পড়লাম ফেরদৌসী মজুমদারের লেখা আত্মজীবনী ‘মনে পড়ে’। বনেদি, ধনী মুসলিম পরিবারে জন্ম হয়েছিলো তাঁর ১৯৪৩ সালে। চৌদ্দ ভাইবোনের সংসার ছিলো তাঁদের, তিনি ছিলেন এগারো নম্বর। বেশ কড়া শাসন আর আধুনিকতার মিশ্রণে ছিলো তাঁর পারিবারিক জীবন। কবীর চৌধুরী, শহীদ মুনীর চৌধুরীর বোন তিনি, বাকি ভাই বোনেরাও সমাজে বেশ প্রতিষ্ঠিত, রত্নগর্ভা মায়ের সন্তান তাঁরা। আত্মজীবনীতে তিনি তাঁর পারিবারিক ঘটনা বেশ অকপটেই বলেছেন, সে-জিনিসটা আমার ভাল লেগেছে। আমার নিজের ছোটবেলাও কেটেছে মুসলিম রক্ষণশীল পরিবারে। আমি তাঁর পরিবার দিয়ে কিছুটা যেনো নিজের পরিবারটাই দেখতে পেলাম। মাথায় কাপড় দেয়ার জন্যে, পর্দায় থাকার জন্যে মেয়েদেরকে শাসন, সন্ধ্যেয় বাড়ি ফিরতে দেরি করা নিয়ে ছেলেদেরকে শাসন, পড়াশোনা নিয়ে মারধোর, অশান্তি, হয়তো তখন ঢাকার ঘরে ঘরে এরকমই গল্প ছিলো…
তখনো এতো লোক ঢাকায় বাস করতো না। গ্রামের দু একটি সচ্ছল পরিবারের দুএকজন ঢাকায় থাকে। প্রায়ই দেখা যেতো গ্রাম থেকে কেউ না কেউ, কোন না কোন প্রয়োজনে কিংবা কখনো স্রেফ শহর দেখার জন্যে ঢাকা চলে আসত এবং যারা ঢাকায় থাকে তাদের বাসায় উঠে যেতো। অনেকটাই “মান ইয়া না মান, ম্যায় তেরা মেহমান” টাইপ অবস্থা। ফেরদৌসীদের বাড়িও তার ব্যতিক্রম ছিলো না, তা নিয়ে ফেরদৌসী লিখেছেন, “বাবার দিকের লোকজন এলেই আম্মা সচেতনভাবে ওদের একটু সেবা-যত্ন করতেন। ওরা এলে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের থাকা খাওয়ার একটু অসুবিধে হতো। বাড়িতে এলে বিছানায় উঠে যেত ওরা, মাটিতে নেমে যেতাম আমরা।…………. কিন্তু এসব ঘটনা থেকে আমার মনে যেটা দাগ কেটেছে এবং যে উপসংহারে উপনীত হতে আমি বাধ্য হয়েছি-সেটা হচ্ছে দেশের বাড়ির প্রায় অশিক্ষিত লোকগুলো বড় সঙ্কীর্ণমনা হয়। এদেরকে সন্তুষ্ট করা বড় কঠিন। এদের ভিলেজ পলিটিক্সটা বড় মারাত্মক। বিচিত্র স্বভাব, বিচিত্র মনমানসিকতা। তাই গ্রামীণ সরলতার পাশাপাশি গ্রাম্য সঙ্কীর্ণতার কথাটিও ভুললে চলবে না।”
যতোটা আগ্রহ নিয়ে বইটি শুরু করেছিলাম বইটা ঠিক ততোটা আশা পূরণ করতে পারে নি। সত্তরের শুরুতে রামেন্দু-ফেরদৌসীর বিয়ে হয়। সেসময়ে দুজন ভিন্ন ধর্মালম্বী মানুষ পারিবারিক সম্মতি নিয়ে সংসার পাতছেন, সে খুব বিরল একটা ঘটনা। তাঁর ভাষাতেই, “মুসলমান ছেলে হিন্দু মেয়ে বিয়ে করেছে কদাচিৎ শোনা যেতো, কিন্তু মুসলমান মেয়ে হিন্দু ছেলে বিয়ে করেছে শোনা যেতো না”। কিন্তু এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু লিখেন নি তিনি। আমার দৃষ্টিতে, এটি খুব উল্লেখযোগ্য একটি ঘটনা যা বাংলাদেশের মানুষের জানার দরকার ছিলো। এই অন্ধ, বধির সমাজে, মৌলবাদী জনগোষ্ঠীর মত পরিবর্তন করতে এ ধরনের ঘটনার বিশদ প্রচারের প্রয়োজন আছে। প্রথমে পরিবার রাজি ছিলো না, পরে রাজি হয়েছে তাঁর দৃঢ়তা দেখে শুধু এটুকুই লিখেছেন তিনি। সামাজিকভাবে কী ধরনের বাধাবিঘ্ন এসেছে বা আত্মীয় স্বজনদের কিভাবে মানালেন তা নিয়ে কিছুই লিখেন নি। তাঁর নিজের পরিবার ছাড়াও রামেন্দুর পরিবার ছিলো, রামেন্দুর সমাজ ছিলো, তাঁদের আচরণ তাঁর প্রতি কেমন ছিলো, তাঁরা তাঁকে কিভাবে গ্রহণ করেছিল সে-সম্পর্কেও একটি কথা নয়! তাঁর সুখ-শান্তির সংসারের কিছু বিবরণ সমাজকে জানানো তাঁর দায়িত্ব ছিলো বলে অন্তত আমি ভাবি।
রামেন্দু মজুমদারকে অনেকবার আমি পত্রিকায়, টিভিতে অনেক অন্যায়ের প্রতিবাদে রাস্তায় নামতে দেখেছি। ফেরদৌসীকেও আমি বিভিন্ন প্রগতিশীল, বক্তব্যধর্মী নাটকে মঞ্চে ও টিভিতে অভিনয় করতে দেখেছি। এই পরিবারটি সম্পর্কে আমার ধারনা খুব অন্যরকম ছিলো। কিন্তু ফেরদৌসীর বইটি আমাকে বিরাট ধাক্কা দিয়েছে। আমি কিছুটা অংশ বই থেকে হুবহু তার ভাষাতেই তুলে দিলাম,
“ধর্ম নিয়ে জহুর ভাই অনেক পড়াশোনা করেছেন। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, ইসলাম সব ধর্ম বিষয়ে মোটামুটি পড়েছেন। শুনেছি বৌদ্ধধর্ম তাঁর ভাল লেগেছিল। এমনকি গৌতম বুদ্ধের মতো গাছের নিচে ধ্যানে বসতে চেয়েছেন। প্যাগোডা না পেয়ে ২-১ দিন নাকি ধ্যানের উদ্দেশ্যে গাছের নিচেও বসেছিলেন। ১৩ – ১৪ বছর বয়সে বোধহয় বৌদ্ধধর্মের বিশ্বাসটা তাঁকে পেয়ে বসেছিল। পরে গৌতম বুদ্ধের জীবনবিমুখতা তাঁর কাছে ভালো লাগলো না। জীবনের ঝঞ্ঝাট থেকে পালিয়ে বেড়ানো তিনি সমর্থন করেন না। কিন্তু এটা সত্য তিনিই বলেছেন, একসময় তাঁকে Buddist Qayyum ও বলা হতো। খ্রিষ্টান ধর্ম তাঁকে মুগ্ধ করেছিল। ১৪ বছর বয়সে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি রোমান ক্যাথলিক হয়েছিলেন। তিনি ত্রিপিটকও পড়েছেন। কোনো ধর্মেই যখন শান্তি পাচ্ছিলেন না তখন তিনি কমিউনিস্ট হয়ে গেলেন। সেসময় তাকে Qayyum the Communist বলা হতো। বেশ কয়েক বছর তিনি ও নামেই সুপিরিচিত ছিলেন, কিন্তু ওতেও শান্তি পেলেন না তিনি। অবশেষে নিজের সেই ধর্মে ইসলামের দিকে ঝুঁকলেন। সেটা হয়েছে আব্বা তাঁকে ইসলামের মর্ম বুঝিয়ে একটা চিঠি দিয়েছিলেন এবং সেটা পড়েই তিনি কোরান শরিফ পড়া শিখেছিলেন। আব্বা তাঁর জন্যে মৌলবী রেখে দিয়েছিলেন – নিজেও পড়াতেন; কিন্তু জহুর ভাই মৌলবীকে ফাঁকি দিয়ে প্রজাপতি ধরতেন। ব্যাস সঙ্গে সঙ্গে মৌলবীর চাকরি নট। সম্পূর্ণভাবে আব্বা নিজে পড়াতে শুরু করলেন। সেই যে কোরানের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা জন্মালো তা আর কোনদিন কমে নি, বরং উত্তরোত্তর বেড়েছে। জহুর ভাই ইসলাম ধর্মের আর কোরানের বাণীর এমন আধুনিক ব্যাখা দেন যা অনেকেরই অজানা। কোরানের গূঢ় তত্ত্ব এবং কোরানের বাণীর নির্যাসটা তিনি আহরণ করেছেন এবং জীবনে তা প্রয়োগ করার চেষ্টা করেছেন।
যখনই কোথাও কোনো ভাষণ দিয়েছেন ঠিক জায়গাতে কোরান থেকে ঠিক আয়াতটি বা শব্দটি বেছে নিয়েছেন। কোয়েটাতে একবার এক লেকচারের আগে তিনি কোরানের কিছু অংশ আবৃত্তি করেছিলেন। কোয়েটা কলেজের তৎকালীন Chief instructor এফএসকে লোদি এটার বিরুদ্ধে ঘোরতর আপত্তি জানিয়েছিলেন। তারে জহুর ভাই ভ্রুক্ষেপ হয় নি, তিনি তাঁর চেতনায়, তাঁর বিশ্বাসে অনড় ছিলেন এবং অনেক পাঞ্জাবিও তাঁর বক্তৃতায় মুগ্ধ হয়েছিলেন। বাঙালির বুদ্ধিমত্তা, বাঙালির মনমানসিকতারই জয় হয়েছিল সেদিন।“
এতোটা গোঁড়া চিন্তাভাবনা আর মানসিকতা যার তিনি সেই যুগে কী করে একজন ভিন্নধর্মীর গলায় মালা দিলেন! যার মনে নিজ ধর্ম নিয়ে এতোটা শ্রেষ্ঠত্ব আর গরিমা কাজ করে তিনি অন্য ধর্মের কারো প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন, ভাবতেও কষ্ট হয় আমার। যে সময়ে মেয়েদের স্কুলে থাকতেই বিয়ে হয়ে যেতো, সে সময়ে তিনি ডবল এম।এ করে টিভিতে নাটক করতেন, এ বইটি পড়ে আমার সেটা ভাবতেও কষ্ট হয়। ধর্মের কাছে কী সত্যি তাহলে শিল্প-সাহিত্য, প্রগতিশীলতা অসহায়? এতো আধুনিক জীবন যাপন করে এমন রক্ষনশীল চিন্তা ভাবনা মনে রাখা কতোটা পরস্পরবিরোধী।
তবে পুরো বইয়ের কোথাও ফেরদৌসী তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপারগুলো খুব বিশদে লিখেন নি যেটা আত্মজীবনী লেখার অনেকটা মূলধারা বলে ভাবা হয়। তিনি তাঁদের পারিবারিক ঘটনাবলীই লিখে গেছেন। অনেকটা খাপছাড়া, ধারাবাহিকতা নেই। এক এক সময়, এক এক ঘটনা। পঞ্চাশের দশক, ষাটের দশক, সত্তরের দশকের পর্যায়ক্রম অনুপস্থিত। সাংস্কৃতিমনা, শিক্ষিত পরিবারের ঘটনাবলী থেকে সমাজ পরিবর্তনের, রাজনৈতিক আন্দোলনের, মুক্তিযুদ্ধের যে-ধারাবাহিকতা আসার কথা ছিলো তাও নেই। যার কারণে ছোট থেকে বড় হয়ে-ওঠা ফেরদৌসীর বিশদ কিছু চিত্র এখানে পাওয়া যায় না। শেষের দিকে তাঁদের চৌদ্দ ভাইবোনের জীবনের সারমর্ম লিখেছেন, সবার প্রেম-বিয়ে-সংসার নিয়ে লিখেছেন। তারমধ্যে সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত তাঁর নিজের কাহিনি, যার মধ্যে প্রেম-বিয়ের কিছু নেই, শুধু আছে রান্না করতে জানতেন না, সেটা শিখেছেন আর তাঁর মেয়ের কথা! হয়তো এ-কারণেই, বইটি ঠিক যতোটা আলোচনায় আসার কথা ছিলো, ঠিক ততোটা আলোচনায় হয়তো আসে নি। কিন্তু বইটিতে অনেক তথ্য আসার সুযোগ ছিলো। শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বাঙালি জীবনকে তুলে ধরার একটি দলিল হতে পারতো এই বইটি। সে-হিসেবে বইটা আশা জাগিয়েও ব্যর্থতার ছায়ামাখা একটা সম্ভাবনার অপমৃত্যু ঘটিয়ে গেলো।
গত গ্রীষ্মের ছুটিতে বইটি যথারীতি উপহার পেয়েছিলাম ছোটভাই আরাফাত শান্ত থেকে।
তানবীরা
১৫/০৪/২০১৫
এই বইটি পড়ার খুব ইচ্ছে। সংগ্রহের চেষ্টা করব। ছাত্রজীবন থেকেই রামেন্দু-ফেরদৌসী মজুমদার দম্পতি আমাদের অনেকেরই খুব প্রিয় ও আদর্শ স্থানীয় ছিলেন। আমার মতো আরও অনেকেরই ব্যক্তি জীবনের অনেক সিদ্ধান্তের প্রেরণায় ছিলেন তাঁরা। তবে তানবীরা যতটুকু লিখেছেন বইটি পড়ে হয়ত হতাশ হতে হবে; তবু পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।
বইটি পড়ার আগ্রহ রইল। এতকিছুর পরেও ফেরদৌসী মজুমদারকে কখনোই মৌলবাদী মনে হয়নি, খুব বড়জোর খানিকটা সেকেলে মনে হয়েছে। সংবাদপত্রে এই গুনিজনের অসংখ্য সাক্ষাতকার পড়ে তবেই একথা বলছি। সমগ্রতা বিচার খুব জরুরি। বাঙালি মুসলমানের মন!
ছাত্রাবস্থায় মঞ্চে তার একক অভিনয় দেখেছি। এখনো ঘোর কাটেনি। সেল্যুট!
তাতা আপুকে ধন্যবাদ।
ফেরদৌসী মজুমদারের আত্মজীবনী “মনে পড়ে” তার সম্বন্ধে তানবীরার লেখাটি পড়ে মনে হলো ৭০ দশকে একটি রক্ষণশীল মুস্লিম প্রিবারের মেয়ে হয়ে প্রগতিশীল হওয়া চিন্তার বিষয় ছিল। যদিও ফেরদৌসী মজুমদার ছাত্রাবস্তায় প্রগতিশীল হয়ে ধ্রমকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা কারেছিলেন, কিন্তু ধ্ররম নামক চৌম্বকের আক্ররষনে তার প্রগতিশীলতা বেশীদিন রাখতে পারেন নি, আবার ধর্মের পিছনে চলে আসেন। তাহলে এটাই কি তার শান্তি পাওয়ার নীড় ?
প্রগতিশীলতার জন্য তিনি অন্য ধ্ররমাল্মবী রমেন্দু মজুমদারকে বিবাহ করেন, তারজন্য পরিবারকে বুঝাতে অনেক কষ্ট স্বীকার করতে হ্যেছিল। বিবাহের পূর্বে বা পরে রমেন্দু মজুমদার মুসলমান হয়েছিলেন বলে আমার জানানেই।
শেষে তার আত্মজীবনী “মনে পড়ে”পড়ার ইচ্ছা রইল। যদি কেউ সাহায্য করেন, তবে কৃতজ্ঞ থাকবো।
তবে ধর্ম মেনে সত্যিকারের অসাম্প্রদায়িক হউয়া যৌক্তিক কারণেই অসম্ভব। কারন প্রতিটি ধর্মই আরেকটি ধর্মকে অস্বীকার করে। কোনো কোনো ধর্মে ত এ বিষয়ে দ্বিতীয় চিন্তারই অবকাশ নেই। এরপরও যদি কেউ নিজেকে সেকুলার বলে তবে সে ধার্মিক হিসেবে শুদ্ধ নয় অথবা নিজের ধর্ম সমন্ধে তার পরিষ্কার ধারনা নেই।
একমত আপনার সাথে। বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের মাঝামাঝি যা আছে তা হলো কনফিউশন নইলে ভন্ডামি
বইটা পড়লে আমিও হয়ত একই কারনে হতাশ হতাম। এই আমলেও যেখানে ধর্মীয় পরিচয়ের কঠিন দেওয়াল ভেঙ্গে বিবাহ বিরল সেখানে অর্ধ শতাব্দী আগে ব্যাপারটা ঠিক কিভাবে ঘটেছিল, সামাজিক প্রতিক্রিয়া কেমন দেখা গেছিল জানার আগ্রহ তীব্রভাবেই বোধ করতাম এবং না পেলে হতাশ হতাম।
তবে ধর্ম বন্দনা সংক্রান্ত যে অংশ তুলে তার সমালোচনা করলেন তাতে আমি কিঞ্চিত বিভ্রান্ত। যা তুলেছেন তা তার নিজের কথা নয়, কোন এক জহুর কাউয়ুমের কাহিনী। কোরান বেদ গীতায় বহু লোক নিজ নিজ মত শান্তি পায়, পেতেই পারে। সেটা কারো বয়ানে উল্লেখ করা মানেই ধর্ম সম্পর্কে নিজ মূল্যায়ন নয়। আমার মা কঠিন ইসলাম ভক্ত……নিয়মিত কোরান পাঠ করে শান্তি পান…এই জাতীয় কিছু কথা যদি আমি আমার জীবনীতে (কপাল ভাল যে আমার তেমন কিছু লিখতে হবে না) লিখি তার মানেই এই দাঁড়ায় না যে সেটা ইসলাম সম্পর্কে আমার নিজের মূল্যায়ন।
পরে দেখলাম যা আমিও আগে জানতাম না যে রামেন্দু মজুমদার ইসলামে কনভার্ট হয়েছিলাম, মানে ফেরদৌসী ধর্মত্যাগ করার মত বিপ্লবাত্মক কিছু করেননি। সম্ভবত পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত ইসলামেই আছেন। তার কাছে কোরান ঐশ্বরিক ভাবে প্রতীয়মান হওয়াটাই স্বাভাবিক। ধর্ম নিয়ে আমার বহু কারনে রিজার্ভেশন আছে, কিন্তু আমি মোটেও মনে করি না যে আধুনিক প্রগতিশীল এসব হতে হলে অবশ্যই আনুষ্ঠানিকভাবে আমি ধর্ম ত্যাগ করলাম বা সব ধর্মই খারাপ জাতীয় কোন ঘোষনা দিতে হবে।
কোন এক জহুর কাইয়ুমের কাহিনী নয় তার নিজের ভাইয়ের কাহিনী। জহুর কাইয়ূম তার নিজের ভাই, তার চেয়ে বয়সে বড়। পুরো বই জুড়েই তিনি ইসলাম, নামায, কোরানের বন্দনা করেছেন বলেই ব্যাপারটি আমার চোখে লেগেছে। আমি গুডরীডসে অন্যরকম রিভিউ পড়েছি অন্যদের। কিন্তু এক একজনের দৃষ্টি আর বিশ্লেষন এক এক রকম।
আমার মতে জোর করে আসলে কেউ প্রগতিশীল হতে পারে না। এটা ধার্মিক হওয়ার মতো পাঁচ বেলা প্র্যাক্টিসের ব্যাপার না। এটা রিয়ালাইজেশানের ব্যাপারতো, ঘোষনা দেয়ার এখানে কিছু নেই। আপনার প্রাত্যহিক কর্মই আপনার চিন্তাধারাকে প্রতিফলিত করবে যদি একজন সেরকম ভন্ড কেউ না হয়। আর তা তার লেখাতেও ছাপ পড়বে।
৮০-র দশকের মাঝামাঝি সময়ে মহিলা সমিতিতে ফেরদৌসীর অনেক নাটক দেখেছি,মনে করতাম মননে উনি অনেক বড় সেকুলারিষ্ট যেখানে জাত-পাত-ধর্মের কোন বালাই ছিলা না বলেই রামেদ্রু মজুমদার কে বিয়ে করতে পেরেছিলাম ? এখন তো দেখছি উনি মুসলমান রীতি-নীতিতেই বিবাহ করেছিলেন। মতিভ্র্মের কারন কি উচ্চশিক্ষায় এম,এ বাংলায় ও আরবী ভাষার জগা-খুচড়ীর ফল?বাংগালি জাতিটাই মনে হয় খুচড়ী-জাতি। যদিও উনার বিখ্যাত দু’ভাই কে আমরা অন্যভাবে চিনি-জানি।
আপনার লেখার মাধ্যমে উনার সমন্ধে এখন অনেক কিছু জানতে পারলাম।
তবে অভিনেত্রী হিসাবে তার তুলনা শুধু সেই-ই একথা অনাসয়ে বলা যায়।
কলম যুদ্বের দ্বারা আমাদের জং ধরা ভোতা মাথা ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে যাক……
ফেরদৌসীদের কোন রীতিতে বিয়ে হয়েছিল জানি না। তবে মুসলমান রীতিতে মুসলমান নারীর বিধর্মী পুরুষ বিবাহের উপায় নেই।
বাংগালীর মতো তালগাছ আমার মার্কা মডারেট জাতি আর জগতে নেই। ধারনা করছি তারা মুসলমান রীতিতেই বিয়ে করেছেন। কিছু আলোচনা ফেসবুকে পেয়েছি তাতে বিয়ের রীতি সম্পর্কে কেউ জানে না তেমন, তবে রামেন্দু ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেছেন সেটা মোটামুটি অনেকেই জানেন দেখলাম যদিও আমি জানতাম না।
আমার মন্তব্যের প্রতি লেখিকার দৃষ্টি আকর্ষিত হবার জন্য ধন্যবাদ। আসলে আমার মন্তব্যটি পুরো শেষ করতে পারিনি। সব ধর্মেই গোড়ামি আছে, তবে প্রাত্তৈহিক জীবনে ইসলাম ধর্ম চর্চার দিকটিই আমি বোঝাতে চেয়েছিলাম। আর আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে খুব বেশি দৃঢ়বদ্ধতা না থাকলে ধর্মকে এড়িয়ে চলা খুব কঠিন। আমার মনে হয় ইসলাম ধর্মের ক্ষেত্রে কথাটি আরো বেশি প্রযোজ্য।
পরন্ত জীবনে এসে যারা আত্মজীবনী লিখেন, তাদের মধ্যে খুব কম লোকই আছেন যারা বর্তমান জীবনের প্রভাব মুক্ত হয়ে ছুটে যেতে পারেন শুধুই স্মৃতির কোটরে।
আপনি ব্যাপারটা যেভাবে ব্যাখা করছেন সেভাবেও দেখা যেতে পারে আবার অনেক সময় অনেক দিন কেটে গেলে দৃষ্টি ভঙ্গীর পরিপক্কতা আসে, আবেগ অভিমান সরিয়ে মানুষ সার সত্যটা দেখতে পায় সেভাবে নির্মোহ হয়ে নিজেকে বিশ্লেষন করেন সেভাবেও কিন্তু ভাবা যেতে পারে। ইন্সট্যান্ট লিখলে লেখায় আবেগ অনেক বেশি থাকে, অন্তত আমার ধারনা
বইটি আমারও পড়া হয়নি তবে সমালোচনাটি ভাল লেগেছে, লেখিকাকে ধন্যবাদ তার বিষয় নির্বাচনের বৈচিত্রের কারণে ।
বাঙ্গালী মুসলমান পরিবার গুলোর মধ্যে ধর্ম এমন ভাবে মিসে আছে তা থেকে বেরিয়ে আসা সত্যি অনেক কঠিন । বাস্তবতা হল, কোন ধর্মই মানেনা এমন একটি নির্ভরযোগ্য জনগষ্টি যতদিন সৃষ্টি না হচ্ছে ততদিন সামাজিক প্রয়োজনেই বিরাট একটা মানব সমাজকে ধর্মের সাথে কোন না কোন ভাবে আপস করেই যেতে হবে । ফেরদৌসি মজুমদারও প্রমাণ করলেন তিনি ব্যতিক্রম কেউ নন ।
তাইতো বিদ্ধগ লেখক আহম্মদ ছফা বলেছিলেন ‘বাঙ্গালী মুসলমান পরিবারে কোন কমিউনিস্ট এর জন্ম হয় না।’ তার প্রমান সামুয়িক আমাদের কমিউনিস্ট দুই মন্ত্রীর এহেরাম পড়ে তীর্থ যাত্রা ।
আপনার বক্তব্যের সাথে আমিও একমত। কিন্তু আহমদ ছফা নিজেকে কী মুক্তমনা ছিলেন? তাঁর লেখা পড়লে আমিও দ্বিধায় পরে যাই
স্মৃতিতে সবকিছু ঠিকভাবে নেই , সেজন্য । মানুষের স্মৃতি খুবই ভংগুর জিনিস । আসলে ঘটেছে যেসময় তিনি বইটি লিখেছেন, তখনকার তার মানসিক অবস্থা ও জীবন-বীক্ষা দিয়ে তার স্মৃতিগুলো বারবার রিরাইট হয়েছে । এটাই সাধারণত হয় ।
আপনার যুক্তিটা অনেকটা মনে ধরেছে। ভাল আছেন?
যতদূর মনে পড়ে ফেরদৌসী মজুমদারের ‘মনে পড়ে’ প্রকাশিত হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে। পড়েছিলাম বইটি। এটাকে ঠিক আত্মজীবনী বলা যাবে না। এটা তাঁর কিছু স্মৃতিচারণের সংকলন বলেই মনে হয়েছে আমার।
রামেন্দু মজুমদারের সাথে তাঁর বিয়ের ব্যাপারটা সম্পর্কে আমার মতো আরো অনেকেরই কৌতূহল অনেক দিনের। অপ্রকাশিত সূত্র থেকে জানা যায় রামেন্দু মজুমদার ফেরদৌসী মজুমদারকে বিয়ের জন্য ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলমান হয়েছিলেন। তাঁদের বিয়েটা ইসলাম ধর্ম মতেই হয়েছিল। তাঁদের সন্তান ত্রপা মজুমদারের ধর্মও ইসলাম। রামেন্দু মজুমদার ও ফেরদৌসী মজুমদারের বিয়েটা কিছুতেই অভিজিৎ ও বন্যার বিয়ের সাথে তুলনীয় নয়।
ভালো লাগলো আপনার পাঠ প্রতিক্রিয়া।
কলম চলুক।
আমার এই লেখার অংশ বিশেষ ফেবুতে দিয়েছি তখন একজন আমাকে ইনবক্সে জানালো রামেন্দু মজুমদার ধর্মান্তরিত হয়ে বিয়ে করেছেন। আমি যারপর নাই অবাক হয়েছিলাম এটা শুনে।
আমি আমার ব্যাপক বিস্ময় থেকে রিভিউটা লিখেছি, কারো সাথে কারো তুলনার ভাবনা থেকে নয়।
মানুষের চিন্তার জগত বা প্যাটার্ন পরিবর্তন হয়। আপনার রিভিউ পড়ে ফেরদৌসি মজুমদারের এই পরিবর্তন চোখে পড়লো। মানুষ তার জীবনের কিছু স্মৃতিকে সচেতন ভাবে আড়াল করতে চায়, উনিও তাই চেয়েছেন মনে হলো।
রিভিউটি ভালো লেগেছে, বইটি পড়া হয়নি।
হয়তো আপনার কথাই সত্যি। যে ভাবনা থেকে রামেন্দুকে বিয়ে করেছিলেন পরে হয়তো তা পরিবর্তন হয়ে থাকলেও থাকতে পারে।
বইটির পর্যালোচনা ভালো লাগলো । হ্যাঁ, আমিও ভেবেছিলাম ফেরদৌসি মজুমদার ত্ৎকালীন (অবশ্য এখন মৌলবাদের প্রকূপ আরও বেশি) সমাজ ব্যবস্থায় একজন মুসলমান মেয়ে হিন্দু ছেলে বিয়ে করার জন্য যে সব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন এর কিছু থাকবে বইটিতে। যাহোক, লেখা অ্যাহত থাকুক আপনার কলমে।
আমি সার্বিক ভাবেই নিরাশ হয়েছি। তার নাটক শুরু করার অনুপ্রেরনা বা অভিজ্ঞতা থেকে শুরু করে ব্যক্তি তার সম্পর্কে কোন তথ্যই নেই ধরতে গেলে!
ভাল থাকবেন আপনি
সুন্দর লেখাটির জন্য ধন্নবাদ। আমি কোথায় যেন পরেছিলাম তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পরেন। তার মেয়েও ইসলাম ধর্ম অনুসরণ করে। অতএব তাদের কাছ থেকে খুব বেশী কিছু আশা করার নেই। এই প্রসঙ্গে একটা বিষয় উল্লেখ করতে চাই। হিন্দু মুসলমান বিয়েতে যদি ছেলেটি মুসলমান হয় তবে মেয়েটি তার নাম পরিবর্তন করে কিন্ত উল্টোটি কিন্তু একদমই বিরল। আমার মনে হয় ইসলাম ধর্মাবলম্বী হলে খাঁটি অসাম্প্রদায়িক বা ধর্মের প্রতি দুর্বলতা কাটিয়ে উঠা জীবনব্যাপী সাধনার কাজ যদিও ব্যাতিক্রম অবশ্যই আছে। ইসলাম ধর্মের সমগ্র জীবনব্যাপি রূপটিই কারন বধহয়।
প্রসুনজিৎ, ব্যাপারটা শুধুই ইসলাম ধর্মের ক্ষেত্রে হয়তো নয়। কারণ, অফিসে আমি নিয়মিত কপালে তিলক কাটা দক্ষিন ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ারদের দেখি সবার মাঝখানে বসে হাত দিয়ে চাপাতি-আলু তরকারী মেখে মেখে খাচ্ছেন। তারা শুদ্ধ নিরামিষ ভোজী তাই কোন তেলে কি ভাজা হয়েছে সে চিন্তা থেকে কোন ধরনের ঝুঁকি নিতে নারাজ। গোঁড়ামিতে কেউই কম নয়।
বাংলাদেশে আমি অনেক বিখ্যাত ভালো মানুষদের বই পড়ে দেখেছি, লেখাগুলো খাপছাড়া। বোঝা যায় লেখাগুলো যোগ্যলোকের রিভিউয়র ভিতর দিয়ে যায়নি। ভালোভাবে রিভিউ হলে পরে তাদের বই গুলোও সুখপাঠ্য এবং বিখ্যাত বই হতে পারত।
আরেকটি উদাহরন, শেখ হাসিনা রচনা সমগ্র ১,২। শামসুজ্জামান খান মুখবন্ধ লিখেছেন উভয় সমগ্রের। মজার ব্যপার হল, উভয় সমগ্রে তিনি একই মুখবন্ধ লিখেছেন। বোঝা যায়, তিনি নিজেও রচনাগুলো পড়েননি, অনেকটা দায় থেকে তিনি মুখবন্ধ লিখেছেন।
বাংলা একাডেমিতে এক আড্ডায় বিক্রম শেঠ আমার মত আরো কয়েকজনের সামনে বলেছিলেন, তার বই বের হওয়ার আগে তিনি প্রতিদিন সকাল বেলায় এডিটরের বাসায় গিয়ে বসে থাকতেন, দুই মাস, তিন মাস- যতদিন না বই ছাপার উপযোগী না হয় । তার কথায় বোঝা যায়, একজন লেখকের বইয়ের এডিটরের ভুমিকা কত বড়।
রামেন্দু মজুমদার-ফেরদৌসি মজুমদার, বাপ্পা মজুমদার-একজন মুসলিম অভিনেত্রী বউ, অভিজিত রায়-বন্যা আহমেদ, আশরাফুল ইসলাম ও তার স্ত্রী, চয়ন ইসলাম ও তার সংগীতশিল্পী স্ত্রী এদের সাথে আপনি বৈবাহিক কারনে যে সমস্যার কথা বলেছেন, সেই সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলার ভীষন ইচ্ছে বহুদিন থেকে ।
একটি ভাল বইয়ের ক্ষেত্রে প্রকাশের পূর্বে এডিটের ভূমিকা বিশাল। পশ্চিমে এই কাজটা করে প্রকাশনা সংস্থা, তারা বারবার এডিটরের কাছ থেকে নোট নিয়ে লেখককে দিয়ে সংশোধন করায়। এসব আমাদের দেশে এখনো আসে নি, কখনো আসবে কীনা জানি না কারণ প্রকাশনা কখনও শিল্প পর্যায়ে আসবে বলে আমার মনে হয় না।
রামেন্দু মজুমদার-ফেরদৌসি মজুমদার, বাপ্পা মজুমদার-একজন মুসলিম অভিনেত্রী বউ, অভিজিত রায়-বন্যা আহমেদ, আশরাফুল ইসলাম ও তার স্ত্রী, চয়ন ইসলাম ও তার সংগীতশিল্পী স্ত্রী এদের সাথে আপনি বৈবাহিক কারনে যে সমস্যার কথা বলেছেন, সেই সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলার ভীষন ইচ্ছে বহুদিন থেকে ।
অপেক্ষায় থাকলাম আপনার লেখা পড়বার।
অত্যন্ত উচ্চশিক্ষিত ও প্রগতিশীল মানুষের মনও ধর্মান্ধতা এবং স্ববিরোধীতায় ভরা থাকে। অদ্ভুত ব্যাপার। বইটির পাঠ-প্রতিক্রিয়া এখানে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
আজকাল লিখতে ও পড়তে জানা মানুষের সংখ্যা অনেক। সাথে আধুনিক টেকনোলোজী ব্যবহার করে আরাম আয়েশ ভোগ করা। সেটাকে জাস্টিফায়েড করতে নিজেকে পরিচয় দেয় “মডারেটেড মুসলিম” বলে।
ভাল থাকবেন নীলাঞ্জনা
@ তানবীরা,
ফেরদৌসি মজুমদারকে জীবনে একবার দেখেছিলাম সিলেট অডিটোরিয়ামে আব্দুল্লাহ আল মামুনের সেনাপতি নাটকে। আজ যা জানলাম তা আমার কল্পনারও অতীত। অবশ্য শাবানা চরিতও আমরা ইতোমধ্যে দেখেছি, তাই খুব একটা অবাক হওয়ার কিছু নেই।
শাবানা যেহেতু দুটো এম।এ করেনি সেই যুগে আর আন্তঃধর্মীয় বিয়েও ছিলো না তাই তাকে নিয়ে আমাদের কোন আশাও হয়তো ছিলো না। ফেরদৌসী আমাকে রীতিমত আশাহত করেছে।
ভাল থাকবেন। আপনার নতুন লেখার অপেক্ষায় ।