অভিজিৎদার মৃত্যুর পর আমার প্রথম অনুভূতি হল অবিশ্বাস। মাত্র দশ বারো ঘণ্টা আগে একজনের সাথে কথা হচ্ছিল। আমাকে মজা করে বলল, উদাসদা আপনি দেশে আসেন না কেন? আসেন, এসে বইমেলাতে ঘুরে যান। এই যে অভিজিৎদাও তো এসেছে। কত মজা করছে মেলায় ঘুরে। আমাদেরকে দাওয়াতও দিয়েছে তার বাসায়। আপনিও এসে আমাদের দাওয়াত দেন। সেই অভিজিৎদা নেই। প্রথমে শুনলাম আক্রমণ হয়েছে। তড়িঘড়ি ফেসবুক আর নিউজ খুলে খোঁজ নিতে নিতে শুনি তিনি নেই। এরকম কখনো হয় নাকি?
অবিশ্বাস কেটে গেলে তারপরে হল ভয়। প্রচণ্ড একটা ভয়ের স্রোত শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে গেল বারবার। নিজের জন্য ভয় না। দেশের জন্য ভয়।একটা মানুষকে হুমকি দেয়া হল মেরে ফেলব বলে, তারপরে সত্যি সত্যি তাকে মেরে ফেলা হল। তাকে একটু রগড়ে দেয়া নয়, আহত করা নয় একেবারে জায়গা মতো আঘাত করে সরাসরি মেরে ফেলা হল। এরকম প্যাটার্ন নিয়মিত পাকিস্তানে দেখা যায়। আমাদের দেশেও কি সেটা সম্ভব? ভয়ের কারণ নতুন করে বুঝতে পারা, এটা আমাদের দেশেও সম্ভব। পাকিস্তান আর বাংলাদেশ একই বৃন্তের দুটি ফুল (অভিশপ্ত ফুল) ছিল। এই বাস্তবতা চাইলেও অস্বীকার করা সম্ভব না। বহু রক্ত ঝরিয়ে বৃন্ত ছিঁড়ে সেই অভিশাপ থেকে আমরা বের হয়ে এসেছি ৭১ এ। কিন্তু পাকিস্তান আর আমাদের মূল একই জায়গায় গাঁথা ছিল। চাইলেই বাংলাদেশের পক্ষে খুব সহজে পাকিস্তানের রাস্তায় চলে যাওয়া সম্ভব। পাকিস্তানে আজকে যা যা হচ্ছে, তার সবই আমাদের দেশে অদূর ভবিষ্যতে হতে পারে। হবার জন্য যা যা মালমসলা দরকার সবই আমাদের দেশে মজুত আছে। বাংলাদেশকে একটা সিঙ্গাপুর বা একটা জাপান হবার জন্য অনেক কষ্ট করতে হবে। যোগ্য নেতা লাগবে, মানুষের মন মানসিকতায় ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশকে পাকিস্তান হবার জন্য খুব বেশী কষ্ট করতে হবে না। কোন নেতার দরকার হবে না। চুপ করে কিছু না করে বসে থাকলেই হবে। এই বাস্তবতা নতুন করে বোঝার কারণেই তীব্র ভয়।
ভয় খানিকটা কেটে গেলে এরপর হল আশা। এই পর্যায়ে এসে মনের মাঝে একটু খুশিও কি উঁকি দিল? হয়তো। চরম স্বার্থপর মানুষের মতো মনে মনে ভাবলাম, অভিজিৎদা তো চলেই গেলে। সেটা নিয়ে আফসোস করে লাভ নেই। কিন্তু এভাবে তার চলে যাওয়ার কারণে এবার হয়তো দেশ একটা বড় ধাক্কা খাবে। এত বড় অন্যায়কে মানুষ কিছুতেই মেনে নিবে না। দলেদলে মানুষ রাস্তায় নেমে আসবে। অভিজিৎদা একজন নামকরা লেখক। প্রথম শক্ত প্রতিবাদটা আসবে লেখকদের কাছ থেকে। কলম দিয়ে রক্ত ঝরবে। আশার পর্যায় কেটে গিয়ে এবার আমার অনুভূতি অবাক এবং বিস্ময়ের রাজ্যে প্রবেশ করলো। বিস্মিত হয়ে দেখলাম লেখক গোষ্ঠীর বড় অংশের কলম দিয়ে রক্ত না, মূত্র ঝরছে। দেশের নামকরা লেখকেরা বেশিরভাগই বহুমূত্র রোগে আক্রান্ত। তাদের বড় ভয় কখন তার জনপ্রিয়তার কোন জায়গাটা কেটে যায়। কেটে গেলে সে তো আর শুকাবে না। আমি আশা করি প্রতিদিন দেশের সিনিয়র নামকরা লেখকেরা পত্রিকার পাতায় গর্জে উঠবেন। তার বদলে দেখতে পাই ‘বিজ্ঞান চাই, বিজ্ঞানবাদিতা চাইনা’ টাইপের ফরহাদ মজহারীয় মূত্র বিসর্জন।
অভিজিৎদার পিতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। হত্যা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একেবারে কেন্দ্রে। যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেশের নানা গণ আন্দোলনের সময় মুখ্য ভূমিকা পালন করে এসেছে তারা কি মেনে নিবে তাদের বুকে ঘটে যাওয়া এত বড় অন্যায়? নিশ্চয়ই ছাত্র শিক্ষক সবাই মিলে গর্জে উঠবে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে, মৌলবাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু তেমন কেউ গর্জে উঠে না। কেউ চিৎকার করে বলে না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রে কিভাবে শতশত মানুষের সামনেই হুমায়ূন আজাদকে কোপানো হয়, অভিজিৎ রায়কে কোপানো হয়। দেশের সবচেয়ে সম্মানজনক বিশ্ববিদ্যালয়ে এই অসম্মান কিছুতেই মেনে নেয়া যায়না। কিন্তু অবাক হয়ে দেখি, সবাই বেশ মেনে নেয়। কেউ তেমন গর্জে ওঠে না।
অভিজিৎদা সারাজীবন মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়েছেন, মুক্তিযোদ্ধা পিতার যোগ্য সন্তান মুক্তিযুদ্ধকে বুকে ধারণ করে তার নিজের যুদ্ধ চালিয়ে গেছেন। তাই ভাবলাম দেশের মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থাকা আওয়ামীলীগ নিশ্চয়ই এবার গর্জে উঠবে। এত বড় অন্যায় মেনে নিবে না। অবাক হয়ে দেখলাম আওয়ামীলীগের বড় বড় নেতারা চুপ। তাদের কেউ কেউ চুপে চুপে গিয়ে অভিজিৎদার পিতাকে সান্ত্বনা আশ্বাস দিয়ে আসলেও সেটা যেন মিডিয়াতে হাইলাইট না হয় সে ব্যাপারে প্রবল প্রচেষ্টা চোখে পড়ে। চুপ থাকা তাও কোনভাবে মেনে নেয়া যায়। কিন্তু এই আওয়ামীলীগের ছোট্ট আরেকটা অংশ কওমিলিীগ সেই চুপ থাকার মধ্য দিয়েও গেল না। আমি বেশ মন দিয়ে এই গ্রুপটার দুই একজনের কার্যকলাপ দেখে গেলাম কয়দিন ধরে। তারা প্রথমে বলার চেষ্টা করলো, অভিজিৎদা নিজের দোষেই মরছে। মুক্তমনারা সবাই ফারবীর ইয়ার দোস্ত ছিল, তাই দোস্ত দোস্তকে মেরেছে। তারপর বলল অ্যটেনশন পাবার জন্য আসলে আসিফ মহিউদ্দিন মেরেছে অভিজিৎদাকে। মাঝখানে দুইদিন ধরে টাকা হালাল করার জন্য শামিম ওসমান আসলে যে কত ভালো লোক, তার বিরুদ্ধে সবই মিডিয়ার চক্রান্ত সেটা নিয়ে প্যানপ্যান করলো। তারপর দম নিয়ে দুইদিন পর এসে বলল, আসলে সচলায়তনের চক্রান্তে অভিজিৎদা খুন হয়েছে। সচলই খুন করেছে অভিজিৎদাকে যেন তারা মুক্তমনা থেকে উপর উঠতে পারে। এবং সবশেষে উপসংহার আসলে ছাগু এবং খাসীর ( অভিজিৎ রায়ের মতো উগ্র নাস্তিক!) মধ্যে খুব একটা ফারাক নেই। এরা একে অন্যকে মারবে মরবে, এই ভ্যাজালে শুধু শুধু আওয়ামীলীগকে জড়িয়ে দেশে অশান্তি সৃষ্টির মানে নেই। এক অর্থে এইসব কওমি ঝাণ্ডা ধারী আওয়ামীলীগকে মৌলবাদীদের থেকেও বেশী ভয়ঙ্কর মনে হয়। জানা কথা যে কোন হাইব্রিড জিনিস সবসময়ে বেশী ভয়ঙ্কর হয়। মৌলবাদী জামাতি থেকে মৌলবাদী আওয়ামীলীগ আরও বেশী ভয়ঙ্কর, মাদ্রাসার গছাগুর চেয়ে পিএইচডি করা লছাগু বেশী ভয়ঙ্কর, নাস্তিককে কোপানো ধর্মান্ধের চেয়ে সেই কোপ দেখে মিটিমিটি হাসা সুশীল অনেক বেশী ভয়ঙ্কর!
অভিজিৎদা আমাদের বুয়েটের ছাত্র এবং নামকরা স্কলার ছিলেন। আমি ভাবলাম আর কেউ প্রতিবাদ করুক না করুক বুয়েটের সবাই এবার গর্জে উঠবে। এর আগে একবার ভিসির পদত্যাগ না কোন এক ইস্যুতে দেখেছিলাম ক্যাম্পাসে অনেকেই রক্ত দিয়ে প্রতিবাদ করেছিল। কোন কথার কথা না, সত্যি সত্যি সূচ ফুটিয়ে গায়ের রক্ত বের করে বোতলে ভরে কি কি সব কাণ্ড করেছিল। আর এবারে তাদের প্রতিষ্ঠানের একজনকে এভাবে কুপিয়ে মেরে ফেলা হবে প্রতিষ্ঠানের মাত্র এক মাইলের মধ্যের একটা জায়গাতে। আবেগি বুয়েট ছাত্ররা কি ছেড়ে দিবে? অবাক হয়ে দেখলাম, হ্যাঁ ছেড়ে দিবে। প্রতিবাদ যে হয়নি তা নয়। আমি একবার বুয়েটের কিছু ছাত্রের তাদের টিউশনি ছাত্রী ফেটিশ নিয়ে এখানা গল্প লিখেছিলাম খোঁচা দিয়ে। সেটার কারণে যা প্রতিবাদ হয়েছিল অভিজিৎদার জন্য তার অর্ধেক প্রতিবাদও বুঝি হয়নি। বাপরে বাপ, সে কি প্রতিবাদ। দুই বছর আগের লিখা গল্প, এখনো অনেকে থেকে থেকে জ্বলে উঠে সেই নিয়ে। কত বড় সাহস, প্রতিষ্ঠানের অপমান করে। না হয় আমরা গোপনে বুয়েট বুয়েট মিলে ছাত্রী পড়াতে গিয়ে কবে কোন ছাত্রীর ব্রা দেখা গেল আর কোন ছাত্রী পা গিয়ে একটু ছুঁয়ে দিল সেগুলো নিয়ে একটু দুষ্টু মিষ্টি আলাপ করি। কিন্তু তাই বলে বাইরে সবার সামনে বাকি সব হাবিজাবি প্রতিষ্ঠানের হাবিজাবি লোকেদের সামনে এইসব হাবিজাবি কথা ফাঁস করে প্রতিষ্ঠানের এত বড় অপমান কি সহ্য করা যায়? না, যায়না। তবে তার প্রতিষ্ঠান থেকে সামান্য দূরে প্রতিষ্ঠানের একজনকে কুপিয়ে মারলে প্রতিষ্ঠানের তেমন অপমান হয়না। বিশেষ করে সেই লোক যদি নাস্তিক হয়ে থাকে তবে তো আরও হয়না। তাই সেটা দিব্যি সহ্য করা যায়। এমনকি অভিজিৎ রায় হত্যা তদন্তের জন্য একজন বুয়েট শিক্ষককে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এই অপমানটুকুও অভিজিৎ রায় হত্যার অপমান থেকে বেশী গায়ে লাগে লোকের। সেই নিয়ে গর্জে ওঠে লোকে। অভিজিৎদার জন্য তেমন কেউ তেমনভাবে গর্জে ওঠে না।
অবাক হয়ে তাই দেখি, কেউ গর্জে উঠে না। শুধুমাত্র গুটিকয়েক লোক একঘেয়ে সুরে ঘ্যানঘ্যান করে যায়, ও ভাই এক মাস চলে গেল। কিছু তো হল না বলে বলে। সেটাও খুব বেশিদিন বলার সুযোগ হবে না। ত্রিশ লাখ মৃত্যু হজম করে ফেলে এই দেশের কিছু না করা লোকজন। বিচার চেয়ে একটার বেশী দুটো কথা বলে বিরক্ত হয়ে বলে, আর কত মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ব্যবসা করবেন। আর অভিজিৎ রায় মাত্র একজন মানুষ। তাই এই ক্ষেত্রে আরও জোর গলায় সবাই থামিয়ে দিবে, ‘আর কত ব্যবসা করবেন অভিজিৎ রায়কে নিয়ে’ বলে।
স্বাধীনতার অর্থ একেকজনের কাছে একেক রকমের। আমার কাছে সহজ। আমার কাছে স্বাধীনতা মানে পাকিস্তান না হওয়া। আমরা স্বাধীন মানেই হচ্ছে আমরা পাকিস্তানের অংশ নই, তাদের মতবাদ অর কার্যকলাপের সাথে একমত নই। আমার কাছে তাই স্বাধীনতা দিবস মানে ‘হ্যাপি বাড্ডে বাংলাদেশ’ বলে চিক্কুর দিয়ে দুইটা মোমবাতি জ্বালানো না। আমার কাছে স্বাধীনতা দিবস মানে নতুন করে একবার মনে করিয়ে দেয়া, আমরা একসময় পাকিস্তান ছিলাম। এখনও আমাদের রক্তে পাকিস্তান রয়ে গেছে। সেই দূষিত রক্ত পরিষ্কারের চেষ্টা করে যাওয়া আর পুনরায় পাকিস্তান না হয়ে যাওয়াই অনেক রক্তে অর্জন করা স্বাধীনতাকে রক্ষা করার অপর নাম। বনের পাকিস্তান চলে গেছে ৭১ এ। মনের যে পাকিস্তান মৌলবাদের নাম নিয়ে জুড়ে বসেছে সেটা কবে যাবে? যদি নাই যায় আর যদি বাংলাদেশ আরেকটা পাকিস্তানেই পরিণত হয় তবে এই ত্রিশ লক্ষের আত্মত্যাগ, এই স্বাধীনতা আসলেই অর্থহীন।
‘বনের পাকিস্তান চলে গেছে ৭১ এ। মনের যে পাকিস্তান মৌলবাদের নাম নিয়ে জুড়ে বসেছে সেটা কবে যাবে?” আমার এক জেঠিমা যে বলতেন, বনের বাঘে খায় না মনের বাঘে খায়। তবে কি আমাদের মনের বাঘেই খাবে?
আমি তো তাজ্জব হয়ে যাই দেশের মানুষের তথাকথিত দেশপ্রেম (মতান্তরে দেশফেটিশ) দেখে!
ভারতের কোনো আবাল মওকা মওকা ভিডিও বানালে কিংবা লাক্স সুন্দরী শাড়ীর উপরে ব্লাউজ পরলে যতগুলি মানুষের থেকে প্রতিবাদ মুখর বক্তব্য দেখা যায় তার এক শতাংশ পরিমান আমি জলজ্যান্ত অভিজিৎ রায় বা ওয়াশিকুর বাবুর খুনের প্রতিবাদে হতে দেখলামনা।
উল্টো দেখি গনজাগরণ মন্চের কর্ণধারেরা “এপ্রিল ফুলের অপকারীতা ও ইসলামের ইতিহাস” টাইপের পোস্ট দিয়ে নিজেদের মুসলমানী প্রচারে ব্যস্ত।
আমিও আশাবাদী-তবে তা দেশের ঠিক পথে চলার ব্যাপারে নয়, বরং উল্টো পথে ভুল রথে খুব দ্রুত চলতে গিয়ে দেশের সবার পিঠ দেয়ালে ঠেকার ব্যাপারে। যেমনটা হয়েছিল ২৫ মার্চ ১৯৭১ -এ।
আমরা যে বাংলাদেশ চেয়েছিলাম সে-ই বাংলাদেশ তো কবেই বাংলাস্থান হয়ে গেছে,সেটা আমাদের কথা বলার আর কোনো ক্ষমতা ধারন করে না ।
আমাদের অধিকার আমাদেরকেই কড়ায় গন্ডায় আদায় করে নিতে হবে।
জয় বাংলা।
লিখে যাবই, কালি দিয়ে লিখতে না দিলে রক্ত দিয়ে লিখব।
বাংলাস্থান হতে আর কত দেরি পাঞ্জেরী?
এই দেশ কখনও সভ্য হবে না
একদিক দিয়ে পাকিস্তান হয়ে যাওয়া ভাল
তখন এটলিস্ট সুশীলদের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের গালগপ্প বন্ধ হবে
এই দেশটা কি কখনো ‘বাংলাদেশ’ হতে পেরেছে? ইহা ‘পাপীস্তান’ই ছিল, হয়ত তাই থাকবে…
আমাদের যা বলার কথা তা হয়তো কোনদিনই বলবে না বাংলাদেশ
অভিজিৎ ভাইয়ের মৃত্যু জানিয়ে দিয়ে গেলো, নাস্তিকদের সমাজে কোন জায়গা নেই। তাদের মৃত্যুতে রাষ্ট্র প্রকাশ্যে কোন শোক পর্যন্ত প্রকাশ করবে না।
অবাক হয়ে তাই দেখি, কেউ গর্জে উঠে না। শুধুমাত্র গুটিকয়েক লোক একঘেয়ে সুরে ঘ্যানঘ্যান করে যায়, ও ভাই এক মাস চলে গেল। কিছু তো হল না বলে বলে। সেটাও খুব বেশিদিন বলার সুযোগ হবে না। ত্রিশ লাখ মৃত্যু হজম করে ফেলে এই দেশের কিছু না করা লোকজন। বিচার চেয়ে একটার বেশী দুটো কথা বলে বিরক্ত হয়ে বলে, আর কত মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ব্যবসা করবেন। আর অভিজিৎ রায় মাত্র একজন মানুষ। তাই এই ক্ষেত্রে আরও জোর গলায় সবাই থামিয়ে দিবে, ‘আর কত ব্যবসা করবেন অভিজিৎ রায়কে নিয়ে’ বলে।
আমরা মাত্র ৪৩ বছরেই পচে গলে নষ্ট হয়ে গেছি !
ভালো লিখেছেন !
ধন্যবাদ।
আপনার লেখায় স্পষ্ট বাংলাদেশ যেন ঠিক বাংলাদেশ নেই, তাই বলতে পারা না পারার এই দোদুল্যমানতা, হয়ত অপারগতা। বাংলাদেশ এখনও ভেতরে ভেতরে স্বাধীন হয় নি, মুক্ত হয় নি। তাই বার বার ১৪ই ডিসেম্বর ফিরে আসে। একেকজন বুদ্ধিবৃত্তিক মুক্তিযোদ্ধা খুন হন। একাত্তরের বুদ্ধিজীবীরা শহীদের মর্যাদা পেয়েছেন। এ যুগের মুক্তবুদ্ধিযোদ্ধাদের অধিকাংশ জনগন দেশপ্রেমিকই মনে করে না। তারা ভুলে গেছে ত্রিশ লক্ষ মানুষ ঠিক কোন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে শহীদ হয়েছিল।
আজকেই ইউটুবে তে একটা বাংলাদেশের নাটক দেখলাম। ” সেদিন সিথির গল্পে সিন্দুর ছিল না ” (তিশা এবং সজল )। আশ্চর্য লাগে যেদেশে এই ধরনের নাটক বানিজ্যিক ভাবে চলে সেই দেশে আবার অভিজিত দের হত্যা করা হয়। কি ভাবে ?
এটাই হিপোক্রিসি । সবিই চলে এদেশে, কি চলে না ! তবু কেউ কেউ প্রাণ দেন অর্থহীনভাবে ।
@ Bijon Ghosh
শব্দটা যেদিন হবে
– যেদিন সিথির গল্পে সিন্দুর ছিল না
নাটকটা দেখে কোন মুসলমানের ইসলামানুভুতি যে রক্তাক্ত হয় নি, তা তো নিশ্চিত করে বলা যায় না। সুযোগ পেলে ছোবল মারতেও পারে।
আদিল মাহমুদের সাথে আমি একমত। বিচার চাইবো কার কাছে? আমরা কি পরিবর্তনের পথে পা বাড়াই নি? তাহলে পরিবর্তনের কাজেই শ্রম ও সময় ব্যায় করা উত্তম হবে, বিচার অরণ্যে রোদন।
অবিশ্বাস-ভয়-আশা-হতাশা-অভিলাষ এর এই চক্রের মধ্য দিয়ে আমিও গেছি, তাই আপনার লেখায় নিজের মনের কথা পাইলাম।
বনের পাকিস্তানের মতো মনের পাকিস্তানও তাড়াবে বাঙালি মুসলমানেরা, এই অভিলাষ ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নাই এখন।
অভিজিত হত্যার বিচার নিয়ে আমার তেমন দূঃখবোধ হতাশাবাদ নেই, কারন খুব সোজা; প্রথম থেকেই আমি সেই আশাই মনে ঠাঁই দেইনি, তাই নিরাশ হবার প্রশ্ন নেই।
আর দু চারজন খুনীর সাজা হওয়া দিয়ে খুব বেশী কিছু যায় আসে কি? অপরাধের বিচার আমরা ঠিক কেন চাই? অপরাধকে ঘৃনা মূল ইনস্পিরেশন। সেখানেই যদি গলদ থাকে তবে আর বিচারে কি যায় আসে? শুধু মনের প্রতিহিংসা মেটানো? আমাদের সফিক এ সম্পর্কে খুব দামী একটা কথা বলেছিল।
“I want to say exactly what I said only a couple of months ago after the Charlie Hebdo massacre: It matters little who carried out the attack, far more important is the fact that tens of millions around the world are cheering and supporting the attack. When tens of millions support a particular kind of killing, when tens of thousands profess themselves to be ready to carry out such killings, when hundreds actively look for opportunities for such killing, is it surprising that a few score actually do the killing?”
আওয়ামী সরকারের থেকেও আমার আশাবাদ তেমন ছিল না। তারা নিজেরাই আছে দৌড়ের ওপর। ধর্মপ্রান অসাম্প্রদায়িক উদার বাংগালী মুসলমান ভোট ব্যাংক হারানোর ঝুকি তারা নেবে নাকি? আফটার অল তারাও রাজনৈতিক দল, ভোট যেমনে আসে, রক্ষা করা যায় তেমনিই তারা চলবে। হেফাজতি ঝড়ের সময় থেকেই দেশের সেক্যুলার বুদ্ধিজীবি মহল খুবই সাবধান হয়ে গেছে।
আর অভিজিতের সাথে অনেক আগের ব্যাক্তিগত সম্পর্ক থাকার কারনেই সব কিছু ছাপিয়ে একটা কথাই মনে হয়, নিজে এতদিন অন্যের মুখ থেকে এ জাতীয় অবস্থায় যা শুনলে অত্যন্ত বিরক্ত হতাম এখন অবাক হয়ে দেখি আমার মনেও একই কথাই আসে। বিচার আচার করে কি আর মানুষটাকে ফেরত আনা যাবে? বিজ্ঞান লেখক…প্রগতিশীল…ইত্যাদী ইত্যাদীর বাইরে সবচেয়ে বড় পরিচয় সেও একজন মানুষ।
কথাগুলি খুবই হতাশার কোন সন্দেহ নেই। তেমন যুক্তিতর্কের ব্যাপার নেই।
দুঃখ তো এখানেই।
যারা বলে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে তাদেরকে মাঝে মাঝে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছে হয় ঠিক কি কি কারনে কোন কোন ক্ষেত্রে আসলে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে? যে দেশের অধিকাংশ মানুষের মনে পাকিপ্রেম উথলে উঠে,যেদেশে সাম্প্রদায়িকতা কে সবাই কার্পেটের নীচে লুকিয়ে রাখে, যেদেশে রাজনৈতিক নেতারা চরিত্রহীন, যেদেশে স্কুলের প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যায় আর তার কোন বিচার হয় হয় না, যেদেশে মানুষ পুড়ে মরে কিন্তু কেউ গ্রেফতার হয় না, যেদেশে ঘুষ না দিলে কাজ হয় না, যে দেশে জিনিসের দাম বাড়লে তার জন্য কেউ জবাবদিহিতার প্রয়োজন অনুভব করে না বরং মেনে নেয়, যে দেশে লেখকরা বুদ্ধিবেশ্যা ছাড়া আর কিছু না, যেদেশে ফারাবীর মত কীটদের অসংখ্য ভক্ত জুটে যায়, যেদেশে মসজিদের মত জায়গায় অন্য ধর্মে নিয়ে নোংরা কথা বলা হয়, শীতের রাতে কিছু মাওলানা মাইক বাজিয়ে আশে পাশের মানুষের রাতের ঘুম হারাম করে ওয়াজ মাহফিলের নামে ইতরামি করে কিন্তু কেউ বিরক্ত হয় না, যেদেশে অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে মেরে রাস্তায় রেখে গেলেও মানুষ ভীড় করে দেখে সেই দেশের আসলেই পাকিস্তান হয়ে যাওয়াটা খুব দরকার। খুব তাড়াতাড়ি। এই জাতি পাকিস্তান বনে না যাওয়া পর্যন্ত হুশ হবে না। সেইদিনের অপেক্ষায় আছি। যেদিন এই সব মি্লেমিশে থাকা বাঞ্চোদের দলকে আরেকদল এসে কচুকাটা করে যাবে, বোমা মারবে, মেয়েদের পাথর মারবে। সেইদিনের অপেক্ষায় আছি। সেইদিন হাসব প্রাণখুলে। দেশপ্রেমের গুষ্ঠি কিলাই।
@চরম দাস
আপনার লেখা চোখে পড়লেই পড়ি । সাহসী লেখা । যে সাহস আমাদের অনেকেরই নেই । অন্তত আমার নেই । লেখা চালিয়ে যান । সাথে আছি ।
আমি একান্ত নিজের একটা অভিমত জানাচ্ছি। আমার মনে হয় বিগত কয়েক বছরে সাগর রুনি, রাজিব সহ আরো যে সকল বড় বড় খুন-গুমের ঘটনা ঘটেছে তার বেশির ভাগেরই কোন সুষ্ঠ বিচার না হওয়ায় বাংলাদেশের একটা বড় জনগোষ্ঠী এদেশের প্রশাসন-বিচার বিভাগের উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে। এখন তাদের কাছে খুন -গুমের পর অপরাধিদের সাজা হওয়াটাই অস্বাভাবিক ঘটনা হয়ে উঠেছে। যেমন কয়েকদিন আগে সালাউদ্দিন গুম হলেন, এরই মধ্যে জন গণ তার গুম প্রায় হজম করে নিয়েছে। শুধু দেশের পুলিশ প্রশাসন না, অধিকাংশ মানুষের মনে এও বদ্ধ মূল হয়ে গেছে বাংলাদেশে এসে এফবিআই এর মতো বিদেশী সংগঠনো কিছু করতে পারবে না। আর তাই মানুষের যেখানে ফলাফল প্রাপ্তিতে বিশ্বাসী নাই সেখানে তাদের বিচারের দাবী নিয়ে মাঠে না নামাই স্বাভাবিক।
প্রধানমন্ত্রী ও কয়েকজন মন্ত্রীর লুকিয়ে সান্ত্বনা জানানোর লুকোচুরি খেলা দেখে মেজাজ আরো বগড়ে গেছে। এত কানামাছি খেলা কেন বাপু?
দেশের মেধাবী তরুণ প্রজন্ম যখন দেশকে ফেলে পংগপালের মতন বিদেশ পালিয়ে যায়, তখন ফারাবীদের মতন কীটপতঙ্গই দেশের কর্ণধার হবে। দেশের স্বাধীনতাকে অর্থহীন করার জন্য আমরাও কম দায়ী নই!
সচল এবং মুক্তমনা দুই জায়গায়ই আপনার লেখা খুবই ভালো লেগেছে, যদিও সেটা বলাই বাহুল্য। আপনার মত চরম সত্য কথা সোজাসাপ্টা ঝরঝরে ভাষায় লেখার মত ব্লগার খুবই কম দেখেছি। ধন্যবাদ ভাই।
আমার এবং আরও অনেকের নীরব ক্ষোভগুলো কি অবলীলায় আপনি প্রকাশ করে দিলেন!! আপনার অবদানে মুক্তমনা আরও ঋদ্ধ হবে বলে আমার বিশ্বাস।
মুক্তমনায় প্রতিটা লেখা পোস্ট করে মনে মনে অপেক্ষায় থাকতাম অভিজিৎ দার মন্তব্যের। জানতাম আর কেউ লেখাটা না পড়ুক উনি পড়বেন জানাবেন নিজের মতামত। সবসময় উৎসাহ দিয়ে গেছেন। শুধু কথায় নয়, নিজের প্রতিটি কাজ দিয়ে যেন দেখিয়ে দিয়েছেন কী করতে হবে আমাদের এবং কিভাবে। অভিজিৎ দা আমার কাছে একই সঙ্গে ছিলেন বড় ভাই, বন্ধু, মেন্টর এবং নেতা। সেদিনের আকস্মিকতায় কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না প্রথমে। কয়েকদিন আগে এই মেলাতেই অভিদার সাথে দেখা হলো। সেই অমায়িক হাসি। সেই বুদ্ধিদীপ্ত চাহনি। কতদিনের সাধনায় অভিজিৎদার মত একজন মানুষ গড়ে ওঠে! অনায়াসে কোট করতে পারতেন অসংখ্য সব রেফারেন্স। মুক্তমনায় প্রকাশিত তার লেখাগুলোতে কখনো কখনো ৭০ এর অধিক রেফারেন্স থাকতো। লেখালিখির এক অনন্য মানদণ্ড সেট করেছেন অভিদা। কী অপরীমেয় ক্ষতি যে হয়ে গেল বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান যুক্তি ও মানবতা বিষয়ক চর্চার, মনে হলে একবুক হতাশায় এসে ভর করে।
মানুষের প্রতিক্রিয়া আপনার লেখায় যে আক্ষেপগুলো উঠে এসেছে সেগুলো বুকে নিয়ে ঘুরছি আমিও। আপনি দ্বিগুণ উদ্যোমে লিখতে শুরু করেছেন। আশাকরি এই উদ্যম হারিয়ে যাবে না। আমাদের এখন এমন অনেক লেখা দরকার।