গত ২ জুলাই লন্ডনে ব্রিটিশ হিউম্যানিস্ট এসোসিয়েশন আয়োজিত এ বছরের ‘ভলতেয়ার বক্তৃতা’ শোনার সৌভাগ্য হয়েছিল। হাই-প্রোফাইল এ বক্তৃতানুষ্ঠানের এ বছরের নির্ধারিত বক্তা রাফিদা (বন্যা) আহমেদ। অত্যন্ত তথ্যবহুল এবং উদ্দীপনাময় সে বক্তৃতা স্পর্শ করেছে উপস্থিত ছয় শতাধিক মানুষকে। তারা সবাই যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে হাজির হয়েছিলেন এই সন্ধ্যায় বন্যা আহমেদের বক্তব্য শোনার জন্য। এদের বেশীরভাগই সেক্যুলার-মানবতাবাদী, যার যার ক্ষেত্রে আন্দোলনের সংগঠক, কর্মী। আরও উপস্থিত ছিলেন ইউরোপের মূলধারার মিডিয়ার সাথে যুক্ত সাংবাদিক, কলামিস্ট, লেখক, সম্পাদকরা। অভিজ্ঞতাটা নিয়ে লেখার কথা ভাবছিলাম আমিও। কিন্তু পুরো অনুষ্ঠানটি চলাকালীন সভা কক্ষের আবেগ, উদ্দীপনা, আর উপস্থিত সবার প্রত্যয় নিয়ে লিখতে গিয়ে নিজের প্রকাশ-ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা প্রবলভাবে অনুভব করলাম। তাই মনে হল, পুরো ছয়শো মানুষ যেখানে একই আবেগ আর প্রত্যয়ে এক সূত্রে গাঁথা ছিল গোটা সন্ধ্যা জুড়ে, সেখানে নিজের অনুভূতি বা প্রতিক্রিয়ার কথা আলাদাভাবে বলার কিছু তো নেই আসলে! তাই হিলটনের সেই সভাকক্ষে উপস্থিত দর্শক শ্রোতারা বক্তৃতা চলাকালীন টুইটারে তাৎক্ষণিকভাবে যে প্রতিক্রিয়াগুলো ব্যক্ত করছিলেন সেখান থেকে কিছু স্ক্রিনশট তুলে ধরছি এই এ্যালবামে। এই অনুষ্ঠান সম্বন্ধে, কিংবা উপস্থিত সবার প্রতিক্রিয়া জানতে টুইটারে হ্যাশটা্যাগ #BHAVoltaire খোঁজ করলে আরও জানতে পারবেন।
[এই লিন্কে বন্যা আহমেদের পুরো বক্তৃতাটিই পাবেন]
যদিও অত্যন্ত তাৎপর্যহীন, তবুও একটা দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে, যার কিছুটা প্রাসঙ্গিকতা থাকায় এখানে উল্লেখ করছি। বন্যা আহমেদের ‘ভলতেয়ার বক্তৃতা’ নিয়ে লেখক তসলিমা নাসরিন কিছু অদ্ভুত মন্তব্য করেছেন (এই এ্যালবামের শেষে দেখুন)। ‘অদ্ভুত’ বললাম এ কারণে যে – তার এই মন্তব্যগুলোর হেতু বা উদ্দেশ্য আমার কাছে একেবারেই স্পষ্ট নয়। সত্যি বলতে কি সেটা উদঘাটনেরও তেমন আগ্রহ বোধ করছি না। বন্যা আহমেদ তার বক্তৃতায় হেসেছেন কেন তা নিয়ে তসলিমা নাসরিন অসন্তুষ্ট হয়েছেন। আরও অসন্তুষ্ট হয়েছেন যে বক্তৃতায় বন্যা আহমেদ যথেষ্ট ‘রাগ’ এবং ‘ফুঁসে ওঠা’ প্রকাশ করেননি! অভিজিৎ বিষয়ে বন্যা আহমেদের প্রকাশভঙ্গী মনঃপূত না হওয়ায় তা নিয়েও তসলিমা নাসরিনের ‘একটুখানি অস্বস্তি’ হয়েছে বলে তিনি লিখেছেন!
তসলিমা নাসরিন সেদিন হিলটনের সভাকক্ষে উপস্থিত ছিলেন না। আমি ছিলাম, আরও ছিলো ছয় শতাধিক মানুষ, যারা তাদের প্রতিক্রিয়া/অনুভুতি তাৎক্ষণিকভাবে ব্যক্ত করেছেন। এই এ্যালবামের টুইটগুলো পড়লে তসলিমা নাসরিন নিশ্চয়ই তার ভুল উপলদ্ধি করবেন। সভাকক্ষে উপস্থিত কারোই মনে হয়নি যে অভিজিৎ রায়কে কিংবা বাংলাদেশের তাবত সেক্যুলার ব্লগার আর চিন্তাবিদদের বিশ্বের দরবারে উপস্থাপনে বন্যা আহমেদের দিক থেকে কোনো ধরণের ঘাটতি ছিল! বরং উল্টোটাই মনে করছেন সবাই, যা উঠে এসেছে নিক কোহেনসহ আরও বহু লেখকের কলামে, এই টুইটগুলোতেও। তারা এখন বাংলাদেশের সেক্যুলার চিন্তাবিদদের ব্যাপারে, ব্লগারদের আন্দোলনের ব্যাপারে, মত-প্রকাশের সংগ্রামের ব্যাপারে আরও জানতে আগ্রহী।
অনেক উক্তির মধ্যে অভিজিৎদার একটা বিশেষ উক্তি তার বক্তৃতায় উদ্ধৃত করেছিলেন বন্যা আপা। আমিও উদ্ধৃত করছি:
“Being an atheist does not prevent you from prejudice or hatred if you lack human compassion”.
তসলিমা নাসরিন, তার ভাষায়, নিজের ‘ব্যক্তিগত ভালো লাগা না লাগা প্রকাশ’ করেছেন মাত্র; এবং সেটা তিনি করতেই পারেন। কিন্তু তার এই ব্যক্তিগত মতামত পড়ে অন্য কেউ যাতে বিভ্রান্ত না হন মূলত সে তাগিদ থেকেই স্পষ্ট করতে হল বিষয়টা।
ধন্যবাদ সময় নিয়ে পড়বার জন্য।
এটি একটি অসাধারণ লেকচার বন্যা আহমদের তরফে। তাঁর উচ্চ মেধা ও মানবতাবাদের উদার দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি নিবিষ্টতার প্রমাণ এই সুলিখিত বক্তব্য।
এমন এক দিশারি বক্তৃতা আস্তিক-নাস্তিক রাজনীতিবিদ জীবনের পথে নবীন অগ্রসরমান শিক্ষার্থী সবার জন্যেই স্মরণীয় ও আদরণীয় হয়ে থাকবে।
বন্যা আহমেদকে নিরঙ্কুশ অভিনন্দন
বননা আপনাকে কুর্ণিশ জানাই। দাদা চলে গেছে রেখে গেছে আপনাকে এ লড়াই সামনে চালিয়ে নিয়ে যেতে। আমরা অনেক নিরব পাঠক আছি যারা অনেকটা বোবা মানুসের মত তাকিয়ে দেখি ওদের বর্বরতা। আজ পৃথিবীতে কথাও সম্পুর্নু বাক সাধীনতা নেই. ওদের কে নিয়ে কিছু বলা যাবে না। ওদের কথা অনুযায়ি হাজার বছর পুরনো নিয়মে চলতে হবে। ওরা পাল্টাবে না আর আমরা ওদের কথা মানতেও পারবনা। তাই আমরা মুক্তমনা রা যে যেখানে যতটুকু পারি এই সুন্দর পৃথিবি টাকে যত টুকু পারি সুন্দর করে যাই। মুক্তমনা এ এক নিশিদ্ধ নেশা এখান থেকে মুক্তির পথ নেই , সবাই ভালো থাকুন। ওদের কাছ থেকে নিজেকে বাচিয়ে রাখুন। ধন্যবাদ
“আজ পৃথিবীতে কথাও সম্পুর্নু বাক সাধীনতা নেই. ওদের কে নিয়ে কিছু বলা যাবে না।”
– এই ‘ওরা’ আরেক শ্রেনীকেও অন্তর্ভুক্ত করে, যাদের একাংশ হল পশ্চিমের এখনকার অনেক লিবারেল এবং মানবতাবাদীরাও। বন্যা আপাও এ জন্য উনার বক্তৃতায় আহ্বান জানিয়েছেন যাতে মানবতাবাদীদের আন্দোলনও চাপিয়ে দেয়া কোনো এক ধরণের ‘পোস্ট কলোনিয়ালিল’ চিন্তার নামান্তর না হয়ে ওঠে। তিনি পশ্চিমের সুহৃদদেরও বিভিন্ন দেশের পরিস্থিতিগুলোর উপর, সেগুলোর সাথে বৈশ্বিক আরও দশটা প্রেক্ষাপটের যোগাযোগগুলো বোঝার জন্য আরও বেশী হোমওয়য়ার্ক করার আহ্বানও জানিয়েছেন। আশা করি তারা বুঝতে পেরেছেন ঠিক কি বলতে চেয়েছেন তিনি।
ধন্যবাদ পড়বার জন্য।
বক্তৃতাটা উপস্থিত থেকে শোনার সুযোগ যারা পেয়েছেন তাদের জন্য সীমাহীন হিংসা। মানুষজনের প্রতিক্রিয়া পড়ে বুঝতে পারছি উপস্থিত মানুষেরা কেমন বুদ্ধিবৃত্তিক নাড়া খেয়েছেন এই বক্তৃতা শুনে। আমি অবশ্য বাংলাদেশের কয়েকজন সেলিব্রেটি মুক্তচিন্তকদের যারা টুইটারে চরম একটিভ তাদের বক্তব্য মনে মনে খুঁজছিলাম। পেলাম না। ব্যাপার না। আমরা বাঙালিরা এইসব ছোটখাট ব্যাপার পাত্তা দেই না 🙂
একমত আবীর। এই নাড়াটার দরকার ছিল। পশ্চিমে আমাদের যারা সুহৃদ তাদেরও অনেক কিছু উপলদ্ধির সময় এটা। আমাদের চ্যালেঞ্জগুলো আসলে কি সে বিষয়ে নিজেদের প্রি-কনসিভড ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে, হাতে গোণা দু’একটা গৎবাঁধা সোর্স দ্বারা খন্ডিত (এবং অনেক সময়ে বিভ্রান্তিকর) চিত্রের বি্রিফং পেয়ে তা থেকে পুরো পরিস্থিতি বুঝে ফেলার তৃপ্ত অবস্থা থেকেও বেরিয়ে আসতে হবে এই সুহৃদদের।
তসলিমা নাসরিন বন্যা আহমেদের প্রকৃত শুভাকাঙ্ক্ষী হলে তার মুখের হাসি দেখে তাকে অভিনন্দিত করতেন।
প্রতিক্রিয়াগুলি ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ এখানে শেয়ার করার জন্য।
এখানে শুধু খন্ডিত একটা অংশ তুলে ধরা হয়েছে। আরও প্রতিক্রিয়াগুলো পাবেন টুইটারে #BHAVoltaire হ্যাশট্যাগের আওতায়।
ধন্যবাদ ,পড়বার জন্য।
ভাল লাগলো প্রতিক্রিয়াগুলো জেনে। পাশে আছে দেখতে পেয়ে
ধন্যবাদ, পড়বার জন্য।