এই আড়াই যুগ আগেও যদি কাউকে একথা বলা হতো যে, আপনার সন্তানকে মাদ্রাসায় পাঠান তাহলে সে হয়তো নাকটা কুঁচকে প্রশ্ন করতো, “মাদ্রাসায় যে দিবো, রুটি-রুজির ব্যবস্থা করবো কে ?”
-মোল্লাসাব পেটপুরে খেয়ে একখিলি পান চিবুতে চিবুতে বলে, “শোকর আলহামদুলিল্লাহ ! আল্লাহর রাস্তায় কাজ করলে আল্লাহ যে কীভাবে রিযিকের ব্যবস্থা করবে সেইটা বুঝা ইনসান তো দূর কী বাত, জ্বীনেরও সাধ্যের অতীত ! সুবহানাল্লাহ !
যার বাড়িতে খেলো এবার তাকে উদ্দেশ্য করে বলে, “বুঝলা মিয়া! খাবার কিন্তু তুমি খাওয়াও নাই ! রিযিকদাতা একমাত্র আল্লাহ জাল্লাশানুহু, তুমি তো হৈলা উছিলা মাত্র ।”
দরিদ্র কৃষক হয়তো ভাবেই না যে, সে সহ তিন-তিনটে বলদের কোমর ভাঙা খাটুনির পরে ফলেছে শস্য; রিযিকদাতা যদি উপরের উনিই হন তাহলে এই খাটুনির সার্থকতা কী?

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষতার এই সুবর্ণ সময়ে আমাদের বার্ষিক জিডিপির উল্লম্ফন ঘটার সাথে সাথে মোল্লা-পুরুহিতেরও ভাগ্য ফিরেছে । মানুষ দু’হাতে উপার্জন করছে, আবার খরচও করছে দেদারছে । যার বেশ খানিকটা অংশ গিয়ে পড়ছে ঐ মোল্লাদের পাঞ্জাবির পকেটে । আবার কালো টাকাকে সাদা করার মতো আল্লাহকে একটি ঘর ঘুষ দিয়ে নিজেদের অবৈধ অর্থকে বৈধ করে নিচ্ছে সমাজের উপরের সারির ভদ্রলোকেরা । এখানে এসে অবশ্য “ইহা সহী ইসলাম নহে”র মতালম্বীরা যুক্তি দেয়ার প্রয়াস পায় এই বলে যে, ইসলাম কখনো অবৈধ অর্থ দিয়ে মসজিদ বানাতে বলেনা ।
-হ্যাঁ, ইসলাম জেনে-বুঝে নিজের গায়ে কালিমা লাগতে দেবে না বলেই এমনটা বলে না; আবার কোনো মোল্লাকে অবৈধ অর্থ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানাতে কিংবা তাহক্বীক (বিচার-বিবেচনা করে) করে অর্থ গ্রহণ করতেও কিন্তু আমরা দেখিনা । সেক্ষেত্রে আমরা কী ভাববো ?
এখানে আবার আরো কয়েকজন বহু ব্যবহারে শতচ্ছিন্ন সেই পুরনো ত্যানাটিই নিয়ে আসবেন, “আপনি কোনো ব্যক্তিকে দিয়ে ইসলামকে সংজ্ঞায়িত করতে পারেন না ; আগে কোরান পড়ে আসুন ।”
-তাদের উদ্দেশ্যে শুধু এটাই বলার আছে, “পুঁথিগত বিদ্যা আর পরহস্তে ধন, নহে বিদ্যা নহে ধন হলে প্রয়োজন ।” কুরানে শতবার লেখা থাকুক (আসলেই আছে কী নেই সে তর্কে যাচ্ছি না) অধিকাংশ মানুষ যদি সেটাকে ব্যক্তিজীবনে ব্যবহারে আগ্রহী না হয় তাহলে বুঝতে হবে সে লেখা মনুষ্যসমাজ বিবর্জিত ।

আজকাল পথে-ঘাটে, ইনবক্সে-আউটবক্সে যার সাথেই সাক্ষাত হয় তাদের একটা গিয়ানগভীর পরামর্শ ”সাবধানে থেকো”!! ব্যাপারটা এমন যে, ওরে খোকা ওদিকে যাসনে, হিংস্র হায়েনা আছে, খেয়ে ফেলবে যে…
গত কয়েক মাসে ঘটে যাওয়া ঘটনার পর এমন প্রতিক্রিয়া হওয়াটাই স্বাভাবিক । ইন ফ্যাক্ট, যারা এসব নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মদদদাতা তারাও ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে স্রেফ জনমনে আতঙ্ক তৈরি করার জন্যে । আর সবচাইতে মারাত্নক ব্যাপার যেটা সেটা হলো এসব অপারেশনে ব্যবহার করা হচ্ছে উঠতি বয়সের এমন সব ফ্যানাটিক ক্যারেক্টারকে যাদের মগজ ধোলাই করে ঠান্ডা মাথার খুনীর প্রোগ্রাম সেট-আপ করে দেয়া আছে ।

ক’দিন পরপরই আমার বিরুদ্ধে ঘরে-বাইরে অনেক অভিযোগ জমা হয়। আমি নাকি আল্লা-নবী’কে গালাগালি করি। অভিযোগকারীদের খুব বিনয়ের সাথেই জানতে চেয়েছি, ভাই আমি কি বলে গালিটা দিয়েছি? মানে গালির ভাষাটা কি ছিল? তারা কেহই বলতে পারে না। ঘুরে ফিরে একটাই উত্তর অমুকে বলেছে, তমুকে বলেছে..
ওয়াশিকুর বাবুকে যারা খুন করেছে তারা নিজেই জানে না বাবুর অপরাধটা কি!! হুজুর বলেছেন তাই তারা খুন করেছে। আর আমাদের আম পাব্লিকদের চরিত্র তো কবি শামসুর রহমান তাঁর অনবদ্য সৃষ্টি “পণ্ডশ্রম” কবিতায় ব্যাখ্যা করেই দিয়েছেন :/

এই নিয়েছে, ঐ নিলো যাঃ
কান নিয়েছে চিলে
চিলের পিছে মরছি ঘুরে আমরা সবাই মিলে।

তো এই চিলের পিছে না ঘুরে “কান নিয়েছে চিলে” শোনার সাথে সাথে নিজের হাতে নিজের কানের অবস্থান যাচাই করানোর মূল চাবিকাঠি হতে পারতো শিক্ষা । অথচ সেই শিক্ষাকেই আমরা লেজে গোবরে করে ফেলেছি । গাইড বইয়ের দেৌড়াত্ন কমাতে প্রণীত সৃজনশীল চালুর পর এখন স্বয়ং মাস্টার মশাইকেই গাইড বইয়ের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে ! কারণ, তিনি নিজেও সৃজনশীলের সবকিছু বুঝে উঠতে পারছেন না; আর পারলেও প্রশ্ন তৈরি করতে পারছেন না !

যাহোক, আমার কথা হচ্ছে আপনারা যারা মনে করেন ঘোড়ার ডিম আছে, মনে করেন, তাতে কারো কোন সমস্যা নাই। এটা আপনাদের ব্যাপার। কিন্তু যারা বিশ্বাস করেনা তাদের জোর করে, চা-পাতি দিয়ে কুপিয়ে বিশ্বাস কেন করাতে হবে?
উত্তর আসবে তখন, তোমরা নাস্তিক নাস্তিকের মতো থাকো। আল্লা-নবীর বিরুদ্ধে বাজে কথা বলো কেন?
-নবীর দেশ সৌদিতে নিয়ম আছে হাতের বদলে হাত, চোখের বদলে চোখ, তাহলে লেখালিখির জবাব কেন লেখালেখি দিয়ে হবে না?

শুভাকাঙ্খীরা সাবধান করেন কারণ এদেশের মানুষজন দিন দিন বড্ড বেশি হিংস্র হয়ে উঠছে । মেৌলবাদের বিরুদ্ধে লিখতে গেলে এখানকার অনেক মানুষ তাদের মনুষ্যত্ব বিসর্জন দিয়ে পশুতে রূপান্তরিত হয় । যার শেষ প্রমাণ ২৯ শে মার্চ আমাদের সহব্লগার ওয়াশিকুর বাবুকে কোপানোর মাধ্যমে রেখে গেছে হায়েনারা । বাবু অবশ্য এসব কিছু জানতো । তীব্র ব্যঙ্গাত্নক ভাষায় সে বলেছিলো সে লিখবেনা ! প্রসঙ্গক্রমে এ সংক্রান্ত আমার এক ফেসবুক বন্ধুর স্ট্যাটাস শেয়ার করা যাক ।

Debprosad Biswas লিখেছেন

… গাছ- শিক্ষা- উপজাতি সমস্যা- চলচিত্র- প্রেম- নারী অধিকার- শ্রমের মূল্য- যুদ্ধাপরাধ নিয়ে লেখা যাবে না। গাছ শুন্য হয়ে যাচ্ছে দেশ। কিছু বলা যাবে না। একসময় যশোর রোডে প্রচুর মেহগনি গাছ ছিল। যশোরের আকিজ গ্রুপ একবার এই গাছ কেটে নতুন করে গাছ লাগানোর বরাত পায়। কিন্তু গাছ কাটা ঠিক ঠাক হলেও গাছ কত গুলো লাগানো হয়েছে তা তো ওই রাস্তা দিয়ে গেলেই বোঝা যায়। ত্রি স্তর মানে মাদ্রাসা- সাধারন শিক্ষা আর ইংরেজি শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে দেশে। আমরা সেই প্রথম থেকে বলে এসেছি বাংলাদেশে কোন ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকবে না। সবার জন্য সাধারন শিক্ষাই যথেষ্ট। ২৫/৩০ বছর আগে সেটা করা যেত। আজ আর সম্ভব কিনা প্রশ্ন সাপেক্ষ বিষয়। উপজাতি সমস্যা ধীরে ধীরে যে দিকে মোড় নিচ্ছে তাতে আমার মনে হয় দেশ থেকে হিন্দুর সংখ্যা যে ভাবে দিন দিন কমছে সেই একি দশা হবে উপজাতিদের। তারেক মাসুদের ” মাটির ময়না ” দেখেছিলাম শাহবাগের পাবলিক লাইব্রেরী অডিটোরিয়ামে। প্রথম দিন। প্রচুর ভিড় ছিল। কিছু দিন আগে ” মনপুরা ” বলে আরও একটা চলচ্চিত্র বেরিয়েছে সেখানেও গোঁড়ামিকে আঘাত করা হয়েছে। কিন্তু কয়দিন আর এসব সম্ভব হবে ? জানা নেই। আমি ১৯৮৬ থেকে ঢাকা তে। তখন খুব কম দেখা যেত বোরখা পরা মেয়েদের। কিন্তু ইরাক ইরান যুদ্ধের পর থেকে দেশে বাড়তে থাকে বোরখার প্রচলন। আর আজ তো বেড়েই চলেছে। ঢাকা আজ মসজিদের শহর। মোড়ে মোড়ে মসজিদ। আবার প্রধানমন্ত্রী ৫০০ টা আধুনিক মসজিদ বানাবেন। বুঝি কাদের মন রক্ষা করতে সরকারের এই প্রয়াস। তবে আমার মনে হয় এখনও পর্যন্ত মৌলবাদী রা গার্মেন্টস এর মহিলা শ্রমিক দের কে নিয়ে কিছু বলবে না। কারন গার্মেন্টসের ৯০ % শ্রমিক মহিলা। তবে বলবে। যুদ্ধাপরাধী দের বিচার ? মনে হয় না সব অপরাধীর বিচার করতে পারবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে তা কোন সরকারের পক্ষে সম্ভব নয় বলে আমার মনে হয়। তবুও হাসিনা সরকার কিছু টা চেষ্টা করেছেন। কিন্তু মুসলিম বিশ্বের বিশেষ করে সৌদি আরবের চাপের কাছে মাথানত করতে হচ্ছে। কারন সৌদি আরবে প্রচুর বাংলাদেশী শ্রমিক কাজ করে। ওদের কথা না শুনলে শ্রমিক দের ফেরত দেবে। বাংলাদেশ থেকে ৮০ লাখ লোক বিদেশে কাজ করে। তার বেশির ভাগ মধ্য প্রাচ্যে। পেট্রো ডলার আসছে দেশে। রিজার্ভ বাড়ছে। গত প্রায় ৬/৭ বছর ডলারের বিপরীতে টাকা একই জায়গায়। কিন্তু বাড়ছে সন্ত্রাস। মৌলবাদের সমর্থনে। প্রকৃত শিক্ষা কোন দিন বাংলাদেশী দের দেয়া হবে না। তাহলে মৌলবাদী রা কি নিয়ে থাকবে ? আগে দেখতাম বামপন্থী অনেক লোক। এখন আর তাঁদের দেখা যায় না। যারা আগে বামপন্থী ছিলেন আমি তাঁদের অনেক কে দেখেছি পুরো ডান পন্থী হয়ে যেতে। রাশেদ খান মেনন যেমন এখন হাজী সাহেব। আমার অনেক বন্ধু উদীচী করত। এখন তারা জাকির নায়েকের ভক্ত। উদীচী করেনা। বলে গান শোনা হারাম। কি মুশকিল। এক সময় তো জাতীয় সংগীত নিয়ে কথা উঠেছিল। একজন মালাউনের গান কেন গাওয়া হবে জাতীয় সংগীত হিসেবে। আমার মনে হয় সেদিন আর বেশি দূরে নয় যেদিন জাতীয় সংগীত ও পাল্টে যাবে। তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য হল উদার পন্থীরা। এঁদের শেষ করে দেয়া। পাকিস্তানিরাও তাই করেছে ১৯৭১ সালে। তারই পথ ধরে প্রতিক্রিয়াশীল রা কাজ করছে। রাজীব- অভিজিৎ- ওয়াশিকুর দের হত্যা তারই অংশ। আমাদের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জামাত শিবির এর লোক দের দেখা যেত না। আর এখন ? বাংলাদেশের পতাকা আজ ওদের হাতে। একঝাক শকুনের হাতে আজ বাংলাদেশের পতাকা।

পরিস্থিতিটা একবার বুঝেন! দেশের শীর্ষস্থানীয় একজন বুদ্ধিজীবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কুপিয়ে মারা হলো ফেব্রুয়ারির ২৬ তারিখ। দেড় মাসেরও অধিক পার হলো। কোনও কুল কিনারা হলো না। কে মারলো, হদিস নেই। পুলিশ বললো, ক্লুলেস ক্রাইম! এর পর ২৪ মার্চ যাত্রাবাড়ি থেকে সাইফুল নামের একজন জঙ্গীকে আগ্নেয়াস্ত্র এবং চাপাতি সহ আটক করা হলো। পাঁচদিন আটক রেখেও ঐ জঙ্গীর কাছ থেকে কোনও তথ্য পাওয়া গেলনা। তারপর ২৯ তারিখ খুন হলেন ওয়াশিকুর রহমান বাবু। খুনের পরে জানা গেল, ২৪ মার্চ গ্রেফতার ঐ সাইফুল ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে খুন করার জন্য গঠিত পাঁচ সদস্যের দলের অন্যতম সদস্য। বাবুকে খুন করতে প্রয়োজনীয় পনেরো দিনব্যপি প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে অস্ত্র নিয়ে চলাচল করার প্র্যাকটিস করছিলো সাইফুল। এবং এটাও জানা গেল, সাইফুলরা জানতো, অভিজিৎ রায়কে কারা খুন করেছে।

প্রথমত,

পুলিশ এবং সরকার যদি আন্তরিক হতো, তাহলে চাপাতি আর আগ্নেয়াস্ত্রসমেত ধরা পড়া এক জঙ্গীর কাছ থেকে সব তথ্য উদ্ধার করতে পারতো। এটা নিশ্চিত। কেননা, এই পুলিশই একই দলের জিকরুল্লাহ দেরকে মাত্র একদিনের জিজ্ঞাসাবাদে এই সমস্ত তথ্য বের করে এনেছে। অর্থাৎ, সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও সরকার, পুলিশ যে অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে চায়না -সেটা সুষ্পষ্ট। বিচার করতে চাইলে জেলখানায় অস্ত্রসহ ধরা পড়া এক জঙ্গীকে রেখে ফারসিম মোহাম্মদীকে কথিত “জিজ্ঞাসাবাদ” এর নাটক করতোনা পুলিশ। জঙ্গী সাইফুলকে একদিনের রিমাণ্ডে নিলেই সব বেরিয়ে আসতো। কেননা, হত্যার ধরণ থেকে এটা পরিস্কার, যে সুপ্রশিক্ষিত জঙ্গীরাই অভিজিৎ রায়কে হত্যা করেছে এবং সাইফুল একজন জঙ্গী।

দ্বিতীয়ত,

ঐ সাইফুলকে যথার্থ জিজ্ঞাসাবাদ করে পাঁচ দিনে অবশ্যই তার মিশন সম্পর্কে জানা যেত। আর সেটা জানা গেলে ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে হত্যা করতে পারতোনা জঙ্গীরা। পাশাপাশি, আটকও হতো বাকিরা। কিন্তু পুলিশ তা করেনি। অর্থাৎ, বাবু হত্যায় পুলিশের দায়ও অস্বীকার করতে পারবেনা পুলিশ। জঙ্গীদেরকে যে নীরবে, মৌন সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে পুলিশ এবং সরকার -এ বিষয়ে আর কোনও সন্দেহ থাকার কথা না।

তার মানে কী দাঁড়ায়? সরকার অনেক কিছুই জানে এবং খুনগুলোর বিচারও সরকার করবেনা? কোর আওয়ামী অনলাইন প্রচারকরা যেভাবে নাস্তিকদের বিরুদ্ধে জেহাদে নেমেছে ,তাতে লক্ষণ আরো স্পষ্ট।

কিছুই করার নাই। কিছুই বলার নাই। বিচারের অপেক্ষায় থাকি।