ভূমিকাঃ
বিজ্ঞানযাত্রা একটি বিজ্ঞানভিত্তিক ম্যাগাজিন! শুরুতেই দুটো ডিসক্লেইমার দেয়া প্রয়োজন। এক, নিজের সম্পাদিত ম্যাগাজিন নিয়ে মুক্তমনাতে পোস্ট দেয়ার ব্যাপারে আমার আপত্তি ছিলো, পাছে মুক্তমনার কোনো নীতিমালা লংঘন না হয়ে যায়! পরে মুক্তমনা সম্পাদকরা জানিয়েছেন আনন্দের সাথেই তারা লেখাটা ছাপাবেন তাই লিখতে বসে গেলাম। দুই, যারা শুধু ম্যাগাজিনের উপাদান (লেখাগুলো) নিয়ে জানতে ইচ্ছুক, তারা “বিজ্ঞানযাত্রার প্রথম ভলিউমের লেখাগুলো” সেকশন থেকে পড়া শুরু করতে পারেন। এর আগের অংশগুলো কিছুটা ব্যক্তিগত উপাখ্যান, কিছুটা ম্যাগাজিনের ব্যাকগ্রাউন্ডের ঝড়-ঝঞ্ঝাময়, আবার কিছুটা সুনীল রৌদ্রময় ইতিহাস!
অনুপ্রেরণাঃ
আমি সেই মুহূর্তটার কথা মনে করার চেষ্টা করছি, ঠিক যে মুহূর্তে আমার মনে হয়েছিলো যে একটা বিজ্ঞানভিত্তিক ম্যাগাজিন বের করা যায়। যতদূর মনে পড়ে, সেই হাই স্কুলের সময় থেকেই এমন একটা স্বপ্ন দেখতাম। তখন কোনো ম্যাগাজিন পেলেই প্রথমে সূচীপত্রে দেখতাম সায়েন্স ফিকশন আছে কিনা। এরপর দ্রুত হাতে পৃষ্ঠা পাল্টে রুদ্ধশ্বাসে বিজ্ঞানভিত্তিক কল্পকাহিনীগুলো পড়তাম। অত্যন্ত কাঁচা হাতে নিজেই দুটো সায়েন্স ফিকশন লিখে ফেলেছিলাম ক্লাস নাইনে থাকতে। কিন্তু তখনো ম্যাগাজিন বানানোর স্বপ্নটার কোনো কাঠামো ছিলো না; সেটা স্বপ্ন থেকে পরিকল্পনার কংকাল অর্জন করেনি। তখন ক্ষমতা থাকলে হয়তো সেটা শুধু সায়েন্স ফিকশন সমগ্রই হতো, ঠিক সায়েন্স ম্যাগাজিন আর হতো না।
বয়সের সাথে সাথে ফিকশন ছেড়ে যতই বাস্তব বিজ্ঞানের দিকে নজর দিলাম, ততই যেন চোখের সামনে ব্রহ্মাণ্ডটা একটু একটু করে রহস্যের মায়াজাল ছেড়ে বেরিয়ে আসা শুরু করলো। বিজ্ঞানের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হলাম। পাশাপাশি নতুন নতুন রহস্যও জানা আরম্ভ করলাম, ওগুলো নাকি এখনো সমাধান হয়নি। কত কত মানুষ নির্দ্বিধায় স্বীকার করে যাচ্ছে তাদের জ্ঞানের স্বল্পতার কথা – বিজ্ঞানের বিনয় দেখে অভিভূত হলাম। আশেপাশের বয়স্কদের মধ্যে এই বৈশিষ্ট্য খুব একটা পরিলক্ষিত হতো না। তারা সবকিছুর একটা বানোয়াট উত্তর দিয়ে দিতেন। এরপর একদিন দেখলাম বিজ্ঞানের আবেগ, বিজ্ঞানের মাধ্যমে পেলাম আধ্যাত্মিক অনুভূতি। পরিচিত হলাম কার্ল সেগানের সাথে, নতুন করে আবিষ্কার করলাম আমাদের এই কসমসকে; সেগানের বানানো টিভি সিরিজ কসমসের মাধ্যমে। তিনি পরিণত হলেন আমার আদর্শে। তার মত করে বিজ্ঞানের প্রচারে নিজেকে মনোনিবেশ করালাম।
দাবার ঘুঁটি নড়ছেঃ
২০১৩ সালের শেষ দিকে (নভেম্বরের ০২ তারিখ) ফেসবুকে একটা পেইজ খুলেছিলাম। বিজ্ঞানযাত্রা ম্যাগাজিনের সাথে এই পেইজটা একদম অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।
পেইজটা খোলার উদ্দেশ্য ছিলো – চটুল বিজ্ঞানের(!) আলোচনা না করে কঠিন কঠিন বিষয়গুলোকে একটু সহজ সাবলীল ভাষায় উপস্থাপন করা। সেটা বেশ অভাবনীয় সাড়া পেয়েছে। আমি এতোটা আশা করিনি। তখন বুঝলাম, বোঝাতে পারলে কঠিন কঠিন বিষয়গুলোও ঠিকই বুঝিয়ে ফেলা যায়। এই পেইজের সুবাদেই বেশ কিছু সমমনা পাবলিক পেয়ে গেলাম। কেউ কেউ পেইজের জন্য লেখা শুরু করলো। এদেরকে পেয়ে, আস্তে আস্তে প্রিন্ট মিডিয়ার দিকে যাওয়ার ইচ্ছেটা জোরদার হচ্ছিলো। একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক সদস্যের টার্গেট পূর্ণ হবার জন্যে অপেক্ষা করছিলাম। যাতে এই পেইজের প্ল্যাটফর্ম থেকেই ডাক দেয়া যায়।
পেইজ রিলিজ দেয়ার ঠিক এক বছরের মাথায় আমাদের সদস্য সংখ্যা ১৫০০০ ছাড়িয়ে গেলো। নভেম্বরের ১১ তারিখ ঘোষণা দিলাম, আমরা একটা বিজ্ঞানভিত্তিক ম্যাগাজিন পাবলিশ করতে যাচ্ছি। আহ্বান জানালাম, লেখা দেবার জন্য। নভেম্বরের ২৭ তারিখ, ম্যাগাজিনের নাম ঠিক করলাম – বিজ্ঞানযাত্রা! ৩০ তারিখ পর্যন্ত লেখা জমা নিলাম। ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ করে দিলো আমি সুজন। একেও পেয়েছি সেই পেইজের হাত ধরেই। পেইজের জন্য লোগো প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিলাম এবং সুজন প্রথম হয়েছিলো। নিজের ব্যক্তিগত অন্য সকল কাজের ফাঁকে সম্পাদনা চললো দুই মাস ধরে। আমি জানতাম, সম্পাদকের কাজ শুনতে তেমন মনে না হলেও আসলে কাজ আছে। কিন্তু আসলে যে এতো কাজ আছে, তা করতে গিয়ে হাড়ে হাড়ে টের পেলাম।
যাই হোক, প্রকাশকের কাছে পাঠিয়ে দিলাম জানুয়ারি মাসে। ঠিক করেছিলাম, ফেব্রুয়ারির বইমেলার প্রথম দিনেই বের করবো। কিন্তু আমার প্রকাশক গড়িমসি করে সেটাকে পিছিয়ে দিলেন। আমাকে ডেইট দিলেন, ফেব্রুয়ারির ১০ তারিখে আনবেন। আনলেন না। ফেসবুক পেইজ থেকে ঘোষণা দিয়ে ফেলেছিলাম, প্রচুর মানুষের প্রশ্নের মুখোমুখি হলাম। মার্চ-এপ্রিল পুরোটাই ঝিমিয়ে রইলো প্রকাশক। এরপর ওনার জণ্ডিস হলো, কাজ আর এগোলো না। মে পুরোটা পার হয়ে গেলো। বিজ্ঞানযাত্রার নিজস্ব যাত্রার প্রাথমিক ধাপই শেষ হয় না; আলোর মুখ দেখে তার আসল যাত্রা আর শুরু হয় না।
এর মধ্যে শুরু হলো আমাদের ওয়েবসাইটের কাজ – সাইটের নামও রাখলাম ম্যাগাজিনের নামেই। ইসমাইল হাসান নামে এক অনুজের সাথে অনেকটা কাকতালীয়ভাবেই পরিচয়। সে আমার আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ডিপার্টমেন্টেরই ছোটো ভাই, যদিও ওখানে থাকতে আমাদের পরিচয় হয়নি। তার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আমার ৪টা ওয়েবসাইট করার দায়িত্ব নিলো। এবং সলজ্জ বদনে জানিয়ে দিলো, বিজ্ঞানযাত্রার ওয়েবসাইটের জন্য সে কোনো পারিশ্রমিক নেবে না।
জুনের প্রথম সপ্তাহ! আমার ছোট্টো বিজ্ঞানের জগতে বেশ ঘটনাবহুল একটা সপ্তাহ! কয়েকদিন আগেই কাজ শুরু করা ওয়েবসাইটটা দাঁড়িয়ে গেলো। পেইজের ২৫০০০ সদস্য পূর্ণ হলো। এবং দীর্ঘ শীতনিদ্রা ভেঙ্গে একই সময়ে ম্যাগাজিনটাও রিলিজের জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলো। ওয়েবসাইট রিলিজ দিলাম জুনের ৭ তারিখ। দুইদিনের ব্যবধানে, অর্থাৎ ৯ তারিখ রিলিজ দিলাম ম্যাগাজিন। কয়েকদিন পর যখন বিজ্ঞানযাত্রার কপি আমার হাতে এসে পৌঁছুলো, তখন আমি সিয়াটল শহরে। আমার আদর্শ কার্ল সেগান যে শহরে শেষ নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন, সেই শহরে! সেখানেই তার অনুপ্রেরণা থেকে বানানো ম্যাগাজিন প্রথমবারের মত স্পর্শ করলাম। অনুভূতিটা আধ্যাত্মিক!
বিজ্ঞানযাত্রার প্রথম ভলিউমের লেখাগুলোঃ
শুরুতেই ঠিক করেছিলাম, শুধু সহজ বিষয় নিয়ে পড়ে থাকবো না। কঠিন বিষয় সিলেক্ট করবো, কিন্তু একদম সাধারণ মানুষের ভাষায়। আর এমন এমন লেখা থাকবে, যা কালের আঁচড়ে সহজে পুরনো হবে না। অনেক অনেক লেখা থেকে মূলত এই দুইটা বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে লেখা বাছাই শুরু করলাম।
ঐ সময়টাতে নিজেকে খুব আশীর্বাদপ্রাপ্ত মনে হতো, শুধুমাত্র আমার আশেপাশে তৈরি হওয়া বিজ্ঞানমনস্ক মানুষগুলোর কারণে। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে ব্যক্তিগত সখ্যতার অধিকারে অনেকটা ঘোষণার সুরে জানিয়ে দিলাম, লেখা দিতে হবে। তিনটা ফোকাস আর্টিকেল পেয়েছি হাত বাড়িয়েই – গণিতপ্রেমী এবং অনলাইন শিক্ষক চমক হাসান লিখলো আর্কিমিডিসকে নিয়ে, যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাপাল্যাচান কলেজ অফ ফার্মেসীর শিক্ষক মামুন রশিদ ভাই লিখলেন স্ট্রোক গবেষণা নিয়ে; আর আমার বিজ্ঞানযাত্রার সহ-সম্পাদক অনীক আন্দালিব ভাই লিখলেন যুক্তির উৎসব লজিকন নিয়ে। লেখাগুলো বেশ রেফারেন্সসমৃদ্ধ, এবং পপুলার ম্যাগাজিন এবং পিয়ার রিভিউড সায়েন্স জার্নালের স্টাইলের মিশেল আছে।
পেইজ থেকে ডাক দিয়ে চমৎকার সাড়া পেয়েছি। কেউ কেউ সায়েন্স ফিকশনের নামে চুপেচাপে লেখা নকল করে দিয়ে দিতে চেয়েছিলো। কেউ অনলাইনে অন্য কারো প্রকাশিত লেখা জমা দিয়েছিলো। বিজ্ঞানের চর্চায় এসে যদি আরেকজনের লেখা নিজের নামে চালিয়ে দেন, যদি আরেকজনের মেধাকে অপমূল্যায়ন করেন, তাহলে কেমন লাগে? যাই হোক, এগুলো বাদ দিয়েও অসাধারণ কিছু লেখা পেয়েছি। পরে সেগুলোকে ক্যাটাগরি আকারে সাজিয়েছি, এলোমেলো না রেখে। যার যে সেকশনটা নিয়ে বেশি আগ্রহ, সে যাতে সেটা দিয়েই শুরু করতে পারে।
মহাকাশ এবং মহাকাল নিয়ে দুটো প্রবন্ধ ছিলো – দুটোই বেশ বিস্তারিত। একটাতে সাম্প্রতিক ধূমকেতুতে অবতরণ সংক্রান্ত রোসেটা মিশনের শ্বাসরুদ্ধকর গল্প লিখলেন সাকিব তানভীর। আরেকটাতে আমাদের মহাবিশ্ব তৈরির গল্প লিখলেন কৌশিক রায়।
বায়োলজি নিয়ে অনেকগুলো লেখা ছিলো। এর মধ্যে চারটা লেখা এই ক্যাটাগরিতে সিলেক্ট করলাম – শামসুল আরেফিন প্রিন্সের লেখা অণুজীবদের গল্প, বিবর্তনের জাদু নিয়ে হাসনাত সুজনের গল্প, ডিএনএ প্রিন্টিং নিয়ে উম্মে তামিমা সুবর্ণার সাবলীল লেখা, অ্যালবিনোদেরকে নিয়ে লেখা অভীক দাসের প্রবন্ধ। সম্পাদনা করতে গিয়ে নিজেও কম শিখিনি। এগুলোর যা যা জানি, তা তো জানিই। আর যা আগে জানা ছিলো না, সেগুলো ক্রস চেক করতে গিয়ে প্রচুর ইন্টারনেট ঘাঁটতে হলো। ইন্টারনেটের আগে মানুষ ফ্যাক্ট চেক করতে কী হ্যাপা পোহাতো, কে জানে!
বাংলাদেশে বিজ্ঞানচর্চা মূলত ইংরেজি ভাষা থেকে পড়েই হয়। অন্যান্য লেখাগুলোতেও প্রচুর ইংরেজি রেফারেন্স ছিলো, বুঝতেই পারছেন। কিন্তু একেবারে বিশুদ্ধ অনুবাদ কর্মও ছিলো বিজ্ঞানযাত্রায়, চারটা। বিজ্ঞানচর্চা নিয়ে একটা দারুণ আর্টিকেল অনুবাদ করেছিলাম অনেক আগেই। সেটা দেবো কি দেবো না, তা নিয়ে নিজের সাথে অনেকক্ষণ বিতর্কের পর অবশেষে সেটাকে ঢুকিয়ে দেয়াই যুক্তিযুক্ত মনে করলাম। ইংরেজি শিরোনাম ছিলো The Importance of Stupidity in Science. এটার দেয়ার পেছনে মূল কারণ হলো, বিজ্ঞানযাত্রার প্রথম ভলিউমে আমরা বিজ্ঞানের স্বরুপ পরিষ্কার করতে চেয়েছি। সম্পাদকীয়তেই সেটা পরিষ্কার হয়ে যাবে পাঠকদের কাছে, সে কথায় পরে আসছি। তার পাশাপাশি, এই প্রবন্ধটা বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণার জন্য বেশ জরুরি। আমার আরো একটা অনুবাদ দিলাম, বিজ্ঞানের ১০টি রহস্য নিয়ে যা এখনো সমাধান হয়নি। সাফাত হোসেন লিখলো Rutherford Platt এর লেখা Sixth Sense প্রবন্ধটির অনুবাদ – এটাও চমৎকার একটা প্রবন্ধ, বিজ্ঞানের মাধ্যমে আমাদের আদিম অনুভূতিগুলো উন্মোচন করা নিয়ে। মুশাররাত শামা আর শারমিন বিনতে শাহিদ যৌথভাবে অনুবাদ করলো নাভাহো স্যান্ডস্টোন আর গ্র্যান্ড স্টেয়ারকেস নিয়ে। এই শেষ লেখাটি আমার দেখা অন্যতম সেরা বিজ্ঞানভিত্তিক ফেসবুক পেইজ The Earth Story এর দুটো পোস্ট মিলিয়ে বানানো। এদের বর্ণনা অতুলনীয়! আমি অনেক শিখি এদের কাছ থেকে।
ইশতিয়াক অয়ন আর রিয়াজুল হাসান শুভ ৩টা সায়েন্স ফিকশন লিখলো। অনীক ভাই লিখলেন অন্যতম শ্রেষ্ঠ সায়েন্স ফিকশন ২০০১ঃ এ স্পেস অডিসি নিয়ে। মুভিখোর নামে আমার বেশ কুখ্যাতি আছে। বিজ্ঞানযাত্রায় সায়েন্স ফিকশন মুভির রিভিউ যাবে না, তা তো হতেই পারে না। প্রত্যেক ভলিউমেই ন্যূনতম একটা মুভি রিভিউ থাকবেই। আর ধারাবাহিকভাবে থাকবে বাংলাদেশী বিজ্ঞানীদের গল্প। এই ধারাবাহিক পর্বটা লিখছে আমাদের সায়েন্স পেইজের আরেক এডমিন নির্ঝর রুথ ঘোষ। প্রতিবার ৬ জন করে বিজ্ঞানীর সংক্ষিপ্ত জীবনী তুলে ধরা হবে। সমসাময়িক চমৎকার এক প্রযুক্তি নিয়ে লিখলো ইমরান নূর। স্রোডিঞ্জারের বেড়ালের মত জটিল এক বিষয়কে পানির মত করে লিখলো সজল চৌধুরী। দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান বিষয়ক কিছু সরল প্রশ্নোত্তর নিয়ে লিখলো রবিউল হাসান।
প্রত্যেক ভলিউমে একটা করে ঈশপের গল্পের মত উপদেশ থাকবে। প্রথমটাতে সেটা না হয় আমিই লিখলাম। আমাদের স্বভাব দিয়েই আমরা পরিবেশকে পাল্টাতে পারি। কারণ, আমাদের স্বভাবই পরিবেশের দূষণ করছে। এটা নিয়েই লিখলাম দুটো গল্প, আর কিছু আহাজারি! আর সম্পাদক হিসেবে সম্পাদকীয় তো লিখতেই হলো। সম্পাদকীয়তে লিখলাম, বিজ্ঞানের জন্মের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। কিভাবে প্রকৃতিকে ব্যাখ্যা করার আকুতি থেকে একে একে মিথ, দর্শন, ধর্ম, আর বিজ্ঞানের সূত্রপাত। সোজা কথায়, একদম অল্প কিছু শব্দে, বিজ্ঞানের যাত্রা নিয়ে লিখলাম বিজ্ঞানযাত্রার সম্পাদকীয়।
পরিশেষেঃ
অনেক পরিশ্রমের কাজ ছিলো এটা। পথে যাদের সাহায্য পেয়েছি, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ। লেখকদেরকে ধন্যবাদ, সুন্দর সুন্দর লেখা দেয়ার জন্য। প্রকাশককে ধন্যবাদ, শেষ পর্যন্ত এটাকে সবার কাছে নিয়ে আসার জন্য। রায়হান আবীর ভাইকে ধন্যবাদ, বেশ কয়েকবার তাড়া দিয়ে এই লেখাটা লেখানোর জন্য। শুরুতেই এটা নিয়ে একটা ডিসক্লেইমার দিয়েছিলাম। উনি যে শব্দগুলো ব্যবহার করে সত্যিকারের উৎসাহ দিয়েছিলেন, সেগুলো ছিলো, “আরে ব্যাটা, এটার প্রচারে কিছুটা সাহায্য হলে বরং আমরা বেশ খুশি হবো”।
শেষ করছি দুটো আফসোসের কথা বলে।
১) ব্লগার-লেখক-দার্শনিক, এমন আরো অনেক পরিচয়ের অধিকারী অভিজিৎ রায় বলেছিলেন, বিজ্ঞানযাত্রার পরের ভলিউমে হয়তো লেখা দেবেন। উনি ব্যস্ত মানুষ, তারপরেও হয়তো সময় বের করে লেখা দিতেন। কিন্তু, সেটা যাচাই করা আর হলো না। আশা একটাই, উনি আরো অনেক অভিজিৎ রায়ের জন্ম দিয়ে গেছেন। তারা এই চর্চার হাল ধরবে।
২) বাংলাদেশে থাকলে এটা নিয়ে স্কুলে-কলেজে যেতাম, ভার্সিটিতে যেতাম। বাচ্চাদের সাথে আর্টিকেলগুলো নিয়ে আলোচনা করতাম। মিস করছি জিনিসটাকে অনেক! তবে দুয়েকজন আশা দিয়েছেন, ওরা এই দায়িত্ব নেবেন। তাহলে বেশ হয়! সব স্কুলে একটা কমন বিজ্ঞান ক্লাব খোলার স্বপ্নটা হয়তো এভাবেই ডানা মেলবে।
আশা করি, এতো জনের পরিশ্রম সকল পাঠকদের পছন্দ হবে। ইতোমধ্যে কিছু রিভিউ পেয়েছি, এবং সবই ইতিবাচক। এটাই পরবর্তী ভলিউম বের করার অনুপ্রেরণা! ঘরে বসে (রকমারি বা বিক্যাশ করে) পেতে হলে কী করতে হবে, সেই Order details এখান থেকে দেখে নিতে পারেন। সবাইকে বিজ্ঞানযাত্রা ওয়েবসাইট ঘুরে দেখারও আমন্ত্রণ রইলো।
একটা সময় আমাদের দেশে সায়েন্স ওয়ার্ল্ড নামের একটি বিজ্ঞান বিষয়ক মাসিক পত্রিকা প্রকাশ হতো, তখন আমি হাইস্কুলে উঠেছি কেবল । প্রতি মাসের শুরুর তিনটা দিন অনেক আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতাম নতুন সংখ্যা হাতে পাওয়ার জন্য । যেদিন হাতে পেতাম সেদিন কেমন যেন নেশাগ্রস্থের মতই হয়ে যেতাম ভেতরে কি আছে তা পড়ার জন্য । ২০০৮ সালের দিকে হঠাৎ পত্রিকাটা প্রকাশ বন্ধ হয়ে যায় । আমার জন্য সেটা ছিলো একটা ভয়াবহ দুঃসংবাদ । সেই থেকে ভেবে এসেছি এদেশে হয়তো আবার কখনো এরকম বিজ্ঞানমনষ্ক ম্যাগাজিন আসবে । এসেছেও, কিন্তু টিকে থাকেনি বেশিদিন, কোনো কোনোটা টিকে থাকলেও লেখাগুলোতে মানের অভাব ছিলো । অন্তত স্কুল-কলেজ লেভেলের শিক্ষার্থিদের বিজ্ঞানমনষ্ক চিন্তাকে জাগ্রত করার মত যথেষ্ট ছিলো না । বিষয়টা আমাকে বেশ হতাশ করেছিলো ।বিজ্ঞান যাত্রার সাথে পরিচিত হয়ে অনেক বছরের পুরানো সেই ভালোলাগাটা আবার ফিরে পেলাম । ধন্যবাদ সকলকে, যাদের চেষ্টায় আবারো নতুন করে পথচলা শুরু হলো । আশা করব কখনো থেমে যাবেন না , আর কোনো বিজ্ঞান যাত্রার থেমে যাওয়া দেখতে চাই না । আপনাদের সাথে থেকে এই যাত্রাকে আরো অনেক দূরে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই , অনেক অনেক দূরে…
কি ভীষণ ভাল লাগলো । আমার ৮ বছরের ছেলের উপযোগী বিজ্ঞান বিষয়ক কোন ইংলিশ ওয়েবসাইট বা বই বা পেজ এর খবর দিতে পারেন ?
অবশ্যই, যদি Bill Nye – The Science Guy সিরিজ না দেখে থাকে, তাহলে অবশ্যই দেখাবেন। বাচ্চারা এই শো থেকে চরমভাবে বিজ্ঞান শিখতে পারবে। শুধু তাই নয়, ব্রহ্মাণ্ড সম্পর্কে চিন্তাধারা শৈশব থেকেই অনেক বড় হয়ে যাবে। Bill Nye, আমার আদর্শ Carl Sagan এর সরাসরি ছাত্র ছিলো কর্নেলে।
এছাড়াও Climatekids, Ask a Biologist, BBC এর Bitesize science এই ওয়েবসাইট গুলো দেখতে পারেন।
বইয়ের জন্য Professor Astro Cat’s Frontiers of Space; Katie Scott আর Jenny Broom এর Animalium পড়াতে পারেন।
এক নিঃশ্বাসে ঘুরে এলাম লিঙ্কগুলো। এতদিন গুগল আর ইউটিউব হাতরে শুধু Bitesize scienceএর হদিস পেয়েছিলাম। অনেক অনেক ধন্যবাদ ফরহাদ ভাই। আপনাকে হয়তো এই ব্যাপারে আরও জ্বালাবো । 🙂
নো প্রবলেম! 😀
বিজ্ঞানযাত্রা সাপ্তাহিক হবে …
স্কুলে স্কুলে- পাড়ায় পাড়ায় বিজ্ঞান ক্লাব গড়ে উঠবে …
সেই সাথে মুক্তমনারো প্রিন্টেড ভার্সন বের হবে … অডিও-ভিজুয়াল বের হবে … সম্পূর্ণ বিজ্ঞান নিয়ে টিভি চ্যানেল থাকবে, বাচ্চাদের জন্যে পূর্ণাঙ্গ টিভি চ্যানেল হবে – যেখানে বিজ্ঞান সেখানো হবে, বিজ্ঞানমনস্কতা শেখানো হবে …
আপনাদের দেখলে এই অন্ধকার সময়েও এমন করে স্বপ্ন দেখার সাহস পাই …
অনেক অনেক শুভকামনা রইলো …
অনেক অনেক ধন্যবাদ, উৎসাহ দেয়ার জন্য। সবাই মিলে করলে কী না হয়!
সব মন্তব্য পড়ার পর লেখাটির জন্য শুধু ধন্যবাদ দেওয়া ছাড়া আর কিছুই বলাার নেই।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ। পাড়ায় পাড়ায় বিজ্ঞান ছড়িয়ে দেয়ার জন্য এগিয়ে আসুন।
অসংখ্য ধন্যবাদ ফরহাদ হোসেন মাসুম। বিশেষভাবে নিজের আলো সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার শুভ উদ্দোগের জন্য। আপনার উদ্দোগ অনেকের মনের কোনে রবির কর পশিবে। বিজ্ঞানযাত্রা প্রকাশে আপনাকে যারা সহযোগিতা করেছেন বিশেষ করে বিনা পারিশ্রমিকে পরিশ্রম দিয়ে, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ। ভাল ভাল সৃষ্টির ব্যাপক প্রচার দরকার। প্রচারেই প্রসার।
মুক্তমনাকে ধন্যবাদ মুক্তমনা পরিবারকে বিজ্ঞানযাত্রা জানতে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ, কমেন্টের জন্য। আশা করি, বিজ্ঞানযাত্রার কনটেন্ট আর স্টাইল ভালো লাগবে।
আপনাকে ধন্যবাদ জানাবার ভাষা আমার নেই! আপনাদের এ কর্মযজ্ঞে থাকতে পারলে খুশি হতাম!
এই যে, আপনাকে তো চিনি। বিজ্ঞান, বিজ্ঞানী, এবং নারী এর লেখক। একটু আগেই আপনার মুক্তমনার পোস্টটা বিজ্ঞানের মায়েরে বাপ পেইজ থেকে শেয়ার করার জন্য শিডিউল করে এলাম।
পরবর্তী ভলিউমে আপনার লেখা পেলে মারাত্মক খুশি হবো। ফেসবুক পেইজে থাকলে দ্বিতীয় ভলিউমের ঘোষণা পাবেন শীঘ্রই।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে! 🙂
পেইজে পোস্টটা প্রকাশিত হয়েছে। আবর্জনা ডিলিট ডিলিট করতে করতে ঘাম ছুটে গেলো। অনেকক্ষণ কথাবার্তা চালানোর পর ৩জনকে ব্যানও করতে হলো।
একজনের সমস্যা হচ্ছে, পোস্টটা মুক্তমনার। দেখেন দেখি ব্যাপারটা! 🙂
এতো স্বাভাবিক। লোকে প্রথার দাস হয়ে বসে থাকে দেখেই তো লিখতে হবে।
দারুণ একটা কাজ করেছেন। সহজ সরল সাধারণ মানুষের ভাষায় কঠিন জিনিষ যে বুঝানো যায় বা সাহিত্যের ভাষায় যে বিজ্ঞানকে উপস্থাপন করা যায় সেটা আমি দেখেছি অভিজিৎ আর বন্যার লেখায়। ওয়েব পেইজ ঘুরে এলাম বেশ চমৎকার হয়েছে। ধন্যবাদ লেখাটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্যে।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকেও। চেষ্টা জারি থাকবে। আপনাদেরকেও কনট্রিবিউট করার জন্য অনুরোধ রইলো।
অনেক ধন্যবাদ এই দারুণ কাজের জন্য। এবং শুভকামনা।
বিকেলের দিকে ব্লগটা দেখেও পড়ার সময় পেলাম এতোক্ষণে! পেছনের এতো ঘটনার কিছুই প্রায় জানতাম না। ম্যাগাজিন প্রকাশের কাজ খুবই ঝক্কির তা অনুমান করতে পারি, বিশেষ করে ফেব্রুয়ারির দিকে যখন বিজ্ঞানযাত্রা বইমেলায় এলো না তখন তোমার স্ট্যাটাস দেখে বুঝতে পারছিলাম কতোটা হতাশ হয়েছিলে। তারপরও দেখো, কত ঝক্কি ঝামেলা পেরিয়ে ঠিকই আলোর মুখ দেখলো বিজ্ঞানযাত্রা!
একভাবে দেখলে এটা আসলে মূর্খতার অনুকূল পরিবেশে নিরলস কাজ করে যাওয়া গুটিকয় মানুষের সংগ্রামেরই রূপক। চটজলদি চলমান বাস্তবতা বদলাবে না। বাংলাদেশে বিজ্ঞান-সাধনা তথা বিজ্ঞান-চর্চার ক্ষেত্রটাকে খুব চতুরতার সাথে অনুর্বর ও প্রতিকূল বানিয়ে রাখা হয়েছে। কারণ বাংলাদেশের সুবিশাল জনগোষ্ঠী বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে বেড়ে উঠতে পারলে তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যাবে। পাবলিক “বেয়াদ্দপ” হয়ে যাবে। তাই এহেন উদ্যোগগুলোকে সবাই ভয়ের চোখে দেখে।
আমার শুধু এটাই কামনা, যেন বিজ্ঞানযাত্রার হাত ধরে একটু একটু করে হলেও অনেকে এগিয়ে আসে, অনেকে উৎসাহ পায়। আমাদের যে বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে, সেটা যেন আমাদের উত্তরসূরীদের না দিতে হয়, যেন তারা আরেকটু সহজে আমাদের চেয়ে আরেকটু দূরে যেতে পারে!
কমেন্ট লিখেছিলাম একটা, পোস্টও করেছিলাম। কিন্তু অনেকক্ষণ ধরে ধরে গোল গোল ঘুরলো। কিন্তু পাবলিশ হলো না।
সংক্ষেপে –
ঠিক এটাই উদ্দেশ্য ছিলো। আমাদের সাধনায় হোক বা কালের বিবর্তনে হোক – পরিবর্তন আসবেই। তখন পরবর্তী প্রজন্মের কাছে ইতিহাসের সঠিক অংশে থাকতে চাই।
আমার চেখে দেখতে এতো ইচ্ছা করছে বলার না 🙂 অনেক অনেক ধন্যবাদ এতো চমৎকার একটা কাজের জন্য। আশাকরি বিজ্ঞানযাত্রা একদিন সাপ্তাহিক বিজ্ঞানযাত্রায় পরিণত হবে 🙂
স্বপ্ন দেখানোর জন্য ধইন্যা লন, রায়হান ভাই।
আপনাকে অভিনন্দন জানানোর জন্য কোন শব্দই খুঁজে পেলাম না। মহৎ এই প্রচেষ্টার সাফল্য আসবেই।
ওয়েবসাইটটা খুব সুন্দর হয়েছে। পরে সময় করে প্রবন্ধ গুলও একে একে পড়ে নেব। বিজ্ঞান যাত্রার কপি অ্যামেরিকাতে কি পাওয়া যাবে?
ধন্যবাদ, ভাই। আস্তে আস্তে বেশির ভাগ প্রবন্ধই সাইটে আপলোড হবে।
আমেরিকাতে তো পাওয়া যায় না। বাংলাদেশ থেকে কাউকে পাঠাতে হবে 🙁
উত্তর দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। বাংলাদেশে তো চেনাজানা কেউ নেই দাদা। সাইতে আপলোড হলে পড়ে নেব।
পেইজে আমরা বেশি রেগুলারলি পোস্ট করে থাকি। পেইজে থাইকেন, ভাইয়া।