অনেকেই মিলে আমরা একা (গল্প)
লিখেছেন – নাজমুল হুসাইন

আমার মৃত্যুর দু’দিন পর বিষয়টির ফয়সালা হয়, মানে আমার কাছে পুরো ব্যাপারটি খোলাসা হয়। আমার মরার দুই দিন পর, যখন আমার এক বোন-জামাই প্রথম আমার ঘরে ঢোকে, তখন বিষয়টি পরিষ্কার হয়।
নিচ তলায় আমি একাই থাকতাম। থাকতাম মানে এখনো থাকি; সবসময় থাকবো। আমি এসেও ছিলাম একা এই নিচ তলায়। যদিও মনা ছিল তখন আমার সাথে। তবুও আমি একাই ছিলাম। আগেও আমি একরকম একাই থাকতাম মগবাজারের বাসায়। অথচ তখনও মনা ছিল, ওর বৌদি ছিল, আর বৌদির একমাত্র মেয়ে পূর্বিতা, মানে আমার মেয়ে ছিল। অথচ আমি জানতাম আমি একাই থাকি।

মনা বলতো, “কি আশ্চর্য! বৌদি আছেন, থাকেনও একই ছাদের নিচে, অথচ তুমি নিজেকে বলো একা।”

আমি উত্তর দিই, “একই ছাদের নিচে থাকি কোথায়?”

“বারে! পূর্বিতা আর বৌদি এক রুমে থাকে, না হয় তুমি অন্য রুমে! তাই বলে…

তার কথা শেষ করার আগেই বলি, “এক ছাদ হলো নাকি? দু’জনার দুই ভিন্ন ছাদ।”

“ছাদ তো একটাই, রুম আলাদা।”

“ধ্যাৎ! মানুষ এক রুমে থাকলেও যার যার ছাদ আলাদা। আমার মাথার ওপর যে ছাদ, সেটাই আমার ছাদ।”

“মানে?”

“কেন? মেস বা হোস্টেলগুলোতে দ্যাখো না? এক রুমে তিন জন; তিন জনের একজন বরিশালের, একজন পাবনার, একজন নওগাঁর। তিন জনের যার যার মাথার ওপর যে ছাদ, ওটাই ওদের একেক জনের আলাদা ছাদ; আলাদা জগৎ। এজন্যই ওরা এক হয় না কখনো। আলাপ করে ঠিকই; আলাপ তো আমরা হাট-বাজারে, মেলা কি একজিবিশনেও করি…।

অনেক বন্ধু-ইয়ার ছিল আমার, তবে সবই সান্ধ্য বন্ধুত্ব। একসাথে মদ খাওয়া-খাওয়ি আর তাস পেটাপেটি। সন্ধ্যে হলেই সবাই আসতো, মধ্যরাতে সবাই যার যার বাড়ি ফিরতো। ওরা চলে গিয়েই বুঝিয়ে দিতো, আমি যে আসলে একা, একাই থাকি। আমার মরার দুই দিন পর যখন সব কিছু বুঝতে পারলাম, অর্থাৎ একটা বিষয় ক্লিয়ার হলো, তখনই এক সমস্যায় পড়লাম। সমস্যা হলো, আমি মরার পর কেন এই সমস্যার সমাধান হলো?
বহুদিন আগে, কবে মনে নেই, কিংবা মনে রাখার মতো তেমন কিছু না হয়তো। একটা লোকের কথা আমার মনে হলো। লোকটা বেশ শব্দ করে চা খেয়ে, খুবই সস্তা সিগারেটে টান দিয়ে বাতাসে বোটকা গন্ধ ছড়িয়ে বলেছিল, “মইরাও হালায় শান্তি নাই।”
কথাটা দারুন লেগেছিল আমার কাছে! আসলেই তো, এই ক্রমশ জটিল হওয়া জীবনে ‘মইরাও হালায় শান্তি নাই।’
শব্দ করে চা খাওয়া লোকটা, খুবই সস্তা সিগারেটের বোটকা গন্ধ বাতাসে ছড়িয়ে চলে যাবার পর, খেয়াল হয়, লোকটা এমন করে বললো কীভাবে? সে তো মরে নাই। দিব্ব্যি শব্দ করে চা খেয়ে এবং খুবই সস্তা সিগারেটের বোটকা গন্ধ ছড়ালো। তবে মরার পর শান্তি-অশান্তি সে বুঝলো কী করে? নাকি সে মৃতই ছিল? নাকি আমারই কাল্পনিক ভাবনা এটা? এটা কী করে হয়? আমার কানে এখনো জীবিত মানুষের শব্দ করে চা-পানের শব্দ আর খুবই সস্তা সিগারেটের বোটকা গন্ধ নাকে লেগে আছে! নাকি কেউ কেউ থাকেই এমন, যারা জীবিত থেকেও মরার পরের শান্তি-অশান্তির খবর রাখে? তাই হবে অথবা তাও না। আমিই-বা কেমন করে, আমার মরার দু’দিন পরে সমস্যার সমাধান খুঁজে পাই? তবে মরার দু’দিন পর আমি এই ভেবে স্বস্তি পাই যে, আমি একা নই; আমরা অনেকে অথবা আমরা কেউ কেউ।

একসময় পাড়াপড়শি এবং আমাদের এই ছ’তলা ফ্ল্যাটের প্রায় সকলেই বলাবলি করতেন, “লোকটা কেবল মদ খেয়েই অমন করে না, লোকটা পাগলও বটে।”
লোকটা মানে কিন্তু সেই শব্দ করে চাখোর কিংবা বাতাসে খুবই সস্তা সিগারেটের বোটকা গন্ধ ছড়ানো সেই লোকটা নয়, যে বলেছিল, ‘মইরাও হালার শান্তি নাই!’ এখানে যাঁরা বলাবলি করতেন, তাঁরা আমাকেই বোঝাতেন। আমার উদ্দেশেই বলতেন বা বোঝাতেন। আমার মাঝে পাগলামির কী ছিল জীবিত থাকতে জানিনি; মরার দু’দিন পরেই জানলাম।

আমি প্রত্যেক সন্ধ্যায় মদ খেতাম। জজ সাহেব আসতেন তিন জন, নোয়াখালির একজন আসতেন, যিনি পরে আমার বন্ধু হয়ে গেছিলেন। ওকে বন্ধু বানাবার মধ্যে ওর একটা অভ্যাস জড়িত ছিল। সে তাসের রাজা যে ‘সাহেব’, তা ইস্কাপনেরই হোক কী রুইতন-হরতনের- যেটারই হোক, ‘সাহেব’কে সে অপছন্দ করতো। বলতো, “এগুইল্যা ব্যাক বদশাহর গুষ্টি। আই ব্যাক সাবেরে হোন্দাই।”
আমি বলতাম, “ক্যান্‌? ক্যান্‌ বন্ধু?”
তখন ঝোপঝাঁড়ের উত্তর শুনতাম, মার্ক্স-লেলিন টেনে কী চমৎকার বোঝতো সে!

নোয়াখালির বন্ধুটাকে আমার কাছে ঝোপঝাঁড়ের মতো মনে হতো। আমাদের কেউ কেউ ঝোপঝাঁড়কে নেতিবাচক ধরেন এবং প্রকৃতির আপদ মনে করেন। কেবল আমার কাছেই ঝোপঝাঁড়াকে কেমন যে ছোটখাটো অরণ্য বোধ হতো। কেমন সবুজ, তবে একটু ধূসর; কেমন প্রাণবন্ত ও খাঁটি। ঝোপঝাঁড়েই কোনো কোনো পাখি নিশ্চিন্ত নিভৃত আশ্রয় খোঁজে, আহা! আবার ঐ ঝোপঝাঁড়েই কে না কে হেগে রেখে যায় এক-দেড় কেজি। (হাগুর এই পরিমাণ এক-দেড় কেজি নিয়ে আমি একদিন একটা গল্প লিখবো, যা হবে আমার জীবনের প্রথম গল্প। কারণ আমি এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো গল্প-উপন্যাস ইত্যাদি লিখিনি। তার কারণ সাবজেক্ট পাইনি, এবার পেয়েছি। পাট ক্ষেতের সবুজ অন্ধকারে, কে যে বা কারা যে অত পরিমাণ হেগে যেতে পারে, যা আমাকে একরকম ইনফিউরিটি কমপ্লেক্সে ভোগায়। আমি শালা থাকি ঢাকায়, রাজধানীতে; আমার অনেক ইনকাম। আমার কার্পেট-ক্লিনার মেশিন থেকে শুরু করে সব আছে। এসি, ফ্রিজ, ডিপফ্রিজ, এলসিডি টিভি তো আমার কাছে ডাল ভাত। আর আমি বাথরুম করবো দুই-তিনটা কাঁঠাল বিচির মতো, আর তরা শালার করবি এক-দেড় কেজি… এও কি সম্ভব? কীভাবে? থাক। এই নিয়ে দারুন একটা গল্প লিখবো আমি কোনো কালে, অন্য কোনো একসময়।)
আবার আমি ঝোপঝাঁড়ের কথায় আসি কিংবা আমার নোয়াখালির বন্ধুর কথায় আসি। অথবা আমি আমার কথাতেই আসি, যে আমি বরাবর একা। শুধু মনা থাকতো আমার সাথে। আর মনাই বলতো, আমি নাকি আমার স্ত্রীর সাথে এক ছাদের নিচেই থাকি। অতএব আমি একা নই। আমরা নাকি একই ছাদের নিচে থাকি। ছাদ যে এক নয়, ছাদ যে যার যার তার তার, একথা কবার বলবো? বিরক্ত হবে না মানুষ? আমি তো মরেই গেছি। মরা মানুষকে নিয়ে বিরক্তিকর কথা কেন? বরং মরার দু’দিন পর কী হলো, কী বুঝলাম, কী করলাম সে কথা বলুন। নাহ, তারচে আমার ঝোপঝাঁড় বন্ধুই ঢের ভালো। তার কথা যদি বলি ঝোপঝাঁড়ের মতোই…

ভব্য সমাবেশে নোয়াখালির আঞ্চলিক উচ্চারণে কোনো জড়তা থাকতো না তার। তাই বলে সে ‘পানি’কে ‘হানি’ বলতো না, বলতো ‘ফানি’। মদের গেলাশ খালি হলেই বলতো- “দোস্ত, ফানি দ্যাও, স্মল দিও।”
আমি ওই বন্ধুকে ঝোপঝাঁড় ভাবতাম, এটা কি কোনোভাবে কেউ শুনে আমার পাগলামি ভাবতেন? শোনারও তো কথা নয়। কেননা, নোয়াখালির ওই বন্ধুটি ছাড়া অন্য যাঁরা থাকতেন আমার নিচ তলায়, যেখানে আমি একা এসেছিলাম এবং একা থাকতাম। আর মাঝে মধ্যে আসতেন জজ সাহেবরা। এদের মধ্যে একজনকে আমার মনে হতো সদ্য চুনকাম করা তিন তলা ফর্সা দালানের মতো। যেকোনো শহরে এই সদ্য চুনকাম করা তিন তলা দালানকে ফর্সা নারীর মতো, কিংবা ভারি স্তনের মহিলার মতো মনে হবে! একদিন শুধু দেখে বলবেন। দুঃখজনক কথা হচ্ছে, ওই জজ সাহেবকে সদ্য চুনকাম করা তিন তলা দালানের মতো লাগলেও, তাকে রূপবতী, স্তন্যবতী আদর্শ বিছানা-কাঙ্ক্ষিত নারী মনে হতো না। কারণ? সব বাড়িঅলার কাছে সদ্য চুনকাম করা বাড়ির গন্ধ নতুন টাকার বান্ডিলের গন্ধের মতোই লাগে। কেবল আমারই সহ্য হতো না, এখনো হয় না কিংবা আমার মরার দু’দিন পরেও ভালো লাগবে না তা।

চুনের একটা ঝাঁঝালো টাকা-টাকা গন্ধ আছে। আমার তা মনে হতো। মনে হয়, মরার দু’দিন পরও মনে হবে। চুনকাম করা দালানের মতো জজ সাহেবের আবার অনেক বউ ছিল। অনেক বউঅলা লোকদের সাথে সান্ধ্য-আড্ডা কি পাগলামি? কত যে মদের ঘোরে চিল্লাপাল্লা করেছি সবাই মিলে মধ্যরাত অব্দি, কই, কেই তো সেটাকে পাগলামি ভাবতো না! নাকি ওরাই পাগলামো করতো বা করতেন বলেই, আমাদের ‘চ্যাঙের আড্ডাকে’ পাগলামি ভাবার সময় পেতো না বা পেতেন না। নোয়াখালির সেই বন্ধুটি, আমাদের আড্ডাকে বলতো, “ইয়ানো আঁর চ্যাঙের আইড্ডা হয়? হেতেরা জজিয়তি করে, এউকগার মুখে ভঁইয়ের কথা শুনি নো। হেতেরা মার্কস চিনে নো।”

এটা ঠিক, বন্ধুটির প্রচুর কালেকশন ছিল বইয়ের বা ভঁইয়ের। ওর কাছ থেকে আমি মার্কেজ, সিমন দ্য বোভোয়ার, জ্যাঁ পল সার্ত্রে এবং বাংলা কোরআন পড়ি বা পড়ার সুযোগ পাই। কিন্তু লোকটা ছিল বই-ধর্ষক। কে যেন একদিন এমন বলেছিল। বলার কারণও ছিল। বন্ধুটির কাছ থেকে যত বই বা ভঁই এনে পড়েছি- সব বইয়ের সব পৃষ্ঠায়, মার্জিনে বা দুই লাইনের মাঝে মাঝে কেবলই আন্ডার লাইন, প্রশ্ন বা আশ্চর্যবোধক চিহ্ন আর তার নিজস্ব অভিমত থাকতো। এ যেন অনেকটা হক ভাইয়ের মার্জিনে মন্তব্য? নাকি? কী যেন সেই আর্টিক্যালটির নাম? সেই যে সৈয়দ শামসুল হক লিখতেন কোন পত্রিকায়? কিচ্ছু মনে নেই। কী আশ্চর্য, মরার দু’দিন পরের কথাও আমার ভীষণ স্পষ্ট মনে আছে। বিশেষ করে, আমার নিচ তলার ফ্ল্যাটের পেছনে, (পেছনে না সাইডে?) অথবা কোনো একদিকে একটা ছাত্রদের হোস্টেল মার্কা কিছু ছিল। ওরা হোস্টেল বলতো, আমি বলতাম মেস। যেখানে দু’দিন পরপরই নারকীয় চিৎকার শুনতে পেতাম- “ও আল্লা, ও রানা ভাই, আমারে মাইরেন না।”
চিৎকারের শব্দতরঙ্গ শুনেই বুঝতাম, কতখানি মার ইতোমধ্যেই মারা হয়েছে। এবং আমার অভিজ্ঞতা আছে, আমি তো জানি, একবার কাবাব-রানা যাকে পেটায়, সে বেঁচে থাকে না। ওই হোস্টেলে বা মেসেই সে লাশ হয় এবং তা আমাদের এই তেজকুনি পাড়ার কোনো ম্যানহোলে ঢুকে যায়। সব কিছু ঠিকঠাক! পয়সা দেয়া আছে। কী এক সেবা সংঘ আছে এই পাড়ায়, যা মাস্তানরা চালায়। ওরা লাশ গলে গেলেই, তা তুলতে দেবে। তারপর কী কী হয়, আমরা খবর রাখি না। শুধু শুনি, কেউ বলছে, “মইরাও হালায় শান্তি নাই।” হয়তো ম্যানহোলের দুর্গন্ধই ওকে এমন বলতে বলায়। তো বই-ধর্ষক নোয়াখালীর বন্ধুটির ওইসব ‘মার্জিনে মন্তব্য’অলা বই পড়তাম।

ফলে, ওর যে কোনো বই পড়লেই আমার দুটো বই পড়ার অবস্থা হতো। একটা হয়তো রাহুল সাংকৃত্যায়ন বা দেবীপ্রসাদ পড়া হলো, আরেকটা বন্ধুর লেখা আলোচনা। কোরআনও সে দাগিয়ে-দুগিয়ে একাকার করে রেখেছিল, যা পড়তে গিয়ে দেখলাম, একটা কোরআন নাজিল হয়েছে, অন্যটি কারো ভেতরগত, মুখোশহীন ক্ষোভের প্রকাশ। তার মানে এই সবই আমার পাগলামি ভাবেননি, কেউ কেউ অথবা ভেবেছেন পরে।

সন্ধ্যার বন্ধুরা চলে যেতেই, আমি হাত-মুখ ধুয়ে, বই নিয়ে বসতাম। বই মানে যেমন বই, তেমনি বিভিন্ন ঈদ সংখ্যা বা পুজো সংখ্যা। কখন রাত শেষ হতো জানি না। পড়তে পড়তে একটা উপন্যাস বা গল্প বা প্রবন্ধ বা ভ্রমণকাহিনি অথবা একটা কবিতা শেষ করেই আমি প্রবল জোরে তালি দিতাম আর আহা!, ওহো! করতাম একটু জোর শব্দেই। একসময় পাড়াপড়শি বা আমাদের এই ছয় তলা ফ্ল্যাটের, যেটার নিচ তলায় আমি একা থাকি, সবাই ভাবতে শুরু করলেন লোকটা কি পাগল হয়ে গেল নাকি?
হয়তো ওই লোকটা বলতো, যে কিনা শব্দ করে চা খেয়ে, খুবই সস্তা দামের সিগারেটের বোটকা গন্ধ ছেড়ে, হয়তো এখন মৃত সে; হয়তো বলছে, “মইরাও হালার শান্তি নাই।”

আমার মৃত্যুর দু’দিন পর আমি উদ্ধার পাই। অবশ্যই দরজা ভেঙে, আমার এক বোন-জামাই ভেতরে ঢুকেই আর্তচিৎকার দেয়, ‘দাদা’!

আমি সোফা ও টেবিলের মাঝে মরে পড়ে আছি। তাই বুঝলাম না, আমাকে দাদা ডাকলো? নাকি অন্য কাউকে বললো? কেননা, ওর ‘দাদা’ ডাকের সঙ্গে সঙ্গেই হুড়মুড় করে বহু মানুষ ঢুকলেন ঘরে। তাঁরা দেখলেন, অসংখ্য বই-ম্যাগাজিন খোলা আছে আমার চারপাশে আর আমি চমৎকার মরে আছি। তখন তাঁদের মাঝে অনেক বয়স্ক, মধ্য বয়স্ক এবং অনেক তরুণ আছেন। সবাই একেকটি বই, ম্যাগাজিন, গল্প, উপন্যাস, কবিতা ইত্যাদি পড়া শুরু করলেন। এবং কী আশ্চর্য, সবাই সবার পড়া একটি নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করে হা হা হা করে এমনভাবে হেসে উঠলেন, যে মহল্লার সব বাড়িঘর কেঁপে ওঠে। সবাই বলাবলি করেন, এইভাবে লোকটা প্রতি রাতে হাসতো। কাবাব-রানার হোস্টেল বা মেসের মানুষরা বেশি বলতো। আমি মরার দু’দিন পর বুঝলাম, যে আমি এই ছ’তলা ফ্ল্যাটে, নিচ তলায় একা থাকতাম না, কখনো থাকিনি, থাকবোও না। আরো অনেকেই এখানে ছিলেন বা আছেন বা থাকবেন। এবং সবাই শব্দ করে চা-খাওয়া আর খুবই সস্তা সিগারেটের বোটকা গন্ধ ছড়ানো লোকটার মতো বলবে, “মইরাও হালার শান্তি নাই।” কারণ, মৃত্যুর পর আমরা আর একা থাকি না, অসংখ্য মৃতদের রেখে যাই জীবিত অবস্থায়।

পশ্চিম তেজতুরি বাজার
তেজগাঁও, ঢাকা।