লা গ্রান্ডে ওদালিস্ক, জাঁ অগুস্ত ডমিসিক আঙগ্রে (১৭৮০-১৮৬৭) ডিটেইল
একুশে বইমেলা ২০১৫ তে, লেখক কাজী মাহবুব হাসান এবং আমার অনুবাদিত ‘ওয়েজ অব সিইং’ থেকে কিছুটা তুলে দিচ্ছি মুক্তমনার প্রিয় পাঠকদের জন্য ।
মোট পাঁচ জনের (মূলতঃ জন বার্জার, এস’ভেন ব্লুমবার্গ, ক্রিস ফক্স, মিশেল ডিব, রির্চাড হলিস) সম্পাদনায় এটি বই আকারে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৭২ সালে। কিন্তু প্রথমে এটি জন বার্জার এর ওয়েজ অব সিইং (Ways of Seeing) শীর্ষক প্রামাণ্যচিত্র রুপে বিবিসি (BBC) টেলিভিশনের জন্য নির্মিত হয়েছিলো । এর সম্পূরক একই নামের এই বইটি শিল্পকলার ইতিহাস ও শিল্প সমালোচনায় একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছিল সেই সত্তরের দশকেই। আর এর নামকরণের যথার্থতাও বিস্ময়কর কারণ শিল্পকলাকে আসলেই আমাদের সেটি দেখতে শিখিয়েছে সম্পূর্ণ নতুন দৃষ্টিভঙ্গীতে। বিবিসি টেলিভিশনে ধারাবহিকভাবে প্রচারিত হওয়া এই অসাধারণ অনুষ্ঠানটির দর্শকপ্রিয়তাই পরবর্তীতে তাদের অনুপ্রাণিত করেছিল, প্রামাণ্যচিত্রটিকে একটি স্বতন্ত্র বই হিসাবে প্রকাশ করার জন্য।
অস্কার ওয়াইল্ড তাঁর The Critique as Artist বইটিতে শিল্প সৃষ্টি এবং শিল্প সমালোচনার মধ্যবর্তী সম্পর্কটিকে তুলনা করতে গিয়ে মন্তব্য করেছিলেন – Criticism is a creation of within creation, অন্যভাবে বলা যায়, শিল্পীর সৃষ্টির অভ্যন্তরে সৃষ্টি হয় শিল্প সমালোচনার, যা কোন শিল্প সমালোচকেরই একটি নিজস্ব সৃষ্টি অথবা শিল্প সমালোচনাও তার নিজের দাবীতেই একটি পরিশুদ্ধ শিল্পরুপ। আর সেই সূত্র ধরেই বলা যায়, কোন সন্দেহের অবকাশ নেই শিল্পসমালোচনাকে সৃজনশীলতার একটি নতুন মাত্রা দিতে সক্ষম হয়েছিলেন ব্রিটিশ শিল্পসমালোচক জন বার্জার (John Peter Berger: জন্ম ৫ নভেম্বর ১৯২৬)।
তাঁর হাতেই শিল্প সমালোচনা একটি নতুন ধরনের শিল্প মাধ্যমের রুপ পেয়েছে। আর আমরাও শিল্পকর্মকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গী দিয়ে দেখার সেই অভিজ্ঞানটি অর্জন করেছি জন বার্জার এর সৃষ্ট শব্দাবলীতে। তিনি শিল্পকলাকে ব্যাখ্যা করেছেন খুবই স্বতন্ত্র একটি দৃষ্টিকোণ থেকে। সম্পূর্ণ মৌলিক একটি অভিব্যক্তিকে আশ্রয় করে সামগ্রিক মানব সভ্যতা আর মানব জীবনে শিল্পকলার অনন্য অবস্থানটি তিনি পর্যালোচনা করেছেন তাঁর বিশ্লেষণী প্রজ্ঞায়। শিল্পকলার ইতিহাসে আমরা খুব কম সংখ্যক শিল্পকলার ইতিহাসবিদ বা শিল্প সমালোচককে পেয়েছি, আর যারা শিল্পকলার এই অসীম জগতটাকে কিছুটা হলেও বা অনেকটাই পরিচিত করে তুলেছেন শিল্পপ্রেমিকদের কাছে। আর তাদের মধ্যে ব্রিটিশ শিল্পসমালোচক জন বার্জার অনন্য বেশ কিছু কারণে, তিনি একাধারে শিল্প সমালোচক, শিল্পকলার ইতিহাসবিদ, গল্পকার, কবি এবং পরিচালক এবং সর্বোপরি তিনি নিজেও একজন চিত্রশিল্পী…
‘ওয়েজ অব সিইং’ এর অধ্যায় তিন ‘ন্যুড’ থেকে কিছুটা অংশ শেয়ার করছি, কারো ভালো লাগলে, বইটি সংগ্রহে রাখতে পারেন । ধন্যবাদ ….
অলিম্পিয়া, মানে (১৮৩২-১৮৮৩)
আবরনহীন হওয়া মানে শুধু বস্ত্রের আবরণ সরিয়ে ফেলা, অপরদিকে নগ্নতা হচ্ছে শিল্পের একটি রুপ। – কেনেথ ক্লার্ক
প্রচলিত ব্যবহার এবং প্রথা অনুযায়ী – অবশেষে যা এখন প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে ঠিকই, কিন্তু কোনভাবে বলা যায় না তার কোনো মীমাংসা হয়েছে – সমাজে একজন নারীর অবস্থান একজন পুরুষের অবস্থান থেকে প্রকৃতিগত ভাবেই ভিন্ন। একজন পুরুষের সামাজিক অবস্থান নির্ভর করে, যে ক্ষমতার প্রতিশ্রুতির তিনি প্রতিভূ তার উপর। যদি সেই প্রতিশ্রুতি অনেক বিশাল আর বিশ্বাসযোগ্য হয়, তার উপস্থিতি হবে আকর্ষনীয়। আর যদি সেই প্রতিশ্রুতি হয় ক্ষুদ্র এবং তার বিশ্বাসযোগ্যতা না থাকে, দেখা যায় তার উপস্থিতিটাও হয় বেশ অনাড়ম্বর। যে প্রতিশ্রুত শক্তির কথা বলা হচ্ছে, তা হতে পারে নৈতিক, শারীরিক, মেজাজ আর আচরণে, অর্থনৈতিক, সামাজিক, যৌন – কিন্তু এর অভিষ্ঠ লক্ষ্য সেই পুরুষটির নিজস্ব পরিমন্ডলের বাহিরে। একটি পুরুষের উপস্থিতি, আপনার জন্য বা আপনার প্রতি তার কি করার ক্ষমতা আছে, তার ইঙ্গিত দেয়। তার উপস্থিতি হতে পারে কৃত্রিম, এই অর্থে যে, সে আসলে ভণিতা করছে, যতটা যোগ্য হিসাবে নিজেকে উপস্থাপিত করেছে, ততটা যোগ্য সে আসলে নয়। কিন্তু তার এই ভণিতা সবসময়ই সেই শক্তি অভিমুখী, যা সে ব্যবহার করে অন্যদের উপর।
আর এর ব্যতিক্রম হচ্ছে, কোন একজন নারীর উপস্থিতি, যা তার নিজের প্রতি তার নিজস্ব মনোভাবকেই প্রকাশ করে এবং সেটাই নির্ধারণ করে দেয়, তার প্রতি অন্যরা কি ধরনের আচরণ করতে পারে বা পারে না। তার উপস্থিতি সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়, তার অভিব্যক্তিতে, কণ্ঠে, মতামতে, প্রকাশ ভঙ্গিমায়, পরিচ্ছদে, তার বাছাই করা পরিবেশে, রুচিতে আসলেই সে এমন কিছু করতে পারে না, যা তার উপস্থিতির অংশ নয়। কোন নারীর জন্য তার উপস্থিতি, তার পুরো অস্তিত্বের অন্তর্নিহিত একটি অনুষঙ্গ, আর পুরুষদের সেটাকে প্রায়শই নারীর শারীরিক অস্তিত্ব থেকে প্রবাহমান কোন বৈশিষ্ট্য ভাবার প্রবণতা আছে, যেমন কোনো ধরনের তাপ বা গন্ধ আর স্বর্গীয় দ্যুতি।
জন্ম নেবার জন্য কোন একজন নারীকে আবার জন্ম নিতে হবে পুরুষের রক্ষণাবেক্ষনে, তার জন্য বরাদ্দ সীমাবদ্ধ কোন পরিসরে। নারীদের সামাজিক উপস্থিতি গড়ে উঠেছে, সীমাবদ্ধ পরিসরে এ ধরনের অভিভাবকত্বের অধীনে তাদের বেঁচে থাকার উদ্ভাবনপটুতার একটি ফলাফল হিসাবে। কিন্তু এর মূল্য পরিশোধ করতে নারীকে দ্বি-বিভাজিত করতে হয়েছে তার সত্ত্বাকে। একজন নারীকে অবশ্যই অবিরামভাবে তার নিজের দিকে লক্ষ্য রাখতে হয়। প্রায় সারাক্ষণই সে নিজেই তার নিজের অস্তিত্বের সঙ্গী। যখন সে কোন ঘরের মধ্য দিয়ে হেটে যাচ্ছে কিংবা তার পিতার মৃত্যু শোকে ক্রন্দনরত, সে পারতপক্ষে কখনোই এড়াতে পারে না মনে মনে তার সেই ভাবনাটি, যে তাকে হাটতে বা কাঁদতে দেখা যাচ্ছে। খুব শৈশব থেকেই তাকে শেখানো আর বিশ্বাস করানো হয়েছে যে, নিজেকে তার খতিয়ে দেখতে হবে নিরন্তর।
সুতরাং সে তার আপন সত্ত্বায়, ‘যে খতিয়ে দেখছে’ বা ‘নিরীক্ষক’ আর ‘যাকে খতিয়ে দেখা হচ্ছে‘ বা ‘নিরীক্ষিত’, উভয়কে বিবেচনা করতে হয় দুটি উপাদান হিসাবে, যা সবসময়ই একজন নারী হিসাবে তার আত্মপরিচয়ের অবিচ্ছেদ্য অথচ স্বতন্ত্র দুটি অংশ।
তাকে সবকিছুই উত্তম রুপে পরীক্ষা করে দেখতে হয়, সে আসলে কি, সবকিছু যা সে করছে কারণ অন্যদের কাছে তার উপস্থিতিও খতিয়ে দেখতে হয়, আর সর্বোপরি পুরুষদের সামনে কিভাবে সে উপস্থাপিত হচ্ছে, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা সাধারণত তার জীবনের সফলতা হিসাবে মনে করা হয়। তার নিজস্বতায় বেঁচে থাকার অনুভূতিটাকে সরিয়ে, সেই জায়গা দখল করে নেয়, অন্যদের দ্বারা তার সেই নিজস্বতাটি যেভাবে মূল্যায়িত হচ্ছে সেই অনুভূতিটি।
পুরুষরা নারীদের সাথে কোন আচরণ করার আগেই তাদের খতিয়ে দেখে নেয়। এর ফলশ্রুতিতে, কিভাবে কোন একজন পুরুষের কাছে, নারী কি রুপে আবির্ভূত হবে, সেই বিষয়টি এবং তার সাথে কিভাবে আচরণ করা হবে তা নির্ধারণ করে দিতে পারে। আর এই প্রক্রিয়ার উপর কিছুটা নিয়ন্ত্রণ অর্জনের প্রচেষ্ঠায় নারীকে অবশ্যই সেই বোধটাকেও ধারণ করতে হয় আর নিজের অস্তিত্বের অংশ করে নিতে হয়। নারী সত্ত্বার যে অংশটি ‘নিরীক্ষকের’ ভূমিকা পালন করে সেটি, এর অপর অংশটি, অর্থাৎ যাকে নিরীক্ষা করা হয় বা ‘নিরীক্ষিত’, তার সাথে এমনভাবে আচরণ করে, যেন তা অন্যদের দেখিয়ে দেয় ‘সম্পূর্ণ তার নিজের’ প্রতি কেমন আচরণ সে প্রত্যাশা করে। আর তার এই নিজের প্রতি নিজেরই এই দৃষ্টান্তমূলক আচরণ তার উপস্থিতির মূল ভিত্তিটি রচনা করে।
প্রতিটি নারীর উপস্থিতি বা তার ব্যক্তিত্ব নিয়ন্ত্রণ করে তার উপস্থিতির পরিসীমায় কোন আচরণটি অনুমতিযোগ্য আর কোনটি তা নয়। তার প্রতিটি কাজ – সেটার প্রত্যক্ষ উদ্দেশ্য বা অনুপ্রেরণা যাই হোক না কেন – তিনি তার সাথে কিভাবে আচরণ করা হবে বলে আশা করছেন তারই ইঙ্গিত হিসাবে বুঝতে হবে। যদি কোন নারী মেঝেতে একটি গ্লাস ছুড়ে ফেলেন, সেটা একটা উদহারণ হবে তিনি তার নিজের ক্রোধের আবেগকে কিভাবে দেখছেন, সুতরাং এছাড়াও তা ইঙ্গিত করে তিনি ইচ্ছা পোষন করছেন অন্যরাও সেই আবেগটি নিয়ে কিভাবে আচরণ করবে। যদি কোন পুরুষ সেই একই কাজটা করেন, তার কাজটা হবে শুধুমাত্রই তার রাগের বহিঃপ্রকাশ। যদি কোন রমণী একটি চমৎকার হাস্যরসাত্মক কৌতুকময় কিছু বলেন, সেটা উদহারণ হবে, তিনি তার নিজের ভিতরের একজন কৌতুকপ্রিয় মানুষের প্রতি কিভাবে আচরণ করছেন, এবং সে কারনে তিনি একজন কৌতুকপ্রিয় নারী হিসাবে অন্যদের কাছ থেকে কেমন আচরণ প্রত্যাশা করছেন। শুধুমাত্র একজন পরুষই পারে কোন কৌতুকের খাতিরেই কৌতুক করতে।
হয়তো কেউ বিষয়টিকে সহজ করে বলতে পারেন এভাবে, ‘পুরুষরা কাজ করে’ আর `নারীরা আবির্ভূত’ হয়। পুরুষরা নারীদের দিকে তাকিয়ে দেখে। আর নারীরা তাদের নিজেদের দেখে কিভাবে অন্যরা তাদেরকে দেখছে। আর এটাই পুরুষ আর নারীর মধ্যকার প্রায় সব সম্পর্কই শুধু নিয়ন্ত্রণই করে না, এছাড়াও নারীদের নিজেদের পারস্পরিক সম্পর্কগুলো কি হবে সেটিও নির্দিষ্ট করে। নারী তার নিজের সত্ত্বার ভিতরের নারীদের সেই নিরীক্ষক একজন পুরুষ : কিন্তু যাকে সেই নিরীক্ষক নীরিক্ষা করছেন সেই অংশটি একজন নারী। এভাবে নারী নিজেকে রুপান্তর করে বস্তুতে – এবং আরো সুনির্দিষ্টভাবে বললে একটি দেখার বস্তুতে : একটি দৃশ্যে।
ইউরোপীয় তৈলচিত্রের একটি শ্রেনীতে নারীরাই প্রধান এবং চির-পৌনঃপুনিকতা সহ আবির্ভূত হওয়া একটি বিষয়। সেই শ্রেণীটি হচ্ছে ন্যুড (Nude) বা নগ্নতা। ইউরোপীয় এই নগ্নতার চিত্রকর্মগুলোতে আমরা বেশ কিছু বৈশিষ্ট আর প্রথাগত ধ্যানধারণার স্বরুপ উদঘাটন করতে পারি, যার মাধ্যমে নারীদের দেখা এবং বিচার করা হতো দৃশ্য হিসাবে।
এই প্রথার প্রচলিত সংস্কৃতিতে প্রথম নগ্ন মানব মানবী, যাদের চিত্রকর্মে সৃষ্টি করা হয়েছিল তারা হচ্ছেন: আদম এবং হাওয়া (অ্যাডাম ও ইভ)। জেনেসিস এ বর্ণিত সেই কাহিনীটা এখানে পুনরায় মনে করা যেতে পারে সঙ্গত কারণে:
যখন নারীর দৃষ্টিতে প্রতীয়মান হয় যে, বৃক্ষটি খাদ্য হিসাবে উত্তম এবং দৃষ্টিনন্দন এবং বৃক্ষটিকেই কামনা করতে হবে কাউকে জ্ঞান প্রাপ্ত হবার জন্য, সেকারণেই সে বৃক্ষটির ফল সংগ্রহ করেন এবং তা ভক্ষণ করেন। এবং সেই ফল আস্বাদন করার নিমিত্তে তার সঙ্গী স্বামীকে তার ভাগ প্রদাণ করেন, এবং স্বামীও তার স্বাদ নিয়েছিলেন ও ভক্ষণ করেছিলেন। এবং দুজনেরই জ্ঞানচক্ষু এরপর উন্মীলিত হয়। এবং তারা প্রথমেই জানতে পেরেছিলেন, তারা আবরনহীন, তারা কয়েকটি ডুমুর পাতা একত্রে সেলাই করে নিজেদের জন্য আচ্ছাদন তৈরী করেন। এবং প্রভু ঈশ্বর পুরুষটিকে ডাকেন এবং তাকে বললেন, ‘তুমি কোথায় এখন?’ এবং পুরুষটি প্রত্যুত্তরে বলেন, ‘আমি আপনার কন্ঠস্বর শুনতে পেয়েছিলাম বাগানে, এবং শঙ্কিত হয়েছিলাম, কারণ আমি আবরণহীন ছিলাম এবং আমি নিজেকে লুকিয়ে রেখেছিলাম…’
এবং নারীটিকে ঈশ্বর বলেন: ‘আমি তোমার যন্ত্রণা বহুগুনে বর্ধিত করে দেবো, এবং তোমার প্রসবকালীন সময় কষ্টের সাথে তুমি তোমার সন্তান প্রসব করবে, এবং তোমার কামনা হবে তোমার স্বামীর প্রতি নির্দেশিত এবং তোমার উপর সে কর্তৃত্ব করবে।’
এই কাহিনীর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয়টি কি হতে পারে? তারা তাদের আবরণহীনতা সম্বন্ধে সচেতন হয়ে উঠেছিলেন কারণ জ্ঞানবৃক্ষের ফল খাবার ফলশ্রুতিতে তারা পরস্পরকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখতে শুরু করেছিল। আবরণহীনতা (Nakedness) বিষয়টির সৃষ্টি হয় যে দেখছে বা দর্শকের মনের গভীরে।
দ্বিতীয়, যে উল্লেখযোগ্য বিষয়টি আমাদের নজরে আসে সেটি হচ্ছে, এই ঘটনায় অপরাধী হিসাবে সব দায়ভার ন্যস্ত হয় নারীটির উপর আর পুরুষের অধীনস্থ হয়ে থাকার শাস্তিটিও তার উপর আরোপিত হয়। নারীর ক্ষেত্রে পুরুষ হয়ে ওঠে ঈশ্বরের প্রতিনিধি। মধ্যযুগীয় প্রথাগত ধারায় প্রায়শই এই কাহিনীটি পরিবেশন করা হয়েছে একের পর এক ঘটনাটির দৃশ্যাবলী অংকন করার মাধ্যমে, যেন ধারাবাহিক কোন কার্টুন।
ফল এন্ড এক্সপালশন ফ্রম প্যারাডাইস, পল ডি লিম্বর্গ
(( আংশিক))
দিন যাচ্ছে আর আমার অজ্ঞতার পরিধি বুঝতে পারছি।
পৃথিবীর সব ভাল ভাল বইগুলো ইংরিজিতে লিখা আর বাংলায় অনুবাদ গ্রন্হের ভীষণ অভাব । আপনাদের উদ্যোগটি ভাল ক্ষুদ্র পরিসরে যদিও অনেকে এমন উদ্যোগ নিলে কিছুটা হলেও অভাব পূর্ণ হয় । লেখিকাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ,ভাল থাকুন ।
পৃথিবীর অনেক ভালো বই বিভিন্ন ভাষায় লেখা হয়েছে নানা সময়ে । আপনি ঠিকি ধরেছেন । সেগুলো যে ভাষাতেই লেখা হোক না কেনো ইংরেজীতে অনুবাদ হয়েছে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই । এমনকি ইংরেজীতে লেখা বই প্রকাশ হবার সঙ্গে সঙ্গেও প্রধান ভাষাগুলোতে অনুবাদ হয়ে যায় । আমাদের মৌলিক লেখকের সংখ্যা প্রায় শূন্যের কোঠায় অনুবাদেও অনীহা আমাদের এমনকি জ্ঞানের প্রতি অনীহা । আমি একজন শিল্পকলার শিক্ষার্থী হিসেবে ভালো কোনো বই পাইনি বাংলায় । শিল্পকলার ইতিহাস সম্পর্কে প্রকৃত জ্ঞান ছাড়া একজন শিল্পকলার শিক্ষার্থী কখনই প্রকৃত শিল্পী হয়ে বেড়ে উঠতে পারে না । আমাদের দেশে ঠিক সেখানেই রয়েছে বিরাট এক শূন্যতা । যদিও দেখলে তেমনটা মনে হয় না। তাদের ধারণা আর্ট সামিট বা বড় আকারের প্রদর্শনী মানেই উচ্চমানের শিল্পকলা । সমসাময়িক বিশ্বে আমাদের শিল্পকলার অবস্থানটা জানতে অবশ্যিই আমাদের শিল্পকলার ইতিহাস ও শিল্পকলার সমালোচনা সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞান লাভ করতে হবে ।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ । এবং শুভকামনা ।
অনেক কিছু জানতে পারলাম লেখাটি পড়ে। এরকম আরো লেখা পড়ার অপেক্ষায় থাকলাম। ভাল লাগলো
ধন্যবাদ 🙂
সবার দৃষ্ঠিভঙ্গি সমান নয়। শিল্পীর চিন্তা ভাবনায় শিল্পের উৎকর্ষ বাড়ে। লেখিকা আসমা সুলতানা মিতা ও লেখক কাজী মাহবুব হাসান দু’জনকেই ধন্যবাদ। আরও আশা করি।
সবার দৃষ্টিভঙ্গি সমান নয় কিন্তু সেই অসমতা কে ব্যাখ্যা করবার মতো সঠিক জ্ঞান ও বিশ্লেষণ প্রয়োজন । কিছু সর্বজনীন বিষয় তো রয়েছেই যেখানে সবার দৃষ্টিভঙ্গি এক প্লাটফর্মে এসে দাড়ায় । সেই দৃষ্টিভঙ্গিটি গড়েতোলার জন্য যেমন প্রয়োজন জ্ঞান চর্চার তেমনি সৃজনশীলতার, সেই প্রচেষ্টায় আমরা নিয়মিত ভাবে শিল্পকলার বই অনুবাদ করে যাচ্ছি এবং মৌলিক বই প্রকাশেরও আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে অদূর ভবিষ্যতে । আপনাদের ভালোলাগাই আমাদের অনুপ্রেরণা ।
শুভকামনা । ধন্যবাদ ।
আসমা সুলতানা মিতা, আপনার উত্তরের জন্য ধন্যবাদ। মৌলিক বইয়ের আপেক্ষায় রইলাম।
চমৎকার একটা বই অনুবাদ করেছেন। আপনাদের বইয়ের কথা শুনেই ইউটিউবে গিয়ে প্রামাণ্যচিত্রটা দেখেছিলাম। অসাধারণ প্রামাণ্যচিত্র, শুধু শিল্পই নয়, সবকিছু দেখার দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দেয়ার মতো, বা অন্তত সব দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার মতো।
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে । একদম ঠিক বলেছেন, দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দেবার মতো । যে কাজটি জন বার্জার করেছেন আজ থেকে ৪০ বছর আগে; আমাদের অক্ষমতা আমরা এতদিনেও বইটির অনুবাদ বের করতে পারিনি ; ৪০ বছর সময় লেগেছে । যদিও আমি বেশ কয়েক বছর আগেই মনস্থির করেছিলাম কাজটা করবার। নানা কারণে হয়নি । বইটি শেষ হবার পরেও আরো ২ বছর সময় লেগে গেলো শুধু ছাপাতে 🙁 ; তারপরেও প্রকাশ হয়েছে এতেই আমরা খুশী ।
আমাদের দুজনের অনুবাদিত আরো একটি যুগান্তরকারী বই আসছে খুব শিঘ্রীই …. 🙂
ভালো থাকবেন সব সময় !
নতুন কোন বইটা করছেন? আমার অনেকদিনের স্বপ্ন ছিল কেনেথ ক্লার্ক এর “সিভিলাইজেশন” অনুবাদ করার। অবশ্য এযাবৎ অনুবাদে হাতও দিতে পারিনি। কিন্তু এটার অনুবাদ হলে চমৎকার একটা কাজ হবে। এটার কথা কি ভেবেছেন? কেনেথ ক্লার্ক এর আত্মজীবনীমূলক বইটাও কিনে রেখেছিলাম, পড়তে হবে।
🙂
বাংলাদেশে শিল্পকলার ইতিহাস নিয়ে বইয়ের সংখ্যা খুব কম।আসমা এবং আমি বেশ
কিছু বই নিয়েই কাজ করছি বহু দিন হয়ে গেল।কেনেথ ক্লার্ক এর সিভিলাইজেশন তো
বটেই ওর আরো গুরুত্বপূর্ণ কিছু বই তালিকায় আছে, সেগুলো নিয়ে কাজ করছি।
কেনেথ ক্লার্ক এর নাম তো অনেকেই জানেন না, আপনার এ বিষয়ে আগ্রহ দেখে খুবই
ভালো লাগছে.. আপনিও এই ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারেন, প্রচুর বই করা
দরকার।ক্লার্কের দু-পর্বের আত্মজীবনীটি হয়তো করা হবে না; তবে ওর
বায়োগ্রাফী যেটা মেরিল সিক্রেষ্ট লিখেছিলেন, সেটার রিভিউ খুব একটা ভালো
না, মূলত ব্যক্তিগত জীবনের নানা বিষয়গুলো প্রাধাণ্য পেয়েছে -সিভিলাইজেশন
এর ভূমিকা করার সময় আমরা রিসার্চ করেছিলাম। আসলে এত ডায়নামিক একজন
মানুষ.. তাঁর বইগুলো, প্রামাণ্য অনুষ্ঠানগুলোই বরং মনে হয়েছে তার সত্যিকারের জীবনী..কিংবা
শিল্পকলার প্রতি তার প্রত্যক্ষ অবদানগুলো, কিংবা যুগান্তকারী কিছু পদক্ষেপ, যা স্পর্শ করে আছে বৃটিশ শিল্পকলার জগত তো বটেই ..এবং এর সীমানার বাইরে বহু কিছুই । মজার ব্যাপার হচ্ছে জন বার্জারের ওয়েজ অব সিইং আসলে কেনেথ ক্লার্কের সিভিলাইজেশন এর প্রতি একটি প্রতিক্রিয়া ..দুজনের মতের অমিল বহু পুরোনো.. তবে ক্লার্ক তাঁর জায়গায় অনন্য। ধন্যবাদ আপনাকে।
হ্যাঁ ওয়েজ অফ সিইং দেখতে গিয়েও বুঝেছিলাম যে বার্জার ক্লার্কের বিরুদ্ধেই অবস্থান নিচ্ছেন। এই লেখাটাও তো ক্লার্কের উক্তি দিয়েই শুরু হলো, প্রামাণ্যচিত্রেও দেখলাম ক্লার্কের কথা দিয়ে শুরু করে তারপর দ্বিমত করছেন। আরো এক জায়গায় ক্লার্কের বিরুদ্ধাচরণ করেছেন বার্জার। এবং বার্জার যেখানে ক্লার্কের বিরোধিতা করেছেন সেটাও আমার কাছে খুবই যুক্তিসম্মত মনে হয়েছে। বার্জারের কারণে এখন কেনেথ ক্লার্ককেও আগের চেয়ে সংশয়বাদী দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যাবে, যেটা একদিক থেকে ক্লার্ক দেখাকেও আগের চেয়ে বেশি সফল করে তুলবে।
সিভিলাইজেশন দেখার পর অনুবাদের ইচ্ছা জেগেছিল খুব, কিন্তু শুরু করা হয়নি। এই ব্লগটাতে এ নিয়ে কিছু লিখেছিলাম। যদি কখনো অনুবাদ শুরু করার কথা ভাবি তাহলে আপনাদেরকে জানাব।
ধন্যবাদ লিংকটির জন্য । ক্লার্ক অনন্য তাঁর অবস্থানে, কোনো দ্বিমত থাকার কথা না কারো । ক্লার্ক যেখানে শেষ জন বার্জার শুরু । জন বার্জার শিল্পকলাকে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে আর্থসামাজিক এবং রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিশ্লেষণ করেছেন আর ক্লার্ক সেখানে করেছেন নান্দনিক এবং শৈল্পিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে । ক্লার্ক একজন প্রথাগত মানুষ এবং কমিউনিজম বিরোধী মানুষ ছিলেন । তিনি ছিলেন শিল্পকলার ইতিহাসবিদ এবং প্রচুর ধন সম্পদের মালিক ছিলেন । ক্লার্ক সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র দৃষ্টিভঙ্গি থেকে শিল্পকলাকে ব্যাখ্যা করেছেন । সেখানে বার্জার হোলেন মার্ক্সবাদী, নারীবাদী এবং শিল্প সমালোচক (ক্রিটিক)।
তাদের মধ্যে মিলও ছিলো অনেক … 🙂
দুজন দুই সময়ের মানুষ, ক্লার্ক মার্কসবাদ এর ঘোর বিরোধী ছিলেন, বহু আগের একটি টিভি অনুষ্ঠানের মুখোমুখি হয়েছিলেন দুজন.. ক্লার্ক নন্দনতাত্ত্বিক আর শিল্পকলার ইতিহাসবিদ অন্য দিকে বার্জার শিল্পসমালোচক। ক্লার্ক শিল্পী হতে হয়েছিলেন, বার্জার নিজেও শিল্পী ছিলেন। শিল্পকলার ক্ষেত্রে কিছু মৌলিক সংশ্লেষণ আছে ক্লার্ক এর, যেমন ন্যুড, ল্যান্ডস্কেপ.. কিংবা ভিঞ্চিকে নিয়ে তার ক্যাটালগটা, যার কাজের উপর তিনি বিশেষজ্ঞ ছিলেন। পরবর্তী অনেক শিল্পকলার ইতিহাসবিদরা ক্লার্কের কাছে তার ঋণ স্বীকার করেননি ঠিক মত; আধুনিক শিল্পকলার প্রতি ক্লার্কের সুস্পষ্ট অপছন্দ.. পরবর্তীতে মার্কসবাদ আর নারীবাদ পুষ্ট শিল্পকলার ইতিহাসবিদদের প্রভাবে ক্লার্ক বিস্মরিত হয়েছিলেন অনেকটাই, তবে আবার ক্লার্কের অবদান পুণমর্যাদা পাচ্ছে..২০১৪ তে টেট এ দীর্ঘদিন ক্লার্ক ছিলেন একটি প্রদর্শনীর বিষয়। একক শিল্পীর প্রতিভার প্রতি ক্লার্কের সহজাত একটি সমর্থন ছিল, নন্দনতত্ত্ব, কিংবা শিল্পকলার প্রতি সাধারণ মানুষের বিস্ময় জাগিয়ে তোলা ছাড়াও, কাজ করছেন এমন শিল্পীদের প্রতি ক্লার্কের গভীর শ্রদ্ধাবোধ ছিল তার প্রতিটি কাজে, তার প্রতিটি শিল্পকলার ইতিহাস সেই সব একক প্রতিভাদের যুগের মূল স্পিরিটটাকে প্রকাশ করার দক্ষতারই ন্যারেটিভ ছিল।
ক্লার্ক শিল্পী হতে পারেনি বলেই শিল্পকলার ইতিহাস নিয়ে পড়েছেন । বার্জার এখোনো ছবি আঁকেন … 🙂
বার্জারের উপর ক্লার্কের প্রভাব অস্বীকার করবার উপায় নেই । দুজনই ব্রিটিশ বর্ন এবং শিল্পকলার ইতিহাসে দুজনের ভূমিকা অসীম । শিল্পকলার প্রতি তাদের দুজনেরই রয়েছে সীমাহীন ভালোবাসা । দুজনেরই রয়েছে শিশুর মতো বিস্মিত হবার ক্ষমতা ! পরে অবশ্য এই বৃত্তকে পূর্ণ করেছেন ই হেইচ গমব্রিখ ….
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
বইটা হাতে পাবার অপেক্ষায় আছি। অসংখ্য ধন্যবাদ মিতা আপা আর মাহবুব ভাইয়াকে।
ধন্যবাদ সালমান 🙂
শিল্পকলার চমৎকার একটা বইয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য আর অনুবাদ তথ্যটি দেবার জন্য ধন্যবাদ।
আসমা সুলতানা মিতা ও কাজী মাহবুব হাসান দু’জনকেই অভিনন্দন।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে কাজী রহমান। সময় নিয়ে পড়ার জন্য এবং উৎসাহ দেবার জন্য । ভালো থাকবেন ।
ধন্যবাদ কাজী রহমান আপনাকে। শুভকামনা।