বাবু প্রবীর ঘোষ তার ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির বার্ষিক সম্মেলনে সভাপতির ভাষণ দিয়েছেন। এই ভাষণে তিনি অভিজিৎ রায় সম্পর্কে বেশকিছু নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন, যা আমাদের নজরে এসেছে। দুই বাঙলার অনেক মুক্তমনা-বন্ধুরা প্রবীর বাবুর এই বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। কেউ কেউ ফেসবুক স্ট্যাটাসে তা প্রকাশ করেছেন, কেউবা মন্তব্য করেছেন। আবার অনেকেই আমার কাছে ব্যক্তিগত মতামত জানতে চেয়েছেন। ভেবেছিলাম- এ নিয়ে কোনো উত্তর দিব না। থাক না, কে কি বললো তা এতো গুরুত্ব দেবার কি আছে? পরে মনে হলো, উত্তর দেয়াটা দরকার। অভিজিৎদা বেঁচে থাকলে তিনি নিশ্চয়ই এর দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতেন। কিন্তু তিনি নেই, তার অবর্তমানে দায়িত্বটা আমাদের উপর চলে এসেছে। এই সময় চুপ থাকলে মৌলবাদীদের মত কিছু “অ্যাটেনশন-সিকার” তথাকথিত যুক্তিবাদীরাও প্রশ্রয় পেয়ে মাথায় উঠে বসবে। বিষয়টা সুরাহা হওয়া দরকার। তাই এই লেখা।
১. প্রথমেই বলে নেয়া ভালো, প্রবীর বাবুর সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত কোনো সম্পর্ক বা বিদ্বেষ নেই। বাবুর সঙ্গে আমার পরিচয় তার লেখার সূত্র ধরেই। এই কৈফিয়ত দেবার অর্থ হলো, কেউ যেন আবার ধরে না নেন, ব্যক্তিগত রেষারেষির কারণ থেকে প্রবীর ঘোষকে আক্রমণ করা হচ্ছে। বরং প্রবীর ঘোষ যেহেতু নিজেই আগ বাড়িয়ে মুক্তমনা লেখক অভিজিৎ রায় সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন, তাই জবাব তাকে পেতেই হবে।
২. প্রবীর ঘোষের ভাষণের অভিজিৎ-প্রসঙ্গ দেখা যাক।-
“নির্মোহভাবে অভিজিৎ রায়ের কর্মকান্ডকে খুব সংক্ষেপে একটু বিচার করতে চাই। অভিজিৎ রায় বিজ্ঞানের কঠিন তত্ত্বগুলোকে খুব প্রাঞ্জল ভাষায় লিখেছিলেন যা অতি প্রশংসনীয়। কিন্তু উনি যখন সমকামিতার পক্ষে বই লেখেন এবং সমকামিতাকে ‘প্রোমোট’ করার চেষ্টা করেন, তখন তার প্রতিবাদ জানানো ছাড়া আমাদের কাছে উপায় থাকে না। উনি ইদে শুভেচ্ছা বার্তা জানালেন, এটা একজন নিরীশ্বরবাদীর কাছে খুবই বেদনাদায়ক।”
প্রবীর বাবু বেদনাহত। আর আমরাও তার বক্তব্যে যারপরনাই বিস্মিত। বিস্মিত এই কারণে যে, তিনি অভিজিৎ রায়ের ধর্ম-চর্চার খুঁত ধরতে আর কিছু পেলেন না। অভিজিৎ রায় হিন্দু পরিবার থেকে উঠে এসেছেন। তিনি প্রকাশ্যে নাস্তিক ঘোষণা দিয়েছেন। এখন প্রবীর ঘোষ যদি বলতেন, অভিজিৎ রায় ধূপবাতি-আগরবাতি জ্বালিয়ে ফুল-চন্দন দিয়ে মাটির মূর্তির পূজা করতো, তাহলে আমাদের সংশয়ীমন কিছুটা বিভ্রান্ত হতো। কিংবা অভিজিৎ রায় যদি পূজার শুভেচ্ছা দিত বলে তিনি দাবি করতেন তাহলেও একটা কথা ছিল। হয়তো ভাবতাম, অভিজিৎদা আবার উল্টোপথে হাঁটলো কখন? প্রবীর বাবু অবশ্য তা দেখাতে পারেননি। তিনি কোনোকিছু খুঁজে না পেয়ে ইদ-শুভেচ্ছার ত্রুটি বের করেছেন। তা প্রবীর ঘোষ, আমাদের একটু বলেন দেখি, অনলাইনে বসে কাউকে ঈদের শুভেচ্ছা জানানো আর ছুরি হাতে গরু জবাই করে ভূরিভোজ করে কোরবানি ঈদ উদযাপন কি এক কথা? আপনার যুক্তিবাদ কি বলে? ভারত-বাংলাদেশে পূজা এবং ঈদ সামাজিক অনুষ্ঠান হিসেবে পালন করা হয়। অভিজিৎ রায় থেকে শুরু করে আমরা দুই বাঙলার হাজার হাজার নাস্তিকরা প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে বিরোধিতা করি নিরন্তর। কিন্তু কুশল বিনিময় করতে গিয়ে কিংবা মজা করার জন্য হলেও এই ধরনের শুভেচ্ছা বক্তব্য দিই। তাতে যুক্তিবাদের তকমা খসে পড়ে যায়, এমন দাবি যারা করে তাদের জন্য করুণা ছাড়া আর কিছুই নেই আমাদের। যাইহোক, অভিজিৎ রায় বেঁচে থাকলে হয়তো ভালো বলতে পারতেন,- কখন কোন প্রেক্ষাপটে তিনি এই শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন। আজ যেহেতু তিনি নেই, তাই এ বিষয়ে বেশি কিছু বলারও নেই আমার। তবে শুধু এটাই বলি, যুক্তিবাদ আপনার মতো কাদামাটির কোনো প্রলেপ নয়, যে কোনো মুসলমান বা হিন্দু বন্ধুর বাসায় গিয়ে খাওয়া দাওয়া করলে যুক্তিবাদীদের জাত চলে যাবে!! এটা খুবই হাস্যকর হেত্বাভাস!
৩. আপনি লিখেছেন,-
“কিন্তু উনি যখন সমকামিতার পক্ষে বই লেখেন এবং সমকামিতাকে ‘প্রোমোট’ করার চেষ্টা করেন, তখন তার প্রতিবাদ জানানো ছাড়া আমাদের কাছে উপায় থাকে না।”
প্রবীর ঘোষ, আপনার বলিহারি যুক্তি মশাই! আমি কুপোকাত!! আজকে যদি আমি ইউজেনিক্সের (সুপ্রজননবিদ্যা) সমাজতাত্ত্বিক-রাজনৈতিক কারণ-ইতিহাস নিয়ে বই লিখি, তবে কি আমিও ইজেনিক্সের সমর্থক হয়ে যাবো?!! দুই হাজার বছর ধরে মানব সমাজে কোনো না কোনো ফর্মে ইউজেনিক্স কার্যকর রয়েছে। ইউজেনিক্স এই সমাজের বাস্তবতা। এটাকে অস্বীকার করার জো নেই। আমেরিকা-ইংল্যান্ড জার্মানিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইউজেনিক্সের বিভৎসতা মানুষ দেখেছে গত দুই শতাব্দীতে। যে কোনো ইতিহাস-গবেষকের কাছে এ্টা একটা আকষর্ণীয় বিষয়। ইংরেজিসহ বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় প্রচুর গবেষণাধর্মী বই আছে এ নিয়ে। বাঙলাতে হয়তো তেমন কিছু নেই। এখন বাঙলায় যদি কেউ বই লিখে, তবে কি এটা বলা যাবে, ইউজেনিক্সকে প্রমোট করা হচ্ছে? আবার ধরেন,- নাৎসিবাদ-ফ্যাসিবাদ নিয়ে বই লিখলেও আমি হিটলার-মুসেলিনির গোত্রভুক্ত হয়ে যাবো আমি? আরেকটা বিষয়, যতোই নিজেকে কিংবা আপনার দলের লোকেরা আপনাকে “জীবন্ত অ্যানসাইক্লোপেডিয়া” (দ্রষ্টব্য : “প্রসঙ্গ প্রবীর ঘোষ”) বলে পূজা করুক না কেন, সমকামিতার প্রতি আপনার নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বলেই দেয়, এ বিষয়ে আপনার জ্ঞান শূন্যের কোঠায়। সমকামিতা একটা জৈবিক বিষয়। আমরা সাধারণ সবকিছুকে দুইভাগে বিভক্ত করতে ভালোবাসি। যেমন ভালো-মন্দ, সাদা-কালো, শাসক-শোষিত ইত্যাদি। কিন্তু অন্য অনেক কিছুর মতো, সাদা-কালোর মধ্যেও ধূসর রঙের অস্তিত্ব আমরা দেখেও না-দেখার ভান করি। প্রাণী-জগতের যৌন-আচরণ শুধু নারী-পুরুষে বিভক্ত নয়। যারা এমনটা যারা মনে করে, তারা আদতে হয় আধুনিক বিজ্ঞান সম্পর্কে জ্ঞান রাখে না, নয়তো এরা কূপমণ্ডুক। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার গুলোর প্রতি আপডেট না হলে প্রগতিশীল মানুষেরা যে একসময় কূপমণ্ডুক হতে বাধ্য- তার প্রমাণ এই দুই বাঙলায় ভুরি ভুরি রয়েছে। আপনি হয়তো সেই তালিকায় নব্য-সংযোজন। চিন্তার কিছু নেই, ইন্টারনেট কানেকশন তো আছে, উইকিপিডিয়া ঘাটুন, গুগল সার্চ দিন, হাজার হাজার রিসার্চ জার্নাল পেয়ে যাবেন। দেখবেন, ওখানে স্পষ্টকরে বলা আছে- সমকামিতা মোটেও প্রকৃতি-বিরুদ্ধ নয়। আপনার জন্য একটা ছোট তথ্য, প্রায় ১৫০০ প্রজাতিতে (প্রজাতি শব্দটা খেয়াল করুন) সমকামিতা বিরাজ করছে। হোমো সেপিয়েন্স (মানুষ) তো একটা প্রজাতি মাত্র এছাড়াও লিজার্ড, ফড়িং, বাইসন, কুকুর, হাতি, শেয়াল, ডলফিন, ইমু, মুরগী, সিংহ, জিরাফসহ বিভিন্ন প্রজাতিতে লক্ষাধিক বছর ধরে সমকামিতা অস্তিত্বশীল। এগুলোকে আপনি কি বলবেন? সমকামিতার জৈবিক অস্তিত্ব না থাকলে এগুলো প্রাণীজগতে বিরাজ করতো কিভাবে? সমকামিতা হয়তো আপনার কাছে, মানে ব্যক্তিবিশেষের কাছে রুচিবিরুদ্ধ কাজ মনে হতে পারে, কিন্তু একজন ব্যক্তি যে জৈবিকভাবেই সমকামী তার কাছেও নারী-পুরুষ সম্পর্কটা কেমন বিবেচনার হবে- একটু ভাবুন তো? এটা স্বীকার করছি যে, ক্ষেত্রবিশেষে এই সমাজে সমকামিতা চাপিয়ে দিয়ে চর্চা করা হয়, এটা সমকামিতার কোনো ত্রুটি নয়, বরং এটাকে ধর্ষণ বলা যায়। পুরুষ যেমন নারীকে ভোগের পণ্য বানিয়ে ধর্ষণ করে, তেমনি অনেক সমকামী পুরুষ বা নারীও নিজ নিজ লিঙ্গের নারী-পুরুষকে ছলে-বলে ধর্ষণ করে। এই আলোচনা এখানে প্রাসঙ্গিক নয়। ভারত-বাঙলাদেশের আইনে সমাকামিতা আইন-বিরুদ্ধ বলে অজুহাত দেখানোর সুযোগ নেই। কারণ, এই সমাজের আইনগুলো যে সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিকে ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে কিভাবে, সেটা আর আপনাকে বুঝিয়ে বলতে হবে না নিশ্চয়ই। কথা হচ্ছে, এই সমাজে সমকামিতাকে আইন-বিরুদ্ধ বলা হলেও হাজার হাজার বছর ধরেই সমকামিতা এই ভূখণ্ডে রয়েছে। রামায়ন-মহাভারতসহ প্রচুর পৌরাণিক উপ্যাখানে সমকামিতার ইঙ্গিত রয়েছে। এর দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয়, সমকামিতা কোনো পাশ্চাত্য অপসংস্কৃতির ফসল নয়। বরং এই সমাজে বসবাস করা সংখ্যালঘিষ্ট মানুষের যৌন-আচরণ এটি। প্রবীর বাবু, ৬০-৭০ দশকের মনমানসিকতা আর বিজ্ঞানের জ্ঞান নিয়ে একুশ শতকে এসে যুক্তিবাদ ফলানো যাবে না, এটা আপনাকে বুঝতে হবে। আপনার ব্যর্থতা আপনি যুগের সঙ্গে আপডেট হননি। বিজ্ঞানের নবনব আবিষ্কার গ্রহণ করতে পারেননি। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে আইন-আদালতের চুলচেরা জেরা-বিশ্লেষণ পেরিয়ে সমকামিতা স্বীকৃতি লাভ করছে। বিজ্ঞানের নতুন নতুন তথ্য এক্ষেত্রে সহায়তা করছে। এই দেশগুলোতে সামাজিক মূল্যবোধ এখন আর রিলিজিয়ন, কাস্টমস দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে না, বরং বিজ্ঞানই নির্ধারণ করে দিচ্ছে তাদের মূল্যবোধের কাঠামো। এটা আপনাকে স্বীকার করতেই হবে। আর যদি আপনি মনে করেন, এসব কিছুই বিকৃত রুচির চর্চা, তবে বলতেই হয় প্রবীর বাবু, আপনি অন্ধ হলে, প্রলয় কিন্তু বন্ধ হবে না। আর অভিজিৎ রায় যদি নিজে ব্যক্তিগতভাবে সমকামী না হয়েও সমকামিতা নিয়ে বিজ্ঞানের গবেষণাসমৃদ্ধ বই লেখেন, তাতে আপনার কাছে “জাত গেল! জাত গেল!” মনে হলেও, সেই আপনিই বরং আমাদের কাছে কূপমণ্ডুকই থেকে যাবেন, ব্যাকডেটেড হয়ে যাবেন। যতোই ইগো ধরে বসে থাকুন না কেন, লাভ নেই।
৪. এরপর আপনি আরও কিছু বক্তব্য দিয়েছেন। কাকে কাকে পরাজিত করেছেন, কোথায় আপনি বিরুদ্ধবাদীদের সামনে অস্ত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে কল্লা বাঁচিয়ে চলে এসেছেন, এগুলো আমাদের কাছে অপ্রাসঙ্গিক। কারণ, বাঙলাদেশসহ ভারতের প্রচুর মুক্তমনা মানুষ অস্ত্র নিয়ে চলাফেরা করেনা, আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টিও করেনা, যে বিপদে পড়লে পার্টি থেকে সহায়তা নিয়ে শেল্টারহোমে চলে যাবে। অভিজিৎ রায়দের অস্ত্র হচ্ছে তাদের মস্তিস্ক আর কলম। তারা প্রকাশ্যে মৌলবাদীদের হুমকির মুখে চলাফেরা করে। আপনার কল্লা কেন কাটলো না, অভিজিৎ রায়রা কেন কোপ খেল, এগুলো আসলে একধরনের আত্মশ্লাঘায় ভোগা ব্যক্তির আফসোসের ধ্বনিমাত্র। আমি কেবল বলবো, ছোট বাচ্চারা কখনো বটগাছে ঢিল মারে না, তারা দেখতে ছোট হলেও আম গাছে, জাম গাছে ঢিল মারে! প্রবীরবাবু, বুদ্ধিমানকে লিয়ে ইশারা হি কাফি হ্যায়!
৫. সর্বশেষে আপনি বলেছেন,-
“সৎ হোন, সাহসী হোন, মিথ্যা বাগাড়ম্বর বন্ধ রাখুন এবং বেড়ালকে বাঘ সাজাবার চেষ্টা করবেন না। না-হলে আন্দোলনকে শেষ করতে শত্রুর দরকার হবে না, আপনারাই যথেষ্ঠ।”
এই লাইনটা পড়তে গিয়ে আমি হাসতে হাসতে শেষ। আপনার অনেকগুলো বই পড়েছি। অলৌকিক নয় লৌকিকের ৫টা খণ্ড, আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না, প্রসঙ্গ প্রবীর ঘোষ, গেরিলা যুদ্ধের A to Z থেকে আজাদী আরও কিছু। বইগুলো পড়তে গিয়ে একসময় মনে হয়েছে, দুনিয়ার সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো যুক্তিবাদী আন্দোলন ধ্বংস করার জন্য কতোই না চেষ্টা করছে, আর আপনি কার্টুন চরিত্র হিম্যান, আয়রন ম্যানের মতো একে একে জিতে যাচ্ছেন, তবু মিডিয়া আপনাকে ব্ল্যাক আউট করে রাখছে, এ নিয়ে আপনার আফসোসের শেষ নাই। “মুই কি হনুরে” টাইপের লেখা পড়তে পড়তে আপনার আত্মঅহমিকায় ভরা চরিত্র নগ্নভাবে ফুটে ওঠে, সেটা কি আপনি নিজে বোঝেন না? অনেক তো কথা হলো, এবার আপনাকে একটা পুরাতন কৌতুক শোনাই:- এক বনে একটা ইঁদুর খুব ছোটাছুটি করছে। একবার এই গর্তে তো আরেকবার আরেক গর্তে ঢুকছে। এই দেখে একটা বনবিড়াল বললো, কিরে ইদুরের বাচ্চা, তুই এতো ছুটাছুটি করছিস কেন? ইঁদুর হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,- কেন খবর পাওনি? হাতি যে ধর্ষিত হয়েছে, শোননি? বনবিড়াল নির্বিকার হয়ে বললো, শুনেছি, তাতে তোর আবার কি হলো? তুই এতাে দুঃশ্চিন্তায় মরে যাচ্ছিস কেন? ইঁদুর এইবার খুব ভাব নিয়ে বললো,- কেন জান না বুঝি, সবাই যে আমাকেই সন্দেহ করছে!!
প্রবীর বাবু! আপনি বুদ্ধিমান মানুষ। বুদ্ধিমানের জন্য ইশারাই যথেষ্ট! কী বলেন?
৬. পাঠক, প্রবীর ঘোষের বই পড়ে আমার সাধারণ ধারণা, তিনি একটা জিনিষই অনেক জোর গলায় প্রতিষ্ঠা করতে চান, দুনিয়ার সব খারাপ, অমুক খারাপ, তমুক খারাপ, সব সাম্রাজ্যবাদীদের দালাল, শোষক শ্রেণীর হাতিয়ার, কেবল তিনিই এই যুগের রামচন্দ্র! তিনিই কেবল সব থেকে ভালো। সব থেকে আলাদা। যাই হোক, এটা তার ব্যাপার। তিনি এরকম ভাবতেই পারেন, আমাদের জন্য চিন্তার বিষয় হচ্ছে, তার মুরিদানেরাও দেখি এটা অন্ধভাবে বিশ্বাস করা শুরু করছে। এই ধরনের ব্যক্তিপূজা যে দুই বাঙলায় যুক্তিবাদী-মুক্তমনার আন্দোলনকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, এবং করবে, সেটা কবে তাদের বোধগম্য হবে- তা আল্লাই মালুম! থুক্কু! যুক্তিবাদী প্রবীর ঘোষের মালুম!
৭. পাঠক, আপনাদের মনে এতক্ষণে এই প্রশ্নের উদয় হয়েছে, প্রবীর বাবুর অভিজিৎ রায়ের প্রতি কেন বিরূপ মনোভাব প্রদর্শন করতে গেলেন? এই প্রশ্নের উত্তর আমাদের জানা নেই। তবে তার আগে কয়েকটা তথ্য দিই। তার উপর ভিত্তি করে লেখা মুরিদানের বই “প্রসঙ্গ প্রবীর ঘোষ”সহ আরো বেশ কিছু বইয়ে তাদের srai.org ওয়েব সাইটের লক্ষ লক্ষ ভিজিটের ঢোল ফাটিয়েছেন। আপনারা জানেন কি, ২০০০ সাল বা এরপরে অভিজিৎ রায় কলকাতা বই মেলাতে গিয়ে প্রবীর ঘোষের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। প্রবীর ঘোষের দলের রানা হাজরা নামের একজনের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে নিজ উদ্যোগেই মার্কিন এক বন্ধুর (সাম্রাজ্যবাদীদের দালাল কিনা জানি না) সহায়তায় তাদের ওয়েব সাইটটি তৈরি করে দিয়েছিলেন অভিজিৎ রায়। এই সাইটটি দীর্ঘদিন, প্রায় ৫ বছরের উপর দেখভাল করেন অভিজিৎ রায়। এই ওয়েব সাইটের উপর একসময় লেখা থাকতো “মুক্তমনা প্রাউডলি প্রেজেন্টস”। অর্থাৎ অনলাইন জগতে প্রবীর ঘোষের প্রথম পরিচিতি কিন্তু অভিজিৎ রায়ই করে দিয়েছিলেন। বাঙলাদেশের বহু লোক অভিজিৎ রায়ের তৈরি করা ওয়েব সাইটের মাধ্যমেই প্রবীর ঘোষের সঙ্গে যোগযোগ করতে পেরেছিলেন। প্রবীর ঘোষ তার লেখা মাদার তেরেসার উপর একটা বই (খুব সম্ভবত ইংরেজি) উৎসর্গ করেছিলেন। বইটা অভিজিৎ রায়ের সংগ্রহেও ছিল অনেকদিন। যাইহোক, সেই অভিজিৎ রায় জীবিত থাকাকালে প্রবীর ঘোষকে কখনো খাটো করে কোনো কথা বলেননি। বরং প্রবীর ঘোষের অবদানকে সবসময়ই সম্মান জানিয়েছেন। অভিজিৎ রায়ের প্রথম দিককার প্রচুর লেখায় এর ভুরি ভুরি প্রমাণ আছে। আর প্রবীর ঘোষও যদিও অভিজিৎ রায়ের উত্তোরাত্তর জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হতেন, সেটা ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় প্রকাশ করলেও কখন কলম ধরার সাহস করেননি। অভিজিৎ রায়ের মৃত্যুর পর তিনি আর তর সহ্য করতে পারলেন না। বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ অভিজিৎ রায়ের লেখনীর প্রশংসা করছে, তার মৃত্যুতে গভীর দুঃখ প্রকাশ করছে, হত্যার বিচার দাবি করছে, সেখানে প্রবীর বাবু এসেছেন অভিজিৎ রায়ের স্ববিরোধিতা খুঁজে বের করতে! প্রবীর বাবু, আপনার এই ঈর্ষাপরায়ণ মনোভাব অভিজিৎ রায়কে কলুসিত করতে পারবে না, বরং মুক্তচিন্তার আন্দােলনকে হয়তো কিয়ৎকালের জন্য থমকে দিতে পারে। এর বেশি কিছু নয়। আপনি অনেকবারই দাবি করেছেন, আপনি নাকি সবসময় মিডিয়ায় ব্ল্যাকআউট হয়ে যান, এই জন্য আপনার ক্ষোভের শেষ নেই। অথচ অভিজিৎ রায় হত্যার এই মর্মান্তিক ঘটনা জাতিসংঘ, ইয়োরোপীয় ইউনিয়ন থেকে শুরু করে সারা বিশ্বে ব্যাপকভাবে নাড়া দিয়েছে, যা আপনার এই সত্তোর্ধ্ব জীবনে কখনো কল্পনাও করা সম্ভব হয়নি। এই জন্যই কি এতো আত্মম্ভরী মনোভাব প্রদর্শন? কি জানি, আপনিই জানেন আপনার মনের খবর!
৮. শেষ করার আগে একটা কথা বলে যাই। কথায় আছে, ইটটি মারলে পাটকেলটি খেতে হয়। আপনি নিশ্চয়ই প্রস্তুত আছেন এর জন্য। অভিজিৎ রায়ের খুঁত ধরেছেন আপনি, তিনি নাকি নিরীশ্বরবাদী হয়েও ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন! তা মশাই, আপনি যে প্রায় প্রতিটা লেখাতে তসলিমা নাসরিনের সমালোচনা করেছেন, তসলিমা নাসরিন সাম্রাজ্যবাদীদের ক্রীড়ানড়ক, দালাল ইত্যাদি কত অভিধায় ভূষিত করেছেন, সেই আপনিই কিন্তু আপনাদের ওয়েব সাইটে দীর্ঘ দিন ধরে তসলিমার পাশের আপনার হাস্যোজ্ব্বল ছবি প্রদর্শন করে নিজের শোভা বর্ধন করেছিলন। এটা কি আমরা ভুলে গেছি? এটাকে কি বলে? সুবিধাবাদী আচরণ নাকি স্ববিরোধিতা?
ধন্যবাদ।
জয়তু মুক্তমনা, জয়তু যুক্তিবাদ।
স্ববিরোধী-সুবিধাবাদীদের পতন হোক।
“অভিজিৎ রায় সম্পর্কে প্রবীর ঘোষের বক্তব্যের লিংক :
অনিকেতের লেখাটিই নিরপেক্ষ মনে হল, এবং ভাল লাগল।
“ভাইয়ের সঙ্গে মিলনের পর ভাইকে খুন করার তীব্র ইচ্ছা হয় বিয়ের পর থেকে। এই ইচ্ছে প্রশমন করতে অনেক জিনিস-পত্তর ছুঁড়তে হয়, ভাঙতে হয়। একটি স্তনে কিঞ্চিৎ অসাড়তা আছে বলে দিদি মনে করেন। অপর স্তনের মত স্বাভাবিক সাড়া ফিরে পেতে উত্তেজনা আনা প্রয়োজন মনে করে যত বার ভাইকে দিয়ে স্তনটিকে মর্দন ও চোষন করিয়েছেন, ততই স্তনটি আরও বেশি অসাড় হয়েছে বলে দিদির ধারণা।
অবদমিত মানসিক দ্বন্দ্ব থেকে এই অসাড়তা, অনুভূতির গোলযোগ। মিলন শেষে হিংস্রতাও অবদমিত মানসিক দ্বন্দ্ব থেকে উদ্ভূত হিস্টিরিয়ার ফল।
দিদিকে সম্মোহিত করার আগে তার দৈহিক ও মানসিক পরীক্ষা করতে হয়েছে। বার দুই স্তনে শৃঙ্গার করলে দিদি জানালেন, একটি স্তনে শৃঙ্গার অনুভূতি অপরটির থেকে যথেষ্ট কম।”
কি ভাবছেন? মুক্তমনাতে বাংলা চটি লিখছি? ঘাবড়াবেন না। এই লেখা স্বয়ং যুক্তিবাদী প্রবীর ঘোষের। বইয়ের নাম – ‘ধর্ম, সেবা, সম্মেহন’, দে’জ পাবলিশার্স, কলকাতা। বইয়ের শেষে লিখছেন, “যাঁরা সম্মোহন নিয়ে হাতে-কলমে শিখতে ইচ্ছুক, তাঁরা আবেদন করতে পারেন এই ঠিকানায় – ডঃ প্রবীর ঘোষ, ৭২/৮ দেবীনিবাস রোড, কলকাতা ৭০০০৭৪।”
যিনি কমার্স গ্র্যাজুয়েট হয়ে নিজেকে সাইকোলজির ডাক্তার হিসাবে দাবী করেন, সম্মোহন চিকিৎসা করেন এবং চিকিৎসার নামে রোগিণীর ‘স্তন শৃঙ্গার’ করেন, তিনি দিচ্ছেন অজাচারের নিদান, বানাচ্ছেন যুক্তিবাদীর দল? হাস্যকর! অজাচার কথাটার আক্ষরিক অর্থ অজ অর্থাৎ ছাগলের ন্যায় আচরণ। বাংলা ভাষায় অজাচার মানে ইন্সেস্ট। সমকামিতাকে অজাচারের সাথে গুলিয়ে প্রবীর ঘোষ প্রমাণ করলেন যে উনি সমকামিতা এবং অজাচার – দুই বিষয়েই পল্লবগ্রাহী।
সমকামিতা প্রাকৃতিক না অপ্রাকৃতিক – এটা যুক্তিবাদীর কাছে কোনও যুক্তিই হতে পারে না। আপনি যে ফেসবুক করছেন, সেল ফোন হাতে নিয়ে ঘুরছেন, জামাপ্যান্ট পরে দিব্যি ভদ্র মানুষটি সেজে ঘুরছেন, রান্না করে খাবার খাচ্ছেন, অসুখ হলে অ্যান্টি-বায়োটিক খাচ্ছেন, সঙ্গমকালে কন্ডোম পরে নিচ্ছেন – এর কোনটা প্রাকৃতিক? মোদ্দা কথাটা হলো – সমকামী, উভকামী এরাও মানুষ। প্রশ্নটা মানবাধিকারের। এদের প্রতি ডিস্ক্রিমিনেশন বন্ধ করুন। আর পাঁচটা বিষমকামী মানুষ যেভাবে বাঁচে, এদেরও সেইভাবে বাঁচার অধিকার আছে। প্রাপ্তবয়স্কদের কন্সেন্সুয়াল সেক্স কি জিনিস তা প্রবীর ঘোষ জানেন কি? প্রাপ্তবয়স্করা নিজেদের সম্মতিক্রমে যোনিসংগম, পায়ুমেহন, মুখমেহন, স্বমেহন, সেক্স টয় – যা খুশি ব্যবহার করতে পারেন। তাতে প্রবীর ঘোষের কি? তাঁকে বা তাঁর দলকে কি জোর করে কেউ সমকাম করতে বাধ্য করছে? দয়া করে প্রাপ্তবয়স্কদের বেডরুমে উঁকি মারা বন্ধ করুন। কুযুক্তিবাদীদের হোমোফোবিয়া সেরে উঠুক।
ধন্যবাদ দীপ দা !
মানুষের সামনে প্রবীর ঘোষের এই সুমহান ‘কীর্তি’ তুলে ধরার জন্য।
সত্যি অবাক হতে হয় যখন দেখি এরই “চ্যালা” রা অন্যদের “লম্পট” বলে গালি দ্যায় !
সৌম্য,
কলকাতার প্রতিষ্ঠিত যুক্তিবাদী প্রকাশনাগুলি প্রবীর ঘোষকে বহুদিন হল বয়কট করেছে। সেতু, র্যাডিকাল, অবভাস, উৎস মানুষ, মুক্তচিন্তা, পাভলভ প্রভৃতি প্রকাশনাগুলি যাঁরা প্রত্যেক বছর নতুন নতুন যুক্তিবাদী বই প্রকাশ করে থাকেন, প্রবীর ঘোষ তাঁদের কাছে ব্রাত্য। তাঁর বই বেরোয় একমাত্র দে’জ থেকে, যারা বাংলা ভাষায় সর্বাধিক ধর্মের বই প্রকাশ ও বিক্রী করে থাকে। এই তো তাঁর যুক্তিবাদের অবস্থা। বাংলাদেশের বন্ধুরা এইসব খবর একেবারেই জানতেন না দেখে অবাক হলাম।
সমকামিতাকে সমর্থন করতেন অভিজিৎ রায়। প্রবীরদা তার বিরোধিতা করাতেই সবচেয়ে বেশি সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে একের পর এক লিঙ্ক তুলে সমকামিতাকে স্বাভাবিক প্রবৃত্তি প্রমাণ করার চেষ্টা হয়েছে।
জবাব দিতে কিছু পড়াশুনা করতে হল। তাতে দেখলাম সারা পৃথিবীতে মানসিক রোগ বিষয়ে ইন্টারন্যাশনাল ক্লাসিফিকেশন অফ ডিজিজেস (ISD) ও ডায়াগনোস্টিক অ্যান্ড স্ট্যাটিস্টিক্যাল ম্যানুয়াল অফ মেন্টাল ডিসঅর্ডার (DSM)কে মান্যতা দেওয়া হয়।
এর আধুনিকতম ভার্সন হল ICD10 ও DSM5। এতে সমকামিতা ও অন্যান্য জেন্ডার আইডেন্টিটি ডিসঅর্ডারগুলিকে এখনও ‘ডিসফোবিয়া’ ববলেই চিহ্নিত করা হচ্ছে। তবে এবিষয়ে বিজ্ঞানীদের ভিতরও তীব্র মতানৈক্য আছে। ‘ডিসফোবিয়া’ শব্দটির অর্থ নিজ যৌনতা নিয়ে তীব্র অসন্তোষজনিত বিশৃঙ্খলা। অর্থাৎ, স্বাভাবিক নয়।
আচ্ছা যদি ভবিষ্যতে একে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক রূপে গণ্য করা হয় তাহলে কী হবে?
তখন একজন যুক্তিবাদী হিসেবে মেনে নেব। কিন্তু, সমকাম, উভকাম, পশুকাম নিয়েই যাদের দিন কাটে, সর্বক্ষণ যৌনতার চিন্তাকারী এই মানুষরা লম্পট হবেই। এবং এদের দিয়ে সাম্যের আন্দোলন কোনও দিনই হবে না- সেকথা আমরা অস্বীকার করতে পারি কি? সবচেয়ে মজার বিষয় সাম্যকামী প্রবীর ঘোষ অভিজিৎ রায়ের সম্পর্কে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে কথাটি বলেছেন তা হল, তিনি ছিলেন শ্রেণিবিভক্ত সমাজের সমর্থক।
অর্থাৎ সমাজে হুজুর-মজুর সম্পর্ক থাকবেই এবং শক্তিমানরা লুন্ঠন চালিয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক।
একবার, শোষণকে স্বাভাবিক বলে মনে করলে তার প্রতিরোধ অর্থহীন হয়ে পড়ে।
অভিজিৎ রায়ের হত্যাকান্ডের পর মাত্রাতিরিক্ত আবেগ ভারত ও বাংলাদেশে গড়ে উঠতে থাকা সাম্যবাদী আন্দোলনের পক্ষে ধ্বংসাত্মক হতে পারে বুঝতে পেরেই প্রবীরদা সকলকে সাবধান করতে চেয়েছেন।
সম্ভবত, সমকামীদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা শূণ্যের কোঠায় থাকায় তারা এই বক্তব্যটির কোনও বিরোধই করেননি।
পরিশেষে বলি, প্রবীর ঘোষ কোনও দিনই নিজেকে সর্বজ্ঞ বলে জাহির করে কোনও ‘প্রফেটিক’ সংগঠন চালান না।
তাঁর বই পড়লেই দেখতে পেতেন লেখা আছে, আমি এতো দূর পর্যন্ত ভাবতে পেরেছি, আপনারা আরও এগিয়ে নিয়ে যান।
তিনি কোনও দিনই চান না কালের নিয়মে তিনি মারা গেলেই সংগঠন বন্ধ হয়ে যাক। তাই তিনি আমাদের মতন অতি তুচ্ছ ছেলেদের হাতে ধরে লিখতে শেখান, প্রুফ রিডিং শেখান।
আর কোনও অভিজিৎ যাতে রাস্তায় পড়ে না মরে, সেজন্যই তিনি নিজের অভিজ্ঞতা সবাইকে শেয়ার করে বোঝাতে চেয়েছেন কীভাবে কোটিপতি ধর্মগুরুদের ভান্ডাফোড় করেও বেঁচে থাকতে হয়।
গভীর অনুতাপের বিষয় যে আপনারা তাঁর কথার মর্মোদ্ধার করতে না পেরে তাঁর বাপান্ত করে ছাড়লেন।
আর যে বইটা আমি আনিনি সেটা উনি আগেই আমাকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন তাই আমি ওই বইটা তোমাদের জন্য রেখে গেছিলাম ঢাকার কল্যাণের কাছে।
http://www.srai.org/%E0%A6%B8%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%AA%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B0-%E0%A6%AC%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0/
jara mithhe kotha bole tara challenge er voi pai… prabir ghosh mithhe kotha bolen na tai challenge chure den protiti mithhe kothake khandon korte..
এক ‘বন্ধু’ প্রবীর ঘোষের সাথে তার সাক্ষাতের কথা বলেছেন।
ক্লাসঘরের মত পরিবেশে প্রবীর ঘোষ একাই মাস্টারের মত গম্ভীর মুখে বসে আছেন। কেউ পাশের জনের সাথে কথা বললেই ধমক দিচ্ছেন। কিন্তু কোন প্রশ্ন করলেই রেগে যাচ্ছেন।
তাই তিনি আর কোনদিন তার কাছে যাননি।
সবই শুনলাম।
আমার 8 বছরের অভিজ্ঞতায় জবাব দিতে না পেরে রাগার ঘটনা কখনো দেখিনি। বরং এক স্নেহশীল বাবা’কেই দেখেছি যিনি বারংবার আমাদের লেখার উত্সাহ দেন। পরম যত্নে বুঝিয়ে দেন বড় পত্রিকাতে লেখা ছাপাতে হলে কী কী করতে হবে। শুধু লেখা নয়, প্রুফ রিডিং, এডিট করা সবকিছুই তিনি শিখিয়েছেন।
আমাদের বোকা বোকা প্রশ্নে তাকে কোনদিন রেগে যেতে তো দেখিনি।
আচ্ছা, তিনি এসব করেন কেন বলুনতো ? এই 70 বছর বয়সেও নিয়মিত নিজের বাড়িতে কারেন্ট পুড়িয়ে স্টাডি ক্লাসেরই বা কী প্রয়োজন ?
আমরা মানুষ না হলে তার কী ?
আরো তো অনেক নাস্তিক লেখক আছেন, তারা তো করেননা।
তিনিও তো তাদের মত ধর্মের বিরুদ্ধে বই লিখে ‘প্রগতিশীল’ সেজে কাটিয়ে দিতে পারতেন।
গালাগাল দেওয়ার আগে কথা গুলো একটু ভেবে দেখবেন।
বিপ্লব,
তিনি যখন ঢাকায় এসেছিলেন, অভিজিৎ রায় আমাকে অনুরোধ করেছিলেন তার সাথে দেখা করে অবিশ্বাসের দর্শন বইটা পৌঁছে দিতে। আমি দিয়েছিলামও। সেই বইটা তিনি ঢাকায় ফেলে দিয়ে চলে গেছেন। তাকে গালি দেবো না, কারণ তার মতো মিথ্যাবাদী, ভন্ড, নীতিহীন পীরবাবাকে গালি দিয়ে কী লাভ। উলটো ৫০ হাজার টাকার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিবেন।
বন্ধুরা দেখুন !
Biplob লিখেছেন ” এই 70 বছর বয়সেও নিয়মিত নিজের বাড়িতে কারেন্ট পুড়িয়ে স্টাডি ক্লাসেরই বা কী প্রয়োজন ?” সত্যি কি মহানুভবতা ওনার !
তো এখানে দুটো কথা
১। তা এর জন্য ওনার কত টাকার কারেন্ট পুড়েছে তা কি “সংগঠনের” “সহযোদ্ধা” দের জানিয়েছেন ? শুধু এর জন্যে বিল টা একটু জনগন কে জানান না !
২। “সংস্কৃতি সংঘর্ষ ও নির্মাণ” বই বহু মানুষের বহু পরিশ্রমের যৌথ ফসল , “অলৌকিক নয় লৌকিক” এও কিছু ক্ষেত্রে অন্যের অবদান আছে। অথচ প্রবীর ঘোষ তার সব বই এর “রয়্যালটির” টাকা কি ভাবে খরচ করেছেন তা কি জানাতে পারবেন ?! সংগঠনের কাজে নাকি … ! প্রবীর ঘোষের “অনুগামী” দের বলি আপনাদের সৎ সাহস আছে ওর কাছে তা জানতে চাওয়ার …?
কারেন্টের বিলটা “রয়্যালটির” টাকার থেকে কি বেশি ?
জানার ইচ্ছে রইল !
রেজিস্টার অফ সোসাইটি একই নামে দুটো সংস্থাকে সাটিফিকেট দিতে পারে না। আমি সার্টিফাইট কপি তুলেছি, যেকোনও ভারতীয় নাগরিক সার্টিফাইট কপি তুলতে পারেন। সেখানে লেখা আছে ৭২/৮, দেবীনিবাস রোড, কোল-৭৪ হল ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির registered অফিস। এবং প্রবীর ঘোষ সভাপতি ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির।
আপনারা আপনাদের পক্ষে রেজিস্টার্ডের ইস্যু করা কপিটা ছেপে দিন না। এখানে লেখা আছে রামকৃষ্ণ সাহা লেনে আপনাদের কি একটা যেন আছে? শুনলাম আপনারা আরও একটা কেস করেছেন। আরও কেস করে যান কারণ আপনাদের অফুরন্ত টাকা! কেস করে চলেছেন কেন, এটা বলতে যে এখনও কেস চলছে।
আভিজিত রায়,পান্সারে ও দাভলকারের মৌলবাদ বিরোধী,কুসংস্কার বিরোধী অবস্থানকে সন্মান জানিয়েও কিছু কথা আমাদের মনে রাখা দরকার, কোন ধর্মীয় উৎসবে মানুষকে শুভেচ্ছা জানানো অর্থ পরোক্ষভাবে তাকে ধর্ম পালনে উৎসাহিত করা যা একজন যুক্তিবাদীর পক্ষে অনুচিত বলে মনে করি আর গণেশ পূজা বা শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান করাতো চরম বিজ্ঞান বিরোধী ওঁ যুক্তিবাদ বিরোধী কাজ।নাস্তিকতা বা কুসংস্কার বিরোধিতা হল বিশ্বাস(Faith) এবং অবশ্যই প্রগতিশীল কিন্তু যুক্তিবাদ হল একটি সামগ্রিক দর্শন(philosophy) আরও ব্যাপক তার পরিধি।যুক্তিবাদী সাজা যায় না,অবিরত অনুশীলনের মধ্যে দিয়ে হয়ে উঠতে হয়।
প্রবীর ঘোষের বক্তব্য প্রকাশিত হবার পর অনেক sponsored বুলবুলির ডাকাডাকি শুনছি, পড়ছি। ইংলিশ-এ বললে বলতে হয় He has again hit where it hurts. লেখাটা ভীমরুলের চাকেই ঢিল মেরেছে। কিন্তু এতো দেখছি ভীমরুলের বদলে মশা-মাছি ভনভন করছে। যাই হোক, প্রবীর ঘোষকে নিয়ে কুৎসা, ব্যাঙ্গ ইত্যাদি একাধারে হাস্যকর এবং ওনার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা সাম্যের আন্দোলন, যুক্তিবাদী আন্দলনের অভিমুখ ঘুরিয়ে দেবার আর একটা অক্ষম চেষ্টা।
যাইহোক, যতটা সম্ভব সংযত হয়ে নিজের প্রতিক্রিয়া দেবার চেষ্টা করছি:
১। কেউ-কেউ, সাম্যবাদী আন্দোলনকে পরিণত করতে চাইছেন ‘সমকামিবাদ’-এ। একটু কৌতূহল আছে জানার, ওই আন্দোলনের পতাকায় ঠিক কিসের ছবি থাকবে? শ্রেণী-সংগ্রামের জায়গায় “পায়ু-প্রহার”-এর তত্ব?
২। একজন জানিয়েছেন যে উনি নাকি এক সময় প্রবীর ঘোষের অনুরাগী ছিলেন। কিন্তু ওনার মনে হয়েছে বর্তমান যুগের তুলনায় প্রবীর ঘোষ অনেক ছোটো হয়ে গেছেন। আমার প্রশ্ন, উনি যুগের এবং প্রবীর ঘোষের পরিমাপ করলেন কিভাবে ? ওনার এই সিদ্ধ্বান্তের ভিত্তি কি? ওনার লেখা কটা বই উনি পড়েছেন? গত ১৫ বছরে প্রবীর ঘোষের নেতৃত্বে যুক্তিবাদী সমিতির একের পর একের জয়ের খবর কি উনি রাখেন? কোনো খবর না রেখে এই ধরণের মন্তব্য করে, উনি কি বোঝাতে চাইলেন তা উনিই জানেন। আর প্রবীর ঘোষ, এমন কোনও অনুরাগী তৈরি করার কারখানা খোলেননি, যে হুজুগে গা ভাসাবেন। এই জন্যই উনি শ্রদ্ধেয়।
৩। একজন প্রশ্ন করেছেন, ধনঞ্জয়ের ফাঁসি যুক্তিবাদ না ডগমা? আপনার “স্মার্ট” প্রশ্নের আরও “স্মার্ট” উত্তর আপনি পেয়ে যেতেন, যদি হেতাল পারেখ নামের ওই কিশোরী মেয়েটি,যাকে ধনঞ্জয় খুন করে ধর্ষণ করেছিল, আপনার কন্যা, বোন বা অন্য কোনো নিকটজন হত।
৪। একজন প্রবীর ঘোষকে ব্যাঙ্গ করেছেন হনু/ বিরিঞ্চিবাবা বলে, কারণ উনি ওনার আত্মজিবনি-তে লিখেছেন যে উনি নকশালদের তাত্বিক ক্লাস নিতেন চেয়ারম্যানের কোথায়। তা,আমার অ-হনু বন্ধু, যদি ক্ষমতায় কুলোয়, একটু খোঁজ নিয়ে দেখুন না চারু মজুমদার ওনাকে নকশালদের তাত্বিক ক্লাস নিতে বলেছিলেন কী না। বেকার, অর্থহীন মন্তব্য না করে, ঈর্ষা ঝেড়ে ফেলে সত্যি টা জানতে আগ্রহী হোন। আপনার আদৌ রাজনৈতিক ক্লাস নিয়ে নুন্যতম ধারণাও আছে কিনা আমার সন্দেহ হয়। যেটা আছে বলে মনে হয় সেটা হলো, “নাছোড়বান্দা আমাশার” মতন “এক তাল ঈর্ষা”।
৫। আর তসলিমা নসরিন! দিদিভাই, আপনি তো প্রবীর ঘোষের “যুক্তিবাদের চোখে নারীমুক্তি” বইটা পড়েছেন। তারপরেও আপনি ওনার সম্বন্ধ্যে যা লিখলেন, তা কি কোনও মেঘনাদ সৃষ্ট সংলাপ থেকে আওড়ানো, না “হুজুগ জ্বরের” প্রলাপ?
৬। দু-এক জন লিখেছেন, প্রবীর ঘোষ “prabirism” তৈরি করার চেষ্টা করছেন। তাঁদের পাণ্ডিত্য দীর্ঘজীবী হোক। কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে, উনি “Rationalism”-“Contemporary rationalism”-“Neo-Socialism”-এর পথিকৃৎ। আর, কোনও “ism”-এর জন্ম দাওয়া যদি দোষের হয়, তবে গান্ধী, মার্ক্স, লেনিন, মাও…এদের নিয়ে আপনাদের মূল্যায়ন ঠিক কী ?
জানিয়ে রাখি, এই ধরণের অপপ্রচার, প্রবীর ঘোষের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা যুক্তিবাদী আন্দোলন কে আরও সঙ্গবদ্ধ, উদ্বুদ্ধ করবে। সহযোদ্ধাদের কাছে আহ্বান, এই ধরণের যে কোনও লুম্পেন সংস্কৃতির বিরুদ্ধে, আন্দোলন তীব্রতর করুন।
যে সব রাজা/ রানীদের এঁটো চেটে এসব মাতলামি চলছে, তাঁরা আমাদের অজানা নয়।
আপনাদের মানবিক অধিকার টুকুনি কি লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সুয়াল, ট্র্যান্সজেন্ডার দের মধ্যে সীমাবদ্ধ?? আচ্ছা, আপনাদের কাছে প্রশ্ন রইল, শহর আর শহরাঞ্চল ছাড়া গ্রামে গঞ্জে কটা মানুষ, gender dysphoria তে ভোগে?? একবারও ফিল্ডে নেমে কাজ করে দেখেছেন কি, যেখানে ভোগবাদের আগ্রাসন তো দূরে থাক,ঠিক মত বিদ্যুৎ, পানীয় জল, দুবেলা-দুমুঠো খাবার ও পৌঁছায়নি?? সেখানে মানুষ নিজের দুবেলা পেটের ভাত জোগাড় না করে, নিজের শরীর নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করবে, সে ছেলে না মেয়ে?? তাই তো?? আর রইল, লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সুয়াল, ট্র্যান্সজেন্ডার, এরা প্রত্যেকেই মানুষ, আমরাও জানি। কিন্তু এই মানুষ গুলো জন্মের পড় থেকে শিশু থেকে নিজের সেক্স সম্বন্ধে অবহিত হতে শুরু করে নির্দিষ্ট একটা বয়সের পড়েই, এবং তাও একটা নির্দিষ্ট সমাজব্যবস্থা আর সংস্কৃতির ভিতর দিয়েই। একটা মানুষ এর নিজের সম্বন্ধে চিনতে ও জানতে যা যথেষ্টই প্রভাব বিস্তার করে থাকে। আর রইল, আমেরিকার কথা আপনারা যার উদাহরণ বাড়ে বাড়ে টেনে আনছেন!!! শ্রেণী সংগ্রামের আন্দোলন ঠেকাতে এরা কিনা করতে পারে!! যারা ফেসবুকিয় আন্দোলন করে থাকে, তারা আর বুঝবে কি?? ভাববাদের জায়গায় ভোগবাদ এখন জায়গা করে নিচ্ছে, মানুষের মধ্যে শ্রেণী-চেতনার বোধের অবলুপ্তি ঘটাতে। যাই হোক, শেষ অব্ধি বলতে চাই, APA-তে যা পাওয়া গেল, সেখানে যে এই মানসিক রোগ হিসেবে গ্রাহ্য করা হচ্ছে না কেন?? সেখানে কিন্তু সরকার বাধ্যতাকেই বার বার তুলে ধরা হচ্ছে, কোন বিজ্ঞানীর যেকোনো যুক্তিপূর্ণ রিসার্চ এর জায়গায়, যেমন উদাহরণ স্বরূপ http://www.livescience.com/16110-transgender-teen-mental-health.html
DSM 5-এর রিপোর্টে Robin Rosenberg, Leibowitz-এর বিরোধিতা কিভাবে করেছেন, তাও পরিষ্কার নয়। আপনারাই জানেন, কি অধিকার আর কাদের হয়ে লড়ছেন?? যাই হোক, দেখাই যাক আপনাদের আন্দোলনে মাননীয় সুপ্রিম কোর্ট আদৌ সাড়া দেন কিনা?? শ্রেণী সংগ্রামের মুখ ঘোড়াতে আপনারা যে পায়ু মৈথুনের সংগ্রাম গড়ে তুলছেন, তা হাস্যকর ঠেকে। প্রকৃতই সাম্যের লড়াইতে যারা দিনের পড় দিন প্রাণ দিচ্ছেন?? তাদেরই বা আপনারা পাত্তা দেবেন কেন?? আপনাদের কাছে যে মানুষের প্রধানতঃ তিনটি অধিকার- খাদ্য, বস্ত্র আর বাসস্থান এরও আগে ‘সেক্স’ করার অধিকার বেশী প্রয়োজনীয়। ঘরে থেকে বা স্মার্ট মোবাইল দিয়ে এর ওর লিঙ্ক ধার না নিয়ে, একটু ফিল্ডে নেমে বিশেষ করে, গ্রামে গঞ্জে ঘুরে আপনাদের আন্দোলন সম্বন্ধে অবহিত করুন সেখানকার মানুষগুলোকে, দেখুন কতটা উদ্বুদ্ধ করতে পারেন!!!
আসলেই হাস্যকর আপনাদের কর্মকাণ্ড/লেখালেখি।
লেখাটি আমার চোখ এড়িয়ে গিয়েছিলো । সবাইকে ঈদ , বড়দিন ,দূর্গা পূজার আগাম শুভেচ্ছা দিয়ে শুরু করছি ,কারণ হিন্দু ,মুসলমান ,খৃস্ট্রান ও বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা আমার ভাই । ভাইয়ের খুশির দিনে আরেক ভাইয়ের শুভেচ্ছা আজীবন প্রপ্য বরং এই শুভেচ্ছা বার্তাটি না দেয়াই হীনমন্যতা ও নীচুতা । যে উপলব্দিটুকু প্রবীর ঘোষের মধ্যে অনুপস্হিত ।
ভারতীয় যুক্তিবাদী থেকে বাংলাদেশী যুক্তিবাদীগণ অনেক বেশী ধারালো ও স্বচ্ছ । যেখানে আমরা প্রমান করে দিচ্ছি পুরো ব্যাপরটাই বোগাস ও প্রতারণা ,সেখানে প্রবীর ঘোষ তার লেখা সমূহে ধর্মীয় কুংস্ককার নিয়েই পড়ে আছেন । গাছ বেচেঁ থাকলে আগাছা(কুংস্ককার) থাকবেই , আভিজিৎ রায় সেই আগাছার পূর্ন গাছটি শেকড়সহ উপড়ে ফেরতে চেয়েছিলেন বিধার তার ভাগ্যে এই পরিনতী কিন্তু কর্মফল স্বরুপ পরিনতি পরবর্তি বিজয় মাল্যে সিক্ত আমাদের অভিজিৎ রায় । অভিজিৎ দাকে আমরা ভূলবো না ,ভূলতে পারবো না । তেতুঁল হুজুর
প্রবীর বাবুর সম্বন্ধে আগে সঠিক তথ্য জানুন তারপর সমালোচনা করবেন,মুখে মুক্তমন না বলে সেটাকে কাজে লাগান
লুক্সকে ধন্যবাদ প্রবীর ঘোষের কপটতা তুলে ধরার জন্য ।
প্রবীর ঘোষ ‘কূপমণ্ডূকতা’র সংজ্ঞাকে আরেকটু সমৃদ্ধ করলেনঃ আমরা যেন ভুলে না যাই যে, মুক্তচিন্তা, বিজ্ঞান্মনস্কতার শত্রু শুধু ধর্মের লেবাসধারী কিছু মৌলবাদী হিন্দু-মুস্লিম-খৃস্টানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।
চিন্তার বন্ধাত্বে আক্রান্তদের মধ্যে অনেক ‘যুক্তিবাদী’ লেবাসধারী ব্যক্তি ও আছেন।
মুক্তমনাদের কাজ হোক এদের সবার স্বরূপ উন্মোচন।
অন্য একটা প্রসঙ্গে একটু স্পষ্ট হতে চাইছি মুক্তমনাদের কাছ থেকে, নিজের বোঝার স্বার্থেই।
প্রবীর ঘোষ বলেছেন “অভিজিৎ রায় সমকামীতা প্রোমোট করেন”। এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটা মন্তব্যে খেয়াল করলাম এই ‘প্রোমোট করা’ বিষয়টা নিয়ে অনেক মুক্তমনার দ্বিমত। প্রবীর ঘোষের বক্তব্যের সমালোচনা করতে গিয়ে তাদের অনেকেই জোর দিয়ে বলতে চাইছেন – অভিজিৎদা সমকামীতার পেছনে বিজ্ঞান ও মনস্তত্ব নিয়ে লিখতেন, সেটুকুই।
তারা কি এটা বোঝাতে চাইছেন যে অভিজিৎদা আসলে gay rights ‘প্রোমোট’ করতেন না? সেটা কি গর্হিত কিছু?
আজকের পৃথিবীতে বিবেকসম্পন্ন যুক্তিবাদী মানুষেরা যে অধিকারগুলোকে সমর্থন করেন এবং সে সবের সুরক্ষায় সোচ্চার থাকেন – সমকামীদের সমকামীতার অধিকার (gay and lesbian rights) তার মধ্যে একটি। এই অধিকার সুরক্ষার জন্য দেশে দেশে আইন আছে, এবং এর বিরুদ্ধে কথা বললে (যাকে homophobia বলা হয়) তার বিরুদ্ধে hate crimes এবং ক্ষেত্র বিশেষে বৈষম্যবিরোধী আইনের আওতায় প্রতিকার রয়েছে। কেউ যদি আজকে LGBT Rights নিয়ে কাজ করা কোন সংগঠনকে সমর্থন করেন, তা তো LGBT rights-কে ‘প্রোমোট’ করাও বোঝায়। তাতে কোন সমস্যা তো দেখি না।
রায়হান,
প্রবীর ঘোষ “প্রোমোট” করা দিয়ে বুঝিয়েছেন অভিজিৎ সবাই-কে সমকামি হতে উৎসাহ দিয়েছেন।
ওনার অনুগামীদের সঙ্গে কথা বলে এটাই মনে হয়েছে।
সেটা নিশ্চয়ই একটা ব্যাখ্যা হতে পারে।
এই বিষয়ে প্রবীর ঘোষ এর আগের লেখা, এবং সেখানে তার অবস্থান (উদাহরণ: দিল্লী হাইকোর্টের রায় এর পর) পড়ে মনে হয়েছে উনি আদপে সমকামীতার অধিকারের স্বীকৃতিরই বিপক্ষে, এবং যারাই এ অধিকারের পক্ষে কথা বলবেন তারাই তার কাছে ‘মানসিক সমস্যাক্রান্ত’।
তবে অস্বীকার করার উপায় নেই যে উনার কাছে ‘প্রোমোট’ এর সম্ভাব্য দু’টো অর্থ হতে পারে:
১) সমকামীতার অধিকারের প্রোমোশন;
২) সমকামীতাকে সবার জন্য অনুসরণীয় লাইফস্টাইল হিসেবে প্রোমোশন।
দ্বিতীয় অর্থে কথাটা ব্যবহারের সম্ভাবনা আমার কাছে কম মনে হয়েছে, যেহেতু প্রবীরের মূল সমস্যা একেবারে গোড়াতেই, অর্থাৎ প্রথমটি নিয়েই।
উনি আসলে জানেন না যে এখানে ‘মানসিক সমস্যা’-টি আসলে উনার নিজেরই।
রায়হান ভাই যে ২টো অর্থের কথা বললেন তার মধ্যে ২য় টিকে যদি প্রবীর ঘোষরা বুঝিয়ে থাকেন তাহলে ব্যাপারটা খুবই হাস্যকর। আমিও তাই মেনে নিতে পারছি না যে প্রবীর ঘোষ আসলেই দ্বিতীয় অর্থে ব্যাপারটাকে বুঝিয়ে থাকতে পারেন।
কিংবা এখানে আরেকটা ব্যাপারও থাকতে পারে: যারা সমকামী-বিদ্বেষী তাদের অনেকে সমকামীদের অধিকার বিষয়ক যেকোনো আন্দোলনকে সবাইকে-সমকামী-বানানোর প্রোমোশন হিসেবে উপস্থাপন করেন।
সরল মনে দ্বিতীয় অর্থটা করবেন এমন নাঈভ আমার মনে হয় প্রবীর ঘোষ নন; তার মানে তিনি হয় ১ম অর্থটা করেছেন নয়ত ১ম অর্থকে ২য়টি হিসেবে উত্থাপন করে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। উভয় ক্ষেত্রেই অভিজিৎ দা’র সাথে তার সরাসরি বিরোধ। অভিজিৎ দা নিশ্চিতভাবেই সমকামীদের অধিকার প্রোমোট করতেন, এবং নিশ্চিতভাবেই সেটা করা মানবাধিকার বিষয়ে সচেতন যে কারো দায়িত্ব।
“নব্বই এর শেষ দিকে প্রবীর ঘোষকে তহবিল তসরুপের অভিযোগে যুক্তিবাদী সংগঠণ থেকে বহিষ্কার করা হয়। প্রবীর ঘোষও পালটা সংগঠন গড়ে তোলেন একই নামে। মামলাও হয়েছিল – দুই দল দুই দলের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। একটা সময় একই নামে দুইটা সংগঠন ছিলো কলকাতায়। একটার নেতৃত্বে প্রবীর দা, অন্যটায় গৌর অধিকারী আর রাজেশ দত্ত …
কিছুদিন আগ পর্যন্ত দুইটা সংগঠনই নিজেদের নামে বইমেলায় স্টল দিতো। এখন মনে হয় গৌরের দল পিছু হতেছে (শিওর না আমি)। মজার ব্যাপার হচ্ছে পুরো ব্যাপারটা আমি জানতামই না। বছর দশেক আগে একবার কলকাতা বইমেলা গিয়ে আমি ভারতীয় বিজ্ঞান আর যুক্তিবাদী সমিতির স্টলে ঢুকে প্রবীর ঘোষের খোঁজ করা শুরু করি। সেখানকার সদস্যরা বলেন প্রবীর ঘোষকে তো সংগঠন থেকে বের করে দেয়া হয়েছে অনেক আগেই। শুনে তো আমার মাথায় হাত!
বেশ কয়েক বছর পরে প্রবীর ঘোষের একটা লেখা আমরা প্রকাশ করলে, গৌর অধিকারী দাবী করেন যে প্রবীর ঘোষকে বের করে দেয়া হয়েছে। এবং তাদের বক্তব্য সাইটে প্রকাশ করতে বলেন। কিন্তু আমরা খালি মাঠে একপেশে বক্তব্য প্রকাশ না করে প্রবীর ঘোশের সাথে যোগাযোগ করে তাদের বক্তব্যও সংগ্রহ করি। দু’দলের বক্তব্যই আছে এখানে –
https://www.mukto-mona.com/Articles/prabir/charge_against_prabir.htm”
রায়হান আবীরের উপরোক্ত মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে জানাই –
১) প্রবীর ঘোষকে ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি থেকে বহিষ্কার করা হয় ১৯৯৬ সালে। তার নামে তহবিল তছরুপ, শ্লীলতাহানি, ভুয়ো সার্টিফিকেট দেখিয়ে চিকিৎসা করা, মনোবৈজ্ঞানিক চিকিৎসার নামে হিপনোটিজম চালানো ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়। প্রবীর ঘোষ সমিতির কাগজপত্র ও সম্পত্তি নিয়ে পালায়। বিতাড়নের এক মাস পরে পুলিশের সাহায্যে তার বাড়িতে তল্লাসি চালিয়ে সেই সব উদ্ধার করা হয়।
২) প্রবীর ঘোষকে বিতাড়নের পরে সমিতির সাধারণ সম্পাদক হন শ্রী দেবাশিস ভট্টাচার্য্য। গৌর অধিকারী, রাজেশ দত্ত, প্রতিষ্টাতা সদস্য দেবকুমার হালদার ইত্যাদিরাও সে সময় এই সমিতিতে ছিলেন। গৌরবাবু পরে সমিতি ছেড়ে দেন। রাজেশ দত্ত অনৈতিক কাজকর্মের জন্য বিতাড়িত হন ৯০’র দশকে। দেবকুমার হালদার এখনো সমিতির সক্রিয় সদস্য। দেবাশিস ভট্টাচার্য্য বর্তমান সাধারণ সম্পাদক।
৩) বিতাড়নের কিছুকাল পরে প্রবীর ঘোষ একই নামে নিজস্ব সমিতি খুলে চালাতে থাকেন; সমিতির নাম, লোগো ও রেজিস্ট্রেশন নাম্বার ব্যবহার করতে থাকেন, এবং বর্তমান সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মুক্তমনায় “দু’দলের বক্তব্য” বলে যে লেখাটি রায়হান দিয়েছেন সেটি মোকদ্দমা চলাকালীন, ২০০৬ সালের। ২০১২ সালে এই মামলার রায় ঘোষণা হয় এবং তাতে প্রবীর ঘোষের দাবীকে ডিসমিস করে দেবাশিস বাবুদের পক্ষে রায় যায়। সম্ভবত রায়হান এবং মুক্তমনার অন্যান্যরা এই বিষয়ে অবগত নন।
৪) গৌর অধিকারী ভার্সেস প্রবীর ঘোষের বক্তব্য বলে মুক্তমনাতে যা প্রকাশ করা হয়েছিল তাতে গৌর অধিকারী’র (তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক) বক্তব্য পুরোটা প্রকাশ করা হয়নি। শুধু নিউজ পেপার কাটিংটা দেওয়া হয় কিন্তু মামলার যেসব তথ্য পাঠানো হয়েছিল সেগুলো প্রকাশ করা হয়নি। পক্ষান্তরে প্রবীর ঘোষের পাঠানো মামলার কাগজগুলি মুক্তমনা প্রকাশ করে যা পড়ে আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় প্রবীর ঘোষ মামলা জিতে গেছেন। প্রকৃত সত্য হলো সেই সময় মামলা চালু ছিল। এই নিয়ে দেবাশিস বাবুরা অভিজিৎ রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন এবং আপত্তি জানিয়েছিলেন কিন্তু কোনো অজ্ঞাত কারণে তা লেখাটি অপরিবর্তিতই রাখা হয়।
৫) বর্তমানে কলকাতা বইমেলায় দুই দলকেই দেখা যায়। প্রবীরবাবুর দল “আমরা যুক্তিবাদী” এই নামে পত্রিকা প্রকাশ করে এবং প্রবীর ঘোষের বই বেচে। অরিজিনাল যুক্তিবাদী সমিতি অর্থাৎ দেবাশিষ বাবুর দল “একুশ শতকের যুক্তিবাদী” এবং “কিশোর যুক্তিবাদী” নামে দুটি পত্রিকা প্রকাশ করে। এদের দেখা যায় লিটল ম্যাগাজিন চত্ত্বরে টেবিল পেতে বসতে। কোনও যুক্তিবাদী সমিতিরই নিজস্ব স্থায়ী স্টল থাকে না, কিন্তু মুক্তচিন্তা পাব্লিকেশন নামে একটি স্টল হয় যেখানে দেবাশিষ বাবুর দলের বইপত্র রাখা হয়। রায়হান “যুক্তিবাদী সমিতির স্টল” বলতে খুব সম্ভবত এই স্টলেই ঢুকেছিলেন। সুতরাং “গৌরের দল পিছু হতেছে” এই কথা ঠিক নয়।
৬) অভিজিৎ রায়ের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পরের দিনই দেবাশিষ বাবুর সভাপতিত্বে ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে প্রেস রিলিজ দেয়। কলকাতার কাগজে তা ২৮শে ফেব্রুয়ারি তারিখে ছাপা হয়। ঐ প্রেস রিলিজে লেখক/গবেষক আশিস লাহিড়ী, বৈজ্ঞানিক মিহির চক্রবর্তী, বিড়লা মিউজিয়ামের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সমর বাগচী, আই আই টি, যাদবপুর, শিবপুরের বিভিন্ন প্রফেসর, কলকাতার অন্যান্য যুক্তিবাদী বা বিজ্ঞান লেখকরা স্বাক্ষর করেন।
[পুনশ্চঃ আগামি দশদিন কলকাতার বাইরে থাকবো। নেট দেখতে পারবো না। কেউ কোনও বিষয়ে প্রশ্ন রাখলে ফিরে এসে উত্তর দেব। দয়া করে অপেক্ষা করবেন।]
দীপ,
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ । এটা সম্পর্কে কোন ধারণা ছিলো না। আমি নেট খুঁজে ২০১২ তে বের হওয়া রায় টি খুঁজে পাচ্ছি না। আপনি যদি দয়া করে শেয়ার করেন উপকৃত হব।
অগ্রিম ধন্যবাদ।
সৌরভ,
২০১২’র রায়ের কপি সমিতির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক দেবাশিষবাবুর ফেসবুক পেজে পাবেন। বহিষ্কৃত প্রবীর ঘোষ মামলা করেছিলেন ‘ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি’ এই নামেই (Plaintiffs)। আসল যুক্তিবাদী সমিতি লড়েছিল ‘ধনঞ্জয় শিকদার এন্ড আদার্স’ নামে (Defendants)। প্রবীর ঘোষ তাঁর বক্তব্যের সপক্ষে কোনও তথ্যপ্রমাণ দাখিল করতে পারেননি এবং শেষ পর্যন্ত কোর্টে গরহাজির হন।
https://www.facebook.com/photo.php?fbid=460036907354023&set=a.393966923961022.98095.100000431534099&type=1&theater
ফেসবুকে আরেকটা আলোচনায় এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য পাবেন।
https://www.facebook.com/Ananta.Bijoy/posts/10153332679877176
যে লোক সমকামিতার বিরোধীতা করে তাকে যুক্তিবাদী বলা যায় না কিছুতেই। প্রবীর বাবুর কাছে জানতে চাইছি, আপনি সমকামিতার বিরোধী, কিন্তু বিষমকামিতার বিরোধী নন কেন?
সমকামিতা নিয়ে দুপক্ষেরই ভুল ধারনা রয়েছে দেখছি। এটা “কটা হওয়ার মত” কোন physical attribute নয়, এটা একটা behavioral বিষয় – যেমন বা হাতি/ ডান হাতি হয়ে জন্মানোর মত। বাহাতি হয়ে জন্মালেও অনেক চেষ্টা করলে ডান হাতে লেখা অভ্যাস করা যায়। আবার ডানহাতি হয়ে জন্মালেও অনেকে বা হাতে লেখা শিখতে পারে। সমকামিতাও তেমনি। চেষ্টার দ্বারা behavior পরিবর্তণ সম্ভব। যে সমকামী জন্মায় নি প্রোমোট করলে পরিস্তিথিতে পড়ে বা সমকামী বন্ধুদের প্রভাবে সেও সমকামী হয়ে উঠতে পারে। কে কিভাবে জন্মালো সেটা বিষয় হওয়া ঠিক নয়। তবে প্রশ্ন হবে সমকামিতা harmful কিনা? যেমন সিগারেট খাওয়াটা ক্ষতিকর অভ্যাস – তাই ভিবিন্নভাবে এটাকে discourage করা হয়। সমকামিতা বিষয়েও ঐ একই কথা – behavior-টা ক্ষতিকর কিনা (শারিরীক, মানসিক, বা সামাজিক ভাবে)। যারা এই behavior-টিকে ক্ষতিকর মনে করেন তারা এর বিরোধিতা করেন। উভয় পক্ষেরই পক্ষের উচিৎ পরস্পরের প্রতি কাদা ছোড়াছুড়ি না করে এটা শারিরীক, মানসিক, বা সামাজিক ভাবে ক্ষতিকর কিনা তা খতিয়ে দেখা বা এ ব্যাপারে objective research করা। ঠিকমত না বুঝে একে অন্যকে ব্যক্তিগত আক্রমন করে সম্পর্ক খারাপ করা ভাল কি? অভিজিৎ রায় কি বলেছ, আর প্রবীর ঘোস কি সে সবকে কেন্দ্র এর সমর্থনে ওকে এক হাত বা দুই হাত নেওয়া মুক্তমনের পরিচয় নয়।
অনিকেত,
অনেকগুলো গন্ডগোল হচ্ছে । প্রথমত, সমকামিতা কিসের জন্য হয় সেটা পুরপুরি পরিষ্কার নয় এখনও, তবে জেনেটিক অ্যাঙ্গেল এর দিক ক্রমশ উঠে আসছে । আপনার “চেষ্টার দ্বারা behavior পরিবর্তণ সম্ভব”, এটা কে উল্টো দিক দিয়ে দেখলে হয়, সমকামিরা চেষ্টা করলে বিষমকামি হতে পারে, যেখানে আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক আসোসিএশন বলছে সেটা সম্ভব নয়। সেক্সুয়াল ওরিএন্টেশন পালটানো সম্ভব নয় ।
সিগারেট খাওয়া ব্যাপারটা সমকামিতা-র সাথে তুলনা তেই আসে না । সমকামিতা কোন “Conscious decision making process” নয়।
রইলো বাকি ক্ষতি-র কথা । আপনি Dr. Evelyn Hooker দিয়ে খুঁজলে একটা পেপার পাবেন, সেটা কাইন্ডলি দেখে নেবেন। আর, হেটেরসেক্সুয়ালিটিতেও কিন্তু কম রোগ ছড়ায় না , তাই বলে কি সেটা বন্ধ করে দেবেন ???
শেষে বলি, সেক্সুয়ালিটি একটি অত্যন্ত ব্যাক্তিগত ব্যাপার। তাই কে কার সঙ্গে জীবন কাটাবেন, এটা ঠিক করার পূর্ণ অধিকার তাঁর আছে, এবং সেখানে হস্তক্ষেপ করার অধিকার কোন তৃতীয় ব্যক্তির নেই ।
আমি এপিএ-র লিঙ্ক টা দিলাম । এটা নিয়ে প্রচুর পেপার আছে ।
http://www.psychiatry.org/mental-health/people/lgbt-sexual-orientation
ধন্যবাদ সৌরভ। আপনি ঠিক বলেছেন, “সমকামিতা কিসের জন্য হয় সেটা পুরপুরি পরিষ্কার নয় এখনও।” তবে “চেষ্টার দ্বারা behavior পরিবর্তণ সম্ভব”, এ প্রসঙ্গে (sexual behavior-এর পরিবর্তণ সম্ভব কিনা) নীচের article-টা দেখুন:
‘Ex-Gay’ Men Fight Back Against View That Homosexuality Can’t Be Changed
(website: http://www.nytimes.com/2012/11/01/us/ex-gay-men-fight-view-that-homosexuality-cant-be-changed.html)
মনে হয় বিষয়টি নিয়ে আরো গবেষণা দরকার কোনটা সত্যি তা খুঁজে পেতে। তবে পরিবর্তন যে সম্ভব (অনেক কষ্টের হলেও) তার উদাহরণ পাওয়া যাচ্ছে।
যাই হোক আপনার সাথে সবারই একমত পোষণ করা উচিত – “সেক্সুয়ালিটি একটি অত্যন্ত ব্যাক্তিগত ব্যাপার।” তবে এটা যেন অন্যের জন্য ক্ষতিকারক না হয় – সে শারিরীক, মানসিক, বা সামাজিক ভাবে, বা অন্য যে ভাবেই হোক না কেন।
অনিকেত,
রিপ্লাই এর জন্য ধন্যবাদ । আপনি যে লিঙ্ক টা দিয়েছেন, দুঃখের সঙ্গে বলতে বাধ্য হচ্ছি যে সেটার কোন দাম নেই । কারণ প্রথমত এটা শুধু কিছু সাব্জেক্টিভ অভিজ্ঞতা-র কালেকশন । দ্বিতীয়ত, চিকিৎসাবিজ্ঞান এটা বলে যে যদি কেউ তাঁর সেক্সুয়াল ওরিএন্টেশন নিয়ে নিজে হীনমন্যতায় ভোগেন, তখন তিনি সেটার জন্য কাউন্সেলিং করাতে যেতে পারেন । কিন্তু যারা ভোগেন না, তাঁরা কেন এক-এ পঙক্তি-তে পড়বেন, আর কেন-ই বা চিকিৎসা করাতে যাবেন ? ওপরে শুধু তাদের কথাই বলা হয়েছে যারা স্টিগমা তে ভুগেছেন, এবং নিজেরা পরিবর্তন চেয়েছেন ।
এপিএ-র যে লিঙ্ক টা আমি দিয়েছি সেটা পড়লেই বুঝতে পারবেন যে এই “কনভারশন” ব্যাপারটা নিয়ে প্রচুর গবেষণা হয়েছে, এবং প্রতিক্ষেত্রেই প্রমাণিত হয়েছে যে এগুলো কোন কাজের জিনিস নয়, বরং এতে ক্ষতিটাই বেশি হয়। আরো একটা লিঙ্ক দিই আপনাকে।
http://www.nytimes.com/2012/05/19/health/dr-robert-l-spitzer-noted-psychiatrist-apologizes-for-study-on-gay-cure.html?_r=2
শেষে বলি, দুজন মানুষ নিজেদের মধ্যে বেডরুম-এ কি করছেন পারস্পরিক সম্মতি তে, সেটা তে সমাজ কে টেনে আনার কোন দরকার-ই আমি দেখতে পাচ্ছি না । হেটেরোসেক্সুয়াল সম্পর্কে ও বহু বহু সামাজিক সমস্যা হয়, কেউ কিন্তু সেটা কে ছেড়ে দিতে বলেন না। দম্পতি-র মানসিক বা অন্য কোন সমস্যা হলে তা অবশ্যই বিচার্য, কিন্তু কোন তৃতীয় ব্যক্তি যদি দাবি করেন যে তাঁর সমস্যা হচ্ছে, সেটা কে বিশেষ গুরুত্ব না দেওয়াই বাঞ্ছনীয় । ব্যক্তিগত গন্ডিতে, ব্যক্তিগত অধিকার-এ হস্তক্ষেপ চূড়ান্ত অবাঞ্ছনীয় ।
ধন্যবাদ সৌরভ। আমি যে article-টার reference দিয়েছি সেটির প্রকাশ কালের তুলনায় আপনার article-টা পুরনো। দুটো articles কিন্তু একই পত্রিকায় ভিন্ন সময়ে প্রকাশিত। তাই আগের article-টার দাম থাকবে না পরেরটার দাম থাকবে – বিষয়টি কি বিতর্কিত নয়?
অনিকেত,
আর লিখব না । আপনি একজন লে ম্যান এর ব্যক্তিগত উপলব্ধি-র সঙ্গে একজন বিশেষজ্ঞের প্রফেশনাল অভিজ্ঞতার তুলনা করছেন। হ্যাঁ, আমি এটা দেওয়ার আগেই দেখেছিলাম যে এটার প্রকাশ কাল পুরনো, কিন্তু তার মধ্যে কোন নতুন স্টাডি হয়েছে কি ?
যদি না হয়ে থাকে, বিজ্ঞান সম্মত বলতে প্রথম স্টাডি এবং বিশেষজ্ঞ চিকিতসক এর মতটিই ধরা হবে, কোন লে ম্যান এর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা-র ওপরে ।
এরপর আপনি বুঝবেন, আপনি কোনটা নেবেন ।
যেতে যেতে এটা দিয়ে যাই
///Is It Possible To Change One’s Sexual Orientation (“Reparative Therapy”)?
There is no published scientific evidence supporting the efficacy of “reparative therapy” as a treatment to change one’s sexual orientation, nor is it included in the APA’s Task Force Report, Treatments of Psychiatric Disorders. More importantly, altering sexual orientation is not an appropriate goal of psychiatric treatment. Some may seek conversion to heterosexuality because of the difficulties that they encounter as a member of a stigmatized group. Clinical experience indicates that those who have integrated their sexual orientation into a positive sense of self-function at a healthier psychological level than those who have not. “Gay affirmative psychotherapy” may be helpful in the coming out process, fostering a positive psychological development and overcoming the effects of stigmatization. A position statement adopted by the Board in December 1998 said:
“The American Psychiatric Association opposes any psychiatric treatment, such as “reparative” or “conversion” therapy, which is based upon the assumption that homosexuality per se is a mental disorder, or based upon a prior assumption that the patient should change his/ her homosexual orientation.”///
শুভেচ্ছা নেবেন । 🙂
ধন্যবাদ সৌরভ। আমি কিন্তু আপনার মতটা এখনই নিতে পারলাম না সম্পূর্ণভাবে। বিষয়টি নিয়ে আরো গবেষণা হবে নিশ্চয়। সেই অপেক্ষায় রইলাম। যাহোক, আমিও এ নিয়ে আর লেখা থেকে এখানেই থামছি। আপনাকেও শুভেচ্ছা।
কথাটি বহুলাংশে ভুল। Kinsey’s scale of sexual behaviour” স্পষ্টভাবে যৌনতার স্কেল বা কন্টিনাম ধরে মানুষের পূর্ণ সমকামিতা থেকে পূর্ণ বিষমকামিতার একটা রেইঞ্জ দেখিয়েছে। একেকজন মানুষ একেক জায়গায় বিচরণ করে ওই স্কেলের। কেউ কেন পুরো সমকামী হবে,অল্প বিষমকামী হবে বা পুরো বিষমকামী হবে সেটা খুব সুন্দর করে বলা আছে এতে। এটা পড়লে সমকামিতা নিয়ে আপনার ধারণা পাল্টাবে নিশ্চিত।
ধন্যবাদ সেঁজুতি। “Kinsey’s scale of sexual behaviour” – তো একটা স্কেল Heterosexual–Homosexual Rating এর জন্য। এখানেতো কোন গবেষণা নেই যা বলে সমকামিতা অপরিবর্তি থাকে সব সময়একই মানুষের জন্য।
নীচের article-টা দেখুন sexual behavior-এর পরিবর্তণ প্রসঙ্গে:
‘Ex-Gay’ Men Fight Back Against View That Homosexuality Can’t Be Changed
(website: http://www.nytimes.com/2012/11/01/us/ex-gay-men-fight-view-that-homosexuality-cant-be-changed.html)
আমি আপনার সাথে খুবই একমত. আমিও প্রবীর ঘোষের সবকটা বই পড়েছি. অনার অনেক কথায় আমার যুক্তি বিরুদ্ধ লেগেছে. অনার সমকামীদের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি কখনোই সমর্থনযোগ্য নয়. ওনার কতগুলি অন্ধ বিশ্বাস আছে.
১] সমকামীরা অত্যন্ত খারাপ.
২] ধর্ষকদের মৃত্যুদন্ড দেআই উচিত. [ পাপীকে ঘৃনা কর পাপকে নয়. জাতীয় মত .]
৩] আর তসলিমা নাসরিন সংক্রাত মত.
তবে একটা জিনিস বলে আপনি আমার চোখ খুলে দিয়েছেন: অভিজিত দা প্রবীর ঘোষের সাইট তৈরী করে দিয়েছেন. আসলে উনি ওই কাজের বেলায় কাজী আর কাজ ফুরুলেই পাজি এই মতে বিশ্বাসী. যে তসলিমাকে এত ঘৃনা করেন, তার ছবির সাথে নিজের ছবি রাখার কি দরকার? তাহলে অনার যুক্তিগুলি সবই স্বার্থ প্রণোদিত নয় তো?
ওনার নকশাল আদি বিচ্ছিন্নতাবাদী হিংস্র দোল করাকে আমিও সমর্থন করি না. অনার ক্লাস নেওয়া দেখে হাসি পেল.
ধন্যবাদ আপনাকে।
ওমর ফারুক লুক্স এর এরকম একটি জবাব আদৌ প্রয়োজন ছিলো কিনা এখনো বুঝতে পারছি না।
প্রবীর ঘোষের বক্তব্যের শেষদিককার ‘বেড়ালকে বাঘ সাজাবার চেষ্টা করবেন না’ পড়ে মনে হয়েছিলো কেউ কেউ সম্ভবতঃ তার এবং অভিজিৎ রায়ের মধ্যে একটা কমপেয়ার করার চেষ্টা শুরু করেছিলো এবং অভিজিৎ রায়কে সুপেরিয়র বা তার সমকক্ষ দাবী করছিলো। এমন যদি সত্যিই কেউ করে থাকে সেটা নেহাতই একটা ছেলেমানুষী হয়েছিলো। এই দুজনের মধ্যে তুলনা করাটা আসলে ঠিক নয়। দুজনের কাজের ক্ষেত্রই আলাদা। প্রবীর ঘোষ একজন লেখক শুধু নন, একজন এক্টিভিস্ট, প্রায় শুরু থেকেই। মাঠে ঘাটে ছুটে বেড়ানো সংগঠন করা পুরোমাত্রার একজন এক্টিভিস্ট। আর অভিজিৎ রায় থেমে যাওয়ার আগ পর্যন্ত কেবল লিখেই গেছেন। তবুও যার প্রথম বই ‘আলো হাতে চলিয়াছে আাঁধারের যাত্রী’ আর সর্বশেষ বই ‘ভিক্টোরিয়া ওকোম্পো’ তিনি আরও কি লিখতেন কি করতেন তা এখন আর জানার উপায় নেই। তাই এদের মধ্যে তুলনা করে পরস্পরের প্রতি বিষোদগার করে লেখা-পাল্টা লেখা.. দেখতে খুব খারাপ দেখাচ্ছে। লেখার জবাব যদি দিতেই হয়, সেটা দেয়া উচিত ছিলো/উচিত হবে কোনরকম টিজিং না করে। তথ্য দিয়ে। যুক্তি দিয়ে। নয়তো তাতে চাপাতিওয়ালাদের বিনোদনই দেয়া হবে কেবল।
প্রবীর ঘোষের বক্তব্যের ভঙ্গীটুকু অবশ্যই পীড়াদায়ক। সদ্য আপনজন হারানো সংক্ষুব্ধ শোকসন্তপ্ত কাউকে ওভাবে বললে তাতে যুক্তি প্রতিষ্ঠিত হয় হয়তো কিন্তু ভদ্রতাবোধ মানবিকতা এসব মাঠে মারা যায়। তবু ভঙ্গীটা ইগনোর করে সমালোচনার পয়েন্টগুলো যদি ধরি-
১। অভিজিৎ রায় সমকামিতাকে প্রমোট করেছেনঃ
অভিজিৎ রায়ের সমকামিতা বিষয়ক বইটাকে এক লাইনে সামারী যদি করতে হয় তবে তা হবে এরকম- সমকামিতা প্রকৃতি-বিরূদ্ধ নয়। তথ্য উপাত্ত দিয়ে এই বক্তব্যের বিরোধীতা করা যাবে হয়তো, কিন্তু এক্ষেত্রে ‘প্রমোট করা’ কথাটা ব্যবহার করা সত্যিই প্রবীর ঘোষের মতো একজনকে মানায়নি। তাঁর বিভিন্ন বইতে এবং সংগঠনের পক্ষ থেকে সমকামিতার বিপক্ষে যেখানে যা কিছু বলা হয়েছে তাতে তথ্যের চাইতে বিষোদগারটাই চোখে পড়ে বেশী এবং খুব দৃষ্টিকটু লাগে।
২। অভিজিৎ রায় ঈদের শুভেচ্ছা জানাতেনঃ
হায়রে.. এতেই রাগ! ঈদতো তবু বছরে দু’বার আসে মাত্র। বাংলাদেশে বসে আমরা, সে ফ্রিথিংকার হই আর রিলিজিয়াস হই, প্রতিদিন অসংখ্যবার যে অন্যকে স্লামালিকুম বলি সেটাকে কী বলবেন? সত্যি কথাটা হচ্ছে, এই সালাম জানানো, ঈদ শুভেচ্ছা দেয়া এগুলো বাংলাদেশে এখন আর ধর্মচর্চার অংশ নয়, কালচারের অংশ হয়ে গেছে। এগুলো কেবল মুখে উচ্চারিত কিছু শব্দ মাত্র, তার বেশী কিছু নয়, এমনকি বিশ্বাসী ধার্মিক অনেক মুসলমানের কাছেও খুব গুরুত্বপূর্ণ কোন ধর্মাচরণ নয়। বাংলাদেশের এই বিচিত্র এবং বিশেষ ধরণের কালচারটি প্রবীর ঘোষের জানা থাকলে ভালো লাগতো। ধরুন, মেজাজ খারাপ করে একজন যুক্তিবাদী যদি বলে ‘জাহান্নামে যাক’ সেটাকে কি তার যুক্তিবাদ-বিচ্যুতি বলে ধরা হবে, নাকি এটা স্রেফ বাংলা ভাষার একটা এক্সপ্রেশন?
৩। অভিজিৎ রায় সাম্যের সমাজ চাইতেন নাঃ
কি জানি, দাদা এমন কথা সরাসরি কোথায় বলেছিলেন। তবে তিনি মার্কসবাদের সমালোচনা বেশ ভালোভাবেই করেছেন বিভিন্ন সময়ে। তাতে আমি বুঝেছিলাম যে তিনি মার্কসবাদকে মোর রিফাইন্ড চেহারায় দেখতে চান। কিন্তু ওসব সমালোচনা থেকে যদি কেউ ধরে নেন যে অভিজিৎ লোকটা চাইতো এই অসাম্যের সমাজই টিকে থাকুক, শোষিতেরা শোষিতই থাকুক ইত্যাদি তবে সেই ধরে নেয়াটা খুব যুক্তিসঙ্গত হবে না বোধহয়।
৪। বাঘ-বেড়াল সমাচারঃ
প্রবীর ঘোষ যুক্তিবাদের পথে ধাপে ধাপে বহুদূর উঠে গেছেন। প্রথম দিকে বাবাজী-মাতাজীদের তথাকথিত অলৌকিক কর্মকান্ডকে ছিন্ন করেছেন। পাশাপাশি বিস্তৃত একটি সংগঠন গড়ে তুলেছেন। তারপর হাত দিয়েছেন সরাসরি ঈশ্বর বিশ্বাসের জায়গায়। তারপর রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে শুরু করেছেন। এবং সাম্প্রতিকতম ধাপ হিসাবে জেলায় জেলায় স্বয়ম্ভর গ্রাম গড়ে তুলছেন। পুরো প্রকৃয়াটিতে যে নিখুঁত পরিকল্পনার ছাপ এবং তার বাস্তবায়নে যে অবিশ্বাস্য সাংগঠনিক দক্ষতা দেখা যায় সেটা তাকে নিশ্চয়ই অমর করে রাখবে। তিনি এক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে বাঘ। তাই ভরসা আছে তিনি বুঝবেন যে যুক্তিবাদ আন্দোলনের প্রথম যে ধাপ-নিরীশ্বরবাদীতা- সেধাপে দাঁড়ানোই বাংলাদেশে কী অসম্ভব এক কাজ।
এখানে অবশ্য জোরগলায় অনেক যুক্তিবাদী দাবী করতেই পারেন যে পশ্চিমবঙ্গেও তা অসম্ভবই ছিলো। প্র্যাকটিকালী কমপেয়ার করতে আমিও পারবো না। তবু বিনয়ের সাথেই তাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে দুই অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারকারী ধর্ম দুটো কিন্তু এক নয়। হিন্দুধর্মের চেয়ে ইসলাম ধর্ম যে কোন দেশেই অনেক বেশী প্র্যাকটিজিং। তাছাড়া ধর্মীয় দর্শন হিসাবেও ইসলাম বিভিন্ন ইস্যুতে অনেক বেশী কট্টর, ফোকাসড এবং পিন-পয়েন্টেড, কখনো কখনো আধুনিকও অন্য ধর্মগুলোর তুলনায়। তাই মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলোতে ফ্রিথিংকিং এর প্রসার অন্য যে কোন দেশের তুলনায় কমই হয়েছে। কারন ওটাই, প্রথম ধাপটাতে ওঠাই কষ্টকর। তার ওপর, বাংলাদেশে অনেক বেসিক ক্ষেত্রে তথৈবচ অবস্থা বিরাজ করছে। যেমন, রাজনীতি; একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন আমরা তৈরী করতে পারিনি। নির্বাচন এখন প্রহসণ। শিক্ষাব্যবস্থায় চলছে আরেক তুঘলকি কারবার; পরীক্ষার ফলাফল এখন বেশীরভাগ ক্ষেত্রে কোন অর্থবহন করে না। এ অবস্থায় সাম্যের সমাজের কথা বললে.. বিরোধীতা নয়, হাসাহাসি শুরু হবে। তবুও প্রবীর ঘোষের মতো একজনকে যদি পাওয়া যেতো.. হয়তো আমাদেরও হতো।
এহেন প্রবীর ঘোষ যদি বাঘ হন, অভিজিৎ রায় নিঃসন্দেহে বাঘ নয়। আপনার যাকে বেড়াল মনে হয়েছে তাকে ‘নির্মোহভাবে’ বেড়াল বলেছেন। ঠিকই করেছেন, প্রবীর দা। যুক্তিরই জয় হোক দিনশেষে। তবু বলি, আমাদের প্রিয় বেড়ালছানাটাকে না পেছন থেকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে কুৎসিতভাবে মেরে ফেলা হয়েছে। ওরই দোষ। ছেড়ে রাখা পাগলা কুকুরের দেশে এসেছিলো কেন? এসেছিলোই যখন, আরেকটু বুদ্ধি খাটিয়ে চললো না কেন? আপনি ঠিকই বলেছেন। আপনি তো দিব্যি বেঁচে আছেন। ও কেন তবে রইলো না? যুক্তি বলে, ওরই দোষ। ঠিকই। তবু, এরও বোধহয় প্রয়োজন ছিলো। মরেও যেভাবে হেনস্থা হলো/হচ্ছে.. এরও প্রয়োজন ছিলো। আমাদের নতুন করে জানা হলো, আমরা কোথায় আছি। অভিজিৎ রায়ের ফুটপাতে রক্তাক্ত পড়ে থাকার ছবিটা মন থেকে কোনদিন যাবে না এমন অনেকেই আছি আমরা। কে বলে সময়ে সব জোড়া লেগে যায়? এই আমাদেরই কেউ হয়তো আপনাকে কিছু বলেছে। তাই বলে কি আপনিও! আপনি ভালো থাকুন। আমাদের প্রেরণা হয়ে থাকুন। দুঃসময়ে বেড়ালগুলোর পাশে থাকুন; যদি পারেন।
(এই পর্যন্ত লিখে কি মনে করে যেন মুক্তমনায় আবার ঢুঁ মেরে দেখি এই থ্রেডে রায়হান আবীরের কমেন্ট। হায় হায়.. সাদা বাংলায় একেই বোধহয় বলে টাশকি খাওয়া। সেটা ভালো মতোই খেলাম। এখনো হজম হয়নি। ঘুরন্ত মাথা নিয়েই এই প্যারাটা এড করছি।
হ্যাঁ, যুক্তিবাদের পথে কেউই অপরিহার্য নয়। কেউই নয়। তবু কৈশোরের ক্রাশ বলে কথা। তাই মিন মিন করে প্রবীর ঘোষকে একটু ডিফেন্ড করি, জিনিয়াসরা কখনো কখনো বেশ এ্যারোগেন্ট হয়। কখনো সাফল্যের অসহনীয় ভারে (এ ক্ষেত্রে বয়সের ভারটাও বোধ হয় যোগ হয়েছে), কখনো বিশ্বজগতের প্রতি তীব্র অভিমানে। তবু, সেটা প্রতিভার বাই প্রডাক্ট; মূল প্রডাক্ট নয়।
কী জানি এবার আমার কপালে কী আছে!)
মূল কথাটা মনে করিয়ে দিয়ে পালাই- চাপাতিওয়ালাদের বিনোদনের খোরাক যেন আমরা না জোগাই।
নাফিজ আরেফিন, প্রবীর বাবুকে এরকম একটি জবাব আদৌ প্রয়োজন ছিলো কিনা এখনো বুঝতে পারছেন না। অথচ আপনি এখানে আমার ব্লগের চেয়েও বড় একটা মন্তব্য করার ঠিকই প্রয়োজন মনে করেছেন।
আমার খুবই ভুল হয়ে গেছে নাফিজ আরেফিন, এরকম একটা জবাব দেয়া। এর পর দয়া করে আপনি আমাকে বলে দেবেন- আমার কোনটার জবাব দেয়া উচিত, আর কোনটার জবাব দেয়া উচিত না।
মিঃ নাফিজ আরেফিন, লেখকের কি লেখা উচিত বা অনুচিত তা কি আপনি বলে দেবেন? বাঃ, এতো বেশ ব্যাপার।
ফেসবুকের কল্যানে দেখছি, অনেকেই অভিজিৎ ভাই তথা মুক্তমনাদের এক হাত নিচ্ছেন। হয়তো, অভিজিৎ ভাই আর কখনো ফিরে আসবেন না এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন।
“সমকামিতা” প্রমোটের কোন বিষয় নয়। মানুষ সমকামি হয়ে জন্মায় কিংবা জন্মায় না। এটা কারো চোখ কালো, কারো কটা হওয়ার মত স্বাভাবিক। আমার কটা চোখ ভাল লাগলেইতো আমি পেতে পারি না। সমকামিদের নিয়ে ভুল ধারনা ভাঙ্গানোর চেষ্টা কে যে প্রমোট বলে সে কেন নিজেকে বিজ্ঞানী বলে?
মুক্তমনা কিংবা নাস্তিকরা সমাজের বাইরে কেউ নন। তারা ঈদে “ঈদ মুবারক” কিংবা পূজায় “শুভ বিজয়া” তাদের বিশ্বাসী বন্ধুদের কেনই বা বলবেন না? তারাতো ভিন্নমতের সহ অবস্থানে বিশ্বাসী। তারাতো কোপাকুপিতে বিশ্বাসী নন।
অভিজিৎ ভাই খুন হয়েছেন নিতান্তই দূর্ভাগ্যবশত বাংলাদেশে জন্ম নেয়াতে। প্রবীর ঘোষ জানেন না কোপাকুপি, পেট্রোল বোমা, আগুনে পোড়ানো, এসিড ছোঁড়ার সংস্কৃতি বাংলাদেশে কত প্রবল আর আমাদের প্রশাসন কত দুর্বল। ভারত আর বাংলাদেশের আইন শৃংখলা পরিস্থিতিতে অনেক পার্থক্য। তার অজানা নিয়ে তিনি বড়াই করছেন
ধন্যবাদ তানবীরা।
খুবই দুঃখজনক প্রবীর বাবুর লেখার প্রতিবাদ করতে গিয়ে তাকে ব্যক্তগতভাবে আক্রমন করা হচ্ছে। এটা নিশ্চয় sprit of মুক্তমনা নয়। যুক্তিবাদী বা মুক্তমনা, নাস্তিক কিংবা ধার্মিক – এসব লেবেলগুলোই আসলে অর্থহীন অযৌকতিক। যে যতই দাবী করুক কেউই এর কোনটা নয়। বিজ্ঞান দিয়ে ঈশ্বরের অস্তিত্ত্ব আছে কি নেই তা প্রমান করতে চাওয়া যেমন হাস্যকর, তেমনি ধর্মের মধে বিজ্ঞানের তত্ব কিংবা ঈশ্বরের নির্দশ খুজে পায়ার চেষ্টা অগভীর মনের বহিঃপ্রকাশ। বিজ্ঞান যা মাপা যায় না তা নিয়ে গবেষনা করে না, তেমনি বিজ্ঞান কোন সম্পূর্ণ জ্ঞানও নয়। নতুন তথ্যের আবিস্কারে বিজ্ঞানের পূরনো নিয়ম ভেংগে যায়। অন্যদিকে ঈশ্বর-ধর্ম মানুষের উপলব্ধির বিষয় – এর কোন মৌলিক ভিত্তি নেই। বিশ্বাস থাকলে ধর্ম ও ঈশ্বর আছে, বিশ্বাস না থাকলে ধর্ম বা ঈশ্বর নেই। বিশ্বাসটি আবার সব সময় আন্তরিক তাও নয়, যারা ভন্ড তারা অন্যদের exploit করার জন্য বিশ্বাসের ভয় দিয়ে নিজেদের সার্থ সিদ্ধিতে মেতে অপকর্ম করে অনেক।
অনিকেত, প্রবীর বাবুর লেখার প্রতিবাদ করতে গিয়ে তাকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমন করা হয়েছে,- এটা ঠিকই আপনার চোখে পড়লো, কিন্তু প্রবীর বাবুর ভন্ডামী আপনার চোখে পড়লো না কেন বুঝতে পারলাম না? সে ব্যাপারেও কিছু বলুন।
দেখুন মিঃ ওমর, অন্যের ব্যক্তিগত বিষয়ে প্রশ্ন তুলে আসল বিষয়ের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ফেলার চেষ্টা কি মুক্ত মনের পরিচয়? প্রবীর বাবু যদি ভন্ডামি করে থাকেন, তবে যুক্ততর্ক উপস্থাপন করে সে সম্পর্ক আলোকপাত করুন। তাহলে সবাই উপকৃত হবেন। সে ক্ষেত্রে একটা সম্ভাবনাও থাকে যে প্রবীর বাবু তার নিজের ভুল বুঝতে পেরে নিজেকে সংশোধন করে নেবেন। কিন্তু,যুক্তিতর্কের বাইরে আবেগ প্রবন হয়ে তাকে যদি ব্যক্তগত আক্রমন করা হয়, তাহলে কিভাবে তা প্রাসংগিক হতে পারে?
তারপর অন্যের চোখে কি পড়ল বা না পড়বে তাতে আগ্রহ থাকতে হবে কেন? আলোচ্য বিষয় থেকে দৃষ্টি সরিয়ে অপ্রসাংগিক বিষয়ে প্রশ্ন তোলা কি একজন চেতনা সম্পন্ন বিশ্লেষনধর্মী মুক্তমনা মানুষের কাজ?
মিঃ অনিকেত আপ্নিও কিন্তু বলেন নি লুক্সের লেখার কোন অংশকে আপনার ব্যক্তিগত আক্রমণ মনে হয়েছে। যদি বলতেন তাহলে হয়তো পয়েন্ট নিয়ে আলচনা করা যেতো। আমার কিন্তু লেখাটা যুক্তি সমৃদ্ধই মনে হয়েছে।
মিঃ রতন, ভাল কথা, কিন্তু মিঃ ব্যক্তগত আক্রমণের অংশ নিয়ে point by point পর্যালোচনা তো প্রাসংগিক নয়, উদ্দেশ্যও নয়। সুতরাং এ নিয়ে আবার জলঘোলা করার চেষ্টাতে কি লাভ?
কথাটা কিন্তু আমিও আপনাকে বলতে পারি মিঃ অনিকেত/
পীরবাবা প্রবীর ঘোষ অভিজিৎ রায়কে নিয়ে এমন বলবেন তাতে অবাক হই নাই। ২০১২ সালে তিনি একবার ঢাকায় এসেছিলেন। দেখা করতে গিয়েছিলাম। তাকে সামনে দেখে এতো বাজে অভিজ্ঞতা হয়েছিলো যে বলার না। মুক্তমনা সমগ্র নামে ফেসবুকে একটা ছোট গ্রুপ ছিলো সে গ্রুপে পীরবাবার সাথে দেখা হবার অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেছিলাম-
“”প্রবীর ঘোষের সাথে দেখা হবার পর ক্যামন লাগলো সেটা আর জানানো হয়নাই। প্রথমদিন তার সাথে একটা ইনফরমাল আড্ডা ছিলো কনকর্ডের ব-দ্বীপের দোকানে। ‘ইনফরমাল আলাপের’ জন্য গিয়ে দেখি ক্লাস রুম টাইপ অবস্থা। সামনে প্রবীর ঘোষ কথা বলবেন, আর সবাই মনোযোগ দিয়ে তার কথা শুনবে এমন ব্যবস্থা। বরাবরের মতো লাস্টের সারিতে গিয়ে বসলাম। পাশে টুটুল ভাই। টুটুল ভাইও আলাপ করতেই এসেছেন। ক্লাস টাইপ অবস্থা দেখে পাশের লোকের সাথে গুনগুন করে শুরুতেই প্রবীর ঘোষের চোখ রাঙ্গানি খেলেন grin emoticon এরপর উনি কথা বলার সময় আর কেউ অন্য কিছু করলে পুরাটা সময় অফেন্ডেড ফিল করে ঝাড়ি মেরে গিয়েছেন উনি। এই অবস্থা দেখে পালাবো, কিন্তু তারও উপায় নাই। উঠলেই ঝাড়ি নিশ্চিত।
এরপর আলাপ আলোচনা শুরু হলো। প্রবীর ঘোষ বেশিষ্ট শ্রোতারা একেবারেই আপটু দ্য স্ট্যান্ডার্ড ছিলোনা, আবজাব সব প্রশ্ন। এরমাঝে প্রবীর ঘোষের কথার মাঝে একজন একটা পয়েন্ট এড করার সাথে সাথেই প্রবীর ঘোষের জবাবঃ তুমি জানো আমি কে? আমাকে নিয়ে ন্যাট জিও আর ডিসকভারিতে ডকুমেন্টারি হয়েছে। পৃথিবীর অনেক দেশে ঘুরেছি আমি। আমার কথা মন দিয়ে শুনো কাজে লাগবে।
তিনি নিজেকে পীর বই অন্য কিছু ভাবেন বলে মনে হলোনা। সোনিয়া গান্ধী থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সবার সাথে তার যোগাযোগের কথাও জানতে পারলাম ক্লাস করে। আগেই বলেছি, অডিয়েন্স ভালো ছিলোনা। তারপরও দেখেছি যেকোনো ধরণের প্রশ্নে উনি বিরক্ত হন, উত্তর দেওয়া তো দূরের কথা। চ্যালেঞ্জ করে দিবো, চ্যালেঞ্জ করে দিবো এইসবই শুনলাম। বাংলাদেশের বাস্তবতায় সম্মোহন ব্যাপারটা কতোটুকু আগ্রহউদ্দীপক বা প্রয়োজনীয় সেটা আমি বুঝিনা- প্রবীর ঘোষের আসার উদ্দেশ্য সম্মোহন সম্পর্কে লেকচার।
অবিশ্বাসের দর্শন দিতে গিয়ে পড়লাম আরেক বিপদে। পছন্দের একজনকে বইটা উপহার দিলাম- সেখানে একজন কেনো লেখা, কেনো তার নাম লেখা নেই সেটা জানতে চাইলেন। এইটুকু পর্যন্ত জিনিসটা হয়তো জোক, কিন্তু উনি জোককে আরও উপরে নিয়ে গেলেন। আমাকে দিয়ে একজন মানুষকে কথাটা কাটায়ে সেখানে নিজের নাম লেখালেন।
এই কাজ করার সময় পাশের পছন্দের মানুষ বিশেষণটাও কেটে দিতে ইচ্ছা করছিলো। পৃথিবীতে আর সকল কাজ করার টাইম থাকলেও পীর পুজার টাইম নাই। ইচ্ছা ছিলো উনার সাক্ষাৎকার টাইপ কিছু নেবো- সেন্সিটিভ কিছু ইস্যুতে উনার চিন্তাভাবনা জানতে চাইবো। কিন্তু উনার সাক্ষাৎকার নেয় বিবিসি তাই প্রথমদিন দেখার হবার পরে নিজের আর সেই ইচ্ছা থাকেনি।
এই ছিলো আমার প্রথম প্রবীর ঘোষ দর্শন। একেবারেই ভালো লাগেনাই উনাকে, উনার আচরণকে, চিন্তাভাবনাকেও।””
অভিজিৎ দা তখন মন্তব্যে বলেছিলেন-
Avijit Roy: ভাল অবজার্ভেশন। সত্যিকার মুক্তমনাদের কোন পীর থাকতে নাই। তুমি যে উনাকে সমালোচনার দৃষ্টিতে দেখছ, এইটাই ভাল হইছে।
ছোটবেলায় প্রবীর ঘোষের বই পড়েই আমার যুক্তিবাদিতার হাতে খড়ি, কিন্তু যত বড় হয়েছি দেখেছি উনারও সীমাবদ্ধতা অনেক। অনেক কিছুতেই উনি আপ টু ডেট নন। তার চেয়েও বড় কথা হল, উনি নিজের এবং নিজ সংগঠণের কাজ কর্ম ছাড়া কাউকেই পাত্তা দেন না। ভারতে আরো যে অনেক যুক্তিবাদী সংগঠণ আছে তাদের পাত্তাই দেন না। উৎস মানুষ নামে চমৎকার একটা পত্রিকা বেরোয় কলকাতা থেকে। তাদের সাথে কী যেন নিয়ে খ্যাচ আছে প্রবীরদার। অলৌকিক নয় লোকিক বইয়ে তাদের নামে গালাগালির বন্যা ভাসিয়ে দিয়েছেন। বিজ্ঞান জাঠা নামে আরেকটা সংগঠনকে বইয়ে বলেছেন – বিজ্ঞান জাঠার মাঠা খাওয়া সদস্যরা …’ এই ধরণের কথাবার্তা। ভারতের গুলা না হয় মানা গেলে পশ্চিমা বিশ্বে জেমস র্যান্ডি, পল কার্জ, মাইকেল শারমার সবাইকেই উনি ‘পুঁজিবাদী’ বিশেষণে বাতিল করে দেন। এটা বুঝার জন্য অন্য কারো বক্তব্য জানার দরকার নাই, অলৌকিক নয় লৌকিকের সবগুলা পর্ব ঠিকমত পড়লেই বোঝা যায়।
নব্বই এর শেষ দিকে প্রবীর ঘোষকে তহবিল তসরুপের অভিযোগে যুক্তিবাদী সংগঠণ থেকে বহিষ্কার করা হয়। প্রবীর ঘোষও পালটা সংগঠন গড়ে তোলেন একই নামে। মামলাও হয়েছিল – দুই দল দুই দলের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। একটা সময় একই নামে দুইটা সংগঠন ছিলো কলকাতায়। একটার নেতৃত্বে প্রবীর দা, অন্যটায় গৌর অধিকারী আর রাজেশ দত্ত …
কিছুদিন আগ পর্যন্ত দুইটা সংগঠনই নিজেদের নামে বইমেলায় স্টল দিতো। এখন মনে হয় গৌরের দল পিছু হতেছে (শিওর না আমি)। মজার ব্যাপার হচ্ছে পুরো ব্যাপারটা আমি জানতামই না। বছর দশেক আগে একবার কলকাতা বইমেলা গিয়ে আমি ভারতীয় বিজ্ঞান আর যুক্তিবাদী সমিতির স্টলে ঢুকে প্রবীর ঘোষের খোঁজ করা শুরু করি। সেখানকার সদস্যরা বলেন প্রবীর ঘোষকে তো সংগঠন থেকে বের করে দেয়া হয়েছে অনেক আগেই। শুনে তো আমার মাথায় হাত!
বেশ কয়েক বছর পরে প্রবীর ঘোষের একটা লেখা আমরা প্রকাশ করলে, গৌর অধিকারী দাবী করেন যে প্রবীর ঘোষকে বের করে দেয়া হয়েছে। এবং তাদের বক্তব্য সাইটে প্রকাশ করতে বলেন। কিন্তু আমরা খালি মাঠে একপেশে বক্তব্য প্রকাশ না করে প্রবীর ঘোশের সাথে যোগাযোগ করে তাদের বক্তব্যও সংগ্রহ করি। দু’দলের বক্তব্যই আছে এখানে –
https://www.mukto-mona.com/Articles/prabir/charge_against_prabir.htm
প্রবীর ঘোশের অভিমানের কারণ বুঝলাম না। উনি বোধ হয় চেয়েছিলেন এ সংক্রান্ত কোন কিছুই প্রকাশ না করা হোক! যাকগে …
@ রায়হান আবীর,
এত কিছু ব্যাপার! খুব ভাল করেছেন লেখাটা এখানে প্রকাশ করে। আমি প্রথমে ভাবছিলাম যে, লুক্স তার লেখায় মনে হয় একটু বেশী আক্রমণাত্বক হয়ে গেছেন। এখন দেখছি আসলে কমই বলা হয়েছে। যে মানুষ কথায় কথায় ‘আমি’ ‘আমি’ ‘আমার’ ‘আমার’ করেন, লাটি সোটা বন্দুক নিয়ে ঘুরেন, ফুটানি আর বড় মাথা দেখান তাকে আমাদের দরকার নেই। উনি আর যা’ই হন, মুক্তমনা নয়।
ধন্যবাদ @ রায়হান আবীর।
রায়হান আবীর,
অভিজিৎ দার সাথে এই কথোপকথনের সময়টা কনফার্ম করতে পারো প্লিজ? এখানে মূল লেখায় srai.org ওয়েবসাইট তৈরী করে দেয়া আর তার ব্যবস্থাপনায় অভিজিৎদার সরাসরি সাহায্যের বিষয়ে যা বলা হয়েছে, তা কি এটা জানার আগে না পরে:
রায়হান ভাই, কথোপকোথনের সময় June 7, 2012
অভিজিৎ রায় সম্পর্কে প্রবীর ঘোষের মন্তব্য পড়ে বেশ হতাশ হলাম, বিশেষত যখন এই মন্তব্যের জবাব দেয়া অভিজিৎ রায়ের পক্ষে সম্ভব হবে না। নাস্তিক কেউ ঈদ, পূজা বা বড়দিনে কাউকে কেবল শুভেচ্ছা জানালে সমস্যাটা কি আসলেই বুঝতে পারছি না। আপনি ঠিকই বলেছেন এই উৎসবগুলো যতটা না ধর্মীয়, তাঁর চেয়ে অনেক বেশী সামাজিক। আমি খৃষ্টান নই, কিন্তু বড়দিনের আলোকসজ্জা, কেনাকাটা, উপহার দেয়া নেয়া, মানুষের খুশী, উজ্জ্বল মুখ, অবসর এসব আমি খুব উপভোগ করি। এই সময়টাতে আমি পরিচিত, অর্ধপরিচিত বা অপরিচিত অনেককেই বড়দিনের শুভেচ্ছা জানাই। এই শুভেচ্ছা জানানোর মানে নিশ্চয়ই এটা না যে আমি কোন ধর্মীয় রুপকথার গল্পে বিশ্বাস করি বা তা বিশ্বাস করতে উৎসাহ যোগাই।
উৎসবে-পার্বণে শুভেচ্ছা জানানোর মূল হেতু পরিচিত মানুষদের জন্য একটি আনন্দময় সময় কামনা করা, এছাড়া আর কোন উদ্দেশ্য নেই। স্বাভাবিক বুদ্ধির যে কেউ যদি অভিজিৎ রায়ের লেখা বা কাজ সম্পর্কে সামান্য ধারনা রাখেন তিনি তা সহজেই বুঝতে পারবেন। প্রবীর ঘোষের মতো একজন বয়ষ্ক মানুষ এই সামান্য বিষয়টি তার প্রবল যুক্তিবোধ দিয়ে উপলব্ধি করতে পারছেননা এটিই আমার কাছে অবাক লাগছে। তারচেয়েও বেশী অবাক লাগছে মুক্তচিন্তার আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন (হয়তো এক্ষেত্রে প্রবীর ঘোষের থেকেও বেশী সফল) বয়সে অনুজ এমন একজন সহযোদ্ধার নির্মম হত্যাকাণ্ডের কয়েকদিনের মাথায় তাঁকে স্মরণ করতে গিয়ে সমালোচনাই প্রাধাণ্য পেল!!!
প্রবীর ঘোষ কোন যুক্তিতে সমকামিতার বিরোধী তা জানতে পারলে ভাল হতো। অভিজিৎ রায় বই লিখলেই যে সে বই পড়ে মানুষ দলে দলে সমকামী হয়ে যাবে এটাই বা কোন যুক্তির কথা? এধরনের কথা জাকির নায়েকরা বলতে পারেন কেননা তাদের চিন্তাশক্তি ধর্মীয় অনুশাসনে বাঁধা (প্রসঙ্গত,জাকির নায়েক বড়দিনে মুসলিমদের মেরী ক্রিসমাস বলতে বারণ করেছেন), কিন্তু প্রবীর ঘোষের মতো মুক্তচিন্তার দাবীদাররা কি করে একই ধারনা রাখেন তা জানতে ইচ্ছে করে।
এই মুক্তমনাতেই কেউ একজন লিখেছেন যে অভিজিৎ-র মৃত্যুর পর অনেক চেনা মানুষকেই নতুন করে চিনেছেন; প্রবীর ঘোষও কি চেনা থেকে হটাৎ অচেনা হয়ে গেলেন?
সত্যকথা বলতে কি প্রবীর ঘোষের লেখা পড়েই যুক্তিবাদী হতে শিখেছি , তবে ইশ্বরের অস্তিত্ব হীনতা বা মানব জীবন সম্পর্কে উনি সঠিক ব্যাক্ষা দিতে পারেননি তারপর যখন অভিজিতের লেখা পড়া সুরু করলাম তখন সবকিছু পরিষ্কার উনার বৈজ্ঞানিক ব্যাক্ষা বিশ্লেসন অসধারণ। এক্ষেত্রে প্রবীর ঘোষ যদি ৫০ হয় তাহলে অভীজিত ১০০।