ধর্ম মানেই অশান্তি, অবাস্তব, বানোয়াট, ভুয়াবাজির ব্যবসা। শান্তির ধর্ম বলে কিচ্ছু নেই। উপরে শান্তির লেবেল লাগানোর মানে হচ্ছে, ভেতরে তা অসম্ভব বাজে।
প্রতিটি ধর্মই বাজে। ভাল ধর্ম বা শান্তির ধর্ম বলতে কিছু নেই। ধর্মগ্রন্থগুলি রূপকথা, গাঁজাখুরি, মিথ্যা, প্রতারণা ও অমানবিকতার ডিপো। পৃথিবীতে প্রতিটি ধর্মেরই প্রচার ও প্রসার ঘটেছে মানবরক্তসাগর পেরিয়ে। ইতিহাস তার সাক্ষী। ধর্ম মানেই ধোঁকাবাজি, ভণ্ডামি, হিংস্রতা, জ্ঞান-বিজ্ঞান বিমুখতা, লোভ-লালসা ও আতঙ্কবাদের চূড়ান্ত। আমরা যারা আজ সেই অন্ধকার গহ্বর থেকে বেরিয়ে এসেছি, তাদের কাছে ধর্মের ইতিহাসগুলি ভয়াবহ রকমের রূপকথা মনে হয়। ওসব পড়লে ভয়ে আমাদের গা শিউড়ে ওঠে, বিবমিষা লাগে প্রবল ঘৃণায়। পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ঘোরে – এই অপরাধে খ্রিস্টানরা বিজ্ঞানী ব্রুনোকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছিল, চিরবন্দি করে রেখেছিল বিজ্ঞানী গ্যালিলিওকে। ধর্মগুরুরা নির্বিচারে পুড়িয়ে মেরেছে নিরপরাধ মানুষকে রূপকথার ডাইনি আখ্যা দিয়ে। মুসলিম বিজেতারা কচুগাছের মতন মানুষ কেটেছে, জনপদ ধ্বংস করেছে, নিশ্চিহ্ন করেছে জ্ঞান-বিজ্ঞান শিল্প-সংস্কৃতির ভাণ্ডার। অহিংস বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার ও প্রসারের জন্যও সম্রাট অশোক হত্যা করেছিল অগণিত মানুষ। এরকম ইতিহাস রয়েছে প্রায় সকল ধর্মেরই।

জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প-সাহিত্য, মানুষের মনোভাব, চিন্তা-চেতনা ইত্যাদির উন্নতি ও উন্মেষ ঘটতে দেখলেই ধর্মের দোহাই দিয়ে লোভী ও ভীতু কাপুরুষ অমানুষ ধার্মিকেরা তার গলা টিপে হত্যা করতে চেয়েছে, করেছেও অনেক। এইভাবে কেটেছে শত শত বছর। পৃথিবীতে হাজার হাজার ধর্ম এখনো বিদ্যমান। এখনো রয়েছে হাজার হাজার প্রকারের অন্ধবিশ্বাসী। সবগুলিই প্রগতি-বিরোধী, মানবতা-বিরোধী, জ্ঞান-বিজ্ঞান বিরোধী। তবুও মানুষের মন-মানসিকতার উন্নতি হচ্ছে, পৃথিবীর নানাবিধ উন্নতি হচ্ছে। হুমায়ুন আজাদ এর কারণ বলেছেন, পৃথিবীতে ধর্ম থাকার পরেও পৃথিবীর উন্নতি হচ্ছে, কারণ মানুষ কখনোই পুরোপুরি ধার্মিক নয়। ধর্মগুলিতে এত এত বাজে কথা আছে যে, ধার্মিকদের পক্ষেও সেসব পুরোপুরি মেনে চলা সম্ভব নয়। অনেক বিশ্বাসী তাদের ধর্মের বাজে কথাগুলি কারুর কাছে শুনতে পেলে বলে থাকে, না, না, অসম্ভব, এমন খারাপ কথা আমার ধর্মে থাকতেই পারে না।

ধর্ম নিয়ে হানাহানি খুনাখুনির অনেক অনেক যুগ ত পেরিয়েছে। আজকের যুগকে আমরা সভ্য যুগ বলে দাবি করে থাকি। আজ মানুষের জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিক্ষা-দীক্ষা, মানসিকতা ইত্যাদির অনেক উন্নতি হয়েছে। পৃথিবীর গণ্ডি ছাড়িয়ে গিয়েছে মানুষের জ্ঞান-বিজ্ঞান। আগের তুলনায় অনেকাংশে সহনশীল হয়েছে অনেক ধর্মের অনুসারীরা। অন্য ধর্মের সমালোচনা করলে, বা বিদ্রুপ করলে তা নিয়ে তেমন একটা কিছু এসে যায় না। শুধু একটা ধর্ম ও তার প্রবর্তককে নিয়ে কিছু বললেই খবর আছে। মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা একটা সাধারণ ব্যাপার। পত্রপত্রিকা ও ম্যাগাজিনে কার্টুন আঁকা একটা অতি সাধারণ ব্যাপার। আইন পরিপন্থী ত অবশ্যই নয়। যেকোনো ঘটনা বা ব্যক্তিকে নিয়েই ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন আঁকা যেতে পারে। তাতে কারুর ঠুনকো অনুভূতিতে আঘাত লেগে গেলে সেও লেখা বা বিদ্রুপের মাধ্যমে তার প্রতিউত্তর দেবে। এটাই ত হবার কথা। শুধুমাত্র একজনের কার্টুন আঁকার জন্য ১২জন মানুষকে প্রকাশ্য দিবালোকে খুন করে ফেলা হয়েছে। এটা ভাবা যায়? শুধু অন্ধবিশ্বাসের জন্য এতোটা জঘন্য অমানুষ হতে পারে কেউ? হ্যাঁ, অন্ধবিশ্বাস মানুষকে অন্ধ অমানুষই করে দেয়। নবীকে নিয় মুভি বানালে মানুষ মেরে ফেলে তার অনুসারীরা, নবীর কার্টুন আঁকলে মানুষ মেরে ফেলে তার অনুসারীরা। ভাবুন, দেড় হাজার বছর আগে মারা যাওয়া একটা লোকের এখনো পর্যন্ত কতোটা বাজে প্রভাব রয়ে গেছে পৃথিবীতে।

কয়েকজন খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারক আসতো বাইবেল নিয়ে আমার বাসায়। আমার চারপাশে বাইবেল খুলে বসতো ওরা। সুর করে পড়ে শোনাতো বাইবেলের বাণী। আমি ওদের পড়া বাইবেলের বাণী শুনে হেসে কুটি কুটি হতাম। আমি বাইবেলের বাণীর ভিত্তিতে কোনো পালটা প্রশ্ন করলে ওরা উত্তর দিতে পারতো না। আমাকে খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত করানোর জন্য প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল ওরা। একদিন আমি ওদের জিজ্ঞেস করলাম, তোমাদের খ্রিস্টান ধর্মে কি বিয়ে না করে শারীরিক সম্পর্ক করার বিধান আছে? ওরা একসাথে সুর করে বলে উঠলো, না, না, বিয়ে ছাড়া শারীরিক সম্পর্ক অবৈধ,পাপ। আমি বললাম, বিয়ে ছাড়া যদি কারুর বাচ্চা হয়? ওরা একসঙ্গে বললো, ওটা অবৈধ পাপের সন্তান হবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তোমাদের গড আর মেরীর কি বিয়ে হয়েছিল? ওরা বললো, না তো! আমি বললাম, যিশু ত তাহলে গড আর মেরীর জারজপুত্র। ওদের চেহারা একটু মলিন হয়ে গেল। তার পর থেকে যেকেউ আমার কাছে খ্রিস্টান ধর্ম প্রচার করতে আসলে আমি শুধু একটা কথাই বলি, যিশু ত মেরী ও গডের জারজপুত্র। এতেই ওরা অপ্রস্তুত মুখে একটু হাসি হাসি ভাব নিয়ে বিদায় নেয়। ভেবে দেখুন, এইভাবে কি কেউ কোনো ইসলাম ধর্ম প্রচারককে বলতে পারবে? এরকম বললে সে নিজে খুন করবে বা অন্য কারুর হাতে করাবে। একথাগুলি আমি খ্রিস্টান ধর্মের কোনো মাহাত্ম্য প্রচারের জন্য বলিনি। আমি বলতে চেয়েছি ধর্মগুলি খারাপ হওয়া স্বত্বেও তাদের অনুসারীরা আগের তুলনায় হয়েছে অনেকটা সহনশীল ও মানবিক। আর ইসলাম ধর্ম ও ধার্মিকেরা এখনো রয়ে গিয়েছে সেইখানে, সেই দেড় হাজার বছর আগের গুহায়।

ইসলামি সন্ত্রাসবাদীরা কোথাও সন্ত্রাস করলে মডারেট মুসলিমরা বলে থাকে, ওটা ত সহী ইসলাম নয়। আমি তাদের সাথে একমত। এসব আসলেই সহী ইসলাম নয়। নবী মানুষ জবাই করতো তলোয়ার দিয়ে। নবীর উম্মত হয়ে ওরা মানুষ খুন করে বোমা দিয়ে, AK 47 দিয়ে, বিমান দিয়ে। সহী ইসলাম এসবকে কেমন করে বলি।

সব ধর্মই জঘন্য, বিষাক্ত। কালের বিবর্তনে অন্যান্য ধর্মের বিষের সিংহভাগই শুধু পুঁথিগত হয়ে পড়ে রয়েছে। বাস্তবে তার তেমন একটা প্রয়োগ নেই। দুর্গন্ধময় গার্বেজগুলি অনেকটা বইয়ের পৃষ্ঠায় বন্দি হয়ে আছে। অনেকের কাছে ধর্ম এখন শুধু উৎসব হয়ে ব্যবহৃত হচ্ছে। কেবল ইসলাম একমাত্র ব্যতিক্রম। এখনো সেই রকম বিষাক্ত, সেই রকম কালকেউটে, সেই রকম ফণা তুলে ফোঁস ফোঁস করছে, ছোবল মারছে সভ্যতার গায়ে, ছোবল মারছে মানবতায়, বিষ ছড়াচ্ছে, নিরীহ মানুষদের অকাতরে হত্যা করছে।