সকালবেলা এক পরিচিত সাংবাদিক ফোন করে বললেন, ব্লগার আনন্দ সৈকতকে খুন করা হয়েছে!
খারাপ খবর শোনার পর অভ্যাসবশত তিনি বিস্মিতভাবে বললেন, ওহ্ মাই গড! আনন্দ সৈকতকে তিনি সরাসরি চেনেন না। ফেইসবুকে থেকে চেনেন। তার নিজের লেখা পোস্টে এসে ছোকরা পাকামো করতো। এমনিতে বাংলাদেশের নাস্তিকগুলোকে তিনি সহ্য করতে পারেন না। এরা যে কি চায় তিনি আজ পর্যন্ত বুঝতে পারেননি। আরে বাবা তোমরা কি মনে করো ধর্মকে ফিনিস করে ফেলতে পারবে? এসব পাগলামো! এরা জানেই না, এসব ধর্মফর্ম কিচ্ছু না, মূলত বিশ্বজুড়ে যে ফ্যাসাদ চলছে তার মূলে সাম্রাজ্যবাদ। আমেরিকার মোড়লগিরির সমাপ্ত হলেই এসব বন্ধ হয়ে যাবে। বিশ্বে ক্ষমতার ভারসাম্য হলেই একতরফা ক্ষমতার দাপটও বন্ধ হবে। তখনই কেবলমাত্র নিপীড়িতর সংখ্যা কমতে থাকবে। আর নিপীড়িত প্রতিশোধ থেকেই তো জঙ্গিবাদের উত্থান। এই যে আমাদের ভারতবর্ষ, ইংরেজদের শোষণের কারণেই তো তারা স্বদেশেী আন্দোলন শুরু করেছিল- তাই না? তারাও তো বোমাবাজি করতো। ইংরেজ নারী-পুরুষ কাউকেই বাদ দিতো না। তারা সে সময় আততায়ী হয়ে বোমাবাজি করে মানুষ হত্যা করেছে। উদ্দেশ্য ইংরেজদের তাড়িয়ে দেশীয় শাসন ব্যবস্থার প্রবর্তন। ইংরেজরা চলে গেছে, এখন কি ভারতবর্ষে স্বদেশীদের কোন চিহৃ আছে? ঠিক সাম্রাজ্যবাদীরা যখন আরব দেশগুলোতে তাদের লোভী চোখ দুটোকে সরিয়ে নিয়ে নিজেদের দেশে ফিরে যাবে- তখনই এইসব আল কায়দা, বেকো হারাম সব বন্ধ হয়ে যাবে।…
সৈকত ছোকরা তার পোস্টে এসে ত্যাদড়ামী করে প্রশ্ন করতো, ভারতবর্ষে ইংরেজ উপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে যে স্বদেশী আন্দোলন তার রূপ বা ধরনের সঙ্গে হিন্দু ধর্ম বা ভারতবর্ষের অন্য কোন ধর্মীয় আন্দোলন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল? ফিলিস্তিনিদের আন্দোলন যতদিন আরাফাতের নেতৃত্বে ছিল ততদিন কি সেটা ধর্মীয় আন্দোলন ছিল? আরাফাত তো একজন খ্রিস্টান ফিলিস্তিনিরও নেতা ছিলেন? ফিলিস্তিনের সেই আন্দোলন পুরোটাই ছিল রাজনৈতিক, দেশপ্রেমিক কেন্দ্রিক। এখন যেটা হিযবুল্লাহর মত সন্ত্রাসী ইসলামী গ্রুপের জন্য ধর্মীয় চেহারা পেয়েছে। স্বাধীন ফিলিস্তিন এখন দারুল ইসলাম হবে। ঠিক তেমনি আল কায়দা, তালেবানদের যে যুদ্ধ সেটা যদি আরবদের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপনিবেশিক খবরদারীর বিরুদ্ধেই হয়ে থাকে তাহলে তাকে কুরআন, আল্লাহো আকবর, খিলাফত, শরীয়া, কাফের এইগুলো আসছে কেন? সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকার খবরদারী থেকে যে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন সূচনা হবে সেটা তো আরবী জাতীয়তাবাদী আন্দোলন হবে। মিশর বা তিউনিশিয়াতে আরব বসন্তের সূচনার সময় যেটা হয়েছিল। পরে যেটা মুসলিম ব্রাদারহুড দারুল ইসলামের নিয়ে যায়। কাজেই আপনার চিন্তায় ভুল আছে। সাম্রাজ্যবাদীরা পরাস্ত হলেই ইসলামী সাম্রাজ্যবাদ বন্ধ হবে না। কুরআনে স্পষ্ট বলা আছে দুনিয়াব্যাপী খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা। এটা তো আর আপনি কুরআন থেকে মুছে ফেলতে পারবেন না। কোটি কোটি আলেম এটাকে তাদের মনের গহীনে লালন করে থাকে। দুনিয়ার সমস্ত কমিউনিস্টরা যেমন দুনিয়াব্যাপী যৌথখামারের স্বপ্ন দেখে, সেরকম দুনিয়ার সমস্ত ইসলামী স্কলারই দারুল ইসলামের স্বপ্নে বিভোর!….
কত্ত বড় মুর্খ দেখো! কমিউনিজমের সঙ্গে ইসলামকে এক করে ফেলেছে। অনলাইনের এই যে বুদ্ধিভিত্তিক লেখালেখি সেটাকেই এই নাস্তিকদের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছে! এদের কাছে ধর্মটাই যেন একমাত্র বড় বাধা! শিট! দেশের কোটি কোটি ধার্মীকদের বাদ দিয়ে কিছু হবে নাকি? শুধু শুধু তাদের ধর্মানুভূতিতে আঘাত করে এইসব পাতি নাস্তিকগুলি কি ফালাবে? সৈকতকে বিরক্ত হয়েই তিনি আনফ্রেন্ড করে দিয়েছিলেন। তার একমাস পরেই আজ সকালবেলা শুনলেন ছেলেটাকে কে বা কারা নাকি হত্যা করে ফেলেছে!
সাংবাদিক ছোকরা জোর দিয়ে বলল, জঙ্গিরাই মেরেছে স্যার।
-কিভাবে বুঝলে? জানতে চাইলেন তিনি।
-ধরন দেখে মনে হচ্ছে।
-দেখো, আমাদের সমস্যাটা হচ্ছে, কোন কিছু না জেনেই একটা মন্তব্য করে ফেলা।
-স্যার, পিছন থেকে চাপাতী দিয়ে কোপানো হয়েছে। রাজিবকে যেভাবে, আসিফ মহিউদ্দীন, ড. অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর বাবু… ধরণটা একই রকম।
-তদন্ত হওয়ার আগে কোন একটা পক্ষকে দায়ী করে ফেললে আসল অপরাধীরা পাড় পেয়ে যাবে। তোমরা সাংবাদিকরা কেন যে এই দিকটায় মনোযোগ দেও না। যাই হোক, খবরটা খুব খারাপ। খুব খারাপ লাগছে শুনে। এসব শুনলে আমার প্রেশার উঠে যায়…
-স্যার, একটা প্রতিক্রিয়া দেন, আপগ্রেডে প্রকাশ করবো।
-শোনো, এতক্ষণ যা বলেছি সেটা আবার প্রকাশ করো না। বুঝো না, সব প্রকাশ করা যায় না। এখন আনুষ্ঠানিক প্রতিত্রিয়া প্রকাশ করছি: সৈকতকে আমি অনেকদিন থেকে চিনতাম। লাজুক, মিষ্টভাষী। আমার কাছে প্রায় বায়না করতো আমি কি কি বই পড়ছি তার তালিকা দিতে, সেসব খুঁজে খুঁজে সে পড়তো।… তাকে যারা হত্যা করেছে সরকারের উচিত দ্রুত তাদেরকে চিহিৃত করে বিচারের ব্যবস্থা করা। এভাব তো চলতে পারে না। সরকার জনগণকে নিরাপত্তা দিতে পারছে না। সরকারের প্রথম কাজই হচ্ছে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেয়া, অথচ…
ফোন রেখে তিনি তার নির্ধারিত একটা লেখার জন্য ঠিক করে ফেললেন আনন্দ সৈকতের হত্যাকান্ডের উপরই লিখবেন। “গালগল্প ২৪ ডট কমের” জন্য দীর্ঘ লেখাটায় মূল সুরটা তুলে ধরলেন, যদি সৈকতকে লেখালেখির জন্যই মারা হয়ে থাকে তাহলে তো আজ আমাদের সেই সত্যের মুখোমুখি দাঁড়াতেই হবে- ঘৃণার বিরুদ্ধে যে ঘৃণার চাষ শুরু হয়েছিল তার আরেক শিকার হলো সৈকত! এই দায় তাদের যারা সৈকতদের মত ছেলেদের উসকে দিচ্ছে!…
এই কথা তিনি অভিজিৎ রায়ের হত্যাকান্ডের পরও বলেছিলেন। নাস্তিকগুলো তখন তার বাপন্ত করে ছেড়েছিল। তিনি অবশ্য এসবে খুব মজা পান। তার একেকটা লেখায় প্রতিপক্ষের চুলকানি শুরু হয়ে গেলে সেটা দেখা দারুণ একটা উপভোগের ব্যাপার। অভিজিৎ রায়ের মৃত্যুর পর যে সাহস নিয়ে তিনি কথাটা বলেছিলেন সেটা কম বড় কৃতিত্বের নয়। অভিজিতের মত বড় ও জনপ্রিয় লেখককের মৃত্যুতে সরকার, বিরোধী দল পর্যন্ত তার হত্যাকে নিন্দা জানিয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে প্রবল আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। তখন তিনি বলেছিলেন, অভিজিৎ বিজ্ঞান লেখক হিসেবে তো ঠিকই ছিলো, কিন্তু সে তার ব্লগ সাইটকে একদল ছদ্মবেশীদের উদ্দেশ্যমূলক ইসলাম বিরোধী বলবো না তাদেরকে, ইসলাম বিদ্বেষী, বিকারগ্রস্ত নাস্তিকদের যে সাইডটা তিনি দিয়েছিলেন, যে ঘৃণার চাষ চলেছিল, আজ তার খেসারত দিতো হলো অভিজিতের মত বিজ্ঞান লেখককে!… ওফ্, সেকি গালাগালি তাকে নিয়ে তখন! মডারেট মুসলমান, হেফাজতের দালাল… কত কি! তিনি তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করেছেন সেটা।
“গালগল্প ২৪ ডট কমে” লেখাটা প্রকাশ হবার পর যথারীতি নিন্দা ও প্রশংসায় ভাসতে হলো তাকে। মূলত শিক্ষিত মুসলিমরা তার লেখার খুব অনুরাগী। তারা বলেন যে, স্যার, আপনি যেভাবে পুরো ঘটনাকে ব্যাখ্যা করেন তাতে সত্যটা প্রকাশ পায়। বিশ্বব্যাপী যে জঙ্গিবাদ জেগে উঠেছে তার জন্য ইসলাম ধর্মকে দায়ী করার যে সরলীকরণের চেষ্টা সেটাও তো একটা বর্ণবাদী প্রচেষ্টা! আপনার উদার, নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি এসময় খুব দরকার।… এমন কি মাদ্রাসা সংশ্লিষ্ট লোকজনও তার লেখার প্রশংসা করে। ফোন করে অনেকেই বলেন, আপনার সব কথার সঙ্গে আমরা একমত না, তবে আপনি যেভাবে মুসলমানদেরকে ও ইসলামকে সেভ করেন তার জন্য প্রশংসা করি। ইসলামের বিরুদ্ধে যে চক্রান্ত বিগত ১৪০০ বছর ধরে শুরু হয়েছে আজ সেটাকে জঙ্গিবাদী, জিহাদী আখ্যা দিয়ে একটা ধর্ম ও তার অনুসারীদেরকে সন্ত্রাসী বানানোর চেষ্টা হচ্ছে! আপনি সেই অপবাদ থেকে মুসলিম ও ইসলাম ধর্মকে রক্ষা করেন আপনার লেখার মধ্য দিয়ে। সেক্যুলারদের মধ্যে আপনি বেতিক্রম…।
প্রশংসা শুনলে কার না ভাল লাগে। তারও ভাল লাগে। তিনি তো ঘৃণা চান না। সবাইকে নিয়ে লড়তে চান। এই যে মাদ্রাসার লোকজনও তাকে সম্মান করে, তার মতকে গ্রহণযোগ্য মনে করে সেটা কি এই পাতি নাস্তিক সৈকত আর তাদের গুরুদের মত বিদ্বেষপূর্ণ হয়ে লিখলে সবাইকে সঙ্গে পেতেন? তিনিও তো সেক্যুলার, প্রগতিশীল, কই তার তো আস্তিক বিশ্বাসীদের সঙ্গে কোন সমস্যা হয় না। এই জন্যই তিনি সব সময় বলেন, অনলাইনে এই নাস্তিকগুলোই আমাদের সকল অর্জনগুলোকে ধ্বংস করে দিচ্ছে!…
মোবাইলটা এসময় বেজে উঠলো। ভুরু কুঁচতে চেয়ে দেখেন ব্লগার আহমেদ মতিন। মনে মনে বললেন, এই আরেক শাহবাগী আইছে! ফোন রিসিভ করলেন তিনি।
-হ্যা মতিন কি খবর?
-ভালো আছেন ভাইয়া?
-এই বয়েসে আর থাকা। তোমাদের খবর কি বল?
-এই আর কি… আচ্ছা ভাইয়া, ফারুকী সাহেব কি ঘৃণার চাষ করতেন? তাকে কোপানো হয়েছিল কেন?
সোজা হয়ে বসলেন তিনি। মতিনকে তিনি চেনেন, এই হারামজাদা আজকের বিকেলটাই না মাটি করে দেয়। সত্যি বলতে কি, সৈকতের মত চ্যাংড়া পোলাকে টার্গেট করাতে তিনি একটু অবাকই হয়েছিলেন। তিনি মনে মনে ধারণা করতেন মতিনই নেক্সড! আজকাল ঘৃণার জ্বালায় ওর লেখা পড়াই যায় না। হাটহাজারী মাদ্রাসায় গিয়ে নাকি ওর পেচ্ছাব করে আসতে ইচ্ছা করে! ছি: ছি:! এরকম ঘৃণা প্রকাশ করলে জনগণের একটা বড় অংশকে তারা কাছে পাবে? বাংলাদেশে মাদ্রসার সংখ্যা কত মতিন জানে? এদেরকে বাইরে রেখে ও কি ছাতামাতা করতে চায়? তিনি একটু কেশে বললেন, কোন ফারুকী?
-মাওলানা ফারুকী। আর সেই যে ইমাম মেহেদী দাবী করা এক পীরকে খুন করা হলো। তারা কতটা ঘৃণার চাষ করেছিলেন? তারা কি নাস্তিক ছিল? ইসলামের সমালোচনা করতো? মাওলানা ফারুকীকে টেলিভিশনের কারণে সবাই জানতো। তিনি কি করকম ধর্ম প্রচার করতেন সেটা সবাই জানে। সেই তাকেই বাসায় গিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে!
-আসলে তুমি আমার কাছে কি জানতে চাইছো?
-অভিজিৎ-ওয়াশিকুর-সৈকতরা ঘৃণার চাষ করে তার ফল ভোগ করেছে- আপনি এই দাবীটা করেন। ব্রুনোও তাহলে তাকে আগুনে পুড়িয়ে মারার জন্য নিজেই দায়ী। কারণ সে বাইবেল ও চার্চের যে বিশ্বাস তার বিরুদ্ধে গিয়ে ঘৃণার চাষ করেছিলেন। এসব তার না করলেও চলত তাই না? সূর্য যদি পৃথিবীর চারপাশে ঘুরে এটা বিশ্বাস করলে তো সূর্য রাগ করে ঘুরা বন্ধ করে দিবে না। বরং এরকম ফালতু তত্ত্ব পৃথিবীবাসীকে কি দিয়েছে? এক মুষ্ঠি ধান উৎপন্ন করে দিয়েছে? শুধু শুধু কোটি কোটি খ্রিস্টানকে দু:খ দিয়ে যে ঘৃণার আগুন জ্বালিয়ে ছিলেন- তাতে তাকেই পুড়ে মরতে হয়েছিল-কি বলেন ভাইয়া?
-মতিন, দেখো, অতীতে এসব নিয়ে তোমাদের সঙ্গে অনেক তর্ক হয়েছে। তোমরা যে ভুল পথে আছো সেটা আগেও বলেছি শুনোনি। কিন্তু শাহবাগ আন্দোলনের সময় দেখো আমার কথাটা ফলে গিয়েছিল। জনগণ যখন জানতে পারলো তেমরা নাস্তিক, নবীকে সমালোচনা করো, তখন আন্দোলনে জনগণের সমর্থনটা ভাটা পড়ে গেলো। এই জন্যই বলেছি, কিছু করতে চাইলে এইসব ঘৃণাটিনা বাদ দাও…
-জনগণ দিয়া আপনে মুড়ি খান গিয়া! শাহবাগে আমরা জড়ো হইছিলাম আমআদমি পার্টি খুলতে না! কসাই কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবীতে। পলিট্রিক্স করতে সেখানে আমরা যাই নাই। পাবলিক আমাদের সামনে আছে না পিছনে বাঁশ দেয়ার জন্য সেটা নিয়া আমরা ভাববো কেন? আমরা সামান্য লেখালেখি করি। আমরা নেতা না…।
-মতিন, তুমি মনে হয় কোন কারণে খুব উত্তেজিত, আমারও শরীরটা ভাল না। আজকে বাদ দাও, আমাকেও একটা অনুষ্ঠানে যেতে হবে। রাখছি ভাই…
-আজকে কেনিয়ায় একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪৭ জন খ্রিস্টান ছাত্রকে বেছে বেছে আল শাবাব খুন করেছে। ঐ খ্রিস্টান ছাত্রদের ঘৃণার চাষটা কি এই যে তারা খ্রিস্টান?
-আমাকে এসব বলছো কেন? আমি কি কেনিয়ায় এসব ঘটিয়েছি নাকি! এবার খানিকটা রেগে গেলেন তিনি। ছোকরাকে অনেক প্রশ্রয় দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে এর সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক চুকেবুকে দিবে আজকে।
-আপনি না, তবে আপনাদের মত লোকজন কেনিয়াতেও আছে। ওখানকার মুসলিমরাও ঠিক এভাবেই আল শাবাবকে প্রশ্রয় দেয়।
-কি আশ্চর্য! আমি কখন জঙ্গিদের প্রশ্রয় দিলাম! কি যা তা বলছো!
-মাদ্রাসাগুলোতে জঙ্গিবাদের চর্চা হয় সেই সত্যটিকে আপনি ডিফেন্স করেন। ধর্মীয় রাজনীতি করার অধিকারকে আপনি সমর্থন করেন এই যুক্তিতে যে ইউরোপ-আমেরিকাতে খ্রিস্টান মৌলবাদী রাজনৈতিক দলের রাজনীতি করার অধিকার আছে। ভারতে বিজেপি-শিবসেনার উদাহরণ দেন। অখচ আপনি ভাল করেই জানেন ইসলামী রাজনীতি আর অন্য ধর্মের রাজনীতিতে বিশাল ফারাক আছে। ইসলাম শুধু ধর্ম না, রাজনীতিও, অন্য ধর্মগুলোতে সরাসরি রাজনীতি নেই, দলগুলো ধর্মগুলোকে আশ্রয় করে নেয়…। ইসলামী মৌলবাদ আর আদার্স মৌলবাদ শক্তির বিপক্ষে লড়াকে কি এক কথা?
-সরি মতিন, তুমি বোধহয় দুনিয়ার সমস্ত কিছুর দায়ভার এরপর আমার উপর চাপিয়ে দিবে। সরি, এরপর তোমার সঙ্গে ভবিষ্যতে কথা চালিয়ে যাওয়া যাবে কিনা সেটা আমাতে ভাবতে হবে…।
ফোন রেখে দিয়ে তিনি আপনে মনে ফুঁসতে লাগলেন! এই উগ্র নাস্তিকগুলোকে শুধু শুধু কোপায় না! আমার মত প্রগতিশীল, সেক্যুলার লোক যখন এদের সহ্য করতে পারে না তাহলে জিহাদীরা আর কতটুকু সহ্য করতে পারবে? বিড়বিড় করতে লাগলেন তিনি। মতিনকে আচ্ছা করে ডলে দিতে ইচ্ছে করছে তার। না, না সেটা শাররীকভাবে নয়, শত হলেও তিনি প্রগতিশীল, কাউকে শারীরিকভাবে মারধোর করাকে তিনি সমর্থন করেন না। তবে মতিন যে লিস্টেড জঙ্গিদের কাছে তাতে কোন সন্দেহ নাই। তিনি অবাক হবেন না কালই যদি শুনেন মতিনের কল্লা নামিয়ে দিয়েছে জঙ্গিরা!…
সন্ধ্যায় একটা অনুষ্ঠান ছিল, সেখানে সভাপতিত্ব করে রাতে বাসায় ফিরে একটা স্টেটাস লিখলেন। মনটা তখন ভাল হয়ে গেলো। প্রশংসায় ভেসে গেলেন তিনি। মাদ্রাসা শিক্ষা এবং পাবলিক ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নামাজের ঘর বা মসজিদকে নিয়ে যে সমালোচনা করা হয় তার জবাব দিয়েছেন তিনি। তিনি দৃঢ়ভাবে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে মসজিদ রাখার পক্ষে। মাথা ব্যথা করলে মাথা কেটে ফেলার মত বোকামীর পক্ষে তিনি নন। তিনি লিখেছেন, একজন প্রগতিশীল মানুষ বলেই আমি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামাজ পড়ার অধিকারকে সমর্থন করি। আমি নিজে নামাজ পড়ি না তাই বলে মসজিদ উঠিয়ে দিতে বলবো- সেটা ঠিক না। আমাদের যেটা করতে হবে, ঐ মসজিদগুলোকে নিয়ে যেহেতু সন্দেহ আছে, বলা হয় জঙ্গিরা সেগুলো ব্যবহার করে জিহাদী কার্যক্রম চালায় তাই সেগুলোকে কর্তৃপক্ষ নজরদারী শুরু করতে পারে। সেখানে কুরআন শরীফ বা হাদিসের বইও রাখার দরকার দেখি না। কারণ এসবের আড়ালে নানা রকম বিভ্রান্তমুলক ধর্মীয় বইও রাখার সুযোগ তৈরি হয়। নামাজ পড়তে তো কুরআন শরীফের দরকার হয় না। তাই কুরআন বা হাদিসগুলো ওখান থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। নামাজ শেষে যাতে কেউ বেশি সময় মসজিদে সময় না কাটায় সেটা খেয়াল রাখতে হবে। একইভাব মাদ্রাসাগুলোতে দেখতে হবে ক্লাশ রুমে কেউ পাঠ্যসূচির বাইরে গিয়ে রাজনীতির বয়ান দিচ্ছে কিনা। বাইরে থেকে কোন বহিরাগত সেখানে অবস্থান করছে কিনা- এসবকে নজরে রাখলেই হবে। মাদ্রাসা শিক্ষাকে উঠিয়ে দেয়ার কথা যারা বলেন তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন।মাদ্রাসার অতীত গৌরবের কথা আমাদের ভুললে চলবে না…
শিক্ষিত মডারেট মুসলমানরাই লাইকের বন্যা বইয়ে দিলো। সবাই বলছে, স্যার অসাধারণ! গ্রেট! স্যলুট! আড়াইশো কমেন্টস। নাস্তিকগুলো আগের মতই খোঁচাতে লাগলো। তিনি ওদের কোন প্রশ্নেরই উত্তর করেননি। ঠিক করেছেন, ওদের সঙ্গে আর কোন তর্কে তিনি জড়াবেন না। মূর্খ ইডিয়েটগুলোর কোন পড়াশোনা নেই, ওরা আসছে বিশ্ব রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে! বেহুদা সময় নষ্ট…
ইনবক্সে এক মাদ্রাসার ছাত্র এলো কথা বলতে–আসসালুমু আলাইকুম স্যার।
-অলাইকুম সালাম।
-স্যার আমি বি-বাড়ীয়া মাদ্রাসার একজন ছাত্র। আপনাকে ধন্যবাদ জানাতে আসছি। আজকের লেখাটা ভাল হয়েছে। আপনি মাদ্রাসার পক্ষে লিখেছেন।
-ধন্যবাদ আপনাকে। মাদ্রাসার ছাত্ররা যে ইন্টারনেটে যুক্ত হচ্ছে এটা বড় আশার কথা।
শুতে যাবার আগে একটা ফোন পেলেন। অচেনা নাম্বার দেখে ধরবেন না ঠিক করেও কেন যেন ধরে ফেললেন। রিসিভ করে বললেন, হ্যালো…
-সরাসরি বললেন না কেন কুরআন আর হাদিসকে নিষিদ্ধ করতে!
-মানে? আপনি কে?
-আপনি ভদ্রতার মুখোশ পরে, মিষ্টি ভাষায় ইসলামকে সংশোধনের আবদার করেন বরাবর!
-কবে বললাম এরকম কথা!
-আপনি লিখেননি, হাদিসের যে সব অধ্যায় নিয়ে বেশি বিতর্ক হয়, জিহাদ, বিধর্মীদের বিষয়ে কথাবার্তা, সেসবকে সেলেবাস থেকে বাদ দিয়ে ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ানোর চেষ্টা করা যেতে পারে?…
-সেটা তো তুরষ্কের সরকার যুবকদের জন্য জিহাদী হাদিসকে বাদ দিয়ে বুখারী শরীফের যে সংস্করণের ঘোষণা দিয়েছিল তার প্রেক্ষিতে আমাদের দেশে করা যায় কিনা সেটা বলেছি।
-ইসলামকে নিয়ে এত বড় বেয়াদপী! আপনি জানেন হাদিস নবীর জীবনের প্রামাণ্য দলিল। আপনি তাকে যুবকদের উপযোগী করে সংস্কুরণের কথা বলে এটাই প্রমাণ করতে চান, আল্লাহর নবীর জীবন যুবকদের জন্য বিপদজনক!
-না মানে আমি তো তুরষ্ক সরকারের…
-এই কুত্তার বাচ্চা! তুরষ্ক কি তোর বাপ লাগে! তুরষ্ক তো তোদের মত সেক্যুলাররা চালায়। ওরা তো মুসলমানই না!…
শুনেন, আপনি কে বলছেন… এভাবে গালাগলি…
-আল্লাহো আকবর! আগামী সাত দিনের মাথায় ইসলাম ও আল্লাহ নবী মুহাম্মদের (সা:) সম্মান রক্ষায় তোকে হত্যা করা হবে। তোকে কোপানোটা এখন আমাদের জন্য জায়েজ হয়ে গেছে! আমরা যাকে মারি তাকে আগে থেকে জানিয়ে রাখি। তুই প্রস্তুত থাক। মনে রাখবি, একজন ইসলাম ও নবী বিদ্বেষী কাফের ও নাস্তিককে মারতে আমাদের পা দিয়ে পিঁপড়া ডলে মারার চেয়ের বেশি কিছু মনে হবে না…।
ফোন কেটে গেলো। ফোনে হুমকি জীবনে এই প্রথম। সত্যি সত্যি কেমন ভড়কে গেছেন তিনি। এটা কি নিছক হুমকি? নাস্তিকদেরই কেউ ভয় দেখিয়ে মজা করছে না তো? আশ্চর্য, কোন জঙ্গিকে তার সন্দেহ হচ্ছে না। তিনি যা লেখেন, তাতে খুব বেশি তাদের বিরক্ত হবার মত কিছু থাকে না, অন্তত মর্ডার করে ফেলার মত তো কিছু না। কে-ফোর্স বা সিপি গ্যাংয়ের কেউ হয়ত গালাগালি করে মনের সুখ মিটিয়ে নিয়েছে। আশ্চর্য যে ধর্মীয় মতবাদীরা না, এই দুই গ্রুপই ধর্মের গঠনমূলক সমালোচনাও সহ্য করতে পারে না! ছাগুদের চাইতে এদের এ্যালার্জি অনেক বেশি। … মনটা অস্থির হয়ে আছে। সামান্য একটা হুমকিতে ভড়কে যেতে নিজের কাছেই লজ্জ্বা লাগছে। না, ধুর, এত ভয় পেলে চলে নাকি! মতিন নাকি হুমকি পেতে পেতে তার গা সওয়া হয়ে গেছে। …তবু একটা জিডি করে রাখা তো ভাল। ঘুমুতে যাবার আগে তাই ঠিক করলেন, সকালে একবার থানায় গিয়ে একটা জিডি করে আসবেন।
পরদিন সকালের মিষ্টি আলোতে রাতের হুমকিটাকে অবাস্তব বলে মনে হলো। অফিসের তাড়া, কফির পেয়ালা, চকচকে পালিশ করা জুতো আর ইস্ত্রি করা সাহেবী পোশাকের আয়োজনে রাতের জীবননাশের হুমকিকে মনে স্থান দেবার মত কিছু মনে হলো না। তিনি অফিসে চলে গেলেন। বিকেলে এক তরুণ সাহিত্যিকের একটি প্রকাশিত বইয়ের উপর আলোচনা অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণ ছিল। সেখান থেকে রাতে বাসায় গিয়ে ফেইসবুকে বসলেন। পোস্ট লিখলেন। …সাপ্তাহের তিন-চারদিন একই রকম ছক বাধা নিয়মে চলতে লাগলো। তিনি বেমালুক ভুলে গেলেন তাকে হুমকি দেয়ার কথা। ফেইক থ্রেড। অনলাইনে কত বিকৃত মনের মানুষের আনাগোণা আছে। তাদেরই কেউ নাম্বারটা জানা থাকায় গালাগালি করে, অবদমিত হত্যার ইচ্ছাকে একটু দুধের স্বাদ ঘোলে মিটিয়ে নিল আর কি…।
এরপর হুমকি দানের পঞ্চম ও ষষ্ঠ দিন অতিবাহিত হয়ে গেলো। তার মনে আর কিছুই নেই। সম্পূর্ণ বিস্মৃত হয়ে গেছেন তিনি। সপ্তম দিনের মাথায় তিনি রাতেরবেলা কাজ শেষে বাসায় ফিরছিলেন। গলিতে ল্যাম্পপোস্টের ঘোলাটে আলো জায়গাটাকে আবছা অন্ধকার করে রেখেছে। তার বাসাটা গলির যেদিকে মোচড় নিয়েছে তার বাঁ দিকে অন্য একটা গলি চলে গেছে। সেই গলির মুখটা অন্ধকার। তিনি ঠিক এ সময় কি ভাবছিলেন আমরা জানি না। হয়ত নতুন কোন পোস্টের কথা। হয়ত কারুর গাত্রদাহের কথা চিন্তা করে লেখাটি নিয়ে ভাবছিলেন।… কিছু একটা ভাবতে ভাবতে তিনি ধীরে-সুস্থে গলি ধরে হাঁটছিলেন। রাত এগারোটার সময় পথটা নিরব। গলিতে তিনি ছাড়া আর কেউ নেই।…
তিনি বাসার কাছে এসে মোচড় নিতেই সেই অন্ধকার গলি ফুঁড়ে বিদ্যুৎ গতিতে দুজন আততায়ী এসে পেছন থেকে চাপাতী দিয়ে কোপাতে শুরু করে দিলো তাকে! নিজের কন্ঠ থেকে অচেনা স্বরের ভয়াত্ব একটা আওয়াজ শুনতে পেলেন তিনি। প্রথম কোপটা খেয়েই তিনি পিছন ফিরে দেখতে পেলেন অল্প বয়েসি দুটো ছেলে ভয়ংকর চোখ-মুখ করে তাকে আঘাত করে যাচ্ছে…। তিনি সামনে হাত বাড়িয়ে আঘাতগুলোকে আটকাতে চাচ্ছিলেন কিন্তু অবশের মত নিজেকে হাঁটু ভেঙ্গে বসে পড়তে দেখলেন। পৃথিবীটা ঘুরছে তখন..ভোঁ ভোঁ ভোঁ… পথে লুটিয়ে পড়লেন তিনি।… মাথাটা তখনও শেষবারের মত কাজ করছে। ধুলো হয়ে যাবার নিয়তি নিয়ে মগজটা শেষবারের মত শুধু একটা কথাই মনে করতে পারলো- তোকে কোপানোটা এখন আমাদের জন্য জায়েজ হয়ে গেছে…।
গলা দিয়ে ঘর্ ঘর্ শব্দ বের হতে হতে তার শরীরটা নিথর হয়ে গেলো এক সময়। এই শহরের বিনোদন প্রেমি জনতা ততক্ষণে মৃতদেহের ছবি মোবাইল ফোনে তুলে ফেইসবুকে শেয়ার করে দিয়েছে…। ঘন্টাখানেকের মধ্যে জানাজানি হয়ে যাওয়ার পর কোন এক কাগজের সাংবাদিক কোন এক বুদ্ধিজীবীকে বলছিল, স্যার ধরন দেখে মনে হচ্ছে জঙ্গিরাই কাজটা করেছে… জনৈক সেই বুদ্ধিজীবী দ্রুত নিরপেক্ষ মূর্তি ধারণ করে সাবধান করে দিলেন তরুণ সাংবাদিককে, – দেখো, তদন্ত হওয়ার আগে কোন একটা পক্ষকে দায়ী করে ফেললে আসল অপরাধীরাই পাড় পেয়ে যাবে। তোমরা সাংবাদিকরা কেন যে এই দিকটায় মনোযোগ দেও না। যাই হোক, খবরটা খুব খারাপ। খুব খারাপ লাগছে শুনে। এসব শুনলে আমার প্রেশার বেড়ে যায়…
রাষ্ট্র যেখানে ভিন্নমতালম্বীদের, ধর্মালম্বীদের ধারন করতে দ্বিধান্বিত, কুন্ঠিত তখন এ গল্প ঘুরেফিরে বাস্তব হয়ে যাওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। তবে, নেতিবাচক ঘটনার ইতিবাচক কাজ হবে, যারা এখন উঠে পড়ে নাস্তিকদের গালি দিয়ে নিজেদের তুলসীপাতা ইমেজ তৈরীতে ব্যস্ত, তারা যখন জানবেন নিস্তার তাদেরও নেই, হয়তো মোটিভেশান কমে আসবে। জাকির তালুকদারের নাস্তিকদের গালি দেয়া সিরিজ দেখে আমি বাক্যরহিত। কী করে লোকে পারে
সবকিছু নষ্টদের অধিকারে চলে যাচ্ছে। এখন নিজে নষ্ট না হতে পারাটা খোঁচায় দিন্রাত! বেশতো কেটে যেত জীবন জেহাদের ময়দানে, কল্পিত জান্নাতের আশায় পৃথিবীটাকেই নরকে পরিনত করতে করতে!
ফেসবুকে লেখার কিছু অংশ পড়ার পরে পড়ার অপেক্ষায় ছিলাম! বিদুৎ না থাকায় পারিনি গতকাল। লেখাটির জন্য ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন, পারলে সাবধানে থাকার চেষ্টা করবেন।।
ধন্যবাদ পরাগ।
দারুণ…………!!!
সুষুপ্ত দা’র লেখনী গুলো কেমন যেন নিজের ভেতরে মোচড় দেয়।
ধন্যবাদ আপনাকে
https://www.facebook.com/bdnews24/posts/10155473039185601
– ‘তোমাদের ঘৃণা করতেও ঘৃণা হয় আমার’
আমি বন্যার লেখাটি- ‘তোমাদের ঘৃণা করতেও ঘৃণা হয় আমার’ পড়ার পর ভেবেছিলাম অন্য ব্লগে ও বিডি নিউজ২৪এ শেয়ার করবো। মনে করেছিলাম, সীমারেরও একটা মাটির দেহ, একটা মানুষের মন থাকতে পারে, লেখাটা পড়ে হয়তো ওদের মনে কিছুটা মনুষ্যত্ব ক্ষণিকের তরেও জাগতে পারে। মানতে পারে কাজটা অন্যায় হয়েছে। বিডি নিউজ২৪ তাদের ফেইসবুকে লেখাটি শেয়ার করেছে। এখানে মুসলমান ভাইদের প্রতিক্রীয়া দেখে আর কিছু বলার মত ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। ২৬৫টি মন্তব্য এ পর্যন্ত পড়েছে তা কিছুটা নমুনা এখানে তুলে দেয়ার ইচ্ছে ছিল, সঙ্গত কারণে দিলাম না শুধু লিংকটা দিলাম। এই বক্তব্যগুলো শতকরা হিসেবে ৯৫ % বাংলাদেশের মুসলমানের বললে বোধ হয় ভুল হবেনা।
যে ৫ ভাগ বাকী আছে যারা বান্যা আপার সাথে মর্মাহত, তারা হয় বিধর্মী, নাস্তিক, সংশয়বাদী… এরচেয়ে কষ্টের আর কি হতে পারে!
@ সুষুপ্ত পাঠক,
৫ ভাগও বাকি আছে কি না তাতেও সন্দেহ হচ্ছে। বন্যার লেখার উপর মন্তব্য, সদালাপে অভির আর এখন ফরিদ আহমেদের মুল্যায়ণ, অমি রহমান পিয়ালের লেখা এবং আমারব্লগের বিখ্যাত লেখক ডাঃ আইজুদ্দীনের স্ট্যাটাস ও সেখানকার মন্তব্য সমুহ, প্রত্যেকটা ব্লগার খুনের পর সরকার ও রাজনীতিবিদদের নির্লিপ্ততা পরিষ্কার বলে দিচ্ছে বাংলাদেশ পুরোপুরিই চলে গেছে নস্টদের হাতে। রিল্যাক্টেন্টলি আমার এখন বলতে ইচ্ছে হয়, লেখালেখি চালিয়ে যাওয়া সময়ের অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়।
@আকাশ মালিক, আমার একজন অমুসলিম বন্ধু যে কিনা নাস্তিক নন, কিন্তু ধর্ম নিয়ে বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই, বরং ধর্মের (হিন্দু ধর্মের) একজন সমালোচক, ব্যঙ্গকারক সে একদিন বলল, মুসলিম ঘর থেকে আসা নাস্তিকরাও রক্তে কয়েক শতাব্দির হিন্দু বিদ্বেষ বহন করে চলেছে। কথাটা মিথ্যে বলার মত মনের জোর এখন আর নেই। কারণ অনেক আগেই ইসলামের সমালোচনাকারীদের “ছুপা মালু” বলে মৌলবাদীদের যে দাবী ছিল অনেক মডারেট মুসলিম নাস্তিকও পরবর্তীকালে একই আশংকা প্রকাশ করেছেন।
ডাক্তার আইজুর ফেইসবুক স্ট্যাটাস পড়েছো? অভির বিরুদ্ধে সদালাপীরা হুবহু একই কাজ করে চলেছে প্রায় তেরো বছর যাবত। অভিদের খুনী মাদ্রাসা থেকে তৈরী হয় নি, তৈরী করে ব্লগে ইসলামের ফেরীওয়ালা তথাকথিত মডারেইট মুসলিমরা, এরাই খুনের হুকুমদাতা।
বিডি নিউজ ২৪ এ এক বুদ্ধিজীবীর প্রলাপ পড়ে আসলাম মাত্র। কবি হাইনরিখ হাইনে নাজি উন্মতত্তা এর সময় বড় দুঃখ নিয়ে বলেছিলেন
যে সমাজে এই বুদ্ধিবেশ্যারা মুক্তচিন্তার বিপরীতে ধর্মভিত্তিক শিক্ষার পক্ষে কলম ধরে, তাদেরও চাপাতির কোপ থেকে রেহাই নেই।
তারা ভাবছে ইসলামকে উদারভাবে তুলে ধরে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে। তারা জানে না এই “উদারতাকে” ইসলাম অবমাননার বলে একদিন তাদের উপরও চাপাতী পড়বে!
@ সুষুপ্ত পাঠক,
মৌলানা ফারুকী হত্যা এর বাস্তব প্রমাণ। মন্তব্য করার, কিছু বলার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি। এখন সগুধু বারবার মনে পড়ে হুমায়ুন আযাদ বলেছিলেন-‘সবকিছু চলে যাবে নস্টের হাতে’।
আর মনে পড়ে আমাদের সিলেটের বাউল কবি আব্দুল করিমের গানের একটি কলি-‘ ভাবিলে কী হবে গো, যা হবার তা হয়ে গেছে’।
আর যে কিছু করার আছে সেটা নিয়েই আমি আজ সন্দিহান। অভিজিতের খুনী তৈ্রীর কারখানা হিসেবে এই ব্লগের নাম একটি পত্রিকায় এসেছিল। আমি এদেরকে খুনের উস্কানীদাতা হিসেবে সর্বপ্রথম দায়ী মনে করি। মুক্তমনার জন্ম থেকে এরা অভির পিছু লেগেছিল আজও আছে। বলেছিলাম অভিজিতকে এরা দুনিয়ার সামনে কীরূপে তুলে ধরেছে তা নিয়ে লিখবো, আর বোধ হয় প্রয়োজন হবেনা। নিচের তিনটি লেখা ও এর মন্তব্যগুলো পড়লে এ দেশের ভবিষ্যত মোটামুটি অনুমান করা যায়, যা হুমায়ুন আযাদ আগেই প্রেডিকশন করে গিয়েছিলেন।
– তোমাদের ঘৃণা করতেও ঘৃণা হয় আমার
– মাদ্রাসা বন্ধই সমাধান নয়
– অভি-পূজারীদের ভাষাতেই বলি: এত বেশি অন্যায় প্রকৃতি হয়তো সহ্য করেনি!
কাহিনীটা কাল্পনিক হলেও নির্মম বাস্তব যে হতে পারে তার উদাহরন আমার শেষ লেখাটায় আছে।
চিন্তা-ভাবনায় মিল পেয়ে সুখি অনুভব করছি।