মনের ভিতরটায় কষ্টের বিশাল পাহাড় – মস্তিষ্কের ভিতরটায় ক্ষোভের উত্তাল সমুদ্র – লিখতে বসে লিখতে পারছি না – বোবা কান্না এসে বুকের ভিতরটা তছনছ করে দিচ্ছে – ক্রোধের দ্রোহ এসে মস্তিষ্কের ভিতরটা তোলপাড় করে দিচ্ছে – ভাষা হারিয়ে ফেলি – কি লিখব ? – জানি না ! কার জন্য লিখব ? উত্তর খোঁজে পাই না !! যারা মনের দরজা পেরেক মেরে বন্ধ করে বসে আছে, যাদের মস্তিষ্কের সদর দরজা বিশ কেজি ওজনের লোহার তালা দিয়ে আটকানো শব্দের ঝঙ্কারে কি সেই বদ্ধ দরজা খুলবে ? সেই দরজা খোলার জন্য প্রয়োজন হাঁতুড়ি -শাবল – কুড়াল বা ডিনামাইট , কিন্তু তা তো আমার নেই ! কি করি ?? আমি কি দিশাহীন ????? মনে মনে ভাবি আর কোন দিন লিখব না – লিখা থেকে একেবারে নির্বাসনে যাব – তবু অবাধ্য মন ! – মন কিছুতেই বশ মানে না – মনের অজান্তেই মন হাতে কলম তুলে দেয় ! মাথা থেকে বের হয়ে আসে কেবল কিছু এলোমেলো শব্দমালা – জানি না সেই সব অগোছালো শব্দমালার আদৌ কোন অর্থ হবে কি না !
হুমায়ুন আজাদ, রাজীব হায়দার, অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান বাবু , অনন্ত বিজয় দাসের মত হীরের টুকরো ছেলেরা – আলোকিত মানুষেরা – এমন উজ্জ্বল নক্ষত্ররা – একটার পর একটা মানুষরুপি দানবদের হাতে নির্বিঘ্নে নির্মম- নৃশংস ভাবে খুন হচ্ছে – অসহায়ের মত দেখে যাচ্ছি – নির্বোধের মত সহে যাচ্ছি – কিছুই করতে পারছি – এক তীব্র যন্ত্রণার দহন মনের ভিতরটা কুরে কুরে খাচ্ছে ! পৃথিবীর কোন সভ্য দেশে এমন মানুষদের একটির গায়েও একটু আঁচড় লাগলেও সেই দেশের প্রশাসন, সেই দেশের আইন-শৃঙ্খলায় নিয়োজিত বাহিনী সেই নর পিশাচদের ধরার জন্য – তাদের শাস্তির জন্য পাগলের মত হন্যে হয়ে খোঁজে বেড়াত – কিন্ত হায় আমার সোনার বাংলার সোনার মানুষেরা একটা শব্দও করছে না !! বাংলাদেশ চুপ করে বসে আছে ??? এ কেমন দেশ ??? কেমন এই দেশটার মানুষ ????? এই দেশে কি কোন প্রশাসন আছে ?? এই দেশে কি আইন -শৃঙ্খলা বলে কোন কিছুর অস্তিত্ত্ব এখনো বিরাজমান ??
আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় এটি আমার সেই শৈশবের চির চেনা বাংলাদেশ ! বাংলাদেশতো কখনো এমন ছিল না – কত মত আর পথের মানুষ এই দেশে – এই দেশেই তো জন্ম নিয়েছে অতীব গোঁড়া ব্রাহ্মণ্যবাদ আবার এই দেশেই ছিল একেবারে নাস্তিক লোকায়ত চার্বাক !! কই ব্রাহ্মনরা তো ধর্মের নামে চার্বাকদের খুন করতে আসেনি ?? আমাদের দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বর খোদ আল্লাহ -ইসলাম সম্বন্ধে কত কঠিন সত্য আর যুক্তির প্রশ্ন তুলে গেছেন – কই তাকে তো তখন কেহ কুপিয়ে মেরে ফেলে নি ! এই দেশেই তো জন্ম নিয়েছে লালন – যিনি নাকি সব ধর্মের উর্দ্ধে উঠে প্রচার করে গেছেন মানব ধর্ম – কই তাকেও তো কেউ চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে মেরে ফেলেনি ? আমাদের বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম যিনি সকল ধর্মের কঠিন সমালোচনা করে গেছেন, যে নাকি নাকি ভগবানের বুকে পদচিহ্ন এঁকে গেছেন, তাকেও তো কেহ মেরে ফেলতে আসেনি তরবারী হাতে!!
লালনের সময় থেকেও পৃথিবী এখন আরো কত অগ্রসরমান – পৃথিবীর সকল সভ্য দেশে এখন মুক্ত চিন্তার দ্বার অবারিত ! সেখানে মানুষ তাঁর যে কোন মতবাদ নির্বিঘ্নে নির্ভয়ে প্রচার করতে সক্ষম – রাষ্ট্র তাঁর সকল নাগরিকের সেই মানবিক অধিকার নিশ্চিত করে – সেই দেশের যে কোন নাগরিক তাঁর নিজের পছন্দমত জীবনধারা বেঁচে নিতে পারে ! তাঁর সেই অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে তাকে সহায়তা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব ও বটে ! আর আমাদের এই পোড়া দেশে অভিজিতের মত মানুষ প্রকাশ্যে দিবালোকে পুলিশ বাহিনীর সামনে ময়দানবদের হাতে নির্মমভাবে খুন হলেও সেই দেশের প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্যে একটা বিবৃতি দিতেও ভয় পায় ! তিনি গোপনে অভিজিতের বাবাকে সমবেদনা জানান ! ধিক বাংলাদেশের প্রশাসন ! ধিক বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ! আপনারা ঘুমান – আরো বেশি করে ঘুমান – আপনাদের কুম্ভকর্ণ-নিদ্রার বড়ই প্রয়োজন !!!
কি ছিল অভিজিৎ, রাজীব, ওয়াশিকুর আর অনন্তের অপরাধ ? তাঁদের অপরাধ ছিল একটাই – তাঁরা অন্ধকার পেরিয়ে আলোর পথের যাত্রী হতে পেরেছিল – আর তাঁরা সেই আলোর পথে শুধু একা চলতে চায় নি – তাঁরা চেয়েছিল অন্ধকারে বসবাসকারী বাংলাদেশের সকল মানুষেরা হোক তাঁদের সহযাত্রী ! কিন্তু হায় ! তাদের ডাকে সাড়া দিতে বাংলাদেশের মানুষদের কেন এখনো এত ভয় – কেন এখনো এত দ্বিধা ?? কারনটা বোধ হয় এই – অভিজিৎ, হুমায়ুন আজাদ, ওয়াশিকুর, রাজীব আর অনন্তরা এখনো বাংলাদেশে নিতান্তই সংখ্যালঘু ! তবে মনে আশা এমন দিন বেশি দিন চলতে পারে না – আলো একবার জ্বললে সেই আলো একদিন অন্ধকার বিদীর্ণ করবেই ! অভিজিৎ, ওয়াশিকুর, অনন্ত, রাজিবদের জীবনবলি অবশ্যই বৃথা যেতে পারে না ! তাঁরা তাঁদের জীবন দিয়ে যে অসংখ্য আলোর তরী মানুষের সমুদ্রে ভাসিয়ে গেছেন সেই তরী একদিন আলোকিত মানুষে ভরে উঠবেই – হয়ত আগামী ৫০ বছরে নয়, হয়ত আগামী ১০০ বছরে নয়, হয়ত আগামী ৫০০ বছরে নয় – তবে হাজার বছরে হলেও অভিজি ৎ, হুমায়ুন, অনন্ত, রাজীব আর ওয়াশিকুররাই হবে একদিন বাংলাদেশে সংখ্যাগুরু ! আমি পথ চেয়ে বসে থাকব সেই দিনের প্রতীক্ষায় !
সবশেষে চতুর্দশ শতকের কবি চন্ডীদাসের সেই অমর পংক্তিমালাটি দিয়ে এখানেই আমার এই অগোছালো লিখাটির যবনিকাপাত:
“শুনহ মানুষ ভাই,
সবার উপরে মানুষ সত্য
তাহার উপরে নাই !”
ভয় পেওনা বন্ধু আমারা তো আছি!কলম চলবেই! বাংলাদেশের প্রত্যেক জেলায়, প্রত্যেক থানায়,প্রত্যেক ইউনিয়নে, প্রত্যেক গ্রামে আজ অনেক সচেতন হুমায়ূন আজাদ, আভিজিৎ রায় জন্ম গ্রহন করেতেছে প্রতি দিন! কত জনকে ওরা শেষ করবে..? চাইলেই শেষ করে দেওয়া যায় না, পরিবর্তন শুরু হয়েছে সবখান, আমাদের থামানো আর সম্ভব না! জগৎ আজ অন্যরকম হাওয়ায় দোল খাচ্ছে! জয় আমাদের সুনিশ্চিত এগিয়ে যাও কলম চালাও বন্ধুরা!
ছাগুতে পরিপূর্ন বাংলাদেশ, রাজনৈতিক ছাগু, সাহিত্যিক ছাগু, সম্পাদক ছাগু সব রকমের আছে
মনের আবেগ আছে, তারসাথে কলমকে ধার দিয়ে চালাতে হবে। জাগবে কে, দেশ না দেশবাসী? গাছ একটা ; ফুলে, ফলে পূর্ণ হয়ে ভরাট হয়।
আপনার মতো আমি ও আশায় বুক বঁাধি, একদিন আমরায় (মুক্তমনারা) হব সংখ্যাগুরু, ঐদিন আমাদের রাস্ট্রপ্রধান মুক্তমনাদের পাশে দঁাড়াতে গোপনীয়তার আশ্রয় নিবেন না, আসুন আমরা আমাদের কলম চালাতে থাকি সেই শুভ দিনের অপেক্ষায়…………………………..
আমার কথাগুলো আপনি চমৎকার করে বলে ফেললেন। ধন্যবাদ। আমি শত চেষ্টা করেও অভিজিৎ রায় আর অনন্ত বিজয়কে নিয়ে লিখতে পারছি না।
শুধু কি বাংলাদেশ, সমস্ত পৃথিবী বদলে যাচ্ছে তা কি অস্বীকার করা যাবে? অনেক কিছুর মতই দেড় হাজার বছর পুরানো এক রূপকথার কাহিনী আজ হঠাত সত্যের মুখোমুখি। দুর্বোধ্য ভাষার আবরণ আর সনাতন নীতিবোধের কৃত্তিম খুঁটি, ঘুনে ধরা বাঁশের মত সহসা আজ পতনোন্মুখ। স্বপ্নের রাজপ্রাসাদের বাসিন্দারা আজ সত্যিকারের নিঃশ্চিহ্নের আশঙ্কায় উদ্ভ্রান্ত। ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছে মেঘের উপরে স্বর্গদেশ, আর ছয় ডজন ডানাকাটা পরী। আর এ সবের জন্য দায়ী সহসা দ্রুত বিস্তারক্ষম জ্ঞান-বাহন, কম্পিউটার, ইন্টারনেট, ফেসবুক। যখন প্রথম রেডিও এল দেশে, ফতোয়া শুনলাম – এর শব্দ যার কানে যাবে, জাহান্নামের আগুন তাদের কানে ঢালা হবে। কদিন পর উনারা নিজেরাই দিনের শুরুতে রেডিওতে মহাপবিত্র বানী পাঠ করতে লাগলেন। মাইক এলো দেশে, শয়তানের কল বলে ফতোয়া জারী হল। কদিন পর প্রত্যেক উপাসনালয়ে ভক্ত সমাগমের জন্য ডাকাডাকির জন্য অপরিহার্য্য যন্ত্র হয়ে গেল ওনাদের জন্য। টেলিভিশন এল, একই কাহিনীর পুনারবৃতি দেখা গেল। এবার এল কম্পিঊটার, ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন। পিঙ্গল শ্মশ্রুতে মোচড় দিয়ে ভাবল এটাকেও কব্জা করে ফেলবে। কিন্তু এবার তো আর তা হবার নয়। উন্মুক্ত তথ্যের নতুন বিশ্বে রূপকথার কারবারিরা দেঊলিয়া আজ। মরার আগে ওদের শেষ কামড়। কারো কিছু করতে হবে না, ওদের ভাষায় বলতে হয়, হায়ত শেষ, এখন যেতে হবে।। তাই আসন্ন দিনের বাস্তবতা, প্রত্যয়ের সাথে কন্ঠ মেলাই –
“শোনো হন্তারক নাস্তিকের আশাবাদ –
তোমার স্ত্রীর গর্ভে আসুক
দ্বিতীয় হুমায়ুন আজাদ।”
মুক্তমনা হবার যন্ত্রণা অনেক। বুদ্ধির মুক্তির সংগ্রামে শহিদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। কিন্তু সংগ্রাম চলবেই। কারণ এটা ডিজাইন নয়, বিবর্তন।
কলম চলুক।
আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি মুক্তমনাই পারবে- হ্যাঁ মুক্তমনার এই মঞ্চই পারবে সমাজের প্রতিটি মানুষের বুদ্ধিকে কুসংস্কার থেকে মুক্ত করতে ,ভাবজড়তার নাগপাশ হতে মানুষকে আলোকোজ্জ্বল প্রভাত উপহার দিতে ।মানুষকে আমরা মন প্রধান জীব বলে থাকি,কারন মানুষের অস্তিত্ব যতটা শারীরিক তার চেয়ে বেশি মানসিক । এই মনন প্রধান মনুষ যখন এগিয়ে চলে –তখন দেখা যায় এক শ্রেণীর কিছু মনুষ এগিয়ে চলে যুক্তি -তর্ক -সঠিক -বেঠিক বিচার বিশ্লেষণ করে,বিবেকের সাহায্য নিয়ে ।আর অন্য এক শ্রেণীর মানুষেরা চলে সেন্টিমেন্টের পথ ধরে,এরা এগিয়ে চলে নিজের বিবেককে সিঁন্দুকে বন্ধ রেখে ।উচিত-অনুচিত চিন্তা না করে, যুক্তির পথ না মাড়িয়ে। ফলস্বরুপ সেন্টিমেন্টালিটির পথ বড়ই ঝুঁকি পূর্ণ ।তাই এর ফল ভাল হলে খুব ভাল হতে পারে আবার খারাপ হলে খুব খারাপও হতে পারে ।শ্রী প্রভাত রঞ্জন সরকার তাঁর বুদ্ধির মুক্তি ও নব্যমানবতাবাদ গ্রন্থে বলেছেন এই সেন্টিমেন্টালিটির পথ একটা গোটা পরিবার ,গোটা জনগোষ্ঠী এমনকি গোটা রাষ্ট্র ,গোটা সমাজকে অন্ধকূপে ফেলে দিতে পরে ।কারণ মানুষ সেন্টিমেন্টের পথ ধরে চলবার সময় সমস্ত সুপারস্টিসানকে ,অন্ধবিশ্বাসকে বিবেকের দরজা বন্ধ করে মেনে নেয় ।মেনে নেয় কোন উচিত -অনুচিত বিচার না করে।
কিন্তু মানুষের মধ্যে যখন প্রকৃত চেতনার তথা,মননের বিকাশ ঘটে,সে যখন যুক্তি তর্ক দ্বারা সবকিছুই বিবেচনা ,বিচার , বিশ্লেষণ করতে শুরু করে ,কার্য -কারণ সম্পর্কে যখন তার মনে প্রশ্ন দানা বাঁধে তখনই সে বুঝতে পারে এতদিন যাকে বিশ্বাস করে এসেছি ,যাকে নিয়ে এতো মাতামাতি করেছি ,এতো ভালো বেশে নিজের সব কিছুই উজাড় করে দিয়েছি–তা তো এক ধরনের -ইজ্ম ,যা মনুষের সমাজ কে অন্ধকার এর দিকে নিয়ে গেছে,রক্তের স্রোত বহিযেছে,মানবতাকে ভূলুন্ঠিত করেছে ,ইতিহাসকে করেছে কালিমালিপ্ত।মানুষের কোন কল্যাণ সে করেনি। মানুষের সমাজকে ভেঙে টুকরো টুকরো করেছে ,তৈরি করেছে মানুষে-মনুষে ভেদাভেদ ,রোপন করেছে জাতপাতের বিষ-বৃক্ষ ।
তাই আমাদের সামনে দায়িত্ব অনেক ।মনুষের বুদ্ধির মুক্তির দায়িত্ব মুক্তমনা কেই নিতে হবে ।
লেখাটি সত্যিই খুব আবেগী, খানিকটা অগোছালো তো বটেই। ফেনাটিক ফারাবীরাও কিন্তু বাংগালি, আর তারা সরকার বাহাদুরের নাকের ডগায় চাপাতি নিয়েই জাগ্রত। তাই বাংগালি জাগো– কোন অর্থ বহন করে না। চাই মুক্তমনার যুথবদ্ধ জাগরণ! কলম চলবে