আমার নবিজীনি জুডিথ রাইস হ্যারিস তার The Nurture Assumption বইয়ে ডেনমার্কে চালানো বংশগতির সাথে অপরাধপ্রবণতার সম্পর্কে নিয়ে বেশ কিছুটা আলোচনা নিয়ে এসেছেন । এসব ক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত যেভাবে গবেষণা হয়, অর্থাৎ জেনেটিক মিলসম্পন্ন বাচ্চাকাচ্চাকে যখন ভিন্ন পরিবেশে দত্তক দেয়া হয়েছে তখন তাদের পরিবেশ আলাদা হলেও তাদের মধ্যে যেসব জিনিসে মিল পাওয়া যায় সেগুলো দেখা । অপরাধপ্রবণতা নিয়ে চালানো গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলের সার হচ্ছে ।

১। পুরো সমাজে অপরাধপ্রবণতার হার কম হলে , সে সমাজের অপরাধী বাবা-মা আর সাধারণ বাবা-মা দুই পক্ষেরই সন্তানদের অপরাধী হবার প্রবণতা সমান ।
২। পুরো সমাজে অপরাধপ্রবণতার হার বেশি হলে , সাধারণ বাবা-মার চাইতে অপরাধীদের সন্তানদের অপরাধী হবার প্রবণতা বেশি । এমনকি যে পরিবারে দত্তক নেয়া হয়েছে সে পরিবারের পালক বাবা-মা প্রতিক্ষেত্রে সাধারণ নন-অপরাধী হলেও ।

এটা থেকে যে ছবি উঠে আসে তা হচ্ছে, অপরাধী জিনে এমন কিছু আছে যা কেবল অপরাধে জড়ানোর উপযুক্ত পরিবেশেই তার কুৎসিত প্রভাব প্রকাশ করে । আর এই প্রভাব পরিবারের পরিবেশ দিয়ে পুরোপুরি পাল্টানো সম্ভব নয়, যদি জিনে গোলমাল থাকে । আমার ব্যাক্তিগত হাঞ্চ হচ্ছে, যে সমাজে সাধারণভাবে অপরাধপ্রবণতার হার কম, সেখানে আসলে কোরিলেশন পাওয়ার মত যথেষ্ঠ ডেটা পাওয়া যায় নাই, এজন্য হয়তো মনে হচ্ছে অপরাধপ্রবণতার সাথে ঐখানে বুঝি জিনের কোন সম্পর্ক নাই ।

নিশ্চিতভাবে যতটুকু পাওয়া যাচ্ছে সেখান থেকে বলা যায়, অপরাধপ্রবণতার সাথে জিনের একটা সম্পর্ক আছে । আবার অন্যদিকের অপরাধবিজ্ঞানীদের গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে, সাইকোপ্যাথিক অপরাধী , যারা মূলত এমপ্যাথি (অন্য মানুষের সুখ দুঃখকে নিজের সুখ দুঃখের মত করে ভেবে দেখা )নামক ধারণার সাথে পরিচিত না , তাদের উপর অনেক বছরের উপাত্ত সংগ্রহ করে , আবারও সেই এপিডেমিওলজিক্যাল গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে, মোটামুটি তিনটি সাধারণ বৈশিষ্ট্যে এদের মিল আছে ।

১। সহজে বোর হবার প্রবণতা, ঝুঁকি-থ্রিল-এডভেঞ্চার এগুলোর প্রতি বেশি আগ্রহ
২। গড়পড়তার চাইতে একটু বেশি পেশীবহুল, শক্তিশালী শারিরীক গড়ন
৩। এবং সবচে গুরুত্বপূর্ণ, গড়পড়তার চাইতে কম বুদ্ধিমত্তা

উপরের এই তিনটি বৈশিষ্ট্যেরই বেশ বড়সড় অংশ করে আবার জেনেটিক উৎস বা সহজভাবে বললে জন্মের সাথে সম্পর্ক আছে । বৈশিষ্ট্য ১ আর ২ কারো মধ্যে থাকলেও গড় বা গড়ের চাইতে উপরের দিকে যাদের বুদ্ধিমত্তা তাদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতার হার কম । বুদ্ধিমত্তা এখানে বলতে গেলে এককভাবে সবচে গুরুত্বপূর্ণ অনুষংগ । (এ বিষয়ে একটা চুটকি প্রচলিত আছে অবশ্য । এইসব তথ্য যেহেতু কেবলমাত্র ধরা খাওয়া অপরাধীদের , হতে পারে যে, চালাক শ্রেণীর মধ্যেও হয়তো আরো খারাপ ভয়ংকর অপরাধী আছে যারা বুদ্ধির জোরে অপরাধ করেও পার পেয়ে যাচ্ছে । যারা ধরা পড়ছে না তাদের ক্ষেত্রে যেহেতু কিছু বলা যাচ্ছে না, সেহেতু হাতে যতটুকু তথ্য আছে ততটুকু দিয়ে বিচার করা ছাড়া উপায় নাই । )

বুদ্ধিমত্তা আবার গভীরভাবে জেনেটিক্স এর সাথে সম্পর্কিত । বায়োলজিক্যাল বাবা মায়ের সাথে প্রাপ্তবয়ষ্ক সন্তানের বুদ্ধিমত্তার (আইকিউ) কোরিলেশন ০.৭ থেকে ০.৮ এর মত । শৈশবে এ কোরিলেশনের মান আরো কম থাকে , মোটামুটি ০.৫ এর মত । সোজা বাংলায় এগুলোকে অনুবাদ করলে দাঁড়ায় হচ্ছে, অল্প বয়সে পরিবেশ ও প্রতিষ্ঠান এবং অভ্যাসের পার্থক্যের জন্য বাবা মার সাথে সন্তানের বুদ্ধিমত্তার মিল একটু কম দেখা গেলেও , প্রাপ্তবয়ষ্ক মানুষের বুদ্ধিমত্তার প্রায় ৭০-৮০% ই নির্ভর করে তার জিনের উপর ।

অপরাধ-প্রবণতার বাইরেও মানুষের আচার-আচরণ স্বভাব ও মনস্তত্তের একটা বিশাল অংশ নির্ভর করে বুদ্ধিমত্তার উপর । এটি আবার খুবই ঝগড়াপূর্ণ এক প্যান্ডোরার বাক্স । সে বিষয়ে এই মুহুর্তে আর না যাই । আগ্রহীরা দুইখান থান ইটের সমান দ্য বেল কার্ভ (The Bell Curve ; by Charles Murray , Richard Herrnestein )বইটি পড়ে দেখতে পারেন ।

তবে এখানে কিছুটা ঝামেলা আছে । সমাজে হয়ে যাওয়া এবং হতে থাকা অপরাধের বিভিন্ন ধরণের প্রকার আছে । ব্যাক্তিগত র‍্যান্ডম অপরাধ, প্রাতিষ্ঠানিক বা সমাজের সবাই মিলে করা অপরাধ এবং ক্ষমতা ব্যাবহার করে শক্তিমানদের দ্বারা সংঘটিত অপরাধ ।

প্রতিকারের সম্ভাবণার দিক থেকে যদি দেখি তাহলে সবচে ঝামেলার হচ্ছে ব্যাক্তিগত র‍্যান্ডম অপরাধ । যেগুলো উপরের বর্ণনায় সাইকোপ্যাথিক ও অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডারে ভোগা লোকজন যেসব অপরাধ করে , সেগুলো যেহেতু ব্যাপকভাবে জন্মগত ত্রুটির উপর নির্ভরশীল সেহেতু এগুলোকে পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব না । সমাজ, সংঘবদ্ধভাবে যেটা সর্বোচ্চ করতে পারে তা হচ্ছে এসব অপরাধী যাতে কোনভাবে পার পেতে না পারে সেটার ব্যাবস্থা করে, শাস্তির ব্যাবস্থা করে , অপরাধকে খুবই রিস্কি চয়েসে পরিণত করতে পারে সাইকোপ্যাথের জন্য । কিন্তু আবার সাইকোপ্যাথ যেহেতু শেষ পর্যন্ত ঘিলুতে খাটো বলেই অপরাধী হচ্ছে, সেহেতু ঝুঁকির পরিমাণ সঠিকভাবে উপলব্ধি করার ক্ষমতা তার আবার কম । অর্থাৎ সমাজ যতই কড়াকড়ি করুক, মাইনরিটি রিপোর্ট সিনেমার মত অপরাধ ঘটার আগেই কোথায় কে অপরাধ করবে সেটা যদি ধরে ফেলা না যায়, তাহলে এ ধরণের অপরাধ পুরোপুরি কখনোই নির্মূল হবে না । ঘিলুতে খাটো লোকজন তো দূরের কথা, সাধারণ মানুষের মধ্যেও একটা বড়সড় কগনিটিভ দোষ আছে । অপটিমিজম বায়াস । সবাই মনে করে দুর্ঘটনা, খারাপ কিছু বা কোন আকাম করে ধরার পড়ার সম্ভাবণা, পারিসংখ্যানিকভাবে যা-ই হোক না কেনো, তার নিজের বেলায় সম্ভাবণা কম । সিগারেট টানলে ক্যান্সারের সম্ভাবণা বেশি কিন্তু , যাকে জিজ্ঞেস করবেন সে বলবে তার ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবণা একটু কম । প্রত্যেক ড্রাইভার মনে করে তার নিজের এক্সিডেন্ট করার সম্ভাবণা কম ।

ব্যাক্তিগত র‍্যান্ডম অপরাধের মধ্যে আবার পরিকল্পিত ও অপরিকল্পিত দুই ধরণের ভাগ করা যেতে পারে । রাগের মাথায় সহিংস আক্রমণের মত ঘটনাগুলো দেখা যায় অনেক ক্ষেত্রেই স্বাভাবিক মানুষও ঘটিয়ে ফেলে । সেগুলো নিয়ন্ত্রণের চেষ্টাতে ব্যাক্তির ইচ্ছা থাকলে, রাগ নিয়ন্ত্রণের মকশ করে দেখা যেতে পারে । তবে রাগের মাথায় তো রাগের মাথাতেই । সমাজ সামগ্রিকভাবে অপরাধ-দমনে এবং অপরাধ করে কেউ যাতে পার পেতে না পারে সেটা নিয়ে ব্যাপক পরিমাণ চেষ্টা করে অপরাধকে ঝুঁকিপূর্ণ চয়েসে পরিণত করলেও, রাগের মাথায় দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে যাওয়া মানুষের কাছে , সেই মুহূর্তে এইসব বিবেচনা থাকার কথা না

এই ধরণের ব্যাক্তিগত র‍্যান্ডম অপরাধের কথা মাথায় রেখে, ঝুঁকিপূর্ণ চলাফেরার অভ্যাস নিয়ে কথা বলতে গেলে প্রায় সময়ই বেশ বিপদজনক মাইন-ফিল্ডের উপর দিয়ে হাঁটার মত অবস্থা হয়ে দাঁড়ায় । বিশেষ করে নারীর শারিরীক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে যেসব সহিংসতার ঘটনা ঘটে সেগুলোর ক্ষেত্রে । মানুষের সামাজিক বিবর্তনের প্রথম থেকেই, হয়তবা , তারো আগে মানুষ শিম্পাঞ্জির সাধারণ পূর্বপুরুষের পর্যায় থেকেই লিঙভিত্তিক শ্রম-বিভাজন এবং প্রজনন প্রক্রিয়ায় নারী-পুরুষের সম্পৃক্ততার পার্থক্যের কারণে গড়পড়তা, আই রিপিট, গড়পড়তা শারিরীক শক্তিতে নারীর চাইতে পুরুষ শক্তিশালী । এই গড়পড়তা পার্থক্য যথেষ্ঠ পরিমাণ পুষ্টি এবং প্র্যাকটিসের পরেও বজায় থাকে । সাধারণ , বোধ বুদ্ধি ও নৈতিকতাসম্পন্ন মানুষের জন্য অর্থ হচ্ছে যেসব কাজে কাঁচা শারিরীক শক্তির প্রয়োজন বেশি সেগুলোতে পুরুষ নারীকে সাহায্য করবে অথবা এ ধরণের কাজগুলো এক্সক্লুসিভলি পুরুষ করবে । এর বেশি কিছু নয় ।

ঝামেলা হচ্ছে, সাইকোপ্যাথিক ও অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিজঅর্ডারে ভোগা অপরাধীর জন্য এই বাস্তবতার অর্থ আবার ভিন্ন । সাইকোপ্যাথ যেহেতু অন্য মানুষকে কেবল বিবেচনা করে তার উদ্দেশ্য পূরণের উপকরণ হিসাবে, (মানুষ যেমন মুরগীকে দেখে আমিষের উৎস হিসাবে) সেহেতু সে নারী পুরুষের এই শারিরীক শক্তির বৈষম্যকে দেখবে তার সুযোগ হিসাবে । সেটা নারীর কাছ থেকে সম্পদ ছিনতাই এর জন্য হোক বা যৌন সহিংসতা হোক । সমষ্টিগতভাবে সমাজের উদ্দেশ্য হবে শারিরীক শক্তি, শারিরীক প্রতিবন্ধকতা বা অমোচনীয় জন্মের বৈশিষ্ট্যের জন্য কেউ যাতে কোনপ্রকার ক্ষতির শিকার না হয় । নিজের প্রয়োজনে ও খেয়ালে নারী পুরুষ নির্বিশেষে, অন্যের ক্ষতি না করে , দিনে ও রাতে যখন খুশি তখন যেখানে খুশি সেখানে চলাচল করতে পারে এমন সমাজ তৈরী করার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। এখন পর্যন্ত হোমো স্যাপিয়েন্সের যদ্দুর অগ্রগতি তাতে বুঝা যাচ্ছে এই কাজ সমাজ যতই চেষ্টা করে যাক, কখনোই পুরোপুরি সফল হবে না । কারণ সমাজের মধ্যে জন্ম নিচ্ছে সাইকোপ্যাথ, যারা কঠিন শাস্তির ঝুঁকি পুরোপুরি বিবেচনা করতে না পেরে অথবা করতে পেরেও নিজে বেঁচে যাবে ভেবে সুযোগমত জায়গায় নিজের চাইতে কম শারিরীক শক্তির নারীর উপর যৌন ও অন্যান্য ধরণের সহিংসতা চালাতে চাইবে ।

শারিরীক শক্তির অসাম্যের কারণে এইধরণের অপরাধের ভুক্তভোগী হবার সম্ভাবণা গড়পড়তা যেহেতু পুরুষের চাইতে নারীর ক্ষেত্রে বেশি , সেহেতু পুরুষের চাইতে নারীকে যদি সাবধানী হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়, সেটা অনেকেই আগপিছ না ভেবে পুরুষের অপরাধের পক্ষে সাফাই গাওয়া হিসাবে ধরে নেন । তবে এই ভেবে নেয়াটা একেবারে অমূলক অথবা নির্বুদ্ধিতার কারণে না । এর কারণ হচ্ছে অন্য আরেক রকম অপরাধের সাথে ব্যাক্তিগত র‍্যান্ডম অপরাধকে গুলিয়ে ফেলা । প্রাতিষ্ঠানিক অপরাধ ।

প্রাতিষ্ঠানিক অপরাধ বলতে বলা যায় এমন ধরণের অপরাধ যেগুলো বিশুদ্ধ এথিক্যাল দর্শণের বিবেচনায় অপরাধ , কিন্তু সমাজ বা ক্ষেত্রবিশেষে রাষ্ট্র বা পুরো সমাজ না হলেও বড়সড় একটা গোষ্ঠী তার অন্য কোন ধরণের আদর্শের কারনে , এক বা একাধিক ধরণের অপরাধকে অনেক ক্ষেত্রে যথোপযুক্ত পরিমানের চাইতে হালকাভাবে দেখে, অথবা ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে ক্ষেত্রবিশেষে উৎসাহিত করে । চলতে ফিরতে নারীর উপর যৌন সহিংসতা, মৌখিক যৌন-নিপীড়ন, মৌখিক সহিংতা এইগুলো অন্তত বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক অপরাধের মত হয়ে উঠেছে । সমাজের পুরুষতান্ত্রিকতার জগদ্দল ও ধর্মীয় আদর্শের ভিত্তিতে নারীর বিচরণের ক্ষেত্রকে পুরুষের ইচ্ছেমাফিক নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা থেকে কি উৎসবে, কি আটপৌরে দিনে বাইরে বেরুনো নারীকে শত রকমের যৌন হয়রানী, মৌখিক ও মনস্তাত্তিক লাঞ্চনার ভিতর দিয়ে যেতে হয় ।

এধরণের প্রাতিষ্ঠানিক অপরাধ মোকাবেলার সবচে কার্যকর উপায় হচ্ছে বুদ্ধিভিত্তিক, নৈতিক ও দার্শণিক আন্দোলন । এগুলোকে ঠিক চুরি বাটপারি ডাকাতি বা সহিংসতার মত অপরাধ ঘটে যাবার পরে শাস্তির ব্যাবস্থার (Criminal Justice) মাধ্যমে পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব না । যেমন নারীর বিচরণক্ষেত্রকে যারা পুরুষের সুবিধা অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে দার্শণিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক চাপ দেয়া উচিৎ ব্যাক্তিগত স্বাধীনতা, লিঙ্গনির্বিশেষে নিজ ভাগ্য ও বিচরণ নিজের ইচ্ছানুযায়ী বেছে নেয়ার ক্ষমতা সবার জন্য প্রযোজ্য হবে এই দৃষ্টিকোণ থেকে ।

নারী তার পছন্দ অনুযায়ী যখন খুশি তখন, যেভাবে খুশি সেভাবে পোশাক বাছাই করে, যেভাবে খুশি সেভাবে যাতায়াত ও আনন্দ উৎসব করবে, এটা সমাজের গড়পড়তা আইন মেনে চলা নাগরিককে মেনে নিতে বাধ্য করতে হবে ।

সাইকোপ্যাথের কাছে এসব বলে লাভ নাই । সাইকোপ্যাথের হাত থেকে বাঁচার ক্ষেত্রে দার্শণিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলনের কোন মূল্য নাই ।

প্রাতিষ্ঠানিক অপরাধের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আবার কিছুটা ঝামেলার জায়গা তৈরী করে অন্য আরেক ধরণের অপরাধ । ক্ষমতা ব্যাবহার করে করা অপরাধ । রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যাবহার করে স্বজনপ্রীতির ভিত্তিতে সামস্টিক সম্পদের বৈষম্যমূল বন্টন থেকে শুরু করে আইনি জটিলতার ভয় দেখিয়ে নিজের স্বার্থ আদায় , সুনামের হানি করার ভয় দেখিয়ে নিজস্ব স্বার্থ আদায় (সাংবাদিক!), এমনকি দুর্বলের রক্ষার জন্য তৈরী করা আইনের সাহায্যে হয়রানি এরকম অনেক অপরাধই ক্ষমতা ব্যাবহার করে করা হয়ে থাকে । উন্নত বিশ্বে এ ধরণের অপরাধের সবচে হাতের কাছের উদাহরণ হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ নিয়ে কড়া আইনের অপব্যাবহার । যেহেতু দূর্ঘটনায় দায়ী পক্ষ সবরকমের চিকিৎসা খরচ দিতে বাধ্য সেহেতু দেখা যায় হালকা টোকাটুকিতে মাসের পর মাস বিভিন্ন রহস্যজনক ব্যাথা নিয়ে হাসপাতালে যাতায়াত করে, ক্ষতিপূরণ হিসাবে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে । ইন্সুরেন্স কোম্পানিগুলো অসহায়ের মত চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছু করতে পারছে না ।

আরেকটি কৌতুককর উদাহরণ হচ্ছে সুইডেনের শিশু বিষয়ক আইন । ওখানে শিশুদের অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে তাদের অধিকার রক্ষার জন্য যেসব আইন তৈরী করা হয়েছে , ইচড়েপাকা বাচ্চারা সেই আইন ব্যাবহার করে প্রায় শিশুতন্ত্র (bratocracy) কায়েম করে ফেলেছে । অবশ্য সুইডিশ লোকজনের জন্য ব্যাপারটা সম্ভবত আর কৌতুকের পর্যায়ে নাই ।

নারীর উপর সমাজের সংঘবদ্ধ হয়রানি প্রতিরোধ করার জন্য অনেকেই এ ধরণের হয়রানির বিরুদ্ধে চরম কঠিন আইন তৈরী করে তার চরম দ্রুত প্রয়োগ করলেই সব সমাধান হয়ে যাবে বলে মনে করেন । সমস্যা হচ্ছে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে সামগ্রিক ন্যায়পরায়ণতার অবস্থা এমন যে, যেকোন ধরণের আইনকেই ক্ষমতা কাঠামোর অপব্যাবহারের সাহায্যে অন্যায়ের নতুন হাতিয়ার হিসাবে ব্যাবহার করা শুরু হয়ে যায় । নারী নির্যাতন বিরোধী কঠিন আইন শেষ পর্যন্ত ক্ষমতাশীল পরিবারের নারীরা পুরুষদের বিরুদ্ধে ব্যাবহার করছে, করবে । যৌন হয়রানি ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠিন আইন ব্যাবহার করা যায়, হয় ব্লাকমেইলিং এর অস্ত্র হিসাবে ।

অপরাধ দমনের জন্য আইন তৈরী ও অপরাধের শাস্তি, অপরাধ কমানো নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে হতাশার দিক হচ্ছে, শেষতক, যে মানুষ ভিতর থেকে খারাপ তাকে প্রতিরোধ করার যুদ্ধ মূলত নিরন্তর চোর পুলিশ খেলা । জয়-পরাজয়হীন , চলমান । স্থায়ী সমাধান কেবলমাত্র ইউটোপিয়াতে সম্ভব । বাছাই করা জিন দিয়ে ফ্যাক্টরিতে শিশু উৎপাদন অথবা প্রতিটি মানুষের প্রতিটি মুহুর্তের কাজকে রেকর্ড এবং মনিটর করা । বাস্তবতার দুনিয়াতে দার্শণিক ও বুদ্ধিভিত্তিক বিকাশ, ন্যায্য সমাজ তৈরীর জন্য ক্রমাগত তত্ত ও প্রতিতত্ত উদ্ভাবণের মাধ্যমে ধীর গতিতে একটু একটু করে কমিয়ে আনার চেষ্টা করে যাওয়া ছাড়া হয়তো কোন উপায় নেই ।