স্যার, আমার বয়স যখন দশ বছর, তখন কিশোর বাংলার ঈদ সংখ্যায় দীপু নাম্বার টু পড়ে আপনার লেখার ভক্ত হয়ে যাই। এরপর পড়ি কপোট্রনিক সুখ দুঃখ, যা অনেকভাবেই আমাকে বিজ্ঞানে আগ্রহী করে তোলে। পরে আপনার লেখা আরও কত পড়েছি, সব মনেও নেই। আপনি বিদেশে ভাল চাকুরী ছেড়ে দেশে কাজ করতে এসেছেন, আমাদের স্বাধীনতার কথা শুনিয়েছেন, দেশকে ভালবাসার কথা শুনিয়েছেন, সব ধর্মের মানুষের সমান অধিকারের কথা বলেছেন, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা আধুনিক করার চেষ্টা করছেন, এমন আরও কত ভাল কাজ করে চলেছেন। আপনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক/গবেষক; আপনার গুনগত মানের ধারে কাছে না হলেও আমারও একই নেশা ও পেশা। উপরের কারণগুলোর জন্য যদি আপনাকে আদর্শ হিসাবে সামনে রাখি তাহলে তা মোটেই অস্বাভাবিক কিছু হবে না।
আমার দীর্ঘ ভূমিকার জন্য দুঃখিত, কিন্তু এর পরের কথা গুলোর জন্য নিজেকে তৈরি করতে এর প্রয়োজন ছিল। দেশের বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে আপনার সাম্প্রতিক লেখাটি (http://dailyjanakantha.com/index.php?p=details&csl=106195) পড়ে আমি বেশ হতাশ। আপনি সরাসরি না বললেও যা বোঝাতে চেয়েছেন তা হল আমাদের দেশে যেহেতু যথার্থ গণতন্ত্র নেই, তাই নির্বাচনের তেমন উপযোগিতা নেই। আপনি প্রশ্ন রেখেছেন নির্বাচন হলেও সে নির্বাচনে অংশ নেবে কারা? এরপর আপনি উত্তর দিয়েছেন যেহেতু তারেক জিয়া বঙ্গবন্ধুকে অশালীন সমালোচনা করে বক্তব্য দিয়েছে এবং খালেদা জিয়া তা সমর্থন করেছেন তাই বিএনপির রাজনীতির কফিনে পেরেক ঠুকে দেয়া হয়েছে। এর আগে জামায়াতের সাথে সরকার করে তারা এদেশে রাজনীতি করার নৈতিক অধিকার হারিয়েছিল। তারা সম্ভবত আর জনগণের কোন সমবেদনা খুঁজে পাবে না। তারেক জিয়ার বঙ্গবন্ধুর অশালীন সমালোচনা এবং তাতে খালেদা জিয়ার সায় অবশ্যই অন্যায়, কিন্তু এই সরকারের আমলে জিয়াউর রহমানকে যেভাবে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে সেটা কেমন ন্যায়? ইতিহাসে যার যা প্রাপ্য তা তো তাঁকে দিতে হবে। বুঝতে পারছি, বিএনপির সাথে জামাতের সরকার গঠন অনৈতিক ছিল, কিন্তু অতীতে আওয়ামী লীগ যখন জামাতের সাথে যুগপৎ আন্দোলন করেছিল সেটাও কি তাহলে অনৈতিক ছিল? আওয়ামী লীগে যারা রাজাকার আছে তাদের সম্পর্কে কি বলবেন? যদিও কিছুটা অপ্রাসঙ্গিক, তবুও বাকশাল সম্পর্কে আপনার কি মূল্যায়ন তাও জানার কৌতূহল রইল।
আপনার মতে এই দেশের জন্য “এককভাবে” অবদান রেখেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রাণপুরুষ একথা মনে প্রাণে বিশ্বাস করি। আমি তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়ে, ত্যাগী জীবন সম্পর্কে জেনে আপ্লুত হয়েছি। কিন্তু বাংলাদেশ তাঁর একক অবদান, একথা বলে আপনি বাংলাদেশের জনগণ যারা জান-বাজী রেখে পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে লড়েছেন, নিজেদের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন (আমার পরিবারের লোকও আছেন), যারা ভারতে বসে প্রবাসী সরকার চালিয়েছেন (তাজউদ্দীন সাহেব বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য), ভারত সরকার আর এর জনগণ আমাদের যে সাহায্য করে চির-ঋণী করেছেন এর সবকিছুকেই তুচ্ছ করেছেন।
স্যার, আপনি দেশে গণতন্ত্রের সমালোচনা করেছেন, কিন্তু এর বিকল্প কি চাইছেন তা আপনার লেখায় পরিষ্কার না। দেশে কিভাবে নেতা নির্বাচিত হবে এবং তা নির্বাচনের মাধ্যমে হলে জনমতের প্রতিফলন কিভাবে নিশ্চিত করা যাবে তা নিয়েও কিছু বলেন নি। আপনি ধরে নিয়েছেন যে নির্বাচন হলে বিএনপি জনগণের সমবেদনা পাবে না। ঠিক আছে, সেটা হতেই পারে; এর আগের কার্যকালে তারা যে অপকর্মগুলো করেছে আর এখন যে সন্ত্রাস আর নাশকতা করছে তার জন্য জনগণ তাদের সমবেদনা না দেখালে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু জনগণকে সেই কথাটা বলার সুযোগ দিতে হবে; আমার, আপনার কথা জনগণের মুখে পুরে দিলে তো চলবে না। তাহলে বলুন কেন আমরা একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবীতে সোচ্চার হবো না?
একজন নিরপেক্ষ মানুষ একথা স্বীকার করবেন যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর কোনটাই ধোয়া তুলসী পাতা নয়। ক্ষমতার লোভে জানমালের ক্ষয়-ক্ষতি দু’দলই করেছে। দু’দলেই এমন রাজনীতিক আছে যারা অনেক ভয়াবহ অপরাধের সাথে জড়িত। এখন আমরা যদি কেবল মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি বলে এদের অপরাধের প্রতিবাদ না করি, তাহলে প্রকারান্তরে আমরা তাদের সমর্থনই করছি। এই প্রবণতা খুবই বিপদজনক হতে পারে। মুখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলেন অথচ দুর্নীতিবাজ, ক্ষমতার অপ-ব্যবহারকারী, দেশের সম্পদ বিদেশীদের হাতে তুলে দিতে প্রস্তুত এমন লোক আমাদের চারপাশে অনেক রয়েছে। কেবল মুক্তিযুদ্ধকে “ফিল্টার” হিসাবে ব্যবহার করলে এদের অনেকেই পার পেয়ে যাবে। এইসব লোকদের দিয়ে কি আপনার স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব হবে?
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের দেয়া বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছিল। আপনার মনে কি প্রশ্ন জাগে না কেন দলটি তাদের মেয়াদ শেষে নিরপেক্ষ নির্বাচনের মুখোমুখি হতে চায় নি? যদি দলটি বছরের পর বছর সত্যিকার নির্বাচনকে পাশ কাটিয়ে এভাবেই দেশ শাসন করার সুযোগ পায় তাহলে তাদের রাজনীতির গুনগত পরিবর্তন হবে কি? আমরা কি আমাদের রাজনীতির পরিবার-তান্ত্রিক ধারা থেকে বের হতে পারবো?
আমার মনে হয় সময় এসেছে দল আর ব্যক্তির চেয়ে দেশকে বেশী গুরুত্ব দেবার। আর একটা দেশের ভিত্তিমূল হচ্ছে সেই দেশের জনগণ, তাদের ঘিরেই দেশের সব কর্মকাণ্ড। সেই জনগণ যদি নিজেদের পছন্দ মতো নেতা নির্বাচন করতে না পারে, সংসদে নিজেদের পছন্দের প্রতিনিধি না পাঠাতে পারে, তাহলে কেন আমাদের তা মুখ বুজে মেনে নিতে হবে বলতে পারেন? আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্যই আমার পূর্ব-পুরুষেরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন, কোন বিশেষ দল বা একনায়কতন্ত্রের সেবা বা ব্যক্তিপূজা করার জন্য নয়।
আপনার এই কথাটি দিয়ে আপনি আসলে কি বুঝাতে চেয়েছেন? আপনি কি বিএনপি-এর পক্ষ নিয়ে এই কথাটি বলেছেন নাকি একজন সাধারণ বাংলাদেশী হিসেবে নিজের অধিকারের কথা বলেছেন?
আমার মনে হচ্ছে আপনি এই কথাটি দিয়ে এক পক্ষকে সমর্থন করছেন। যদি তাই হয় তবে আমি বলবো আপনি সম্পূর্ন নিরপেক্ষ হতে পারেননি। আর যদি এটি দিয়ে একজন সাধারণ বাংলাদেশীর অধিকারের কথা বলে থাকেন তবে বলবো সাধারণ মানুষ নির্বাচন চাইছে নাকি রাজনৈতিক অশান্তি চাইছে? সাধারণ মানুষ শান্তিতে থাকতে চায়। আমার মনে হয় না বর্তমান সরকার গঠনের এতো দিন পরে কোন সাধারন মানুষ আবার করে নির্বাচন চাইবে। সাধারন মানুষ রাজনৈতিক অরাজগতা চায় না হোন সেটা আওয়ামীলীগ কর্তৃক বা বিএনপি কর্তৃক।
নির্বাচন হয়ে গেছে অনেক আগে, দেশও চলছে বরাবরের মতো এবং দেশের সাধারণ জনগনও কোন রকমে শান্তিতে দিন যাপন করে চলেছে। ঠিক সেই সময়ে দেশের পরিস্থিতিকে নরক বানিয়ে ক্ষমতায় যাবার চেষ্টাকে সাধারণ জনগন কোন ক্রমেই সমর্থন দেবে না। এমনতো নয় যে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দেশে স্বর্গ নেমে আসবে। সাধারণ জনগন এখন যেমন আছে, তখনও তেমনই থাকবে। সাধারণ জনগন এই মাঝ সময়ে এসে নতুন করে বিএনপির তৈরী করা সন্ত্রাসীপনা মোটেই পছন্দ করছে না।
আর তাই আপনার বলা এই কথাটি কোন সাধারণ মানুষের নয় বলেই ধরে নেয়া যায়।
তাহলে আপনি কি বিএনপি কে সমর্থন দিয়ে কথা বলছেন?
যদি সেটাই হয় তবে আপনার কাছে অনুরোধ একবার ভাবুনতো সাধারণ মানুষ হত্যা করাটা কোন ধরণের রাজনীতি? ওরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য রাজনীতি করবে কিন্তু সেজন্য সাধারণ মানুষকে কেন মরতে হবে?
যখন আওয়ামীলীগ ৫ জানুয়ারী নির্বাচন করে (আসলে অপনির্বাচন করে) সরকার গঠন করলো তখন কিন্তু বিএনপি মাঠে নেমে এর প্রতিবাদ করতে পারেনি। আর জনগনও তাদের প্রতিবাদ দেখিয়ে বিএনপির সাথে একাত্বতা দেখায়নি। সে সময়ে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি জামাত জোট কেন এতদিন পরে দেশে অশান্তি সৃষ্টি করছে? সাধারণ মানুষ কি এই অশান্তি, হত্যা, জ্বালাও পোড়াও এগুলো পছ্ন্দ করছে, নাকি চাইছে?
৫ জানুয়ারী নির্বাচনের সময় কিছুই করতে পারলো না আর এখন এসে দেশে অশান্তি সৃষ্টি করে সাধারণ মানুষ হত্যা করছে আর মুখে বলছে গনতন্ত্র পুনরুদ্ধার করছে এটা কেমন ধরনের ভন্ডামী? জনগনকে হত্যা করে কেমন গনতন্ত্র রক্ষা করা যাবে?
৫ জানুয়ারী নির্বাচনে ভেবেছিলাম বিএনপি একটা শক্ত প্রতিবাদের আন্দোলন করবে এবং জনগনও তাতে সমর্থন দিয়ে আওয়ামীলীগের ক্ষমতায় যাবার চক্রান্ত নস্বাত করে দিবে। কিন্তু বিস্ময়ের সাথে লক্ষ করেছি বিএনপি কিছুই করতে পারেনি। এমনকি তারা জনগনের কোন সমর্থনও পায়নি।
এর কারণ কিন্তু তাদের জ্বালাও পোড়াও করে সাধারণ জনগন হত্যা।
বিএনপি জামাতকে সঙ্গে নিয়ে যে পদক্ষেপ গুলো নিয়েছিল তাতেও কিন্তু সাধারণ মানুষের সমর্থন ছিল না। যে সমর্থনটা ২০০৮ এর নির্বাচনে আওয়ামীলীগ পেয়েছিল।
বিএনপি জোট ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনে কিছুই করতে পারলো না কিন্তু দেশের মানুষ যখন কোন রকমে শান্তিতে দিন কাটাচ্ছিল ঠিক সেই সময়ে আবারও অশান্তির রাজনীতির ঘৃন্য কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
তাতে করে কি তারা ক্ষমতায় যেতে পারবে? জাফর ইকবাল স্যারতো ঠিক কথাই বলেছে, বিএনপির এমন অরাজগতার পরেতো সেনাবাহিনে নেমেই যাবে।
আওয়ামীলীগ ক্ষমতা ছাড়বে না এবং ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য যা যা করা দরকার তাই তাই করবে। ক্ষমতার লোভতো বিএনপির মতো আওয়ামী জোটেরও আছে। ওরা কোন ক্রমেই ক্ষমতা ছাড়বে না,
এটা বিএনপি জোটও জানে খুব ভালো করে। মাঝখান থেকে কিছু মানুষ হত্যা করে নিজেদের জনপ্রিয়তা হানী করছে।
এখন নির্বাচন নির্বাচন করা এবং গনতন্ত্র গনতন্ত্র বলে চিৎকার করে সাধারণ মানুষ হত্যা করার মানেটা কি? এটা কোন ধরনের গনতন্ত্র তারা প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে? এই গনতন্ত্র কি সত্যি সত্যি জনগনের তন্ত্র?
সাধারণ মানুষ কিন্তু এসব খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারে।
কোন সচেতন মানুষেরই বিএনপি জোটের এই সন্ত্রাসী কর্মকান্ডগুলোকে সমর্থন দেওয়া উচিৎ নয় বলে আমি মনে করি।
আমার মতে বিএনপির এসব সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বন্ধ করে পরবর্তী নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া উচিৎ। জামাত জোটকে বাদ দিয়ে নতুন করে দলকে শক্ত করা উচিৎ।
আর যদি সত্যিই তারা গনতন্ত্রের অধিকার প্রতিষ্টা করতে চায় তবে সুষ্টভাবে ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বাদ দিয়ে আন্দোলন করুক যেন সাধারণ মানুষের কোন ক্ষতি না নয়। কিন্তু বিএনপির গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা মানেতো সাধারণ মানুষ হত্যা করা। সেটা কারোরই কাম্য হতে পারে না।
একদম সত্যি কথা বলেছেন। কিন্তু সেই প্রতিবাদটা কেমন হওয়া উচিৎ ? নিশ্চয় সাধারণ মানুষ হত্যা করা নয় ! যে দলই ক্ষমতায় আসে সেই দলই বিপদজনক হয়ে উঠে এটা এদেশের রাজনীতির একটা বৈশিষ্ট। কিন্তু সেই বিপদজনক শক্তিকে সরানোর জন্য আরো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠাতো আরো বেশী জঘন্য।
আওয়ামীলীগ জোটের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন আমরা কেউই সমর্থন করি না। কিন্তু সেই নির্বাচন হয়ে গেছে এবং একটা সরকার গঠিত হয়ে দেশ চালাচ্ছে। সেটা যেমনই হোক (বিএনপি জোট ক্ষমতায় গেলে দেশ এমনই চলতো) কিন্তু সাধারণ মানুষ কোন রকমে শান্তিতে বেঁচে ছিল। কিন্তু বিএনপি জোটের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের জন্য দেশের সাধারণ মানুষ এখন সব সময় শঙ্কা নিয়ে দিন পার করছে।
এমন গনতন্ত্র কি কারো কাম্য?
নিশ্চয়ই নয় !
সুষ্ঠ গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য সুষ্ঠ রাজনীতিই প্রয়ো্জন । কোন সন্ত্রাসীর রাজনীতি দিয়ে আর যাই হোক গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না।
এই সাধারণ কথাগুলোই জাফর ইকবাল স্যার বলতে চেয়েছেন; এতে আমি কোন দোষ দেখতে পাচ্ছি না। যদিও তিনি আওয়ামীলীগের বর্তমান সরকারকে সমর্থন করেননি কিন্তু তার এই লেখাতে কোন প্রতিবাদও করেননি (হয়তো সম্পাদক কাটছাট করে লেখাটা ছাপিয়েছে)। তিনিতো তার নিজের মতামত দিতেই পারেন, তাই নয় কি?
এর বিরোদ্ধে আমাদেরকে এক জোট হয়ে প্রতিবাদ করতে হবে । কিন্তু সাধারণ মানুষকে হত্যা করা বা দেশে অরাজগতা বা অশান্তি সৃষ্টি করে নয় ।
আমাদের দেশ দুই দলের দুই পরিবারের পরিবার তন্ত্রের কাছে জিম্মি। আর এটা চলতেই থাকবে যে পর্যন্ত না আমরা সবাই সচেতন হতে পারবো। কিন্তু বিএনপি জোট কি সেই লক্ষের দিকে এগােচ্ছে নাকি তারা পরিবার তন্ত্রেরই ধারক বাহক।
পরিবার তন্ত্র থেকে বেরিয়ে আসতে হলো আওয়ামী বিএনপির অপরাজনীতির চিন্তাধারা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে সবার আগে।
একদম ঠিক কথা বলেছেন। আমাদের এটা মেনে নেওয়া মোটেই উচিত নয়।
আপনার সাথে সম্পূর্ন সহমত।
আর এর জন্য আমাদের সচেতন নাগরিকদের এগিয়ে আসতে হবে । এই দুই দলের অপরাজনীতির উপর ভরসা করে নয় বরং সুষ্ঠ ধারার গনতন্তের চর্চার মাধ্যমে; কোন পরিবার তন্ত্র বা স্বার্থনীতি তন্ত্রের মাধ্যমে নয়।
আর জাফর ইকবাল স্যার এই সুষ্ঠ ধারার গনতন্ত্রের কথাই বলতে চেয়েছেন। তিনি বিএনপি জোটের অপরাজনীতির গনতন্ত্রের বিরোধীতা করেছেন । কিন্তু এটার মানে এই নয় যে তিনি বর্তমান সরকারের গুনগান করেছেন বা সমর্থন করেছেন। নিরব থাকা আর সমর্থন দেওয়ার মাঝে পার্থক্য রয়েছে। আর যে পত্রিকায় তার লেখাটি ছাপানো হয়েছে সেটা সরকারী দলকেই সমর্থন করে থাকে। আর তাই সেখানে তার পূর্ন কথা বা মনোভাব প্রকাশিত হবার সম্ভাবনা কতটুকু সেটাও ভেবে দেখার বিষয়।
@মানবিক মানব,
প্রথমেই ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার এবং এ নিয়ে ভাবার জন্য। লেখাটির সাথে পাঠকদের মন্তব্যের জবাবগুলো পড়লে হয়তো আপনি বুঝতে পারতেন যে আমি বিএনপি-র রাজনীতি বা নেতৃত্বকে সমর্থন করে লেখাটি লিখি নি। ডঃ জাফর ইকবাল আমার প্রিয় ব্যক্তিদের একজন; কিন্তু তার মানে এই না যে তিনি যা বলেন তার সবকিছুতেই আমাকে একমত হতে হবে। তাঁর সাম্প্রতিক কিছু মন্তব্যের সাথে আমি একমত হতে পারিনি বলেই এই লেখাটি পোষ্ট করেছি। সরকার –ঘেঁষা পত্রিকায় লিখেছেন বলেই যে জাফর ইকবাল কে সরকারের মন যুগিয়ে লিখতে হবে বা সম্পাদক কাট-ছাঁট করে লেখার মানে পালটে দেবেন এ-সম্ভাবনা ক্ষীণ বলেই মনে করি।
আমি নিজেকে “পাগল” বা “শিশু” মনে না করলেও বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর বিষয়ে মোটামুটি নিরপেক্ষ। এর মূল কারণ এই যে আমি এদের কাউকেই সমর্থনের যোগ্য বলে মনে করি না। দুটি প্রধান দল বা জোটেই অযোগ্য, দুর্নীতিবাজ আর ক্ষমতার অপ-ব্যবহারকারীদের আধিক্য। সবচেয়ে বড় কথা জনগণ নয়, ক্ষমতায় যাওয়া বা একবার ক্ষমতায় গেলে জনসমর্থন থাকুক আর না থাকুক ছলে, বলে, কৌশলে ক্ষমতা আঁকড়ে পড়ে থাকাই এদের দু’দলেরই প্রধান লক্ষ্য। হতে পারে, কয়েকটি কারণে শেখ হাসিনা আমার কাছে একটু বেশী গ্রহণযোগ্য, কিন্তু আমার ব্যক্তিগত পছন্দ এক্ষেত্রে তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়।
বিএনপি-জামাত সন্ত্রাস করছে, মানুষ পুড়িয়ে মারছে; ক্ষমতাসীন জোটের রাজনৈতিক নেতারা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্ণধাররা ক্ষণে ক্ষণে হুঙ্কার দিচ্ছেন, কিন্তু কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। এগুলো ভয়াবহ ক্রিমিনাল অফেন্স, যারা এগুলো করছে বা এর নির্দেশ দিচ্ছে তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে। তবে সত্য এই যে হরতাল, অবরোধের নামে যুগ যুগ ধরে দেশে যারা বিশৃঙ্খলা আর হত্যার রাজনীতি করে এসেছে তাদের বড় জোর লঘু শাস্তি ছাড়া কখনই তেমনিভাবে আইনের মুখোমুখি হতে হয় নি। এবারেও অপরাধীরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাবে বলেই মনে হয়। এখানে বিভিন্ন দলের নেতা-কর্মীদের তুলনামূলক আলোচনা হতে পারে, কিন্তু এই অনাচার কেবল দেশের কোন একটি বিশেষ দল বা জোটের বৈশিষ্ট্য নয়।
বিএনপি-জামাত আন্দোলন করছে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য। একবার ক্ষমতায় গেলে, এখন আওয়ামী লীগ যেভাবে ক্ষমতা ছাড়তে চাইছে না, তারাও সেই একই কাজ করবে এটা প্রায় নিশ্চিত। এসব আমরা অতীতেও দেখেছি। কিন্তু এই ধারার পরিবর্তন হওয়া জরুরী। এই মুহূর্তে আমাদের হাতে কোন যাদুর কাঠি নেই যে আমরা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি রাতারাতি পালটে দিতে পারি। পরিবর্তন হবে ধীরে, কিন্তু তার জন্য আমাদের এখন থেকেই কাজ করতে হবে। আমার মতে এর প্রথম ধাপ হচ্ছে জনগণের হাতে সরকার নির্বাচনের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়া এবং সেই ধারা চালু রাখা।
এদেশে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা বদলের রেওয়াজ তেমন নেই, আর এর জন্য বারবার মূল্য দিতে হয় দেশের জনগণকে। আপনি স্বীকার করবেন যে বিগত সংসদ নির্বাচনে জনমতের প্রতিফলন ঘটে নি। ভবিষ্যতের নির্বাচনগুলো, তা যখনই হোক না কেন, একই ধাঁচের হওয়া কখনই কাম্য নয়। আমরা কি এমন একটা ব্যবস্থা দাঁড় করাতে পারি না যাতে করে একটা নির্দিষ্ট সময় অন্তর সম্পূর্ণভাবে জনমতের উপর ভিত্তি করে নিজেদের নেতা নির্বাচন করতে পারি? নিজের পছন্দমত প্রার্থীকে ভোট দেয়া আমার সাংবিধানিক অধিকার। আমি কেবল এই অধিকারের বাস্তবায়ন চাই। আমি নিশ্চয়তা চাই যে আমার ভোট জাল হবে না, জোর-জবরদস্তি আর সন্ত্রাসের মাধ্যমে জনগণের নির্বাচিত প্রার্থীকে পরাজিত ঘোষণা করা হবে না।
আশাকরি আমি আপনার মন্তব্যগুলোর জবাব দিতে পেরেছি। যদি তা মনে না করেন জানাবেন। ভাল থাকুন।
যারা মনে করেন বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কোন সমালোচনা করা যাবে না আমি তাদের দলে নই।বঙ্গবন্ধুকে নিয়েও সমালোচনা করা যায়, তবে আমার মতে সে সমালোচনার একটা মাত্রা বা সীমা থাকা উচিত।তারেক রহমান সে মাত্রা বা সীমা অতিক্রম করেছেন। আমি মনে করি এখন তারেক রহমানের আর একটি কথা বলা বাকি থাকলো, তা হলো, “গোলাম আযম একজন মুক্তিযোদ্ধা”।
জিয়াকে আওয়ামীলীগ রাজাকার বলেছে অতএব তার পরিবর্তে বিজয় দিবসে বঙ্গবন্ধুকে তারেক রহমান রাজাকার বললে যারা কোন দোষ খুজে পান না তাদের উদ্দেশ্যে কয়েকটি কথা বলা প্রয়োজন।
বঙ্গবন্ধুকে অনেকেই স্বৈরশাসক বলেছে, গণতন্ত্র হত্যাকারী এমনকি খুনি বলেছে তখন আওয়ামীলীগ এমন তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখায়নি কারণ এসব অভিযোগের আংশিক সত্যতা রয়েছে।
কিন্তু তারেক রহমান এবার বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যে কটুিক্তি করল তা হল একটি নিজর্লা মিথ্যা।
সে কারণেই আওয়ামীলীগে তারেক রহমানের কটুক্তির প্রতিক্রিয়া হয়েছে ব্যপক।
অনেকে বলবেন তাহলে তারেক রহমানের মুক্তিযোদ্ধা পিতাকে রাজাকার, পাকিস্তানের এজেন্ট বললে তারেক রহমান প্রতিক্রিয়া দেখাবে না?
অবশ্যই দেখাবে, তবে একটি আংশিক সত্য কথার প্রতিক্রিয়া নির্জলা মিথ্যা কথা দিয়ে দেখানো যায় না। জিয়াকে রাজাকার বা পাকিস্তানের এজেন্ট বলাটা কেন আংশিক সত্য তা উপরের অনেক মন্তব্যে আলোচিত হয়েছে, নিচে আবার এরকম কয়েকটি পয়েন্ট উল্লেখ করলাম-
১)বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুরুস্কৃত করা।
২)যুদ্ধবন্দি রাজাকারদের মুক্তিদান।
৩) গোলাম আযমকে এদেশে প্রত্যাবর্তন এর সুযোগ প্রদান।
৪)জামাতে ইসলামকে রাজনৈতিক ভাবে পুনর্বসিত করা।
৫)শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী করা।
৬) পাকিস্তানী ভাবাদর্শে এদেশকে পরিচালিত করা।
৭)মুক্তিযুদ্ধের একাধিক সেক্টর কমাণ্ডারকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে নির্মূল করা।
৮) সেনাবহিনীতে মুক্তিযোদ্ধাদের কোনঠাসা করা।
৯)১৫ আগষ্টে খালেদা জিয়ার নকল জন্মদিন পালন।
এসব ঘটনা জানার পর কেউ যদি জিয়াকে রাগে বা দুঃখে রাজাকার বলে তাহলে সে ব্যক্তিকে খুব বেশি দোষ দেওয়া যায় কি?
তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে কেউ জিয়াকে নিয়ে কটুক্তি করেনি।তাহলে হঠাৎ বিজয়ের মাসে তারেক রহমান কেন এই মহান(!) বাণী নিয়ে উপস্থিত হলেন।
আমার মনে হয় তারেক রহমানের বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে করা সাম্প্রতিক কটুক্তির কারণ, জিয়াকে করা কটুক্তির পাল্টা জবাব নয়, বিএনপির আন্দোলনের মাঠ প্রস্তুতির প্রাথমিক পদক্ষেপ।
@মুক্ত,
ঐতিহাসিক তথ্যের প্রতি সৎ থেকে যে কোন কিছুর গঠনমূলক সমালোচনা জরুরী; যেমন, আপনি জিয়া বা বিএনপির রাজনীতি সম্পর্কে নয়টি পয়েণ্ট দিয়েছেন, যেগুলোর সাথে দ্বিমত প্রকাশের কোন অবকাশ নেই। উপরে কেশব অধিকারী যেমন বলেছেন,
এটাই মনে হয় সবচেয়ে ভাল উপায়।
এই জ্বালাও-পোড়াও নীতি থেকে বের হতে না পারলে বিএনপির আর কিছু অবশিষ্ট থাকবে বলে মনে হয় না; তবে এটা বাংলাদেশ, এখানে সবকিছুই বিচিত্র।
@মুক্ত,
দুঃখিত, উত্তর দেয়ার সময় তাড়া থাকায় লক্ষ্য করিনি। আপনার ২ নম্বর পয়েন্ট সম্পর্কে একটু বিস্তারিত বলবেন কি? জিয়া যেসমস্ত যুদ্ধবন্দি রাজাকারদের মুক্তিদান করেছিলেন তারা কারা? বর্তমানে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্তদের কেউ এদের মধ্যে ছিল? ধন্যবাদ।
@মনজুর মুরশেদ,
বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তির কলাম লেখনি এবং পত্রিকার রিপোর্ট থেকে জানা যায় যে, বঙ্গবন্ধুর শাসন আমলে প্রায় ১১ হাজার ব্যক্তিকে দালাল আইনে বিচারের জন্য আটক করা হয়েছিল।পরে জিয়া সেই দালাল আইন বাতিল করে তাদের মুক্তিদেন।
সত্য কথা বললে বলতে হয় যে এখন যাদের মানবতা বিরোধী আপরাধে বিচার করা হচ্ছে তারা এই ১১ হাজার ব্যক্তির মধ্যে ছিলেন কিনা তা আমার জানা নেই।আসলে বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে জামাতের আনেক শীর্ষস্থানীয় নেতাই ছিলেন পলাতক। আতএব তারা জেলে আটক ছিলেন না বলে নির্দোষ, এটা জমাতের এক ধরনের প্রচারণা।
৭১ এ স্বাধীণতা যুদ্ধে এ দেশের মানুষকে হত্যা এবং নির্যাতনে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর মূল দোসর ছিল জামাত আর মুসলীমলীগের নেতারা।মানবতাবিরোধী আপরাধে এ পযর্ন্ত যাদের ধরা হয়েছে তাদের সবাইকেই বিএনপি জামাত বলছে তারা সম্পূর্ন নির্দোষ।গোলাম আযম, মতি্উর রহমান নিজামী বা সাকা চৌধুরীদের মত ব্যাক্তিদেরও নির্দোষিতার পক্ষে বিএনপি, জামাত আনেক ধরণের তত্ত্ব উপস্থাপন করছে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য।
আপরদিকে সব রাজাকার হল জামাত আর বিএনপিতে, নিজের দলে কোন রাজাকার নেই এমন তত্ত্বের দ্বারা আওয়ামীলীগও এই বিচার প্রক্রিয়া আন্তরিক না রাজনৈতিক এমন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার পর তার হত্যার বিচার করা যাবে না এমন আদেশকে সাধারণ আইন নয় জিয়া করলেন সংবিধানের অংশ। এ রকম দ্বিতীয় কোন ঘটনা বিশ্বর আর কোন দেশে দেখাতে পারবেন কি? আর ১৫ আগষ্টকে জন্মদিন বানিয়ে তার পত্নী শুরু করলেন কেক কাটা। এ রকম যদি আপনার বা আমার ক্ষেত্রে হতো তাহলে কি আমরা উপরোক্ত উক্তিটির মর্যদা দিতে পারতাম।
আমি তা মনে করিনা, বিএনপি যতই জ্বালও-পোড়াও নীতি গ্রহন করুক না কেন ফেয়ার ইলেকশন হলে বিএনপি জামাতই ক্ষমতায় আসবে।
তার একটি কারণ হচ্ছে আওয়ামীলীগের দূর্নীতি এবং অস্বচ্ছ শাসণ আর দ্বিতীয় কারণটি দেশের জন্য মারাত্বক কিন্তু সেটিই প্রধান-
কারণটি হল, বিএনপি জামাত-দেশের মানুষকে বিশ্বাস করাতে পেরেছে যে গণজাগরণ মঞ্চের নাস্তিকদের আওয়ামীলীগ পৃষ্ঠপোষকতা করছে আর গত বছর ৫ই মে শাপলা চত্বরে অভিযান কালে এই সরকার ২৫০০-৩০০০ এতিম এবং আলেমকে হত্যা করেছে।
@মুক্তমনা(অতিথি),
ধন্যবাদ, আপনার জবাবের জন্য। আমিও মনে করি স্বাধীন দেশে রাজাকারদের বিনা বিচারে ছেড়ে দেয়া ঠিক হয়নি, তারচেয়েও বড় অন্যায় হয়েছে তাদের আবার রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার সুযোগ করে দেয়া। বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের হত্যাকান্ড আমাদের ইতিহাসের একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় এবং এর বিচারের মাধ্যমে কিছুটা হলেও জাতি হিসাবে আমাদের দায়মুক্তি ঘটেছে।
বঙ্গবন্ধু বা জিয়া কেউই সমালোচনার উর্ধ্বে নন, কিন্তু সমালোচনায় এমন কিছু টেনে আনা উচিত না যা মিথ্যা ও বিভ্রান্তির জন্ম দেয়। অনেক সময়ই দেখা যায় যে নেতাদের অনুসারীরা নিজ নিজ নেতাকে প্রায় অতিমানব বানিয়ে ছাড়েন, এরও কোন প্রয়োজন নেই। যিনি মহান, তিনি নিজগুনেই মহান, তাঁর অন্যদের কাছ থেকে কৃতিত্ব ধার করতে হয় না; আর অন্যদের অবদান স্বীকার করে নিলেও তাঁকে ছোট করা হয় না।
আমাদের দেশে যাদের জন্ম পনেরই আগষ্টে তারা কি তাদের জন্মদিন পালন করবে না? আসলে এটা যার যার ব্যক্তিগত অভিরুচির উপর ছেড়ে দেয়া উচিত। তবে একজন সাধারণ নাগরিকের জন্মদিন পালন আর দেশের একটি প্রধান দলের নেতার কেক কেটে প্রকাশ্যে জন্মদিন পালন ভিন্ন কথা। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় জানি, খালেদা জিয়ার প্রজন্মের বেশীর ভাগেরই জন্মদিন স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার সময় ঠিক করা, যা তাদের আসল জন্মদিন নাও হতে পারে। আর সত্যিকার জন্মদিন হলেও তিনি তার ঘরের একান্তে, পরিবারের সাথে তা পালন করতে পারেন। এই সৌজন্যটুকু দেখালে খালেদা জিয়ার এমন কোন ক্ষতি-বৃদ্ধি হয় না।
বিএনপি-জামাতের অবরোধ জ্বালাও-পোড়াও বহুদিন ধরে চলতে থাকলে তাদের এখন যে জনসমর্থন আছে তা যথেষ্ট হ্রাস পেতে পারে। যারা খেটে খাওয়া মানুষ তারা আর কতদিন এই অবস্থা মেনে নেন তা দেখার বিষয়। এখন ফেয়ার ইলেকশন হলে বিএনপি-জামাতের নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী, তবে আমি মনে করি এর প্রধান কারণ আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ের দুর্নীতি, গুম-খুন এবং ক্ষমতার অপব্যবহার। এর সাথে জনমত অগ্রাহ্য করে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখাটাও একটা প্রভাবক হতে পারে। দুঃখের বিষয় এই যে, যে কারণে বিএনপি-জামাত সরকারের পতন হয়েছিল, সেই কারণগুলো এখনও জোটের রাজনীতিতে বিদ্যমান। তাদের নেতৃত্ব বা নীতিতে গুনগত কোন পরিবর্তন আসে নি।
এইমাত্র পত্রিকায় দেখলাম কিছু বিশিষ্ট নাগরিক দু’দলের মধ্যে সংলাপের উদ্যোগ নিয়েছেন। খুব আশাবাদী নই, কিন্তু দু’দলের মধ্যে আলোচনা হওয়া জরুরী। আমাদের নেতারা যদি পরস্পরকে কিছু ছাড় দেন, তাহলে অন্তত জনগন একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচে।
বিএনপি সমর্থক বুদ্ধিজীবিদের টকশো কেউ দেখে থাকলে, অবধারিত যে, এই যুক্তিটি আপনাকে শ্রবন করতেই হবে! তবে এই বুদ্ধিজীবিদের মাথার উপর দিয়ে যায় যে সত্য, তা হল, আ’লীগের সাথে আন্দোলন করে জামাত পরবর্তী নির্বাচনে পেয়েছে মাত্র তিনটি সংসদীয় আসন; আর বিএনপির সঙ্গে রাজনীতি করে সংসদের ৩য় বৃহত্তম দলই শুধু নয়, সঙ্গে পেয়েছে রাজাকার হয়েও স্বাধীণ বাংলাদেশে পতাকা উড়াবার সুযোগ, শুধু তাই নয়, সরকারের মূল নীতিগুলি প্রনয়ন ও বাস্তবায়নে প্রধান ভূমিকা রাখার অবারিত সুযোগ! এখনো জামাতের সঙ্গ ছাড়ার এত আন্তর্জাতিক চাপ থাকার পরও কেন ছাড়ছে না তা বিএনপির চেয়ে আর কেই বা ভাল জানে!! জামাত ছাড়া বিএনপি বা বিএনপি ছাড়া জামাত দুটো কঙ্কাল বই তো কিছু নয়!
এভাবেই জাফর ইকবাল বধপর্বগুলি যুক্তিতাড়িত হয় আর পাঠকের পক্ষেও হাসি চেপে রাখাও দায় হয়! মানে, জাফর ইকবাল স্যার তাজউদ্দিন, প্রবাসী সরকার, ভারত, অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধা – কারোই অবদান স্বীকার করেন না??? কেন ‘বঙ্গবন্ধু এককভাবে অবদান রেখেছেন’ বললে অত্যুক্তি হয় না বা কেন বঙ্গবন্ধুর অবদান বললে তার মধ্যে অন্য সবার অবদানকেও ধারন করা যায়, তা উপলব্ধি করতে হলে, বঙ্গবন্ধু বা মুক্তিযুদ্ধকে আরও পাঠ করতে হবে।
আবারো সেই তাড়িত যুক্তি! মানে, জাফর ইকবাল স্যার দুর্নীতিবাজ, ক্ষমতার অপ-ব্যবহারকারী, দেশের সম্পদ বিদেশীদের হাতে তুলে দিতে প্রস্তুত – এমন লোকদের পক্ষে? এমন লোকদের পিঠ চাপড়ে দেন?
আর তাছাড়া, কারা বিদেশীদের হাতে দেশকে তুলে দিতে চাইছেন? আমরা কি বিএনপি নেত্রীর ওবামাকে লেখা সেই চিঠির কথা ভুলে গিয়েছি? অথবা, সর্ব সাম্প্রতিক বিজেপি সভাপতির সেই সিম্প্যথি কলের কথা??? অথবা, বিএনপির নির্বাচন তহবিলে পাকিস্তানের সেই কন্ট্রিবিউশানের কথা?
@গুবরে ফড়িং,
আপনার মন্তব্যে আওয়ামী লীগ আর বিএনপি-র তুলনামূলক আলোচনা করেছেন, যা এই পোষ্টের মূল বিষয় নয়। আমি আমার লেখায় বা মন্তব্যগুলোতে বিএনপির রাজনীতির সমর্থনে যে কোন কথা বলিনি সেটা বোধ হয় আপনি লক্ষ্য করেন নি। আমি জিয়াউর রহমান সম্পর্কে কিছু অপপ্রচারের বিরুদ্ধে বলেছি, কিন্ত সেজন্য আমার বিএনপির সমর্থক হওয়ার দরকার পড়ে না। আপনি প্রমাণ দিন যে জিয়াউর রহমানের যুদ্ধ করার ইচ্ছা ছিল না, তিনি ডাবল এজেন্ট ছিলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানের চর ছিলেন ইত্যাদি, ইত্যাদি আপনার দাবী করা “ঐতিহাসিক সত্য”, আমি আমার ইতিহাস জ্ঞান সমৃদ্ধ করার জন্য আপনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকব।
মজার ব্যাপার কি জানেন? দেশে আজ এমন মেরুকরণ হয়েছে যে, কেউ সমালোচনা করলেই অমনি তাকে বিরোধীপক্ষের লোক বানিয়ে ট্যাগ করে দেয়া হয়। বিভিন্ন সময়ে আমার মন্তব্য পড়ে লোকে আমাকে ‘আওয়ামী চশমা’ খুলে তাকানোর পরামর্শ দিয়েছেন, আবার উল্টোটাও শুনেছি প্রায় সমান ভাবে। যাই হোক, আপনার মন্তব্যে বিএনপি সম্পর্কে যা বলেছেন তা নিয়ে দ্বিমত নেই।
যারা মনে করেন যে ডঃ জাফর ইকবাল আওয়ামী লীগের ভুল কাজগুলো সম্পর্কে কখনই কিছু বলেন না, আমি তাদের দলে নেই। তিনি পদ্মা সেতুর দুর্নীতি নিয়ে লিখেছেন, ডঃ ইউনুস/আওয়ামী লীগ প্রসংগে সরকারকে ভাল উপদেশই দিয়েছেন, রাস্তা-ঘাট মেরামত, শিক্ষার বেহাল ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বলেছেন। দু’হাজার বার সালে ডঃ জাফর ইকবাল বলেছিলেন,
আমরা সত্যি সেই অবস্থায় এসে পৌঁছেছি। এখন আমাদের অবস্থা শ্যাম রাখি না কুল। আওয়ামী ভক্তরা যতই উন্নতির ফিরিস্তি দিন, আমার সন্দেহ আছে, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে জনগন নৌকা আবার বন্দরে ভেড়ানোর পক্ষে কিনা। আমাদের এ অবস্থায় কি করা উচিত বলে মনে করেন?
@মনজুর মুরশেদ, ১. জাফর ইকবাল স্যার তার লেখায় আওয়ামী লীগের ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়া এবং তা ধরে রাখার চেষ্টার সমালোচনা করেননি এবং আমি যা বুঝেছি এটাই আপনার আপত্তির জায়গা।
২. জনগণের ভোটের অধিকার, গণতন্ত্র ইত্যাদি রক্ষা করতে হলে আমাদের প্রতিবাদ জানাতে হবে যদি তা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের দলের বিরুদ্ধেও যায় তবুও।
আমার ক্ষোভের জায়গাটাও এখানে।কোথায় গণতন্ত্র, ভোটের অধিকার আর কোথায় পেট্রোল বোমায় পুড়ে মরা।যেখানে আমি পুড়ে মারা যাচ্ছি সেখানে আমার প্রথম প্রয়োজন বেচেঁ থাকা।এই মুহূর্তে সবার আগে দরকার আগুনের বিরুদ্ধে আওয়াজ।আজ যদি দেশে বোমা আগুন না থাকত, বিএনপি নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করতে গিয়ে দমন পীড়নের শিকার হতো তাহলে জাফর ইকবাল স্যারই আওয়ামী লীগকে সমালোচনা করে কলাম লিখতেন।
আজ আমার বিএনপি অলাদের মানবাধিকার, মৌলিক অধিকার নিয়ে কোন সহানুভূতি নেই।খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের বিদ্যুৎ চালু না করে যদি গ্যাস খাবার বন্ধ করে দিত তাহলেই বরং আমি খুশি হতাম।
ধন্যবাদ। বিএনপি সমস্যাগুলো পরিস্কার বুঝতে পারছি। এবার আওয়ামী লীগের সমস্যাগুলো কোথায় সেটা নিয়ে আলোচনা হোক। কেবল স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি বলে তো তারা চিরকাল ক্ষমতা আঁকড়ে পড়ে থাকতে পারে না। কিভাবে তারা জনমতকে আবার নিজেদের পক্ষে আনতে পারে, আর কিভাবে আমরা বর্তমান অরাজক অবস্থা থেকে বের হতে পারি বলে মনে করেন?
@জাকির আকন্দ
@কেশব কুমার অধিকারী,
নীচে আপনার মন্তব্যের অংশ-বিশেষের প্রেক্ষিতে আমার জবাব তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
অবশ্যই না। আমাদের পছন্দের দল বা নেতা থাকতে পারে, কিন্তু তার মানে এই না যে আমাদের কোন না কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য হতেই হবে। আমাদের চেষ্টা হওয়া উচিত যে আমরা যেমন আমাদের পছন্দের দল বা নেতার ভাল কাজগুলোর প্রশংসা করব, তেমনি তাদের ভুল কাজগুলোর গঠনমূলক সমালোচনা করবো।
আমার আশেপাশের মেয়েদের পোশাক নিয়ে পরামর্শ দেয়ার দুঃসাহস বা যোগ্যতা কোনটাই আমার নেই। আমি মনে করি এটি যার যার পছন্দের ব্যাপার। বাংলাদেশের মেয়েরা, তা যে পোশাকেই হোক, যত স্বাধীন হবে, ছেলেদের পাশাপাশি সমান অধিকার আর সম্মান নিয়ে কাজ করবে, আমার ততই ভাল লাগবে। এক্ষেত্রে আপনি যা চান, আমিও তাই চাই।
এক্ষেত্রে আমি আপনার সাথে পুরোপুরি দ্বি-মত প্রকাশ করি। আমার চোখে বাকশাল ছিল জনমতকে পাশ কাটিয়ে রাষ্ট্র-ক্ষমতা কুক্ষিগত করার একটি অশালীন উপায়। আমার এই পোষ্ট বাকশাল নিয়ে বিশদ আলোচনার জন্য নয়, তবুও বলছি, বাকশাল সম্পর্কে কোন সৎ এবং সোজা শিরদাঁড়ার মানুষের মতামত জানতে চাইলে, অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের “আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম” বইটির ৪৭ থেকে ৬৭ পাতা পড়ার অনুরোধ করি। এর বাইরে আমার আর বিশেষ কিছু বলার নেই।
উপরে লিখেছি বাকশাল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা আমার উদ্দেশ্য নয়। তবুও কেন এ নিয়ে অধ্যাপক জাফর ইকবাল-র অভিমত জানতে চাইছি? আসলে আমি ওনার সাম্প্রতিক চিন্তা-ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাই। আপনার যেমন বাকশাল সম্পর্কে একটা অভিমত আছে, তেমনি আমারও আছে; যথা-সম্ভব নিরপেক্ষ/যুক্তি-নির্ভর থাকার চেষ্টা করে আমি বাকশাল সম্পর্কে নিজের সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি। আমি শুধু জানতে চাই, ডঃ ইকবাল এখানে কোন অবস্থানে।
সহমত।
না, ভাবছি না। আওয়ামী লীগের লক্ষ্য যেমন ছলে-বলে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে থাকা, তেমনি বিএনপির লক্ষ্য জনগনকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে কয়লা বানিয়ে হলেও ক্ষমতায় যাওয়া। কিন্তু আমি বিএনপিকে ক্ষমতায় আনার জন্য, বা তাদের পক্ষে ওকালতি করার জন্য এই লেখা লিখেছি তা তো নয়। যে দলের প্রধান কালো টাকা সাদা করতে ছোটেন, ছেলেরা অর্থ-লোপাটের দায়ে দেশ-ত্যাগী তাদের প্রতি আমার কোন সহানুভূতি নেই। আর মানুষ পুড়িয়ে কয়লা বানানো কিভাবে জাস্টিফাই করব? বাসে চলাচলের সময় আমার পরিবারের কেউ যে কয়লা হয়ে ঘরে ফিরবে না, সে গ্যারান্টি কে দেবে?
দুঃখিত, আমি জানতাম না যে সরকার ফেব্রুয়ারির তের তারিখে পরিবর্তিত হবে। এধরনের ভবিষ্যতবাণী গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান বিবেচনায় না নিয়ে করলে ভুল হবার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকে। মজাক থাক, আসলে এই দেশের রাজনৈতিক নেতারা তো পারলে গোটা দেশটাকেই গিলে ফেলেন; অতীতে বিএনপি নির্বাচন নিয়ে ছলাকলা করেছে, আর এখনো তাই হচ্ছে। আমি ভাবছি ভবিষ্যৎ নিয়ে; নিয়ম অনুযায়ী দেশ চালাবে জনগনের বেশীরভাগ অংশের প্রতিনিধিরা। আমরা কি সেই নিয়ম রক্ষা করব না কি করব না? জনমতকে উপেক্ষা করে তো চিরকাল দেশ চালানো যাবে না, কোন না কোনভাবে সেই নির্বাচন পদ্ধতির কাছেই ফিরে যেতে হবে। তাহলে এই অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় কি? আমার মতে সবদিক বিবেচনায় নিলে আমাদের দেশে ভারতের মত একটি শক্তিশালী নির্বাচন ব্যবস্থা দাঁড় করানোই সবচেয় ভাল উপায় হতে পারে। আমাদের নেতাদের এই মেসেজ দেয়ার সময় এসেছে যে ক্ষমতায় আসতে চাইলে সৎ আর যোগ্য হতে হবে, জনগনের ম্যাণ্ডেট নিয়েই ক্ষমতায় আসতে হবে। একটা সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থা দাঁড় করাতে পারলে আমাদের দু’দলের নেতারাই তাদের রাজনীতিতে গুনগত পরিবর্তন আনতে বাধ্য হবেন। আর এতে লাভবান হবে দেশ, জনগন, আমরা সবাই। এটা নিশ্চিত যে রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন এতো তাড়াতাড়ি হবে না বা সহজে হবে না। তবে যত তাড়াতাড়ি এই ধারা শুরু করা যায় ততই মঙ্গল।
“আমাদের এ দেশটির জন্য এককভাবে অবদান রেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান”; অধ্যাপক ইকবালের এই বাক্যটির “এককভাবে” শব্দটি আমার কাছে গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয় নি। একজন বিজ্ঞানী এবং লেখক হিসাবে উনি নিশ্চয় শব্দের ব্যবহার ভেবে-চিন্তেই করেছেন। আমার কাছে একক শব্দটির অর্থ ‘Singly’, যা অন্য কারো অবদান স্বীকার করে না। আমার ধারনা ভুল প্রমাণিত হলে খুশী হব।
আসলে শুধু বিএনপি কেন, আমাদের সবারই এধরনের কিছু বিষয়ে একমত হওয়া উচিত। স্বাধীনতার এতদিন পরেও এই বিষয়গুলো নিয়ে অশালীন আলোচনা চলে যা জাতি হিসাবে আমাদের দৈন্যটাই প্রকাশ করে। তবে আপনার ১ নম্বর বিষয়টি নিয়ে আমার আপত্তি আছে। আমি মনে করি “বাঙ্গালীর” শব্দটি দেশের আদিবাসী ভাইবোনসহ অবাঙ্গালী জনগোষ্ঠীকে প্রতিনিধিত্ব করে না।
@মনজুর মুরশেদ,
াআসলে বিস্তারিত আলোচনার মতো সময় নেই। থাকলে নিয়মিত লিখতাম। যাই হোক সংক্ষেপে আমার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছি। আপনার প্রত্তুত্তোরে শুধু ‘বাঙ্গালির রাজনৈতিক দল হতে হবে’ এখানেই আপত্তি দেখলাম। আর কারণ হিসেবে আদিবাসী ভাইবোনসহ অবাঙ্গালী জনগোষ্ঠীকে প্রতিনিধিত্ব করে না বলে জানিয়েছেন। তার আগে আমার একটা মন্তব্য করা জরুরী মনে করছি, সম্ভবতঃ অসত্য নয় যে আপনার লেখা এবং বিভিন্ন যায়গার মতামত গুলো কেনো যেনো অনেকটা স্ববিরোঈ বা অসংলগ্ন বলে মনে হয়। যেমন একটা উদাহরণ দেই, উপড়ে গুবড়ে ফড়িং এর মন্তব্যের প্রেক্ষিতে আপনি জানতে চাইলেন যে জিয়াউর রহমান যে দ্বিচারী ভুমিকায ছিলেন বলে কথিত তার প্রমান। গীতা দাস আপনাকে দুটি বই এর রেফারেন্স দিয়েছেন। যিনি লেখক তিনিও একজন মুক্তি যোদ্ধা এবং অধিনায়ক। সম্ভবতঃ মেজর জিয়ার চাইতে কম গুরুত্ত্বপূর্ন নন কোন ভাবেই। আমি নিজেই বই দুটো পড়েছি এবং জানি। সেই একি প্রমান আবার আপনি চাইলেন নীচে গুবড়ে ফড়িং এর আর একটি মন্তব্যের প্রক্ষিতে! তার মানে গীতা দাসের কিংবা অন্তর্জালে প্রাপ্ত প্রকাশনা গুলোর উপড়ে আপনার ভরসা নেই। আপনি যা জেনে এসেছেন তাই আপনার কাছে হয়তো সত্যি। বাকীটা মেকি। যাই হোক কিছু তো এক্ষেত্রে আর বলার নেই। আপনি শফী আমিনের প্রশ্নের উত্তরে জেনারেল জিয়া সম্পর্কে মিথ্যা উক্তির যে তথ্য দিয়েছেন, তাতে আওয়ামী প্রচার সম্পাদক ও আইন প্রতিমন্ত্রীর উক্তিকে বাদ দিলেও সাংবাদিক আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীর যে উক্তি দিয়েছেন, এবং প্রতীয়মান করতে চেয়েছেন যে উক্তিটি মিথ্যে এ এক ভয়াবহ বিষয়। আমি ব্যক্তিগত ভাবে আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীকে একজন তুখোড় রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও গবেষক হিসেবে জানি। ওনার প্রায় সমান্তরাল আর একজনকে জানি প্রয়াত এম আর আকতার মুকুল। আব্দুল গাফ্ফার কাজ করতেন বিবিসি তে আর সাংবাদিক মুকুল কাজ করতেন ভয়েস অব আমেরিকায়। ফলে আমার ধারনা আপনি যা মিথ্যে বলে জানেন, তা কতোটা মিথ্যে আমার সন্দেহ আছে।
এবার আসি বাঙ্গালীর প্রশ্নে। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধটাই ছিলো বাঙ্গালীর স্বাধীকার আন্দোলনের যুদ্ধ। আপনি বাঙ্গালী পাল্টে ওতে বাংলাদেশী-র পুড়িয়া গুলে দিতে চান? তাতে বিপদ আরো বেশী । যেমন অধুনা আমরা সবাই বাংলাদেশী হয়েও অনেকে্ সংখ্যা গুরু আবার অনেকে সংখ্যা লঘু! আর পাহাড়ের কথা বলছেন? বাংলাদেশী করণের যন্ত্রনায় সম্ভববতঃ ১৯৯৬ সালে (এই মুহুর্তে মনে পড়ছে না, ভুল হলে একটু শুধরে নিতে হবে) শান্তি চুক্তি করতে হয়েছিলো। সে চুক্তি আজও চুক্তিতেই আছে যেমন আছে নির্বাসিত বাঙ্গালী চেতনা! আমি এই মুহুর্তে দক্ষিন কোরিয়ায় আছি। এখানেও নানা উপজাতি আছেন। কিন্তু তাদের হাননারা জাতীয়তাবাদে কোন সমস্যা নেই! কারন সবাই একই জাতীয় পরিচয়ের ভেতরে। ইংরেজীতে যা Nationalism. সব সময় ঐতিহাসিক গোত্র পরিচয়ই (ইংরেজীতে ethnicity) মুখ্য। বাঙ্গালী হিসেবে আত্মপরিচয়ের গর্ব আলাদা। এখানেই আছে মহা মিলনের স্বাদ! আছে জাতীয় পরিচযকে উপড়ে তুলে ধরার প্রত্যয়। যা অন্যত্র তুলে বিভাজনের সুর, বাঙ্গালী মুসলিম জাতীয়তাবাদ, সংখ্যাগুরু, এইসব। আর তাই আমাদের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেককে শুনতে হয় এরকম, “যা ইন্ডিয়া চলে যা, তোদের দেশ তো এটা নয়”! আরোপিত পরিচয়ে স্থানীয মিলনের দ্যোতনা প্রতিদ্ধনীত হতে পারে, কিন্তু বাস্তবে তা যদি ব্যাক্তি মানসে এমন বিভ্রান্তিকর মেসেজ দেয যে এর মাধ্যমে আমরা ভারতীয় হিন্দু বাঙালী থেকে আলাদা হলাম, তাহলেই বিপদ। কারন ইথনিসিটির পরিবর্তন সম্ভব নয় কিন্তু ন্যাশনালিজমের পরিবর্তন সম্ভব। যা এদেশে মুসলিম মানসে ইতিবাচক ও অন্যান্যদের মাঝে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অর্থাৎ জাতীয় পরিচয়টি মুখ্য না হয়ে ধর্মীয় পরিচয়টিকেই মুখ্য করে তোলার প্রয়াস! যে দ্বিজাতি তত্ত্বের বিরুদ্ধে বিজয়ী হয়ে পক্ষান্তরে সেই তত্ত্বকেই আঁকড়ে ধরার মতো। স্ববিরোধীতা আর কি। পৃথিবীতে যেমন জার্মানদের দেশ জর্মানী, ডেনিশদের দেশ ডেনমার্ক আছে তেমন বৃটেন আমেরিকা অস্ট্রেলিয়ার মতো বহুজাতিক দেশও আছে। মাল্টিকালচারাল সোসাইটির দেশ এগুলো। সব জাতি সত্তার আছে স্বাধীন ভাবে নিজেদের আত্ম পরিচর্যার অধিকার । আবার বাংলাদেশ, যা বহু জাতির সম্মেলনে একটি দেশ, বৈচিত্র্যময়! যেখানে রাষ্ট্রের জন্মের তাৎপর্য বিদ্যমান। অতএব বাঙ্গালীর বাংলাদেশ, কিন্তু সব জাতি ,ধর্ম, গোত্রের এক বৈচিত্র্যময় সমাবেশ। বাঙালীত্ত্বই আমাদের অহঙ্কার। এ ভুবিশ্বে বাঙ্গালীর আর কোন দেশ নেই, আমাদের অহঙ্কার তাই এ দেশটিকে নিয়েই।
তারও চেয়ে বড় কথা হলো, রাজনৈতিক দলের একটা একাডেমিক সংজ্ঞা আছে। সংজ্ঞানুসারে দল গুলো একটি দেশের সমাজের কোন একটি অংশের স্বার্থ সংরক্ষন করে। কিন্তু যখন শাসন ক্ষমতা হাতে পায় তখন গোটা প্রজাতন্ত্রের দেখভালের দায়িত্ত্ব তার হবার পরেও সমাজের একটা নির্দ্দিষ্ট অংশের স্বার্থ সংরক্ষন অগ্রাধিকার পায়। এ থেকেই রাজনৈতিক টানাপোড়েন ও দ্বন্দ্বের উদ্ভব। এটিই রাজনীতি। জন্ম কালীন আদর্শ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া মানে শেকড় থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া। সে জাতির প্রাণবায়ু কি থাকে? আমরা বোধ হয় তাই আজ এতোটা মুমুর্ষূ!
@কেশব কুমার অধিকারী,
ব্যস্ততার মাঝেও সময় করে মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।
গীতা দাসের মন্তব্য পড়েছি এবং উত্তর দিয়েছি গুবড়ে ফড়িং কে লেখার পর, কাজেই যখন গুবড়ে ফড়িং-র কাছে মন্তব্য পাঠাচ্ছিলাম তখন গীতাদি যে বই-র উল্লেখ করেছেন তা জানা ছিল না। তবে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, আমি আরও রেফারেন্স পেতে আগ্রহী, আপনার হাতে থাকলে জানাবেন; আমিও খুঁজব।
শুধু বই এর নাম পেলে বা অমুক বইয়ে আছে জানলেই তো হবে না, বইটা আমাকে পড়তে হবে, তথ্য যাচাই-বাছাই করতে হবে, তারপর এ-সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। একই কথা খাটে অন্তর্জাল সম্পর্কেও। আপনি শিক্ষক, নিশ্চয় জানেন যে অন্তর্জালে পাওয়া তথ্যের যাচাই-বাছাই জরুরী। সেসবে যথেষ্ট সময় লাগবে, দয়া করে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুন।
আপনি মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমানের “দ্বিচারী ভূমিকা”-র কথা বলেছেন। “পাকিস্তানের চর”, “গুপ্ত চর”, “ডাবল এজেন্ট” আর “দ্বিচারী ভূমিকা” বলতে কি একই কাজ বোঝাতে চেয়েছেন? পাকিস্তানের চর না হয়েও মুক্তিযুদ্ধে কারো দ্বিচারী ভূমিকা থাকতে পারে, সে সম্ভাবনা আছে বলেই জানতে চাইছি। আমি হার্ড ফ্যাক্টের উপর নির্ভর করি; আবারও বলছি, যদি প্রমাণিত হয় জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানের “পাকিস্তানের চর”, “গুপ্ত চর”, “ডাবল এজেন্ট” ছিলেন তাহলে তা মানতে আমার বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই। কেবল বইয়ে আছে বলেই যে তা অন্ধভাবে মেনে নিতে হবে আমি সে ধারণায় বিশ্বাসী নই। নাহলে তো আরও বড় কমান্ডার খন্দকার সাহেবের বইটাও চোখ বুজে মেনে নিতে হয়।
আমার লেখা/মন্তব্য আপনার কাছে স্ব-বিরোধী মনে হওয়ার একটা কারণ এই যে, আমার কোন বিশেষ নেতা, দল, নীতি, সম্প্রদায়, ধর্ম ইত্যাদির প্রতি অনুরাগ বা বিরাগ নেই। নিজের বিবেচনা অনুযায়ী ভাল কাজের প্রশংসা আর মন্দ কাজের সমালোচনা করার চেষ্টা করি। যা বলি, সেটা যে ভুল প্রমাণিত হতে পারে, সে সম্ভাবনা সবসময় খোলা রাখি। একারণেই ধারাবাহিকভাবে কারও পছন্দের দল বা নেতা বা নীতির জয়গান গাওয়া হয়ে ওঠে না।
আমার কাছে এটি কোন “ভয়াবহ বিষয়” নয়। যে দিন থেকে ধর্মের সমালোচনা করতে শিখেছি, সেদিন থেকেই অনেক ভয় চলে গিয়েছে। অমর একুশের কালজয়ী গানটির স্রষ্টা হিসাবে আবদুল গাফফার চৌধুরী কে এখনো শ্রদ্ধা করি। তবে শৈশব-কৈশোরে যাকে আকাশের তারা বলে মনে করতাম, তার লেখায় অন্যায় পক্ষপাতিত্ব দেখার কারণে এখন তাকে মাটিতে নামিয়ে এনেছি। একবার জয়নাল হাজারী পত্রিকায় দেখলাম যে উনি হাজারীকে প্রশংসাপত্র দিয়েছেন…… “তুখোড় রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও গবেষক” বটে। বিশ্বাস করুন, সত্যিকার গবেষণা কি সেসম্পর্কে আমার ধারনা আছে।
আমি শুধু বলতে চেয়েছি, একটি রাজনৈতিক দল হিসাবে বিএনপি কেবল বাঙ্গালীর নয় দেশের সবারই প্রতিনিধিত্ব করুক এটুকুই। নতুন কিছু নয়, সেই পাকিস্তান আমল থেকেই ধারাবাহিকভাবে আদিবাসীদের উপর জুলুম হয়েছে। তাদের বাঙ্গালী হতে বলা হয়েছে, জমিতে বাঙ্গালীদের বসানো হয়েছে, এখন আবার কিছু বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থ-রক্ষায় তাদের আদিবাসী না বলে অন্যভাবে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা চলছে। এসব কারণেই আমার মন্তব্য, উগ্র ডানপন্থীরা যেই অর্থে বাঙ্গালীদের বাংলাদেশী বানাতে চায় সেই অর্থে নয়।
জাফর ইকবাল স্যারের গত লেখার (হায়দার রহমান এর “বাংলাদেশ মৃত চিন্তার” দেশ মন্তব্য নিয়ে)প্রতিক্রিয়াও মুক্তমনা ব্লগে তীব্র আক্রমনাত্মক লেখা এসেছিল।অনেক পরিচিত ব্লগাররাও দেখি জাফর ইকবালের বাক্য বিন্যাস, শব্দচয়ন ইত্যাদি সূক্ষ্ম বিষয়ে তীব্র আক্রমনাত্মক ভাষায় লিখতে। অনেকেই দেখি লিখেন জাফর ইকবালের মূল বক্তব্যর সাথে আমিও একমত কিন্তু তিনি এই কথাটা এই ভাবে বলতে পারতেন ইত্যাদি ইত্যাদি….দেখেশুনে মনে হচ্ছে জাফর ইকবাল স্যারকে সমালোচনাই বোধহয় হালের মুক্তমনা হবার সহজ উপায়!
এইসব তাত্ত্বিক কূটকচালে ভরা লেখা পড়ে আমার মনে হয় মুক্তমনা হওয়া আর এই জীবনে হলোনা!
আওয়ামী নির্বাচনে অনিয়ম করলে তার জবাবে পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ পুড়িয়ে মারা যায় কিনা? মুক্তমনারা এই প্রশ্নের জবাব কেউ দিলোনা!
@জাকির আকন্দ,
তাইলে আপনি মুক্তমনার সংজ্ঞা বুঝতে ভুল করেছেন।
@জাকির আকন্দ,
আপনি মুক্তমনা বলতে যা বোঝেন, আমি ঠিক তা বুঝি না। আলোচনা-সমালোচনার মাধ্যমেই তো সত্যের প্রতিষ্ঠা হবে, আমরা আমাদের ভুলগুলো শুধরে নেব, নতুনভাবে ভাবতে শিখব। আর নবী-রাসূল থেকে শুরু করে আমাদের এরশাদ চাচা এবং তাদের মাঝে যারা যারা আছেন কেউই সমালোচনার ঊর্ধ্বে নন।
@জাকির আকন্দ,
আমার অন্যান্য মন্তব্য-গুলোয় এর মধ্যে জবাব পেয়ে গেছেন আশাকরি। না, কোন অবস্থাতেই বিএনপির জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলনের সাথে নেই; আসলে এটা কোন আন্দোলনই নয়, ক্ষমতা-লোভীদের ভয়াবহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড মাত্র।
সবাইকে মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ। কাজ থেকে ফিরে রাতে আপনাদের মন্তব্যগুলোর জবাব দেব। আশা করছি সবাই ভাল থাকবেন, নিরাপদে ঘরে ফিরবেন।
জনাব মনজুর মুরশেদ,
আমি আমার বক্তব্য একটু ভিন্ন ভাবে উপস্থাপন করতে চাই। তার আগে এ বিষয়টাও পরিষ্কার করে নিতে চাই যে অধ্যাপক জাফরের সব কথার সাথে আমি সব সময একমত হতে না পারলেও তাঁর বক্তব্যের মূল সুরের সাথে অধিকাংশ সময়ে ঐক্য স্থাপন করি, বা করার সুযোগ পাই। এক্ষেত্রেও অনেকটা কিন্তু তাই। স্বাভাবিক ভাবেই আমি আপনার মূল সুরের খানিকটা আলোচনায় আনবো। আরোও একটা বিষয় আমি পরষ্কার করে নিতে চাই এই সুযোগে, আর সেটা হলো আমাকে আমার বক্তব্যের জন্যে আওয়ামীলীগার বলে ভুল করবেন না আশা করি।
ধরুন বাংলাদেশ বিশ্বের আ্যডভান্সড দেশ গুলোর মতোই হঠাৎ উন্নত হয়ে উঠলো। পাশ্চাত্যের মতো আমাদের মেয়েরাও পথে বেড়িযে পড়লো শর্ট স্কার্ট পরে, আধুনিক ঢং এ এমনকি অত্যন্ত স্মার্ট ও চৌকষ জনগনের অংশ হিসেবে। এ বিষয়ে আপনার প্রতিক্রিযা জানতে চাই। আমার মত হলো আমি এ পরিবর্তনকে উদার ভাবে গ্রহন করবো। আমি কোন কোন বিষয়ে আহত বোধ করলেও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সাথে সাথে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে পরিবর্তন গুলো ঘটে থাকে, আমি তা সহজ ভাবে নিতে প্রস্তুত। একদা বছর দশেক আগে দেশে যখন রবীন্দ্রসংগীতের রিমিক্স গুলো কিছু কিছু প্রকাশিত হতে থাকলো তখন বিভিন্ন কর্ণার থেকে এর ব্যাপক সমালোচনা দেখতে পেলেও আমার কিন্তু ভালোই লাগতো! এখনো লাগে। আমি আসলে কি চাই আমার এ ধরনের কথা থেকে আপনাকে একটু বুঝতে হবে।
অন্য প্রসঙ্গ বাদ দিলেও বাকশালের ব্যপারে আপনি অধ্যাপক জাফরের কাছে যা জানতে চেয়েছিলেন, জানিনা উনি আপনার প্রশ্নের জবাব কবে দেবেন বা আদৌ দেবেন কিনা, কিন্তু আমার আজকের প্রেক্ষাপটে স্পষ্টতঃই মনে হয় বঙ্গবন্ধুর বাকশাল গঠন আমাদের দেশের জন্যে একটা সময়োচিত পদক্ষেপ শুধু না এটি অনিবার্যও ছিলো। আমাদের দেশের বর্তমান পেক্ষাপটটিতে ঐতিহাসিক ভাবেই বাকশালের কোন প্রভাব নেই। ছিলোও না। কারণ সেই বাস্তবতার আগেই বাকশালের মৃত্যু ঘটেছিলো। এবার ধরুন বাকশাল আছে বা নেই। এর সুফল বা কুফল আপনি বিচার করবেন কি দিয়ে? আর সেটা যখন সম্ভব নয় তখন হাওয়ায় তরবারী ঘুড়িয়ে কি লাভ? অধ্যাপক জাফরকে বাকশালের বিষয়ে জিঞ্জাসা করার হেতুটি ঠিক আমার কাছে পরিষ্কার নয়। আমি কিন্তু আমার ব্যাক্তিগত উপলব্ধীতে আগেই বলেছি তখনকার প্রেক্ষাপটে আমার মনে হয় বাকশাল প্রয়োজন ছিলো। আমি জানি আমার সাথে অনেকেই একমত হবেন না সে বিশ্বাস রেখেই তাদের মতামতকে শ্রদ্ধা করেই আমি আমার মতামত দিলাম।
আদিল ভাই আপনার প্রবন্ধটির বিষয়ে মতামত পেশ করতে যেয়ে যা বলেছেন তার অনেক কিছুর সাথে আমার দ্বিমত থাকলেও তাঁর উপসংহারের সাথে আমি সর্ব্বৈব একমত। অধ্যাপক জাফর তারেক জিয়ার যে ভাষ্য নিয়ে সমালোচনা করেছেন, আদিল ভাই সেটিকে মেঠো বক্তব্য বলে উড়িয়ে দেবার চেষ্টা করেছেন, আমি তা করবো না। আমি মনে করি সেটি বিএনপি রাজনীতির গভীরের উপলব্ধী! ‘৭৫ সালের পট পরিবর্তনের পর থেকে বিএনপি এদেশে যা যা করে এসেছে সেগুলো কে যদি বিবেচনায় নিন তাহলে দেখতে পাবেন এই রাজনীতির ক্রমবিকাশের সাথে একটা ধারাবাহিক যোগসূত্র আছে আছে একটা সূক্ষ্ম ক্রমপরিবর্তনের রূপরেখা। ‘৭১ এ যে স্বপ্ন নিয়ে এ জাতি সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছিলো সে জায়গা থেকে সরতে সরতে আজ এমন একটা জায়গায় আমরা এসে পৌঁছেছি যেখানে আওয়ামীলীগের নেত্রী স্বয়ং মদীনা সনদে দেশ চালাবার অঙ্গীকার প্রকাশ করেন! তাহলেই বুঝুন! ‘৭৫ এর পট পরিবর্তনের সাথে সাথে একটা বিপরীত ধারার রাজনৈতিক সূত্রপাত ঘটে। আর সেটি খোদ আমাদের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের এক লড়াকু সৈনিক, একজন সেক্টর কমান্ডারের হাত ধরেই। আমার ধারনা, বাকশাল এইজন্যেই দরকার ছিলো যাতে এই প্রতিক্রিয়াশীল ভাবধারা এই সদ্যভূমিষ্ট জাতিকে স্পর্শ না করে। যাই হোক যা ঘটেনি তা আলোচনার দরকার নেই বলেই আমি মনে করি। এবার আসি আপনার নির্বাচন প্রশ্নে। এর ব্যাক্ষ্যা আদিল ভাই অবশ্য দিয়েই দিয়েছেন, আমি শুধু মাত্র সামান্য একটু যোগ করবো। অবশ্যই একটা নির্বাচন আমাদের দেশের রাজনৈতিক সংকটের কিছুমাত্র পরিবর্তন ঘটাবে না। আজ যা আছে নির্বাচনের পড়ে তাই থাকবে। যদি না কতোগুলো ইস্যুর নির্বাচন পুর্ব সমাধান না হয়। আজ যেটা চলছে সেটা হলো রজনৈতিক দেউলিয়াত্ত্ব। চৌর্যবৃত্তি। এখানে দেশের জনগন কোন ফ্যাক্টর নয়। শুধুমাত্র ক্ষমতা হাতে নিয়ে কে কতটুকু লুটপাট করবে, দেশের সম্পদ দেশের বাইরে নিয়ে যাবে বা যেতে পারবে তারই প্রতিযোগীতা। এখানে আন্দোলন মানে হলো রাস্তায় মানুষ মারো। অধুনা এ প্রবৃত্তি আরো ভয়াবহ। মনজুর মুরশেদ সাহেব ভাবছেন বিএনপি এই সব করছে একটি নির্বাচনের জন্যে? আদৌ তা ঠিক নয়। নির্বাচনে যদি দলটি বিশ্বাস করতো, যদি বিশ্বাস করতো জনমতে বিংবা গনতন্ত্রে তাহলে অন্ততঃ সন্ত্রাসকে আন্দোলনের মোড়কে পুড়ে খাওয়াতে চাইতো না। তাদের লক্ষ্য একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরী করা এবং জরুরী অবস্থার মধ্যদিয়ে কোন অবৈধ শাসক চক্রের আমদানী। আর সেই কারণেই দেশের প্রখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হিসেবে পরিচিত অধ্যাপক এমাজ উদ্দীন আহমদ কিছুকাল আগে ঘোষনা করেছিলেন আগামী মার্চ-এপ্রিলেই দেশে একটা রাজনৈতিক পরিবর্তন সূচিত হবে! আজ বা কাল কোথায যেনো দেখলাম যে বিএনপির এক জোষ্ঠ্য নেতা বলেছেন আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারী সরকার পরিবর্তিত হবে! তো সরকার যে ১৩ তারিখে পরিবর্তিত হবে তা কি নির্বাচনের মাধ্যমে হবে বলে মনে করছেন মনজুর মুরশেদ সাহেব? কাজেই আমার বোধ গম্য হচ্ছে না যে মনজুর মুরশেদ কেনো হঠাৎ নির্বাচন নিয়ে পড়লেন? যে দুই রাজনীতি নিযে কথা বলছেন এদের কারো কাছেই নির্বাচন এখনো মুখ্য কোন ব্যাপার নয়। তা যদি হতো তাহলে বিএনপি বিগত দিনে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতো না ওভাবে। এ সংস্কৃতিকে লালন করতো, যত্নে এর পরিপূর্ণতা দিতো। আর সেই কারণেই আমার মনে হয়েছে বিএনপি সংক্রান্ত ব্যাপারে অধ্যাপক জাফর যা বলেছেন, সেটা খুব গুরুত্ত্ব বহন না করলেও যে ভাসমান ভোট ব্যাঙ্ক বিএনপির ছিলো তা কিছুটা হলেও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আর আগাম নির্বাচনের আমিও কোন কারণ দেখিনা। বরং বিএনপির এই কার্যক্রমেরও কারণ আমার কাছে বিষ্ময়কর। শুধু ক্ষমতার জন্যে এতো গুলো মানুষ হত্যা? তাদের সময়ে দেশে কি দিযেছিলো তারা? বরং এ একপেশে ভাবে নির্বাচিত সরকার দেশকে অনেক কিছুই দিয়েছে বলে প্রতিয়মান হয়। দেশের আর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ঘটেছে, অবকাঠামো নির্মান হচ্ছে, বিদ্যুৎ সংকট অনেকটা কমেছে, শিল্পায়ন ঘটছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে, কৃষিখাতে উন্নয়ন ঘটছে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমেছে, শিক্ষা ব্যবস্থায় কিছুটা হলেও পরিবর্তন সাধিত হয়েছে, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে এগুলো স্বস্তির দিক। অস্বস্তিও আছে, পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর উপড়ে নির্যাতন বেড়েছে, ভুমি দখল, নদী দখল, টেন্ডারবাজী, মানবাধিকার লঙ্ঘন, দুর্নীতি, বিচার হীনতা, কালো টাকার ব্যবসা, সম্পদ লুন্ঠন থেকে শুরু করে আরোও অনেক কিছু। তার পরেও সাধারন মানুষ এগিযে যাচ্চিলো।
আমার তা মনে হয়নি। একথা যদি সত্য হয় যে ’৪৭ থেকে ‘৭১ পর্যন্ত আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের অনিবার্য উপস্থিতির সাথে যে নামটি একক ভাবে উচ্চারিত এবং একমাত্র আশার প্রতীক হয়ে উঠেছিলো সেটি হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই একটি নামকে ঘিড়েই তখন গোটা পূর্বপাকিস্তান আলোড়িত হয়েছে! যে, যারা, যাই কিছু করেছে আমাদের মহান স্বাধীনতার জন্যে তার পেছনের অবয়বটি ছিলো ২৫শে মার্চ রাতে অবরুদ্ধ ও পশ্চিম পাকিস্তানে বন্দী শেখ মুজিবুর রহমান। এই একজন মাত্র নেতার উপড়ে ভরসা করেই তখনকার আরো বিচক্ষন প্রগতিশীল ও প্রতিশ্রুতিশীল জননেতা সহ প্রত্যন্তগ্রামের একজন কিশোর মুক্তিযোদ্ধাও হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন। এই সব মহান মুক্তি যোদ্ধারা যেমন এক একজন আলাদা ভাবে আমাদের মুক্তি যুদ্ধের একেকটি অধ্যায়কে বিলঙ করেন তেমনি সামগ্রীক ভাবে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধকে বঙ্গবন্ধুই একমাত্র একক ভাবে বিলঙ করেন।
কাজেই আজ যদি বিএনপিকে সামনে এসে দাঁড়াতে হয় আমার মনে হয় নীচের এই বিষয়গুলো পরিষ্কার করেই তবে তাকে আসতে হবে।
১। বিএনপিকে বাংলাদেশের বাঙ্গালীর রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে হবে।
২। বিএনপিকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যপারে তার অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে।
৩। বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে।
৪। মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশের মুলনীতিতে আস্থা প্রকাশ করে সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।
৫। ঐতিহাসিক সকল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সম্পর্কে কটুক্তি সমালোচনা বন্ধ করে তা শুধুমাত্র একাডেমিক পর্যায়ের গবোষনার বিষয়ে সীমাবদ্ধ রাখতে দিতে হবে।
এ সব বিষয় সমাধান না করে কোন নির্বাচন, কোন আলোচনাই ফল বয়ে আনবে না। এ বিষয় গুলো মাথায় রাখলে সম্ভবতঃ অধ্যাপক জাফরের অবস্থান বুঝতে কিছুটা সহায়ক হবে, অন্ততঃ আমি যেভাবে তাঁকে মূল্যায়ন করি।
@কেশব কুমার অধিকারী,
আপনার মন্তব্যের জবাব নীচে দিয়েছি। ধন্যবাদ।
স্যার জাফর ইকবালের কোমলমতি, সাধাসিধে ভক্তকুল ইদানীং কিছুটা বিভ্রান্ত হচ্ছেন। তার এক্সট্রিমিস্ট কথাবার্তায় বিভ্রান্ত হয়ে ভাবছে স্যার নিশ্চই আবেগাক্রান্ত হয়ে ঠিকভাবে চিন্তা করতে পারছেন না এজন্যেই এরকম লাগামহীন কথা বলছে। বেচারা বাংলার চিরকিশোরগুলি বোঝে না যে এই তীব্র মৌলবাদী লোকটি কোনো কিছুই না বুঝে বলে না। যে লোক একমুহুর্তে বলে যে এদেশে গনতন্ত্রের দরকার নেই আর তার পরমুহুর্তেই বলে যে ভাংচুড়-পোড়ানো জন্যে বিএনপি’র জনপ্রিয়তা শুন্যে নেমে যাচ্ছে, সেই লোক ভালো করেই জানে বাংলাদেশের আসল পরিস্থিতি কি। শুন্য জনপ্রিয়তার বিএনপি-জামাতের দেশে গনতন্ত্র থাকলে কি অসুবিধা সেই সহজ, স্বাভাবিক কথাটি সে তুলবে না। সে জানে যে জনমনে মৌলবাদকে শক্ত করে ধরে রাখার একমা্ত্র উপায় বিভ্রান্ত চিন্তায় অভ্যস্থ করা। যুক্তি দিয়ে চিন্তা করা শুরু করলেই মৌলবাদের ভিত্তি ধ্বসে পড়া শুরু হয়। ফ্যাসিস্ট রাজত্বের জন্যে জনগনকে বিভ্রান্ত রাখা একান্ত প্রয়োজন।
এই Taurus Caecus টি তার ভক্তকুলকে মৌলবাদে আচ্ছন্ন রাখার জন্যে যা বলার দরকার তাই বলবে, সেই কথাগুলি যত যুক্তিবিহীন আর মিথ্যাই হোক।
@সফিক,
জাফর ইকবালের প্রতি মিথ্যা অপবাদ ও আপনার অশালীন মন্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাই।
@সফিক,
আপনার চোখা মন্তব্যগুলো বুকে বড্ড বেঁধে!
স্বীকার করছি, আমি ডঃ জাফর ইকবালের একজন ভক্ত, কিন্তু অন্ধভক্ত নই; বিভ্রান্তও বোধ হয় না। আমি বিশ্বাস করি তিনি দেশপ্রেমিক এবং দেশের মঙ্গলের জন্য নিবেদিত-প্রাণ। তবে তাঁর পক্ষপাতিত্ব আছে এবং তা কখনো কখনো দৃষ্টিকটু। আমার মনে হয় তাঁর মুক্তিযুদ্ধের “ফিল্টার”-র সাথে আরও কিছু ফিল্টার যোগ করে নেয়া উচিত।
@সফিক,
আপনার মন্তব্য যুক্তিহীন এবং বিভ্রান্তকর।জাফর ইকবাল সমালোচনার উর্ধ্দে নয়। কিন্তু কোন রকম যৌক্তিক বিশ্লেষণ ছাড়া তাকে মৌলবাদী আখ্যা দেওয়া মৌলবাদী মানসিকতার পরিচয় দেয়।আপনার কাছে মৌলবাদের সংজ্ঞা কি জানি না।কিন্তু কেন জাফর ইকবালকে মৌলবাদী বলেছেন তা যৌক্তিক ভাবে বিশ্লেষণ করে বলবেন কি?
গনমানুষের তন্ত্র যদি মধ্যযুগের মৌলবাদী দর্শনের বহিঃপ্রকাশ হয় তবে সেই তন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করা আবশ্যক মনে করি।
জিয়াউর রহমান সম্পর্কে মিথ্যে বানোয়াট কি কি বলা হয়েছে তার কিছু নমুনা দিলে ভাল হত। তেমন কিছু আমার নজরে পড়েনি বলেই বলছি।
@শাফি আমীন,
জিয়া প্রসঙ্গে গাফফার চৌধুরী— “ভদ্রলোকের যুদ্ধ করার ইচ্ছা ছিল না। …… মুক্তিযুদ্ধের সময় ডাবল এজেন্ট হওয়ায় তার ‘জেড ফোর্স’ কে ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছিল। জেনারেল ওসমানীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার ফলে তার কোর্ট মার্শাল হয়েছিল।“
আইন প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম—“সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানের চর ছিলেন।“
আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. —, “মুক্তিযুদ্ধকালে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ছিলেন পাকিস্তানের গুপ্তচর।“
তথ্যসূত্রঃ অন্তর্জাল
@মনজুর মুরশেদ,
উদ্ধৃত ঐতিহাসিক সত্যগুলি উচ্চারণ করতে আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মি-মন্ত্রী হতে হয় না, সামান্য গবেষণা করলে, সামান্য চোখ-কান খোলা রাখলেই যে কোন মুক্তমনা বা মুক্তবুদ্ধির মানুষের কাছে সত্যগুলি উদঘাটিত হওয়ার কথা! আশ্চর্য হল, যে লোকটি ক্ষমতায় বসেই দেশকে পাকিস্তানের আদলে আমূল সাজিয়েছেন, চিহ্নিত রাজাকারকুলশিরোমনি শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিয়ে প্রকাশ্যে লম্ফঝম্ফ করার অবারিত সুযোগ করে দিয়েছেন, স্বাধীনতার স্থপতির আত্ম-স্বীকৃত খুনিদের বিদেশী দূতাবাসে নিয়োগ দিয়ে পুরুষ্কৃত করেছেন, একে একে ভেঙ্গেচুরে তছনছ করে দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের প্রতিটি ঐতিহ্য/সংগঠন, সেই জিয়ার নামে যতবার ‘মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা’ জপ করা হয়, ততবারই তা হাস্যকর হয়! সঙ্গে সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধকেও ভয়ানক অপমান করা হয়!
বিদেশী লেখকদের গ্রন্থ বা সর্ব-সাম্প্রতিক উইকিলিকসে জিয়াকে সম্পূর্ণ উন্মোচন করেছে; সে কে ছিল, কেন ছিল, কাদের ছিল– এইগুলো এখন প্রমাণিত সত্য!
@গুবরে ফড়িং,
কিছু সুস্পষ্ট রেফারেন্স দিন, পড়ে দেখি। সত্য মনে হলে জিয়াউর রহমান সম্পর্কে মত পাল্টাতে দ্বিধা করবো না। ধন্যবাদ।
@মনজুর মুরশেদ,
পুনশ্চঃ ক্ষমতায় আসার পরে জিয়া যা করেছেন তা জানি, আমি জানতে চাইছি, “মুক্তিযুদ্ধকালে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ছিলেন পাকিস্তানের গুপ্তচর” এই বক্তব্যের স্বপক্ষে সরাসরি প্রমাণ।
@মনজুর মুরশেদ,
ক্ষমতায় আসার পর জিয়া যা করেছেন, সেইটুকুই আপাতত যথেষ্ট আমার জন্য এই ধারনাটি আপাদমস্তক প্রত্যাখান করতে যে, ‘জিয়া একজন মহান মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন’। বরং, তিনি রাজাকারদেরও চেয়েও নিকৃষ্ট ছিলেন, এই ধারণাটিই আরও জোরাল হয়েছে, যেহেতু তিনি কালো চশমার আড়ালে রাজাকারবৃত্তিকে ঢেকে রাখতেন, যা চিহ্নিত রাজাকারগণ করতেন না।
আর উইকির এই যুগে রেফারেন্স চাইছেন?
@গুবরে ফড়িং,
“মুক্তিযুদ্ধকালে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ছিলেন পাকিস্তানের গুপ্তচর”……………এর স্বপক্ষে প্রমাণ চাইছি।
@মনজুর মুরশেদ,
স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম রচিত ‘লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে’ গ্রন্থটি বা এর ইংরেজি সংস্করণ A Tale of Millions পড়ে দেখতে পারেন। একই লেখকের বই “একটি ফুলকে বাঁচাব বলে” ।
@গীতা দাস,
ধন্যবাদ গীতাদি! কৈশোরে ইংরেজী বইটি হাতে এসেছিল বলে মনে পড়ছে, কিন্তু ইংরেজীর দুর্বলতার জন্য তখন পড়তে পারিনি। যদি সমস্যা না থাকে, তাহলে ঠিক কি লেখা আছে একটু ধারণা দিলে ভাল হত। ভাল থাকবেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করণ, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সাহেবের ক্রমাগত নতুন ইতিহাস উদঘাটন, রাজাকার আলবদরদের পুনর্বাসন এবং মন্ত্রিত্ব প্রদান, এসব কি আপনার পূর্ব-পুরুষেরা (যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছিল) সমর্থন করতেন বলে মনে হয় আপনার? আপনার জ্ঞাতার্থে বলছি, আমি কোন দলের নই। আমার কথা, আওয়ামী লীগ ধোয়া তুলসিপাতা না হতে পারে, কিন্তু স্বাধীনতা বিরোধী নয়। আওয়ামী লীগ কোন ভুল করে থাকলে সেটা শুদ্ধ বলে বিবেচিত হবে এমন ভাবছেন কেন? জামাতের পক্ষে দাড়াবার আসল যুক্তিটা বলুন না। আওয়ামী লীগকে যদি অনুসরন করতেই হয় তাহলে বি এন পি ওদের জোট থেকে বের করে ফাঁসির দড়ি পড়ানোর ব্যবস্থা করুক। জামাত দশবছর আগে যে হুমকী ছিল, আজ তার চেয়ে অনেকগুন বেশী, তা কি বোঝেন না! আগুন নিয়ে খেলা এক জিনিষ, আর আগুন লাগানো আরেক জিনিষ।
@শাফি আমীন,
সবার কথা জানি না, তবে অনেকেই তারেক রহমানের বক্তব্য সমর্থন করতেন না বা করেন না।
আপনি কোন রাজনৈতিক দল সমর্থন করেন না বলে একথা বলতে পারছেন। কিন্তু আমাদের চারপাশে এমন অনেক মানুষ আছেন, যারা নেতা বা দলের ভুল দেখতে পান না বা দেখলেও নিশ্চুপ থাকার সিদ্ধান্ত নেন। যখন বুদ্ধিজীবীদেরও একই কাতারে দেখি তখন বেশ কষ্ট হয়। আমি কোন বিশেষ দলের সমর্থকদের কথা বলছি না।
জামাতের পেছনে দাঁড়াই নি; জনমত কে শ্রদ্ধা করতে চেয়েছি। এতোদিন তো আওয়ামী লীগই ক্ষমতায়, ফাঁসি দিতে দেরী কেন?
ক্ষমতার মাঠের সবচেয়ে ক্ষমতাহীণ জনগন। শুধু মাত্র ভোটের জন্যেই জনগনের প্রয়োজন। আসলে ভোটের জন্যেও না, শুধু মাত্র দেখানোর জন্যেই যে জনগন ভোটের দ্বারাই তাদের ক্ষমতায় বসিয়েছে।
আবার ক্ষমতার বাহিরে যারা থাকে তারাও এই জনগনের দোহাই দিয়ে ক্ষমতায় যাবার জন্যেই সব কিছু করে কিন্তু জনগনের জন্যে না।
বাংলাদেশের গনতন্ত্র শুধু ভোটের মাধ্যমেই বোঝা যায় (!)। আসলেই কি এটা গণতন্ত্র ?
বর্তমানে হাসিনার সরকার যা করতেছে তা একনায়কতন্ত্রই। কিন্তু গনতন্ত্রের (শুধু ভোট দেওয়া) খালেদায় পক্ষে থাকার কোন উপায় আছে কি ? (এই দেশে হাসিনা এবং খালেদা ছাড়া অন্য কাউকে সাপোর্ট দেওয়ার কেউ নাই )
আর এই সুযোগে হাসিনা গনতন্ত্রের নামে একনায়কতন্ত্র কায়েম করে স্বৈরাচারীতার দিকে এগুচ্ছে কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের বিকল্প কারো পক্ষে কথা বলার মত কাউকেই আমরা খুজে পাচ্চি না।
আমাদের সেই মহান মুক্তিযুদ্ধ এখন রাজনৈতিকদের রাজনীতির মূলধন হয়ে গেছে।
@তামান্না ঝুমু,
ঠিক বলেছেন; মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ!
@মনজুর মুরশেদ,
১৬/০১/২০১৫ তারিখে দৈনিক জনকণ্ঠে মুহম্মদ জাফর ইকবালের সাদাসিধে কথা ॥ একটুখানি শান্তি লেখাটি পড়লাম। আপনি বললেন-
জাফর ইকবালও তো সেই আশা- হতাশাই ব্যক্ত করেছেন তার লেখায়-
আমাদের দেশে নির্বাচনের বা গনতন্ত্রের দরকার নেই কথাটা তিনি কোথায় বলেছেন? আমি যতটুকু বুঝেছি, তিনি বলতে চেয়েছেন গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে নির্বাচন করে সরকার গঠন করার মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করা জনগনের সাথে বেঈমানী করা, এটা সুষ্ঠ গনতান্ত্রীক প্রক্রীয়া নয়, এটা ভাওতাবাজী এটা ক্ষমতা দখলের গনতন্ত্র।
একনায়কতন্ত্রের সেবা বা ব্যক্তিপূজা করার কোন ইশারা কি এখানে তিনি দিয়েছেন যে ইকবাল সাহেবকে এই সবক শোনাতে হলো? তারেক জিয়া শেখ মুজিবকে নিয়ে, যে মন্তব্য করেছেন তার শাস্তি হওয়া উচিৎ। মুজিবকে অস্বীকার করা, দেশদ্রোহী বলা, রাজাকার বলে গালি দেয়া আর বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করা একই কথা। শেখ মুজিব ছাড়া এ দেশের স্বাধীনতার ইতিহাস যেমন লেখা সম্ভব নয় তাকে অস্বীকার করে এ দেশে রাজনীতি করাও সম্ভব নয়। জাফর ইকবালের সহজ কথাটাকে টুইষ্ট করে এখানে বিভ্রান্তি ছড়ানোর কোন সুযোগ নেই। তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মত্যাগী কাউকে তুচ্ছ করেন নি।
কেশব কুমার অধিকারী অনেক কিছু ব্যাখ্যা করে দিয়েছেন, আমি আর বিস্তারিত বলতে যাচ্ছিনা। জাফর ইকবালের এই লেখার উপর ভিত্তি করে বাকশাল নিয়ে তাকে প্রশ্ন করাটাই অবান্তর। এখানে কিছু খোরাক আছে জানতে চাইলে পড়ে নিয়েন।
আরো কিছু আছে এখানে-
মুক্তিযুদ্ধের অপর নাম শেখ মুজিব
@আকাশ মালিক,
আমি কোথাও বলি নি যে জাফর ইকবাল উপরের বাক্যটি লিখেছেন। এপ্রসঙ্গে আমি লিখেছি ‘আপনি সরাসরি না বললেও যা বোঝাতে চেয়েছেন তা হল আমাদের দেশে যেহেতু যথার্থ গণতন্ত্র নেই, তাই নির্বাচনের তেমন উপযোগিতা নেই।‘ ডঃ ইকবাল দেশে গণতন্ত্রের দুর্দশা নিয়ে বলেছেন, কিন্তু এর বিকল্প কি বা এর সমাধান কি হতে পারে সে সম্পর্কে কিছু বলেন নি। এ থেকে মনে হতে পারে উনি চাইছেন যে যেভাবে বিগত নির্বাচনে সরকার নির্বাচিত হয়েছে সেটাই চালু থাক।
অধ্যাপক জাফর ইকবালকে সবক শোনাবার বা তাঁর কথা বিকৃত করার ইচ্ছা বা ধৃষ্টতা কোনটাই আমার নেই। আমি বাংলাদেশে চলমান ব্যক্তিপূজা, পরিবারতন্ত্র, দলের প্রতি অন্ধ সমর্থন ইত্যাদির বিরুদ্ধে নিজের অভিমত দিয়েছি মাত্র।
বাকশাল-সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর অধ্যাপক কেশব অধিকারীকে দিয়েছি; দয়া করে দেখে নিন। ধন্যবাদ।
বরাবরের মত আপনার মন্তব্যে দ্বিমত প্রকাশ করার কিছু পেলাম না। ব্যক্তিগতভাবে আমি বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর কোনটিই সমর্থন না করলেও সরকার প্রধান হিসাবে শেখ হাসিনাকে খালেদা জিয়ার চেয়ে যোগ্যতর বলে মনে করি। সরকার পরিবর্তন হলে দেশের অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে সে সম্ভাবনা আছে, কিন্তু তবুও মনে করি যে জনগণই ঠিক করুক কে তাদের প্রতিনিধি হয়ে দেশ চালাবে। আমার মূল উদ্বেগ বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সংস্কৃতি নিয়ে। দেশে ভারতের মতো একটা শক্তিশালী নির্বাচন ব্যবস্থা গড়ে উঠুক, পরাজিত প্রার্থী/দল জনায় মেনে নিয়ে সংসদে বসুক, ভাল কাজ করে জনগণের সমর্থন নিয়ে আবার ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করুক আপাতত এটুকুই চাওয়া। এর বাইরে আপনি যুদ্ধাপরাধসহ অন্যান্য যে ইস্যুগুলোর বিষয়ে বলেছেন সেগুলো নিয়ে অবশ্যই কথা বলতে হবে, যদি প্রধান দুটো দল এগুলো নিয়ে ঐক্যমতে পৌঁছায় তবে তা হবে খুবই আশার কথা; কিন্তু অবস্থা দেখে মনে হয় না অচিরেই এরকম কিছু ঘটবে।
@মনজুর মুরশেদ,
– প্রত্যাশাগুলি তেমন কিছু না হলেও আমাদের প্রেক্ষাপটে এগুলিই অনেক অনেক বেশী চাওয়া। আমরা যত যাইই বলি আর ৫২, ৭১, ৯০ নিয়ে অহম বোধ করি আমাদের চিন্তা, মনন, সর্বোপরি মানসিক পরিপক্কতায় আমরা ভারতীয়দের চাইতেও বহু পেছনে আছি। গনতন্ত্র গনতন্ত্র করে বহু চেঁচামেচি হুলস্থুল হলেও আসলে গনতন্ত্র কি তাইই আমরা জানি না, কারন আমরা সংস্কৃতিগতভাবেই গনতন্ত্রের সাথে পরিচিত নই। এখনো গনতন্ত্র বলতে আমরা বুঝি কেবল ভোটের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন।
রাজনৈতিক সংস্কৃতি আরো খারাপ হওয়া ছাড়া ভালর দিকে যাচ্ছে না। দুই বড় দলের মধ্যে মেরুকরন যত তীব্র হয়েছে সেটা সহজে কাটবে না, তিক্ততা আরো বেড়েই যাবে। যুদ্ধপরাধী বিচার ইস্যুতে যারা সোচ্চার তারা মোটামুটি আওয়ামী লীগকে ব্ল্যাংক কার্ড প্রদান করেছে, তারা জনমত ফত ভোট ফোটের তেমন দরকার দেখে না। অন্যদিকে বিএনপি জামাত শিবির গোষ্ঠির সমর্থকরা আওয়ামী সরকার পতনের লক্ষে পথে ঘাটে নিরীহ লোকের গায়ে পেট্রোল ঢেলে জ্বালিয়ে দেওয়াতেও রাজী আছে। রাজনৈতিক সংস্কৃতির আর আছে কি? এর থেকে উত্তরন কিভাবে সম্ভব? সবচেয়ে ভয়ংকর কথা হল যারা মানুষ জ্বালিয়ে মেরেও ভোট পেয়ে ক্ষমতায় যাবে (ধরে নিচ্ছি সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি/জামাত জিতবে) তারা আদৌ কোন গনতন্ত্র আমাদের দেবে? অন্যদিকে আওয়ামী লীগ আজীবন ক্ষমতায় থাকে সেটাই বা কতটা সূস্থ চিন্তা?
@আদিল মাহমুদ,
সহ মত। অবচেতন মনে এদেশের অনেক সাধারন মানুষ আন্দোলন নামে চলা বিরোধী দলের ভাংচুর আগুনকে গণতন্ত্রের অংশ হিসেবে মেনে নেয় কারন তারা জানে এখন যারা ক্ষমতায় আছে তারাও বিরোধী দলে থাকাকালীন ঠিক এই কাজগুলোই করেছিল। একারনেই একটা সুষ্ঠ নির্বাচন হলে এই মুহূর্তে বিএনপি-জামাত জোটের জেতার সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি। পরাজয়ের ভয়ে তাই সরকারী দলও যে কোন মুল্যে ক্ষমতায় থাকার ব্যাপারে মরিয়া। বিএনপি ও আওয়ামী লীগ দুটো দলই বর্তমানে আদর্শহীন রাজনীতির চর্চা করছে। আদর্শহীন একটি রাজনৈতিক দলের টিকে থাকার জন্য ক্ষমতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাইতো দুটো দলের কাছেই আজ ক্ষমতাই গণতন্ত্র ,গণতন্ত্রই ক্ষমতা।
জাফর ইকবাল স্যার চিরদিনই আবেগ তাড়িত মানুষ, তার চিন্তাভাবনায় আবেগ বাস্তবকে ছাপিয়ে যায় অনেক সময়ই। উনি নিজে যেভাবে ভাবতে পছন্দ করেন সেভাবেই দেশের আম জনতা ভাববে এভাবে চিন্তা করার এক রকমের অদ্ভূত মানসিকতা ওনার আছে, এভাবে উনি বিচরন করেন এক ধরনের কল্পরাজ্যে। যে কল্পরাজ্যে জনগনের একমাত্র বিবেচ্য বিষয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, পক্ষ/বিপক্ষ শক্তি, বংগবন্ধু………
– বাংলাদেশে জীবনের অধিকাংশ সময় বসবাস করেও উনি এখনো বুঝতে পারেননি যে নির্বাচনের সময় এসব ইস্যু তেমন কোন প্রভাব ফেলে না। বিএনপির নেতানেত্রীরা চিরকালই বংগবন্ধুকে হেয় করে নানান বক্তব্য নানান মাত্রায় দিয়ে এসেছে, খালেদা ম্যাডাম ১৫ আগষ্ট বড়সড় কেকে কেটে জন্মদিন পালন করে আসছেন তাতে তাদের ভোট ব্যাংক ধ্বসে যায়নি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তারা গো-হারা হেরেছিল বংগবন্ধুকে হেয় করার কারনে নয়। বংগবন্ধুকে হেয় করা মন্তব্যের কারনে বিএনপি জনগনের সমবেদনা হারাবে এই ধরনের ভাবনা ভাবতে ভাল লাগলেও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তা নিতান্তই শিশুশূলভ।
আমিও বিশ্বাস করি যে এই দেশের আসলেই ফেয়ার ইলেকশন, গনতন্ত্র এমনকি স্বাধীনতা এসবেরও আসলে তেমন বড় কোন অর্থ নেই। এসব নিয়ে বড় বড় কথা বলা, আন্দোলনের নামে অরাজকতা সৃষ্টি করা আসলে আমিও ক্ষমতা চাই ছাড়া আর কিছু না। কিন্তু তারপরেও নির্বাচনের মাধ্যমেই সরকার গঠন করতে হয়, নির্বাচন এড়ানো যায় না। গনতন্ত্রে আস্থা চলে গেলে তার বিকল্প কি তা বলতে হবে।
শুধু অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন দিলেই অতীতের মত বর্তমান সংকট কেটে যাবে এখনকার পরিস্থিতি আর তেমন নয়। পরিস্থিতি এখন অনেক জটিল। মোদ্দা কথা হল বড় দুই দলের মধ্যে অমীমাংসিত বিষয় আছে অনেক যেগুলির ব্যাপারে একটা গ্রহনযোগ্য ষ্ট্যান্ডে না আসা গেলে কোনরকম সংলাপ…আলোচনা……সুষ্ঠু নির্বাচন এসবে কাজ দেবে না।
বর্তমান সরকার কেয়ার টেকার সরকারের দাবী মানেনি বুঝলাম। কেয়ার টেকার সরকারই কি চুড়ান্ত ফ্রী ফেয়ার ইলেকশনের গ্যারান্টি দেয়? সেই বিশ্বাস ভংগ করতে বাধ্য করেছে বিএনপি জামাতের গত সরকারই। তারা চমতকারভাবে দেখিয়েছিল যে কেয়ার টেকার সরকার ব্যাবস্থাতেও কি চমতকারভাবে নানান কারসাজি করা যায়। কাজেই কেয়ার টেকার ব্যাবস্থার ওপর থেকে আস্থা চলে যাবার দায় বিএনপিরও নিতে হবে। বড় বড় অন্যায় করবে আর সুশীলতার স্বার্থে পলিটিক্যাল কারেক্টনেসের স্বার্থে সরাসরি কাউকে কিছু না বলে সকলকে সমান দায় দিতে হবে এভাবে চলে না। রাজাকার বদরদের দলের সাথে ভবিষ্যতে কোন রকম সম্পর্ক না রাখা, বংগবন্ধু হত্যাকারীদের শেল্টার না দেওয়া, ২১শে আগষ্ট হত্যাকান্ড সম্পর্কে অবস্থান পরিবর্তন না করলে বিএনপির সাথে আলোচনা সংলাপ এসব কিছুই অর্থহীন। এসব বিষয় বারে বারেই ঘুরে ফিরে আসে, এসবের চির সমাপ্তি প্রয়োযন।
দেশের মানুষ গনতন্ত্র ফন্ত্র এসব নিয়ে তেমন মাথা ঘামায় না। অতীতে এসব নিয়ে বহু আন্দোলন হয়েছে, অনেকের প্রান গেছে। মানুষ এটা বুঝেছে যে নিজের জান বিপন্ন করে এসব আন্দোলন আসলে যারা ক্ষমতায় নেই তাদের ক্ষমতা চাই ছাড়া আর তেমন কিছু নয়। তাই সরকারের জনসমর্থন যেমনই থাকুক না কেন, বিরোধী দলের আন্দোলনে তেমন জনসম্পৃক্ততা নেই। আন্দোলন মূলত সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ছাড়া তেমন কোন ইমেজ তৈরী করতে পারছে না। যদিও তাতে মনে হয় না ভোটের রাজনীতিতে চুড়ান্ত তেমন প্রভাব পড়বে বলে। বিরোধী দল চাইবে আন্দোলনের নামে আরো চরম অরাজকতা সৃষ্টি করে জরুরী অবস্থা জারি করা, কতটা সফল হবে কে জানে, এখনো মনে হচ্ছে না সফলতা তেমন নিকটবর্তী। আশানুযায়ী আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও তেমন কোন উতসাহ দেখাচ্ছে না। অবস্থা সম মিলিয়ে কেবল হতাশারই নয়, চরম হতাশার। পরিস্থিতি মনে হয় না স্বাভাবিক হবে বলে।
@আদিল মাহমুদ,
সুচিন্তিত মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ; আমার জবাব নীচে।
@আদিল মাহমুদ, জাফর ইকবাল সম্পর্কে এমন তাচ্ছিল্ল্যপূর্ণ মূল্যায়ন আমি এর আগে দেখিনি? আবেগ তাড়িত, বাসতবতা বিবর্জিত, একেবারে অবোঝ শিশু যেন! উনি আমার স্যার নন, বয়স আমাদের একই প্রায়। উনার প্রত্যেকটি লেখা মনোযোগ দিয়ে পড়ি। আবেগ যাদের নেই, তারা কি লিখেন? হয়ত লিখেন, পয়সার জন্য। আবেগ অবশ্যিই আছে, তবে আবেগ তাড়িত বলতে আবেগে অন্ধ বলতে চেয়েছেন মনে হচ্ছে, সেটা উনি কক্ষনো নন। বাস্তব জগত সম্পর্কে উদাসীন বলেতে চেয়েছেন উনাকে। আমি কি আর বলব, সত্যি কথাটা বললে আমাকেও তার দলেই ফেলবেন ( তাতে অবশ্য আমার কোন আপত্তি নেই)। সত্যি কথাটা হল, উনার মত বাস্তবতা সম্পর্কে সচেতন আমি আশে পাশে কম লোককেই দেখছি। গনতন্ত্র পুনরোদ্ধারের জন্য এবং গণতন্ত্র রক্ষার জন্য বাস্তবজ্ঞানীরা দলে দলে যখন দেশটাকে উচ্ছ্বন্নে নেবার ব্যবস্থা করছেন, উনি পোড়া মানুষগুলোর কথা বলছেন, দেশের ভবিষ্যত নাগরিকদের সুশিক্ষার কথা ভাবছেন। বর্তমানকে ডিঙ্গিয়ে দূর ভবিষ্যত দেখতে না পাড়াটাই কি বাস্তবতা সচেতনা। আমি নিশ্চিত জানি, উনার বিদেশের চাকুরী ছেড়ে এদেশে মাষ্টারি করাকেও বেশীরভাগ বাস্তবজ্ঞানীরা আবেগ তাড়িত অবাস্তব বেকুব সিদ্ধান্ত বলেই মনে করেন।
@শাফি আমীন,
তাচ্ছিল্য, শ্রদ্ধা এসবের কি কোন ধরাবাধা সংজ্ঞা আছে? উনি ক’বছর আগে মায়ানমার থেকে আসা রোহিংগাদের বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতি প্রদানের পক্ষে লেখায় অনেকে তাকেও ছাগু শ্রেনীর বলে বিশেষায়িত করেছিল তা কি আপনি জানেন?
আমি জাফর ইকবাল স্যারকে সব মিলিয়ে প্রচন্ড পছন্দ করি, তার মানে এইই না যে ওনার সমালোচনা করা যাবে না বা উনি যাইই লিখবেন তাতেই মুগ্ধ হতে হবে। এখানে ওনার নির্দিষ্ট একটি তত্ত্বের সমালোচনা আমি করেছি যা শতভাগ আবেগ প্রসূত, বাস্তবতা বিবর্জিত।
বংগবন্ধুকে নিয়ে তারেক রহমান কটূক্তি করায় দেশে বিএনপির প্রতি লোকে বিরূপ ভাবাপন্ন হয়ে যাবে, বিএনপি সহানুভূতি হারাবে এই জাতীয় ধারনা কতটা বাস্তব বলে আপনি মনে করেন? মাত্র গত সপ্তাহে তারেক সাহেবের ভাই এর জানাযায় কত লোক জমায়েত হয়েছিল সেটা কি দেখেছেন? তারা সব পাকিস্তন থেকে এসেছিল? বিএনপি জামাত ২০০১ সালের নির্বাচনে ব্রুট মেজরিটি পেয়ে সরকার গঠন করেছিল বংগবন্ধু সম্পর্কে শ্রদ্ধাপূর্ন অবস্থানের কারনে? বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে যার ন্যূনতম ধারনা আছে সেইই জানে যে দেশে ভোটাররা বিএনপি/আওয়ামী লীগ দুই ধারায় বিভক্ত। বিএনপি ভক্তরা বংগবন্ধু সম্পর্কে ভক্তিশ্রদ্ধার তেমন ধার ধারে না, গালিগালাজ শুনলে উলটা সাবাসিই দেয়। এই দুয়ের বাইরে সামান্য কিছু ফ্লোটিং ভোটার যারা আছে তারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস……বংগবন্ধু/জিয়া এসব নিয়ে মাথা ঘামায় না। বংগবন্ধু সম্পর্কে কটুক্তিতে আওয়ামী ধারা ও তার বাইরে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ যারা বড় করে ভাবেন তারা ছাড়া এক বড় অংশের সমর্থনই আছে। এসব কটুক্তিতে সামগ্রিক কোন প্রভাব পড়ে না। জাফর ইকবাল স্যার সম্ভবত মনে করেন যে বংগবন্ধু সম্পরকে কটুক্তি করায় বিএনপির জনসমর্থন শূন্যের কোঠায় নেমে যাবে।
আবেগের দরকার আছে, আবেগ ছাড়া মানুষ হয় না, স্বপ্ন হয় না। স্বপ্ন নিয়েই এগুতে হয়। তাই বলে সম্পূর্ন বাস্তবতা বিবর্জিত আবেগের প্রচারের মাধ্যমে ভুল ধারনা লোককে গিলিয়ে দেওয়া সমর্থন করা যায় না। জাফর ইকবাল স্যারের লেখা নুতন প্রজন্মের অনেক ছেলেমেয়ে মন্ত্রমুগ্ধের মত বিশ্বাস করে। ওনার অনেক লেখাতেই দেখি এই ধরনের অবাস্তব ধারনার প্রচার।
কোন এক অজানা কারনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যারা উদ্ভাসিত তারা বলতে গেলে সকলেই এ ধরনের নানান অবাস্তব ধারনায় বিশ্বাস করেন যা অত্যন্ত হতাশাজনক। তারা মোটামুটি বিশ্বাস করেন যে দেশের ৯৫ ভাগ লোকে (৫ ভাগ জামাত) মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় টগবগ করে ফুটছে, রাজনৈতিক দল পছন্দ করার সময় খালি কে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কে বিপক্ষের এইই খালি বিবেচনা করে। ফলাফল হবে বিএনপি জামাত আবারো ভোটে জিতলে আকাশ থেকে মাটিতে পড়া।
কে দেশে থাকে কি বিদেশে থাকে সেসব ব্যাক্তিগত বিষয় নিয়ে আলোচনা অবান্তর।
@আদিল মাহমুদ,
:yes: :good: