(১)
গত কয়েকদিন ধরে কালীর নগ্নতা নিয়ে কিছু পোষ্ট দিলে হয় ফেসবুক ওড়াচ্ছে-নইলে গ্রুপ এডমিনরা ডিলিট করছে। সাথে সাথে হিন্দুত্ববাদিদের চূরান্ত অসভ্যতা, গালিগালাজ সবই আছে!
আমি বুঝতে পারছি না কালী সহ দেবীদের এরোটিসিজম নিয়ে থ্রেড ফেসবুক ওড়াচ্ছে কেন-লোকে কেনই বা অসন্তুষ্ঠ এই ধরনের পোষ্টে। সমস্ত দেবীদের কল্পনার পেছনে একটাই দর্শন -প্রজননে সক্ষম নারী সৃষ্টির উৎস। তাই নারীই প্রকৃতি। কালী নারী হিসাবে প্রকৃতির প্রকাশ-তাই নগ্নিকা। কারন যুগে যুগে প্যাগানদের মধ্যে নারীর নগ্ন দেহ বা যোনি প্রজনন শক্তি এবং তার থেজে প্রকৃতির রূপক হিসাবে পূজিত। সুমেরু সভ্যতা থেকে গ্রীস, রোম থেকে ভারত- সর্বত্রই দেবীরা যৌন শক্তির রূপক। তাদের এরোটিসিজম নিয়েই গ্রীক বা ভারতের পুরান। সরস্বতী দেবীকুলে গণিকা, নারায়নের রক্ষিতা-এত ভারতের পুরানেই বলে।
তাহলে কি দেখছি? আসলে প্রাচীন কালে ভারতবাসীদের যৌনতা নিয়ে শুচিবাই ছিল না। দেবীদের তারা যৌনতার দেবী হিসাবেই পূজা করত। হ্যা, যৌনতা সুন্দর-তাই তারও পূজাতে অভ্যস্ত ছিল ভারতীয় সহ সব প্যাগান সভ্যতা। কিন্ত বর্তমানের হিন্দুত্ববাদিরা যৌনতাকে খারাপ মনে করে। তাই ফেসবুকে এর বিরুদ্ধে ফ্ল্যাগ করছে। এটার কারন সেই হিন্দু ধর্মকে ইসলাম বা খৃষ্টান বানানোর চেষ্টা। কারন যৌনতার বিরুদ্ধে শুচিবাই আছে আব্রাহামিক ধর্মগুলিতে-যথা ইসলাম বা খ্রীষ্ট ধর্মে। ভারতীয়রা যৌনতার পূজা করে-তারা কেন মুসলিমদের হনুকরন করছে?
সাধে আমি লিখে চলেছি-যে ভারতের হিন্দুত্ববাদি আন্দোলন হল, হিন্দু ধর্মকে ইসলাম বানানোর অপচেষ্টা।
(২)
কালীর মধ্যে সানি লিওন খুজে পেয়ে কেও একজন প্যারোডি পোষ্ট করে ।
সঙ্গে সঙ্গে তেড়েমেরে রে রে করে ধর্মানুভূতিতে আঘাত বলে ফেসবুকে ভ্যান্ডালিজম শুরু করে হিন্দুত্ববাদিরা।
কালীর সাথে সানি লিওনের তুলনা করলে ধর্মানুভূতিতে লাগবে?
কেন ?
প্রথমত দুজনেই নগ্নিকা। ভুষনহীনতাই তাদের পছন্দ।
দ্বিতীয়ত কালী নারী দেহের মাধ্যমে প্রকৃতির প্রকাশ। তাহলে সানি লিওনের দেহতে প্রকৃতির প্রকাশ নেই ?
তৃতীয়ত হেমা মালিনী মুখের ছাঁচে দেবী দূর্গা কত দেখেছি। হেমা মালিনীকে আমরা গ্রহন করেছি দূর্গা রূপে-তাহলে সানি লিওনকে কালী রূপে কেন না ? দুজনেই ত অভিনেত্রী। কে কতটা কাপড় খোলেন, তা রিলেটিভিটির প্রশ্ন। তাতে ত বেসিক চেঞ্জ হয় না ।
চতুর্থত, ধর্মানুভূতিটি কি জিনিস? ওটি আসলে ছোট বেলায় ব্রেইন ওয়াশ করে ঢোকানো ধর্মীয় ভীতি। এবং একটি অহেতুক ভীতি যার জন্য ভারতের প্রগতি আটকে আছে। একটি অহেতুক ভীতি যা দাঙ্গা লাগায়, মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করে-সেই অহেতুক ভীতিকে কেন সন্মান করব ? সেই ভীতিকে দূর করার চেষ্টা করাটাই ভাল কাজ নয় কি?
পঞ্চমত ভারতীয় দর্শন এব্যপারে কি বলে? কোন উপনিষদে লেখা আছে ধর্ম ভীতি থেকে শুরু হয়? ওগুলো অনুন্নত ইসলাম , খীষ্ঠানদের ব্যপার। উপনিষদ বলছে ভয় থেকে না, ভয়কে জয় করা থেকেই সত্যর সন্ধান শুরু হয়। আসল ধার্মিক জীবন শুরু হয়। আসল ধার্মিকের ধর্মানুভূতি কি? তার ধর্মত সাহসের সাথে সততার সাথে কর্তব্য পালনের মাধ্যমে। তার সাথে কালীর সাথে সানি লিওয়নের তুলনার কি সম্পর্ক?
আর কালী পূজোর সাথে ধর্মের সম্পর্কটাই বা কি? জ্ঞানযোগ, ভক্তিযোগ, রাজযোগ বা কর্মযোগের মধ্যে পূজো অর্চনা কোথায়? আর ভীতিযোগ বলে কিছু আছে ভারতীয় দর্শনে ? পূজো অর্চনা শ্রেফ প্যাগান সেলিব্রেশন।
(৩)
সেকন্ড পোষ্টটা ফেসবুকের গ্রুপে ফেলতেই প্রতি মিনিটে ১০ টা করে বাপ মা তুলে গালি আসা শুরু হল হিন্দু ধর্মের স্বগোষিত রক্ষকদের কাছ থেকে।
কালিকা তাদের কাছে “মা”। মায়ের সাথে পর্নস্টার সানি লিওনের তুলনা ? “ধর্মানুভূতিতে” বিশাল আঘাত!!
আমার মনে পড়ল পান্নালালের শ্যামাসঙ্গীত–
“মা আমার সাধ না মিটিল আশা না পুরিল
সকলই ফুরায়ে যায় মা…
জনমের সাধ ডাকি গো মা তোরে
কোলে তুলে নিতে আয় মা…..
সকলই ফুরায়ে যায় মা।।
মা আমার সাধ না মিটিল আশা না পুরিল
সকলই ফুরায়ে যায় মা।।
পৃথিবীর কেউ ভালতো বাসেনা
এ পৃথিবী ভাল বাসিতে জানেনা
যেথা আছে শুধু ভাল বাসাবাসি
সেথা যেতে প্রাণ চায় মা
সকলই ফুরায়ে যায় মা।।
মা আমার সাধ না মিটিল আশা না পুরিল
সকলই ফুরায়ে যায় মা…
বড় দাগা পেয়ে বাসনা তেজেছি
বড় জ্বালা সয়ে কামনা ভুলেছি
অনেক কেদেছি কাঁদিতে পারিনা
বুক ফেটে ভেঙ্গে যায় মা….
সকলই ফুরায়ে যায় মা…
মা আমার সাধ না মিটিল আশা না পুরিল
সকলই ফুরায়ে যায় মা.”
পান্নালালের ওই জনপ্রিয় গানটা কার অসাধারন লাগে নি? কেন না ওটা একটা রিয়ালাইজেশন । উপলদ্ধি। বোধ।
অপূর্ন জীবনের বেদনা , ব্যর্থ জীবনের বেদনা, এক সন্তান তার মার কাছে গাইছে। কারুর না কারুর কাছে ব্যর্থ জীবনের বেদনা শোনাতে পারলে মন অনেক হালকা হয় । সন্তানের বেদনা মায়ের থেকে বেশী আর কে বোঝে?
কিন্ত একোন “মা”? এই মায়ের সাথে সন্তানের গোপন বোঝাপড়া। সবটাই মিস্টিক সাধনা তা বলবো না -জীবনের গূঢ় উপলদ্ধি গুলো, যা সাফল্য, ব্যার্থতার ধাক্কা খেতে খেতে তৈরী হয়-তার কাব্যিক, আত্মোপলদ্ধির জন্য এই “মায়ের” কল্পনা। এই মা আমাদের নিজেদের চেতনার এক স্তর ।
এবার তাহলে আপনারাই বুঝুন। যেসব হিন্দুরা সানি লিওয়নের সাথে কালীর তুলনায় আপসেট হচ্ছেন, গালাগাল দিচ্ছেন, উত্তেজিত হচ্ছেন-তারা নিজেদের ধর্ম নিয়েই কতটা অশিক্ষিত।
দেখে শুনে মনে হচ্ছে নগ্ন কালীমাতাকে বোরখা পরাতে পারলে হিন্দুধর্মের ইসলামায়ন সম্পূর্ন হয়।
যে স্রষ্টাকে খুজেছে সে স্রষ্টাকে পেয়েছে,সে খুজেনি সে পায়নি।আপনি কোন শ্রেনির অন্তর্ভুক্ত তা নিশ্চই বুঝতে পারছেন।
অার মোল্লারা যে নিজেদের মামাতো/কাকাতো/পিসতুতো বোনকে বিয়ে কতে।হজরত মহম্মদ কতগুলো বিয়ে করেছিল?এগুলো তো ধর্মগ্রন্থ,অার মোল্লারাতো বাস্তবেই বোনকে করে
বিপ্লব পাল,
ধন্যবাদ, আপনার লেখার জন্যে। হিন্দু ধর্মে সতিদাহ প্রথাটি কিভাবে ঢুকে গেল, সেই ব্যাপারটি জানতে পারলে ভাল হতো ।
সাজ্জাদ
…… বীরধর্ম, ধর্ম যুদ্ধ (জেহাদ বা ক্রুসেড), বলী প্রথা, একেশ্বরবাদ (একের মাঝে বহুর প্রকাশ)– এইসবই বৈদিক ও পৌরাণিক হিন্দুদের মধ্যে আছে। তাই আব্রাহামিক ধর্মের বিরুদ্ধে হিন্দুত্ববাদই ডেটারেন্ট হতে পেরেছে।
@সন্তোষ,
লিখলাম ত বৈদিক ধর্ম হচ্ছে একমাত্র ধর্ম যেখানে যুদ্ধকেই ধর্ম বলে স্বীকার করে (জিহাদ)। ফলে জিহাদি বনাম ধর্মযোদ্ধা কেস। তাই ভারতের ইসলামিকরন কখনোই সম্পূর্ন হয় নি।
দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে আমি আপনার সাথে একমত। এমনকি আমার মনে হয় আপনি যা বলছেন- হিন্দু ধর্ম বলে কিছু ছিল না, ছিল নানা জীবন দর্শন আর সেই দর্শন গুলির পালন করার স্বাধীনতা- এই কথাটার এখন প্রচার পাওয়া খুব জরুরি। তবে একটা জায়গায় আমার খটকা আছে। আর তা হল বর্ণবাদ।
বর্ণবাদ যে হিন্দু ধর্মের/ প্রাচীন ভারতের সমাজের অংশ এটা বোধহয় অস্বীকার করা যায় না। এবং এই বর্ণবাদে বিশ্বাসী ছিল বেদ মানা আস্তিক সম্প্রদায় গুল। যারা এখন “হিন্দু”তে পরিণত হয়েছে। এবং আমার মনে হয় পুরুততন্ত্র/ বর্ণবাদের মধ্যেই লুকিয়ে আছে ধর্মীও স্বাধীনতার হীনতা। যদিও এর মানে এই নয় যে আস্তিক সম্প্রদায় গুল মনে করত যে শুধু উচ্চবর্ণের মানুষেরই উপলদ্ধি/ বোধ হতে পারে, কিন্তু তাহলেও এটা মানতেই হবে, বর্ণবাদ মানুষের বৌদ্ধিক উন্নতির পরিপন্থী।
প্রাচীন ভারতেও, ধর্মীও আচরণ কেমন হবে, কে কি গ্রন্থ পড়তে পারবে ইত্যাদি বর্ণবাদের হিসাবেই ঠিক করা হত। কাউকে যদি ছোট বেলা থেকে brainwash করে দেওয়া হয়, তুমি নিচু জাতের (কারণ তোমার কর্ম ভাল হয়, ইত্যাদি) তাহলে সে আর কতটা স্বাধীন ভাবে জীবন দর্শনের কথা ভাবতে পারবে? নিজেকে ছোট ভেবে সে ব্রাহ্মনের শিখিয়ে দেওয়া জীবন দর্শনই কি বেছে নেবে না?
আপনি যে স্বাধীনতার কথা বলছেন তা কি মোটামুটি ইন্টেলেকচুয়াল এলিটদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না? ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয়দের মধ্যে বেশ কিছু উদাহরণ দেখানো যেতে পারে, অন্য বর্ণেরও কিছু এক্সেপ্সন নিশ্চয়ই আছে। তবুও গোঁড়ামি জিনিসটা ব্রাহ্মন্যবাদের মধ্যেই ছিল। ইসলাম, ক্রিশ্চিয়ান ধর্ম আসাতে সেটা এক নতুন ও পাকাপোক্ত রুপ নিয়েছে। যার আধুনিক সংস্করণ হিন্দুত্তবাদ।
কি জানি তাই হয়ত যারা সবচেয়ে কম গোঁড়া ছিল, intellectually সবচেয়ে উচ্চ ছিল- বৌদ্ধরা- তারা ইসলামের সামনে উধাও হয়ে গেল। আর ব্রাহ্মন্যবাদিরা বিকৃত করে হয়ে হোক আর যাই হোক আস্তিক সম্প্রদায় গুলকে টিকিয়ে রাখতে পেরেছিল।
@অর্থ,
(১) প্রচীন ভারতে জাতিভেদ প্রথা হোমোজেনাস কিছু নই। বাংলাতেই কোন জাতিভেদ ছিল না-যা এসেছিল সেন রাজাদের হাত ধরে দশম শতাব্দিতে।এটাই মূল কারন অধিকাংশ বাঙালী ইসলাম গ্রহণ করে-কারন তাদের মধ্যে হিন্দু হওয়ার দায় ছিল না।
মহাভারতের দিকে তাকালে দেখা যাবে মহাভারতের রচয়িতা বিভিন্ন গল্পের মাধ্যমে জাতিভেদের কুফল দেখিয়েছেন। কেও মানত, কেও মানত না। মহাভারতের কেন্দ্রীয় চরিত্র অর্জুন জাতিভেদ মানত-আবার খলনায়ক দুর্যোধন জাতিভেদ মানত না। মৌর্য্যরা শুদ্র ছিল-মৌর্য্যর আগে ধননন্দ ও শুদ্র সম্রাট।
প্রাচীন ভারতে বর্নভেদ কোথাও কোথাও ছিল, কোথাও কোথাও ছিল না ( বাংলাতেই ছিল না সেনদের আগে)
(২)
এটা গুরুত্বপূর্ন দিক তুলেছেন ধরে-যা আমি আগেও লিখেছি। কারন সহজ। ইসলামের জঙ্গীপনা ঠেকাতে বৈদিক হিন্দুদের মতন আরেক জঙ্গীগোষ্ঠির দরকার। যেটা আজকের ভারতেও দেখা যাচ্ছে। ইন্টালেকচুয়াল বামেদের অধীনে ইসলাম এবং তার মৌলবাদ আরো বেড়েছে। ফলে ভারতের লোকজন বাধ্য হয়েছে হিন্দু জঙ্গীদের ভোট দিতে। মাঝখান থেকে বামেদের আসন কমে ৬৫ থেকে ৯! পরের বার ইলেকশনে বামেরা হয়ত সম্পূর্ন হাওয়া হয়ে যাবে।
বেদ মারপিট করার গ্রন্থ। ভারতে অহিংসা এসেছে জৈন এবং বৌদ্ধদের হাত ধরে। বৈদিক ধর্মে, গীতায় অহিংসার স্থান নেই। গীতায় শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বকেছেন অহিংস মনোভাবের জন্য। কাপুরুষকে, যারা যুদ্ধ করতে ভয় পায়, তাদের ঘৃনা করে গীতা। ফলে যুদ্ধবাজ, দাঙ্গাবাজ ইসলামের বিরুদ্ধে জৈন বা বৌদ্ধরা না, যুদ্ধবাজ হিন্দুরা টিকবে-এটাই হবে।
@বিপ্লব পাল, বামপন্থীরা কোনদিন মুছবে না। কিন্তু কংগ্রেস জাস্ট ফুটে (রাস্তায়) যাবে।
এক ধরনের অচল পয়সা আরেক ধরনের অচল পয়সায় পরিণত হচ্ছে। পয়সাগুলো অচল এটা মানুষকে বোঝানোই মুক্তমনাদের আলোচনার বিষয় হওয়া উচিত। তা নিয়ে হা-হুতাশ করা নিয়ে নয়। বিশেষ কোনো অচল পয়সার প্রতি টান থাকলে আলাদা ব্যাপার।
হিন্দুত্ববাদী আন্দোলনের বিপক্ষে বলতে গিয়ে এই ধরনের ‘বৈশম্যগন্ধী’ বাক্য রচনা না করাই শ্রেয়। হিন্দুত্ববাদীরা যে ‘ইসলাম’ থেকে ইন্সপায়ার হয়েই এই কাজ করছে তেমন কোনো যুক্তি/প্রমাণ/তথ্য/উপাত্ত আপনার লেখায় দেখি না।
আপনি নিজেই বলেছেন তাদের অ্যাটিচিউড আব্রাহিমক ধর্মগুলোর মত হয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীতে আব্রাহামিক ধর্ম অনেকগুলো আছে। কীভাবে তাদের ধ্যানধারণা হিন্দুত্ববাদীদের মধ্যে পেনিট্রেট করছে সে সম্পর্কিত আপনার হাইপোথিসিস সম্পর্কে সুচিন্তিত লেখা পাবার আশা রইলো।
@তানভীরুল ইসলাম,
হিন্দু ধর্ম বলতে কিছু ছিল না। মুসলিমরা ভারতে আসার পর দেখে, স্থানীয় লোকেদের নানান ধরনের ধর্ম। কিন্ত একটাই মিল। একে অন্যকে শ্রদ্ধা করত। মারামারি হত। তবে সেটা কম। ফলে মুসলিমরাই এই সমগ্র ভারতের ধর্মের নাম দেয় হিন্দু ধর্ম।
আদতে এটা কোন ধর্ম না। দর্শন ও না। ভারতে লোকে যাহা করত-তাহাই হিন্দু ধর্ম বলে চলে আসছে।
এবং সেটাতে যেটা গুরুত্বপূর্ন ছিল-সেটা হচ্ছে নিজের জীবনাদর্শ গ্রহনের স্বাধীনতা। আমি আগের একটা পোষ্টেই দেখিয়েছি রাষ্ট্রএর বা পারিবারিক ধর্ম বলে কিছু ছিল না। প্রত্যেকে নিজের পথ খুজবে-যেমন আমরা মুক্তমনারা খুজছি, সেটাই ছিল ট্রাডিশন।
আজকে মুক্তমনারা, আমরা যে চিন্তার স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছি, সেটা প্রাচীন ভারতে ছিল। ছেলে বাবার ধর্ম নিত না। স্ত্রঈকেও স্বামীর ধর্ম নিতে হত না। কারন ধর্ম = আইডেন্টি এই ব্যপারটাই ছিল না মৌর্য্য বা বৌদ্ধদের সময়ে। সেই জন্যেই ভারতে এত এত দর্শনের জন্ম হয় যার ৯০% ই ছিল নাস্তিক্য দর্শন। কারন সেই চিন্তার স্বাধীনতা। পরে রাজনৈতিক কারনে সেই সব স্বাধীনতা ধ্বংস হয়। আমার আগের ব্লগটাতেই এই নিয়ে লিখেছি। দেখে নাও।
সুতরাং প্রাচীন ভারতের জ্ঞান চর্চাকে অন্য ধর্ম বিশেষত আব্রাহামিক ধর্ম গুলোর সাথে গোলালে মুশকিল আছে। আব্রাহামিক ধর্মের মূল সূরই হচ্ছে মানুষকে ভেড়ার পালে পরিনত করে শক্তিশালী মিলিটারী বা শক্তিশালী সমাজের সৃষ্টি। যা হয়ত বিবর্তনের কারনেই তখন দরকার ছিল।
@বিপ্লব পাল, প্রাচীন আরবের সমাজ কৃষি ভিত্তিক ছিলনা। আবার প্রাচীন ভারতীয় সমাজ ছিল কৃষি ভিত্তিক। এই কারণে আরবের এমন এক ধর্মের দরকার পড়ল যার মাধ্যমে তারা অন্যের সামগ্রী লুট করে বেচে থাকতে পারে। এখানে ভারতে খাবারের, জলের অভাব ছিলনা, মানুষের তাই ভেড়ার পালের ধর্মের দরকার পড়েনি। মানুষ নতুন ধান উঠলে , ঘরে আল্পনা দিয়ে নবান্ন উৎসব করত।
হুম বিপ্লব দা, এক্কেবারে মোক্ষম কথা বলেছেন। বেদ একেশ্বরবাদে নয়, শক্তির একত্ববাদে বিশ্বাস করে, বেহেস্তে ৭২টা হুরপরীর জীবন অনন্ত নয় হিন্দুর কাছে মোক্ষ বা আত্মার মুক্তি হলো চিরন্তন…… কিন্তু হিন্দুরাই সেটা ভুলতে বসেছে!!!!
@সন্তোষ,
হিন্দুরা নিজেরাই মুসলমান হয়ে গেছে। ওরা নিজেরাই বোঝে নি।
মানে, ‘উন্নত’ প্রাচীন হিন্দু ধর্ম কেন অমন করতে যাবে, এইতো? প্রাচীন হিন্দু ধর্মকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসাতে আপনার আবেগ বেশ লক্ষনীয়, যদিও সমপরিমান প্রয়োজনীয় যুক্তি অনুপস্থিত। ধর্মের তুল্যমূল্য বিচারে অমন অনেক যুক্তি অন্য ধর্মের লোকেরাও হাজির করতে পারে, যা কিনা এমনকি আপনার কথিত প্রাচীন হিন্দু ধর্মেও নেই।
আর দেখুন, আমি আজ প্রথম বুঝলুম, গানটা শ্যামা সঙ্গীত। খুব সম্ভবত চাপাডাঙ্গার বউ ছবিতে পুত্রসম দেবরকে গাইতে দেখেছিল মাতৃসমা ভাবীর উদ্দেশ্যে নিবেদিত এই গান! 🙂 🙂
@গুবরে ফড়িং,
হিন্দু ধর্ম বলে কোন কিছু নেই। যদি কিছু থেকে থাকে, তা হল নিজের জীবন দর্শন খোঁজার স্বাধীনতা। গোষ্টিভিত্তিক গোরুর পালের ধর্ম অবশ্যই একেশ্বরবাদের ফল।
@বিপ্লব পাল,
নাহ্, এভাবে দেখলে, একেশ্বরবাদী ধর্মও একটা দর্শন, ‘হিন্দু ধর্ম ধর্ম না, দর্শন’ এই থিয়োরী মানতে গেলে সব ধর্মই দর্শন, কি বলেন? আর ধর্ম ও দর্শনের মধ্যে পার্থক্য খোঁজা শুরু হল তো এই কালে, তাই না, বিপ্লবদা???
ধর্মীয় স্বাধীনতা (অশোকের পরিবারে বিভিন্ন ধর্মের অনুসরন) বা যৌনতার স্বাধিনতা বা তদ্রুপ থাকায় হিন্দু দর্শনকে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পরিয়ে দিতে চাইছেন, তো, একেশ্বরবাদী দর্শনেও অমন অনেক কাজ রয়েছে, যেমন, বর্ন বৈষম্য লোপ, শ্রেণী বৈষম্য লোপ ইত্যাদি ইত্যাদি।
সুতরাং, প্রাচীণকালে ধর্মগুলো যখন এসেছিল, সমাজ পরিবর্তনের আবশ্যক হাতিয়ার হয়েই এসেছিল, তার ভিতর দর্শনও ভালমতই পোরা ছিল, নইলে এত বিস্তৃত হতে পারতো???
@গুবরে ফড়িং,
(১) ইসলাম বা খ্রীষ্ট ধর্ম সামাজিক আন্দোলনের ফল। হিন্দু ধর্ম বলে কিছু নেই । এটি হাজার হাজার ধর্ম আন্দোলন, চিন্তা দর্শনের ফল।
(২) হিন্দু ধর্ম ধর্ম ও না -দর্শন না । নিজের উপলদ্ধি, পথ খোজার স্বাধীনতা। প্রাচীন ভারতে বস্তুবাদি চার্বাক, অজস্র নাস্তিক দর্শন , লাখে লাখে আস্তিক দর্শন ছিল।
সুতরাং গুলিয়ে ফেললে মুশকিল আছে।
@বিপ্লব পাল,
‘নিজের উপলদ্ধি, পথ খোজার স্বাধীনতা’ দর্শন না??? দর্শন তাহলে কি, বিপ্লবদা?
আর একেশ্বরবাদী ধর্ম ‘সামাজিক আন্দোলনের ফল’ এবং হিন্দু ধর্ম ‘ধর্ম আন্দোলনের ফল’? খুব কনফিউজড হয়ে যাচ্ছি, বিপ্লবদা। এখন যদি সব তালগোল পাকিয়ে ফেলি বা গুলিয়ে ফেলি, সে আমার দোষ?
@গুবরে ফড়িং,
(১) ইসলাম বা খ্রীষ্ট ধর্ম ক্যানোনিক্যাল। হিন্দু ধর্মের ভিত্তি যোগের মাধ্যমে আত্মোপলদ্ধি। একটি জোর করে চাপিয়ে দেওয়া রিচুয়াল বা চিন্তা, অন্যটির ভিত্তিই হচ্ছে প্রত্যেকের নিজের নিজের উপলদ্ধি থাকবে তা ক্রমশ একটি সাধারন উপলদ্ধির মধ্যে আসবে।
(২) হিন্দু ধর্মের অনেক শাখাই শ্রেফ গুরুকুলের তৈরী-একাডেমিক। কোন সামাজিক কারন ছিল না । বৈষ্ণব বা ব্রাহ্ম সামাজিক আন্দোলনের ফল-আবার কমলাকান্তর তন্ত্র সাধনা নেহাতই স্থানীয় ধর্মীয় আন্দোলন।
একেবারে ঠিক বলেছেন বিপ্লব দা। সেই কারনেই আমি বলেছিলাম হিন্দুত্ত্ববাদীরা আজ যে ভাবে চিন্তা করছে ক’দিন পরে তো আব্রাহামিকদের মতোই তারা চাইবে পোপের দেশ, ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের মতো হিন্দু প্রজাতন্ত্র যেখানে তাদের বেদে বর্নিত ঘটনাবলীর মতো সামাজিক সরিয়া আইন! এ হলো হিন্দুত্ত্ববাদীদের আব্রাহামিক ধর্মগুলোর সাথে দেয়া পাল্লার ফল!
@কেশব কুমার অধিকারী,
সেটাই ত সমস্যা। হিন্দু ধর্ম বলে ত কিছু নেই । হিন্দু ধর্ম হচ্ছে নিজের জীবন দর্শন, নিজের জীবন পথ খোঁজার স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতাটাই হিন্দু ধর্ম। সেটা চলে গিয়ে ভেড়ার পালের গোষ্টিবাজি শুরু করলে, সেই ইসলামই হইল :-Y