আপনি কি মৃত্যুহীন অনন্ত জীবন চান? যে জীবনে দুঃখ নেই, সমস্যা নেই, রোগ-ব্যাধি নেই; আছে শুধু অনন্ত সুখ। স্বর্গীয় সে সুখের জীবনে আপনি বসবাস করবেন স্বপ্নের মতো সুন্দর সাজানো ফুলের বাগানে। যেখানে আপনাকে ঘিরে থাকবে আপনার প্রিয় বা পছন্দের সব মানুষ আর বন্ধুসুলভ সব পশু-পাখিরা, যেগুলোকে আপনি এই পৃথিবীতে হিংস্র বলে জানেন। আপনার রূপ, যৌবন আর বয়স ঠিক তেমন থাকবে যেমনটি আপনি চান। আর তা আপনি পাবেন অনন্তকালের জন্য এবং তার বাস্তবায়ন এই পৃথিবীতেই। মহান যিহোবা আমাদেরকে এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং তা মিথ্যা হতে পারে না। – এরকম সুন্দর ও কাল্পনিক আশা দেখিয়ে যদি আপনার দিকে অত্যন্ত বন্ধুসুলভ কোন একজন ব্যাক্তি এগিয়ে আসেন, তার সঙ্গে আপনার হাতে ধরিয়ে দেন ছোট্ট একটি বাইবেল এবং কাল্পনিক সুন্দর ছবি সহ একটি পুস্তক, বুঝবেন তিনি একজন যিহোবার সাক্ষি /যিহোবাস উইটনেস/ সয়েগেনেসে যিহোবাস।

হিংস্র পশু-পাখিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব

ধর্মের নামকরণ:

যিহোবার সাক্ষিদের মতে, ঈশ্বর একজন এবং তারা সুনির্দিষ্ট নাম আছে। যা হচ্ছে ” যিহোবা”। প্রাচীন বাইবেলগুলোতে হিব্রুভাষায় যিহোবার নাম গড বা খোদার আগে ”ইয়া” বা ”যিহা” হিসেবে লেখা ছিল। যা আসলো যিহোবা বা যিহোবার সংক্ষিত রূপ। আর যিহোবার সাক্ষিরা তাদের খোদার নামের এই রহস্যটি উন্মোচন করতে সক্ষম হন যীশুর মৃত্যুর প্রায় ১৮০০ বছর পর।

যিহোবার সাক্ষিদের ধর্মপ্রচার পদ্ধতি:

আপনি তাদের প্রশ্ন করবেন, আমার তো ধর্ম আছে কিংবা আমি ধর্মে বিশ্বাস করি না, তবু কেন আপনি বা আপনারা আমার কাছে ধর্ম প্রচার করতে আসছেন? আপনি সেই প্রশ্ন করেন না কেন তাদের জবাব মুখস্ত, হোক তা যৌক্তিক বা অযৌক্তিক। উত্তরে তারা বলবে,- ”আমরা দেখেছি যে, আপনার ইতিমধ্যেই একটা ধর্ম রয়েছে। তারপরও এমন অনেক মানুষ আছে যারা বাইবেলের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা উপভোগ করে থাকে। অবশ্য, আমাদের থেকে ভিন্ন বিশ্বাস রয়েছে এমন একজন ব্যক্তির নিজস্ব বিশ্বাস ধরে রাখার অধিকারকে আমরা সম্মান করি এবং আমরা অন্যদের ওপর আমাদের বার্তা চাপিয়ে দিই না। ধর্ম সম্বন্ধে আলোচনা করার সময়, আমরা অন্য ব্যক্তির সঙ্গে “মৃদুতা” সহকারে এবং তার প্রতি “ভয় [“সম্ভ্রম,” জুবিলী বাইবেল]” দেখিয়ে তারপর আলোচিত বিষয়ে বাইবেলের পরামর্শ কাজে লাগানোর চেষ্টা করি। (১ পিতর ৩:১৫) আমরা এও জানি যে, কেউ কেউ আমাদের বাইবেলের বয়ে নিয়ে যাওয়া বার্তাকে প্রত্যাখ্যান করবেই। (মথি ১০:১৪) কিন্তু, লোকেদের সঙ্গে কথা না বলা পর্যন্ত আমরা জানি না যে, তারা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবে। আমরা এটাও বুঝতে পারি যে, লোকেদের পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়।” আর এ ব্যাপারে স্বয়ং যীশু আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন।

অন্য ধর্ম সমন্ধে যিহোবার সাক্ষিদের মনোভাব:

তাদের এমন মন ভোলানো কথায় যারা বিশ্বাস করবেন, তারাই ভোগান্তি পড়বেন, তারা আপনারা পিছু ছাড়বেনা। যিহোবার সাক্ষিরা অন্যান্য ধর্মাম্বলীদের মতোই ভাবেন, পৃথিবীতে একটি মাত্র সত্য ধর্ম বিরাজ করে, আর তা হলো,- ”যিহোবার সাক্ষি”। যা তারা যীশুখ্রীষ্টের মৃত্যুর আঠারশ বছর পর উন্মোচন করেন। অথচ ততদিনে যীশু এবং বাইবেলের অনুসারীগণ অন্তত আলাদা আলাদা আনুমানিক ৪০ হাজার খ্রীষ্টান দল ও উপদল আত্মপ্রকাশ করে ফেলেছে। যার প্রত্যেকটি দলই নিজেদেরকে একমাত্র প্রকৃত ও সত্য ধর্ম বলে দাবী করে এবং বাকীদেরকে মিথ্যা বলে উপহাস করে। আপনি চান বা না চান তারা আপনার হাতে জোর করে একটি বাইবেল ও তাদের নিজস্ব কোন প্রকাশনা ধরিয়ে দিবে এবং তা পড়তে উৎসাহ দেবে। নীচে তাদের নিজস্ব বাইবেলটির একটি ছবি দেওয়া হলো।

যিহোবার সাক্ষিদের  মিনি বাইবেল

খ্রীষ্টধর্ম পালন করা এই দলের ধার্মিকরা বিশ্বাস করে তাদের ঈশ্বর সর্বজনীন নয়। অর্থ্যাৎ অন্য ধর্মাবলম্বীরা যাকে আল্লাহ্ ,ঈশ্বর, ভগবান বলছেন, সেই ঈশ্বর তাদের ঈশ্বর নয়। তাদের ঈশ্বর সম্পূর্ণ ভিন্ন কেউ। তাদের মতে, অবশ্যই, যিহোবা হলেন সর্বশক্তিমান ঈশ্বর, এই বিস্ময়কর নিখিলবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা। (প্রকাশিত বাক্য ৪:১১) তা সত্ত্বেও, তারা এত বিনয়ী ভাবে প্রকাশ্যে দাবী করে থাকেন, বাইবেলে কোথাও বলা নেই যে, যিহোবা ঈশ্বর বা যিশু খ্রিস্ট হলেন এই জগতের শাসক। বস্তুতপক্ষে বাইবেলে বলা আছে, যিশু নির্দিষ্টভাবে শয়তানকে “এ জগতের অধিপতি” হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। (যোহন ১২:৩১; ১৪:৩০; ১৬:১১) তাই তারা বিশ্বাস করে যিহোবার সাক্ষি /যিহোবার উইটনেস/ সয়েগেনস যিহোবাস ছাড়া বাকি সব ধর্ম গুলো মানুষদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্য শয়তানের দ্বারা সৃষ্টি, শুধু তাদের ধর্মটিই একমাত্র সত্য ধর্ম।

যিহোবার সাক্ষিরা এও দাবী করেন যে সকল ধর্ম এই পৃথিবীতে ধর্মীয় কারনে যুদ্ধরত, সেগুলো প্রত্যেকটিই মিথ্যা ধর্ম। বাইবেল এমনকি শয়তান দিয়াবলকে “এই যুগের দেব” হিসেবে উল্লেখ করা আছে। (২ করিন্থীয় ৪:৩, ৪) এই বিরোধী বা শয়তান সম্বন্ধে খ্রিস্টান প্রেরিত যোহন লিখেছিলেন: “সমস্ত জগত্‍ সেই পাপাত্মার মধ্যে শুইয়া রহিয়াছে।”—১ যোহন ৫:১৯.)আর সেই পাপাত্মারাই আজ সমগ্র বিশ্বে অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। তারা স্পষ্ট বুঝিয়েই দেন, যেহুতু তারা পৃথিবীতে বিদ্যমান কোন যুদ্ধে ধর্মের কারনে অংশগ্রহণ করেন না বা তাদের ধর্মযু্দ্ধ করার অনুমতি নাই। সুতরাং, তাদের ধর্মটিই একমাত্র সত্য ও শান্তির ধর্ম। যিহোবার সাক্ষিরা খ্রীষ্টধর্মের অন্যান্য গোষ্ঠীর মতো স্বর্গ ও নরকে বিশ্বাস করে না। তাদের গোষ্ঠীর কারো মৃত্যু ঘটলে তারা ক্ষণিকের জন্য ঘুমিয়ে পড়ছে ঠিকই, কিন্তু তারা নিশ্চিত হর্মাগিদোনের পর তারা জেগে উঠবে। তাদের শরীর থেকে জ্বরা, অসুস্থতা নির্মূল হবে। এবং তারা তরুণ হয়ে এই পৃথিবীতে সুখে শান্তিতে বসবাস করবে। আর যারা তাদের ধর্মে বিশ্বাস আনেনি তারা হর্মাগিদোনের পরও ঘুমেয়ে থাকবে। কোনদিন জেগে উঠবে না। তাদেরকে নরকের আগুনেও পোড়ানো হবে না।

যুদ্ধনীতি ও যিহোবার সাক্ষিরা:

আগেই বলেছি যিহোবার সাক্ষিরা যুদ্ধনীতিতে বিশ্বাস করে না। তাদের মতে এই পৃথিবীতে যেসব ধর্মাম্বলীরা ধর্মগত কারনে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে বা রয়েছে সেগুলো প্রত্যেকটি ভুয়া ধর্ম। তাদের মতে, যেকোন সময় পরকাল অর্থাৎ হর্মাগিদোন আসতে পারে, তাই বেশি কাজকর্ম না করে ধর্ম-কর্মে আত্মনিয়োগ করা উচিত। এ প্রসঙ্গে তাদের বাইবেলে উল্লেখিত আছে, একেকটা বছর কেটে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জগত্‍ আরও বেশি বিপদজনক হয়ে উঠছে। যুদ্ধবাজ সেনাবাহিনী, অসত্‍ রাজনীতিবিদ, কপট ধর্মীয় নেতা এবং নির্মম অপরাধীদের দ্বারা এটা ছেয়ে গিয়েছে। পুরো জগত্‍‌কে নতুন করে গঠন করা অসম্ভব। বাইবেল প্রকাশ করে যে, সেই সময় নিকটবর্তী যখন ঈশ্বর হর্মাগিদোনের যুদ্ধে এই দুষ্ট জগত্‍‌কে নির্মূল করবেন। এর জায়গায় এক ধার্মিক নতুন জগত্‍ আসবে।—প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৪-১৬.এই কারনেই বিশেষত জার্মানিতে যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলার দেশের সব পুরুষদের যুদ্ধে যোগ দেবার জন্য বাধ্য করে, তখন যিহোবার সাক্ষিরা তাতে অংশগ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়। আর এই কারনেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে যিহোবার সাক্ষি ধর্মাবলম্বী বিশেষ করে প্রাপ্ত-বয়স্ক পুরুষদেরকে কর্নসানট্রেশন ক্যাম্পে অনেক অমানবিক অত্যাচার ও নির্যাতনের স্বীকার হতে হয়। অনেক যিহোবার সাক্ষি ধর্মাবলম্বীরা সে সময় জার্মানি ও অষ্ট্রিয়া ছেড়ে পালিয়ে যায়। যিহোবার সাক্ষিদের মতে, হিটলারের চেষ্টা ছিল এই ধর্মাম্বলীর লোকেদের ধ্বংস করা। যিহোবার সাক্ষিরা নীচের ভিডিও লিংকটিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে তাদের অবস্থানকে পরিষ্কার করার চেষ্টা করেছে।

খ্রীস্টীয় অন্যান্য গোষ্ঠীর সঙ্গে যিহোবার সাক্ষিদের মত- পার্থক্য লক্ষনীয় :

১) অবশ্যই তারা বিশ্বাস করে যীশু ঈশ্বরের পুত্র। তবে তারা ২৫শে ডিসেম্বরে বড়দিন পালন করে না। যিহোবার সাক্ষি (Jehovah’s Witnesses) তাদের মতে, যীশুর জন্ম দিবস ২৫শে ডিসেম্বর হতেই পারে না। যিহোবার সাক্ষিরা বলে, যীশুর জন্ম হয়েছিল সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরের কোন এক সময়ে। আর মৃত্যু এপ্রিলের দিকে। তারা ক্যাথিলিক ও প্রোটেষ্টাইনদের মতো ২৫শে ডিসেম্বর বড়দিন পালন করে না। বড়দিন বলে, যিহোবার সাক্ষিদের কাছে কোন ধর্মীয় উৎসব বা প্রথা নেই। তারা প্রতি বছরে একবার, বিশ্বব্যাপী ২০০টিরও বেশি দেশে হাজার হাজার প্রার্থনালয়ে যিশুর মৃত্যু দিবস উদ্‌যাপন করে থাকে। যেমন ২০১৪ সালে এপ্রিলের ১৪ তারিখে তারা (যিহোবার সাক্ষিরা) যীশু খ্রীষ্টের মৃত্যু দিবস পালন করেছে। যিহোবার সাক্ষিদের মতে, ”আমরা তা করি কারণ তিনি তাঁর শিষ্যদের আদেশ দিয়েছিলেন: “ইহা আমার স্মরণার্থে করিও।” (লূক ২২:১৯)

২) যিহোবার সাক্ষিরা ইষ্টারেও বিশ্বাস করে না। এ সমন্ধে তাদের ব্যাখ্যা হুবুহু তাদের ওয়বে সাইট থেকে তুলে ধরা হলো:
– ইস্টার পালন করা বাইবেলভিত্তিক নয়।
-যিশু আমাদের তাঁর পুনরুত্থান নয়, বরং তাঁর মৃত্যু স্মরণ করার আদেশ দিয়েছিলেন। আমরা বাইবেলের চান্দ্রিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী প্রতি বছর তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী পালন করে থাকি।—লূক ২২:১৯, ২০.
-আমরা বিশ্বাস করি, ইস্টারের বিভিন্ন প্রথার উৎস হচ্ছে প্রাচীন প্রজনন সংক্রান্ত আচারঅনুষ্ঠান আর এই কারণে ইস্টার ঈশ্বরের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। ঈশ্বর “স্বগৌরব রক্ষণে উদ্‌যোগী” অর্থাৎ তিনি চান যেন আমরা তাঁকে একাগ্র ভক্তি প্রদান করি। আর তিনি অনুমোদন করেন না এমন প্রথাগুলো যখন উপাসনায় যুক্ত করা হয়, তখন সেই উপাসনায় তিনি সন্তুষ্ট হন না।—যাত্রাপুস্তক ২০:৫; ১ রাজাবলি ১৮:২১.
-আমরা বিশ্বাস করি, ইস্টার পালন না করার ব্যাপারে আমাদের সিদ্ধান্ত পুরোপুরি বাইবেলভিত্তিক। আর বাইবেল আমাদেরকে মানুষের পরম্পরাগত রীতিনীতি অনুসরণ করার পরিবর্তে ব্যাবহারিক প্রজ্ঞা বা “সূক্ষ্ম বুদ্ধি ও পরিণামদর্শিতা” ব্যবহার করতে উৎসাহিত করে। (হিতোপদেশ ৩:২১; মথি ১৫:৩)
-এ ছাড়া, ইস্টারের বিষয়ে আমাদের বিশ্বাস সম্বন্ধে প্রশ্ন করা হলে, উত্তর দেওয়ার সময়, একজন ব্যক্তি কী করবেন সেই ব্যাপারে তার সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারকে আমরা সম্মান করি।—১ পিতর ৩:১৫.

৩) যিহোবার সাক্ষিরা উপাসনায় ক্রুশ ব্যবহার করে না এবং তার বিরোধিতা করেন। এ সমন্ধে তাদের ব্যাখ্যা হলো,- বাইবেল বলে, যিশু ক্রুশে মারা যাননি। এর পরিবর্তে, তিনি সাধারণ একটা কাষ্ঠদণ্ডে মারা গিয়েছিলেন। সেইসঙ্গে বাইবেল খ্রিস্টানদের জোরালোভাবে সাবধান করে তারা বলে দেয়, যেন তারা “প্রতিমাপূজা হইতে পলায়ন করে” আর এর অর্থ হল, আমরা যেন উপাসনায় ক্রুশ ব্যবহার না করি।—১ করিন্থীয় ১০:১৪; ১ যোহন ৫:২১.
-তাদের মতে আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, যিশু বলেছিলেন, “তোমরা যদি আপনাদের মধ্যে পরস্পর প্রেম রাখ, তবে তাহাতেই সকলে জানিবে যে, তোমরা আমার শিষ্য।” (যোহন ১৩:৩৪, ৩৫) এভাবে যিশু দেখিয়েছিলেন, ক্রুশ বা অন্য কোনো মূর্তি নয় বরং আত্মত্যাগমূলক প্রেমের মাধ্যমে তাঁর প্রকৃত অনুসারীদের শনাক্ত করা যাবে।

ইতিহাস:

বর্তমানে সমগ্র পৃথিবীতে খ্রীষ্টধর্ম পালনকারীরা মোট ৪৩ হাজার দলে বিভক্ত। তাদের মধ্যে একটি ছোট দল হলো ”যিহোবার সাক্ষি”। যিহোবার সাক্ষীদের তথ্যানুযায়ী পুরো পৃথিবীতে বর্তমানে মাত্র ৮ মিলিয়ন মানুষ এই ধর্মের অনুসারী। অর্থ্যাৎ বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রতি হাজারে একজন এই ধর্মে বিশ্বাস করে। যিহোবার সাক্ষী/ উইটনেস এক সময় নিজেদের বাইবেল স্টুডেন্ট বলে পরিচয় দিত, কিন্তু পরে বাইবেল পরিবর্তনের মত করে নিজেদের ধর্মের নামটিও পরিবর্তন করেন এই ধর্মের কেন্দ্রীয় নেতারা। Charles Taze Russell/ চার্লিস টেজ রাসেল নামের একজন ধর্মগুরুর মাধ্যমে ১৮৮০ সালে এই ধর্মীয় সংগঠনটি আত্মপ্রকাশ করে। প্রসঙ্গত যিহোবার সাক্ষিদের আধুনিক সময়ের সংগঠন ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে শুরু হয়েছিলো। সেই সময়ে, বাইবেল ছাত্রদের (Bible students) একটা ছোটো ধর্মীয় দল, যারা যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ার পিটস্‌বার্গের কাছাকাছি বাস করতো; তারা বাইবেল নিয়ে সুপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন স্থানে বাইবেলের বিশ্লেষণ করতে শুরু করেছিলো। তারা ক্যাথলিক ও প্রোটেস্টাইন গির্জার দেওয়া শিক্ষা ও বিভিন্ন মতবাদ এবং সেই সঙ্গে বাইবেল প্রকৃতপক্ষে যা শিক্ষা দেয়, সেগুলোর তুলনা করেছিলো এবং নিজেদের মতো করে খ্রীষ্টধর্মের প্রচারণা শুরু করছিলো। যিহোবার সাক্ষীরা দাবী করেন- ক্যাথলিক ও প্রোটেস্টাইনরা যেভাবে খ্রীষ্টধর্মকে প্রচার করছে তা সঠিক প্রক্রিয়া নয়। তারা যা যা শিখেছিলো এবং প্রচার করছিলো, সেগুলো বিভিন্ন বই, খবরের কাগজ এবং একটি পত্রিকায় প্রকাশ করতে শুরু করেছিলো। যার নাম তারা দিয়েছিল,- ”প্রহরীদুর্গ/ ওয়াচটাওয়ার”—তাদের মূল কথা হলো, যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করা। খুবই উল্লেখযোগ্য তথ্য হলো, যিহোবার সাক্ষি ধর্মে বিশ্বাসীরা প্রয়োজনে আপনার মাতৃভাষাকে আয়ত্ত্ব করে, আপনার কাছে ধর্ম প্রচার করতে আসবে।

প্রিয় পাঠক যদি আপনাদের সময় হয়, তাহলে তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটটি ঘুরে এসে দেখবেন, তারা ৭১৪টি ভাষায় প্রহরীদূর্গ ও বাইবেল প্রকাশ করে থাকে। মজার হলেও সত্য যে, যিহোবার সাক্ষীরা বাঙলা ভাষার পাশাপাশি বাঙলাদেশের বিভিন্ন আন্চ্ঞলিক ভাষায় তাদের বাইবেল ও ওয়াচ টাওয়ার ছাঁপিয়ে থাকে। এমনকি বাঙলাদেশের গারো ভাষায়ও তাদের কার্যক্রম রয়েছে। যিহোবার সাক্ষিদের নিজস্ব মিশনারী কার্যক্রম আছে যেখান থেকে একদল ধর্ম প্রচারক নামমাত্র পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কাজ করে থাকে। তারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে বের হয় এবং অধিকাংশ লোকই সেই দেশের ভাষা শিখে তিন বছরের জন্য সেই দেশে অবস্থান করে থাকে। এদের জীবনের মূল উদ্দেশ্যই হলো ধর্মপ্রচার। উন্নত বিশ্বে বেশিরভাগ যিহোবার সাক্ষিরা কর্মজীবন বলতে শুধু ধর্মপ্রচারকেই প্রাধান্য দেয় আর বেচেঁ থাকার জন্য যে কাজ তারা করে থাকে তা গৌণ। ধর্মপ্রচার করতে গিয়ে তারা বেকারত্বকে মেনে নিতেও ভয় পায় না।

ধর্মপ্রচারের ধরন:

যিহোবার সাক্ষিদের প্রথম ও প্রধান গুণাবলী হলো এরা খুবই বন্ধুসুলভ ও পরোপকারী আচরণ সম্পন্ন মানুষ। প্রধানত ইউরেোপ ও আমেরিকাতে যিহোবার সাক্ষিদের সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে বেশি। যখন আশেপাশের কেউ আপনার সঙ্গে মিশছে না, ঠিক তখন আপনার দিকে হাসি মুখে বন্ধুত্বের হাত বাড়াতে এগিয়ে আসে যিহোবার সাক্ষিরা। আপনার একাকীত্বে এরা বন্ধু হয়ে আসে আর শুরু করে তাদের মূল কাজ, আর তা হলো ধর্মপ্রচার। নিজেদের দেশে ধর্ম অনেকাংশে বিলুপ্ত অথবা ধর্মের প্রতি মানুষের তেমন আগ্রহ নেই বলে ইউরোপ, আমেরিকার সাধারন মানুষেরা এদের এড়িয়ে চলে, তাই বিদেশীদেরকে বিশেষ করে স্মরণার্থীদের এরা ধর্মপ্রচারের জন্য বেছে নেয়। এ ধর্মের প্রত্যেক বিশ্বাসীর ওপর সাংগঠনিকভাবে ধর্মপ্রচারের দায়িত্ব বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যিহোবার সাক্ষিদের ধর্ম প্রচারের একটি মাসিক রুটিন এবং কে কত বেশি ধর্মপ্রচার করলো তার একটি নিজস্ব ক্ষতিয়ান থাকে। ধর্মপ্রচার করতে করতে এক সময় তারা দলের অগ্রজের তালিকায় নাম লেখায়। তাদের ধর্মপ্রচারের কাজে তারা নিজেদের অর্থ-সম্পদ ব্যয় করতেও কোনরকম কার্পণ্য করে না। ”লাভজিহাদ” বলে ইংরেজীতে একটি কথা আছে, তাদের ধর্মপ্রচারের বিষয়টি সেরকম। বিনিময়ে তারা পৃথিবীতে যীশুর রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে চায়।

যেসব দেশে এই ধর্মপ্রচার নিষিদ্ধ:

বিশ্বের অনেক দেশে এই ধর্মের প্রচার নিষিদ্ধ। রাশিয়ায় সহ আফ্রিকার এবং এশিয়ার বেশ কিছু ইসলামী রাষ্ট্রে এই ধর্মটির কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এমনকি কিছু কিছু ইসলামিক রাষ্ট্রে এ ধর্ম প্রচারের শাস্তি মৃত্যুদন্ড; যেমন ইরান ও নাইজেরিয়া। কিন্তু ইউরোপ আমেরিকায় ভিন্ন দেশ থেকে আসা, ভিন্ন ধর্মাম্বলী পালন করা অভিবাসীদের কাছে ধর্মপ্রচার করতে সবার আগে যে খ্রীষ্টদলগুলো অগ্রজ তাদের মধ্যে যিহোবার সাক্ষিরা অন্যতম। ক্যাথলিক, প্রোটেষ্টাইনরা সাধারনতএখন আর ঘরে ঘরে গিয়ে ধর্মপ্রচার করে না, তারা তাদের গীর্জা বানিয়ে রেখেছে, মাঝে মাঝে স্টল দাঁড় করিয়ে বিনামূল্যে বাইবেল বা ধর্মীয় প্রকশনা বিতরণ করে শহরের ব্যস্ততম কোন এলাকায়। কিন্তু যিহোবার সাক্ষিরা ঠিক ঘরে ঘরে গিয়ে দরজার কড়া নেড়ে ধর্মপ্রচারের কাজটিই করে। আর এটাই যিহোবার সাক্ষীদের বিরুদ্ধে অন্য ধর্মে বিশ্বাসী মানুষের সবচেয়ে বড় অভিযোগ। এ কারনেই ইউরোপ আমেরিকার অনেক বাড়ীর পোষ্টবক্সের দিকে তাকালেই দেখা যাবে যে তারা বিরক্ত হয়ে তাদের সেখানে একটি স্টিকার জুড়ে দিয়েছেন, যেখানে লেখা ”দয়া করে কোন ধর্মীয় বই দেবেন না”।

পৃথিবীর যে আটাশটি দেশে যিহোবার সাক্ষিদের ধর্মপ্রচার করা নিষেধ, তাদের মধ্যে করে ইসলামিক রাষ্ট্রগুলো অন্যতম। তারপরও যিহোবার সাক্ষিদের ধর্মপ্রচার কার্যক্রম থেকে ধরে রাখা কঠিন ব্যাপার। কারন, এদের ধর্মীয় কর্মকান্ডের মধ্যে প্রত্যেকের ধর্মপ্রচার করা একটি অলিখিত দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। তাই ইরানের মত দেশে যেখানে যিহোবার সাক্ষিদের ধর্ম প্রচার করার সময় ধরা পড়লে মৃত্যুদন্ডের বিধান রয়েছে, সেই দেশেও তারা গোপনে ধর্মপ্রচারের লিপ্ত হয়। তবে একটু বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে। ইরানে যিহোবার সাক্ষিরা সরাসরি ধর্মপ্রচারে না গিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে আর্মেনিয়ান পরিবারদের খুঁজে বের করে। আর সেখানেই ধর্মপ্রচার করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এমনকি রাশিয়া যেখানে যিহোবার সাক্ষিদের ধর্মপ্রচার নিষেধ করা হয়েছে, সেখানেও গোপনে ধর্মপ্রচার করে এই ধর্মাম্বলীরা। যিহোবার সাক্ষিরা খুবই ঐক্যবোধ্য দল। পৃথিবীর কোন কোণায় কতজন যিহোবার সাক্ষিতে বিশ্বাস করে তা তাদের অবগত। যেমন, বাংলাদেশে ২০০ জন এই ধর্মাবলম্বী আছে। সেখানে তাদের দুটো প্রার্থনালয় আছে, একটি ঢাকা আর অন্যটি চট্রগ্রামে। জরিপে জানা যায়, বাংলাদেশে যারা এই ধর্মগ্রহণ করেছে তাদের বেশির ভাগই আদিবাসী। তাই বলে বাঙালি যে নেই তাও কিন্তু বলা যাবে না।

যারা সাধারণত এই ধর্মটি গ্রহণ করে থাকে:

এরপরেও কিছু ইউরোপিয়ানদেরকে দেখা যায় যারা খ্রীষ্টানদের অন্যান্য ধর্মীয় দল থেকে বেরিয়ে এসে এই যিহোবার সাক্ষী ধর্মটি গ্রহণ করে তারা অবশেষে সত্যের সন্ধান পেয়েছেন, তারাই পৃথিবীতে সবচেয়ে সুখী আর সৎ, এবং তাদের জন্য সর্গীয় অনন্তকাল অপেক্ষা করছে বলে দাবী করে। আবার কিছু কিছু সুবিধাবাদী ইসলামিক দেশের নাগরিকেরা আছেন, যারা কোনরকম দেশ থেকে বেরিয়ে ইউরোপ, আমেরিকার উন্নত দেশগুলোতে এসে প্রথমেই তাদের ধর্ম বদল করে এই ধর্মটি গ্রহণ করেন। কারন, এ ধর্মটি গ্রহণ করা সহজ এবং যিহোবার সাক্ষীরা সব সময়ই তাদের ধর্ম গ্রহণের জন্য নতুনদেরকে স্বাদরে আমন্ত্রণ জানান। ইসলামী শরিয়া রাষ্ট্রের অনেক নাগরিক তাদের রাষ্ট্র ত্যাগ করে উন্নত দেশে থাকার সুবিধা লাভের জন্য এই সুযোগটি নেন, তাদের মধ্যে ইরান অন্যতম। কারন, ধর্মান্তরিত হবার পর তারা আর নিজের দেশে ফেরত যেতে পারে না। বলা বাহুল্য, ইরানের মতো ইসলামি শরিয়া রাষ্ট্রগুলোতে মুসলমানদের ধর্মান্তরিত হবার শাস্তি মৃত্যুদন্ড। নিজেদের দল ভারী করতে অন্য ধর্মের লোকজনকে নিজেদের দলে যোগ দেওয়ার সুযোগ করে দেয় যিহোবার সাক্ষীরা। শুধু তাই নয়, তারা এটাও বিশ্বাস করে এভাবেই একদিন পৃথিবীর সকল মানুষ এই ধর্মগ্রহণ করবে। আর এই সুযোগটিই নেয় দরিদ্র ও ধর্মীয় রাষ্ট্রের কিছু কিছু সুবিধাবাদী ধর্মব্যাবসায়ীরা। তবে মজার বিষয় হলো, জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যখনই একজন ধর্মত্যাগী মুসলিম ইউরোপে বা আমেরিকায় এই ধর্মান্তরিত হওয়ার কারন দেখিয়ে, যখন থেকে স্থায়ীভাবে বসবাস করার সুযোগটি পেয়ে যান, তারপরেই তারা ঐ ধর্মীয় দলটির সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করে

এখানে নিজস্ব একটি অভিজ্ঞতার কথা পাঠকদের সঙ্গে ভাগ না করলেই নয়। একবার এক পরিচিত বন্ধুর বাসায় গিয়ে পরিচিত হলাম এক ইরানী ভদ্রমহিলার সঙ্গে। যে কিছুদিন আগেই যিহোবার সাক্ষি ধর্মটি গ্রহণ করেছে। সদ্য পরিচিতা রেবেকা নাম্নী এই ইরানী ভদ্রমহিলা (৫২) সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর তিনি দাবী করলেন গত দুবছর ধরে তিনি সত্যিকারের ঈশ্বরের দেখা পেয়েছেন, তাও যিহোবার সাক্ষি ধর্ম গ্রহণ করার পর। ইরানের থাকতে গত ৫০ বছরে তিনি শুধু ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ করার জন্য জায়নামাজে বসে থাকতেন। এত সুখ তিনি আর তার জীবনে কখনো পাননি। যে সুখ তিনি যিহোবার কাছে প্রার্থনা করে পাচ্ছেন, তা তার জীবনে এই প্রথম অনুভব করছেন। এখানে না বললেই নয় ভদ্রমহিলা ইরান থেকে জার্মানিতে কয়েকদিনের ভিসা নিয়ে ঘুরতে এসেছিলেন। তারপর ধর্ম পরিবর্তনের কথা বলে জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয় চান। ধর্ম পরিবর্তন করতে গিয়ে তার পরিচয় হয় রুডি নামের এক জার্মানের সঙ্গে। ৬৮ বছর বয়স্ক রুডির সঙ্গে রেবেকা বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হন। রুডি নিজেও যিহোবার সাক্ষি ধর্মাবলম্বী। ভদ্রলোক ঘুরে ঘুরে শুধু ধর্মপ্রচার করেন। ধর্মীয় ব্যাখ্যা ছাড়া কথা খুব কম বলেন। তিনি মাঝে মধ্যে রেবেকাকে নিয়ে জার্মানির যেসব স্থানে ফারসি ভাষায় যিহোবার সাক্ষিদের নিয়ে সম্মেলন ও আলোচনা সভা হয় সেখানে ঘুরে বেড়ান আর এই ধর্মটির মহিমা স্ত্রীকে বোঝাবার চেষ্টা করেন। আমি ভদ্রমহিলাকে প্রায় বিশ্বাস করে ফেলেছিলাম। ভাবলাম, কি যেন হয়তো বা তিনি মনে শান্তি পাচ্ছেন। কিন্তু খটকাটা লাগলো তখন, যখন রেবেকা পাশের ঘরে গিয়ে বাইবেল পড়ার অনুমতি চাইলো। আমি ভাবলাম মহিলার সঙ্গে কিছুক্ষণ আলাপ করে জানি তিনি কিভাবে মাত্র দু বছরে ঈশ্বরের সান্নিধ্য পান, যা আমার মতো সাধারন মানুষেরা কোনদিন পায়নি।। তখন তার কামরায় গিয়ে দেখি একান্তে বাইবেল পড়ার কথা বলে ভদ্রমহিলা নাসিকা গর্জন করে নিদ্রা যাচ্ছেন। তার আশেপাশে বাইবেলের ছিটে-ফোটাও নেই। বরং ফারসি ভাষায় গান শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়েছেন রেবেকা। আর স্বামী প্রবরটিও স্ত্রীকে বাইবেল পাঠে বিরক্ত না করে বন্ধুদের সঙ্গে বাইবেল নিয়ে আলোচনায় মেতে উঠলেন। ২ ঘন্টা পর ফিরে এলেন রেবেকা এবং স্বামীকে ভাঙ্গা ভাঙ্গা জার্মান ভাষায় বোঝালেন, এতক্ষণে তিনি সেইদিনের বাইবেলের মাজেজা বুঝতে পেরেছেন। ভদ্রলোক তৃপ্তি ও আনন্দ নিয়ে স্ত্রীর প্রসংশায় মেতে উঠলেন।

যিহোবার সাক্ষিদের জন্য যা নিষিদ্ধ :

যিহোবার সাক্ষিরা যিহোবার রাজ্যে বিশ্বাস করে, তারা মানুষের তৈরী কোন রাষ্ট্রব্যবস্থায় বিশ্বাস করেনা। হাস্যকর বিষয় হচ্ছে, তারা আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার বা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বসবাস করে রাষ্ট্রের সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করলেও, রাষ্ট্রের রাজনৈতিক কর্মকান্ড ও রাষ্ট্রকতৃক ভোট ব্যবস্থায় অংশগ্রহণ করে না। যিহোবার সাক্ষিরা নারী-পুরেষের বিবাহ- বর্হিভূত সম্পর্কের বিরোধী এবং তা তাদের ধর্মে অনেক বড় পাপ বলে বিবেচিত হয়। তাদের ধর্মের কেউ বিবাহ-বর্হিভূত সম্পর্কে লিপ্ত হলে তাকে ধর্মীয় সংগঠন থেকে বহিষ্কার এবং এক ঘরে করা দয়ো হয়। এমনকি তারা সমকামিতাকে ভয়ানক পাপ হিসেবে গণ্য করে। তাদের মতে, সমকামিতা হলো ব্যাভিচার। বিবর্তনবাদের মতো বৈজ্ঞানকি তত্ত্বে বিশ্বাসী বিজ্ঞান -মনষ্কদের তারা বানরের বংশোধর বলে উপহাস করে থাকে। তারা ডারউইন থেকে শুরু রিচার্ড ডকিন্স সবাইকে বোকা এবং মূর্খ বলে আখ্যায়িত করে থাকে। যিহোবার সাক্ষিরা মদ্যপান নিষেধ না করলেও ধুমপান এবং মাদকদ্রব্য গ্রহণ করা নিষেধ করে থাকে। এ ধরনের ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলেও তাকে ধর্ম থেকে নিষেধ করা হয়। যিহোবার সাক্ষিরা যেহুতু যীশুখ্রীষ্টের জন্মদিন পালন করে না, তাই তারা নিজেরাও জন্মদিন পালন করে না। আর কেউ যদি জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানায় বা উপহার দেয় তাও তারা নিষেধ করে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। অন্য ধর্মাবলম্বীদের কেউ জন্মদিন উদ্দযাপন করলে সেখানেও অংশগ্রহণ করে না, বরং নিরুৎসাহিত করে থাকে। যিহোবার সাক্ষিরা কেউ যদি জন্মদিন পালন করে তাকেও ধর্মীয় সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে দেয়।

যিহোবার সাক্ষিদের জন্য রক্ত এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দান নিষিদ্ধ। শুধুমাত্র রক্ত দান নয়, অন্যের রক্ত এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিজের শরীরে গ্রহণ করাও নিষিদ্ধ। এমনকি জরুরী মুহুর্তেও, যখন কেউ মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে তখনও। একজন যিহোবার সাক্ষি অন্য আরেকজন যিহোবার সাক্ষি বিশ্বাসী মানুষকে অর্থ্যাৎ তাদের ধর্মবোন বা ভাইকে রক্ত দেয়ার অধিকার রাখেনা ( যিহোবার সাক্ষিরা এই ধর্মে বিশ্বাসী সকলকে ধর্মীয় ভাইবোন বলে গণ্য করে, এমনকি নিজ সন্তান মায়ের কাছে ধর্মীয় ভাই বা বোন হিসেবে বিবেচিত হয় এই ধর্ম পালন করার কারনে,)। তারা বিশ্বাস করে শরীরে বহমান রক্ত ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ঈশ্বরের দান এবং ঈশ্বর তা ফেরত নেবেন। যিহোবার সাক্ষিরা চিকিৎসা বিজ্ঞানে রক্তের বিকল্প যেসব ঔষধ আবিষ্কৃত হয়েছে তার উপর নির্ভর করে।অন্যের রক্ত গ্রহণের চেয়ে তারা মৃত্যুবরণ করা শ্রেয় মনে করে। নীচের ভিডিও লিংকটি দেখলে দেখা যাবে যিহোবার সাক্ষিরা রক্ত দেয়া ও গ্রহণ না করার ব্যাপারে কত ধরনের যুক্তি দিয়েছে।

তথ্যসুত্র:

১) http://www.jw.org/bn
২) প্রয়াত ব্লগার ইমন জুবায়েররে ব্লগ Jehovah’s Witnesses: খ্রিস্টীয় মূলধারার বিরোধী ক্ষুদ্র এক খ্রিস্টীয় সম্প্রদায়
৩) যিহোবার সাক্ষিদের ইউটিউবে নিজস্ব সম্প্রচার কার্যক্রম
৪) ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
৫) http://en.wikipedia.org/wiki/Jehovah%27s_Witnesses
৬) http://tv.jw.org
৭) http://www.bbc.co.uk/religion/religions/witnesses/

ফারজানা কবীর খান (স্নিগ্ধা)