(১)
খবরটা পেলাম যখন ড্রাইভ করছি। মুর্হুর্তের জন্য কেঁপে গিয়েছিলাম। ভয় এসেছিল মনে। কিন্ত ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে শোক সামলে শুধুই হাতের মুঠো একসাথে করছি। না ওরা ত চাইবেই আমরা ভয় পায়। আমরা যদি আজ ভয় পায়, আমাদের প্রানের প্রিয় অভিজিৎ রায় হেরে যাবে। হারতে আমি ভালোবাসি না। সেই মুর্হুর্ত থেকেই যুদ্ধের শপথ নিয়েছি। অভিজিৎকে খুন করার পরে -এটা আর পেনের যুদ্ধ না । ইঁদুএর সমান যাদের মাথার বুদ্ধি, ঘেলুতে ব্রেইন ড্যামেজ, মগজে কার্ফুর অন্ধকার-তাদের কি যুক্তিবাদ বোঝানো যায় ?
আজ খুব ভালো ভাবে লক্ষ্য করলাম সেই সব প্রফাইল গুলো-অসংখ্য-হ্যাঁ সংখ্যাধিক্য তারাই-যারা অভিজিতের মৃত্যুতে উল্লাসিত। প্রথমে মনে হয়েছিল জঙ্গী-এখন দেখছি ইঞ্জিনিয়ার, ছাত্র, আইটি কর্মী, ম্যানেজার সবাই আছে। এরা “মডারেট” মুসলিম। না ঘৃণা ছড়ানো আমার উদ্দেশ্য না -কিন্ত ফেসবুক একটু দেখুন। দেখবেন জঙ্গীরা না -অনেক সাধারন মডারেটরাই অভিজিতের মৃত্যু সেলিব্রেট করছে। যেসব মুসলিমরা দুঃখিত-তারা বহুদিনের পরিচিত মানবাধিকার কর্মী। যখন একজন ধর্মের মাদকে, রূপকথায় বিশ্বাস করে এই নৃশংস মৃত্যুতে উল্লাসিত হয়-আশা করি বুঝতে পারছেন, যাদের মডারেট মুসলিম বলে জানেন-তাদের অনেকেরই (সবার না ) ধর্মান্ধতা কত গভীরে। গত গভীরে ঘুন ধরাতে পারে ধর্ম। যেখানে মানুষের নুন্যতম বিবেকটাও বিকিয়ে যায়। অভিজিতই সত্য-এই ধর্ম সত্যই এক ভাইরাস। এই ভাইরাসের আক্রমনে মানুষ মনুষত্ব হারিয়ে অমানুষ হয়।
(২)
সেটা ২০০৩ সালের নভেম্বর মাস। নতুন চাকরিসূত্রে ক্যালিফোর্নিয়ায়। তখন স্যোশাল মিডিয়া ব্লগ এসব কিছু শুরু হয় নি। স্যোশাল মিডিয়া মানে ইহাহু গ্রুপ। সেই গ্রুপের একটা পোষ্ট কিভাবে যেন চোখে এল। ভীর বলে এক হিন্দু মৌলবাদি প্রমান করার চেষ্টা করছে, এটমের ধারনা বেদে আছে। বিরুদ্ধে অভিজিত রায় নামে একজন লিখে যাচ্ছে। সব ইংরেজিতে। ইহাহু গ্রুপটার নাম মুক্তমনা । আমি যথারীতি অভিজেতের সাপোর্টে লিখলাম। সেই সূত্রে আমাদের প্রথম পরিচয়। ও জানাল ওর একটা ওয়েব সাইট ও আছে। সেটার নাম মুক্তমনা । ওখানে সবাই ইসলামের বিরুদ্ধে লেখে। কিন্ত হিন্দু ধর্মের বিরুদ্ধে লেখার লোক পাওয়া যায় না ! ও মাঝে সাঝে লেখে! যদি আমি ওর সাইটে হিন্দু ধর্মের বিরুদ্ধে লিখি!!
আমি যে লেখক সেটাই জানতাম না ! তারপরে ১৫ বছর একলাইন বাংলা লিখি নি। আমি অভিজিতকে বল্লাম ভাই এই ত অবস্থা ! ও তখন আমাকে বর্নসফট বলে বাংলায় লেখার একটা সফটোয়ার দেখাল । বললো, প্রবাসে থেকে যারা লেখে সবার বাংলার অবস্থায় খারাপ। আর এই সব নতুন লেখকদের জন্যই মুক্তমনা !
তখন ও মুক্তমনা ব্লগ সাইট না । পিডিএফ করতে হত। অভিজিতকে পাঠালে, ও ছাপাত টাইটেল দিয়ে। নিজেই ওয়েব সাইট মেইন্টেইন করত। ও তখন সিঙ্গাপুরে বায়োমেকানিকে পি এই চ ডি ছাত্র। আমার সব পি ডি এফের প্রথম প্যট্রন ও। শুধু আমি না -আমার মতন অনেক হেজি পেজি লেখকদের মুক্তমনাতে নিয়ে এসে ক্রমাগত উৎসাহ দিয়ে লেখক হিসাবে ওই দাঁড় করিয়েছে।
তখন মুক্তমনা শুধু বাংলাদেশীদের জন্য ছিল না । ভারতের অনেক অবাঙালী নাস্তিক ওই ইহাহু গ্রুপে ছিল। ধর্ম নিয়ে মারামারি বেশী হত। রাজনীতি কম।
তখন ও অভিজিত আর বন্যার বিয়ে হয় নি। র্যোমান্স চলছে। ওরা সদ্য প্যারিসে মিট করেছে। ওদের ওই রোম্যান্স পর্বের অনেক সুঃখ দুঃখ ভালো সময়ের ভাগীদার আমি। আজ সেই সুঃখ স্মৃতি গুলোই শুধু মনে পড়ছে যখন আমরা বেশ গটাপ কেস করে মুক্তমনা সাইটে বিতর্ক জমাতাম। আর কিছু ভাবতে পারছি না । অভিজিতের একটা দীর্ঘ ইন্টারভিঊ নিয়ে ছিলাম ঃ
http://biplabbangla.blogspot.com/2015/02/blog-post_28.html
মৃত্যু নিয়ে ওর সাথে আমার অনেক আলোচনা হয়েছে সেই ২০০৪ সাল থেকেই। এতদিন এত কথা, এত ইমেল হওয়া সত্ত্বেও নানান কারনে ওর সাথে দেখা হয়েও হচ্ছিল না । সেটাও হল গত নভেম্বর মাসে। ওরা আমাদের বাড়িতে এসেছিল। বাংলাদেশ যে আর নিরপদ না সেটা নিয়েই আলোচনা হল অনেক।
এরপরেও যে কেন ওরা বাংলাদেশে গিয়েছিল, আমার জানা নেই । জানলাম যখন ও প্লেনে উঠছে আই এডি থেকে। বন্যা প্লেনে ওঠার কিছুক্ষন আগে জানাল, বিপ্লব আমরা বাংলাদেশে যাচ্ছি, তৃষার কিছু হলে দেখ!! আমি তখন আর কি বলব? ফেসবুকে চ্যাটে খোজ নিত। জানলাম বাংলাদেশে নেমেই ওদের ফুড পয়জন হয়েছে।
তৃষা জানতে চাইল, কেন মেরে ফেলা হল ওর বাবাকে। আমি জানিয়ছি, লেখকেরা মরে না । অভিজিত যা লিখে গেছে, তাতে রক্তবীজের মতন সহস্র ব্লগারদের কলমে ও বেঁচে থাকবে। মানুষের দেহকে খুন করা যায়, চেতনা কে না । ২০০৩ সালে আমরা যখন লিখতাম, মোটে ৫-৬ ব্লগার ছিল মুক্তমনা সাইটে। আজ শয়ে শয়ে, হাজারে হাজারে বাংলাদেশী যুবকেরা ব্লগে লিখছে। তাদের গুরু একজনই -অভিজিত রায়।
অভিজিত রায়রা মরে না । যারা ভাবে রক্তপাত করে অভিজিত রায়কে আটকানো যাবে তারা ভুল পথে। হাজার অভিজিত রায় এখন রেডি। আমি প্রথমে একটু ভয় পেয়েছিলাম। তারপরে মনে হল, ভয় পেলে ওরা জিতে গেল। আমরা হেরে গেলাম। এটা লড়াই। চেতনা মুক্তির, বিজ্ঞান চেতনার লড়াই। অভিজিত রায় কমিনিউস্ট, হিন্দুইস্ট, ইসলামিস্ট, রাবিন্দ্রিক কাওকেই ছাড়ে নি। এ লড়াই বন্দুক, ছুড়ি দিয়ে জিততে পারবে না কোন প্রতিপক্ষ।
(৩)
আমি জানি বুকে চাপা আছে অনেক কান্না। অনেক ক্ষোভ। অভিজিতের ভক্ত পাঠককুলের কাছে আমার একটাই পার্থনা, এটা কান্না বা ক্ষোভের সময় না । এটা যুদ্ধ। যুদ্ধে আপনার কান্না আর ক্ষোভ, বিরোধি পক্ষকে আরো এই ধরনের কাজে উস্কে দেবে। দেখতেই পাচ্ছেন বাংলাদেশের অধিকাংশ মুসলিম জনতা তাদের ফেসবুক স্টাটাসে তাদের আনন্দ উল্লাস ব্যক্ত করছে। এরা মানুষ না জানোয়ার জানা নেই -কিন্ত বিলক্ষন জানুন ধর্ম মানুষকে জানোয়ার বানাতে সক্ষম। এটা পথে নেমে প্রতিবাদ করার সময়। একশন নেবার সময়। ইসলামের স্বঘোষিত স্প্লিন্টার গ্রুপ গুলি, যারা নিজেদের ইসলামের সৈনিক মনে করে-তারা বাংলাদেশ, ভারত, আমেরিকা, ইউরোপ সর্বত্রই আপনি, আমি সবার জন্য এক ধরনের মৃত্যুকূপ। অভিজিত যে ভাবে মারা গেছে, কালকে আপনিও এই ধরনের স্প্লিন্টার গ্রুপের হাতে মারা যেতে পারেন বোমাঘাতে। লেখালেখি না করলেও। বাংলাদেশের সরকার এই সব গ্রুপ গুলোর বিরুদ্ধে বেশী কিছু করবে না -পশ্চিম বঙ্গে এরা আবার শাসক দলের আশ্রিত। সুতরাং আজ একশন না নিলে, কাল অভিজিত রায়ের পরিনিতি আপনার ও হতে পারে। আপনারা আপনাদের সামর্থ্য অনুযায়ী এই কাজ গুলো করুন
(১) অভিজিত রায় আমেরিকান সিটিজেন ছিলেন। যদি আপনি আমেরিকান সিটিজেন হন , আপনার সেনেটর কংগ্রেসম্যানকে জানান, একজন আমেরিকান ব্লগার বাংলাদেশে ইসলামিক সন্ত্রাসবাদের হাতে খুন হয়েছে। তারা যেন বাংলাদেশের আমেরিকান এম্বাসিতে চাপ দেয় এফ বি আই তদন্তের জন্য । খুনীরা একজন নাস্তিক শুধু না , একজন আমেরিকান মারতে পেরেছে বলেও উল্লাস করেছেন । এটা ইসলামিক সন্ত্রাসবাদিদের দ্বারা একজন আমেরিকানের বিরুদ্ধে হেট ক্রাইম ও বটে। সুতরাং এফ বি আই এর সহযোগিতা দরকার।
বাংলাদেশের আমেরিকান এম্বাসীতেও সরাসরি লিখতে পারেন ।
(২) আপনারা যে যেখানে থাকুন, অভিজিত রায়ের সমর্থনে মিটিং মিছিল করুন। তার ফটো ভিডিওতে ফেসবুক ভরে যাক
(৩) যেসব ফেসবুক প্রফাইলকে জঙ্গীদের প্রতি সহানুভূতিশীল মনে হয়, সেগুলোর স্ক্রীনশট রাখুন। স্থানীয় থানায় লোক্যাল সাইবার ক্রাইমের সেলে রিপোর্ট করুন।
মনে রাখবেন আপনার প্রতিপক্ষ ধর্মোন্মাদ জঙ্গী। এরা আপনার চোখের জলে, ক্ষোভে আনন্দ পায়। জেতার উল্লাস করে। এদের বিরুদ্ধে লড়াই করার একটাই পদ্ধতি। এদের খুঁজে বার করে পুলিশে দেওয়া, এদের সমাজ বিচ্ছিন্ন করা। স্পট দেম। রিপোর্ট দেম। লিস্ট দেম।
কান্নাকাটি ক্ষোভ ছাড়ুন। ওসব দুর্বলদের লক্ষন। আজ থেকে ডিরেক্ট একশন ডে।
(৪)
কিভাবে লড়বেন এই সব জঙ্গীদের সাথে? লড়াইটা কঠিন এই জন্যেই যে বাংলাদেশের সাধারন মুসলমানরাও অভিজিতের মৃত্যুতে উল্লাসিত। যেকোন পেজ দেখুন। ওরা বলে বেড়াচ্ছে অভিজিত রায় ইসলামের শত্রু। সত্যি কি তাই ?
চারিদিকে প্রচারনা চলছে মুক্তমনা ব্লগ সাইটটা মুসলিম এবং ইসলাম বিরোধি। ইসলাম একটি ধর্ম এবং একটি নাস্তিকদের ব্লগ সাইট ধর্মের সমালোচনা করবেই। কারন ধর্ম রূপকথা। প্রফেট মহম্মদ আদৌ ছিলেন কিনা, সেই প্রশ্ন তুলেছেন প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠিত ঐতিহাসিক। ধর্মান্ধ মুসলিমরা বালিতে মুখ গুঁজে থাকলে আমাদের কিছু করার নেই । কিন্ত মুক্তমনারা সব সময় মুসলিমদের মানবাধিকার নিয়ে সরব হয়েছে গাজা থেকে কাষ্মীরে। অভিজিত সেই নিয়েই লিখেছিল ডিটেলসে–[https://blog.mukto-mona.com/?p=571] সেই পোষ্ট দিলাম। এই ধরনের প্রচারনা চলেছে সদালাপ ব্লগ সাইটে রায়হান নামে এক ধর্মান্ধ পাগলা মুসলিম ব্লগারের কাছ থেকে।
এই লড়াই কঠিন কারন দুই বাংলাতেই সরকার পক্ষই ইসলামিক মৌলবাদিদের পাত্তা দেয় ভোটে জন্য। নইলে কি করে পুলিশ শুধু বসে বসে দেখতে পারে একটা হত্যাকান্ড?
তাহলে আমরা কি করবো? শুধু লিখে কিছু হবে না । আমরা মস্তান গুন্ডা নই যে চাপাতি চালাতে পারব। বা কাউকে খুনের হুমকি দেব। কিন্ত যেসব প্রফাইল অভিজিতের মৃত্যুতে উল্লাসিত-তাদের স্পট করুন। স্ক্রীন শট রাখুন। অভিজিত আমেরিকান সিটিজেন । এটা ইসলামি জঙ্গীদের কাজ। এফ বি আই দিয়ে তাদের কুত্তাখোঁজা হবে। এদের অধিকাংশই ইঞ্জিনিয়ার বা আই টি কর্মী। এদের মালিকদের কাছে, বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষের কাছে, ফেসবুকে এদের জঙ্গী উল্লাসের স্ক্রীনশট পাঠানো হোক। যদি তারা না শোনে জঙ্গী কার্যকলাপের জন্য, আমেরিকাতে বা ভারতে এদের এক্সপোর্ট আমরা আটকে দেব।
ভয়টা এতদিন আমরা পেয়েছি। এবার ভয়টাকে ওদের ঘরে পৌঁছেদিন। এটা দুর্বলতা প্রদর্শনের সময় না । তাহলে ওরা আরো উৎসাহিত হবে।
অভিজিৎদার দর্শন আজীবন লালন করবো এবং প্রচার করবো , এটা আমার প্রতিজ্ঞা ।
অভিজিৎ’রা কখনও মরে না, মৃত্যু তাকে নিয়ে গেছে এমন এক উচ্চতায় যেখানে জঙ্গিরা কখনই পৌছাতে পারবে না।
খবর শোনার ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই ফেসবুকের নোংরামি দেখছি, অসুস্থ লাগছে পুরো
আকাশ থেকে একটা উজ্জ্বল তারা যেন খসে গেল!
বিপ্লব দা,
আপনার লেখাটি পড়লাম। আসলেই আমাদের কষ্ট দেখে তারা উল্লাসে মেতে উঠেছে। আপনার মাধ্যমে আরো কিছু ইন্টাভিউ ও আলোচনা পেলাম ফেসবুকে। অস্তিত্বের রক্ষায় এগিয়ে যেতে হবে। ধন্যবাদ।
মুক্তমনার সৃষ্টি না করলে অসংখ্য ব্যক্তি অজ্ঞ অন্ধ থেকে যেত। এটাই অভিজিত এর অপরাধ।
@আঃ হাকিম চাকলাদার,
সম্পুর্ন একমত ,মুক্তমনা না পড়লে সংসয়বাদীই থেকে যেতাম ,অনেক প্রশ্ন ছিল মনে যার উত্তর জানা ছিল না অবশেষে মুক্তমনায় এসে সম্পুর্ন হোল অভিজিত সবসময় বেচে থাকবেন আমাদের সবার মাঝে।
আপনার নবযুগ ব্লগে প্রবেশ করা যায়না কেন ?
কি যুদ্ধ ভাই?
আমি মাস দুএক আগে বন্ধু শ্রী অনির্বাণ গঙ্গপাধ্যায় কে অনু্রোধ করি বিবেকানন্দ রচনাবলীর একটা সন্ধান যদি পাওয়া যায়। তার কদিন আগে বিবেকানন্দ কে মেল শভিনিস্ট বলাতে কয়েকজনের কাছে পাগোল প্রতিপন্ন হয়েছি। ফলে রচনাবলীটি দরকার হয়ে পরেছিল আবার। একটি লেখার জন্য। আমি কলকাতা ছাড়ার পরে সব বই কলকাতায়ই রয়ে গিয়েছিল। অনির্বান আমাকে আভিজিত বাবুর ‘স্ববিরধী বিবেকানন্দ’ লেখাটির লিঙ্ক দিয়েছিলেন। পড়ে প্রথমেই হিংসে হয়েছিল। যা লিখতে চেয়েছিলেম তা অভিজিত বাবু অনেক বেশী কনভিন্সিংলি লিখে ফেলেচেন। পরে বিপ্লব বাবুর লেখাটিও পড়লাম। আমার লেখার জন্য কেউ-ই কিছু রাখেননি। সেই অভিজিতবাবুর লেখার সাথে পরিচয়। একের পর এক পরে গিয়েছি এই দু-মাসে। বিভিন্ন লেখা। মুক্তমনার অন্যান্য লেখকদের লেখা। আভিজিতবাবুর সাথে কোন কথা হয়নি আমার। কিন্তু তাঁর লেখায় লেখায় একটা আত্মিয়তা তৈরি হয়েছিল। সেখানে সমর্থন ছিল, অসমর্থন ছিল, গর্ব ছিল, আনন্দ ছিল, ঈর্ষা ও ছিল। অনির্বানের কাছ থেকেই সেদিন রাত বারোটা নাগাদ খবরটা জানলাম। আর পরের দিন ফেস বুকে অদ্ভুত উল্লাস ও দেখলাম…
এক একটা সময় আসে যখন আবেগ বুদ্ধি কে ওলট পালট করে দেয়। আমার এখন এই রকম সময়! সময় লাগবে স্থিতিশীল হতে। না আমি অভিজিতবাবুকে চিনতাম না। কোনদিন কথা হয়নি আমাদের। ওঁর ছবি দেখলাম ও মারা যাবার পরে। কিন্তু তবু কেন যে আমি অস্থির… কেন যে মনে হচ্ছে যোগাযোগ হওয়াটা প্রয়োজনীয় ছিল… কেন যে এই আফশোষ… কেন যে…
যে সমাজের মানুষ গেয়েবি জ্বিন্দের টেলিফোন সংলাপে সারাদিয়ে রাতের অন্ধকারে গোপনে সোলায়মান বাদশার সোনার কলশী পেতে চায়, যে সমাজের মানুষ গাভিন গাইা বিক্রি করে ফকির বাবার আস্তানায় চিকিৎসা নিতে যায়, যে সমাজে গন্ডমূর্খ মৌলনার ওয়াজ মহফিলে মানুষ হাত তালি দেয়, যে সমাজে টাই-স্যুট পরা লোকজন হেফাজতের লংমার্চে পানির বোতল হাতে নিয়ে ভিস্তি সেজে যায়, যে সমাজের ৯০% ধর্মপ্রান মানুষ অসৎ, যে সমাজে হতদরিদ্র মানুষগুলো পরলৌকিক জান্নাতী সুখের আশায় স্রেফ মরার জন্য নিরুপায় বেঁচে আছে…………..
অভিজিৎ ভাই সেই সমাজকেই হেঁচকা ঝাকুনি দিয়ে ছিলেন।
কি বলব ,কোন ভাষা খুজে পাচ্ছিনা ,অভিজিতের লেখা না পড়লে সত্যানুসন্ধান সম্পুরন্য হত না ,আমরা বাংগালিরা যে কি হারালাম তা অপুরণিও।
ভয়টা এতদিন আমরা পেয়েছি। এবার ভয়টাকে ওদের ঘরে পৌঁছেদিন। এটা দুর্বলতা প্রদর্শনের সময় না । তাহলে ওরা আরো উৎসাহিত হবে।
ঠিক দাদা। আরো অজস্রকে নেমে আসতে হবে, নিজের ভাবনাকে, নিজের যুক্তিকে সাহসের সাথে তুলে ধরতে হবে যাতে করে ধর্মবাদীরা যেদিকেই তাকায় শুধু অভিজিৎকেই দেখতে পায়।
খবরটা আমিও ফেসবুকেই পাই। প্রথমে বিশ্বাসই হয়নি। কালও বারবার মনে হয়েছে ‘অভিজিত্ রায়কে কি সত্যিই কেউ মারতে পারে?’
অভিজিতবাবুর সাথে আমার ব্যক্তিগত আলাপ কোনদিনই ছিলনা। তবে ওনার লেখা পড়তাম। মুক্তমনাতে মন্তব্য খুবই কম করলেও, লেখা পড়তাম। মুক্তমনা কাকে বলে, সে ব্যাপারে ওনার ব্যখ্যা আমাকে সবথেকে বেশী আকৃষ্ট করেছিল।
মৃত্যুর অভিজিত্ রায়কে কেউ হিন্দু, কেউ বামপন্থী, ইত্যাদি বানাতে লেগেছে যেটা দেখে বেশ খারাপ লাগল। আমার কাছে উনি নাস্তিক বা বিজ্ঞানলেখকও নন। উনি ‘মুক্তমনা’, একজন মুক্ত মানুষ। যিনি শিখিয়েছিলেন স্বাধীনতার অর্থ, গণতন্ত্রের অর্থ, মানবতার অর্থ।
@বিপ্লব পাল
সম্ভবত ২০০১ সালেই আপনার লেখা ক্যালিফোর্নিয়ার ভিন্নমতে দেখা গেছে, নয় কি? সেখানে আপনার লেখাগুলোতে, যুক্ত তর্কে বারবার অভিজিৎ কে রেফার করেছেন আপনি। চমৎকার উদ্দীপক কৌতূহল-সূত্র গুলোর অবতারনা হয়েছিল সেখানে। আমিও তখন অবাক হয়ে চিনলাম অভিজিৎ এবং অন্যান্য লেখকদের নাম। আমার কেন মনে হচ্ছে সময়টা ২০০১, ২০০৩ নয়?
@কাজী রহমান,
হ্যা, আমি ক্যালিফোর্নিয়াতে ছিলাম সেকালে। কিন্ত সেটা ২০০৪-২০০৬। আমাদের অনলাইন এক্টিভিটির স্বর্ণ সম য়।
@বিপ্লব পাল,
তা বটে; বাঙালি মুক্তমনার স্বর্ণসময়ের শুরুটা তখনই বটে। ওই সব পিডিএফ, সীমিত অনলাইন টেকনোলজি আর প্রবল ইচ্ছাশক্তি আলো জ্বেলেছে অনেক বাঙালি প্রাণে। আমাদের পৃথিবীকে অভি আরো কত যে দিতে পারতো …. .. ……
কষ্টে বুকটা ভেসে যাচ্ছে…।
ক্ল্যাশ অফ সিভিলাইজেশন এখন আর কোন তত্ত্ব কথা না, জ্বলন্ত বাস্তব। এই আগুন শুধু বাংলাদেশ ভারতে সীমাবদ্ধ নয়, পশ্চীমও নিরাপদ নয়। পশ্চীমা বিশ্বে ঘটতে থাকা নানান সন্ত্রাসী ঘটনা থেকে অভিজিত হত্যা কিছুই বিচ্ছিন্ন না, সবই কিছুর পেছনেই আছে একই মেকানিজম।
তথাকথিত শিক্ষিত মডারেটদের কোন ধারনা নেই কার্যকারন আসলেই কোথায়। তারা ইসলাম বিদ্বেষী অভিজিতের মৃত্যুতে উল্লসিত হলেও ইসলাম প্রিয় মাওলানা ফারুকীও কেন জবাই হয়েছিলেন তা ভাবতে নারাজ। মুখে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার মহত বানী নিয়ে তাদের প্রিয় আলেম ইসলামী স্কলারগন যেভাবে অপছন্দের ভিন্ন মতাবলম্বীদেরও নাস্তিক মুরতাদ ফতোয়া দিয়ে ঘৃনা ছড়িয়ে যাচ্ছেন নিরন্তর সেসব দেখালেও তারা দেখতে চান না।
ঘৃনাবাদের চাষাবাদ যেখানে করা হয় সেখানে ঘৃনাবাদ কোনদিন শেষ হয় না, নাস্তিক সংখ্যালঘু, ভিন্ন মতাবলম্বীরা শেষ হলে পর শুরু হবে নিজেদের ভেতর রক্তাক্ত হানাহানি। মানুষের কাছে এখনো শুনলে অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটাই বাস্তব।
মুক্তমনা লোড হতে বেশ সময় নিচ্ছে (সব পেজই)।কখন সব লেখা, গ্রাফিক লোড হবার পরেও লোড-ইং দেখিয়ে যাচ্ছে (যেমন ইংরাজি ও বাংলা হোমপেজে -http://blog.mukto-mona.com/) আবার মাঝে মাঝে একেবারেই হচ্ছে না । মন্তব্য প্রিভিউ করতেও আগের থেকে বেশী সময় লাগছে বলে মনে হচ্ছে। সমস্যাটা এই দুদিন ধরেই দেখছি। আগে, আমি ২ বছর ধরে আসছি এখানে, দেখিনি। ভারত থেকে এক্সেস করছি।
ফেসবুক খুলেই প্রথম খবরটা পাই ! কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না দুর্ঘটনাটা ! একটু ঘাটাঘাটি করেই জানতে পারলাম সব । আমি ফেসবুকে মাত্র একবারই তার সঙ্গে কথা বলেছিলাম … মুক্তমনাতে কিভাবে লেখা যায় ? তিনি খুব সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন ।
এই নৃশংস ঘটনার নিন্দা করার ভাষা খুজে পাচ্ছি না , আর কি ই বা করতে পারি ! বাংলাদেশকেই বা কি বলব ! আমাদের দেশকেও ঐ একই রাক্ষস দের হাতে প্রাণ হারাতে হয়েছিল দাভেল্করকে ! আমি নিয়মিত মুক্তমনার লেখাগুলো পড়ি , কিন্তু সেভাবে কোনদিন কমেন্ট করিনি । আজ না করে থাকতে পারলাম না ।
যারা ভাবছে একজন অভিজিৎ রায় কে হত্যা করে বা একজন দাভেল্করকে হত্যা করে যুক্তিবাদী আন্দোলনকে থামিয়ে দিতে পারবে , তারা খুব ভুল ভাবছে , এই আন্দোলন চলছে…চলবে !
অভিজিত আমাদের অনেক শিখিয়েছে ,পথ অনেক ছিল কিন্তু যুগের কাণ্ডারি হয়ে সে হাত ধরে নতুন পথে হাটতে শিখিয়েছে । তার মৃত্যুও যেন সেই যুক্তি হীন পথের পথিকদের জন্য সহাস্যে কৌতুকের ছলে বলে গেল ”চেয়ে দ্যাখ তোদের পরম সত্তা আমার উপর এক আনা ক্ষোভ দেখায় নি দেখালি তোরা এই তোদের সত্তা আর এই তোদের বিশ্বাস” ।
কিন্তু সকল যুক্তি তর্কের উপর সে তো একজন মানুষ কারও পিতা, কারও স্বামি,কেউ তার সন্তান ,কেউ তার বন্ধু বা সে কারও আদর্শ । বহমান জীবনে থেমে যাওয়া এই শুর নেহায়েতই উপেক্ষা করার নয় নেহায়েতই ভুলে যাওয়ার নয়, কে দেবে ফিরিয়ে সেই দিন ? এই জীবনের সেই সত্যি কত সহজে মানুষ মিটিয়ে ফেলতে পারে । কোন সে জীবন যা বাঁচে পরকালের জন্য কোন সে মানুষ যার হাত লাল হয় মৃতের সন্মানে । ধিক্কার জানাই সেই জীবন কে ,ধিক্কার জানাই সেই মানুষ কে ।
আমরা শোকাহত, কিন্তু আমরা অপরাজিত! কলম চলবে! আমিই অভিজিৎ
দাদা, আরো একটা ব্যাপারে লক্ষ রাখা দরকার হিট লিষ্টে কিন্তু আরো কিছু ব্লগারের নাম আছে।কেউ আছে মুক্ত-মনার খুব পুরাতন সদস্য। তাদের মধ্যে যার দেশে আছে তাদের নিরাপত্তার কথা ভাবা দরকার। সরকারের যে সেই সব ব্লগারদের নিরাপত্তা দিবে না বা পারবে না তা অনেকটা নিশ্চিত। আমাদের উচিত আমাদের অবস্থান থেকে সেই সব ব্লগারদের নিরাপত্তার ব্যাপারে সম্ভব হলে কাজ করা।
@জাহিদ রাসেল,
কাদের নাম আছে, সেই লিস্ট-আমার কাছে পাঠিয়ে দিন। এফ বি আই এখন তদন্তে। আমরা আমেরিকান সরকারে কাছে সেই লিস্ট পাঠাবো। আসিফের লেখাতে যা পড়লাম বাংলাদেশে শর্ষের মধ্যেই ভুত। গোয়েন্দা অফিসাররাই মৌলবাদি। বাংলাদেশ এই সব ব্লগারদের নিরাপত্তা দিতে পারবে না। যারা বা যেসব প্রফাইল এসব থ্রেট দিচ্ছে তাদের সব স্ক্রীন শট, আই ডি সেভ করে রাখুন। অভিজিতের মৃত্যুতে যারা উল্লাসিত তাদের সবার লিংক সেভ করুন। অভিজিত আমেরিকার নাগরিক ছিল। আমেরিকা কোন দুর্বল দেশ না। এদের নেটোয়ার্কের প্রতিটা ছেলেকে সনাক্ত করুন। এদের প্রতিটা গ্রুপ, প্রতিটা পেজ, প্রতিটা প্রোফাইলের লিস্ট বানান।
অভিজিতের মৃত্যুর পর আমার লেখাতে ভীষন অরুচি। এসব লিখে কিছু হবে না। এগুলো সব ছাগু ক্রিমিনাল। অভিজিতের কেসে না হয় এফ বি আই এদের তাড়া করবে। কিন্ত অন্যদের ক্ষেত্রে এদের বাংলাদেশের সরকার ধরবে না। সমস্যা হচ্ছে এটা বাংলাদেশের ব্যপার। একটাই ওষুধ। এদের ধরে ধরে এদের কর্মস্থলে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে জানিয়ে দিন এগুলো জঙ্গী। এদের বাবা মাকেও জানানো দরকার। সবার সামনে এদের মুখোশ খোলা দরকার। এদের একটা পৃষ্টপোষক শ্রেনী আমেরিকা এবং ইংল্যন্ডে আছে। এদেরকেও এক্সপোজ করা দরকার। কারন এরা চাপাতি চালায় না-কিন্ত ভদ্রবেশে আই টি বা ভদ্রকাজ করে।
যারা যুক্তি তর্কে বিশ্বাস করে না-তাদের বিরুদ্ধে লিখে কি করবেন?? বরং এই অঘোষিত যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিন। এদের সবাইকে চিহ্নিত করুন। এক্সপোজ করুন এদের মালিক বা কতৃপক্ষের কাছে। যদি তারা না শোনে, তাদের ব্যবসা, বিশ্ববিদ্যালয়কে জঙ্গীদের আখড়া বলে ব্যান করা হবে বর্হিবিশ্বে।
আমি এদের আগে পাত্তা দিই নি। গত দু দিনে দেখলাম এরা কারা। বেসিক্যালি কিছু বিচ্ছিন্ন ছাত্র, আই টির লোক-অতি ইসলামিক পাব্লিক । নিজেদের লোক্যাল আল কায়দা মনে করে। কিন্ত আসলে ভিখিরি বা চাকর বাকর টাইপের। কিছু হোয়াইট কলার বাংলাদেশি এদের বিদেশ থেকে কিছু ডলার ছেরে চালাচ্ছে। আর বাংলাদেশে পুলিশে, মিলিটারিতে এদের সিম্পাথাইজার আছে। এখন এফ বি আই আশা করি এই নেটোয়ার্ক টাকে হাসিনার হাতে তুলে দিতে পারবে। কারন না হলে হাসিনা এদের হাতে মরবে। এদের এত রমরমা কারন হাসিনাও ইসলামিস্টদের ভয় পায়। আমরা একটু ঘুরে দাঁড়িয়ে সংঘবদ্ধ হলেই সবাই পালাবে। কারন হাসিনাকেও ওরা মারতে চাইছে। হাসিনার সামনে এখন দুটো পথ। হয় এদের মার। নইলে হাসিনাকে এরা মারবে। এদ্দিন এই সব গণতান্ত্রিক ভেজালের জন্য হাসিনা আমেরিকাকে পাশে পাচ্ছিলেন না। এবার পেয়েছেন। সুতরাং এদের কুত্তাখোজা করে ক্রসফায়ারে মারবে হাসিনা সরকারই। নইলে কাল ওরা হাসিনাকে মারবে। পাশাপাশি প্রগতিশীলদের সঙ্ঘবদ্ধ থাকতে হবে-ল এনফোর্সমেন্ট এজেন্সিদের সাহায্য করতে।
@বিপ্লব পাল, ধন্যবাদ দাদা। লিষ্টে একজন আমার বন্ধু। যার উপর আমরা হামলার আশংকা করছি। তাকে বলবো আপনার সাথে শীঘ্রই যোগাযোগ করবার জন্যে। আপনি তার কাছ থেকে অনেক বেশি ভেতরে খবর পাবেন।