বেশ কিছুদিন আগে মালিবাগ থেকে বাসে উঠেছি, বেজায় ভীড়, পিছনের দিকে একটা জটলা। উঁকি দিয়ে দেখি গ্রাম থেকে আসা এক বৃদ্ধ আর অন্যান্য পেসেঞ্জার-হেলপার বচসা করছে। ভাঙ্গা-ক্ষীণ গলায় বৃদ্ধ বলছে, তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা আর মুক্তিযোদ্ধাদের বাস ভাড়া ফ্রি করে দিয়েছে সরকার। কাজেই তিনি ভাড়া দিবেন না। নাগরিক স্বার্থপরতা থেকে সচারচর অন্যের ঝামেলায় নাক গলাই না। কিন্তু এখানে গলালাম, হেলপারকে বললাম, মুক্তিযোদ্ধাদের ভাড়া ফ্রি হলে তার কাছ থেকে নিবেন কেন? তিনি তো ঠিকই বলছেন। হেলপার বলল, না তো করি নাই, প্রথমে কইলেই হইতো, এমুন চ্যাত্ দেখাইতাছে- জানি দেশ কিন্না ফালাইছে!…
বয়েস ষাট-পয়ষ্ট্রি, ভাঙ্গা শরীরে হাড় গোণা যায় পাঞ্জাবীর ভেতর থেকে। একটা টিনের বাক্স সঙ্গে থাকায় ভীড়ের বাসে বসা নিয়ে পেসেঞ্জারদের সঙ্গে বুড়োর একটু বচসা হয়েছে বোধহয়। হাতল ধরে দাঁড়িয়ে থাকা পেসেঞ্জাররা সেই রেশে এখন টিপ্পনী কাটছে তাকে নিয়ে। একজন অন্যদের বুঝাচ্ছে এমন ভাব করে বলল, উনি একজন মুক্তিযোদ্ধা! দেশ স্বাধীন করছে!… লোকটার বলার ভঙ্গিতে সবাই হাসছে। সবাই মজা পাচ্ছে। আরেকজন জিজ্ঞেস করলো, কোন সেক্টরে যুদ্ধ করছেন? বুড়ো একজন মেজরের নাম বলল। কোন সেক্টর সে মনে করতে পারে না। বলে, মুখ্যু মানুষ, অতশত তো বুঝি না, ইন্ডিয়া গেছিলাম…। আরেকজন বলল, তেনারা দেশ স্বাধীন করছে- অহন চৌদ্দগুষ্টিরে ধইরা আমাগো তেল মাখতো হইব!…যিনি ক্ষোভ ঝাড়লেন তার হাতের স্বচ্চ প্লাস্টিক ফাইল ফুটে স্কুল-কলেজের মার্কশিট-সার্টিফিকেট দেখা যাচ্ছে। চাকরি প্রার্থী বা সদ্য ছাত্রত্ব শেষ করেছেন সম্ভবত। আমার মনে পড়ে গেলো শাহবাগে বিসিএস’এর কোটা বিলোপের আন্দোলনের কথা। কোটা নিয়ে আমরাও সমালোচনা করেছিলাম। প্রকৃত মেধাবী যেন কোটায় কাটা পড়ে হারিয়ে না যায়। কিন্তু শাহবাগে আন্দোলনরতরাসহ বিসিএস প্রার্থী, তাদের অভিভাবকরা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি যে কি পরিমাণ বিষেদাগার করেছেন তার ভাষা এই লেখায় প্রকাশ করা যাবে না। ন্যূনতম শ্রদ্ধা, দেশ স্বাধীন করা সৈনিকদের প্রতি মিমিনাম রাখঢাগ রাখার কোন চেষ্টাই কেউ করেননি। বরং মনে হয়েছে একটা চাপা ক্ষোভ, অবজ্ঞা, আবেগহীনতা একটা উপলক্ষ্য পেয়ে আজ প্রকাশ পেয়ে গেছে। স্বাধীনতার ৪৩ বছর পর বাংলাদেশ করা নিয়ে জনগণের একটা বিপুল অংশ দ্বিমত না হলেও আবেগহীন, “ভারতের ষড়যন্ত্রের একটা ভূমিকা ছিল” জাতীয় তত্ত্ব বিশ্বাস করে। শাহবাগের তখনকার আন্দোলনকে অনেকেই জামাত-শিবির ঢুকে গেছে বলে দাবী করেছিল। হতে পারে, তবে সাধারণ ছাত্ররাই তো সেখানে ভীড় করেছিল। আর তাদের পুরো ক্ষোভটাই ছিল মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবার-পরিজনের প্রতি। ভাবুন একবার, দেশ স্বাধীন হবার ৪৩ বছর পর যে কোন কারণেই হোক, অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছে এমন মানুষ ও তাদের পরিবার সকলের রোষের শিকার হয়েছেন! শাহবাগের আন্দোলনের সবাই জামাত-শিবির ছিল না। সবাই রাজাকারের সন্তান ছিল না। যেমন বাসের যাত্রীদের সবাই রাজাকারদের সন্তান হতে পারে না। “উনি একজন মুক্তিযোদ্ধা”- এটা এখন আর কোন হিরোটিক ইমেজ আনে না আমাদের মধ্যে। নানাবিধ কারণ আছে এর। বহু মুক্তিযোদ্ধার লেখা বই পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করে ফেলেছে। মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধার মাংস খেয়েছে। কাদের সিদ্দীকির দ্বিতীয় জন্ম হয়েছে। ইতিহাসের একটা বাঁকে জিয়াউর রহমানের উদয় “মুক্তিযোদ্ধা” শব্দটিতে বার বার বিব্রত হতে হয়েছে জাতিকে।… অসংখ্য কারণ থাকতে পারে আজকের মুক্তিযুদ্ধ আর মুক্তিযোদ্ধা ইমেজ হারিয়ে যাওয়া নিয়ে কিন্তু এই লেখা সেই কারণ উৎঘাটন করার লক্ষ্যে নেই। আমরা বরং দেখাতে চাই ৪৩ বছর পর যুদ্ধাপরাধীদের প্রতি জনগণের একাংশের সহানুভূতি ও বাংলাদেশী জিহাদী তথা মুজাহিদদের মুসলিম বিশ্বে গিয়ে “মুক্তিযুদ্ধে” অংশ গ্রহণ পরবর্তী “শহীদ”, “গাজী” খেতাব পাওয়ার বাস্তবতা। কেমন হবে সামনের দিনগুলোতে এই “শহীদ” আর “গাজী” খেতাব পাওয়াদের সমান্তরালে ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে “শহীদ” ও “বীর প্রতীক” “বীর উত্তম” থেতাবধারীরা? অন্তত ২০ বছর পর? ৫০ বছর পর?…

সঠিক পরিসংখ্যান নেই তবু জানা যায় আফগান-সোভিয়েট যুদ্ধে বাংলাদেশ থেকে উল্লেখযোগ্য একটা সংখ্যা মুজাহিদ হয়ে সেই যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীদের সঙ্গে শামিল হয়। যুদ্ধে বাংলাদেশী জিহাদীরা শহীদ হয়েছে অনেকে। যারা “গাজী” হয়েছেন বেঁচে গিয়ে তারা পরবর্তীতে দেশে ফিরে এসে নানা রকম ইসলামী সংগঠন গঠন করে। যুদ্ধ ফেরত এইসব মুজাহিদ তাদের ইসলাম প্রচারে বিদেশ থেকে অর্থ সাহায্য পেতে থাকে। দল সংগঠিত হতে থাকে। বলতে গেলে সবার অলক্ষ্যে মসজিদ-মাদ্রাসা থেকে কর্মী সংগ্রহ হতে থাকে। এটা শুরুর কথা। তবে এই বিষয়ে আমি গবেষক নই। আমার লক্ষ্যও কেমন করে জঙ্গিবাদ ডালাপালা মেললো সেটা না। কাজেই আমি ফিরে যাই আমার লেখার মূল লক্ষ্যে- “৭১-এ মুক্তিযুদ্ধে শহীদ” বনাম “ধর্মযুদ্ধে শহীদ”- “বীর শ্রেষ্ঠ-বীর উত্তম-বীর প্রতীক” বনাম “গাজী-মুজাহিদ”!

প্রথম ও প্রধান ফ্যাক্টই হচ্ছে বাংলাদেশ পাকিস্তান নামের একটা ইসলামী দেশ ও মুসলিম উম্মার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছে! তুলনা করুন, আরব বিশ্বের কোন মুসিলম দেশ জাতিগত কারণে যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হয়ে গেলো- যে পক্ষটি উদার-ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে স্বাধীন হবে মুসলিম বিশ্ব কি তাকে ভাল চোখে দেখবে? তাদের চোখে তো এটা মুসলিমদের “কমজোরি” করার নামান্তর! তার উপর ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র বলে ইসলামিজমকে ঝেড়ে ফেলে দেয়া। খোদ এইরকম কোন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের জনগণ পরবর্তীতে “কওমের বিরুদ্ধে যাবার” হীনমন্যতায় ভুগে! “মুসলিম একটা জাতি” যতই বায়ুবীয়ই হোক- মুসলিম মাত্রই সেটাতে একাত্ব অনুভব করে। বাংলাদেশ যদি ভারত থেকে পৃথক হতো-রেসকোর্সে যদি ভারতীয় বাহিনীর প্রধান অররা বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর প্রধানের কাছে বা মিত্র বাহিনী পাকিস্তানের প্রধানের কাছে আত্মসমর্পন স্বাক্ষর করতো- তাহলে ১৬ ডিসেম্বর হতো আমাদের আরো একটি ঈদের দিন! এটি যতদিন স্বীকার করতে পারবেন না ততদিন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমাদের মৃয়মাণ আবেগের আসল কারণ কোনদিন অনুসন্ধান করতে পারবেন না…।

বাংলাদেশের ৭১-এ শহীদ পরিবারগুলো আমার নিজের ধারনা ৭৫ পরবর্তী দেশের মানুষের আবেগ ও সহানুভূতি হারিয়ে ফেলে। “পাকিস্তানই ভাল ছিল”- এইরকম একটা আত্মসমালোচনা বাজারে ছড়ানো হলে পাবলিক ভালই খেয়েছিল। মুজিব বিরোধীতার হালে পানি পেতে হলে এই ফিবার না ছড়িয়ে উপায় নেই। আর সেই ফিবার থেকে জন্ম নিল বিএনপি। মুক্তিযুদ্ধকে মুক্তিযুদ্ধ দিয়ে মারতে হবে! মুক্তিযোদ্ধার শত্রু হলেন মুক্তিযোদ্ধা! এই সুযোগে ঘাতকরা তাদের আহত থাবা চাটতে লাগলো। ৯০-এ গোলাম আযমের ফাঁসি দাবীতে শহীদ জননী জাহানারা ঈমামের নেতৃত্বে যে গণআদালত গড়ে উঠে ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ততদিনে গোলাম আযমের ফাঁসি চাইলে “রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা” খেতে হয়। কিন্তু তারচেয়েও কঠিন সময় পড়ে ছিল ২০১৩ সালে। শাহবাগে রাজাকারের ফাঁসির দাবীতে জনসমাবেশের পাল্টা মতিঝিলে হেফাজতের জনসমাবেশ গোটা জাতিকে বুঝিয়ে দিলো মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে এখন “বাংলাদেশী ইসলাম”!

কথাটিতে কি কোন ভুল আছে? আমরা বললাম, কাদের মোল্লার ফাঁসি চাই! পাল্টা ওদিক থেকে আওয়াজ এলো, নাস্তিকদের ফাঁসি চাই! নাস্তিকের সঙ্গে ধর্ম সম্পর্ক আছে। নবী অবমাননার সঙ্গে ধর্ম প্রাসঙ্গিক। কাদের মোল্লার ফাঁসি চাইলে ধর্ম আসে না, ইসলাম আসে না। তবু এসে গেলো। যার এই দেশে আমাদের ইসলামের সবক দেন তারা আমাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ালেন। তারা বললেন, এরা নাস্তিক, নবী অবমাননাকারী। রাজনীতিবিদরা বললেন নষ্ট ছেলের দল! ইসলামের বিরুদ্ধে দাঁড়ালে কাউকে সমর্থন করা হবে না…। শাহবাগে আমরা মুক্তিযুদ্ধের শ্লোগান দিলাম, গোলাম আযম-সাঈদী-কাদের মোল্লার ফাঁসি চাইলাম- এর মধ্যে ইসলাম বিরোধীতা আসলো কোত্থেকে? আসে নাই। তবে যতবার মুক্তিযুদ্ধকে ফিরিয়ে আনবেন- ততবার আপনার বিরুদ্ধে ইসলামকে ফিরিয়ে আনা হবে। তাই আগামীদিনে মুক্তিযুদ্ধের প্রতিপক্ষ হবে ইসলাম! যেমন মুক্তিযুদ্ধের সময় ইসলামকে আনা হয়েছিল প্রতিপক্ষ হিসেবে। তখন সেই চাল কাজ করেনি। বাঙালী জাতীয়তাবাদের কাছে সাময়িকভাবে মুসলিম জাতীয়তাবাদ মার খেয়েছিল। তবে সেটা ১৯৭১ সাল আর এটা ২০১৪। পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন।

আর আজকের এই সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিস্থিতিতে সিরিয়া বা ইরাকে ধর্মযুদ্ধে যেয়ে শহীদ হওয়া বাংলাদেশী মুজাহিদদের পরিবারকে পাড়া-মহল্লায় গর্বের চোখে দেখা হবে না? এই ছেলে মুসলমানের টানে, ইসলামকে ভালবেসে যুদ্ধে গিয়ে নিজের প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছে- এই বলে যখন তার চল্লিশার দিনে মসজিদের মিলাদে বা জুম্মার খুতবায় ঘোষণা করা হবে তখন সেটা আর জঙ্গিবাদ থাকবে না।

যারা “গাজী” হয়ে বাড়ি ফিরবেন, সেই বীর মুজাহিদকে নিজ এলাকার মসজিদের ঈমান সাব যখন পরিচয় করে দিবেন- ইনি আমাদের সেই ভাই যিনি ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জীবন বাজি রেখে লড়েছেন- তখন তার ইমেজ খবরের কাগজে ছাপা বোমাসহ জিহাদী আটকের মত ইমেজে পড়বে না। “বীর উত্তম” “বীর প্রতীকরা” বহু আগেই রাজনীতির কারণে নিজেদের খেতাবের আক্ষরিক অর্থ হারিয়েছেন। জনগণ এইসব বীরদের বীর ভাববে কেমন করে যখন মুক্তিযুদ্ধটাকেই তারা আবেগহীনভাবে গ্রহণ করতে শিখেছে? বরং তাদের মধ্যে যে ধর্মের আবেগ বর্তমান, ইসলামের যে তেজ, মুসলমানিত্বের যে গর্ব বিরাজমান- তাতে একজন মুজাহিদকেই তাদের কাছে হিরো মনে হবে।

এসব স্পষ্ট হয়ে উঠছে ক্রমশ। সম্প্রতি আল কায়দা যে ভিডিও বার্তা প্রদান করেছে তাতে বাংলাদেশ, ভারতসহ উপমহাদেশে তাদের শাখা খোলার ঘোষণা দিয়েছে। ভারতে এ নিয়ে তোড়পাল শুরু হয়ে গেছে। দেশে রেডএলার্ট জারি করা হয়েছে। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন ইরাকে-সিরিয়ায় আইএসের কাছে টিকতে না পেরে আল কায়দা উপমহাদেশের দিকে নজর দিয়েছে। তা দিক, আইএস আর আল কায়দা পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বি হতে পারে। ডিস্টিবিউটরশীপ নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া থাকতেই পারে। তবে আমাদের মধ্যে আল কায়দার শাখা খোলা নিয়ে ন্যূনতম উৎকন্ঠা, আতংক জাগতে দেখিনি। আমরা এক প্রকার তাদের সাদরে গ্রহণ করতে অবচেতনে হলেও কি তৈরি নই? আল কায়দা মোটেও বাংলাদেশে অজনপ্রিয় নয়। তাদের প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেন অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন বাংলাদেশে। বাংলাদেশে তার ছবি সম্বলিত পোস্টার, ক্যালেন্ডার বিপুল বিক্রিত ছিল। খোমেনী, সাদ্দাম হোসেনের ছবি বিক্রির সমস্ত রেকর্ড ভঙ্গ করেছিল তখন বিন লাদেনের ছবি। টুইন টাওয়ার ভাঙ্গার পর যে প্রতিক্রিয়া হয় তাতে মধ্যপ্রাচ্যের অর্থনীতিতে ধস নামে। বহু কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। বহু দোকানপাট মন্দায় বন্ধ হয়ে যেতে বাধ্য হয়। ফলে বাংলাদেশী শ্রমিকদের চাকরি ছাটাইয়ের একটা ঢল নামে সেসময়। হাজার হাজার শ্রমিক চোখের পানি ফেলে দেশে ফেরে সর্বস্ব হারিয়ে। তখন ওসামাকে দায়ী মনে করা হয় এই অর্থনীতি বিপর্যস্ততার জন্য। বলা হয় এটা আল কায়দার হটকারীতা। পেটে লাথি খেলে সবারই লাগে। স্বাভাবিকভাবেই প্রকাশ্যে ওসামা বন্দনায় ভাটা পড়ে যায়। তবে তলের প্রেম ঠিকই বজায় থাকে। বাংলায় প্রবাদ আছে- মেরেছো কলসির কোনা, তাই বলে কি প্রেম দিবো না!… আল কায়দার সমস্ত সন্ত্রাসী কর্মকান্ডকে তাই এদেশের মানুষ “আমেরিকার ষড়যন্ত্র” হিসেবেই দেখে। জঙ্গি তৎপরতাকে ইসলামের বিরুদ্ধে ইহুদীদের লাগাতার অপপ্রচার বলে বিশ্বাস করে। বাংলাদেশে যখন বাংলা ভাই, শায়খ আবদুর রহমান উত্থান শুরু হয় তখনো জনগণের মধ্যে তাদের প্রতি চাপা সহানুভূতি ছিল। এদেশের মানুষ প্রকাশ্যে শিরোচ্ছেদকে বিচারের সবচেয়ে কার্যকর মাধ্যম বলে মনে করে। লোকজন কথায় কথায় সৌদি আরবে চুরি করলে হাত কাটার মত শাস্তিকে গর্ব করে উল্লেখ করে। কয়েক মাস আগে এক মন্ত্রীও ইসলামী শাস্তি মতে শিরোচ্ছেদের কথা বলেছিলেন। মদিনা সনদের কথা প্রায়ই রাজনীতিতে শোনা হয়। এসব বিবেচনায় জনগণ আল কায়দাকে নিরব স্বাগত জানাবে বলেই মনে হচ্ছে ।

তো কি দাঁড়ালো? ইসলামকে দাঁড় করানো হবে আমাদের সমস্ত ইতিহাস, ঐতিহ্য আর গর্বের জায়গাগুলোতে। আপনি আমি না চাই, যারা এই দেশের ইসলামের ডিস্ট্রিবিউটর তারা ইসলামকে খাড়া করবেই। শাহবাগে ইসলাম আমাদের প্রতিপক্ষ হয়েছিল। ভবিষ্যতে যে কোন মানবতাবাদী আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, আমাদের ইতিহাসকে ইসলামের প্রতিপক্ষ করে খাড়া করা হবে। মদিনা সনদ অনুসারে যে দেশ চলবে বলে অঙ্গিকারবদ্ধ, কুরআন-সুন্নার সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোন আইন বাস্তবায়ন না করার শপথ নেয়া দেশ ইসলামের খেলাফতের ডাককে কেমন করে গ্রহণ করে সেটাই এখন দেখার বিষয়।…