ধর্ষক ধর্ষণের মাধ্যমে একটি ফুলের মতো নরম শরীরকে শুধু রক্তাক্ত করে না, রক্তাক্ত, ক্ষত-বিক্ষত করে তার স্বপ্ন, আশা, ভালোবাসা আর ভরসা। তার ফুলের মতো গন্ধময় জীবনটা হয়ে ওঠে পঙ্কিল গন্ধময় । বিপরীত লিঙ্গের প্রতি শ্রদ্ধাবোধকে চিরতরে হারায় সে। শরীরের রক্তটা মুছে যায়, ক্ষতটাও শুকিয়ে যায় একসময়। ব্যথাটাও মুছে যায় একসময়। কিন্তু, তারপরেও গোটা জীবনধরে মনের মধ্যে রক্তপ্রবাহের ধারা বইতে থাকে। থামে না কিছুতেই। ফোঁটা ফোঁটা রক্ত দিয়ে, না বলা অনেক অভিশাপ আর আভিযোগ লিখতে থাকে সে মনে মনে। এই দায়ভার কে নিবে? কেউ না।
দেশেরর মধ্যে ধর্ষণের মাত্রা দিনকে দিন বাড়ছে এবং সবচেয়ে করুণ যে বিষয়টি, সেটি হচ্ছে, এদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু। এরাই ধর্ষণের নির্মম শিকার সবচেয়ে বেশি। কারণ, এরা দেহ ও মনে ধর্ষকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে অনুপযুক্ত। দিল্লিতে দামিনী ধর্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে ঐ মামলায় কোন আইনজীবীই ধর্ষকের বিরুদ্ধে লড়বে না বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। আইনের অধিকার সবারই পাওয়া উচিত, তারপরেও বলছি ধর্ষকের প্রতি মানুষের মনোভাবটা এরকমই হওয়া প্রয়োজন।
এখনকার যুগের ছেলেরা অনেক স্মার্ট। অনেকেই বুলি আওড়ায় ধর্ষণ নিয়ে। ধর্ষিতার জন্য জান দিয়ে দিতে প্রস্তুত তারা। কিন্তু, দেখা যায় যে, শ খানেক প্রেম করে আসা বালিকাটিরও বিয়ে হয়, প্রাক্তন প্রেমিককে মেনে নিয়েও ছেলেরা প্রেমিকার সাথে প্রেম করে, ডিভোর্স হওয়া মেয়েটিরও বিয়ে হয়। শুধু হেয় হয়ে, অপাংক্তেও হয়ে পড়ে থাকে রক্তাক্ত ধর্ষিত মেয়েটি।
ধর্ষণের ব্যাপারে ধর্মীয় নেতারাও নির্লজ্জ রকমের নীরবতা অবলম্বন করে থাকে। পারষ্পরিক সম্মতিতে কোথাও কোনো দুজন নরনারীর মিলনের খবর পেলে তারা হৈ চৈ করে ছুটে যায়, সালিশ বসায়, দোররার ব্যবস্থা করে। কিন্তু, ধর্ষকদের ব্যাপারে তাদের কোন উদ্বেগ নেই, ধর্ষকদের শাস্তিবিধানের ব্যাপারেও তাদের কোনো উদ্যোগ নেই। পারষ্পারিক সম্মতিভিত্তিক সঙ্গম তাদের কাছে হারাম হলেও, ধর্ষণ হারাম নয়! বরাবর মেয়েটিকেই দায়ী করা হয় এর জন্য। তার চেয়েও ভয়াবহ হচ্ছে, ধর্ষিতা মেয়েটিকেই ধর্ষকের সাথে বিয়ে দিয়ে তারা পবিত্র কাজ করেছে বলে ভেবে নেয়। এখানেই তাদের দায়িত্ব শেষ।
একটু পেছনে তাকাই। মুক্তিযুদ্ধের পর পাক শুয়োরের দল ও তাদের এদেশিয় ঘাতকদল কর্তৃক ধর্ষিত নারীদেরকে যখন তাদের স্বজনরা গ্রহণ করছিলো না, যখন তাদেরকে পূনর্বাসিত করতে গিয়ে বিশাল সমস্যা হচ্ছিলো, যখন তাদের পিতা-মাতারা পর্যন্ত অস্বীকার করছিলেন এই সমস্ত দূর্ভাগা নারীদের, তখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেগে গিয়ে বলেছিলেন, “ওদের বাবার ঘরে আমার নাম লিখে দে, আর ওদের ঠিকানার ঘরে লিখে দে ধানমন্ডি ৩২!”
আমরা হয়তো জাতির পিতার মতো পিতা হয়ে উঠতে পারবো না। কিন্তু, তার আদর্শটাকে লালন করে অন্তত ধর্ষকের বিপক্ষে এবং ধর্ষিতার পক্ষ হয়ে তাদের সুষ্ঠু জীবনধারাকে এনে দিতে পারবো। ধর্ষিতা তো আর ইচ্ছা করে ধর্ষিত হয় না, সে এক নির্মম অত্যাচারের শিকার। সেই অত্যাচারের পরে যেখানে সবাই তার পাশে দাঁড়ানোর কথা, তখন কেনো আবার তার উপর সমাজের এই পৈশাচিক অত্যাচার?
আলগা সহমর্মিতা, কিংবা আহা-উহু নয়, নয় বড়ো বড়ো কথা বলে নিজেকে সবার সামনে নারীবাদী সাজানোর আলগা প্রচেষ্টা। আসুন, সত্যিকারভাবে মনের মধ্যে ধারণ করি এই চেতনা যে, ধর্ষণের শিকার মেয়েটি অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ভয়াবহ একটি অন্যায় আচরণ পেয়েছে একটি বা একাধিক পশুর কাছে থেকে। এতে তার কোনো দোষ নেই, সে নষ্ট হয় নি, তার সম্ভ্রমহানি হয় নি, সে সমাজের জন্য কোনো কলংক নয়।
ধর্ষণের ব্যাপারে ধর্মীয় নেতারাও নির্লজ্জ রকমের নীরবতা অবলম্বন করে থাকে। পারষ্পরিক সম্মতিতে কোথাও কোনো দুজন নরনারীর মিলনের খবর পেলে তারা হৈ চৈ করে ছুটে যায়, সালিশ বসায়, দোররার ব্যবস্থা করে। কিন্তু, ধর্ষকদের ব্যাপারে তাদের কোন উদ্বেগ নেই, ধর্ষকদের শাস্তিবিধানের ব্যাপারেও তাদের কোনো উদ্যোগ নেই। পারষ্পারিক সম্মতিভিত্তিক সঙ্গম তাদের কাছে হারাম হলেও, ধর্ষণ হারাম নয়! বরাবর মেয়েটিকেই দায়ী করা হয় এর জন্য। তার চেয়েও ভয়াবহ হচ্ছে, ধর্ষিতা মেয়েটিকেই ধর্ষকের সাথে বিয়ে দিয়ে তারা পবিত্র কাজ করেছে বলে ভেবে নেয়। এখানেই তাদের দায়িত্ব শেষ।
– এরকম ঘটনা অনেক দেখেছি
এ প্রসঙ্গে আরো অনেক বিশ্লেষণ দরকার। সামাজিক কিছু বাস্তবতা আছে। একজন মানুষ খুন হলে আমরা যতটা আগ্রহ নিয়ে খবরটা পড়ি একজন মেয়ে ধর্ষিতা হলে খবরটা পড়ি আরো বেশি আগ্রহ নিয়ে। আগ্রহের ধরনটা কিছুতেই এক রকমের নয়। এই ব্যাপারটা কেন হয়? কেন ধর্ষণের সংবাদে ধর্ষকের নাম-পরিচয় প্রকাশিত হলেও সামাজিকভাবে তার তেমন কোন অসুবিধা হয় না, কিন্তু ধর্ষিতাকেই মুখ লুকোতে হয়? এটা কি পুরুষ-শাসিত সমাজ বলে? নারীদের কাছেও কি একজন ধর্ষিতা নারী ন্যায্য সম্মান পান? যে আদর্শ সমাজের স্বপ্ন আমরা দেখতে চাচ্ছি – সেই সমাজের স্বরূপ কী?
কলম চলুক।
Comment… ধর্ষিতা
মেয়েটিকেই ধর্ষকের সাথে বিয়ে দিয়ে তারা
পবিত্র কাজ করেছে বলে ভেবে নেয়।
লেখাটা খুবই ছোট অনেকটা ফেসবুক ষ্ট্যাটাসের মত। মুক্তমনার উচ্চমান সম্পর্কে অনেক আগে থেকে জানতাম তাই এখানে আজকাল এই টাইপের লেখা প্রকাশিত হচ্ছে সেটা মেনে নেওয়া খুবই হতাশার।
লেখাটা খুবই ছোট অনেকটা ফেসবুক ষ্ট্যাটাসের মত।লিখতে লিখতেই লেখার আকৃতি বাড়বে ও প্রকৃতি তীক্ষ্ণ হবে।
লেখকের কাছে প্রস্তাব— ধর্ষিতা শব্দটি ব্যবহার না করার জন্য। এতে ধর্ষণের শিকার নারীটিকে আরও বেশি করে সমাজে চিহ্নিত করে দেয়া হয়। তাকে একটি বিশেষ পরিচয়ে পরিচিত করে দেয়া হয়।
লেখা অব্যহত থাকুক।
গত কয়েক বছরে ফেসবুক জনপ্রিয় হবার পর থেকে লেখার আকৃতিতে বড় ধরনের গুণগত পরিবর্তন হয়েছে। বেশিরভাগ পাঠকই এখন বড় আকৃতির লেখা হলে, সেগুলোকে এড়িয়ে চলে। আগে আমরা মুক্তমনায় বিশাল বিশাল সাইজের লেখা লিখতাম। এখন খেয়াল করে দেখলে দেখবেন যে, অজান্তেই সকলে এখন ছোট লেখা লিখি। ফেসবুকের প্রভাব সুস্পষ্ট। আমি বিডি নিউজে একটা বেশ বড় লেখা পাঠিয়েছিলাম, ওরা কেটে ছেটে ছোট করে প্রকাশ করেছিলো। বিভাগীয় সম্পাদক আমাকে পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছিলেন যে, একটা নির্দিষ্ট সংখ্যার চেয়ে বেশি শব্দের লেখা হলে তাঁরা ছাপাতে ইচ্ছুক হন না।
লেখা খুব ছোট, না বেশ বড়, তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়, সেটার গুণগত মান কতটুকু।
মুক্তমনার মান উন্নত রাখতে হলে এর প্রতিষ্ঠিত লেখককদের সময় দিতে হবে, সক্রিয় হতে হবে, বেশি বেশি লেখা দিতে হবে এখানে। তা না করলে, ভালো লেখার অভাবে মুক্তমনা স্থবির হয়ে পড়ে থাকবে। সেই সুযোগে অনুন্নত মানের লেখা ঢুকে পড়বে মুক্তমনায়।
ধর্ষণ নিয়ে শিস্কিত ও বিদ্যজন সমাজকে এগিয়ে আস্তে হবে। তাদের লেখনি সমাজের আপামর জনসাধারণকে জাগ্রত করবে ও প্রতিবাদ করতে শেখাবে। তখন ধর্ষকদের ভয় হবে।
অসাধারণ লেখা। কিন্তু সমস্যা যে তিমিরে সে তিমিরেই থাকছে।
লক্ষ্যনীয়, আদিবাসী সমাজে ধর্ষণ প্রায় নেই, ভিন্ন জাতির মেয়েকে ধর্ষণের প্রশ্নই আসে না। এমন কি অনেক আদিবাসী ভাষায় ধর্ষণ কথাটিই নেই। সবচেয়ে বড়কথা কোন আদিবাসী সমাজেই নেই ব্যাটাগিরি।
নারীকে পরিপূর্ণ মানূষ ভাবাটা জরুরি।
এগুলো নির্মম সামাজিকতার ও ব্যাক্তি মানসিকতার চরম বিকৃতপূর্ণ ও সেকেলে অবস্থা। এসব থেকে মুক্তির জন্য দরকার ব্যাক্তি মানসিকতার আমূল পরিবর্তন, যা লেখালেখির মাধ্যমে সম্ভব।
ধর্ষণের শিকার হওয়া মানুষটির শারীরিক ক্ষত হয়তো অল্পদিনেই মুছে যায়, কিন্তু মানসিক যে ক্ষতের সৃষ্টি হয় তা মোছে না সহজে। এ সমাজ সে ক্ষতকে আরো বাড়িয়ে তোলে । 🙁
কিছু বলার নেই।
এ ধরনের কেইসের ফলোআপও খুব কম তাই আসলেই এই দুর্ঘটনার পর ভিক্টিমের পরিনতি কী হয় জানা নেই।
খুব মনটা খারাপ হয়ে গেলো ……………যেগুলো ঘরের ভিতর হয় সেগুলোতো বুঝতে পারি কিন্তু বাইরের গুলো ………………