বসন্তে আমি মনোযোগ দিয়ে ধনিয়া পাতা চাষ করার চেষ্টা করি । মনোযোগ দিয়ে ধনিয়া পাতা চাষ করলে দশ বারোটা ধর্মগ্রন্থের চাইতে বেশি জীবন ও জগত নিয়ে জানা যায় । এই যেমন ধরেন, আমি ধনিয়া পাতার বীজ লাগানো শুরু করি গড়পড়তা মার্চের শেষের দিকে । মোটামুটি ৩ মাসে এক ব্যাচ শেষ হয় । দ্বিতীয় ব্যাচ পর্যন্ত ঠিকভাবেই ফলন হয় । তৃতীয় ব্যাচ যখন অক্টোবরে বীজ লাগাই, সেগুলোর চারা একটু শক্ত হতে হতে কোন কোন বছর শুরু হয়ে যায় শীতের প্রকোপ । ধনিয়া পাতা শীত এবং আলোর স্বপ্লতা সহ্য করতে পারে না । কিন্তু তাই বলে শীতের শত্রুতায় কি সে নিজেকে এলিয়ে দিয়ে মারা যায় ? না । সে পাল্টা যুদ্ধ করে । প্রথম, দ্বিতীয় ব্যাচের ধনিয়া পাতা যেখানে তিনমাসে প্রায় ১২-১৫ ইঞ্চির মত লম্বা হয়ে পরিপুষ্ট হয়ে তারপরও রেখে দিলে ফুল ছড়ায়, সেখানে আগাম শীতের প্রকোপে পড়া এই ব্যাচ কোনরকমে ৪-৫ ইঞ্চি হওয়ার পরেই শিরদাঁড়া শক্ত করে ফুল ছড়িয়ে দেয় । আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখে , নিজে মরে যায় যাক, তবু জীবনের সিলসিলা যেন তার চলমান থাকে ।
আমি ঘৃণার্হ্য প্রাণী মানুষ, তার এই যুদ্ধের স্পিরিটকে সম্মান না জানিয়ে একটু শক্ত হলে তুলে কেটেকুটে ফ্রিজে রেখে দিই । প্রজাতি হিসাবে তাই মানুষের চাইতে আমার ধনিয়া পাতার উপর বরং শ্রদ্ধা বেশি ।
বিভিন্ন রকমের সূচকের রঙে রাঙ্গিয়ে পৃথিবীর মানচিত্রের দিকে গভীর তাকিয়ে থাকলে মানুষের প্রজননেও এমন একটি চিত্র ভেসে উঠবে । যেমন ধরা যাক, পৃথিবীর কোন অংশগুলোতে মানুষের জীবনের উপর ঝুঁকি সবচে বেশি ? কোন অংশগুলোতে জীবনের নিরাপত্তা নাই । ঠিক সেই অংশগুলোতে গড় উর্বরতার হারও সবচে বেশি । এই যে প্রতিকূল পরিবেশে নিজের জীবনের নিশ্চয়তা নাই তখন, তড়িঘড়ি করে পরবর্তী প্রজন্ম রেখে যাওয়ার চেষ্টা , সরব বা নীরব, কোমল বা ডেয়ারিং , জীবন-গাছের সমস্ত প্রজাতিতেই অল্পবিস্তর দেখা যায় । যে প্রজাতি প্রজনন করে যৌন উপায়ে , তার মধ্যে এই প্রক্রিয়ার সেকেন্ডারি লক্ষণ হবে জীবনের জন্য প্রতিকূল পরিবেশে যৌনতা নিয়ে আগ্রহ বেড়ে যাবার মতো আপাতদৃষ্টিতে উদ্ভট একটি অবস্থা ।
এই প্রক্রিয়ার বিবর্তনী ব্যাখ্যা যেদিন আমি বুঝতে পারি তার পর থেকে জীবনকে দেখার দৃষ্টি অমোচননীয়ভাবে পাল্টে গেছে আমার । এই সত্যিকারের এপিফিনি আসে সম্ভবত রিচার্ড ডকিন্সের সেলফিশ জিন পড়তে পড়তে অথবা ম্যাট রিডলির দ্য রেড কুইন । ঘটনা হচ্ছে গত শতাব্দীর ৭০ দশকের শুরু থেকে নতুন-ডারুইনিস্টরা যখন বিভিন্ন গাণিতিক মডেলের মাধ্যমে প্রথমবারের মত বুঝা শুরু করেন যে বিবর্তনের একক , ইন্ডিভিজুয়াল, গ্রুপ, প্রজাতি এগুলোর কিছুই না, বরং একেকটা জিন ; তখন থেকে জীববিজ্ঞান নিজেই বিশাল-আকারে পাল্টে যেতে থাকে । পদার্থবিদ্যায় এর তুলনা হতে পারে নিউটনিয় গতিবিদ্যা থেকে কোয়ান্টাম গতিবিদ্যায় উত্তরণের প্রক্রিয়া । এর চাইতে কম কিছু না ।
ফাইন, বুঝলাম যে বিবর্তন জিনকেন্দ্রিক । কিন্তু তাতে কি ? আসলে তাতেই বিশাল কিছু । দুনিয়া উল্টেপাল্টে যাবার মত কিছু । তাতে, এতএতদিন যে আমরা জেনে এসেছিলাম উপযুক্তরা টিকে থাকে, বুদ্ধিমানরা, সুন্দররা, ধূর্তরা, বলবানরা, দূরন্তরা, রোগহীন দীর্ঘায়ুরা ইত্যাতি ইত্যাদি তার সবই বুলশিট । যত সূন্দর, যত বলবান, যত ধূর্ত ধুরন্ধর আর শতায়ু হও প্রজননধারা বজায় রাখতে না পারলে বিবর্তনের দুনিয়ায় জীবনের ষোল আনাই মিছে । অর্থাৎ, অর্থাৎ, অর্থাৎ ইন্ডিভিজুয়াল জীবের দিক থেকে টিকে থাকার চাইতে প্রজনন গুরুত্বপূর্ণ । মানুষের ক্ষেত্রে, যেহেতু সে যৌনজননকারী প্রাণী,সেহেতু এর অর্থ দাঁড়ায় খাবারের চাইতে , শারিরীক নিরাপত্তার চাইতে, বৈষয়িক সফলতার চাইতে যৌনজীবনের সফলতার প্রতি মানুষের জৈবিক বিবর্তনীয় চাপ থাকবে বেশি ।
একারণে যৌনতার ইচ্ছা, যৌন ঈর্ষা, এবং যৌনতার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা এ জিনিসগুলো আফ্রিকার জঙ্গল থেকে শুরু করে সিলিকল ভ্যালি পর্যন্ত সব স্তরের মানব সমাজের বিভিন্ন সম্পর্কের মধ্যে, মানুষের চিন্তা-চেতনা জগতবীক্ষার মধ্যে অমোছনীয় ছাপ ফেলে আছে । প্রজননের দুর্দমনীয় ইচ্ছা আবার নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে গিয়ে গ্যামেটের কার্যপ্রক্রিয়ার পার্থ্যক্যের জন্য , সেকেন্ডারি আচরণে প্রকাশ পায় আলাদাভাবে । পুরুষের একক প্রজনন কোষের মূল্য যেহেতু শূণ্যের কাছাকাছি, তাই তার সফলতা নির্ভর করে কত বেশি সংখ্যায় ও কত ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেয়া যায় তার উপর । নারীর গ্যামেট যেহেতু মাসে একবারই অল্পসময়ের জন্য সক্রিয় থাকে আর একবার সফল ফার্টিলাইযেশনের পর গর্ভধারণ এবং অল্পবয়সের শিশুকে বাঁচিয়ে তোলার জন্য গড়পড়তা তিন-চার বছর সময় চলে যায়, সেহেতু নারীর প্রজনন সফলতা নির্ভর করে ভালো ও নির্ভরযোগ্য সংগী বাছাইয়ের উপর ।
সোজা বাংলায় এর অনুবাদ দাঁড়ায়, পুরুষ চাইবে যত বেশি সংখ্যক নারীর সাথে যৌনমিলন করতে ; অন্যদিকে নারী চাইবে গুণগতমানে ভালো এবং নির্ভরযোগ্য কারো সাথে যৌনমিলন করতে । যেহেতু গুণগতমানে ভালো এবং একইসাথে নির্ভরযোগ্য পুরুষ পাওয়ার সম্ভাবণা কম –কারণ পুরুষেরর ইচ্ছা আবার বেশি সংখ্যক নারীর সাথে যৌনমিলন করা- সেহেতু নারীর জন্য উপায় হচ্ছে নির্ভরযোগ্যতা ও গুণগত মান এই দুই জিনিস দুই বা ততোধিক পুরুষের কাছ থেকে আদায় করা ।
দুই বৈশিষ্ট্য দুই ধরণের পুরষের কাছ থেকে আদায় করার এই নারী প্রবণতা পুরুষের মধ্যে তৈরী করে অবিশ্বাস, যেটার গালভরা বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে cuckoldry paranoia. সহজ কথায়, পুরুষ চাচ্ছে তার দেয়া নির্ভরতা নিয়ে নারী যেনো অন্যকোন পুরুষের গ্যামেটের মাধ্যমে সন্তান ধারণ না করে । অর্থাৎ তার রিসোর্স ব্যাবহার করে অন্য পুরুষের সন্তান যেনো বড়ো না হয়, কারণ তা তার নিজের জিনের জন্য পুরোই বাঁশ খাওয়া । মানুষের কাজিন শিম্পাঞ্জি , গরিলা এবং মানুষের মধ্যেও এই কাকলর্ড্রি প্যারানয়ার প্রতিক্রিয়ায় পুরুষের মধ্যে তৈরী করে এক বর্বর আচরণ । অন্য পুরুষের বীজ থেকে জন্ম নেয়া বলে সন্দেহ হলে নিজের সংগীর শিশুকে হত্যা করার প্রবণতা । নারীর পক্ষে অনেক সময় ও যত্ন নিয়ে লালন করা সন্তান এভাবে বেঘোরে মারা যাওয়াটা তার জিনের জন্য , তার নিজের প্রজনন সফলতার জন্য বিশালবড় হুমকি ।
এই হুমকির মোকাবেলায় নারী যে সিস্টেম ব্যাবহার করে তার বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে infanticide prevention. অর্থাৎ কিভাবে সন্দেহপ্রবণ পুরুষের কাছ থেকে তার শিশুকে রক্ষা করা যায় । একেক এইপ প্রজাতি একেকভাবে এই সমস্যার মোকাবেলা করে । বনোবোদের মধ্যে দেখা যায় অবাধ যৌনতা । যার ফলে কোন পুরুষের পক্ষে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব না কোন শিশু আসলে তার নাকি অন্য কার ঔরসজাত । ফলে বাধাহীনভাবে শিশুহত্যা করতে গেলে নিজহাতে নিজের শিশু হত্যা হয়ে যাবে । সেজন্য বনোবো পুরুষ শিশুহত্যা থেকে বিরত থাকে । শিম্পাঞ্জিদের ক্ষেত্রে দেখা যায় কোন নিউক্লিয়ার কাপল না হয়ে কিছু সংখ্যক পুরুষের একটা দল কিছুসংখ্যক নারীর একটা দলের সাথে নন-এক্সক্লুসিভ প্রজনন করে । ফলে শিশুদের রক্ষা করার দায়িত্ব পুরো দল মিলে নেয় । গরিলাদের ক্ষেত্রে দেখা যায় কঠিন বহুপত্নীক ব্যাবস্থা । আলফা মেইল কয়েকটি নারীর সাথে প্রজননের একচ্ছত্র অধিকার নেয় এবং মেইল ও ফিমেইল দুইপক্ষই এই সিস্টেম কড়াভাবে মেনে চলার চেষ্টা করে । এক্ষেত্রে নারী তার সংগীর গুণগত মান ও নির্ভরযোগ্যতা এক পুরুষের কাছ থেকেই আদায় করে নেয় ।
মানুষের মেইটিং সিস্টেমে এসে এর সবকিছুই হযবরল লেগে গেছে । মানুষে সাধারণভাবে আলফা মেইলের ধারণা উঠে গেছে । আবার অবাধ যৌনতার সিস্টেমও নাই । তাই সমাজ ও সময়ের অবস্থা অনুযায়ী কাকলর্ড্রি প্যারানয়া আর ইনফ্যান্টিসাইড প্রিভেনশনের টানাপোড়েনে মানুষের মেইটিং সিস্টেম নানান ধরণের জটিল মিথস্ক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে যেতে এখনো কোথাও থিতু হতে পারে নি । তার উপর সংস্কৃতি ও বিশাল আকারের সমাজ, রাস্ট্র এইসবের কারণে শিশুর নিরাপত্তা ও নির্ভরতার অন্য অনেকরকম উপায় বের হওয়াতে কোন একটা নির্দিষ্ট মেইটিং সিস্টেমের দিকে থিতু হওয়ার জন্য বিবর্তনীয় চাপও নেই ।
এই অস্থিরতাই মানুষের সমাজে যৌনতা নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ, উদ্দীপণা, বালখিল্যতা, নিরীক্ষা, মুখরোচক গালগল্প ও প্রতারণা বিপরীত প্রতারণার উৎস । তাই এত শতাব্দী পেরিয়ে, এত ধরণের সভ্য সমাজ তৈরী হয়ে, গত শতকের ষাটের দশকের যৌনতা বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে গিয়েও , এখনো সেক্সুয়াল স্ক্যান্ডালে আমাদের মনোযোগ চলে যায় অবশ্যাম্ভাবীভাবে ।
সম্ভবত এ কারণেই আসিফ নজরুল, আল-মাহমুদ আর হুমায়ুন আহমেদ আর প্রভাতে এখনো আমাদের আগ্রহ জাগে , কৌতুহল জাগে ।
শুরু করলাম ধনিয়া পাতার মত মহান প্রজাতি নিয়ে, শেষ করলাম হোমো ছাগলাইটিস var. Asif Nazrulaitis দিয়ে । ড্যামিট ।
বিবর্তন নিয়ে পড়তে শুরু করতে চাই, আমার বায়োলজি পড়া নেই দেখে বেশিরভাগ সময়ে এ বস্তু এড়িয়ে গেছি, কিন্তু আপ্নার লেখা পড়ে ব্যাপার স্যাপার ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে। এমন অনেক কিছু যা আমি কিছু না পড়ে নিজের বা আশে পাশের মানুষের আচরণ দেখে ধারণা করেছি সেসবের কিছু কিছু প্রতিফলন দেখতে পেয়ে আগ্রহ বেড়ে যাচ্ছে। জীবনে প্রথম্বারের মত আফসোস হচ্ছে কেন বায়োলজি পড়ি নাই।
খুব ভালো। লেখা, মন্তব্য, প্রতি মন্তব্যও বেশ শক্তিশালী। শাবাশ!
পাঞ্চ লাইনটা মারাত্বক
জটিল। এরকম লেখা আরও চাই।
দুর্দান্ত একটা টুইস্টেড গল্পের মতো করে পাঠককে সাথে নিয়ে গেলেন, তারপর যে পাঞ্চ লাইনটা দিলেন, অসাধারণ!
অসতী-ভীতি এবং শিশুহত্যারোধ এর টানাপোড়েন নিয়ে আপনার বর্ণনাটুকু খুবই ভালো লেগেছে। কিন্তু শেষে যে সিদ্ধান্তগুলো টেনেছেন সেটা নিয়ে কিছু সমালোচনা আছে আমার।
অন্য প্রাইমেটদের প্রজনন পদ্ধতি এক জায়গায় একেবারে থিতু হয়ে গেছে, আর মানুষেরটা থিতু হয়নি এটা বোধহয় সরলীকরণ হয়ে গেল। শিম্পাঞ্জি বা গরিলাদের মধ্যেও কি বৈচিত্র্য, প্রতারণা দেখা যায় না? উদাহরণ: হামাড্রায়াস বেবুন দের কঠোর হারেম পদ্ধতি আছে; হারেমের কোনো নারী যদি অন্য কারো প্রতি আকৃষ্ট হয় তাহলে পুরুষ তাকে কঠোর শাস্তি দেয়। তার মানে ওদের ওখানেও অন্তত পরপুরুষে (পরনারীতে তো বটেই, কারণ ওরা অন্যের নারী ছিনিয়ে নেয়ার জন্য যুদ্ধ পর্যন্ত করে) আকৃষ্ট হওয়ার ব্যাপারটা আছে, মানুষের মতোই। এক পুরুষের অধীনে একাধিক নারী সুখে-শান্তিতে বসবাস করছে ব্যাপারটা তেমন না। বেবুনরা সবাই সবার সাথে সেক্স করে, তাদের কাছে সেক্সটা প্রায় টাকাপয়সার মতো, ওদের লেনদেনের মুদ্রা হচ্ছে সেক্স, কিন্তু এমন সমাজ তৈরির কারণ অসতীভীতি-শিশুহত্যারোধ ই কি না সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত নই। আমার ধারণা অন্য প্রজাতিতেও খুঁজলে অনেক বৈচিত্র্য পাওয়া যাবে। মানুষের ক্ষেত্রে বৈচিত্র্যটা অনেক বেশি, যা বিস্ময়কর নয়, কারণ মানব মস্তিষ্ক খুবই জটিল, এবং মানুষ সবকিছুতেই মহাবৈচিত্র্যময়, শুধু যৌনাচারেই নয়। মোদ্দাকথা “প্রতারণা বিপরীত প্রতারণা” সব প্রজাতিতেই আছে।
আর যদি মানুষের প্রজনন পদ্ধতিতে থিতু হওয়ার প্রবণতা সবচেয়ে কম হয়েও থাকে, তারপরও মানব সমাজে যৌন-সুড়সুড়ির কারণ হিসেবে সেটাকে দায়ী করা যায় কি না সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত নই, আপনার লেখাটি থেকে সেরকম কোনো সিদ্ধান্ত টানতে পারছি না। 🙂
“বেবুনরা সবাই সবার সাথে সেক্স করে”; দুঃখিত, এখানে বনবো হবে।
থিতু হলেও ব্যাপারটা গতিশীল সাম্যাবস্থা । আর মানুষেরটা এখনো কোন সাম্যাবস্থায় পৌছায়নি । আমার মতামত এইটুকু । গতিশীল সাম্যাবস্থাতেও অবশ্যই গতি এবং এদিক সেদিক টানাপোড়েন অবশ্যই থাকে । কিন্তু অন্য এইপদের বেলায় যেটা ঘটেছে তা হচ্ছে পুরো প্রজাতিতে একটা নির্দিষ্ট ধরণের মেইটিং সিস্টেম দাঁড়িয়ে গেছে । সেই মেইটিং সিস্টেমের ভিতরে থেকে যতটুকু ওলটপালট হয় ততটুকু । যেমন হারেম সিস্টেম যেসব প্রজাতিতে আছে , সেসব প্রজাতিতে সবসময়ই হারেমহীন পুরুষের জন্য একটা ঝুঁকিপূর্ণ সুযোগ থাকে, তা হচ্ছে হারেম-মালিককে হত্যা বা বিতাড়িত করে হারেমের দখল নেয়া । এই সুযোগ থাকার কারণেই হারেম সিস্টেমের এইপে নারী-পুরুষের অনুপাত কিন্তু ১-১ থেকে কোনদিকে সরে যায়নি । কারণ হারেমের দখল নেয়াটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, কিন্তু নিতে পারলে তার পুরষ্কারও সেই অনুযায়ী বিশাল । এজন্য অয়লারের সূত্রানুযায়ী নারী ও পুরুষ দুই সেক্সের বাচ্চা জন্ম দেয়ার মোট ফলাফল একই । মানুষের ক্ষেত্রে কিছু কিছু জায়গায় হারেম সিস্টেম এখনো টিকে আছে । কিছু কিছু জায়গায় কঠোর মনোগ্যামি । কিছু কিছু জায়গায় লুজ মনোগ্যামি । আবার অন্যান্য জায়গায় অন্য রকম সিস্টেম ।
না, এটা ঠিক মুদ্রার মত না । ব্যাপারটা মানব-কেন্দ্রিক ভাষায় বললে সম্ভবত বলতে হচ্ছে ভাষার মত । তাদের কাছে সেক্সটা কথোপকথনের মত । আমরা যেমন আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে অপ্রয়োজনীয় শত্রুতার অবসান করি । তারা তেমন করে দুইপক্ষের মধ্যে টেনশন রিলিজ করে । আর তাদের এমন সমাজ তৈরীর কারণ যে কাকলর্ড্রি প্যারানয়া ও ইনফেন্টিসাইড প্রিভেনশন তা না । মানুষ সাধারণত থিওরি অফ মাইন্ড দিয়ে সবকিছু বুঝতে চায় । এজন্য প্রাকৃতিক ঘটনার মধ্যেও আমরা সাধারণত উদ্দেশ্য এবং এক্সিকিউশন খুঁজি । এজন্য এভাবে লিখতে হয়েছে । আদতে ঘটনা এমন না । এমন না যে, প্রথম বনোবরা ঠিক করলো আসো আমরা সবাই মিলে সবার সাথে সেক্স করি তাহলে আর কারো বাচ্চা কেউ মারবে না, কে কার বাচ্চা এটা নিয়ে পুরুষরাও নিশ্চিন্ত হতে পারবে না । তাদের বিবর্তনীয় ইতিহাসের নিশ্চয়ই অনেকরকমের এক্সপিরিমেন্ট ও টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়ে গিয়ে এরকম সমাজ-ব্যাবস্থা আসার পরে স্থিতু প্রজাতি হিসাবে তারা টিকতে পেরেছে । আমরা ব্যাখ্যা করার সময় ওভাবে বলি । যেমনভাবে আমরা জিনকে স্বার্থপর বলি, উদ্দেশ্যপরায়ণ বলি । এটা কেবল মানবিক কমিউনিকেশনের ফল ।
নাহ । এখানে ডিম আর মুরগী আগেপরে হয়ে গেছে । মানুষের জটিল সমাজ-ব্যাবস্থা, যৌন-ব্যাবস্থার কারণেই সেখানে সাফল্য পাওয়ার জন্য নানান রকম চিন্তা-ভাবনা ও কৌশল, চিন্তার দরকার হয় দেখেই মানুষের মস্তিষ্ক জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠেছে । কেউ কেউ এমনকি বলে থাকেন যে একগামিতা মানুষের পক্ষে শারীরবৃত্তীয়ভাবে অসম্ভব, কিন্তু অবস্থার প্রয়োজনে একগামিতাতে টিকিয়ে রাখতে, একটামাত্র সংগীকে দীর্ঘসময় ধরে রাখতে যে পরিমাণ মানসিক দক্ষতার দরকার হয় , তা করতে গিয়েই মানুষের মস্তিষ্ক বড় হয়ে উঠেছে । এর মধ্যে বড় একটা দক্ষতা হচ্ছে ভাষা ব্যাবহারের দক্ষতা, যার জন্যও মস্তিষ্কের একটা বিশাল অংশ খরচ হয় ।
এটা আমার অভিমত । অবশ্যই হুট করে টেনে আনা অভিমত না । কিছু পড়াশোনা এবং পর্যবেক্ষণ থেকে দেয়া অভিমত । আপনার অন্যমত অবশ্যই থাকতে পারে । সেক্ষেত্রে আপনার মতামতের ব্যাখ্যাও যুক্তি দিলে সেটাও সবাই মিলে যাচাই করা যায় ।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ । সিরিয়াস আলোচনা করতে পেরে প্রীত হলাম । সিরিয়াস পাঠকের বড় অভাব ফেইসবুকে ।
‘থিতু’ যেহেতু একটা অসংজ্ঞায়িত শব্দ ছিল সে কারণে আপনার লেখাটাকে বেশি অনঢ় মনে হয়েছিল। এখন গতিশীল সাম্যাবস্থার কথা বলাতে কিছুটা নমনীয় হলো। আর বনবো দের সেক্সকে লেনদেনের মুদ্রার সাথে তুলনা কিন্তু আমি করিনি, এটা একজন বনবো বিশেষজ্ঞের তৈরি প্রামাণ্যচিত্রে শুনেছিলাম, এখন নামটা মনে আসছে না, মনে হলে প্রামাণ্যচিত্রটার লিংক দিয়ে দিব।
আমার কিন্তু কোনো ‘অন্যমত’ নেই। যেহেতু আমার কোনো ‘মত’ নেই সেহেতু কোনো যুক্তিও নেই। আমার কথা ছিল শুধু এই যে, আপনি অসতীভীতি-শিশুহত্যারোধ থেকে কিভাবে যৌন-সুড়সুড়ি প্রতিপাদন করা যায় সেটা বলেননি। না বলেই আপনি একটাকে আরেকটার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এ কারণেই আপনার লেখা থেকে আপনার শেষ সিদ্ধান্তে পৌঁছানো আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। কিন্তু আমার ভিন্ন কোনো সিদ্ধান্তও নেই। আমি আপাতত এ ব্যাপারে সিদ্ধান্তহীন।
সেটা ঠিক। মানুষের মস্তিষ্ক যে বিবর্তনীয় উপায়েই গঠিত হয়েছে সেটা আমার উল্লেখ করা উচিত ছিল। কিন্তু তারপরও, জটিল মস্তিষ্কের কারণে মানুষ অন্য যেকোনো প্রাণী থেকে বেশি কিছু ক্ষমতা অর্জন করেছে। এই ক্ষমতাগুলোর অনেক ব্যাপার স্যাপারই এখন পর্যন্ত পুরোপুরি জীববিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করা যায় না। যৌন-সুড়সুড়ি’র মধ্যেও তেমন ব্যাপার নিশ্চয়ই আছে। একদিন হয়ত সবকিছুকেই পুরোপুরি জীববিজ্ঞানের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা যাবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেটা সম্ভব হয়নি। পদার্থবিজ্ঞান গালিলেওর সময়ে যেরকম কাঁচা ছিল, মানুষের মন-ভাষা-সমাজ বিষয়ক প্রাকৃতিক বিজ্ঞানসমূহ বর্তমানে সেই পরিমাণ কাঁচা। এ কারণেই আমার মতে এ বিষয়ক সরলীকরণ এড়িয়ে চলা উচিত। অবশ্য হয়ত ব্যাপারটা সরলীকরণ নয়, হয়ত অসতীভীতি-শিশুহত্যারোধ এর টানাপোড়েন থেকে যৌন-সুড়সুড়ি প্রতিপাদন আসলেই নিয়মতান্ত্রিক ভাবে কোনো বিজ্ঞানী করে দেখিয়েছেন। আমি ঠিক জানি না। করে দেখাননি ধরে নিয়েই এই কথাগুলো বললাম।
আমার পড়া এটা আপনার দ্বিতীয় লেখা এবং দুটোই বিষয় বৈচিত্র্যে, ভাষায়, উপস্থাপন কৌশলে ও চেতনায় অনন্য। শুধু একটু আপত্তি—
সম্ভবত এ কারণেই আসিফ নজরুল, আল-মাহমুদ আর হুমায়ুন আহমেদ আর প্রভাতে এখনো আমাদের আগ্রহ জাগে , কৌতুহল জাগে
কবি আল-মাহমুদ সম্বন্ধে সাম্প্রতিক খবরটির কিন্তু সত্যতা মিলেনি। তাই নামটি মুছে দেবার অনুরোধ করছি।
আমি ঠিক এই ঘটনাগুলোর সত্য মিথ্যা নিয়ে কোন মন্তব্য করতে চাই নাই । সেই মুহুর্তে যে কয়টা মনে আসছে সেগুলো পাশাপাশি লিখে দিয়েছি । আমার বর্ণনার জায়গা ছিলো ঐখানে যে কেন এমন কিছু শুনলেই আমরা কৌতুহলী হয়ে উঠি অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা না করে । সেটা সত্য ঘটনার ক্ষেত্রে যেমন, অসত্য বা ভিত্তিহীন ঘটনার ক্ষেত্রেও তেমন ।
আপনার প্রবন্ধটির শিরোনামের জন্য একটি পরামর্শ: “যৌনতা – এক অপ্রতিরোধ্য আকাঙ্খা”
রিচার্ড ডকিন্স-এর এই উক্তিটি আমার খুব পছন্দের – “জীন নাম পরিচিত স্বার্থপর অনুগুলিকে সংরক্ষণের নিমিত্তে আমরা অন্ধভাবে নির্মিত জীবিত যন্ত্র – রোবট যান” (“We are survival machines – robot vehicles blindly programmed to preserve selfish molecules known as genes”)
খুবই ভালো লাগলো।
আপনার ‘অর্থাৎ অর্থাৎ অর্থাৎ’ এর বহুব্যবহার একটা চমৎকার আবহ তৈরি করেছে।
আসিফ নজরুল আর আল-মাহমুদ স্মপ্রতি কী করেছেন আমার ঠিক জানা নেই বলে হোমো ছাগলাইটিস var. Asif Nazrulaitis অংশটুকুর জটিলতা ঠিকমতো বুঝতে পারলাম না। ঃ)
দারুণ, দারুণ লেখনি!! এই লেখা পড়ে আপনার পারমানেন্ট সাবস্ক্রাইবার হয়ে গেলাম। খুবই সুখপাঠ্য সেই সংঙ্গে চিন্তাজাগানিয়া হয়েছে।
গণযৌনকৌতূহলের তালিকায় সাম্প্রতিক সেনসেশন রুবেল-হ্যাপি বাদ পড়েছে। 😀
আপনার কিছু লেখা পড়ে আমিওতো আপনার ফ্যান হয়ে গেলাম ।
যদিও বিজ্ঞান আমাদের সত্যের দ্বার উন্মোচন করে দেয় তবুও আমার আজ বিজ্ঞানের সভায় বসে মনে মনে স্থির করে নিই যে আমি যেখানে বসে আছি তার ভিত্তিই হচ্ছে ধর্ম। এদের ছদ্মবিজ্ঞানী বলে সম্ভোধন করা যায়। বিজ্ঞান এর আদলে আজ আমরা জিন এর মাধ্যমে কিভাবে হেরেডিটি রক্ষিত হয় এবং বিবর্তনের মাধ্যমে মানুষ জাতির অন্তিম যাত্রা কোথায় যেতে পারে তা উপলব্ধি করতে পারি। কিন্তু আজও আমরা আমাদের ভাই- বোনদের বলতে পারি না এ সত্যগুলো। কেননা, যে শিক্ষক তাদের শেখায় তারা কেবল ধর্ম সমর্খিত বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করেন। এবং এর বাইরে অন্য সত্যগুলোকে পিথাগোরাস ও এর অনুসারীদের মত লুকানোর চেষ্টায় ব্রত থাকেন।
লেখাটি খুবই ভাল লাগলো ।
আমি কোন দিন দেখি নাই একটা মোরগের পিছে একটা মুরগী দৌড়াইতেছে
এখন কেউ কইতারে … মুরগী শেষ পর্যন্ত স্যারেন্ডার করে ক্যা?
চমৎকার একটি প্রবন্ধ দূরের পাখি! কিন্তু প্রথমেই শিরঃনামটি দেখে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিলাম! কিন্তু শেষের Nazrulaitis শব্দটি দৃষ্টি আকর্ষন করে! ফিরে আসি প্রথমে। পড়া শুরু করি। এখন মনে হচ্ছে না পড়লে মিস করতাম! অর্থ দাঁড়ালো শিরঃনামটি কেনো যেনো পছন্দ হয়নি! না অবশ্যই শব্দ ব্যবহার কারণ নয়, খুব সাদামাটা আটপৌড়ে মনে হচ্ছে কিনা……! আরোও লিখুন, আপনার লেখা সত্যিই দারুন! আমার ভালো লেগেছে!
শিরোনাম দেবার ক্ষেত্রে আমি বড়ই দুর্বল । কারণ আমার চিন্তার ইউনিট একটা ‘ভাবনা’ । আমি একটা প্রবন্ধ লিখবো বা একটা গল্প লিখবো , এইভাবে ভাবতে পারিনা । এজন্যই কিছু একটা লিখে ফেললে সেটার নাম দিতে পারিনা । এটার কোন ভালো শিরোনাম মনে আসলে সাজেস্ট করতে পারেন ।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ । তাও নজরুলাইটিস দিয়ে আপনাকে ধরে আনা গেছে , এতে খুশি হলাম । হা হা ।
বিজ্ঞানের অজানা অধ্যায় গুলী আরো আগেই জানা উচিৎ ছিল। মানব জীবনকে পুরোভাবে জান্তে হলে বিবর্তন সম্পর্কে অবশ্যই জানতে হবে।এই জানার সুযোগ থাকা উচিত স্কুল লেভেল থেকেই।
আসলেই কি তাই? আমার মনে হয় না জীবের প্রজনন-সহায়ক বৈশিষ্টগুলোকে বা ফিনোটাইপগুলোকে এভাবে অগ্রাহ্য করা যায়। জিনোটাইপ আর ফিনোটাইপ দুটোকেই গোনায় নিতে হবে, কেননা এরা পরস্পরের পরিপূরক। একটি জীব তো সরাসরি জিন-প্রোফাইল দেখে প্রজনন-সঙ্গী নির্বাচন করে না; বরং সঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে শারীরিক ও চরিত্রগত গুনাবলীই প্রধান ভূমিকা পালন করে। যেহেতু এই গুনগুলো আবার জিন দিয়ে প্রভাবিত তাই শারীরিক ও চরিত্রগত গুনের ভিত্তিতে প্রজনন-সঙ্গী নির্বাচন আসলে সরলভাবে দেখলে ভাল জিনেরই নির্বাচন। বংশপরম্পরায় জিনোটাইপের পরিবর্তন হলেও তা যদি ফিনোটাইপে পরিবর্তন না আনে তাহলে তাহলে তা জীবের বিবর্তনে সহায়ক হবে না।
বেশ কিছু প্রশ্ন জেগেছে মনেঃ প্রজাতি হিসাবে মানুষের বিবর্তনগত ভবিষ্যত কি? আমরা বংশবৃদ্ধির জন্য যে সামাজিক প্রথা তৈরী করেছি সেগুলো কি বিবর্তন সহায়ক? একজন সঙ্গীর প্রতি বিশ্বস্ত থাকা সামাজিকভাবে প্রশংসনীয় গুন, কিন্তু তা কি জেনেটিক বৈচিত্র বাড়ানোর জন্য বাঁধা? বিজ্ঞান-সম্মত আর সম্পূর্ণ যৌক্তিক কারনেই নিকটাত্নীয়দের মধ্যে প্রজনন আমাদের সমাজে নিরুৎসাহিত করা হয়। অন্যদিকে, এর ফলে জিনের রিসিসিভ পরিবর্তনগুলো হারিয়ে যেতে পারে; দীর্ঘমেয়াদে বিবর্তনের উপর এর কি প্রভাব পড়তে পারে? সাধারণতঃ প্রজননগতভাবে বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠি নতুন প্রজাতির উদ্ভবে সাহায্য করে; আমাদের সভ্যতার বর্তমান অবস্থায় বিবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় সময় ধরে এরকম বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠি পাওয়া কি আদৌ সম্ভব? তবে বিবর্তনের সময়-স্কেল বিশাল, এই বিশাল সময় ধরে টিকে থাকলে মানুষের বর্তমান সামাজিক প্রথায় পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী, এমনকি বদলে যেতে পারে প্রজনন পদ্ধতিও। ভবিষ্যতে উল্কাপাতের মতো একটি প্রাকৃতিক বিপর্যয় (থাক, বিবর্তনের দরকার নাই!!!) বা অন্যগ্রহে মানুষের বসতি হতে পারে পরবর্তী বিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক।
যে লেখা ভাবায় তা গুরুত্বপূর্ণ; আপনার লেখায় ভাবনা-চিন্তার খোরাক আছে!
এখানে ব্যাপার হচ্ছে আমরা যাদের ব্যাকগ্রাউন্ডে বায়োলজি শিক্ষা নেই, তারা সাধারণভাবে বিবর্তন বুঝলেও ভুল বুঝতাম, যে বিবর্তন ফিনোটাইপের উন্নতি করে । মানে সুন্দর, চতুর, দ্রুত এইসব গুন যেগুলো তার টিকে থাকার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়, সেগুলো বুঝি বিবর্তনের ফলে ধীরে ধীরে ভালোর দিকে যায় । কিন্তু আসলে জিনের দৃষ্টি থেকে দেখলে গোটা প্রাণীর শরীর , তার সৌন্দর্য্য বা দ্রুতি নিয়ে জিনের কোন কেয়ার থাকার কথা না । বরং নিজেকে দ্রুত বিলীন করে দিয়ে হলেও জিনের টিকে থাকার ক্ষেত্রে যদি সুবিধা হয় তাহলে প্রাণীর মধ্যে সেই নিজেকে বিলীন করে জিনগুলোকে পাস করার জন্য যে জিন , সেই জিনের ফ্রিকোয়েন্সি বাড়বে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ।
আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে ইন্ডিভিজুয়াল জীবের লেভেল যে সেক্সুয়াল সিলেকশন হয় সেটা জিনের সিলেকশনের ক্ষেত্রে অনেকগুলা পথের মধ্যে কেবল একটা পথ , একমাত্র না । জিনের লেভেলে অনেক রকমের পদ্ধতির মাধ্যমেই একটা নির্দিষ্টি জিনের সংখ্যায় বিস্ফোরণ ঘটতে পারে, ফিনোটাইপে তেমন কোন দৃষ্টিগ্রাহ্য প্রভাব না ফেলেই । রবার্ট ট্রিভার্সের দ্য লজিক অ লাইং নামে একটা বই আছে । সেখানে অনেকরকমের উদাহরণ আছে ।
প্রজাতি হিসাবে মানুষের বিবর্তনগত ভবিষ্যত নিয়ে একপক্ষের মত হচ্ছে, মানুষের মধ্যে জৈব বিবর্তন শেষ । একটা বেশ ফ্যাসিনেটিং ভিডিও আছে এবিষয়ে, সময় থাকলে দেখতে পারেন ।
https://www.youtube.com/watch?v=XE_Oy1eRyVg
একগামিতার বিষয়টি অনেক জটিল । অল্প কথা বুঝানো সম্ভব না । সহজভাবে আমার যেটা মনে হয় মানুষের মধ্যে যেটুকু একগামিতা পাওয়া যায় এটা আসলে তার প্রবণতা না , বরং লাভ-ক্ষতির হিসাব থেকে উৎপন্ন কম্প্রোমাইজ । এজন্যই এটাকে সামাজিক চাপ দিয়ে ধরে রাখতে হয় । প্রবণতা হলে সমাজকে চাপ দিতে হতো না ।
নিকটাত্নয়ীদের ব্যাপারটা জেনেটিক্যাল লাভ-ক্ষতির হিসাবে লাভের তুলনায় ক্ষতির সম্ভাবণা অনেক বেশি । একারণেই সেটা এড়ানোর স্বাভাবিক প্রবণতা ।
সুন্দর জবাবের জন্য ধন্যবাদ; দুঃখিত, হটাৎ ব্যস্ত হয়ে পড়ায় সময়মতো উত্তর দিতে পারিনি। বিবর্তন ফিনোটাইপের উন্নতি করে একথা না বলে বরং বলা ভাল যে, ফিনোটাইপের পরিবর্তন বিবর্তনে সাহায্য করতে পারে। আসলে উন্নতি, ভাল এসব পুরোপুরি আপেক্ষিক বিষয়, কারন আজ যে ফিনোটাইপের পরিবর্তনকে উন্নতি বা ভাল বলে মনে হচ্ছে, সময়ের সাথে পরিবর্তিত পরিবেশে তা জীবের টিকে থাকার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। আপনার যে উদ্ধৃতিটা উপরে তুলে ধরেছি, সেটি এমন ধারনা দিতে পারে যে বিবর্তনে ফিনোটিপিক গুনাবলীর কোন ভূমিকা নেই। বিবর্তন জিন-কেন্দ্রিক এটা যেমন সত্যি, তেমনি একথাও ঠিক যে জিনের পরিবর্তনের মাধ্যমে ফিনোটাইপের পরিবর্তন বিবর্তনের একটি প্রধান উপায়। ফিনোটাইপের পরিবর্তন ছাড়াও কোন পপুলেশনে কোন বিশেষ জিনের প্রসার ঘটতে পারে (জেনেটিক ড্রিফট) যা বিবর্তনে সহায়ক হতে পারে, কিন্তু বিবর্তনে পরিবর্তিত ফিনোটাইপের ভূমিকা কোনমতেই অগ্রাহ্য করার মত বিষয় নয়।
ভিডিওটির লিঙ্ক দেয়ার জন্য ধন্যবাদ!
বিবর্তনবাদ ও এপিজেনিটিক্স আমার কাছে খুব মজার এবং তাৎপর্যপূর্ন বিষয় বলে মনে হয়।আর বিবর্বনবাদ হচ্ছে মানবজীবনের সবচাইতে সেন্সেটিভ এবং জটিল বিষয়।কারন এটা মানতে গেলে আমাদের হাজার হাজার বছররের ধর্মের ও ঈশ্বরের যে মিথ আছে তা কাঁচভাংগার মতো ভেংগে চূর্ন-বিচূর্ন হয়ে যায়।
আজ আমার বোনের সাথে কথা বলতে বলতে সে বলল যে তার ১৪ বছরের ছেলে তাকে নাকি বিবর্তনবাদ নিয়ে প্রশ্ন করেছে,প্রশ্নের ধরন হচ্ছে,বিবর্তনবাদ কি? ঈশ্বর বলতে কি কিছু আছে ? আমার বোন তার মতো করে ছেলেকে উত্তর দিয়েছে,এবং বলেছে এ বিষয়ে তুই তোর মতো করে নিজে নিজে চিন্তা কর আর বই পড় কিন্তু ছেলে বলে মা তুমি এরকম বলছ কিন্তু স্কুলের স্যার যে বলছে বিবর্তন বলে কিছু নাই।এটা মুখে বলা বা চিন্তা করা পাপ বা গুনা হবে ,এবং স্কুলের টিচার টি একটি বিখ্যাত জেলা স্কুলের টিচার !!! এই হলো আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার শিক্ষকদের মানসিক দৈন্যতার দৈন্য অবস্থা।
কেউ যদি একটু গভীরভাবে তার চারপাশ থেকে শুরু করে নিজের দিকে খোলামন নিয়ে চিন্তা করে তাহলে সে জীবজগতের অনেক প্রশ্নের উদঘাটন করতে সক্ষম হওয়ার কথা।কিন্তু হবে কিভাবে,কারন পারিবারিক,সামাজিক,অর্থনৈতিক,রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয়পনায় যে শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের দেশে বিরাজমান সেখানে বিবর্তনবাদ হচ্ছে একটি অস্পৃশ্য বিষয়, তার বদলে একেবারে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত ধর্মশিক্ষা হচ্ছে একটি বাধ্যতামূলক বিষয়।এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় লেভেলেও বিবর্তন হচ্ছে একটি হারাম বা না-পাক বিষয়।
কি করুন আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা।এমন করুন অবস্থার কারনেই মনে হয় মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা বাংলাদেশে জামাতে ইসলামীসহ বিভিন্ন জংগীবাদী সংগঠনে ধাবিত হয়,সাথে আরো অন্য অসংখ্য কারন তো আছেই।
আমার মনে হয় আমাদের এখন সময় হয়েছে “মুক্তমনার“ পক্ষ থেকে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় যেন বিবর্তনবাদ স্কুল লেভেল থেকে শুরু করা হয় এমন প্রস্তাবনা সরকারের কাছে পেশ করা।জানি কঠিন বিষয় তবে কাউকে না কাউকে দিয়ে তো শুরু করতে হবে।এবং তা করতে হবে নিজেদের অস্ত্বিত্য রক্ষা করার জন্যই।
আপনাকে স্বাগতম এবং আপনার লেখা অভ্যাহত থাকুক।
যারা জানতে চায় তারা যেন জানতে পারে অন্তত সেই পরিমাণ বিষয়বস্তু আমাদের তৈরী করতে হবে । নিজেরা লিখে হোক , অনুবাদ করে হোক ।
ধন্যবাদ ।
আমরা অপরাজিত,
বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার কান ধরে যারা ওঠবস করান (কর্ণধাররা) তাদের বেশিরভাগই বিবর্তনের পক্ষেও কথা বলেন, আবার ধর্মীয় জেনেসিসও বিশ্বাস করেন। মুহম্মদ জাফর ইকবালের সাম্প্রতিক উপন্যাস সেরেনাতেও দেখা যায় শুরুর দিকে বিবর্তনের পক্ষে কথা আছে, কিন্তু শেষের দিকে একই চরিত্র ‘আল্লাহ যাকে যেভাবে সৃষ্টি করেছেন’ টাইপের ডায়লগ দিচ্ছে। মুক্তমনার মুক্তচিন্তা ছড়িয়ে দেয়ার ব্যাপারটাও বিবর্তনীয় দৃষ্টিতেই দেখতে হবে।
সম্মানিত লেখক, ধনিয়া পাতার ব্যবহারটা ভালই করেছেন প্রজননের প্রক্রিয়া এমনই । তবে এক কথায় যে কোন প্রাণেরই ধর্ম হচ্ছে বেঁচে থাকার জন্য খাওয়া এবং টিকে থাকার জন্য বংশ বিস্তার করা । বর্তমান প্রাণীকুল বিবর্তনের ধারা বহু পেছনে ফেলে এসেছে বলে আমি মনে করি । তবে টিকে থাকার লড়াইয়ে যেহেতু প্রাণীকুল একে অপরের খাবার, সেহেতু বেঁচে থাকার স্বার্থে ফিট থাকাটা কিন্তু ভীষণ জরুরী।
মানুষ এমন একটা প্রাণী যার খাবারের যেমন কোন বাচবিচার নেই আবার প্রজননেরও কোন ঋতু নেই । তাই মিলনে সে যখন তখন আগ্রহী এই ক্ষেত্রে গুণগত মান বিচারের চেয়ে আকর্ষণটাই মুখ্য বিষয়। বিয়েটা একটি সামাজিক বিষয় এটা শুধু মাত্র যৌনকাঙ্ক্ষার মধ্যে প্রে না । ‘জিন’এর ক্ষেত্রে সেটি মানবের কিনা এটাই আসল ব্যপার,যেহেতু ব্যক্তির কোনকিছুই তার নিজের নয় । তার আকার আকৃতি, সূরত,এমন কি চিন্তা সবই উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া তাই অনেক সময় ভাল কিছু সে পেয়েই থাকে ।
মানুষ যত আধুনিক হয়েছে তত তার হতে কর্মহীন সময়ের পরিমাণ বেড়েছে। এই বেঁচে যাওয়া সময়টাকে কি ভাবে ব্যবহার করছে মানব সমাজ এটাই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । বাক্তি মানব হয়তো তার এই সময়কে সৃজনশীল কাজে ব্যবহার করবে নয়তো পাশবিক কাজে এটাই স্বাভাবিক ।
কর্মহীন সময়ের পরিমাণ বেড়েছে খুব সংকীর্ণ একটা অভিজাত গোষ্ঠীর জন্য । পৃথিবীর সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকজনের এখনও জীবিকা অর্জন করতে করতেই জীবন শেষ হয়ে যায় ।
আপনি নিজে যে শুধু দুরে দেখেন তা নয়, আপনি অতি সহজে মানুষকে দুরের বস্তুটিকে দেখিয়ে ও বুঝিয়েও দিতে সক্ষম। অনেক ধন্যবাদ। পরবর্তী লেখার অপেক্ষায় রইলাম।
ড্যামিট । নীতিমালা ২.১৫ ভংগ করলাম দেখা যাচ্ছে । মডারেটর সাহেব, এবারের মত মাফ করা যায় ? আগামিতে খেয়াল রাখবাম । লেখা পোস্ট করে ফেলার পরে দেখলাম এই অবস্থা ।
সেলফিশ জিন পড়ার পর থেকে জগৎ সংসার নিয়া আমার চিন্তা পুরাই বদলে গেল।
সেলফিশ জিন খুবই বিপদজনক বই । একবার বুঝে উঠলে আর পিছন ফিরে যাওয়া যায় না ।