লিখেছেনঃ ইত্তিলা ইতু
‘বিশ্বাস’ বড়ই অদ্ভুত একটি শব্দ। আসুন ‘বিশ্বাস’ শব্দ টি নিয়ে একটি নাড়াচাড়া করা যাক।
বিশ্বাস শব্দ টি সেখানেই ব্যবহার করা হয় যেখানে সন্দেহ থাকে। একটা উদাহরন দেই: পূর্ণিমায় চাঁদ উঠে, আমরা সেটা জানি। আমরা সেটা দেখি। তাই আমরা কখনো বলব না যে, আমি বিশ্বাস করি পূর্ণিমায় চাঁদ উঠে। আবার ধরুন আপনি ডাক্তারের কাছে গেলেন, আপনি জানেন না ডাক্তার আপনার রোগ ভাল করতে পারবে কিনা, আপনি জানেন না সে আপনাকে ভুল চিকিৎসা দিবে কিনা, কিন্তু আপনি বিশ্বাস করেন যে, ডাক্তার আপনাকে সঠিক চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তুলবে। ডাক্তারের চিকিৎসায় আপনি সুস্থ না ও হতে পারেন । আবার আপনি পুরোপুরি সুস্থ ও হয়ে যেতে পারেন। আপনি যেহেতু জানেন না কি হবে, তাই আপনি বিশ্বাস করেন। এই অজ্ঞতা থেকেই বিশ্বাসের সৃষ্টি।
আদিম যুগের মানুষ জানত না অনেক কিছু, তারা জানত না কেন চাঁদ উঠে, কেন সূর্য উঠে, তাদের অজ্ঞতার কারনে তারা অনেক বিশ্বাস নিজেদের মধ্যে লালন করত। প্রাচীন গ্রিসের লোকেরা বিশ্বাস করত, পৃথিবী চালান দেবতারা আর তাদের কর্তা হল জিউস, তিনি পৃথিবীতে পাঠান বিজলির ঝলক। প্রাচীন গ্রিক কাহিনীর মতোই পুরানো ভারতীয় মহাকাব্য রামায়ন আর মহভারতের কাহিনীগুলো। এসব কাহিনীতে বলা হয়েছে, আকাশে বাস করেন দেবতা আর অসুররা। এই দেবতারা কেউ চালান সূর্যকে, কেউ সৃষ্টি করেন ঝড় বৃষ্টি। কখনো দেবতা আর অসুরদের মধ্যে বেধে যায় দারুণ লড়াই।
কিন্তু কেবল বিশ্বাস নিয়ে বসে থাকলে তো হবে না, জীবিকার প্রয়োজনে এবং মানুষের নিরন্তর সহজাত কৌতুহলের তাগিদে গ্রহ নক্ষত্র তারা কেন হয়, কিভাবে হয় এর উত্তর খুঁজতে থাকে। তারা অজানা কে জয় করতে থাকে। আর তারই ফল হল আজকের সভ্যতা। বিজ্ঞান প্রতি মুহূর্তে এগিয়ে চলছে। বিজ্ঞান এত দিন ধরে যা কিছু আবিস্কার করেছে, প্রতি ৮ বছরে তার দ্বিগুণ এগিয়ে যাচ্ছে। আদিম যুগে মানুষ অজানাকে বিশ্বাসের প্রলেপ দিয়ে ঢেকে দিত। আমরা পেছনের যুগ ফেলে মহাশূন্যের জগতে প্রবেশ করেছি বটে… কিন্তু আমাদের সমাজে এখনো শিক্ষার আলো, বিজ্ঞানের ছোঁয়া প্রবেশ করতে পারে নি বলে, আমরা এখনো নিজেদের অজ্ঞতা কে বিশ্বাসের প্রলেপ দিয়ে ঢেকে রাখতে ভালবাসি। আর এই বিশ্বাস গুলো আমাদের অবচেতন মনে এমন ভাবে গেঁথে গেছে যে আমরা চোখ খুলে সত্যকে দেখতে চাই না।
‘সেটার নাম বিশ্বাস, কারন সেটা জ্ঞান নয়’- ক্রিস্টোফার হিচেন্স।
বিশ্বাসের প্রয়োজন নেই তা বলছি না। যে ক্ষেত্রে আমাদের কিছুই করার নেই সেক্ষেত্রে বিশ্বাস ই আমাদের সম্বল। যেমন: ডাক্তারের ক্ষেত্রে। ডাক্তারের উপর বিশ্বাস রাখলে রোগীর আরোগ্য লাভ ঘটে। আমি যেই কাজটা করব ভাবছি কাজটিতে আমি সফল না ও পারি। এই কিন্তু আমি বিশ্বাস করি যে আমি কাজ টি সফল ভাবে শেষ করব। এই বিশ্বাস আমাকে উৎসাহ যোগাবে কাজটি করতে। এই ক্ষেত্রে বিশ্বাসের দরকার আছে বটে।
কিন্তু পূর্বপুরষ বিশ্বাস করত তাই সেই বিশ্বাস নিয়ে আমাকে ও থাকতে হবে, তারা অজ্ঞ ছিল বলে আমাকেও চোখ বন্ধ করে অজ্ঞ থাকতে হবে, তাদের পথের অনুসারী হতে হবে এমন বিশ্বাস ঠিক না। সত্যকে অস্বীকার করে যে বিশ্বাসকে টিকিয়ে রাখতে হয়, সেই বিশ্বাস অপ্রয়োজনীয় বিশ্বাস। সেই বিশ্বাস আমাদের অজ্ঞ করবে, আমাদের পিছনের দিকে ঠেলে দিবে। আমাদেরকে অন্ধকারে রাখবে.
এমন বিশ্বাস কি আমাদের আদৌ প্রয়োজন আছে?
লেখাটা ভাল লাগলো তবে লেখার উপর করা মন্তব্য গুলো আরো বেশী ভাল লাগলো
আমার মনে হয় বিশ্বাস আর যুক্তি একে অপরের পরিপূরক। অন্ধ বিশ্বাসের পরিপূরক হল কু যুক্তি আর সু যুক্তি আনে সঠিক বিশ্বাস। একটা ছোট্ট উদাহরণ দেওয়া যাক। মনে করা যাক আমি কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপর কোন কারণে বীতশ্রদ্ধ – আমি তাকে ছোট করে দেখাতে চাই। আমি যুক্তি খাড়া করতে লাগলাম ১) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম বিশাল অর্থশালী পরিবারে তাকে তো খাওয়া পড়ার চিন্তা করতে হয় নি, ২) ও রকম ফুল পাতা আকাশ দিয়ে লেখা যে কেউ ই লিখতে পারে, ৩) সারাদিন বসে বসে আর কি করবে – লিখে গেছে ১০০ টা লিখলে একটা তো পড়ার যোগ্য হবেই, ৪) পয়সা ছিল বিদেশে গেছে – বিদেশে গেলে ওরকম “রাশিয়ার চিঠি” ১০ টা লেখা যায় ইত্যাদি এবং ইত্যাদি । ভালো করে চিন্তা করলেই যুক্তি গুলির অসারতা প্রমাণিত হবে যুক্তিবাদী বিশ্বাসীর কাছে কিন্ত আমি তো কবিগুরু খারাপ এই বিশ্বাসে অন্ধ বিশ্বাসী ফলে আমি আমার সৃষ্ট যুক্তির অসারতা খুঁজেই পাব না।
এবার দেখুন সু যুক্তিঃ কেউ একজন দেখাচ্ছেন তিনি দৈব বলে বলীয়ান। প্রমাণ করতে তিনি কাঠ কয়লার অগ্নি কুণ্ডের উপর দিয়ে হেঁটে গেলেন বা হাতে জ্বলন্ত কর্পূর নিয়ে আরতি করে দেখালেন। তাঁর যুক্তি তিনি দৈব বলে বলীয়ান এক সাধক (এখানে ধর্ম / বর্ণ / জাতি প্রয়োজনীয় নয়)।
আপনি জানেন এই কাজের পিছনে কি বৈজ্ঞানিক কারণ আছে। তবু সবাইকে সত্য বোঝানোর জন্য আপনি অভিনয় করলেন – বললেন আপনারও একই শক্তি আছে। সেই সাধকের সামনে আপনি সেই কাজটাই আবার করলেন। ফল একই হল।
এইবার আপনার সময় এল। আপনি জানালেন মানুষের ত্বকে মোট ৭ টি স্তর আছে। যার মধ্যে প্রথম ৩ টি পুড়তে ৩ সেকেন্ড সময় লাগে। ফলে কোন একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে যদি আগুন ৩ সেকেন্ড সময় একসাথে না থাকে তা হলে পুড়বে না। এটা সুযুক্তি – তার থেকে জন্ম নিল প্রকৃত বিশ্বাস।
তাই আমার মনে হয় বিশ্বাসকে যুক্তির তুলাদণ্ডে তৌল করে নিলেই আর কোন সমস্যা থাকে না
কিছু কিছু ধর্মে এই বিশ্বাসটাকেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গুণ মনে করা হয়। এবং যে যত বেশী বিপরীত তথ্য প্রমাণের উপস্থিতিতেও নিজের ভ্রান্ত বিশ্বাসটিকে আকড়ে রাখতে পারে তাকে তত বেশি সচ্চাবিশ্বাসী হিসাবে সম্মানিত করা হয়।
আপনার লেখাটা ভালো লাগলো। এমন আরো লিখবেন আশাকরি।
বিশ্বাস দুই রকমের একটা হচ্ছে যুক্তি নির্ভর আর অন্যটি হচ্ছে ভাব নির্ভর। ‘আবার ধরুন আপনি ডাক্তারের কাছে গেলেন, …..আপনি যেহেতু জানেন না কি হবে, তাই আপনি বিশ্বাস করেন।’ এই উদাহরনটা হচ্ছে যুক্তি নির্ভর বিশ্বাস, কারণ আজ থেকে অনেক বছর আগে লোকে ডাক্তার এর কাছে যেত না, তারা পানি পরা আর তাবিজ নিয়ে রোগ সারাতে চাইত, ওটাই হচ্ছে ভাব নির্ভর বিশ্বাস। আর যখন থেকে দেখলো ডাক্তার এর কাছে গেলে রোগ সারার সম্ভাবনা বেশী তখন থেকে ডাক্তার সাধারণ হয়ে গেলো এটা আর বিশ্বাস এর স্থরে নেই। অর্থাত যেই প্রক্রিয়াটা পরীক্ষা, নিরীক্ষা বা অভিজ্ঞতা দ্বারা প্রতিষ্ঠিত সেটাকে বিশ্বাস না বলে শিক্ষা বলা যায়। ভাব নির্ভর বিশ্বাস হচ্ছে এমন একটা hypo thesis যেটা আধুনিক চিন্তার সাথে সাংঘর্ষিক। একটা সময় মানুষ তর্ক করত বাতাস দেখা যায়না তারমানে কি বাতাস নেই? তাহলে অদৃশ শক্তি আছে বিশ্বাস করতে অসুবিধে কোথায়? আমরা অনেকেই ভূত এ বিশ্বাস করিনা কারণ আমরা যুক্তি মানি, কিন্তু এই আমরাই অন্ধকারে বেশিক্ষণ একা থাকতে পারিনা ভুতের ভয়ে। কারণ ছোটবেলা থেকেই আমরা ভূত প্রেত এর গল্প শুনেই বড় হয়েছি। মানুষের মস্থিস্ক গড়ে উঠার সময় যদি তার মধ্যে ভাব বিশ্বাস ঢুকিয়ে দেয়া হয় তাহলে পরবর্তিতে সেটাই স্থায়ী হয়ে যায়।
‘সেটার নাম বিশ্বাস, কারন সেটা জ্ঞান নয়’- ক্রিস্টোফার হিচেন্স।
কিন্তু শুধু জ্ঞান আপনাকে কখনো বিশ্বাসের বলয় থেকে বের করে আনতে পারবে না। কেননা শুধু জ্ঞান দিয়ে আপনি বিশ্বাসের জগতটাকে যাচাই করতে পারবেন না। আর তাইতো বি্বিবিদ্যালয়ে অধ্যাপকদেরও দেখা যায় বিশ্বাস করতে। এজন্যই জ্ঞানের পাশাপাশি প্রয়োজন বুদ্ধিমত্তার যা আসে কল্পনাশক্তি থেকে। কেবল এটিই পারে মানুষকে ধর্মান্ধ থেকে মুক্তি দিতে।
“এজন্যই জ্ঞানের পাশাপাশি প্রয়োজন বুদ্ধিমত্তার যা আসে কল্পনাশক্তি থেকে”
বুদ্ধিমত্তা আসে কল্পনাশক্তি থেকে? জ্বীন/ভূত না দেখেও যারা কল্পনা করে নিতে পারে, তারা বুঝি ব্যাপক বুদ্ধিমান? চিন্তাশক্তি, যুক্তিবোধের সাথে কল্পনাশক্তির বিশাল তফাত। কল্পনা করে গল্প লেখা যায়, ছবি আঁকা যায়, কিন্তু যৌক্তিকবোধ সম্পন্ন হওয়া না। যৌক্তিক বোধের জন্য একটু চিন্তা করার ক্ষমতা থাকতে হয়। আর বুদ্ধিমত্তা? এর সংজ্ঞা একজন বিজ্ঞানীকেই জিজ্ঞেস করে দেখুন, আমতা আমতা করবে। বুদ্ধিমত্তা একটা অ্যাবস্ট্রাক টার্ম, যেমন শিল্প একটা অ্যাবস্ট্রাক্ট টার্ম। কল্পনাশক্তি অবশ্যই একটা বিশাল ক্ষমতা, কিন্তু তা দিয়ে বুদ্ধিমত্তাকে সংজ্ঞায়িত করা যায় না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অ০ধ্যাপক মানেই জ্ঞানী, এই প্রেজুডিস থেকে বের হওয়া দরকার আমাদের। কয়েক সেট সাজেশন প্রশ্ন ধুমায়ে মুখস্থ করে ফেলে পরীক্ষায় বিশাল নম্বর পেয়ে আমাদের দেশে অনায়াসেই বিশ্ববি্দ্যালয় শিক্ষক হওয়া যায়। এভাবে যারা শিক্ষক হন, তাদের জ্ঞানী ভাবার কোন কারণই নেই। তারা জ্ঞানেই কম, চিন্তাশক্তি তো আরো পরের কথা। তারা বিশ্বাসের বলয় থেকে বের হতে পারে না, কারণ তারা জ্ঞানে এবং চিন্তাশক্তিতে উভয় দৌড়েই কম। জ্ঞানটা থাকলে হয়ত বিশ্বাসের বলয় থেকে বেরুতে পারতেন।
আমার মনে হচ্ছে আমি আপনাকে বোঝাতে সক্ষম হয় নাই।আপনি নিম্নের উক্তিটির ব্যাপারে মতামত প্রকাশ করুন: এরপর আপনার মতামতের ভিত্তিতে কিছু বলব;
“The true sign of intelligence is not knowledge but imagination”
“বুদ্ধিমত্তার যা আসে কল্পনাশক্তি থেকে”
আপনার এই কথাটি শোনায় একটা স্টেটমেন্টের মত, যেনো আপনি জানেন বুদ্ধিমত্তার ভিত্তি কল্পনা। আমি এই দাবীটার বিপরীতে বলেছি বুদ্ধিমত্তা সংজ্ঞায়িত কোন ব্যাপার নয় যে কল্পনাশক্তি থাকলেই বুদ্ধিমান বলে স্বীকৃতি দেয়া যাবে। উদাহরণ হিসেবে দেখিয়েছি, লোকে জ্বীন ভূত কত অনায়াসেই কল্পনা করে নিচ্ছে যাদের বুদ্ধিমান বলতে আমি একেবারেই নারাজ। আপনার কথাটি এতোটাই স্টেটমেন্টের মত শুনিয়েছে, যে মনে হয়েছে বুদ্ধিমত্তাকে আপনি সংগায়িত করে ফেলেছেন, বুদ্ধিমান হবার শর্ত কল্পনা করতে পারা। আপত্তিটা মূলত ভাষার ব্যবহারে।
আরো একটা প্রেজুডিস নিয়ে বলেছি, আপনার বক্তব্যে মনে হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মানেই জ্ঞান আছে। আমি বলেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবার জন্য আমাদের দেশে জ্ঞান লাগে না, লাগে নম্বর যেটা জ্ঞান ছাড়াও অর্জন করা যায়।
আইনস্টাইনের বক্তব্যটার দৃষ্টিভংগী ভিন্ন। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন আমাদের (মানবজাতির, কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তির নয়) এখন পর্যন্ত যা কিছু জানা আছে (জ্ঞান আছে) তা দিয়ে যতদূর চিন্তা করা স্বাভাবিক, তার চেয়ে বেশী কল্পনা করে নিতে পারাটাকে তিনি (মানবজাতির) বুদ্ধিমত্তার লক্ষণ হিসেবে দেখেছেন। এই খানে একটু বলে রাখি, তিনি বলেন নি কল্পনা করে নিতে পারলে বুদ্ধিমত্তার প্রমাণ, তিনিও বুদ্ধিমত্তার লক্ষণ- সাইন অফ ইন্টিলিজেন্স বলেছেন। বুদ্ধিমত্তাকে ডিফাইনড হিসেবে ভাবার বোকামি করার মত নির্বোধ আইনস্টাইন ছিলেন না। উনি যে কল্পনার কথা বলেছেন, তা আমি মোটিভেশন, সাধ্যের অতিরিক্ত স্বপ্ন দেখার ক্ষমতা হিসেবে দেখি, আগডুম বাগডুম চিন্তা ভাবনা হিসেবে দেখিনা। এই মোটিভেশনের পিছনে একটা লজিকাল কনজেকচার থাকে, জ্বীন ভুত কল্পনা করার মত মূর্খতা থাকে না।
আমি ভাষার ব্যবহারে যত্নবান ছিলাম না বলে দু:খিত।
আমি যা বলার চেষ্টা করেছি তা বলার চেষ্টা করছি:
ধারণা, বিশ্বাস, জ্ঞান, বিজ্ঞান ও কল্পনাশক্তি
ধারণা: মানুষ যে অলীক অদৃশ্য কিছুর অস্তিত্ত্বে আস্থা রাখে, অন্তরে, মগজে ও হৃদয়ে ধারণ করে রাখে তা হলো ধারণা।
বিশ্বাস: বহুজন গ্রাহ্য ধারণাই হলো বিশ্বাস। ধারণামাত্রই সংস্কার বলে বিশ্বাসও সংস্কারের অন্তর্ভূক্ত।
জ্ঞান: যা জানা ও জানানো হয় বুৎপত্তিগত অর্থে তা-ই জ্ঞান। জ্ঞানে কোনো সত্য ও তথ্য নাও থাকতে পারে।
বিজ্ঞান: পরীক্ষেণে, সমীকরণে, নিরীক্ষণে ও পযবেক্ষণে যা সত্য ও তথ্য বলে প্রমাণিত হয় তাই বিজ্ঞান বা প্রকৃত জ্ঞান।
কল্পণাশক্তি: ধারণা, জ্ঞান ও বিশ্বাসের দৌরাত্ম পরিমাপের শক্তি হলো কল্পণাশক্তি। বুদ্ধিমত্তা হলো অর্জিত জ্ঞানের দৌরাত্ম পরিমাপ করা যার নিয়ামক কল্পনাশক্তি।
এজন্য বলেছিলাম শুধূ জ্ঞান কখনো বিশ্বাসের বলয় ভাঙ্গতে পারেনা তার জন্য প্রয়োজন কল্পনাশক্তি যা জ্ঞানকে স্ক্যান করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অধ্যাপকদের ঢালাওভাবে আমি বিচক্ষণ ও বুদ্ধিদীপ্ত বলেনি বরং তাদেরকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছি। যারা কেবল মুখস্ত জ্ঞানের মাধ্যমে অধ্যাপক হয়েছেন তারা অলীক বিধাতায় বিশ্বাস করে কেননা তারা জ্ঞানের ছলনা বুঝতে পারেনা।
ভূত-জিন হলো বহুজনগ্রাহ্য ধারণা অর্থাৎ বিশ্বাস।এখানে কল্পনার কথা আসার প্রশ্নই আসে না।
আমি কিন্তু বুদ্ধিমত্তাকে সংজ্ঞায়িত করার কোনো চেষ্টাও করেনি বরং বলার চেষ্টা করেছি বুদ্ধিমত্তাই বিচক্ষণের পরিচায়ক এবং যে বুদ্ধিমান ব্যক্তির মধ্যে জ্ঞান ও কল্পনাশক্তির মিশ্রণ রয়েছে কেবল তার পক্ষেই বিশ্বাসকে প্রশ্নবিদ্ধ করা সম্ভব হয়।
আপত্তিকর কিছু থাকলে জানাবেন আশা করছি। আপনাকে ধন্যবাদ। ভবিষ্যতে ভাষার ব্যবহারে আরো সচেতন থাকবো।
যে বিশ্বাস মানুষকে অন্ধকার যুগের দিকে ধাবিত করে, তখন তা বর্জন করাই শ্রেয় ।
বিশ্বাস যখন প্রমানিত সত্যের ওপর চেপে বসে, বিশ্বাস যখন অমানবিকতা, বর্বরতার জন্ম দেয়, বিশ্বাস যখন মানুষের বিবেক ও চিন্তাশক্তিকে অন্ধ করে দেয় তখনই সমস্যা দেখা দেয়। এর আগে পর্যন্ত ঠিক আছে।