আমাদের বদিউল অনলাইন এক্টিভিস্ট। যা তা রকমের এক্টিভিস্ট না, একেবারে বাঘা সেলিব্রিটি এক্টিভিস্ট। সেইসাথে খাঁটি দেশপ্রেমিক। দেশের জন্য জীবন দেয়া টাইপ না হলেও দেশের জন্য জীবন নেয়া টাইপের বাঘা দেশপ্রেমিক।

বদিকে বললাম, অভিজিৎ রায়কে তো মেরে ফেললো। কিছু একটা লেখ।

আমাকে ঝাড়ি দিয়ে বলে, রাখ তো অভিজিৎ। দেশ বড় না অভিজিৎ বড়?

আমি মিনমিন করে বললাম, দেশ বড়।

– প্রসেনজিৎ আমাদের দেশরে বিলাই বলছে দেখছস? ওরে আগে সাইজ করি। ইতনা বড়া অপমান কি সহ্য হোতা হ্যাঁয়?

আমি মাথা নেড়ে বলি, নেহি। ইতনা বড়া অপমান সহ্য নেহি হোতা হ্যাঁয়।

পরের এক সপ্তাহ বদি দলবল নিয়ে প্রসেনজিৎকে অনলাইনে ঠ্যাঙায়। এক সপ্তাহ পরে প্রসেনজিৎ মাফ চায়।

বদি যখন বিজয় উৎসব করছে তখন আবার মিনমিন করে বললাম, ইয়ে, পাহাড়ে তো সেটলাররা পাহাড়িদের ইয়ে করে ইয়ে বানায়ে ফেলছে। গতকালকেও এক স্কুল ছাত্রীকে রেপ করেছে বাঙ্গালীরা। কিছু একটা বল।

বদি ঝাড়ি দিয়ে বলে, আরে রাখ। ভারতের পেপসির ভিডিও দেখিস নাই? কি অপমানটাই না করলো আমাদের দেশরে? দেশ বড় না পাহাড় বড়?

আমি মিনমিন করে বলি, দেশ বড়।

– এই মওকা মওকা ভিডিও দিয়া আমাদের কি অপমানটাই না করলো। ইতনা বড়া অপমান কি সহ্য হোতা হ্যাঁয়?

আমি মাথা নেড়ে বলি, নেহি। ইতনা বড়া অপমান সহ্য নেহি হোতা হ্যাঁয়। পরের এক সপ্তাহ বদি মওকা মওকাকে ঠ্যাঙালো। দেশের অপমানের বদলাতে গোটা দশেক অ্যান্টি মওকা মওকা ভিডিও বানালো। দলবল নিয়ে ভারতের ভিডিওর রেটিং নামাল। এক সপ্তাহ পরে যুদ্ধজয় করে বলে, ওই হালা, ইউটিউবে গিয়ে দেখে আয়। দিনে এই ভিডিওরে পাঁচহাজার ডিজলাইক দেয়ার ব্যবস্থা করে দিছি। কয়দিনের মধ্যে এইটা সর্বকালের সবচেয়ে নেগেটিভ রেটেড ভিডিও হয়ে যাবে।

আরও এক সপ্তাহ পরে যখন দেখি ভিডিওর রেটিং নেমে তলানিতে প্রায়, তখন আবারও বদিকে গিয়ে মিনমিন করে বলি, – ভিডিও তো নামলো কিন্তু আজকেও তো পেট্রোল বোমায় কতগুলা মানুষ পুড়ল।

বদি আবারও ঝাড়ি দিয়ে বলে,  আরে রাখ, দেশ বড় না মানুষ বড়?

আমি ঠিক নিশ্চিত না বলে অনিশ্চিত গলায় বলি, মনে হয় দেশ বড়।

– সিধু হারামজাদা আমাদের দেশরে আবার কি বলছে দেখছস? আজকে ওই শিখ হারামির একদিন তো আমার একদিন। ইতনা বড়া অপমান কি সহ্য হোতা হ্যাঁয়?

আমি মাথা নেড়ে বলি, নেহি। ইতনা বড়া অপমান সহ্য নেহি হোতা হ্যাঁয়।

পরের এক সপ্তাহ বদি দলবল নিয়ে সিধুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। গালিগালাজ আর হুমকি ধামকি দিয়ে নাকানি চুবানি খাওয়ায়। সপ্তাহান্তে বদিকে গিয়ে পাকড়াও করি। বদি দলবল নিয়ে ঋত্বিক আর ক্যাটরিনার সিনেমা দেখে আর গাইল্লায়, হালার মালু গুলার সিনেমা মানেই নাঙ্গা নাচ। এইজন্যই তো এদের দেশে এত রেপ হয়।

আমি মিনমিন করে বলি, বদি ক্লাস টেনের ওই স্কুলছাত্রীটা মনে হয় বাঁচবে না রে। একসাথে এতজন মিলে …

– আরে রাখ তোর  স্কুলছাত্রী, দেশ বড় না  স্কুলছাত্রী বড়?
-দেশ বড়।
– আইসিসি এইটা কি করলো দেখলি? ইন্ডিয়ারে জিতানোর জন্য তাদের পছন্দের মাঠে নিয়ে খেলা ফেললো। আম্পায়ারও দিতেছে তাদের পছন্দমতো। যেভাবে পারতেছে আমাদের জয় ঠেকানোর চেষ্টা করতেছে। ইতনা বড়া অপমান কি সহ্য হোতা হ্যাঁয়?

আমি মাথা নেড়ে বলি, নেহি। ইতনা বড়া অপমান সহ্য নেহি হোতা হ্যাঁয়।

কালকে বাংলাদেশের খেলা। আমি বদির সাথে বসে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা নিয়ে অপেক্ষা করি। যদি হেরে যায় বাংলাদেশ? ইতনা বড়া অপমান কি সহ্য হবে?