মার্চ মাসের ছাব্বিশ তারিখ আজ – ঠিক এক মাস আগে আমার স্বামী অভিজিৎ রায় এবং আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নির্মমভাবে আক্রান্ত হয়েছিলাম। অভিজিৎ বিজ্ঞান এবং মানবাধিকার বিষয়ে লেখালেখি করতো, কঠোর সমালোচনা করতো ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে, এবং প্রতিষ্ঠা করেছিল মুক্তচিন্তকদের জন্য বাংলায় সর্বপ্রথম একটা অনলাইন প্লাটফর্ম – মুক্তমনা। এই সবের জন্য, ধর্মীয় মৌলবাদীরা তাঁকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। হামলাটা ঘটেছিলো জনাকীর্ণ এলাকায়, অসংখ্য মানুষের চোখের সামনে। সেখানে নিরাপত্তা ক্যামেরা ছিলো, ছিলো পুলিশ চেকপয়েন্ট। অভিজিৎ হত্যার অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে ‘আনসার বাংলা ৭’ নামের একটি ইসলামি চরমপন্থী সংগঠন সামাজিক মাধ্যমে এই হামলার কৃতিত্ব দাবী করে। এতো কিছুর পরেও এক মাস পরে এসে একজন মাত্র সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করা ছাড়া এই তদন্তের আর কোনো অগ্রগতি নেই।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার তদন্তে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও, অভিজিৎ হত্যার পর থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে সম্পূর্ণ নিশ্চুপ থেকেছে। এটি খুবই আশংকাজনক এবং ভীতিকর একটি অবস্থা। ‘আনসার বাংলা-৭’ এর নেতারা এখন কোথায় লুকিয়ে আছে? কেনো তাদেরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না বা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ধরা হচ্ছে না? যুক্তিবাদী লেখকদের ওপর এরকম হামলা বাংলাদেশে এটাই প্রথম নয়। এর আগেও এরকম ঘটনা ঘটেছে। বিচার না হবার কারণে সন্ত্রাসীরা নিজেদের ভেবেছে দুর্জেয়, আর হতাশায় মুষড়ে পড়েছে সাধারণ জনগণ। আমরা দাবি জানাই যে, বাংলাদেশ সরকার ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদকে শিকড়সহ উপড়ে ফেলুক, লেখক-হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় না এনে তাদেরকে অব্যাহতি দেওয়ার সংস্কৃতি বন্ধ করুক।
ছাব্বিশে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস। এই রাষ্ট্রের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম একটা মূলনীতি ছিলো ধর্মনিরপেক্ষতা। এর মাধ্যমে নিশ্চিত করার কথা ছিলো সকল মানুষের বাক স্বাধীনতাকে। কিন্তু, অত্যন্ত দুঃখের সাথে আমরা উপলদ্ধি করছি যে, আজকে সেই দেশেই ধর্মোন্মাদদের অরাজক কাজকর্মের বিচার চাইবার জন্য আমাদের কাকুতি-মিনতি করতে হচ্ছে। অভিজিৎ-এর স্ত্রী, তাঁর সহযাত্রী লেখক, এবং একজন মুক্তমনা হিসাবে, আমি আবারো এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানাচ্ছি এবং বাংলাদেশ সরকারকে আহবান জানাচ্ছি অভিজিৎ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করার জন্য এবং এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করার জন্য।
পুলিশ আর গোয়েন্দা এরা গলার ফাঁস, সরকার আর বিরোধী চায় শুধু লাশ
অতীতেও এইসব ক্ষেত্র সরকার উদাসিনতার পরিচয় দিয়েছে বহু বার। কেন এই উদাসিনতা একটা সামান্য থেকে সামান্য ধর্মীয় অনুভুতি রক্ষায় রাষ্ট্র কখন পিছয় না তবে এখানে কেন । এই পৃথিবীতে একটা অধিকার কোন স্রষ্টাও তার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়ার অধিকার রাখে না তাহল জাস্টিস পাওয়ার অধিকার । লড়তে হবে লড়ব
যেখানে হাজার হাজার পুলিশের উপস্থিতিতে খুন হয়ে গেল, পুলিশ দেখতেই পেল না, তবে কিভাবে আবার ধরবে। না ওরাই বিজয়ি। অভিজিত দার মত বিজ্ঞান মনস্ক সাধিনচেতার মানুসের বাংলাদেশে কোন মাথাব্যাথা নেই। তবে এতটুকু আস্তা আছে একদিন এই জনগনই একদিন এই ধরম নামক জঞ্জাল কে আস্তাকুড়ে ছুড়ে ফেলবে।
এই হত্যাকারীদের বিচারের মধ্য দিয়ে বাক্স্বাধীনতা হরণকারী সকল জঙ্গীর প্রতীকী বিচার হোক।
কয়েক দিন আগে আমি এটা ফেসবুকে দিয়েছিলাম । স্ট্যাটাসটা এখানে তুলে দিলাম ঃ
তরুন বিজ্ঞান গবেষক ও লেখক ডঃ অভিজিৎ রায় হত্যার প্রতিবাদে দেশের সচেতন, প্রগতিশীল ও বিবেকবান মানুষেরা এগিয়ে এসেছেন । দেশের বাইরে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভাবে এই হত্যার প্রতিবাদ হচ্ছে ।
কথায় আছে , তুমি যা বলছো তা আমি সমর্থন না-ও করতে পারি, কিন্তু তোমার বলার অধিকারকে আমি আমরণ সমর্থন করে যাবো ।
আইএস আর আমাদের দেশের জঙ্গিদের চিন্তা-চেতনা উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন । আইএস এর হাতে একে-৪৭ আর জঙ্গিদের হাতে চাপাতি । জঙ্গিদের হাতে একে-৪৭ আসতে শুধু সময়ের ব্যপার ।
কি ভাবচ্ছেন ? আমাদের ধর্মপ্রাণ মানুষকে রেহাই দেবে জঙ্গিরা ? ৭১ এ দিয়েছে ?
তাই আসুন, রুখে দাড়াই উগ্র মৌলবাদের বিরুদ্ধে, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ।
রুখে দাড়াতে না পারলে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি প্রিয় স্বদেশ ভূমি মুখ থুবড়ে পড়বে এই ছবিটির মত ।
অামি বুঝতে পারছি না, যেই অভিজিৎ দা অাজীবন বিজ্ঞান ও মহাকাশ গবেষণাকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তার মৃত্যুর পর সেই মহাকাশ বিজ্ঞানকেই এভাবে অবহেলা করা হচ্ছে? সবাই নিজ নিজ প্রবন্ধ লেখা নিয়েই ব্যস্ত। অথচ অামি যেই প্রবন্ধটি “মুক্তমনা” ব্লগে পাঠিয়েছিলাম, তা এখনো প্রকাশ করা হলো না। এমনকি তাদের কাছ থেকে কোন ইমেইল ও reply পেলাম না। “মুক্তমনা” ব্লগের কাছে অামার প্রশ্ন, তাহলে কি অভিজিৎ দা’র সাথেই অামাদের মহাবিশ্বকে নিয়ে গবেষণার স্বপ্নেরও মৃত্যু ঘটেছে? মনে রাখবেন, মানুষের মৃত্যু ঘটে, তার কর্মের নয়। অভিজিৎ দা বেচে থাকলে নিশ্চয় মহাকাশ বিজ্ঞানকে অনেক গুরুত্ব দিতেন..
আজ অজস্র পরাজয় অস্বীকারের গ্লানি আর পশ্চাৎপদ শক্তির সাথে সহবাস করে দেশ উদযাপন করছে স্বাধীনতা দিবস।
এই জরাজীর্ণ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য অভিজিৎ রায় লড়েছেন আমৃত্যু। তাই তাঁর হত্যার প্রতিশোধ নিতে হবে কলমে-কখন-সাহিত্যে-শিল্পকলায়। যে আলোক বর্তিকা তিনি আমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন, মুক্তমনার মত যে প্ল্যাটফরম আমাদের জন্য বিনির্মাণ করেছেন সে শুভকর্মের ধারাবাহিকতা আমাদের রক্ষা করেই এগিয়ে যেতে হবে।
আমরা এগিয়ে যাব।
বিচার চাওয়ার মধ্যে একটু দুর্বলতার পরিচয় থাকে। দুর্বল বিচার চায়, সবল বিচার করে। আইন নিজের হাতে নিতে বলছি না, তবে অক্ষম অযোগ্য পক্ষের কাছে বিচার চাওয়া খুব বিবেচনার কাজ নয়।
অভিজিতের হত্যার প্রকৃত বিচার হবে তার আদর্শ বিস্তারের মাধ্যমে মুক্তচিন্তবিরোধী অপদর্শনকে পৃথিবী থেকে মুছে ফেলা। অভিজিতের মৃত্যুর জন্য সমগ্র মৌলবাদীরা দায়ী,ওদের সব কটাকে ফাঁসিতে ঝুলাতে পারে বাংলাদেশে এমন আইন আছে কি? কিন্তু ওদেরকে পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণ নিঃশ্চিনহ করা যেতে পারে, আর সেটা অভিজিতের দেখানো পথেই।
মুক্তচিন্তা প্রসারে বর্ধিত উদ্যমে কাজ করুন।
শফি আমিন আপনার সাথে আমি একমত । অগের দিনে যেমন রাজা বাদশারা ধর্মকে পৃষ্টপোষকতা দিয়েছে ঠিক তেমনি বর্তমান সময়ের সরকারগুলোও তাদের পৃষ্টপোষকতা দিয়ে থাকে। তাই তাদের কাছে অভিজিৎ হত্যার বিচার চাওয়া রেগিস্হানে জলের ফোয়ারা বেরিয়ে আসা এক কথা ।
মূলত মৌলবাদীদের সাথে আওয়ামী লীগ এর কোন বিরোধ নেই তাদের টার্গেট শুধু মাত্র বিএনপি।
কারণ এইদেশে বিএনপি ছাড়া আর কোন দলের পক্ষে ক্ষমতায় যাওয়া সম্ভব নয়। তাই আওয়ামীলীগ
তার ইসলামী ভোট নষ্ট করার ঝুঁকি নেবে এটা বিশ্বাস করার কোন কারণ নেই ।
ওরা কত জন কে মারবে ? আমরা মুক্তচিন্তার মানুষরা আর মৃত্যু ভঁয়ে ভীত নই ।
আমি বিপ্লব পালের সাথে একমত। “সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ যেখানে মৌলবাদ চাইছে, সেখানে, কিছু করা খুব কঠিন।”
স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে চাপ না দিলে, এই হত্যাকান্ডের সুরাহা হবে না । বাকী ব্লগারদের জীবন সংশয় ও চলতে থাকবে। বাংলাদেশের পুলিশ এবং ইন্টালিজেন্সে মৌলবাদের সহানুভূতিশীল অসংখ্য লোক। কি করে এবং কেন এরা ধরবে অভিজিতের খুনীদের?
শেখ হাসিনার সরকার এই মুর্হুতে টিকে আছে কারন ভারতের সমর্থন তার ওপর আছে। উনি ভারতকে তথা বিশ্বকে দেখাচ্ছেন মৌলবাদ দমন করতে, বাংলাদেশের গদিতে তাকেই সমর্থন করা দরকার সবার। এই মুহুর্তে ইঊরোপিয়ান ইউনিয়ান এবং ভারত সরকারের কাছে লেখা দরকার হাসিনা সরকার মৌলবাদ দমনে বিশেষ কিছু করছে না ।
সমস্যা হচ্ছে এটা শাঁখের করাত। হাসিনা সরকারের আমলে, এটলিস্ট অভিজিত হত্যাকারীরা লুকিয়ে বেড়াবে। সরকার তাদের ধরতে পারবে না । চোর পুলিশ খেলা হবে। আর বিএনপি জামাত ক্ষমতায় এলে, অভিজিতের হত্যাকারীদের কেও কেও মন্ত্রীত্বও পেয়ে যাবে।
এরকম নয় বাংলাদেশই একমাত্র দুর্ভাগা দেশ। ভারতের প্রধান মন্ত্রী থেকে অনেক মন্ত্রীদের হাতেই দাঙ্গার রক্ত এখন।
সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ যেখানে মৌলবাদ চাইছে, সেখানে, কিছু করা খুব কঠিন।
একমাত্র উপায় অর্থনৈতিক বয়কট । যেসব দেশের সরকার, মৌলবাদকে প্রশয় দেবে তাদের প্রোডাক্ট বয়কট করা উচিত ইউরোপ এবং আমেরিকাতে। জনগণের বোঝা উচিত, উন্নত পৃথিবীর ক্ষীর খেতে গেলে, তাদের উন্নত মানবিকতা আইনগুলোও মানতে হবে।
ভালো আছেন কমরেড?কেউ আপনাকে দিদি ডাকে কেউ ডাকে আপা।কিন্তু যারাই মুক্তমনা তারাই কমরেড।আমি কোন মুক্তমনার সদস্য নই।কিন্তু যেহেতু মুক্তমনা সাইটটি আমার বুকমার্ক করা তাই নিজেকে এর সদস্য বলেই মনে করি।যাই হোক আপনি কার কাছে কার বিচার চাইছেন?তার চেয়ে গুইসাপের কাছে হাসের ছাও হারানোর বিচার চাওয়া ভালো।ভালো থাকবেন চিন্তা, চেতনার সহযাত্রী।
দিদি বা আপার মাঝে আমি কোন পার্থক্য পাইনি। বড় বোনকে তো এই দুটোর একটা ডাকতেই হবে। আমার যেটা ডেকে অভ্যাস বড় বোনদের সেই শব্দটাই ব্যবহার করেছি। কমরেড কমরেড ডাকলে কেমন জানি লাগে।
দিদি আমি মনে করি যে বাংলাদেশ সরকার এই ব্যাপারে মোটেও আগ্রহী নয়। যেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্যে মিডিয়ার সামনে অভিজিৎ দার হত্যার ব্যাপারে কোনই মন্তব্য করেননাই। যেখানে এখন পর্যন্ত খুনের কোন কিনারা হলোনা। যেখানে এমন আরো হত্যাকান্ডের কোন বিচারই হয়নি সেখানে ওদের মানে, পুলিশ কিংবা FBI এদের আশা ছেড়ে দেওয়াই ভালো।
অভিজিৎ দা কে যারা ভালোবাসে, যারা মুক্তচিন্তায় বিশ্বাসী, যারা মুক্তবুদ্ধির চর্চা করে তারা মানে আমরা যদি সবাই মিলে দাদার হত্যার তদন্ত করি আমি বাজি রেখে বলতে পারি আমরাই পারবো আসল খুনিদের খুঁজে বের করতে। কারো একার পক্ষে সম্ভব না, সবাইকে লাগবে। আছে কি কেউ এমন? ব্যাপারটা যতই হাস্যকর লাগুক তবে আমি ঠিক মনে করতেছি। এর জন্য গোয়েন্দা ফেলুদা বা শার্লক হোমস হওয়া লাগবেনা। সবার সহযোগিতায় যুক্তি, চিন্তা আর বুদ্ধি দিয়েই এটা সম্ভব।