এই লেখাটি ইস্টিশন ব্লগে প্রকাশিত ব্লগার পারভেজ আলমের একটি লেখার পাঠ প্রতিক্রিয়া। আমি প্রথমে পারভেজ আলমের লেখাটি পড়েছি ইশটিশন ব্লগে এবং তারপরে অভিজিৎ রায় এর ইংরেজি লেখাটি পড়েছি মুক্তমনায়। দুটি লেখা পড়ে আমার মনে হয়েছে, পারভেজ আলম যদি “ভাইরাস” সম্পর্কে খুব সাদামাটা একটি মৌলিক বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ পাঠ করতেন, তাহলে অভিজিৎ রায়কে এতো পরিশ্রম করে “সালাফি সেকুলার” বানানোর প্রয়োজন হতোনা। আমি ব্যক্তিগতভাবে ইশটিশন ব্লগে তাঁর লেখায় কমেন্ট অংশে তাকে পরামর্শ দিয়েছি “ভাইরাস” সম্পর্কে খুব সাধারণ মানের একটি মেডিক্যাল নিবন্ধ পড়ার জন্যে।

পারভেজ আলম এবং তাঁর বন্ধু-অনুসারীরা লেখক অভিজিৎ রায়কে বেশ কিছু প্রশ্ন করেছেন, লেখক অভিজিৎ রায়কে আমি যতটুকু জানি, এই প্রশ্ন গুলোর বেশ কয়েকটি আসলে প্রাসঙ্গিক নয় তাঁর জন্যে । প্রাসঙ্গিক নয় এজন্যে বলছি যে একজন বিজ্ঞান লেখকের জন্যে “জাতিয়তাবাদ” নিয়ে তাত্ত্বিক আলোচনা ও তার উত্তর দেয়াটা খুব দায়িত্তবানের কাজ হবেনা। যদিও অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করাটা এখন বিতর্কের একটা ভালো কৌশল, তাতে আপাত প্রতিপক্ষকে খানিকটা জব্দ করা যায়। তবুও তিনি যদি প্রাসঙ্গিক মনে করেন, নিশ্চয়ই কখনও হয়ত সময় করে লিখে উঠবেন (অভিজিৎ মুক্তমনার বাংলা ব্লগে না লিখলেও তাঁর সাম্প্রতিক দুটো ফেসবুক স্ট্যাটাসে এ নিয়ে কিছু লিখেছেনও দেখুন – এক এবং দুই)। তাই, পারভেজ এর করা প্রশ্নগুলোর কোনটারই উত্তর দেবার দায় এই লেখার উদ্দেশ্য নয় এবং আমি তা থেকে নিজেকে বিরত রাখবো।

পারভেজ তার লেখায় ইসলামের বিভিন্ন গোত্র – উপগোত্র ভাগ বিভাজন দেখিয়ে, বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছেন যে আসলে ইসলামের অনুসারীদের একটি খুব ছোট্ট অংশও এইসব খুন খারাবী করে থাকে যারা কুরআনের আক্ষরিক অর্থে বিশ্বাস করেন। পৃথিবীতে বিরাট অংশের মুসলিমরা কুরআনের আক্ষরিক অর্থ বিশ্বাস করেননা, এমন কি কুরআনের আক্ষরিক অর্থ বিশ্বাস করেন এমন অনেকেই সন্ত্রাসবাদী কাজের সাথে জড়িত নন। সুতরাং সন্ত্রাসবাদী একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর জন্যে ইসলাম ধর্ম কে বা ধর্মকে ভাইরাস বলাটা ঠিক নয়। যারা এটা বলেন তারা “সালাফি সেকুলার” মানে তাদের সাথে ইসলামের ক্ষুদ্র জঙ্গী গোষ্ঠী “সালাফি” দের কোনও পার্থক্য নেই। পারভেজ এর এই ধরনের নানান আলোচনার সাথে একমত বা দ্বিমতের প্রশ্ন টিকে পাশে তুলে রেখেও আলোচনা করা যেতে পারে আসলে ধর্ম কিভাবে “ভাইরাস” এর মতো করে কাজ করে। এটা শুধুই একটি তুলনা, ভাইরাস কে বুঝলে এই তুলনাটিও বোঝা সহজ হবে, ভাইরাস বিশয়টি না বুঝলে অন্ধকারে ঢিল ছোড়ার মতো হাজারটা যুক্তি দিয়ে ইসলামকে বা ধর্মকে জাস্টিফাই করার পরিশ্রম টা করতে হবে। তাই ইসলামের শ্রেণী বিভাগ এবং তার সঠিকটা – বেঠিকতা নিয়ে আমি কোনও আলোচনা করবোনা, সেগুলো প্রাসঙ্গিকও নয়।

আমি বরং আগ্রহী, এটা বলবার জন্যে যে, পারভেজ নিজের অজান্তেই তাঁর নিজেরই লেখায় এমন কিছু যুক্তি তুলে ধরেছেন যা সুস্পষ্ট ভাবে “বিশ্বাসের ভাইরাস” ধারনাটিকেই সমর্থন করে। আসুন পারভেজ আলমের লেখা থেকেই শুরু করা যাক।

সুচনায় অভিজিৎ রায় সম্পর্কে কিছু পজিটিভ কথা বলেছেন, এটা ভালো পদ্ধতি, আমি এজন্যে পারভেজ কে ধন্যবাদ জানাই। তারপরেই তিনি জানান দিচ্ছেন যে, তিনি আজ অভিজিৎ রায়ের কিছু কঠিন সমালোচনা করবেন। এই ঘোষণাটিও ভালো, তাতে পারভেজ এর সেই সময়ের মনস্তাত্ত্বিক অবস্থাটি বোঝা যায়। সুচনা অংশটির পরে পারভেজ আলমের লেখার দুইটি প্রধান অংশ। প্রথম অংশে তিনি রিচারড ডকিন্স এর “মিম” তত্ত্ব বিষয়ে অভিজিৎ রায়ের “বিশ্বাস” এবং তাঁর নিজের “অবিশ্বাসের” কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, “মিম” বিষয়ক তত্ত্ব এখনও কেবলই একটি তত্ত্ব, “বৈজ্ঞানিক সত্য” নয়। কিন্তু অভিজিৎ বা ডকিন্স বা এ বিষয়ে আরও হাজারো আগ্রহী মানুষের কেউ কি দাবী করেছেন যে “মিম” বিষয়ক আলোচনা গুলো “বৈজ্ঞানিক সত্য”? প্রকৃত অর্থে “বৈজ্ঞানিক সত্য” বিশয়টি আসলে কি, তা পারভেজ ব্যাখ্যা করেননি, ব্যাক্ষ্যা করাটা সহজ নয়। পারভেজ “মিম” বিশয়টিকে খানিকটা লঘুত্ব দেবার জন্যেই “বৈজ্ঞানিক সত্যের” প্রতিপক্ষ হিসাবে দাঁড় করাচ্ছেন এবং এই কাজটি তিনি করছেন কোনও রকমের রেফারেন্স ছাড়াই। অর্থাৎ কেনও “মিম” বিষয়ক আলোচনাটি কেবলই একটি আলোচনা, এর বৈজ্ঞানিক গ্রহণযোগ্যতা কেনও পারভেজের কাছে এতো লঘু তাঁর কোনও ব্যাখ্যা নেই।তবে পারভেজ সততার সাথে স্বীকার করেছেন, এ বিষয়ের মূল লেখাগুল তার পড়া নেই।

“অভিজিৎ রায় এবং উল্লেখ্য লেখকরা প্রস্তাব করছেন যে ধর্ম সংক্রান্ত ‘মিম’গুলোকে ভাইরাসের সাথে তুলনা করা উচিত। আমি যেহেতু এই লেখকদের লেখা পড়ি নাই, তাই তারা কোন ব্যাখ্যা দিয়েছেন কি না জানি না।“

কোনও একটি বিষয়ে পড়াশুনা না করেই, মূল লেখকদের ব্যাক্ষ্যা এবং বিশ্লেষণ না পড়েই এভাবে একটি ব্লগ লেখাটা কতোটা দায়িত্ববান কাজ, সে প্রশ্ন পারভেজ সহ সবার কাছেই থাকলো। আমার ধারণা, পারভেজ যদি এই বিষয়ের মূল লেখাগুলো পড়েন, অভিজিৎ রায়ের “বিশ্বাসের ভাইরাস” বইটি আরেকটু মনোযোগ দিয়ে পড়েন, তাহলে হয়ত তার ভাবনার পরিবর্তন হতে পারে।

আসুন এবারে সেই স্পর্শকাতর শব্দ “ভাইরাস” নিয়ে আলোচনা শুরু করি। প্রথমেই বলে রাখি ধর্মকে ভাইরাস বলাতে রাগ গোসসা নাকরে, বরং আসুন ধর্মের কর্ম পদ্ধতি এবং ভাইরাসের কর্ম পদ্ধতির মাঝের মিল গুলোকে একটু দেখে নেই।

মুলত পারভেজ আলম এবং মুক্তমনার আগ্রহী পাঠকের জন্যে কিছু খুব সাধারণ মানের তথ্য এখানে দিচ্ছি (মুক্তমনার পাঠকদের মাঝে যারা ডাক্তার এবং বায়োলজিক্যাল সায়েন্স এর মানুষ আছেন, তারা ক্ষমা করবেন, এগুলো আপনাদের জন্যে হাস্যকর রকমের বেসিক হতে পারে, Please Bear with me !)। ভাইরাস এর চারটি প্রধান দিক সম্বন্ধে না জানলে, ধর্মকে কেনও ভাইরাসের সাথে তুলনা করা যেতে পারে এই এনালজি টা বোঝা সম্ভব নয়, যা হয়েছে পারভেজ এর ক্ষেত্রে । (এখানে কিছু তথ্য ইংরেজিতে উল্লেখ করেছি, আমার নিম্ন মানের বাঙলার কারনে যেন বৈজ্ঞানিক ধারণা পালটে না যায় তা নিশ্চিত করার জন্যে) –

১ -ভাইরাসের শারীরিক গড়ন
২ -ভাইরাসের কর্মক্ষমতা এবং এর কাজের ধরণ
৩ -ভাইরাসের ক্ষতিকর দিক এবং
৪ -ভাইরাসের চিকিতসা

১ -ভাইরাসের শারীরিক গড়ন
ভাইরাস হচ্ছে এক ধরনের জীবানু যা নিজে নিজের খাদ্য তৈরি করতে পারেনা, এটা বংশ বৃদ্ধি করতে পারেনা যদিনা এরা ভিন্ন কোনও প্রানী দেহের ভেতরে অবস্থান না করে, অর্থাৎ, কোনও হোস্ট বা প্রানী দেহের বাইরে ভাইরাস একটি নিরেট জড় পদার্থ। মাইক্রোবায়লজির কোনও কোনও পুস্তক হোস্ট দেহের বাইরের ভাইরাস কে শ্রেফ একটি জড় পাথরের সাথে তুলনা করেছে্, ইংরাজিতে যাকে বলা যায় Inert substance। অর্থাৎ অন্যের দেহে না ঢুকে, ভাইরাসের পক্ষে কোনও কাজই করা সম্ভব নয়। নিজ অস্তিত্ব ও বৃদ্ধির প্রয়োজনে তাকে একটি হোস্ট খুজতেই হয়।
(Viruses can’t metabolize nutrients, produce and excrete wastes, move around on their own, or even reproduce unless they are inside another organism’s cells.
They aren’t even cells) (১)
এবারে আসুন, পারভেজ আলমের লেখায় হজরত আলীর জবানিতে তিনি কি লিখেছেন পড়ে দেখুন –

“সিফফিনের যুদ্ধের সময় খারেজিরা যখন ‘আল্লাহ ছাড়া কোন শাসক নাই’ এবং ‘কুরান ছাড়া কোন বিচারক নাই’ এই জাতীয় স্লোগান দিয়ে আলীর বিরোধীতা শুরু করেছিল তখন তাদের সাথে আলীর একটি বিতর্কের কাহিনী পাওয়া যায়। আলী একটি কুরান শরিফকে জনসমাজের সামনে রেখে সেই কুরানকে বলেছিলেন আল্লাহর আইন জনগণকে বুঝিয়ে দেয়ার জন্যে। কুরান তো কথা বলতে পারে না, সে আলীর প্রশ্নের জবাব কিভাবে দেবে? জনগণ এই প্রশ্ন তোলার পর আলী সায় দিয়ে বলেছিলেন, কুরান হলো কাগজ আর কালি, কুরান নিজে থেকে কিছু বলতে পারে না। কুরান থেকে আইনের ব্যাখ্যা দিতে পারে খালি মানুষ, তার নিজের বুঝ বুদ্ধির আওতা অনুযায়ী।“

পারভেজ, আপনার এই গল্পটি হচ্ছে একটি আদর্শ উদাহরন যে কুরআন বা যেকোনো গ্রন্থ হচ্ছে এক রকমের নিরেট নিরজিব পদার্থ, যার নিজের কোনও স্বাধীন কার্যক্ষমতা নেই, যার সক্রিয় হবার জন্যে অন্যের কাঁধে সওয়ার হতে হয়, অর্থাৎ যার সক্রিয় হবার জন্যে অবশ্যই একজন হোস্ট দরকার হয়, ঠিক যেমনটা দরকার হয় ভাইরাসের। অর্থাৎ কুরআনের বা যেকোনো ধরমগ্রন্থের একটি হোস্ট দরকার, তার নিজেকে বৃদ্ধির জন্যে, নিজের বিস্তারের জন্যে। হোস্ট বিহীন কুরআন বা বাইবেল বুক শেলফ এর আরও তিন হাজার পুস্তকের মতই একটি নিরুপদ্রব পুস্তক। কিন্তু যখন ধর্ম গ্রন্থ একটি হোসট লাভ করে, তখন? তখন সে তার হোস্ট এর উপরে নিয়ন্ত্রন নিতে থাকে এবং এক পর্যায়ে হোস্ট তার নিজের স্বকীয়তা হারিয়ে দাস হয়ে পড়েন ধর্মের, যাকে “ধর্মীয় অনুশাসন” নামে চালানো হয়ে থাকে। এই অনুশাসন মানুষ কে মুসলমান বানায়, হিন্দু বানায়, শিখ বানায় তারপর একজনকে অপরের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দেয়। অর্থাৎ মানুষের স্বাভাবিক চিন্তার জায়গাটির নিয়ন্ত্রন নিয়ে নেয় ধর্ম। আসুন, ভাইরাস এই কাজটি কিভাবে করে দেখা যাক –

২ – ভাইরাসের কর্মক্ষমতা এবং এর কাজের ধরণ
ভাইরাস যখন কোনও হোস্ট সেল এর ভেতরে ঢুকে যায়, তখন ভাইরাস সেই হোসট সেল এর প্রজনন ও অন্যান্য মেটাবলিক বা বিপাকীয় কাজের দায়িত্ব নিয়ে নেয়। ভাইরাস কোষের স্বাভাবিক কার্যক্রম কে বন্ধ করে দেয়, অর্থাৎ এটি একটি স্বাভাবিক কোষের সাধারণ কাজ কে বন্ধ করে দিয়ে তাঁর মতো করে কাজ শুরু করে দেয়। তখন কোষ আর নিজের কাজের রুটিন বা নিয়ম মানতে পারেনা, যে ভাইরাস টি দ্বারা আক্রান্ত ঠিক তার শাসন অনুযায়ী কাজ করে। এক পর্যায়ে ভাইরাস মানব বা প্রানী কোষের ভিতরে প্রজনন শুরু করে, লক্ষ লক্ষ নতুন ভাইরাস আরও লক্ষ লক্ষ কোষ কে আক্রমন করে এবং এক সময় মানুষের দেহের কোনও নির্দিষ্ট তন্ত্রের স্বাভাবিক কাজ কে বন্ধ করে দেয়। সব শেষে হোস্ট কোষের বা এমনকি হোস্ট প্রাণীরও মৃত্যু ঘটে। ঠিক যেমন টা ধর্ম একজন মানুষের স্বাভাবিক সামাজিক বোধ বুদ্ধি কে বন্দী করে ধর্মের অনুশাসন চাপিয়ে দেয়।মানুশ তখন হয়ে যায় ধর্মের ডিক্টেশনে চালিত, বিজ্ঞান বা মানবিক বোধ দ্বারা চালিত নয়।
(Once inside a host cell, viruses take over its machinery to reproduce. Viruses override the host cell’s normal functioning with their own set of instructions that shut down production of host proteins and direct the cell to produce viral proteins to make new virus particles.) (১)

৩ -ভাইরাসের ক্ষতিকর দিক এবং আক্রমনের ধরণ

ভাইরাস আক্রান্ত প্রানী বা মানুষ বা হোস্ট দুই ধরনের হতে পারে। প্রথমত – ভাইরাস সঙ্ক্রমিত এবং যার মধ্যে সক্রিয় রোগ দেখা দিয়েছে (Virus infected with disease menifestation)। দ্বিতীয়ত – ভাইরাস আক্রান্ত কিন্তু রোগাক্রান্ত নয় (Carrier without active infection or disease), কিছু হোস্ট বা মানুষ কোনও রকমের রোগের প্রকাশ বিহীন ভাবেও থাকতে পারেন তার সারা জীবন। অথচ এরা ভাইরাস এর বাহক, এদেরকে বলা হয় ক্যারিয়ার।

– প্রথম গোত্রের মানুষ হচ্ছে সংক্রমিত এবং যাঁদের রোগের লক্ষন প্রকাশিত ইনফেক্টেড উইথ এক্টিভ ডিজিস! বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই আক্রান্ত মানুষের একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বা ভোগান্তি হয়ে থাকে, মৃত্যুও হয়ে থাকে। এই ভোগান্তি সামান্য সর্দি – কাশী – ফ্লু থেকে শুরু করে মরনঘাতি এইডস ও হতে পারে।

– দ্বিতীয় গোত্রের হোস্ট হচ্ছে ক্যারিয়ার অর্থাৎ এরা জীবানু টি বহন করেন কোনও রকমের লক্ষন ছাড়াই। এই গোত্রের হোস্ট দের দুইটি সমস্যা আছে –
প্রথমত, যেহেতু এরা ক্যারিয়ার কিন্তু সাফারার নন, তাই এরা মনে করেন যে এরা সুস্থ এবং বাস্তবের এদের ইনফেকশন এর কথা ধরাও পড়ে কদাচিৎ বা অনেক দেরীতে, যেহেতু এদের কোনও লক্ষন বা অভিযোগ থাকেনা। এদের কারো কারো সারা জীবনেও লক্ষন প্রকাশিত হয়না।
(Some viruses insert their genetic material into the host cell’s DNA, where they begin directing the copying of their genes or simply lie dormant for years or a lifetime. Either way, the host cell does all the actual work: the viruses simply provide the instructions.) (১)

দ্বিতীয়ত, রোগের আক্রমন থেকে এরা বেঁচে গেলেও সবার অলক্ষে এরা এই ভাইরাস কে সমাজের অন্যান্য মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেন। অর্থাৎ ক্যারিয়ার হোস্ট বা মানুষেরা আপাত দৃষ্টিতে ঝুকিহীন হলেও এরা সবার অলক্ষে ভাইরাস টিকে ছড়িয়ে দেন সমাজের সবার মাঝে।যারা ক্যারিয়ার বা বাহক, তারা যে সব সময় রোগের ঝুকিমুক্ত থাকবেন, তাও কিন্তু নয়। শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে এলে, এই ক্যারিয়ার বা বাহকরাও আক্রান্ত হতে পারেন সক্রিয় রোগে। সুতরাং ভাইরাস এর বাহক আপাত লক্ষনবিহিন হলেও এরাই ভাইরাসটিকে ছড়িয়ে দিয়ে আরও হাজার হোস্ট কে আক্রান্ত করে এবং নিজেও কোনও দিন আক্রান্ত হতে পারে।

আশ্চর্য জনক ভাবে একথা সত্যি যে পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষ আছেন যারা বিভিন্ন রকমের ভাইরাস বহন করছেন কোনও রকমের রোগের লক্ষন ছাড়াই। এমন কি মারাত্মক এইচ আই ভি ভাইরাসও বহন করছেন অনেকেই কোনও রকমের রোগের লক্ষন ছাড়া। তার মানে হচ্ছে রোগের লক্ষন প্রকাশিত না হলেই ভাইরাসের অনুপস্থিতি নিশ্চিত করেনা। ধর্মের ভাইরাস বহন করছেন কিন্তু কোনও রকমের সন্ত্রাসী কাজ কর্মের সাথে জড়িত নন, এই গোত্রের মানুষদের পারভেজ বলছেন “শান্তিপ্রিয়” অর্থাৎ যারা ধর্ম বিশ্বাসী বা ধর্মের বিশ্বাস কে বহন করেন কিন্তু কোনও রকমের সন্ত্রাসবাদী কাজের সাথে জড়িত নন। তাই পারভেজ প্রশ্ন রাখছেন –

“কিন্তু দুনিয়ার সকল মুসলমানই কেনো এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে না অথবা আক্রান্ত হলেও কার্যক্ষেত্রে তার কোন প্রকাশ ঘটাচ্ছে না সেই প্রশ্নটি আসে।“

পারভেজ এর প্রশ্ন টি কি ভাইরাস এর “ক্যারিয়ার” ধারণা দিয়ে ব্যাক্ষ্যা করা যায়?

লক্ষন প্রকাশিত না হওয়াকে পারভেজ বলেন “শান্তিপ্রিয়” কিন্তু আমাদের জীবদ্দশায় কি আমরা দেখিনি, ধর্মের বিশ্বাস বহন করা এই “শান্তিপ্রিয়” মানুষেরাও কখনও কখনও হয়ে ওঠেন ভয়ংকর? ধর্ম এদের কে কখনও সক্রিয় করে তোলে আবার নির্লিপ্ত – ভুমিকাহীন ও করে তোলে। এজন্যেই গুজরাটে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুরা বাঁচাতে পারেনা মুসলিম শিশুর খুন হওয়াকে, এ জন্যেই বাংলাদেশের একটি গ্রামে যেখানে লক্ষ ঘর মুসলিম “শান্তিপ্রিয়” মানুষ থাকতেও ৫ – ১০ টি হিন্দু পরিবার কে বাচাতে পারেনা। এ জন্যেই দেখা যায় মাত্র ৩০ জন মুসলমান সন্ত্রাসী হয়ত ৩০০ হিন্দু পরিবার কে ভারতে পাঠিয়ে দিলো অথচ গ্রামের ৩০ হাজার মানুষ চেয়ে চেয়ে দেখলো। কারন এই হাজার হাজার মানুষ গুলোর মস্তিষ্কের ভাইটাল মেকানিজম ধর্ম নামের ভাইরাসের দখলে। মানুষ এখানে ডিক্টেটেড বা পরিচালিত হয় “ধর্মের” অনুশাসন দ্বারা।

শেষ পয়েন্ট হচ্ছে, ভাইরাসের চিকিতসা। আমরা অনেকেই জানি এখন পর্যন্ত ভাইরাসের সরাসরি কোনও চিকিতসা নেই। ভাইরাস চিকিতসার একটি প্রধান দিক হচ্ছে প্রতিরোধ আর এই প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে ভ্যাক্সিন। ভ্যাক্সিনের মুলনিতি হচ্ছে – যে ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করতে চাই, সেই ভাইরাসের বিষাক্ত অংশ বা Toxin অংশটুকু কে মেরে ফেলে বা দুর্বল করে সেই মৃত ভাইরাসটিকে মানুষের শরীরে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। ফলে মানুষের শরীর, মৃত ভাইরাস টির দেহ বৈশিস্ট্য বা Physical morphology চিনে রাখে, ফলে ওই ভাইরাসের বিপরীতে মানুষের দেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থায় এক ধরনের মেমোরী তৈরি হয়। পরবর্তীতে যখনই সেই মানুশ বা প্রানীটি একই ভাইরাস দিয়ে আক্রান্ত হবে, দেহ সেই ভাইরাসের বিরুদ্ধে তার মেমরি কে কাজে লাগিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।

ধর্মের বিরুদ্ধেও সরাসরি কোনও চিকিতসা নেই। ধর্মের কালো দিকগুলো উন্মোচন করাকে আমি মনে করি ভাইরাসের টক্সিন বা বিশাক্ত অংশকে মেরে ফেলার মতই, যত বেশী মাত্রায় ধর্মের হানাহানি, সাম্প্রদায়িকতা, অবৈজ্ঞানিকতা কে তুলে ধরা যাবে, মানুষের মাঝে ততো বেশী প্রতিরোধ “মেমোরী” তৈরী হবে এবং মানুষ ধর্মের ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। ধর্মের বিরুদ্ধে কার্যকর ভ্যাক্সিন হচ্ছে ইহজাগতিকতার চর্চা, বিজ্ঞান মনস্কতার চর্চা। গড়ে তোলা।

পারভেজ নিজেকে “একশত ভাগ” সেকুলার দাবী করছেন, যদিও তার লেখা তা বলছে না। পারভেজ বলছেন তিনি মানুষ বিষয়ে আগ্রহী, অথচ তার সকল আলোচনা মুসলমান দের নিয়ে। কখনও কখনও তিনি মুসলমান দেরকেও অজস্র “ফী” যুক্ত বর্গে ভাগ করছেন। অথচ তিনি হয়ত জানেন না, মানুষ বা Homo Sapiens যে প্রজাতি টি তা কেবল মাত্র সেই প্রানী যে বা যারা “ধর্মের প্রোগ্রামিং” বিহীন, এই মানুষই পরবর্তীতে ভাগ হয়েছে মুসলমান, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, ইহুদী, হানাফি, সালাফী, অয়াহাবী, আহমদিয়া …… আরো হাজারো দলে উপদলে, পারভেজ এসব আমার চাইতে ভালোই জানেন। কিসের ভিত্তিতে এই বিভাজন?

পারভেজ যদি সত্যিই “মানুষ” বিষয়ে ব্রতী হন, তাহলে যে সমস্ত প্রপঞ্চ মানুষ কে সারা বিশ্বব্যাপী বিভক্ত করে, একের বিরুদ্ধে অন্যকে দাঁড় করিয়ে দেয়, সেই সকল কিছুর বিপরীতে আপনাকে দাঁড়াতে হবে। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে মানুষ কে বিভক্ত করবার সেই ফেনোমেনা গুলোর মধ্যে ধর্ম প্রধানতম।

Reference:
১। http://archives.microbeworld.org/microbes/virus/
২। Medical Microbiology and Immunology, Warren Levinson, 7th Edition, Macgraw and Hill, 2003, ISBN: 0-07-121236-1