১। গত শনিবার ২৯ আগস্ট ৩8তম বিসিএস পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে ।এবার সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছে অবাক করা বিষয় হল বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন করা একজন ছাত্র প্রথম হয়েছে । এটা অনেকেই মানতে পারছেন না। কিন্তু না মানার কোন গ্রহন যোগ্য যুক্তিও তারা দেখাতে পারছে না। একারনে সমগ্র বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের উপরই অনেকে ক্ষিপ্ত। যারা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তারা নিজেদের একেবারে আকাশে তুলে বেসরকারির ছাত্রদের তুচ্ছতাছিল্য করা শুরু করে। বিসিএস পরীক্ষার ফলাফলকে কেন্দ্র করে মুল সমস্যার দিকে নজর না দিয়ে এসব কাদাছোড়াছুড়ি একেবারেই অগ্রহনযোগ্য। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রটি যে নিজের যোগ্যতায় প্রথম হয়নি বা সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যারা নির্বাচিত হয়েছে তাদের নির্বাচনও ফেয়ার হয়নি- একথা অনেকেরই বুঝতে কষ্ট হয়।
যে ছাত্রটি প্রথম হয়েছে তার একটি ফেসবুক পোস্ট দেখি।
insert 1

এখানে একটা বিষয় লক্ষনীয়, সে স্বীকার করেছে দুইজন পিএসসি সদস্য তার পরিচিত। একজনের সাথে তার সরাসরি কথা হয়েছে। সদস্য তাকে তার প্রথম হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছে। একজন পরীক্ষার্থীকে তার ফলাফল জানানো দোষের কিছু না। বহুদিন আগে আমি তথ্য অধিকার আইনে বিসিএস পরীক্ষা ফলাফলের উপর তথ্য জানতে চেয়েছিলাম। পিএসসির আইনজীবী ও তথ্য কর্মকর্তা যে যুক্তিগুলো দেখিয়ে তথ্য দিতে বিলম্ব করে পরে আর কোন তথ্যই দেয়নি সেগুলো হল-
১। তথ্য দিতে হলে বোর্ড মিটিং করা দরকার
২। পুলিশ প্রহরাধীন কক্ষে তথ্য থাকে
৩। পিএসসির চেয়ারম্যান দেশের বাইরে
উপরোক্ত ছাত্রটির ক্ষেত্রে সে সমস্যা হয়নি, সে ফোনে চাহিবামাত্রই দিতে বাধ্য থেকেছে পিএসসি। পিএসসির এ ধরনের অবস্থান পরিবর্তন একটা ইতিবাচক দিক। আশা করি ভবিষ্যতে সবাই এর সুফল পাবে।

২। ১৯৯৮ সালে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে এক অভাবনীয় ঘটনা ঘটে। সে বছর চট্টগ্রাম ক্যান্টনম্যান্ট স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এইচ এস সি পরীক্ষার বানিজ্য বিভাগে ১ম স্থানসহ বেশ কয়েকটি স্থান দখল করে ঐ কলেজের কয়েকজন ছাত্র। পরে মহসিন কলেজের শিক্ষকদের দিয়ে তদন্ত কমিটি করা হয় সেই ঘটনার রহস্য উদঘাটন করার জন্য। ইতিমধ্যে প্রথম হওয়া ছাত্র পত্রিকায় সাক্ষাতকার দিয়েছে সে কত ঘন্টা লেখাপড়া করেছে, কিভাবে পড়াশুনা করলে মেধাতালিকায় স্থান পাওয়া যাবে ইত্যাদি ইত্যাদি।
আর মহসিন কলেজে শিক্ষকদের উদঘাটন করা তথ্যে জানা যায় ঐ ছাত্রসহ আরো কয়েকজন ৩ ঘন্টা পরীক্ষার হলে কিছুই লেখেনি, বসেছিল। ঐ কলেজেরই কয়েকজন শিক্ষক পরে তাদের খাতা বের করে তাদের লেখার সুযোগ করে দেয়। এ রকম ঘটনা আরো কয়েকজন ছাত্রের ক্ষেত্রে ঘটেছিল। ইতিমধ্যে প্রথম হওয়া ছাত্র বৃত্তি নিয়ে অস্ট্রেলিয়া যায় উচ্চতর গবেষনা করে মানব জাতির কল্যানের জন্য।এ প্রসংগ হয়ত এখানে বেমানান । কিন্তু বাংলাদেশের পাবলিক পরীক্ষায় এ ধরনের ঘটনা বিরল নয়।
৩৪ তম বিসিএস পরীক্ষায় এডমিন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত ছাত্রদের রোলগুলো খেয়াল করুন। সব মেধাবী কি একই সময় রেজিস্ট্রেশন করেছে না অন্য কিছু?

৩৪ তম বিসিএসে শুধু ০৩৮ হাজারের ঘরে Generalক্যাডার। সব মেধাবীরা কি একই সময় From fill-up করছিল: 038294, 038414, 038518, 038536, 038538, 038543, 038577, 038641, 038655, 038658, 038668, 038677, 038688, 038696, 038726, 038734, 038735, 038738, 038739, 038758, 038766, 038797, 038813, 038858, 038860, 038863, 038870, 038873, 038874, 038878, 038898, 038906, 038919, 038920, 038953, 038971, 038994……

বিশেষজ্ঞরা সব সময় বলে এসেছে যে, বিসিএসের ভাগ্য নির্ধারন এখন ভাইভা বোর্ডের টেবিলে চলে এসেছে যেদিন থেকে ভাইভার পুর্নমান ২০০ হয়েছে। অংকের হিসেবে দেখেন, একজন প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় গড়ে ৫০ পেলে ভাইভার জন্য মনোনীত হয় ৯ বিষয়*৫০=৪৫০ নম্বর পেলে।। আর সর্বোচ্চ একজন প্রার্থী পেতে পারে ৬৮০~৭০০ নম্বর।সর্বোচ্চ নম্বরধারীকে যদি চাকরি দিবে না মনে করে তাহলে সে ফেল নম্বর[৭৯] পেতে পারে। তবে মেধা তালিকায় ফাইট করা ছাত্রদের লিখিত পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ব্যবধান ২০~৩০ এর বেশি হবে না। পেছন থেকে একজন ছাত্রকে মেধা তালিকায় আনতে গেলে ভাইভায় কারসাজির বিকল্প নেই।
আমি সেই অসম্ভব মেধাবী ছাত্রের কাছে জানতে চাইলাম তার পরিচিত সেই পিএসসি সদস্য দুজনের নাম কি?
তিনি জানালেনই না।

insert2

৩। বিসিএস শিক্ষার্থীদের একটা ফেসবুক গ্রুপ আছে সেখানে প্রায় দেড় লাখের উপর ছাত্রছাত্রী সদস্য হিসেবে আছে। একবার তাদের উদ্দেশ্যে আহবান জানিয়েছিলাম ২৮ তম থেকে ৩৩ তম বিসিএস পর্যন্ত যদি কোন প্রার্থীর নাম জানা থাকে যে সৎভাবে নিয়োগ পেয়েছে, তাহলে তার রেজি নং ও কততম বিসিএস তা জানানোর জন্য। কিন্তু কেউ জানাতে পারেনি। বরাবরের মত এবারও সেই আহবান জানিয়ে গেলাম। কমেন্টে জানাবেন ৩৪ তম বিসিএসে কেউ সৎভাবে নিয়োগ পেয়েছে কি না।

বিসিএস সহ সকল পাব্লিক পরীক্ষায় স্বচ্ছ মেধা তালিকা ও যৌক্তিক ভাইভা পুর্ন নম্বর এবং সৎ ভাইভা বোর্ডের বিকল্প নেই।