লেখক: অনিকীন
আত্মরক্ষার জন্য আপনার ব্রুস লি হওয়ার দরকার নেই। কমন সেন্স আর গাট ফিলিং অনেকটাই সাহায্য করবে। সবগুলো ঘটনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যারা আক্রমণের শিকার হয়েছেন , তাদের অনেকদিন ধরেই অনুসরণ করা হচ্ছিল। তাঁরা হয়ত তা জানতেন না বা জানলেও ততটা গুরুত্ব দেননি। ভুল থেকে শিক্ষা না নিলে একই ঘটনা ঘটতেই থাকবে। যারা ঝুঁকির মধ্যে আছেন তাঁরা ও সাধারণ মুক্তচিন্তার লেখকদেরও এই কৌশলগুলো জানা উচিত।
কিভাবে নিশ্চিত হবেন অনুসরণ করা হচ্ছেঃ
১। আশেপাশের পরিবেশ ও লোকজনের ব্যাপারে সবসময় সজাগ ও পূর্ণ মনযোগী থাকুন। বাসার সামনের গলিতে যে নতুন মুচিটা এসেছে সে আপনার নজর এড়িয়ে গেছে। অথবা বাসার সামনের চায়ের দোকানে নতুন একজন লোককে সবসময় বসে থাকতে বা আড্ডা দিতে দেখা যায় তাকে আপনি খেয়াল করেননি। টিশার্ট আর সানগ্লাস পড়া সাধারণ চেহারার যুবক আপনার পেছনে হেটে আসছে , আপনাকে অতিক্রম করে আপনার গন্তব্যের দিকেই যাচ্ছে আর আপনি খেয়াল করেননি। এরকম যেন কখনো কোনভাবে না হয়। আত্মরক্ষার প্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হল সবসময় সচেতন ও সতর্ক থাকা।
২। ব্যস্ত সড়কের এমন অংশ দিয়ে পার হন যেদিকে লোকজন খুব একটা পার হয়না। খেয়াল করুন কেও পেছনে আসছে কিনা।
৩। গণপরিবহনে উঠে আবার নেমে পড়ুন। এরকম কয়েকবার করুন । আপনার অনুসরণকারীকেও আপনার মত আচরণ করতে হবে।
৪। অনুসরণকারীর শুধু কাপড় নয় , মুখ ও জুতো মনে রাখার চেষ্টা করুন। কাপড় সহজেই বদলে ফেলা যায় , কিন্তু অনুসরণ করার সময় জুতা বদলানো কঠিন।
কিভাবে অনুসরণ করা এড়াবেনঃ
১। খুব বেশি উত্তেজিত হবেন না , মাথা ঠান্ডা রাখুন। অনুসরণকারীরা আপনার আচরণের প্যাটার্ন বোঝার চেষ্টা করে। তাদের কোনকিছুতে নিশ্চিত হতে দেবেন না।
২। অনুসরণ করা হচ্ছে বুঝতে পারলে পান-বিড়ির দোকান বা মোবাইল রিচার্জের দোকান এধরণের জায়গায় থামুন। সোজা অনুসরণকারীর চোখের দিকে তাকান। এতে সে ধরা পড়ার শঙ্কায় চোখ সরিয়ে নেবে।
৩। যদি বুঝতে পারেন যে অনুসরণ করা হচ্ছে তবে প্রথমে অনেক লোক আছে এমন কোন জায়গায় যাওয়ার চেষ্টা করুন। কোন রেস্টুরেন্টে গিয়ে চা দিতে বলুন। ওই অবস্থায় বাসা থেকে দূরে থাকলে সরাসরি বাসায় যাবেন না। ঘনিষ্ঠ কোন বন্ধুকে ফোন করুন।
৪। অনুসরণকারী ছোটানোর জন্য স্বাভাবিক ভাবে হেঁটে আসুন , তারপর দৌড়ে মোড় পার করে দৃষ্টির আড়ালে চলে যান। এসময় মোবাইলে কথা বলার ভান করে কোন বিল্ডিং বা ব্যক্তিগত জায়গায় সাময়িক ভাবে অবস্থান করতে পারেন।
৫। কখনোই অফিস বা বাইরের অন্য কোন জায়গা থেকে সরাসরি বাসায় যাবেন না। আপনাকে যদি টার্গেট করা হয় তবে এর মধ্যেই তারা আপনার আচরণের প্যাটার্ন জানে।
৬। আপনার কোন কাছের বন্ধুকে অনুসরণকারীদের ওপর নজর রাখতে বলতে পারেন, কিন্তু খুব সতর্কতার সাথে আর পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়ে।
যা অবশ্যই করতে হবেঃ
[ এই অংশটা অবশ্যই আপনাকে করতে হবে। এটা না করলে বাকি অংশটার আর কোন উপযোগিতা নেই। ]
১। এখনই বাসা পরিবর্তন করুন। আপনাকে ধরে নিতে হবে এর মধ্যেই আপনাকে ট্রেক করা হয়েছে এবং আপনার উপর নজরদারী চলছে। (বাসা বদলানোর সময় এবং নতুন বাসায় আপনি যাবেন না)। এই মুহূর্তেই যদি বাসা পরিবর্তন সম্ভব না হয় , তবে কোন নিকটাত্মীয়ের বা কাছের বন্ধুর বাসায় বেশ কয়েকমাসের জন্য চলে যান (এবং অবশ্যই সতর্ক থাকবেন যাতে নতুন জায়গায় কেও অনুসরণ করে যেতে না পারে)।
২। চাকরি করলে (উপরি দিয়ে বা অন্য যে কোন ভাবে) দ্রুত দেশের অন্য কোন বিভাগে চলে যান। কিভাবে যাবেন আপনি জানেন। একেবারেই সম্ভব না হলে অন্য কোন চাকরির চিন্তা করুন। বেঁচে থাকলে অনেক কাজ করতে পারবেন। কাওকে বলতে যাবেন না কোথায় যাচ্ছেন। মনে রাখবেন , যে জিনিসটা দুই জন জানে, সেটা সবাই জানে।
৩। অনলাইন যোগাযোগ মাধ্যমের একাউন্টে আসল ছবি বা নাম অথবা ঠিকানা বা আইপি এড্রেস (অর্থাৎ আপনাকে সনাক্ত করা যায় এমন কোন ধরণের তথ্য) দিবেন না। দয়া করে এনোনিমাস হোন, টর (https://www.torproject.org/) ব্যাবহার করুন। সম্ভব হলে কোন নির্ভরযোগ্য vpn ব্যাবহার করুন।
মৌলিক আত্মরক্ষাঃ
১। কোন রুটিন অনুসরণ করবেন না , উচ্চ ঝুঁকি অবস্থায় আপনার কোন রুটিন থাকতে পারেনা। আপনি প্রতিদিন ৯টায় অফিসের জন্য বের হন , ৫টায় বাসায় ঢুকেন , ৭টায় চা খাওয়ার জন্য রাস্তার মোড়ে যান। রাত ৯.৩০ এ টায় গলি দিয়ে একা বাসায় ফিরেন। খুনিদের কাছে এর চেয়ে ভালো কোন তথ্য আর হতে পারেনা। এই প্যাটার্নটাই আপনাকে শেষ করবে। তিনজন ব্লগার খুন হয়েছেন সকালে অফিসে যাওয়ার সময়। গুরুত্বপূর্ণ কাজের সময়টুকু অন্যভাবে বিন্যস্ত করুন।
২। ভাল মানের আর্মি কমবেট নাইফ সবসময় সাথে রাখুন। হাঁ চাপাতি রামদা পিস্তলের সামনে আপনি তখনো ঝুঁকিতে থাকবেন , তবে খালিহাতে আপনার বাঁচার সম্ভাবনা ১% থেকে তা ৫০% এ নিয়ে যেতে পারে। এটা ব্যবহার করার ও দ্রুত পকেট থেকে বের করার অভ্যাস ভালোভাবে করুন।
৩। টুপি ও মাক্স ব্যবহার করুন (এবং এগুলো রাস্তার মাঝখানে খুলে ফেলবেন না) । খুব কাজে আসে। (বুদ্ধিমানেরা ইশারাতেই বুঝে নেয়)।
৪। যেখান থেকে সবচেয়ে কম আশা করা হয়, সেখান থেকেই আক্রমণ আসে। পেছন থেকে আক্রমণ করতে দিবেন না। শত্রুর দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করতে শেখা আপনাকে বাঁচিয়ে দেবে।
৫। সরাসরি অফিস বা অন্য কোন জায়গা থেকে বাসায় যাবেন না। কখনো সরাসরি গন্তব্যে যাবেননা। যতটা সম্ভব আলাদা আলাদা পরিবহনে আসুন। যেখানে নামার কথা তার কয়েক কিলোমিটার আগে বা পরে নামুন। অলি গলি দিয়ে ঘুরে যখন নিশ্চিত হবেন পেছনে কেও নেই , তখনই গন্তব্যে আসুন।
৬। আপনি সচরাচর যে সব কাপড় ব্যবহার করে বাইরে বেরোন সেগুলো দয়া করে আর পরবেন না।
৭। বাসা বা অফিস থেকে একা বের হবেন না। কমপক্ষে দুজন বের হন। একা একজনকে আক্রমণ করা যতটা সহজ, দু জনকে একসাথে ততটা নয়। তাছাড়া চরম মুহূর্তে একজন অন্যজনকে সাহায্য করতে পারবেন। আশপাশের লোকজনের ব্যাপারে কখনো মনযোগ হারাবেন না। অসতর্ক মুহূর্তেই সবচেয়ে বেশি আক্রমণ হয়। আপনি জঙ্গিদের চেয়ে বেশি বুদ্ধিমান এটা প্রমাণ করুন।
চূড়ান্ত মুহূর্তে ঃ
১। এটা খেলা নয়, আপনি জীবন আর মৃত্যুর মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছেন। আপনার সবচেয়ে ভালনারেবল জায়গাগুলো চিনতে শিখুন। প্রায় সব আক্রমণই করা হয়েছে ঘাড়, মুখমন্ডল, চোয়াল, মাথায়। এগুলো সবসময় রক্ষা করুন।
২। পালাতে শিখুন। পেছনে সরে আসা আত্মরক্ষার খুব গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। টিকে থাকাই যুদ্ধের প্রথম কথা। আজ বেঁচে থাকলে কাল আবার কাজে নামতে পারবেন , কিন্তু আজ মারা গেলে এখানেই সব শেষ। আক্রমণকারীদের কাছ থেকে যতটা সম্ভব দূরত্ব তৈরি করুন। দ্রুত চিন্তা করতে শিখুন।
৩। অবস্থা যদি এমন হয় যে আঘাত এড়ানোর কোন উপায়ই নেই, তখন আপনার ভেতরের পশুটাকে বের করে নিয়ে আসুন। হয় তারা থাকবে নয়ত আপনি থাকবেন। আপনার পক্ষে যা করা সম্ভব সবই করুন। আক্রমণকারীর চোখে বালি ছুঁড়ে মারা , কুচকিতে (groin) জোড়ে লাথি মারা, চোখ বা কান উপড়ে ফেলা এরকম। ছুড়ি দিয়ে আঘাত করার সময় আক্রমণকারীর সবচেয়ে ভালনারেবল জায়গায় আঘাত করুন। আঘাত এড়ানো কোনভাবেই সম্ভব না হলে হাত বা বাহুর বাইরের অংশে তা সামলান। বাইরের অংশে অনেক বেশি পেশীকলা থাকে যেখানে আঘাতে ক্ষতি তুলনামূলক কম হয়। আঙ্গুল বা হাত কাটা গেলেও আপনি বেঁচে থাকবেন। ঘাড়ে অনেক রক্তবাহী শিরা , ধমনি ও স্নায়ুতন্তু আছে যেগুলো কাটা গেলে খুব বেশি রক্তক্ষরণে দ্রুত মারা যাবেন।
শুধু ছুড়িই নয় , হাতের কাছে পাওয়া সবকিছুই যেমন পাইপ, লাঠি, কলম, বোতল আপনি ব্যাবহার করতে পারেন। যতটা সম্ভব দূরত্ব তৈরি করার চেষ্টা করুন। আক্রমণকারীর চোখ বা কান উপড়ে ফেলতে পারলে অবস্থা আপনার দিকে চলে আসবে।
আরো যেসব কাজ করা উচিত –
১। বাসার গেইটের বাইরে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগান। সন্দেহজনক লোকজনের উপস্থিতির ব্যাপারে আগেই সাবধান হতে পারবেন।
২। অনলাইন থ্রেটকে ছোট করে দেখবেন না। বাসার অন্য লোকদের সচেতন করে তুলুন। পরিচিত না হলে কোনভাবেই দরজা খুলতে বলবেন না।
৩। ফোনের ডাটা এনক্রিপ্ট করে রাখুন। আপনি যদি স্মার্টফোন ব্যাবহার করেন তবে সেটিংস থেকে সহজেই ফোন এনক্রিপ্ট করতে পারবেন। সিমে কোন নাম্বার রাখবেন না।
কৌশলগুলো কখনো চাপ নয় , চ্যালেঞ্জ। টিকে থাকার যুদ্ধই এখানে আসল। সান জু এর the art of war বইটা পড়ুন (wikisource এ পাবেন)। শুধু পড়বেন না, এর প্রতিটা লাইন আপনার নিজের অংশ করে নিন। অবশ্যই লেখালেখি চালিয়ে যান। আপনার মস্তিষ্ক পুরোপুরি কাজে লাগন। কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করুন আপনি মৌলবাদী ধার্মিক জঙ্গিদের চেয়ে অনেক বেশি বুদ্ধিমান।
শেয়ার করেন।
এরা দশ বছর আগে থেকে মুক্তমনার পিছু লেগেছিল, আজও আছে প্রতি মুহুর্ত প্রতি সেকেন্ডে মুক্তমনায় কী বলা হচ্ছে কী লেখা হচ্ছে তা তারা রেকর্ড করছে, স্ক্রিনশট নিয়ে তাদের ফোরামে প্রকাশ করছে, হয়তো সরাসরি ফারাবী বা আনসারুল্লাহদের কাছে পৌছাচ্ছে। এরা দূরে অদৃশ্য অবস্থান থেকে মুক্তমনার সদস্য লেখকদের খুনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে।
জটিল হয়েছে দাদা
এইতো ভুলটা করেই ফেললেন। আরে ভাই ঘাতক কিংবা ঘাতক পরিচালক তো সারাদিন মুক্তমনাতেই ঢু মারে। টেকনিক গুলো আর ডিফেন্স রইলো কই? আমার মনে হয় এরকম সময়ে এরকম মেসেজ পার্সোনালি দেয়ার চেষ্টা করা উচিৎ।