(লেখাটা আমি শুরু করেছিলাম নিজের জন্যই। তারপরে লেখাটার মাঝামাঝির কিছু পর পর্যন্ত এগিয়ে কি মনে করে বিরতি নেবার জন্য ফেসবুক ঘাটতে গিয়ে বহুদিন পরে অন্য একটা লেখার সূত্র ধরে আমার প্রিয় ব্লগ “মুক্তমনা ” তে ঢুকলাম। সেখানে পিছিয়ে পিছিয়ে পুরানো সব লেখা দেখতে গিয়ে বন্যাপুর “আজ ১০০দিন” লেখাটা চোখের সামনে এল। পড়লাম, মন খারাপ করলাম, পুরোনো স্মৃতি মনে পড়ল। অভিদা বেচে থাকতে কথা দিয়েছিলাম লিখব। অভিদা চলে যাবার পর মন থেকে চেয়েছিলাম লিখিব। কিন্তু কি লিখব, কিভাবে লিখব, এসব দ্বিধাদন্দে লেখা হয়ে ওঠেনি। তাই আজ যখন লিখলামই, সেটা যাই হোক না কেন,যার জন্যেই হোক না কেন সেটা ব্লগে তুলে দেই। কারন সব কিছুর আগে আমার সবার জন্যই বলি আর নিজের জন্যই বলি লেখালেখির শুরুটা এই মুক্তমনাতেই। তাই অনেকদিন পরের এই লেখা আমি আমার গুরু, বড় ভাই, প্রিয় অভিজিৎ রায় কে উতসর্গ করলাম। ভাইয়া বেচে থাকলে ম্যালা খুশি হতেন। রুমি স্কোয়াডে চুপচাপ অনশনে চলে যাবার কথা শুনে ভাইয়া পুরা বাচ্চাদের মত খুশি হয়ে পাগলা টাইপ একটা লেখা লিখে ফেলেছিলেন! বিখ্যাত হবার কোন ইচ্ছা না থাকলেও ওনার লেখার তোড়ে প্রায় বিখ্যাত হয়ে যাচ্ছিলাম! আপনাকে অনেক ভালোবাসি অভিদা! মৃত্যুর পরে হয়ত জীবন নেই জেনেও বলতে ইচ্ছে হয় যেখানেই আছেন ভালো থাকবেন অভিদা! অনেক ভালো থাকবেন!)

“মুখোশ নেবেন মুখোশ?
রোদে পোড়া মুখ, চাষাবাদি বুক,
চোখে স্বপ্ন প্রাণে মগ্ন
আমিতো ভাই অল্প বুদ্ধি
আমার কাছে এই সমাজের
হরেক রকম মুখোশ আছে
নানান রকম মুখোশ আছে!”

ছোট বেলায় শোনা মাহমুদুজ্জামান বাবুর এই গানটা প্রায়শই স্মৃতিতে ঘুর ঘুর করে।
অস্কার ওয়াইল্ডের একটা বিখ্যাত উক্তি আছে।

Man is least himself when he talks in his own person. Give him a mask, and he will tell you the truth.

তার মানে কি দাড়ায়? তার মানে কি এই-ই দাড়ায় না যে মানুষ স্বাভাবিক জীবন যাপনের প্রতিমূহুর্তে নিজেকে একেকটা অদৃশ্য মুখোশে ঢেকে নিয়ে বেচে থাকে? শুধুমাত্র বাইরে চামড়ার মুখশ্রীর উপরে আরেকটা কৃত্রিম মুখোশ দিয়ে ঢেকে নেয়ার পরেই বের হয়ে আসে তার আসল রূপ!

চামড়ার অন্তরালের মানুষের মুখোশের আবার একেক সময়ে একেক রূপ! একা একজন সাধারন মানুষে জীবনবৃত্তান্তের কথা লিখতে গেলেও দেখা যাবে যে মুখোশ সময়ে সময়ে ক্ষণেক্ষণে পরিবর্তনশীল। কারো কারো ক্ষেত্রে হয়ত এমনও আছে যাদের প্রতিদিনকার জীবনের প্রতিমূহুর্তে যেসব মানুষের সাথে সময় পার করতে হয় তাদের প্রত্যেকের জন্য আলাদা মুখোশ তুলে রাখা আছে! পরিবারের সাথে একরকম, কর্মস্থলে একরকম, অপরিচিত অযাচিত মানুষদের সাথে একরকম আবার উচুনিচু স্তরভেদে মানুষদের সাথে একরকম! আরো ছোট স্কেলে চিন্তা করলে হয়ত দেখা যাবে পরিবারের মধ্যে বাবা,মা, ভাই,বোন,স্বামী,স্ত্রী,ছেলে,মেয়ে সবার জন্যই আলাদা আলাদা মুখোশ তোলা আছে!

আরো অদ্ভুত ব্যাপার হয় তখনই যখন আলাদা ক্যাটাগরির মানুষগুলো একত্রে বসে তখন আবার আরেক ধরনের মুখোশ বের হয়ে আসে! যেমন ধরা যাক যে লোকটা পরিবারের সবার জন্য আলাদা মুখোশ ব্যবহার করে সেই আবার ডাইনিং টেবিলে সবার সাথে খেতে বসে আরেকটা মুখোশের আশ্রয় নেয়! অথবা ধরা যাক অফিসে যে লোকটা একা বসের সামনে তেলতেলে মুখোশের আশ্রয় নেয় সে ই আবার বসের সাথে যখন তার নিচের পদের কর্মচারীদের সাথে নিয়ে মিটিঙে বসে তখন এই তেলের সাথে কিছু ভাবগাম্ভীর্য যুক্ত হয়ে আরেকটা মুখোশ তৈরি হয়।

বন্ধুত্ব নাকি একটা অবারিত দ্বার যেখান দিয়ে কোন বাধাহীন ভাবে সব কিছুর বাতাস যাওয়া আসা করে। কিন্তু সেখানে গিয়েও মানুষ মুখোশের আশ্রয় নেয়। ছেলেবন্ধুর জন্য একটা, মেয়েবন্ধুর ক্ষেত্রে আরেকটা আবার প্রতিটা আলাদা বন্ধুর জন্য আলাদা মুখোশ! তবে এই এক বন্ধুত্বের ক্ষেত্রেই হয়ত বলে ফেলা যায় যে মুখোশ ছাড়াও অবারিত দুয়ারের বন্ধুত্বও সম্ভব এবং যাদের হয় তারা ভাগ্যবান।

ব্যক্তি মুখোশের বাইরেও আবার মানুষের গোষ্ঠিগত মুখোশ আছে। এই মুখোশে ব্যক্তি মুখোশের মত অত ঝামেলা নেই। এই ক্যাটাগরিতে একই গোষ্ঠি বা হেডলাইনের মানুষ সবাই একই মুখোশ পরে গোষ্ঠিগত প্রয়োজনে একত্রিত হয়। এই গোষ্ঠিগত মুখোশের তলায় মানুষের নিজস্বতা (Iindividuality) হারিয়ে যায়। ব্যক্তিগত জীবনের খুব ভালো মানুষটাও দেখাযায় সামাজিক/ধর্মীয়/জাতিগত দাঙ্গা/উন্মাদনায় মানুষ হত্যা/ধর্ষণের মত খারাপ কাজ করে ফেলে অনায়াসেই। গোষ্ঠিগত মুখোশের এতই ক্ষমতা যে ব্যক্তিমানুষের মনের সামান্যতম দ্বিধাও সে গলা চেপে মেরে ফেলে।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এত এত মুখোশের প্রয়োজন পরল কবে থেকে? জন্মের সময় সরল জৈবিকতা নিয়ে জন্মানো একটা শিশু কেন বড় হয়ে উঠতে উঠতে এতসব অনর্থক মুখোশের জালে জড়িয়ে গেল? সহজ মানুষের কি এমন প্রয়োজন পরল যে সে নিজেকে অজস্র মুখোশের জটিলতায় ঢাকতে শিখল?

ছোট্ট এক্টা শিশু যখন জন্মায় তখন তার শরীরের ত্বকটুকু ছাড়া আর কোন মুখোশ থাকে না। জন্মের পর পরই কাপড়ে জড়ানোর মধ্যদিয়ে মুখোশের সাথে তার প্রথম অনাকাঙ্ক্ষিত পরিচয়। এরপরের বেশ কয়েকটা বছর এই পোশাক নামক অস্বস্তিকর অনাকাঙ্ক্ষিত মুখোশ ছাড়া আর কিছুই তার উপরে মুখোশের আবরণ ফেলতে পারে না। তার সব জৈবিক ও মানসিক চাহিদা আর পছন্দ অপছন্দ সরাসরি ব্যবহার বা প্রকাশ ভঙ্গির মধ্যদিয়ে প্রকাশিত হয়। যেমন, ক্ষুদা-তৃষ্ণায় কাদে, ভয় পেলে কাদে, আনন্দ পেলে হাসে, কাউকে পছন্দ হলে হেসে কোলে যায়, অপছন্দ হলে চেহারা দেখা মাত্র মুখ ফিরায়ে নেয়, ভয় পেলে সাথে সাথে কেদে দেয় অথবা দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে,জামাকাপড় পরে থাকতে বিরক্ত হয় এরকম আরো অনেক কিছু। তারপর তার পরিবার ধীরে ধীরে দিনের পর দিন তার উপর সভ্যতা আরোপ করতে থাকে! ছোটবেলায় শরীর আর মনের/মস্তিস্কের সরাসরি সংযোগ থাকে। মন যা চায় শরীর তা প্রকাশ করে আর শরীরে যা ঘটে তা মস্তিস্কে প্রভাব ফেলে বা জমা হয়। কিন্তু বড় হতে হতে শরীর-মন-সত্তা-মস্তিস্ক এসব ব্যপারগুলোকে আমরা আলাদা আলাদা ভাবে পরিচালিত করতে শিখে যাই। আমাদের শিখতে বাধ্য করা হয়। অথবা আমাদের পরিপার্শ্ব দিয়ে আমরা প্রভাবিত হই।

মানুষের এইসব মুখোশের পেছনের অন্যতম বড় একটা কারন হচ্ছে আশেপাশের মানুষ থেকে খারাপ কথা/ খোটা শুনবার ভীতি। রবিবাবুর ভাষায়, “পাছে লোকে কিছু বলে!” এই পাছের লোকে কি বলবে সেই অহেতুক ভীতিই বেশির ভাগ মানুষদের (বিশেষত মধ্যম ক্যাটাগরির মানুষ বা মধ্য বিত্তদের!) মুখোশের আড়ালে মুখ লুকাতে বাধ্য করে। যাদের হারাবার কিছুই নাই আর যাদের ফুরোবারও কিছুই নাই তাদের লুকানোরও কিছু নাই। সমুদ্র থেকে একবালতি পানি নিলে যেমন কিছু হয় না তেমনি মরূভূমিতেও একবালতি পানি ঢেলে দিলে কিছুই হয় না। মাঝখান দিয়ে চৌবাচ্চা আর পুকুরের ভয়! তাতে বেশি পানি ঢাললেও উপচায়ে পরবে আবার পানি নিতে থাকলেও একসময় খটখটা শুকনা হয়ে যাবে! মধ্যবিত্তের এই ধন-সম্পত্তি,অর্থ-বিত্ত,সামাজিক সম্মান, এমনকি জ্ঞানও হারায়ে ফেলবার ভয়ে মধ্য বিত্ত আজীবন ছলনা করতে থাকে! এজন্যেই আমার মত বাঙালি মধ্যবিত্ত চায়ের দোকানে বসে বারাক ওবামা থেকে আইজাক নিউটন পর্যন্ত সবাইরে তার জ্ঞানের তোড়ে ভাসায়ে দেয়, কারন পাশে বসা লোকটা বা বন্ধুটা যদি মনে করে যে আমার জ্ঞানবুদ্ধি তার চে কম! তাইলে ইজ্জত যাবে যে! মধ্যবিত্তের ইজ্জত বোধহয় দুনিয়ার সবচে সস্তা বস্তু!

মুখোশের ভালো খারাপের আলোচনায় আমার যাবার ইচ্ছে নেই। কারন সেটা অনর্থক তর্কে পর্যবাসিত হবে। শুধু কিছু কথা লিখে রাখবার আছে। মানুষকে একপ্রকার ধ্বংস করে দেয়ায় এইসব মুখোশের জুড়ি নেই! মানুষ এই সকল মুখোশের চাপে পড়ে তার নিজস্বতা আর স্বকীয় গুণাবলি হারাতে থাকে দিনের পর দিন। তার নিজের বলে কিছু থাকে না। সে একটা সামাজিক টেমপ্লেটে পরিণত হয়। এবং সবচেয়ে ভয়াবহ যা হবার হয় সেটা হল প্রায় বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রেই কোন না কোন সময় তার মনের অবদমিত ইচ্ছা আকাঙ্খা,অভ্যাস, চিন্তাভাবনা, চাওয়া পাওয়া গুলো বের হয়ে আসে খারাপ ভাবে। গ্যাসকে অধিক চাপে রাখলে গ্যাস হয় ফুটো খুজে নিয়ে বের হয়ে আসে অথবা বের হতে না পেরে একসময় বিস্ফোরিত হয়। মানুষের অবদমিত স্বকিয়তাগুলোও তাই। নিষিদ্ধতার আকর্ষণ তাকে পেয়ে বসে। সব নিষিদ্ধতাই খারাপ না, যেমন সেক্স এডুকেশন খুবই জরুরী একটা ব্যপার। কিন্তু আমাদের মত দেশে অতি নিষিদ্ধতার পাল্লায় পরে ছেলেপিলের সেক্স এডুকেশন হয় রাস্তার চটি বই থেকে বা পর্ণ দেখে বা মেয়েদের পণ্য হিসাবে দেখানো বিজ্ঞাপন বা মিডিয়া থেকে। যার ফলাফল অবদমিত কামের অস্থির এবং অস্বাভাবিক বিকৃত বহিঃপ্রকাশ।

উপরের অংশ পর্যন্ত লিখে রেখে বিরতি নিয়ে অনেক দিন পর আবার ৩য় কি ৪র্থ বারের মতন God must be crazy মুভিটা দেখতে বসেছিলাম। ইচ্ছে করেই যে ওটাই দেখতে বসেছিলাম তা না। কিন্তু দেখতে দেখতে আবিস্কার করলাম যে ঐমুভির অনেক কিছুর সাথেই এই লেখার বিষয়বস্তু মিলে যায়। কালাহারির বুশম্যান আদিবাসী গোষ্ঠির একটা পরিবার। যাদের সব কিছুই অতিরিক্ত সাধারন। তাদের কোন ক্যালেন্ডার নাই,দিনরাতের হিসাব নাই,শুক্র শনি রবিবার নাই, সপ্তাহ মাস নাই! পোষাক আশাকের বাহুল্য নাই। জীবনাচরনে কোন মুখোশের বালাই নাই! খাদ্যের জন্য পশু শিকার করার পর (বেসিকালি ট্রাংকুইলাইজার দিয়ে ঘুম পাড়ায়ে দেয়) সেই পশু হত্যার আগে তার পাশে বসে তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়া! একটা সামান্য কোকের বোতল নিয়ে ঝামেলা বাধার সম্ভাবনা দেখা দিলে সেটা ফেলে আসার জন্য কষ্ট করা! আর সবচে ইন্টারেস্টিং ব্যাপার ছিল যে ওদের ভাষায় খারাপ বা নেগেটিভ কোন শব্দ নেই!!
আর অপরদিকে সভ্য মানুষ প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় নিজেই নিজের নিয়মতান্ত্রিক জীবন আর সভ্যতার ঘুর্ণিপাকে প্রতিনিয়ত ঘুরপাক খেতে থাকে।

না, তার মানে এই না যে মুখোশহীন সরল জীবন যাপনের জন্য সভ্যতা পরিত্যাগ করতে হবে। জোর করে চাপিয়ে দেয়া মুখোশের তল থেকে মানুষের যেসব প্রবণতা প্রতিনিয়ত বেরিয়ে আসার চেষ্টা চালিয়ে যায় সেগুলোকে ঠেকিয়ে রাখার কি আর কোন উপায় নেই? অথবা আদৌ কি ঠেকিয়ে রাখার দরকার আছে? মানুষের সব কাজের,আচরণের বা ব্যবহারেরই একটা ভালো এবং একটা খারাপ দিক থাকে। খারাপ দিকটাকে মুখোশে চাপা দিতে গিয়ে ভালো দিকটাও আমরা হারাই। এর চে ভালো দিকটাকে তুলে এনে সেটাকে নার্চার করাটা কি বেশি উপকারী না? তবে হ্যা, ভালো কাজ সবসময়েই সময় সাপেক্ষ এবং ধৈর্যসাপেক্ষ।
ছোটবেলায় আমরা ভাবসম্প্রসারনের জন্য পড়তাম,

দ্বার বন্ধ করে রেখে ভ্রমটারে রুখি।
সত্য বলে আমি তবে কোথা দিয়ে ঢুকি?
” (এইটাও রবিবাবুর। বুড়ায় একটা জিনিস! মানুষ সম্পর্কিত কিছুই বোধহয় বাদ রাখে নাই!)

মানুষের নিজের কাছে নিজের মুখোশের অন্তরালটা খুজে পাবার সবচেয়ে ভালো উপায় বোধহয় একাকিত্ব। একা একা নিজেকে সময় দেয়া। হয় প্রতিদিন অন্য সব কিছুর মাঝেও নিয়ম করে নিজের জন্য কিছু সময় বরাদ্দ করা। অথবা কিছু দিন/সপ্তাহ/মাস এমনকি প্রয়োজনে বছর নিজেকে এবং নিজের চিন্তাভাবনাগুলোকে দেয়া। নিজের আলো অন্ধকার নিয়ে চিন্তা করা, নিজের অবদমিত চিন্তাগুলোকে বেরিয়ে আসতে দেয়া। তাহলে সময় শেষে বেশ হালকা লাগে নিজেকে। মুখোশের প্রয়োজনীয়তাটা কমে যায় অনেকখানি।

এই মুখোশ ছুড়ে দেয়ার আরেকটা বড় উপায় বোধহয় জীবনের লক্ষ্য খুজে পাওয়া। তবে বেসিকালি জীবনের কোন লক্ষ্য নাই। জীবনের লক্ষ্য বলতে যা বুঝাতে চেয়েছি তা হচ্ছে আমার মনের খোরাকের জন্য আমি কি করতে চাই, আমার সমস্ত শারীরিক ও মানসিক শক্তি আমি কিসের পেছনে ব্যয় করতে চাই তা খুজে পাওয়া। যার যার জীবনের এই সূত্রটুকু খুজে পেলে মুখোশের আর প্রয়োজন হয় না।
নিকোলাই অস্ত্রোভস্কির ইস্পাতে আছে,

“মরবার মত একটা সত্যিকারের আদর্শ থাকলে মানুষ মরতে ভয় পায় না। আদর্শই মানুষকে শক্তি জোগায়। যা করছ ঠিকই করছ – এটা জানা থাকলে তুমি হাসিমুখে মরতে পার।”

এই জীবনের উদ্দেশ্য খুজে পাবার জোড়েই বাংলা সিনেমার মত বড়লোকের মেয়ে গরীবের ছেলের সাথে ভেগে যায়, চে গুয়েভারা ডাক্তারি ছেড়ে বিপ্লবী হয়ে যায়, জিয়োর্দানো ব্রুনো নির্ভয়ে আগুনে পুড়ে মারা যায়,আর আমাদের রবি বাবু শিক্ষা দিক্ষা আর বাপের জমিদারির ধার না ধেরে আপন মনে জীবনের কথা লিখে যায়!

তবে হ্যা, জীবনের লক্ষ্য না পেয়ে মুখোশের প্রয়োজনীয়তা হারিয়ে ফেলা বা মুখোশের কারচুপি ধরে ফেলার ব্যপারটা বেশ ভালো রকমের ভয়ানক। কারন তখন সবকিছুর সামনে চলে আসে ভয়ানক শূন্যতা, অসীম শূন্যতা। কি করছি,কেন করছি, কেন বেচে আছি এসব প্রশ্নের কোন উত্তর তখন আর খুজে পাওয়া যায় না। যার ফলাফল ভয়াবহ মেন্টাল ডিপ্রেশন। তাই আসলে বেশিরভাগ মানুষই শেষ পর্যন্ত ঐ মুখোশটাই আঁকড়ে ধরে রাখতে পছন্দ করে। কারন তার সম্পত্তি যে ওটুকুই!

তবে মুখোশধারী এ সমাজে মুখোশহীন মানুষদের বাকিরা হয় মানসিক ভারসাম্যহীন পাগল আখ্যা দেয় অথবা বিদ্রোহী বলে সমাজ চ্যুত করে। যুগে যুগে এইসব উন্মাদেরাই বিপ্লবের সূচনা করে। অগ্নিস্ফুলিঙ্গ জ্বেলে দেয় সমাজের বুকে। এরাই পথ দেখায়।

শেষ করি আমার অত্যন্ত প্রিয় কবি খলিল জিবরানের The Madman বইয়ের How I became a madman. এই কবিতাটা দিয়ে

How I Became a Madman

You ask me how I became a madman. It happened thus: One day, long before many gods were born, I woke from a deep sleep and found all my masks were stolen—the seven masks I have fashioned and worn in seven lives—I ran maskless through the crowded streets shouting, “Thieves, thieves, the cursed thieves.”

Men and women laughed at me and some ran to their houses in fear of me.

And when I reached the market place, a youth standing on a house-top cried, “He is a madman.”   I looked up to behold him; the sun kissed my own naked face for the first time. For the first time the sun kissed my own naked face and my soul was inflamed with love for the sun, and I wanted my masks no more. And as if in a trance I cried, “Blessed, blessed are the thieves who stole my masks.”

Thus I became a madman.

And I have found both freedom and safety in my madness; the freedom of loneliness and the safety from being understood, for those who understand us enslave something in us.

But let me not be too proud of my safety. Even a thief in a jail is safe from another thief.”

(অভিজিৎ দা আমার জীবনের তেমনই একজন চোর যিনি আমার সেই সাতটি মুখোশের বেশকটি চুরি করে নিয়ে গিয়েছেন! আপনি বেচে থাকুন আমাদের মগজের কোষে কোষে। যেন আপনাকেও ছাড়িয়ে যেতে পারি আমরা!)