বাংলাদেশে ধর্মান্ধদের দেশ এটাই সবাই জানে। ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষগুলো ধর্ম পালন করুক বা না করুক ধর্মের প্রতি এক ধরনের উগ্রতা তারা লালন করে থাকে। এখন কথা হচ্ছে এই উগ্রতা বা ধর্মান্ধতা কীভাবে দূর করা যাবে? কীভাবে আমরা সমাজটাকে ধর্মান্ধতা মুক্ত করতে পারি?
ক) ধার্মিকদের গালাগালি করে?
খ) ধার্মিকদের পবিত্র জিনিসগুলোকে অশ্রদ্ধা করে?
গ) ধার্মিকদের সাথে মিশে এবং যৌক্তিক আলোচনার মাধ্যমে তাদেরকে সবকিছু বোঝানোর মাধ্যমে?
ঘ) শিক্ষা ব্যবস্থায় সংস্কার ও বিজ্ঞান-মুখী শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে?
আমাদের দেশের জন-পরিচিত নাস্তিকরা উপরের দুইটিকেই বেশি প্রাধান্য দিয়ে সমাজকে ধর্মান্ধমুক্ত করতে চায়। বাস্তবতা হল উপরের দুইটি পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে হয়তো জন-পরিচিতি পাওয়া গেলেও সমাজকে ধর্মান্ধমুক্ত করা সম্ভব না। বরং এতে সমাজে ধর্মান্ধদের পাল্লা ভারি হয় এবং সমাজে নাস্তিক বিদ্বেষ আরও প্রকট আকার ধারণ করে। যে ছেলেটি এক বেলাও ধর্ম পালন করত না এবং নাস্তিকদের প্রতি কোন বিদ্বেষ পোষণ করতো না সেই ছেলেটিও নাস্তিক বিদ্বেষী হয়ে উঠে। এখন কথা হচ্ছে আপনি যেহেতু স্রোতের বিপরীতে চলতে চাচ্ছেন সেহেতু আপনাকে কিছু বাঁধার সম্মুখীন তো হতে হবেই। এখানে বলে রাখা ভাল জন-পরিচিত মুখ যে সবসময় মেধাবী হবে বা মেধাবী হলেই যে আপনি জন-পরিচিতি লাভ করবেন বিষয়টা তাও নয়। বাংলাদেশের অনেক বড় বড় বিজ্ঞান লেখক সারা জীবন আড়াল থেকেই মারা গেলেন। ফেসবুক ব্লগে বিশেষ করে ফেসবুকে বিতর্কিত বা সংখ্যাগরিষ্ঠের কোন কিছু নিয়ে নোংরামি করলে খুব সহজেই পাবলিক এটেনশান অর্জন করা সম্ভব। এগুলো করে ফেসবুকে আপনার ফলোয়ার কমবে না বরং বাড়বে। তাই অনেকেই নিজেকে সবসময় আলোচনায় মোহে এগুলো করে থাকে। দুর্ভাগ্য হলেও সত্য নাস্তিক নাস্তিক ভাই ভাই তাই এগুলো বিরুদ্ধে আমাদের তেমন কোন অবস্থান নেই। অথচ এসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার দরকার ছিল সবার আগে আমাদেরই। কারণ এসব কর্মকাণ্ডের কারণে যারা মাঠ লেবেলে বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করে তাদের পথ আরও বেশি কঠিন হয়ে যায়। এছাড়াও ধর্মীয় বিষয় নিয়ে গঠনমূলক সমালোচনা করার পথ ছোট হয়ে আসে। পরিশেষে এসবের কারণে দেশে নাস্তিকদের বসবাস করা আরো বেশি কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
গণজাগরণের পর ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি খুন হয় রাজিব হায়দার। ব্লগারদের মধ্যে তিনিই প্রথম। এর পর “আমার দেশ” পত্রিকায় ব্লগের কিছু লেখা ছেপে সমগ্র দেশে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয় যে; নাস্তিক মানেই গালিবাজ চটি লেখক। শুনতে খারাপ শোনা গেলেও এটা সত্য যে; তারা এটা প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়। এর পর ২০১৪ সালে ১৯ এপ্রিল আল্লামা শফি বিবৃতি দেয়; নাস্তিক হত্যা করা ওয়াজিব হয়ে গেছে। কিন্তু এর বিরুদ্ধে আমাদের কোন অবস্থান ছিল না। এই দেশে ধর্মান্ধ থাকার যেমন অধিকার আছে তেমনি নাস্তিকদের থাকার অধিকার আছে এই সরল বাক্যটা আমরা মানুষকে বোঝেতে সক্ষম হই নি।
বাংলার সাধারণ জনগণ ভাবে নাস্তিক মানেই ধর্ম-বিদ্বেষী অথবা ইসলাম বিদ্বেষী। তারা এটা ভুলে যায় নাস্তিকতা কোন ধর্ম নয়। বা নাস্তিক কোন গোত্র নয় যে সবাই এক রকমভাবে তাদের নাস্তিকতা করে। বাংলাদেশে হাজারো মানুষ আছে যারা কোন কিছুতে বিশ্বাস করে না। কিন্তু এগুলো নিয়ে আলোচনা করতেও তারা আগ্রহী না। তাই নাস্তিক হলেই যে ধর্ম বিষয়ে বা সমালোচনায় আগ্রহী হবে এমনও না। আর নাস্তিক মানেই সব এক-গোত্রের তাও না। কারণ নাস্তিক আওয়ামীলীগার হয়, নাস্তিক বামপন্থীরাও হয়, নাস্তিক বিএনপিও হয় আবার হেফাজতও হয়। তাই কে ভুতে বিশ্বাস করে কে করে না এটা অনেকের কাছে গুরুত্বপূর্ণ না। অবিশ্বাসী মানুষ তার নিজের ব্যক্তিগত দর্শনের আলোকে সবকিছু বিচার বিশ্লেষণ করে তাই হয়তো অবিশ্বাসীদের সাথে অন্য অবিশ্বাসীদের কিছুক্ষেত্রে বেশ মিল আছে। কিন্তু একজনের দায় আরেকজন অবশ্যই বহন করে না। কিন্তু বাংলার মুল্লুকে বেশি ভাগ মানুষ সবাইকে একই পাল্লায় বসিয়ে বিচার করে। সমস্যাটা এই খানেই। ফলে অনেকের কর্মকাণ্ডের প্রতি বিদ্বেষ ঘৃণা তারা হাতের কাছে পাওয়া কোন নাস্তিকদের উপর ঢেলে দেয়। তাই আমি নিরাপদ জায়গায় আছি কিন্তু এর মানে এই না আমি এমন কিছু করব যার জন্য দেশের অনিরাপদে থাকা আরও বিশ জন মানুষ মৃত্যু ঝুঁকিতে পরে। আমি জানি অসংখ্য মানুষ দেশ ছাড়তে চাচ্ছে! অসংখ্য মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অফিসে যায়। এই অফিসে যাওয়ার পথেই কিন্তু খুন হলেন অনন্ত বিজয় দাশ, খুন হলেন ওয়াশিকুর বাবু! অনেকের সাথেই কথা হয় যারা নিজের আসল ফেসবুক আইডিটা অফ করে দিয়েছেন। মুক্তমনা ব্লগেও লেখালেখি বন্ধ করে দিয়েছেন। দুইটি বছর আমি দেশে ছিলাম। আমি জানি কীভাবে আমাকে থাকতে হয়েছে। পেটের তাগিদে এক পরিচিত ব্যক্তির অফিসে চাকরিও করতে হয়েছে। সেখানেও সর্বক্ষণ নিজেকে আড়াল করে রাখতে হতো। তাই কেউ যখন বলে ভাই বৌ ছেলে আছে তাই আইডি অফ করে দিয়েছি। তখন উপলব্ধি করতে পারি কতোটা ভয়ে তারা চলাফেরা করছে। অনলাইন থাকা মানুষ অনলাইন ছাড়া থাকতে পারে না! তাই ফেইক আইডি খুলে অনলাইনে ঘুরে বেড়ায়।
২০১৫ সালে ইতোমধ্যে আমরা তিনজন ব্লগার ও লেখককে হারালাম। যাদের অভিজিৎ দা ছিলেন প্রথম শিকার! যিনি আমেরিকা থেকে বাংলাদেশের বই মেলায় ঘুরতে এসেছেন। গত দুই বছরে চারজন ব্লগার খুন হলেন এছাড়াও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকও নিহত হয়। এছাড়াও অনেক মাওলানাও ধর্মীয় কারণে খুন হয়। তবে আমাদের আলোচনা ব্লগারদের নিয়ে। কেন ব্লগার ঘোষণা দিয়ে হত্যা ও হত্যার পর মানুষদের সহানুভূতিটুকুও পাওয়া যাচ্ছে না?
জাফর ইকবাল সহ আরও অনেককেই ব্লগার হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। অথচ ব্লগার হল সামান্য অনলাইন লেখক। কিন্তু তারা কেন এসব মানুষকে ব্লগার হিসেবে পরিচিতি করতে চাচ্ছে। এর মূল কারণ ব্লগারদের নিয়ে যেহেতু একটা নেতিবাচক ধারণা আছে তারা সেই বিষয়টি কাজে লাগাতে চাচ্ছে। গত বছর লন্ডনে আরিফুর রহমান, তসলিমা নাসরিন ও আসিফ মহিউদ্দিন নিজেদের মধ্যে এক আলোচনার ভিডিও প্রকাশ করে। সেখানে দেখা যাচ্ছে ইচ্ছাকৃত হয়তো অনিচ্ছাকৃত-ভাবে কোরান শরীফের উপর চায়ের কাপ রাখা আছে। পৃথিবীর যে কোন বইকে ইচ্ছাকৃত-ভাবে অসম্মান করা কোন সুস্থ কাজ না। যাই হোক এর প্রতিক্রিয়া কি হবে তারা খুব ভাল করেই তা জানত। ফলে যা হবার তাই হয়েছে অসংখ্য গালি, অসংখ্য হুমকি তারা পেয়েছে। ভিন দেশী বন্ধুরা অনুবাদ করে তা দেখল। ইন্টারনেট ঘেঁটে দেখলাম ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর এই ভিডিও শেয়ার দিয়ে বিভিন্ন ইসলামিক সাইটে ইসলামিকরা বলছে;- কোরান শরীফের উপর চায়ের কাপ রেখে ওনারা কি বুঝচ্ছেন? সময় হয়েছে নাস্তিক কতল…..! আমার প্রশ্ন হল আগুন তো লাগিয়ে দিলেন কিন্তু সেই আগুনে অন্য কোন সাধারণ নাস্তিক যেন মারা না পরে সেই ব্যবস্থাটুকু কি আপনারা করেছেন?
“মুক্তমনা ব্লগ” আগ থেকেই ইসলামিকদের নজরে ছিল তা সবাই জানে। আর এই ব্লগের প্রতিষ্ঠান বা প্রধান ভূমিকায় অভিজিৎ রায় তাও কারো অজানা নয়। অভিজিৎ রায় তার লেখার মাধ্যমে অসংখ্য তরুণের মগজ নষ্ট করে দিচ্ছে (মুমিনদের দৃষ্টিতে) এই নিয়ে ইসলামপন্থীদের মধ্যে ঘুম নেই। অভিজিৎ রায়কে নিয়ে ২০১৪ সালে পোস্টারও ছাপানো হয় এবং তাঁর পিতা অজয় রায়ের বাড়িতেও সেই পোস্টারটি পাঠানো হয়। অভিজিৎ দা ফেসবুকে খুব একটা সময় দিতেন না তাই বোধয় তিনি অনুমান করতে পারেননি যে তাঁর লেখা ও ব্লগ সাইটের জন্য তাকে হত্যা করা হতে পারে। অস্বীকার করার উপায় নেই অভিজিৎ রায়কে হত্যা করা জঙ্গিদের জন্য বিগ শট। কারণ অভিজিৎ দা’র মতন খুব কম লেখকই আছেন যারা তরুণদের বিজ্ঞান ও সংশয়বাদ নিয়ে আগ্রহী করে তুলতে পারছেন। এবং জঙ্গিরা এটাও জানে আন্তর্জাতিকভাবে নাস্তিকদের জন্য তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। ফলে এই বটবৃক্ষকে না উপড়িয়ে তাদের আর কোন গতি ছিল না। তাই ২৬ ফেব্রুয়ারিতে কুপিয়ে হত্যা করা হল অভিজিৎ রায়কে আর তাঁর স্ত্রী বন্যা আহমদ অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান। অভিজিৎ রায় খুন হওয়ার পর অনেকেই প্রশ্ন করছেন যে অভিজিৎ রায় তো কখনো নোংরামি করেনি তাহলে তিনি কেন খুন হলেন? তিনি তো কখনো কোন গালাগালি বা নোংরামিতে যাননি। আরেক শ্রেণি নাস্তিক হত্যায় উল্লাস প্রকাশ না করলে সহানুভূতিও জানাতে চায় নি। আবার অনেকেই বলেছেন অনলাইনের কিছু নাস্তিকদের কর্মকাণ্ডের কারণেই আসলে নাস্তিকরা মানুষ থেকে দূরে সরে গেছে। এই দূরে সরে যাওয়াটা অস্বীকার করার উপায় নেই আমাদের। তাই মাঝে মধ্যে প্রশ্ন জাগে আসলে যৌক্তিক শালীন লেখালেখি বাদ দিয়ে কিছু নাস্তিক এসব অশ্লিল অসভ্য কর্মকাণ্ড করে আসলে কি উদ্ধার করতে চাচ্ছে। অভিজিৎ রায় খুন হওয়ার পর ইউ.কে থেকে একটা ইভেন্ট করা হয় ইভেন্টের নাম- নবী পুন্দন সপ্তাহ। আচ্ছা এই ইভেন্ট করে কয়জন মানুষকে ধর্মান্ধ থেকে দূর করা যাবে? কয়জন মানুষকে নাস্তিক করা যাবে? নাকি উল্টো কয়েক লক্ষ মানুষের ঘৃণাই শুধু অর্জন হবে? নাকি এই রাগের শোধ তুলবে দেশে অবস্থান করা নিরীহ কোন নাস্তিকদের কল্লার উপর দিয়ে? প্রশ্নগুলো রেখে গেলাম আপনাদের কাছে।
গত ২৬ জুন আমেরিকায় আদালত সমকামী মানুষের পক্ষে রায় প্রদান করে। বাংলাদেশের অনেকেই মনে করে নাস্তিক না হলে মনে হয় সমকামী হওয়া যায় না। অতীতে মুসলিমদের মধ্যে সমকামিতা নিয়ে একটা গবেষণা ও তথ্য মূলক ভিডিও দেখেছি। যেখানে নামাজ পড়া ব্যক্তিও সমকামী। সমকামী কেউ ইচ্ছায় হয়না। যারা সম-লিঙ্গের যৌনতার স্বাদ পেতে চায় তা ভিন্ন বিষয়। যাই হোক সমকামিতা কি তা এখানে আলোচনা করতে চাচ্ছি না। এই নিয়ে অভিজিৎ রায়ে একটা বই-ই আছে। এছাড়াও কাজী মাহবুব হাসানের ব্লগসহ অনেকের অসংখ্য লেখা অনলাইনে পাওয়া যায়। সমাজে সমঅধিকারের পক্ষে সংহতি জানিয়ে অনেকেই ফেসবুকে নিজের প্রোফাইল পিক রংধনুতে রাঙিয়েছেন। এবং এই সমকামিতা নিয়ে ছোট বড় অসংখ্য লেখা নজরে পড়ল। গুটি কয়েক ছাড়া সবাই সুস্থ-ধারায় নিজেদের বক্তব্য উপস্থাপন করল। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা আগে একজন শেয়ার করল যাতে দেখা যাচ্ছে; একজন পরিচিত ব্লগার (আসিফ মহিউদ্দিন) কাবা শরীফকে রংধনুর রঙে রাঙিয়ে দিয়েছেন। এথিস্ট রিপাবলিকের এই ছবিটায় ভালোবাসার মেসেজ ছিল। অনেকের হয়তো তাতেও আপত্তি থাকত কিন্তু তিনি সেই পথে না গিয়ে কৃতজ্ঞতা স্বীকার না করে উল্টো ঘৃণা ও খোঁচাখুঁচির লাইনে গেলেন। ফলে যা হবার তাই হল কয়েক হাজার গালি এবং অনলাইনে যারা সমকামীদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষও পোষণ করেনি তারাও সমগ্র নাস্তিকদের গালি দেওয়া শুরু করল। এখানে নিজের পরিবারের একটা ঘটনা উল্লেখ করতে চাই। আমি কি লিখেছি না লিখেছি তা যাচাই বাচাই না করেও আমার বাবার ৩০ বছরের পুরাতন দোকানটি পুড়িয়ে দেওয়া হল। আমাকে যেহেতু হাতের কাছে পাওয়া সম্ভব নয় সেহেতু আমার বাবার দোকান পোড়ানো সবচেয়ে সহজ কাজ। এখানে বলে রাখা ভাল আমার বাবা দোকানে ঘুমাতেন। কিন্তু আমি জেলে যাওয়ার পর থেকে মা দোকানে ঘুমাতে মানা করায় তিনি বাসায় ঘুমানো শুরু করেন। সেই দিন তিনি দোকানের ভেতর থাকলে আমার বানা জ্যান্ত মারা যেতেন। নিজে নিরাপদ অবস্থানে থাকায় ফেসবুকে আবারো ধর্মান্ধতার তাবুতে আগুন লাগানোর ফলে আরও কয়েকজন নাস্তিক যদি খুন হয় তখন হয়তো আমরা বিবিসি, সিএনএন বক্তব্য দেব। মৃত ব্লগারকে নিয়ে নিজেদের আলোচিত করব তাই তো। কিন্তু যে মারা পড়বে তার কী হবে? তার পরিবারের কী হবে তা কি একবারও আমরা ভেবে দেখেছি? মৃত্যুর মিছিল থামাতে পাচ্ছি না, ধর্মান্ধতা দূর করতে পারছি উল্টো সাধারণ মানুষকে আরও বেশি প্রতিক্রিয়াশীল হতে সহায়তা করছি। কাবা শরীফের এই ঘটনার পর যারা রংধনুর প্রোফাইল ঝুলিয়েছি তাদের সবার প্রতি সাধারণ মানুষের ঘৃণা আরও তীব্র হবে। এই দায় আমরা অস্বীকার করব কীভাবে? যে পুলিশ সদস্য নাস্তিকদের দেখতে পারে না তারা কি আরও বেশি নাস্তিক বিদ্বেষী হবে না? প্রশ্ন রেখে গেলাম আপনাদের কাছে।
অভিজিত দার কথাটা আবারো উচ্চারণ করতে চাই- “মুক্তি আসুক যুক্তির আলোয়।”
ধন্যবাদ ভাইয়া, এইরকম একটা লেখার প্রয়োজন ছিলো 🙂
বিঃদ্র: ফেসবুক থেকেই আপনি, কেমেলিয়া আপু আর আজম ভাইয়ার লেখাগুলো পড়ার চেষ্টা করি। কারন আপনারা নোংরামি না যুক্তিকেন্দ্রিক আলোচনা করেন
মন্তব্য…চিন্তার প্রশংসা না করলেই নয়,কিন্তু যুক্তি দো-ধারী তলোয়ারের মত!যুক্তিতে মুক্তি কাটা পরেছে বলে মনে করি।
ভাই ইসলামিক দেশে নাস্তিক হবার দরকারটা কি? আর হলেও নিজ নামটা প্রকাশ করার কোনো কারণ নেই। তা শুধু শুধু নিজের উপর বিপদ বা চাপাতিই ডেকে আনবে। ইসলাম ধর্ম নিয়ে সমালোচনা করে যাই লিখবেন তাই বিপদ ডেকে আনবে; তা ধর্মকারীর মত চরম বিদ্রুপাত্নক বা আসিফ ভাই ও তসলিমা নাসরিনের মত আক্রমণাত্নকই হোক অথবা অভিজিতদার মত যুক্তি আশ্রয় করেই হোক না কেন।
কেউ যদি পাঁচ, সাত বা দশ বছর আগের উদাহরণ দেয় তবে বলব তখন ইন্টারনেট, ফেসবুক, ব্লগ যেটাই বলি না কেন তার এত বিস্তৃতি ছিল না। খুব অল্পসংখ্যক গেজেট ফ্রিক বা একটা সীমাবদ্ধ জনগোষ্ঠীর মধ্যেই তা আবর্তিত ছিল। ফলে এই কথা বলে লাভ নেই যে এভাবে না লিখলেও চলত, না আঁকলেও চলত বা কাপড় ধরে টান না দিলেও চলত। কারণ তা মডারেট মুসলমানদের মত এক ধরনের জাস্টিফিকেশন তত্ত্বকেই সমর্থন করে। আর তসলিমা নাসরিনকে কারা দেশছাড়া করেছিলো এবং দেশত্যাগ না করলে তার কি পরিণতি হত তা আমার চেয়ে আপনারা ভাল জানেন। তখন কিন্তু উনি এত এটাকিং ছিলেন না বা কোনো গালিও দেন নি।
তাই আমার কাছে মনে হয় মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে আপনি ধর্মকে সমালোচনা করে মানে ইসলামকে উদ্দেশ্য করে যাই লিখুন না কেন বা যত ভদ্রভাবেই তা পরিবেশন করুন না কেন, সেটা আপনার বা অন্য নাস্তিকদের জীবনের গ্যারান্টি দিতে পারবে না।
@সুব্রত শুভ
“একজন থেকে শুনলাম কিছুদিন আগে পাসর্পোট অফিসে একজন ফ্রি থিংকার লিখছে। যা লেখার সুযোগ বাংলাদেশ পাসর্পোটে নেই।”
বাংলাদেশে পাসপোর্টে ধর্মের জায়গায় প্রচলিত ধর্মগুলোর পাশাপাশি Other নামে একটি অপশন করা হয়েছে। তবে সেই Other অপশনে ক্লিক করলে নিচে একটি ঘর চলে আসে এবং সেখানে টাইপ করে তার বিশ্বাস লিখতে হয়। চাইলে Atheist, Free thinker, Agnostic যেকোন কিছুই লেখা যেতে পারে। এই লিঙ্কে গিয়ে পাসপোর্টের ফর্ম ফিলাপ করার পদ্ধতিটা দেখলেই বুঝবেনঃ http://www.passport.gov.bd/
তবে এরপরও নাকি জটিলতায় পরতে হয়। কারন ওপরে লিঙ্ক দেয়া অনলাইনে ফর্ম পূরনের জায়গাটি ছাড়াও পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে ছবি তোলার সময়ে যিনি ছবি তোলেন তার নাকি এরকম একটি ফর্ম আবার পূরন করতে হয়। আর সেই সফটওয়্যারটিতে চারটি ধর্মের বাইরে অন্য কোন অপশন পাওয়া যায়না। তাই এই জটিলতার কারনে আগারগাও ব্যতীত কিংবা আগারগাও অফিসের সাহায্য ব্যতীত অন্য কোন পাসপোর্ট অফিস থেকেই মনে হয় ধর্মের জায়গায় নাস্তিক দেয়া এখনও সম্ভব হয়না। যদিও সরকার থেকে বলা হচ্ছে এখন নাকি ধর্মবিশ্বাসে নাস্তিক লেখা যায়। আমাকে বলা সেই ছেলেটা চড় খেয়ে না হলেও এসব জটিলতার কারনে বিরক্ত হয়ে শেষপর্যন্ত ধর্ম ইসলাম দিতে বাধ্য হয়েছিলো। পোস্টের সাথে অপ্রাসাঙ্গিক বিষয় নিয়ে এতবড় কমেন্ট করার কারনে ক্ষমা চাচ্ছি। কিন্তু জটিলতাটার কথা যেহেতু উঠেছে তাই বলে রাখলাম।
আমি অনলাইনে করিনি। তাই অনলাইনের বিষয়টি জানি না। তবে হার্ড কপিতে আদার আছে ফ্রি-থিংকার এগুলো লেখার সুযোগ নেই। একজন লিখতে চেয়েছিল কিন্তু পারে নাই।
@ নাস্তিকের ধর্মকথা
ধন্যবাদ আপনার কমেন্টের জন্য।
দুই হাজার সাত সালের অবস্থা আর বর্তমান অবস্থা এক না। অনেকেই ফেসবুক ছেড়ে দিয়েছে অনেকেই ব্লগে লেখা বন্ধ করে দিয়েছে কারণ পরিস্থিতি এক রকম না। আপনারা যারা পুরাতন লেখক তারা অনেকেই লেখালেখি ছেড়ে দিসেন বা কমাই দিসেন। কারণ জীবন বাঁচাতে সময়ের সাথে আপোষ করতে হয়েছে। জঙ্গিদের টার্গেটে অনেক আগ থেকেই নাস্তিকদের লিস্ট আছে। কিন্তু তারাও ঐ টাইমের অপেক্ষায় ছিল। আমার লিস্টের অনেক মানুষকে কখনো নাস্তিক বিরোধী প্রকাশ্যে পোস্ট দিতে দেখি নাই। হয়তো ভেতরে ভেতরে বিরোধী কিন্তু তারাও কাবা ইস্যুতে আসিফ মহিউদ্দিনকে গালি দিতে গিয়ে নাস্তিকদের একহাত দেখে নিয়েছে। তসলিমা নাসরিনের উপর অন্যায় হয়েছে কিন্তু ওনার অনলাইন কর্মকান্ড ওনার দেশে আসা আরো কঠিন করে দিয়েছে।…আমরা কোন ঠাসা তা স্বীকারে কোন লজ্জা নেই।…ছবির হাটের কিছু অতি উৎসাহি ছেলের কাহিনি জানি যারা অতি উৎসাহে আসিফ টাইপ কাজ করে পরিচিত মানুষ থেকে চটকনা খেয়েছে।…কেউ যদি অনলাইনে সিনিয়ার হয় তার কিন্তু দায় দায়িত্ব থাকে বলে আমি মনে করি। যেন জুনিয়ররা কিছু শিখতে পারে।….একজন থেকে শুনলাম কিছুদিন আগে পাসর্পোট অফিসে একজন ফ্রি থিংকার লিখছে। যা লেখার সুযোগ বাংলাদেশ পাসর্পোটে নেই। অতঃপর দালালের হাতে চড় থাপ্পর খাইছে। সবাইকে অভিজিৎ রায় টাইপ হতে হবে তাও বলছি না। বলতে চাচ্ছি আমাদের যেহেতু বদনাম বেশি তাই আমাদের আক্কেলটা একটা বেশি ব্যবহার করা জরুরী।…হুমায়ুন আজাদকে মোল্লারা দেখতে না পারলেও এক শ্রেণির মডারেট মানুষের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা ছিল।…নাস্তিক মানেই যে কিছু জানে এমন একটা ধারণা অনেকেই পোষণ করতো।….বর্তমানে সেই অবস্থানটা কী আছে? না নেই।….মডারেট সুবিধাবাদী প্রানী কিন্তু এই মডারেট নিয়েই এগুতে হবে। যদি সবাই আমাদের থেকে দূরে সরে যায় তাহলে এতো মৃত্যু কাদের জন্য? আর নাস্তিক মানেই খারাপ এমন ধারনা সকল মানুষ করে এটা আমি বিশ্বাস করি না।..আর মানুষ যদি করেও তারপরও আমাদের দায়িত্ব তাদের সাথে যেন দূরত্ব না হয় সেই দিকে খেয়াল রাখা।
আর কিছু বিষয় আমলে না নিতে চাইলেও আমলে নিতে হয়েছে কারণ বৃহৎ জনগোষ্টী তা আমলে নিয়ে নিয়েছে। দেশে যারা অনিরাপদে আছে তাদের জন্য কিছু করতে না পারি কিন্তু আমার কর্মকাণ্ডে যেন তাদের স্বাভাবিক জীবন আরো কঠিন হয়ে না যায় সেটাও তো খেয়াল রাখা উচিত। এই আক্কেলটা থাকা উচিত বলে মনে করি।……মোটা দাগে আমি বলতে চাচ্ছি সাধারণ মানুষগুলো কেন দূরে সরে যাচ্ছে। কেন নাস্তিক শুনলে আজকাল আরো বেশি ঘৃণা ছড়াচ্ছে। অবশ্যই সবার নিরাপত্তা নিয়েই চিন্তিত। কেউ এরকম কাজ করলে মেরে ফেলতে হবে এবং তা সার্পোট করার জন্য এসব কাজ সামনে এনে বৈধতা দিতে হবে আমি তারও বিপক্ষে।..আমি আবারো বলছি আমাদের কিছু দায় আছে…..সরকার নাস্তিক হত্যা বিচার করছে না, জঙ্গিরা টার্গেট করে বেড়াচ্ছে। মৃত্যু আমরা থামাতে পারছি কিন্তু আমাদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ যেন আরো বেশি কথা বলতে পারে সেই সুযোগটা আমরা করে দিচ্ছি।
(মুমিনদের কথা মাথায় আনতে বলছি না তারা সবকিছুতেই আঘাত পায়।)
@সুব্রত, আমার কথায় কিছু মনে করছেন না আশা করি … দেশে থাকা নাস্তিক ব্লগারদের নিরাপত্তার ব্যাপারে আপনার কনসার্ণের ব্যাপারটা আমার অজানা নেই … কৌশিক যেভাবে ডিফারেনসিয়েশন করেছেন- আমি সেভাবে করিও না … যাদের নাম উল্লেখ করেছি- প্রত্যেকের অবদানই আমি স্বীকার করি- কোন না কোনভাবে তারা আমার শ্রদ্ধার পাত্রও … আপনি, আরিফ রহমান, হিপনোটিক, চরম উদাস- এমনকি জেবতিক- সবারই অনেক লেখা, তার চাইতেও বড়- বিভিন্ন লেখার মাধ্যমে সঠিক চিন্তা/ অবস্থান- এর প্রতি আমার শ্রদ্ধা রাখি … এবং আপনারা যখন আসিফকে নিয়ে আপনাদের কনসার্ণ তুলে ধরছেন- তখন সেটার কোন প্রেক্ষাপট নেই, আসিফের প্রতি বিদ্বেষ থেকে এমন লেখছেন- সেটা অবশ্যই মনে করি না …
আমার কনসার্ণের জায়গাটি- হচ্ছে, আসিফ/ তসলিমা নাসরিন/ আরিফের বালখিল্যতাকে আপনারা আমলে নিচ্ছেন- কেননা আপনারা মনে করছেন, আজকের ধর্মান্ধদের উগ্রতার জন্যে তাদের এসব বালখিল্যতা দায়ী … সেজন্যেই আমি আপত্তি করছি … আপনার লেখাটার শিরোনামঃ “নাস্তিক হত্যায় আমাদের দায়!”- সেই দায় বলতে গিয়ে আপনি রাজীব থেকে শুরু করেছেন, তার লেখা “আমার দেশ” প্রচার করে স্ট্যাবলিশ করেছিল- নাস্তিক ব্লগার মানেই চটি টাইপের লেখক … তারপরে এনেছেন- আসিফ/ আরিফ/ তসলিমার কোরআনের উপর চায়ের কাপ রাখা, আসিফের কাবা নিয়ে ট্রল … আপনার লেখাটাতে আপনি যা বলতে চেয়েছেন তা হচ্ছে- আমি যদি ঠিকভাবে বুঝে থাকি- ক) ধার্মিকদের গালাগালি করে? এবং খ) ধার্মিকদের পবিত্র জিনিসগুলোকে অশ্রদ্ধা করে?- ধর্মান্ধদের ধর্মান্ধতা কমানো তো যাবেই না, বরং এর মাধ্যমে নাস্তিকদের প্রতি বিদ্বেষই কেবল বাড়বে … এবং আপনার লেখার ভয়ংকর কটা লাইন যদি দেখিঃ ///অনেকের কর্মকাণ্ডের প্রতি বিদ্বেষ ঘৃণা তারা হাতের কাছে পাওয়া কোন নাস্তিকদের উপর ঢেলে দেয়। তাই আমি নিরাপদ জায়গায় আছি কিন্তু এর মানে এই না আমি এমন কিছু করব যার জন্য দেশের অনিরাপদে থাকা আরো বিশজন মানুষ মৃত্যু ঝুঁকিতে পরে। আমি জানি অসংখ্য মানুষ দেশ ছাড়তে চাচ্ছে! অসংখ্য মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অফিসে যায়/// … দেখেন, আমি দেশ ছাড়তে চাচ্ছি- আমি মৃত্যু ঝুঁকিতে আছি, তার কারণ – চাপাতি ওয়ালারা এদেশে ঘোষণা দিয়ে নাস্তিক খুন করে পার পাচ্ছে, তার কারণ – এদেশে সরকার, পুলিশ প্রশাসন এইসব খুনের ব্যাপারে উদাসীন বা সমর্থক, তার কারণ- রাষ্ট্র তার আইন কানুন নিয়ে বসে আছে নাস্তিককে শাস্তি দেয়ার জন্যে … অবশ্যই এই কারণে না যে- আসিফ বা আরিফ বা তসলিমা নাসরিন বা হুমায়ুন আজাদ বা ধর্মকারী বা অন্যরা কোথায় কি তথাকথিত “হেটস্পিচ” ছড়িয়েছে … আপনি বা আপনারা যেভাবে বলেছেন- সেটা যে ঐ সব ধর্মান্ধ, চাপাতিওয়ালাদেরই উৎসাহিত করবে, তাদের খুন খারাবিকে- নাস্তিকদের প্রতি তাদের বিদ্বেষকে লেজিটেমেসি দিবে- সেটা যদি না বুঝতে পারেন- তাহলে কিভাবে হবে?
আপনি অভিজিৎ, অনন্ত, বাবুর কথা বলেছেন? নিশ্চিত জানেন- তাদেরকে সিলেক্ট করার দায় আর অন্য কারোরই নেই- সেটা তাদের নিজেদেরই … আপনারা যেভাবে বলেছেন যে, হেট স্পিচের কারণে ধর্মান্ধরা খুন করার জন্যে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছে- ফলে দায় এইসব হেটস্পিচেরই … সেখান থেকেই বলছি, প্রত্যেকেরই এই হেটস্পিচ আছে … অভিজিৎ রায়ের বিজ্ঞান বিষয়ক লেখার বাইরে ধর্ম নিয়া, ইসলাম নিয়া, নবী নিয়া, কোরআন নিয়া মেলা লেখা ছিল, আছে … অনন্তের আছে, ছিল, বাবুরও ছিল … অনন্ত আর বাবু নবীকে নেয়া স্যটায়ার, কার্টুন শেয়ার দিয়েছিল তাদের পেজ এ- সেগুলো আমি পেয়েছি ধর্মান্ধদের খুন পরবর্তী প্রচারণায় … আপনি আমার নাম বললেন, আস্তিকেরা আমার নাকি আমার নাম নেয় … আসিফের অনেক পোস্টেও আমার কথা এসেছে … আমার পুরাতন লেখাগুলোর কমেন্ট যদি দেখাতে পারতাম, বুঝতেন- ধর্মান্ধদের গালি- থ্রেট- কোনটাই কম খাইনি … আল্লাহর লিঙ্গ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছি, নবীর বিয়ে নিয়ে, কোরআন অবতীর্ণ নিয়ে কথা বলেছি, নবীর যুদ্ধ বিগ্রহ নিয়ে কথা বলেছি … এসব যখনই করেছি- এগুলোর কোনটাই হেট স্পিচ ছাড়া কিছু মনে হয়নি ধর্মান্ধদের কাছে … আমি যখন নাস্তিকতা নিয়ে লিখেছি- বাংলাদেশের পরিস্থিতি মাথায় নিয়েই, রিস্কের কথা জেনেবুঝেই লিখেছি … বরং, আসিফদের আগমনে, ধর্মকারীর আমার, অভিজিৎ রায়দের উপর থেকে ফোকাস কিছুটা সরেছে, থ্রেট কিছুটা কমেছে, যেমনটা তসলিমা, হুমায়ুন আজাদের কারণে আহমদ শরীফ, আলী আজগররা কিছুটা হাফ ছাড়তে পেরেছিলেন … কিন্তু আমি মোটেও ভুলতে পারি না যে, আজ যে আরজ আলী মাতুব্বরের কথা বলা হয়- ওনার মত বিশ্বাসীদের আঘাত না করে লেখলে- ধর্মান্ধরা চাপাতি হাতে নিবে না, তাদের মনে করিয়ে দিতে পারি যে, আরজ আলী হচ্ছেন উপমহাদেশের প্রথম নাস্তিক যিনি নাস্তিকতার দায়ে জেল খটেছেন … আহমদ শরীফ, আলী আজগরের কথা যারা বলেন- তাদেরো মনে করিয়ে দেই- এদের নামেও মোল্লারা মুরতাদ ঘোষণার দাবিতে মিছিল করেছে- এদের লক্ষ করে বোমা ছুড়েছে …
যাহোক, বেশি কিছু না- একটা ব্যাপারে আপনাকে এবং আপনাদের চিন্তা করার কথা বলবো- আপনারা আমাদের, যারা আসিফদের মত বালখিল্য নই, তাদের নিরাপত্তা উদ্বিগ্ন! কিন্তু এটা কি জানেন- ধর্মকারী, নবযুগ, ফেবুতে এরকম বালখিল্য লেখার লেখক ও তথাকথিত “হেটস্পিচ” দেয়া অনেকেই এখনো দেশেই আছেন বা থাকেন! তাদের নিরাপত্তা নিয়ে কি আমরা এতটুকু চিন্তিত হবো না?
আপনার মন্তব্য গুলো পড়লাম নাস্তিকের ধর্ম কথা।
এসবের কি আসলেই কোনই দায় নেই? আজ থেকে এক দশক আগেও কি দেশে এত বেশি উগ্রতা ছিল? ছিলনা কিন্তু। হ্যাঁ একথা সত্য যে চাপাতি দিয়ে হুমায়ুন আজাদকে কোপানো হয়েছিল যখন, তখনও দেশে এমন নেম সিকার রা সক্রিয় ছিলনা। কিন্তু সেই সময়ে কিন্তু ‘নাস্তিক’ শব্দটা কিন্তু একটা গালি হিসাবে ব্যবহার হত না যেটা এখন হচ্ছে।
এখন যেকোন লেখা সেটা ব্লগেই বলেন বা ফেসবুকে এমনকি সংবাদ মাধ্যমের যেসব লেখা কিছুটা প্রচলিত মতের বাইরে চলে যাচ্ছে সেখানেই কিন্তু অশ্রাব্য গালাগালী দেখতে হচ্ছে আর বলা হচ্ছে,’শা,, তুই নাস্তিক তোকে ইয়ে করা দরকার’। এমনকি খুনাখুনির কথাও চলে আসছে;এমন কি যে লেখায় ধর্মের নাম গন্ধও থাকে না সেইসব অনেক লেখার শিরোনাম দেখেই ,লেখাটা না পড়েই কিন্তু এমন মন্তব্য করে যাচ্ছে অসংখ্য মানুষ যেটা ১০ বছর আগেও হত না।
আর প্রকাশ্যে আলাপ করতে গেলে এখন “আমি নাস্তিক” এই শব্দটাই যেন ব্লাস্ফেমী হিসাবে গন্য করা হছে; এক দশক আগে যেখানে সেই লোক গুলো এই কথাটা শুনলে বড়জোর হেসে বলত যে নাস্তিকের সাথে কোন তর্কে নামা চলে না।
তাহলে এই ক্রমবর্ধমান উগ্রতার কারন কি বলে মনে করেন আপনি?
কাউকে সাঁতার শেখাতে হলে কি কোন পুকুর থেকে না শিখিয়ে খরস্রোতা নদীর ভেতরে একটা বাচ্চাকে ছেড়ে দেয়া কি কোন কাজের কথা হতে পারে?
যেখানে মানুষ সমালোচনাকেই স্বাভাবিক ভাব নিতে প্রস্তুত নয় সেখানে কি গালাগালিকে ভাল ভাবে নেয়ার কারন আছে?
দীর্ঘদিন থেকেই ব্লগ জগতে কিছু ব্যক্তি যেরকম ভাবে ইসলামের নবীর চরিত্র হননে লিপ্ত হয়েছেন এতে মুসলমান দের মধ্যে কি প্রতিক্রিয়া হওয়া উচির বলে মনে হয় আপনার?
আপনি অবশ্যই বলেছেন যে কোরানের উপর চায়ের কাপ রাখা, বা কোরান কে নিয়ে নিয়ে ট্রল করার স্বাধীনতার পক্ষে থাকলেই যে সবাই আপনার মত করে ভাববে সেটা নিসচয় মনে করছেন না আপনি? না সেটা যেআপনি মনে করছেন না সেটাও আমি জানি। কিন্তু চাপাতি ওয়ালারা বা সাধারন মুসলিম রাই কি সেই স্বাধীনতাকে স্বীকার করেন? করেন না তাই না?
তা বলে চাপাতি চালাতে হবে কেন এটাও আমি বুঝি,কিন্তু আপনি আমি বুঝলেই কিন্তু সমস্যার সমাধান হছে না কারন আপনি বা আমি কিন্তু চা পাতি চালাছি না।
সেখানে যারা চাপাতি চালাচ্ছে ব তাদের সমর্থন করছে ব্যাপারটা কিন্তু তাদের বুঝাতে হবে!
আমার প্রশ্ন হল কিভাবে সেটা বুঝাবেন? নিসচই আরেক দফা মুহাম্মদের পুরুষাঙ্গের মাপের সাইজ নিয়ে বিদ্রুপ করে, বা তার স্ত্রীদের ঋতুস্রাবের হিসাব নিয়ে বা মুহাম্মদ কে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি করে নয় তাই না?
এটা করলে কি তারা বুঝবে নাকি আবার কল্লা ফেলার জন্য রেডি হবে?
এটা ঠিক যে আপনি এসব হিসাবও করছেন না। কিন্তু যারা এসব নিয়ে চিংড়ির মত উৎসাহী তাদের এই উৎসাহের স্বাধীনতাও সমর্থন করছেন। তাহলে ফলাফল কি দাড়াল? যারা এই তথাকথিত স্বাধীনতার সমর্থন করছেন তাঁরাও কি পরোক্ষ ভাবে চাপাতি ওয়ালাদেরকে এই ধারনাই দিচ্ছেন না যে এরাও ( ট্রল করার সমর্থক রা)) পরোক্ষ ভাবে এদের মতই লোক;শুধু উগ্রবাদীদেরকে শিখন্ডী বানিয়ে পেছন থেকে অস্ত্র ছুঁড়ছে ? এমনকি কিছু নিরীহ ব্লগার যারা শুধুই যুক্তির সাহায্যে লেখালেখি করেন তাঁরাও কি চাপাতি ওয়ালাদের আক্রোশের শিকার হবেন না?
সমস্যা হল ট্রল করছে এমন কিছু লোক যারা হয় ছদ্মনাম নিয়ে লেখে, না হয় ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে ট্রল করে থাকে কোরান বা মুহাম্মদ কে নিয়ে, কিন্তু উপরের প্রক্রিয়ায় কোন প্রভাবই কি নিরীহ যুক্তিবাদী বিজ্ঞান লেখকদের উপর পড়েনি বলতে চান?
মুক্ত মনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত অভিজিত দা নিজের ছবি দিয়ে স্বনামে লেখালেখি করেছেন, কিন্তু তাঁর ব্লগে যারা ছদ্ম নামে ট্রল করে গেছে ব্যক্তিস্বাধীনতার অপব্যবহার করে, সে দায় কিন্তু চাপাতি ওয়ালারা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতার উপরেই চাপিয়েছে,আরো অনেকের ওপরেও চাপাবে, আপনার উপর আমার উপর চাপাবে যার কোনই যৌক্তিকতা নাই,কিন্তু সেটা তাদের কিভাবে বুঝাবেন? ঘুরে ফিরে একই কথাই এসে যাচ্ছে যে সেটা নিশ্চয়ই ট্রলিংয়ের স্বাধীনতাকে জোর গলায় স্বীকার করে?
সেটাই যদি করেন তবে তো তাদের রাগ আরো বাড়বে, আপনাকে হয়ত ছদ্মনামের আর আরজ আলী মাতুব্বরের ছবির আড়ালে খুজে পাবে না, কিন্তু যারা ছবি দিয়ে স্বনামে লেখালেখি করছেন তাঁদের উপরেই কি আক্রোষ পড়বে না; অনেকটা ক্রুসেডের পর হাতের কাছেই ব্লাস্ফেমাস শত্রু আছে বলে ক্রুসেডার রা যেভাবে ইউরোপে ইহুদীদের কচুকাটা করেছিল?
যুদ্ধ হল মুসলিম আর খ্রিষ্টানে আর কচুকাটা হল ইহূদীরা কারন এরাও মুসলিমদের মতই হেরেটিক!!
তাহলে কিভাবে ছদ্মনামের আড়ালে থেকে বা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে ট্রল করার স্বাধীনতা নিয়ে হা হুতাশ করা চলে ,যে স্বাধীনতা( ট্রলিং) অন্য কোন নির্দোষ মানুষের মৃত্যু ডেকে আনতে ভুমিকা পালন করতে পারে?
যেসব কাজ সমস্যা কে না সারিয়ে বরং বাড়িয়ে দেয় সেটার স্বাধীনতার পক্ষে দাঁড়ানোটা কতটা বাস্তব সম্মত?
আপনারা এত বোকা কেন? মহাবিশ্ব এবং মানুষ সৃষ্টির পেছনে কেউ নেই এই কথা আপনারা কীভাবে বিশ্বাস করেন??।
আমার নিজের লেখার স্টাইল, কর্মপদ্ধতি, চিন্তার ধরণ- আলাদা হতেই পারে, আমি স্যাটায়ারের চাইতে যুক্তি তর্ক পছন্দ করি বেশি … ফলে ধর্মকারীতে বেশি সময় কাটাইনি কখনো- সেখানে লেখার আগ্রহও পাইনি … কিন্তু আমার ধরণ যতই আলাদা থাকুক- আমি ধর্মকারীর মত সাইটের, শার্লে হেবদোর মত ম্যাগাজিনের স্বাধীনতার পক্ষে সবসময়েই দাঁড়াবো … কাবাকে নিয়া ট্রল করা, কোরআনের উপর চায়ের কাপ রাখার স্বাধীনতা আমি চাই- আমি সে কাজ করি আর না করি … নবীর বিয়া আর নারীলিপ্সার তথ্য ছাড়া যদি আর কিছু কেউ লেখতে না পারে- না পারুক, সেটা নিয়া এত টেনশনের কি আছে … আসিফের বেশিরভাগ লেখা আমি পড়িনি, সেখান থেকে তেমন কিছু পাওয়ার দেখি না- কিন্তু সবাইকে অভিজিৎ রায়ের মতই হতে হবে- এমন দাবী তো ভাই আনসায়েন্টিফিক … এমনকি আমার নিজের লেখাগুলোও মনে করি- আহামরি তেমন কিছু না … কোন বিষয়ে জ্ঞানার্জন অনেক কষ্টসাধ্য, সাধনাসাধ্য- চাকুরি/ সংসার এমনই ব্যস্ত ও ইনভলভ রাখে যে- সেই কষ্টটা হয়ে যায় মহাকষ্টের মত- ফলে জ্ঞান আমার একেবারেই কম- তার ছাপ লেখায় পড়ে- অনেকদিন তাই লেখতেও পারি না … কিন্তু মনের আনন্দে যা ইচ্ছা যতটুকু লিখেছি- সেটা পড়ার দিব্যি যদি কাউকে না দিয়ে থাকি- তাহলে কেউ কি আমার ওভারল অজ্ঞানতা নিয়ে খোটা দেয়ার অধিকার রাখে? আমি বলছি না, আমার লেখা ধরে ধরে অজ্ঞানতা, ভুল ভ্রান্তি ধরিয়ে কেউ দিতে পারবে না- আমার আপত্তি কোন বিশেষ লেখা ধরে আলোচনা না করে- আমাকে ওভারল অজ্ঞান/ মুর্খ বলাটায় …
আসিফের আমি আমি, আসিফের লেখা চুরি- এসব নিয়ে কথা বলতে চাইলে বলেন … কিন্তু, সব কিছু এক সাথে ধরতে গিয়ে- নিজেদের গ্রাউন্ডটাই নষ্ট করছেন কি না- সেটাও ভেবে দেখতে বলি …
সম্প্রতি আসিফ ইস্যুতে নিয়ে আমার অভিমত হচ্ছে- সুব্রত শুভ, চরম উদাস, আরিফ রহমান, আরিফ জেবতিক, হিপনোটিক … থেকে শুরু করে সমস্ত সেলিব্রেটিরা যেভাবে আসিফকে অপোজ করতে গিয়ে “উগ্র নাস্তিকতাই নাস্তিক খুনের কারণ” হিসাবে উপস্থাপন করেছে- তাতে আমি হতাশ!
আসিফ চরম আনম্যাচুরড ছেলে, তদুপরি প্রচণ্ড নেম সিকার … কিন্তু যারা আসিফকে নিয়ে এতসব লেখছে- তাদেরকে আমি অনেক ম্যাচুরড মনে করতাম- প্রত্যাশাও ছিল বেশি …
“উগ্র নাস্তিকতাই নাস্তিক খুনের কারণ”
এটি একেবারেই হাস্যকর কথা। কারন তাহলে হুমায়ুন আজাদ স্যার খুন হতেন না। তবে এভাবে অনিচ্ছাকৃত উস্কানী দেয়ার কিছু অপকারিতা কিন্তু আছে। আমরা সাধারন মানুষের কাছে যেতে পারছিনা, জাফর ইকবাল স্যারের সাইন্স ফিকশন পড়লেও ধর্ম যাবে এমন মানসিকতা তৈরী হচ্ছে আজকাল। এটা কি ভালো কিছু। আমি যতদূর বুঝি আমাদের এসব লেখালেখির উদ্দেশ্য তো সমাজকে ধর্মান্ধতা থেকে বের করা, তাই না? নাকি শুধু নিজেরাই আলোচনা করে যা জ্ঞানী হয়েছি তার থেকে আরো জ্ঞানী হয়ে এভারেস্ট ছুয়ে ফেলা? সেটাই যদি হয় তবে বাংলা ব্লগে না লিখে কিংবা বাংলায় বই না ছাপিয়ে বিভিন্ন ভাষার বিদেশি মুভি, বই এসবের দ্বারস্থ হলেই তো পারি। বিদেশি ব্লগে গিয়ে জ্ঞান নিলেই তো পারি। ইন্টারনেট যখন আছে চাইলে তো হাতের কাছে সবই পাই। যদি সমাজকে উন্নত করতে হয় তবে সমাজকে আমার বক্তব্য বলার সুযোগটা তো রেখে নিতে হবে। সে সুযোগটাও নষ্ট করে কতদূর কার্যসিদ্ধি করা যাবে তা বুঝতে পারছিনা। প্রশ্নটা এখানে মুক্তমনারা কতদূর পর্যন্ত লিখবে সেটার না, প্রশ্ন হলো তারা এখন কোন স্ট্র্যাটাজিতে চলবে। অনেকেই লেখালেখি কমিয়ে দিয়েছে কিংবা বন্ধ করে দিয়েছে। সবার পক্ষে তো বিদেশে আসা সম্ভবও না। তাই কিছু কৌশলের আসলেই প্রয়োজন আছে বলে মনে হচ্ছে।
আমি সবাইকে লেখাটা আবার পড়ার অনুরোধ করবো। যারা এখন অভিদাকে ভদ্র নাস্তিক বানিয়ে উগ্র নাস্তিকতা নামক অদ্ভুত এক ক্যাটাগরি আবিষ্কার করছেন তারা যদি অভিদাকে ভালোবেসে থাকেন, তাকে দোহাই দিতে থাকেন তাহলে দয়া করে আরেকবার অভিজিৎ দার দৃষ্টিভঙ্গি যাচাই করে দেখবেন।
শেষে আবারও উল্লেখ করতে চাই আসিফ এবং তসলিকার কীর্তি আমার কাছে উগ্র নাস্তিকতা নয়, নাস্তিকতাই নয় বরঞ্চ ধর্মব্যবসা। একই সাথে আজকে অভিদা অনন্ত দা না থাকার পেছনে আসিফের মতো লোকদের কর্মকান্ড দায়ী সেটা সম্পূর্ন ভুল বিশ্লেষণ। ভবিষ্যতে বিস্তারিত লেখার ইচ্ছা আছে।
চমৎকার বিশ্লেষণ। তবে, একটা কথা আমারও পছন্দ হচ্ছে না। যেমন, শুভর লেখা ধরেই বলি, মানুষকে সাথে নিয়ে আন্দোলন করার যে কথাটা বলা হচ্ছে, সেটা কি কেউ নিজে নাস্তিক জানলে অফলাইনে, সামাজিক পরিমণ্ডলে আদৌ সম্ভব? নাস্তিক শুনলে, ধর্ম মানে না শুনলে, প্রথম কথাটাই আসবে প্রত্যাখ্যান, ঘেন্না, এমনকি হত্যার হুমকিও, সে যতোই ভদ্রভাবে, যুক্তি দিয়ে, প্রমাণ দিয়ে বলা হোক না কেন। অভিজিৎ রায়ের খুনের পর ডানবাম, প্রগতিশীল, এমনকি মুক্তমনা লোককেও কম মোচড়াতে দেখলাম না। কারণ, আমাদের দেশে নাস্তিক কথাটাই কুৎসিত একটা গালি। সুতরাং, যতো ভদ্র আচরণই করা হোক না কোন, লাভ নেই। আর ওই ভদ্র, মোলায়েম, মৃদু নাস্তিক ও উগ্র, অশালীন, কট্টর নাস্তিকদের ভেদটাও একটা সৃজিত ভান মাত্র। অভিজিৎ রায় জীবন দিয়েই সেটার প্রমাণ দিয়ে গেছেন।
পাশাপাশি, এটা যদি লড়াইই হয়, তাহলে আক্রমণের বিপরীতে ব্যঙ্গ, শ্লেষ, কার্টুন, স্যাটায়ার এসবও আসবে। থাবাবাবার মৃত্যু আমরা এভাবে অন্যদের সাথে গলা মিলিয়ে জাস্টিফাই করতে পারি না, ধর্মের ওপর আক্রমণের নামে কোনো হত্যাই নয়। আসিফ মহিউদ্দিনও কিন্তু মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচেই এসেছিলো, সুতরাং হন্তারক ও তাদের মানসিকতা নিয়ে তার কাছ থেকে প্রেম ও যুক্তি কতটুকু আশা করা যায়? অভিজিৎ রায়কে অনেকে আসিফ নিয়ে নানা প্রশ্ন করেছেন, তিনি তারপরও আসিফকে সমর্থন দিয়েছেন, মুক্তমতের চর্চার পাশে ছিলেন, ছিলেন ধর্মকারী, শার্লি এবদো বা এরকম অন্যদের পাশেই। তাঁর সবই যে অনুকরণযোগ্য বলছি না, কিন্তু এই মানসিকতাটা লক্ষ্যণীয়। আমরা নিজেদের গন্তব্য চিনতে যেন ভুল না করি।
ভালোবাসার জয় হোক।
@ব্লাডি সিভিলিয়ান
এই আদৌ অসম্ভবকে একদিনে সম্ভব করা যাবে না। যে ব্রিটেন ৬০ বছর আগে একজন মানুষকে সমকামী হওয়ার জন্য সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ভাবে অত্যাচার করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিল, যার অবদানে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে হিটলার থেকে ইংল্যান্ডবাসী রক্ষা পেল সেই এলান টুরিংয়ের স্বীকৃতি তারা তখন দেয়নি। সম্ভব হচ্ছে না বা হবে না তা ভাবে যদি উল্টো নোংড়ামী করে দূরে সরে যাই তা কী বুদ্ধিমানের কাজ হবে? তাহলে তো অভিজিৎ রায়রা লেখালেখি করত না। এসব রাষ্ট্রের মানুষদের থেকে অন্তত আমরা শিখতে পারি কীভাবে রাষ্ট্র ও সমাজ থেকে সবার নিরাপত্তা ও সামাজিক মর্যাদা আদায় করা সম্ভব।
কথাটার সাথে পুরোপুরি একমত না আবার পুরোপুরি দ্বিমতও না। হ্যা, অভিদা, অনন্ত দা’র হত্যার পেছনে আসিফদের কর্মকান্ড দায়ী না। আসলে তাদের যেকোন মূল্যেই হোক ওরা হত্যা করতোই। কারন ওদের জন্য আসীফ না, বরং আভীদারাই ভয়ের ব্যাপার। আসীফের নোংরামী দেখে একজন ধর্মান্ধও মুক্তমনা হয়েছে কিনা সন্দেহ আছে, কিন্তু অভিদা’র লেখা পড়ে হয়। আর এটা কুপাকুপি করা গোষ্ঠীও বোঝে। কিন্তু আসীফদের নোংরামীর কারনে যেটা হচ্ছে, যারা কোপচ্ছে তারা এদেশের সংখ্যাগুরুদের সমর্থন আদায় করে নিচ্ছে। হুমায়ুন আজাদকে হত্যা করে কিন্তু এই সমর্থন আদায় করে নিতে পারেনি। মানুষ এই হত্যাকে যে মেনে নিচ্ছে তার পেছনে আসীফরা দায়ী। হত্যাকারীরা চিন্তা করে কেউ যখন কিছু বলছেনা তাহলে কোপাতেই থাকি। আজ নাস্তিক হত্যায় আসীফদের দায় না থাকলেও কাল রাস্তা-ঘাটে নাস্তিক হওয়াতে কারো ওপরে সাধারন মানুষের হামলা হলে সে দায় পুরোপুরি আসীফেরই থাকবে। যে ছেলেটা আমাকে বলেছে পাসপোর্টে ধর্মের জায়গায় ফ্রি থিঙ্কার দেয়াতে পাসপোর্ট অফিসের কয়েকজন দালাল মিলে তাকে চড়-থাপ্পর মেরেছে সে ছেলেটার মার খাওয়ার পেছনে আসীফদের মত নোংরা, স্বার্থপর, অসভ্যরাই দায়ী। এরাই নাস্তিকদের আলাদা কোন প্রানী কিংবা এলিয়েন টাইপ কিছু বানিয়ে তুলেছে সাধারন মানুষের কাছে।
ফ্রি থিঙ্কার শুনে সোসাইটি কেন এমন আচরণ শুরু করেছে তা ভেবে দেখার বিষয়। ভার্সিটির প্রথম বর্ষে ক্লাশে দুই বন্ধু প্রকাশ্যে নাস্তিকতা নিয়ে আলোচনা করতাম। অনেকে পছন্দ করত না কিন্তু কখনো হয়রানির শিকার হয়নি।…. কিন্তু বর্তমানে কেউ ক্লাশে এগুলো বললে উপায় থাকবে না বলে মনে হচ্ছে।
সেটাই। পাঁচ বছর আগেও তো হুমায়ুন আজাদ, তসলিমা নাসরিনের বই মডারেটদের ঘরে ঘরে ছেলেমেয়েরা পড়তো। কিন্তু আজকাল নাকি জাফর ইকবাল স্যারের নাম নিতেও ছেলেমেয়েরা ভয় পাচ্ছে! এটা খুব খারাপ ইঙ্গিত।
অভিজিত দা ভদ্র নাস্তিক বা সুশীল নাস্তিক কোন ভাবেই তাকে উপস্থাপন করা আমার লক্ষ্য ছিল না। অনেকে হয়তো তা করে থাকেন। তবে আমি মোটা দাগে অভিজিত দা যে নোংরামী বা অহেতুক খোঁচাখুচি করতেন না তার দিকে নজর দিলাম।..আমার মতন যারা বিজ্ঞানের ছাত্র না তারাই অভিজিৎ রায়কে সবচেয়ে বেশি মিস করে। কারণ সহজ বোধ্য ভাবে বিজ্ঞান খুব কম মানুষই লিখতে পারেন। হয়তো অন্যদেরটা আমি খুব সহজে বুঝি না। এটা আমার ব্যর্থতা।
তোর কথা বলি নাই। তবে আসিফকে দেখে নিতে গিয়ে আজকে সিপি গ্যাং দের কাছেও অভিদা একজন ভালো লুক ছিলেন, তিনি ভদ্র নাস্তিক ছিলেন। সামগ্রিকভাবে কথাটা বললাম। আজকে মারা যাবার পর নানাজন নানা উপাধিতে ভূষিত করতেছে অভিদা, অনন্ত দাকে।
সিপি গ্যাংয়ের তারাই অভি’দা মারা যাবার পরে কুৎসিত সব কথাবার্তা লিখেছিল। এরা যখন যেদিকে হাওয়া, তখন সেদিকে পাল উড়ায়।
@আন্দালিব
কউমী প্লুাটুন নিয়ে বলার কিছু নেই। এরা আওয়ামী মন্দিরের সেবা দাসী। এরা যে পরিমাণ ভার্চুায়াল নারী ধর্ষণ করেছে তাতে অনলাইনে ইতোমধ্যে এদের মুখোশ খুলে গেছে। কিছু টাকা পেয়ে সবাই সেবা দাসী হতে পারে।….প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কিছু লোকদের সাথে এসব গালিবাজদের কয়েকজনের বেশ খাতির আছে। অনলাইনে গালাগালির শক্তিটা সম্ভবত ওখান থেকেই পায়।
@ সুব্রত শুভ,
আপনার এই ব্লগে আলোচনা দেখে বারবার অভিজিৎ দা’র কথা মনে পড়ে। এই মন্তব্যগুলো পড়ে তার কী প্রতিক্রীয়া হতো তা আমি অভিজিৎ দা’কে যতটুকু জেনেছি, তার দর্শন যতটুকু পড়েছি তা থেকে অনুমান করে বলতে পারি, তিনি অবশ্যই মুখ ফিরিয়ে নিতেন। আমার যা বলার ছিল, ব্লাডি সিভিলিয়ান আর রায়হান আবীর প্রায় সবটুকুই বলে দিয়েছেন। দাঁড়ান, আমি অভিজিৎ দা’র সাথে একটু কথা বলে নিই।
অভিজিৎ দা, আমি জানি আপনার দূরদর্শীতা কত প্রখর ছিল, আপনাকে শতবার প্রণাম জানাই। সেই কবে প্রায় তিন বৎসর পূর্বে বলেছিলেন-
আপনার মুক্তমনায়ই সেই সুর আজ প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। মৃত রাজিবকে মুসলমান বানিয়ে লক্ষ মানুষের উপস্থিতিতে তার যানাজা পড়ে কুলখানি করেও শাহবাগ রক্ষা করা যায়নি। একবার এসে দেখে যান, আপনাকে ফেরেশ্তা বানিয়ে আপনার গায়েবানা যানাজা পড়ার কি আয়োজন চলছে। আপনি নিশ্চয়ই জানতেন আপনার লেখালেখির শেষ পরিণতি কেমন হবে। অনেক অনেক দিন পূর্বে আপনি যখন ‘বিজ্ঞানময় কিতাব’ নামে একটি লেখা প্রকাশ করেছিলেন সেই সময় থেকেই আপনি জানতেন খুনীরা আপনার পিছু নিয়েছে। আপনি বলেছিলেন যে, ‘ছুরির তলে গলা পেতেই লেখালেখি করি’। এক ধার্মিকের মন্তব্যের উত্তরে আপনি দাবী জানিয়েছিলেন-
জনাব সুব্রত শুভ সাহেব, সমাজকে ধর্মান্ধতা মুক্ত করতে আপনি ধার্মিকদের পবিত্র জিনিসগুলোকে অশ্রদ্ধা না করার, ধার্মিকদের সাথে মিশে এবং যৌক্তিক আলোচনার মাধ্যমে তাদেরকে সবকিছু বোঝানোর পরামর্শ দিচ্ছেন, ভাল কথা। যাদেরকে বোঝাতে যাচ্ছেন তাদেরকে টিপিক্যাল বাঙ্গালি বলে সম্মোধন করে, লতিফ সিদ্দিকির বক্তব্যের আলোচনায় আপনি তাদের পরিচয় তোলে ধরেছেন এভাবে-
এবার আমার অনুরোধ, আপনি তাদের সাথে যখন মোলাকাত করবেন, আলোচনার সুচনাতে আপনার পরিচয় পর্বে নিচের কথাগুলো তাদের সামনে পেশ করবেন।
এরপর বুঝা যাবে মুসলমানদের তেহাত্তর দলের মধ্যে শিয়া সম্প্রদায় ছাড়া বাকি বাহাত্তর দল আপনার উপর ফুলচন্দন বর্ষণ করে, না চাপাতি নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে। আপনি আল্লাহর রাসুলের একজন প্রীয় সাহাবিকে জামাতের মত কুলাঙ্গার, খুনী ধর্ষক জঘন্য ঘৃণিত মানুষের সাথে তুলনা করেছেন, যাদের নেতাদের যুদ্ধাপরাধের দায়ে কারো ফাঁসী হয়ে গেছে আর অনেকেই আছে কারাগারে।
এ পর্যন্ত আলোচনায় এটা সবচাইতে যৌক্তিক মন্তব্য মনে হয়েছে। অভিদা নিজেও তসলিমা নাসরিন এবং তাঁর কর্মকাণ্ড/জীবনবোধ/ আন্দোলনকে পূর্ণ সমর্থন দিয়ে গেছে, কখনোই এরকম বলেনি/বিশ্বাস করেনি যে তসলিমা নাসরিন হচ্ছে ধান্দাবাজ/সুযোগসন্ধানী। অভিদা’র মৃত্যুর পর তাকে দেবতা বানানোর চেষ্টায় মানুষজন তার বক্তব্যের খণ্ডিত অংশ যে যার মতো করে বুঝ দিচ্ছে। ৯০ এর দশকে তসলিমা নাসরিনকে যখন দেশ ছাড়তে হয়, তখনকার আর এখনকার পরিস্থিতি কি এক? তস্লিমার “লেখা-চৌর্যবৃত্তি” নিয়ে কয়টা ব্লগ লেখা হয়? তার ক’টা সমালোচনা যৌক্তিক? তার ব্যক্তিগত শয্যাসঙ্গীদের নিয়ে সারাক্ষণ মাতম, তার চরিত্র নিয়ে সারাক্ষণ আস্ফালন, সুশীল কুশীল সবার, ভীষণ রকমের ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স আর বিদ্বেষ। তিনি চায়ের কাপ কোরানের ওপর রাখলেই পৃথিবী উলটে যায়? পৃথিবীর আর কেউ কোরান অবমাননা করেনি? কোরান হেফাজত যখন পোড়ালো সেটা উগ্র না, কিন্তু তসলিমা আর আসিফকে কোরানের ব্যাপারে “সেন্সেটিভ” হতে হবে এই সমালোচনার মানে কি?
অভিদা কোনোদিনই এরকম সংকীর্ণমনা ছিলোনা। আর আসিফ ব্যাশিং করতে গিয়ে তসলিমা নাসরিন কিছুই করেনি মুক্তচিন্তার জন্যে, আসিফের কারণেই অভিদা, অনন্ত, বাবু এরা খুন হয়েছে , অভিদা “খুব” “ভদ্র” ভাষায় লিখতো ব্লাব্লা ব্লা এগুলো যতো পড়ছি, ততো মনে হচ্ছে অভিদাকে দেবতা বানিয়ে আসিফ বা তসলিমাকে “দানব” বানানোই উদ্দেশ্য। তসলিমা নাসরিন যে সময়ে নির্ভয়ে যে সমস্ত কথা অকপটে বলে গিয়েছে, তার ধারেকাছে কথাও আজ পর্যন্ত কোনো বাঙালি নারীবাদীকে বলতে শুনলাম না, কিন্তু কুৎসিত কদর্য গালিগালাজ, ব্যাশিং আর তসলিমা কতো “খারাপ” আর কী রকম “সুবিধাবাদী” সবাই একেবারে কাছা খুলে উঠে পড়ে লেগেছে সেটার প্রমাণ দিতে। ঠিক এ থেকেই প্রমাণিত হয়, অভিজিৎ রায়, তসলিমা নাসরিন – এরা সবাই ঠিক জায়গাতেই ঘা দিয়েছে। ফতোয়াও খেয়েছে, চাপাতি খেয়ে মরেছে- এই জন্যই।
চায়ের কাপের ওপরে কোরান আর মোহাম্মদ বিড়াল কার্টুন আঁকা নিয়ে উত্তেজিত হওয়া – এ দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য টা কি? দায়িত্বশীলতা মানে মেনিমুখিতা নয়। যুক্তি বুদ্ধি দিয়ে ধর্মান্ধদের কোনোকালেই বোঝানো যায়নি, যাবেও না। এজন্য এখানে একরকম ভাবে মুখ বন্ধ করে রাখতে বলা হচ্ছে। “বুঝিয়ে শুনিয়ে” সমকামীদের “সমপ্রেমী” বলে(কাম খারাপ শব্দ কী’না তাই!!), মানুষের ধর্মপ্রাণ সেন্সিটিভিটি ব্লা ব্লা ব্লা বলে ঠান্ডা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। অভিদা এরকম ছিলোনা, এরকম করে লিখতোও না। যখন দরকার যুক্তি আবার যখন দরকার ঠিক ঠিক বাঁশ দিতো। সেই লোকের এহেন দেবতায়নে কষ্ট লাগছে।
আসিফ মহিউদ্দিন অভিজিৎ রায় নয়, অভিজিৎ রায় তসলিমা ছিলোনা, কেন এদেরকে এক কাতারে ফেলা হচ্ছে? এরা গুরুত্বপূর্ণ নিজের জায়গাতে। মুক্তমতকে “ভদ্রতা”র মোড়কে ঢেকে ফেললে সেটা আর মুক্ত” থাকে কই? আর যারা এতো কথা বলছে তাদের কারুর ভূমিকাই অভিজিৎ বা তসলিমার থেকে বেশি নয়। কুৎসিত কথা বলা, ফেইসবুক ফাটানো প্রতিবাদ করা আর সত্যি সত্যি নিজে চাপাতির কোপ নেওয়া বা দেশ ছেড়ে চির নির্বাসিত হওয়া তারপরেও মুক্তমতের জন্য কাজ করে যাওয়া – এটা এ সমস্ত লোকেদের ক’জন করেছে?
আসিফের লেখা চুরি, তসলিমার লেখা চুরি এগুলোর অবশ্যই সমালোচনা হোক, হওয়া জরুরিও, কিন্তু সেজন্য চায়ের কাপে কোরান, বা কাবার গায়ে রংধনু, সব ধর্মীয় উস্কানিতে তাল দেওয়া – এ ধরনের কথা শফি হুজুর বললেই বিশ্বাস হয়। দায়িত্বশীল মুক্তমনা হলে আসিফ বা তসলিমা নয়, আসলে যে আন্সারুল্লাহ বা শফি হুজুররা শত্রু সেটা বোঝা জরুরি। আসিফ আর তসলিমার অপ্রয়োজনীয় বিষোদ্গার করে মুক্তচিন্তা চাই বলাটা অভিজিতের স্পিরিটের সাথে ঠিক যায় না।
আর অভিদার নিজের ব্লগেই এটার সবচাইতে ভালো উত্তর আছে –
“লিখবোনা? আঁকবোনা? যেখানে সমালোচনা দেখলে সমালোচকের গলা টেপার পরিবর্তে সমালোচনার কারণ খতিয়ে দেখা ‘উচিত’- পৃথিবীর ধার্মিকেরা এতো সহজ ব্যাপারও বোঝেনা? পঞ্চাশোর্ধ বছর বয়সে ছয় বছরের বালিকাকে বিয়ে করে, কিংবা পালকপুত্রের স্ত্রীকে দেখে লালায়িত হয়েও নিজকে ‘প্রেরিত পুরুষ’ বলে দাবী করবেন কোন এক চাঁদু –এগুলো নিয়ে কার্টুন কেউ আঁকবেনা? মুখে শান্তির ধর্ম বলে ফ্যানা তুলে ফেলে সারা বিশ্বে সন্ত্রাসের চাষ করে বেড়ালে সেই দ্বিচারিতা নিয়ে কেউ ব্যঙ্গ করবে না? পৃথিবীর আলো-বাতাস-বিজ্ঞান-প্রযুক্তি সব ব্যবহার করে যারা আজও গুণগান গাইছে মধ্যযুগের হিংসা-বিদ্বেষভরা মতবাদগুলোর প্রতি, সেইসব বালুর মধ্যে মুখ গুঁজে থাকা ব্যক্তিদের নিয়ে কৌতুক করাটা দোষের? পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ আহাম্মক গোষ্ঠীর মধ্যে কতোগুলো গোষ্ঠী আজও বিশ্বাস করে পৃথিবী সমতল, কতোগুলো মনে করে এলভিস প্রিসলি বেঁচে আছেন এখনও- এই আহাম্মকদের নিয়ে উপহাস করা যাবেনা? কারণ তারা আঘাত পাবে?”
@সেঁজুতি
আপনি যেগুলো বলছেন সেগুলো সবাই জানে গতানুগুতিক অভিযোগ। কাউকে লিখতে আঁকতে মানা করা হয় নাই। সমস্যা হল আমরা হয় সেই এই পার্টি না হয় নিশ্চই এন্টি পার্টি হিসেবে দেখি।….আর কে মুক্তচিন্তার জন্য কিছু করছে কে করে নাই তাও আমার পোস্টে উল্লেখ নাই।..সমস্যা হল ঐ যে হয় তুমি আমার দলে না হলে অবশ্যই আমার শক্রু এই সেন্সে লেখাটা পড়ছেন।
আপনি বলছেন
নাহ ভাই, আমি এতো বড় ফ্রি থিংকার হতে পারিনি এখনো। অসভ্যতা কিংবা অভদ্রতা দিয়ে মুক্তচিন্তা করব।
আপনি কমেন্টে বলছেন
এই টাইপ কথা এখানে আসছে কেন? বুঝলাম না।
আর অদ্ভুত বিষয় হল কিন্তু নিয়ে সমালোচনা করলেই একদল বলা শুরু করে। ও এটা করছে তাহলে আমি এটা করতে পারব না কেন। ও এটা ভাবছে তাহলে আমি ভাঙতে পারব না কেন। এগুলো খুব হাস্যকর শোনায়। আইএস কাবা ভাঙার হুমকি দিসে তাই আমি ফটোশপ করে কাবা ভাঙতে পারুম না। যুক্তিগুলো এই টাইপ শোনায়।… আর এখানে তসলিমা নাসরিনকে কোন মুমিন কোন মডারেট কী বলছে তা নিয়ে প্যাচাই যাচ্ছেন। তসলিমা নাসরিনের উপর রাষ্ট্রীয়ভাবে যে অন্যায় হয়েছে তা নিয়ে এই ক্ষুদ্র বান্দাও কিছু লিখেছিল। তার দেশে বাস করার অধিকারের পক্ষেই ছিলাম সবসময়
কথা হচ্ছে আমরা অনেকেই অনেক কমেন্ট করলাম। কমেন্ট করে হয়তো আবার পরিবারের সাথেই রোজা না থেকে ইফতার করতে বসবেন। ইফতার খাওয়ার টাইমে খোঁচাখুচির উদ্দেশ্যে নিশ্চই পিতাকে রোজা কেমনে হইছে, মুহাম্মদ কয় বিয়া করছে এগুলো নিয়ে খোঁচাখুচি করবেন না।… তবে আলোচনার উদ্দেশ্য থাকলে ইফতারের টেবিলেও আলোচনা সম্ভব।
“যে হয় তুমি আমার দলে না হলে অবশ্যই আমার শক্রু এই সেন্সে লেখাটা পড়ছেন। ”
না রে ভাই, আপনার বক্তব্যেই সেটা বেশি মনে হচ্ছে। আমি স্পষ্টভাবে বলেছি আমি অভিদা’র দলে। তাতে আপনার সমস্যা থাকলে আর কিছু বলার নেই।
আর এটাকে ত্য্যনা প্যাঁচানো বলছেন, মানে আপনি কি জানেন তসলিমা নাসরিনের জন্য আমি/আমরা কিছু করেছি কী’না। আপনি কি আমাকে চেনেন? আমার বিষয়ে কিছু জানেন? ইনফ্যাক্ট আপনি যখন গ্রেফতার হন তখন আপনার লেখা নিয়ে অভিদা কাকে কাজ করতে দিয়েছিলেন জানেন? না জেনে, না বুঝে এভাবে কথা বল্বেন না প্লিজ।
ইফতারের কথা টেনে এনে জিনিসটাকে খেলো করলেন কেন বুঝলাম না, পুরোই বালখিল্য একটা কমেন্ট এটা। আজব!! এ ধরনের চিপ মন্তব্যের মানে কী?
আর একদল কি বলে, অপর দল কি বলে এটা নিয়ে যখন এতো বোঝেন তখন অভিদা’র কথা রিফিউট করুন পারলে, সেটা তো পারছেন না। ঠাট্টা কেন করা যাবেনা , সেটা অভিদা বলেছে আমিও এক্স্যাক্টলি সেই কথাই বল্লাম, কই অভিদা’র লেখায় তো ত্য্যনা প্যাঁচানো দেখতে পেলেন না!! পেলেন শুধু আমার মন্তব্যে!!!
অপরকে না জেনে, তার সম্পর্কে না বুঝে শুধু আপনার মত প্রতিষ্ঠা করার জন্য নিশ্চয়ই এ লেখা নয়। আপনার এই লেখা পড়ে কয়জন ধর্মান্ধ কোপানো বন্ধ করবে বলে আপনি মনে করেন, আমি মনে করি একজন ও না। চায়ের কাপ না রাখলেও বা কাবা না মূড়োলেও কোপানো হতো এবং আরো হবে। সেটাই বাস্তব। অযথা মুক্তচিন্তাকে কাপড় প্রানোর দরকার নেই।
“আইএস কাবা ভাঙার হুমকি দিসে তাই আমি ফটোশপ করে কাবা ভাঙতে পারুম না। যুক্তিগুলো এই টাইপ শোনায়।…”
এই কথাটার মানে আপনার কাছে কি? সত্যিকারের কাবা ভাঙ্গা আর কাবার ছবি ফটোশপ করা একই মাত্রার অপরাধ??? আপনি আইসিসকে আর যারা এই যুক্তি দেয় তাদেরকে একই রকম “অপরাধী” ভাবেন? ? বাহ্!
মানে অনলাইনে/ কাগজের ওপর ছবি আঁকলেই ধর্মানুভূতি নিয়ে হৈ হৈ করে তেড়ে আসা যায়, এজন্য আঁকাই যাবেনা, লেখাই যাবেনা? রয়েসয়ে সব করতে হবে? কই, অভিজিৎ রায় তো সেটা বলেনি, প্রিচ ও করেনি। তার অনেক আগেও তো হুমায়ূন আজাদকে কোপানো হ য়েছিলো। সমস্যার মূল কি কোপানো না কি কাবায় রঙ করা?
অভিদাও তো উগ্র নাস্তিক সালাফি সেকুলার সব ট্যাগ খেয়েছিলো। তখন কি জন্যে খেয়েছিলো? রুট অফ দ্যা প্রবলেম কি নাস্তিকদের দায়িত্বশীলতার অভাব না কি উগ্র আস্তিকতা/ধর্মান্ধতার মহামারী বিস্তার? সবাই চুপ থেকে থেকে এই বিস্তার কমবে? ওদেরকে “বুঝিয়ে” “শিক্ষার বিস্তার” করে কমানো গেছে? এই গত ১৫/২০ বছরে?
তাহলে যারা মোহাম্মদের কার্টুন আঁকে আর যারা গলা কোপায় তারা দু’জনই “সমান” অপরাধী? বাহ্! তাহলে আর কিছু বলার নেই আপনাকে। হ্যাঁ এই কথার সর্বান্ত:করণে বিরোধিতা করি। অভিদা’ও করতো আমিও করি।
আপনার ত্যানা প্যাচানো মনে হলে আপনি “ভদ্র” “সভ্য” নাস্তিকতা করতে থাকুন।
আপনার নিজের লেখার স্পিরিট অভিদা’র লেখা, দর্শন এগুলোর সাথে যায়না। এটা পড়ার পর আমার মনে হয়েছে, আপনআর মন্তব্য পড়ার পর আরো বেশি মনে হয়েছে।
আমার বক্তব্য কখনোই আপনার লেখার মূল স্পিরিটকে সমর্থন করেনা। আপনার উদ্দেশ্য মহৎ হতে পারে, কিন্তু লেখাটার সাথে একদমই একমত নই।
প্রথম কথা আপনাকে আঘাতের করার জন্য কোন কমেন্ট করিনি। যদি পেয়ে থাকেন তাহলে তার জন্য দুঃখিত।
দ্বিতীয়তা- আমি আবারো বলছি অনলাইনে অনেক কিছুই করা যায় বলা যায়। কিন্তু বাস্তব জীবন অনেক ভিন্ন। বাংলাদেশে যারা থাকে তারা বেশ বুঝতে পারছি। ব্লগ লেখে এটাও রাস্তায় বলতে চায় না কেউ।
কেউ রাত চারটার দিকে কোরবানির বিরোধীতা করে দুপুর বেলায় কোরবানি দিলে তাতে দোষের কিছু দেখি না। কারণ অনেক সময় পারিবারিক জীবনে আপোষ করতে হয়।… আমি আবারো বলছি; আলোচনা ও বির্তকের জায়গাটা যেন কোনভাবে ছোট হয়ে না আসে তার জন্য দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।….
যেমন ধরেন-ইসলামিকদের বয়ান হল নারী ঘরে থাকার জিনিস। কিন্তু এর বিরুদ্ধে তো মুসলিমরাই অবস্থান নেয়। যিনি ধার্মিক তিনিও অবস্থান নেন। কেউ যদি ধর্মিক হয়ে নাস্তিক হত্যার বিচার চাইতে আসে তখন কী আমি বলব আপনার ধর্মে ভাই এটা লেখা ছিল ওটা লেখা ছিল? জঙ্গিবাদদের প্রতিরোধ তো ঐ ধার্মিকদের নিয়েই করতে হবে তাই না।
আর আমি কখন বললাম দুইজন সমান অধিকারী? নিজেই যখন সিন্ধান্তে পৌছে যান তাহলে আর বক্তব্য দেওয়ার মানে হয় না।…
–শেষ কথা।…..কিছুদিন আগে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের নিয়ে ফেইক ছবি ছড়িয়ে উত্তেজন ছড়ান হচ্ছিল। তাহলে কী বোঝা যাচ্ছে; ছবি শেয়ার করেও উত্তেজনাও ছড়ানো যায়। তাই নয় কী?
আমি আবারো বলছি কেউ কার্টুন আঁকতেই পারে তার মানে খুনির সাথে তার কর্মকেও এক পাল্লায় মাপা যাবে। কিন্তু কেউ যদি ঐ ছবি নিয়ে বায়তুল মোকারমের দিকে হাঁটা দেয় এবং সবাইকে বলে বেড়ায় দেখ আমি কী আঁকছি তাহলে স্থান কাল পাত্র ভেদে তার আচরণ অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ তাই নয় কী?
আর ঠাট্টা কেন করা যাবে না। অনলাইনে ঠাট্টা কী কম হয় নাকি। আপনাদের কথা বার্তা দেখে মনে হচ্ছে কোন নাস্তিক চটি লিখলেও তা আমার সর্মথন করতে হবে।
যাই হোক। কেউ আমার মতের সাথে মিল না হলেও আমি কাউকে অশ্রদ্ধা করি না। সবার সাথে সবাই একমত হবে এটা কেউ আশা করে না। ভাল ও নিরাপদে থাকবেন।
@ আকাশ মালিক
প্রথমেই ধন্যবাদ আপনার কমেন্টের জন্য।…..
প্রথমত- একটা কথা বলি আমেরিকায় এন্টি জিসাস সিম্বল বা পোস্টার ছাপলেও কেউ কিছু বলবে না। যদিও আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে বাইবেল ছুঁয়ে শপথ নিতে হয়। বাংলাদেশে কী এটা করতে গেলে কী হাল হবে তা সহজেই অনুমান করা যায়।..কারণ আমরা ওদের সমন সামাজিক ঐ স্তর গুলো অতিক্রম করতে পারি নাই।… আপনি সমালোচনার কথা বললেন কিন্তু আমার লেখায় কোথাও সমালোচনা নিয়ে কোন কমেন্ট নাই।…আমার স্পষ্ট বক্তব্য ছিল কিছু ইচ্ছাকৃতভাবে খোঁচানোর বিরুদ্ধে।…
এবার আসি অশ্রদ্ধার বিষয়ে। আমার কাছে অশ্রদ্ধটা হয়তো এক রকম আপনার কাছে অন্য রকম।..আমার ঘরে কোরান, ইঞ্জিল শরীর, গীতা সবই ছিল। আমার এগুলোর প্রতি আলাদা শ্রদ্ধা ছিল না। সকল বইয়ের মতনই এগুলো দেখতাম। কিন্তু কেউকে খোঁচানোর জন্য বইগুলোর উপর লাফা লাফির করার দরকারও দেখি না। যেমন-আপনি সিগারেট খেতে পারেন আমি না খেতে পারি। আমি খাই না তাই আমাকে ইচ্ছাকৃতভাবে আমার মুখে সিগারেটের ধোাঁয়া নিশ্চই মারতে পারেন না।…আমি আলগা শ্রদ্ধ করি না কিন্তু এর মানে নেই না খোঁচানোর উদ্দেশ্যে বইয়ের উপর কিছু করব। শুধু কোরান না পৃথিবীর যে কোন বইকে ইচ্ছাকৃতভাবে আলাগা অসম্মান প্রদর্শন করার বিরোধী আমি।
শেষ জবাব, বাংলাদেশের বেশির ভাগ অনলাইন অফলাইন ধার্মিকদের চরিত্র বেশ জানা আছে। আইএস কাবা ভেঙে ফেলতে চাইলেও তারা চুপ কারণ আইএসএর হাতে AK-47। জামাতীদের বিষয়েও কিন্তু একি ভাবে চুপ কারণ জামাতের চাপাতি আছে। কিন্তু বাংলাদেশে আরেকটি অংশ আছে যারা নাস্তিক বিদ্বেষী নয় আবার নাস্তিকও নয়।….তাদের সাথে যে কোন বিষয় নিয়ে মোটামুটি আলোচনা করা যায়।… মুসলিম সমাজের মুক্তি ঘটেনি তাই এতো সমস্যা। আহমদ ছফার;বাঙালি মুসলমানের মন বইতে তো তা চমৎকারভাবে বিশ্লেষণ করা আছে।
@ সুব্রত শুভ,
দুঃখিত সুভ্রত ভাই আপনার এ কথার সাথেও একমত হতে পারলাম না। কেন তারা চুপ তার কারণটা আমি মনে করি এই যে, তারা আদর্শগতভাবে আই এস আই এবং জামাতের সমর্থক। তাদের আদর্শের বিপরীতে আমেরিকার মিসাইল বা ড্রোনও নাথিং, আর কিছু করতে না পারলেও ‘আমরা সবাই তালেবান’ বলে হুংকার দিয়ে তাদের অবস্থান জানিয়ে দিতে পারে। আমেরিকার পতাকায় আগুন ধরিয়ে পায়ের তলায় মাড়িয়ে দিবে, কিন্তু শ্রদ্ধায় মাথা নত করে আই আস আই এর পতাকায় চুম্বন দিবে। বিড়াল কার্টুনের কারণে তারা টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া জ্বালিয়ে দেয়ার হুঙ্কার দিতে পারে, ডেনমার্কে নবি অবমাননা হলে বাংলাদেশ হিন্দুর দোকান তছনছ করে দিতে পারে। ভারত থেকে তাসলিমা, আমেরিকা থেকে আসিফ কিংবা ইংল্যান্ড থেকে আকাশ মালিক নবিকে নিয়ে কটুক্তি করেছে তাই বাংলাদেশে নাস্তিকদের খুন করা হচ্ছে এসব ফালতু অর্থহীন কথা যারা খুন করছে আর যারা খুন করাচ্ছে তারাও মানবেনা বিশ্বাস করবেনা।
তর্ক অনেক হয়েছে আমার ফাইন্যাল কথা, আমি বিশ্বাস করিনা কোন ব্লগার বা কোন নাস্তিকের খুনের দায়ী অন্য কোন নাস্তিক আর আমি এও মানিনা যে, ভাল বা সহীহ নাস্তিকেরা জনসমর্থন হারাচ্ছেন বা ভাল নাস্তিকেরা ইমেইজ সংকটে পড়েছেন খারাপ কোন নাস্তিকের গালাগালি বা ব্যবহারের কারণে। এক ফারাবীর কারণে বাংলাদেশের সকল মুসলমান বা বিশ্বাসীদের যেমন কেউ ফারাবীর মতন মনে করবেনা তেমনি এক আসিফের কারণে সকল নাস্তিককে কেউ আসিফের মতন মনে করবেনা।
এবার এদিক বাদ দিয়ে আমি অন্য একটা প্রশ্ন করি। তাসলিমা, আসিফ বা আকাশ মালিকের মুখ বন্ধ করবেন বা এদের হাত থেকে কলম কেড়ে নিবেন কী ভাবে? এটা তো সম্ভব না। এরা যদি মরেও যায় অন্য কেউ মুখ খুলবে অন্য কেউ কলম ধরবে। এই নাফরমান ইন্টারনেট, এই গ্লোবোলাইজেশনের জামানায় আর অবাধ তথ্য-প্রযুক্তির যুগে সমালোচনা চলবে, মস্করা চলবে, মর্কারী চলবে এমন কি গালাগালিও চলতে পারে। একজন না করলে আরেকজন করবে। সমাধানটা কী? এদের মুখ বন্ধ করা বা এদের হাত থেকে কলম কেড়ে নেয়ার চেয়ে ওদের হাত থেকে অস্ত্রটা কেড়ে নেয়া কি উত্তম সমাধান নয়? এই সমাধানের একমাত্র চাবিকাটি আছে সরকারের হাতে। কিন্তু আমাদের সরকার ও তথাকথিত মডারেইট মুসলিম নামের সরকারের পা চাটা কিছু দাসের সমর্থন ও সহায়তায় আমাদের দেশে জঙ্গী চাষাবাদ চলছে। অবশ্য সরকারের অস্থিত্ব যখন হুমকির সন্মূখীন হয় তখন দুই ঘণ্টাও লাগেনা সমস্ত রাজধানী খালি করতে। হুমায়ূন আজাদের খুনের বিচার যদি হতো আজ অভিজিৎ, ওয়াশিকুর, অনন্ত মারা যেতোনা।
বাই দ্যা ওয়ে এখানে দেখছি অনেকে বলছেন যে, এই সেদিনও এরকম ছিলনা, দশ বছর আগেও সাধারণ মানুষের একটা শ্রদ্ধা ভালবাসা ছিল নাস্তিকদের প্রতি, মাত্র তেরো সালের পূর্বেও এদেশে বাঘে ছাগলে এক ঘাটে জল পান করতো। ভাইয়েরা আপনারা কি এক চোখ বন্ধ করে হাঁটেন? দশ বছর আগে বাংলাদেশে নাস্তিক কয়জন ছিল আর এখন কতজন হয়েছে? অভিজিতের ‘সমকামিতা’ ‘বিশ্বাসের দর্শণ’ দশ বছর আগে বাজারে ছিল? ‘নবি মুহাম্মদের তেইশ বছর’ বাংলায় মানুষের হাতে ছিল? ইউনিভার্সিটির ছাত্ররা একহাত গার্ল ফ্রেন্ডের বুকে রেখে আরেক হাতের তালুতে আল-ওয়ালাকী্র ওয়াজ শুনতে পারতো? টয়লেটে বসে ইউ টিউবে মুফতি জসিমুদ্দীনের আগুনঝরা জিহাদী বয়ান শুনতে পেতো? দশ বছর আগে শ্যার্লী এবডো কী কোথায় কেউ জানতো? আপনারা কি দেখেন নাই, মসজিদে মক্তবে না গিয়ে, মাদ্রাসায় না পড়ে, কোন মোল্লার হাতে বয়াত না হয়েও শুধু ইন্টারনেটে ইসলাম পড়ে জিহাদী হয়ে কাউকে বুকে বোমা বাঁধতে? এসবের কারণ কোন নাস্তিকের উস্কানী নয়, এর কারণ ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’। চোখ কান বন্ধ করে আন্দাজের উপর শুধু বললেই হবে, আহা! আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম?
সুব্রত শুভ, ধন্যবাদ লেখাটার জন্য এবং মুক্তমনায় আলোচনার সুযোগ করে দেবার জন্য।
মোতাহার হোসেন চৌধুরীর একটা কথা আমি খুব মেনে চলার চেষ্টা করি- অন্ধকারে লাঠিপেটা করে লাভ নেই, আলো জ্বালালেই অন্ধকার দূর হবে। আমি পড়ে যতোটুকু বুঝতে পেরেছি তুই তোর লেখার মাধ্যমে এই মেসেজটাই দিতে চেয়েছিস। আমি মেসেজের সাথে সম্পূর্ন একমত তবে একই সাথে লেখার সাথে নই। সবার আগে সাম্প্রতিক কাবা শরীফ বিতর্ক নিয়ে বলে নেই।
এথিস্ট রিপাবলিকের করা পোস্টটা আমার খুব ভালো লেগেছে। ওদের মেসেজটা চমৎকার এবং কাবা শরীফকে রাঙিয়ে দিয়ে ওরা পরিষ্কারভাবে ওদের মেসেজটা চিত্রায়িত করেছে। সাংবিধানিকভাবে সেক্যুলার হলেও খ্রিস্টান মৌলবাদী অধ্যুষিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সকল রাজ্যে সমকামিদের বিবাহের পক্ষে যে রায় দেওয়া হয়েছে সেটা সত্যিকার অর্থেই ঐতিহাসিক সাফল্য আমেরিকার জন্য। ব্যাপারটা আনন্দের এবং একই সাথে আমাদের ভুলে গেলে চলবে না পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে নিপিড়িত অসংখ্য সমকামীর কথা, যারা সামাজিক স্বীকৃতি তো দূরের কথা ভালোবাসার জন্য প্রাণ দিচ্ছে নিয়মিত। আর ইসলামিক বিশ্বে সমকামীদের উপর অত্যাচারের হার অনেক বেশি যেটা অভিজিৎ দাও তার সমকামীতা বইয়ে অসংখ্য উদাহরণের মাধ্যমে দেখিয়েছিলেন। এ কারণেই এথিস্ট রিপাবলিকের ছবিটা ছিলো সময়োপযোগী এবং যুতসই।
আসিফ মহিউদ্দিন লেখা চোর আমরা সবাই জানি। অভিদার অসংখ্য লেখা, বন্যাপার লেখা, অজয় স্যারের লেখা সহ মুক্তমনার অসংখ্য লেখা তিনি নিজের নামে প্রকাশ করেছেন ব্লগে, বিভিন্ন পত্রিকায়। বিষয়গুলো সামনে আসার পর উনি কোনো ক্ষমা তো চাননি উলটো অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়েছেন পাসওয়ার্ড শেয়ার করেন এই যুক্তি দিয়ে। কিন্তু চুরি ছাড়া তিনি থাকতে পারেন না, তাই এথিস্ট রিপাবলিকের পোস্ট দেখে তিনি ছপিটি কপি করেছেন, তারপর ডান কোনায় এথিস্ট রিপাবলিকের ওয়েবসাইট ঠিকানা মুছে দিতে ব্যাকগ্রাউন্ডের সাথে মিলিয়ে কাচা হাতে ফটোকেনাবেচা মেরেছেন। তারপর অযাতিতভাবে বিষবাষ্প ছড়ানোর জন্য বাজে একটা বর্ননা দিয়ে পোস্ট করেছেন। একই ছবি অথচ কী অদ্ভুত তার দুইটি ব্যবহার। আসিফ ছবিটি ব্যবহার করেছেন মানুষকে উত্তেজিত করতে এর ফলে তার ব্যক্তি স্বার্থ উদ্ধার হবে, উনি হুমকি ধামকি দেখিয়ে নানা জায়গায় ফায়দা লুটতে পারবেন। বাংলাদেশের মুক্তচিন্তা আন্দোলনে তিনি গত পাঁচ বছর ধরে এভাবেই তিনি অবদান রাখছেন।
আসিফ এবং তসলিমার কান্ডকীর্তি সম্পর্কে বলতে গেলে সময় নষ্ট হবে কারণ তারা সুযোগসন্ধানী এবং অন্যের ঘাড়ে পা দিয়ে উপরে উঠতে ওস্তাদ। এগুলো উগ্র নাস্তিকতা না, নাস্তিকতা মোটেও না। এইগুলোও এক ধরনের ধর্মব্যবসা। যে ব্যবসায় বাড়ি, গাড়ি সুখ স্বচ্ছন্দ আসে কিছু মানুষের অন্যের কাজকে অন্যের জীবনকে বিক্রি করে দিয়ে, যাদের নিজের যোগ্যতায় কিছু করার সামর্থ্য নেই।
আসিফ সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়িয়েছেন এবং তিনি স্বভাবসুলভ এথিস্ট রিপাবলিকের পোস্ট মেরে দিয়েছেন এই দুইটাই আমার অভিযোগ। কিন্তু অনেকেই এই সুযোগে আরও অনেকদূর চলে গিয়েছেন এবং উপসংহারে চলে এসেছেন উগ্র নাস্তিকতাই নাকি দেশের আজকের এই নাস্তিক মহোৎসবের জন্য দায়ি।
মোটেও তা নয়। ফেসবুক মাধ্যমে উগ্র নাস্তিকতা শুরু করার আগেই হুমায়ুন আজাদ আক্রান্ত হয়েছেন। শাহবাগ আন্দোলনের পর থেকে প্রতিটি খুন, আক্রমন, গ্রেফতারের পেছনে ভিন্ন ভিন্ন কারন রয়েছে তবে যারা করছে তাদের গডফাদার একটা দলই। যে দল বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানাতে চায়।
আলোকিত বাংলাদেশের গঠনের সত্যিকারের কর্মী ছিলেন অভিদা। তিনি আলো জ্বালিয়ে অন্ধকার দূর করতে চেয়েছেন। তিনি চৌদ্দ বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে মুক্তমনা আন্দোলনকে একটা সঠিক পথে দাঁড় করিয়ে দিয়ে গেছেন, আটটি বইয়ের মাধ্যমে লক্ষ মনে আলো জ্বালিয়েছেন। আরও পঞ্চাশ বছর তিনি বেঁচে থাকলে আমরা আরও পঞ্চাশটা বই পেতাম তার কাছ থেকে, পেতামের কয়েক হাজার প্রবন্ধ। খুনীরা বাংলাদেশের সমাজে অভিদার ইম্প্যাক্ট ঠিকই বুঝতে পেরেছে, তাই কেউ যখন বলে আসিফের মতো লোকদের কারণে অভিদা এবং অনন্তদা খুন হয়েছে তাহলে তাদের অবদানকে সম্পূর্ন অস্বীকার করা হয় একই সাথে অস্বীকার করা হয় তারা যে সংগ্রাম করেছেন সেই সংগ্রামকে। ২০১২ সালে ধর্মানুভূতির অভিযোগে আলাদতে রুল দিয়ে যখন ধর্মকারি বন্ধ করে দেওয়া হলো তখন অভিদা প্রতিবাদ করেছেন স্পষ্টভাষায় যদিও তিনি কখনই ধর্মকারির কাজ কাম পছন্দ করতেন না। কিন্তু তারপরও তিনি এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে দ্বিধা করেন নি, যেমন ভাবে তিনি দ্বিধা করেন নি লেখাচোর আসিফ আক্রান্ত হবার পর তাকে সহায়তা করতে।
ঐ লেখাটায় তিনি বলেছিলেন-
[… পরের মন্তব্য]
রায়হান ভাই,
উগ্র নাস্তিক ভদ্র নাস্তিক এই টাইপ শব্দ আমি আমার লেখাতেও ব্যবহার করিনি। এগুলো কিছুটা সুবিধাবাদী গা বাঁচানো লেখা। বাংলাদেশের খেলার পর দর্শকরা যা করলে তা নিশ্চয়ই উগ্র দেশ প্রেম না, ওটাকে নোংরামি বলে।….এথিস্ট রিপাবলিকের পোস্টটা আমি পড়েছি ওখানে প্রেম ভালোবাসার কথা বলা আছে মুসলামাদের খোঁচা বা অহেতুক উষ্কানি বা বিদ্বেষজাতীয় কোন কথা আমি দেখলাম না।….কিন্তু আমরা দেখলাম ছবিটার কৃতজ্ঞাতা স্বীকার না করে উল্টো ছবি থেকে তাদের নাম মুছে দিয়ে অহেতুক উষ্কানি খোঁচুখুচির জন্যই আসিফ মহিউদ্দিনের পোস্ট! তিনি যদি ছবিটা দিয়ে প্রেম ভালোবাসা বা সাম্যবাদের কথা প্রচার করতেন তাহলে বিষয়টা অন্য রকম হতে পারত। কিন্তু তিনি সেই লাইনে গেলেন না।
অনেকেই বলেন; এগুলো করলেও নাস্তিকরা মারা পড়বে না করলেও নাস্তিকরা মারা পড়বে। তাদের উদ্দেশ্যে বলি এগুলো না করলেও হয়তো নাস্তিকরা মারা পড়বে কিন্তু তাতে মৃতের প্রতি সাধারণ মানুষের ঘৃণা তীব্র হবে না। যে সব দেশ আজ উন্নত মানবাধিকারের চর্চার করে তারা আমাদের থেকেও বর্বর ছিল। ইতিহাস তাই বলে কিন্তু তারা পরিবর্তন হয়েছে, পরিবর্তন করেছে।
গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী লেখা। কারও শত্রু হয়ে তাকে নিজের পথে আনা যায় না। যে আমাকে ঘৃণা করে তার বিশ্বাসে আঘাত করে কি আর তাকে পথে আনা যায়! আগে তাকে এটুকু বুঝতে দিতে হবে যে, আমি তার শত্রু নই, বন্ধু। তবেই না সে আমার কথা শুনবে। তার বুদ্ধির মুক্তির মধ্যে যেহেতু আমারও মুক্তি জড়িত তাই আমাকে তার চিন্তার জড়তা দূর করতে সাহায্য করতে হবে।
লেখাটা পড়ে একটা স্থানীয় প্রবাদ মনে পড়ে গেল “ডেঁয়া গরু বাঁক ন’চিনে” (বাছুর গরু রাস্তার বাঁক চেনেনা)। নব্য বা রোমান্টিক নাস্তিক্যবাদীদের দেখলে আমার শুধু এ প্রবাদটির কথাই মনে পড়ে যায়।
ফেসবুকে এসব নিয়ে বলতে গেলে আবার ‘মুক্তমনা বেশধারী মৌলবাদী’ এমন ট্যাগ খেয়ে বসি এই ভয়ে কিছু বলিনি কখনও। এসবের বিপক্ষে কেউ কিছু বলতে গেলে একটা কথাই বারবার শুনতে হয়, “ওরা অমুকটা করে আমরা তমুকটা করলেই দোষ!!!”
শেষের বিস্ময় চিহ্নটা ভালো করে খেয়াল করুন, এই বিস্ময় এরা কাকে দেখাচ্ছে? যারা কলমের জবাবে নির্মমভাবে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে মারে তাদের? যেসব সাধারন মানুষ উগ্রবাদীদের ক্যাম্পেইনের স্বীকার হয়ে এই নির্মমতা ছাপিয়ে অভিজিত রায়ের লেখাটাকেই আমলে নিলো তাদের? এদের কাছে এই বিস্ময়ের কি আদৌ কোন দাম আছে? তারা কি এই বিস্ময়ের পেছনে থাকা আবেগ আর যুক্তি উপলব্ধি করার মত উন্নত হতে পেরেছে? এসবের উত্তর আমাদের তসলিমা আপু, আসিফ ভাইদের কাছে চাইলে পাওয়া যাবেনা। তারা শুধু হিসেব দেখায় কোনটা ঠিক আর কোনটা বেঠিক সেসবের। এই হিসেব আমেরিকা, ইয়োরোপ বসে দেখানো যায়। কিন্তু যেদেশের স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর প্রিয়পাত্র সামান্য একটি এক লাইনের বক্তব্যের জন্য জেলে পঁচে মরে সেদেশে এসব যুক্তি চলেনা।
যেদেশে বসে তারা এসব কথা বলছে, সেসব দেশ একশো বছর আগে এমন ছিলোনা। আজ যে আমেরিকাতে গিয়ে সেমিনারে যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদন্ডের বিরুদ্ধে এরা কথা বলে সেদেশের ইতিহাসের পাতা গাছের ডালে ঝুলিয়ে ফাঁসি কার্যকর করার মত ঘটনায় সয়লাব। দু-চারটা ওয়েস্টার্ন মুভি দেখলেই বোঝা যাবে পশ্চিমের বর্বর সময়ের কথা। যে ইংল্যান্ডে বসে নবী পুন্দানী সপ্তাহ পালন করা হয় সেই ইংল্যান্ডে অর্ধশত বছর আগেই এলান টুরিং এর মত মাথাকে ধুকে ধুকে সমাজের ঘৃনা নিয়ে মরতে হয়েছিলো, শুধুমাত্র সমকামী হওয়ার কারনে। ৯০% মুসলমানের দেশে ১% শিশুও মনে হয় মুক্তমনা হয়ে জন্মানোর সুযোগ পায়না, জন্মের আগেই তার জন্য ধর্ম অনুযায়ী নাম ঠিক হয়ে যায়। এরা জন্মের পর থেকেই পদে পদে ইসলামে অমুক মানা, তমুক করা যাবেনা শুনতে শুনতে অভ্যস্ত হয়ে যায়। জন্মই যেন এদের আজন্ম পাপ। এভাবে নষ্ট হয়ে যাওয়া মাথাকে নতুন করে কিছু শেখাতে গিয়ে যুক্তি-তর্কের পরিবর্তে গালাগালি করলে পরোক্ষভাবে এই মেসেজই দেয়া হয় “তুই মুসলিম হয়ে জন্মাইছিস কেনো, তাই তুই অমুকটা।” সেক্যুলারিটির আদর্শ নিয়ে স্বাধীন হলেও ৯০% মুসলমানের দেশ যুগের পর যুগ মৌলবাদী লালনকারীদের হাতে থাকার পরে খুব বেশি সেক্যুলার থাকেনা। ঈশ্বরে বিশ্বাস না করলেই নাস্তিক হওয়া যায়, কিন্তু মুক্তমনা হওয়া যায়না। মুক্তমনা হতে হলে ওপরে বলা এসব বিষয় বিবেচনা করে নিতে হবে।
মৌলবাদীদের মাঝে একেবারে ওপরের একটি শ্রেনী মৌলবাদিতার সুবিধা নিচ্ছে, কিন্তু বাকিরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু তারা যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এই বোধটাও যাদের নেই তাদের জন্য আমাদের অনেক কিছুই করতে হবে, যেহেতু আমরা মুক্তমনা তাই আমাদের অনেক কিছু করার দায় থেকে যায়। এদেরকে উস্কে দিয়ে লাভ তো কিছু হচ্ছেনা। এমনকি অনেক মুসলিম আফসোসেই বাঁচেনা যে নাস্তিকদের কি হবে! এরা দেখে যে পরিচিত নাস্তিক আর তার মধ্যে খুব একটা তফাত নেই, নাস্তিকের হাত-পা তিন-চারটা করে থাকেনা। স্রষ্টার ভয়, দোযখে যাওয়ার ভয় না থাকা সত্ত্বেও সে তেমন কোন খারাপ কাজ করছেনা, এরপরও শুধুমাত্র স্রষ্টায় অবিশ্বাসের কারনে এই লোকটা দোযখে পুড়ে কষ্ট পাবে এটা তারা মেনে নিতে পারেনা। তাই বারবার “লাইনে” আসার দাওয়াত দেয়। এই প্রক্রিয়াকে যতটাই হাস্যকর মনে করুন না কেন ধার্মিকের আবেগকে উপেক্ষা করতে পারেন না। নাস্তিক দোযখে যাবে এটা সে মেনে নিতে পারেনা। অর্থাৎ নাস্তিকের জন্যও তাদের ভালোবাসা আছে। কিন্তু নাস্তিক যদি এদের কাছেই যেতে না পারে তবে এই ভালোবাসা অনুভবের সুযোগ থাকবে কিভাবে? আসিফদের এসব নোংরামির কারনে নাস্তিকদের এই সাধারন মানুষের কাছে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, গিয়েছেও অনেকটা। অথচ তেরো সালের আগে পর্যন্তও এমনটা ছিলোনা। বরং কেউ নাস্তিক শুনলে তাকে একটু ছেড়ে যায়গা দিয়ে কথা বলতো সবাই, মনে করতো ও আলাদা। মনে মনে ঘৃনার থেকে অনেক বেশি কৌতুহল আর করুনা ছিলো, ইশ দোযখে যাবে লোকটা!
যা বললাম এগুলো হলো বাস্তবতা। এখানে যুক্তি, অযুক্তি খোজাখুজি করাটাও অযৌক্তিক। পরিস্থিতি যা তাতে এখন আমাদের যুক্তির থেকে কৌশল নিয়ে চিন্তা করা অনেক বেশি জরুরী। আসিফদের জন্য হাজারে হাজারে নাস্তিক দেশ থেকে কি এখন পালিয়ে যাবে???
প্রচন্ড ক্ষোভ ও ঘৃনা অনেক সময় মানুষের সৃষ্টিশীলতা ও যুক্তিবোধকে নষ্ট করে দেয়। তসলিমা নাসরিনের মত বড় মাপের যোদ্ধার কাছ থেকে খুব বড় মাপের কোন সৃষ্টি না পাওয়াটাই তার একটা প্রমান, আসীফ মহীউদ্দীনের ক্ষেত্রেও সম্ভবত এমনটাই হতে যাচ্ছে। আশা করছি ওনারা নিজেদের ক্ষোভ ও ঘৃনায় লাগাম টেনে যৌক্তিক ও বিশ্লেষনধর্মী লেখায় আগ্রহী হবেন। আসল ব্যাপার হলো একজন তসলিমা কিংবা আসীফ যে কি তা তারা বেঁচে থাকতে পুরোপুরি বোঝা যায়, কিন্তু একজন অভিজিত কি তা বেচে থাকতে কতদূর বোঝা যায় তা জানিনা, তবে মরার পরে বহুবছর পরেও তার শূন্যস্থান বোঝা যাবে। মুক্তচর্চার নামে সস্তা কাজকর্ম বন্ধ হোক, যুক্তিই হোক মুক্তি, বিজ্ঞানই হোক সত্য পথ, মানবতাই হোক একমাত্র অনুভূতির নাম।
বিদ্রঃ দেশ ছেড়েই ক্যামেলিয়া আর শুভ আসীফের মতই দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ করবে এমনটাই ভেবেছিলাম। আসলে ক্ষোভ এত বেশি যে যুক্তি আর দায়িত্বকে লাগাম দেয়া এখন খুব কঠিন ব্যাপার। তারপরও দায়িত্বের পরিচয় দেয়াতে ধন্যবাদ।
আমি গত দশ বছর ধরে মুক্তমনার মডারেশনের সাথে জড়িত, সেই আমাকেই এই মুক্তমনায় লেখালেখি করা একশ্রেণীর লোক, এই সব কথা বলার অপরাধে জামাতি, মডারেট মুসলমান, আস্তিক, প্রতিক্রিয়াশীল, আরো কতো কিছু বলে অহরহ গালি দিয়ে চলেছে। আস্তিক মোল্লাদের মতো নাস্তিক মোল্লাদেরও জন্ম হয়েছে। দু:খজনকভাবে আমরা পড়েছি এই দুই মোল্লাদের মাঝখানে।
হা হা, তিক্ত সত্যি কথা। আর এই দুই মোল্লাদের মধ্যে পরে আজকাল এসএসসি কিংবা এইচএসসি পরীক্ষাটাও না দেয়া বাচ্চা বাচ্চা ছেলে-মেয়েরা উলটাপালটা লেখালেখি করে কিংবা ইভেন্টে যোগ দিয়ে নিজেদের জীবনকে ঝুকিপূর্ন করে তুলছে। এই দায় কি আসীফরা নিবে!!!
@জাবেদ হাসান
আপনার মূল্যবান মতামতের জন্য ধন্যবাদ।
আসলে যারা অনলাইনে নিজেদের নাস্তিক পরিচয় দিয়ে লেখালেখি বা বিচরণ করেন, তাদের সবার উদ্দেশ্যই এক কিনা সেটাও কিন্তু ভাববার বিষয়। অনেকেই আছেন যাদের কাছে সত্যিকার অর্থেই একটি যুক্তিবাদী ও অসাম্প্রদায়িক, ধর্মীয় গোঁড়ামি মুক্ত ( যদিও ধর্মকে টিকিয়ে রেখে তার আশা করা বাতুলতা), প্রগতিশীল সমাজ বিনির্মাণই মুখ্য উদ্দেশ্য।
আবার একটি অংশ নিজেদের সবার কাছ থেকে আলাদা বা দ্রুত অনলাইন সেলেব্রিটি হবার আশা থেকেও লিখে থাকেন অথবা একধরনের রোমান্টিক ফ্যাশনেবল চিন্তা মাথায় রেখে চলেন।
আর একটি অংশ যারা আসলে প্রথম অংশেরই অন্তর্ভুক্ত কিন্তু ধার্মিক বা মৌলবাদীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত আঘাতের জন্য ধর্মের প্রতি আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন। কিন্তু তাদের সদুদ্দেশ্য নিয়ে কারোরই সন্দেহ নেই।
এখন এই নানাবিধ কারণে নাস্তিকদের নিয়ে তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। আর মৌলবাদীরা তাদের নীলনকশা চরিতার্থ করতে সমর্থ হয়। আমার কাছে মনে হয় যারা সত্যিই মুক্তমনা ও প্রগতিশীল সমাজের স্বপ্ন দেখেন তারা এই দ্বন্দ্ব নিরসনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারেন।
এই লেখার সাথে একমত হতেই পারি। আমার মতে মুক্তমনাদের যে মিশন স্টেটমেন্ট, সেটা এরকম হঠকারিতায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা যদি একটি all-inclusive যুক্তিনির্ভর সমাজ তৈরি করতে চাই, তাহলে পরষ্পরের কথা শান্তভাবে বলার ও শোনার দরকার আছে। দরকার আছে অপরপক্ষের সংবেদনশীলতাকে গুরুত্বের সাথে নেয়ার, কারণ ভিন্ন মতের মানুষের সমর্থনও আমাদের দরকার আছে। তারা আমার সাথে ভিন্নমতের কারণে তর্ক করুক ঘণ্টার পর ঘণ্টা, কিন্তু আমার ওপর আক্রমণ হলেও তারা আমাকে বাঁচাতে আসবে, এবং এর প্রতিবাদ করবে, এই সিচুয়েশন আমাকেই তৈরি করে নিতে হবে।
কথার অডিয়েন্স যদি আক্রান্তবোধ করে, তাহলে নিজে আক্রমণ না করলেও বক্তা আক্রান্ত হলে তাকে নিরাপত্তা দিতে আসবে না।
আমেরিকান সমকামীদের আন্দোলন থেকে বাংলাদেশের নাস্তিকদের শেখার মতো অনেক কিছু আছে। আইনের কথা ছেড়েই দেই, কারণ নানাভাবেই আইন পাশ করানো যায়। আর আমেরিকার আইনটা গণভোটও ছিল না। কিন্তু সামাজিকভাবে সমকামীদের ইমেজ গত ৩০ বছরে পুরো ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে আমেরিকায়। ঘৃণা ও তীব্র আপত্তি ধীরে ধীরে সহিষ্ণুতায় রূপ নিয়েছে। এক সময় গে পিটানো বাহাদুরির ব্যাপার ছিল, আর এখন কেউ আড্ডাতেও “you are so gay!” বলে রসিকতা করলে অনেকে ভুরু কুঁচকে ফেলে। সমকামীদের সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন নিয়ে হাসি ঠাট্টা করাকে discrimination ধরা হয়। এই বদল এক দিনে হয় নি। একজনকে দিয়েও হয় নি। বহু মানুষের জীবন ও মৃত্যুর আত্মত্যাগে হয়েছে। সমমনা, ভিন্নমনারাও সমকামীদের গ্রহণ করে নিয়েছেন সমাজে। বাংলাদেশে যদি নাস্তিকদের গ্রহণযোগ্যতা ও সহিষ্ণুতা বাড়াতে হয়, তাহলে এই পন্থা ছাড়া উপায় নেই।
@আন্দালিব ভাই
আপনার মূল্যবান মতামতের জন্য ধন্যবাদ। 🙂
লেখাটি পড়ে খুব ভালো লাগল। বিশ্লেষণধর্মী ও বিজ্ঞানমনষ্ক লেখার জন্য লেখককে ধন্যবাদ।
তবে আমি যদি জানতাম গালাগালি করার জন্য আমাকে কোপ খেয়ে মরতে হবে,তবে আমি সর্বোৎকৃষ্ট গালাগালি করে যেতাম,কারন দিন শেষে আমাকে মরতেই হবে।
কিন্তু তাতে হয়তো আপনার মনের ঝাল মিঠবে কিন্তু ক্ষতি হবে বৃহৎ অংশের তা কী ভেবে দেখেছেন? আদর্শের জন্যে প্রাণ দেওয়া নতুন কিছু নয়।
অবশ্যই সমাজকে পরিবর্তন করতে হলে সমাজে থেকেই এবং গণ মানুষের সাথে মিশে তাদের চিন্তা চেতনাকে পরিবর্তন করা সম্ভব। সমাজ বিচ্ছিন্ন হয়ে সমাজ পরিবর্তন সম্ভব না।ট্রেনকে থামাতে ট্রেনের ভেতর থেকে শিকল টানতে হবে, আর ট্রেনের সামনে থেকে থামাতে গেলে মরতে হবে।উগ্র ধার্মিক এবং উগ্র নাস্তিক উভয়ই প্রতিক্রাশীল।
গ) ধার্মিকদের সাথে মিশে এবং যৌক্তিক
আলোচনার মাধ্যমে তাদেরকে সবকিছু
বোঝানোর মাধ্যমে?
ঘ) শিক্ষা ব্যবস্থায় সংস্কার ও বিজ্ঞানমুখী শিক্ষা
ব্যবস্থার মাধ্যমে?
এভাবেই পরিবর্তন আনতে হবে।
মুক্তমনা আর প্রচলিত নাস্তিক্যবাদ এক জিনিস নয় এই স্বাভাবিক বোধটুকুও মনে হয় নব্য নাস্তিক্যবাদীদের নেই। নাস্তিক্যবাদী আর নব্য নাস্তিক্যবাদীদের মাঝেও ব্যপক ফারাক আছে। নব্য নাস্তিক্যবাদীদের অনেকেই এটাকে ফ্যাশান হিসেবে নিয়েছে, বিপ্লবী রোমান্টিসিজম থেকে তারুণ্যে যেমন অনেকেই বাম আন্দোলনে আসে ঠিক তেমনি আমরা অনেকেই সবকিছু উড়িয়ে দিয়ে নব্য নাস্তিক্যবাদের চর্চায় মেতে উঠি প্রবল বিক্রমে, বিশেষতঃ অন্তর্জালে।
মুক্তমনা একটা আন্দোলন, এটার দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য আছে, আছে যুক্তিবোধের বিস্তৃতি ঘটানোর সুদূর প্রসারী লক্ষ্য, বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করে তোলার বাসনা, ভাববাদের বিপরীতে যুক্তিশীল বস্তুবাদকে জনপ্রিয় করে তোলার অদম্য ইচ্ছা, সমাজ বিবর্তনকে ইতিবাচক দিকে প্রভাবিত করার লক্ষ্য। অন্যদিকে নব্য নাস্তিক্যবাদীদের সমস্ত কর্মকান্ডের মূলে আছে ধর্মকে আক্রমণ করা। আপনি রমজান মাসে শুকরের মাংসদিয়ে ডিনার করছেন, সে আপনি করতেই পারেন। এটা ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু এটা যখন আপনি প্রচারে নামেন তখন আপনার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন জাগে। একদিকে বলবেন ‘ধর্ম যার যার- রাষ্ট্র সবার’, অন্যদিকে ‘যার যার’ বিষয়টাকে আপনি সবার বিষয় হিসেবে সামনে এনে বলৎকার করবেন যুক্তি এড়িয়ে, আর সেই ‘যে যে’ আঙ্গুল চুষবে এটা আশাকরাটা বোধ করি বোকামী। আপনি বলতেই পারেন- আমিতো তাকে কোপাতে যাচ্ছিনা। সে আপনি যাচ্ছেননা কারণ আপনি নিজেকে তারচে’ সভ্য ভাবেন তাই, হয়তো আপনি সভ্যও বটে। ওকেতো আপনি অসভ্য তকমা দিচ্ছেনই, তাহলে কেন তার কাছে সভ্য আচরণ আশা করেন? তাকে আগে সভ্য হতে শেখান, তার চারপাশটাতে যুক্তিবোধ বাড়ান। সেটা করতে গিয়ে যদি আপনি কুযুক্তির আশ্রয় নেন, হটকারিতার আশ্রয় নেন তবে নিজেকে সভ্য ভাবার, মুক্তমনা ভাবার রোমান্টিসিজম বাদ দিন।
এথিস্ট রিপাবলিকের যে ছবিটা এডিট করে নিজের কৃতিত্ব জাহির করেতে গিয়েছেন আসিফ মহিউদ্দীন সেটি করতে গিয়ে মূল ছবির আবেদন উনি ধরতে পেরেছেন কিনা সন্দেহ আছে। সমকামীরা বা সমর্থনকারীদের কেউই ধর্মকে খোঁচা দেননি, আসিফের পোস্টে সেটি বিদ্যমান। সবকিছুতে ধর্মকে খোঁচা দিতে হবে এই দিব্যি কে দিল? এই বালখিল্যতার উদ্দেশ্য কী?
রংধনু এঁকে সমর্থন জানানোর যে প্রতিযোগীতা ফেইসবুকে দেখা গেলো এটা আমি হলপ করে বলতে পারি অনেকে (আবার পড়ুন, সবাই না, অনেকে) না বুঝে করেছে। কারণ হিসেবে বলি- আমার এক পরিচিত জন প্রথমে রংধনু এঁকে দিলেন প্রোফাইল পিকচারে (বলা বাহুল্য কারণ না জেনে করেছেন) পরে স্ট্যাটাস দিলেন সমকামীতাকে আমি ঘৃণা করি, শুনলেই গা ঘিন ঘিন করে! স্রোতে গা ভাসানোদের জন্য মুক্তমনা আন্দোলন না, অসভ্য-হটকারী আচরণকারীদের জন্য মুক্তমনা আন্দোলন না। আমি নিজেই এখনো মুক্তমনা হতে পারিনি। অনেক সীমাবদ্ধতা আমার। আপনি মুক্তমনা হোন, কিন্তু মুক্তমনার নামে ভন্ডামী করবেননা। গণবিচ্ছিন্ন হয়ে গণজাগরণ হয়না।
গালাগালির পরিবেশ টা ধর্মান্ধ মোল্লা পুরোহিতেরাই তৈরি করে। তবে আমাদের এক জায়গাতে একটু সচেতন হওয়ার দরকার আছে, সেটা হচ্ছে আমরা কারো বিশ্বাস কে তুচ্ছ ভেবে উপহাস যেন না করি।
লেখাটার দরকার ছিলো। বেশ কিছুদিন ধরেই মনে হচ্ছে, যুদ্ধেই যেহেতু নেমেছি, সেহেতু আমাকে যুদ্ধের কৌশলও বুঝতে হবে। কৌশল ছাড়া যুদ্ধ হয় না।
এটা ঠিক না যে বিদেশের কোনো ব্লগারের উপর রেগে গিয়ে দেশের কাউকে হত্যা করা হয়। হত্যাকারীরা ঠাণ্ডা মাথায় তাদেরকেই হত্যা করে যারা আসলেই ধর্মান্ধতার বিপরীতে শক্ত অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম।
তবে যদি জনগণের সহানুভূতি আমাদের সাথে থাকতো, তাহলে সরকার বাধ্য হতো খুনের বিচার করতে। সেটা হয় নি, বরং ঘটেছে উল্টাটা। ভবিষ্যতে সাধারণ মানুষই যদি ক্ষিপ্ত হয়ে দলবেঁধে নাস্তিকের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, অবাক হবার কিছু থাকবে না।
বেশ ভালো পয়েন্ট নিয়ে কথা বলেছেন। নাস্তিকদের দায়িত্ব আছে, উদাহরণ সেট করার। তারা ইম্যাচিওর আচরণ করতে পারে না, নিজের জন্যে এবং আদর্শের জন্য।
সুন্দর লেখা! প্রয়োজন ছিলো।
ব্লগার হল সামান্য অনলাইন লেখক।
যা বিশ্বাস তা আমরা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে পরিমাপ করতে চাই কতটুকু বিশ্বাস করা যায়!!!!!!!!
ওরা নাস্তিকদের কে খুন করতে পারবে। আর নাস্তিকদের কিনা চলতে হবে কিসে ওই মোল্লাদের কোথায় আঘাত লাগে সেই হিসাব কষে। একটু বেশি সম্মান আর ছাড় দেওয়া হয়ে গেলনা?
মোল্লারা যে কোন প্রশ্ন শোনা মাত্রই আঘাত পায় এটা নতুন কিছু না। ওরা হিসাবের বাহিরে। কিন্তু যে কাজ করে নিজেদের আন্দোলন বা মাঠ পর্যায়ে যারা বিজ্ঞান বা স্যাকুলার ধ্যান ধারনা প্রচার করে সেই কাজের পথটাকেই যদি কঠিন করে তুলি তাহলে এসব কামকর্ম কাদের স্বার্থে? স্যাকুলার রাষ্ট্র করতে চাচ্ছি তাহলে কাদের স্বার্থে? আমি তো বলছি না সমালোচনা করা যাবে না। আমি বলছি আপনি পড়াশুনা লেখালেখির মাধ্যমে সমালোচনা করুন। এসব সন্ত জিনিস করে শেষ বিকালে লাভটা হচ্ছে আসলে কার তা কী এবার ভেবে দেখবেন?
হেহে। থ্রেট দিচ্ছি না কিন্তু আসছে ঈদে কোনও শাহী ঈদগাহের সামনে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলুন আপনি নাস্তিক। সেখানে তাদের ধর্মিয় ‘অনুভূতিতে’ আঘাত করে কিছু বলুন। আর সেটা যদি করতে না-ই পারেন তবে অনলাইনে চিৎকার করে তাদের কী ক্ষতিই আপনি করতে পারছেন? আপনাদের মত কিছু অতি উৎসাহী, রগচটা নাস্তিকদের কারণেই অভিজিৎদা-রা আজ মাটিতে মিশে গেছেন। যদি বিবেক ব্যবহার করেই নাস্তিক কয়ে থাকেন তবে সে বিবেক কাজে লাগান। আর বংশসুত্রে পেয়ে থাকলে নাস্তিকতাই সম্ভবত আপনার ধর্ম। @অনুপম
শুধু কি তাই ! আমি যেখানে কাজ করি সেখানে আমার বস পুরো দমে একজন নাস্তিক । তিনি আমাদের রোজা রাখা, নামাজ পড়া একদম পছন্দ করেন না । তিনি আরো বলেন “রোজার মাস হলো ভন্ডামির মাস” আমরা যারা রোজা রেখে অফিসে কাজ করছি এবং সেই সাথে ওয়াক্তের নামাজ আদায় করছি গতকাল আমাদের তিনি খুব খারাপ ভাবে অপমান করেছেন । বলুন এইটা কি ঠিক ? তিনি নিজে মানেন না এইটা একান্ত উনার ব্যাপার কিন্তু আমাদের উপরে তার এমন অত্যাচার করা কি ঠিক ??? তিনি বলেন রোজার মাসে যদি আমরা রোজা রেখে অফিস করতে চাই তবে আমাদের এই রোজার মাসে আর অফিসে আসার দরকার নাই। আপনারাই বলুন এসব নাস্তিকদের কি করা উচিত ???
@ Soma,
খুন করা উচিৎ। এক্ষুনি পদক্ষেপ নেন দেখবেন এর পরে দুনিয়ার আর কোন নাস্তিক এমন কথা বলার দুঃসাহস দেখাবেনা।
আসুন, দেখে যান আমার কর্মচারীদের অবস্থা। নামাজের আলাদা রুম তাদের জন্যে করে দিয়েছি। ইফতারের সময় আধ ঘণ্টা সকল কর্ম বন্ধ। এই আধঘণ্টা সময় খুশী মনে কভার করে নেয় আমার ইংরেজ কর্মচারীরা। আমার ঘর থেকে বউ তাদের সকলের জন্যে ইফতার পাঠায়, যদিও কর্মচারীগন নিজেরাই এখানে ইফতারী তৈ্রী করে নেয়।
আসুন, আপনার ঐ নাস্তিক বস বা এমপ্লয়ারের অনুচিৎ আচরণের কারণে আমাকেও এসে খুন করে যান কারণ আমিও একজন ব্যবসায়ী নাস্তিক। আমার কোন লেখা বা মন্তব্যের অজুহাতে যান ব্লগার! জাফর ইকবালকে কতল করে আসেন কারণ তিনিও ব্লগে লিখেন।
যে কাজে কারো প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কোন ক্ষতি হয় না সেই কাজ করার অধিকার তো সবারই রাখে। আমার যেমন ধর্ম পালন করার স্বাধীনতা আছে তেমনি আপনার পালনের অধিকার আছে। আপনি তাকে বলুন আপনার অফিসের কাজে যদি কোন ক্ষতি না হয় বা এই রোজার দোহাই দিয়ে আমি যদি কাম চুরি না করি তাহলে সমস্যাটা কোথায়।
হ্যা বাংলাদেশের বেশির ভাগ সরকারী অফিসের লোকজন এসবের দোহাই দিয়ে কাম চুরি করে সেটা আলাদা বিষয়।
আপনার বস যে কাজটা করছে, সেটি অত্যন্ত গর্হিত একটা কাজ। তিনি অথরিটি হয়ে এই কাজটা করতে পারেন না। তিনি যখন এগুলো বলছেন, তখন তার অধস্তন কর্মচারীদের এর বিপক্ষে যুক্তি দেবার কোনো সুযোগ থাকছে না। অফিসে নামাজ পড়ার কারণে অপমান করারও কোনো অধিকার তার নেই, যদি না আপনারা অতিরিক্ত সময় নেন বা অফিসের পরিবেশকে বিঘ্নিত করে তোলেন। সেক্ষেত্রেও তার উচিত প্রফেশনালি সেগুলো আপনাদের বুঝিয়ে বলা। রোজা রাখাটা যার যার ব্যক্তগত ব্যাপার, কে রোজা রেখে অফিসে আসছে, আর কে আসছে না, কিংবা রোজা রাখলে অফিসে আসা যাবে না, এই রকম বক্তব্য সুনির্দিষ্টভাবেই শ্রম আইনের লঙ্ঘন। উন্নত বিশ্বে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার চমৎকার সুযোগ আছে। বাংলাদেশের বিষয়টা বলতে পারছি না আমি। থাকলে ব্যবস্থা নিতে পারেন আপনারা সবাই এক যোগে।
সহমত…..অসাধারণ লেগেছে লেখাটা দাদা।
মানুষের হাতে এত সময় আসে কোথা থেকে কে জানে। আলস্য মাথা আসলেই শয়তানের কারখানা।
আমি যদিও মনে করি না জংগী কিলার সেলের সদস্যরা সাত সাগরের ওপারে কে কি বলল করল তার ভিত্তিতে দেশে হাতের কাচে যাকে পাওয়া যায় তাকে কোপায় মারবে। এই কিলারদের কার্যকলাপ লক্ষ্য করলে বোঝা যায় এরা অনেক ঠান্ডা মাথার, অনেক পরিক্লপনা করে আগায়, লিষ্ট বানানোই আছে, কাকে কি কারনে সে লিষ্টে রাখা আছে তা তাদের ভালই হিসেবে আছে।
কিন্তু গুরুত্বপূর্ন হল এসব কিলিং এ জনসমর্থন হাতে তুলে দেওয়ার মত বালখিল্য আচরন কোনমতেই উতসাহিত করা যায় না। ধর্মের যৌক্তিক সমালোচনার প্রয়োযন আছে, তাই বলে তার নামে অযথা সম্পূর্ন অকারনে উষ্কানি প্রদান সূস্থতা নয়। বিরুদ্ধ স্রোতে চলা চিরকালই কঠিন, সেই কঠিন কাজ এসব কার্যকলাপ আরো হাজারগুনে কঠিন করে দিচ্ছে।
একদম ঠিক কথা বলেছেন! কারো ধর্মানুভূতিতে আঘাত করা ঠিক না!
সমালোচনা করলেও অনেকে আঘাত পায়। কথা হচ্ছে আমাদের দেশে সমালোচনাটাই যখন আমরা ঠিক মতন করার বৈধতা অর্জন করতে পারছি না সেখানে এসব কাজ করে সমালোচনা করার রাস্তাও বন্ধ করে দিচ্ছি। সমালোচনা পৃথিবীর সকল কিছু নিয়ে করা যায় কিন্তু সমালোচনা নোংরামী বিদ্বেষ এগুলো ভিন্ন ভিন্ন বিষয়।