নীলয়, ওয়াশিকুর বাবু, অনন্ত বিজয় দাশ এরা সবাই মাঝারি ধরনের চাকরি করতো। বাংলাদেশের মানুষ যেখানে দুইটি পয়সা কীভাবে বাড়তি ইনকাম করা যায় সেই চিন্তায় মত্ত থাকে সেই সময় এই মানুষগুলো সমাজকে ধর্মান্ধমুক্ত, কুসংস্কার মুক্ত অথবা কেউ ধর্মহীন একটি সমাজের কথা ভাবত।

নীলয় দুই বছর আগে পরিবারের অমতে বিয়ে করে। নীলয় একটি এনজিওতে চাকরি করতো! সেই মেয়েটি ভালোবাসার টানে নীলয়কে বিয়ে করে। সেই মেয়েটির আজকে সব শেষ। শুধু মাত্র ধর্মের সমালোচনার জন্য প্রাণ নিতে হল প্রিয় মানুষটির।

ডিবি পুলিশ ভাবে ধর্মের সমালোচনা করলে নাকি বিভিন্ন বিদেশী সংস্থা থেকে টাকা পাওয়া যায়, দেশের মানুষভাবে ধর্ম নিয়ে লিখলেই ইউরোপ আমেরিকায় ভিসা ফ্রি! আসলে কী দরকার ছিল মরার দেশে এসব নিয়ে লেখালেখির করার। লেখালেখি, ব্লগ এগুলো একটি সভ্য রাষ্ট্রের জন্য। যে রাষ্ট্রে পায়ু পথে গ্যাস পাম্প করে শিশু হত্যা করা হয়, যে রাষ্ট্রে নাস্তিক হত্যার খবর শুনে ধার্মিকরা প্রকাশ্যে উল্লাস করে সেই রাষ্ট্রে ব্লগিং করা তো অপরাধ।

বিরোধী দলে থাকার সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা হুমায়ুন আজাদকে দুই মাইল হেঁটে দেখতে গিয়েছিলেন। কারণ আর্মি ওনার গাড়ি হাসপাতাল পর্যন্ত যেতে দেয় নি। তখন কিন্তু নাস্তিক ট্যাগের ভয় ছিল না। কিন্তু এখন অভিজিৎ রায়ের পিতাকে কল করতেও ভয় পান প্রধানমন্ত্রী। কারণ তার সরকার নাস্তিক ট্যাগ নিতে চায় না। রাষ্ট্রের আইন সবার জন্য সমান তা এই মুল্লুকে বোঁঝাবে কাকে? যেসব ব্লগার নিহত হয়েছে সেসব ব্লগারদের মধ্যে একমাত্র রাজিব হায়দারের খুনীদের পুলিশ ধরতে পেরেছে। কারণ পুলিশের উপর তখন চাপ ছিল। গণজাগরণ মঞ্চের হাওয়া তখন গরম ছিল, এ কারণে প্রধানমন্ত্রীও ছুটে গিয়েছিলেন রাজিবের বাসায়। আসলে সবকিছু স্ট্যান্ডবাজি। যারা বিএনপির আমলে মৌলবাদী, সংখ্যালঘু নির্যাতনের ফেনা তুলে ফেলত তারা এখন নীরব। তারা তাদের সরকারকে বিব্রত করতে চায় না। ওয়াশিকুর বাবুর খুনিদের ধরে শিখণ্ডীরা! পুলিশ সেই মামলার কোন অগ্রগতি আজো দেখাতে পারে নি।

স্বাধীনতার পর শেখ মুজিব ইসলামি ফাউন্ডেশান বানালেন, মুসলিম বিশ্ব যেন স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃত দেয় তার জন্য OIC তে যোগ দিলেন। কিন্তু তারপরও ইসলামিকদের মন পেলেন না। তাদের হাতেই খুন হতে হল আপনাকে। শেখ মুজিব মারা গেছেন এই অগাস্টের ১৫ অগাস্ট আবার ১৯৭৫ সালে এই মাসে সবচেয়ে বেশি স্বাধীন দেশের স্বীকৃতি মিলেছে ইসলামিক দেশগুলো থেকে। পাকিস্তান চাল পাঠায়, সৌদি আরব শেখ সাহেবের মৃত্যুর খবর শুনে স্বাধীন বাংলাদেশের স্বীকৃতি দেয়।

তাই প্রধানমন্ত্রীকে ইতিহাস পাঠের মাধ্যমে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, যাদের মন রক্ষায় এতো ভয়ে আছেন, ক্ষমতা ও ভোটের জন্য এতো তোষামোদ করছে আপনি নামাজ পড়ে কপালে দাগ করে ফেললেও তাদের মন পাবেন নাহ। গত মেয়াদে আপনার ধর্মমন্ত্রীর বাড়িতে হিজবুত তাহরীর সদস্যরা মিটিং করেছে তা আমরা ভুলে যাই নি। আমরা ভুলে যাই নি আপনার পুলিশ বিভাগ আমাদের জিডি নেয় নি। উল্টো থানায় গিয়ে আমাদের ধমক খেতে হয়েছে।

আর যারা বলেন ইসলামের সাথে এসবের সর্ম্পক নেই তাদের উদ্দেশ্যে বলছি- ধর্ম সংস্কারের উদ্দোগ না নিলে, ধর্মের নামে হত্যা, ধর্ষণ বন্ধ করতে না পারলে আপনার ধর্মটি সন্ত্রাসবাদ ধর্ম হিসেবে পাকাপোক্ত প্রতিষ্ঠিত হবে। মসজিদে যখন ধর্মের নামে ভিন্ন ধর্ম সর্ম্পকে ঘৃণা ছড়ানো হয়, ওয়াজে যখন নাস্তিকদের হত্যার হুমকি দেওয় হয় তখন আপনি চুপ করে থাকেন। এখানেই আপনাদের সুবিধাবাদিতা। আপনার ধর্মের নামে হত্যা হলে এর দায় আপনার ধর্মকেই নিতে হবে। পৃথিবীর সকল ধর্ম কমবেশি সংস্কার হয়েছে তাই তাদের ধর্মে আপনার ধর্মের মতন হিংস্রতা নেই, কথায় কথায় কল্লায় ফেলে দেওয়ার রেকর্ড নেই। একবার ভাবুন তো পৃথিবীতে কয়েক হাজার ধর্ম থাকা সত্ত্বেও শুধু আপনার ধর্মের মানুষ হত্যায় জড়িয়ে পড়ছে কেন? ইসলাম আসার পরেও পৃথিবীতে ৩১টি (সম্ভবত) ধর্ম আসে। তাই ইসলামই পৃথিবীর শেষ ধর্ম নয়, ইসলামই পৃথিবীর শিশু ধর্ম নয়। তাই নিজের ধর্ম সংস্কার করুন, ধর্মীয় সন্ত্রাস সর্ম্পকে সমাজ ও পরিবারকে সচেতন করুন। আর না হলে পৃথিবীতে ইসলাম সন্ত্রাসের ধর্ম হিসেবে স্থান করে নিতে আর বেশি সময় নেবে নাহ। কারণ কাঁদা মাটির দেশ থেকে বরফের চূড়া কোথাও আজ ইসলামিক সন্ত্রাসীদের থেকে কেউ নিরাপদ নয়।

ব্লগার হত্যার বিচার চাই।