এই লেখাটা আমার গত কয়েক মাসের বেশ অনেকগুলো পর্যবেক্ষণ, ইতস্তত বিক্ষিপ্ত চিন্তা এবং বিশ্লেষণের সংকলন – উগ্র নাস্তিকতা, ভল্টেয়ার লেকচার, অভির গুফিত্ব সহ আরও কিছু ব্যাপার নিয়ে। অভিজিৎ থাকলে এই লেখাটাকে সম্ভবত কতগুলো ‘আপঝাপ’ আজাইরা কথা বলে আখ্যায়িত করতো। খুশী হয়ে বলতো ‘তুমি তো এরকম আপঝাপ লেখা লেখো না, গান কবিতার লাইন উদ্ধৃত কর না, যাক চান্দু, তুমি এতদিনে লাইনে আইছো!’ কথায় কথায় যেখানে সেখানে কেন কবিতা ‘হান্দায়’ দেয় এই জন্য অভির সাথে কত খ্যাচখ্যাচিই না করেছি!
পাঁচ মাস পার হয়ে গেলো, কী অদ্ভুত এক নীরবতায়। এত হৈচৈ, চারদিকে এত মানুষের ভিড়, কিন্তু কী অদ্ভুত এক নীরবতায় ছেয়ে থাকে আমার আরেক সত্ত্বা। অভির এই না থাকাটা চিরজীবনই থাকবে আমার একান্ত হয়ে, কত কিছুই তো আর ফিরে আসবে না – সেই ‘প্যাচপ্যাচানি’ প্রেম চর্চা, চিঠির পর চিঠি লেখা, নিত্যদিনের অভ্যস্ততায় বা ক্ষুদ্রতায় প্রেম কমে গেলে বা হারিয়ে গেলেই আবার নতুন করে ঝালাই করার আপ্রাণ চেষ্টা, ওর সেই অকল্পনীয় রকম উদারতার ছোঁয়া, স্বেচ্ছারিতার দেওয়াল উপড়ে ফেলে ঝগড়া করার আনন্দ, লেখায় ডুবে যাওয়ার ফলে ওর অদ্ভুত সেই উপেক্ষার বিরুদ্ধে অনন্ত সংগ্রাম… সবকিছুই। সে যাক, এ কষ্ট নিয়ে তো পাতার পর পাতা লেখা যায়, কত লক্ষ মানুষও গেছে বা যাচ্ছে এই কষ্টের মধ্য দিয়ে। কাজের কিছু কথায় আসা যাক…
ভল্টেয়ার লেকচার এবং অভির গুফিত্ব
কয়েকদিন আগে মুক্তমনার পক্ষ থেকে ববস এওয়ার্ড নেওয়ার সময়, ভল্টেয়ারের লেকচার দেবার সময় আমার ‘হাসিমুখ’ দেখে কেউ কেউ বেজায় বেজার হয়েছেন জানতে পারলাম। সত্যি বলছি, আমি আসলেই ওনাদের দুঃখটা হৃদয় দিয়েই অনুভব করতে পারছি ইয়ুটিউব ভিডিওটা দেখার পর। ওনাদের কষ্ট হওয়ারই কথা, খুবি যৌক্তিক! একে তো সদ্য বিধবা, ক্যান্সারের হাতে চিরবন্দি, তার উপরে আবার এরকমভাবে অকাল্পনিক নৃশংস হামলার রেশ কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই কেউ কী এরকম হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়তে পারে? জিম আল-খালিলির সাথে পাতানো অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে ইয়ার্কি মারতে পারে? তার উপরে আবার মেয়ে মানুষ, অশ্রুজলে ভেসে যাওয়াই যার বিবর্তনীয় জৈবিক কর্তব্য! কী যে লজ্জার কথা! তবে শুধু ছোট্ট একটা সমস্যা এখানে – এনারা কেউই অভিকে চিনতেন না ভালো করে (ফ্রেন্ড, বেস্ট ফ্রেন্ড শব্দগুলোর অর্থই হয়তো বোঝেন না তারা)। কখনো সময় কাটান নি ওর সাথে সেভাবে। মানুষ অভিজিৎ রায়কে চেনার ‘দুর্ভাগ্য’ তাদের হয়নি। আমার মতো এরকম তারছেড়া একটা মানুষের জন্যও অভিজিৎ রায় ছিল একটা বিশাল বিস্ময়! পারস্পরিক বিস্ময় কাটিয়ে উঠতে উঠতেই কীভাবে যেন আমাদের ১৩ টা বছর পার হয়ে গেলো। কে কতবড় তারছেড়া এবং মিস ফিট সেটা নিয়ে বিতর্ক করতে করতে কত রাত পার করেছি আমরা দুজন। তবে তার ছোটবেলার বন্ধুরা কিন্তু বোঝে। তার এক ছোট্টবেলার স্কুলের বান্ধবী আমার লেকচারটা শেয়ার করে লিখেছে, এই লেকচারটা দেখলে অভিজিৎ কত গর্বিত এবং খুশী হতো সে যেন সেটা চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছে! লেকচারটার প্রতিটি শব্দ লেখার সময়, পড়ার সময়, অজস্র মানুষের ভিড়ে চোখের সামনে না থাকা সেই মানুষটিই ছিল শুধু আমার চোখের সামনে দাঁড়িয়ে-
ওই আকাশ-ছাওয়া কাহার চাওয়া, এমন ক’রে লাগে আজি আমার নয়নে…
লেখার সময় প্রতিনিয়ত মনে হয়েছে, অভি থাকলে কিভাবে এটা সমর্থন করতো, ঐটা শুনে কোমর বেঁধে ঝগড়া করতো, কোনটাতে হাহা করে হেসে টিটকারি মারতো, ঘাড় বাঁকিয়ে বলতো, ‘তোমার লেকচার, তোমার স্বাধীনতা, আল্লায় চোপা একখান দিছে, বইলা নাও যা বলতে চাও, আমি আর কী কমু…’
আর যারা আসলেই অভিজিৎকে আসলেই সত্যিকারের বন্ধু বলে মনে করেছেন তারা এই চরম দুঃসময়ে এগিয়ে এসেছেন, সহমর্মিতা জানিয়েছেন, মুক্তমনার সাথে সংহতি প্রকাশ করেছেন, আমাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। পরিচিত অপরিচিত সুহৃদদের সহমর্মিতায় এতটাই ধন্য হয়েছি যে কাগজে কলমে সেই কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শেষ করা যাবে না।
আসলে যে কেউই তো যে কোনো কিছুতে আপত্তি জানানোর অধিকার রাখেন। এতে রাগ করার কী আছে? জনসমক্ষে গিয়ে আমি কোন বক্তৃতা দিলে তা নিয়ে গণ-সমালোচনা করার অধিকার যে কারো আছে। বাক-স্বাধীনতা নিয়ে বড় বড় কথা বলবো, আর আমার হুদাহুদি-হাসিমুখের ছবি দেখে কেউ সমালোচনা করলে গাল ফুলাবো তা তো হতে পারে না। শুনলাম আমার নাকি মনে রাখা উচিত, আমি আর অভিজিতের ঘরে নেই। বড় বড় বিশ্বমঞ্চে উপস্থিতির তাৎপর্য বোঝা উচিত এখন আমার! হুম, তাইই সই, যে যা ইচ্ছে তো বলতেই পারেন। তবে এসব শুনলে আমার হাসি আসে অন্য কারণে (হ্যাঁ অভিজিৎ এবং আমি একটু অতিরিক্তই হাসতাম, সবকিছু নিয়েই হাসাহাসি করতাম – আমার ক্যান্সারে অকালে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা, ওর ভুড়ি, হাই-কোলেস্টেরল, ফালতু ফারাবির থ্রেট, সবকিছুই। আমরা দুজন দুজনার সীমাবদ্ধতা বা দার্শনিক ভণ্ডামি নিয়ে কত যে হেসেছি তা কেউ কল্পনাও করতে পারবে না। আমি আরো বেশি কেন হাসি না সেটা নিয়েই ছিল অভিজিতের কমপ্লেইন!) আমি, মানে ব্যক্তি আমি, কোনদিনো অভিজিতের ঘরে ছিলাম না, অভিজিৎ এবং আমি কেউই আসলে কারো ঘরে ছিলাম না। আমরা দুজন দুজনার ‘খোলা হাওয়া লাগিয়ে পালে’ ডুবতে রাজি হয়েছিলাম। ঘর, বিয়ে, সমাজ, রাষ্ট্র, ধর্ম এসবের মধ্যে বাস করেও এদের ধরা ছোঁয়ার বাইরে ছিলাম আমরা। অনেকেই হয়তো বলবেন, আমরা ‘ডিনায়েল’ এ থাকি। বলুন না, ক্ষতি কী! আর কর্মসূত্রে আমাকে তথাকথিত ‘বড় বড়’ মঞ্চে (এধরণের পাবলিক স্পিকিং না হলেও, কর্পোরেট জগতের আন্তর্জাতিক মিটিং তো হরহামেশাই করতে হতো) মাঝে মাঝেই হাজিরা দিতে হতো এমনিতেই, অনেক আগে থেকেই। হঠাৎ করে কেউ আমাকে ছক্কা মেরে ব্ল্যাক জ্যাকের টেবিলে ছুঁড়ে দেয় নি। আমি জীবনে যতটুকু স্বাধীনতা উপভোগ করেছি, অভিজিতের সাথে থাকার আগে, সময়ে এবং পরে, অনেক ছোটবেলা থেকেই, তা আসলে বেশিরভাগ মানুষ কল্পনাও করতে পারে না। আর সেখানেই ছিল অভি আর আমার সম্পর্কের ভিত্তি, পারস্পরিক শ্রদ্ধা, স্বাধীনতা এবং ঝগড়া-ভালোবাসার দেওয়ালবিহীন এক অদ্ভুত গণ্ডি। এটা কাউকে বোঝানোর ইচ্ছাও আমার নেই। তাকে ঔদ্ধত্য বললে তাইই সই, এই ‘গুণ’টার অভাবতো কোনদিনও ছিল না আমাদের দুজনেরই।
গুফি বললে অভিজিতের মতো মানুষের কখনোই অপমান হয় না, কারণ আসলেই সে শুধু গুফিই নয় চরম গুফি ছিল(শব্দটার কলোক্যুয়াল ব্যবহার হয়তো কারো কারো অজানা)। তার মতো সদাসুখী এবং সদাগুফি মানুষ খুব কমই হয়। সে আর আমাদের মেয়ে ছিল এক দলে আর আমি ছিলাম তাদের চির শত্রু অন্যদল। আমার দোষ? আমি তাদের বাস্তব জীবনে ফিরে আসতে বলতাম মাঝে মাঝে। তৃষার বেগুনি রঙটা খুব পছন্দ ছিল বলে ওর নাম দিয়েছিল তিসু ঘিষু পারপেলি বেলাকুলা, ডিম্বহাম্বে বানাতো উইকেন্ডে সকালে উঠে (হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন, অভিজিৎ ডিমকে ডাকতো ডিম্বহাম্বে, কেন জিজ্ঞেস করবেন না প্লিজ), অভিজিৎ একটু মোটা ছিল বলে ও ছোট্ট তৃষাকে শিখিয়েছিল ওকে ‘ভুটুস’ ডাকতে। সুযোগ পেলেই সারা বাড়ি জুড়ে পেঙ্গুইনের মতো করে হাঁটতো দুজনে পায়ে পা রেখে, নিয়মিত ব্যায়াম করা নিয়ে আমার সাথে দুজন দুজনের পক্ষ হয়ে আপিল করতো, ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন নিয়ে গান বানিয়ে বেসুরো ভাবে জোড়ে গেয়ে উঠতো, একজন আরেকজনের গানে বাংলিশ কথা এবং সুর বসাতো, অদ্ভুত অদ্ভুত মুখ করে ছবি তুলতো..। অভিজিৎ ওকে শিখিয়েছিল যে তার মা ঠিকমত বাংলাভাষাটাও জানে না। তৃষা এখনো সেটাই বিশ্বাস করে :)। অভিজিৎ কার কত ‘প্রিয়’ বা কাছের ছিল সেটা নিয়ে আমার মাথাব্যথার তো কোন কারণ নেই! কারণ আমাদের দুজনের ‘প্রিয়ত্বের’ পরিমাপটা বড্ডই অন্য ধরণের ছিল।
এমনিতেই তো এই ছোট্ট পৃথিবীটার যাচ্ছেতা অবস্থা করে ছেড়েছি আমরা ২ লক্ষ বছরের এই দ্বিপদী অস্তিত্বের ভারে। সবাইকে অনুরোধ করবো, যারা বলছেন তাদের বলে যেতে দিন, একদিন তো থামতেই হবে সবাইকেই। শুরু হওয়াটা অনেক সময়ে ‘চান্সে’র উপর নির্ভর করলেও শেষ হওয়াটা কিন্তু করেনা। অনেক মূল্য দিয়ে শিখেছি যে সবকিছুই শেষ হয়ে যায় একদিন। আমাদের কাছের মানুষদের কাছে অনুরোধ, এ নিয়ে আর লেখালিখি করে কী বোর্ডের অপচয় করবেন না প্লিজ। যারা ফেসবুকে চটকদার স্ট্যাটাস দিয়ে পৃথিবীর নোংরামির কার্বন ফুটপ্রিন্ট বাড়াতে চায় তাদের সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করে কী লাভ। শুধু বলবো ‘সময় যদি ফুরিয়ে থাকে হেসে বিদায় কর তাকে…’
ব্লগারদের সহায়তার জন্য টাকা তোলা প্রসঙ্গে
আরেকটা বিষয় নিয়ে কথা বলতে চরম অস্বস্তি হয়, তারপরো বলছি, অনেকেই জানতে চেয়েছেন বলে। শুনেছি টাকা তোলা হয়েছে ব্লগারদের সহায়তা করার জন্য। এটা নিয়েও নাকি হইচই হচ্ছে অনেক। কেউ যদি টাকা তুলে থাকে কোন কারণে সেটা নিয়ে আমাদের রাগারাগি করার কী আছে সেটাই আমার বোধগম্য নয়। আমি সব আন্তর্জাতিক হিউম্যানিস্ট সংগঠনকে জানিয়ে রেখেছি যে, মুক্তমনা, জীবিত, মৃত বা অর্ধমৃত অভিজিৎ বা অভিজিতের পরিবারের কারোরই অর্থ সাহায্যের দরকার নেই এখন। আর্থিক, কারিগরি, বৈষয়িক কোনটাই নয়। কোনদিন যদি লাগে তাহলে ঘোষণা দিয়েই জানাবো। আপাতত মুক্তমনার অভ্যন্তরীণ গ্রুপটার বাইরে যাওয়ার দরকার হবে না আমাদের আশা করি। আসিফ মহিউদ্দিন যখন আমাকে সেই টাকা তোলার বিষয়টা জানিয়েছিলেন তখন বোধ হয় একটা কথাই বলেছিলাম ওনাকে, অভিজিৎ বা মুক্তমনা বা আমাদের কারো নাম যদি এর সাথে সংশ্লিষ্ট না থাকে তাহলেই আমরা খুশি। আমাদের দরকার নেই, তাই বলে কী অন্য কারো দরকার হতে পারেনা? টাকা যার দরকার তার হাতে যাওয়াটাই তো সবার জন্য ‘মঙ্গল’।
আমি যেহেতু ফেসবুক নিয়মিত ফলো করি না তাই অনেক কিছুই জানতে পারি না বা দেরিতে জানি অনেক সময়েই। আগে অভিজিতের কাছ থেকে আমি এগুলোর খবর পেতাম মাঝে মাঝে, এখন অন্যান্য মানুষজন অনলাইন মাধ্যমে এসবের লিঙ্ক না পাঠালে (এবং ভুল করে আমি সেগুলোতে ক্লিক না করে ফেললে) আমি এগুলোর খবরও পাইনা। সেহেতু বলবো, যার যা ইচ্ছা লিখুক, আমাকে বা অভিজিৎকে নিয়ে তাতে কিচ্ছু এসে যায় না। কারণ আমি সাধারণত এগুলোর খবর রাখিনা এবং যদি জেনেও ফেলি, সব সময় সফল না হলেও, বেশীরভাগ সময়েই তা নিয়ে বিব্রত না হওয়ারই চেষ্টা করি।
মুক্তমনাদের জন্য একটাই অনুরোধ। ধর্মনিরপেক্ষ, মানবতাবাদী বিশ্ব গড়ায় আমাদের, অভিজিতের, ওয়াশিকুর বাবু, রাজীব হায়দার, অনন্তর সংগ্রামের কথা ভুলে যাবেন না। যেই সংগ্রামের কথা নিয়ে নীচে বিস্তারিত আলোচনা করারো ইচ্ছা রইলো। ওয়েব মার্কেটিং জগতে একটা প্রিয় কথা আছে, ‘don’t just drive clicks, drive Market share’। সেরকমই, লাইকের পিছনে না ছুটে, নিজের এবং অন্যদের দৃষ্টি অনেকদূর প্রসারিত হয় এমন কিছু করাতে নিবিষ্ট হোন, এ জীবনে হাজার হাজার লাইক না হয় নাই জুটলো! জঁ-পল সার্ত্র’র ভাষায় বললে বলতে হয়, ‘One is still what one is going to cease to be and already what one is going to become. One lives one’s death, one dies one’s life.’
উগ্র নাস্তিকতা বনাম ভদ্র নাস্তিকতা এবং বাক্-স্বাধীনতা
মুক্তমনার বেশ কিছু মডারেশন পলিসির কারনে উগ্র নাস্তিকতা বনাম ভদ্র নাস্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এটা নিয়ে আমি এখানে আমার ব্যক্তিগত মতামতটা রাখতে চাই। সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে আমি এখানে যা বলছি তা শুধু আমার নিজেরই মত, আমি শুধুই একজন মুক্তমনার ব্লগার হিসেবে বলছি। অভিজিৎ থাকতে সে যা বলতো সেটাই অনেক সময় মুক্তমনার বক্তব্য হিসেবে হয়তো ধরা হতো, কিন্তু তারপরেও ওগুলো নিয়ে কিন্তু বহু তর্ক বিতর্কও হতো। এখন মুক্তমনা তার সম্পাদকমণ্ডলী এবং উপদেষ্টাদলের সম্মিলিত উদ্যোগে চলে। কোন ব্লগারের অধিকার নেই ব্যক্তিগতভাবে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় গিয়ে মুক্তমনার অবস্থান নিয়ে কথা বলার। আমারো নেই, ফরিদ ভাইয়েরও নেই, অন্য সম্পাদকদেরও নেই, আর অভিজিৎ কোন পারগেটরি বা অন্য ডায়মেনশন থেকে সে চেষ্টা চালালেও তার সে দাবী এখন বোধ হয় খারিজ করে দেওয়া হবে।
‘উগ্র’ নাস্তিকতা সম্পর্কে বলার আগে কিছু ব্যাপার উল্লেখ করতে চাই। ফরিদ আহমেদকে নিয়ে সম্ভবত অনেকেই অনেক কিছু লিখেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায় ইদানিংকালে। উনি দীর্ঘদিন ধরে আমাদের সাথে কাজ করে আসছেন মুক্তমনায়। ২০১২ সাল থেকে উনি মুক্তমনার মডারেশনে না থাকলেও ২৬ শে ফেব্রুয়ারিতে অভি ও আমার উপরে হামলার পরে উনি যেভাবে এগিয়ে এসে মুক্তমনার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন, অন্যান্য মডারেটরদের সহযোগিতা করেছেন মুক্তমনাকে টিকিয়ে রাখতে, সেজন্য তার কাছে কৃতজ্ঞতার সীমা পরিসীমা নেই। এর পরের তিনটা মাস ছিল বিভীষিকাময়, সবদিক থেকেই। আমি তো কোনকিছুর খোঁজখবর নিতে পারিই নি, বরং এক আইসিইউ থেকে আরেক আইসিইউতে টানাহ্যাচড়ার মধ্যেই ছিলাম। সে সময় হাসপাতালে, তারপর চলেছে বাসা থেকে চিকিৎসা দীর্ঘদিন। আমার পরিবার এবং কয়েকজন ঘনিষ্ট বন্ধু তখন যেভাবে আমার দেখাশোনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। দুঃখ একটাই, এখনো আমার বাবা মা আমারই দেখাশোনা করে চলেছেন, এ বয়সে এসে সেটা উলটে যাওয়ার কথা ছিল, সেটা আর করা হল না।
সে যাক, প্রাসঙ্গিকভাবেই এবার একটু ২০১৩ সালের দিকে তাকাই। অন্ধকারের নিমজ্জিত যে কোন ধর্মীয় জঙ্গী বা ইসলামী জঙ্গীদের কাছে অভিজিৎ, অনন্তর মতো নাস্তিক, মানবতাবাদী, বিজ্ঞানমনষ্ক আলোকিত মানুষেরা চিরশত্রু বলে গণ্য হবে সেটা বলাই বাহুল্য। মুক্তমনা, যার লক্ষ্য কিনা বিজ্ঞান-যুক্তি-মানবতাবাদ প্রসারে কাজ করা সেটা ধর্মান্ধ, বোধবুদ্ধিহীন, চেতনাহীন, মনুষ্যত্বহীন একজনের শত্রু হবে সেটা বুঝতে রকেট সায়েন্টিস্ট হওয়া লাগে না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা শাহবাগ আন্দোলনের তীব্র জনসমর্থনে ভয় পেয়েছে কারা? যারা ভয় পেয়েছে তারা মানবতাবিরোধী অপরাধীদের অপরাধের সমর্থক, তারা মানুষের মৌলিক অধিকারের বিপক্ষে, বিপক্ষে স্বনির্ভর ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশের। শাহবাগ আন্দোলনের স্বতস্ফূর্ততা তাদের ভয় পাইয়ে দিয়েছিলো। তাদের যখন দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যায় তখন তারা কী করে সেইটার উদাহরণ তো আমরা অনেকই দেখেছি। তার উদাহরণ আমাদের মুক্তিযুদ্ধ প্রাণ দেওয়া ত্রিশ লক্ষ মানুষ, উদাহরণ গণিমতের মাল হিসেবে চিন্থিত আমাদের ধর্ষিত মা-বোনেরা, উদাহরণ মাথায় গুলি খেয়ে রায়েরবাজারে পড়ে থাকা আমাদের বুদ্ধিজীবিরা। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সব সমস্যাকে আড়াল করতে তখনও ধর্ম গেলো, ধর্ম গেলো জিকির তুলে আমাদের উপর আক্রমণ করা হয়েছে ‘শান্তি’র তরবারি দিয়ে। ২০১৩ সালেও শাহবাগের সেই আন্দোলনকে ভিন্ন দিকে নিতে হলে ধর্মের কার্ড ছাড়া আর কি বা ছিল তাদের হাতে? ধর্মানুভূতি নামক এক আজব বিতর্কের অজুহাতে আন্দোলনকে বিতর্কিত করার ইচ্ছা থেকেই এই ধর্মান্ধ প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি যখন ব্লগার রাজীব হায়দারকে হত্যা করলো তখন পরিকল্পনা মোতাবেক তারা পত্রিকা ফেসবুকে সব জায়গায় রব তুললো- নাস্তিকরাই সব অপকর্মের মূলে, এদের হত্যা করা জায়েজ! এই রব তোলার জন্য তো ওরা প্রস্তুতই ছিলো। কিন্তু আমরা এতো সহজে টোপে পা দিলাম কী করে? থাবা বাবারা যা ইচ্ছা লিখুক। শুধু লেখার অপরাধে একজন মানুষকে তার নিজের বাসার সামনে কুপিয়ে হত্যা করা জায়েজ হয়ে গেছে কোন সভ্যতায়? যারা রাজীবকে নৃসংসভাবে হত্যার পর, রাজীবের অপরাধের লিস্টি করেছেন তাদের বর্ণনা তো দিলামই। কিন্তু সবচেয়ে অবাক হই যখন আমরা নিজেরাই শত্রু বানিয়ে ফেলি স্বয়ং রাজীবকেই। অনেকে আরও এক কাঠি সরেস, তারা দাবী করলেন – থাবা বাবা এসব লেখেই নাই। তার মানে কী এমন লেখা কেউ লিখলে তাকে মেরে ফেলাই যায়? শত্রুর এতো চেনা চালে এমন সহজে বিভ্রান্ত হয়ে গেলাম আমরা?
অনন্ত-অভিজিৎ দের অপরাধ কী ছিল? বিজ্ঞান নিয়ে লিখতে ভালোবাসতো তারা, নাস্তিকতা, মানবতাবাদ, ধর্মনিরেপক্ষতা নিয়ে প্রচন্ড সোচ্চারও ছিলো, সোচ্চার ছিলো মানুষের যেমন ইচ্ছা ভাব প্রকাশের অধিকারের জন্য। রাজীবকে যারা উগ্র নাস্তিক বলে পরোক্ষভাবে হত্যাকাণ্ড জায়েজ করেছেন তাদের দৃষ্টিতে অভিজিৎ কি? ফারাবীর চোখে অভিজিৎও উগ্র নাস্তিক। যদিও অভিজিৎ ভাবতো বিজ্ঞান, দর্শন, সাহিত্য, মানব ইতিহাস নিয়ে সেই ওকেও অভিযুক্ত করা হলো নবীকে ব্যঙ্গ করার দায়ে! অভিজিতের দোষ নবী কে ব্যাঙ্গ করা ছিলো – এরচেয়ে হাস্যকর আর কিছুই হতে পারে না। ওর দোষ যদি থেকেই থাকে সেইটা ছিলো ওর বিজ্ঞানের কথা বলা, যুক্তিবাদের কথা বলা, ওর দোষ ছিলো অনন্তর ভাষায় বলতে গেলে বলতে হয়—‘অভিজিতের দোষ ছিলো আগামী দিনের জাত-প্রথা-ধর্ম-বর্ণ-শ্রেনী বৈষম্যমুক্ত বিশ্ব তৈরির শুভজোয়ারকে প্রেরণা জোগানো, মানুষকে সেই শুভ জোয়ারের সাথে সম্পৃক্ত করা।’ অভিজিতের ‘দোষ’ অনন্ত ছাড়া আর কে ভালো বুঝবে, একই দোষে সেও তো ‘দোষী’। অভিজিতের মৃত্যুর পর অভিজিৎ এমন লিখলো কেনো, এই ব্যবসা আর জমলো না। ব্যাঙ্গ- ফ্যাঙ্গতো সে করতোই, অত্যন্ত বুদ্ধিদীপ্ত এবং কড়াভাবে ‘উগ্র’ ভাষাতেই করতো। কিন্তু তার আসল কাজগুলোতো এত্তগুলো বই আকারে সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, কি আর করা! ও লিখেছে বিজ্ঞানের বই, দর্শনের বই, সাহিত্যের বই সেসব লেখার স্ক্রিন শট দিয়ে ব্যবসা আর জমে কিভাবে! তাছাড়া রাজীবকে মুসলমান বানিয়ে দেওয়া গেছে রাজীবের সকল চিন্তাভাবনাকে সরাসরি অপমান করে, যে চিন্তাভাবনার জন্য একমাত্র জীবনটা হারালো সে। বাবুকে যারা মেরেছে তারা ব্লগ কী তাই জানেনা, জানেনা কেন কুপাচ্ছে একজন মানুষকে। অভিজিতের বলা সেই বিশ্বাসের ভাইরাসে তাদের মাথা এতটাই আক্রান্ত যে তারা মাদ্রাসার শিক্ষকের আদেশেই অন্ধভাবে দুইপায়ে মানুষ মারতে খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে যায়।
সে যাক, এবার ফরিদ ভাইয়ের কথায় আবার ফেরত আসি। সে সময়, ফরিদ ভাই এবং মুক্তমনার অন্যান্য মডারেটর এবং শুভাকাঙ্খীরা এগিয়ে এসে মুক্তমনার সব কাজতো করেছেনই, তার উপর আবার আমাকে দিনের পর দিন সান্ত্বনা দিয়েছেন। বলেছেন চিন্তা না করতে, ওনারা মুক্তমনার জন্য নিঃস্বার্থভাবেই কাজ করে যাবেন। তবে সে সময়ের মডারেশনের সিদ্ধান্তগুলো খুব সোজা ছিল না। রাজিব হত্যার পর থেকে চেনা-অচেনা ব্লগার, লেখক, একটিভিস্টরা জীবনের হুমকি খাচ্ছিলেন, শিকারের মতো করে তাদের তাড়া করে বেড়াচ্ছিল মৌলবাদী সন্ত্রাসীরা। একদিকে মুক্তমনাদের মাথার দাবী তোলা হচ্ছে আরেকদিকে সরকার তাদের খুঁজছে ওয়ারেন্ট হাতে, জেলে পুরতে। তারপর এবছর একের পর এক ব্লগারের মৃত্যু, বিশেষ করে অভিজিতের পর অনন্তের মতো মুক্তমনার এত কাছের আরেকজনের হত্যার পর অদ্ভুত এক জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল।
মানছি যে, সে সময়ে ফরিদ ভাই এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং বক্তব্য রেখেছেন যা নিয়ে অনেক বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। তবে প্রথমেই এটা উল্লেখ করে নিতে চাই যে সেগুলো উনি একার সিদ্ধান্তে করেন নি, মুক্তমনার তখনকার মডারেশন টিমও(আমি সহ) সেটার সাথে জড়িত ছিলো, তারা নিজেরাও এটা নিয়ে বির্তক করেছে নিজেদের মধ্যে। এরকম ক্রিটিকাল একটা সময়ে বড় কিছু ভুল ত্রুটি হতেই পারে, বিশেষ করে যিনি গণসমক্ষে উপস্থিত তার পক্ষে। সে সময়ে উনি ব্যক্তিগত বেশ কিছু মন্তব্য করেছিলেন মুক্তমনার মডারেটর হিসেবে ব্লগে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় যেগুলোর কারণে অভিজিত এবং মুক্তমনার অবস্থান নিয়েই সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। লেখক এবং ব্লগার হিসেবে ফরিদ ভাই অনেক কিছুই বলতে পারেন, সেটা ওনার স্বাধীনতা। কিন্তু তিনি যখন মুক্তমনার মডারেটর হিসেবে বলেন যে, অভির মৃত্যুর জন্য অভির লেখালিখি বা কাজ দায়ী নয় বরং উগ্র নাস্তিক এবং ছদ্ম নাস্তিকদের কুৎসিত ফেসবুক স্ট্যাটাস বা লড়াইই দায়ী তখন অনেক ভালো উদ্দেশ্য থাকা সত্ত্বেও বেশ বড় রকমের একটা ভুল হয়ে যায়। আমার মতে, তখন আমরা বড় প্রেক্ষাপটটা ভুলে গিয়ে তাৎক্ষনিক স্ট্রাটেজির বেড়াজালে আটকে যাই। আমাদের মূল আদর্শগত অবস্থান থেকে বিচ্যুত হয়ে যাই। অভিজিৎ-অনন্তরা কিসের জন্য লড়াই করছে, জীবন দিচ্ছে তা ভুলে গিয়ে তাদের হারানোর শোকে বিহবল হয়ে গন্তব্যের দিশা হারিয়ে ফেলি। অভিজিতের ভাষায় বলতে গেলে বলতে হয়, ভীত হবেন না, শোকে দুঃখে ভেঙ্গে পড়বেন না-
যারা কলমের শক্তিতে ভীত হয়ে মত প্রকাশের স্বাধীনতা রুদ্ধ করতে চাচ্ছেন, যারা ‘মসির চেয়ে অসি বড়’ মনে করে ভাবছেন, মুক্তচিন্তার আন্দোলনকে স্তব্ধ করা যাবে, তাদের জন্য করুণা হচ্ছে। যতবার আমরা আহত হব, তত দ্বিগুন শক্তিতে আমরা ফিরে আসব, দাবানলের মতই গ্রাস করে ফেলব চারিদিক। প্লাবনে ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাবে প্রতিক্রিয়াশীলতার অন্ধচোরাগলি।
আমি মুক্তমনার মডারেশন টিমকে আহবান জানাবো এ সম্পর্কে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করে একটা সুনির্দিষ্ট বক্তব্য দিতে।
এবার আসি উগ্র নাস্তিকতা সম্পর্কে আমার মতামতে। লিখতে বসে অভিজিতের পুরোনো কিছু ব্লগ পড়তে পড়তে মনে হল, আমার আর নতুন করে বলার বা লেখার কী আছে। অনেক কিছুতেই দ্বিমত থাকলেও এ ব্যাপারে তো আমাদের কোন দ্বিমত ছিলনা। চলুন দেখা যাক অভিজিৎ তার অভিজিৎ-মার্কা ভাষায় কি বলতো এটা নিয়ে (ভাষাটা একটু আঘাত-প্রোণ্,কিন্তু এটাই গুফি অভিজিতের ভাষা, কারো ভাষানুভূতি দুর্বল হলে অনুরোধ করবো এখানেই পড়া খ্যামা দিয়ে এক কাপ চা খেতে… )
চারিদিকে মুক্তচিন্তার ব্লগাররা আক্রান্ত হচ্ছেন। প্রথমে আসিফ মহিউদ্দীন ছুরিকাহত হলেন, থাবা বাবাকে জবাই করা হল, এর পর আক্রান্ত হলেন সামিউর। সাধারণতঃ যারা আক্রান্ত হন,জনসহানুভূতি কিছুটা হলেও তাদের পক্ষে থাকে। কিন্তু সেটা হবে না যদি আপনি ‘নাস্তিক ব্লগার’ হিসেবে ট্যাগ খেয়ে যান। ধর্মান্ধরা নাস্তিকদের পছন্দ করবে না জানা কথা। কিন্তু মানবতার বাণী কপচানো, সংখ্যালঘুদের জন্য অন্তপ্রাণ, গলা কাঁপিয়ে ‘টক শো’ করা ‘পুলিশ প্রোটেকশন’ নিয়ে চলা সেলিব্রেটি ব্লগাররাও দেখবেন চামের উপ্রে বামে গালি দিয়ে যাবে – ‘ব্যাটা তুই নাস্তিক হইছস ক্যান!ধর্মের বিরুদ্ধে লেখস ক্যান,দোষ তো তোরই। গলায় তুই কোপ খাইবি না তো খাইবো টা কে?’। টিপিকাল ‘women raped, women blamed’ অ্যাটিচুড। বেডি তুই উগ্র পোষাক পড়ছস ক্যান,হ্যাল হ্যাল কইরা চলছস ক্যান, ছিনালী হাসি হাসছস ক্যান। তুই ঠাপ খাবি না তো খাইবো কে!
ওয়েল, চামে চামে ‘চিপায় পড়া আর চিপা খোঁজা’ এইসব সনাতন মানসিকতার লোকজন নাকি নতুন প্রজন্মের সৈনিক, দেশকে নতুন দিশা দেখাবে। দিশার ঠেলায় দিশাহারা অবস্থা আমাগো। ধর্ষিতা নারীদের মতোই। একবার ফিজিকালি ধর্ষিতা হয়, তারপর যখন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা আঙ্গুল তুলে বলে – ‘ঐ পোশাক পইড়া গেছিল বইলাই না হইছে’। এইভাবে দ্বিতীয়বার হয় আরেকদফা ধর্ষণ। নাস্তিকেরাও তাই। গলায় খায় কোপ একবার। তারপর আসে আরো বড় কোপ – ১৫০০ লাইক আর ছয়শ শেয়ার হওয়া ‘চিপা খোঁজা’ সেলিব্রিটি ব্লগারদের স্ট্যাটাসের কোপ।
আমি কিংবা অভিজিৎ দুজনেই মনে করি মানুষের পূর্ণ বাক্-স্বাধীনতা থাকা উচিত। ধর্মের পক্ষে বা বিপক্ষে, যে কোন কিছুর পক্ষে বা বিপক্ষে। আপনার যদি তাদের ধর্মানুভূতি বা অন্য যেকোন সংবেদনশীল অনুভূতিতে আঘাত লাগে তবে তা ডিফেন্ড করুন, সাহস বা যোগ্যতা থাকলে লেখার জবাব দিন লেখা দিয়ে, অথবা নিজের উন্নত মস্তিষ্কটিতে নিয়ন্ত্রণের কাজে নিয়োজিত যে নিউরনগুলো আছে ওগুলো ব্যবহার করে ঐসব ওয়েবসাইটে, ব্লগে বা পেজে যাওয়া বন্ধ করে দিন অথবা একা একা নিজেই নিজের ঘরে কিছু ছুঁড়ে মেরে রাগ কমান। আমরা শার্লি হেব্দো বা উইকিলিক্স কেন, যে কোন মত প্রকাশের অধিকারকেই সমর্থন জানাবো। প্রথমে তাদের মত প্রকাশের অধিকারের পক্ষে দাঁড়াবো তারপর তাদের শৈল্পিক মান বা দক্ষতা নিয়ে অথবা মুক্তমনায় প্রকাশযোগ্য না অযোগ্য তা নিয়ে আলোচনা সমালোচনা করার প্রশ্ন আসবে। লেখার জবাব যেকোন লেখা দিয়ে দিলে তাকেও সাদরে সমর্থন জানাবো। যতক্ষণ পর্যন্ত না কারো ‘ক্ষতি’ করা হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা বাক্-স্বাধীনতার অধিকারকে ডিফেন্ড করে যাবো।
চলুন এ প্রসঙ্গে স্টুয়ার্ট মিলের হার্ম প্রিন্সিপাল বা ক্ষতি-নীতিটায় একবার চোখ বুলিয়ে নেই। আমি এবং অভিজিৎ এবং সম্ভবত মুক্তমনার সম্পাদকমণ্ডলীও মিলের ‘On Liberty’ বইতে বলা বাক-স্বাধীনতার সীমার সাথে একমত পোষণ করি। জন স্টুয়ার্ট মিল বলছেন, “প্রত্যেকের নিজ মত ব্যক্ত করার পূর্ণ স্বাধীনতা আছে, তা সেই মত যা-ই হোক না কেন; একজন বাদে পৃথিবীর বাকি সবাই যদি এক মতের অনুসারী হয় তারপরও সেই একজনকে তার মত প্রকাশ করতে দিতে হবে, একজনের পৃথিবীর বাকি সবাইকে নীরব করা যতটা অনৈতিক, বাকি সবার জন্য একজনকে নীরব করাও ততটাই অনৈতিক।” বাক্-স্বাধীনতা খর্ব করার একমাত্র অধিকার থাকতে পারে একটি সমাজের সংবিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষের এবং তারা কাউকে মত প্রকাশে কেবল তখনই বাধা দিতে পারে যখন সেই মত অন্য কারো “অবৈধ-সরাসরি-ক্ষতির” কারণ হতে পারে। তবে আমি এখানে এটাও পরিষ্কার করে নিতে চাই যে, রাষ্ট্র জনগনের কতটুকু স্বাধীনতা খর্ব করবে তা টেন কমেন্ডমেন্টসের মত কোন পাথরে খোদাই করা স্থায়ী বা সুনির্দিষ্ট ব্যাপার নয়। একটা নির্দিষ্ট জাতির বা দেশের বা সংস্কৃতির পরিপক্কতা, প্রেক্ষাপট, ইতিহাস এবং কালের উপর তা নির্ভরশীল সম্পূর্ণভাবে। এটা গতিশীল, সদা পরিবর্তনীয় একটা কন্সেপ্ট। সেজন্যই আমরা যুগে যুগে জনগনকে দেখেছি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অধিকার আন্দোলনের সংগ্রাম করতে।
এখানে “অবৈধ-সরাসরি-ক্ষতি” বলতে এমন কিছু বুঝাচ্ছি যার কারণে কার্যত কোনো ধরণের সুস্থ বাক্-স্বাধীনতাই খর্ব হতে পারেনা। স্ট্যানফোর্ড এন্সাইক্লোপিডিয়া অফ ফিলোসফি থেকে একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। আমাদের বাক-স্বাধীনতা এবং কর্ম-স্বাধীনতার মধ্যে পার্থক্য করতে পারতে হবে। যেমন ধরুন মোটর সাইকেলে চড়ে বাইকাররা এমন কিছু আপত্তিকর কাজ করেন যা জনগনের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায়, তাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়। এখন সরকার যদি সেটা বন্ধ করতে চায় তাহলে তারা মোটর সাইকেল বানানোই বন্ধ করে দিতে পারে তা রোধ করার জন্য। এমনকি তারা বাজারে বা রাস্তায় যেসব মোটরসাইকেল আছে সেগুলো ধ্বংসও করে দিতে পারে। কিন্তু সরকার কি আমাদের কথা বলার অধিকারকে কেড়ে নিতে পারে? কথাটা বলার পরেই তারা শুধু আমাদের টুটি চেপে ধরে কোন শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারে, যেমন বাংলাদেশ সরকার করেছিল চারজন ‘নাস্তিক’ ব্লগারকে গ্রেফতার করে। তার অর্থ হচ্ছে আমরা আসলে কথা বলায় স্বাধী্ন, তবে সমাজে বাস করতে হলে যে কোন কাজ হুটহাট করে ফেলার তেমন স্বাধীনতা আমাদের নাও থাকতে পারে। এখানে সরকারকে কথা বন্ধ করতে হলে মোটর সাইকেলের মত আমাদের কন্ঠনালী উপড়ে ফেলতে হবে। সেটা যেহেতু সম্ভব নয় সেহেতু কথা বলার অধিকার কেড়ে নেওয়ারো ক্ষমতা কারো নেই।
এখন “অবৈধ-সরাসরি-ক্ষতি”-র ধারণায় ফেরত যাই আবার। যেমন ধরুন আপনি এমন কিছু লিখতেই পারেন যার ফলে দেশের কোন ব্যক্তি বা সরকার আমাকে আদালতে নিয়ে যেতে পারে, সেখানে আমার বিচার হতে পারে, শাস্তি হতে পারে। তবে আপনি এমন কিছু লিখতে বা বলতে পারেন না যার সরাসরি ফলস্বরূপ কেউ আল্লাহু আকবার বা জয় বাবা বলে চাপাতি নিয়ে আমার উপর হামলা করে আমার জীবন নাশ করতে পারে বা আমার বাড়িতে হামলা করতে পারে বা আমাকে আহত করতে পারে। এখন প্রশ্ন হলো ধর্মের যেকোনো রকমের সমালোচনাকে এই “অবৈধ-সরাসরি-ক্ষতি” এর কাতারে ফেলা যায় কি না। উত্তর হলো কোনোভাবেই যায় না। এমনকি অবৈধ তো দূরের কথা ধর্মের যাদৃচ্ছিক সমালোচনা বা ব্যঙ্গ প্রায় কখনোই কারো সরাসরি ক্ষতিরও কারণ হতে পারে না। কোনো ধরণের অনুভূতিতে আঘাত কোনো সরাসরি ক্ষতির মধ্যে তো পড়েই না, এমনকি স্রেফ ক্ষতির মধ্যেও পড়ে না।
আমার মাঝে মাঝে মনে হয় যে ক্ষতি নীতিটা সবাই মেনে নেয়, কিন্তু কোনটাকে ক্ষতি বলা হবে এবং কোনটাকে হবে না সেই জায়গাতে গিয়ে সবাই আবার নিজের সুবিধামতো ব্যাখ্যা দেয়। আমাদের মধ্যে অনেকেই যারা পূর্ণ বাক-স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি তারাও এর ব্যাতিক্রম নই। ধার্মিকরা যেমন বলে ধর্মানুভূতিতে আঘাত হানাটা ধার্মিকদের জন্য ‘ক্ষতিকর’, আমাদের মধ্যে অনেকেই আবার সেভাবেই এখন বলতে শুরু করেছেন ‘উগ্র’ নাস্তিকতা অনেক নাস্তিকদের জন্য ‘ক্ষতিকর’। আমি মনে করি দুজনের যুক্তিই এখানে সমানভাবে গলদপূর্ণ। যারা এখানে ‘উগ্র’ নাস্তিকতাকে অভিদের মৃত্যুর জন্য দায়ী করছেন তারা আসলে ভুলে যাচ্ছেন যে, এই ‘উগ্র’ নাস্তিকরা কাউকে হত্যা করার কথা বলেন নি। যারা এই হত্যার পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন করছে তারা আজ বড়ই অসহায় বোধ করছে, তারা এতই মরিয়া হয়ে উঠেছে যে তাদের সামনে হত্যা করা ছাড়া আর কোন পথ খোলা নেই। তারা তাদের আদর্শগত অবস্থান থেকে বাক-স্বাধীনতা কিংবা অধিকাংশ মানুষের মৌলিক অধিকারগুলোকে অস্বীকার করে। তারা হত্যা এবং ভয়াবহ নিপীড়ণের নীতিকে সমর্থন করে বলেই তারা হত্যা করতে উদ্যত হয়েছে। এখানে বড্ড বড় ভুল হয়ে যায় এদেরকে বাদ দিয়ে তথাকথিত ‘উগ্র’ নাস্তিকদের দোষারোপ করলে।
তবে হ্যাঁ, এখানে একটাই ‘তবে’ আছে। এখানে বাক্-স্বাধীনতাকে ডিফেন্ড করা এবং মুক্তমনায় লেখা ছাপানোর নীতিকে আলাদা করতে পারতে হবে। মুক্তমনায় কী ছাপানো হবে কী হবেনা সেটার সিদ্ধান্ত শুধু তার মডারেশন টিমই নিতে পারে। এজন্যই এটা মডারেটেড ব্লগ। বাক্-স্বাধীনতার কারণে কোন কিছুকে সমর্থন জানিয়েও তারা তা ব্লগে বা ওয়েবসাইটে ফিচার না করতেই পারেন। এটা নিয়ে কারো কোন বক্তব্য থাকলে দয়া করে মুক্তমনা টিমের সাথে যোগাযোগ করবেন, আমি নিশ্চিত তারা সেটা মনোযোগ দিয়েই শুনবেন। যদি না শোনেন বা সেটার জন্য যথাযথ কারণ দেখাতে না পারেন তাহলে সেই সমস্যা মুক্তমনা দলের আশুই সমাধান করা উচিত। আর যদি তার আগেই আপনি সোশ্যাল মিডিয়ায় গিয়ে এ নিয়ে হৈচৈ করার সিদ্ধান্ত নেন তবে শুধুই বলবো, ‘অনেক ধন্যবাদ…’!
আমি মনে করি না ‘উগ্র নাস্তিক’দের উগ্রতর নাস্তিকতা চর্চার জন্য হুমায়ুন আজাদ-অভিজিৎ-অনন্তরা জীবন দিয়েছে। ওরা থাকলে ওরা নিজেরাই এই বক্তব্যের সাথে কোনদিন একমত হতো না। না, আমি মনে করি অভিজিৎ বা অনন্ত তাদের ‘র্যাশনাল থিংকিং’ এর জন্যই নৃশংসভাবে খুন হয়েছে। অথবা কেউ যদি বলেন ধর্মের কার্ডকে পুঁজি করে ওদের রাজনৈতিক খেলার ক্রসফায়ারে মারা হয়েছে সেটাও আমি বিবেচনা করতে রাজি আছি। কিন্তু ওরা ‘উগ্র’ নাস্তিকদের র্যাডিক্যাল কর্মকাণ্ডের দায়ভার মাথায় নিয়ে মৃত্যবরণ করেছে এটা মেনে নিতে আমি কিছুতেই রাজি হব না।ওরাও বহু কিছু লিখেছে, যেগুলোকেও র্যাডিকেলিজমের সংজ্ঞায় ফেলে হাউকাউ করা যায় খুব সহজেই, করছে না তো অনেকেই। আর এ কারণেই আমাদের আদর্শগত অবস্থানটা পরিষ্কার করা খুব দরকার। আপনি ইতিহাসের কোন দিকে দাঁড়াবেন সেটা নিয়ে জল ঘোলা করার অবকাশ না থাকাই উচিত। চলুন দেখি অভিজিৎ বিভিন্ন সময়ে এ প্রসঙ্গে কী বলেছে।
২০১২ সালের মার্চে মার্চ মাসে আদালত একটি রিট শুনানীর পরিপ্রেক্ষিতে ধর্মানুভূতিতে আঘাত দেবার কারণে একটি ওয়েবসাইট এবং কয়েকটি ফেসবুক পেইজ বন্ধ করে দেবার আদেশ দিলে অভি লিখেছিলো-
“ধর্মানুভূতিতে আঘাত দেবার কারণে ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেইজ বন্ধ” খবরটা দেখে প্রথমেই মনে হল, ‘চোখ নেই, কান নেই,কোনো বর্ণ নেই শৃঙ্খলিত নিশ্চল ঈশ্বর’ প্রকৃতির গালিচায় বসে যেন কাঁদছেন। হ্যাঁ, আধুনিক বিশ্বে ঈশ্বর পরিণত হয়েছেন এক নপুংসক সত্ত্বায়;তাই ঈশ্বরের অনুভূতি, ইমেজ এবং মানসম্মান তিনি নিজে রক্ষা করতে পারেন না, সেই সুমহান দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে তার কিছু পোষা বাহিনীর উপর। নিষ্ফল প্রার্থনা আর ব্যর্থ মোনাজাতে তেমন কাজ হচ্ছিলো না তাই অদৃশ্য ঈশ্বরের ঈশ্বরানুভূতি আর ধর্মানুভূতি আক্রান্ত হওয়ায় তার কিছু প্রিয় বান্দা আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন। রাষ্ট্র-যন্ত্রকে যুক্ত করেছেন।
এটা যে হবেই তা আমরা জানতাম। রাষ্ট্র-যন্ত্র সবকিছুকেই নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। মিডিয়া, টিভি, পত্রপত্রিকা, বইপত্র সবই। ইন্টারনেট আসার পর তাদের রাশ আলগা হয়ে যাচ্ছিলো ক্রমশ। যুৎ করতে পাচ্ছিলেন না তারা। এখন ধর্মানুভূতি রক্ষায় একাট্টা হয়েছেন। তারা নাকি ফেসবুকের পাঁচটি পেইজ আর একটি ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেবেন। তারা আক্রান্ত বোধ করছেন। অভিযোগ পুরনো। সেই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত।’
উদ্ধৃতির প্রথম প্যারায় বলা হয়েছে ধর্মানুভূতিতে আঘাত এই অভিযোগের অসাড়তার কথা এবং পরের প্যারায় বলা হয়েছে বাংলাদেশ রাষ্ট্রও মৌলবাদীদের মতোই আচরণ করছে সবকিছুর উপর নিয়ন্ত্রণ চাপানোর মাধ্যমে। অর্থাৎ তারা মৌলবাদীদের আবদার শুনছে, সেই আবদারে ধর্মনিরপেক্ষ স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানের মূল নীতি ধ্বংস হয় তো হোক, ভোট তো নিশ্চিত হল, তাতেই তারা খুশী।
এই দুইটি প্রসঙ্গ ধরে আলোচনা তারপর এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ধর্মানুভূতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে স্পষ্ট অবস্থান নিয়ে বলা হয়েছে, কারও যদি ইচ্ছা হয় ধর্ম/ঈশ্বর সংক্রান্ত সমালোচনা-ব্যাঙ্গ করার আমরা তার সেটা করার অধিকারকে পূর্ণ সমর্থন করি। কেনো করি সেইটার যৌক্তিক কারণও দেওয়া হয়েছে-
‘ধর্মের ‘ব্যাশিং’-এ আপত্তি? অন্য কিছুতে নয় কেন? অনেকের মনেই এরকম একটা ধারণা জন্মে গেছে যে, ধর্মকে ‘ব্যাশিং’ করা যাবে না, সমালোচনা করা যাবেনা, করলেও করতে হবে বুঝে শুনে, মাথায় ফুল চন্দন দিয়ে।
ব্যাপারটা হাস্যকর। পৃথিবীতে এমন কিছু নেই যার সমালোচনা হয় না। ছাত্রদের ইতিহাস পড়াতে গিয়ে কোন ঐতিহাসিক ভয় পান না এই ভেবে যে, চেঙ্গিস খানের সমালোচনা করা যাবে না, পাছে ‘চেঙ্গিসানুভূতি’ আহত হয়! কেউ ইতিহাস চর্চা করতে গিয়ে ভাবেন না দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসিদের অত্যাচারের কথা কিংবা জাপানী বর্বরতার কথা অথবা আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাক বাহিনীর নৃশংসতার কথা বলা যাবে না। কেউ বলেন না, এতে করে কারো ইতিহাসানুভূতিতে আঘাত লাগছে, মামলা করে দেবে! প্রথম আলোর মত পত্রিকা যখন বিজ্ঞানের নামে আগডুম বাগডুম পরিবেশন করে, আমরা বলি না আমরা আদালতের শরণাপন্ন হব, আমাদের বিজ্ঞানুভূতি বিপন্ন। অথচ ধর্মের ক্ষেত্রে সব কিছু হয়ে যায় ব্যতিক্রম। ধার্মিকদের ভঙ্গুর অনুভূতি সামান্যতেই আঘাতপ্রাপ্ত হয়। ধর্মযুদ্ধের নামে বিধর্মীদের উপর কি ধরণের অত্যাচার করা হয়েছিলো তা বললে তাদের ধর্মানুভূতি আঘাতপ্রাপ্ত হয়, পয়গম্বর-নবী-রসুল আর ধর্মের দেবদূতদের অমানবিক কার্যকলাপ তুলে ধরলে ধর্মানুভূতি আঘাতপ্রাপ্ত হয়, নারীদের অন্তরিন করে তাদের অধিকার হরণ করা হয় তা বললে আঘাতপ্রাপ্ত হয়, ধর্মগ্রন্থ গুলোতে বর্ণিত অবৈজ্ঞানিক আয়াত বা শ্লোক তুলে ধরলেও তারা আহত হন। আর ব্যঙ্গ বিদ্রূপ করা হলে তো কথাই নেই; ঈশ্বর যে ‘খুঁটি ছাড়া আকাশকে ছাদ স্বরূপ ধরে রাখেন’ তা যেন চৌচির হয়ে তাদের মাথায় তৎক্ষণাৎ ভেঙ্গে পড়ে। ধর্ম সব সময়ই কৌতুকের বড় উৎস হলেও ব্যঙ্গ এবং কৌতুকবোধের ব্যাপারটা ধার্মিকদের সাথে সবসময়ই কেন যেন রেসিপ্রোকাল। অথচ, সাহিত্য, রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি চলচ্চিত্র, খেলাধুলা বা অন্যান্য যাবতীয় বিষয়কে সমালোচনা, ব্যঙ্গ বিদ্রূপ করতে তাদের বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই। কেবল ধর্মের বেলাতেই গণেশ উল্টে যায় বরাবরই।’
ঠিক একই কথা আমিও বলেছি বিবিসির ভিডিও ইন্টারভিউতেও। বলেছি, সবকিছু সমালোচনা করা জায়েজ থাকলেও ধর্মের সমালোচনা কেউ নিতে পারে না। কেনো নিতে পারবে না? একবিংশ শতাব্দীতে মানব সভ্যতার অগ্রসরতার তুঙ্গে বসে খুবি সহজ সরল প্রশ্ন এটা, খুব সহজ সরল মৌলিক দাবীও এটা একটা। এরপর সেন্সরশিপ বিষয়ে রাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে অভি বলছ,
‘রাষ্ট্র- আর আমাদের সেন্সরকারীরা ঝাঁপিয়ে পড়ছে নতুন এই ক্ষেত্র ইন্টারনেট আটকে ফেলার উপায় বের করতে। উইকিলিক্স আমেরিকার আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধের গোপনীয় বিশাল নথি, গুয়ানতানামু কারাগার এবং আমেরিকার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অসংখ্য নথি সংগ্রহ করে ইন্টারনেটে ছেড়ে দিয়ে সাংবাদিকতার এক নতুন দিগন্ত প্রতিষ্ঠা করে। আমরা দেখলাম, খুব আগ্রহ নিয়েই দেখলাম – পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্র আমেরিকাও তাদের গলা টিপে ধরার প্রচেষ্টায় সফল হতে পারলো না। ২০১০-১১ সাল জুড়ে চলা মধ্যপ্রাচ্যের দেশ গুলোতে ঘনীভূত হয়ে উঠা সংগঠিত চলমান আন্দোলনের পেছনে ইন্টারনেটের এবং সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলোর প্রভাব আমরা সবাই দেখেছি। সিরিয়ার মতো একটি বদ্ধ দেশে থাকা মানুষেরা তাদের কথা, তাদের অবস্থা সারাবিশ্বকে জানাতে পেরেছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে। তিউনিসিয়ায় চাকুরিবিহীন বেকার যুবকদের আগুনে আত্মাহুতি দেবার ঘটনাকে কেন্দ্র করে তিউনিসিয়ার সরকারের প্রতি যে বিক্ষোভ দানা বেঁধে উঠেছিলো তাকে ঠেকাতে ইন্টারনেটের সংযোগ বন্ধ করে দিয়েছিলো সরকার। লাভ হয়নি, বরং তিউনিসিয়ার সফল বিপ্লবকে চিহ্নিত করা হয়েছে ‘The Story of the First Successful Internet Revolution’ হিসেবে। মিশরের বিপ্লবীরাও যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছে ইন্টারনেট। মিশরের সরকার গদি বাঁচাতে ফেসবুক ইউটিউব টুইটার বন্ধ করে দিয়েছিলো, লাভ হয়নি সেখানেও। বাংলাদেশে এই আওয়ামীলীগ সরকারের আমলেও কদিন আগে যখন ধর্মানুভূতি এবং রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীর ইমেজানুভূতিতে আঘাত করার জন্য ফেসবুক বন্ধ করার পায়তারা নেয়া হয়েছিলো তখন জনমানসে কি ভয়ঙ্কর প্রতিক্রিয়া হয়েছিলো, কিভাবে সরকার আবার নিজেদের হাস্যাস্পদ করে অবশেষে ফেসবুককে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলো, রাষ্ট্রের কর্ণধারেরা নিশ্চয় তা ভুলে যায় নি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, ভুল থেকে শিক্ষা নিতে তাদের খুব কমই দেখা গেছে।
রাষ্ট্রের কর্ণধারেরা এখন তাই আবার নড়ে চড়ে বসেছে, আরেকটি মহাভুল আবারো করার জন্যই বোধ হয়। আবারো ইন্টারনেটের মুখ চেপে ধরতে তারা বদ্ধপরিকর। দিকে দিকে ব্লগ, ফেসবুক, টুইটারের নামে মামলা, কনটেন্ট মোছার আবেদন, ব্লক আরও কতো কি। যখন এগুলোতে ফায়দা হয় না, তখন হয় শারীরিক আক্রমণ। কিন্তু তারা ভুলে যান, হুমায়ুন আজাদকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়েও মুক্তবুদ্ধির অগ্রযাত্রা স্তিমিত করা যায়নি; বরং আমরা বেড়েছি, চারা গাছ হিসেবে জন্ম নিয়ে মহীরুহ আকারে ছড়িয়ে পড়েছি এখানে ওখানে সর্বত্র। কয়জনকে হেনস্থা করবে, কয়টা সাইট বন্ধ করবে? আজকে যে কোন ব্লগে গেলেই, কিংবা ফেসবুক, টুইটারের যে কোন জায়গাতেই মুক্তবুদ্ধির স্বপক্ষে হাজারো আলোচনা চোখে পড়ে। কেবল পাঁচ ছয়টি সাইট বন্ধ করে দিলেই সব শেষ হয়ে যাবে? আর, ধর্মানুভূতির জিগির তুলে ফেসবুকের পাঁচটি পেজ আর একটি সাইট বন্ধের বিরুদ্ধেও লেখা শুরু হয়েছে বিভিন্ন ব্লগে, অজস্র প্রতিবাদ হয়েছে ফেসবুকেও (দেখুন এখানে কিংবা এখানে)। কাজেই মুখ বন্ধ করার জন্য স্কচ-টেপ নিয়ে ঘুরে বেড়ালেই সবার মুখ বন্ধ হবে তা ভাবা বাতুলদের ‘বাতুলতা’। মুক্তমনারা আজ আর একটি সাইটে নয়, মুক্তমনা একটি সফল আন্দোলনের নাম যা ছড়িয়ে আছে অসংখ্য সাইটে,ফেসবুক পেইজে, মানুষের মনে, চিন্তা-চেতনায়। প্রতিক্রিয়াশীলদের প্রতিক্রিয়ায় এ আন্দোলন রাতারাতি বন্ধ হয়ে যাবে -সেটা ভাবার কোনো কারণ নেই।তবে আবহাওয়া খারাপ বলার জন্য রেডিও জকিদের উপর মামলা-হামলা কতোদিন চলবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।”
আসলেইতো মুক্তমনা নামটা আজ তো আর একটা সাইটের জন্য ব্যবহার করা হয়না। মুক্তচিন্তকদের ভালোবেসেও বাংলায় মুক্তমনা ডাকা হয়, আবার গালি দিতে গিয়েও তাদেরকে মুক্তমনা বলে দুটো কান মলা দিয়ে দেওয়া হয়।
চিন্তা করে দেখলাম মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশে আসলে সবারই ইসলাম ধর্ম ছাড়া অন্য ধর্মের সমালোচনা করার অধিকার আছে। মসজিদে, খুৎবায়,ওয়াজে প্রায়শই তো অবিশ্বাসীদের হুমকি ধামকি দেওয়া হচ্ছে। কুরআনেও তো কম হুমকি ধামকি নেই। কোন বিধর্মী বা আমার মত অবিশ্বাসীকে কীভাবে শাস্তি দেওয়া হবে স্বর্গে এবং মর্ত্তে তার গ্রাফিক ব্যাখ্যাও দেওয়া আছে। আমাদের দেশে ধর্মানুভূতির আঘাতের কান্নাকাটির ব্যাপারটা কি শুধু তাহলে ইসলাম ধর্মের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য? যেমন ইউরোপে প্রযোজ্য ছিল খৃষ্টান ধর্মের ক্ষেত্রে কোপার্নিকাস, গ্যালিলিও বা ব্রুনোর সময়ে বা তারো আগে?
কয়েকদিন আগে দেশে প্রচারিত বিবিসির ট্রেন্ডিং এর রেডিও অনুষ্ঠানটা শুনে হতভম্ব হয়ে গেলাম। ওদের ইউরোপে প্রকাশিত অনুষ্ঠানগুলোর সাথে কী বিশাল পার্থক্য! আমাকে ভল্টেয়ার লেকচারের সময় লন্ডনে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল মিডিয়া সম্পর্কে কী মনে করি। উত্তরে বলেছিলাম ওটাও তো একটা ব্যাবসাই, সেটাই মনে পড়ে গেল। যস্মিন দেশে যদাচারের ব্যবসা। যেখানে যেটা করলে লাভ হয় সেটারই ব্যবসা মিডিয়া। অনুষ্ঠানটা শুনতে শুনতে মনে হলো আমাকে, ডঃ অজয় রায় (অভিজিতের বাবা), অভিজিৎ, রাজীব, বাবু, অনন্তদের সবাইকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে যেন আমাদের আখেরাতি বিচার করে ফেলা হল। মুক্তমনাদের পক্ষের কেউ ছিল না সেখানে আমাদের পক্ষ হয়ে কিছু বলার জন্য! একজন ‘সেক্যুলার’ ব্লগার ছিলেন অবশ্য, তিনিও সুযোগে মসজিদ কমিটির সাথে তার সংশ্লিষ্টতার উল্লেখ করতে ভুলেন নি। খুব গুরুত্ব দেওয়া হলো দেখলাম জামায়াত-শিবির এক পলাতক আসামীর কথাকে, আসল কথাবার্তা অনেক দূরে সরিয়ে শেষ বিচারের রায়ে বলা হইলো আমগো মৃত্যুর জন্য, কুপানি খাওয়ার জন্য আমরাই নাকি দায়ী! এমন ভাষায় ধর্মকে আঘাত করলে তাদের ধর্মানুভূতি যে ভেঙ্গে খানখান হয়ে যায় সেইটা আমরা বুঝি না কেন! দেশের প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে বাজে কথা বললে যদি শাস্তি হতে পারে তার চেয়ে হাজার গুণে বড় সৃষ্টিকর্তাকে আঘাত করলে শাস্তি (পড়ুন, দোয়া দরুদের শক্তিতে বলীয়ান পবিত্র চাপাতির আঘাতে মৃত্যু) পাবে না কেন ব্লগাররা। শাহবাগের ওইসব ঘৃণ্য ব্লগাররা কাদের মোল্লার ফাঁসী চেয়েই তো মৌলবাদী মিলিট্যান্টদের আস্কারা দিয়েছে। ওদের নিরেট ফতোয়া-ভরা বুদ্ধি গিজগিজ করা মাথায় নাকি আমরাই এই কোপাকুপির ধারণা পুরে দিয়েছি। কত রঙ্গ দেখবো বল… দেখার তো শেষ নেই… এটা জেনেও কেমন যেনো বারবার হোঁচট খাইতেই থাকি।
সবশেষে একটাই অনুরোধ মুক্তমনাদের প্রতি, তাদের বন্ধু এবং সহানুভূতিশীলদের প্রতি। আমাদের মোটেও ভুলে যাওয়া চলবেনা যে, ফেসবুকে তথাকথিত ‘কুৎসিত ভাষায়’ স্ট্যাটাস দেওয়া ‘উগ্র নাস্তিকদের’ ছোট্ট দলটার বিরুদ্ধে আজ আমাদের যুদ্ধ নয়। ওদের কন্সট্রাকটিভ সমালোচনা করুন তাতে কেউ বাধা দিচ্ছে না। হুমায়ুন আজাদ, অনন্ত, রাজীব, বাবু, অভিজিৎদের মৃত্যুর জন্য কোনভাবেই তারা দায়ী নয়। অভিজিৎদের ধারণ করা দর্শনকে এত সংকীর্ণভাবে ব্যাখ্যা করবেন না দয়া করে। আজকের যুদ্ধ হচ্ছে বিশ্বব্যাপী চাগিয়ে ওঠা ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে, তাদের যারা তৈরি করেছে এবং টিকিয়ে রাখছে নিজের স্বার্থে সেইসব জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক শক্তির বিরুদ্ধে। আমি মনে করি সাম্রাজ্যবাদ এবং বিশ্বব্যাপী দারিদ্র-বৈষম্য এবং লুটপাটের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে দাড়িয়েও অন্ধ-ঘৃন্য ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা সম্ভব। মনে রাখবেন, পঁচে যাওয়া ফরহাদ মজহাররাই আজ একমাত্র সমধান নয়। সম্প্রতি অক্সফোর্ড থেকে এ বিষয়ে গবেষণা করার পর প্রেসেডেন্সি কলেজের শিক্ষক মঈদুল ইসলাম একটা বই লিখেছেন ‘লিমিট অফ ইসলাম’ নামে। যদূর পড়েছি তাতে মনে হচ্ছে উনি অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে প্রশ্ন করেছেন নিও-লিবারিলিজম এবং ইসলামিজম ছাড়া আর কোন পথ কি খোলা নেই আমাদের মানব সভ্যতার সামনে এই মুহূর্তে? বইটা এখনো পড়ে শেষ করিনি। তবে আমি মনে করি এধরণের প্রশ্নগুলোকেই আজ আমাদের সামনে নিয়ে আসা উচিত। এইসব অযথা বিতর্কে সময় নষ্ট না করে অর্সথনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক লাইন নির্ধারণের মাধ্যমে শত্রু-মিত্রের সংজ্ঞা ঠিক করে একসাথে সামনে আগানোর শপথ নেওয়াটাই আমাদের একমাত্র কাজ হওয়া উচিত এই মুহূর্তে।
মুক্তমনা হয়েছেন বলে কি ধর্ম নিয়ে কথা বলবেন।ব্যাংগ করবেন?আপনি বিজ্ঞান বিশ্বাস করতেই পারেন তার মানে এই না যে কারো ধর্মীয় অনুভূততি নিয়া কথা বলবেন। ?
আমাদের নিলয় নীল আর নেই-
আমি আপনাদের কাছে কোন দাবী নিয়ে আসিনি কাঁদতে এসেছি-
১. এই লেখাটির জন্য সময় বের করবার জন্য বন্যা আহমেদ, আপনাকে ধন্যবাদ। আপনার খুব সঙ্কট কালেও মুক্তমনা ব্লগ আপনার নিবিড় অংশগ্রহন চেয়েছে; আপনিও সময় দিয়েছেন। ধন্যবাদ। খুব দরকার ছিলো এটি।
২. নতুনরা সহ, পুরোনো অনেক মুক্তমনা ব্লগার এই পোস্টটিতে এসে মন্তব্য করেছেন বা করছেন; এটি শুভ লক্ষণ। ঘরের কথা ঘরেই বলা ভালো। তেতো মিঠে যাই হোক।
৩. অভিজিৎ অনন্তের হত্যাকান্ড ঘটে যাবার পর আমরা সবাই, মানে শুভাকাঙ্খীরা খুব স্বাভাবিক আচরণ করতে পেরেছি সেটা কিন্তু বলা যাবে না। ক্ষোভে কষ্টে আমাদের কাজকর্মগুলো, আচরণগুলো অন্যরকম হয়েছে, এখনো হচ্ছে। আমি আশাবাদী, অন্তত এই পোস্ট আর মন্তব্যগুলোর মাধ্যমে অশান্ত জটিল পরিস্থিতি কিছুটা হলেও শান্ত হবে। নতুন করে ভাবতে সাহায্য করবে।
৪. মুক্তমনায় বিজ্ঞান, মানবতা, বিশ্লেষণমূলক ও বিভিন্ন বিষয়ে অন্যান্য লেখাগুলোর সাথে সাথে এখন ধর্মের কঠোর সমালোচনা করে লেখা দিতে অসুবিধা কোথায়? যারা দেশে আছেন, প্লিজ নিজেদেরকে নিরাপদ অবস্থানে রাখুন। নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে, মুক্তমনার নীতিমালা মেনে মুক্তমনায় লেখা পোস্ট করলে মুক্তমনা ব্লগের কোন আপত্তি থাকার তো কথা নয়! আর যারা নিরাপদ অবস্থানে আছেন, তারা ধর্মের কঠোর সমালোচনা করে লেখা দিলেই বা অসুবিধা কোথায়?
৫. মডারেশন টিমের পক্ষ থেকে বাকস্বাধীনতা প্রসঙ্গে বন্যা মুক্তমনার মডারেশন টিমকে আহবান জানিয়েছেন তাদের অবস্থান পরিষ্কার করে একটা সুনির্দিষ্ট বক্তব্য দিতে। আমিও আশা করছি তা মডারেশন টিম দেবেন।
আমাদের সঙ্কটকাল স্বল্প হোক। শুভেচ্ছা।
বন্যা আপা,
কেমন আছো? তোমার ফিরে আসায় বিলিয়ন সুভেচ্ছা।
ভেবে ছিলেম ‘মুক্তমনায়’ আর লিখব না। শুধু শুধু মডারেট নাস্তিকের খাতায় নাম লিখে কি কাজ? তবে, তুমি নীরবতা ভাংলে, তাই ফিরে এলাম।
(মন্তব্যের শেষাংশ)
এর পরেও বলবো, নীতি, পলিসি এবং কৌশলের মধ্যে সমন্বয় সাধনের একটা ব্যাপার আছে। আমার নদীতে সাঁতরানোর অধিকার আছে বলেই আমি কুমীরে ভরা নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়বো না। আমি আমার বুদ্ধি-বিবেচনা ব্যবহার করে সময়োপযোগী প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেব। কোথায়, কখন, কৌশলের কারণে কী আমার করণীয় সে সিদ্ধান্ত আমিই নেবো। অভিজিত-বাবু-অনন্তকে হারিয়ে আমাদের বোধোদয় হয়েছে যে আমরা আসলেই একটা যুদ্ধের ময়দানে আছি – আমরা না চাইলেও। মনে রাখা দরকার যুদ্ধ শুধু তরোয়াল দিয় হয় না, ঢালও লাগে। ঢালটা তরোয়ালের আগেই তুলে নিতে হয়।
যুদ্ধে কৌশল গুরুত্বপূর্ণ, তবে নীতির চেয়ে বেশি নয়। নীতির কারণেই আমরা যুদ্ধে। এই নীতি (থিসিস) আর কৌশলের (এন্টিথিসিস) মধ্যে সম্পর্কটা দ্বন্দমূলক। এই দ্বন্দকে ঠিকমতো বিশ্লেষণ করতে না পারলে, সঠিক কর্মপদ্ধতি (সিন্থেসিস) নির্ধারণ করা যাবে না।
মুক্তমনায় অনেক পাঠক সে লেখাগুলো দেখতে চান যেগুলো অন্য কোন ব্লগে পাওয়া যায় না। এবং এই লেখাগুলো ধর্মের সমালোচনামূলক। অনেক পাঠকের বুদ্ধিবৃত্তিক চাহিদা মুক্তমনা এইসব লেখার মাধ্যমে মিটিয়েছে। পাঠকের মনন বিকাশে এই লেখাগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। এই ধরনের লেখা মুক্তমনার ইমেজ গঠনেও ভূমিকা রেখেছে।
কিন্তু এ জাতীয় বেশ কিছু লেখাই ছিল রুচিহীন এবং বিদ্বেষপ্রসূত। এর অনেকগুলোই প্রকাশিত হওয়ার আগেই বাতিল বা সম্পাদিত হতে পারতো মডারেশনের মাধ্যমে। কিছু কিছু হয়েছে, কিছু হয় নি। এ নিয় তুমুল তর্ক-বিতর্কও হয়েছে। এবং সেটাই ছিল স্বাভাবিক। বিতর্ক হয়েছে, কিন্তু কোন বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছিল বলে জানা নেই।
পরিতাপের বিষয়, এখন অভিজিৎ পরবর্তী মুক্তমনায় কিছু বিভ্রান্তির আলামত দেখতে পাচ্ছি, যদিও ফেসবুক-এক্টিভ না হওয়ার কারনে আমি অনেক কিছুই জানি না। জানতে চাইও না। আমি ফেসবুকে মুক্তমনা নিয়ে আলোচনায় উৎসাহী নই।
আমি মনে করি আমাদের খুব ভালো একটা নীতিমালা আছে। এই নীতিমালার প্রয়োগ আরো যথাযথ, আরো বলিষ্ঠ হতে পারে। মুক্তমনা আর পাঁচটা ব্লগের মতো জগাখিচুরি, বারোয়ারি মেলা যেন না হয়। অসহিষ্ণুতা এবং ফ্যসিবাদী চিন্তা-চেতনার ধারকবাহক যেন মুক্তমনা না হয়। ধর্মীয় মৌলবাদ প্রচারের জায়গা মুক্তমনা তো হবেই না – তেমনি ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়ানোর প্ল্যাটফর্মও মুক্তমনা হতে পারে না।
মুক্তমনা হোক রুচিশীল, মানসম্মত, উন্নত চিন্তা-চেতনার ব্লগ, যার উদ্দেশ্য হবে জানা এবং জানানো, যেখানে হবে উচ্চমার্গীয় তর্ক-বিতর্ক। লেখক-পাঠকেরা নীতিমালা মেনে চললে আর মডারেশন সক্রিয় থাকলে, সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিলে, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের ভিত্তিতে যে কোন বিষয় নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হতে পারে এবং হওয়া উচিৎ।
মুক্তমনা হোক একটা সামাজিক আন্দোলনের নাম। মুক্তমনা হোক যুক্তিশীল মানুষের তীর্থ। চেতনার সমৃদ্ধি হোক মুক্তমনাদের সাধনা।
(নোটঃ পোস্টের অনেক পরে মন্তব্য করার জন্য দুঃখিত। আমার মন্তব্যটা শুধুমাত্র লেখার পরিপ্রক্ষিতে – এই পোস্টে করা অন্যান্য মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে নয়।)
বন্যার আরেকটা সময়োপযোগী লেখা। মুক্তমনা’র উদ্দেশ্য, নীতি, পলিসি, কৌশল নিয়ে কিছু আপাত বিভ্রান্তির পরিপ্রেক্ষিতে মনে হচ্ছে এই লেখাটা। আশা করি এটি অনেকের মনে যে বিভ্রান্তি আছে মুক্তমনাকে নিয়ে তার নিরসনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
চর্বিত চর্বন করবো না, তাই পেছনপানেও তাকাবো না। বাকস্বাধীনতা প্রসঙ্গে বন্যা মুক্তমনার মডারেশন টিমকে আহবান জানিয়েছেন তাদের অবস্থান পরিষ্কার করে একটা সুনির্দিষ্ট বক্তব্য দিতে। আমি আশা করছি তা মডারেশন টিম দেবেন। বন্যার এই লেখতেই এ সম্পর্কে দিক নির্দেশনা রয়েছে। যেমন, তিনি বলেছেন, মুক্তমনা একটা মডারেটেড ব্লগ, তাই নীতিমালা মেনেই এখানে লেখার উপযুক্ততা এবং লেখকের যোগ্যতা বিবেচনা করা হবে; এবং, এই বিবেচনা কোন একজন ব্যাক্তির সিদ্ধান্ত হবে না, সম্পদকমন্ডলীর সিদ্ধান্ত হবে।
মুক্তমনা নিশ্চয়ই বাকস্বাধীনতার পক্ষে শক্ত অবস্থানে থাকবে। মুক্তমনে নিজের মত প্রকাশ করার অধিকারই বাকস্বাধীনতা। এই স্বাধীনতার জন্য এই বিশ্বে এ যুগেও পশুশক্তির হাতে চরম মূল্য দিতে হচ্ছে মুক্তমনাদের। আমাদের অভিজিৎ-অনন্তকেও দিতে হলো। অভিজিতের প্রতিষ্ঠিত মুক্তমনা বাকস্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নিতেই পারে না। কিন্তু একই সাথে এটাও বলবো যে, নোংরা-অশ্লীল লেখা, আক্রমণাত্মক বা হুমকিমূলক লেখা, ঘৃণা বা বিদ্বেষ উদ্রেককারী লেখা মুক্তমনার মডারেশন টিম (টিম শব্দটার ওপরে জোর দিচ্ছি) আটকে দিতেই পারে, দিয়েছেও, এবং ভবিষ্যতেও দেবে। এ নিয়ে কথা উঠবে, খুবই স্বাভাবিকভাবে যার লেখা আটকে দেয়া হয়েছে, তিনিতো বটেই তার সমর্থকরাও বলে উঠবেন, আমার বাক স্বাধীনতা বা মত প্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। কথা উঠবে, ‘আপনাদের কাছে যা নোংরা বা অশ্লীল তা আমার কাছে নয়, আপনি ভুল ইন্টারপ্রিটেশন করছেন, আমি কাউকে হুমকি-ধামকি দেই নি, বা আমি শুধু সমালোচনা করেছি, কার বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়াই নি’। কিন্তু তাতে কিছুই আসবে যাবে না, যদি সম্পাদকমন্ডলী নীতিমালা মেনে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন।
মুক্তমনা’র একটা স্পষ্ট নীতিমালা আছে, সাইটেই। যে কেউ ক্লিক করে দেখে নিতে পারেন। প্রাসঙ্গিক মনে হওয়াতে আমি কিছু আংশিকভাবে উদ্ধৃত করছি।
মুক্তমনার উদ্দেশ্য-আদর্শ নিয়ে একটু বলা দরকার মনে করছি। মুক্তমনা সাইটের ‘মুক্তমনা কী’ তে আছে –
আপনি কি খুব অবাক হবেন যদি কিছু মানুষের কাছে (পড়ুন বদ্ধমনাদের কাছে) মুক্তমনার যে কোন লেখা বিদ্বেষ-প্রসূত মনে হতে পারে? অবাক হবার কোন কারণ নেই। স্পষ্টতই তাদের তুষ্ট রাখার কারণে মুক্তমনা ধর্মীয় দর্শনের সমালোচনা থেকে বিরত থাকতে পারে না। এই জন্য চরম মূল্য দিতে হলেও। তাই অভিজিৎ বলেছিলন, ‘আমরা জানি আমরা প্রাণ হাতে নিয়েই লেখালেখি করছি’।
অভিজিৎ জানতেন, মুক্তমনা অনেকের আজন্মলালিত বিশ্বাসের দূর্গে আঘাত করেছে এবং করবে। এর প্রতিক্রিয়া হবে – তবে এটাইতো উদ্দেশ্য। ধর্মীয় দর্শনের অসারতা প্রকাশ এবং প্রচার করা। কিছু মানুষ ক্ষুদ্ধ হবে, ক্রুদ্ধ হবে। পথপাশে কুকুর ঘেউ ঘেউ করবে – কিন্তু কারাভাঁ থেমে যাবে না। মুক্তমনা থামবে না – মুক্তমনার উদ্দেশ্য সুদূরপ্রসারী। মানুষের চিন্তার জগতে রূপান্তর ঘটানো – চেতনার সমৃদ্ধির মাধ্যমে।
এ প্রসঙ্গে ‘মুক্তমনরা কি ধর্ম বিরোধী?’ উপ শিরোনামে সাইটে লেখা আছে –
আমি যেটুকু বুঝেছি, মুক্তমনার উদ্দেশ্য ‘সেক্যুলার হিউম্যানিজমে’র প্রচার ও প্রসার, শুধুমাত্র নাস্তিকতা নয়।
(চলমান)
গত পাঁচ মাসে আমরা অনেকেই ছিলাম মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত। এখনো ফেসবুকে কোন দুঃসংবাদের ছায়া দেখলে ভয় পেয়ে যাই, হারিয়ে গেলো না তো আমাদেরই কেউ আবার? যেখানে আতঙ্ক তাড়া করে ফেরে আমাদের সেই সময়টাতেও কেউ কেউ কাঁদা ছোড়াছোড়িতে ব্যস্ত, দেখলে হতাশ লাগে। বোঝার উপর শাকের আটি আঁরকি।
আসলেই আমাদের প্রতিপক্ষ কে? যেই মৌলবাদের ছুরিকাঘাতে আমরা রক্তাক্ত হয়ে যাচ্ছি সেটা নাকি আপনার চেয়ে যে বড় সেলিব্রিটি হয়ে উঠছে সে? আমার তো মাঝে মাঝে মনে হয় অনেকের কাছে সেলিব্রিটিত্বের দৌড়ই মুখ্য হয়ে দাড়াচ্ছে। আসিফ মহিউদ্দীন নাস্তিক সেলিব্রিটি। তিনি এই স্ট্যাটাসটা অর্জন করেছেন অনেক কষ্ট করেই। প্রথমে কিছু যৌক্তিক এবং কিছু ফালতু কথা বলে। তিনি যা বলেন, তার সবকিছু যৌক্তিক নয়, আবার সবটা ফালতুও নয়। কিছু কথা কেবলই উস্কানির মতও শোনায়। কিন্তু সেখানেই সীমাবদ্ধ নয়। তিনি কি বলছেন, সেই হিসাব নিকাশটা যদি কয়েক সেকেন্ডের জন্য বাদ দেই, তাহলে আরো দুটো ঘটনা ঘটেছে। এক. তিনি কেবল কথা বলার জন্য চাপাতির কোপ খেয়েছেন, দুই. কোপ খেয়ে সুস্থ হয়ে আবারও কেবলই কথা বলার জন্য জেলে গেছেন। নিপীড়নটা মৌলবাদীরা করেছে, রাষ্ট্রযন্ত্রও করেছে। পরিপ্রেক্ষিতে দেশ ছাড়লেন, দেশে ফিরলে নিস্তার পাবেন তাও না। এতোকিছুর পর কেবল তার সেলিব্রিটি স্ট্যাটাস নিয়ে কাঁদা ছোঁড়াছুড়িটা কি একটু কেমন হয়ে যায় না?
এইবার আসি তিনি কিভাবে কথা বলছেন, সেটা নিয়ে। তিনি অনেক কিছুই বলছেন। সম্প্রতি যে কারণে উনাকে নিয়ে কিছুটা কাঁদা ছোড়াছোড়ি হল, সেটা কাবার গায়ে রেইনবো। কাবার গায়ে রেইনবো লাগানোর আইডিয়াটা আসলে কার, তা আসলে অ্যাথেইস্ট রিপাবলিক আর আসিফ মহিউদ্দীনই বলতে পারবে, আমি শুধু এটুকু বলতে চাই, অন্য কারোর আইডিয়া যথাযথ সাইটেশন না দিয়ে নিজের বলে মেরে দেয়|টাকে চুরি বলে।
http://www.atheistrepublic.com/op-ed/moderate-response
এরপরের তর্কগুলোর সারমর্ম আসিফ মহিউদ্দীন এটা কি করল, এইভাবে উস্কানী দেয় আসিফ মহিউউদিন, আর কোপ পড়ে আরেকজনের ঘাড়ে। কাল যদি মৌলবাদীরা কাউকে মেরে ফেলে তার দায় নেবে আসিফ মহিউদ্দীন?
প্রশ্ন এক. যেখানে নাস্তিক নিধার্মিকেরা যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করতে চাইছে ধর্মের অসারতা, তারকাছে কাবায় রংধনু লাগানো বা না লাগানোর মাঝে তফাত কি? ধর্মানূভূতির পূজা?
প্রশ্ন দুই. আসিফ মহিউদ্দীনকে ঘোষণা দিয়ে একঘরে করে লাভ কি হল? এতে আসিফ মহিউদ্দীন এসব থেকে বিরত থাকবে? নাকি যে ধর্মানুভূতিতে আঘাত হানে সে আপনার বন্ধু হতে পারে না বলে সেফ সাইডে গেলেন। আপনার তাকে পছন্দ নয়, তাকে সরাসরি বলুন, তার যে কর্ম আপনি অপছন্দ করছেন, তার সমালোচনা করুন যুক্তি দিয়ে, কোন সমস্যা নেই। কিন্তু কাঁদা ছুড়ে লাভ কি?
আসিফ মহিউদ্দীন যদি ফালতু কথা, স্ট্যান্টবাজি করেই থাকে, সে নিজের নিজের গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট করছে। সে নিজেই যেখানে নিজেকে টেনে নামানোর জন্য যথেষ্ট, সেখানে অন্যদের কেন তার পিছনে সময় নষ্ট করতে হবে? তিনি হয়ত বোঝেন না, ফালতু কথা, কাজকর্মের জন্য উনার যৌক্তিক কথারও মূল্য কমে যায়। ফেসবুকে হাজারে হাজারে ফলোয়ার থাকলেই সারাজীবন সেলিব্রিটি পদমর্যাদা ধরে রাখা যায় না, সম্মান তো অনেক দূরের কথা।
প্রশ্ন তিন. মৌলবাদীদের কোন আঘাতের দ্বায়িত্ব অন্য কেউ কেন নেবে? দুধ কলা দিয়ে সাপকে পুষলে আপনি সাপের কামড় থেকে মুক্তি পাবেন, সে ধারণা কেন হল? মৌলবাদের আগ্রাসন থেকে মুক্তির পথ হয় শিক্ষায় নয় প্রশাসনিক উন্নয়নে, সমঝে চলা নয়।
যদি মনে করেন মানবতার এই আন্দোলনে আপনার কিছু করার আছে, তাহলে অহেতুক আবেগে অযৌক্তিক আঘাত না করে নিজের কাজে মন দিলে সকলেরই মঙ্গল। আর অভিজিৎদার সারাজীবনের পরিশ্রম এতো এতো বই, এতো প্রবন্ধ লেখার পর যদি কেউ বলে কারোর ফালতু কথার ফলশ্রুতিতে মৌলবাদীরা অভিজিৎ দা কে মেরেছে, তাহলে অভিজিৎ দার সারাজীবনের কাজকে ছোটই করা হয়। অনন্ত বিজয় কোন তুচ্ছ কারণে প্রাণ হারায়নি, সে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার আদর্শের পথে থেকে, তার আদর্শের কারণেই প্রাণ হারিয়েছে, এইটুকু স্বীকার করে তাকে তার প্রাপ্য সম্মানটুকু দিন।
শেষ করতে চাই একটা কথা বলে। “উগ্র নাস্তিক” বা “ইসলাম বিদ্বেষী” এই শব্দগুলো বছরকে বছর বলেও ছাগুরা হালে পানি পায়নি। কিন্তু যখনি মুক্তমনার মত কোন প্লাটফর্মের কেউ এরকম ট্যাগ যত্রতত্র দিয়ে বেড়ান তখন সেটা হালে পানি পেতে সময় লাগে না। পারভেজ আলম যখন অভিজিৎদাকে “স্যালাফি সেক্যুলার” বলে আক্রমণ করেছিল তখন সেটার গুরুত্বটা বেশি ছিল কারণ কথাটা ফারাবী বলেনি, বলেছে একসময় আমাদের কাতারে থাকা একজন ব্লগার। কাজেই সুষুপ্ত পাঠকের লেখার স্কেনশর্ট দেখালে সাধারণ মানুষরাই তাদেরকে পিটিয়ে মেরে ফেলবে বলাটা আগুনে ঘৃতাহুতি দেয়ার মতই। কে জানে ভবিষ্যতে এসব দেখিয়ে আমার শত্রুরা কতটা কি করতে পারে?
সুষুপ্ত পাঠক,
আমিও ঐ পোস্টের খবর পেয়েছিলাম- আমারব্লগে দেশী পোলার ঐ পোস্ট থেকে। কৌশিক বা প্রণব লিংক দিয়েছিল … দেশী পোলা নামের চরম নাস্তিকবিদ্বেষী লোকটাকে সামুব্লগেও মনে হয় একটিভ দেখেছিলাম … সে ফরিদ আহমেদ এর কমেন্টটা লুফে নিয়েছিল … বাস্তবে লুফে নেয়ার মতই কমেন্ট ছিল ওটা …
আমি যতটুকু বুঝি বা ধারণা করি, অভিজিৎ দার খুব কাছের বন্ধু ফরিদ আহমেদ অনেকটা ইমোশনাল হয়েই অমন কথা বলেছেন …
আগে থেকেই ফরিদ আহমেদের অবস্থান ছিল- ধর্ম-টর্ম নিয়ে খোচাখুচি না করে- সাহিত্যের মাধ্যমে, বিজ্ঞানের মাধ্যমে- একটা পরিবেশ তৈরি করার পক্ষে ছিলেন … যতদূর মনে পড়ে- কোরআনের কন্ট্রাডিকশন নিয়ে আমার একটা পোস্টে এসব নিয়ে লেখালেখিকে ডিসকারেজ করেছিলেন, আর ইশ্বরের সাথে কিছুক্ষণ নামের একটা গল্পের কমেন্টে বলেছিলেন- এরকম লেখাই দরকার … সেটা তার একটা অবস্থান … অভিজিৎ দা কোরআন- নবীকে নিয়ে সমালোচনামূলক লেখাকেও উৎসাহ দিতেন, কেননা তিনি উভয়ধরণের লেখাকেই গুরুত্বপূর্ণ মনে করতেন … ফরিদ আহমেদের এমন অবস্থান নিয়ে কিন্তু মাঝে মধ্যে মুক্তমনায় অভিজিৎ দার তার সাথে ডিবেটও হতো …
কিন্তু ঐ পোস্টে ফরিদ আহমেদ এর অমন কমেন্ট, বা তার কাছাকাছি কিছু আমি কোনদিন দেখেছি বা তার মুখে শুনেছি মনে করতো পারবো না … একটা সময় যখন আবুল কাশেম, কামরান মীর্জা, প্রদীব দেব, বিপ্লব পাল, … রা নিয়মিত খোলামেলা ধর্ম নিয়ে লিখতেন- তখন থেকেই কিন্তু তিনি এই মুক্তমনার সাথে যুক্ত … এমনকি- অভিজিৎ দা নিজেও ধর্মকে সমালোচনা করে মারাত্মক তীব্র সব লেখা লিখেছেন … ফলে তার ঐ টলারেন্স ছিল – এখনো আছে … ফরিদ আহমেদ এর সেদিনের ঐ আলোচনাকে তাই আমি একটু বিচ্ছিন্ন করেই দেখতে চাই … অভিজিৎ দাকে হারানোর প্রচণ্ড শক থেকেই এমন কথা বলে ফেলেছেন তিনি বলে মনে হয় … যাহোক, তিনি নিশ্চয়ই কথা বলবেন … তার কাছ থেকেই ব্যাখ্যা পেলে সবদিক থেকে ভালো …
তবে, যুদ্ধ কৌশলের কথা বলে কেউ কেউ মনে হয় ফরিদ আহমেদের ঐ অবস্থানকে জাস্টিফাই করতে চাচ্ছেন … সেটাকে খুব ভুল মনে করি … যুদ্ধ কৌশল হিসাবেই এটা ভুল … কেননা- অভিজিৎ দা আর অনন্তের হত্যার দায় অন্য উগ্র নাস্তিকদের ঘাড়ে দেয়া মানেই – অস্ত্র খুনীদের হাতে তুলে দেয়া …
আপনার কমেন্ট দেখে কমেন্টটা করে ফেললাম … হয়তো এটাই এই পোস্টে আমার শেষ কমেন্ট (যদি না কেউ আমার আগের আলোচনা বিষয়ক কোন কিছুর ব্যখ্যা না চায়, বা কোন প্রশ্ন না করে) …
আমার মনের সব গুলো কথা এবং প্রশ্নগুলোই যেন কিভাবে আপনিই আগে বলে ফেললেন। অনেক কিছুই এখন পরিষ্কার।
আর অভিজিৎদার পর মুক্তমনাকে কেন অন্যরকম মনে হচ্ছিল তাও বুঝতে পারলাম। এবং এটাও বুঝতে পারছি আরো অনেকদিনই হয়ত মুক্তমনাকে এরকমই মনে হবে। তার কিছু উত্তরসূরি কিম্বা সহকর্মী যাদের অনেক ত্যাগ এই ব্লগের পিছনে তারা আর যাই হোক মুক্তমনাকে মডারেটরূপ দিতে যথেষ্ট বদ্ধপরিকর বলেই মনে হচ্ছে।
তারপরও যদি আপনাদের আরও লেখা মুক্তমনায় পাই তবে খুশীই হব। অবশ্য যদি মডারেশনের হাত না পরে।
আপনার কথার সাথে ১০০ ভাগ একমত। ফরিদ আহমেদের লেখা পড়ে আমারো তাই মনে হয়। তাই দাদার মৃত্যর পর মুক্তমনাকে পানসে মনে হবার কারণ টাও বুঝতে পারছি।
তাই মনে হচ্ছে মুক্তমনা বোধহয় অচিরেই মডারেট খেতাব অর্জন করতে চলেছে। এরপরও আপনার পোস্ট আশা করি। যদিও জানি তা না পাবার সম্ভাবনাই বেশী।
অভিজিৎদাকে হত্যা করার পর আমরা সবাই মুক্তমনাকে আমাদের পরম আশ্রয় জেনে সেই বিপদের দিনে একত্রিত হয়েছিল। প্রত্যেকেই যোগ্যতা ও সাধ্যমত পোস্ট দিয়েছিল এই প্রত্যয় জানাতে যে, যে লড়াইতে আমরা ছিলাম এখানো আছি এবং থাকবো। আমিও তখন একটা লেখা লিখেছিলাম “অভিজিৎ রায়ের জন্য কোন মুখবন্ধ প্রয়োজন নেই” নামে একটি লেখা। বিপ্লব পালও লিখেছিলেন একটি লেখা র্যাডিক্যাল বনাম র্যাশানাল (https://blog.mukto-mona.com/2015/05/16/46343/) নামে। মূলত এখানেই ঘটে “উগ্র আর ভদ্র নাস্তিক” বিতর্ক। ফরিদ আহমেদের করা একটি মন্তব্যের জবাব দেই আমি। সেটি তিনি মুছে দেন। তিনি মুছে দেন দাবী করছি কেননা সেই পোস্টেই তিনি মন্তব্য করেছিলেন যদি সুষুপ্ত বা আকাশ মালিক চেহারা দেখিয়ে লেখে তাহলে তিনি একটি লাইনও তাদের মুছবেন না। এই মন্তব্য তিনি তার নিক থেকে করেছেন, মুক্তমনা মডারেটর নিক থেকে করেননি। ফরিদ আহমেদ পরিস্কারভাবে আমার নাম ও আকাশ মালিকের নাম উল্লেখ করে দাবী করলেন আমাদের মত উগ্ররা আমাদের ছদ্মবেশীর সুযোগে আড়ালে থেকে যাই আর মরে “প্রকৃত নাস্তিকরা”। আরো একটি ভয়াবহ কথা তিনি লিখেছিলেন যে, আমাদের লেখাগুলোর স্কেনশর্ট দেখালে মৌলবাদী লাগবে না, সাধারণ মানুষই আমাদের পিটিয়ে মেরে ফেলবে।… ফরিদ আহমেদের এই বক্তব্য নিয়ে কিছু সহসী মুক্তমনা ব্লগার প্রকাশ্যে সেই পোস্টে এবং প্রাসঙ্গিকভাবে অন্য জায়গাতেও তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। কিন্তু ফরিদ আহমেদ কোথাও বলেননি যে উনার ভুল হয়েছে বা তিনি যা বলেছিলেন সেটা সঠিক নয়। তার মানে তিনি যা বলেছিলেন তা এখনো সঠিক বলে মনে করেন।
আমার মত একজন সাধারণ ব্লগার, যে দেশে থাকে তাকে জিহাদীরা খুঁজে না পেলেও সরকার চাইলে খুব সহজেই প্রযুক্তি ব্যবহার করে খুঁজে পেতে পারে। আমরা ২০১৩ সালে দেখেছি সরকার ইচ্ছা করলে ব্লগারদের নিয়ে কি করতে পারে। কাজেই কাল যে নাস্তিক ইসলাম বিরোধী ব্লগারদের ধরপাকড় শুরু হবে না কেউ তার গ্যারান্টি দিতে পারে না। তখন ফরিদ আহমেদের মত মানুষদের এরকম রেখে দেয়া “দলিলগুলো” কুড়িয়ে সরকারের হাতে পৌছে দেয়ার লোকের অভাব হবে না । ফরিদ আহমেদ যে ছাগুদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছেন তার দুটো নমুনা আছে এখানে (https://www.amarblog.com/deshipola/posts/187244) ও এখানে (https://www.amarblog.com/deshipola/posts/185779) । আমি কানাডা বা আমেরিকায় থাকি না। তাই ছদ্মবেশ নিয়েই আমাকে লিখতে হয়। আমি উগ্র ইসলাম ব্যাসার, ইসলাম বিদ্বেষী এসব ফারাবী, সদালাপের ট্যাগ খাওয়ার আগেই ফরিদ আহমেদের কাছ থেকেই খেয়েছিলাম ২০১২ সালে কোন একটা পোস্টে। তখন আমি মুক্তমনার সদস্য হইনি। আমার মনে আছে অভিমানে আমি চলে যেতে চাইলে মুক্তমনা মডারেটর নিক থেকে আমাকে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার জন্য অনুরোধ করা হয়। একজন ননসদস্যকে এভাবে মূল্যায়ন করায় আমি অভিমান ভুলে ফের লেখা শুরু করি। জানি না সেই মডারেটর নিকের আড়ালে অভিজিৎদা ছিলেন কিনা! যাই হোক, আমাকে মক্তমনা ব্যান করায় এসব নিয়ে আমি ফেইসবুকে কিছু লিখেছি। সম্ভবত মুক্তমনার সঙ্গে জড়িত বা মুক্তমনার ব্লগার এমন কারুর মধ্যে- একমাত্র আমিই ফরিদ আহমেদকে উদ্দেশ্য করে পোস্ট লিখি। কিন্তু সেটা মুক্তমনা ব্লগের বিরুদ্ধে নয়। মুক্তমনা ব্লগ ঠিক জায়গায় যাচ্ছে কিনা, অভিদার সেই মুক্তমনা তার চরিত্র ধরে রাখতে পারবে কিনা- এরকম আশংকা প্রকাশ করা কি কোন ব্লগের নিন্দা করা? ফরিদ আহমেদকে আমি মডারেট নাস্তিক বলি। তার মধ্যে মুসলিম জ্যাতিভিমান অতি স্পষ্ট। তার জাতীয়তাবাদী মনোভাব কিছুতে মু্ক্তমনার সঙ্গে যায় না। এসব নিয়ে তো আমি লিখতেই পারি যিনি কিনা আমাকে পরোক্ষভাবে অভিদার মৃত্যুর জন্য দায়ী করেন! বলেন আমাদের ছড়ানো ঘৃণার কারণেই অভিদাকে মরতে হয়েছে। যিনি আমার কমেন্ট মুছে দেন যখন আমি উনার উগ্র নাস্তিক থিউরীর সঙ্গে দ্বিমত করি। আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এখন পর্যন্ত মুক্তমনা থেকে যে ক’জন লেখককে ব্যান করা হয়েছে বা তারা অভিমানে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন তারা প্রত্যেকেই ফরিদ আহমেদ কথিত “উগ্র নাস্তিক” ছিলেন! এক্ষেত্রে ভবঘুরের নাম বলতে পারি। আমাকে যে ব্যান করা হয়েছে তার কারণ ফরিদ আহমেদ ভাল বলতে পারবেন। বন্যা আহমেদের লেখার যে অংশটি আমি কোড করেছি তার শেষে তিনি “ধন্যবাদ” জানিয়েছেন সম্ভবত আমাকেই! এমনটা না হতেও পারে। মুক্তমনার আমি কোন সেলিব্রেটি ব্লগার নই। তবে যেহেতু ফরিদ আহমেদকে তুলোধুনো করেছি, মুক্তমনা ব্লগ নিয়ে দু-চার কথা বলেছি যা কিছুতে হে হে টাইপের তেল মারা প্রশস্তি গাথা নয়, কাজেই মনে হয়েছে হয়ত আমাকেই বুঝানো হয়েছে। তবে “ধন্যবাদটা” সসম্মানে গ্রহণ করা হলো। মুক্তমনাতে লিখতেই যে আমি বাংলার মুক্তচিন্তক লেখকদের যে অহির্নিশি সংগ্রাম তার সঙ্গে আছি আর না লিখলেই সঙ্গে নেই তা তো না। মুক্তমনা একটা প্লাটফর্ম। সেই প্লাটফর্মে যে কোন কারণেই আমাদের জায়গা না হতে পারে। আমি সব সময় মনে করি আকাশ মালিকের সঙ্গে ফরিদ আহমেদের যে দ্বন্দ্ব তা ব্যক্তিগত আক্রোশ- তার সঙ্গে মুক্তমনা ব্লগকে টেনে আনা ঠিক হবে না। আমার সঙ্গে ফরিদ আহমেদের যে দ্বন্দ্ব তাও ব্যক্তিগত আক্রোশ- মুক্তমনা ব্লগকে টেনে আনা এখানে উচিত নয়। ফরিদ আহমেদ মুক্তমনা ব্লগের কাধে বন্দুক রেখে শিকার করেছেন মাত্র।
এই পোস্টে কমেন্ট করতে যেয়ে বার বার ব্যর্থ হয়ে মনে হচ্ছে পোস্ট লেখার অধিকার কেড়ে নেয়ার মত মন্তব্য করার অধিকারও কেড়ে নেয়া হয়েছে। অথচ ঐ পোস্টে আমার কিছু বলা একান্ত জরুরী কেননা সাম্প্রতিক মুক্তমনার বিতর্কের মধ্যে আমিও জড়িয়ে আছি। যে বিতর্কে ফরিদ আহমেদ, সুষুপ্ত পাঠক ও আকাশ মালিকের কথা বার বার উঠেছে। কিছু বলার যেখানে জরুরী সেখানে যদি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় তখন বাধ্য হয়েই বিকল্প মাধ্যমে কথা বলতে হয়। বন্যা আহমেদ বলেছেন সোসাল মিডিয়াতে গিয়ে হৈ চৈ করার আগে মুক্তমনার কর্তৃপক্ষের কাছে যাওয়া উচিত। কিন্তু সাধে কি আর বিকল্প মিডিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এবার মুল কথায় আসি। বন্যা আহমেদের লেখার একটি অংশ কোট করছি-
মুক্তমনার কোন ব্লগারকে নিয়ে কথা বলা নিশ্চয় মুক্তমনা ব্লগটিকে নিয়ে কথা বলা নয়। সম্প্রতি মুক্তমনা ব্লগে যে বিতর্ক বয়ে গেছে, এই ব্লগে প্রকৃত বা সহি নাস্তিক আর উগ্র মুখোশধারী ছদ্ম নাস্তিক নিয়ে যে পরস্পরের মধ্যে অবিশ্বাস আর দন্ড তা কিন্তু মুক্তমনা ব্লগটি তার ব্লগীয় নীতি বা কোন রকম মডারেটর করতে গিয়ে ঘটেনি। এর মূলে মুক্তমনার ফরিদ আহমেদ। বন্যা আহমেদ এ জন্যই ফরিদ আহমেদকে নাম ধরে উল্লেখ করে প্রসঙ্গ তুলেছেন। বাকীদের নাম তিনি ধরেননি হয়ত বিতর্ক এড়াতে বা তারা উল্লেখযোগ্য কেউ নয় বলে। এই স্মরনীয় পোস্টটিতে আমাকে মন্তব্য একান্ত বাধ্য হয়েই করতে উদ্যোগ নিতে হয়েছে কেননা যে বিতর্ক এখানে শুরু হয়েছিল তার সঙ্গে আমার খানিকটা যোগসূত্র রয়েছে এবং এর জের ধরে মুক্তমনা থেকে আমাকে ব্যান (পোস্ট লেখার অধিকার কেড়ে নেয়া) করা হয়েছে। যেহেতু নিজের কথা বলতে হবে তাই বার বার “আমি-আমি” চলে আসবে তাই যাদের “আমি-আমি অনুভূতি” প্রবল তারা ক্ষমা করে দিবেন।
(বি.দ্র. একসঙ্গে পুরো কমেন্ট নিচ্ছে না বলে ভেঙ্গে ভেঙ্গে দিচ্ছি)
এই নতুন আলোচনা ও বিতর্কের প্রেক্ষাপটে মুক্তমনার নীতিমালা আরো সুসামঞ্জস্যপূর্ণ করে নেয়ার সময় এসেছে বলে আমার মনে হয়। আপনি এই ব্যাপারটা পুরোপুরি স্পষ্ট করেছেন যে, গোটা বিশ্বে বাকস্বাধীনতা প্রসঙ্গে মুক্তমনার অবস্থান, এবং মুক্তমনায় লেখা-মন্তব্য প্রকাশের নীতিমালা দুটো আলাদা জিনিস। সবার বাকস্বাধীনতা রক্ষায় মুক্তমনার অবস্থান আপনি পুরোপুরি স্পষ্ট করেছেন, কিন্তু মুক্তমনায় সবকিছু প্রকাশ হবে না অবশ্যই, কখনোই হতো না, এ কারণেই তো এটাকে মডারেটেড ব্লগ বলা হয়, যেটাও আপনার লেখায় উঠে এসেছে। ধরা যাক কেউ একজন একটা আবর্জনা লিখে ফেলল, মুক্তমনার উচিত উক্ত ব্যক্তির সেই আবর্জনা প্রসবের অধিকারের পক্ষে দাঁড়ানো, কিন্তু তার মানে এই নয় যে আবর্জনটা মুক্তমনায় প্রকাশ করতে হবে। মুক্তমনায় কী প্রকাশ করা হচ্ছে সেটা দিয়ে যদি কেউ বাকস্বাধীনতা প্রসঙ্গে মুক্তমনার অবস্থানকে বিচার করেন তাহলে সেটা ঠিক হবে না বলে আমার মনে হয়। একটা উদাহরণ দেয়া যাক, জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা যেহেতু বিজ্ঞানী সেহেতু তারা যেকোনো বৈজ্ঞানিক তত্ত্বকে আক্রমণ করা ও পরীক্ষা করায় বিশ্বাসী, সবার সকল মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী, কিন্তু তাই বলে কি খুবই নিম্নমানের একটা পেপার জ্যোতির্বিজ্ঞানের একটা জার্নাল ছাপিয়ে দেবে? দেবে না। এখানেই স্ট্যান্ডার্ডের প্রশ্ন। সুতরাং আশা করব মুক্তমনা সম্পাদকরা দুটো জিনিস দুটো আলাদা নথিতে স্পষ্টভাবে সবার জ্ঞাতার্থে লিপিবদ্ধ করে রাখবেন:
১) বাকস্বাধীনতা প্রসঙ্গে মুক্তমনার অবস্থান (“মুক্তমনা কী” লেখাটিকে এক্ষেত্রে কাজে লাগানো যায়)
২) মুক্তমনার প্রকাশনা নীতিমালা (“নীতিমালা” লেখাটি সংশোধনের মাধ্যমে এটা করা যায়)।
বাকস্বাধীনতা প্রসঙ্গে মুক্তমনার যে অবস্থান আপনি ব্যক্ত করেছেন তার সাথে আমি পুরোপুরি একমত। মুক্তমনার প্রকাশনা নীতিমালা নিয়ে যেহেতু বিস্তারিত বলেননি, সেহেতু আমি এখানে একটু নাক গলাতে চাই। মুক্তমনার মডারেশন নিয়ে আমার প্রস্তাবগুলো এই সুযোগে বলে দিতে চাই:
১) “মুক্তমনা সম্পাদক” ছাড়া অন্য কোনো নাম থেকে কেউ কিছু বললে সেটা মুক্তমনার অফিসিয়াল অবস্থান হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত না।
২) মুক্তমনার অবস্থান কেবলমাত্র “মুক্তমনা সম্পাদক” নাম থেকেই পরিষ্কার করা উচিত, নইলে বিভ্রান্তি কেবল বাড়বেই।
৩) মুক্তমনায় ভুল বানান ও ভুল বাক্যগঠনের লেখা-মন্তব্য ছাপানো উচিত না।
আপাতত এটুকুই। মুক্তমনা সম্পাদকরা যৌথভাবে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেবেন এই আশায় থাকলাম।
বন্যাদি,
বেশ দরকারী একটি লেখা, সময়মত দিয়েছেন। এটি একদিকে যেমন অনেকের বিভ্রান্তি ও হতাশা দূর করবে অন্যদিকে সঠিক দিকনির্দেশনাও দিবে। লেখাটি ইতিহাস হয়ে থাকবে (সিরিয়াস)।
মন্তব্য করতে গিয়ে বিশাল হয়ে গেছে। পরে পোস্ট করে দেব ব্লগে।
“একমত না হওয়া বা তার কাজ কর্মে বিরক্ত হওয়া বা তাকে বিশ্বাস না করার মানে এই না যে “উগ্র নাস্তিকতাই নাস্তিক খুনের কারণ” হিসেবে বিশ্বাস করছি। এই নাস্তিকতা ইস্যুর সাথে শাহাবাগ, যুদ্ধাপরাধের বিচার থেকে শুরু করে অনেক কিছু জড়িয়ে আছে। কোন উস্কানি থেকে কোপের সৃষ্টি হয়নি, বরং কোপ দেয়া হয়েছে অনেক প্ল্যান করে, অনেক রাজনীতি এখানে জড়িত।”
সম্পূর্ণ একমত। উসাকানি থেকে কোপের সৃষ্টি তো হয়ইনি, বরং খুব সহজেই সবাইকে ভেল্কি দেখিয়ে উস্কানিগুলোকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এর সাথে অনেক রাজনীতি, অনেক বৈশ্বয়িক খেলা জড়িত। আর সেজন্যই আমি ভল্টেয়ার লেকচার থেকে শুরু করে সব জায়গাতেই বলে আসছি যে আমাদের পূর্নাঙ্গ চিত্রটা বোঝার ক্ষমতা অর্জন করতে হবে। অভিজিৎ বা অনন্ত্ হত্যায় ভাড়া করা দুই তিনজন খুনীকে ধরাই এর পুরো প্রতিকার বা বিচার হিসেবে ধরে নেওয়া ঠিক হবে না। এনিওয়ে…
@ নাস্তিকের ধর্মকথা –
আপনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে আলোচনায় অংশ নিলাম। প্রথমে আপনার এই অংশ দিয়ে শুরু করি –
জানিনা কেন আপনার মনে হল “উগ্র নাস্তিকতাই নাস্তিক খুনের কারণ” আমি একথা সমর্থন করছি। আমার কোন লেখায় সেরকম কোন ইঙ্গিত থাকলে সেটা বলুন, সেটা নিয়ে আলোচনা করব। আর আমার অবস্থান জানতে চাইলে বলব – নাহ, “উগ্র নাস্তিকতাই নাস্তিক খুনের কারণ” এরকম কিছু আমি কোনভাবেই মনে করিনা। মাত্র কিছুদিন আগেই “উগ্রতা পরিহার করুন” নামে একটা স্যাটায়ার লিখেছিলাম। সেখানে আমার অবস্থান যা ছিল, এখনও তাই আছে –
উগ্র নাস্তিক আর চাপাতি হাতে উগ্র আস্তিকের তুলনা তাই আমার কাছে এরকম ধর্ষিতা শিশু আর ধর্ষক এর মাঝে তুলনা বলেই মনে হয়। একই সময় মুক্তমনায় ‘কোপা শামসু মুছা জমসু’ গল্পেও একই কথা বোঝানোর চেষ্টা করেছি। তার আগে এসো নিজে করি- কিভাবে নরম মুসলমান হবেন সেটা নিয়ে স্যাটায়ার করেছি। উগ্র নাস্তিক আর উগ্র আস্তিকের এই ডিবেট নিয়ে অন্তত চার পাঁচটি লেখার রেফারেন্স দিতে পারি। এত কিছু লেখার পরেও আমার অবস্থান নিয়ে সন্দেহ হবে কেন? কারণ আমি একটা ফেসবুক স্ট্যাটাসে আসিফের ছ্যাবলামি কাজের প্রতি বিরক্ত হয়ে তার সাথে বন্ধুত্ব রাখতে ইচ্ছুক নই বলেছি বলে? তাহলে কি দাঁড়ালো ঘটনা? আস্তিক হতে হলে ঈশ্বরে বিশ্বাস করতে হয়, নাস্তিক হতে হলে আসিফকে বিশ্বাস করতে হয়?
কোরআনের উপর কেউ চায়ের কাপ রাখল কিনা সেটা নিয়ে আমার কোন চুলকানি নেই। কিন্তু আয়োজন করে সে যখন আসে পাশের এতগুলো বই ঠেলে কোরআনের চায়ের কাপ রেখে একেবারে রাইট এঙ্গেল থেকে ছবি তুলে সেটার প্রচার করে তখন তার ছ্যাবলামি দেখে বিরক্ত হই। বিরক্ত হওয়া আর তাকে অপরাধী ভাবা এক জিনিস না। বিরক্ত হয়ে তার থেকে দূরে সরে আসি। কিন্তু সেই দূরে সরে আসার মানে এই না যে তাকে উগ্র নাস্তিক বলে ট্যাগ দিয়ে মৌলবাদীদের বলা, মার এই ব্যাটারে। তার সম্পূর্ণ অধিকার আছে এই ছ্যাবলামি করার। একইভাবে কাবা শরীফকে কে কোন রঙ দিয়ে ফটোশপ করলো তাতে কিছু আসে যায়না। কিন্তু যখন এলজিবিটির মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে প্রথমবারের মতো দেশের মানুষ মুখ খুলছে, দারুণ দারুণ সব লেখা যুক্তি সাজিয়ে সমকামী অধিকার কেন দরকারটা তুলে ধরছে তখন একজন এসে কাবার রঙধনু ছবি দিয়ে (তাও আবার মূল উৎস স্বীকার না করে বরং ক্রপ করে ছবিটা তার নিজের বানানো বলে ভাব দেখিয়ে) সাথে ছ্যাবলা মার্কা কিছু কথা বলতে দেখলে বিরক্ত হই। বিরক্ত হয়ে তার থেকে দূরে সরে আসি। আবারও বলছি, ছ্যাবলামি দেখে বিরক্ত হওয়া আর ধর্মানুভুতিতে আঘাত পেয়ে তাকে অপরাধী মনে করা এক কথা নয়। অথচ সেই মানুষটি দিনরাত ঘ্যানঘ্যান করে প্রমাণ করার চেষ্টা করে বাকি সবাই অপ্রকৃত নাস্তিক, মুসলমান নাস্তিক, পাতলা নাস্তিক একমাত্র উনি সহি নাস্তিক। সবাইকে যদি একই ফ্রেমে বাঁধা যাবে তাহলে আর মুক্তমনা কিভাবে হবে সেটা? একেকজনের লেখার ভঙ্গি, প্রকাশের ভঙ্গি হয়তো একেকরকম। আমার কাছে যেটাকে ছ্যাবলামি আর স্টান্টবাজি মনে হচ্ছে সেটা হয়তো কারো কারো কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তারা তাদের এঙ্গেল থেকেই তাদের মত লেখালেখি করে যাক। তাতে কোন সমস্যা দেখি না। তার সেই লেখালেখি বা কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করা মানে তাকে ‘উগ্র নাস্তিক’ বানিয়ে আলাদা করে দেয়া না, নিজেও নম্র নাস্তিক হওয়া না।
আমার কাছে তাই আসিফের ইস্যু ভিন্ন। সেটাকে উগ্র নাস্তিক উগ্র আস্তিক ইস্যুর সাথে মেলানোর সুযোগ নেই। তাকে একজন ধান্দাবাজ এবং স্টান্টবাজ বলে মনে হয়। তার বেশিরভাগ কাজকর্মই শুধুমাত্র নিজের টিআরপি বাড়ানোর জন্য, জোর করে নিজেকে লাইম লাইটে রাখার জন্য বলে মনে হয়। তাই তাকে বিশ্বাস হয়না এবং তার থেকে দূরে থাকতে চাই। সেখানেই কিসসা খতম। একমত না হওয়া বা তার কাজ কর্মে বিরক্ত হওয়া বা তাকে বিশ্বাস না করার মানে এই না যে “উগ্র নাস্তিকতাই নাস্তিক খুনের কারণ” হিসেবে বিশ্বাস করছি। এই নাস্তিকতা ইস্যুর সাথে শাহাবাগ, যুদ্ধাপরাধের বিচার থেকে শুরু করে অনেক কিছু জড়িয়ে আছে। কোন উস্কানি থেকে কোপের সৃষ্টি হয়নি, বরং কোপ দেয়া হয়েছে অনেক প্ল্যান করে, অনেক রাজনীতি এখানে জড়িত।
চারিদিকের নানা কাণ্ডকারখানা দেখে মাঝেমাঝে হতাশ হয়ে যাই। কিন্তু আবার উঠেও দাঁড়াই। দিনশেষে আমাদের মূল শত্রু কে, মূল ফোকাস কই থাকা উচিৎ সেটা ভুলিনি। আমার চোখে কিছু সমালোচনার যোগ্য মনে হলে সেটার সমালোচনা করব। জোর গলায় তর্ক করব, আলোচনা করব। একমত হতে পারলে হব, না হলে দ্বিমত হয়েই নিজের অবস্থান থেকে যার যা করার করে যাব।
@চরম উদাস,
আলোচনায় অংশ নেয়ায় ধন্যবাদ …
সরাসরি আসিফ প্রসঙ্গ নিয়েই কথা বলতে হচ্ছে, যদিও আমি কিছুটা মেন্টাল প্রেসার ফিল করছি, যে কারণেই হোক আসিফ প্রসঙ্গটাও অনলাইন জামানায় বেশ স্পর্শকাতর বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে … মোল্লা-হুজুরদের কাছে আসিফ গোদফোড়া অনেক আগে থেকেই- আসিফের যেকোন পোস্ট মানে মোল্লাদের হুজুরদের কন্টিনিউয়াস গালিগালাজ, হুমকি ধামকি ভর্তি কমেন্ট – এটা নতুন না – অনেক আগে থেকেই এমনটা চলে এসেছে … কিন্তু রিসেন্ট যেটা ঘটছে সেটা হচ্ছে- আমাদের নাস্তিক-মুক্তমনাদের মধ্যেই আসিফ বেশ স্পর্শকাতর ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে … আসিফের ভক্তকূল ও বিরোধীপক্ষ নাস্তিকরা কেমন জানি যুদ্ধংদেহী … সে কারণেই ভয় লাগে … সেই ভয় ভয় নিয়েই কথা বলছি … আশা করবো, আপনি এবং অন্যরা এসবকে আমার চিন্তা হিসাবেই দেখবেন, আমার চিন্তা- যুক্তির মধ্যে ভুল হওয়া খুবই সম্ভব, ভুল থাকলে ধরিয়ে দিবেন … কিন্তু কেন আমি আসিফের মত কুলাঙ্গারকে ডিফেন্ড করছি বা কেন আমি আসিফের মত মহান নাস্তিকের সমালোচনা করছি … তার জন্যে আমার উপর খড়্গহস্ত হবেন না …
শুরু করছি- আপনার কমেন্টের “আস্তিক হতে হলে ঈশ্বরে বিশ্বাস করতে হয়, নাস্তিক হতে হলে আসিফকে বিশ্বাস করতে হয়?” অংশটুকু থেকেই … এই লাইনটা দেখেই আসলে ভয় পেয়েছি, তাই উপরের ভূমিকাটুকু লেখলাম … আমার আলোচনা থেকে যদি এমন মানে তৈরি করেন, কিংবা এমনকি আসিফের ভুল বা ঠিক সমালোচনারও প্রেক্ষিতে কেউ যদি আসিফকে ডিফেন্ড করতে চায়- তখন তার মানে এরকম দাঁড় করাতে চান- তখন কথা বলার সাহস উবে যায় … বিশ্বাস করুন, আমি মোটেও আসিফকে বিশ্বাস করার আহবান জানাচ্ছি না, দাবীও জানাইনি, বা আসিফের প্রতি আপনার বিশ্বাস চলে যাওয়ার কারণে আসিফের কাবা পোস্টিং ইস্যুতে আপনার স্ট্যাটাসটা নিয়ে আপত্তি করিনি … আপত্তিটা তুলেছি, আসিফের কাবা নিয়ে ট্রলকে আপনার সহ অনেক অনেক মুক্তমনা-সেক্যুলার-নাস্তিক বন্ধুর মেনে নিতে না পারাকে, এই মানতে না পারা থেকে ফেসবুকে সকলে মিলে যে এক্সপ্রেশনটা আপনারা দিলেন- সেটাকে … হ্যাঁ, বলতে পারেন- আমার মধ্যে সবার এক্সপ্রেশনের কিউমিলেটিভ রিয়াকশন হিসাবে উপরের ঐ কমেন্ট (যেটা আপনি কোট করেছেন) এসেছে, এবং আপনি সরাসরি “উগ্র নাস্তিকরাই নাস্তিক হত্যার জন্যে দায়ী”- এমনটা বলেননি- তারপরেও আপনার নামে কেন এভাবে বলা …আপনার স্ট্যাটাসের ইনডিরেক্ট মিনিং আমি এমনই পেয়েছি, যেমনটা সুব্রত শুভর মুক্তমনার পোস্ট “নাস্তিক হত্যায় আমাদের দায়” এও আমি সেটাই পেয়েছি! এই প্রসঙ্গে সুব্রত শুভ বলেছিল- সেও উগ্র নাস্তিক- সুশীল নাস্তিক বলে নি … কিন্তু, আমার কাছে মিনিং এমনই লেগেছে … আমার ভুল হতে পারে- ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন নিশ্চয়ই …
সুব্রত শুভ’র পোস্টে আসিফ- থাবা বাবাকে “ঊগ্র নাস্তিক” বলা হয়নি … চটি লেখক নাস্তিক, বা এমন কিছু আছে … কিন্তু আমার কাছে তাতে মিনিং এর হেরফের হয় না … নাস্তিক হত্যার দায় “উগ্র” না- চটি লেখক, বালখিল্য, আবাল নাস্তিকদের … এমনটা যদি বলা হয়- এবং আরো স্পেসিফিকভাবে কাবা ট্রল- কোরআনের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন- এসবকে ইন্ডিকেট করা হয় … তাহলে এসবকে উগ্রতা না বললেই বা কি যায় আসে?
আপনার কাছে- কাবা ট্রল খুব ছ্যাবলা কাজ মনে হতেই পারে … কিন্তু দুনিয়ার আর সব মানুষের ছ্যাবলামি নিয়ে কিন্তু আপনি সবসময় মাথা ঘামান না- ঘামালেন তখন যখন সংঘবদ্ধভাবে কাবা ট্রলকে চরম ইসলাম বিদ্বেষ হিসাবে- উগ্র নাস্তিকতা হিসাবে দেখানো হচ্ছিল- সেই সময়ে যদিও আপনি “উগ্র” শব্দটি ব্যাবহার করেননি … তাতে আমি মিনিং এর হেরফের দেখি না … “উগ্র”র জায়গায় অ-বিশ্বাসযোগ্য নাস্তিক, স্ট্যান্টবাজ নাস্তিক, ধান্দাবাজ নাস্তিক- এসব দিয়ে রিপ্লেস করলেও আলাদা কিছু হয় না …
আপনার স্ট্যাটাসটা কপিই করি …
//Asif Mohiuddin আপনার বন্ধুত্ব ত্যাগ করলাম। স্টান্টবাজি আর যুক্তি দিয়ে মৌলবাদের বিপক্ষে লড়া এই দুইয়ের মাঝে সুস্পষ্ট ফারাক বিদ্যমান। কাবাকে রঙধনু দিয়ে আবৃত করে LGBT কমিউনিটির বিন্দুমাত্র লাভ হবে বলে আমি মনে করিনা, শুধু স্টান্টবাজি আর ভায়োলেন্স ছড়ানোই হবে। আপনার সাথে অভিজিৎ রায়ের পার্থক্য সুস্পষ্ট। অভিজিৎদা দিনরাত খেটে যুক্তিতর্ক দিয়ে বিজ্ঞানের সাহায্য নিয়ে একটা একটা করে লেখা লিখে আলো ছড়ানোর চেষ্টা করেন। আর আপনি ধর্মগ্রন্থের উপর চায়ের কাপ রেখে বা কাবাকে রঙধনু মেখে এই যে আমাকে দেখ, আমি পারি, আমি পারি, শুধু আমিই পারি বলে চিৎকার করেন। আপনার স্টান্টবাজি আপনার অধিকার। আমি একজন মুক্তমনা হিসেবে শুধু জানিয়ে রাখি আপনার চলার পথ আর আমার চলার পথ পুরোই আলাদা। আপনার পথ আপনার নিজের ছাড়া আর কারো কোন উপকারে আসে কিনা সে ব্যাপারে আমি সন্দিহান। আপনি নিজেই আসলে মৌলবাদী হয়ে মুক্তমনাদের বিপাকে ফেলার জন্য রিভার্স গেম খেলেন কিনা সেই ব্যাপারেও আমি সন্দিহান। এত সন্দেহ নিয়ে বন্ধুত্ব রাখার মানে নেই।//
এবং আপনি একজন মুক্তমনা হিসাবে সেই বিপাক থেকে মুক্ত হওয়ার উপায় কি বের করলেন- আসিফকে আনফ্রেন্ড করা … কি অবাক!
তার মানে কি দাঁড়ালো? উগ্র নাস্তিক, ইসলাম বিদ্বেষ- এই শব্দগুলো ব্যবহার না করেই (ঠিক পরের স্ট্যাটাসে একটা কৈফিয়তও দিয়েছেন দেখলাম) ধর্মবিরোধীদের কিছু কিছু আচরণকে (যেমন কাবা নিয়া ট্রল বা কোরআনে চায়ের কাপ রাখা) মুক্তমনাদের বিপাকে ফেলার কারণ হিসাবে উল্লেখ করা যায় এবং যারা এইসব আচরণ করে- তাদের থেকে ১০০ হাত দূরে থাকাই সমাধান!! এই মেসেজটাই স্রেফ পাই … নচেৎ নিছক বিরক্তি থেকে হলে তো নীরবে আনফ্রেন্ড করতেই পারতেন- এমন প্রকাশ্য ঘোষণার প্রয়োজন কেন পড়ে?
একটু বোঝার চেষ্টা করি, আপনার আপত্তি ‘আনফ্রেন্ড করা’ নিয়ে নাকি ‘প্রকাশ্য ঘোষণা’ দিয়ে আনফ্রেন্ড করা নিয়ে?
আর একটা ব্যক্তি গত মতামত,
পূর্বে অন্যস্থানে প্রকাশিত কমেন্ট-স্ট্যাটাস, এসব হরে দরে পুরোটা কপিপেস্ট করে মন্তব্য করলে মন্তব্য ফ্লাডিং হয়। এতে অন্য পাঠকদের আলোচনার গতিধারা ফলো করতে সমস্যা হয়। যেমন আমার খুবই সমস্যা হচ্ছে আপনার কমেন্টগুলোফলো করতে। কোনটা এই লেখার প্রেক্ষিতে, কোনটা অতীতের কোন লেখার প্রেক্ষিতে এইসব হাজার হাজার লাইন ঘেটে বের করা খুবই দুরহ।
গুরুত্বপূর্ণ কিছু কোট করতে হলে প্রাসঙ্গিক কোনো লাইন কোট করুন, এবং মূল উৎসের লিঙ্ক দিন। আগ্রহীপাঠক লিঙ্ক ক্লিক করে দেখে আসবেন। নইলে গাছপালার ভীড়ে বনভূমি হারিয়ে যাচ্ছে…
ধন্যবাদ।
@আরেকফাল্গুন,
ফ্লাডিং এর অভিযোগটা বুঝলাম না …
তিনটা জায়গার প্রসঙ্গ এখানে এনেছি … ফরিদ আহমেদ এর আলোচনাটা কপি করেই- তারপরে আমার বক্তব্য / জবাবটা উল্লেখ করেছি … এবং পোস্টের তথ্যসূত্র বা লিংকও দিয়েছি … (ভালো করে পড়েন আবার) … সুব্রত শুভর পোস্টের লিংকও উল্লেখ করেছি … আর চরম উদাসের স্ট্যাটাসটা পুরো কপি করেছি …
বন্যা আপা যে প্রসঙ্গটা এনেছেন- সেই প্রসঙ্গে এই পুরাতন আলোচনাগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায় … আমার সেই বক্তব্যগুলো এখানে কপি না করলেই বরং আলোচনাটা অসম্পূর্ণ থাকতো, কেননা বন্যা আপার মূল লেখায় ফরিদ আহমেদ এর ব্যাপারটা এসেছে- …
///একটু বোঝার চেষ্টা করি, আপনার আপত্তি ‘আনফ্রেন্ড করা’ নিয়ে নাকি ‘প্রকাশ্য ঘোষণা’ দিয়ে আনফ্রেন্ড করা নিয়ে?// ==>> এই প্রশ্নটা কি আপনি আমার কমেন্ট পড়ে করলেন, না এমনিতে করলেন! আমি তো কমেন্টে বিস্তারিতই বললাম … কারো লেখা আমার ভালো না লাগলে, কারো পথ আমার পছন্দ না হলে- আমরা স্বাধীনভাবে তাকে ইগনোর করবো, আনফ্রেন্ড করবো … এই পথ তো খোলা আছেই- এর মানে বুঝতেই পারছেন- আনফ্রেন্ড করা নিয়া আপত্তি করি নাই … প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়া আনফ্রেন্ড করাটা নিয়ে কেন আপত্তি সেইটাও বলেছি … কারণ চউ এর সেই ঘোষণাটা আমার কাছে এইরকম মনে হইছে যে, দেখো সবাই, এই হচ্ছে আসিফ- এ কাবা নিয়া ট্রল করছে, কোরআনের উপর চায়ের কাপ রাখছে- এর সাথে সম্পর্ক রাখাই বিপাকে পড়ার কারণ হইতে পারে …এমনে কইরা মুক্তমনাদের বিপাকে ফেলার জন্যে সে রিভার্স খেলতেছে … মুক্তমনাদের বিপাক থেকে মুক্তির উপায় হইতেছে এরে আনফ্রেন্ড করা … ইত্যাদি … আশা করি বুঝতে পারছেন যে- এইরকম রিপ্রেজেন্টেশন নিয়া আমার মেলা আপত্তি আছে …
@নাস্তিকের ধর্মকথা
এই পোস্টের মন্তব্য সেকশন স্ক্রল করলে আপনার কোটি কোটি কমেন্টই চোখে পড়তেছে তার বিপুল অংশ আবার কপিপেস্ট। এবং, অতীতে কোথায় কে কীভাবে দুঃখ দিসিলো সেইসব কাসুন্দি টেনে এনে সেইগুলার বিচারও আপনি এখানেই বসায় দিছেন। এতে মূল পোস্ট এবং সেই সংক্রান্ত আলোচনা ব্যহত হচ্ছে বলেই মনে করছি। আপনার উল্লিখিত প্রতিটা পোস্ট, স্ট্যাটাস পাবলিক। এবং সংশ্লিষ্ঠ লেখক/মন্তব্যকারীদের আপনি সেখানেই এ বিষয়ে জিজ্ঞেস/চার্জ করতে পারতেন। এবং সেখানে প্রয়োজনে বন্যা আহমেদের এই পোস্টটার লিঙ্ক দিয়ে দিতেন। সেটাই হতো পরিচ্ছন্ন অ্যাপ্রোচ। ধরুণ, রায়হান রশীদ চমৎকার কিছু প্রশ্ন উথাপন করেছেন। তার প্রতিটা প্রশ্ন নিয়ে যদি আপনি এক বা একাধিক কমেন্ট যুক্ত করতেন তাও ব্যাপারটা এরকম ফ্লাডিং মনে হত না।
—
আর আমার প্রশ্ন সম্পর্কে বলি। চরম উদাস তার মন্তব্যে সুস্পষ্ট ভাবেই তার অবস্থান ব্যাখ্যা করেছে। তারপরেও আপনি তার অতীতের স্ট্যাটাসটা কপিপেস্ট করে, হুবহু একই ধরনের কথা পুনরাবৃত্তি করেছেন মন্তব্যে। যেন, চরম উদাস তার ব্যাখ্যামূলক মন্তব্যটা করেনই নি, কিংবা সেটা আপার করোটিতে প্রবেশ করেনি। এ কারণেই আপনার আপত্তির স্থানটা বুঝতে চাচ্ছিলাম।
@আরেক ফাল্গুন,
হমম … আমার দুখ-কষ্টের কাসুন্দি টানাটা আপনার বিরক্তির কারণ হচ্ছে দেখে বিব্রত ও লজ্জিতবোধ করছি … আরেকফাল্গুন/ মুক্তমনা কারিগরকে মুক্ত-মনা.কম পরিবারের ঘনিষ্ঠ মানুষ ধরে নিলে এই বিব্রত অবস্থা আরো বাড়ছে বৈকি … কমেন্টগুলো ডিলিটের অপশন পাচ্ছি না বিধায়, ডিলিটের জন্যে এডমিনের সহযোগিতা লাগবে বোধ হয় …
তবে, একটা বিষয় বোধ হয় আপনি খেয়াল করেননি যে, ফরিদ আহমেদ প্রসঙ্গে যে কমেন্টটি আমি এখানে করেছি- সেটা সে সময়ে মডারেশনে আটকে গিয়েছিল … সেটা আমি ফেসবুক বা ওপেন কোথাও পাবলিশও করি নি … সেটা বন্যা আপাকে দিয়েছিলাম … আলোচ্য পোস্টে বন্যা আপা ফরিদ আহমেদ এর যে প্রসঙ্গ এনেছেন- সেটাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে যদি আমার ঐ কমেন্টের জবাব- বা প্রসঙ্গ হিসাবে ধরি বা নিতে চাই- তাহলে কি ভুল হবে? ‘উগ্র নাস্তিকতা’ প্রসঙ্গে আমার আলোচনাগুলো প্রাসঙ্গিক মনে করেছি বলেই কপি পেস্ট করেছিলাম … সেটা যদি মডারেশন পলিসিতে বেঠিক বিবেচ্য হয়- মুছে ফেলতেই পারেন …
আর, চরম উদাস প্রসঙ্গে আপনার কাছে তার ব্যাখ্যা মনোমত হলেও- আমি কনভিন্সড ছিলাম না বলেই আমার অবস্থান ব্যাখ্যা করেছি- এবং সেটা যেহেতু তার একটা স্ট্যাটাসের প্রসঙ্গ ধরে- সেই স্ট্যাটাসটা কপি করাটা দরকার মনে করেছি … তবে এটা হতেই পারে যে, চরম উদাস তার কমেন্টে যথেষ্ট ব্যাখ্যা করেছেন- কিন্তু সেটা আমার করোটিতে ঢুকে নি … আমার বুদ্ধিমত্তা নিয়ে আমি কোনদিন সন্তুষ্ট ছিলাম না বলেই- বারেবারে প্রশ্ন করে মানুষকে জ্বালাই … আপনাদের যদি এই জ্বালানোটা মাত্রা ছাড়ানো মনে হয়- জানাতে পারেন … নাহয় চুপ করেই যাবো …
কাবাকে নিয়ে ট্রল আপনার ভালো না-ই লাগতে পারে, কিন্তু অভিদার মত করে সকলেই বিজ্ঞানের আলোকে সমকামিতা প্রসঙ্গে যুক্তির ডালি নিয়ে হাজির হবে- এমন আশা করা খুব ছেলেমানুষি কি না? একেকজন একেকভাবে কাজ করবে … কেউ যুক্তি দিয়ে- কেউ নাহয় ধান্দা দিয়ে, ধান্দার উদ্দেশ্য নিয়ে, চুরি-চামারি করে … করুক না … এখন আমাকে প্রশ্ন করতে পারেন- ধান্দাবাজি- স্ট্যান্টবাজির বিরুদ্ধে দাঁড়ানোটাও আপনি কর্তব্যজ্ঞান মনে করতে পারেন, তাতে আমি বাঁধা দিতে পারি কি না … না, আমি পারি না … কিন্তু, আপনার স্ট্যাটাসে কি সেই স্ট্যান্টবাজি, ধান্দাবাজি বা চুরির বিরুদ্ধে কোন অবস্থান ছিল? নাকি, আসিফের কাবা নিয়ে? ট্রল করাকে আপনার কাছে মনে হয়েছে মুক্তমনাদের বিপাকে ফেলার রিভার্স গেম!! অর্থাৎ- এই কাবাকে ট্রল করার মাধ্যমে মুক্তমনাদের বিপাকে ফেলা হয় – ফেলা যায় বলে আপনি যখন মনে করেন এবং ঘোষণা দেন- সেটাকে শেষ বিচারে- আসিফের স্ট্যান্টবাজি- ধান্দাবাজি- চুরি- ছ্যাবলামি- এসবের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো বলে মনে হয় না- বরং কাবাকে ট্রল করা, কোরআনের উপর চায়ের কাপ রাখা (ধরলাম এসব উগ্র নাস্তিকতা না, কিংবা আবিরের ভাষায় নাস্তিকতাই না)- এইরকম কাজের মাধ্যমে মুক্তমনা-নাস্তিকদের বিপাকে (সবচেয়ে বড় বিপাক- তো নাস্তিক হত্যা, তার চাইতে একটু ছোট মনে হয় ফড়িং-সুব্রত’র মত দেশ ছাড়া করা) ফেলার জন্যে দায়ী …
আসিফরে নিয়া আমার কোন হেডেক নাই, সে যদি চরম বদমাইশ হয়, পাড় ধান্দাবাজ হয়, ছ্যাবলা, নোংরা, ফালতু, শয়তান, চোর-ছ্যাচ্চোড়- যা কিছু হোক- সেটা নিয়া আপনারা ইচ্ছামতন প্রমান কইরা তারে উঠতে বসতে ডলা দেন- ছাচা দেন (রুবাইয়াৎ নামে একজন নাগরিক ব্লগে যেমন করে আসিফের চুরি নিয়া ভালোভাবে ধরছিলো) … আমার কোন আপত্তিই নাই … বরং বাঙালি স্বভাব হিসাবে- বসে বসে মজা দেখতেও পারি … খালি অনুরোধ করি, প্লিজ বিষয়ে এবং প্রসঙ্গে থাইকেন … সমস্যাগুলো চুরি বা ধান্দাবাজি বা স্ট্যান্টবাজির হইতে পারে, কিন্তু নাস্তিক্যের না … এই বিবেচনাটা হারাইয়েন না … তুলনা দেই … লতিফ সিদ্দিকিরে নাস্তিক্যের অভিযোগে গ্রেফতারের পরে ফারুক ওয়াসিফদের সাথে ডিবেট হইতেছিল … তারা হুট কইরাই বলা আরম্ভ করলেন- লতিফ সিদ্দিকি একজন পাড় দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষ … ইত্যাদি। তখন জবাবে কইছিলাম- ঐ বেটা দুর্নীতিগ্রস্ত কেন, খুনী বদমায়েশ হইলেও অসুবিধা নাই- সেই দায়ে তারে ফাসীও দিতে পারেন- কিন্তু হজ নিয়া “আজেবাজে” বা উগ্র কথা বলার দায়ে তারে আটকাইতে পারেন না …
আশা করি, আমার আপত্তির জায়গাটা বুঝাতে পেরেছি …
আমার এই কথা বলার পর –
আপনার এই কথা বলার মানে খুঁজে পেলাম না –
বাকিটুকু আপনার মত। সেখানে উত্তর দেয়ার কিছু পেলাম না। শুধু ছোট করে বলি, তাকে ডলা দেয়া, ছেঁচা দেয়া, ভণ্ড প্রমাণ করা কোনটা করারই ইচ্ছা বা সময় নেই, তার প্রয়োজনীয়তাও দেখছি না। উগ্র নাস্তিকতাকে আস্তিকতার সাথে মিলিয়ে স্যাটায়ার করে, প্রকৃত মুসলমান খোঁজা নিয়ে, মডারেট হয়ে দুই নৌকায় পা দিয়ে চলা নিয়ে আমি অন্তত আধা ডজন লেখা লিখেছি। আর আসিফকে আনফ্রেন্ড করে ফেসবুকে চার পাঁচটি লাইন। আমার কাছে সেই ইস্যু সেখানেই শেষ। কেন লিখেছি কি বুঝিয়েছি তার ব্যাখ্যা একবার উপরেই দিয়েছি। প্রকাশ্যে সমালোচনা না করে নীরবে করলে ভাল হত, এই আনফ্রেন্ড করার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য কি, কেন দুনিয়ার আর কারো ছ্যাবলামি নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে তার ছ্যাবলামি নিয়ে মাথা ঘামিয়েছি, এতে নাস্তিক সমাজের কি কি ক্ষতি হয়েছে ইত্যাদি বিষয়ে আপনার অনেক মত পড়লাম। সেগুলো আপনার মত, যার সাথে আমি একমত না।
পরিশেষে ডেল স্টেইনের মতো করে বলি, বয়স হচ্ছে। বাকি জীবনে খরচ করার মতো খুব লিমিটেড সংখ্যক বাক্য হাতে বাকি আছে। সেই বাক্যগুলো আমি বরং আরও গুরুতর বিষয়ের জন্য জমিয়ে রাখতে চাই। আমার কাছে এই ইস্যু এখানেই শেষ। ভালো থাকবেন।
চরম উদাস,
আপনার ঐ কথা (একেকজনের লেখার ভঙ্গি … নাস্তিক হওয়া না।) বলার পরে আমার এমন কথা (কাবাকে নিয়ে ট্রল … করুক না) বলার মানে খুঁজে না পেতেই পারেন – কিন্তু কে বলেছে আমি সেটা আপনার উপরের কথার ব্যাপারে বলেছি? আমার আপত্তি তো আপনার এখানকার কমেন্ট না, আপত্তি করেছি- সেই স্ট্যাটাসের … সেই স্ট্যাটাসে আপনি লিখেছেনঃ
– তার পাশে কি আমি এই আলোচনাটা করতে পারি না?
স্পষ্টতই আপনি এখানে যে কমেন্ট করেছেন, বিভিন্ন সময় ‘উগ্র নাস্তিকতা’র জিগিরকে যেভাবে স্যাটায়ার করেছেন, শক্ত ও ভালো অবস্থান নিয়েছেন- সেসবের সাথে আমার দ্বিমত নেই … ফলে আপনি ৪/৫ টা লেখার কথা বলেছেন- সেই লেখাগুলোকে দুর্দান্ত কাজ মনে করার (দু একটা স্যাটায়ার আমি আগেই পড়েছি) পরেও আমি কনভিন্সড হইনি- কেননা, আপনি আপনার সেদিনের স্ট্যাটাসে বিভিন্ন সময়ের লেখার অবস্থানটি ধরে রাখতে পারেননি বলে মনে হয়েছে …
অনেক কিছু নিয়ে কথা বললেও – মূল যেটা নিয়ে আপত্তি করলাম- সেটা নিয়ে টু শব্দটি করলেন না … মুক্তমনাদের বিপাকে ফেলার জন্যে আসিফ রিভার্স গেম খেলছেন- বলে যেটা বলেছিলেন, সেটা নিয়ে আপনার ব্যাখ্যাটা শুনতে না পারার আক্ষেপ থেকে গেল …
যাহোক, আপনার ভালো ভালো লেখার জন্যে সব জমিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জেনে খুশী হলাম … আপনার স্যাটায়ার আমার ভালো লাগে … আরো বেশি বেশি স্যাটায়ার লিখেন, অন্য গুরুত্বপূর্ণ লেখা লিখেন … সেই প্রত্যাশাই করি …
যতটুকু বাক্য ব্যয় (বা অপচয়) করেছেন, তার জন্যেই আপনাকে ধন্যবাদ …
এখানে ব্যাখ্যা দেয়ার মতো কিছু নেই। তার কাজকর্ম দেখে আমার তাকে বিশ্বাস হয়না, সন্দেহ হয় তার প্রতি। সেই সন্দেহের যদি কোন শক্ত প্রমাণ থাকতো, বা প্রমাণ যোগাড় করার মতো সেটাকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু মনে হত তাহলে না হয় সেটা নিয়ে আস্ত দু চারখানা ব্লগ লিখে তাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতাম। আমি তো চার লাইনে আমার সন্দেহ আর বিরক্তির কথা বলে বিদায় নিয়েছি। কারো কাজকর্মে বিরক্ত হয়ে, তাকে বিশ্বাস না করে তার থেকে দূরে সরে যাওয়ার অধিকার নিশ্চয়ই আছে আমার?
ওই কাজে আমার অবস্থান নড়বড়ে হয়ে গেছে মনে করলে সেই নড়বড় অবস্থান নিয়েই থাকি বরং।
আশা করি ‘টু’ শব্দ করায় আপনার আক্ষেপ দূর হয়েছে। নাইলে আরেকবার শব্দ করলাম – টু 🙂
ওহ আর এই ব্যাপারেও টু শব্দ করি –
যে মানুষ নিজেকে মুক্তমনা বলে দাবী করে তার কাছে বিজ্ঞান আর যুক্তি আশা করা ছেলেমানুষি কেন হবে? আর কেউ যদি বিজ্ঞান আর যুক্তির ধার না ধেরে দিনরাত আল্লাহ আর মুহাম্মদকে খালি গালি দিয়েই প্রমাণ করার চেষ্টা করেন তিনি কালের শ্রেষ্ঠ মুক্তমনা, তবে তার প্রতি বিরক্ত হওয়া বা তাকে ভণ্ড মুক্তমনা বললে সেটাও কি বেশী ছেলেমানুষি হবে? আমি তো বাঁশের কেল্লার কাছ থেকে যুক্তি আশা করছি না, মুক্তমনাদের কাছ থেকে আশা করছি। লেখার ভঙ্গি, ভাষা তো ভিন্ন হতেই পারে। কিন্তু যুক্তি, তথ্য, বিজ্ঞান এগুলো তো আশা করতেই পারি নাকি?
ভালো থাকুন। নিজের মতো করে লিখে যান। আমিও তাই করি।
প্রিয় চরম উদাস,
এমন অগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আবারো আরো কিছু বাক্য খরচ করছেন দেখে কৃতার্থ হইলাম … 🙂 আপনার প্রতি ধন্যবাদ আর কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ভাষা আমার নাই … তার চাইতেও বেশি খুশী হয়েছি- এতক্ষণে মূল জায়গায় আপনার নজর পড়েছে বলে … কিন্তু আমার জবাবটা কি আমি পেয়েছি? নাহ! এখনো তো সেটা পাইলাম না … আপনি বললেনঃ
ঘুরেফিরে আসিফকে আপনার সন্দেহ হয়, তার কাজকর্ম পছন্দ হয় না, বিশ্বাস করেন না- এগুলোই প্রথম থেকে বলছেন … একই কথা বারেবারে, বারেবারে … এবং যতবারই বলি- এইসব নিয়া যা ইচ্ছা হোক- আমার জানার আগ্রহ নাই, সেটা আলোচনার বিষয়ও না … কিন্তু, আমার প্রশ্নটা কি এখনো বুঝাতে পারিনাই?
আসিফের কাজ আপনার অপছন্দ, বিরক্তিকর মনে হওয়া- এক কথা আর সেটাকে মুক্তমনাদের বিপাকে ফেলার কারণ মনে করা আরেক কথা! হ্যাঁ, আপনার কাছে প্রমাণ নাই- কেবল সন্দেহ করেছেন যে, আসিফ রিভার্স খেলছে (প্রমাণ ছাড়া সন্দেহের বশেই এরকম অভিযোগ কারো নামে ওপেন প্লাটফর্মে করা কতখানি দায়িত্বশীল আচরণ সেটা নাহয় বাদই দিলাম) … আসিফ আসলেই রিভার্স খেলছে কি না- মানে সে ইচ্ছা করে মুক্তমনাদের বিপাকে ফেলার উদ্দেশ্য থেকে এরকম কাবা নিয়ে ট্রল বা কোরআনের উপর চায়ের রাখার মত কাজ করে কি না- সেটা যেহেতু প্রমাণ সাপেক্ষ এবং আপনি সেই প্রমাণ হাজিরও করতে পারেননি- সে প্রসঙ্গ আপাতত বাদ দিচ্ছি … কিন্তু আপনি এটায় তো নিশ্চিত যে- কাবা নিয়ে ট্রল করলে বা কোরআনের উপর চায়ের কাপ রেখে ছবি পোস্ট করলে- মুক্তমনারা বিপাকে পড়ে! আপনার স্ট্যাটাস থেকে আমি এমন এক্সপ্রেশন পেয়েছি … এটা নিয়ে প্রথমে বলেন!
আপনি সেখানে নিজেকে মুক্তমনা হিসাবে উল্লেখ করেছেন … ফলে, আপনার নিজের কথাও বলেন! আপনি কি বিপাকে পড়েছেন বা বিপাকের আশংকা করেছেন?
বিপাকটা কি এমন, যেটা অন্যরা আরো ডিটেইলসে জানিয়েছে (আপনার মত ৪ লাইনে না)- এমন লেখা দেখলে ধার্মিক ব্যক্তিরা ক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে, জঙ্গীরা নাস্তিক হত্যায় নেমে পড়লে সাধারণ ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিরা তার মৌন সমর্থক হয়ে দাঁড়ায়? ঠিক যে উদ্দেশ্যে থাবা বাবার কথিত “অশ্লীল”, “কুরুচিপূর্ণ”, “ধর্মবিদ্বেষী” “চটি সদৃশ” লেখাগুলো আমারদেশ টাইপের পত্রিকাগুলো প্রকাশ করে নাস্তিকদের বিরুদ্ধে মানুষ খেপিয়েছিল? যাহোক- আপনিই ভালো বলতে পারবেন- আপনি বা আপনার মুক্তমনারা আসিফের এইসব কর্মকান্ডে কি বিপাকের আশংকা করছেন … সেটাই আপনার কাছে জানতে চাইছি …
আপনি বলেছেনঃ
দেখেন, আমার কথার ভিন্ন মানে বের করলে মুশকিলে পড়ি … আমি অনেকবারই বলেছে- কবে কে কোথায় কাকে নিয়ে বিরক্ত হবে, দূরে সরে যাবে- সেসব নিয়া আমার মাথা ঘামানোর কিছু নাই … যে কাউকেই আপনি সমালোচনা করতে পারেন, বিরক্তি প্রকাশ করতে পারেন – সম্পূর্ণ অধিকার আপনার আছে … মোটেও বলিনি যে, বিরক্তি প্রকাশের অধিকার নাই- বা বিরক্তি প্রকাশ করে দূরে সরে যাওয়ার কারণে আপনার অবস্থান নড়বড়ে হয়ে গেছে … আমি কেবল- আসিফদের কাজে মুক্তমনাদের বিপাকে ফেলার উপাদান খুঁজে পাওয়াকে নিয়ে আমার কনসার্ণ প্রকাশ করেছি, হতাশ হয়েছি বলে জানিয়েছি- আপনাদের প্রতি আগের ধারণা, শ্রদ্ধা ও প্রত্যাশার জায়গা থেকেই এই হতাশা … আমি বলেছিলামঃ
আপনি ব্যাখ্যা চেয়েছিলেন বলে আমার ঐ কথাটা ব্যাখ্যা করতেই এত আলোচনা … আপনার অবস্থানকে নড়বড়ে বলার মতিভ্রমও আমার যেন না ঘটে …
আপনার দ্বিতীয় টু নিয়েও কিছু কথা বলতে হচ্ছে- আশা করি, বিরক্ত হবেন না …
না, কেউ মুক্তমনা দাবী করলেই- বা কেউ মুক্তমনা হলেই- তার কাছ থেকে সবসময়ই একই রকম মনিমুক্তা পাবেন- এমন আশা করা ভুল! বিজ্ঞান নিয়ে যার পারদর্শিতা কম- সেও নাস্তিক/ মুক্তমনা হতে পারেন, কারো লেখা ব্যক্তিগত ডায়েরির মত হতে পারে, কারোটা যুক্তি-তর্ক মূলক হতে পারে, কারোটা বিজ্ঞানমূলক হতে পারে, কেউ সাহহিত্য করতে পারেন, কেউ নিছক স্যাটায়ার করতে পারেন, মজা করতে পারেন … এথিস্ট রিপাবলিকের ঐ কাবাকে নিয়ে ছবিটা দেখেও আপনার ভাষায় যে কেউ বলতে পারে- এতে সমকামিতা নিয়ে বিজ্ঞান আলোচনা নাই, যুক্তি-তর্ক নাই … ইত্যাদি … এসবকে আমার ছেলেমানুষি আলাপই মনে হয় … একটা স্যাটায়ার, একটা কার্টুন, একটা ট্রল- আর গবেষণাগ্রন্থ, যুক্তি-তর্ক ভিত্তিক কোন প্রবন্ধ, বিজ্ঞান আলোচনা- এসবের পার্থক্য সে বুঝে কি না সেই সন্দেহ হয় … যাহোক, আপনার আগের আলোচনাটাই আপনাকে ফিরিয়ে দেয়া যায়- যেটার সাথে আমি কিন্তু একমতঃ
আপনি আরো বলেছেনঃ
এটাই মনে হচ্ছে আপনার বা আপনাদের আসল ব্যাপার হয়ে দাঁড়াচ্ছে … কেন সে “কালের শ্রেষ্ঠ মুক্তমনা” হিসাবে নিজেকে দাবী করছে? আসলে বলেন তো- কোনটায় আপনার সমস্যা? আল্লাহ বা মুহাম্মদকে গালি দেয়ায়? না নিজেকে “কালের শ্রেষ্ঠ মুক্তমনা” দাবি করায়?
স্বাভাবিকভাবে কারো অতিকথন, অতি হামবড়া ভাব তথা “মুই কি হনুরে” ভাবরে বেশিরভাগ মানুষ পাত্তাই দেয় না, ইগনোর করে, অনেক সময় হাসির উদ্রেক করে, আসিফের বেশিরভাগ “আমি আমি”- এমনই চাইল্ডিশ যে সেগুলো নিজেই সেলফ এক্সপ্লেনেটারি … মানে ওগুলো পড়লে এমনিতে বুঝা যায় কত বড় আহাম্মকি … অন্তত আমার এমন মনে হয়েছে … কিন্তু সেই আহাম্মকিকে গণনায় ধরে তাকে কাউন্টার করে “ভন্ড মুক্তমনা” বা “কোন নাস্তিকই না”- বলতে যাওয়া যে আরো কত বড় আহাম্মকি- সেইটা আপনাদের মত বিচক্ষণ মানুষেরা না বুঝলে কেমন করে হবে? টেনিদা বা কাকাবাবুর গল্পে – কোথায় যেন পড়েছিলাম একটা কাহিনী … সেখানে স্কুলে একটা ছেলে তার মামাকে নিয়া মেলা গল্প করতো- তার মামা দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়ায়- দুনিয়ায় এত বড় এডভেঞ্চারার আর একটাও নাই- দুনিয়ার একটা জায়গাও নাই তার পা পড়েনি … স্বভাবতই ক্লাসের সবাই মিটিমিটি হাসতো, ঐ ছেলের বড় বড় আলাপ শুরু হলেই সবাই নানা বাহান করে সরে পড়তো … ইত্যাদি … তো এর মধ্যে ক্লাসে আরেকটা নতুন ছেলে আসলো- যার আবার এক কাকা ছিল এবং সেই কাকাও নানা দেশ ঘুরেছেন … এবার ঘটলো দারুণ মজা … এই নতুন ছেলেটা আর আগেরজনের গল্প শুরু হলে সটকে পড়তো না, মন দিয়ে শুনতো এবং ভন্ড- মিথ্যাবাদী- বাড়িয়ে বলছে এসব দিয়ে শেষ করতো, কেননা তার কাকা জেনুইন ছিল, কয়েকবার কাকার সাথে সেও গিয়েছে এবং সে আগের ছেলেটার গল্পগুলো যে মিথ্যা সেটা ভালো করেই বুঝতো … ইত্যাদি!
আমরা যখন এসব বিষয় নিয়ে তর্ক করছি, তখন জানোয়ারের দল চাপাতিতে শান দিচ্ছিল। কিছু আর বলার ভাষা পাচ্ছি না। সবই অর্থহীন মনে হচ্ছে।
অনেক মন্তব্য পড়লাম, অনেক পড়লাম না। তবে নাস্তিকের ধর্মকথা এর পয়েন্টগুলোর সাথে একমত। বিশেষ করে চরম উদাস কে করা অভিযোগগুলোর ক্ষেত্রে। চরম উদাস যদিও তার নিজের বক্তব্য ক্লিয়ার করেছেন, তবুও ছোট গল্পের মতো করে হইয়াও হইল না ক্লিয়ার টাইপ হয়ে গেল।
তিনি উল্লেখ করেছেন যে, উগ্র নাস্তিকতাই খুনের কারণ এটা তিনি মনে করেন না, কিন্তু আসিফ মহিউদ্দিন কে নিয়ে করা তার মন্তব্যে দেখা যাচ্ছেন তিনি মনে করেন, আসিফের এক্টভিটিস মুক্তমনাদের জন্য সমস্যা তৈরি করছে। এই দুইটা বিষয়ের মধ্যে একটা স্ববিরোধীটা আছে।
তবে, ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি এই এই সিরিজ হত্যাগুলোর জন্য উগ্র নাস্তিকতা একমাত্র কারণ না হলেও অন্যতম কারণ তো অবশ্যই। এই বিষয়ে আমি ফরিদ আহমেদ এর মতামত কে সাপোর্ট করি। এই পোস্ট এবং মন্তব্যগুলোতে এই চিন্তার বিপরীত বক্তব্যগুলোই অনেক জোরালোভাবে প্রকাশ পেয়েছে। তবে সেই বক্তব্য বা মতামতগুলো আবেগ, আদর্শ বা এবস্ট্রাক্ট লেভেলের এবং তা অবশ্যই ঠিক আছে কিন্তু সার্ফেস লেভেলে গিয়ে ঠিক যে কারনে এই খুনগুলো সংগঠিত হয় বা ঠিক যে কারনে কেউ মনে করেন, আসিফ মহিউদ্দিনের স্ট্যান্টবাজি মুক্তমনাদের বিপাকে ফেলতে পারে, সেটা উগ্র নাস্তিকতা।
বন্যার এই সফল লেখাটি সকল মুক্তমনাদের জন্য এক মাইলফলক দিক-নির্দেশনা হিসাবে কাজ করবে।
শত্রুদের কাজই হচ্ছে একত্রিত সংঘবদ্ধ শক্তিকে নিজেদের মধ্যে কিলাকিলি লাগিয়ে দেওয়া,যত কিলাকিলি লাগানো যায় ততই তাদের লাভ।যে কিলাকিলি করে আমরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তি বুজে নাবুজে আজ খন্ড-বিখন্ড চৌচির হয়ে আছি,লাভ হয়েছে যুধাপরাধী অপশক্তি ও তাদের দোসরদের।অপশক্তি অনেক আগেই বুঝতে পেরেছে তাদের জীবনের ও ক্ষমতার আগামীদিনের কারা তাদের চির শত্রু হয়ে আবির্ভূত হচ্ছে সেটা তারা জানে বলেই আমাদের উপর এমন হিংস্র হায়েনার আঘাত হেনেছে। কিন্তু তারা ভূলের গেছে বা আমরা জানি তা হলো উইপোঁকা মরে যাবার আগে যেমন তাদের পাকনা গজায় তেমনি অপশক্তি হায়েনাদের আজ তেমন মরনকামড় অবস্থা।
তাই সময় হয়েছে আমাদের বাস্তবতা নির্ধারনের, কারা আসলে আমাদের শত্রু এবং মিত্র , সেটা চিহ্নিত করে আমাদের আগামীদিনের ইস্পাত কঠিন পথচলা ধার্য্য করা এবং সে লক্ষে কাজ করা।আর এটা করতে পারলেই অভি-অনন্তদের জীবনের যে স্বপ্ন ছিল তা পূর্নতা পাবে।যে পূর্নতা আমাদের সকলের কামনার মূলমন্ত্র।
জয় আমাদের অনিবার্য।
কলমযুদ্ধের দ্বারা আমাদের ভোতা মাথা চূর্ন-বিচূর্ন হয়ে যাক.………..
মুক্তমনার টেকি মডারেটরদের জন্য এই মন্তব্য, কেউ কী একটু দয়া করে দেখবেন? আমার বাসার অন-ডিমান্ডে উপস্থিত টেকি আর নাই দেখে আপনাদের অনুরোধ জানাতে বাধ্য হচ্ছি, মাফ করে দিয়েন… (ঃ…
১) এই নতুন স্কিমে নির্দিষ্ট শব্দ সংখ্যার পরে মন্তব্যে আর লেখা যাচ্ছেনা। তার ফলে একেকজন একাধিক মন্তব্য করতে বাধ্য হচ্ছেন। যেটা দেখে আমার ভয়ে (ইন্টিমিডেটেড হয়ে আর কী) বাকি জীবনের ব্লগিং করার ইচ্ছাই উবে যাচ্ছে!
২) কমেন্টে কোন ইমো যোগ করা যাচ্ছেনা। এরর দিচ্ছে।
৩) পুরনো মন্তব্য আবার কাট এন্ড পেস্ট না করে লিঙ্ক করা যাচ্ছেনা মন্তব্যের ভিতর।
৪) লেখা এডিট করা যাচ্ছেনা এডিটর ব্রাউজারে, খুবি স্লো হয়ে যাচ্ছে, মাঝে মাঝে হ্যাং করে যাচ্ছে।
১ ও ২ সমাধান করা হয়েছে।
৫। কমেন্ট দিয়ে দেয়ার পরে আর এডিট করার অপশন খুঁজে পাচ্ছি না … 🙁 কমেন্ট পোস্ট করার পরে বানান-টানান-বাক্য অনেক কিছু ভুল চোখে পড়ে- কেন জানি পোস্ট করার আগে চোখে পড়ে না … এই এডিট অপশনটা যুক্ত করা যায় না?
বন্যা আহমেদের এই ব্লগটিতে অনেকগুলো সাবজেক্ট বিদ্যমান। নিখাদ ‘বিষয়’ হিসেবে সাবজেক্ট আবার ‘ব্যক্তি’ হিসেবেও সাবজেক্ট। ‘যাক, হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম’ ভাববার কারণ নেই কারো। রিড বিটুইন দ্যা লাইনস্।
‘উগ্র নাস্তিক’, ‘ভদ্র নাস্তিক’ এই টার্মগুলো আপেক্ষিক। এগুলো নিয়ে অভিজিৎ রায় বিস্তারিত লিখেছেন। ওনার লেখা থেকেই কোড করি- ‘উগ্র প্রেগন্যান্ট বা হাফ প্রেগন্যান্ট বলে কিছু নেই, হয় প্রেগন্যান্ট নয়তো প্রেগন্যান্ট নয়। দুটির একটি’। ঘটনা তাইই। কিন্তু মুশকিলটা হয়েছে রোমান্টিসিজম নিয়ে। বিপ্লবী রোমান্টিসিজম থেকে যেমন অনেকে তারুণ্যে বাম রাজনীতিতে আসে, তেমনি প্রগতিবাদী-মুক্তমনা হবার রোমান্টিসিজমও আন্তর্জালিক জগতে ব্যাপকহারে দৃশ্যমান।
প্রগতিশীল লেখক দাবিদার একজন যেমন মন্তব্য করেছেন- ‘অভিজিৎ রায় দুইটা রাজাকারের সাথে ভালো সুসম্পর্ক রাখতো। এক-ফরিদ আহমেদ, দুই-সাদ কামালী। কত্তো সহজ হ্যাশ-ট্যাগ! আর কতো সহজে গদগদ হয়ে সেই কমেন্টে লাইক মেরে আসা যায়! এর বাইরেও ফরিদ আহমেদ সম্পর্কে অনেক তকমা- ছুপা মুসলিম, ছুপা ছাগু… আরো কতো কি!
ব্যক্তি বন্যা আহমেদ কী বলেছেন এই ব্লগে? বলেছেন- মুক্তমনা একটি মডারেটেড ব্লগ। বন্যা আহমেদের কথা বাদ দেন, নীতিমালায়ও এটি বলা আছে। অর্থ কী? অর্থ হচ্ছে এটার মডারেশান বডি আছে, আছে উপদেষ্টা কমিটি । তাঁদের আন্ত আলোচনা আছে। তারপর এক্সিকিউশান আছে। বন্যা আহমেদ যেমনটি বলেছেন- মুক্তমনা যেই নীতি ধারণ করে সেটির স্বপক্ষের লেখাও কখনো কখনো মডারেশনে আটকে যেতে পারে।
যেতেই পারে। নীতি আর কৌশল সবসময় এক হবেনা। সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মুশকিলটা হয়েছে মডারেটর বলতে সবাই চেনে ফরিদ আহমেদকে। কিছু পছন্দ হলোনাতো দাও ঝামাটা ঘঁষে ফরিদ আহমেদের মুখে! হ্যাঁ , একটা দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে বটে ফরিদ আহমেদের কমেন্ট ব্যক্তি ফরিদ আহমেদের নাকি মুক্তমনা মডারেশন বডির এই নিয়ে। এক্ষেত্রে নিজ নামে বক্তব্য নিজস্ব বক্তব্য হিসেবেই করা উচিৎ মন্তব্য-কারীর এবং সেভাবেই দেখা উচিৎ পাঠকের। মডারেশন বডির বক্তব্য ‘মুক্তমনা প্রশাসক’ আইডি থেকে আসলে বিভ্রান্তি দূর হবে এবং ফরিদ আহমেদের অযাচিত জড়িয়ে পড়া এড়ানো যাবে।
বন্যা আহমেদ’তো বলেছেনই- সেই ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ সময়ে ফরিদ আহমেদের বক্তব্যগুলো বা অবস্থানটা মডারেশন বডি কর্তৃক অনুমোদিত। এও বলেছেন সেই বিশেষ সময়ের সিদ্ধান্তগুলোতে ভুল-ত্রুটি থাকাটাও অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু সেটা সময় দিয়ে বিবেচনা করতে হবে। অবস্থানের মেরিটস্-ডিমেরিটস্ আলোচনা করতে হবে ফোরামের মধ্যে। গণফোরামে নয় কিংবা অন্য ব্লগে গিয়ে নয়।
আমি ছাপোষা নাদান মানুষ। কিন্তু আমার পরিচিত যারা নিয়মিত মুক্তমনায় লিখতেন বা ফেসবুকে লিখতেন এবং দেশে থেকে স্বনামে লিখতেন তাদের সেই সময়ের আতঙ্ক আমি দেখেছি। এর মধ্যে যারা চাকুরী করেন তাদের কেউ কেউ অনিয়মিত উপস্থিতির জন্য অফিসের শোকজ খেয়ে ক্যারিয়ার ফাইলের বারোটা না হলেও সাড়ে এগারোটা বাজিয়েছেন সেটা নিশ্চিত। এই বিষয়গুলো মুক্তমনার কাকে বলতো আতঙ্কিত লোকজন? বলতো ফরিদ আহমেদকে। ব্যক্তি ফরিদ আহমেদ না, মডারেটর ফরিদ আহমেদ। কারণ অন্য কেউ দৃশ্যমান নয়।। সেই পরিস্থিতি এবং ঘটনা মাথায় রেখে ফরিদ আহমেদকে হ্যাশ-ট্যাগ দেয়া উচিৎ। দু’চারটা কমেন্টের উপর ভিত্তি করে নয়। তাছাড়া বন্যা আহমেদের লেখার একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হচ্ছে-
মনে রাখতে হবে মুক্তমনা কারো ব্যক্তিগত ফেসবুক পেইজ নয়। এটার সুদূর প্রসারী লক্ষ্য আছে, আছে উদ্দেশ্য। এটি একাধারে আন্দোলনের নাম আবার মুক্তচিন্তার প্ল্যাটফর্মও বটে। যেকোনো আন্দোলনের সহযোদ্ধাদের গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতায় মনোযোগী হতে হবে- যদি আপনি মুক্তমনার শুভাকাঙ্ক্ষী হন, সহযোদ্ধা হন। হালকা চালে ব্যক্তিগত কুতর্ক বা হ্যাশ-ট্যাগ বা ব্যক্তিগত বিলাস বা উচ্চা-বিলাসে মুক্তমনা ব্লগটিকে টেনে আনাটা সমীচীন হবেনা।
মুক্তমনার জয় হোক। সবার জন্য শুভকামনা।
নাস্তিকের ধর্মকথা, আপনার মতামতের সাথে সম্পুর্ন একমত, চমৎকার বিশ্লেষন।
বর্তমানের প্রেক্ষিতে এমন একটি লেখার প্রয়োজন ছিল।
আপনার এই লেখা আমাদের বর্তমান ক্রান্তিলগ্নে অনুপ্রেরণা জোগাবে।
আর মুক্তমনা অভি দা’র শূণ্যতা আমাদের সবসময় ভোগাবে।
উগ্র আস্তিক-উগ্র নাস্তিক নিয়ে নিজের কিছু ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি-
আমি আগে ভাবতাম, উগ্র নাস্তিক আর উগ্র আস্তিক কর্মের প্রভাবের ভিত্তিতে একই।
আজ থেকে তিন বছর আগে আমার এই ভুল ধারণা ভেঙেছিল।
আস্তিকদের দুটো শ্রেণীতে ফেলেছিলাম-
* একজন উগ্র আস্তিক (প্রকৃত ধর্মপালনকারী) ধর্মের বিধান মেনে মানুষ হত্যা করে, বাস্তবিক উৎপীড়ন করে, মানবসভ্যতাকে পিছিয়ে দেয়, বর্বরতা করে।
* একজন ভদ্র আস্তিক ধর্মে বিশ্বাস করে কিন্তু ধর্মের জন্য মানুষ মারে না।
কিন্তু এই শ্রেণীবিন্যাসের ফাঁকি হলো, আস্তিক মানেই কুসংস্কারে বিশ্বাসী আর এদের ধর্মের সামাজিকও ব্যাক্তিগত কুপ্রথাগুলো মান্য করার একটা বড় সুযোগ যেমন থাকে, তেমনি উগ্র আস্তিক হয়ে নাস্তিক ও অন্য ধর্মের লোকেদের হত্যা করার সম্ভাবনা থাকে।
আমি নাস্তিকদের দুটো শ্রেণীতে ভাগ করেছিলাম-
*একজন উগ্র নাস্তিক ধর্ম ও ইশ্বর নিয়ে স্যাঁটায়ার-আইরনী-সারকাজম লেখে, কার্টুন আঁকে, কটূ সমালোচনা করে।
*একজন ভদ্র নাস্তিক ধর্ম ও ইশ্বর নিয়ে সমালোচনা বইয়ের ভদ্র ভাষায় লেখেন ও ভদ্রলোকের মুখের ভাষায় তর্ক করেন।
আমি ভাবতাম, উগ্র নাস্তিকরা তাদের কাজের মাধ্যমে উসকানি দেয় আর এতে আস্তিকরা ক্ষেপে গিয়ে সহিংসতা করে।
কিন্তু আমার এই ধারণাটি ভুল ছিল; আমার মতো এই ভুল ধারণা কোটি কোটি মানুষ লালন করে।
বাস্তবতা হলো- উগ্র নাস্তিকদের কটূ সমালোচনা জাতীয় লেখালেখি/কথাকে ব্যবহার করে ধার্মিকরা নিজেদের কমিউনিটির লোকেদের ক্ষেপিয়ে তোলে আর এই উত্তেজিত ধার্মিকরা সহিংসতা করে।
এখানে খেয়াল করে দেখুন, উগ্র নাস্তিক শুধুমাত্র নিজের মতামত প্রকাশকারী নিরীহ একজন লেখক/আঁকিয়ে/বক্তা এবং উসকানীদাতা ও সহিংসতাকারী হলো ধার্মিকরা।
উগ্র আস্তিক (ধার্মিক) ও উগ্র নাস্তিক কখনোই সমান নয়।
ধার্মিক সহিংসতা করে আর উগ্র নাস্তিক কটূ ভাষায় কলম ও গলা চালায়।
ধার্মিক বর্বরতার পথ অবলম্বন করে আর উগ্র নাস্তিক সভ্যতার পথ অবলম্বন করে।
উগ্র আস্তিক তথা প্রকৃত ধর্মপালনকারীরা নাস্তিকদের অস্তিত্বের চুড়ান্ত বিরোধীতা করে।
একজন নাস্তিক মতপ্রকাশে তিনি উগ্র হোন কিংবা ভদ্র, নাস্তিক হলেই কল্লা যাবে।
এজন্য, ধার্মিকদের হাতে ধর্ম ও ইশ্বর নিয়ে রাজীব-ওয়াশিকুর বাবুর মত কটূ সমালোচকরা যেমন নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন, ঠিক তেমনি ধর্ম-ইশ্বর সংক্রান্ত বিজ্ঞান বিষয়ক ভদ্র ভাষার লেখক অভিজিৎ দা, অনন্ত দা নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন।
তাই, উগ্র আর ভদ্র নাস্তিকের ক্লাসিফিকেশানে যেয়ে কোন ভালো ফল পাওয়া যাবে না, নাস্তিক হলেই উগ্র আস্তিকদের হাতে কল্লা যাবে।
আর সেকারনেই উগ্র-ভদ্র ইস্যুতে নাস্তিকের পারস্পরিক বিতর্ক বর্তমান পরিস্থিতিতে ফলদায়ক নয়।
বরং উগ্র-ভদ্রের তর্ক ধার্মিকদের এই বর্বর কাজগুলোকে প্রকারান্তরে সমর্থন করার নামান্তর।
আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, উগ্র নাস্তিক এমন কোন কাজ করেন না, যার জন্য তাকে হত্যা করা যায়; এই কথাটুকু উগ্র-ভদ্র সব নাস্তিকের জন্য প্রযোজ্য।
তাই, নাস্তিকদের প্রয়োজন ব্যাক্তিগত ও মতাদর্শিক দ্বন্দ্ব পিছনে ফেলে একতাবদ্ধ থাকা; কোপ যখন ধার্মিকরা দেবে, তখন উগ্র-ভদ্র দেখে দেয় না, নাস্তিক দেখে দেয়।
অবিশ্বাসের জয় হোক…
অবিশ্বাসীরা এক হোক…
অভি দা’র প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলী।।
বন্যাপা,
মৌলবাদীদের চাপাতির আঘাতে বাংলাদেশের অহিংস ধর্মনিরপেক্ষ, মানবতাবাদী, নাস্তিকদের একের পর এক জবাই করে হত্যা করা হচ্ছে, লেখালেখির জন্য জেলে যেতে হচ্ছে এবং দিন শেষে সবকিছু ভুলে গিয়ে নাস্তিকদেরই দায়ী করা হচ্ছে, তাদের ‘পরিণতি’র জন্য। বাংলাদেশ কেনো, সারা বিশ্বেরই তো আজ এই দশা। মানবতাবাদী বিশ্বের ডাক দেওয়ার সংগ্রামে যারা জীবন দিচ্ছেন তাদের জীবন দেওয়ার পেছনের কারণ খুঁজতে গিয়ে বেশিরভাগ মানুষই দায়ী করছেন উলটো আক্রান্তকেই। বিবিসি ট্রেন্ডিং অনুষ্ঠানের কথা বলেন অথবা আপনার ভলতেয়ার লেকচারের পরে বিবিসিকে দেওয়া আরেকটি সাক্ষাৎকার যেখানে প্যানেল ডিসকাশনেও দুই জন ‘ইউরোপিয়ান’ ছিলো যারা কিনা নাস্তিক হত্যার কারণ উদঘাটন করতে গিয়ে ইংল্যান্ডের ব্লাসফেমি আইনকে হাততালি দিলেন, বললেন- আরে বাবা কার্টুন, বিলবোর্ড করার কী দরকার। উনারা যতো ইচ্ছা কার্টুন আকতে পারবেন, আজান দিতে পারবেন, পৃথিবীর সবকিছু অযৌক্তিকভাবে ব্যাখ্যা করতে পারবেন, সেই ব্যাখ্যাকে আইন করতে পারবেন, সেই ব্যাখ্যার সাথে কেউ একমত না হলে তাকে জবাই করতে পারবেন, কিন্তু নাস্তিকরা কার্টুন আঁকে কেনো। নাস্তিকদের একমাত্র কাজ কার্টুন আঁকা বা ব্যাঙ্গ করা না, একজন মুক্তমনা সবকিছুতেই মুক্তমনা, সমাজের সকল অনাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার। আলোচনা ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপ সংক্রান্ত সংকীর্ণ পথে নিয়ে গেলে সবারই লাভ। প্রথমতো আসল কারণ খোঁজার জন্য গভীর অনুসন্ধান করতে হয় না, খুব সহজেই নাস্তিকদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে সবকিছু হালাল করে ফেলা যায়। আর সেই দেশটা ‘মুসলিম’ প্রধান বাংলাদেশ হলে তো কথাই নেই। আপনাকে ধন্যবাদ স্পষ্ট করে বলার জন্য, নাস্তিকরা কার্টুন আঁকার জন্য জবাই হয় না। ধন্যবাদ স্পষ্ট করে বলার জন্য যুদ্ধটা হচ্ছে আলো বনাম আঁধারের। ধন্যবাদ শত্রু এবং যুদ্ধের ময়দান চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখাবার জন্য। বাংলাদেশে প্রচারিত বিবিসি ট্রেন্ডিং অনুষ্ঠান দেখে প্রচণ্ড হতাশ হয়েছিলাম। পরে নিজেকে সান্তনা দিলাম এ আর এমন কী, সারা বাংলাদেশই তো তার আসল শত্রুকে ভুলে গিয়ে, আসল কারণ চিন্থিত না করে, সজ্ঞানে-অজ্ঞানে অন্ধকারের পক্ষে কথা বলছে, অন্ধকারের কাজ জাস্টিফাই করছে নিজের মাথা কিংবা পরকালের বেহেশতো বাঁচাতে- বিবিসির অনুষ্ঠানে সেটারই প্রতিফলন ঘটেছে।
রায়হান রশীদ ভাই তার মন্তব্যের অনেকগুলো প্রশ্নের মধ্যে একটা প্রশ্ন করেছেন- বাংলাদেশের এই ঘটনাগুলোকে ‘কেবলমাত্র’ বাক-স্বাধীনতার লড়াই এর লেবেল কেনো দেওয়া হচ্ছে? অভিজিৎ দা, আপনি, অনন্তদা সহ যারা শান্তির চাপাতির তলে পড়েছেন তাদের সংগ্রাম কী ছিলো শুধু মানুষের কার্টুন আঁকার অধিকার/বাক-স্বাধীনতার অধিকার প্রতিষ্ঠা? তাদের সংগ্রামের একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক মানুষের মৌলিক অধিকার বাক-স্বাধীনতার অধিকার প্রতিষ্ঠা কিন্তু একমাত্র উদ্দেশ্য কখনই নয়। আমাদের সংগ্রাম বিজ্ঞানমনস্ক, মানবতাবাদী, ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ গঠন। একদল আছে যারা সবকিছুকে ছোট গলিতে নিয়ে উগ্র নাস্তিকদের দায়ি করছে। দলের অবশ্য কোনো অভাব নেই। রায়হান রশীদ ভাইয়ের প্রশ্নে যেই দলটার কথা আছে এরাও অন্ধকারেরই প্রতিনিধি তবে বুদ্ধিমত্তায় এক ধাপ উপরে। নাস্তিক ব্লগার হত্যার ইস্যুকে উল্লেখ করে তারা সারা বিশ্বে প্রমান করে ফেলে বাংলাদেশে আজ মত প্রকাশ সম্পূর্ণ বন্ধ। অভিজিৎ-রাজীব-বাবু-অনন্তদার জন্য দুই সেকেন্ড উহুআহ করে তারা তখন চলে যায় বাংলাদেশে জামায়াত ইসলামকে বাঁচাতে, তারা দোষী করে যুদ্ধাপরাধ বিচার ট্রাইবুনালকে, ওখানে নাকি মন প্রকাশে বাধা দেওয়া হয়! আল-জাজিরায় অভিদা হত্যার পর একটা বেশ বড় অনুষ্ঠান হয়েছিলো সেখানে দেখলাম অর্ধেক অংশই যুদ্ধাপরাধ বিচারের সমালোচনা, এই বিচারকে কেন্দ্র করে কিছু বললেই আদালত নাকি তলব করে। কতো কষ্ট তাদের!
[… পরের মন্তব্যে কন্টিনিউ]
… প্রথম মন্তব্যের পর
অভিজিৎ দা, আপনি, অনন্ত দা আপনাদের সাথে পরিচয়ের আজ অনেক বছর হতে চললো। এর মধ্যে কতো ইস্যু এলো গেলো। ২০১২ তে আদালতের রিট শুনানির ফলে ধর্মকারী বন্ধ হলো, ২০১৩ সালে শাহবাগের গণজোয়ারে ভীত হয়ে শাহবাগ আন্দোলনকে ধ্বংস করতে একে নাস্তিকদের আন্দোলন প্রমাণ করতে রাজীব ভাইয়ের মতো অসাধারণ একজন মানুষকে হত্যা করা হলো, একের পর আক্রমণ-হুমকি শুরু হলো মানবতাদী লেখক-ব্লগার-কর্মীদের। ধর্মগ্রন্থের সাথে নৈতিকতা মিলিয়ে বাংলাদেশের সব ধর্ম শিক্ষার পুস্তককে যখন নতুন ধর্ম ও নৈতিকতা শিক্ষায় আকিকা করে দেওয়া হলো তখন অভিজিৎ দা এর কড়া প্রতিবাদ করে অন্ধকারের সেপাইদের সাইবার আক্রমণের শিকার হয়েছিলেন। অবিশ্বাসের দর্শন বইতেই ধর্ম ও নৈতিকতা নিয়ে অভিদা সুস্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন কিছুতেই প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মগুলো নৈতিকতার ধারক ও বাহক হতে পারে না। অন্য অনেক বিষয়ের মতো এই বিষয়েও তিনি সোচ্চার ভূমিকা নিয়েছিলেন এবং অন্য অনেক বিষয়ের মতো যুক্তি-তর্ক-বিজ্ঞানের মাধ্যমে তিনি অনেক মানুষকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন ধর্ম আর নৈতিকতার সুস্পষ্ট ফারাক। অভিদা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়েও ছিলেন অত্যন্ত সোচ্চার, শাহবাগের সময় মন খারাপ করে স্ট্যাটাস দিয়ে জানিয়েছিলেন- জাহানারা ইমামের ছবিকে ঘিরে থাকা লক্ষ মানুষের মাঝে না থাকার কষ্টের কথা। অভিদা তার কর্মের গুনেই হয়েছিলেন অন্ধকারের লক্ষ্যবস্তু যদিও আপনি যেমন উল্লেখ করলেন- দিন শেষে তারও দোষ নবীকে অপমান!
রাজীব ভাই হত্যা বলেন, ব্লগারদের উপর সরকারি মামলা-হামলা বলেন, রকমারীর ছাগুগিরি বলেন কখনই আমরা ভয় পাই নাই, পাওয়ার প্রশ্নই আসে না। প্রতিটা ঘটনার পেছনের আসল কারণ উদাঘাটনের চেষ্টা করেছি, নিজের সংগ্রামের কথা ভুলে না গিয়ে আসল সমস্যা চিন্থিত করেছি, সেটার প্রতিবাদ করেছি।
সবাই না হয় চিনতে ভুল করলো কিন্তু অভিদার হত্যা পরেই তার মুক্তমনাই যখন দেখলাম সব ভুলে প্রপাগান্ডার স্রোতে ভেসে গেলো তখন সত্যি খুব দুঃখ পেয়েছিলাম। মুক্তমনাই এতো সহজে ভুলে গেলো অভিদার কথা, তার লেখার কথা, তার আদর্শের কথা। আক্রান্ত আপনাকেই আজ আবার লিখে আমাদের সেটা মনে করিয়ে দিতে হলো। এই লেখা দিয়ে আপনি যেনো অভিদাকে আমাদের সামনে এনে দাঁড় করিয়ে দিলেন আবার। আপনার মতো আমিও মনে করি মুক্তমনার উচিত হবে, সে সময়ের করা ভুলগুলোকে স্বীকার করে স্পষ্ট বক্তব্য দিয়ে অভিজিৎ রায়ের মুক্তমনার অবস্থান স্পষ্ট করা।
সেই অন্ধকার রাতে আপনাকে হারিয়ে ফেললে কী হতো জানি না, সবকিছু হারিয়েও এই সান্ত্বনা- আপনি তো আছেন। ভলতেয়ার লেকচারটা যখন দিলেন তখন দেখার সৌভাগ্য হয় নি, কিন্তু তূলনাহীন ব্যক্তিগত শোকের উর্দ্ধে উঠে আপনি যখন সারা বিশ্বকে জানালেন মানবতাবাদী বিশ্ব গড়ার সত্যিকারের চ্যালেঞ্জের, জানালেন বাংলাদেশের মানবতাবাদীদের কলম দিয়ে চাপাতির সাথে যুদ্ধের কথা, তখন অবাক হয় নি, কারণ আপনি তো এমনই, আপনার কাছ থেকে এটাই তো আশা করি। টুইটারে উপস্থিত মানুষজনের প্রতিক্রিয়া দেখছিলাম, একটা ছোট বক্তৃতা দিয়ে আপনি সারাবিশ্বকে কেমন করে নাড়িয়ে দিলেন! সেদিন পুরো যুক্তরাজ্যে আপনার বক্তব্য টুইটারে ট্রেন্ডিং টপিক হয়ে গিয়েছিলো। এতো শক্তিশালী বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক, তাই হয়েছে। কিন্তু অবাক হয়ে দেখলাম আলোড়িত হলো না কেবল বাংলাদেশ। যেনো আপনি বাংলাদেশের কেউ নন, যেনো অভিজিৎ রায়, অনন্ত বিজয় দাশ, ওয়াশিকুর বাবু, রাজীব ভাইরা বাংলাদেশের কেউ নয়। বাংলাদেশের মানুষ এসব ভলতেয়ার বক্তৃতা-টক্তৃতার দুই পয়সা দাম দেয় না সেটা তো জানা কথাই। কিন্তু অবাক হয়ে দেখলাম প্রগতিশীলতার মুখোশ পরে যারা নিজেদের প্রগতিশীলতার ব্র্যান্ড এম্বাসেডর ভাবেন তারা আপনার ভলতেয়ার লেকচার নিয়ে হয় কিছু বললো না নতুবা দেখলো আপনার হাসি, শুনলো অভিদার গুফিত্ব। আপনার বলা সকল গুরুত্বপূর্ণ কথাকে পাশ কাটিয়ে মাসী হয়ে তারা মাকে শেখালো শোকের সংজ্ঞা। শুধু এখানেই থেমে না গিয়ে তারা আপনাকে তাদের মতো হতে অনুরোধ করলো- কান্না-কাটি করে দান খয়রাত পাওয়ার এই সুবর্ণ সুযোগ গ্রহণ করতে। তাদের কানে ঢোকানোর জন্য ভলতেয়ার লেকচার সম্পর্কে বলতে গিয়ে আপনাকে ব্যাখ্যা করতে হলো- অভিদার গুফিত্ব। আর কিছু না।
[… পরের মন্তব্যে কন্টিনিউ]
অভিদাকে আমি প্রথম দেখেছি ২০০৯ সালে, আপনি আর তৃষাও ছিলেন তখন। তার আগ পর্যন্ত অভিজিৎ দা ছিলেন বইয়ের হরফে, ব্লগের ফন্টে, তিনি ছিলেন আলো হাতের আঁধারের যাত্রী। ব্যক্তি অভিজিৎ দাকে প্রথম দেখে আমি তাই অবাক হয়েছিলাম সত্যি। এতো আলা-ভোলা, সদা হাস্যজ্জ্বল মানুষটাই বুঝি অভিজিৎ রায়! লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর ২০১২ সালে অভিদা যখন প্রথম বইমেলায় অংশ নিতে বাংলাদেশে আসলেন, তখন তো পুরাটা সময়ই ছিলাম উনার সাথে। মটর সাইকেল নিয়ে অজয় স্যারের বাসা থেকে অভিদাকে তুলতাম, ঢাকা শহরেই জ্যাম ঠ্যালতাম, টংগের দোকানের চা খেতাম, বইমেলা শেষে কার্জন হলের পুকুর পাড়ে বিশ্রাম নিতাম, সেই সময় সীমাহীন আড্ডা-বাজিতে কিছুটা চেনার সুযোগ হয়েছিলো ব্যক্তি অভিজিৎ রায়কে। মনে আছে ২০১২ তে বই মেলায় এসে উনি নিজেই প্রচণ্ড অবাক হয়েছিলেন। শুধু লেখা লিখে এতো ইম্প্যাক্ট ফেলেছেন তিনি বাংলাদেশের তরুণদের মনে সেটা তো উনি নিজেই তখন প্রথম বুঝেছিলেন। ঢাকা থেকেই ফোন করে জানিয়েছিলেন আপনাকে সে কথা উচ্ছ্বসিত হয়ে- বলেছিলেন, এর পরের বার উনি কিছুতেই একা আর আসবেন না, আপনাকে আসতেই হবে। আপনি কথা রেখেছিলেন, সতেরো বছর পর ঢুকেছিলেন বইমেলায়। কিন্তু আপনাদের গ্রহণের জন্য আমরা জাতি হিসেবেই তো প্রস্তুত নই এখন, তাই আরও অনেকগুলো সতেরোটা বছর পেরিয়ে গেলেও আর কখনও আপনাকে আর অভিদাকে একসাথে বইমেলায় পাবো না। মানুষ অভিদাকে হারাবার শোক আমরা যারা তাকে সামান্যতম চিনি তারাই সইতে পারি না, আপনার কী অবস্থা সেটা বোঝা আমাদের সাধ্যের অতীত। ব্যক্তিশোকের উর্দ্ধে উঠে আপনি যখন আবার অভিজিৎ রায়ের মতোই মানবতার কথা বলেন, ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলেন, বিশ্বকে পথ দেখান তখন বাংলাদেশে আপনাকে ব্যাখ্যা করতে হয় ‘অভিদার গুফিত্ব’! এরচেয়ে দুঃখের আর কী হতে পারে।
তাও ‘ভালো’ আরও কিছুদিন আমাদের মগজ ঘষতে আপনি আছেন। শুধু এইটুকুই বলবো, আপনি একা নন, এতো জঞ্জালের মাঝে আমরাও আছি। অভিদা, অনন্তদা, রাজীব ভাই, বাবুর মতো আমরা অনেকেই আজ আলো হাতে আধারের যাত্রী। নিজের কর্ম দিয়েই সেটা প্রমাণ করতে আমাদের।
ইঙ্গারসলের প্রতিজ্ঞাটা অভিদার খুব পছন্দ ছিলো। আমার নিজেরও। যেই প্রতিজ্ঞার শক্তিকে পুঁজি করেই লেখা হয়েছিলো অবিশ্বাসের দর্শন বইটা। আমার করা প্রতিজ্ঞার বাংলা অনুবাদটা অভিদার খুব পছন্দ ছিলো। কতোবার যে ব্যবহার করেছেন, শেয়ার করেছেন। প্রতিজ্ঞার শেষ লাইনগুলো আজকে খুব মনে পড়ছে আবার-
আমার অন্তর সেদিন কৃতজ্ঞতায় ভরে গিয়েছিল। আমি কৃতজ্ঞতা বোধ করেছিলাম ইতিহাসের সেই সব নায়কদের প্রতি, মানুষের প্রতি যারা নিজের জীবন বিপন্ন, বিসর্জন করেছিল মানুষের হাত এবং মস্তিষ্কের স্বাধীনতা যুদ্ধে। আমি ধন্যবাদ জানিয়েছিলাম পৃথিবীর আলোকিত সকল সন্তানদের, যাদের কেউ আত্মাহুতি দিয়েছিল মূর্খের সাথে যুদ্ধে, মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছিল অন্ধ প্রকোষ্ঠে আ-বদ্ধাবস্থায়, যাদের মাংস পুড়েছিল ধর্মান্ধদের আগুনে। আলোকিত সেইসব সাহসী মানুষেরা, যারা এসেছিল পৃথিবীর আনাচে-কানাচে, যাদের চিন্তায়-কর্মে স্বাধীনতা পেয়েছে মানুষের সন্তানেরা। অতঃপর আমি নিচু হলাম, যে আলোর মশাল তারা জ্বালিয়েছিলেন সে আলোর মশাল তুলে নিলাম নিজের হাতে, উঁচু করে তুলে ধরলাম সেটা, এ আলো নিশ্চয়ই একদিন জয় করবে সকল অন্ধকার।
হ্যা, ইঙ্গারসলের এই কথাটা অভির খুব পছন্দ ছিল। ২০১২ সালে অভির দেশ থেকে ফোন করে আমাকে মেলার কথা বলার স্মৃতিগুলো ভুলবোনা কোনদিন। কী যে খুশী হয়ে গল্প করতো ঘন্টার পর ঘন্টা দেশ থেকে ফোন করে। কালকে আমার জিমেইলে অনেকদিন পর অভি ফোল্ডার খুলে দেখলাম ও আমাকে ২০১২ সালে দেশ থেকে একটা বড় ইমেইল করে মেলার কথা বলেছিলো। অভিমান করে লিখেছিলো, আমি ওর সাথে এর পরেরবার মেলায় না আসা পর্যন্ত ও নাকি দেশেই যাবেনা আর কোনদিন, আমি কীভাবে পারি এত দেশ ঘুরতে অথচ ওর বইগুলো যখন প্রকাশ হয় বইমেলায় তখন দেশে না যেতে! ওকে কথা দিয়েছিলাম ২০১৫ তে যাবো। মাঝে মাঝে মনে হয় আমিই ওর মৃত্যুটা স্কেজুয়ল করে রেখেছিলাম অনেক আগে থেকেই…
দিন দিন আমরা কেবল পেছনের দিকেই হাঁটছি শুধু… একসাথে সামনে আগানোর শপথ নেয়াটাই আমাদের একমাত্র কাজ হওয়া উচিত, মানছি… কিন্তু প্রতিদিন আমরা আরো বেশী বেশী বিভাজিত হচ্ছি… উত্তরনের পথ কোথায়?
দি গড ডিল্যুশনের এক জায়গায় বলা আছে, “organizing atheists has been compared to herding cats, because they tend to think independently and will not conform to authority.” অতি খাঁটি কথা। মুক্তমনাদের মধ্যে তো মতপার্থক্য থাকবেই। থাকাই তো উচিত। বিশেষতঃ মন্তব্যগুলো দেখে মনে হচ্ছে বন্যা আপা একটা ভেন্টিলেটর তৈরী করে দিয়েছেন; বহুদিনের জমে থাকা ক্ষোভের বাষ্প বেরিয়ে যাচ্ছে সেখান দিয়ে। যাক। সেই ভালো। তর্ক হোক, মতান্তর হোক; মনান্তর নয়।
“organizing atheists has been compared to herding cats, because they tend to think independently and will not conform to authority.
একদম ঠিক কথা। এটা নিয়ে অভিজিতের সাথে অনেক কথা হতো। এ কারণেই রক্ষণশীলেরা অনেক বেশী একজোট হয়ে কাজ করতে পারে যেটা আমরা পারিনা। আমরা যেরকম এক চার্চ, মন্দির বা মসজিদের ছাঁদের নীচে জড়ো হতে পারিনা, ঠিক তেমনি আমরা প্রত্যেকে এতটাই স্বাধীন যে বেশীরভাগ ইস্যুতে একমত হয়ে কাজও করতে পারিনা। রায়হান রশীদের সাথেও এটা নিয়ে কথা হচ্ছিল সেদিন। এই সমস্যাটার একটা সমাধান করা বড্ড প্রয়োজন…
এটা মনে হয় আদৌ কোন সমস্যা নয় আপা- বৈশিষ্ট্য মাত্র। বৈশিষ্ট্যটাকে সমস্যা হয়ে উঠতে না দিয়ে শক্তিমত্তা হিসাবে কোনভাবে যদি কনভার্ট করা যায়…।
কোন ইস্যুতে ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তিগত অবস্থান আসলে সমস্যা নয়। সমস্যা হয় তখনই যখন কারো অবস্থানের বিরোধীতা করতে গিয়ে ঐ ব্যক্তি-মানুষটাকে আমরা শত্রু বলে ভাবতে শুরু করি। ওভাররিঅ্যাক্ট করি। মনে হয় এই বেলা আমাদের সবারই সসংকোচে স্বীকার করে নেয়া ভালো- আমরাও মাঝে মাঝে বড্ড দ্রুত অনুভূতিতে আঘাত নিয়ে ফেলি। এটাতো মুক্তমনন নয়। আমাদের আরও প্রফেশনাল হওয়া উচিত। মুক্তচিন্তা মোটেই কোন ইন্সটিংক্ট নয়, ইভোল্যুশনের ফল নয়, এমনকি হয়তো কমনসেন্সও নয়। অনেকটা হয়তো বিশেষ কোন স্কিলের মতো- যেমন কন্ঠসংগীত। নিয়মিত চর্চায় না রাখলে ধার কমে যেতে পারে। তাই আমাদের আরও বেশী করে ‘রেয়াজ’ করা দরকার। বিরোধীতার রেয়াজ। পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে তুমুল তর্ক করার রেয়াজ। (তর্কের উত্তাপে তরকারী সিদ্ধ হয়ে যাক কিন্তু সসপ্যান কেন পুড়বে! হা হা হা…)
বন্যা আপা,
ফরিদ ভাই এর বিষয়ে আমার কিছু বলার আছে,
অভিদা কে যখন কেউ কেউ বেস্ট ফ্রেন্ড বানাতে ব্যস্ত, /ইহা করিয়াছি , উহা করিতেছি / নামক ফাঁকা বুলির ক্যানভাসাররা, আত্ম প্রচারে পকেট ভরছিল, ঠিক সেই সময়, ফরিদ ভাই মুক্তমনার সবাই কে সাহস দিয়ে মুক্তমনা বাঁচাতে রাতদিন পরিশ্রম করেছেন। গত পাঁচ মাসে ফরিদ ভাই এবং মুক্তমনার মডারেশন এবং টেকি টিম যে পরিশ্রম করেছে, সে জন্য ধন্যবাদ শব্দটা অনেক কম বলা হয়।
ফরিদ ভাই কে মডারেট , মুমিন , ছাপা ছাগু, এমন অসংখ্য ট্যাগ দিয়েছে আমাদের ই গুটি কয়েক সহযাত্রীরা, তবুও তিনি হাল না ছেড়ে এগিয়ে নিয়েছেন মুক্তমনা কে।
মতবিরোধ হতেই পারে, সেটা নিয়ে তর্ক বিতর্ক হবে সেটাই স্বাভাবিক, কিন্তু তিক্ত হলেও সত্যি, আমরা যখন প্রান বাচাতে আশ্রয় খুঁজছি তখন কেউ একজন বিশ্ববাসী কে বলে বেড়াচ্ছে আমি ই একমাত্র সহী, বাকিরা আমার মুরিদ, আর যারা মুরিদ না তারা ছুপা ছাগু, জামাত, শিবির, মডারেট। যারা উগ্রতা নামক বিশেষণের বিষয়ে সোচ্চার হয়েছেন, তাদের সাধুবাদ কিন্তু নাস্তিকদের কে মডারেট, মুমিন, জামাত, ট্যাগ দেয়া হল এই বিষয়ে আপনাদের মতামত জানতে চাই।
অভিদা বিচক্ষণ ছিলেন বলেই মুক্তমনার জন্য যোগ্য মানুষগুলোকে বেছে নিয়েছিলেন। বন্যাপা মুক্তমনা শুধু ব্লগ না, এটা আমার কাছে আপন জনের মতই আপন। তাই আমার মতামত আমি স্পস্ট করে জানালাম।
@ফড়িং,
আপনার কমেন্ট পড়ে কিছু কথা মনে হলো … বলছি, আশা করি, কিছু মনে করবেন না …
১/ দেখেন, ফরিদ আহমেদের পক্ষে বলতে গিয়ে আপনি কিন্তু তাকে নামালেনই … আমার অন্তত এমন মনে হয়েছে … মুক্তমনার পেছনে ফরিদ আহমেদের মেধা, শ্রম, সময় দিয়ে অক্লান্ত লেগে থাকা, মুক্তমনার সবচেয়ে ক্রিটিকাল মোমেন্টে সবচেয়ে বড় সহায় হিসাবে দাঁড়িয়ে থাকা- এই ভূমিকা নিজেই এত বিশাল যে- অন্য কারোর সাথে তুলনার প্রয়োজন পড়ে না … আর একান্তই তুলনা যদি দিতে হয়, সেটা সম পর্যায়ের বা কাছাকাছি কাজের সাথে দিলেও- মান থাকে … কিন্তু কোন এক বা একাধিক জনের আত্মপ্রেম, ফাঁকা বুলিবাজী কিংবা পকেট প্রেম- সেটা ফরিদ আহমেদের এমন ভূমিকার কথা স্মরণের সময় কতখানি জরুরি?
২/ ফরিদ আহমেদের বিশেষ ও বিশাল ভূমিকা থাকার মানে এই নয় যে, তার আরেকটা বক্তব্য, অবস্থানের সাথে দ্বিমত করা যাবে না, সমালোচনা করা যাবে না … বন্যা আপা এই পোস্টে খুব ভালোভাবেই ফরিদ আহমেদের ভূমিকার কথা সবিস্তারে উল্লেখ করেছেন …
৩/ আপনার এই কমেন্টের মূল লক্ষ আসলে কোনটি? ফরিদ আহমেদের সেই ভূমিকা? নাকি, কোন এক বা একাধিকজনের আত্মপ্রেম, অভিদাকে ফ্রেন্ড বানানোর মাধ্যমে ও আত্মপ্রচারের মাধ্যমে পকেট ভরা, ফাঁকা বুলিবাজী … ইত্যাদি সংক্রান্ত কথিত অভিযোগ? এইসব অভিযোগ উত্থাপনই যদি মূল উদ্দেশ্য হয়ে থাকে- তবে কেন শুধু শুধু ফরিদ আহমেদকে টেনে আনা এবং সেটা আলোচনার জন্যে এরকম একটা পোস্টকে সিলেক্ট করা?
৪/ আত্মপ্রেম, আত্মপ্রচারের কথা যার/যাদের প্রসঙ্গে বলেছেন, আমি কিন্তু চোখের সামনে কেবল তাকে বা তাদেরকে দেখি না – অনেককেই দেখি … এই মোহ খুব কঠিন, সেটা থেকে আমরা অনেকেই মুক্ত নই … একতরফা অভিযোগ পরিহার্য হওয়া উচিৎ … আপনাদের মত প্রাণ বাচানোর জন্যে অনেকেই আশ্রয় খুজেছে, খুজছে … এখন পর্যন্ত অল্পজনই আশ্রয় খুঁজে পেয়েছে … বুঝতে হবে, ব্যাপারটা অত সহজ নয় … এবং এটাও বুঝতে হবে, যে বা যারা “আমি এই করেছি- ঐ করেছি”- এসব বলেছে- তারা হয়তো আসলেই কারো না কারো জন্যে কিছু করেছেন, হতে পারে- আপনাদের জন্যে কিছু করেননি … এই ব্যক্তি আপনার বা আপনাদের জন্যে কিছু না করাকেই সব কিছুর মাপকাঠি বানিয়ে ফেলবেন না প্লিজ …
৫/ মূল বিষয়ে আলোকপাত করবেন কি? নাস্তিক হত্যার দায় কিংবা নিরীহ নাস্তিকদের গ্রেফতার, বা দেশত্যাগে বাধ্য হওয়া- এর দায় আসলে কাদের মনে করেন?
মাপ করবেন, আমার দৃষ্টিভঙ্গির এত ভুল ব্যক্ষা করলেন দেখে খানিকটা হতাশ হলাম। ফরিদ ভাই কে উঠানো নামানো এই বিষয় থেকে শত হাত দুরেছিল আমার বক্তব্যর ভাবার্থ। বরং প্রতিকুলতার মাঝে তার কর্তব্যবোধ ,তার নিস্টা কে আমি কিভাবে দেখি সেটাই মূখ্য ছিল।
আপনার ভাষায় যেটা মূল বিষয় আমার দৃস্টতে সেটা ঐ সময়ের যুদ্ধ কৌশল।আমরা এমন একটা সময়ে আছি যখন বলখিল্যতা দেখানোর সুযোগ নেই বরং কৌশলী হওয়া খুবই জরুরী। নাস্তিক হত্যা, বিচারহীনতা, ৫৭ধারায় গ্রেফতার , নির্যাতন , দেশ ত্যাগে বাধ্য হবার জন্য বর্তমান সরকারের মৌলবাদ তোষনের নিতি , ধর্মান্ধ দের দৌরাত্ব , অপপ্রচার তো আছেই এর উপরে যদি ঘরের ইঁদুর সামলাতে হয় তখন অর্জনগুলোও অনেকাংশে বিষর্জিত হয়।
আমার বক্তব্য স্বল্প ভাষয় স্পস্ট করলাম। এবং এই বিষয়ে এটাই আমার শেষ বক্তব্য। ধন্যবাদ রইল।
আপনাকে হতাশ করার জন্যে আন্তরিকভাবে দুঃখিত … ভুল ব্যাখ্যা যদি করে থাকি- তার জন্যে আমারই ক্ষমা প্রার্থণা করা উচিৎ … তবে, শেষ বক্তব্যটুকু দেয়ার আগে- ভুল ব্যাখ্যা কোন কোন জায়গায় করলাম- তা দেখিয়ে দিলে বাধিত হতাম …
তবে আপনার উপরের জবাব বিষয়ে আমার আরো কিছু কথা ছিল, সেটা আপনাকে আবারো হতাশ করবে কি না জানি না … তারপরেও বলছিঃ
১/ আপনার বক্তব্যের উদ্দেশ্য যে ফরিদ আহমেদকে উঠানো নামানো থেকে শত হাত দূরে ছিল – তা আমি জানি! আমি আপনার সেই উদ্দেশ্য নিয়ে কথা বলিনি, আপনার বক্তব্য উপস্থাপনের ধরণটি দিয়ে কি প্রকাশিত হয়েছে- তার দিকে আলোকপাত করেছি … প্রতিকূলতার মাঝে ফরিদ আহমেদের নিষ্ঠা ও কর্তব্যবোধ আপনি দেখাতে চেয়েছেন, বন্যা আপাও দেখিয়েছেন, আমি নিজে দারুণ শ্রদ্ধা করি এই মানুষটিকে … ঐ সময়ে তার ওসব কথায় খুব শকড হওয়ার পরেও প্রকাশ্য কোথাও এসব নিয়ে এতটুকু টু শব্দ করিনি … মুক্তমনার গুগলগ্রুপে আমার মতটুকু জানিয়েছিলাম …
যাহোক, আমার কথা হয়তো আমিও বুঝাতে পারিনি … আমি কেবল এতটুকুই বুঝাতে চেয়েছি যে, কর্তব্যপরায়নতা ও নিষ্ঠার কথা যেটা স্মরণ করিয়ে দিতে চাইলেন- সেটা তুলনামূলক আলাপ হিসাবে না আসাটাই কাম্য ছিল … সেটাই খুব ফেয়ার হতো … আপনি বুঝতে পারছেন না বলে উদাহরণ দেই … ধরেন আপনার একটা ঘোড়া আছে … আমি যদি তার খুব প্রশংসা করতে গিয়ে বলি- এই ঘোড়াটা খুব টগবগে, আপনাকে ভীষণ সাপোর্ট দিচ্ছে, যেমন তেজ, যেমন ছুটতে পারে, তেমনি কত কাজ করে দেয়- আর আপনার প্রতিবেশীর বুড়া গাধাটার দেখেন কি অবস্থা! বেটা নড়তে চড়তেও পারে না … খালি ভাবটা এমন একটা লাটের বাচ্চা … ইত্যাদি ইত্যাদি … এরকম তুলনা করে আপনার প্রিয় ঘোড়াটার যত প্রশংসাই করি না কেন আপনার কি মনে হবে না যে, আমি মশকরা করছি?
এটা ছিল আমার প্রথম আপত্তি, আর দ্বিতীয় আপত্তি হচ্ছে, যাকে বুড়ো গাধা বলার চেষ্টা করছেন- এই পোস্টে সেটার উদ্দেশ্য কি?
২/ আপনাদের যুদ্ধ কৌশল হিসাবেই আমি মারাত্মক ভুল দেখছি … যুদ্ধটা আপনারা করতে চাইলেন “উগ্র নাস্তিক”দের বিরুদ্ধে! তাতে আপনারা ভাবতে পারেন- ওদের পিঠের উপরে দাঁড়িয়ে নিজেদের সুন্দর সেইফ করবেন … সেটা কেবল স্বার্থপরতাই নয়, আহাম্মকিও … ঘরের বাইরে থেকে কামান দাগানো হয়, তখন বাইরে ঘরের ইঁদুরকে ইগনোর করতে হয়, কামানের মুখে উভয় বিপদগ্রস্তরা পরষ্পরকে বন্ধু যদি না ভাবতে পারেন … কিন্তু, ঘরের ইঁদুর সামলানোটা যখন মূল হয়ে যায়- বা ঘরের ইদুরকে বলির পাঠা বানিয়ে বাঁচার চেষ্টা করতে চান- তখন বাঁচার সম্ভাবনা যে কমে যায়- সেই ম্যাচুরিটি আগে দরকার …
আপনি হতাশ করেন নি , বরং নিজেকে উগ্র এবং আমাকে ভদ্র কাতারে ফেলে একটা দলভুক্ত করে দিলেন। আশ্চর্য বিষয় হল আমি আপনার ভাষায় ভদ্র হবার কারণে আজকে দেশ ছাড়া। শুধু আমি কেন আমার মত আপনার ভাষায় ভদ্ররা দেশ ছাড়ছে! এর নাম সেইফ হলে এমন সেইফ কার কাম্য না। ইঁদুর সামলানো মুখ্য ছিল না কখনো, ভবিষ্যতেও হবে না । আর বলির পাঁঠা বানিয়ে বাঁচার চেষ্টা করার প্রশ্নই আসে না, কারণ পাঁঠাটা আমি নিজে । অযথা বাক্যালাপ না করে সিদ্ধান্তে আসুন। এর থেকে ম্যাচিউরড সিদ্ধান্ত এই মুহুর্তে আর কিছু নেই।
ভাই, ম্যাচিউরিটি তো আগে দরকার পারষ্পরিক ভাবের আদান প্রদানে একে অপরকে বুঝার বা বুঝানোর চেষ্টায় … ধরে নিচ্ছি, আমারই ব্যর্থতা- তাই আবারো আমার কথা বুঝানোর চেষ্টা করে দেখছি …
১। // নিজেকে উগ্র এবং আমাকে ভদ্র কাতারে ফেলে// ==>> আমি নিজেকে “উগ্র” এবং আপনাকে “ভদ্র” কাতারে ফেলছি না … বরং, যখন থেকে ‘উগ্র নাস্তিকতা’র বিরুদ্ধে মাতম উঠেছে- তখন অনেককেই আমার উদাহরণ দিতে দেখেছি, আমার মত “ভদ্র” ভাষায় লেখা উচিৎ এমন পরামর্শ আকছার দেয়া হতো … কিন্তু, ব্যক্তিগতভাবে আমি-আপনি উগ্র না ভদ্র নাস্তিক (আসলে আপনার নাস্তিকতা বিষয়ক লেখা সম্বন্ধে আমার কোন ধারণাই নাই- ফলে আপনি উগ্র না ভদ্র নাস্তিক সেটা নিয়া আমি কোন চিন্তাই করছি না) সেটা তো আমার আলোচনার বা বিতর্কের কোন ধর্তব্য বিষয়ই না …
২। //একটা দলভুক্ত করে দিলেন…// ==>> আমি কোন দলভুক্তকরণ করিনি – আমি মনে করি, আমরা সবাই নাস্তিক- নানা মতের নানা পথের নানা রুচির নাস্তিক … কারো মত পথ রুচি আমার ভালো না লাগলে না লাগবে, তাকে এড়িয়ে চলার স্বাধীনতা আমার তো আছেই, এমনকি জ্ঞান দেবার, উপদেশ দেবার বা যুক্তি তর্ক করার মত মনে হলে সেটার পথো খোলা! এককালে মডারেট মুসলিমরা এই কাজটা খুব করতো, মডারেট মুসলিম আর উগ্র মুসলিমের মত করে তারাও যুক্তিবাদী নাস্তিক আর উগ্র/ ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক- এমন বিভাজন করার চেষ্টা করেছিল … তখন বেশি সফল হয়নি! মুশকিল হচ্ছে, আমাদের কিছু নাস্তিক বন্ধুরা ইতিহাসের সবচেয়ে ক্রিটিকাল মোমেন্টেই এসে বিভাজনটাকে স্পষ্ট করলো- তারা নিজেরা ‘উগ্র নাস্তিক’দের বিরুদ্ধে একরকম যুদ্ধ ঘোষণা করার মধ্য দিয়ে … এই বিভাজন যখন করা হচ্ছে, তখন আমি এই বিভাজনের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে চাই বলেই- ‘উগ্র নাস্তিক’দের বিরুদ্ধে যারা তাদের বিরুদ্ধে আমার তীব্র অবস্থান প্রকাশ করতে চাই … ফলে, উগ্র নাস্তিকতার বিরুদ্ধবাদীদের বিরুদ্ধে আমার দলভুক্তকরণ- আমার স্বেচ্ছা পছন্দে নয়, মাত্র একটি বাস্তবতা … কথিত উগ্র নাস্তিকদের প্রতি আমার সহমর্মিতা, তাদের বেঁচে থাকার ও মত প্রকাশের অধিকারের প্রতি আমার সমর্থন- ব্যক্তি আমার উগ্র বা ভদ্র হওয়ার সাথে মোটেও সম্পর্কিত না … সমকামীদের পক্ষে কথা বলার সময়ে যখন কেউ জিজ্ঞেস করে- তুমি সমকামী কিনা, তার জবাবে নিজেকে বিষমকামী বলে নিজেকে সেইফজোনে আনতে আমার খুব লজ্জাবোধ হয়- তেমনি, উগ্র নাস্তিকদের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে নিজেকে “উগ্র” মনে করতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছি।
৩। //আশ্চর্য বিষয় হল আমি আপনার ভাষায় ভদ্র হবার কারনে আজকে দেশ ছাড়া। শুধু আমি কেন আমার মত আপনার ভাষায় ভদ্ররা দেশ ছাড়ছে!// ==>> আপনি এবং আপনার মতরা আমার ভাষায় ভদ্র হবার কারনে আজকে দেশ ছাড়া বা দেশ ছাড়ছেন না, বরং সুব্রত শুভ, ফরিদ আহমেদ সহ উগ্র নাস্তিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধকারী অনেকের মতে উগ্র নাস্তিকদের কারণেই আপনারা দেশছাড়া, অভিজিৎ রায়- অনন্ত বিজয়রা আজ না ফেরার দেশে … “নাস্তিক হত্যায় “আমাদের” দায়!” এইখানে হত্যার সাথে দেশ ছাড়ার কথা যুক্ত করতে পারেন! এর সাথে পরিবারের দোকান- ব্যবসা নিয়ে সমস্যা, অব্যাহত থ্রেট- এসবও যুক্ত করতে পারেন … এসবেরই দায়- আসলে কার? আমি শুরু থেকে বলার চেষ্টা করছি- এর দায় যারা খুন করছে- যারা থ্রেট দিচ্ছে- যারা প্রশ্রয় দিচ্ছে তাদের, সরকারের- রাষ্ট্রের … আর সেখানে ‘ভদ্র নাস্তিক হবার কারণে’ দেশ ছাড়া! এসব কি বলেন ভাই?
৪। // এর নাম সেইফ হলে এমন সেইফ কার কাম্য না// ==>> দেশত্যাগের মাধ্যমে সেইফ হওয়াটা কারো কাম্য- এমনটা আমিও মনে করেছি, বা বলেছি?
৫। // ইঁদুর সামলানো মুখ্য ছিল না কখনো , ভবিষ্যতেও হবে না// ==>> ইঁদুর সামলানো যদি মুখ্য কখনো না থাকে এবং ভবিষ্যতেও না হয়- তাহলে বেশ ভালো, কিন্তু আসলেই কি তাই? যুদ্ধ পরিস্থিতির কৌশল নিয়ে কথা বলছেন, কাউকে কাউকে ‘ইঁদুর’ বানিয়ে ফেলছেন, তারপরে আবার ইঁদুর সামলানোর কথাও বলছেন … ফলে ঠিক আশ্বস্ত হতে পারছি না, যদিও চেষ্টা করছি …
৬। //আর বলির পাঠা বানিয়ে বাঁচার চেস্টা করার প্রশ্ন ই আসে না কারন পাঠাটা আমি নিজে// ==>> নিজেকে বলির পাঠা মনে করাটাও সমস্যাজনক … এখানে যখন ‘আপনি’ সম্বোধন করেছি- তখন ব্যক্তি আপনাকে নিশ্চয়ই মিন করছি না … আপনারা যখন বলছেন- যুদ্ধ পরিস্থিতিতে কৌশল নিতে হয়! কৌশল নেয়ার দরকার পড়ে কেন? একটু বেটার অবস্থানে যাওয়ার জন্যে- যুদ্ধে জেতার জন্যে, যুদ্ধে সার্ভাইভ করার জন্যে … তো আপনাদের সেই কৌশলটা কি? যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে জানান দিলেন- যে- সমস্ত কিছুর নষ্টের মূল হচ্ছে এই উগ্র নাস্তিকেরা! এই যে দেখো আসিফ কাবা নিয়া ট্রল করে … এই যে দেখো থাবা বাবা নবীরে নিয়া চটি লিখে … এখন বলেন এই কৌশলের কার কি সুবিধা বা লাভ? যুদ্ধে কৌশলের কথা যখন বলবেন- সেই কৌশলের লাভ ক্ষতির কথাও নিশ্চয় মাথায় আছে, ক্যাল্কুলেশন ছাড়া তো কৌশল হয় না … বলেন, আপনাদের কৌশলে কোন লাভ আর কাদের লাভের কথা ভেবেছেন? এবং ডিরেক্ট ক্ষতি কার? ধরেন, আমি নবীর বিয়া নিয়া পোস্ট লিখেছি- আমি একজন উগ্র নাস্তিক এবং আমি দেশেই থাকি, অন্যদিকে আরেকজন কেবল মানবতাবাদী সাহিত্য লিখেছে, বিজ্ঞান নিয়ে লিখেছে, ধার্মিকদের না খেপিয়ে ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ নির্মাণের চেষ্টা করেছেন এবং উগ্র নাস্তিকদের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ চালিয়েছেন … বলুন তো কে বেশি ভার্ণারেবল?
৭। //অযথা বক্যালাপ না করে নিদ্ধান্তে আসুন। এর থেকে ম্যাচিউর সিদ্ধান্ত এই মুহুর্তে কিছু নেই// ==>> বাক্যালাপকে আমি অযথা মনে করি না, আমি আমার যুক্তি- আমার কথার পাশে দাঁড়াতে শেষ বিন্দু দিয়ে চেষ্টা করি- যতক্ষণ না নিজের ভুল বুঝতে পারছি … আমি পলায়নপরতার ম্যাচিউরিটি কদাচ অর্জন করতে চাই না …
ঝামেলা কি জানেন, আমরা পুর্বপরিচিত নই। আপনার কোন লেখার সাথেও আমার জানাশোনা নেই, এবং এজন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত। সম্ভবত একই অবস্থা আপনারও । তাই আপনি আমার কথার উল্টো মানে বোঝেন, আমিও সম্ভবত তাই। তবুও ফ্রি সময় থাকলে আর একটু খোশগল্প করে আমার চিন্তার সাথে পরিচয় করাবার চেস্টা করতাম। কিন্তু এই নির্বাসিত জীবনে কারো হাতে কাজ ধরিয়ে যে আপনার সাথে দুদণ্ড মত বিনিময় করব সে উপায়ও নেই। এবং এটাও বুঝতে পারছি আমার সংক্ষেপ দিয়ে আপনার অক্ষেপ মেটানো সম্ভব না। তবে এতটুকুই একমত হতে পেরেছি যে, তর্ক করি আর যাই করি, পথটা আমাদের এক, লক্ষ্যটাও এক।
আজ সবে পরিচয় হল, সামনে সময় তো আছেই। হয়তো চা আর টা খেতে খেতে একদিন আলাপের সুযোগও মিলে যাবে। তত দিনে না হয় জানা-বোঝার পর্বটা সেরে ফেলব।
চা-টায়ের নিমন্ত্রণ সাদরে গ্রহণ করলাম … 🙂
ফড়িং, আপনার মন্তব্যটা আমাকে উদ্দেশ্য করে লেখা বলেই উত্তরটা দিচ্ছি, না হলে মুক্তমনায় ফরিদ ভাইয়ের ভূমিকা নিয়ে তাকে ডিফেন্ড করার মত মানসিকতা আমার কোনদিনো হত না। আপনি কী বলতে চাইছেন তার অনেক কিছুই ঠিকমত বোধ হয় বুঝলাম না, সোশ্যাল মিডিয়া এত দেখিনা বলেই হয়তো। ফরিদ ভাইকে আমি ‘ধন্যবাদ’ দিয়েছি বলেও মনে পড়েনা, বরং ‘অনেক ধন্যবাদ’ বোধ হয় একদলকেই দিয়েছি আমি এই লেখায় আর তারা হলো সেই সোশ্যাল মিডিয়ায় কিলাকিলি করা দল। খুব অল্প কথায় দুটো কথা বলবো ফরিদ ভাইকে নিয়ে এবং এর পরে ফরিদ ভাই ছাড়া আর কারো সাথে এ নিয়ে কথা বলবো না। ফরিদ ভাইয়ের সাথে অভিজিতের চেয়েও অনেক বেশী ঘনিষ্ট সম্পর্ক আমার অনেক দিন থেকেই। ফরিদ ভাই যতবার অভিজিতের সাথে তর্কাতর্কি করে মুক্তমনা ছেড়ে দিতে চেয়েছেন ততবারই আমার অনুরোধেই থেকেছেন। সুতরাং ওনাকে আমার কাছে ডিফেন্ড করার কোন প্রয়োজন নেই, ওনার অবদান নিয়ে আমরা সবাই এতটা কৃতজ্ঞ না হলে আমার লেখায় এতগুলো লাইন খরচ করতাম না ওনাকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে। আমরা মুক্তমনারা যদি একে অপরের সাথে আমাদের ভুল ভ্রান্তি সংশয় নিয়ে বিতর্ক করতে না পারি তাহলে আর এত বড় বড় দর্শনের কথা বলে লাভ কী। আর ভুলকে আমি ভুল হিসেবে স্বীকার করতেই পছন্দ করি, ওটার অন্য কোন ফ্যান্সি নাম দিয়ে নয়। ফরিদ ভাইও সেটা করতে পারেন বলেই আমার বিশ্বাস। ফরিদ ভাইকে যারা মডারেট , মুমিন , ছাপা ছাগু, এমন অসংখ্য ট্যাগ দিয়েছেন তারা আমার কোন উত্তরের যোগ্য নন। আমার লেখায় উল্লেখিত আরো অনেক কিছুর মতই তাদেরকে আমি এ নিয়েও কিছু বুঝাতে যাবোনা। তারা এর যোগ্য নন বলেই। ভালো থাকবেন, ধন্যবাদ এই আলোচনায় অংশগ্রহণ করার জন্য।
ধন্যবাদ বন্যাপু আপনার চমৎকার প্রবন্ধের জন্য। এবং ফরিদ ভাইকে জারা মোডারেট আস্তিক ট্যাগ দিয়েছেন তাদের প্রতি আপনার অবস্থান ক্লিয়ার করার জন্য। নিজেদের ভিতরে অনেক সমস্যার সমাধান করা যায় সবকিছু ফেবুতে না আনলেও হয়।
বন্যাপা , প্রথম কমেন্টটা আপনার জন্য ছিল , এই কমেন্টার উদ্দেশ্য আপনি নন। ভুলটা আমার , স্পস্ট করা উচিত ছিল।
যাই হোক , দ্বিতীয় কমেন্টটা করতাম ই না , যদি কিছু কমেন্ট চোখে না পড়ত। আপনার কমেন্টের শেষ চারটা লাইন আমার সকল সংশয়ের উত্তর দিয়ে দিয়েছে । তাই আর কোন কিছুই বলার নেই। আপনাকেও ধন্যবাদ আপনার স্পস্ট বক্তব্যের জন্য।
সুব্রত শুভর পোস্টে করা আলোচনাঃ
সম্প্রতি আসিফ ইস্যুতে নিয়ে আমার অভিমত হচ্ছে- সুব্রত শুভ, চরম উদাস, আরিফ রহমান, আরিফ জেবতিক, হিপনোটিক … থেকে শুরু করে সমস্ত সেলিব্রেটিরা যেভাবে আসিফকে অপোজ করতে গিয়ে “উগ্র নাস্তিকতাই নাস্তিক খুনের কারণ” হিসাবে উপস্থাপন করেছে- তাতে আমি হতাশ! আসিফ চরম আনম্যাচুরড ছেলে, তদুপরি প্রচণ্ড নেম সিকার … কিন্তু যারা আসিফকে নিয়ে এতসব লেখছে- তাদেরকে আমি অনেক ম্যাচুরড মনে করতাম- প্রত্যাশাও ছিল বেশি …
আমার নিজের লেখার স্টাইল, কর্মপদ্ধতি, চিন্তার ধরণ- আলাদা হতেই পারে, আমি স্যাটায়ারের চাইতে যুক্তি তর্ক পছন্দ করি বেশি … ফলে ধর্মকারীতে বেশি সময় কাটাইনি কখনো- সেখানে লেখার আগ্রহও পাইনি … কিন্তু আমার ধরণ যতই আলাদা থাকুক- আমি ধর্মকারীর মত সাইটের, শার্লে হেবদোর মত ম্যাগাজিনের স্বাধীনতার পক্ষে সবসময়েই দাঁড়াবো … কাবাকে নিয়া ট্রল করা, কোরআনের উপর চায়ের কাপ রাখার স্বাধীনতা আমি চাই- আমি সে কাজ করি আর না করি … নবীর বিয়া আর নারীলিপ্সার তথ্য ছাড়া যদি আর কিছু কেউ লেখতে না পারে- না পারুক, সেটা নিয়া এত টেনশনের কি আছে … আসিফের বেশিরভাগ লেখা আমি পড়িনি, সেখান থেকে তেমন কিছু পাওয়ার দেখি না- কিন্তু সবাইকে অভিজিৎ রায়ের মতই হতে হবে- এমন দাবী তো ভাই আনসায়েন্টিফিক … এমনকি আমার নিজের লেখাগুলোও মনে করি- আহামরি তেমন কিছু না … কোন বিষয়ে জ্ঞানার্জন অনেক কষ্টসাধ্য, সাধনাসাধ্য- চাকুরি/ সংসার এমনই ব্যস্ত ও ইনভলভ রাখে যে- সেই কষ্টটা হয়ে যায় মহাকষ্টের মত- ফলে জ্ঞান আমার একেবারেই কম- তার ছাপ লেখায় পড়ে- অনেকদিন তাই লেখতেও পারি না … কিন্তু মনের আনন্দে যা ইচ্ছা যতটুকু লিখেছি- সেটা পড়ার দিব্যি যদি কাউকে না দিয়ে থাকি- তাহলে কেউ কি আমার ওভারল অজ্ঞানতা নিয়ে খোটা দেয়ার অধিকার রাখে? আমি বলছি না, আমার লেখা ধরে ধরে অজ্ঞানতা, ভুল ভ্রান্তি ধরিয়ে কেউ দিতে পারবে না- আমার আপত্তি কোন বিশেষ লেখা ধরে আলোচনা না করে- আমাকে ওভারল অজ্ঞান/ মুর্খ বলাটায় …
আসিফের আমি আমি, আসিফের লেখা চুরি- এসব নিয়ে কথা বলতে চাইলে বলেন … কিন্তু, সব কিছু এক সাথে ধরতে গিয়ে- নিজেদের গ্রাউন্ডটাই নষ্ট করছেন কি না- সেটাও ভেবে দেখতে বলি …
সুব্রত, আমার কথায় কিছু মনে করছেন না আশা করি … দেশে থাকা নাস্তিক ব্লগারদের নিরাপত্তার ব্যাপারে আপনার কনসার্ণের ব্যাপারটা আমার অজানা নেই … যাদের নাম উল্লেখ করেছি- প্রত্যেকের অবদানই আমি স্বীকার করি- কোন না কোনভাবে তারা আমার শ্রদ্ধার পাত্রও … আপনি, আরিফ রহমান, হিপনোটিক, চরম উদাস- এমনকি জেবতিক- সবারই অনেক লেখা, তার চাইতেও বড়- বিভিন্ন লেখার মাধ্যমে সঠিক চিন্তা/ অবস্থান- এর প্রতি আমার শ্রদ্ধা আছে … এবং আপনারা যখন আসিফকে নিয়ে আপনাদের কনসার্ণ তুলে ধরছেন- তখন সেটার কোন প্রেক্ষাপট নেই, আসিফের প্রতি কেবল বিদ্বেষ থেকে এমন লেখছেন- সেটাও মনে করছি না …
আমার কনসার্ণের জায়গাটি- হচ্ছে, আসিফ/ তসলিমা নাসরিন/ আরিফের বালখিল্যতাকে আপনারা আমলে নিচ্ছেন- কেননা আপনারা মনে করছেন, আজকের ধর্মান্ধদের উগ্রতার জন্যে তাদের এসব বালখিল্যতা দায়ী … সেজন্যেই আমি আপত্তি করছি … আপনার লেখাটার শিরোনামঃ “নাস্তিক হত্যায় আমাদের দায়!”- সেই দায় বলতে গিয়ে আপনি রাজীব থেকে শুরু করেছেন, তার লেখা “আমার দেশ” প্রচার করে স্ট্যাবলিশ করেছিল- নাস্তিক ব্লগার মানেই চটি টাইপের লেখক … তারপরে এনেছেন- আসিফ/ আরিফ/ তসলিমার কোরআনের উপর চায়ের কাপ রাখা, আসিফের কাবা নিয়ে ট্রল … আপনার লেখাটাতে আপনি যা বলতে চেয়েছেন তা হচ্ছে- আমি যদি ঠিকভাবে বুঝে থাকি- ক) ধার্মিকদের গালাগালি করে? এবং খ) ধার্মিকদের পবিত্র জিনিসগুলোকে অশ্রদ্ধা করে?- ধর্মান্ধদের ধর্মান্ধতা কমানো তো যাবেই না, বরং এর মাধ্যমে নাস্তিকদের প্রতি বিদ্বেষই কেবল বাড়বে … এবং আপনার লেখার ভয়ংকর কটা লাইন যদি দেখিঃ ///অনেকের কর্মকাণ্ডের প্রতি বিদ্বেষ ঘৃণা তারা হাতের কাছে পাওয়া কোন নাস্তিকদের উপর ঢেলে দেয়। তাই আমি নিরাপদ জায়গায় আছি কিন্তু এর মানে এই না আমি এমন কিছু করব যার জন্য দেশের অনিরাপদে থাকা আরো বিশজন মানুষ মৃত্যু ঝুঁকিতে পরে। আমি জানি অসংখ্য মানুষ দেশ ছাড়তে চাচ্ছে! অসংখ্য মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অফিসে যায়/// … দেখেন, আমি দেশ ছাড়তে চাচ্ছি- আমি মৃত্যু ঝুঁকিতে আছি, তার কারণ – চাপাতি ওয়ালারা এদেশে ঘোষণা দিয়ে নাস্তিক খুন করে পার পাচ্ছে, তার কারণ – এদেশে সরকার, পুলিশ প্রশাসন এইসব খুনের ব্যাপারে উদাসীন বা সমর্থক, তার কারণ- রাষ্ট্র তার আইন কানুন নিয়ে বসে আছে নাস্তিককে শাস্তি দেয়ার জন্যে … অবশ্যই এই কারণে না যে- আসিফ বা আরিফ বা তসলিমা নাসরিন বা হুমায়ুন আজাদ বা ধর্মকারী বা অন্যরা কোথায় কি তথাকথিত “হেটস্পিচ” ছড়িয়েছে … আপনি বা আপনারা যেভাবে বলেছেন- সেটা যে ঐ সব ধর্মান্ধ, চাপাতিওয়ালাদেরই উৎসাহিত করবে, তাদের খুন খারাবিকে- নাস্তিকদের প্রতি তাদের বিদ্বেষকে লেজিটেমেসি দিবে- সেটা যদি না বুঝতে পারেন- তাহলে কিভাবে হবে?
আপনি অভিজিৎ, অনন্ত, বাবুর কথা বলেছেন? নিশ্চিত জানেন- তাদেরকে সিলেক্ট করার দায় আর অন্য কারোরই নেই- সেটা তাদের নিজেদেরই … আপনারা যেভাবে বলেছেন যে, হেট স্পিচের কারণে ধর্মান্ধরা খুন করার জন্যে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছে- ফলে দায় এইসব হেটস্পিচেরই … সেখান থেকেই বলছি, প্রত্যেকেরই এই হেটস্পিচ আছে … অভিজিৎ রায়ের বিজ্ঞান বিষয়ক লেখার বাইরে ধর্ম নিয়া, ইসলাম নিয়া, নবী নিয়া, কোরআন নিয়া মেলা লেখা ছিল, আছে … অনন্তের আছে, ছিল, বাবুরও ছিল … অনন্ত আর বাবু নবীকে নিয়ে স্যটায়ার, কার্টুন শেয়ার দিয়েছিল তাদের পেজ এ- সেগুলো আমি পেয়েছি ধর্মান্ধদের খুন পরবর্তী প্রচারণায় … আপনি আমার নাম বললেন, আস্তিকেরা আমার নাকি আমার নাম নেয় … আসিফের অনেক পোস্টেও আমার কথা এসেছে … আমার মত করে যুক্তি দিয়ে ভদ্র ভাষায় ধর্মের সমালোচনা করার উপদেশবানী মডারেট ধার্মিকরা ঐ সব পোস্টে নিয়মিত দেয় বা দিতো, আজ আপনিও বললেন … আমার এরকম উপদেশ দেখলে হাসি পায় … আমার পুরাতন লেখাগুলোর কমেন্ট যদি দেখাতে পারতাম, বুঝতেন- ধর্মান্ধদের গালি- থ্রেট- কোনটাই কম খাইনি … আল্লাহর লিঙ্গ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছি, নবীর বিয়ে নিয়ে, কোরআন অবতীর্ণ নিয়ে কথা বলেছি, নবীর যুদ্ধ বিগ্রহ নিয়ে কথা বলেছি … এসব যখনই করেছি- এগুলোর কোনটাই হেট স্পিচ ছাড়া কিছু মনে হয়নি ধর্মান্ধদের কাছে … আমি যখন নাস্তিকতা নিয়ে লিখেছি- বাংলাদেশের পরিস্থিতি মাথায় নিয়েই, রিস্কের কথা জেনেবুঝেই লিখেছি … বরং, আসিফদের আগমনে, ধর্মকারীর আগমনে আমার উপর থেকে, অভিজিৎ রায়দের উপর থেকে ফোকাস কিছুটা সরেছে, থ্রেট কিছুটা কমেছে, যেমনটা তসলিমা, হুমায়ুন আজাদের কারণে আহমদ শরীফ, আলী আজগররা কিছুটা হাফ ছাড়তে পেরেছিলেন … কিন্তু আমি মোটেও ভুলতে পারি না যে, আজ যে আরজ আলী মাতুব্বরের কথা বলা হয়- ওনার মত বিশ্বাসীদের আঘাত না করে লেখলে- ধর্মান্ধরা চাপাতি হাতে নিবে না, তাদের মনে করিয়ে দিতে পারি যে, আরজ আলী হচ্ছেন উপমহাদেশের প্রথম নাস্তিক যিনি নাস্তিকতার দায়ে জেল খটেছেন … আহমদ শরীফ, আলী আজগরের কথা যারা বলেন- তাদেরো মনে করিয়ে দেই- এদের নামেও মোল্লারা মুরতাদ ঘোষণার দাবিতে মিছিল করেছে- এদের লক্ষ করে বোমা ছুড়েছে …
যাহোক, বেশি কিছু না- একটা ব্যাপারে আপনাকে এবং আপনাদের চিন্তা করার কথা বলবো- আপনারা আমাদের, যারা আসিফদের মত বালখিল্য নই,যুক্তি দিয়ে নাস্তিক্য প্রচার করি- তাদের নিরাপত্তা ভীষণ উদ্বিগ্ন! কিন্তু এটা কি জানেন- ধর্মকারী, নবযুগ, ফেবুতে এরকম বালখিল্য লেখার লেখক ও তথাকথিত “হেটস্পিচ” দেয়া অনেকেই এখনো দেশেই আছেন বা থাকেন! তাদের নিরাপত্তা নিয়ে কি আমরা এতটুকু চিন্তিত হবো না?
@ফরিদ আহমেদ,
আপনার দুটো আলোচনা দেখে কষ্ট পেলাম …
আপনার কাছে এমনটা আশা করি নি …
১। “অভিজিৎ বা অনন্ত তাদের র্যারশনাল থিংকিং এর জন্য নৃশংসভাবে খুন হয় নি। খুন হয়েছে অন্যের র্যা)ডিক্যাল কর্মকাণ্ডের দায়ভার মাথায় নিয়ে। বাংলাদেশে যখন থেকে ফেসবুক জনপ্রিয় হয়েছে, তখন থেকেই এই সর্বনাশের সূত্রপাত। এক ধরনের উগ্র নাস্তিক এবং ছদ্ম নাস্তিক উগ্র আস্তিকদের সাথে কুতসিত লড়াইয়ে নেমে গিয়েছিলো ফেসবুকে। যার যতো ঘৃণা, সব তারা উগরে দিয়েছে ফেসবুকে, কিছু কিছু ব্লগেও। এই উগ্র নাস্তিক বা ছদ্মনাস্তিকেরা কেউই স্বনামে ওই সব কর্মকাণ্ড করে নি। উগ্র আস্তিকেরা এদের সব কাজের দায়ভার এনে চাপিয়েছে অভিজিৎ রায় বা অনন্ত বিজয়দের উপর। কারণ, এর দৃশ্যমান, আত্মঘোষিত নাস্তিক এবং অনলাইনে র্যােশনাল থিংকিং এর অগ্রপথিক। বেনামী সেইসব উগ্র নাস্তিকদের ওই সব কাজের প্রতিহিংসা মেটাচ্ছে এখন তারা এইসব সহজ টার্গেটদের উপরে।
প্রকৃত নাস্তিক যারা, তাদের আসলে বিপদ এখন সব দিক থেকেই। উগ্র আস্তিক, উগ্র নাস্তিক, ছদ্ম নাস্তিক সবাই-ই তাদের জন্য এখন ভয়ংকর বিপদ হয়ে এসেছে। একদল বদমাশ কল্লা ফেলার জন্য চাপাতি হাতে মাঠে নেমেছে, আরেকদল নিজেদের অজান্তেই আমাদেরকে এদের চাপাতির নিচে ঠেলে দেবার জন্য ওদেরকে উসকে চলেছে প্রতিনিয়ত।”
২/ “আজকে আকাশ মালিক বা সুষুপ্ত পাঠকেরা নিজেদের অদৃশ্যতার সুযোগ নিয়ে যে সব ভয়াবহ মন্তব্য মুক্তমনায় প্রকাশ করছে, সেগুলোর ফল কিন্তু তারা ভোগ করবে না, করবে দেশে আটকে পড়া মুক্তমনা লোকেরা। ওই সব মন্তব্যের স্ক্রিনশট প্রকাশিত হলে, খুনিরা না, সাধারণ মানুষই তাদের পিটিয়ে মেরে ফেলবে। আকাশ মালিক বা সুষুপ্ত পাঠকেরা নিজেদের পরিচয় প্রকাশ করে ওগুলো লিখুক, একটা মন্তব্যও আমরা মুক্তমনা থেকে মুছবো না, কথা দিচ্ছি। … মৌলানা ফরিদ আহম্মেদ যখন কোরান হাতে নেবার বদলে মুক্তমনা হাতে নিয়ে পথ হাটঁছে সবার সামনে, তখন এতো বুঝবান ফুলবানুরা কোন ভয়ে ফুলের আড়ালে লুকিয়ে আছে?”
==>>>
১/ কষ্ট শুধু না, অবাকও হয়েছি … আমাদের মুক্তমনার, অভিজিৎ দা’র হাতেগড়া মুক্তমনার এই হাল কল্পনা করতে পারি না … আমি জানি না- এখন এডমিন প্যানেলে আর কে কে আছে, কিন্তু ফরিদ আহমেদের এই সমস্ত কথাকে একান্ত তার ব্যক্তিগত অবস্থান হিসাবে দেখতে ভালো লাগতো … আগেও দেখেছি- বিভিন্ন বিষয়ে ফরিদ আহমেদ আর অভিজিৎ দা’র দ্বিমত হতো- সেসবকে মুক্তমনার কমন অবস্থান হিসাবে দেখতাম না- ব্যক্তিগত অবস্থান হিসাবেই নিতাম … আজো কি এডমিন প্যানেলের আর কেউ নেই- যে এসে ফরিদ আহমেদের এইসব কথার সাথে দ্বিমত করে জানাবে- এগুলো ফরিদ আহমেদের একান্ত ব্যক্তিগত অবস্থান?
২/ আমি স্বীকার করি যে, হ্যাঁ- এখন আমরা একটা বিশেষ ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি! দেশে থাকা মুক্তমনারা বিপদে আছেন। তাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে- মুক্তমনা ব্লগ কিছু সাবধানী পদক্ষেপ নিতেই পারে। ক্ষতিকর বক্তব্য মুছে দিতেই পারে। এর প্রতি আমার পূর্ণ সমর্থন আছে। আমরা নিজেরাও অনেকেই নানা রকম সাবধানী পথ নিয়েছি, নিচ্ছি … কিন্তু, সেটা যদি হয় ফরিদ আহমেদের উল্লিখিত কারণে- তার চাইতে দুঃখজনক আর কিছু হয় না … এখনো বিশ্বাস করতে চাই- এটা মুক্তমনার অবস্থান নয়, আমি নিজেকে সবসময়ই মুক্তমনার একজন ভেবে এসেছি, এখনো ভাবি- একে যেভাবে চিনি, জানি – মেলাতে পারছি না …
৩/ ফরিদ আহমেদের বক্তব্যের মধ্যে মূলত দুটা ব্যাপার পাই- ক/ অভিজিৎ দা/ অনন্ত’রা খুন হয়েছে- উগ্র নাস্তিক/ ছদ্ম নাস্তিকদের কারণে। এবং এই উগ্র নাস্তিকদের কারণেই নাকি আজকের মুক্তমনাদের জীবন সংশয়ের মুখে! খ/ এই উগ্র নাস্তিকরা নাম পরিচয় গোপন করে- উগ্রতা ছড়াচ্ছে- কাপুরুষের মত, সাহস থাকলে ফরিদ আহমেদের মত যেন তারা স্বনামে মুক্তমনাকে হাতে নিয়ে পথ হাঁটে …
এই দুই ব্যাপারে কিছু বলার আগ্রহবোধ করছি বিধায়, নিজেকে আর আটকে রাখতে পারলাম না …
ক/ প্রথমত, ফরিদ আহমেদ যদি দেখতেন মোল্লা সাইটগুলোতে/ নিউজ পোর্টালগুলোতে অভিজিৎ দা বা অনন্তের খুনের পরপরেই “অভিজিৎ রায় কি লিখতেন”, “অনন্ত বিজয় কি লিখতেন” ধরণের পোস্টে- তাদের কোন বিষয়গুলো তুলে ধরে মোল্লারা প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে- তাহলে বুঝতেন, অভিজিৎ দা, অনন্ত উভয়েই ফরিদ আহমেদের কথিত উগ্র নাস্তিকতা বা “হেট স্পিচ” প্রচার করেছেন! মোল্লারা অভিজিৎ দা’র নবীর বিয়ে, স্ত্রী, সাফিয়া, যুদ্ধবন্দী- এসব নিয়ে লেখা কোট করেছে এবং অনন্তের একটা স্যাটায়ার কোট করেছে …
অভিজিৎ দা বা অনন্ত জানতেন- তারা কি করছেন, তার কনসিকুয়েন্স কি হতে পারে …. ধর্মান্ধ মোল্লারা কি করতে পারে ….. বিশ্বাসের ভাইরাসে অভিজিৎ দা সে কথাই বারবার বলে গেছেন … ফলে, আপনাকে একটু ভেবে দেখতে বলবো- অভিজিৎ দা বা অনন্ত নিজেরাও এরকম চিন্তা করতেন কি না! তা যদি না করে থাকে, তাহলে অনুরোধ করবো- তাদের নাম করে এইসব খুনের দায় উগ্র নাস্তিকদের ঘাড়ে দিয়ে তাদের অপমান করবেন না প্লিজ …
দ্বিতীয়ত, উগ্র নাস্তিক আপনি যাদের বলছেন- যাদের এত ঘৃণার চোখে দেখছেন ও দেখানোতে সায় দিচ্ছেন- তারা যে দিব্যি সুখে শান্তিতে নিরাপদে বাস করছে- এ ধারণা পেলেন কি করে? তসলিমা নাসরিনকে দেশ ত্যাগ করতে হয়েছে, হুমায়ুন আজাদ আমাদের ছেড়ে চলেই গেছেন … হুমায়ুন আজাদ খুনের পরে তারা ছড়িয়েছিল- পাক সার জমিন সাদ বাদ, শুভব্রত তার সম্পর্কিত সুসমাচার- এসব … সেগুলো তাদের চোখে চরম উগ্রই ছিল (হয়তো আপনার চোখেও) … আসিফ মহিউদ্দিনকে খুনের চেষ্টা করা হয় (অল্পের জন্যে বেঁচে যায়) … সবাই উগ্র ছিল … এবং থাবা বাবা- রাজিব! উগ্র ছিল! এদের ব্যাপারেও কি বলবেন? যেহেতু উগ্র ছিল- সেহেতু এদের মারা ঠিকই আছে? আপনার চিন্তা কেবল, ওদের কারণে- মুক্তমনার সাথে থাকায় আপনার জীবন আজ সংশয়ে! এইতো! ??
দেখেন, হুমায়ুন আজাদের পরিণতি দেখেও যারা সেই সাহস করে গেছেন- তারা জীবনের ঝুকি নিয়েই সেটা করেছে … মুক্তমনা এদেশের নাস্তিকদের আস্তানা- এইটা কারো অজানা না … মুক্তমনা সেই রিস্ক নিয়ে মুক্তমনাদের আশ্রয়স্থল হয়ে দাড়িয়েছিল, পাশে দাঁড়িয়েছে, নতুন নতুন মুক্তমনা তৈরি করেছে, এবং তাদের কেউ কেউ উগ্র নাস্তিকও হয়েছে- যেটাকে মুক্তমনা কন্টেইনও করেছে … আজ ক্রান্তিকালের কথা বলে- তাদের কাছ থেকে কি মুক্তমনা মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে? অভিজিৎ দা’র অসংখ্য লেখা দেখাতে পারবো, এই মুক্তমনায় স্থান দেয়া আবুল কাশেম, আলী সিনা, আকাশ মালিকদের লেখা দেখাতে পারবো- যেখানে আপনার সেই কথিত “হেট স্পিচ” আছে … আপনি কি বলতে পারবেন, নতুন যে ছেলেটা এসব পড়ে বড় হয়ে উগ্র নাস্তিক হলো- তার দায় মুক্তমনা অস্বীকার করতে পারবে? জেনে রাখুন, অভিজিৎ দা সবসময়ই উৎসাহিত করে গেছেন … ফলে দোহাই লাগে- উগ্রদের এভাবে রাস্তায় ফেলে দিয়েন না- তাদের পাশে দাঁড়ানোটা আজ সবচেয়ে বড় দরকার …
তৃতীয়ত, আমি মনে করি- এই উগ্রদের প্রতি আপনাদের কৃতজ্ঞ থাকা উচিৎ! কেননা, তাদের কারণেই আপনারা তালিকার বাইরে থেকে যাচ্ছেন। এর আগেও এই উগ্র আর ঠান্ডা/ ভদ্র নাস্তিক বিষয়ে বলেছিলাম … আমাদের দেশে মোল্লারা নজরুল থেকে শুরু করে, আহমদ শরীফ, আলী আসগর, কুদরতে খুদা, এমনকি আস্তিক হুমায়ুন আহমেদরেও নাস্তিক ঘোষণা করে- মাথার দাম ঘোষণা করছে … ফলে বুঝতেই পারছেন- উগ্রতা কারো কারো ক্ষেত্রে পজিটিভ হইছে … হুমায়ুন আজাদ উগ্রতা পরিহার করলে হুমায়ুন আহমেদের কল্লাই নিশ্চিত টার্গেটেড হইতো … কেননা তাদের অনুভূতিতে আঘাত লাগার জন্যে শ্রাবণ মেঘের দিন উপন্যাসের চরিত্রের মুখ দিয়ে বলা “আল্লাহর অংক জ্ঞান কাঁচা” বা “ম্যান ক্রিয়েটেড অড”-ই যথেষ্ট বা কম উগ্র নয় … আজ যাদের প্রতি এত বিষোদগার করছেন- নিশ্চিত জেনে থাকেন, তারা না থাকলে আপনার আয়ান হারসির হেরেটিক বইটির উপরে আলোচনা- কিংবা কেবল শিরোনামের ইসলাম ধর্মের সংস্কারের প্রস্তাবকেই উগ্র মনে করে- আপনাকে তালিকায় ঢুকাতো বা তালিকার “উগ্রদের” শেষ করে দেয়ার পরে- আর অধিক কোন “উগ্র” না পেলে আপনাকেই ঢুকাবে … ফলে কেন কৃতজ্ঞ থাকবেন না?
খ/ এখানে স্বনামে ফিরতে আপনার আহবান কিংবা উস্কানি দেখে বিস্মিতই কেবল হয়েছি … যে উগ্র কথার জন্যে সাধারণ মানুষই পিটিয়ে মারবে বলছেন- সেটা নিজ নামে দিলে এই মুক্তমনা প্রকাশ করবে বলছেন!!!! কি ভয়ানক!
আপনি স্বনামে লেখেন বলে আপনার গর্বে পা মাটিতে পড়ছে না- কিন্তু একটু চিন্তা করে দেখেন তো- বেনামে যারা লেখছে, কতখানি স্বেচ্ছায় বা খুশিমনে তারা বেনামে লেখছে! আজ যে পরিস্থিতি- সেখানে নাস্তিক পরিচয় হাইড করতে বাধ্য হতে হয়, ফলে অনেকেই সাবধানতার জায়গা থেকে পরিচয় আড়াল করে লিখছেন! তাদের ক্রিটিসাইজ করার চাইতে- আপনার কাছে এমন একটা পরিবেশের কথা কি দাবী করা আশা করতে পারি না যে, যেখানে স্বনামে- স্বপরিচয়ে যেকোন কথাই নিরাপদে বলা সম্ভব হবে!
আরেকটা কথা বলে রাখি, আপনি যতই বেনামে লেখকদের নিয়ে হা হুতাশ করুন না কেন- আপনাকে আশ্বস্ত করছি যে, এরাও কেউ অপরিচিত নেই … থাবা বাবাকে যেমনে ঠিক ঠিক আইডেন্টিফাই করেছে- অনেক বেনামী লেখকই আইডেন্টিফাইড! ফলে, উস্কানি দিয়ে স্বনামে আনানোর চেষ্টা করার বেশি দরকার নেই …. অলরেডি দে আর আন্ডার ডেঞ্জার .. (উস্কানির কথাটা এমন করে বললাম- কারণ দুপুরে আপনার কথাগুলো পড়ে মনে হয়েছে- এইসব হাইড এন্ড সিক করে লাভ নাই- নিজদের লোক যখন সেই মোল্লাদের ভাষায় পরিচয় নিয়ে এত কথা বলে- কাপুরুষ প্রমাণ করতে মরিয়া হয়- তাহলে দেই প্রকাশ করে … নিজেকে অনেক কষ্টে সামলেছি … আমি জানি, অনেকেরই এমন অনুভূতিই হবে) …
কোন ভয়ে ফুলবানুরা ফুলের আড়ালে লুকানোর চেষ্টা করছে সেটা কি জানেন না? এই লুকানো কেবল উটের মত কোনরকমে মাথাটা বালিতে গুজার মত সেটাও কি জানেন না? আর এই ফুলবানুরা দেশের ভেতরে থেকে কেবল ফুলের ভেতরে মুখ লুকিয়ে একের পর এক বিরুদ্ধ শ্রোতে এরকম “উগ্র নাস্তিকতা” প্রচার করছে, যেটাতে কেবল মোল্লারা চাপাতি দিয়ে না সাধারণ মানুষেরাই (আপনার মত সাধারণ মানুষ কি?) পিটিয়েই মারবে- তাকে এতটুকু দুসাহসী মনে হয় না?
চাপাতি ঘাড়ে রেখে ভয়ের হিসাব কেন নিচ্ছেন?
দ্বিতীয় অংশের এই আলচনাটিতে আপনার শক্ত অবস্থানটির জন্যেও আপনাকে আরেকবার ধন্যবাদ জানাতে হচ্ছে …! খুব হালকা লাগছে, বুকের ভেতর থেকে গুমোট একটা বোঝা নেমে গেলে যে অনুভূতি হয়- তেমনটাই হচ্ছে … প্রিয় মুক্তমনা, অভিদা’র মুক্তমনা মোল্লা-জঙ্গীদের উত্থানের পেছনে, একের পর এক নাস্তিক হত্যার জন্যে উগ্র নাস্তিকদের দায়ী করে- এমনটা মানা যে কতখানি কষ্টের ছিল- তা বুঝিয়ে বলতে পারবো না …! সেই কষ্ট থেকে মুক্তির আনন্দ হচ্ছে!
বিপ্লব পালের একটা পোস্টে (https://blog.mukto-mona.com/2015/05/16/46343/) ফরিদ আহমেদ এর আলোচনা দেখে অবাক হয়েছিলাম, তার চাইতেও বেশি কষ্ট পেয়েছিলাম! সেখানে বলেছিলাম- “@ফরিদ আহমেদ,
আপনার দুটো আলোচনা দেখে কষ্ট পেলাম …
আপনার কাছে এমনটা আশা করি নি …”
কষ্টের কারণটাও মুক্তমনায় পোস্ট করতে চেয়েছিলাম- মডারেশনে আটকে গিয়েছিল … সেই কমেন্টটা আপনাকে মেইল করেছিলাম (স্নিগ্ধা পাঠিয়েছিল)- কিন্তু যখন আপনি জানিয়েছিলেন, “ফরিদ ভাই সব কিছুই মুক্তমনার মডারেশন টিমে আলোচনা করেছেন সেটা আমি জানি”, তখন মনে করেছিলাম- ফরিদ আহমেদের ঐ স্ট্যান্ডটা পুরা মুক্তমনার ধরে নিয়ে খুব কষ্টে ছিলাম … তারপরে দেখি – সুব্রত শুভ মুক্তমনায় একটা পোস্টই করে ফেলে, যার শিরোনামঃ “নাস্তিক হত্যায় আমাদের দায়!” (https://blog.mukto-mona.com/2015/06/29/46595/) … এই আমাদের মানে- কিন্তু নাস্তিকদের, আরো বিশেষ করে বললে- আসিফ মহিউদ্দিন টাইপের নাস্তিকদের যারা কাবা নিয়ে ট্রল করে, যারা কোরআন শরীফের উপরে চায়ের কাপ রাখে … এরকম ভয়ানক একটা পোস্ট মুক্তমনার মডারেশন প্যানেল ছাড়পত্র দিতে পারে, সেটা আমার কল্পনাতেও ছিল না … শুধু সুব্রত শুভ না- ফেসবুকের যাবতীয় সেলিব্রেটিরা আসিফ ইস্যুতে সোচ্চার হলো- যার বক্তব্য একইরকম, মানে উগ্র নাস্তিকতার কারণেই আজ গোটা দেশে নাস্তিকদের কোন বন্ধু নাই, সকলেই আজ নাস্তিক হত্যার সমর্থক, এবং এইসব উগ্র নাস্তিকদের উগ্রতার দায়ে “ভদ্র” গোছের নাস্তিকদের চাপাতির মুখে পড়তে হচ্ছে … সেই ২০০৭-২০০৮ সালে সামুব্লগে আমাদেরকে ইসলাম বিদ্বেষী ট্যাগ দেয়া আমরা সম্মিলিতভাবে মোকাবেলা করেছিলাম, কেন একটা মুসলিম প্রধান দেশে নাস্তিকদের লেখার বিষয় হিসাবে ইসলাম প্রাধান্য পায়, কেন একজন মুসলিম পরিবারে জন্ম নেয়া নাস্তিকের নাস্তিকতা বিষয়ক লেখালেখির অভিমুখ ইসলাম হয়- এগুলো অনেক আগেই ব্যাখ্যা করা হয়েছিল … কিন্তু অবাক হয়ে দেখলাম- এবারে আমাদেরই অনেক নাস্তিক বন্ধু উগ্র নাস্তিকদের ইসলাম বিদ্বেষে ক্ষিপ্ত … মুক্তমনায় সুব্রত শুভর সেই পোস্ট, এইরকম চিন্তা প্রচারে যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছে এবং আমার জন্যে এটা মেনে নেয়া খুব কষ্টকর ছিল যে- মুক্তমনার নাম এরকম প্রচারণার সাথে আসছিলো …
যাহোক, ফরিদ আহমেদকে করতে চাওয়া কমেন্ট আর সুব্রত শুভর পোস্টে করা আলোচনাটা এখানে আবার কপি করছি … আশা করবো, ফরিদ আহমেদ, চরম উদাস, রায়হান আবির, সুব্রত শুভ প্রমুখ এই ডিবেটে অংশ নিবেন …
এই মন্তব্যটা মুক্তমনার নীতিমালার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় দেখে মুছে দেওয়া হল। — [মুক্তমনা সম্পাদক]
এই প্রতি-মন্তব্যটাও সংগত কারণেই মুছে দেওয়া হলো।
@বন্যা আপা,
আপনার লেখাটার জন্যে কি বলে যে ধন্যবাদ জানাবো, বুঝে উঠতে পারছি না … আপনার প্রতিটা লাইন এমন করে অনুপ্রেরণা দেয়, আজকের এই বন্ধা ও অন্ধকার সময়ে নতুন করে বাঁচার ও লড়াই করার রসদ যোগায়, আপনার সমস্ত পদক্ষেপ, আপনার অফুরান প্রাণশক্তি, ভয়াবহ শারীরিক- মানসিক আক্রমণকে অবিচল মোকাবেলা করে সামনে এগিয়ে চলা- অবাক হয়ে দেখি, খুব খুব শক্তি পাই … আপনাকে অনেক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা … অভি দা আর আপনার সম্পর্ক (অভিদাকে বলেছিলাম টোনাটুনির সংসার), ‘তার ছেড়া’ দুই মুক্ত মানুষের সম্পর্ক- কি অদ্ভুদ রকমের ছন্দময় … আরো একবার গভীরভাবে অনুভব করতে পারছি- এই হঠাত ছন্দপতনের আঘাত যে আপনার জন্যে কতখানি … সেটাকেও তুচ্ছ করে, আঘাতকে একান্ত আপনার রেখে-বাংলাভাষী মুক্তমনাদের পথ দেখাচ্ছেন … শ্রদ্ধা জানাবার ভাষা আমার নাই … আপনার ঐভাবে হাসার ক্ষমতা আমাকে নির্বাক করে, কাঁদায়, শক্তি দেয়, প্রেরণা দেয় …
আপনার লেখার প্রথম অংশ নিয়ে বেশি কিছু বলার শক্তি- সামর্থ্য কোনটাই নেই (এতটুকু লিখতেই কয়েকবার উঠতে হয়েছে, চোখ বারেবারে ঝাপসা হয়ে আসে, কি করবো?) … তারচেয়ে দ্বিতীয় অংশের জরুরি আলাপটিতে ঢুকে পড়ি …
অনেকদিন ধরেই এই লেখাটার অপেক্ষায় ছিলাম । চারিদিক একটু বেশিই কোলাহল হচ্ছে । খুব কষ্ট লাগে , যখন দেখি মক্তমনার প্রথম সারির এক্টিভিস্ট যাদের অসংখ্য ফলোয়ার থাকে , তারাই তাদের বিরুদ্ধে একটু সসমালোচনা বরদাস্ত করে না । বরং বিভাজন বাড়িয়ে মুক্ত মনাদের দুটি দলে ভাগ করে ফেলে । এর জন্য আপনার কাছে এমন সাবলীল জবাব প্রত্যাশা করেছিলাম ।
উগ্র নাস্তিকতা প্রচারে ভাষার প্রয়োগের দিকে অবশ্যই মনোযোগ দিতে হবে বলে আমি মনে করি । একজন বন্যা আহমেদের ভাষা একজন শিক্ষা বঞ্চিত মানুষের মত নোংড়া হবে মুক্ত মনাদের কাছ থেকে প্রত্যাশা করি না । আমার লেখা যদি আমার মা , ভাই, বোন আত্মীয়দের সম্মুখে অশ্লীল ভাষা প্রয়োগের কারনে উপস্থাপন যোগ্য না হয় তবে এমন ভাষাই লেখা বা কমেন্ট যারা করে তাদের সমর্থন আমি করতে পারি না । ভাষার উদাহরণ একটু না দিলে আপনাকে আমার বক্তব্য বোঝাতে পারছি না তাই একটা তুলনামূলক বাক্য ব্যবহার করে দেখিচ্ছি সমর্থনযোগ্য কি না জানার জন্য । যেমন , মহম্মদের এতগুলো বিয়ে করা এবং শিশু আয়শাকে বিয়ে করার যৌক্তিকতা কি ? স্বাভাবিক দৃষ্টিতে বিচার করলে একটা মানুষের ক্ষমতা অপব্যবহার ও যৌনবিকৃত রুচির পরিচয় মেলে ।, একথাটাকে যদি বলা হয় , মহম্মদ লুচ্চা কচি আর সুন্দরী মাল দেখে ঈমানদন্ড খাড়ায়া যাওয়ার কারণে এতগুলো বিয়া করছে । , এধরনের ভাষা যারা ব্যবহার করে ধর্মকে আঘাত করতে চাই , আমি তাদের মুক্ত মনা বলতে রাজি নয় । আমার আরেকটি বিষয় মনে হয়েছে বেশিরভাগ বেনাবেনামে আইডি ধারীরা এই কাজ বেশি করে ।
আমাদের মুক্ত মনারা নিজের বাড়িতে নাস্তিক পরিচয় না দিয়ে ইসলামের অনুসারী হয়ে থাকে ফলে রাজীব , ওয়াশিকুর এদের শেষ যাত্রা ইসলামের সাথে হয় যার বিরুদ্ধে যাওয়ার জন্য তার মৃত্যু এটা একধরনের পপরাজয় বটে । আমরা ঘর ঠিক না করে শুধু অন্যের কাছে নাস্তিকতা প্রকাশে বেশি আগ্রহী এটাও মুক্ত মনার বড় প্রতিবন্ধকতা ।
ধন্যবাদ লেখাটির জন্য ।
বন্যাদি,
অত্যন্ত চমৎকার এবং পরিষ্কার বর্ননা। আমি একেবারেই একমত এবং এটিই হওয়া উচিৎ মুক্তমতের ডেকোরাম। সেই দিনগুলোতে ফরিদ ভাই এর কোন বিকল্প ছিলোনা, কি যে অসীম ধৈর্য্য নিয়ে তিনি রাশ টেনে ধরেছিলেন তার সামান্য কিছুটা আমি বুঝেছিলাম। আমি নিজেও এখনো স্বাভাবিক হই নি ! অনেকটা মূক হয়ে আছি। যে ভাবাদর্শের প্রকাশ এখানে ঘটেছে, যথার্থই তা ছিলো অভিজিৎদার মনস্তত্ত্ব! একবার তিনি নিজেও আমাকে মন উজার করে ঢালতে বলেছিলেন।
আমি নিজেও স্টুয়ার্ট মিলের এ কথার সাথে পুরোপুরি একমত। “প্রত্যেকের নিজ মত ব্যক্ত করার পূর্ণ স্বাধীনতা আছে, তা সেই মত যা-ই হোক না কেন; একজন বাদে পৃথিবীর বাকি সবাই যদি এক মতের অনুসারী হয় তারপরও সেই একজনকে তার মত প্রকাশ করতে দিতে হবে, একজনের পৃথিবীর বাকি সবাইকে নীরব করা যতটা অনৈতিক, বাকি সবার জন্য একজনকে নীরব করাও ততটাই অনৈতিক।”
আর সেই সব দিন গুলোতে মুক্তমনা মডারেশন টিম যে সিদ্ধান্ত গুলো নিয়েছিলো, সেগুলোর কিছু কিছু ক্ষেত্রে আজ প্রশ্ন উঠলেও স্ট্র্যাটেজিক কারণে তার প্রয়োজনও ছিলো। মনে রাখতে হবে যে আমরা যুদ্ধের ময়দানে লড়াইয়ে সামীল। মুক্তমনা কোন পরিস্থিতিতে কি সিদ্ধান্ত নেবে সেটা তো মুক্তমনার মডারেশন টীম পরিস্থিতির উপড়ে নজর রেখেই তা করবে। আমরা যারা এ প্ল্যাটপর্মে দাঁড়িয়ে, তাদের ভাবতে হবে যেনো কোন অবস্থাতেই মুক্তমনা ঝিমিয়ে না পরে, কিংবা অন্ধকারে ডুবে না যায়।
আজ মুক্তমনা কথা বলছে, এতোবড় আঘাতের পরেও মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে, মুক্তমনার এ অবস্থানের নেপথ্যে যাঁরা ছিলেন সেই অমানীষায় , যে সিদ্ধান্তই তাঁরা নেন না কেনো সেদিন, আমার শ্রদ্ধা তাঁদের প্রতি থাকবে। সেই সাথে আপনার এ মতামত আমাদের তথা এ প্ল্যাটফর্মের সবার মানসিক শক্তি এবং ঘুড়ে দাঁড়াবার অসীম সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে। অনেক অনেক ধন্যবাদ। সেই সাথে ভালো থাকার শুভেচ্ছা সহ আমাদের সারথী থাকার আবদারও রইলো।
বিজ্ঞান কখনো ধর্মের পিছনে ছুটেনি বরং ধর্মই বিজ্ঞানের পিছে ছুটছে। বিজ্ঞান দেখে প্রকৃতিকে তাই এটা কোন মতাদর্শ নয়। মতাদর্শ দেখে হয় ধর্মকে না হয় বিজ্ঞানকে। মতাদর্শ যদি বিজ্ঞানকে দেখে তাহলে সেই মতাদর্শ প্রগতির পথে হাটে। বিজ্ঞান চর্চা মতাদর্শ চর্চা নয়। বিজ্ঞান চর্চা নৈর্ব্যক্তিক। বিজ্ঞান চর্চা প্রগতিশীল মতাদর্শের পক্ষে যায় কিন্তু ধর্মীয় মতাদর্শের বিপক্ষে কাজ করে। বিরোধ হয় মতাদর্শের সাথে মতাদর্শের। যুগে যুগে মতাদর্শ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অসির দ্বারাই। এখানে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ অবান্তর। গণতন্ত্র কাজ করে একই মতাদর্শের অভ্যন্তরে। শত্রুর সাথে নয়।
এখন প্রশ্ন হল মুক্ত-মনা কি বিজ্ঞান চর্চা করছে নাকি মতাদর্শ চর্চা করছে? এখন সে যদি বিজ্ঞান চর্চা করে থাকে তাহলে ধর্ম তার বিষয়বস্তু হতে পারে না। তাহলে ধর্ম চর্চা তার বন্ধ করা উচিৎ। আর মুক্ত-মনা যদি কোন মতাদর্শ চর্চা হয় তাহলে বিরোধী মতাদর্শের আক্রমণের জন্য তাকে অবশ্যই প্রস্তুত থাকতে হবে। এই যুদ্ধে ‘বাক স্বাধীনতার’ মায়া কান্না করে কোন লাভ নেই।
নাস্তিকতা বিশেষ কোন মতাদর্শ বহন করে না। এরা সমাজের একটি সংখ্যালঘু অংশ। ধর্মান্ধরা এদের আক্রমণ করে স্রেফ তারা ধর্ম বর্জন করেছে বলে। সমাজের অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ন্যায় এদের অধিকার রক্ষাও প্রগতিশীলদের কাজ। মুক্তমনা ব্লগাররা একটি মতাদর্শের প্রচার করে থাকে। কিন্তু এই মতাদর্শ ধারণকারী কোন সমাজকাঠামো তাদের আদর্শ এবং সেখানে কোন কোন চিন্তার মানুষগুলো থাকতে পারবে, এই ধরণের কোন লক্ষ্য তাদের নেই। লক্ষ্যহীন যুদ্ধে প্রান হারানোর সম্ভাবনাই বেশি।
অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক এবং যথার্থ বলেছেন বন্যা আপু । সাধুবাদ জানাই । আমার র্পূণ সমর্থন থাকলো । ধন্যবাদ এবং শুভকামনা ।
নাস্তিকদেরকে উগ্র বলার আগে একটা ব্যাপার চিন্তা করা উচিৎ – মাত্রা। উগ্র মৌলবাদীর পক্ষে কী সম্ভব বা কী করে বেড়ায়, আর উগ্র নাস্তিক কী করে বেড়ায়, তাদের উগ্রতার মাত্রা কীরকম, সেটা বিচার করা উচিৎ। যদি মৌলবাদী উগ্ররা মৌলবাদ বুকে নিয়ে বোমা মেরে বেড়ায়, চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে লাশ ফেলে বেড়ায়, পৃথিবীর সুউচ্চ ভবনে বিমান তুলে দিয়ে গণহত্যা করে বেড়ায় – সেই “উগ্র” শব্দটা নাস্তিক শব্দের আগে ব্যবহারের কোনো অধিকার নেই কারো।
খুনী, গণহত্যাকারী, হুমকি প্রদানকারী – এগুলো যদি উগ্রের বৈশিষ্ট্য হয়, তাহলে কোন মাত্রাজ্ঞানে নাস্তিকদেরকে উগ্র বলা হচ্ছে? শুধুমাত্র লজিক্যাল সমালোচনা করার কারণে? সহজ জিনিস না বোঝার প্রতি আমাদের এই আচরণ, আমি কোনোভাবেই জাস্টিফাই করতে পারি না। ধরলাম, ওরা যুক্তিহীন তুচ্ছতাচ্ছিল্য বা অপমানকে উগ্রতা বলছে? কিন্তু এটা কিভাবে উগ্রতা হয়, কিভাবে এটা খুন করা বা বোমা মারার বিশেষণে বিশেষায়িত হয়?
আমি ব্যক্তিগতভাবে আজাইরা অপমানের ধার দিয়ে যাই না, কারণ আমি মনে করি না এটা দিয়ে কিছু অর্জিত হবে। আমি বিজ্ঞানের লোক, এবং বিজ্ঞান দিয়ে ঈশ্বরের অস্তিত্ব ব্যাখ্যা করা যায় না বলে আমি নাস্তিক। উগ্র নাস্তিকতার প্রসংগ যখন প্রথমবার উঠেছে, আমি তখন তাই কিছুটা ডামাডোলের ভেতর দিয়ে গেছি। অবশেষে বুঝেছি – যারা খুন করে, তারা তো আসলে এটা দেখে না যে কে যুক্তি দিয়ে কথা বলছে, কে তাচ্ছিল্য ভরে যুক্তিছাড়া অপমান করছে। তারা এটা বোঝে না যে, যুক্তিপূর্ণ কথাবার্তা বা যুক্তিহীন অপমান কোনোটাই খুনের সমতুল্য হতে পারে না।
বাংলাদেশিদের সামনে এখন নতুন পথ হাজির করতে হবে – এরা কিছু একটা আঁকড়ে ধরেই বাঁচতে চায়। তাদেরকে সেই উপকরণ দিতে হবে। আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাস – সেই উপকরণ হচ্ছে বিজ্ঞান। That is the thing we can cling on to and let them cling on to.
আমি ঠিক নিশ্চিত না, ব্যাপারটা ঠিক ধরতে পারছি না। এই অল্প কয়েকদিন আগেই অমুকে উগ্র নাস্তিক, তমুকের উগ্র নাস্তিকতার জন্যেই অভিজিৎ রায় মারা গেছেন, এই সব লিখে বেড়ানো লোকজন আপনার লেখাটি শেয়ার দিচ্ছে, ভূয়সী প্রশংসা করছে। আমি ঠিক ধরতে পারছি না এরা কোন প্রজাতির! কালকেই তারা কাউকে না কাউকে আবারো উগ্র নাস্তিক বলবে, নাস্তিকদের ওপর আক্রমণের জন্য লেখালেখিকেই দায়ী করবে। বলবে, অমুকে সেই কার্টুন কেন ছাপলো, তমুকে মুহাম্মদের সমালোচনা কেন লিখল, সে ধর্মকে কেন ব্যাঙ্গ করলো! এসব লেখার দরকার কী? আবার একই সাথে, এই লেখাতে এসে সমর্থন জানিয়ে যাবে। ধর্মেও আছে, জিরাফেও আছে, এই প্রজাতির আহাম্মকদের ব্যাপারগুলো বোঝা খুবই মুশকিলের। এদের গাছেরটাও খেতে হবে তলানিরটাও কুড়াতে হবে।
@ আসিফ ভাই,
আমি ঠিক নিশ্চিত না, ব্যাপারটা ঠিক ধরতে পারছি না। এই অল্প কয়েকদিন আগেই অমুকে উগ্র নাস্তিক, তমুকের উগ্র নাস্তিকতার জন্যেই অভিজিৎ রায় মারা গেছেন………………………………..।
একদম চোস্ত কথা বলেছেন। ফরিদ আহামেদের লেখাকে পুজি করে আমু ব্লগে ‘দেশিপোলা’ নামে এক ছেমড়া বহুদিন কান ঝালাপালা করেছে। এজন্য পোলা/টোলা কে দোষ দিয়ে কি হবে! সরঞ্জাম যখন এখান থেকেই সাপ্লাই দেয়া হয়।
কারে শুধাই মনের দুঃখ গো………………………………
একশ্রেণীর মুসলমান নাস্তিকের জন্ম হয়েছে অতি সম্প্রতি। তারা দাবী করছেন, নাস্তিক হন ভাল কথা কিন্তু ইসলামকে টোকা দেয়া যাবে না। মুহাম্মদের সম্মান রেখে কথা বলতে হবে, আল্লাহকে ভয় করে নাস্তিকতা নিয়ে লিখতে হবে, কাবার সম্মান দিয়ে আলাপ করতে হবে, কোরানকে চুমু দিয়ে মাথায় তুলে সমালোচনা করতে হবে। অদ্ভুত লাগে, এরা কীভাবে নিজেদের চরিত্র পাল্টে ফেলছিল। গিরগিটির মত রঙ পাল্টানো এইসব ধান্ধাবাজদের মুখে এক প্রচণ্ড থাপ্পড় হয়ে থাকুক এই লেখাটি। যখন যেদিকে লাইক, যখন যেদিকে সমর্থন, সেদিকেই হেলে থাকা হয়তো বাঙালির চরিত্রই। অভিজিৎ মরেছে, এরপর থেকে অভিজিৎ যে একজন ভদ্র নাস্তিক ছিল, তা প্রমাণের জন্য উঠে পড়ে লেগেছিল বিশাল সংখ্যক ‘মুক্তমনা’ নামধারী। এই বিভাজন খুব পরিষ্কারভাবে ডিভাইড এন্ড রুল থিওরি। মুক্তমনাদের লেখার যেহেতু জবাব দেয়া যাচ্ছে না, তাদের সাথে যুক্তিতে কুলিয়ে ওঠা যাচ্ছে না, তাই নানান কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে। সেগুলো বাইরের লোক করছে না, ভেতরের লোকজনই চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে চিনাচ্ছে কারা উগ্র নাস্তিক, কাদের কল্লা ফেলা ফজর।
অনবদ্য লেখাটির জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, মুক্তমনার মডারেশন পলিসি না পাল্টানো পর্যন্ত মুক্তমনায় আর কোন মন্তব্য লিখবো না। আজকে তার ইতি হলো। বন্যা আপাকে ধন্যবাদ এবং অভিনন্দন এরকম শক্তভাবে সব সামলে নেয়ার জন্য।
কয়েকদিন আগের একটা স্ট্যাটাস এখানে পোস্ট করার লোভ সামলাতে পারছি না।
শরীয়ত সম্মত সহি নাস্তিক হোন, লাইনে আসুন-
থাবা বাবা ওরফে রাজীব হায়দার যখন জবাই হলেন, তখন হুট করে কার মুখে জানি শুনলাম, রাজীব তো আসলে নাস্তিক ছিল না। সে ছিল বিজ্ঞানমনষ্ক, সেক্যুলার, জামাত বিরোধী। এই কথা শুনে আমি আরেকটু হলেই হার্ট ফেইল করে ফেলতাম। রাজীবকে ব্যক্তিগতভাবে দীর্ঘ সময় ধরে চিনি। শেষ এক বছর বাদে প্রায় পাঁচ বছরের সম্পর্ক। রাজীব নাস্তিক না, এই কথা শুনলে রাজীব হয়তো নিজেই আনসারুল্লাদের ডেকে নিজের গলা পেতে দিতো। একজন মুক্তচিন্তার নাস্তিকের জন্য এই ধরণের কথা অত্যন্ত অপমানজনক, তার আত্মসম্মানের ওপরে আঘাত। মৃত্যু কী তাকে সুশীলে পরিণত করলো? তাকে হত্যা করাটা যে অমানবিক, ভয়াবহ, বাক-স্বাধীনতার ওপর আঘাত, তা প্রমাণের জন্য কী তাকে ধার্মিক প্রমাণ করা জরুরী ছিল? তার পরিবার থেকে দাবী করা হল সে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, রোজা রাখে। অর্থাৎ তাকে ধার্মিক প্রমাণের মাধ্যমে এটা বোঝানো, নাস্তিক জবাই হলে সমস্যা নাই, কিন্তু রাজীব তো নাস্তিক ছিল না। গণজাগরণ মঞ্চ থেকেও বলা হল, সে নাস্তিক ছিল না! রীতিমত ধার্মিক মুসলমান ছিল! আমি তখন বোকার মত সব দেখছি। কী হচ্ছে এসব!
মজার বিষয় হচ্ছে, হুমায়ুন আজাদের মৃত্যুর পরে একজনার মুখে এরকম শুনেছিলাম। একজন বলেছিল, হুমায়ুন আজাদ তো নাস্তিক ছিলেন না, তিনি কখনো ধর্মকে আঘাত করে বা কটাক্ষ করে কিছু লেখেন নি। তিনি ছিলেন ভাষা বিজ্ঞানী। উনাকে নাস্তিক বলাটা ঠিক না! আহমদ শরীফ সম্পর্কেও একই কথা শুনেছি, উনি নাকি ধর্মকে আক্রমণ করে কিছু বলেন নি। কী অদ্ভুত!
এটা সত্য যে হুমায়ুন আজাদ ভাষা বিজ্ঞানী ছিলেন, কবি ছিলেন, সাহিত্যিক ছিলেন, কিন্তু নাস্তিকও তো ছিলেন। যেন তেন নাস্তিক না, তার সময়ের প্রেক্ষিতে সব চাইতে ডাকসাইটে নাস্তিকই ছিলেন। শুভব্রত, তার সম্পর্কিত সুসমাচার যে বুঝে পড়েছে, সে জানে, মুহাম্মদের সত্য ইতিহাস এভাবে এর আগে কেউ লেখে নি। মুহাম্মদ এবং যীশু, এই দুই ধর্ম প্রচারকের সব কিছু একদম পরিষ্কারভাবে দেখানো হয়েছে বইটাতে। ইসলামী মৌলবাদীরা সাধারণত নির্বোধ হয়, তাই বইটাতে কী লেখা সেভাবে বুঝে উঠতে পারে নি। কিন্তু সেই বইতে যেভাবে দড়ি দিয়ে হাত পা বেধে ধর্মপ্রচারক পয়গম্বর নবী রাসুলদের প্যাঁদানো হয়েছে, তা তো এক ইতিহাস! ধর্মীয় অনুভূতিকে পিটিয়ে তক্তা করার এক রক্তারক্তি কাণ্ড! তার সাথে ব্যক্তিগতভাবেও কথা বলেছি। দেখেছি-শুনেছি, তিনি কী ভয়াবহ নাস্তিকই না ছিলেন! কিন্তু তার বইটই পড়তে কী হুমায়ুন আজাদ কাউকে বাধ্য করেছে? গলায় ছুরি ধরে বইটই পড়তে বলেছে? তা তো নয়। তিনি তার মত লিখেছেন, যার খুশি সে পড়বে, যার ইচ্ছে নেই সে পড়বে না। ফেয়ার এনাফ! আপনার অনুভূতি স্পর্শ কাতর হলে তা এড়িয়ে যাবেন। তা পড়বেন না। লেখক কেন এমন লিখেছে, লেখক কীভাবে লিখবে, তা নির্ধারণের দায়িত্ব আপনাকে দেয়া হয় নি।
ইদানীং দেখছি, অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর বাবু, অনন্ত বিজয়কে খুব জোর করে বিজ্ঞানমনষ্ক লেখক বানাবার চেষ্টা চলছে। ভদ্র নাস্তিক বানাবার তাল করা হচ্ছে। তারা যে নাস্তিক ছিলেন না, একটু আধটু নাস্তিক হলেও তারা ছিলেন ভাল নাস্তিক, অর্থাৎ তারা ধর্মকে আক্রমণ করতেন না, ধর্মপ্রচারকদের সমালোচনা করতেন না, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করতেন না, এসব ইনিয়ে বিনিয়ে বলা হচ্ছে। অদ্ভুত! তাদের সৌভাগ্য যে তারা বেঁচে নেই। বেঁচে থাকলে এরকম অপমান তারা কীভাবে হজম করতে বলা মুশকিল। আমি মরে গেলে আমাকেও হয়তো শরীয়ত সম্মত সহি নাস্তিক বানিয়ে দেয়া হতো! বলা হত, আমি কখনো কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করি নি!
রাজীব, অভিজিৎ, ওয়াশিকুর, অন্তত আর নেই। তাদের থেকে ধর্ম এখন আপাতদৃষ্টিতে নিরাপদ। তারা আর কিছু লিখবেন না। তাই তারা হয়ে উঠছেন সহি নাস্তিক। অনেক মোল্লাও এখন রীতিমত তাদের ভাল নাস্তিক বলে সার্টিফিকেট দিয়ে দিচ্ছেন। এই রাজনীতি কেন এবং এর উদ্দেশ্যে কী, সেটা বুঝতে রকেট সায়েন্টিস্ট হবার দরকার হয় না।
লিসেন এসহোলস, নোংরা, অযৌক্তিক, অমানবিক, আহাম্মকী ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করাই একজন নাস্তিকের কাজ। মানব সমাজের জন্য হুমকি স্বরূপ সকল মতাদর্শ নিয়ে কটাক্ষ করা, রসিকতা করা, ঠাট্টা করা, সমালোচনা করাই নাস্তিকের কাজ। সেটা হতে পারে রিচার্ড ডকিন্সের মত, সেটা হতে পারে জর্জ কারলিনের মত। ডকিন্সের সাথে যতবার দেখা এবং কথাবার্তা হয়েছে, মাঝে মাঝেই রসিকতা করে এমন কথা বলতে শুনেছি, যাতে তাকে শরীয়ত সম্মত সহি নাস্তিক বলার কোন উপায় নেই!
নাস্তিকদের ভেতরে কোন শিয়া সুন্নি সালাফী ওয়াহাবী মোডারেট নাস্তিক নেই। দুই ধরণের নাস্তিক রয়েছেন, দুইদলই মনে করেন ধর্ম মানব সমাজের জন্য ক্ষতিকর। এদের একদল মনে করেন ধর্ম এমনিতেই ধ্বংস হয়ে যাবে সময়ের প্রয়োজনে, তার জন্য কিছু করার প্রয়োজন নেই, আরেকদল মনে করেন ধর্মকে ধ্বংস করতে কাজ করতে হবে। লেখালেখি করতে হবে। ধর্মকে আঘাত করতে হবে। সমালোচনা এবং কটাক্ষ করতে হবে। যারা দ্বিতীয় দলের, তারা সকলেই সমান। এদের মধ্যে কেউ বড় নাস্তিক বা ছোট নাস্তিক নেই। যে যার সামর্থ্য অনুসারে ধর্মের বিরুদ্ধে লেখালেখি করে, ধর্মকে আঘাত করে, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে। এখানে অভিজিৎ রায়ও যা, ওয়াশিকুর বাবুও তা। সুষুপ্ত পাঠকও যা, ওমর ফারুক লুক্সও তা। যে যে যার যার মত করে ধর্মের বিরুদ্ধে লেখালেখি করে, করবে।
আপনার তা পছন্দ না? আপনার অনুভূতি খুব কোমল? ফেয়ার এনাফ! তাদের প্রোফাইলে উঁকিঝুঁকি মারা বন্ধ করুন! তাদের লেখা পড়া বন্ধ করুন। ভাল হয়, ইন্টারনেট ব্যবহারই বন্ধ করুন। কারণ ইন্টারনেট জুড়ে ছড়িয়ে আছে অজস্র ধর্ম অবমাননামূলক বিষয়।
@ আসিফ ভাই, যথার্ত বলেছেন। ধন্যবাদ।
ইদানিং বাজারে একটি কথা ছেড়ে দেয়া হয়েছে- “গোঁড়া নাস্তিক”!!?? সম্পতি তার কিছুটা মহামারি লেগেছ এমনকি আমাদের মুক্তমনায়। নাস্তিক যদি গোঁড়াই হবে তো নাস্তিকের সঙ্গাঁ কি? বিশেষ বস্তুতে চোখবুজে মাথা গুজে রাখা??
৭১ টিভির এক টক শো’তে দেখা গেল- ব্যাক গ্রাউন্ডে অভি’দার বিশাল পোটরেইট। এক আলহাজ্জ নাস্তিক বক্তা অভিজিৎ হত্যা কান্ড কে নিষ্ঠুর, বর্বর, পৈচাশিক, মধ্যযূগীয়……………………. যারপরনেই হাবিজাবি ভাষায় নিন্দা জানালেন। পরক্ষনে একটু নড়েচড়ে বল্লেন- সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মানুভুতিতে আঘাত দেয়া ঠিক না। আরে না, না……….!! অভিজিৎ ধর্মের বিরুদ্ধে কিছু বলেন্নি। তিনি ছিলেন বিজ্ঞান লেখক। এরপর হজরত ওমরের উদাহরন টেনে আনসারউল্লাকে এক হাত নিলেন তিনি।
চলমান দ্বন্দ্বগুলোর গায়ে আমরা আসলে কি ধরণের লেবেল সাঁটি তার ওপরও আলোচনার দিক এবং পরিণতি নির্ভর করে।
ধন্যবাদ বন্যাপা লেখাটির জন্য। অনেকগুলো প্রসঙ্গের অবতারণা হয়েছে এই লেখায়। আশা করছি এখানকার চিন্তার ঘাত প্রতিঘাত থেকে ঐক্যমত্যের কিছু দিকও স্থির হবে অচিরেই। আশা করছি এখানকার মিথষ্ক্রিয়া থেকে স্পষ্টতর হবে:
১) ‘মুক্তমনা’ শব্দটার মানে। যে ‘মুক্তি’ এই শব্দের ভেতর নিহিত, তা ঠিক কিসের থেকে মুক্তি। কিছু বিষয়ে গোঁড়ামী থেকে মুক্ত হয়েও অন্য কিছু বিষয়ে একজন মুক্তমনার পক্ষে গোঁড়া আবদ্ধ’বা প্রেজুডাইসড হওয়া কি সম্ভব একজন প্রকৃত মুক্তমনার পক্ষে?
২) মুক্তচিন্তা কি কেবলই অধিকারের? দায়িত্ববিচ্ছিন্ন অধিকার বলে কি কিছু থাকা সম্ভব?
৩) মত প্রকাশের স্বাধীনতা আসলে কি জাতীয় অধিকার, এর প্রয়োগ-ব্যাপ্তি এবং অপ্রযোজ্যতার দিকগুলো আসলে কি? বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সেই সীমারেখার সম্ভাব্য জায়গাগুলো (যেমন: গণহত্যা অস্বীকার ইস্যু, ইতিহাস বিকৃতি) ঠিক কি কি হতে পারে? তা নির্ধারিত হওয়ার জন্য যে ধরণের কনসেনসাস দরকার তা অর্জনের পথে আমরা ঠিক কতোটা এগিয়েছি কিংবা এগোতে পারি?
সাথে আরও কিছু প্রশ্ন উত্থাপন করছি:
ক) বাংলাদেশে সাম্প্রতিক লেখক নিপীড়ন ও হত্যার বিষয়গুলোকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে পশ্চিমের প্রচার মাধ্যমগুলো এবং লিবারেল সংগঠনগুলোর মধ্যে এই সংকটকে কেবলই ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সংকট’ হিসেবে প্রচারের একটি প্রবণতা লক্ষ্য করছি। এতে পরিস্থিতির প্রকৃত দ্বন্দ্বগুলো আসলে ঠিক কতোটা উঠে আসছে? আদৌ উঠে আসছে কি?
খ) একইভাবে চলমান এই নিরাপত্তাহীনতার আবহকে দেশের ভেতরের একটি সুশীল শ্রেনী প্রচলিত নির্বাচন ও গণতন্ত্রের সংকটজাত ফলাফল হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছেন। তা বর্তমান পরিস্থিতির কতোটা সত্যনিষ্ঠ ব্যাখ্যা?
গ) দেশের ভেতরকারই কথিত সুশীল শ্রেনীর কিছু আলোচক আবার খোদ শাহবাগ আন্দোলনকেই ‘রক্তপিপাসু’ আখ্যা দিয়ে বলার চেষ্টা করছেন যে শাহবাগ আন্দোলনের কর্মীদের এই কথিত রক্তপিপাসা (যেহেতু শাহবাগ ফাঁসীর দাবী করেছে সেহেতু এই অপবাদ) থেকেই নাকি ইসলামপন্থীরাও রক্তপিপাসার (চাপাতি চালানোর) দীক্ষা নিয়েছে! তাদের এই চিন্তায় আমরা কোনো মৌলিক সমস্যা দেখতে পাই কি না?
ঘ) ইন্টারনেট এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যাপ্তির এই যুগে প্রোপাগান্ডার বিপরীতে মতপ্রকাশের অধিকারের ভারসাম্য আনার বিষয়ে আমাদের ভাবনাগুলো আসলে কি? এই ভারসাম্যটুকুকে আমরা কি আদৌ জরুরী মনে করি? এখানে বাস্তব সমস্যাগুলো কি?
ধন্যবাদ।
রায়হান রশিদ, বাংলাদেশে লিবারেলিজমের ঐক্যমত্যের প্রতিবন্ধকতায় আপনি একেবারে আসল প্রশ্ংুলি করেছেন। প্রশ্ন যখন করেছেন তখন কিছু কিছু উত্তরও আপনার কাছে আছে নিশ্চই। আলোচনা শুরু করতে হলে আপনি নিজেই কিছু উত্তর দিন না।
রায়হান রশীদ, প্রশ্নগুলো গুরুত্বপূর্ণ; এ নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত। সফিকের মত আমিও এ নিয়ে আপনার মতামত জানতে আগ্রহী।
@সফিক, @মনজুর মুরশেদ,
এই বিষয়গুলো নিয়ে আমার নিজের ভাবনাগুলোও খসড়া পর্যায়ে। সাংগঠনিক আভ্যন্তরীন ফোরামগুলোতে এ নিয়ে আলোচনা চলছে বেশ কয়েক মাস হল। একটু সময় বের করে শেয়ার করার চেষ্টা করবো, যাতে প্রকাশের অস্পষ্টতা যতটা সম্ভব কমিয়ে আনা যায়। তাতে বাকিদের মতামত থেকেও উপকৃত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে নিশ্চয়ই।
ধন্যবাদ।
রায়হান, কাল আপনাকে বলেছিলাম আজ সকালে উত্তর দেব, বোকা আইভানের মত রাত পোহালে বুদ্ধি খুললে। বুদ্ধি খুলেছে, কিন্তু একটু অন্যভাবে – বুঝলাম এগুলোর উত্তর এত সংক্ষিপ্তভাবে দেওয়া সম্ভব না। আর আপনার প্রশ্নগুলো ঠিকমত বুঝেছি কীনা সেটা নিয়েও প্রশ্ন আছে। আগের প্ল্যান অনুযায়ী আগে এ নিয়ে বিস্তারিত আলাপ করি চলুন, তারপর না হয় আপনাকে উত্তর দেব।
২০১৩ ফেব্রুয়ারী। ঢাকার রাজপথ তখন উত্তাল। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের আর পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখা দেশের প্রতিটি তারুণ্যের হৃদয়ে তখন ঝড়। শাহবাগ আন্দোলন আর গণ-জোয়ারের স্বার্থে, যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবী আদায়ে তখন সাময়িকভাবে নাস্তিকতা বিষয়ে লেখা বা ধর্মের সমালোচনা করা বন্ধ রেখেছিলাম। তখন চিন্তায়, বুকে আর লেখায় শুধুই শাহবাগ। আমিও তখন শাহবাগী ব্লগার।
সেই সময়ে প্রাসঙ্গিকভাবে কোনো একটি আলোচনায় ইসলামের নবী মুহাম্মদের নামের পর ”(সাঃ)” শব্দটি লিখিনি। জ্ঞান হবার পর থেকেই আমি নবী মুহাম্মদের নামের পর ”(সাঃ)” শব্দটি ব্যবহার করি না। আমি যাকে নবী বলে মানি না, যার প্রচলিত ধর্ম আর আদর্শকে আমি অনুসরণ করিনা, তার নামের পর ”(সাঃ)” ব্যবহার করার প্রশ্নই আসে না। কিন্তু এই কথাটি সেদিন আমি আমার নাস্তিক, প্রগতিশীল, এবং শাহবাগ আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত অনেক বন্ধুকেও বোঝাতে পারিনি। আমি ”উগ্র নাস্তিক” ট্যাগ খেয়ে গেলাম। তারা বিশ্বাস করে- নবী মুহাম্মদের নামের পর ”(সাঃ)” ব্যবহার না করা নাস্তিকরা একেকজন উগ্র নাস্তিক। যদিও আমার হিসেবে নবী মুহাম্মদের নামের পর ”(সাঃ)” ব্যবহার না করা মানুষের সংখ্যা বিশ্বে ৫৫০ কোটি।
কথাগুলো এজন্য বললাম যে, ”উগ্র নাস্তিকতা” বিষয়টি আজ আবার আলোচনায় এসেছে। আগেও এসেছে, সব সময়ই ছিল। আমি আসলে ”উগ্র নাস্তিকতা”র সংজ্ঞাটি জানার জন্যই লেখাটি লিখছি। যারা ”উগ্র নাস্তিক” শব্দটি ব্যবহার করেন, অথবা নাস্তিকদের ”উগ্র নাস্তিক” বলে ট্যাগ দেন, অথবা নাস্তিকতাকে ”উগ্র নাস্তিকতা” বা ”ভদ্র নাস্তিকতা”য় ভাগ করেন, তারা দয়া করে আমাকে বলবেন, ”উগ্র নাস্তিক” এর সংজ্ঞাটা কি? ঠিক কি কি বৈশিষ্ট্য থাকলে একজন নাস্তিক ”উগ্র নাস্তিক” হয়?
কিছু লেখার ভাষা অশ্লীল হয়ে যাচ্ছে । আমি আমার বাড়ীতে ধর্ম নিয়ে আলোচনার সময় শুধু মহম্মদ শব্দটা উল্লেখ করি এটাই স্বাভাবিক । কিন্তু লেখার ভাষাটা যদি এমন হয় খাঃ পুঃ লুচ্চা মহম্মদ কচি মালের লোভ সামলাতে না পেরে তের বিয়ে করেছে ।
এই ভাভাষার নাস্তিক কে কি বলবেন ? দ্বন্দ্ব শুরু এদের দ্বারা । আমি এমনতর অশ্লীল ভাষা সমর্থন করি না । আসিফ মহিউদ্দিনের থাপ্পর শব্দের প্রয়োগ অপছন্দনীয় । এইসকল শব্দের ব্যবহার মনস্তাত্বিক দ্বন্দ্ব তৈরি করে । মত সমর্থন না করার অধিকার অস্বীকার করলে ধর্মের সাথে মুক্তমনার পার্থক্য নিরুপন দূরহ হয়ে পড়ে যা আমার মনে হয় কাম্য নয় । আর একজন বড় মাপের মানুষ তাকে নিয়ে একটু সমালোচনা করার জবাবে ফেসবুকে দুইটা গ্রুপ তৈরি করেছে উনি নিজেই । উনার কাছে এমনটি প্রত্যাশিত নয় । বন্যার স্টেটমেন্টের অপেক্ষায় ছিলাম আশাহত হয়নি । আমরা সাধারণ মানের নাস্তিকেরা বড় মাপের নাস্তিকদের মধ্যে বিভাজন দেখতে চাই না । দ্বিমত হবে কিন্তু বিভাজন নয় এটা আপনাদের কাছে প্রত্যাশা । ভাল থাকুন, আর সতর্ক থাকতে অবহেলা করবেন না ।
গত কয়েকমাস ধরে আমাদের চারদিকের ঘটতে থাকা বিষয়গুলো নিয়ে অসাধারণ পর্যালোচনা । ঘটনাপ্রবাহের পুনরাবৃত্তির কারণে বিষয়গুলো সাধারনের কাছে, মাস মিডিয়ার কাছে এক ঘেয়ে হয়ে উঠছে [ খুব কষ্টের সাথেই বলছি এক ঘেয়ে হয়ে উঠছে ] ।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
==============
বাংলাদেশে একসময় ধর্ম বা ধর্ম বিষয়ে (এখনকার মাপকাঠিতে সংবেদনশীল) বিষয়গুলো নিয়ে যতটা সামাজিক গন্ডিতে যতটা খোলাখুলি আলোচনা করা যেত, আজকাল আর যায় না । রাজনৈতিক দলগুলোর একসাথে গা থেকে স্যেকুলারিজম ঘষে তোলার প্রতিযোগিতা এর পেছনের গুরুত্বপূর্ন একটা কারণ । তবে অন্য দলগুলোর চেয়েও এর দায় ক্ষমতাশীল আওয়ামিলীগের উপর বর্তায় বেশি । জনগনের ম্যান্ডেটের অভাব তারা পূরন করার চেষ্টা করছে ধর্মের টোটকা দিয়ে । যেমনটা এর আগে করেছিল এরশাদ এবং জিয়াউর রহমান । তবে তাদের ওই ভুমিকার তুলনায় আওয়ামিলীগের বর্তমান ভুমিকা অনেক বেশী ক্ষতিকর । এরশাদ বা জিয়াউর রহমান কেউই স্যেকুলারদের ম্যান্ডেট নিয়ে বাংলাদেশে রাজনীতি করেনি, কিন্তু আওয়ামিলীগ করছে । স্যেকুলারের ম্যান্ডেট পাওয়া দল যখন ধর্মের টোটকা বেচার রাস্তায় নামে তখন তার পরিনতি ভয়াবহ হতে বাধ্য । জনগণ রাষ্ট্রের চরিত্র নির্ধারনে যতটা ভুমিকা রাখে, রাষ্ট্র জনগণের চরিত্র বা চিন্তাভাবনা পরিবর্তনে তার চেয়ে অনেক বেশি ভুমিকা রাখতে পারে । আওয়ামিলীগ সেই জায়গাটাতেই ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে । হতাশা ছাড়া আওয়ামিলীগের প্রতি প্রকাশ করার মত আমার অন্য কোন অনুভূতি নেই ।
মুক্তমনা শব্দটার কোন ধরাবাঁধা ডেফিনিশন আছে কিনা জানিনা তবে বাংলাদেশে বাংলায় ব্লগিং করা ব্লগাররা এক বহুমাত্রিক পৃথিবীর বাসিন্দা । একই উদ্দেশ্য থাকা সত্ত্বেও এদের একশ জন একই কাজ একশ ভাবে করে থাকেন । এর পেছনে ব্যক্তিগত ফেম, আর্থিক ফায়দা, রাজনৈতিক প্রতিপত্তি একশ কারণ থাকে । কোহেরেন্ট আন্দোলন আমি এদের তরফ থেকে খুব কম দেখেছি । সুতরাং এই ফ্রন্টেও আমি মারাত্মক ভাবে হতাশ ।
এত হতাশার মাঝেও আশাবাদী হই । যখন দেখি এত ঝড়ঝাপটার মাঝেও আপনি শক্ত ভাবে দাড়িয়ে হেসে আপনার অনুভূতির করা জানিয়ে জান । লিখে চলেন । আপনার, অভিজিতদার, অনন্তদার, বাবুর স্পিরিটের টানে লিখতে চলে আসে নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়ে । জোর গলায় প্রতিবাদ করে পরিবারের সবাইকেই জানিয়ে দেয় ” হ্যা, আমিও নাস্তিক, ধর্মের গোঁজামিলে বিশ্বাস করি না ” । তখন নতুন করে আশায় বুক বাঁধি ।
ভালো থাকবেন
মামুন
বন্যা আহমেদ এর লেখা আমাদের আরো বেশি সাহসী করে তোলে।
আমার দৃষ্টিতে উগ্র ধার্মিক বা উগ্র নাস্তিক বলে কিছু নেই। উগ্রতা পরিমাপ করা যায় না। তাই স্থানকাল পাত্রভেদে একেকজনের কাছে একেকজন উগ্র হিসেবে বিবেচিত হবে। তাই কেউ নাস্তিকতার নামে অসভ্যতা করলে সেটা অসভ্যতাই উগ্র নাস্তিক বলতে রাজি নাহ। তবে দায়িত্বশীলতার একটা বিষয় আছে। অনলাইনে যারা সিনিয়ার তাদের কাছু দায়িত্ব আছে, দায়বন্ধতা আছে। তারা সেই দায়বন্ধতা নিতে না চাইলেও তাদের উপর দায়িত্ব বর্তায়। কারণ অনেক জুনিয়র তাদের অনুসরণ করে বা তাদের থেকে কিছু শেখার চেষ্টা করে।…… ২০১৩ সালের পর থেকে অনলাইনে পরিবেশ বদলে যায়। ফলে আমাদের আরো বেশি সচেতনভাবে চলতে হচ্ছে। লেখালেখির কারণে এখনো অনেকে হুমকি পাচ্ছে তাই পরিবেশের কোন উন্নতি হয় নি তা চোখ বন্ধ করে বলে দেওয়া যায়। শুধু লেখালেখির কারণে কেন, কোন অন্যায়কারীকেও খুন করার অধিকার কেউ রাখে নাহ। তবে সমাজ পরিবর্তনের দায় যেহেতু আমরা ঘাড়ে নিয়েছি সেহেতু আঘাত আমাদের উপরই আসবে।
“উগ্র ধার্মিক” বলে কিছু নেই? ধর্মের নামে যারা হত্যা, ধর্ষণ, নৃশংসতা ও সহিংসতা করে, তাদেরকেও উগ্র ধার্মিক বলা যাবে না?
ব্যালান্স রক্ষা করার এই সুশীলীয় কায়দাকে কি সব ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করতে হবে?
বন্যাদির সাহসী উচ্চারণে অভিনন্দন।
নম্র ধার্মিক বলে কী কিছু আছে? ইসলামের নামে সন্ত্রাস করলে ইসলামিক সন্ত্রাসী, হিন্দু ধর্মের নামে হলে হিন্দু ধর্মের সন্ত্রাসী। আমি ধার্মিক ধার্মিক নাস্তিক নাস্তিক বুঝি। নম্র উগ্র বুঝি নাহ। নম্র ধার্মিক বলে কিছু আছে মনে মনে করি নাহ। নিজের সাথে না মিললে সুশীল, বেলেন্স করা, এসব সন্তা কথা অনেক দিন ধরে শোনা। নতুন কিছু বলেন।
লেখাটির সাথে সহমত প্রকাশ করছি। সেই সাথে খুব ছোট একটি মতামত যুক্ত করতে চাই , সংকটাপন্ন সময়ে নেয়া সিদ্ধান্তগুলো, সংকট উত্তীর্ন হবার পরে আপত দৃষ্টতে ভুল মনে হলেও পরিস্তিতি বিচারে সেই সময়ের জন্য সেটা ভুল না বলে বরং সংকট নিরসনের কৌশল হিসেবেই আমি মনে করছি। অভি দার হত্যাটা আমাদের অস্তিত্ব সংকটে ফেলে দিয়েছিল। এরপর, একের পর এক হত্যায় আমরা বিদ্ধস্ত, সন্ত্রস্ত, ছিলাম। যদিও উগ্র নাস্তিক , ভদ্র নাস্তিক এই ধরনের বিশেষনগুলোর সাথে আমার তীব্র দ্বিমত আছে ,তবে মত প্রকাশের নামে ব্যক্তি স্বার্থ উদ্ধারে উদ্দেশ্যমূলক অপপ্রচার কারিদের বিরুদ্ধাচারন করাটাও আমাদের আদর্শেরই অংশ।যদিও সামগ্রীক বিষয় বিবেচনায় অনেকক্ষেত্রে ভাষা প্রয়োগে সচেতনতার দাবী রাখে। আমাদের লক্ষ্য কোন ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধার নয় , এটা মনে রাখা অত্যন্ত জরুরি।এই সময়ে বিভাজনের যে ধারা চলছে তা থেকে বেরিয়ে এক সাথে চলাটাই আমাদের প্রধান কর্তব্য হওয়া উচিৎ। লেখাটির জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ বন্যা আপা ।
বন্যার এই সাহসী লেখার জন্যে ধন্যবাদ। আমার প্রশ্ন এতদিনেও কেন প্রকৃত হত্যাকারীদের ধরা গেল না।
উত্তরটা বোধহয় আমরা সবাই জানি…………………..!!!……….
অনেক অনেক ধন্যবাদ, বন্যা আপা। আপনার ভল্টেয়ার লেকচারটা পড়ে (ইংরেজি ও বাংলা দুই ভাষাতেই) এবং দেখে কী যে অদ্ভুত সাহস পেয়েছি মনে, তা বলে বোঝাতে পারব না। আপনি নিশ্চিত থাকেন, আমার মতো বা আমার চেয়েও বেশি উৎসাহিত হয়েছে এমন অজস্রসাধারাণ মানুষ ওটা শুনেছে, পড়েছে, দেখেছে। অনুপ্রাণিত হয়েছে। কতিপয় বুদ্ধিজড়দের কটুকাব্যকে পাত্তা দিয়েন না। জ্যোতির্ময় নন্দী এদের জন্যই লিখেছিলেন,
“অই যে চশমাধারী, মারাত্মক সিরিয়াস
চেহারাসুরত, যেন সারা দীন-দুনিয়ার যাবতীয়
দায়ভার তারই বৃষ স্কন্ধে কেউ চাপিয়ে দিয়েছে;
যেন সে পটল তুললে দুনিয়া এতিম হয়ে যাবে।
কিন্তু অই চশমাধারী, মারাত্মক সিরিয়াস
চেহারাসুরত, জানে না যে ওর মতো কত শত
বালস্য বাল, হরিদাস পাল পৃথিবীর-প্রকৃতির
প্রগাঢ় প্রস্রাবের ফেনায় ভেসে গেছে।” 🙂
এ ধরণের ‘উগ্র’ কবিতার’ বিরুদ্ধে ‘প্রবল আপত্তি’ জানায়া গেলাম… 🙂
চমৎকার। এই মুহুর্তে লেখাটি প্রচন্ড প্রাসঙ্গিক।
বন্যাদি, আপনার এ লেখাটা খুবই প্রয়োজন ছিল। আপনি তো একজন স্পষ্ট সতর্ককারী মাত্র।
যারা বলেছিল, “অভিজিতকে খুন করা ঠিক হয় নি, কিন্তু সে-ই বা কেন ধর্মের সমালোচনা করল” – এই সব লোকেরা দেখতে মডারেট হলেও তারাই অভিজিতের আসল খুনী।
অনেক ধন্যবাদ। এরকম একটা লেখার দরকার ছিল।
মাঝেমাঝে চরম হতাশ হয়ে যাই। মনে হয় ঠিক যেই বিভাজনটা করতে চেয়েছিল মৌলবাদীরা প্রগতিশীল মানুষদের মাঝে সেটাতে তারা সফল। যতটা সময় আসল শত্রুর পেছনে ব্যয় করি তার চেয়ে বেশী সময় নিজেদের মাঝে কিলাকিলি করতে করতেই ব্যয় করে ফেলি আমরা।
ভালো থাকুন। এভাবেই এগিয়ে চলুন।
ধর্মনিরপেক্ষ, মানবতাবাদী বিশ্ব গড়ায় আমাদের, অভিজিতের, ওয়াশিকুর বাবু, রাজীব হায়দার, অনন্তর সংগ্রামের কথা ভুলে যাবো না কথা দিলাম ।
চরম উদাস,
চরম উদাসীনতার সাথে চরম হতাশা যোগ হলে কিন্তু খুবি ‘উগ্র’ একটা ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হবে! আমার চিকিৎসার জন্য বেশ কয়েকজন চরম যোগ্য সাইকায়াট্রিস্ট এবং কাউন্সেলর নিযুক্ত করা হয়েছে হাসপাতাল থেকে। পিটিএসডি তে পড়ার চরম ‘ধপাসতা’ থেকে রক্ষা করার জন্য। আপনার লাগলে আওয়াজ দিয়েন। কিলাকিলি খুব সহজে বন্ধ হবে না বলে মনে হয়, এটা হার্ড ওয়্যার্ড আমাদের মধ্যে, এইরম ‘উগ্র’ আশাও করা ঠিক না। অবশ্য আমার মত চোখ বন্ধ করে রেখে প্রলয় বন্ধ হয়ে গেছে ভাবলে রক্ষা পেতে পারেন হয়তো চরম হতাশা থেকে 🙂
আপনার পোস্টে এসে যখন আমি হতাশ হবার কথা বলি সেটা আসলেই খুব হাস্যকর শোনায়। হতাশা সাময়িক, ঝেড়ে ফেলে উঠে দাঁড়াই আবার ঠিকঠিক 🙂
চরম উদাস,
মতের অমিল মানেই বিভাজন ভাবছেন কেন? মুক্তমনার মত একটি প্ল্যাটফর্মে নানা মুনির নানা মত থাকতেই পারে। মুক্তমনারা তো আর কিছু বিশেষ ধারার অনুসারীদের মত ভিন্নমতালম্বীদের দা হাতে কোপ দিতে ছুটছে না। কার কি বক্তব্য শুনে, যুক্তি-তর্ক দিয়ে আলোচনা করে, নিজের বিচার-বুদ্ধি অনুযায়ী কোন একটি মতকে গ্রহন করার বা না করার মধ্যে দোষের কিছু নেই। যুক্তি-তর্ক মুক্তমনাদের অস্ত্র, আর তা কেবল অজ্ঞানতা, কুসংস্কার বা কোন ভ্রান্ত ধা্রাকে ঘায়েল করতেই নয়, দরকার মত ‘কিলাকিলি’ করে মিত্রদের মধ্যেও ঝালিয়ে নেয়ার দরকার পড়ে। ভিন্ন ভিন্ন মতের সমর্থনে বা বিপক্ষে যৌক্তিক আলোচনা থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। যতক্ষণ না কেউ মতের অমিলের কারণে পারস্পরিক আচরণে ব্যক্তিগত বিদ্বেষের প্রকাশ ঘটাচ্ছেন, ততক্ষণ এনিয়ে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই।
ঠিক বলেছেন :good: