.
.
অভিজিৎ রায় মৃত্যুবরণ করেছেন! না, কোনো দুর্ঘটনায় নয়, রোগে-শোকে নয়, তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে অন্ধকারের জীবেরা। যে মানুষটি স্বপ্ন দেখেছে একটি অসাম্প্রদায়িক-বিজ্ঞানমনস্ক জনগোষ্ঠীর, যে মানুষটি তার সর্বশক্তি দিয়ে দেশটাকে রাহুমুক্ত করতে চেয়েছে তাকে এভাবে মৃত্যুবরণ করতে হল।
অভিজিৎ রায় এর সাথে আমার সম্পর্ক এক যুগেরও বেশি। এক সময় তাকে একান্ত আপনজন, পরিবারের সদস্যের মত মনে করতে থাকি। অভিজিৎ দার সাথে হাসি-কৌতুক-ঝগড়া-অভিমান কম হয় নি মোটেও। এত বেশি মিথস্ক্রিয়া হয়েছে তার সাথে যে ওগুলো দিয়ে দিব্যি একটা মহাভারত লেখা সম্ভব।
অভিজিৎ দার লেখার পরিমাণ বিশাল। তিনি অসংখ্য ব্লগ ও বেশ কিছু বই লেখেছেন। অনেক প্রবন্ধ বিভিন্ন ম্যাগাজিন, বই ও পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। তার গবেষণা কর্মগুলো নিয়ে কখনো কিছু বলতেন না, তার গর্বের একমাত্র অবলম্বন ছিল বই আর লেখালেখি। প্রিয় অভিদাকে নিয়ে লেখার অনেক কিছু আছে, সেগুলো লেখা হবে ভবিষ্যতে কোনো এক সময়। আপাতত কিছু বিষয় বলি-
অভিজিৎ দা ছিলেন ‘একজন’ আর সেটা কিন্তু এই মর্মান্তিক ঘটনার জন্য কম দায়ী নয়। অভিজিৎ হয়ে উঠা নিশ্চয় সহজ কাজ নয়, কিন্তু পরিস্থিতি বদলেছে, আমাদের সকলকে হয়ে উঠতে হবে একেকজন অভিজিৎ- যতটুকু সম্ভব। ‘মুক্তমনা’ মাত্র একটা হওয়ার বিপদও অনেক। আপনারা আমাদের দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতা নিয়ে অজস্র ‘মুক্তমনা’ গড়ে তুলুন যা মানুষকে পথ দেখাবে ঝঞ্চাময় কালোরাতেও, আশার কথা বলবে মৃত্যপুরীতে দাঁড়িয়েও। মুক্তমনা আপনাদের পথপ্রদর্শক হিসাবে আছে ও থাকবে।
মুক্তমনার বেশ কিছু অনুরাগী আছেন যাদের মধ্যে অনেকেই নতুন। তাদের মধ্যে একটা অংশ ‘মুক্তমনা পড়তে চাই’ এবং আরেকটি অংশ ‘মুক্তমনায় লেখতে চাই’। যারা পড়তে চান তাদেরকে বলব, পড়ুন, মুক্তমনার বেশির ভাগ লেখার আবেদন এই শতাব্দিতেও ফুরোবে না। প্রয়োজনে মুক্তমনার সকল লেখা সেভ করে নিয়ে পড়তে থাকেন, মনে হয় আপনার কয়েক বছর কেটে যাবে এগুলো পড়েই। মুক্তমনার ই-বই, পুরনো লেখার আর্কাইভ, ব্লগের ডান ও বামদিকে দেয়া অনেকগুলো লিংক এগুলোও খেয়াল করেন। আর বিজ্ঞানকে গভীরভাবে বুঝতে হলে একজন সিরিয়াস শিক্ষার্থীর মত পড়তে হয়, কাজ করতে হয়। এখনে-ওখানে উঁকি মেরে দুয়েকটা পড়লে যা জানা হয় তা এক প্রকার বিভ্রম মাত্র। যারা এই প্রচণ্ড শোকের মধ্যে আমাকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছিলেন ‘মুক্তমনা পড়তে চাই’ স্লোগানে, তাদের প্রতি অনুরোধ, ব্লগ যেন আপনার জ্ঞান অর্জনের, বিজ্ঞান জানার একমাত্র মাধ্যম না হয়। অবশ্যই সেটা আপনার জন্য সাহায্য করবে ও চিন্তার খোরাক যোগাবে এবং এটাই মুক্তমনার কাজ, কিন্তু একে একমাত্র মাধ্যম করে তোললে আপনার লক্ষ পূরণ হবে না। আমি বড্ড দু:খ পাই যখন দেখি আমাদের আশেপাশের অনেকেই দুয়েকটি ব্লগ আর এটা ওটা পড়েই মনে করে, বাহ, জেনে গেলাম, এবার লেখার পালা। তাদের জ্ঞাতার্থে বলছি, অভিজিৎ দার সংগ্রহ শালার বইগুলো দেখলে চোখ ধাঁধিয়ে যেত আপনাদের, এত বই কিভাবে যোগাড় করলেন এবং কিভাবে পড়েন তা নিয়ে তার কাছের মানুষেরা বিস্ময় প্রকাশ করতেন নিয়মিত। এখন বলি তাদেরকে, যারা ‘মুক্তমনায় লেখতে চাই’। এঁদের মধ্যে একাংশ আবার মুক্তমনা ছাড়া অন্য কোথাও লেখেন না এবং কেউ কেউ মনে করেন মুক্তমনা ছাড়া জীবন অন্ধকার! তাদের প্রতি বিণীত অনুরোধ, লেখতে থাকেন, অবারিত জায়গা আছে লেখার, একটা নিজস্ব ব্লগও খুলে ফেলতে পারেন সহজেই। আর লেখতে লেখতে ঠিক যেটা মান-সম্মত মনে হবে সেটাই শুধু মুক্তমনায় পাঠিয়ে দেন। মুক্তমনার অনুরাগী যারা অন্য মাধ্যমে, অন্য জায়গায় লেখালেখি করছেন তারাও নতুন উদ্যমে লেখতে থাকেন অবিরত, আপনাদের লেখালেখি আমাদের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে। আরেকটা অনুরোধ, মুক্তমনার লেখালেখিগুলো শুধু অনলাইনে না রেখে ছড়িয়ে দেন সর্বত্র, যতভাবে সম্ভব।
পরিশেষে অভিজিৎ দার কথা আবার বলি-
তিনি আমাদের মাঝে শারিরিকভাবে হয়ত নেই কিন্তু তার সৃষ্টি, স্বপ্ন, দর্শন ও আদর্শ বেচে আছে। তিনি ‘অমর’ হতে চাননি কিন্তু সময় তার প্রতি সুবিচারই করেছে, তাকে ‘অমর’ করে দিয়েছে এবং আশ্চর্যের বিষয় সেটা ঘাতক দলের এখনো বোধগম্য হয়নি। যারা উল্লসিত হয়েছে তাদের বিজয়ী হওয়ার কোনো পথই উন্মুক্ত নেই। অভিজিতের মৃত্যু, তার রক্ত ঘরে ঘরে অভিজিতের জন্ম দিবে। আমরা সকলেই অভিজিৎ হব, তাকে ধারণ করব মস্তিষ্কের প্রতিটি নিউরনে।
শিরোনামটি ভালো লাগলো…
দাদা,আপ্নাদের মত সিনিয়র ব্লগারদের আনাগোনা কিন্তু এখন আর আগের মত নেই।ব্লগের এখন কেমন জানি থমথম পরিবেশ বিরাজ করে।অভিজিৎদার চেতনা বাচিয়ে রাখতে আপ্নাদের পূনার্গমন এখন সময়ের দাবি।যতদিন অনলাইন এক্টিভিস্টরা সচল থাকবে ততদিন অভিজিৎদা বাঁচবে।
কি বলবো? কি লিখবো? মুক্তমনায় আসি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকি। বলার ভাষা খুজে পাই না।