপিন্ড এদিক-ওদিক ছুটে চলেছে। ধুলিকনার মত এরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে লক্ষ কোটি আলোক বর্ষ দূরে। তেমনি একটা কণা আমাদের নক্ষত্র, সূর্য। সূর্যেরই একটা ছোট্ট অংশ পৃথিবী। তারই মাঝে আমরা মানুষ। মহাবিশ্বেরই কণিকা নিয়েই আমাদের দেহ। সেই একই কণিকা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে লক্ষ-কোটি আলোক বর্ষ দূরে – কোথায় কে জানে। অথচ আমরা সেই মানুষ অলীক ঈশ্বর নামক ভুতে বিশ্বাস করে আছি। আর ভুতের নামে মানুষ খুন করার লাইসেন্স বিলি করছি। অভিজিৎ এসব বিষয়গুলো সুন্দর করে বলতেন, লিখতেন। সেগুলো পুস্তকাকারে ছড়িয়ে আছে। তরুণরা পড়ে প্রতিবন্দীদশা থেকে মুক্তি পেয়ে বেড়িয়ে আসছে। এই মহা সত্যকে চাপাতি দিয়ে কয়দিন ঠেকিয়ে রাখা যাবে? মুক্তমনা, যুক্তিমনা তরুণরা চাপাতির ভয়ে ক্ষণিকের জন্য আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকবে। এদের শক্তি যত বাড়বে মোল্লা-পুরোতদের শক্তি তত কমবে। পশ্চিমা বিশ্বে ধর্মের রাজত্ব যেভাবে শেষ হয়েছে, বাংলাদেশেও সেভাবেই হবে। শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র।

হিন্দু ধর্মের বিধিবিধান আমাকে প্রশ্নবিদ্ধ করত ছোটবেলা থেকেই। আর তখন থেকেই অন্য আর একটি ধর্মের প্রতি আমি আকৃষ্ট হই। সেই ধর্মের ঐশী পুস্তকটি আমার চোখ খুলে দেয়। উপলব্দি করতে সক্ষম হই, দুনিয়ার সমস্ত ধর্মই মিথ্যার উপর দাঁড়িয়ে আছে। আর এসময়েই অভিজিত রায়ের মুক্তমনার সাথে সম্পর্ক গড়ে উঠে। তাঁর চোখ দিয়েই আমি মহাবিশ্বটাকে দেখতে শুরু করি। আমার সংশয় কেটে যায়। ডঃ অভিজিৎ রায়ের লেখা আমাকে দৃঢ় স্তম্ভের উপর দাঁড় করিয়ে দেয়। ঈশ্বর নিশ্চিত অলীক পদার্থ। ভূতের মতই ঈশ্বর অস্তিত্বহীন। তাই ঈশ্বরে বিশ্বাসীরা আমার কাছে মানসিক প্রতিবন্দি ছাড়া আর কিছু নয়। আমি আর ঈশ্বরকে ভয় করি না। ভয় করি ঈশ্বরে বিশ্বাসী মূর্খ প্রতিবন্দীদেরকে।

অভিজিতের অভাব সততই অনুভব করি। অভিজিতের মৃত্যুটা আমি এখনও মেনে নিতে পারছি না। মনে হয় দুঃস্বপ্নটা কেটে গেলেই অভিজিতের নতুন লেখা আবার পড়তে পারব। অভিজিতের মত বিরাট ব্যক্তিত্বকে আঘাত করার মত কেউ থাকতে এটা ধারণা করতে পারিনি। তিনি নিজেও ভাবেননি। তাই সমস্ত ভয়-ভীতি তুচ্ছ করে স্বীয় জন্মভূমে ফিরে গিয়েছিলেন তাঁর নতুন বই প্রকাশনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে অগনিত ভক্তদের টানে। দৈহিকভাবে অভিজিৎ আর নেই এটাই এখন সত্য। কিন্তু তাঁর লেখা এবং সত্যের আলোকবর্তিকা কোন চাপাতি নিভিয়ে দিতে পারবে না। অভিজিৎ আমার চেয়ে বিশ বছরেরও বেশী ছোট। কিন্তু অভিজিৎই আমার গুরু। তাঁর হাত দিয়েই আমি নিজেকে শক্ ভিতের উপর দাঁড় করাতে পেরেছি। বাংলাদেশের হাজারো তরুণ প্রজন্ম তাঁর বই পড়ছে। পড়বে। ধর্মীয় মূর্খতা থেকে বেরিয়ে আসবে। ধর্ম বিশ্বাসী, মূর্খ, আবাল প্রতিবন্দীদের সংখ্যা কমতে শুরু করবে শীগ্‌গীর। ধর্মের ধ্বজ্জাধারীরা দুর্বল হবে। দেশ বিশ্বাসের ভাইরাস থেকে মুক্ত হবে। মিথ্যার অরাজকতার অবসান হবেই হবে। বাংলাদেশে প্রচুর তরুণ-তরুণী ধর্ম থেকে বেরিয়ে এসে মুক্তবুদ্ধির চর্চা করছে। দশ বছর আগেও বাংলাদেশে “নাস্তিক” শব্দটার কথা শুনিনি। এদের সংখ্যা এখন হাজারে গুনতে হয়। ব্রিটেনেই বাংলাদেশের এক বিরাট অংশ ধর্ম থেকে প্রকাশ্যে বেড়িয়ে এসেছে।

সুপ্রিয় অভিজিৎ, তোমাকে আমি সর্বক্ষন স্মরণ করি। প্রতিক্ষণ মনে হয় এই বুঝি আমার দুঃস্বপ্নের অবসান হল, ইন্টারনেটে গেলেই আগের মত তোমার লেখা পাব। আজ ১২ই সেপ্টেম্বর। এই শুভ দিনেই তোমার শুভ জন্ম হয়েছিল। তুমি আলো হাতে এসেছিলে। আজ তুমি নাই। আমরাও থাকব না। কিন্তু তোমার মশাল প্রজ্জ্বলিত থাকবে চিরদিন। তরুণ প্রজন্মকে তুমি যুক্তিবাদী, মানবতাবাদী, এবং বিজ্ঞানমনষ্ক হওয়ার পথ দেখিয়েছ। তুমি কিছুই অবশিষ্ট রাখোনি। সামনে আছে শুভদিন। মোল্লা-পুরুতরা, সাধু-সন্যাসীরা আর আগের মত শক্তিশালী নয়। এরা অবহেলিত গুষ্টি। ধর্মবিশ্বাসীদের সংখ্যা কমে আসছে। পশ্চিমা দেশে ধর্ম নড়বড়ে হয়ে গেছে। বাংলাদেশ সহ বাকী বিশ্বেও তাই হবে। তোমার পথ সত্যের পথ, বিজ্ঞানের পথ। তুমি বাংলাদেশে কয়েক হাজার মুক্তমনা, বিজ্ঞান মনষ্ক, যুক্তিবাদী তরুণ-তরুণী তৈরী করে গেছো। এরা বাকীদের গড়ে তুলবে। তোমার জয়যাত্রা অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশের মাটিতে তোমার নামে সড়ক হবে, বিশ্ববিদ্যালয় হবে, গবেষণাকেন্দ্র হবে, হাসপাতাল হবে। তুমি আমার হৃদয় ভরা শ্রদ্ধা গ্রহণ করো।

নৃপেন্দ্র সরকার,
টেক্সাস।