আমাদের এই দু:সময়ে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের বাইরে থেকে যাঁরা বা যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান নি:স্বার্থভাবে সাহায্য এবং সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, যাঁরা সহমর্মিতা প্রদর্শন করেছেন, পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের সবার প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা রইলো। আমি বাংলাদেশ সরকারের প্রতি জোরালো দাবি জানাচ্ছি যে, অভিজিৎ হত্যার সাথে জড়িত খুনিদের অবিলম্বে গ্রেফতার করা হোক এবং তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা হোক। এবং সেই সাথে আজকে বাংলাদেশের সমাজে ধর্মীয় মৌলবাদ, সন্ত্রাস এবং নৈরাজ্য যে সুগভীরভাবে গ্রথিত হয়ে গেছে, সেটিকে স্বীকার করে নিয়ে একে নির্মূল করার জন্য সুদৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া হোক। এই বিষবৃক্ষকে সম্পূর্ণ নির্মূল করা আশু প্রয়োজন। একটি ধর্ম-নিরপেক্ষ, প্রগতিশীল, নিপীড়নহীন, বাকস্বাধীনতাময় নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য এটা অত্যন্ত জরুরী হয়ে দাড়িয়েছে ।

অভিজিৎ-কে হত্যা করে ঘাতকরা তার সৃষ্ট আন্দোলন ও আদর্শকে ধ্বংস করতে চেয়েছিলো, কিন্তু আমি আপনাদের এই নিশ্চয়তা দিচ্ছি যে সেখান থেকে আমি বা আমরা কেউই পিছিয়ে আসবো না। মুক্তমনার অগ্রযাত্রা অভিজিৎ এর আত্মদানের মাধ্যমে আরো গতিশীল হবে। আমরা তার মৃত্যুতে যেমন গভীরভাবে শোকাহত, ঠিক একইভাবে আমরা তার বুদ্ধিদীপ্ত জীবনকে উদযাপন করতেও দৃঢ়ভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমরা আছি অভিজিৎ এর পাশে, তার আদর্শকে বুকে ধারণ করে। আমার এই বক্তব্য সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেবার জন্য আপনাদের সহযোগিতা চাইছি।

এখানে বিবিসিতে দেওয়া আমার বাংলা সাক্ষাৎকারটা রাখা আছে।

এখানে বিবিসিকে দেওয়া আমার ইংরেজি সাক্ষাৎকারটা রাখা আছে

সিএফআই এ প্রকাশিত হওয়া আমার বিবৃতির বাংলা অনুবাদ এখানে সংযোগ করে দিলাম। অনুবাদটি করেছেন ফরিদ আহমেদ।

আমার স্বামী অভিজিৎ রায় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদ নিয়ে লেখালেখি করতেন, তিনি ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনামূখর ছিলেন। শুধুমাত্র এই কারণেই তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। গত ছাব্বিশে ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনাকীর্ণ ক্যাম্পাসে আমরা দুজনে হামলার শিকার হই। অভিজিৎকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। আমি কোনোক্রমে বেঁচে যাই।

তাঁর স্ত্রী, একই ধারার লেখক এবং একজন মুক্তচিন্তক হিসাবে, আমি এই পৈশাচিক সন্ত্রাসের তীব্র নিন্দা করি। ঐতিহাসিকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস হচ্ছে সকল প্রগতিশীল আন্দোলনের কেন্দ্রভূমি। অভিজিৎ নিজেও এই ক্যাম্পাসেই বেড়ে উঠেছে। মৃত্যুর হুমকি থাকা সত্ত্বেও আমরা কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে পারি নি যে, এরকম একটা জঘন্য অপরাধ এখানে সংঘটিত হতে পারে। এই অপরাধ শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে ছিলো না, ছিলো বাক স্বাধীনতা এবং মানবতার বিরুদ্ধে।

আমি আর অভিজিৎ যখন নৃশংসভাবে আক্রান্ত হচ্ছি, স্থানীয় পুলিশ খুব কাছেই নিষ্ক্রিয়ভাবে দাঁড়িয়ে ছিলো। এখন আমাদের দাবি, যে করেই হোক খুনিদের বিচারের আওতায় আনতে বাংলাদেশ সরকার তার সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করুক। আমি মনে করি না যে, শুধুমাত্র খুনিদের ধরাটাই যথেষ্ট। আমি সরকারের প্রতি সন্ত্রাস নির্মূলের জন্য আবেদন জানাই, সেই সাথে লেখক-হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় না আনার যে আইনী সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা বন্ধ করার দাবি জানাই।

আমি যে নৃশংস ঘটনা ঘটেছে তার প্রতি সারা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এবং আমাদের সাথে এক হয়ে সুবিচার দাবি করার আহবান জানাচ্ছি।

– রাফিদা বন্যা আহমেদ