ছোটবেলার সেই মৃদ্যু লয়ের লেখালিখি ছোটবেলার সাথেই হারিয়ে গিয়েছিলো। বড় হয়ে যখন প্রবাস জীবন কাটাচ্ছি, অন্তর্জাল হাতিপাতি করি তখন আসি মুক্তমনার সান্নিধ্যে। মাঝে মাঝে কোন কোন প্রবন্ধ এতো মুগ্ধ করতো যে নিজেও ইমেইল করে সেই প্রবন্ধ সম্বন্ধে দুটি কথা না লিখে পারতাম না। সেইভাবেই “অভিজিৎ” ভাইয়ের সংস্পর্শে আসা। আমার আজকের লেখালেখির পিছনে অভিজিৎ ভাইয়ের অবদান সবচেয়ে বেশী। “বর্নসফট” ইন্সটল করে বাংলায় লিখতে পরামর্শ দিয়েছিলেন, লেখা শুরু করার প্রাথমিক দ্বিধা কাটাতে সাহায্যও করেছিলেন অনেকভাবে। ধরিয়ে ধরিয়ে অনুবাদ করিয়ে নেয়া, লিখিয়ে নেয়া এই মানুষটি জানতো। আরো অনেক কিছু জানতো এই মানুষটি। বিনম্র শ্রদ্ধা অভিজিৎ ভাই, ছুটিতে দেশে যাওয়া আপনার বড় ভুল ছিলো …… বইমেলায় সময় কাটানোর দাম দিলেন জীবনের বিনিময়ে আপনি
এই মৃত্যু উপত্যাকা আমার দেশ নয়, কিছুতেই নয়। মুক্তচিন্তা আর লেখালেখির মূল্য যেখানে প্রাণের দামে চুকাতে হবে সেই দেশ কিছুতেই আমার নয়। মুক্তচিন্তার মানুষরা মুক্ত জগতে বিচরণ করুক আর জংলীরা বাস করুক জঙ্গলে। আর কত প্রাণ নিলে এই ছাগু সম্প্রদায় শান্ত হবে? কোন একটা হত্যার বিচার হয় না এই দেশে, এই দেশ কিছুতেই মুক্তচিন্তার মানুষের নয় ………… ছাগু সব করবে রব আর এই রাতি কখনও না পোহাইল ………… বাংলাদেশকে ঘিরে ছিলো টন টন অন্ধকার, এখনো তাই আছে আর ভবিষ্যতও তাই ………………
অভিজিত ভাইয়ের মৃত্যু আর একবার জানিয়ে দিলো, কতো প্রকারের সুশীল ফেসবুকে পদচারনা করে। তাদের মুক্তিযুদ্ধে আপত্তি, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে আপত্তি, শাহবাগে আপত্তি, জয় বাংলাতে আপত্তি, বঙ্গবন্ধুতে আপত্তি, মানুষের নামে আপত্তি, পোষাকে আপত্তি, মুক্তচিন্তা ভাবনায় আপত্তি …… কিন্তু মুক্তচিন্তাকারদের আবিস্কৃত ফেসবুক, ইউটিউব, ভাইবার, বাংলা সফটওয়্যার ইত্যাদি কিছুর উপকারিতা নিতে তাদের বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই
অসির চেয়ে মসি শক্তিশালী, এই ভুল কথাটি স্কুল বয়স থেকে শেখানো হয়। আসলে অসিই দুনিয়ায় প্রথম আর শেষ কথা। মাথায় চারখানা কোপ, কল্লা ফতে, মসি স্তব্ধ। পশুর জয় মানবতার পরাজয় …… শুধু ইহকালে কুপিয়ে ক্ষান্ত হয় না পরকালে তাকে কীভাবে কীভাবে বারবিকিউ করা হবে তার কল্পনায় নিজে উজ্জীবিত হয়, স্ট্যাটাস লিখে অপরকেও উজ্জীবিত করে ……… তারচেয়ে দুঃখের কথা, এই ইসলামী রাষ্ট্রে অভিজিৎ রায়ের খুনী ধরা পড়বে কীনা সন্দেহ। মার্কিন বাসিন্দার ওপর আক্রমন হয়েছে এই কারণে কাফের এ্যামেরিকা যদি কিছু করতে পারে সেই প্রতিকারের আশায় আছি
ধর্মের জন্মের ইতিহাসই কোপাকোপি, যুদ্ধ, রক্তারক্তি, নারীদের লাঞ্ছনার মধ্যে দিয়ে সে ধর্ম নাকি শান্তির ধর্ম। কানা ছেলের নাম সর্বযুগে পদ্মলোচন। নিজের কানারে নিজে পদ্ম ডেকে শান্তি নেই, সবার কানপট্টিতে বন্দুক ধরে কানাকে পদ্ম বলাতে হবে। পৃথিবীর কোন ইতিহাসে এতো রক্তপাত আছে নাকি সন্দেহ। সেই রক্তের গঙ্গা আজো বহমান, ফ্রান্স থেকে টিএসসি। পৃথিবীর যে কোনায় রক্তারক্তি সে কোনাতেই এদের নাম এবং শুধু এদেরই নাম।
অসির কাছে মসী নতি স্বীকার করুক, বেঁচে থাকার তাগিদে করুক। কোন মুক্তমনার লেখালেখির দরকার নেই। বাজার ছেয়ে যাক, ধর্মের যুদ্ধ আর ধার্মিকদের জীবনীতে সাথে লাইলী মজনু আর শিরি ফরহাদের প্রেম কাহিনীতে। তবু মুক্তচিন্তাবিদরা বেঁচে থাকুক পৃথিবীর কোন কোনে। কুপিয়ে না মারলে কেউ অমর হয়ে যাবে না, বৃদ্ধ বয়স, জরা, বিভিন্ন অসুস্থতা মানুষের প্রাণ কেঁড়ে নিবেই তবুও এমন বীভৎস লজ্জা আর ঘৃনার হাত থেকে বাঙালি জাতি মুক্তি পাক।
বইমেলা এখন ঘাতকদের টার্গেট, এর বিকল্প খোঁজার বিকল্প নেই। হুমায়ূন আজাদ, রাজীব হায়দার, অভিজিত রায়, বন্যা আহমেদ …… লিস্ট বড় হতেই থাকবে …… বাংলাদেশের ইতিহাস বুদ্ধিজীবি হত্যার ইতিহাস
আপেল যুগ যুগ ধরেই ওপর থেকে নীচে পরে, সবাই দেখেছে, এটাকেই স্বাভাবিক বলে মেনে নিয়েছে, কেন ওপর থেকে নীচে পরে সেটা ভেবেছেন একমাত্র নিউটন যার কারণে মধ্যাকর্ষ-অভিকর্ষ এর আবিস্কার …… গ্রহ তারা নক্ষত্র নিয়ে কবিতা গান লিখেছেন অনেকে। কিন্তু তাদের অবস্থান, দূরত্ব, গতিপথ নিয়ে হিসেব নিকাশ করেছেন ব্রুনো। সেই থেকে দিন, মাস, বছরের হিসাব ……… তারপরও চিন্তাশীল, আবিস্কারক, মুক্তমনারা যুগে যুগে অন্ধবিশ্বাসীদের আঘাতের আর প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন
অভিজিৎ রায়ের ইচ্ছে অনুযায়ী তার মরদেহ তার পরিবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজকে আজ দান করে দিবেন। তার মরদেহ ছাত্র ছাত্রীরা কাটা ছেড়া করবে, জানবে, দেখবে, শিখবে। তাদের অনেকেই নিশ্চয় প্রচন্ড বিশ্বাসী। সেই জ্ঞান দিয়ে যাদের চিকিৎসা হবে তাদের অনেকেই মুক্তমনাদেরকে হয়তো ঘৃনা করেন। তারপরও মৃত অভিজিৎ যা কিছু ছিলো তার তা সভ্যতার অবদানে নিঃশর্তে দিয়ে গেলেন ………
উদয়ের পথে শুনি কার বাণী, “ভয় নাই, ওরে ভয় নাই– নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।’
বিদায় অভিজিৎ ভাই, যেখানেই থাকুন, ভাল থাকুন ………
বন্যা আপা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন। অভিজিৎ ভাইয়ের অসমাপ্ত অনেক পরিকল্পনা আপনার দিকে তাকিয়ে আছে, আমরা সবাই আছি আপনার পাশে। আপনি শক্ত হয়ে ঘুরে দাঁড়ান, এই মৃত্যু যেন বৃথা না যায়। হত্যাকারীদের উপযুক্ত শাস্তির জন্যে লড়াই করতে হবে আমাদের সবাইকে।
তাতা আপু, অনেকদিন পর আপনার লেখা পড়লাম। এতোটা হতাশা কি মানায়? অভি দা’র দেহজ মৃত্যু হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তার চেতনার মৃত্যু নেই।
মুক্তমনার সংগ্রাম চলবেই। :good:
@বিপ্লব রহমান, হ্যাঁ বেশ অনেকদিন পর আসা। খুব হতাশ। মানুষটাকে মেরেও শান্তি হয়নি নানাভাবে সেটাকে জাস্টিফাইড করার চেষ্টা করছে হায়েনার দল