গত ক’দিন ধরে ফেসবুকে একটি লেখা ঘুরে বেড়াচ্ছে, শিরোনাম ‘“মুক্তমনা” ব্লগটি কাঁদের এবং তাঁরা আসলে কী চায়?‘ লেখক পিনাকী ভট্টাচার্য। ইতোমধ্যেই যারা উনার কর্মকাণ্ড সম্বন্ধে সচেতন, তারা জেনে থাকবেন যে ভদ্রলোক মুক্তমনা ব্লগ ও এর লেখকদের বিরুদ্ধে বছর খানেক হলো রীতিমতো যুদ্ধ ঘোষণা করে মাঠে নেমেছেন। উনার বেশিরভাগ পোস্টের বক্তব্যই আসলে বিতর্ক উষ্কে দেয়া। নানা সময় বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে সঙ্গে মুক্তমনা প্রসঙ্গও এসেছে তাঁর লেখালেখিতে। বিশেষ করে গত কয়েক মাসে বেশ ক’জন মুক্তচিন্তকের মৃত্যু যেভাবে ‘নাস্তিক-ব্লগারদের’ প্রতি এদেশের পাবলিকের পুরনো বিদ্বেষের আগুনে নতুন করে ঘি ঢেলে দিয়েছে, এতে করে ফেসবুকে নাস্তিক্যবিরোধিতার ট্রেন্ডে সওয়ার হয়ে তাঁর লেখার কাটতি বেড়েছে কয়েক গুণ। বিজ্ঞানমনস্ক, অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীলদের নিয়ে তাঁর ধারাবাহিক লেখালেখিতে সর্বশেষ সংযুক্তি হচ্ছে এ লেখাটি।
সত্যি বলতে, পিনাকী ভট্টাচার্যের লেখাগুলোর অনেক বিষয়েই দ্বিমত থাকা সত্ত্বেও তা নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন বোধ করি নি কখনো। ফেসবুকে কে কী লিখলো না লিখলো তা নিয়ে মাথা ঘামানো আসলে অনর্থক। ফেসবুক আর যা-ই হোক, সুস্থ আলোচনার জায়গা না। তবু এ লেখাটিকে একেবারে ফেলে দেয়া যায় না। আর সব জায়গার চাইতে ফেসবুকে ঘৃণার বিষবাস্প ছড়ানো অনেক সহজ। দেড় হাজারটি লাইক ও প্রায় অর্ধ সহস্র শেয়ারকে যদি গণ্য না-ও করি, তবু এ লেখাটিতে তিনি যেভাবে মুক্তমনাদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ আনার সঙ্গে সঙ্গে তাদেরকে সাম্প্রদায়িক উষ্কানিদাতা ও ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছেন, তাতে একেবারে চুপ করে বসে থাকা সম্ভব নয়।
পুরো লেখার আলোচনা কেবল একটি ছবিকে কেন্দ্র করে। এই ছবিটা আগে বেশ কয়েকবার দেখেছি। লেখাটি পড়ার আগ পর্যন্ত আমিও জানতাম যে মসজিদে এক হিন্দুকে এভাবে পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়েছে। সত্য উন্মোচনের জন্য পিনাকী সাহেবের ধন্যবাদ প্রাপ্য। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, সত্যটা জানানোর পাশাপাশি তিনি যেভাবে চক্রান্ত আবিষ্কারের চেষ্টা করেছেন, সেটাকে ঠিক সৎ উদ্দেশ্যপ্রসূত বলে মনে হয় না। তিনি লিখেছেন,
“মডারেটেড কোন ব্লগে এই ছবিটি প্রথম ব্যবহার করা হয় ২০০২ সালে মুক্তমনায় একটি লেখায়, জনৈক রাহুল গুপ্ত “Ethnic Cleansing In Bangladesh” নামে এই লেখাটা লেখেন।”
গুগল সার্চে দেখা যায় ছবিটি আসলে তারও আগে থেকেই ইন্টারনেটে ছিল। একটু কষ্ট করে টাইম রেঞ্জটা ফিল্টার করে যদি তিনি সার্চ করতেন, তাহলে এ বিভ্রান্তিটি হতো না। আপাতত ধরে নিচ্ছি এটা স্রেফ অজ্ঞতাজনিত ভুল, উদ্দেশ্যমূলকভাবে তিনি এমন মিথ্যার আশ্রয় নেন নি। যাহোক, এরপর তিনি লিখেছেন,
“মুক্তমনার লেখাটি ছিল বিশুদ্ধ চোস্ত ইংরেজিতে। তাই এটা বুঝতে সমস্যা হয়না কাঁদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এই লেখাটি লেখা হয়েছিল।”
এখানে অনেকেই ষড়যন্ত্রের গন্ধ পেতে পারেন। আসল কাহিনী হচ্ছে, ঐ সময় মুক্তমনা ব্লগই ছিলো না। ব্লগ চালু হয় ২০০৮-এর শেষ দিকে, আর রাহুল গুপ্তের লেখাটি ২০০২ সালের। যতদূর জানি তখন ইয়াহু গ্রুপে লেখা পাঠাতেন লেখকেরা। কেবল নাস্তিকেরা নন, আস্তিক লেখকেরাও তাদের লেখা দিতেন। ধর্ম সহ আরও অন্যান্য নানা বিষয়ে বিতর্ক-আলোচনা হতো তাতে। তখন ইন্টারনেটে বাংলা লেখার এত সুবিধা ছিল না। এখন যেমন F12 চেপে অভ্রতে বাংলা লিখতে পারি যত্রতত্র, তখন সে উপায় ছিল না। লেখকেরা মাইক্রোসফ্ট অফিসে বাংলা লিখে পিডিএফ আকারে পাঠাতেন, ওয়েবসাইটে সেগুলোই আপলোড করা হতো। পুরনো সাইটটা দেখুন এখানে, এরকম অনেক লেখাই পাবেন। যারা ইংরেজিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন, তারা ইংরেজিতেই লিখতেন। মুক্তমনার ইংরেজি ব্লগে এখনো লেখেন অনেকে। এখানে কোন উদ্দেশ্য-হাসিলজনিত ব্যাপার নেই। যাহোক, পিনাকী বাবু আরও কী লিখেছেন দেখি।
“মুক্তমনা সেই লেখাটি সরিয়ে ফেলেছে। কিন্তু লেখাটি এখনো ওয়েব আর্কাইভে আছে।”
মুক্তমনার পুরনো সাইটে লেখাটা ছিল, এখনো সেখানেই আছে। তবে আর্কাইভের ৮ জুলাই, ২০১৪ এর স্ন্যাপশট থেকে দেখা যায় ছবিটি আর নেই। এ ব্যাপারে মুক্তমনার অ্যাডমিনরাই ভালো বলতে পারবেন।
“কিন্তু তাঁরা সেই ভুল ছবি দেবার দায় কখনো স্বীকার করেনি, ভুল স্বীকার করেনি।”
লেখকের ভুলের দায় আসলে মুক্তমনার উপর বর্তায় না, স্বীকার-অস্বীকারের প্রশ্ন তো আসে আরও পরে। এ প্রসঙ্গে ব্লগ নীতিমালার ৪.২, ৪.৩ ও ৪.৪ ধারাগুলো দেখুন –
৪.২। মুক্তমনায় প্রকাশিত সকল লেখা এবং মন্তব্যের দায় একান্তই লেখকের। কারো লেখা বা মন্তব্যের জন্য কোনোভাবেই মুক্তমনা কর্তৃপক্ষকে দায়ী করা যাবে না।
৪.৩। লেখকদের কোন লেখাই মুক্তমনা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিনিধিত্ব করে না। লেখা মূলতঃ লেখক বা মন্তব্যকারীর দৃষ্টিভঙ্গিরই প্রতিফলন। মুক্তমনায় প্রকাশিত হয়েছে বলেই সেটা মুক্তমনা কর্তৃপক্ষের চিন্তাধারার প্রতিফলন ভেবে নেওয়াটা ভুল হবে। মুক্তমনা মুক্তচিন্তা প্রকাশের একটি প্লাটফর্ম; আর চিন্তা যত মুক্ত হবে, তার মধ্যে বৈচিত্র্যও তত বেশি থাকবে। নানা ধরণের বৈচিত্র্যকে ধারণ করেই মুক্তমনা বিকশিত হতে চায়।
৪.৪। মুক্তমনা সম্পাদনামন্ডলীর সাথের জড়িত ব্যক্তিরা নিজ নামে কোন লেখা প্রকাশ কিংবা মন্তব্য প্রদান করলে তা কর্তৃপক্ষের নয়, বরং লেখকের ব্যক্তিগত অভিমত হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
ধারা ২.১৮-তে বলা আছে –
২.১৮। মুক্তমনায় কোন লেখকের লেখা নিয়ে সন্দেহ কিংবা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হলে, কিংবা লেখা বিষয়ে প্রয়োজনীয় রেফারেন্স চাওয়া হলে লেখক সেই বিভ্রান্তি দূর করতে আন্তরিক হবেন এবং প্রয়োজনীয় রেফারেন্স দিতে সচেষ্ট হবেন। তার পরিবর্তে লেখক নিজ প্রোপাগান্ডাকেই বিনা রেফারেন্সে সত্য হিসেবে জাহির করতে থাকলে মুক্তমনা কর্তৃপক্ষ লেখাটি মুছে ফেলতে পারেন এবং সেই সাথে লেখককে সতর্ক করতে পারেন। একাধিকবার এই অপরাধ করা হলে সেটাকে ভ্যান্ডালিজমের পর্যায়ভুক্ত করা হবে, এবং এ সংক্রান্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে (১.৬ দ্রঃ)।
কাজেই লেখকের ভুলের জন্য কর্তৃপক্ষকে যেমন দায়ী করা চলবে না, লেখা সরানোর জন্য কর্তৃপক্ষেরও কোন বিবৃতি দেয়ার বাধ্যবাধকতা নেই এখানে।
মুক্তমনার মডারেটরদের সবার সঙ্গে আমার যোগাযোগ নেই বলে বলতে পারছি না যে ভুলটি জানা সত্ত্বেও চুপচাপ এড়িয়ে যাওয়া হয়েছিল কিনা। এমনও তো হতে পারে এ ভুলের ব্যাপারে অ্যাডমিনদের কেউই অবগত ছিলেন না। তাছাড়া মুক্তমনার লেখকেরা কখনোই দাবি করে নি যে তারা ভুলের ঊর্ধ্বে। বরং মুক্তমনা সবসময়ই সমালোচনাকে সাধুবাদ জানায়। অতীতে দেখেছি, বিভিন্ন বিষয়ে লেখকেরা তুমুল বিতর্ক করেছেন, যুক্তি-পাল্টা যুক্তি দিয়ে পোস্ট করেছেন। আমার ঈমান দুর্বল হতে শুরু করে মূলত এ ধরনের বিতর্ক থেকেই, যখন দেখতাম শাণিত যুক্তির নিচে পড়ে আস্তিকেরা উপর্যুপরি কুপোকাত হচ্ছেন। অনেকদিন হলো এই চর্চাটা আর নেই। পরাজিত হবার হতাশা থেকেই কিনা জানি, ধর্ম ও বিজ্ঞান নিয়ে বিতর্ক করা অনেক লেখকই এখন মুক্তমনা ছেড়ে সদালাপের মতো ফোরামগুলোয় লেখেন, পিছনে বসে মুক্তমনার সমালোচনা করে যান। পিনাকী ভট্টাচার্যও এ লেখাটি লিখেছেন ফেসবুকে। সবচেয়ে ভালো হতো তিনি যদি মুক্তমনাতেই এ লেখাটি পোস্ট করতেন। পিনাকী বাবুর মতো সরাসরি কন্সপিরেসি থিওরিতে যেতে চাই না বলেই জানিয়ে দিই যে, এভাবে পেছনে বসে যা খুশি লিখে যাওয়া দেখে সন্দেহ জাগে আসলেই তিনি চান কিনা মুক্তমনা এই ভুল স্বীকার করে বিবৃতি দিক। নাকি মুক্তমনায় জীবনেও ঢু না মারা নাস্তিকবিদ্বেষের হুজুগে গা ভাসিয়ে দেয়া ফেসবুকারদের কাছে নিজের হিট বাড়াতেই এরকম আধা সত্য আধা মিথ্যার ঝালমুড়ি? মুক্তমনার কর্তৃপক্ষস্থানীয় কয়জনের দৃষ্টি তিনি আকর্ষণ করতে পেরেছেন এই নোট লিখে আমি জানতে আগ্রহী। সবচেয়ে বড় কথা, আরও কয়জন মুক্তমনার হত্যাকাণ্ড জায়েজ করতে এ বানোয়াট কুৎসাপূর্ণ লেখাটি জ্বালানি যোগাবে, সে প্রশ্নও এড়িয়ে যাবার নয়।
ঠিক কী কারণে রাহুল গুপ্ত তার লেখায় এ ছবিটি দিয়েছিলেন আমি জানি না। আমার বিশ্বাস, তিনি নিজে ছাড়া আর কেউ এটা বলতে পারবেন না। রাহুল গুপ্তকে কেউ জিজ্ঞেস করলেই ব্যাপারটা জানা যেত। সেটা যখন পারা যাচ্ছে না, তাই ধারণার উপর ভিত্তি করেই যা কিছু বলা সম্ভব। আমার ধারণা উনি ভুল করে এটা দিয়েছিলেন। সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের হাজার হাজার দৃষ্টান্ত আছে। সেখান থেকে কোনটা ভুল কোনটা ঠিক বেছে বের করা অনেকসময়ই খুব কঠিন। সোমালিয়ায় দুর্ভিক্ষে মারা যাওয়া শিশুর ছবি দেখিয়ে যদি আপনাকে বলা হয় এটা মুক্তিযুদ্ধে নিহত শিশুর ছবি, মুক্তিযুদ্ধের সবগুলো ছবি দেখে না থাকলে আপনার পক্ষে সেটা বোঝা সম্ভব? এযুগে গুগল সার্চ করে হয়ত সত্যিটা জেনে নিতে পারবেন আপনি, তা-ও যদি সোমালিয়ার শিশুর ছবিটা অথেন্টিক বর্ণনাসহ পান, তাহলে। ভালো মতো যাচাই না করে লেখার কারণেই খুব সম্ভবত রাহুল গুপ্ত এ ভুলটি করেছিলেন। এখানে শুধু শুধুই ষড়যন্ত্রের গন্ধ খুঁজে মস্তিষ্কের নিউরনগুলোকে চাপে রাখার কোন মানে হয় না। হ্যানলন’স রেজার বলে একটা নীতি আছে, যার মূলকথা হচ্ছে, কোন কর্মকে যদি কেবল বোকামি দিয়েই ব্যাখ্যা করা সম্ভব হয়, তাহলে তাতে শয়তানি খোঁজা বাহুল্য। কন্সপিরেসি থিওরিস্টদের জন্য এ নীতিটি জানা থাকা আবশ্যক।
মুক্তমনার নীতিমালা নিয়ে দু’বাক্য খরচ করে এরপর পিনাকী ভট্টাচার্য লিখেছেন –
“এই রাহুল গুপ্তের আর কোন লেখা নেই মুক্তমনায়। বিষয়টা অবিশ্বাস্য। দুম করে এসে একটা পৌস্ট দিয়েই উধাও।”
কেবল রাহুল গুপ্ত নন, অনেকেই আছেন এখন পর্যন্ত একটিই লেখা দিয়েছেন। এরকম লেখকদের মধ্যে প্রয়াত হুমায়ুন আজাদও আছেন। সেটাও ব্লগ চালু করার অনেক আগেই। ব্লগ চালু হবার পর একেবারে গোড়ার সময় থেকেই আমি মুক্তমনার সঙ্গে আছি। অল্প কয়েকটা মন্তব্য করার পরই আমি মেইলে মুক্তমনার ইনভিটেশন পেয়ে এখানে যুক্ত হই। অ্যাকাউন্ট পাবার ক্ষেত্রে মুক্তমনায় কড়াকড়ি আরোপ করা হয় আরও দেরিতে। নীতিমালার যে লিঙ্কটা পিনাকী বাবু দিয়েছেন, ওটা অনেক পরের সংযোজন। আমি যত সহজে অ্যাকাউন্ট পেয়েছি, এখন আর ওভাবে কেউ পায় না বলে জানি। লেখার মান নিয়ে মুক্তমনা সবসময়ই খুব কঠোর। গুণমান ঠিক রাখতেই মুক্তমনার এরকম কড়াকড়ি। সচলায়তন বাদে আর অন্য কোন ব্লগে লেখার মান নিয়ে এরকম বাতিক আছে বলে আমার জানা নেই।
মুক্তমনার লেখকেরাও রক্ত-মাংসের মানুষ। ভুল তাদেরও হয়। মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্কতার একটি বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে ত্রুটি-বিচ্যুতি শুধরে সত্যের পথে এগিয়ে যাওয়া। ব্লগ পরিমণ্ডলে মুক্তমনা অনেক বড় একটা নাম। এরকম কিছু ভুলের কারণে এ সুনাম ক্ষুণ্ম হতে পারে না। মূল লেখা হতে ইতোমধ্যেই ছবিটি সরিয়ে নেয়া হয়েছে, তবু একে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বিভ্রান্তি দূর করতে মুক্তমনা কর্তৃপক্ষের বক্তব্য আশা করছি এ ব্যাপারে।
মিথ্যা প্রচারণা, তা যতো মহৎ উদ্দেশ্য নিয়েই করা হোক না কেন, কখনই সমর্থন করা যায় না। এই ছবিটি অনেকদিন আগেই অন্তর্জালের দেশী-বিদেশী বিভিন্ন পাতায় দেখেছি। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের সচিত্র প্রমাণ হিসাবে ছবিটির একটি আইকনিক মর্যাদা ছিল বলেই জানতাম। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন হয় একথা খুবই সত্যি, কিন্তু তা প্রমাণের জন্য একটি ছবিকে মিথ্যা বর্ণনা দিয়ে প্রচার করা মূল লেখককে একজন অসৎ লেখক হিসাবেই প্রতিষ্ঠিত করে। পিনাকী ভট্টাচার্যকে ধন্যবাদ ছবিটির পেছনের ঘটনা সবার গোচরে আনার জন্য, যদিও মুক্তমনা সম্পর্কে তার অভিযোগ ধোপে টেকে না। একটি লেখার তথ্য যাচাই-বাছাই করার দায়ভার লেখকের; কোন লেখায় ভুল তথ্যের জন্য কোনভাবেই পুরো ব্লগসাইটকে দায়ী করা চলে না। অযথা রটনা না করে পিনাকী ভট্টাচার্য তথ্যের অসঙ্গতির কথা মুক্তমনাকে জানিয়ে ছবিটি প্রত্যাহারের অনুরোধ করতে পারতেন।
পিনাকী ভট্টাচার্য আসলে কী চান?
উত্তর: নকল ওষুধ ব্যবসা আর ফেসবুকে হিট। ধন্যবাদ।
পিনাকীর আচরন পুরাই সন্দেহজনক। সম্ভবত কোন পীরের পাল্লায় পরে ইসলামের সুশীতল ছায়ায় চলে গিয়েছে। ফেসবুকে হট্টগোল না বাধিয়ে তিনি যদি সমকামীতার ওষুধ আবিষ্কারে মনযোগী হতেন তবেই বোধহয় ভালো হত। এক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছিলেন একদিন নাকি সমকামীতার ওষুধ আবিষ্কার হবে, তিনি আবার একজন ডাক্তারও! চিকিৎসাবিজ্ঞানে যাকে ওসুখই মনে করা হয়না সে জিনিসের ওষুধ শুধু পাগলেই আবিষ্কার করতে চাইতে পারে, এই পাগলকে আমরা মনে হয় একটু বেশিই গুরুত্ব দিয়ে ফেলছি।
উনি আসলেই এত গুরুত্ব পাবার যোগ্য নন। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় তাকে ইতোমধ্যেই পীরের আসনে বসানো লোকেদের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। এভাবে তো চলতে দেয়া যায় না। এই লেখাটি উনার দৃষ্টিগোচর হয়েছে কিনা জানি না, দেখে থাকলে উনার খুশি হওয়া উচিত এই ভেবে যে তার নামোল্লেখ করে মুক্তমনায় একটি পোস্ট এসেছে। এতে করেও যদি তার নোট লেখা সার্থক হয়।
প্যারানয়েড স্কিৎজোফ্রিনিয়ার রোগীরা নাকি সবকিছুতেই ষড়যন্ত্রের আভাস পায়। এই লোকেরও এমন কিছু আছে কিনা কে জানে? কোন মনোরোগ বিশেষজ্ঞই এটা ভালো বলতে পারবেন।
একমত ।
পত্রিকার কাটিং টি নিয়ে পিনাকি সাহেবের বিশ্লেষন প্রশংসার দাবিদার।কারন এই ছবিটি এখন ইমেজে সার্চ দিলে এই নামেই প্রকাশিত হয়ে যাচ্ছে।সুতরাং বিষয়টি ভাববার আছে।তবে ভাল উদ্দেশ্য যখন মন্দ দিকে ডাইভার্ট হয়,তখন সেটি তার আবেদন হারায়।মূলত তার লেখার শিরোনাম টিই তার লেখাকে একটি চক্রান্তমূলক প্রোপাগান্ডায় পর্যবসিত করে।
মুক্তমনাকে আমি কেবল একটা ব্লগসাইট হিসেবেই দেখি না। সত্য তুলে ধরা বা জনমত গঠনের মতো কাজে এর লেখকদের আরও দায়িত্বশীল হওয়া জরুরি। এরকম ভুল মোটেও কাম্য নয়। যেকোন তথ্য প্রদানের আগে আরেকটু যত্নশীল হয়ে যাচাইবাছাই করা উচিত সবার। যাহোক, লেখা প্রোপাগাণ্ডায় রূপ না নিলে পিনাকী আসলেই প্রশংসার দাবি রাখতেন।
মুক্তমনায় প্রকাশিত হবার অনেক আগে থেকেই এই ছবি মস্জিদে হিন্দু নির্যতনের ছবি বলে ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছিল।
গুগল সার্চে কিন্তু তা-ই দেখা যায়। শার্লক হোমসের একটা উক্তি আছে, “It is a capital mistake to theorize before one has data. Insensibly one begins to twist facts to suit theories, instead of theories to suit facts.” উনার লেখালেখি দেখে মনে হয় উনি আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছেন, যেভাবে হোক মুক্তমনাকে দুষ্ট চক্রান্তকারী হিসেবে প্রমাণ করতে হবে। এজন্য এখান থেকে একটু, ওখান থেকে আরেকটু, সেসঙ্গে সত্যকে একটু এদিক-সেদিক করে তাতে দু’ফোঁটা মিথ্যা মিশিয়ে যেভাবে পারছেন থিওরি দাঁড় করাচ্ছেন। উনার লেখালেখিকে ডাটা হিসেবে নিলে তাঁর অসাধু উদ্দেশ্য পরিষ্কার হতে বেশি সময় লাগে না।
মুক্তমনার লেখকেরাও রক্ত-মাংসের মানুষ। ভুল তাদেরও হয়। মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্কতার একটি বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে ত্রুটি-বিচ্যুতি শুধরে সত্যের পথে এগিয়ে যাওয়া। ব্লগ পরিমণ্ডলে মুক্তমনা অনেক বড় একটা নাম। এরকম কিছু ভুলের কারণে এ সুনাম ক্ষুণ্ম হতে পারে না।
সম্পুর্ন একমত আপনার সাথে ।
আর এই লেখাটির জন্য ধন্যবাদ ।
ধন্যবাদ আপনাকেও।
এত কিছু লেখার দরকার ছিল না। পিনাকী সাহেব এই কাজ মুক্ত মনাকে টার্গেট করাতেই লিখেছেন বুঝা যাচ্ছে। এই লোক জঙ্গিদের পেইড এজেন্ট।