১
আমি তাঁকে ডাকি ‘গুরু’ বলে। অভিজিৎ বিরক্ত হন। কারণ এক অর্থে এই পৃথিবী তথাকথিত গুরুদের জ্বালায় অস্থির। রাজনৈতিক গুরু, ধর্মীয় গুরু, সন্ত্রাসের গুরু এরকম আরো কত কী গুরুর দাপটে সাধারণ মানুষ, খেটে খাওয়া সরল মানুষ, লেখাপড়া জানা ছাপোষা মানুষ, লোভী মানুষ, হাজার বছরের লালিত সংস্কারে আচ্ছন্ন দুর্বল মানুষ বড়ই বিপন্ন আজ। তাই ‘গুরু’ ডাকে অভিজিতের আপত্তি। আমিও বুঝি ব্যাপারটা। কিন্তু গুরু বলতে শিক্ষকও তো বোঝায়। যাঁর কাছ থেকে প্রতিদিনই আমি মুক্তমনা হবার পাঠ নিই তিনি তো আমার গুরুই।
২
বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানের বই পড়ছি সেই কৈশোর থেকে। আবদুল্লাহ আল মুতি শরফুদ্দিন, জহুরুল হক, তপন চক্রবর্তী, সুব্রত বড়ুয়া থেকে শুরু করে পশ্চিম বঙ্গের অনেক লেখকের বইও পড়া হয়েছে ততদিনে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় যখন ইংরেজিতে কিছু জনপ্রিয় বিজ্ঞানের বই পড়ার সুযোগ হয় – তখন এক নতুন ধরনের তৃষ্ণা জেগে ওঠে। মনে হতে থাকে, বাংলাভাষায় বিজ্ঞানের বইগুলো কেন এরকম প্রাণবন্ত হয়ে উঠছে না? ২০০৫ সালে হাতে এলো ‘আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী’। বইটি পড়ে মনে হলো – এরকম একটা বইয়ের জন্যই আমি আকুল হয়ে বসেছিলাম। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান যে কত গভীর অথচ কত তরতাজা হতে পারে তার প্রমাণ অভিজিৎ রায় তাঁর প্রকাশিত প্রথম বইতেই দিয়েছেন। আমি অবাক হয়ে দেখলাম তরুণ বিজ্ঞানী অভিজিৎ রায়ের চিন্তা ও লেখার আকাশচুম্বী ক্ষমতা।
‘আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী’র মলাট-তথ্য থেকে জানতে পারলাম ‘মুক্তমনা’ নামে একটা ওয়েবসাইট আছে যেখানে বিজ্ঞান ও যুক্তির আলোচনা হয়। পশ্চিম বঙ্গের প্রবীর ঘোষ যেভাবে যুক্তিবাদী সমিতি দাঁড় করিয়ে ‘অলৌকিক নয় লৌকিক’ এবং অন্যান্য বইগুলোর মাধ্যমে মানুষের মানসিক অন্ধত্ব দূর করার সংগ্রাম শুরু করেছেন, সেরকম কোন প্রচেষ্টা বাংলাদেশে হতে পারে তা ভাবতেও সাহস পাইনি সেই সময়। কিন্তু মুক্তমনা ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখলাম – যে মহৎ কাজের কথা আমি ভাবতেও সাহস পাচ্ছিলাম না তা ইতোমধ্যে শুরু করে দিয়েছেন অভিজিৎ রায়, ফরিদ আহমেদ, বিপ্লব পাল, জাফরউল্লাহ সহ আরো অনেক মুক্তমনা মানুষ।
২০০৬ সালে আমি মুক্তমনায় লিখতে শুরু করি। শুরু থেকেই অভিজিৎ রায় ও ফরিদ আহমেদের কাছ থেকে যে উৎসাহ পেয়েছি তা আমাকে ঋদ্ধ করেছে। তারপর আমার যা কিছু লেখা তার সবটুকুই হয়েছে মুক্তমনার জন্য। মুক্তমনার সংস্পর্শে এসে প্রতিদিন একটু একটু করে মুক্তমনা হতে চেষ্টা করছি আমি এবং আমার মতো আরো অসংখ্য মানুষ। মুক্তমনায় আমরা মন খুলে আলোচনা করছি, সমালোচনা করছি, লিখছি, পড়ছি, শিখছি এবং ক্রমশ মুক্ত মনের মানুষ হবার পাঠ নিচ্ছি। আর এসব কর্মযজ্ঞের প্রধান পরশ পাথরের নাম অভিজিৎ রায়।
২০০৭ সালে প্রকাশিত হলো তাঁর দ্বিতীয় বই ‘মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে’। বইটি তিনি লিখেছেন ফরিদ আহমেদের সাথে। মহাকাশ গবেষণার সাম্প্রতিকতম ফলাফল পর্যন্ত বিশ্লেষণ সমৃদ্ধ এই বই বাংলাভাষায় বিজ্ঞান বইয়ের জগতে আরেকটি মাইলফলক।
বাংলাদেশের মত রক্ষণশীল দেশে সমকামিতা বা সমপ্রেম, তৃতীয় লিঙ্গ ইত্যাদি বিষয়ে যৌক্তিক কোন আলোচনা কখনোই হয় না বললে চলে। কারণ আমরা লজ্জা পাই, ভয় পাই সামাজিক প্রতিক্রিয়াশীলদের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার। কিন্তু প্রকৃত গবেষক অভিজিৎ রায় কী নির্মোহ অথচ প্রাঞ্জল যুক্তিবোধের আলোকে আমাদের জন্য রচনা করেন সমকামিতা বিষয়ে বাংলাভাষায় প্রথম এবং এখনো পর্যন্ত একমাত্র গবেষণাগ্রন্থ ‘সমকামিতা একটি বৈজ্ঞানিক এবং সমাজ-মনস্তাত্ত্বিক অনুসন্ধান’। শুদ্ধস্বর থেকে বইটি প্রকাশিত হয় ২০১০ সালে।
পরের বছর প্রকাশিত হয় তাঁর ‘অবিশ্বাসের দর্শন’। বইটির যুগ্মলেখক রায়হান আবীর। বাংলায় বৈজ্ঞানিক ও সামাজিক মনন-দর্শনের এই বই ব্যাপক সাড়া ফেলে বিদ্বজন সমাজে। প্রকাশিত হবার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বইটির কয়েকটি মুদ্রণ শেষ হয়ে যায়। বইটির তৃতীয় সংস্করণ বেরিয়েছে এ বছর।
ভালোবাসা-বাসি নিয়ে আমরা বাঙালিরা সেই প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকেই বড় বেশি ভাবুক। মনে মনে আমরা সবাই কমবেশি প্রেমিক/প্রেমিকা। কিন্তু আমাদের ভাবনার স্তর একটা নির্দিষ্ট মাত্রার গভীরে কখনোই প্রবেশ করে না। বহুমাত্রিক অভিজিৎ রায় হাত দিলেন এই বিষয়ে। ২০১২ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর ‘ভালোবাসা কারে কয় মানব মনের বৈজ্ঞানিক ভাবনা’। ভালোবাসার এমন মনোবৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ সমৃদ্ধ গবেষণা আর কোন বাংলা বইতে আমরা পাইনি। একজন বিজ্ঞানী যে কতটা বহুমাত্রিক হতে পারেন – তার উজ্জ্বল উদাহরণ অভিজিৎ রায়।
শত যুক্তির আলোকেও কিছু কিছু মানুষ আছেন যাঁরা আলোকিত হতে চান না। আসলে চান না নয়, পারেন না। কারণ তাঁদের মস্তিষ্কে এক ধরনের ভাইরাস আক্রমণ করেছে – বিশ্বাসের ভাইরাস। এই বিশ্বাসের ভাইরাস যে কতটা ক্ষতিকারক হতে পারে – তার সাম্প্রতিক নমুনা আমরা দেখলাম। কিছু ভাইরাস আক্রান্ত মানুষ অভিজিৎ ও বন্যাকে আক্রমণ করলো। ধারালো চাপাতির আঘাতে তাঁদের ছিন্নভিন্ন করলো। অভিজিৎ রায় তাঁর ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ বইতে লিখে গেছেন যে কীভাবে মানুষের মগজ ধোলাই হয়, কীভাবে মানুষ হয়ে পড়ে বিশ্বাস নামক ভাইরাসের দাস, কীভাবে মানুষ হারিয়ে ফেলে তার সমস্ত মানবিক গুণ। ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ বইটি আমাদের বাংলাভাষার পাঠকদের একটা অবশ্য-পাঠ্য বই।
‘শূন্য থেকে মহাবিশ্ব’ বইটি প্রকাশিত হয়েছে এ বছর। বইটির সহলেখক অধ্যাপক মীজান রহমানকে আমরা হারিয়েছি সম্প্রতি। মহাবিশ্বের উদ্ভব কীভাবে হয়েছে তার এমন চমৎকার প্রাণবন্ত বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ দেয়া একমাত্র অভিজিৎ রায়ের পক্ষেই সম্ভব।
ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে তাঁর ভ্রমণ ও গবেষণামূলক বই ‘ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো এক রবি বিদেশিনীর খোঁজে’ প্রকাশিত হয়েছে এ বছরের বইমেলায়। বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে গবেষণা হচ্ছে শতাধিক বছর ধরে, প্রকাশিত হয়েছে হাজারো গ্রন্থ। কিন্তু অভিজিৎ রায় তাঁর এই বইতে এমন কিছু সন্নিবেশন করেছেন যা আগে কোন রবীন্দ্র-গবেষক আমাদের দিতে পারেননি। বাংলার খ্যাতিমান গবেষক গোলাম মুরশিদ নিজে বলেছেন এই কথা অভিজিৎ রায়ের বইটি সম্পর্কে।
এই বইগুলো ছাড়াও তিনি সম্পাদনা করেছেন দুটো বিশাল বই: ‘স্বতন্ত্র ভাবনা’ এবং ‘বিশ্বাস ও বিজ্ঞান’। বাংলাভাষী মুক্তমনাদের লেখা ছাড়াও ইংরেজিভাষী মুক্তমনাদের লেখার স্বাদ আমাদের দেবার জন্য তিনি অনেক দরকারি লেখা অনুবাদ করেছেন, করিয়ে নিয়েছেন আমাদের দিয়ে। নিজের যোগ্যতায় ক্রমে তিনি হয়ে উঠেছেন বাংলার আধুনিক মননের বাতিঘর। আমরা অনেকেই তাঁকে বাংলার ‘রিচার্ড ডকিন্স’ বলেও মানি।
অভিজিৎ রায় এমন একজন মানুষ যিনি যখন কিছু বলেন – পুরোটা জেনেই বলেন। গবেষণা তাঁর ধমনীতে। বিষয়ের গভীরে ঢুকে যাবার ব্যাপারে তাঁর মতো আর কাউকে তেমন দেখা যায় না। অথচ এই মানুষটার একটুও অহংকার নেই। যে কোন মানুষের প্রতি ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দিতে এই মানুষটার একটুও সময় লাগে না। ব্লগে এই মানুষটার নামে কত যা তা বলেছে ভাইরাস-আক্রান্ত মানুষেরা। কিন্তু অভিজিৎ একটা বারের জন্যও পরিমিতিবোধ হারাননি। একটা শব্দও তাঁর কলম দিয়ে কখনো বের হয়নি যেটা কোন মানুষকে ব্যক্তিগতভাবে আঘাত করতে পারে। জীবন বাঁচানোর জন্য যে ইন্জেকশান দিতে হয়, তাতে কিছুটা ব্যথা লাগে। তার জন্য কেউ কি কোন ডাক্তারকে খুন করে? অভিজিৎ রায় আমাদের মননের ভাইরাস সারানোর ডাক্তার।
৩
অভিজিৎ রায় – শুধু একজন মানুষের নাম নয়, একটি আন্দোলনের নাম – মুক্তমনা আন্দোলন। বাংলাভাষী মুক্তমনাদের প্রাণের শক্তি আজ অভিজিৎ রায়। ঘাতকের ধারালো চাপাতি ভেদ করেছে অভিজিতের মগজ, হত্যা করেছে অভিজিতের শরীর। কিন্তু অভিজিৎ রায় যে আন্দোলনের সূচনা করে গেছেন, বিজ্ঞান ও যুক্তির যে আলো জ্বালিয়ে দিতে পেরেছেন অসংখ্য মানুষের মনে, তাকে হত্যা করার সাধ্য কারো নেই। আমাদের শোক পরিণত হোক আমাদের শক্তিতে। আমাদের লেখনি চলবেই।
মানুষ কে অন্ধকারের কুপকাস্টে রেখে তাদের ধর্ম ব্যবসা কে সামনে নিতে পথের কাটা কে তারা ছাটবেই। এতে ভীত হওয়ার কিছু নাই।
কেন হত্যা করল? সোজা উত্তর, ওরা এভাবে জাতিকে অন্ধকারে রেখে নিজেদের ব্যবসা চালিয়ে যেতে চায়।
”যুগে যুগে আমি আসবো আর যুগে যুগে এরা আমায় শাস্তি দেবে তবে তোমাদের প্রতি আমার অনুরোধ রোইলো যদি অমার সন্তানেরা নৈতিকতার সীমারেখা বিশ্বাস দিয়ে টানে, নিজের থেকে দেবতার উপর বেশি বিশ্বাস আনে” তাহলে দোহাই তোমাদের আমার সন্তানদের যেন একই ভাবে শাস্তি দিও” ।………..সক্রেটিসের
সমাজে যখন দুর্বলদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় তখন সাম্প্রদায়িক ধর্মান্ধ উন্মাদরা যুক্তিবাদী মুক্তমনা মেধাবীদের উপর নৃশংস থাবা বসায়…………।।
কাছে থাকবার সময় এখন
দাদা আপনি মানুষ হিসেবে যা করছেন তার দাম কিছু আমানুষ তাদের অন্ধবিশ্বাসের বসবর্তি হয়ে যে ক্ষর্বিত ও জঘন্যতার পরিচয় দিয়েছে তাতে মানুষ হিসেবে লজ্জিত। তবে আপনার প্রতি আমার হৃদয়ে যে জায়গা তৈরি হয়েছে তাতে আপনি চির অমর আমার স্মৃতি তে আমার আদর্শ আমর হয়ে থাকবেন।
প্রদীপ দেবকে ধন্যবাদ। অভিজিৎ আমার থেকে বেশ ছোট, অথচ আমার মনে হচ্ছে মাথার ওপর ছাতা হারিয়েছি। আমাকে লিখত, দীপেনদা মুক্তমনায় অনেক দিন লেখেন না। লেখা দিন। লেখক তৈরি করা আর তার লেখাকে প্রমোট করার জন্য গুণ লাগে, সবাই সেটা পারে না। এই প্রদীপদার বইগুলোর কথা অভিজিতের মাধ্যমেই জেনেছি। অভিজিতের কাছে আমি এই জন্য ঋণী, আরো অনেক কিছু জন্য ঋণী। এই মুহূর্তে ভাবছি লিখে আর কি হবে। লিখলে মেরে ফেলবে সেই জন্য না, বরং কাপুরুষের দল অস্তিত্বের সব অর্থই ধ্বংস করে দিচ্ছে সেই জন্য। তবু তার মাঝে জানি, ব্যথার তীব্রতা কিছু প্রশমিত হলে, অভিজিতের সৃষ্টিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। এই দুর্দিনে যারা সাহস করে সেই আলোকবর্তিকার নিচে জমায়েত হচ্ছেন তাঁরাই ইতিহাস গড়ছেন, তাঁরা জানেন শেষাবধি কাপুরুষের চাপাতি ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে পড়ে থাকবে।
আলোকিত মানুষ অভিজিৎ চারিদিকে যে আলো ছড়িয়ে গেছেন সেই আলোতে আলোকিত হোক এই পৃথিবীর সকল অন্ধকাচ্ছন্ন (বদ্ধবুদ্ধির) মানুষ ! অভিজিতের লেখা সবগুলি বইগুলি সবার ঘরে ঘরে সমাদৃত হোক – সকলের পড়ার সুযোগ হোক, আমার এই প্রার্থনা !
বেঁচে থাকবে সবার অন্তরে।
:candle:
অভি নেই একথা মেনে নিতে পারি না, মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।
আরজ আলী মাতুব্বর, অভিজিৎ রায়, রাজীব হায়দার- এরা কখনো মরেন না। এরা ছিলেন, আছেন, ভবিষ্যতেও আসবেন।
বলতেছেন অভিজিতের মৃত্যূ নেই, আজকে টিভিতে দেখলাম অভিজিতের লাশ ঢাকা মেডিকেলে দান করা হয়েছে। অভিজিত যদি মারা না যায় লাশ হলো কিভাবে? র্বুঝলাম না। আমার কাছে সবকিছু এলামেলো মনে হচ্ছে। গত পরশু টিভিতে খবর শুনলাম, অভিজিত রায় টিএসসির সামনের ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন। খবরটা কি তাহলে ভোয়া? নাকি এই অভিজিত মুক্তমনার প্রতিষ্ঠাতা অভিজিত রায় না, অন্য কোন অভিজিত? একটু যদি বুঝাইয়া বলতেন। একদিকে অভিজিতের হত্যাকারীকে খোঁজা হচ্ছে আবার বলছেন অভিজিতের মৃত্যূ নেই। তাহলে তার হত্যাকারীকে খোঁজা হচ্ছে কেন? তাকে হত্যা করার জন্য হত্যা মামলা হয়েছে তাও তো শুলনাম। ব্যাপারটা ঘোলাটে মনে হচ্ছে।
@lafifa, প্রশ্ন টি কি কিছু ইঙ্গিত করছে? যদি না বুঝে থাকেন তবে উত্তর “অভিজিৎ রায়ের আদর্শের মৃত্যু হয় নাই, লক্ষ লক্ষ মুক্ত মনা মানুষের মাঝে তা’ বেচে থাকবে এবং কোটি কোটি মানুষের মাঝে প্রসারিত হ’বে। ব্যক্তি অভিজিৎ রায় কে হত্যা করা হয়েছে”। আর যদি বুঝেও বলে থাকেন তবে নিজেকে ধিক্কার দিন। ভাবুন ত’ – কেউ আপনার পছন্দের বাইরে কথা বললে, লিখলে আপনি তাকে মেরে ফেলবেন, পক্ষান্তরে আপনিওত তা’র বিস্বাসের বাইরে।
যে সমস্ত মানুষবেশী পশুরা বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়কে নির্মমভাবে হত্যা করেছে, আমারতো মনে হয় না তারা কখনও উনার একটি লেখাও পড়ে দেখেননি। যদি উনার একটা লেখাও ওই নরপশুরা পড়ে থাকত তারা বুঝতে পারত অভিজিৎ রায় শুধু একজন মুক্তমনাও না, ছিলেন একজন প্রকৃ্ত মানবতাবাদী। যখনই প্রয়োজন পরত, অভিজিৎ দাদার হাত বারবার শাণিত হত লেখার ঝলকে।
হায়রে নরপশুর দল, তোরা বুঝলি না, তোরা কাকে মেরে ফেললি !!
শ্রদ্ধেয় অভিজিৎ দাদা, তুমি মরনি, তুমি কখনো মরতে পার না। তুমি হাজার বছর বেঁচে থাকবে তোমার সৃষ্টির মাঝে। তুমি অমর, তুমি চির শ্বাশ্বত, চির ভাষ্কর – আমাদের মাঝে।
ভারতে বইগুলো কেমন ভাবে কিনতে পারি কেউ যদি একটু জানান।
অভিজিৎ রায়’দের মৃত্যু নেই। উনারা চির শ্বাশ্বত, চির অপরাজিত।
মীরা প্রকাশনি থেকে আপনার বইগুলো কেনার জন্য আমাকে উনি সেদিন বলছিলেন প্রদীব দেব। খুব তাড়াতাড়ি কিনে ফেলবো আশা করছি।
ছোটবেলায় ভাব সম্প্রসারণ পড়েছিলাম “অসির চেয়ে মসি অনেক বেশি শক্তিশালী”। কথাটি কে লিখেছেন আমি জানিনা। ছোটবেলায় মনে হতো কি দারুণ কথা। এখন বুঝি এক ভয়ানক ডাহা মিথ্যা কথা এটি – অন্তত বাংলাদেশের জন্য।
অদ্ভুত এক জনপদ এই বাংলা। অচিরেই পৃথিবীর চরম জঘন্য স্থানগুলোর মাঝে জায়গা করে নিতে চলেছে এই জঘন্য জনপদ। এখানে মানুষজন উগ্র বিশ্বাসী, রক্তে তাদের খেলা করে তলোয়ারের ঝনঝনানি, মাংসে তাদের প্রোথিত জিহাদি জৌলুস। এখানে কেউ মুক্ত নয়, বাঁধা এক অদৃশ্য শেকলে। এখানে আপনাকে কথা বলতে হবে অন্যদের মতো করে; হাসতে হবে, কাঁদতে হবে, গাইতে হবে, লিখতে হবে অন্যদের মতো করে। এখানে অসি, মসির চেয়ে অনেক অনেক বেশি শক্তিশালী। এখানে যারা কলম ধরেছে, তাঁদের বুকে পড়ছে চাপাতির আঘাত, তাঁদের মুখ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে চিরদিনের জন্য। এখানে মসির জবাব দেয়া হয় অসির দ্বারা।
হুমায়ুন আজাদ একদা এভাবে এই বাংলায় চাপাতির আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে মরেছিলেন ধুঁকে ধঁকে। মরেছেন আরো অনেকেই। তবুও কেন তুমি সাবধান হলেনা অভিজিৎ? তোমাকে তো হুমকি দেয়া হয়েছিল টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলার। তবুও কেন তুমি বন্ধ করনি মসি? তবুও কেন তুমি সেই সুদূর আমেরিকা থেকে এই বাংলায় এসেছিলে, কেন এসেছিলে বইমেলায়, তুমি কি কিছুই শেখনি তোমার পূর্বসূরিদের পরিণতি দেখে? তাইতো তারা তোমাকেও চাপাতি দিয়ে বিক্ষত করেছে। তুমি জানতে না এই বাংলা এই মাটি মুক্তমনাদের জন্য নয়, এই বাংলা এই মাটি তাদের জন্য যারা কথা বলতে পারে অন্যদের মতো করে, যারা অন্যের বুদ্ধি চর্চা করে দ্বিধাহীন চিত্তে! তুমি ভুল করেছ অভিজিৎ রায়, ভয়ানক ভুল!
(অভিজিৎ রায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক প্রথম আলোর কমেন্ট ও ফেবুতে যা লিখেছিলাম, তাই এখানে দিলাম আবারো। অভিজৎ রায়ের প্রতি রইল শ্রদ্ধা। তিনি বেঁচে থাকবেন আরো অনেক অনেক দিন। এদেশে জন্ম হবে হাজারো অভিজিতের।)