লেখকঃ সোজাকথা
কন্নড় সাহিত্যের বিখ্যাত লেখক, গবেষক এবং কর্নাটক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য এম মালেশাপ্পা কালবুর্গি গত ৩০ শে আগষ্ট নিজের বাড়িতেই হিন্দু মৌলবাদীদের গুলিতে খুন হয়েছেন । ভারতের কর্নাটক রাজ্যের বাসিন্দা এই লেখক সারাজীবন গবেষনা করে কাটিয়েছেন । কন্নড় সাহিত্যের নব্য আন্দোলনের পথিকৃৎ কালবর্গি জীবদ্দশায় পদ্মভূষন ও জ্ঞানপীঠ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন । তিনি তার ক্ষুরধার যুক্তিবাদী লেখনীতে হিন্দু দেবদেবীর অসারতা নিয়ে সরব ছিলেন । হিন্দু দেবদেবী যে অকর্মন্য, তাদের যে, কোন অলৌকিক শক্তি নেই একথা তিনি বরাবরই বলেছেন । এদিন সকাল ৮.৪০ মিনিটে ধারওয়াড়ের কল্যাননগরে আততায়ী মোটরগাড়িতে করে এসে লেখকের দরজায় কড়া নাড়ে । লেখকের স্ত্রী দরজা খুললে, আততায়ী অধ্যাপক কোথায় আছে জানতে চান । স্ত্রীর পাশেই লেখক এসে দাঁড়ালে আততায়ী খুব কাছ থেকে দু চোখের মাঝামাঝি লক্ষ্য করে গুলি করেন । এভাবে অবলীলায় খুন করার পর ঘাতক খুব শান্ত মাথায় আস্তে আস্তে হেঁটে গিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা মোটর গাড়িতে উঠে এলাকা ছেড়ে বেরিয়ে যান । কালবুর্গিকে তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তাররা তাকে মৃত বলে ঘোষনা করে । সাতাত্তর বছর বয়সী কালবুর্গি ছিলেন আপাদমস্তক নাস্তিক । ধর্মীয় ভাবাবেগে ‘আঘাত’ করার অভিযোগে গত বছর জুন মাসে অধ্যাপক কালবুর্গি এবং লেখক ইউ আর অনন্তমুর্তির(এখন প্রয়াত) বিরুদ্ধে মামলা করেন এক হিন্দুত্ববাদী সংগঠন । কালবুর্গি অনন্তমুর্তির ব্রাক্ষণ্যবাদ, কুসংস্কার এবং ভন্ডামির বিরুদ্ধে লেখা উপন্যাস “হোয়াই নুড ওরশিপ ইস নট আ্যাকসেপটেবল” গ্রন্থের পাশে জোরালো ভাবে দাঁড়ান । গত বছর জুনের ৯ তারিখে কালবুর্গি তা নিয়ে প্রকাশ্যে বিবৃতি দেন । তিনি বলেন- “লেখক অনন্তমুর্তি তার লেখায় প্রমান করেছেন হিন্দু দেবদেবীরা আদৌ মহাশক্তিধর নয়” । এই বিবৃতির পরই বিশ্বহিন্দুপরিষদ, বজরঙ দল, শ্রীরাম সেনার রোষের মুখে পড়েন অধ্যাপক কালবুর্গি । হিন্দুত্ববাদী শক্তিগুলি রাজ্যজুড়ে বিক্ষোভ দেখায় । কুশপুতুল পোড়ায় । এমনই এক বিক্ষোভে তার বাড়ি লক্ষ্য করে ইটপাটকেল, সোডার বোতল ছোড়ে বজরঙ দলের কর্মীরা । এছাড়াও কালবুর্গি জীবনে বহুবার হিন্দুমৌলবাদীদের থেকে প্রাননাশের হুমকি পেয়েছেন ।
এম মালেশাপ্পা কালবুর্গি
মৌলবাদীরা কালবুর্গিকে হত্যা করে আবার বুঝিয়ে দিতে চাইল সনাতন পন্থার বিরোধিতা করলে খুনই ভবিতব্য । এর আগে এই ভারতেই ২০ আগষ্ট ২০১৩ সালে পুনেতে খুন হন মহারাষ্ট্রের কুসংস্কার বিরোধী আন্দোলন তথা জাতপাতের ভেদাভেদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আজীবন যোদ্ধা সুচিকিৎসক নরেন্দ্র দাভেলকর । তাকেও খুনিরা গুলি করে খুন করে । চলতি বছরের ফেব্রুয়ারীর ২০ তারিখে ঠিক একই কায়দা অবলম্বন করে মৌলবাদীরা কোলাপুরের যুক্তিবাদী নেতা গোবিন্দ পানেসারেকে খুন করেন ।
সব কটা হত্যার ক্ষেত্রে সরকারের গয়ংগচ্ছ মনোভাব । কোন খুনের ক্ষেত্রে প্রশাসন বিচার করা তো দুরে থাক এখনো পর্যন্ত একজনকেও গ্রেফতার করতে পারিনি ।
কিন্তু সম্প্রতি নাগরিক সমাজের ভুমিকাটাও হতাশাজনক । পূর্ব ভারতের অগ্রনী শহর কলকাতাতে কালবুর্গি হত্যা নিয়ে বিশেষ কোন জমায়েত লক্ষ্য করা গেল না । এই শহর অতীতে বহু ঘটনায় পথে নামলেও কালবুর্গি কিংবা বাংলাদেশের ব্লগার হত্যা নিয়ে নিরুত্তর । পুর্বভারতের এই অগ্রনী বাঙালি শহরটি সম্ভবত দিন দিন মৌলবাদীদের কবলে চলে যাচ্ছে । প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায় এই প্রগতিশীল শহরটিতে বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে লেখিকা তসলিমা নাসরিন থাকতে চেয়েছিলেন । মৌলবাদীদের কাছে এই শহরের হত্তাকর্তারা নিজেদের বিবেক বিসর্জন দেওয়ার কারনে এই শহর থেকেও একদিন তসলিমাকে এক কাপড়েই বিদায় নিতে হয়েছিলো । এই শহর এখন সম্ভবত প্রতিবাদ ভুলে গেছে । পুরনো গৌরব ভুলে এই শহর এখন মধ্যযুগে মুখ লুকাতে চাইছে । তাই এই শহরের কথা না বলাই ভালো ।
কোন হত্যার পরেই মৌলবাদীদের তরফ থেকে যেমন হুমকি আসে পরবর্তী হত্যা করার । ঠিক তেমন ঢঙে কালবুর্গিকে হত্যার পরই বজরঙ দলের যৌথ আহ্বায়ক ভূবিথ শেট্টির টুইট- “তখন ছিলো ইউ আর অনন্তমূর্তি, এখন এম এম কালবুর্গি । হিন্দুত্বকে নিয়ে তামাশা এবং একটি কুকুরের মৃত্যু । এবং প্রিয় কে এস ভগবান এরপর আপনি” ।
ভুবিথ শেট্টির টুইট
এই কে এস ভগবান হলেন আরও একজন কন্নড় লেখক । ইনিও নাস্তিকতার স্বপক্ষে লেখালিখি করেন ।
ঠিক একই ভাবে গত মাসের ৭ তারিখে বাংলাদেশী ব্লগের লেখক নিলাদ্রী চক্রবর্তী(নিলয় নীল)-কে মুসলিম মৌলবাদীরা চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে খুন করে গনমাধ্যমে ইমেল পাঠায় । এই ইমেলে অনেক হুমকির সাথে বলা হয়-“ যদি তোমাদের বাকস্বাধীনতা কোন সীমানা মানতে প্রস্তুত না থাকে, তবে তোমাদের হৃদয় যেন আমাদের চাপাতির স্বাধীনতার জন্য উন্মুক্ত থাকে, আমরা অচিরেই তোমাদের কাছে আসছি” ।
আনসার-আল-ইসলামের বিবৃতি
সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশেও মুক্তচিন্তার লেখকদের নির্বিচারে হত্যা, চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছে । ২০০৪ সালে হুমায়ুন আজাদের পর ২০১৩ সালের ১৩ জানুয়ারি ঢাকায় ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিনকে চাপাতি দিয়ে কোপানো হয়। একই বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে এবং পিটিয়ে অগ্রণী ব্যাংকের কর্মী ও ব্লগার জাফর মুন্সিকে হত্যা করা হয়। ১৫ ফেব্রুয়ারি কুপিয়ে হত্যা করা হয় ব্লগার রাজীব হায়দার শোভনকে। ২৮ ফেব্রুয়ারি হত্যা করা হয় ব্লগার মামুন হোসেনকে । ২ মার্চ ব্লগার জগৎজ্যোতি তালুকদার ও জিয়াউদ্দিন জাকারিয়া বাবুকে খুন করা হয়। ৭ মার্চ রাতে মিরপুরে কুপিয়ে জখম করা হয় ব্লগার সানিউর রহমানকে। ৯ এপ্রিল কুপিয়ে হত্যা করা হয় ব্লগার আরিফ রায়হান দ্বীপকে। জুনে কোপানো হয় গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ও ব্লগার রাকিব আল মামুনকে। ১১ আগস্ট তন্ময় আহমেদকে কুপিয়ে জখম করা হয়। এগুলি ২০১৩ সালে ঘটে যাওয়া আক্রমন গুলি ।
২০১৫ সালের ২৬ শে ফেব্রুয়ারী বইমেলায় চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় খ্যাতনামা বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়কে এবং তার স্ত্রী রফিদা আহমেদ বন্যাও আক্রমনের শিকার হয়ে মারাত্মক ভাবে জখম হন । একই বছরের ৩০ মার্চ বাসার সামনে রাস্তায় কুপিয়ে হত্যা করা হয় ব্লগার ওয়াশিকুর বাবুকে । ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশকেও ১২-ই মে তারিখে একইভাবে হত্যা করা হয়। এখন পর্যন্ত সর্বশেষ হত্যার শিকার হল নীলাদ্রী চক্রবর্তী । এবং নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে ফিরেছেন অন্তত ৬জন ব্লগার । এসব ছাড়াও বহু লেখকদের উপর ঝুলছে প্রাননাশের হুমকি । সম্প্রতি খবরে প্রকাশ একজন মহিলা ব্লগারকেও দুই অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি অনুসরন করেছে ।
পাকিস্তান নামক দেশটিতে মুক্তচিন্তকের জন্ম হয় না । কারন সেখানে মুক্ত শিক্ষার উপযোগী পরিবেশ নেই । কোন কারনে কেউ যদি মুক্তবুদ্ধির অধিকারী হয় তবে তাকে হয় বিদেশে, নয় দেশীয় কালা আইনে হয়রানি, নয় বেশীদিন বাঁচতে দেওয়া হয় না । মালালা ইউসুফজাই সাক্ষাৎ মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে নোবেল পেয়েছে ।
উপমহাদেশের লেখকদের এই সংকটজনক পরিস্থিতি বিবেচনা করে দেখা যাচ্ছে মৌলবাদীরা ভীষনভাবে সংঘবদ্ধ । এবং এরা একান্তই পরিকল্পিতভাবে এগোচ্ছে । এরা খুন ব্যাপারটা দিন দিন বেশ শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে । এদের গুপ্ত হত্যার কারখানাটি বেশ মজবুত । সে তুলনায় মুক্তবুদ্ধির মানুষেরা আগোছালো উদাসীন এবং ঐক্যবদ্ধ নয় । এদের নিজেদের মধ্যে সংঘবদ্ধ যোগাযোগ বিশেষ নেই বললেই চলে । নিরাপত্তা বলতে সরকার মুখাপেক্ষি হয়ে থাকা । কিন্তু সরকার বৃহৎ জনমতটাই প্রাধান্য দিয়ে চলার পক্ষপাতী । যা মুক্তমনাদের কাছে অত্যন্ত চিন্তার ব্যাপার । কোন লেখক আক্রান্ত হলে সরকারের তরফ থেকে বিশেষ কোন বিবৃতি পাওয়া যাচ্ছে না । গেলেও তা দু লাইন । লোক দেখানো ভন্ডামি । বাংলাদেশ সরকারের এক উচ্চপদস্থ প্রশাসনিক কর্তা যেভাবে লেখকদের নির্দিষ্ট সীমারেখার বাইরে লিখলে হুশিয়ারী দিয়েছেন তাতে প্রশাসনের আসল মুখোশ বেরিয়ে এসেছে । এতগুলো লেখক ব্লগার হত্যার বিচার করার আন্তরিকতা তাদের যে কতটুকু তা বোঝা গিয়েছে । আসলে সর্ষের মধ্যেই ভূত । এটা স্পষ্ট যে- এরা আন্তর্জাতিক বিশ্বের চাপে পড়ে, ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও দায়সারাভাবে এগোচ্ছে । ভারতেও কালবুর্গি খুনের তিন চার দিন কেটে গেলেও কোন গ্রেফতারির খবর নেই।
যে দেশে উচ্চবুদ্ধির বুদ্ধিজীবীরা নির্বিচারে খুন হন সে দেশে সাধারন মানুষ কতটা নিরাপদ তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না । সে দেশ বধ্যভুমি, মৃত্যু উপত্যকা । আর মৃত্যু উপত্যকা কারও দেশ হতে পারে না ।
এই মুহুর্তে পরিস্থিতির প্রয়োজনে দেখা যাচ্ছে যে সর্বাঙ্গীন ভাবে মুক্তবুদ্ধি যুক্তিমনস্কদের জন্য একটি জোরালো সংগঠন দরকার । যে সংগঠনের উদ্দ্যেশ্য সমস্ত মুক্তচিন্তকদের নিরাপত্তা প্রদান । ঊপমহাদেশে এমন সংগঠন নেই বললেই চলে। ইউরোপে পেন নামক একটি সংগঠন আছে । যারা পৃথিবী জুড়ে লেখকদের নিরাপত্তা দেয় । কিন্তু সংগঠনটিরও সীমাবদ্ধতা আছে । সংগঠনটির হাত বেশীদূর বিস্তৃত নয়। এই সংগঠনে ভারতীয় উপমহাদেশের কয়েকজন আক্রান্ত লেখক ঠাঁই পেয়েছে। কিন্তু সেটা যৎসামান্য । এই বড়মাপের লেখকগোষ্ঠির দায়িত্ব নেওয়ার পরিকাঠামো পেনের নেই ।
ঠিক পেনেরই আদলে এই উপমহাদেশেই একটি জোরালো সংগঠন তৈরির উদ্যোগ খুব তাড়াতাড়িই নিতে হবে। মৌলবাদীরা যেভাবে সংঘবদ্ধভাবে লেগেছে তাতে হাবেভবে মনে হচ্ছে আগামীতে লেখক ব্লগার হত্যা মহামারীর আকার নেবে । এখনি পরিস্থিতি বাগে আনতে না পারলে সমূহ বিপদ। দেশ আবার মধ্যযুগে ফিরে যাবে । সভ্যতার পর এই প্রথম আমাদের উপমহাদেশ আলো দেখার দিকে অল্প অল্প করে এগোচ্ছে । সেই পরিকাঠামোটাই ধ্বংস হয়ে যাবে । অনুভুতি সম্পন্ন সহৃদয় ব্যক্তিকে এগিয়ে আসতে হবে একটি সংগঠনের লক্ষ্যে । যে সংগঠন লেখকদের জন্য সমস্ত নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করবে, যে সংগঠন সরকারের বাকস্বাধীনতা হানিকর কালা আইনের জন্য বিরোধিতা করে পথে নামবে, যে সংগঠন যুব সমাজকে মুক্তচিন্তায় উৎসাহিত করবে ।
এখনও সব শেষ হয়ে যায়নি । খুব শীঘ্রই সবাই এগিয়ে আসুন । নইলে বড্ড দেরী হয়ে যাচ্ছে ।
লেখাটির মধ্যে তেমন ইঙ্গিত তো দেওয়া হয় নি ।মৌলবাদীদের প্রত্যেকের ভাষা আপাতত এক । এটাই বিশেষভাবে বলা হয়েছে । কিন্তু আপনি যে দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে মন্তব্যটি করেছেন সেটাতে মনে হচ্ছে বাংলাদেশে এদের জীবিত ছাড়া হয়নি এটা মুসলিম মৌলবাদীরা ঠিকই করেছে । প্রত্যেক হত্যাই নিন্দনীয় । মস্তিস্কের প্রকোষ্ঠে এই চিন্তাটি থাকাটাই মানবিকতা ।
সবই বুঝলাম, এখন আপনি বলুন, মুক্তমনারা কেন জনগনের সহায়তা পাচ্ছে না? বাংলাদেশের কথা বাদ দিন, ভারতের নাস্তিক খুন হবার পরেও রাস্তায় গুটিখানেক লোকও জমায়েত হয় না, কিন্তু গনেশের মিছিলে কোটি কোটি লোক থাকে। সমস্যাটা কোথায়? আপনাদের সংগঠনগুলো কি করছে যে বৃহত্তর সাধারণ মানুষ তাদেরকে পছন্দ করছে না??
@ বাংলাদেশী
দেখুন আপনি যে প্রসঙ্গ তুললেন তা বড় পরিসরে আলোচনা প্রয়োজন । সে আলোচনা না হয় অন্য দিনে বিস্তারিত করা যাবে । কিন্তু ছোট করে কিছু আপাতত বলা যাক ।
আপনার মুল এবং মোদ্দা কথা হল নাস্তিক এবং ধর্মে অবিশ্বাসী মুক্তমনারা কেন জনসমর্থন পাচ্ছে না । এই প্রসঙ্গটা মুক্তমনাদের কাবু করার জন্য শুধু আপনি না, অনেকেই তোলেন ।
জনভিত্তি এবং জনাদেশ দেখে কোন কিছু বিচার না করাই ভালো । আজ বাংলাদেশে আওয়ামি লীগ ক্ষমতায় আছে কাল অন্য কেউ জনসমর্থন পাবে । ভারতে কংগ্রেস ক্ষমতায় ছিলো এখন বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে বিজেপি এসেছে । পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে মমতা ক্ষমতায় এসেছে । কাল আবার পরিবর্তন হয়ে আবার অন্য কেউ আসবে । সবকিছুই কিন্তু জনসমর্থন । কিন্তু আজ যারা জনসমর্থন পেল না তারা কিন্তু নিজের দলটিকে ভে্ঙে দিলো না । যদিও আপনাদের মতে সেটাই করা সমীচিন । হিটলার জার্মানিতে বিপুল জনসমর্থনে একসময় ক্ষমতায় থেকে গনহত্যা চালিয়ে ছিলেন । এখন নিশ্চয়ই আপনি হিটলারকে সমর্থন করেন না । এখন তার জাতি শুধু নয় সমগ্র বিশ্ব হিটলারকে কিন্তু ইতিহাসের খলনায়ক হিসেবে দ্যাখে । কিন্তু এই হিটলার এক সময় বিপুল জনসমর্থন পেয়ে সমগ্র বিশ্বে নজরদারি করেছে । আজ সেই জনতাই তাকে আবার ঘৃনা করে ।
বিজ্ঞানী গ্যালিলিওকে সেকালে খ্রিষ্টান মৌলবাদীরা অকথ্য অত্যাচার করেছিলো । তাতে সে সময় একটা প্রতিবাদ জানানোর মতো লোক হয়নি । কিন্তু বর্তমানে সমস্ত মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হওয়ার কারনে যাজকরা তাদের পুর্বপুরুষের কৃতকর্ম যে অন্যায় তা স্বীকার করে নিয়েছে । সবকিছুই কিন্তু জনসমর্থন ।
এ রকমভাবে বহু উদাহরন দেওয়া যেতে পারে । মোদ্দা কথা হল, পৃথিবীর বৃহত্তর জনগোষ্ঠী বিজ্ঞানের, দর্শনের,সাহিত্যের,ইতিহাসের, ভুগোলের কচকচানি বোঝে না । সবাই সবকিছু যাচাই করে বু্দ্ধি বিবেচনা করে যদি চলত তবে পৃথিবী কবেই উন্নতির শিখরে পৌচ্ছে যেত । বৃহত্তর জনগোষ্ঠী প্রচলিত ধারায় মুখ লুকিয়ে বেঁচে থাকতে চায় । এরাই ধর্মীয় তীর্থক্ষেত্রে গিয়ে জনসমর্থন দেয় । পৃথিবীর একটা মুষ্টিমেয় অংশের মানুষ এই বৃহত্তর অংশকে পরিচালনা করে । এই মুষ্টিমেয় অংশের মানুষের কিন্তু ধর্মীয় তীর্থক্ষেত্রে গেলে চলে না । এদের দায়িত্ব বৃহত্তরকে পরিচালনা করা । শেষ কথা হল আপনি জনগনকে বোঝাতে পারলে জনসমর্থন আপনার । তাই মাঠ ভরা হাততালি মানেই সেটাই ঠিক, আর যারা হাততালি পাচ্ছে না তারা ভুল, এই ধারনা সবচেয়ে বড় মুর্খামো ।
আপনাদের কি মনে হয় অভিজিত, অনন্ত , নিলয় কে ভারতীয় হিন্দু সন্ত্রাসীরা সামনে পেলে জীবিত রাখতেন?
মোটেও না | সন্ত্রাসীদের হিন্দু মুসলিম কিছু হয় না | তাদের কোনো ধর্ম ও জাত থাকে না | ভারত বাংলাদেশ সর্বত্রই এখন মুক্তমনাদের ভয়ানক বিপদ
ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদটা কি করব মশাই? ওদের আছে আইন-আদালত-চাপাতি-মিডিয়া-লোকবল-অর্থবল-পেশীবল , আর আমাদের আছে শুধুই কলম | না আছে আত্মরক্ষার বর্ম আর না আছে লোকবল ,না আছে অর্থবল , না আছে বাহুবল | আমার মতে কিছুকাল মুক্তচিন্তা বন্ধ রাখাই সমীচীন |
পশ্চিমবঙ্গের বুদ্ধিজীবিরা কি বলবে মশাই ? তারা সব রাজনৈতিক দলের ভাড়া করা কলমবাজ মাত্র | দল চুপ তো তারাও চুপ | যদি তারা মুখ খোলে মৌলবাদের বিরুদ্ধে , অমনি তাদেরকে সাম্প্রদায়িক তকমা দিয়ে তাদের কেরিয়ারের বারোটা বাজিয়ে দেবে তাদেরই সতীর্থ রাজনৈতিকদলের ভাড়াটে কলমচিরা |
হওয়া এত প্রতিকুল যখন , তখন মুক্তচিন্তা কিছুকাল বন্ধ রাখাই সমীচীন বলে আমার মনে হয় | দেখুন যা ভালো বোঝেন |
@অতিথি লেখক
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ । আপনি পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে যা বলেছেন তা যথার্থই ।
কিন্তু আপনার এই মন্তব্যের জন্য আপনার সাথে একমত হতে পারলাম না –
হাওয়া সত্যিই মুক্তমনাদের জন্য সবসময়ই প্রতিকুল । সেই সক্রেটিসের যুগ থেকে । এখন এই প্রতিকুল পরিস্থিতি কারনে যদি মুক্তবুদ্ধি চর্চা বন্ধ করা হয় তবে দেশ মধ্যযুগে ফিরে যাবে । সেক্ষেত্রে বুদ্ধিহীন ধর্মান্ধদের কাছে হেরে গিয়ে বিবেক বিসর্জন দেওয়া ছাড়া আর কিছুই হবে না । এখন কিছুদিন বন্ধ রেখে আবার কিছু দিন পরে শুরু করলে মোলবাদীদের কাছ থেকে সবসময়ের প্রতিক্রিয়া একই পাওয়া যাবে । আর এটা কোন ভাড়া করা দোকান নয় যে ভাড়া দিতে পারছিনা বলে কিছুদিন বন্ধ রাখলে চলবে । মৌলবাদের সাথে কোন আপস করা চলবে না । আপস করলে ওরা আরও মাথায় চড়বে । পৃথিবীতে রক্ত বিহীন কোন কিছু অর্জিত হয়নি । লেখক গোষ্ঠীর একটা শক্তিশালী সংগঠন থাকলে এই রক্ত আমাদের কিছুটা কমই দিতে হত । এটা আমাদের সবার দাবি হওয়া উচিত । পালিয়ে বাঁচার ইচ্ছা আপাতত নেই ।
দেখুন এটাই আপাতত ভালো বোঝার চেষ্টা করছি ।
শক্তিশালী সংগঠন বলতে কি বুঝাতে চাইছেন? লেখক গোষ্ঠির কি শক্তি আছে ? তাদের না লোকবল আছে, না অর্থবল আছে , না মিডিয়া বল আছে | তাহলে শক্তিটা ঠিক কি ? কিসের জোরে আপনি লড়বার কথা ভাবছেন ?
পশ্চিমী শক্তি যদি একটু মুখ তুলে চাইত তাহলেও না হয় একটা কথা ছিল | কিন্তু সে আশাও তো নেই |
দেখুন ব্যক্তি আর গোষ্ঠীর মধ্যে বিস্তর পার্থক্য । কিছু ব্যক্তি যখন মিলিত হয় তার শক্তিটাও মিলিত হয় । এভাবে ব্যক্তি মিলিত হয়ে একটি গোষ্ঠীর সৃষ্টি হয় । লেখকদের বড় শক্তি কলমের শক্তি । যা পেশী শক্তির তুলনায় বৃহৎ । এই লেখকরা একত্র হয়ে, একই সংগঠনের তলায় এসে মিলিত হয়ে একটা দাবি তুললে সে দাবি সবার নজর কাড়তে বাধ্য ।
উদাহরন হিসেবে বলতে পারি, আমরা অনেক রাজনৈতিক দল দেখেছি যার সৃষ্টির প্রথম লগ্নে কোনও অর্থবল,লোকবল, মিডিয়াবল ছিলো না । অথচ আজ তারা বৃহৎ । কোন সংগঠন সৃষ্টিলগ্নে কোন বাহ্যিক বল বিশেষ থাকে না । সংগঠনের পালে হাওয়া লাগাতে পারলে তবেই বাহ্যিক বল মেলে । নইলে কোনও সংগঠনের অস্তিত্ব থাকে না । আমরা দিন দিন সংখ্যায় অনেক বৃদ্ধি পাচ্ছি অথচ ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজন বোধ করছিনা । সেজন্য কিছু অপ্রিয় ঘটনা ঘটে যাচ্ছে । আমি আমার লেখার মধ্যে বলেছি মৌলবাদীরা কত ঐক্যবদ্ধ । আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে পেন এর আদলে একটি সংগঠন তৈরি করতে পারি তবে অনেক লেখকদের নিরাপত্তা প্রদান করতে পারব, লেখকদের জন্য তৈরি কালা আইনগুলি নিয়ে আন্দোলন করতে পারব । আমরা কোন ঘটনায় কিছু কিছু দাবি করছি আমাদের লেখনীর মধ্যমে,সেটা বিশেষত ব্যক্তিকেন্দ্রিক দাবি হচ্ছে কিন্তু আমাদের তৈরি অরাজনৈতিক সংগঠন থেকে যদি দাবিটা উঠত তবে সে দাবির মাত্রাটাই আলাদা রকমের হত । পেন নামক সংগঠনটি কিন্তু সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন দেশের আক্রান্ত লেখকদের বাঁচানোর তাগিদে । কিন্তু আমাদের উপমহাদেশের এত লেখকের চাপ পেনের নেওয়ার ক্ষমতা নেই । তাই বিকল্প পেন প্রয়োজন ।
আমার মনে হয় পশ্চিম নিয়ে অত ভাবার কিছু নেই আমরা ঐক্যবদ্ধ হলে পশ্চিম এসে বসে আছে । পশ্চিমকে আনার মত জমি আমাদের প্রস্তুত করতে হবে । আগ বাড়িয়ে কেউ এসে কিছু করবে না । কেউ এসে আগবাড়িয়ে কিছু করল অথচ যেখানে করল সেখানকার কারো সাপোর্ট পেল না । এই সাপোর্ট না পাবার ভয়টাই সবার বেশী থাকে । এমন নাক ক্ষত দেওয়া পরিস্থিতি কেউ নিজে নিজে সৃষ্টি করবে না । আমাদের ঐক্যবদ্ধতা দেখে পশ্চিম আসবে ।
এইসব ভুইফোর সংগঠনগুলি শুরুতে সাধারণ মানুষের ইসু নিয়ে লড়েছে | তাই ধীরে ধীরে পালে হওয়া এসেছে | কিন্তু আপনাদের সংগঠন এমন কাজ করছে যে বৃহত্তর সাধারণ মানুষ তাকে পছন্দ করছে না | বরং ঘৃনা করছে | তাই শাসক দলও কিছুই করতে পারছে না কারণ অনেক বেশি সংখ্যায় মনুষ আপনাদের বিরুদ্ধে আছে | এমত অবস্থায় আপনারা কিভাবে সংগঠনের পালে হাওয়া আনবেন ?
আমি শুধু জানতে চাইছি যে আপনাদের প্ল্যান কতটা বাস্তবসম্মত |
আপনাদের আন্দোলন শুরু হবার আগে আমার ধারণা ছিল না যে বাংলাদেশে মৌলবাদী এত বেশি | আমি ভেবেছিলাম বাঙালি মুসলমানরা হাজার হলেও বিচারবুদ্ধি বিসর্জন দেবে না | কিন্তু যা দেখছি ……….
আপনারা লেখকদের নিরাপত্তা দান করতে চান , ভালো কথা | কিন্তু নিরাপত্তা মানে আমি বুঝি সশস্ত্র নিরাপত্তা যেমন সিকিউরিটি গার্ড ইত্যাদি | সেসব কিকরে দেবেন ? যেখানে পুলিশ , আইন আদালত আপনার পক্ষে নেই ?
তবে কি আপনারা দেশের বাইরে পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন ? সেটাই বা পারবেন কি করে ? একমাত্র উপায় বাইরের সংগঠনের সাথে লিংক আপ করে | কিন্তু দেশের সরকার বা বিদেশমন্ত্রক কি আপনাকে তা করতে দেবে ?
@আতিথি লেখক
আপনার বিশেষ কৌতুহলের জন্য ধন্যবাদ । আমিও আপনার সাথে একটি সদর্থক চিন্তা করতে পেরে আনন্দবোধ করছি ।
আমরা এ পর্যন্ত দেখেছি আমাদের যেসব লেখকগন হুমকির মুখে পড়েছে তাদের কারও কারও ক্ষেত্রে সরকার সশস্ত্র পুলিশ দিয়ে নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করেছে । এটা হয়েছে আমাদের ধারাবাহিক লেখনীর ফলে । বিশেষত সরকারকে চাপে রাখার ফলে । কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে সরকার সবার জন্য এ ব্যবস্থা করবার মানসিকতা দেখাচ্ছে না । এরই জন্য আমাদের প্রয়োজন একটা সংঘবদ্ধ সংগঠন । এই সংগঠন আমাদের দাবি দাওয়াগুলি প্রকাশ্যে আনবে । সংগঠনটি মানুষকে বোঝাতে সমর্থ হবে চেনা ছকের ধর্মগ্রন্থ নির্দেশিত চিন্তা ব্যতীত মুক্তচিন্তা বলে কিছু আছে ।
আর সবচেয়ে বড় কথা হলো কোন কিছু বাস্তবায়ন না হওয়ার আগে সবকিছুই দুর থেকে অনেক শক্ত মনে হয় । আমার প্রস্তাবিত সংগঠনের ক্ষেত্রে আপাতত সেটাই মনে হচ্ছে । এটা ঠিকঠাক বোঝা যাচ্ছে আমাদের চলার পথ মসৃন হবে না । কোন সংগঠন তৈরি করলে তার পথ যে এলাম, দেখলাম, জয় করলাম হবে এ আশা বাতুলতা মাত্র । আমরা যে প্লাটফর্মের বাসিন্দা সেটা সত্যিই দুরুহ একটি প্লাটফর্ম । কিন্তু তবুও বলব আমরা সংগঠিত হতে পারলে আমাদের শক্তিই আলাদা হবে । কারন আমরা দিন দিন সংখ্যায় কিন্তু বেড়ে যাচ্ছি । এক সময় একা ছিলো সক্রেটিস । এখন সমগ্র পৃথিবী জুড়ে আমরা বেড়ে যাচ্ছি । ভারতীয় উপমহাদেশ যেখানে পদে পদে কুসংষ্কার বিদ্যমান সেখানে আমরা দিন দিন সংখ্যাগরিষ্ঠ হচ্ছি । তাই আমরা একটি সংগঠনের আশা করতেই পারি । মৌলবাদীদের সাথে আপসহীন লড়াইয়ে যেটা সহায়ক হবে ।
যতদিন না আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ করতে পারবো , ততদিন এর কোন সমাধান হবে না।
আজ আমার , কাল আপনার … এভাবেই মুক্তচিন্তার মৃতের সংখ্যাটা বাড়তে থাকবে ।
শুধু মুক্তমনাদের ঐক্য হলেই চলবে না। এর জন্য প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক, উদার মানবতাবাদী, ধর্মনিরপেক্ষ ও অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক শক্তির সুকঠিন ও সুদৃঢ় ঐক্যবদ্ধতার প্রয়োজন। কারণ দিনশেষে আমরা কেউই রাজনীতির বাইরে নই।
আর ঠিক একারণেই আমরা সবাই জানি যে বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার একজন মুক্তমনা হত্যারও বিচার করবে না। ধর্মনিরপেক্ষতা ও অসাম্প্রদায়িকতা তাদের কাছে ফাঁকা বুলি মাত্র।
তবে কলকাতা সম্বন্ধে আপনার কথাগুলো খুব দূর্ভাগ্যজনক। কলকাতা বোধহয় সত্যিই তার বিপ্লব, বিক্ষোভ ও আন্দোলনের ঐতিহ্য হারিয়ে এক অন্তঃসারশূন্য, ভোগসর্বস্ব শহরে পরিণত হয়ে উন্নতির পথ খুঁজছে।