২০০৬ সালের কথা। বাংলা ব্লগের আদিযুগে সামহোয়ার ইনব্লগ ডটনেট-এ লেখা মকশ করার চষ্টো। মৌলবাদের মিথ্যা প্রচারণার বিরুদ্ধে প্রজন্ম ৭১ এর অবিরাম অনলাইন সংগ্রাম। যাত্রা শুরু সচলায়তন ডটকম, আমারব্লগ ডটকম-এর। সচলের বারান্দায় বিজ্ঞানের লেখা পড়তে গিয়ে অভিজিৎ-এর ধারালো লেখার মুখোমুখি। একদিন তিনিই ইনবক্স করেন, মান্যবর, ‘কল্পনা চাকমা এখন কোথায়?’ আর ‘অপারেশন মোনায়েম খাঁ কিলিং’ লেখাদুটি মুক্তমনা ডটকম-এর বাংলা সাইটে হুবহু প্রকাশ করতে চাই। আপনার আপত্তি নেই তো? ইত্যাদি।
তখন মুক্তমনা দ্বিভাষিক অনলাইন পত্রমাত্র। সম্মতি দিতেই লেখা দুটি সেখানে প্রকাশিত হয়।
শুরু হয় অবিশ্বাসের দর্শনের ছাত্র-শিক্ষকের ইনবক্স আলাপচারিতা।
অবরুদ্ধ হতে হতে প্রিয় ব্লগ সাইটটি শিগগিরই দুর্গবন্দি হয়ে পড়ে। এর সঞ্চালকরা হয়ে পড়েন একেকজন রক্তকরবীর রাজা। কারুবসনা লেখেন, ওইপারে থুতু টলমল। আর মাসকাওয়াথ আহসান লেখেন, হুমায়ুন আহমেদের হলুদ হিমু। এইসব ব্লগ ক্যাচালেরকালে অভি দা’র আবার ইনবক্স:
মুক্তমনা এখন বাংলা ব্লগ। এই আপনার লগিন, পাসওয়ার্ড। হাত খুলে লিখুন।
প্রতিদিনের সংবাদবহুল কর্মময় জীবন। মেগাসিটি ঢাকার বিভত্স যানজট, ধূলো, গরম, রোদ, ঝড়বৃষ্টি। মাঝে মাঝে সংবাদের সন্ধ্যানে পাহাড়-পর্বত, জঙ্গল-জলা, আদিবাসী ভূমিতে কষ্টকর যাত্রা। এই করতে করতে চিড়েচ্যাপ্টার পর্বে একমাত্র জানালা হয়ে দাঁড়ায় মুক্তমনা। মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে মোবাইল ফোন টিপেই পড়ে ফেলা দারুণ সব তাজা লেখা। নিজের লেখাপত্তরও কিছু থাকে, নিছক বিজ্ঞান, যুক্তি, দর্শনের ভাড়িক্কি লেখার বাইরে নিজের কথা, আদিবাসী মানুষের কথা, এমনকি বেশ কিছু চটুল লেখাও হতে থাকে। তবে নাস্তিক্যবাদের দীর্ঘ প্রচারণায়, দশাসই বিজ্ঞানের কচকচানি প্রবন্ধ আর বিবর্তনবাদের আধুনিক জেনেটিক জটিল লেখায় চুনোপুটি ব্লগার অধম হাঁফিয়ে ওঠে। মাঝে মাঝেই দাঁত ফুটাতে ব্যর্থ হয়ে দীর্ঘ ডুব।
আবারো অভিদা’র ইনবক্স। ফেবুতে ততোদিনে বেশ চেনাজানা। লিংক, মতামত বিনিময়। অভিদা, জানতে চান, রে বিপ্লব। মুক্তমনায় লেখেন না কেন? সরল স্বীকারোক্তি, মুক্তমনার সেরাম ওজনদার লেখায় ক্লান্ত। তিনি বলেন, এই জন্যই আপনার কুড়মুড়ে ঝরঝরে লেখা চাই। আদিবাসী জনপদের কথা। চাই দেখা থেকে লেখা।সংবাদ নেপথ্য কথন।
অভিদাই ছত্রধর। আবার মুক্তমনায় লেখা। উন্মোচন ডটনেট, গুরুচণ্ডালি ডটকম-এ টোকাটুকি। কিন্তু দলবাজি দেখে দেখে ক্লান্ত বলে সযতনে সব ব্লগাড্ডা এড়িয়ে চলা, গুরুতর ইস্যুতে সমাবেশ, মানববন্ধন ইত্যাদি বাদে। তাই বইমেলার আড্ডায় বাস্তব মিথস্ক্রিয়া ব্লগারদের সঙ্গে আর হয় না। ‘তার ছিড়েঁ গেছে কবে? একদিন কোন হাহা রবে’।…মাঝে সুলেখক কুলদা রায় এসে মুক্তমনায় গোল বাধান। সেই গোল ছড়ায় সচল থেকে উন্মোচনে। ব্লগ থেকে ব্লগে। ফেসবুকের নোটে নোটে। এইসব নোটপত্রের সুপ্তফনা বেশীরভাগই মন্তব্যে। কুলদা রায় লেখেন:
“এটা নিয়ে অভিজিৎ রায়ের সঙ্গে এবং তার মুরীদদের সঙ্গে আমার একটা বাহাস হয়েছিল। যুক্তিবাদি তাত্ত্বিক অভিজিত্ এবং তার সহলেখক ফরিদ আহমদ রবীন্দ্রনাথকে এই গানটি বাঁধার কারণে রবীন্দ্রনাথকে পুরো চোর ঠাউরেছেন। তার পরিপ্রেক্ষিতেই এই তথ্যগুলো দেওয়া হয়েছিল। মুক্তমনার অভিজিত্ রায় ও ফরিদ আহমদের এই লেখাটি যেহেতু মগবাজারদের আদর্শের সঙ্গে বেশ চলে সেকারণে লেখাটিই ইতিমধ্যেই বিডিআর্টসে প্রকাশিত হয়েছে। তাদের দেওয়ালে আলো ঝলমলো করে ঝুলছে। ইতিমধ্যেই মগবাজারী লোকজন অভিজিত্দের তথ্য নিয়ে নেমে পড়েছে। আশা করা হচ্ছে সংগ্রাম, নয়া দিগন্ত, আমার দেশ, ইনকিলাবে তাদের লেখাটা যাবে।”
অগ্রসর লেখক অভিজিৎকে এভাবে জ্যান্ত জবাই বহুবার হতে হয়েছে প্রগতির ভেকধারী ডিজিটাল রক্ষী বাহিনীর হাতে। বলতে দ্বিধা নেই, “নাস্তিক ব্লগার” অভিজিত্ তখনো ছিলেন খুব নিঃসঙ্গ। সচলের তারকা ব্লগাররা তখন নিরবই ছিলেন।
এদিকে ‘সমকামীতা’, ‘অবিশ্বাসের দর্শন’, ‘শূন্য থেকে মহাবিশ্ব’, ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’, ‘ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো: এক রবি-বিদেশীনির খোঁজে’ — অভিজিৎ এর একক বা যুগল বইয়ের কদর বাড়ে।মুক্তমনার বাইরে বিডিনিউজ এবং কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে একের পর এক তিনি লিখতে থাকেন যাদুকরি সব লেখা।
লিংক-০৫
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ বিচারের দাবিতে ২০১২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ঘটে শাহবাগ গণবিস্ফোরণ। এই সময় মুক্তিযুদ্ধ থেকে দৃষ্টি সরাতে হেফাজতে ইসলাম “নাস্তিক ব্লগার” দের পাল্টা ফাঁসি দাবি করতে থাকে। হেফাজতিদের হেফাজতে নেওয়ার কেৌশলে (?) সরকার আসিফ, রাসেল, বিপ্লব ও সুব্রত — এই চার ব্লগারকে গ্রেফাতার করে। ডিজিটাল রক্ষী বাহিনীর অন্যতম সিপাহ সালার অমি রহমান পিয়াল ফেবুতে বিব্রত বোধ করেন এই চার ব্লগারকে নিয়ে। ইমরান-জেবতিক-পিয়াল-সুশান্ত-আইজু-ইফতেখার সমর্থিত শাহবাগের আন্দোলন তাই শেষ পর্যন্ত “চার নাস্তিক ব্লগারের মুক্তি”র প্রশ্নে আশ্চর্য নিরব থাকে। পিয়াল ফেবু নোটে সরাসরি নাস্তিক ব্লগার, তথা মুক্তমনাদের নিয়ে বিরোক্তি প্রকাশ করেন। অভিজিৎ প্রতিবাদ জানান লিখে। কারণ ওই একটিই তার হাতিয়ার– যুক্তি-তর্ক। ততোদিন শাহবাগ আন্দোলনটি কাঠের ঘোড়ায় পরিনত হয়েছে। পরে রক্ষীবাহিনীর চপেটাঘাতে কয়েক টুকরো।
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অভিজিৎ একা লড়ে গেছেন প্রবাসে চার ব্লগারের মুক্তির দাবিতে। ইংরেজী-বাংলায় লিখেছেন অসংখ্য নোট। বিশ্বের নানা প্রান্তে মুক্তচিন্তার সপক্ষে মানবন্ধন গড়ে তুলতে, তথা ব্লগারদের মুক্তির দাবিটিকে আকুণ্ঠ উস্কে দিয়েছেন। মুক্তমনার ব্যানারে তিনি লেখেন:
”Mukto-Mona says
April 3, 2013 at 10:00 pmBangladesh government squishing freedom of speech by arresting and harassing young bloggers inside the country
To whom it may concern
We are drawing your attention to an ominous development that is taking place right now in Bangladesh. To appease a handful of radical islamist preachers, the government has embarked on a campaign to curtail freedom of speech. To this effect, the police under government dictate have arrested three bloggers (Subrata Adhikari Shuvo, Mashiur Rahman Biplob and Rasel Parvez) in Dhaka, and then several others including one popular atheist blogger, Asif Mohiuddin in the following day. They were interrogated by police and further remanded in custody for seven more days. Torture in police custody is commonplace in Bangladesh for the detainees, often to extract incriminating statements. This time, several hapless bloggers are at the receiving end of government’s wrath. The government claims that these young bloggers have offended Islam and Muhammad, Islam’s holy prophet. It is worth noting that Bangladesh has no blasphemy law and the nation’s constitution allows the “freedom of thought, conscience and expression” as a fundamental right. In the aftermath of a popular protest in February and March 2013 known as Shahbag Movement, which was organized by bloggers and cyber writers, a section of Islamists have waged a disinformation campaign to label the bloggers ‘atheists’. The government is now trying to appease these Islamists. The government has made a list of nearly 100 bloggers and cyber forum participants who they labeled atheists and defamers of Islam. Through interview given to popular press, a spokesperson for the government has announced that the government will arrest and prosecute these “errant” bloggers. Although there is no law against atheism in Bangladesh, the government is persecuting these bloggers on charges of offending Islam and its Prophet. The government has already blocked a few popular websites to curtail free flow of information and promises to do even more to appease the Islamists. Since the constitution of the People’s Republic of Bangladesh ensures freedom of speech and expression [article 39 (1, 2) of chapter-3], we believe Bangladesh Government’s heinous action against the popular bloggers is unconstitutional and a gross violation of the Universal Declaration of Human Rights (Article 19 of the Universal Declaration of Human Rights, adopted in 1948, which clearly states, “Everyone has the right to freedom of opinion and expression”).
We urge you to look into this serious matter and join with us in expressing grave concern so that bloggers and writers are not harassed and persecuted by state machinery because of the views they hold on religion and other such matters. The government has taken this easy route to appease a handful of rouge Mullahs whose support they need to win the upcoming election. We hope you understand the gravity of the situation which is worsening by the day.
Mukto-Mona (Freethinkers) ”
লিংক-০৮
মস্তিস্কে চর্বিদার কুলীন ব্লগার কোং অভিজিৎ কে নিয়ে দীর্ঘ অস্বস্তিতে ছিলেন। কিন্তু তার দুধারি লেখনিতে ফর্দাফাই হওয়ার আশঙ্কায় তাকে ঘাটানোর সাহস পাননি।
আরেকটি ফেসবুক নোটে তিনি বলছেন:
“ব্লগারদের জন্য কাজ করতে গিয়ে অদ্ভুত কিছু অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলাম। বহু পরিচিত জন হঠাত্ করেই যেন অপরিচিত হয়ে গেলেন। হয়তো নিরাপত্তার কারণে, কিংবা হয়তো আমার লেখা কিংবা স্ট্যাটাস হঠাত্ করেই তাদের চক্ষুশূল হয়ে উঠল, কে জানে। দেশে হাজারো বিপদ, হাজারো সমস্যা। দোষ কাউকেই আমি দেই না। কিন্তু পাশাপাশি অনেক অপরিচিত জনকে, যাদের সেভাবে চিনতামও না, তারা হয়ে উঠলেন আপনজনের চেয়েও বেশি।”
এইভাবে একান্ত অভিজিৎ ক্রমেই একা হতে হতে জামাত-হেফাজত-আনসারটিম দ্বারা ঘেরাও হতে থাকেন। ফ্যানাটিক ফারাবির ধমকে অনেক আগেই অনলাইন শপ রকমারি ডটকম থেকে “নাস্তিক” ড. আহমদ শরীফ, হুমায়ুন আজাদ ও অভিজিৎ রায়ের বই বিক্রি বন্ধ হলে আমরা বিস্মিত হই না। নিভৃত পাঠকেরা তাকে ঘিরে রাখেন বুকের মায়ায়, পাঁজড়ের হাড় দিয়ে। তাই লেখার জন্য অভিজিৎ খুন হলে অফলাইনে তো বটেই, তোলপাড় হয় অনলাইনে, এপার-ওপার সব বাংলায়।
“বিজ্ঞান লেখক, ব্লগার অভিজিত্ রায় হত্যা ও তাঁর স্ত্রী বন্যা আহমেদকে গুরুতর জখমের ঘটনায় ব্লগ সাইটে তোলপাড় শুরু হয়েছে। বাংলা ভাষার ব্লগ লেখকরা ব্লগ, টুইটার ও ফেসবুকে এই বর্বরোচিত সন্ত্রাসী ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানাচ্ছেন। অনেকেই ঘটনার প্রতিবাদে আন্তর্জালিক প্রোফাইলে নিজের ছবির বদলে অভিজিতের ছবি জুড়ে দিয়েছেন। কেউ আবার শোকের প্রতীক হিসেবে ডিজিটাল কালো ব্যাজ বা ডিজিটাল মোমবাতির প্রজ্বলিত শিখা ব্যবহার করছেন প্রোফাইলে।”
আর অভিজিৎ কন্যা তৃষ্ণা বাবার মৃত্যুর ১৫ ঘন্টার মধ্যে দৃঢ় ভাষায় লেখেন:
“বাবা খুন হওয়ার পর আমি মর্মাহত ও নিঃসঙ্গ হয়েছি, একথা বললে আসলে খুব কমই বলা হয়। কিন্তু তার হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে সুন্দর পৃথিবী গড়ার সংগ্রাম স্তব্ধ করা যাবে না। তিনি আমাকে মুক্তমনার সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার যে শিক্ষা দিয়েছেন, সে সংগ্রাম চলবেই। বাবা, আমি তোমাকে ভালবাসি। সবকিছুর জন্য তোমাকে ধন্যবাদ।’
অভিজিত্ হত্যার বিচার দাবি করে মুহাম্মাদ জাফর ইকবাল, ফিরোজ আহমেদসহ খ্যাতনামা লেখকরা অনেকেই কলম ধরেন। তারা উদ্বিগ্ন হন এই ভেবে যে, অভিজিতরা কি এভাবেই খুন হতে থাকবেন?
কিন্তু শিক্ষকজ্ঞানে আমরা যারা অভিজিৎকে অনুসরণ করি, যারা নিজেদের ‘অভিজিতের লোক’ বলে দাবি করি, তারা অবশ্য এই হত্যার বিচার কামনা করি না। কারণ, আমরা জানি, এই সব হত্যার বিচার করে লাভ নেই। আসলে এই রাষ্ট্র কাঠামোয় হুমায়ুন আজাদ, ব্লগার রাজিব বা অভিজিত্ হত্যার বিচার হবে না, এটি প্রায় নিশ্চিত। খোদ রাষ্ট্র স্বয়ং জামাত-হেফাজত-আনসারটিমের জন্মদাতা, লালনকারী ও তোষক। তাই মেৌলবাদের এই উত্সমুখ যতদিন বন্ধ না হবে, ততোদিন মুক্তমনারা এভাবে খুন হতেই থাকবেন।
অন্যদিকে আমরাও মুক্তমনার সংগ্রাম এগিয়ে নিতে মরীয়া। মেৌলবাদের ছুরির নীচে গলা পেতে দিতে সর্বদাই প্রস্তুত। কিন্তু বাস্তবতা এই যে, শেষ পর্যন্ত হত্যা করে অভিজিতদের শেষ করা যায় না। আমরা আসলে একেকজন রক্তবীজের ঝাড়। যতোবারই হত্যা করো, ততোবারই আমরা জন্মাবো। আমরা প্রত্যেকেই একেকজন অভিজিৎ! আমিই অভিজিৎ!
পড়লাম ইতিহাসের এক অজানা অব্যায় । আমিও অভিজিতের লোক । “ধরা যাবে না ছোঁয়া যাবে না বলা যাবে না কথা , রক্ত দিয়ে পেলাম শালার এমন স্বাধীনতা” !! ধন্যবাদ অনবদ্য স্মৃতিচারণটার জন্য ।
লেখাটা অনেক ভাল লাগলো। সাদামাটা অবিচুয়ারি নয়, অনেকটা ইতিহাসের সত্যকথনের মত। এই লেখাটা ভাল রকমের একটা দলীল হয়ে থাকবে বলে মনে করি।
@আমি কোন অভ্যাগত নই,
তাই? আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
ধর্মের মধ্যেই ধর্মান্ধতার বীজ রয়েছে।অভিজিত রায় যুক্তিবাদী লেখক।কিন্তু তিনি সুবিধাবাদী ছিলেন না।তাই বিজ্ঞান এবং যুক্তির আলোকে তিনি ধর্মকে ব্যাখ্যা করেছেন।ধর্মকে ব্যাখ্যা না করে ধর্মান্ধতাকে ব্যাখ্যা করা যায় না। তাই তিনি বিভ্রান্ত বিশ্বাসীকে বিজ্ঞানের আলোয় আলোকিত করার জন্য আমৃত্যু লড়াই করে গেছেন।যারা করুন পরিনতির কথা ভেবে নিজেই নিজের বিকাশের পথকে রুদ্ধ করে ফেলে তারা আপোষকামী। অভিজিত রায় আপোষকামী ছিলেন না।আমরাও আপোষকামী হব না।
@রসি মজুমদের,
কলম চলবে! :good:
আমি নিয়মিত মুক্তমনার পাঠক । মুক্তমনের মানুষ অভিজিৎ রায়ের মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত । ভারতের কবি সন্দীপ গোস্বামীর লেখা একটি কবিতা মনে পড়ল । প্রায় ১০-১৫ বছর আগে লেখা কবিতাটি এই মুহূর্তে খুব প্রাসঙ্গিক মনে হল । প্রেক্ষাপট বদলায় কিন্তু কবিতা কথা বলে যায় ।
পাষাণ
– সন্দীপ গোস্বামী
রক্ত পাষাণ চর্বি পাষাণ বরফ পাষাণ
পাষাণ পাষাণ পাষাণ কই!
হে দূর দূর হো দূর দূর হা দূর দূর
মরা শালিক কালা রোদ ন্যাংটো হাসি চিকন চিক
ঘুরে ঘুরে দেয় যে ধিক
অট্টহাসি হৃদয়ফাটা জোড়া ভ্রু
দে দে দৌড়
পাগলা বিশু ঢ্যামনা রবি
খুলছে আঁচল ফাঁসের দড়ি
লাল পুকুরে কালের জলে ভাসছে দেখ
তিমির বৌ
মেঘের কোলে মেঘার ছেলে
চাঁদের মুখে নিগ্রো ছাপ
ব্লু-হেভেন চিকেন চপ জিভ লকলক ফরমাস
হাজার বছর ঘুরে দেখি এ কোন সর্বনাশ!
(কাব্যগ্রন্থ – আহত আগুনের কবিতা)
@সাগ্নিক,
জয় হোক মুক্তমনার। আপনাকে ধন্যবাদ।
অভিজিতের শরীরে প্রানের আজ স্পন্দন নেই কিন্তু তার শব্দ আজ জ্বলে দিয়েছে মানবতার উজ্জ্বল অগ্নি-শিখা লক্ষ কোটি মানুষের বুকে। এই অগ্নি-শিখা নিভিয়ে দেবার কোন শক্তি নেই ।
অভিজিতরা মরে না , মরতে পারে না
অভিজিতরা প্রস্থান করে , জন্ম দিয়ে যায় লক্ষ অভিজিতের
আজ আমরা প্রত্যেকেই অভিজিত । আমাদের মনে, প্রানে, জ্ঞানে অভিজিত বেঁচে আছে। থাকবে ।
আজ আমি চিৎকার করে বলিঃ আমিই অভিজিত ।।
@নশ্বর,
মুক্তমনার সংগ্রাম চলবেই। :good:
আজকে কালেরকণ্ঠ সাইটে এক বেক্তি তার মন্তব্যে অভিজিতের খুন হওয়াকে যৌক্তিক দৃষ্টান্ত দেওয়ার জন্য দেখি ইসলামের অবমাননা থেকে শুরু করে মুক্তমনা ব্লগে জামাতি আর ধর্মান্ধের ধুলাই দেওয়া সবই তুলে ধরেছে । কিন্তু শেষ করেছেন যে লাইন দিয়ে তাহল ”আনসারুল্লাহ বা ইসলামী মৌলবাদীরা নয়- খুন করেছে শেখ হায়েনার খুনি বাহিনী বাল(BAL)সারুল্লাহ”।সত্যি কি বিচিত্র এদেশ মুক্তমনা ব্লগে কখনই আওমিলিগ সমর্থক দের ধুলাই দিতে দেখিনি আর অভিজিত বিজ্ঞান নিয়ে লিখতো রাজনৈতিক সমালোচনা নিয়ে নয় । তাই আওমিলিগ সমর্থকরা তাকে কেন মারবে তা ক্লিয়ার না, তাহলে রজনৈতিক ভাবে তিনি খুন হয়েছেন একথা বলার যুক্ত কি ? এরা দু মুখ সাপ জানি কিন্তু ফারাবি হত্যার দায় শিকার করার পরও যে দুই মুখ দিয়ে বানি বেরচ্ছে তাতেই অবাক চ্ছি ।
@সৈকত,
ঠিকই বলেছেন, এসবই হচ্ছে হত্যাকে জায়েজ করার অপচেষ্টা। অভিজিৎ আস্তিক না নাস্তিক, তার চেয়ে বড়ো কথা, তিনি খুন হয়েছেন — এটিই। আর সে ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুতর ফৌজদারী অপরাধ। আমরা প্রচলিত আইনেই তার হত্যার বিচার চাই। যদিও এ নিয়ে খুব বেশী আশাবাদী এখনো হতে পারছি না।
…..শেষ পর্যন্ত হত্যা করে অভিজিতদের শেষ করা যায় না। আমরা আসলে একেকজন রক্তবীজের ঝাড়। যতোবারই হত্যা করো, ততোবারই আমরা জন্মাবো। আমরা প্রত্যেকেই একেকজন অভিজিৎ! আমিই অভিজিৎ!
@সাব্বির হোসাইন,
মুক্তমনা অপরাজিিত। :good: