এই চিত্রকর্মটির নাম “সক্রেটিসের মৃত্যু”। আজ থেকে প্রায় তিনশ তিরিশ বছর আগে (খ্রি. ১৭৮৭) ফ্রান্সের শিল্পী জাঁক-লুই ডেভিড এই ছবিটা আঁকেন। ছবিটার গল্পটা সবারই জানা। সক্রেটিসের সামনে মেলে ধরা হয়েছে হেমলক বিষের পাত্র, সক্রেটিস সেটা নির্দ্বিধায় পান করছেন। ছবির ডান দিকে তার শিষ্যরা শোকে, ক্ষোভে মুহ্যমান হয়ে পড়েছে। সক্রেটিসের বামে যে লোকটি হেমলকের পাত্র এগিয়ে দিচ্ছে, তার নিজের মুখও লজ্জায় ঢাকা, এমন জ্ঞানী একজন মানুষের মৃত্যু তার মাধ্যমে হচ্ছে, হয়তো সেই কারণেই।
সক্রেটিসের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এনেছিল অ্যাথেন্সের কোর্ট। অভিযোগগুলো ছিল, অ্যাথেন্স রাষ্ট্রের দেবতাদেরকে তিনি স্বীকার করেন নি, অলৌকিকতাকে ব্যাখ্যা করেছেন নিজস্ব দর্শন অনুসারে, এবং শহরের তরুণ সমাজকে নিজের দর্শন দ্বারা বিপথে চালিত করেছেন। যথেষ্ট গুরুতর অভিযোগ। এমন অভিযোগ কেন আনা হয়েছিল? বিচার ও শাস্তির পটভূমিটা জেনে নিলে সেটা বুঝতে সুবিধা হবে। সময়টা খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০ থেকে ৩৯৯ এর মাঝামাঝি। নানাবিধ টানাপোড়েনে অ্যাথেন্সের রাজনৈতিক পরিস্থিতি তখন টালমাটাল। কিছুদিন আগেই অ্যাথেন্স স্পার্টার সাথে যুদ্ধে নিদারুণভাবে হেরে গেছে (পেলোপনেশিয়ানের যুদ্ধ)। অমন ভয়াবহ বিপর্যয়ের পরে ক্ষমতাশীল দল রাষ্ট্রে স্থিতিশীলতা আনতে চেষ্টা করছিল, কিন্তু জনমত তখনকার অ্যাথেন্সের রাজনীতি তথা গণতন্ত্রের ওপর ক্রমেই ভরসা হারাচ্ছিল। সক্রেটিস নিজেও ছেড়ে কথা বলছিলেন না। শাসকদের সমালোচনা করতে গিয়ে চিরশত্রু স্পার্টাদেরও রাষ্ট্রনীতির ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন তিনি। একই সাথে তীব্র সমালোচনার মাধ্যমে দেখিয়ে দিচ্ছিলেন গণতন্ত্রের নামে অ্যাথেন্সের শাসকগোষ্ঠীর ক্রমেই দমনমূলক হয়ে ওঠার সমস্যাগুলো।
স্বাভাবিকভাবেই এটা হর্তাকর্তাদের ভাল লাগে নি। তাই তাকে উপরের বর্ণিত অপরাধে অভিযুক্ত করা হলো। শুরু হলো বিচার। যথারীতি জুরিবোর্ডের সামনেও দুর্বিনীত আচরণ করলেন তিনি। সক্রেটিসের অন্যতম শিষ্য জেনোফোনের মতে, তিনি যেন ইচ্ছা করেই জুরি আর বিচারকদের ক্ষেপিয়ে তুলছিলেন, এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করছিলেন, যেন তাকে মৃত্যুদণ্ডই দেয়া হয়। হতে পারে যে তিনি নষ্টভ্রষ্ট সমাজের প্রতি একেবারেই বীতশ্রদ্ধ হয়ে সেই ব্যবস্থাকে ক্রমাগত আঘাত করতে চাচ্ছিলেন। কোন সমাজ যখন পচে যায়, যখন ক্ষমতার মোহে অন্ধ সমাজের নেতারা যে কোন মূল্যে নিজেদের দোষ ঢাকতে চায়, যখন গণতন্ত্রের নামে শাসনযন্ত্র হয়ে ওঠে পীড়নকারী, যখন সমাজে জোর যার মুল্লুক তার নিয়ম চালু হয়, তখন একজন দার্শনিক ও শিক্ষকের হতাশার কোন সীমা থাকে না। এমন সংশোধনের ঊর্ধ্বে চলে যাওয়া সমাজে আর থাকতে চান নি সক্রেটিস। দার্শনিক হিসেবে অমিত প্রজ্ঞার অধিকারী এই মানুষটির কাছে নিশ্চয়ই অসীম বেদনার ব্যাপার ছিল এটা। নিজের চোখের সামনে সভ্যতার উন্নতির শিখরে থাকা একটা রাষ্ট্রকে এভাবে ধীরে ধীরে মাস্তানির কাছে ক্ষয়ে যেতে দেখা খুব একটা আনন্দের ব্যাপার না।
চিত্রকর্মে দেখা যাচ্ছে, সক্রেটিসের ডান হাত বিষের দিকে বাড়ানো। হেমলকের পাত্র এগিয়ে দেয়া লোকটির হাত নিচে, এবং সক্রেটিসের হাত ওপরে। হাতের এই তুলনামূলক অবস্থানও নির্দেশ করে যে সক্রেটিস নিজের ইচ্ছাতেই বিষপাত্র গ্রহণ করছিলেন। ভাবলে আশ্চর্য হতে হয়, কেন তিনি আগ্রহভরে মৃত্যুকে বেছে নিলেন। যদিও দণ্ড দিয়েছিল দণ্ডমুণ্ডের কর্তারা, তবু এই ঘটনাটা যেন আত্মহত্যারই শামিল। কেন? সক্রেটিস বিশ্বাস করতেন, মৃত্যু মানব-আত্মার সর্বোচ্চতম রূপান্তর। জন্মের পর থেকে মানুষের জ্ঞানাহরণের ক্রমোন্নতির শেষ ধাপ আসে মৃত্যুর মাধ্যমে। হেলাফেলার বিষয় না এটা। জন্মের ওপর আমাদের কারও হাত নেই, জন্মের পরপর আমাদের জ্ঞান থাকে শূন্য। তারপর ধীরে ধীরে আমাদের মস্তিষ্কের উন্নতি হতে থাকে। একজন মানুষ তার পরিপার্শ্ব থেকে শিক্ষা নেয়, সেই শিক্ষাকে হিতকর প্রয়োগের মাধ্যমে করে তোলে সভ্যতার উন্নতির অংশ। তার অবদানে উপকৃত হয় তার পরিপার্শ্ব। কিন্তু মহত্তম সেই মানুষ, যিনি কর্মের ভেতর দিয়েই মৃত্যুকে বরণ করে নিতে পারেন। সক্রেটিস মূলত একজন শিক্ষক ছিলেন, তাই নিজের মৃত্যুর মাধ্যমে তিনি তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাটিই দিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। শিক্ষাটি কী, তা একটু পরে বলছি।
ছবিটায় আবার ফিরে আসি। সক্রেটিসের বাম হাত উপরের দিকে কিছু একটা নির্দেশ করছে। খেয়াল করলে দেখা যায়, এই কারাগারে উপরের বাম কোণ থেকে আলো এসে পড়ছে, সক্রেটিসের তর্জনীও সেই আলোর দিকে ধরা।
ছবির একদম বামে শাদা পোষাকের বসে থাকা লোকটি হলো প্লেটো। এখানে জাঁক-লুই ডেভিড শিল্পীর নিজের কল্পনাকে সামনে নিয়ে আসলেন। প্লেটো সক্রেটিসের মৃত্যুর সময় সেখানে ছিলেন না, ঐতিহাসিকভাবে তাই এই ছবিটা ভুল। কিন্তু প্লেটোর এই ছবিতে থাকার কারণ আছে। সক্রেটিসের সকল শিক্ষা, যা তিনি তার শিষ্যদের শিখিয়ে গিয়েছিলেন, পরে তা লিপিবদ্ধ করেন এই প্লেটো। এমনকি তার মৃত্যুর ঘটনাও প্লেটোর বর্ণনা থেকেই আমরা জেনেছি। একদিক দিয়ে দেখলে, সক্রেটিস সক্রেটিস হতেন না, যদি না প্লেটো তাকে সংরক্ষণ করতেন, বাঁচিয়ে রাখতেন। সেজন্যই প্লেটো রূপক অর্থে এখানে উপস্থিত। এবং তার অবস্থান অন্য শিষ্যদের চেয়ে দূরে, কারণ অন্য শিষ্যদের মতো আবেগে ভেঙে না পড়ে তিনি সক্রেটিসের কর্মকে, বাণীকে, শিক্ষাকে ছড়িয়ে দেয়ার সংকল্প নিয়েছিলেন। হয়তো তার পাশেই মাটিতে রাখা স্ক্রলটাও সেটার রূপক-চিহ্ন!
প্লেটোর পাশাপাশি আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ শিষ্য ক্রিটোকেও একটু দেখা যাক। কমলা পোষাকের যে শিষ্যটি সক্রেটিসের পা ধরে বসে আছেন, সেই লোকটা হলো ক্রিটো। সক্রেটিস নিজে ক্রিটোকে অনেক পছন্দ করতেন। বিচারের পরে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার পরে সক্রেটিস কিছুদিন জেল-হাজতে ছিলেন। সেসময়ে ক্রিটো লাইন-ঘাট করে তাকে পালিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। সক্রেটিসকে অনুরোধও করেন, “গুরু পালিয়ে যান। নিজেকে বাঁচান।” কিন্তু সক্রেটিস সেটা শোনেন নি। তার সিদ্ধান্তকে ক্রিটোর পক্ষে পুরোপুরি বোঝা কিংবা মেনে নেওয়া অসম্ভব ছিল। গুরুকে হারাতে কেইবা চায়। তাই সক্রেটিসের মৃত্যুর আগ মুহূর্তে, শোকে বিহ্বল হয়েও ক্রিটো তার পায়ের কাছে বসে আছেন। কেমন নুয়ে পড়া, বেঁকেচুরে ভেঙে পড়া অবয়ব। এক হাতে আঁকড়ে ধরে রাখতে চাচ্ছেন এত শ্রদ্ধার মানুষটিকে। আমি খুব খেয়াল করে ক্রিটোর চেহারার ভাঁজগুলো দেখি। আমার বুকের ভেতরে শ্রদ্ধার মানুষটিকে হারানোর প্রবল শোক তোলপাড় করে।
শিল্পী ডেভিড এই ছবির দুটো জায়গায় নিজের নাম স্বাক্ষর করেছেন। একটা হলো ক্রিটোর বসে থাকা পাথরটির গায়ে, আরেকটা হলো প্লেটোর বসে থাকা পাথরে। মনে হতে পারে, তিনি সম্ভবত সক্রেটিসের এই দুই শিষ্যের মাঝে নিজেকে দেখতে পাচ্ছেন। অন্যভাবে বলা যায়, তিনি হয়তো সক্রেটিসের প্রতি দুই ধরনের আবেগই ধারণ করেন। একদিকে যেমন তার স্বেচ্ছামৃত্যুতে শোকগ্রস্ততা, অন্যদিকে তার দর্শন ও শিক্ষাকে ধারণ করার স্থিরতা। শিল্পীর এই অবস্থানের সাথে আমরা নিজেরাও একাত্ম হতে পারি। আকস্মিক শোক ও বেদনা কেটে গেলে মৃতের কর্ম ও শিক্ষার প্রতি নিবিড় অনুশীলন প্রয়োজন, কারণ একমাত্র সেভাবেই আমরা তাকে অমর করে তুলতে পারি।
লেখা শেষ করি সক্রেটিসের মহত্তম সেই শিক্ষার উল্লেখ করে। তার মৃত্যুর মুহূর্তে পৌঁছানোর আগের ঘটনাগুলো চিন্তা করলে দেখা যায় যে একাধিকবার তিনি মৃত্যুকে বাদ দিয়ে জীবদ্দশা বেছে নিতে পারতেন। ক্ষমতাশীলকে না ক্ষেপিয়ে চুপচাপ নিরাপদ নিরপেক্ষ হতে পারতেন। ক্ষমতাশীলদের ভুলে ক্ষেপিয়ে দেয়ার পরেও হাত-পা ধরে মাফ চেয়ে নিতে পারতেন। এমনকি বিচার শুরু হবার পরেও নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে পারতেন। এমন শ্রদ্ধার মানুষ ছিলেন, ওভাবে ক্ষমা চাইলে বাকি সবার চোখে তার দৃঢ় চরিত্রের সুনাম নষ্ট হতো, আর তাতে ক্ষমতাশালীরা খুশিই হতো। আচ্ছা, সব না হয় বাদই দিলাম। অনমনীয়তার শেষ মুহূর্তে ক্রিটোর বাতলানো পথে চুপিসারে পালিয়েও যেতে পারতেন। নির্বাসন নিয়ে অন্য দেশে গিয়েও তার দর্শন প্রচার ও শিক্ষা দিতে পারতেন। কিন্তু এতোবার সুযোগ পাওয়ার পরেও তিনি আপোষ করেন নি। তিনি স্বেচ্ছামৃত্যু বেছে নিলেন। এর পেছনে কারণ, সেই মহত্তম শিক্ষা দেয়ার অন্তিম বাসনা। এই শিক্ষার জন্যই সক্রেটিস মরেও অমর। আর সেই শিক্ষাটা হলো, মানুষের নিরর্থক তুচ্ছ জীবনের একমাত্র অর্থবোধকতা আসতে পারে, যদি সেই জীবন কোন হিতকর আদর্শের জন্য উৎসর্গিত হয়। তা নাহলে এই জীবনের সকল কর্ম বৃথা।
সক্রেটিসের দিকে আরেকবার তাকান। তার সেই উঁচু করে তুলে ধরা আঙুলের দিকে তাকান। এই ভঙ্গিকে নানাভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। আমার নিজের ধারণা, সক্রেটিস যে আদর্শের জন্য জীবন উৎসর্গ করছেন, এই তুলে ধরা আঙুল সেই আদর্শকেই নির্দেশ করছেন। মানুষের তুচ্ছ ও নিরর্থক জীবনের চেয়ে অনেক অনেক উঁচুতে এমন আদর্শের স্থান। সে আদর্শের কাছে মানুষের জীবনের আদৌ কোন মূল্য নেই। চারপাশের বাকি সবার অবনত মাথার চেয়েও উঁচুতে ওঠানো এই তর্জনী তাই উচ্চতম সে আদর্শেরই অনবদ্য রূপক!
ছবিটার ব্যাখ্যা আসলেই অসাধারন। অনেক অনেক ভালো লাগলো।
ছবিটা ফেবুতে বেশ কয়েকজনের কভারে দেখেছিলাম, সম্ভবত অভিজিৎ ভাইয়ের মৃত্যুর পর। ব্যখা জানতে পেরে খুব ভাল লাগলো।
লেখাটি যথার্থ যদিও অভিজিৎ ভাইকে বিষটুকু পান করার সুযোগও আমাদের সমাজে দেয়নি।
লেখাটা পড়ে আমার এমন ভালো লাগলো যে,লিখে বোঝাতে পারব না। সক্রেটিসের শিক্ষা আমাদের জন্য অন্যতম আদর্শ। ছবিটা সংগ্রহে রাখব। admin কে অনেক *ধন্যবাদ*।
ফেসবুকে সংক্ষিপ্ত পোস্ট দেখেছিলাম। এই বিস্তৃত লেখাটা আরো ভালো লাগলো। একটা ছবির মধ্যে যে এত ধরনের সিম্বলিজম লুকিয়ে থাকতে পারে কেউ বুঝিয়ে না দিলে হঠাৎ বোঝা যায় না। ড্যান ব্রাউনের বইগুলো এ কারণে আগ্রহ করে পড়ি। মুচমুচে থ্রিলারের আড়ালে একটা আর্ট হিস্ট্রি ট্রিপ হয়ে যায়।
একটা প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন। এখানে সক্রেটিস কে সেটা ছবি থেকেই বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু বাকি কুশিলবরা কে কোন জন সেটা কি আঁকিয়ে বলে দিয়েছিলো নিজেই? নাহলে আর্টহিস্টরিয়ানরা মানুষগুলোকে আইডেন্টিফাই করবে কীভাবে?
ভাল প্রশ্ন। সক্রেটিসের মৃত্যুর ঘটনা বেশ কয়েকজনই বর্ণনা করেছেন। প্লেটো আছেন, জেনোফোন আছেন, এরা সেইসময় ওখানে কারা কারা ছিলেন, সেটা লিখে গেছেন। ডেভিড অবশ্য আঁকার সময় কয়েকজনকে বাদ দিয়েছেন, এবং প্লেটোকে রেখেছেন যিনি আসলে ওখানে ছিলেন না। ছবিটার ব্যাপারে কয়েকটা আর্টিকেল পড়ে মনে হলো ডেভিড নিজেই বর্ণনা করেছেন।
তবে আমি শিল্পের ছাত্র না, তাই এই জানায় ভুলও থাকতে পারে।
কি দারুন উক্তি, মনে হয় প্রায় আড়াই হাজার বছর পরে আমাদের বংগদেশও মাস্তানির কাছে ক্ষয়ে যেতে যেতে এখন এর সামান্যতম মূল্যবোধটিও আর অবশিষ্ট নেই।
আমরাও আমাদের সময়ের সক্রেটিসের মতো দার্শনিক এবং বিজ্ঞানী অভিজতকে হারালাম হিংস্ বন্যজন্ত্রুদের চাপাতির আঘাতে আর মাস্তানি অপরাজনীতির ভয়াল করালগ্রাসে।
আশায় দিনগুনি একদিন হয়ত অন্ধকারের অমানিশা দূর হয়ে কোমল সোনালী সকালবেলার সূর্যের উদয় হবে।
ভাল লাগলো ,তবে অভিজিতের নতুন নতুন তথ্যমূলক লেখা থেকে আমরা বনচিত হলাম .
ভালো লাগল পড়ে। একই বিষয় নিয়ে দুজন লিখলে তা বিষয়টিকেই আরো মহিমান্বিত করে, আগের লেখাটা পড়ে থাকলেও আপনার এটা না লেখার কোনো কারণ দেখছি না। প্লেটোর এতগুলো সক্রেটীয় সংলাপ থাকার পরও ক্সেনোফোন কেন সক্রেটীয় সংলাপ লিখলেন? জাক লুই-দাভিদ (মূল ফরাসি উচ্চারণ এমন হওয়া উচিত) কে নিয়ে নিশ্চয়ই একাধিক বই রচিত হয়েছে।
সক্রেটিসের তর্জনী যে আলোর দিকে নির্দেশ করছে এটা আগে ভেবেই দেখিনি।
ক্লাইভ বেলের অনুকরণে মোতাহের হোসেন চৌধুরী তার সভ্যতা বইয়ে বলেছিলেন সভ্যতার উপাদান দুটি: ‘মূল্যবোধ’ আর ‘যুক্তিবিচার’। এই দুয়ের ভারসাম্য যেখানে সর্বোত্তম সেখানেই সর্বোত্তম সভ্যতা। মূল্যবোধ বলতে তিনি আক্ষরিক অর্থেই মূল্যের বোধ বুঝিয়েছিলেন, মানে একটা পিকাসো আর একটা সাধারণ শিল্পীর ছবির মধ্যে কোনটার মূল্য বেশি সেটা বুঝার ক্ষমতা। এই দুই উপাদানের ভারসাম্যের বিচারে তিনি ইতিহাসে মাত্র তিনটি সভ্যতা ছিল বলে চিহ্নিত করেছিলেন: সক্রেটিস-পূর্ববর্তী গ্রিস, রেনেসাঁর ইতালি, বিপ্লবপূর্ব ফ্রান্স। আরো বলেছিলেন, দুয়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভারসাম্য ছিল গ্রিসে, ইতালিতে ছিল মূল্যবোধ বেশি, আর ফ্রান্সে ছিল যুক্তিবিচার বেশি। এর প্রমাণও পাওয়া যায় যখন দেখি বিপ্লবকালীন ফরাসিরা সক্রেটিসের যুক্তিবিচারকে উৎকৃষ্ট চিত্রকর্মে পরিণত করতে পেরেছিলেন। মূল্যবোধের দিক দিয়ে হয়ত ‘সক্রেটিসের মৃত্যু’ মিকেলাঞ্জেলোর ‘আদম সৃষ্টি’ এর সাথে তুলনীয় নয়, কিন্তু যুক্তিবিচারকে এভাবে শিল্পে ধারণ কেউ হয়ত এভাবে করতে পারেনি।
ভবিষ্যতের লেখার অপেক্ষায় থাকলাম।
এমন চমৎকার মন্তব্য পেলে কার না ভাল লাগে! জাঁক-লুইয়ের আরো কিছু চিত্রকর্মেও গ্রিক সভ্যতার আরো কিছু গল্প উঠে এসেছে।
সামনে আরো লিখবো আশা রাখি!
ছবির ব্যাখ্যাগুলো চমৎকার হইছে। ছবিটার প্রতি একটূ দূর্বল হইয়া পরলাম। ছবিটা যোগার করার চেষ্টা করবো।
ছবিটা মনে দাগ কেটে যায়। আমি অনেক কিছুই ঠিকমত ব্যাখ্যা করতে পারি নি…
কিছুদিন আগেই জাক লুই ডাভিড এর ১৭৮৭ সালে আঁকা দি ডেথ অব সক্রেটিস (La Mort de Socrate) নিয়ে লিখেছিলেন শিল্পী আসমা সুলতানা মিতা। একই বিষয়ে নিয়ে পুনরায় লেখার কি বিশেষ কোন কারণ আছে?
হঠাৎ করে যদিও, ইমেজ গুলো দেখে আমি নিজের পোস্ট ভেবে ভুল করেছিলাম ; কিন্তু আমার লেখার উদ্দেশ্য ছিলো অভিজিৎ দা । জনাব আন্দালিবের লেখার উদ্দেশ্যটা (সক্রেটিস নাকি ডাভিড) আমার মতো ক্ষুদ্র মানুষের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয় ।
@আসমা সুলতানা মিতা, আমার লেখার অনুপ্রেরণাও অভিজিৎ’দা।
লেখাটা আমি পড়ি নি। এখন সার্চ করে পড়লাম। পুরোই কাকতালীয় ব্যাপার হলো দেখি! ঐ লেখাটা আগে পড়লে এটা সম্ভবত পোস্ট করতাম না।
তথ্য এবং বিশ্লেষণ চমৎকার । নতুন কিছু জানলাম 🙂
আপনাকেও ধন্যবাদ পড়ার জন্য।