অনেক দিন পর টিপিকাল বাঙালি হাতে একটা ইস্যু পেয়েছে তাহলো বর্তমান সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য যোগাযোগ-প্রযুক্তি মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্য। যাকে কটূক্তি বলে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন আমাদের সাংবাদিক ভাইয়েরা। এবারে আসি কটূক্তিটি কী সেই বিষয়ে। মন্ত্রী বলেন-

আমি কিন্তু হজ আর তাবলিগ জামাতের ঘোরতর বিরোধী। আমি জামায়াতে ইসলামীরও বিরোধী। তবে তার চেয়েও হজ ও তাবলিগ জামাতের বেশি বিরোধী।’ তিনি বলেন, ‘এ হজে যে কত ম্যান-পাওয়ার (জনশক্তি) নষ্ট হয়। হজের জন্য ২০ লাখ লোক আজ সৌদি আরবে গিয়েছে। এদের কোনও কাম নাই। এদের কোনও প্রডাকশন নাই। শুধু রিডাকশন দিচ্ছে। শুধু খাচ্ছে আর দেশের টাকা দিয়ে আসছে।’ লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘এভারেজে (গড়ে) যদি বাংলাদেশ থেকে এক লাখ লোক হজে যায়; প্রত্যেকের পাঁচ লাখ টাকা করে ৫০০ কোটি টাকা খরচ হয়।’ ‘তাবলিগ জামাত প্রতিবছর ২০ লাখ লোকের জমায়েত করে। নিজেদের তো কোনও কাজ নেই। সারা দেশের গাড়িঘোড়া তারা বন্ধ করে দেয়।’

উপরের প্রকাশিত বক্তব্যে দেখা যাচ্ছে লতিফ সিদ্দিকী নিজের ব্যক্তিগত অভিমত প্রকাশ করেছেন। এটা তার দল বা সরকারের কোন অভিমত বা মনোভাব নয় তা একান্তই নিজের ব্যক্তিগত অভিমত। অভিমত প্রকাশ হওয়ার পর থেকে আওয়ামী লীগ হেফজত জামাতের কর্মী, সমর্থক সবাই মিলে মন্ত্রীর চৌদ্দগুষ্ঠী উদ্ধারে মাঠে নেমেছেন। এখন কথা আসে এমন বক্তব্যে টিপিকাল বাঙালির কতোটুকু ক্ষতি হয়েছে। অনেকে বলবে টিপিকাল বাঙালি মনে অনেক বেশি আঘাত পেয়েছে। এই আঘাত মাপার কোন যন্ত্র আজ পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করতে পারেনি তাই মাপা সম্ভব না কতোটুকু আঘাত পেয়েছে এই টিপিকাল বাঙালিরা। আঘাত কী শুধু হজ্বের সমালোচনা করলে হয়? মূর্তি ভাঙলে হয়, ওয়াজের নামে অন্য ধর্মেকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করলে হয়, ধর্ম পালনের নামে অন্য ধর্মের মানুষকে কাফের বললে হয়। কিন্তু টিপিকাল বাঙালির শুধু আঘাত হয় সমালোচনা করলে। অন্য কোন কিছুতে তাদের কখনো আঘাত আসে না। ধর্মীয় বইয়ের উদ্ধৃতি উল্লেখ করে কেউ সারা পৃথিবীতে কাফের জবাইয়ের ঘোষণা দিলে তাদের মনে কখনো আঘাত আসে না। কেউ যখন অন্য ধর্মের নারীকে গনিমতের মাল ঘোষণা দেয় তখনও তাদের মনে আঘাত আসে না। অন্য ধর্ম নিয়ে বাজারে জলসা বসিয়ে ধর্ম পালন করলেও এরা আঘাত প্রাপ্ত হয় না। কিন্তু নিজের ধর্ম নিয়ে সমালোচনা তো দূরের কথা কেউ প্রশ্ন তুললে তারা আঘাতে রক্তবর্ণ হয়ে যায়। দুর্গা পূজা উপলক্ষে ১২ জেলায় মূর্তি ভাঙলেও তারা এর সমালোচনা করে না। বরং এরা কিছু দুষ্টু দুর্বৃত্তদের ঘাড়ে দোষ দিয়ে নিজেদের পাক-পবিত্র করে নেন। বিশ্বজুড়ে তালেবান ISIS এর উত্থানে এদের হৃদয় কখনো আঘাত প্রাপ্ত হয় না। আমেরিকার ঘাড়ে দোষ দিয়ে তাহারা খালাস পেয়ে যান। সব কিছুতে আমেরিকার হাত থাকে। মাঝে মাঝে মনে হয় বাংলাদেশে হাজার হাজার জিহাদি আইডিগুলোর মধ্যে কয়টা ইসরাইল আর আমেরিকার নাগরিক চালায় তা খুঁজে বের করা উচিত। যাই হোক যা বলছিলাম। সামান্য একটা বক্তব্যে টিপিকাল বাঙালি যেভাবে ধর্মীয় জোসে গর্জে উঠল সেই জোস কিন্তু তালেবানদের বিরুদ্ধে দেখা যায় না। বরং টিপিকাল বাঙালি লাদেন বোমা নামক একটি পটকার নাম করণ করেছিল ভালোবেসে। লাদেন কে তারা দুষ্টু বলে। তবে সেই দুষ্টু বলাতেও বেশ আদর আদর ভাব থাকে। লাদেনের বিরোধিতা করে রাজপথে কিন্তু কোন মিছিল হয় নাই। কিন্তু ফেসবুকে কে কোন চিপায় কী লিখছে তা নিয়ে টিপিকাল বাঙালিদের ঘুম নেই। ফেসবুকের একটা ছবিকে কেন্দ্র করে তো সমগ্র রামুই জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই দেশে ব্যক্তিস্বাধীনতা ও বাক স্বাধীনতা গুনায় না ধরলেও এরা যখন ইউরোপে যায় তখন এরা সবচেয়ে সচেতন জনগণ হয়ে উঠে। সকল কিছুর স্বাধীনতা ওনারা ভোগ করে থাকেন। সারা জীবন ইহুদি নাসাদের দেশ থেকে কামাই রোজগার করে ধর্ম পালনের নামে ইহুদি নাসাদের গালাগাল করে নেকি অর্জন করেন। এটাই টিপিকাল বাঙালির চরিত্র। আমার আশেপাশের মানুষগুলোকে দেখেছি যারা প্রতিদিন ইহুদি নাসাদের গুষ্ঠি উদ্ধার করে নেকি অর্জন করেন। আবার পরিবার নিয়ে ইউরোপে ঘাটি গাড়ারও স্বপ্ন দেখেন। কোন সিস্টেমে যাওয়া যায় তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে প্রতিদিন আলোচনা করেন। এদের মানসিকতা থেকে আমি প্রতিদিন সাকা হয়ে যাই।

হজ্ব সৌদি আরবের অর্থনীতির একটা বড় সেক্টর তা কে না জানে তাহলে হঠাৎ এমন বক্তব্যে সবাই চাঙ্গা হয়ে উঠল কেন? কিছুদিন আগে তো ISIS কাবা শরীফ গুড়িয়ে দেবে বলে হুমকি দিয়েছিল। কিন্তু অদ্ভুত বিষয় হল তখন একটি মানুষের মুখ থেকে এর বিরুদ্ধে কোন বক্তব্য শুনিনি। অস্ত্র ও বোমা কে না ভয় করে বলুন। টিপিকাল বাঙালি ঘাস বনেই শুধু পুরুষত্ব দেখায়। একজন মন্ত্রী ব্যক্তিগত মন্তব্যে এমন প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর যখন ISIS, তালেবান, সংখ্যালঘু নির্যাতনে নীরব থাকে তখন বাঙালিকে টিপিকাল বাঙালি বলতেই হয়। অবশ্য টিপিকাল মানেই বাঙালি এটা ভেঙে বলতে হয় না। অদ্ভুত বিষয় হল লতিফ সিদ্দিকীর এমন বক্তব্যে কেউ তাকে জবাই, কেউ হত্যা কেউবা রাষ্ট্রের কাছে বিচার দাবী করছে। অথচ রাষ্ট্রের কাছেই এরাই নাগরিক স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতার দাবী করে। তাহলে বিষয়টা কী দাঁড়াল;-বাক-স্বাধীনতা প্রত্যাশী আন্দোলনকারী বাঙালি নিজেই আসলে বাক-স্বাধীনতায় বিশ্বাসী না!!!