অভিজিৎ নামের মানুষটির মাথায় নাঙ্গা তলোয়ারের কোপ মেরে ফেলে রেখেছে মগজ ছড়িয়ে ফুটপাতে; মাথা ও ঘাড়ে চাপাতি আঘাতের গভীর ক্ষতে রক্তস্নাত স্ত্রী বন্যা আঙুল হারিয়ে সাহায্যের আবেদন জানাচ্ছে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষদের, আর দু পেয়ে জন্তুমানব দু পকেটে হাত ঢুকিয়ে মজা দেখছে নির্বিকার চিত্তে; এই আমাদের আজকের বাংলাদেশ। আহা ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি, সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি’। একুশে পদক প্রাপ্ত বাবার ছেলের জিহাদী খুনিরা সগর্বে হেঁটে চলে যাচ্ছে পুলিশের নাকের ডগার ওপর দিয়ে। আহা, এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি।

অনেক মানুষের শুভবুদ্ধি আর স্বাভাবিক ভাবনাগুলো এখন হয়ে গেছে অশুভ অস্বাভাবিক। অথচ খেয়াল নেই কারো। হিজাবও করে আবার আঁটসাঁট কাপড় পরে লিপস্টিকও মাখে একযোগে। নতুন শিশুদের নাম রাখে আরবীতে আবার একুশে ফেবুয়ারি পালন তাদের করা চাই’ই চাই। গোঁফহীন দাড়ি রেখে দমে দমে বলে আলহামদুলিল্লাহ অথচ বৈশাখী মেলায় না গেলেই নয়। অভিজিৎ বা বন্যাদের মত কেউ তা নিয়ে উচিৎ কথা বলতে এলে কথায় উত্তর না দিয়ে তলোয়ার দিয়ে খুন করে তাদের। জবাই করে দেয় এই সব আলোকিত মানুষদের; তারপর পকেটে হাত ঢুকিয়ে মজা দেখে। আ’হা ‘সকল দেশের সেরা সে’যে আমার জন্মভূমি’।

অভি’কে যারা খুন করলো তাদের কি কিছু হবে? সাধারণ মানুষ কি অর্থপূর্ণ প্রতিবাদ করবে? বিচার হবে? এসব কিছুই হবে বলে তো মনে হয় না। আর হলেই বা কি? জন্তুমানবদের হাত থেকে অভিজিৎ’কে তো রক্ষা করা গেল না। অভিজিৎ’রা প্রতিদিন জন্মায় না। দারুন মেধাবী মুক্তমনা ড: অভিজিৎ রায় কে বাংলাদেশে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে একজন ব্লগার হিসেবে। অন্যদিকে পৃথিবীময় পালন হচ্ছে শোক। হচ্ছে হত্যাকান্ডের নিন্দা। হেফাজতি তান্ডব আর সেই সময়কার সুস্থ ভাবনার দেউলিয়াত্ব ভুলে যাবার নয়।

আলহামদুলিল্লাহ আর হিজাবীর দল কি জানে পৃথিবীতে আজ মুসলমান নামের অবস্থান কোথায়? কত নিচে আর কতখানি ঘৃণিত? মুক্তবিশ্ব আজ মুসলমানদের নাম শুনলে আঁতকে ওঠে শঙ্কায়; মুখ ফিরিয়ে নেই প্রচন্ড ঘৃণায়। শিয়া সুন্নি আল শাবাব আইসিস আল কায়েদা এত জটিলতা এত বিভাজন বোঝেনা বিশ্ব; আজ শুধু বোঝে মুসলমানি আতঙ্ক।

খুব দ্রুত বদলাচ্ছে বাংলাদেশ। এমন মৌলবাদী ছিল না এই সুন্দর দেশটি। অথচ হয়তো কোন এক জুম্মার পর সোনার এই দেশটা রুপান্তরিত হয়ে যাবে উৎকট ভয়ঙ্কর শরিয়ার মৌলবাদী দেশে।

অভিজিৎ হত্যাকান্ড নিয়ে ক’জন মুক্তমনের মানুষ ছাড়া আর কারো কি কোন মাথাব্যথা আছে? অভি’র আশঙ্কা ছিল ধর্ম ভাইরাসের মহামারিতে আক্রান্ত হচ্ছে দেশটা। সেই আশঙ্কা নিজেই প্রমান করে গেল সে নিজেকে উৎসর্গ করে।

অভিজিৎ হত্যা, আমাদেরে বেদনায় করেছে কালো।

ফেরুয়ারির দলে যাওয়া ফুলগুলোর কষ্টের কালো,
লাল সবুজ আর বৈশাখের প্রচন্ড মেঘ কালো,
সর্ষে ভুতের চাপাতি কোপের অতর্কিত কালো,
রাষ্ট্র কুকুর ও কুকুরিগুলোর সার্কাস ডিগবাজি কালো,
আসমানী তলোয়ারের তলায়, অপার্থিব এক কালো।

কারো ঘুম ভাঙুক বা না ভাঙুক, আলোকিত পৃথিবীর কথা আমরা বলেই যাবো। কেউ থামাতে পারবে না আমাদের। একটা অভি মারলে সে সূর্য্যতারার ধুলো হয়ে, অগণিত অভিজিৎ হয়ে আমাদের মাঝে বাঁচবে অনন্তকাল। অভিজিৎ থেকে আলো নিয়ে আমাদের শোক চক্রবৃদ্ধি হারে শক্তিতে রুপান্তরিত হতেই থাকবে অবিরাম। বন্ধুরা, শক্ত হাতে ধরে থাকুন আলোর মশাল।