বেশ কিছুদিন আগে মালিবাগ থেকে বাসে উঠেছি, বেজায় ভীড়, পিছনের দিকে একটা জটলা। উঁকি দিয়ে দেখি গ্রাম থেকে আসা এক বৃদ্ধ আর অন্যান্য পেসেঞ্জার-হেলপার বচসা করছে। ভাঙ্গা-ক্ষীণ গলায় বৃদ্ধ বলছে, তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা আর মুক্তিযোদ্ধাদের বাস ভাড়া ফ্রি করে দিয়েছে সরকার। কাজেই তিনি ভাড়া দিবেন না। নাগরিক স্বার্থপরতা থেকে সচারচর অন্যের ঝামেলায় নাক গলাই না। কিন্তু এখানে গলালাম, হেলপারকে বললাম, মুক্তিযোদ্ধাদের ভাড়া ফ্রি হলে তার কাছ থেকে নিবেন কেন? তিনি তো ঠিকই বলছেন। হেলপার বলল, না তো করি নাই, প্রথমে কইলেই হইতো, এমুন চ্যাত্ দেখাইতাছে- জানি দেশ কিন্না ফালাইছে!…
বয়েস ষাট-পয়ষ্ট্রি, ভাঙ্গা শরীরে হাড় গোণা যায় পাঞ্জাবীর ভেতর থেকে। একটা টিনের বাক্স সঙ্গে থাকায় ভীড়ের বাসে বসা নিয়ে পেসেঞ্জারদের সঙ্গে বুড়োর একটু বচসা হয়েছে বোধহয়। হাতল ধরে দাঁড়িয়ে থাকা পেসেঞ্জাররা সেই রেশে এখন টিপ্পনী কাটছে তাকে নিয়ে। একজন অন্যদের বুঝাচ্ছে এমন ভাব করে বলল, উনি একজন মুক্তিযোদ্ধা! দেশ স্বাধীন করছে!… লোকটার বলার ভঙ্গিতে সবাই হাসছে। সবাই মজা পাচ্ছে। আরেকজন জিজ্ঞেস করলো, কোন সেক্টরে যুদ্ধ করছেন? বুড়ো একজন মেজরের নাম বলল। কোন সেক্টর সে মনে করতে পারে না। বলে, মুখ্যু মানুষ, অতশত তো বুঝি না, ইন্ডিয়া গেছিলাম…। আরেকজন বলল, তেনারা দেশ স্বাধীন করছে- অহন চৌদ্দগুষ্টিরে ধইরা আমাগো তেল মাখতো হইব!…যিনি ক্ষোভ ঝাড়লেন তার হাতের স্বচ্চ প্লাস্টিক ফাইল ফুটে স্কুল-কলেজের মার্কশিট-সার্টিফিকেট দেখা যাচ্ছে। চাকরি প্রার্থী বা সদ্য ছাত্রত্ব শেষ করেছেন সম্ভবত। আমার মনে পড়ে গেলো শাহবাগে বিসিএস’এর কোটা বিলোপের আন্দোলনের কথা। কোটা নিয়ে আমরাও সমালোচনা করেছিলাম। প্রকৃত মেধাবী যেন কোটায় কাটা পড়ে হারিয়ে না যায়। কিন্তু শাহবাগে আন্দোলনরতরাসহ বিসিএস প্রার্থী, তাদের অভিভাবকরা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি যে কি পরিমাণ বিষেদাগার করেছেন তার ভাষা এই লেখায় প্রকাশ করা যাবে না। ন্যূনতম শ্রদ্ধা, দেশ স্বাধীন করা সৈনিকদের প্রতি মিমিনাম রাখঢাগ রাখার কোন চেষ্টাই কেউ করেননি। বরং মনে হয়েছে একটা চাপা ক্ষোভ, অবজ্ঞা, আবেগহীনতা একটা উপলক্ষ্য পেয়ে আজ প্রকাশ পেয়ে গেছে। স্বাধীনতার ৪৩ বছর পর বাংলাদেশ করা নিয়ে জনগণের একটা বিপুল অংশ দ্বিমত না হলেও আবেগহীন, “ভারতের ষড়যন্ত্রের একটা ভূমিকা ছিল” জাতীয় তত্ত্ব বিশ্বাস করে। শাহবাগের তখনকার আন্দোলনকে অনেকেই জামাত-শিবির ঢুকে গেছে বলে দাবী করেছিল। হতে পারে, তবে সাধারণ ছাত্ররাই তো সেখানে ভীড় করেছিল। আর তাদের পুরো ক্ষোভটাই ছিল মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবার-পরিজনের প্রতি। ভাবুন একবার, দেশ স্বাধীন হবার ৪৩ বছর পর যে কোন কারণেই হোক, অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছে এমন মানুষ ও তাদের পরিবার সকলের রোষের শিকার হয়েছেন! শাহবাগের আন্দোলনের সবাই জামাত-শিবির ছিল না। সবাই রাজাকারের সন্তান ছিল না। যেমন বাসের যাত্রীদের সবাই রাজাকারদের সন্তান হতে পারে না। “উনি একজন মুক্তিযোদ্ধা”- এটা এখন আর কোন হিরোটিক ইমেজ আনে না আমাদের মধ্যে। নানাবিধ কারণ আছে এর। বহু মুক্তিযোদ্ধার লেখা বই পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করে ফেলেছে। মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধার মাংস খেয়েছে। কাদের সিদ্দীকির দ্বিতীয় জন্ম হয়েছে। ইতিহাসের একটা বাঁকে জিয়াউর রহমানের উদয় “মুক্তিযোদ্ধা” শব্দটিতে বার বার বিব্রত হতে হয়েছে জাতিকে।… অসংখ্য কারণ থাকতে পারে আজকের মুক্তিযুদ্ধ আর মুক্তিযোদ্ধা ইমেজ হারিয়ে যাওয়া নিয়ে কিন্তু এই লেখা সেই কারণ উৎঘাটন করার লক্ষ্যে নেই। আমরা বরং দেখাতে চাই ৪৩ বছর পর যুদ্ধাপরাধীদের প্রতি জনগণের একাংশের সহানুভূতি ও বাংলাদেশী জিহাদী তথা মুজাহিদদের মুসলিম বিশ্বে গিয়ে “মুক্তিযুদ্ধে” অংশ গ্রহণ পরবর্তী “শহীদ”, “গাজী” খেতাব পাওয়ার বাস্তবতা। কেমন হবে সামনের দিনগুলোতে এই “শহীদ” আর “গাজী” খেতাব পাওয়াদের সমান্তরালে ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে “শহীদ” ও “বীর প্রতীক” “বীর উত্তম” থেতাবধারীরা? অন্তত ২০ বছর পর? ৫০ বছর পর?…
সঠিক পরিসংখ্যান নেই তবু জানা যায় আফগান-সোভিয়েট যুদ্ধে বাংলাদেশ থেকে উল্লেখযোগ্য একটা সংখ্যা মুজাহিদ হয়ে সেই যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীদের সঙ্গে শামিল হয়। যুদ্ধে বাংলাদেশী জিহাদীরা শহীদ হয়েছে অনেকে। যারা “গাজী” হয়েছেন বেঁচে গিয়ে তারা পরবর্তীতে দেশে ফিরে এসে নানা রকম ইসলামী সংগঠন গঠন করে। যুদ্ধ ফেরত এইসব মুজাহিদ তাদের ইসলাম প্রচারে বিদেশ থেকে অর্থ সাহায্য পেতে থাকে। দল সংগঠিত হতে থাকে। বলতে গেলে সবার অলক্ষ্যে মসজিদ-মাদ্রাসা থেকে কর্মী সংগ্রহ হতে থাকে। এটা শুরুর কথা। তবে এই বিষয়ে আমি গবেষক নই। আমার লক্ষ্যও কেমন করে জঙ্গিবাদ ডালাপালা মেললো সেটা না। কাজেই আমি ফিরে যাই আমার লেখার মূল লক্ষ্যে- “৭১-এ মুক্তিযুদ্ধে শহীদ” বনাম “ধর্মযুদ্ধে শহীদ”- “বীর শ্রেষ্ঠ-বীর উত্তম-বীর প্রতীক” বনাম “গাজী-মুজাহিদ”!
প্রথম ও প্রধান ফ্যাক্টই হচ্ছে বাংলাদেশ পাকিস্তান নামের একটা ইসলামী দেশ ও মুসলিম উম্মার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছে! তুলনা করুন, আরব বিশ্বের কোন মুসিলম দেশ জাতিগত কারণে যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হয়ে গেলো- যে পক্ষটি উদার-ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে স্বাধীন হবে মুসলিম বিশ্ব কি তাকে ভাল চোখে দেখবে? তাদের চোখে তো এটা মুসলিমদের “কমজোরি” করার নামান্তর! তার উপর ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র বলে ইসলামিজমকে ঝেড়ে ফেলে দেয়া। খোদ এইরকম কোন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের জনগণ পরবর্তীতে “কওমের বিরুদ্ধে যাবার” হীনমন্যতায় ভুগে! “মুসলিম একটা জাতি” যতই বায়ুবীয়ই হোক- মুসলিম মাত্রই সেটাতে একাত্ব অনুভব করে। বাংলাদেশ যদি ভারত থেকে পৃথক হতো-রেসকোর্সে যদি ভারতীয় বাহিনীর প্রধান অররা বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর প্রধানের কাছে বা মিত্র বাহিনী পাকিস্তানের প্রধানের কাছে আত্মসমর্পন স্বাক্ষর করতো- তাহলে ১৬ ডিসেম্বর হতো আমাদের আরো একটি ঈদের দিন! এটি যতদিন স্বীকার করতে পারবেন না ততদিন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমাদের মৃয়মাণ আবেগের আসল কারণ কোনদিন অনুসন্ধান করতে পারবেন না…।
বাংলাদেশের ৭১-এ শহীদ পরিবারগুলো আমার নিজের ধারনা ৭৫ পরবর্তী দেশের মানুষের আবেগ ও সহানুভূতি হারিয়ে ফেলে। “পাকিস্তানই ভাল ছিল”- এইরকম একটা আত্মসমালোচনা বাজারে ছড়ানো হলে পাবলিক ভালই খেয়েছিল। মুজিব বিরোধীতার হালে পানি পেতে হলে এই ফিবার না ছড়িয়ে উপায় নেই। আর সেই ফিবার থেকে জন্ম নিল বিএনপি। মুক্তিযুদ্ধকে মুক্তিযুদ্ধ দিয়ে মারতে হবে! মুক্তিযোদ্ধার শত্রু হলেন মুক্তিযোদ্ধা! এই সুযোগে ঘাতকরা তাদের আহত থাবা চাটতে লাগলো। ৯০-এ গোলাম আযমের ফাঁসি দাবীতে শহীদ জননী জাহানারা ঈমামের নেতৃত্বে যে গণআদালত গড়ে উঠে ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ততদিনে গোলাম আযমের ফাঁসি চাইলে “রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা” খেতে হয়। কিন্তু তারচেয়েও কঠিন সময় পড়ে ছিল ২০১৩ সালে। শাহবাগে রাজাকারের ফাঁসির দাবীতে জনসমাবেশের পাল্টা মতিঝিলে হেফাজতের জনসমাবেশ গোটা জাতিকে বুঝিয়ে দিলো মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে এখন “বাংলাদেশী ইসলাম”!
কথাটিতে কি কোন ভুল আছে? আমরা বললাম, কাদের মোল্লার ফাঁসি চাই! পাল্টা ওদিক থেকে আওয়াজ এলো, নাস্তিকদের ফাঁসি চাই! নাস্তিকের সঙ্গে ধর্ম সম্পর্ক আছে। নবী অবমাননার সঙ্গে ধর্ম প্রাসঙ্গিক। কাদের মোল্লার ফাঁসি চাইলে ধর্ম আসে না, ইসলাম আসে না। তবু এসে গেলো। যার এই দেশে আমাদের ইসলামের সবক দেন তারা আমাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ালেন। তারা বললেন, এরা নাস্তিক, নবী অবমাননাকারী। রাজনীতিবিদরা বললেন নষ্ট ছেলের দল! ইসলামের বিরুদ্ধে দাঁড়ালে কাউকে সমর্থন করা হবে না…। শাহবাগে আমরা মুক্তিযুদ্ধের শ্লোগান দিলাম, গোলাম আযম-সাঈদী-কাদের মোল্লার ফাঁসি চাইলাম- এর মধ্যে ইসলাম বিরোধীতা আসলো কোত্থেকে? আসে নাই। তবে যতবার মুক্তিযুদ্ধকে ফিরিয়ে আনবেন- ততবার আপনার বিরুদ্ধে ইসলামকে ফিরিয়ে আনা হবে। তাই আগামীদিনে মুক্তিযুদ্ধের প্রতিপক্ষ হবে ইসলাম! যেমন মুক্তিযুদ্ধের সময় ইসলামকে আনা হয়েছিল প্রতিপক্ষ হিসেবে। তখন সেই চাল কাজ করেনি। বাঙালী জাতীয়তাবাদের কাছে সাময়িকভাবে মুসলিম জাতীয়তাবাদ মার খেয়েছিল। তবে সেটা ১৯৭১ সাল আর এটা ২০১৪। পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন।
আর আজকের এই সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিস্থিতিতে সিরিয়া বা ইরাকে ধর্মযুদ্ধে যেয়ে শহীদ হওয়া বাংলাদেশী মুজাহিদদের পরিবারকে পাড়া-মহল্লায় গর্বের চোখে দেখা হবে না? এই ছেলে মুসলমানের টানে, ইসলামকে ভালবেসে যুদ্ধে গিয়ে নিজের প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছে- এই বলে যখন তার চল্লিশার দিনে মসজিদের মিলাদে বা জুম্মার খুতবায় ঘোষণা করা হবে তখন সেটা আর জঙ্গিবাদ থাকবে না।
যারা “গাজী” হয়ে বাড়ি ফিরবেন, সেই বীর মুজাহিদকে নিজ এলাকার মসজিদের ঈমান সাব যখন পরিচয় করে দিবেন- ইনি আমাদের সেই ভাই যিনি ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জীবন বাজি রেখে লড়েছেন- তখন তার ইমেজ খবরের কাগজে ছাপা বোমাসহ জিহাদী আটকের মত ইমেজে পড়বে না। “বীর উত্তম” “বীর প্রতীকরা” বহু আগেই রাজনীতির কারণে নিজেদের খেতাবের আক্ষরিক অর্থ হারিয়েছেন। জনগণ এইসব বীরদের বীর ভাববে কেমন করে যখন মুক্তিযুদ্ধটাকেই তারা আবেগহীনভাবে গ্রহণ করতে শিখেছে? বরং তাদের মধ্যে যে ধর্মের আবেগ বর্তমান, ইসলামের যে তেজ, মুসলমানিত্বের যে গর্ব বিরাজমান- তাতে একজন মুজাহিদকেই তাদের কাছে হিরো মনে হবে।
এসব স্পষ্ট হয়ে উঠছে ক্রমশ। সম্প্রতি আল কায়দা যে ভিডিও বার্তা প্রদান করেছে তাতে বাংলাদেশ, ভারতসহ উপমহাদেশে তাদের শাখা খোলার ঘোষণা দিয়েছে। ভারতে এ নিয়ে তোড়পাল শুরু হয়ে গেছে। দেশে রেডএলার্ট জারি করা হয়েছে। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন ইরাকে-সিরিয়ায় আইএসের কাছে টিকতে না পেরে আল কায়দা উপমহাদেশের দিকে নজর দিয়েছে। তা দিক, আইএস আর আল কায়দা পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বি হতে পারে। ডিস্টিবিউটরশীপ নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া থাকতেই পারে। তবে আমাদের মধ্যে আল কায়দার শাখা খোলা নিয়ে ন্যূনতম উৎকন্ঠা, আতংক জাগতে দেখিনি। আমরা এক প্রকার তাদের সাদরে গ্রহণ করতে অবচেতনে হলেও কি তৈরি নই? আল কায়দা মোটেও বাংলাদেশে অজনপ্রিয় নয়। তাদের প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেন অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন বাংলাদেশে। বাংলাদেশে তার ছবি সম্বলিত পোস্টার, ক্যালেন্ডার বিপুল বিক্রিত ছিল। খোমেনী, সাদ্দাম হোসেনের ছবি বিক্রির সমস্ত রেকর্ড ভঙ্গ করেছিল তখন বিন লাদেনের ছবি। টুইন টাওয়ার ভাঙ্গার পর যে প্রতিক্রিয়া হয় তাতে মধ্যপ্রাচ্যের অর্থনীতিতে ধস নামে। বহু কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। বহু দোকানপাট মন্দায় বন্ধ হয়ে যেতে বাধ্য হয়। ফলে বাংলাদেশী শ্রমিকদের চাকরি ছাটাইয়ের একটা ঢল নামে সেসময়। হাজার হাজার শ্রমিক চোখের পানি ফেলে দেশে ফেরে সর্বস্ব হারিয়ে। তখন ওসামাকে দায়ী মনে করা হয় এই অর্থনীতি বিপর্যস্ততার জন্য। বলা হয় এটা আল কায়দার হটকারীতা। পেটে লাথি খেলে সবারই লাগে। স্বাভাবিকভাবেই প্রকাশ্যে ওসামা বন্দনায় ভাটা পড়ে যায়। তবে তলের প্রেম ঠিকই বজায় থাকে। বাংলায় প্রবাদ আছে- মেরেছো কলসির কোনা, তাই বলে কি প্রেম দিবো না!… আল কায়দার সমস্ত সন্ত্রাসী কর্মকান্ডকে তাই এদেশের মানুষ “আমেরিকার ষড়যন্ত্র” হিসেবেই দেখে। জঙ্গি তৎপরতাকে ইসলামের বিরুদ্ধে ইহুদীদের লাগাতার অপপ্রচার বলে বিশ্বাস করে। বাংলাদেশে যখন বাংলা ভাই, শায়খ আবদুর রহমান উত্থান শুরু হয় তখনো জনগণের মধ্যে তাদের প্রতি চাপা সহানুভূতি ছিল। এদেশের মানুষ প্রকাশ্যে শিরোচ্ছেদকে বিচারের সবচেয়ে কার্যকর মাধ্যম বলে মনে করে। লোকজন কথায় কথায় সৌদি আরবে চুরি করলে হাত কাটার মত শাস্তিকে গর্ব করে উল্লেখ করে। কয়েক মাস আগে এক মন্ত্রীও ইসলামী শাস্তি মতে শিরোচ্ছেদের কথা বলেছিলেন। মদিনা সনদের কথা প্রায়ই রাজনীতিতে শোনা হয়। এসব বিবেচনায় জনগণ আল কায়দাকে নিরব স্বাগত জানাবে বলেই মনে হচ্ছে ।
তো কি দাঁড়ালো? ইসলামকে দাঁড় করানো হবে আমাদের সমস্ত ইতিহাস, ঐতিহ্য আর গর্বের জায়গাগুলোতে। আপনি আমি না চাই, যারা এই দেশের ইসলামের ডিস্ট্রিবিউটর তারা ইসলামকে খাড়া করবেই। শাহবাগে ইসলাম আমাদের প্রতিপক্ষ হয়েছিল। ভবিষ্যতে যে কোন মানবতাবাদী আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, আমাদের ইতিহাসকে ইসলামের প্রতিপক্ষ করে খাড়া করা হবে। মদিনা সনদ অনুসারে যে দেশ চলবে বলে অঙ্গিকারবদ্ধ, কুরআন-সুন্নার সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোন আইন বাস্তবায়ন না করার শপথ নেয়া দেশ ইসলামের খেলাফতের ডাককে কেমন করে গ্রহণ করে সেটাই এখন দেখার বিষয়।…
৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের পর তো রাজাকার অর্থাৎ স্বাধীনতা বিরোধীদের তালিকা তৈরির হওয়ার কথা ছিল। অথচ মুক্তিযোদ্ধার লিস্ট কেন করা হলো আমি আজও তার সঠিকতা খুঁজে পাই না। কারণ মুক্তিযুদ্ধের সময় কতিপয় কিছু সংখ্যক জারজ সন্তান ছাড়া সবারই মুক্তিযুদ্ধে কিছু না কিছু অবদান আছে। এই যেমন আমি মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স ৭ বছর হলেও আমি মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার ও সংবাদ দিয়ে আসতাম। আমি কি একজন মুক্তিযোদ্ধা না? আমার কোনো সার্টিফিকেট নেই। এ রকম বহু বাঙালি সেদিন বিভিন্নভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। কেন? শুধুমাত্র দেশের জন্য, দেশকে ভলোবেসে। আজ সেই মানুষগুলোর কি অবস্থা তা কি আমরা জানিনা?????
আসলে ভুল করা হয়েছিল। সেদিন যদি মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা না করে রাজাকারদের তালিকা করা হতো তাহলে হয়ত দেশ আজ এই সংকটে পড়ত না।
প্রিয় অভিজিৎ দা সামুরাই নিনজার জবাব এর প্রতি উত্তর আমি আপনার কাছ থেকে আশাকরছি ।
আজ পত্রিকায় দেখলাম চার ভারতীয় তরুণ ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া বাদ দিয়ে আইসিসে যোগ দিতে হায়দরাবাদ থেকে রওয়ানা হয়েছিলো। তারা পশ্চিমবঙ্গে ধরা পড়ে। তাদের উদ্দেশ্য ছিলো বাংলাদেশ হয়ে ইরাক যাবার।
মিডিয়া বলবে এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আসলে কী তাই??
@ঔপপত্তিক ঐকপত্য, অন্ধ হলেই প্রলয় বন্ধ হয় না!
আমার শুভেচ্ছা নিন। ধন্যবাদ আপনাকে লেখাটির জন্য। এর আগে আমি কখনো মন্তব্য করিনি।
@Bayezid Bangalee, ধন্যবাদ।
@সুষুপ্ত পাঠক, বেশি দিন আগে আমি এই মুক্তমনা সাইটের খোজ পাইনি। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন শুরু হয়েছিল তখন ফেসবুকের বিভিন্ন লেখা পড়ার সময় এই সাইটের সম্বন্ধে জানতে পারি। তারপর একদিন সাইটটি ওপেন করে দেখলাম। বুঝতেই অনেক সময় চলে গেল। ২০১৪ এর মার্চ থেকে আমি প্রায় প্রতিদিনই মুক্তমনা সাইটটি ওপেন করে লেখাগুলো পড়তে আরম্ভ করি। মুক্তমনার লেখা, মন্তব্যগুলো পড়ছি এখনও। আমার মনেও অনেক প্রশ্ন আছে। যা আগামী দিনে আপনাদের কাছে প্রকাশ করব আশা করি। মুক্তমনার সকলকে আমার বিল্পবী শুভেচ্ছা এবং জয় আমাদের সুনিশ্চিত। ভালো থাকুন।
বায়েজীদ বাঙালী
True belief in something is a form of insanity. কোটা সিস্টেম অবশ্যই বাতিল করতে হবে। মাসিক ৫০০০ হাজার টাকার জন্য কিংবা বাসে বিনা ভাড়ায় চলার জন্য কেও মুক্তিযুদ্ধ করেনি বলে আমার বিশ্বাস। দেশ কে ভালবেসে তারা যুদ্ধ করেছিল.
আপনার লেখা সাবলীল, সুন্দর এবং আপনি একেবারে সঠিক জায়গায় আঘাত করেন। আপনি ঠিকই বলেছেন – আইসিস এর পক্ষে তারা যুদ্ধ করে “গাজী” হয়ে বাড়ি ফিরবেন, সেই বীর মুজাহিদকে নিজ এলাকার মসজিদের ঈমান সাব যখন পরিচয় করে দিবেন- ইনি আমাদের সেই ভাই যিনি ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জীবন বাজি রেখে লড়েছেন- তখন তার ইমেজ খবরের কাগজে ছাপা বোমাসহ জিহাদী আটকের মত ইমেজে পড়বে না।”
দেশ নিয়ে খুব বেশি আশা আর করি না।
@অভিজিৎ,
রাত যত দীর্ঘই হোক, ভোর আসবেই…।
@সুষুপ্ত পাঠক,
এই দীর্ঘ রাতের ঘন আঁধারে অনেক জীবন, অনেক প্রত্যশা, আরো আরো অনেক কিছুই যে তলিয়ে যায়। বহু প্রতীক্ষার ভোর কি সবাই দেখতে পায়?
@তামান্না ঝুমু,
আগামী প্রজন্মের কথা ভেবে আজকের প্রচেষ্টা…।
@সুষুপ্ত পাঠক,
আমি কখনোই কোনো কারণে হতাশ হই না। নতুন প্রজন্মের উপর আমার ভরসা আছে। আমি আশাবাদী। “নাই নাই ভয়, হবে হবে জয়”।
@সুষুপ্ত পাঠক,
রাত অসীম হলে (মোল্লার যুক্তির মত) কোনদিন ভোর হবে না।
@অভিজিৎ, দাদা
আপনাকে আমার অনেক কিছু বলার আছে। আমি নিজেকে একজন খাটি নাস্তিক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। সাহায্য করবেন নিশ্চয়ই। গতকালই আমি প্রথম মুক্তমনায় মন্তব্য লেখার মধ্য দিয়ে শুরু করেছি। আজ দ্বিতীয় দিন লিখছি।
যা আমরা পারিনি, তা আমাদের নতুন প্রজন্ম পারবে তাই হতাশ হবেন না।
জহর চাচার নুতন ব্রাঞ্চ খোলার খায়েশ এমন কিছু সিরিয়াস বলে মনে হয় না। ব্রাঞ্চ খুলতে চাইলে এমনিতেই খুলতে পারেন, এইভাবে প্রকাশ্যে ঘোষনা দিতে যাবেন নাকি? আমি আমেরিকায় কোন নুতন মাফিয়া দল খোলার মতলব থাকলে কি প্রকাশ্যে ঘোষনা দিয়ে দল গঠনে নামবো নাকি!- প্রকাশ্যে ঘোষনা দেওয়ায় অন্য কোন উদ্দেশ্য আছে বলেই মনে হয়। এমন হুমকি আগেও দেওয়া হয়েছে।
তালেবান আল কায়েদার প্রতি সক্রিয় সমর্থনওয়ালা লোকের অভাব দেশে নাই। অবশ্যই এরা সকলে প্রকাশ্য মিডিয়ায় জিজ্ঞাসা করা হলে অস্বীকার করবে।
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি কোনদিন রাজাকারি বা পাকিস্তানী প্রীতির কারন শুনতে চায় না, আসল কারন এত মোটা দাগে সত্য হওয়া সত্ত্বেও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ অনুভূতিতে আঘাত লাগার ভয়ে শক্তি ঊটপাখি নীতি অবলম্বন শ্রেয় মনে করে। এখনো তারা দাবী করার চেষ্টা করেন যে গুটি কয়েক জামাত শিবির ছাড়া আর সকলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় হাবুডুবু খাচ্ছে। অপরপক্ষের এমন কোন দ্বিধা দ্বন্ব নেই, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তি না শোনার ভান করলেও তারা যা বলার সোজাসুজিই বলে। আজকে ‘৭১ এর মত পরিস্থিতি আবারো হলে নিঃসন্দেহে দেখা যেত রাজাকাররা আর অল্প কিছুতে স্বীমাবদ্ধ নেই, মুক্তিযোদ্ধা রাজাকার বিভাজন মোটামুটি সমানে সমানে।
@আদিল মাহমুদ,
নির্মম সত্য!
মানুষকে বিজ্ঞান শেখাও, ব্যবসা শেখাও, কাজ জোগাড় করে দাও। পরকাল নিয়ে মাতলামি ছুটে যাবে।
@নিরাবেগ নাবিক,
সিরিয়াতে যে সব ব্রিটিশ বাংলাদেশী ছেলেরা জিহাদ করতে গেছে তারা এর কোনটায় পড়ে?
@সুষুপ্ত পাঠক, এ মাতলামী ছুটে যাবার নয় 😀
@নিরাবেগ নাবিক,
নাস্তিকতায় তারকাঁটাঃ পর্ব ১ ☜
(মোহাম্মদপুরের কোন এক চায়ের দোকানে কিছু তরুণ বসে আলোচনা করছে) …..
১ম তরুণঃ তাহলে বুঝছ তো? আল্লাহ যদি থাকতই, তাহলে সমাজে কি গরীব থাকতো? ঐ লোকটার কি দোষ যে আল্লাহ তাকে গরীব করে বানাইছে?
(কথাটা কানে যেতেই দাঁড়িয়ে পড়ল মোল্লা। ভাল করে খেয়াল করল তরুণকে। মুখে ফ্রেঞ্চ কাট দাঁড়ি, DON 2 এর শাহরুখ খানের মত ঝুঁটি বাঁধা চুল, চে গুয়েভারার গেঞ্জি গায়ে………
যাকে বলা হচ্ছে, সে সাধারণ একজন তরুণ। তাদেরকে ঘিরে বসে আছে আরও কয়েকজন, সবাইকে ভার্সিটি পড়ুয়াই মনে হল…… বসল গিয়ে চায়ের দোকানে।)
উৎসুক শ্রোতা পেয়ে ১ম তরুণ আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল……
মোল্লাঃ ভাই, আপনার যুক্তিটা তো বুঝলাম না। সমাজে গরীব আছে বলে স্রষ্টা নেই, এটা কেমন কথা হল?
১ম তরুণঃ স্রষ্টা থাকলে তিনি কি আর গরীব লোকদের কষ্ট দেখে চোখ বুজে থাকতেন? অবশ্যই তিনি তার সৃষ্টিকে কষ্ট দিতেন না।
মোল্লাঃ এটা কোন কথাই হলনা। অনেক মানুষের অনেক টাকা পয়সা আছে, তারপরও তারা কষ্টে আছে। খালি গরীব হলেই কষ্ট, এটা ভুল। কষ্ট নাই, এমন কোন মানুষ পাইনি আমার জীবনে। কারো চেহারা নিয়ে কষ্ট, কারো টাক নিয়ে কষ্ট, কারো GF (girl freind) কে না পাওয়া নিয়ে কষ্ট।
(……উৎসুক শ্রোতারা, আশেপাশের আরও কয়েকজন, যারা এতক্ষণ নাস্তিকতার কথা শুনছিল, কিন্তু পাল্টা যুক্তি দেখাতে না পেরে মনে মনে কষ্ট পাচ্ছিল, সবাই মনোযোগ দিল)
…আপনার লজিকটা ভুল। অনেকটা এইরকম, NOKIA N8, N97 আর 6210 নিজেদের মধ্যে আলাপ করতেছে, “আমাদের মধ্যে যেহেতু বৈচিত্র্য আছে, সেহেতু NOKIA COMPANY বলে কিছু নাই”। এটা কোন কথা হল?
(চলবে……)
☞ নাস্তিকতায় তাঁরকাটাঃ পর্ব ২ ☜
১ম তরুণঃ কিন্তু আল্লাহ আছে, এই প্রমাণ কেউ করতে পারেনি, এর কোন প্রমাণই নেই, আপনার কাছেও প্রমাণ নেই, খালি অন্ধ বিশ্বাস।
মোল্লাঃ (দৃঢ়ভাবে) জী না, আমার কাছে প্রমাণ আছে। বরং স্রষ্টায় না বিশ্বাস করাটাই অন্ধ বিশ্বাস।
পাশ থেকে কেউ একজন : “ কিভাবে?? Zakir Nayek এর logic দিবেন তো? ওইটা তো Zakir Nayek না, Joker Nayek, ওর logic এর অনেক flaw আছে।’’
মোল্লাঃ আমি জাকির নায়েকের logic দিবনা।বরং আমি আপনাকে এমন প্রমাণ দিব যা আমদের বাস্তবতা (Reality)কে পর্যবেক্ষণ করে নেয়া, যা চূড়ান্তভাবে স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রমাণ করবে।
(এবার তারা কিছুটা উৎসাহিত হল)
দুইজন (সমস্বরে) : কিভাবে?
মোল্লাঃ দেখেন, আমাদের এই মহাবিশ্বটার যদি শুরু থাকে, তবে এই প্রশ্নটা সামনে চলে আসে যে, তা কিভাবে শুরু হল?
১ম তরুণঃ কিন্তু মহাবিশ্ব তো শুরু নাও হতে পারে, অনন্তকাল ধরেও তো চলে আসতে পারে?
মোল্লাঃ না, মহাবিশ্ব অনন্তকাল ধরে চলে আসতে পারেনা, এর অবশ্যই অবশ্যই শুরু আছে।
১ম তরুণঃ আপনি এত Sure হলেন কিভাবে?
(বাকিরা উৎসাহী নয়নে চেয়ে আছে…)
মোল্লাঃ মনে করেন, আপনি বাসে উঠার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন, আপনার সামনে আরও ৫ জন। আপনি কয়জনের পর বাসে উঠবেন?
কেউ একজনঃ ৫ জনের পর।
মোল্লাঃ যদি আপনার সামনে ১০ জন থাকে, তাহলে??
১ম তরুণঃ ১০ জনের পর।
মোল্লাঃ কিন্তু যদি আপনার সামনে অসীম সংখ্যক লোক দাঁড়িয়ে থাকে? তাহলে, কয়জনের পর বাসে উঠবেন?
(ব্যাপারটা হজম করতে সময় লাগল, কেউ কথা বলছেনা)
মোল্লাঃ তারমানে আপনি কোনদিন বাসে উঠতে পারবেন না। কারণ আপনার সামনের লাইন কোনদিনই শেষ হবেনা (যেহেতু অসীম)। সুতরাং আপনার serial কখনই আসবেনা। এখন এই মহাবিশ্ব যদি অনন্তকাল ধরে চলে থাকে, তবে একটা প্রশ্ন করি, পৃথিবীর জন্ম কবে হয়েছে? উত্তর হবে, পৃথিবীর জন্ম এখনও হয়নাই, কখনই হবেনা, কারণ পৃথিবীর জন্ম হওয়ার আগে অসীম সংখ্যক ঘটনা ঘটতে হবে। আর অসীম মানে যার কোনও শেষ নাই, সেই ক্ষেত্রে পৃথবীকে অনন্তকাল জন্ম হওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে, যেরকম আপনি লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন বাসে উঠার জন্য। আপনার সামনের লাইন কোনদিনও শেষ হবেনা, আপনিও বাসে উঠতে পারবেন না, পৃথিবীর সামনের লাইনও কোনদিন শেষ হবেনা। এখন মনে করি, পৃথিবীর সামনে সূর্য দাঁড়িয়ে আছে, জন্ম হওয়ার অপেক্ষায়, তারও কোনদিন জন্ম হবেনা, কারণ তার সামনের লাইনও তো অসীম! অসীমের সাথে ১ যোগ করলেও অসীম, ১ বিয়োগ করলেও অসীম, তাহলে আগের ঘটনাগুলোই যদি এখনও শেষ না হয়, তাহলে আমি, আপনি , পৃথিবী, সূর্য কোন কিছুরই অস্তিত্ব সম্ভব হতনা। অবশ্যই একটা ঘটনার মাধ্যমে মহাবিশ্বের শুরু হয়েছে, তারপর ১,২,৩,৪, করে করে ঘটনাগুলো ঘটতে আরম্ভ করেছে……এখন আমি আপনি চায়ের দোকানে আলাপ করছি!
মাঝখান থেকে একজনঃ ভাই, আরেকটু বুঝিয়ে বলবেন কি?
মোল্লাঃ কঠিন হয়ে গেল? আচ্ছা, মনে করেন, আপনি শত্রু পক্ষের কাউকে স্নাইপার রাইফেল দিয়ে গুলি করবেন। আপনার উপর ৫ জন BOSS আছে, পর্যায়ক্রমে যাদের অনুমতি পেলে আপনি গুলি করবেন। এখন আপনাকে যদি অসীম সংখ্যক BOSS এর permission নিতে হয়, তাহলে আপনি কখন গুলি করবেন? আপনার permission নেয়াও শেষ হবেনা, গুলিও কোনদিন করতে পারবেন না। আপনার বাসায় যদি অসীম সংখ্যক মালামাল থাকে তাহলে কোনদিনই বাসা change করতে পারবেন না। কারণ মালামাল নামানো কোনদিনই শেষ হবেনা।
(চায়ের দোকানদারকে)…… ভাই, এক গ্লাস পানি দাও তো…
তারমানে কোনও একটা ঘটনা যদি ঘটে, বুঝতে হবে যে তার আগে অসীম সংখ্যক ঘটনা ঘটেনি, ঘটেছে সীমিত সংখ্যক ঘটনা, আর সীমিত ঘটনা মানেই, একটা শুরু আছে, তারপর ঘটনা গুলো ঘটতে ঘটতে আজকের এই পর্যায়ে এসেছে। সুতরাং মহাবিশ্বের অবশ্যই শুরু আছে। যেরকম ৫ জনের বা ১০ জনের পর আপনি বাসে উঠতে পারছেন, সেইরকম ৫টা, ১০টা বা ১০০টা ঘটনা ঘটার পর পৃথিবীর জন্ম হয়েছে। এ থেকেই প্রমাণ হয়, মহাবিশ্বের শুরু আছে, এটা অনন্তকাল ধরে চলে আসা কোনও মহাবিশ্ব নয়।
(বিংশ শতাব্দীর শুরুতে গণ্ডমূর্খ নাস্তিক INTELLECTUAL দের, যে যুক্তি, উঠতি তরুণ সমাজের মাঝে নাস্তিকতার হাওয়া যুগিয়েছিল, তার এরকম পতন দেখে হতবাক হয়ে গেল তরুণগুলো)
(চলবে…..)
☞ নাস্তিকতায় তাঁরকাটাঃ পর্ব ৩ ☜
(একটু নমনীয় সুরে……)
১ম তরুণঃ আপনার কথা ঠিক আছে… (অজানা ভয়ে…… আমতা আমতা করে…) কিন্তু এতেও প্রমাণ হয়না যে স্রষ্টা আছে।
মোল্লাঃ এখন অবশ্যম্ভাবী প্রশ্নটা চলেই আসে, তাহলে মহাবিশ্ব কিভাবে শুরু হল, মানে সৃষ্টি হল। সে কি নিজেকে নিজে তৈরি করেছে, অর্থাৎ শুন্য থেকে নিজেই নিজেকে তৈরি করেছে নাকি অন্য কেউ তাকে তৈরি করেছে?
১ম তরুণঃ আপনার যুক্তিটা কি? Stephen Hawkings কিন্তু বলেছেন যে, কোন স্রষ্টা ছাড়াই এই মহাবিশ্ব নিজেকে নিজে তৈরি করেছে।
মোল্লাঃ (তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে…) Grand Design বইটার কথা বলছেন তো? ঐ বইয়ের সমালোচনার জবাবে হকিংস নিজের মুখেই স্বীকার করেছেন যে,“ স্রষ্টা নেই, এ কথা কেউ প্রমাণ করতে পারবেনা। কিন্তু বিজ্ঞান স্রষ্টাকে অপ্রয়োজনীয় বলে রায় দিয়েছে।’’সুতরাং, ঐ বই থেকেও প্রমাণ হয়না যে স্রষ্টা নেই। বরং লেখক নিজেই বলছেন যে, স্রষ্টাকে আমাদের দরকার নেই। দরকার নেই, আর স্রষ্টার অস্তিত্ব নেই, দুইটা তো এক জিনিষ না। আর তাছাড়া বইটাতে বোকামিপূর্ণ বক্তব্য দেয়া হয়েছে।
(ব্যাপারটা হজম করতে না পারলেও, এই মোল্লার দৌড় যে শুধু মসজিদ পর্যন্ত না, তা তারা ভালই বুঝতে পেরেছে।)
মোল্লাঃ তা ভাই, আপনার নামটা যেন কি?
১ম তরুণঃ রুম্মান।
মোল্লাঃ চা চলবে ভাই?…… এই মামা, চা দাও সবাইকে……
(To be continued…..)
☞ নাস্তিকতায় তাঁরকাটাঃ পর্ব ৪ ☜
রুম্মানঃ যা বলছিলেন, হকিংস……
মোল্লাঃ ও, হ্যাঁ। উনি বলেছেন যে, Gravityর কারণে এ মহাবিশ্ব নিজেই নিজেকে শূন্য থেকে তৈরি করতে পারে।
রুম্মানঃ তো, এতে সমস্যা কোথায়? Virtual Gravitons এর কারণে এই Gravity তৈরি হয়েছে, যার ফলশ্রুতিতে মহাবিশ্বের সৃষ্টি, শূন্য থেকে।
মোল্লাঃ সমস্যা আছে। Gravity একটা গাণিতিক সমীকরণ। দুইটা বস্তুর মাঝে ভর অনুপাতে আকর্ষণ বুঝাতে এটা ব্যবহৃত হয়। তো মহাবিশ্ব যদি শূন্য থেকেই আসে, তাহলে সেখানে কোন বস্তু ছিলনা, তো Gravity কোত্থেকে আসল সেই সময়? এইখানে আপনি বলছেন যে Virtual Gravitons ছিল, তো সেই প্রশ্ন এসে যায়, এরা কি অনন্তকাল ছিল? অনন্তকাল ধরে থাকতে পারেনা। আর একটা জিনিষ নাই, ছিলনা, আবার সেটা হইল, আবার নাই আবার হইল, এইটাত পুরাই irrational কথাবার্তা। আপনার সামনে আমি দাঁড়াইয়া আছি, আবার গায়েব হয়ে গেলাম, আবার দাঁড়াইয়া আছি, আবার গায়েব হয়ে গেলাম… science দেখি সিন্দাবাদের দৈত্যের মত কথা বলছে, Infact তার চেয়েও আজগুবি কথা বলেছে হকিংস। এই কারনেই ব্রিটিশ বিজ্ঞানী বেরনেস গ্রিনফিল্ড হকিংস কে তালিবানদের সাথে তুলনা করে বলেছেন যে, “যা খুশি তারা বলতে পারে, তালিবানদের মত তারা যখন বলে আমাদের কাছে সব প্রশ্নের উত্তর আছে, তখন তা আসলেই অস্বস্তিকর।’’ মানে Comment করতে তো আর পয়সা লাগেনা। science বুঝেনা এরকম নাস্তিকরাই আসলে হকিংস রে নিয়ে কাউ কাউ করে। Richard Dawkins এইরকম একজন৷ আমাদের দেশের নাস্তিকগুলাও না বুইঝা ফালাফালি করে। অনেক বিজ্ঞানীই হকিংসের সাথে একমত না।
….. আর gravity না হয় gravitons থেকে হইল, যেটার কারণে মহাবিশ্ব হইল, তাহলে gravitons কোত্থেকে হইলো? দ্বিতীয় আরেকটা প্রশ্ন হল, হকিংস শূন্য বলতে যে Quantum vacuum বুঝিয়েছেন, তা কিন্তু আসলেই শূন্য (nothing) না। সেখানে energy বিরাজ করত। এখন, energy আর gravity এই মহাবিশ্বেরই অংশ। হকিংসের কথার সাদামাটা মানে হল, আপনি নিজেকে তৈরি করেছেন শূন্য থেকে, নিজেকে তৈরি করার আগে আপনার হাত আগে থেকেই ছিল(যেটা আপনারই অংশ), তারপর সেই হাত আপনাকে তৈরি করেছে। তো প্রশ্ন হল, হাত কিভাবে ছিল? এটা একটা অবাস্তব কথাবার্তা।
মহাবিশ্বের মধ্যেই অন্তর্ভুক্ত একটা জিনিষ, মহাবিশ্ব তৈরি হওয়ার আগে থেকেই ছিল, এরপর মহাবিশ্বকে তৈরি করে সে নিজেই মহাবিশ্বের পেটের ভেতর ঢুকে পড়েছে, Hw Funny???? Seems like fairy tales!! অর্থাৎ আপনি আগে থেকেই ছিলেন,এরপর আপনার মাকে আপনি বানাইছেন, বানাইয়া তার পেটের ভেতর ঢুকে বসে আছেন, আর মায়ের কাছ থেকে পুষ্টি নিয়ে বেঁচে আছেন। লুল, লুল মজা পাইলাম।
(পুরা দোকান মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনে যাচ্ছে, কেউ বুঝতেছে, কেউ বুঝতেছেনা, তবে সাধারণ জনগণ চাচ্ছে মোল্লাই জিতুক। চায়ে চুমুক দিয়ে………)
এর চেয়ে অবাস্তব কথা আর কি হতে পারে? এ থেকেই বুঝা যায়, মহাবিশ্ব শূন্য থেকে আপনা আপনি তৈরি হয়েছে, এরকম কোন সত্য প্রমাণ বিজ্ঞানের কাছে আদৌ নেই। এটা শুধু থিওরি হিসেবে হকিংসের কল্পনায় (Fantasy) আছে, যার বাস্তব ভিত্তি নেই। না হলে কি আর হকিংস সাহেব বলতেন, “স্রষ্টার অনস্তিত্ব প্রমাণ করা সম্ভব নয়”৷
(To be continued……)
☞ নাস্তিকতায় তাঁরকাটাঃ পর্ব ৫ ☜
মোল্লাঃ এজন্যই আল্লাহ কুরআনে সুরা আত তুরে বলেছেন, “ তারা কি এমনি এমনিই তৈরি হয়েছে, নাকি তারা নিজেরাই নিজেদের স্রষ্টা? না তারা নভোমডল ও ভূমণ্ডল সৃষ্টি করেছে? বরং তারা বিশ্বাস করেনা।’’
রুম্মানঃ (ব্যঙ্গ করে), এ কথা আপনি মহাজ্ঞানী বুঝলেন, আর হকিংস বুঝলনা??
মোল্লাঃ (তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে) হকিংস অজ্ঞানান্ধ (বিজ্ঞানে অন্ধ= অজ্ঞানান্ধ)। একজন রিকশাওয়ালাও তার চেয়ে rational। এক রিকশাওয়ালাকে জিজ্ঞাস করা হয়েছিলো, “ চাচা, আল্লাহ আছে, এটা বুঝলেন ক্যামনে?” কিছুক্ষণ চুপ থেকে তিনি উত্তর দিলেন,“ বাবারে, আমি প্যাডেল চাপি, চাক্কা ঘুরে, আর এতবড় দুনিয়া ঘুরতাছে, প্যাডেল তো কেউ একজন মারতাছে……”
হকিংস সাহেবের এই বোধ বুদ্ধিটাও নাই। হাহাহাহাহা, দেখেন না, এখন কমেডি শোতে অভিনয় করা শুরু করেছেন! এদের ব্যাপারেই আল্লাহ কুরআনে সুরা আল আরাফে বলেছেন, “ আর আমি সৃষ্টি করেছি দোজখের জন্য বহু জিন ও মানুষ। তাদের অন্তর রয়েছে, তার দ্বারা বিবেচনা করেনা, তাদের চোখ রয়েছে, তার দ্বারা দেখেনা, তাদের কান রয়েছে, তার দ্বারা শুনেনা। তারা চতুষ্পদ জানোয়ারের মত, বরং তার চেয়েও নিকৃষ্টতর। তারাই হল গাফেল, উদাসীন।’’
২য় তরুণঃ তাহলে কি দাঁড়ালো? মহাবিশ্ব অসীম নয়, এর শুরু আছে। শুরুটা সে নিজে নিজে করেনি। তারমানে অবশ্যই কেউ একজন এই মহাবিশ্বকে শুরুতে সৃষ্টি করেছেন। ……(কিছুক্ষণ ভেবে) কিন্তু একটা সমস্যা তো রয়েই যাচ্ছে। তাহলে ঐ স্রষ্টা আসল কোত্থেকে? উনাকে কে বানাইছে?
(মোল্লাকে আটকানো গেছে ভেবে কতগুলো চোখ জ্বলজ্বল করে উঠল। বাকিরা দম বন্ধ করে ফেলল)
To be continued……
☞ নাস্তিকতায় তাঁরকাটাঃ পর্ব ৬ ☜
(চায়ে ধীরেসুস্থে চুমুক দিল মোল্লা। সবাই উৎসুক চোখে চেয়ে আছে।)
পাশ থেকে একজন খোঁচা মেরে বললঃ এটা তো শয়তানের প্রশ্ন। তুই তো শয়তান হয়ে গেলিরে।
(হাসির রোল উঠল…)
মোল্লাঃ স্রষ্টাকে যদি অন্য কেউ বানায়, তাহলে প্রশ্ন আসে, তাকে কে বানাল? সেই স্রষ্টার স্রষ্টা কে? এইভাবে দ্বিতীয়, তৃতীয় স্রষ্টার স্রষ্টা কে? এবং এভাবে ব্যপারটা আবার অসীম পর্যন্ত চলতে থাকবে। একটু আগেই কিন্তু আমরা প্রমাণ করেছি, কোন অসীম সংখ্যক ঘটনা সম্ভব নয়। তারমানে হোল, এই মহাবিশ্বের যিনি স্রষ্টা, তার কোন স্রষ্টা নেই।
রুম্মানঃ তাহলে তিনি অস্তিত্বে আসলেন কিভাবে? তিনি কি নিজেকে নিজেই বানিয়েছেন?
মোল্লাঃ তাও সম্ভব নয়। একটা জিনিষ নাই, সে আবার নিজেকে নিজে কিভাবে বানাবে? আর নিজে যদি নিজেকে বানায়, তারমানে, নিজেকে বানানোর আগে তিনি ছিলেন না। নিজেকে যখন বানালেন তখন থেকে তার শুরু, তো কি দিয়ে বানালেন? আর শুরু মানেই তিনি সীমিত। আর তাকে যদি কেউ বানায়, তা নিজেই নিজেকে বানাক আর অন্য কেউ তাকে বানাক, এখানে physical properties চলে আসে। physical properties মানে তিনি নিয়ন্ত্রিত, তার উপর বৈশিষ্ট্য আরোপ করা হয়েছে,তাকে অন্য কারো ইশারায় চলতে হয়, তিনি স্বাধীন না। অথচ স্রষ্টা হতে হলে তাকে হতে হবে নিয়ন্ত্রণমুক্ত, স্বাধীন এবং অনির্ভরশীল। আর মূল কথা হল, একটা জিনিষ নাই, সে আবার নিজেরে কিভাবে, কি দিয়ে বানাবে? শূন্য থেকে আপনা আপনি কিছু হয়না, এটা তো আমরা একটু আগেই আলোচনা করলাম।
রুম্মানঃ তাহলে স্রষ্টা আসল কোথা থেকে?
মোল্লাঃ তিনি অসৃষ্ট। তিনি কোথাও হতে আসেন নাই। তিনি আগে থেকেই ছিলেন, চিরকাল থাকবেন।
(গুঞ্জন উঠল ভিড়ের মধ্যে, “এটা কি হল, বুঝলাম না”…… “অসৃষ্ট মানে?”…… “তাহলে মহাবিশ্বের অসৃষ্ট হতে সমস্যা কোথায়……?”)
(কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ল মোল্লার।)
মোল্লাঃ আমার বক্তব্যটা একটু গুছিয়ে বলি। মহাবিশ্বকে study করে আমরা বুঝলাম যে তার একজন স্র্রষ্টা আছে, তাইনা?
(আশপাশে তাকিয়ে তেমন একটা support পেলনা মোল্লা। দুই একজন হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল)
মহাবিশ্ব, স্রষ্টা ছাড়া সম্ভব না। এখন এই স্রষ্টাকে, হয়, কেউ তৈরি করেছে, না হয় তিনি নিজেকে নিজে তৈরি করেছেন। এ দুইটা বাদ দিলে মাত্র একটাই option থাকে। আর তা হল স্রষ্টা অসৃষ্ট। এর বাইরে আর কোন option নাই। প্রথম দুইটা point যে ভুল, তা আমি আলোচনা করেছি। আর বাকি একটাই option থাকে যে, তিনি একজন অসৃষ্ট স্রষ্টা (uncreated Creator)। তিনি যদি অসৃষ্ট (uncreated) না হন, তাহলে তিনিও ‘সৃষ্টি’ (created) হয়ে যান। আমাদের বুঝতে হবে যে, ‘স্রষ্টা’ (creator) আর ‘সৃষ্টির’ (created) মধ্যে পার্থক্য আছে। সৃষ্টি মানেই সীমাবদ্ধতা(limitation), নির্ভরশীলতা(dependency), দুর্বলতা(weakness)। কিন্তু স্রষ্টা এসকল সীমাবদ্ধতার ঊর্ধে। এজন্যই স্রষ্টাকে সৃষ্টি করা যায়না। তাকে হতে হবে অসৃষ্ট (uncreated)।
(এতক্ষণে কয়েকজন বুঝল, কিন্তু প্রশ্ন শেষ হয়নি)
To be continued…..
☞ নাস্তিকতায় তাঁরকাটাঃ পর্ব ৭ ☜
রুম্মানঃ মহাবিশ্বের অসৃষ্ট হতে সমস্যা কোথায়? আর স্রষ্টার যে বৈশিষ্ট্য আপনি বলেছেন, তা তো কল্পনায়ও আনতে পারছিনা। পুরোপুরি বোধগম্যও হচ্ছেনা!
মোল্লাঃ মহাবিশ্বের ব্যপারটা তো বললামই, সে সীমিত (finite), সে অস্তিত্বের জন্য নির্ভরশীল। আর যে অস্তিত্বের জন্য অন্য কারো উপর নির্ভরশীল, সে তো সৃষ্টি (created)। এজন্যই তো সে অসৃষ্ট (uncreated) নয়, তার একজন স্রষ্টাকে দরকার, কিন্তু স্রষ্টার অন্য কোন স্রষ্টাকে দরকার নেই। আর স্রষ্টার বৈশিষ্ট্য বোধগম্য হচ্ছেনা, স্বাভাবিক। স্রষ্টার reality আর আমার আপনার reality এক না। একটা unknown reality কে আপনি known realityর সাথে match করাতে পারবেন না।
২য় তরুনঃ বুঝলাম না।
মোল্লাঃ মনে করেন আপনি কোনদিন আমেরিকার সাদা চামড়ার মানুষ দেখেন নি। এখন কেউ যদি আপনাকে এসে বলে, আমেরিকার মানুষের চামড়া সাদা, তো, আপনি কি বুঝবেন? আপনি বলবেন, দুধের মত সাদা? সে বলবে, না লাল সাদা। আপনি হয়ত বলবেন, দুধের মধ্যে আলতা দিলে যেরকম হয়, সেরকম?
(চায়ে চুমুক দিয়ে মোল্লা দেখল চা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। পাশে রেখে দিল)
মোদ্দা কথা হচ্ছে, একটা অজানা reality সম্পর্কে যদি আপনাকে এসে বলা হয়, আর আপনি যদি তা sense করতে না পারেন, তবে কোনদিনই বুঝবেন না ঐ reality কেমন। ঐ reality বুঝতে হলে আপনাকে ঐ reality তে অবস্থান করতে হবে। স্রষ্টার reality আমাদের বাইরের reality, যা আমরা কখনই বুঝবনা। এজন্যই, হাদিসে, আল্লাহ কেমন, কিভাবে কাজ করেন, কেমনে থাকেন এ বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ একটা অজানা reality সম্পর্কে চিন্তা করতে গিয়ে আমরা শুধু fantasy নিয়ে পড়ে থাকব……এ কারনে আমরা মহাবিশ্বকে study করে স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রমাণ করতে পারি, কিন্তু তিনি কেমন, কিভাবে থাকেন, কিভাবে কাজ করেন, তা প্রমাণ করতে পারিনা, এটা আমাদের আয়ত্তের বাইরে।
মাঝখান থেকে একজনঃ ও, সেজন্যই বুঝি স্রষ্টার কোন মূর্তি থাকতে পারেনা! ছবি থাকতে পারেনা? কারণ, তাকে যদি নাই দেখলাম, তার বাস্তবতা যদি নাই বুঝলাম, তাহলে তার মূর্তি বানালে তো তাঁর উপর মিথ্যা আরোপ করা হয়। তাকে তো দেখিইনাই কোনদিন, মূর্তি বানাব কেমনে? মূর্তি তো বানাব আমার কল্পনা দিয়ে, কিন্তু সেটা তো আর স্রষ্টা নয়!
(প্রশংসার দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাল মোল্লা, ভাবল, “নাহ, সব নাস্তিক গাধা না।”)
মোল্লাঃ Exactly! আপনি সঠিক point টাই ধরেছেন। এ কারণেই ইসলাম বলেছে স্রষ্টার সাথে এ মহাবিশ্বের কোন কিছুর তুলনা করা যায়না। তিনি অতুলনীয়। তাই, মূর্তি বানালে স্রষ্টার উপর মিথ্যা আরোপ করা হয়।
to be continued…..
☞ নাস্তিকতায় তাঁরকাটাঃ পর্ব ৮ ☜
(রঙ্গমঞ্চে এবার নতুন একজন আবির্ভূত হলেন।)
তিনি বললেনঃ তার মানে, আপনি বলতে চাচ্ছেন, স্রষ্টা unlimited এবং independent।
(মোল্লা ঘুরে তার দিকে তাকাল। মাঝবয়সী ভদ্রলোক, এক কোণায় বসে মনোযোগ দিয়ে কথা শুনছিলেন এতক্ষণ। এঁর কাঁচাপাকা চুলও ঝুঁটি বাঁধা, চওড়া কপাল, ফ্রেঞ্চকাট দাঁড়ি, ফুলরীমের চশমা সেইরকম একটা ভাব এনে দিয়েছে চেহারায়……
মোল্লা বুঝল, tough guy…… মজাটা শুরু
হবে এখন……)
মোল্লাঃ জী, স্রষ্টা unlimited এবং independent।
(মৃদু হাসলেন ভদ্রলোক)
মাঝবয়সী বাবুঃ আপনি কি quark এর কথা শুনেছেন? quark কে কিন্তু আমরা প্রকৃতিতে আলাদাভাবে …… মানে স্বাধীনভাবে বিচরণশীল পাইনা। সুতরাং একে আপনি limited বলতে পারবেন না। আবার একে নিয়ন্ত্রণও করা যায়না,মানে অন্য কেউ ওর উপর খবরদারি করতে পারেনা, সুতরাং একে independent বলতে পারেন। তাহলে কি বলতে চাচ্ছেন, quarkই আপনার আল্লাহ?? (হা হা হা)
মোল্লাঃ আপনার এই কথাটাই Atheist Bangladesh Group এর Admin আমাকে বলেছিল। তখন আমি quark সম্পর্কে জানতাম না। তাই একটু ধোঁকায় পড়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু পরে দেখি,
(হাত দিয়ে মাছি তাড়াবার ভঙ্গি করল মোল্লা)।
আপনি নিশ্চয়ই জানেন, quark কে laboratory তে তৈরি করা সম্ভব হয়েছে, এর ভর আছে, এর ঘূর্ণন আছে। সুতরাং একে আপনি independent বলতে পারেন না। আর ধারণা করা হয়, big bang এর শুরুতে সেকেন্ডের ভগ্নাংশ সময়ে এরা প্রকৃতিতে বিরাজ করেছিল, সুতরাং ‘unlimited’ একটা জিনিষ ‘limited’ মহাবিশ্বে বিরাজ করতে পারেনা। আপনি আমার আলোচনা এতক্ষন শুনে থাকলে বুঝবেন।
মাঝবয়সী বাবুঃ আল্লাহর ও তো বৈশিষ্ট্য আছে, তিনি কি জানি……(মনে করার ভান করলেন) আর রহমান, আর রহিম, বেগারা, বেগারা, তাহলে তাকে dependent আর limited বলছেন না কেন?
(ব্যাটার নির্বুদ্ধিতায় বিরক্ত হল মোল্লা, ভাবল, “গাধা কি আর গাছে ধরে?” চেহারায় ফুটে উঠল বিরক্তির ছাপ)
মোল্লাঃ উনি যে রহমান, রহিম এগুলা উনার personality, এগুলা কোন physical বৈশিষ্ট্য না। quark এর বৈশিষ্ট্যগুলা physical বৈশিষ্ট্য, personality না। আর ফিজিক্যাল বৈশিষ্ট্য মানেই এগুলো আপনার উপর আরোপ করা হয়েছে, তার মানে আপনি independent না, আপনি খাঁচার ভেতর অচিন পাখি। আপনার হাত দেড় ফুট লম্বা, এটা physical বৈশিষ্ট্য, কিন্তু আপনি মানুষের সাথে ভাল আচরণ করেন, এটা আপনার personality, physical property কাউকে limited করে তোলে কিন্তু personality কাউকে limited করেনা।
(একটু যেন দমে গেলেন ভদ্রলোক)
to be continued…..
☞ নাস্তিকতায় তাঁরকাটাঃ পর্ব ৯ ☜
মাঝবয়সী বাবুঃ কিন্তু আমার প্রশ্নের সাথে তো আপনার উত্তরের কোন মিলই নাই৷ আমি কি জিজ্ঞাসা করলাম, আর আপনি কি উত্তর দিলেন?
মোল্লাঃ আমি ভেবেছিলাম, আপনি জ্ঞানী, বুঝে নিবেন। (দুইপাশে হাত ছড়িয়ে) যাই হোক, ঐ যে বলছিলাম, প্রশ্নটার premise ভুল। এই প্রশ্নে ধরা হয়েছে যে, “স্রষ্টা সবকিছু পারে”। এই ভিত্তিতে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, “স্রষ্টা কি এমন কোন পাথর বানাতে পারে যা তিনি ধ্বংস করতে পারেন না?’’ premise ভুল এই কারনে যে, আমি একটু আগেই বললাম, স্রষ্টা আসলে সবকিছু পারেনা, উনি Ungodly জিনিস করতে পারেন না। দ্বিতীয়ত, এই প্রশ্নটার structure এও ভুল আছে। এই প্রশ্নটা logical প্রশ্ন। একটা Universal truth কে base ধরে এই method এ logic দাঁড় করান হয়। এই method কে বলা হয় logical deduction method. কিন্তু এই প্রশ্নটায় universal truth কে base ধরে করা হয়নি।
(একটু চিন্তা করে)
যেমন ধরুন, ‘মানুষ মরনশীল’ এটা একটা সার্বজনীন সত্য। এটাকে premise ধরে প্রশ্ন করা হল, ‘রহিম একজন মানুষ, রহিম কি মরণশীল?’………… কিন্তু আপনি যে প্রশ্ন করেছেন তাতে বলা হয়েছে, এমন কোন বস্তু তৈরি করা যাবে কিনা, যা স্রষ্টা ধ্বংস করতে পারেনা? আমাদের আশপাশে এমন কোন উদাহরন নাই যেখানে কেউ কোন কিছু বানাল অথচ তা নষ্ট করতে পারেনা। আপনি যদি একটা গ্লাস বানান, আপনি জানেন, কত জোরে আঘাত করলে তা ভেঙ্গে যাবে। আপনি একটা কম্পিউটার বানালে জানেন যে, পানিতে চুবাইলে এইটা শেষ। এটা কখনই সম্ভব না যে, কেউ কোন একটা জিনিসকে তৈরি করেছে অথচ তা ধ্বংস করতে পারছেনা। তৈরি করার সাথে সাথেই ঐ জিনিষটার দুর্বলতা এবং নাড়ী নক্ষত্র স্রষ্টার জানা হয়ে যায়, যেভাবে আপনি জানেন আপনার তৈরি করা মেশিনটা কয়দিন সার্ভ করবে, কি করলে তা নষ্ট হয়ে যাবে। এটা স্রষ্টার দুর্বলতা নয়, বরং সৃষ্টির, স্রষ্টাকে অতিক্রম করতে না পারার অক্ষমতা!
(ফাটা বেলুনের মত চুপসে গেলেন মাঝবয়সী বাবু। এ প্রশ্নের এরকম উত্তর তিনি জীবনেও শুনেন নি। মোল্লা যেভাবে প্রশ্নটার সার্জারি করে আবর্জনার স্তূপে ছুঁড়ে ফেলল, তাতে তিনি স্তম্ভিত হয়ে গেলেন। অথচ এ প্রশ্ন দিয়েই তিনি কত তরুণকে নাস্তিক বানিয়েছেন, কত হুজুরকে ঘোল খাইয়েছেন, অপমান করেছেন!)
ফ্যাকাসে হাসি হাসলেন বাবু।
To be continued….
☞ নাস্তিকতায় তারকাঁটাঃ পর্ব ১০ ☜
মাঝবয়সী বাবুঃ বুঝলাম, কিন্তু স্রষ্টা থাকলেই যে, তাকে মানতে হবে, এমন কোন কথা নেই।
মোল্লাঃ তারমানে, আপনি বলতে চাচ্ছেন, এ মহাবিশ্ব তৈরির পেছনে কোন objective নেই?
মাঝবয়সী বাবুঃ না কোন objective নাই।
মোল্লাঃ কেন আপনার এরকম মনে হল?
মাঝবয়সী বাবুঃ Objective থাকলে কি আর মানবজাতির মধ্যে এত হানাহানি, মারামারি, কাটাকাটি হত? যে যার মত খুশি, চলে। Objective থাকলে কি আর এরকম হত?
মোল্লাঃ (কৌতুকপূর্ণ ভঙ্গীতে) তাহলে তো নাস্তিকরা মানবজাতির জন্য বড় উপকার করে যেতে পারে!
মাঝবয়সী বাবুঃ কিভাবে? (সন্দেহপূর্ণ দৃষ্টি)
মোল্লাঃ যেহেতু নাস্তিকদের জীবনের কোন অবজেক্টিভ নাই, সেহেতু আপনারা এক কাজ করলেই পারেন। গণহারে সবাই গলায় দড়ি দিতে পারেন। এতে বাংলাদেশের জনসংখ্যার সমস্যার সমাধান হবে।, আপনারা মরে গিয়ে তেল, গ্যাস হবেন, আমাদের জ্বালানী সমস্যার সমাধান হবে। পৃথিবীতে আস্তিক নাস্তিকের মারামারিও থাকবেনা।
…… তো আপনারা মানবজাতির বিশাআআআআআআল উপকার সাধন করতে পারেন।
( এ কথা শুনে সবাই দাঁত কেলিয়ে হাসতে লাগল। চা দোকানদারের পান খাওয়া লাল দাঁত ও বেরিয়ে পড়ল)
মোল্লাঃ কি মামু? তোমার দোকানে না হয় দুই কাপ চা কম বিক্রি হবে, মাইন্ড কইরনা।
(দাঁত ৩২ টাই বের হল এবার)
(ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলেন মাঝবয়সী বাবু)
মাঝবয়সী বাবুঃ ওরে বাপরে! সাড়ে এগারটা বেজে গেল। এবার উঠতে হয়, ভাই…
(সবাই মোচড় দেয়া শুরু করল)
মোল্লাঃ হ্যাঁ, হ্যাঁ, আমাকেও উঠতে হবে……… তা আপনি স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাস করছেন?
মাঝবয়সী বাবুঃ না, আমি সংশয়বাদী, কোনদিন clear cut প্রমাণ পেলে করব।
মোল্লাঃ দেইখেন আবার, নিজের সন্তানের পিতৃত্ব নিয়ে সংশয়ে থাইকেন না আবার!
(বলেই বুঝল খোঁচাটা মারা ঠিক হয়নি)
To be continued…..
@সামুরাই নিনজা, কমেন্টস পড়ে তো আমি পুরাই অভিভূত! চায়ের দোকানের এক মোল্লা দুনিয়ার নাস্তিকদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়ে নাস্তিকতার মূলই উতপাটন করে ছেড়েছে! হা হা হা… নাস্তিকরা এবার তোমাদের কি হপে! হকিং, ডকিংস সব গন্ডমূর্খ! “খুঁটি ছাড়া আকাশ” যে এখনো এই অকৃতজ্ঞ নাস্তিকদের মাথায় ভেঙ্গে পড়ছে না এটা তাদের সাত জনমের ভাগ্য। আল্লার অস্তিত্ব প্রমাণ হয়ে গেছে! কোন আল্লা? যিনি ভেড়ার শিংয়ের উপর আরশে সিংহাসনে বসে আছেন! সেই আরশ যে আরশের নিচে গিয়ে সূর্য রোজ রাতে গিয়ে ঘুমায়!আরবের কাবাঘরে যে আল্লার বসত-যিনি যুদ্ধ করতে বলেন, যুদ্ধবন্দিনিদের হালাল করে দেন, মানুষে মানুষে শত্রুতা সৃষ্টি করেন-সেই আল্লা আছেন প্রমাণ হয়ে গেছে একটা চায়ের দোকানে এক মোল্লার কাছে! হা-হা, নাস্তিক আর বিধর্মীরা তোমরা তাই হয় ইসলামের ছায়াতলে আসো নয়তো জিজিয়া কর দিয়ে মাথানত করো! আর ধর্মত্যাগী, নাস্তিক, মুরতাদদের কতল করো সহি শরীয়া অনুসারে! আর নারীদের খতনা করে দাও তাদের চরিত্র ঠিক রাখতে। মহান আল্লাহতালা যিনি সবচেয়ে বুঝনেঅলা, জ্ঞানী তিনি কখনোই এতে আপত্তি করেননি। সেই মহান আল্লা প্রমাণিত হয়ে গেছেন!… তবে সবাই মনে রাখবেন, শুধুমাত্র স্রষ্টায় বিশ্বাস করলেই কিন্তু হবে না! “আল্লা“ বিশ্বাস করতে হবে! দুনিয়ার তাবত হিন্দু, ইহুদী, খ্রিস্টান স্রষ্টায় বিশ্বাস করে তবু তাতে কিছু যায় আসে না। এই নফরমানরা সৃষ্টায় বিশ্বাস করেও অনন্তকাল দোযগের আগুনে পুড়ে মরবে! কাজেই চায়ের দোকানের এই হেফাজতী মোল্লার সৃষ্টা মানে কিন্তু এসলাম! শুধু এসলাম না, সহি এসলাম হতে হবে!
@সামুরাই নিনজা,
কথা হচ্ছিল “করুণাময়ী স্রষ্টার” সৃষ্টির কষ্ট সম্পর্কে তার উদাসীনতা নিয়ে। ১ম তরুণের সন্দেহের মূল জায়গাটা হল সৃষ্টিকর্তা যদি কেউ থেকেও থাকে তিনি দয়ার সাগর কিনা? আর প্রচলিত ধর্মগুলোতে সৃষ্টিকর্তাকে অবশ্যম্ভাবী রূপে সন্তানের পিতামাতার চেয়েও যেহেতু দরদী বলে চাউর করা হয়, সেহেতু দুঃখ-কষ্টে ভরা এই পৃথিবীতে দরদটাকেই সত্য ধরে নিলে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। কিন্তু মোল্লা মামা যুক্তির বহরে দেখালেন ধনী, গরিব, আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবারই যেহেতু কিছু না কিছু কষ্ট আছে সেহেতু তাতে সৃষ্টিকর্তার করুণাময়ী ইমেজ নষ্ট হয় না। মজার ব্যাপার হল মোল্লা সবরকমের কষ্টকে এক দাঁড়িপাল্লায় মেপে দিয়েছেন। এই যেমন ধরেন জন্মান্ধ হয়ে জন্মানোর কষ্ট, মোল্লা নাম নিয়ে তাচ্ছিল্যের পাত্র হওয়ার গুপ্ত বেদনা, নিজের চোখের সামনে পরিবারের সবাইকে খুন হতে দেখার বিভীষিকা, ধনির দুলালের GF হারানোর feelings ইত্যাদি কষ্ট গুলো সবার মাঝে বিলিয়ে দিয়ে মহান করুণাময়ী যেন “fare” থাকতে চেয়েছেন।
শেষে এসে মোল্লা ডিজিটাল উদাহরণ টেনে তার মতে মোক্ষম যুক্তি খণ্ডনে তৎপর হন। NOKIA N8, N97 আর 6210 এর “বৈচিত্র্যকে” মানুষের দুঃখ-কষ্টের সাথে মিলিয়ে আমাদের “জগাখি” (শুধু খি, খিচুড়িও হয়নি) খাওয়ানোর প্রয়াস পেলেন। দুঃখ-কষ্ট হল negative ধারণা, তুলনা করতে হলে N97 আর 6210 এর “বৈচিত্র্যকেও” negative বা খুঁত হিসাবে ধরতে হবে। আর সেই খুঁত গুলো নিয়ে NOKIA N8, N97 আর 6210 রা যদি নিজেদের মধ্যে আলোচনাও করে তবে তাদের আলোচনা হবে এইরকম:
“আমাদের NOKIA COMPANY খুব একটা জাতের না রে। দেখ আমাদের Production এ কত অসংখ্য ত্রুটি! ধ্যান ধারনায় এখনও সেই মধ্যযুগে পড়ে আছে। এই কারণেই তো এখন iphone আর samsungএর কাছে মার খাচ্ছে।”
কি বলেন মোল্লা সাহেব কথাটা ঠিক আছে না? তারা কিন্তু এখন বলছে না NOKIA COMPANY নাই। COMPANY আছে কিন্তু সমস্যা আছে, বাজারে চল কমতি, সেরা বা মহত না। এখন আপনি যদি বলেন, না NOKIA COMPANY অবশ্যই মহত এবং সর্বসেরা, তার কোন ভুল ভাল হতেই পারে না, তখন কিন্তু “হুজুরের মতে অমত করে” মোবাইল গুলো বলতেই পারে, ধ্যাত, NOKIA কোন COMPANY ই না। এরকম কোন COMPANY থাকতে পারে না।
——-
সামুরাই নিনজার উল্লেখিত মোল্লার প্রতিটি যুক্তিই (!) যথেষ্ট নিম্নমানের এবং সহজেই যুক্তি খণ্ডনের চপেটাঘাতে চুপসে দেয়া যায়। আমার ধারনা অহেতুক সময় নষ্টের অনিচ্ছায় অন্য কোন পাঠক তা করা থেকে বিরত থেকেছেন। আর লেখার এই পর্যায়ে এসে আমারও সেই একই উপলব্ধি । হয়ত আমার এই মন্তব্য কারো নজরেই আসবে না। তবে সামুরাই নিনজা যদি চায় তার উল্লেখিত পরের যুক্তি গুলো আমি খণ্ডনের চেষ্টা করে দেখতে পারি। ততে আর যাই হোক অভ্র দিয়ে আমার বাংলা লেখা অনুশীলন ভালই হবে। হাহা …
@কিশোর,
আপনার কথায় যথেষ্ট যুক্তি আছে। কিন্তু “বৈষম্য আছে বলে সৃষ্টিকর্তা নিষ্ঠুর” এই ব্যাপারে আমি একমত নই। ছোট থাকতে একটা ভাব-সম্প্রসারণ পড়েছিলাম :
” আলো বলে: অন্ধকার তুমি বড় কালো,
অন্ধকার বলে: ভাই, তাই তুমি আলো।”
সুতরাং অন্ধকারের অস্তিত্ব না থাকলে আলোর অস্তিত্বও থাকতো না। দু:খের অস্তিত্ব না থাকলে সুখের অস্তিত্ব থাকতো না। আনন্দ আছে বলেই বেদনা আছে। গরীব আছে বলেই ধনী আছে। পৃথিবীতে যদি সুখ-দু:খের সংমিশ্রণ না থাকতো তবে জান্নাত/জাহান্নাম আলাদাভাবে তৈরি করার কোন প্রয়োজন পড়তো না।
দুনিয়াতে সুখ-দু:খের সংমিশ্রণ ঘটানো হয়েছে। কারণ যেখানে বৈচিত্র্য নেই সেখানে ভাল-মন্দের পরীক্ষাও নেই। স্রষ্টার সৃষ্ট Angel -রা সবসময় তাঁর হুকুম পালন করে।তাই মানুষকে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি দেয়া হয়েছে তাকে পরীক্ষা করার জন্য। মানুষ তার স্বাধীন ইচ্ছার কারণে আল্লাহকে মানতেও পারে আবার নাও মানতে পারে।
চিন্তা করে দেখুন কোন মানুষকে যখন পঙ্গু করে পৃথিবীতে পাঠানো হয় তখন সে খুবই আফসোস করে। কিন্তু তাকে যদি বলা হয় তুমি ৬০-৭০ বছর যদি ধৈর্য্য ধরে কষ্ট সহ্য করতে পারো তাহলে তোমাকে চিরকাল বেহেশতে দাখিল করা হবে সেখানে তোমার কোন মৃত্যু হবে না। সে তাহলে চোখ বন্ধ করেই রাজি হয়ে যেত। কারণ মানুষ প্রথম জীবনে কতো কষ্ট করে শেষ জীবনে সুখে থাকার জন্য, সেই জায়গায় যদি Unlimited life দেওয়া হয় তাহলে তো কোন কথাই নেই।
যখন পরীক্ষার প্রশ্ন সহজ হয় তখন শিক্ষক কঠিন করে খাতা দেখেন, আবার পরীক্ষার প্রশ্ন কঠিন করা হলে খাতা সহজভাবে দেখা হয়। দৌড় প্রতিযোগিতায় পঙ্গু ব্যক্তিকে অর্ধেক দূরত্ব থেকে শুরু করতে দেয়া হয়। অনুরুপভাবে আল্লাহ তায়ালা পঙ্গু, শারীরিক প্রতিবন্ধী, গরীব-দু:খী মানুষের পরীক্ষার হিসাব খুব সহজভাবেই নিবেন। তাই ইসলামে ধনীদের যাকাত দেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যেন গরীবরাও সম্পদের উপযুক্ত ভাগ পায়। এবং বলা হয়েছে যে, ধনী লোকদের বেহেশতে যাওয়া খুবই কঠিন।
পবিত্র আল কোরআনের বাণী:
# ” তারা (হতভম্ব হয়ে একে অপরকে বলবে, হায় (কপাল আমাদের)! কে আমাদের ঘুম থেকে (এমনি করে) জাগিয়ে তুললো (এ সময় ফেরেশতারা বলবে), এ হচ্ছে তাই (কেয়ামত), দয়াময় আল্লাহ তায়ালা (তোমাদের কাছে) যার ওয়াদা করেছিলেন, নবী রসূলরাও (এ ব্যাপারে) সত্য কথা বলেছিলেন।” (সূরা ইয়াসিন : ৫২)
আব্দুল্লাহ ইবনে মাকতুম (রা:) অন্ধ ছিলেন। (আবু দাউদ শরীফ ৩২:৪১০০) তবুও তিনি কখনও হতাশ হননি। আইয়ূব (আ:) ১৮ থেকে ৩০ বছর কঠিন রোগে আক্রান্ত ছিলেন। তার পরিবার তাকে পরিত্যাগ করেছিল তবুও তিনি ধৈর্য্যহারা হননি। ইবরাহিম (আ:) এর ৮৬ বছর পর্যন্ত কোন সন্তান হয়নি তবুও তিনি আল্লাহকে ভুলে যাননি।
আবার এর বিপরীত ভাবেও পরীক্ষা করা হয়:
সোলায়মান (আ:) কে প্রচুর ধন-সম্পদ ও বিশাল রাজত্ব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি প্রাচুর্য্যের অহংকারে স্রষ্টাকে ভুলে যাননি। ইউসুফ (আ:) কে মানব জাতির মধ্যে সবচেয়ে বেশি সৌন্দর্য্য দান করা হয়েছিল। তিনি খুব সহজেই খোদাকে অমান্য করে নারী বিলাসীতায় মনোনিবেশ করতে পারতেন, কিন্তু তা করেননি। এরকম অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে।
মূলত, অহংকারী এবং অকৃতজ্ঞদের আল্লাহ পছন্দ করেন না।
…………………………………………ধন্যবাদ (Y)
@সামুরাই নিনজা,
যাক, আমার রাত জেগে “লিখব কি লিখব না করে” শেষমেশ লিখে ফেলা মন্তব্যটায় যে আপনি যুক্তি খুঁজে পেয়েছেন, তার জন্য অনেক ধন্যবাদ । কিন্তু সত্যি কথা বলতে কি, আপনার প্রত্যুত্তরে আমি যুক্তির বদলে আবেগ, ভয় আর গতানুগতিক সান্তনাবাণী ছাড়া আর তেমন কিছু পেলাম না। হতে পারে আমার বোধশক্তির সীমাবদ্ধতা। তার পরেও বলি, আলোচ্য বিষয়ের লেবুগুলো ইতিমধ্যেই অনেক কপচানো হয়ে গেছে। এধরণের যুক্তি তর্ক মুক্তমনা-বাসীদের কাছে একেবারেই বাসি পচা অখাদ্য এখন। তাই আবার নতুন করে চর্বিত চর্বণ করতে কিছুটা লজ্জা বোধ করছি। যাহোক, এবার ভণিতা ছেড়ে যুক্তির কথায় আসা যাক। আপনি বলেছেন-
ভালো কথা। তার মানে আপনি স্বীকার করে নিচ্ছেন যে সৃষ্টিকর্তা বৈষম্য সৃষ্টিকারী ? এইটাও কি তাঁর গুণাবলির মধ্যে পড়ে? আর আপনি বার বার নিষ্ঠুরতম অমানবিক ঘটনা-গুলকে (যেমন: মাতৃগর্ভে অজাতকের পটল তোলা, নবজাতকের পঙ্গু, পাগল হয়ে জন্মানো, পরিবারের সামনে গণ-ধর্ষণের পর জবাই হওয়া ইত্যাদিকে) “বৈচিত্র্য”, “বৈষম্য” বলে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এতে করে ঈশ্বরের নিষ্ঠুরতা আপনার চোখে ধরা না পড়লেও এসবের জন্য কি তাকে করুণার পরাকাষ্ঠা বলে দাবি করতে পারবেন? “নিষ্ঠুর না” আর “পরম করুণাময়” কথা দুটো কিন্তু এক না।
একটা উদাহরণ দেয়ার চেষ্টা করি। মনে করেন আপনি অঢেল সম্পত্তির মালিক এবং তিন সন্তানের জনক। একদিন কাউকে না জানিয়ে ঠিক করলেন , আপনি আপনার সন্তানদের পরীক্ষা করবেন, আপনার প্রতি তাদের শ্রদ্ধা আর ভালবাসার গভীরতা কার কতটুকু। আরও ঠিক করলেন যার পরীক্ষা যত বেশি কঠিন হবে তাকে তত বেশি পুরস্কৃত করবেন। তাদের অজান্তে, অনিচ্ছায় শুরু হল পরীক্ষা । বড় কন্যাকে আপনার সামনে গণধর্ষনের ব্যবস্থা করলেন। তার যৌনাঙ্গগুলো কেটে ছিঁড়ে গৃহপালিত পশু দিয়ে তার সামনে খাইয়ে দিলেন। সে আপনার অঢেল সম্পত্তির উত্বরাধিকারত্ব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকলেও আপনার কি মনে হয় সে এই কর্মকাণ্ডে আপনার বন্দনায় গদগদ হয়ে সেজদা দিতে থাকবে? অপরদিকে আপনি আরেক ছেলেকে নাবালক অবস্থায় ভরণপোষণের কোন খরচ না দিয়ে তাকে রাস্তায় ভিক্ষা করতে পাঠালেন। আর ছোট ছেলেটা নাস্তিক বিধায় তাকে আগেই ত্যাজ্য করেছেন । আপনি কি সন্তানদের কাছে করুণাময় পিতা? কিংবা আদেও কি মানুষের বাচ্চা? পরিশেষে তাদের কাছে আপনার পরীক্ষার কারণ ব্যাখ্যা করে দুইজনকে পুরস্কার স্বরূপ যথাক্রমে ৩টা ও ১টা করে দ্বীপ লিখে দিলেই আপনি কি তাদের কাছে দয়ার সাগর হয়ে যাবেন? নাকি পিতা হিসাবে আপনার উচিৎ ছিল তাদের সঠিকভাবে ভরণপোষণ করে মানুষ হওয়ার সুযোগ করে দেয়া এবং তারা আপনাকে কী দিল না দিল, কে কত বড় হল না হল তার ঊর্ধ্বে উঠে আপনার বিষয় আশয় সবার মাঝে সমান ভাগে ভাগ করে দিয়ে আপনার শুভকামনা রেখে যাওয়া? আপনার কাছে করুণা, দয়ার সংজ্ঞা কী? আপনি কি উদাহরণের প্রথমে উল্লিখিত পিতাকে ২য় পিতার চেয়েও করুণাময় বলবেন ? যদি না বলেন তবে আপনি কি মনে মনে হলেও স্বীকার বা সন্দেহ করার ক্ষমতা রাখেন যে সৃষ্টিকর্তা নিষ্ঠুর না হলেও পরম করুণাময় কিছু না, নিদেন পক্ষে যতটা করুণাময় বলে ধর্ম গুলোতে দাবি করা হয় ততটা হয়ত না?
আপনি আমাদের ছোট্ট একটা কবিতা শুনিয়ে দিয়েছেন।
আমরা অতি প্রীত ও ততোধিক মুগ্ধ। দেখা যাক কবি এখানে কি বোঝাতে চেয়েছেন। অন্ধকার বলে: ভাই, তাই তুমি আলো। এর মানে হল অন্ধকার আছে বলেই মানুষের কাছে আলোর এত আপেক্ষিক গুরুত্ব বা চোখে পড়ার মতো প্রয়োজনীয়তা। তাতে করে অন্ধকার না থাকলে আলোর অস্তিত্বে কোন হুমকি নেই। অন্ধকার থাকতেই হবে এমন কোন কথাও নেই । সুর্য সহ তারারা কিন্তু পুরো আলোকিত । আপনি যদি এখন বলেন লোডশেডিং আছে বলেই বিদ্যুৎ আমাদের এত প্রিয়, কথাটা উন্নত বিশ্বে, যেখানে লোডশেডিং নেই সেখানে তো বটেই বাঙলার ভোড়ো গ্রাম কামারখালীতেও পাগলের প্রলাপের মতো শোনাবে।
যাহোক আপনি এভাবে ইনিয়ে বিনিয়ে অনেক ধনী-গরিব, পরীক্ষার পাশের বস্তাপচা কথা বলেছেন। এইসব সান্ত্বনা বানী শুনে আপনি বোকার স্বর্গে শান্তিতে থাকলে থাকেন, কোন আপত্তি নেই। খামোখা কেন আপনার ব্যক্তিগত বিশ্বাসকে যুক্তির কষ্টিপাথরে যাচাই করতে আসা? এতে ঈমান হারানোর সম্ভাবনা আছে বৈকি। আপনার মনে কখনও কি প্রশ্ন জাগে নি, আল্লাহকে এই তথাকথিত পরীক্ষা নিতে কে বলেছে। আর পরীক্ষার্থীদের না জানিয়ে তাদের অনুমতির পরোয়া না করে এ কোন “কেশের” পরীক্ষা ? আপনি মনুষ্যলোকের পরীক্ষার উদাহরণ টেনে বলেছেন,
তো কি হয়েছে তাতে? পরীক্ষার প্রশ্ন সহজ হলে সবার জন্য সহজ হয়, কঠিন হলে সবার জন্য কঠিন হয়। আর সর্বোপরি কে কখন কি পরীক্ষা দেবে কি না দেবে তা পরীক্ষার্থীর ইচ্ছা বা জ্ঞাতসারেই হয়, তাইনা ? আর পরীক্ষার ফল আশানুরূপ না হলে খাতা চ্যালেঞ্জ করা যায়, যায় না? আল্লার পরীক্ষা কি এইরকম ? না হলে কেন এই ফালতু তুলনা ? এরপর ততোধিক গদগদ হয়ে যুক্তি দিয়েছেন
এই কথা আপনি কোথায় পেলেন ভাই? আপনার মাথা টাথা ঠিক আছে তো? পঙ্গুদের সাথে সমমানের পঙ্গুদেরই প্রতিযোগিতা হয়। প্যারা-অলিম্পিক এর নাম শুনেছেন? তাছাড়া এ দিয়ে আপনি কি বোঝাতে চাচ্ছেন? পঙ্গু ব্যক্তি পঙ্গু বলে সে সুস্থ ব্যক্তির চেয়ে কিছুটা বেশি গোনাহ করলেও বেহেশতে যাবে? নাকি তার জন্য সুস্থ ব্যক্তির চেয়ে আরও বেশি ভালো বেহেশত অপেক্ষা করছে? আপনার সান্ত্বনা আবিষ্কার করার ক্ষমতা খারাপ না। এখানে ভাগ্যবান/ধনী কিন্তু খাসা ইমানদারদের কি হবে?
হাহাহা … তাহলে সব ধনীদের টাকা পয়সা আমাকে দিয়ে দিতে বলেন না ভাই।
এখানে রসি মজুমদার এর মন্তব্যটা আবার আপনাকে মনে করিয়ে দি।
সবশেষে বলি, আপনি যেমনটি আছেন তেমনই থাকবেন, হয়ত আমাদের চোখে আরও বেশি অন্ধ বা গোঁড়া হবেন। আপনার চোখে আমরাও হয়ত তাই। আমার এই সংক্ষিপ্ত মন্তব্যে তেমন কোন মুক্ত না থাকলেও আপনার বোধ-জগতকে বড়সড় উলু বন বলেই ভয় হয়। তবে একটা বিশ্বাসকে এভাবে আঁকড়ে থেকে শুধু শুধু যুক্তি তর্কে না আসাটাই ভালো। তাতে হয় হাসি ঠাট্টা, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের পাত্র হবেন না হয় কোনদিন ঈমানটাকেই খুইয়ে বসবেন। কি দরকার বলেন? আপনি আপনার বিশ্বাস নিয়েই সুখে থাকেন এই কামনা আর নিম্নোক্ত “দুটি কবিতার” অর্ধেকপ্রায় আপনাকে উপহার রইল।
কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক, কে বলে তা বহুদূর?
মানুষেরই মাঝে স্বর্গ নরক, মানুষেতে সুরাসুর।।
@সামুরাই নিনজা,
যাক, আমার রাত জেগে “লিখব কি লিখব না করে” শেষমেশ লিখে ফেলা মন্তব্যটায় যে আপনি যুক্তি খুঁজে পেয়েছেন, তার জন্য অনেক ধন্যবাদ । কিন্তু সত্যি কথা বলতে কি, আপনার প্রত্যুত্তরে আমি যুক্তির বদলে আবেগ, ভয় আর গতানুগতিক সান্তনাবাণী ছাড়া আর তেমন কিছু পেলাম না। হতে পারে আমার বোধশক্তির সীমাবদ্ধতা। তার পরেও বলি, আলোচ্য বিষয়ের লেবুগুলো ইতিমধ্যেই অনেক কপচানো হয়ে গেছে। এধরণের যুক্তি তর্ক মুক্তমনা-বাসীদের কাছে একেবারেই বাসি পচা অখাদ্য এখন। তাই আবার নতুন করে চর্বিত চর্বণ করতে কিছুটা লজ্জা বোধ করছি। যাহোক, এবার ভণিতা ছেড়ে যুক্তির কথায় আসা যাক। আপনি বলেছেন-
ভালো কথা। তার মানে আপনি স্বীকার করে নিচ্ছেন যে সৃষ্টিকর্তা বৈষম্য সৃষ্টিকারী ? এইটাও কি তাঁর গুণাবলির মধ্যে পড়ে? আর আপনি বার বার নিষ্ঠুরতম অমানবিক ঘটনা-গুলকে (যেমন: মাতৃগর্ভে অজাতকের পটল তোলা, নবজাতকের পঙ্গু, পাগল হয়ে জন্মানো, পরিবারের সামনে গণ-ধর্ষণের পর জবাই হওয়া ইত্যাদিকে) “বৈচিত্র্য”, “বৈষম্য” বলে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এতে করে ঈশ্বরের নিষ্ঠুরতা আপনার চোখে ধরা না পড়লেও এসবের জন্য কি তাকে করুণার পরাকাষ্ঠা বলে দাবি করতে পারবেন? “নিষ্ঠুর না” আর “পরম করুণাময়” কথা দুটো কিন্তু এক না।
একটা উদাহরণ দেয়ার চেষ্টা করি। মনে করেন আপনি অঢেল সম্পত্তির মালিক এবং তিন সন্তানের জনক। একদিন কাউকে না জানিয়ে ঠিক করলেন , আপনি আপনার সন্তানদের পরীক্ষা করবেন, আপনার প্রতি তাদের শ্রদ্ধা আর ভালবাসার গভীরতা কার কতটুকু। আরও ঠিক করলেন যার পরীক্ষা যত বেশি কঠিন হবে তাকে তত বেশি পুরস্কৃত করবেন। তাদের অজান্তে, অনিচ্ছায় শুরু হল পরীক্ষা । বড় কন্যাকে আপনার সামনে গণধর্ষনের ব্যবস্থা করলেন। তার যৌনাঙ্গগুলো কেটে ছিঁড়ে গৃহপালিত পশু দিয়ে তার সামনে খাইয়ে দিলেন। সে আপনার অঢেল সম্পত্তির উত্বরাধিকারত্ব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকলেও আপনার কি মনে হয় সে এই কর্মকাণ্ডে আপনার বন্দনায় গদগদ হয়ে সেজদা দিতে থাকবে? অপরদিকে আপনি আরেক ছেলেকে নাবালক অবস্থায় ভরণপোষণের কোন খরচ না দিয়ে তাকে রাস্তায় ভিক্ষা করতে পাঠালেন। আর ছোট ছেলেটা নাস্তিক বিধায় তাকে আগেই ত্যাজ্য করেছেন । আপনি কি সন্তানদের কাছে করুণাময় পিতা? কিংবা আদেও কি মানুষের বাচ্চা? পরিশেষে তাদের কাছে আপনার পরীক্ষার কারণ ব্যাখ্যা করে দুইজনকে পুরস্কার স্বরূপ যথাক্রমে ৩টা ও ১টা করে দ্বীপ লিখে দিলেই আপনি কি তাদের কাছে দয়ার সাগর হয়ে যাবেন? নাকি পিতা হিসাবে আপনার উচিৎ ছিল তাদের সঠিকভাবে ভরণপোষণ করে মানুষ হওয়ার সুযোগ করে দেয়া এবং তারা আপনাকে কী দিল না দিল, কে কত বড় হল না হল তার ঊর্ধ্বে উঠে আপনার বিষয় আশয় সবার মাঝে সমান ভাগে ভাগ করে দিয়ে আপনার শুভকামনা রেখে যাওয়া? আপনার কাছে করুণা, দয়ার সংজ্ঞা কী? আপনি কি উদাহরণের প্রথমে উল্লিখিত পিতাকে ২য় পিতার চেয়েও করুণাময় বলবেন ? যদি না বলেন তবে আপনি কি মনে মনে হলেও স্বীকার বা সন্দেহ করার ক্ষমতা রাখেন যে সৃষ্টিকর্তা নিষ্ঠুর না হলেও পরম করুণাময় কিছু না, নিদেন পক্ষে যতটা করুণাময় বলে ধর্ম গুলোতে দাবি করা হয় ততটা হয়ত না?
আপনি আমাদের ছোট্ট একটা কবিতা শুনিয়ে দিয়েছেন।
আমরা অতি প্রীত ও ততোধিক মুগ্ধ। দেখা যাক কবি এখানে কি বোঝাতে চেয়েছেন। অন্ধকার বলে: ভাই, তাই তুমি আলো। এর মানে হল অন্ধকার আছে বলেই মানুষের কাছে আলোর এত আপেক্ষিক গুরুত্ব বা চোখে পড়ার মতো প্রয়োজনীয়তা। তাতে করে অন্ধকার না থাকলে আলোর অস্তিত্বে কোন হুমকি নেই। অন্ধকার থাকতেই হবে এমন কোন কথাও নেই । সুর্য সহ তারারা কিন্তু পুরো আলোকিত । আপনি যদি এখন বলেন লোডশেডিং আছে বলেই বিদ্যুৎ আমাদের এত প্রিয়, কথাটা উন্নত বিশ্বে, যেখানে লোডশেডিং নেই সেখানে তো বটেই বাঙলার ভোড়ো গ্রাম কামারখালীতেও পাগলের প্রলাপের মতো শোনাবে।
যাহোক আপনি এভাবে ইনিয়ে বিনিয়ে অনেক ধনী-গরিব, পরীক্ষার পাশের বস্তাপচা কথা বলেছেন। এইসব সান্ত্বনা বানী শুনে আপনি বোকার স্বর্গে শান্তিতে থাকলে থাকেন, কোন আপত্তি নেই। খামোখা কেন আপনার ব্যক্তিগত বিশ্বাসকে যুক্তির কষ্টিপাথরে যাচাই করতে আসা? এতে ঈমান হারানোর সম্ভাবনা আছে বৈকি। আপনার মনে কখনও কি প্রশ্ন জাগে নি, আল্লাহকে এই তথাকথিত পরীক্ষা নিতে কে বলেছে। আর পরীক্ষার্থীদের না জানিয়ে তাদের অনুমতির পরোয়া না করে এ কোন “কেশের” পরীক্ষা ? আপনি মনুষ্যলোকের পরীক্ষার উদাহরণ টেনে বলেছেন,
তো কি হয়েছে তাতে? পরীক্ষার প্রশ্ন সহজ হলে সবার জন্য সহজ হয়, কঠিন হলে সবার জন্য কঠিন হয়। আর সর্বোপরি কে কখন কি পরীক্ষা দেবে কি না দেবে তা পরীক্ষার্থীর ইচ্ছা বা জ্ঞাতসারেই হয়, তাইনা ? আর পরীক্ষার ফল আশানুরূপ না হলে খাতা চ্যালেঞ্জ করা যায়, যায় না? আল্লার পরীক্ষা কি এইরকম ? না হলে কেন এই ফালতু তুলনা ? এরপর ততোধিক গদগদ হয়ে যুক্তি দিয়েছেন
এই কথা আপনি কোথায় পেলেন ভাই? আপনার মাথা টাথা ঠিক আছে তো? পঙ্গুদের সাথে সমমানের পঙ্গুদেরই প্রতিযোগিতা হয়। প্যারা-অলিম্পিক এর নাম শুনেছেন? তাছাড়া এ দিয়ে আপনি কি বোঝাতে চাচ্ছেন? পঙ্গু ব্যক্তি পঙ্গু বলে সে সুস্থ ব্যক্তির চেয়ে কিছুটা বেশি গোনাহ করলেও বেহেশতে যাবে? নাকি তার জন্য সুস্থ ব্যক্তির চেয়ে আরও বেশি ভালো বেহেশত অপেক্ষা করছে? আপনার সান্ত্বনা আবিষ্কার করার ক্ষমতা খারাপ না। এখানে ভাগ্যবান/ধনী কিন্তু খাসা ইমানদারদের কি হবে?
হাহাহা … তাহলে সব ধনীদের টাকা পয়সা আমাকে দিয়ে দিতে বলেন না ভাই।
এখানে রসি মজুমদার এর মন্তব্যটা আবার আপনাকে মনে করিয়ে দি।
সবশেষে বলি, আপনি যেমনটি আছেন তেমনই থাকবেন, হয়ত আমাদের চোখে আরও বেশি অন্ধ বা গোঁড়া হবেন। আপনার চোখে আমরাও হয়ত তাই। আমার এই সংক্ষিপ্ত মন্তব্যে তেমন কোন মুক্ত না থাকলেও আপনার বোধ-জগতকে বড়সড় উলু বন বলেই ভয় হয়। তবে একটা বিশ্বাসকে এভাবে আঁকড়ে থেকে শুধু শুধু যুক্তি তর্কে না আসাটাই ভালো। তাতে হয় হাসি ঠাট্টা, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের পাত্র হবেন না হয় কোনদিন ঈমানটাকেই খুইয়ে বসবেন। কি দরকার বলেন? আপনি আপনার বিশ্বাস নিয়েই সুখে থাকেন এই কামনা আর নিম্নোক্ত “দুটি কবিতার” অর্ধেকপ্রায় আপনাকে উপহার রইল।
কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক, কে বলে তা বহুদূর?
মানুষেরই মাঝে স্বর্গ নরক, মানুষেতে সুরাসুর।।
@কিশোর,
যাইহোক আপনার উদাহরণ প্রয়োগ করার জন্য ধন্যবাদ কারণ আমি সেটার উত্তর দেয়ার সুযোগ পেয়েছি। আর পুরাতন বিষয় নিয়ে আলোচনাতে আপনি যদি একঘেয়েমি অনুভব করেন তাহলে কোরআনের এমন কোন ত্রুটি বের করুন যাতে কোন যুক্তিই দেখানো না যায়। তাহলেই তো আর আস্তিক/নাস্তিক বিতর্কের প্রয়োজন পড়ে না। এবার যুক্তিতে আসি:
নবজাতকের মৃত্যু, পঙ্গু/পাগল হয়ে জন্মানো প্রসঙ্গে:
যারা শিশু/নবজাতক অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে তাদেরকে মৃত্যুর আগে/পরে পরীক্ষা করা হয় (আবু দাউদ ৭/৮৭)। যেহেতু মৃত্যুর স্বাদ সবাইকেই ভোগ করতে হবে সেহেতু এখানে সবাইকেই সমান চোখে দেখা হচ্ছে। একটা প্রবাদ আছে “দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বুঝে না”। যখন কোন ব্যক্তির জুতা নেই বলে সে আফসোস করে, কিন্তু যখন সে দেখে যে আরেকজনের পা নেই তখন তার জুতার আশা ধূলিস্যাৎ হয়ে গেল। সুতরাং পা-বিহীন লোক যদি না-ই দেখেন তবে নিজের পায়ের মূল্য বুঝবেন কীভাবে? তাইতো Shakespeare বলেছেন ” I always feel happy, You know why? Because I don’t expect anything from anyone! expectations always hurt” তাই জীবনে কিছুর আশা না করাই ভাল।
“পরিবারের সামনে গণধর্ষণের পর জবাই হওয়া” এই প্রসঙ্গে:
এটা নি:সন্দেহে সবচেয়ে জঘন্য অপরাধের একটি। কিন্তু এখানে স্রষ্টার দোষ খুঁজে পেলেন কোথায়? খুন করে মানুষ, ধর্ষণ করে মানুষ, অপরাধ করে মানুষ …..তাহলে এর মধ্যে স্রষ্টার অপরাধ কোথায়? মানুষকে স্বাধীন ইচ্ছা শক্তি দেয়া হয়েছে, মানুষ ইচ্ছা করলে অপরাধ করতেও পারে আবার নাও করতে পারে। ঈশ্বর মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করেন তার ইচ্ছা অনুযায়ী, সে যদি অসৎ থাকতে চায় তবে তাকে অসৎই বানানো হয়, আবার কেউ যদি সৎ থাকতে চায় তাকে সৎ-ই বানানো হয়। এবার আসি “মানুষ কি পারে সব অপরাধের বিচার করতে?”
হিটলার তার ভয়ঙ্কর ত্রাসের শাসনামলে ৬০ লক্ষ ইহুদিকে পুড়িয়ে মেরেছে। এখন পুলিশ যদি তাকে গ্রেফতার করতো তাহলে মানুষের আইন ন্যায়সঙ্গত ভাবে তাকে কি শাস্তি দিত? সর্বোচ্চ শাস্তি তারা তাকে যা দিতে পারত তাহলো সেই গ্যাস চেম্বারে খোদ হিটলারকে ঢুকিয়ে দিতে পারত। কিন্তু তাতে তো শুধুমাত্র একজন ইহুদী হত্যার প্রতিশোধ হতো! বাকি যে ৫৯ লক্ষ ৯৯হাজার ৯শ ৯৯জন ইহুদী -তাদের হত্যার প্রতিশোধ কিভাবে হবে?
শুধুমাত্র আল্লাহই পারেন হিটলারকে জাহান্নামে ফেলে ষাটলক্ষ বারের চাইতেও বেশি বার জ্বালাতে।
আপনি পিতা ও তার সন্তানদের যে নমুনা দেখিয়েছেন তার উত্তর না দিলেই নয়:
“পিতা তার সন্তানদের অজান্তে/অনিচ্ছায় পরীক্ষা নিলেন” এই প্রসঙ্গে:
আপনি যখন SSC/HSC পরীক্ষা দেন সেটা কি আপনার ইচ্ছায় হয়? নাকি অনিচ্ছায় হয়? মানুষ পরীক্ষা দেয় নিজের ভবিষ্যতের জন্য আর এই ক্ষেত্রে স্রষ্টার আদেশ-নিষেধ মান্য/অমান্য করলে স্রষ্টার কিছু যায় আসে না বরং আমাদের নিজেদের ভালোর জন্যই তাঁর আদেশ মানতে হবে।
কন্যাকে ধর্ষণের শিকার হতে বাধ্য করা প্রসঙ্গে:
স্রষ্টা কাউকে জোর করে ধর্ষিত হতে বাধ্য করে না বরং মানুষ স্রষ্টার আদেশ অমান্য করে এবং ধর্ষণ করে। ধর্ষণকারীর শাস্তি জাহান্নাম। দুনিয়াতে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড বলা আছে। কিন্তু কেউ যদি ১০০০ ধর্ষণ করে অতপর হত্যা করে তার শাস্তি কে দিবে? সেটা আমি উপরেই উল্লেখ্য করেছি।
নাবালক শিশুকে ভিক্ষা করতে পাঠানো প্রসঙ্গে:
আপনি চিন্তা করে দেখুন দারিদ্রতা ও দুর্ভিক্ষের কারণ কি? এর মূল কারণ হলো ধনীরা নিজেদের পেট ভর্তি করতে ব্যস্ত। পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের বার্ষিক আয় গরীব দেশের মোট মূলধনের সমান। সেজন্যই ইসলাম যাকাতকে ফরয করেছে এবং বিশ্বের ধনী লোকেরা যদি যাকাত দিতো তাহলে কি দুর্ভিক্ষে কেউ মারা যেত? যার সামর্থ্য নেই তাকে বিয়ে করতে অনুৎসাহিত করা হয়েছে এবং সামর্থ্য হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে। সমগ্রবিশ্বে যদি কোরআনের আইন চালু থাকতো, তাহলে কাউকে ভিক্ষাবৃত্তির আশ্রয় নিতে হতো না। আসলে মানবজাতি কোরআন পরিত্যাগ করে নিজেই নিজের ক্ষতিসাধন করেছে।
“আর ছোট ছেলেটা নাস্তিক বিধায় তাকে আগেই ত্যাজ্য করেছেন” এই প্রসঙ্গে:
আজীবন পিতার হোটেলে খেয়ে-পড়ে যদি শেষ পর্যন্ত পিতাকেই অস্বীকার করা হয় তাহলে কি পিতা সন্তানকে আদর করবে নাকি সব সম্পত্তি লিখে দিবে?
সুতরাং, আপনার উপরোক্ত পিতা-পুত্রের পরীক্ষা এবং স্রষ্টার পরীক্ষার মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। কারণ আপনার পরীক্ষায় পিতার দোষ/অন্যায় রয়েছে কিন্তু স্রষ্টা এখানে অবিচার করেনি তা আমি উপরেই প্রমাণ করেছি।
স্রষ্টা সম্পর্কে আপনার এসব প্রশ্ন উত্থাপিত হওয়া স্বাভাবিক কারণ আপনি ধর্মগ্রন্থ পড়েননি। আপনার প্রশ্নগুলোর উত্তর কোরআনেই আছে। তাই আমি আপনাকে কোরআন পড়ার অনুরোধ জানাচ্ছি তাহলে আমাকে আর কষ্ট করে প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে হবে না। স্রষ্টা সম্পর্কে জানতে হলে প্রচুর পড়াশোনা করতে হবে। আর তাই Francis Bacon বলেছেন:
“A little philosophy inclineth man’s mind to atheism; but depth in philosophy bringeth men’s minds about to religion.”
…………………শুভকামনা রইল। 🙂
@সামুরাই নিনজা,
হাহাহা, ভাইসাব, আপনার কীট-মস্তিষ্ক জাত “ফাটাফাটি” সব যুক্তি দেখে আমি ঠিক হাসব না কাঁদব তা নিয়ে এই মুহূর্তে উদ্বিগ্ন না। শুধু একটি কথাই মনে হচ্ছে। আপনার মতো লোকের সাথে তর্কে নামার ফলাফল কেমন হতে পারে তা অভিজ্ঞতা থেকে জানা থাকা স্বতঃতেও আপনাকে পাত্তা দেওয়াটা একদম ঠিক হয় নি। আর আপনি ভাই ভুল জায়গায় এসে পড়েছেন। এখানে আপনাদের মতো “ধর্মের আফিম” কেউ খায় না। সবাই অন্তত ব্যক্তিগত বিশ্বাস আর যুক্তির পার্থক্য বোঝে। আপনার কাছে কুরান কপচানোই সর্বোচ্চ যুক্তি।কিন্তু আমাদের কাছে এটা আর দশটা ধর্মগ্রন্থের মত মনগড়া ভুলে-ভরা তৎকালীন স্থানীয় বিশ্বাস-বহনকারী প্রাচীন একটা গ্রন্থ ছাড়া আর কিছু নয়। এটা কোনভাবেই মুক্ত মনের মানুষের কাছে যুক্তির কোন মানদণ্ড বা reference হতে পারে না। আপনার কথার পাল্টা যুক্তি হিসাবে আমি যদি গীতা, বাইবেল, ত্রিপিটক বা তানাখ থেকে “দাঁতভাঙ্গা জবাব” দিই তা কি আপনার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে? যদি না হয় কেন? যুক্তি হতে হয় সার্বজনীন, প্রমাণ-বিশ্লেষণ নির্ভর, নির্মোহ। আপনার সেই বোধশক্তি নেই এবং কোনদিন তা হবেও না। আপনি নিশ্চয়ই সাত-মাথা রাবণের গল্পকে হেসে উড়িয়ে দেবেন, কিন্তু আবার “ভুত নয়, জিন আছে”, কিংবা আল্লার আরশের নিচে সূর্য অস্ত যাওয়ার গপ্পকে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ ভেবে বুক চেতিয়ে দেন। যতদিন যুক্তি আর বিশ্বাসের পার্থক্য না বুঝে তক্ক করতে আসবেন ততদিন আমাদের কাছে আপনি তাচ্ছিল্যের পাত্র হয়েই থাকবেন।
তা নেন…এ নিয়ে এই সাইটে , অভিজিত রায়ের “বিজ্ঞানময় কিতাব”, “বিশ্বাসের ভাইরাস” সহ অনেক পোস্ট আছে ।ইচ্ছা হলে পড়ে নিয়েন। হাতের কাছে নিচের দুটো লিংক পেলাম। এই সাইট ঘাটলে আরও অনেক পাবেন।
১) http://blog.mukto-mona.com/?p=3353
২) http://www.mukto-mona.com/Articles/shikkhanobish/islam_biggan_pouranik.htm
কি ভাই, ঘটনাটা কী? কিসের মধ্যে কী? “মৃত্যুর আগে/পরে পরীক্ষা করা হয়” মানে কী? কী “কেশ” কেন পরীক্ষা করা হয়? বলা হচ্ছিল শিশু/নবজাতক অবস্থায় মৃত্যুবরণ কোনভাবেই আল্লার করুনাময়তার উদাহরণ হতে পারে না। সেই করুণার পয়েন্ট থেকে আপনি কৌশলে পিছলে গিয়ে কি বলতে চেয়েছেন তা কি আপনি নিজেই বুঝতে পারছেন? গোঁজামিলটাও ঠিকমত দিতে পারেন না?! মৃত্যুর আগে পরে কি করা হয় তা বুঝি আপনি দেখে এসেছেন? আপনি (আবু দাউদ ৭/৮৭) এর মাল খান এটা আপনার একান্ত বিশ্বাস, যুক্তি না। যুক্তি “বানান করতে” জানেন তো? আরেকটা কথা, আপনার মনে হওয়ার কোন কারণ নেই যে আপনার কাছে এইসব ফালতু বিষয়ের “উত্তর” চাওয়া হচ্ছে। আর আপনি আপনার অন্ধবিশ্বাস থেকে কীট-পতঙ্গের বিষ্ঠা মার্কা গাঁজাখুরি গল্প আমাদের শুনিয়ে দিলেই বিশাল যুক্তিবাদী বাহাদুর হয়ে যাবেন তা ভাবলে আপনি বড্ড ভুল করছেন।
আবারও সেই একই গু। নবজাতক জন্মের আগেই মারা গেল। এই নিষ্ঠুর ঘটনা দিয়ে “করুণাময়” তার কী পরীক্ষা করলেন? এর সাথে “দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বুঝে না” এর সম্পর্ক কি? নবজাতকের দাঁত গজানোর সময়ই তো পেল না।
হ্যাঁ, আপনার সমস্ত লেখায় কোথাও যদি যুক্তির কোন ‘য’ থেকে থাকে তাহলো এই জায়গাতে। আপনি এই প্রশ্ন টানবেন জানা ছিল। কিন্তু আপনারাই তো বলেন, আল্লার হুকুম ছাড়া গাছের একটা পাতাও নড়ে না। কি বলেন না? আবার বলেন মানুষ তার ইচ্ছামতো যা খুশি করতে পারে। এই দুই কথার স্ববিরোধিতা আর অসারতা ধরার মতো যোগ্যতা বা সাহস হয়ত আপনার নেই।
তো কার ইচ্ছায় হয় ভাই? আপনি ইচ্ছা করলে পরীক্ষা দিতেও পারেন নাও পারেন। পরের বছরেও দিতে পারেন। আবার পৃথিবীর ১০০% লোক সবাই কি SSC/HSC পরীক্ষা বা আদেও কোন পরীক্ষা দেয়? আর কেউ না জেনে না শুনে কোন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে বলে শুনেছেন নাকি? আল্লার পরীক্ষার কথা আপনি জানেন কবে থেকে? নাহ ….এ নিয়ে কথা বলতে আর রুচি হচ্ছে না। মাফ করবেন। আপনার সাথে এই আমার শেষ কথা। এরপর আপনি আরেক শেষকথা বলার সান্ত্বনা স্বরূপ যা ইচ্ছা লিখুন, আমি আর সময় নষ্ট করতে রাজী না। বিদায়।
@কিশোর,
হা হা হা…………….আপনার ধৈর্য্যের এখানেই পতন ঘটবে আগে জানতাম না। সবাইকেই যখন মরতে হবে তখন আগে মরলেই কি আর পরে মরলেই কি? এখানে স্রষ্টার করুণাময় ইমেজ নষ্ট হওয়ার কি আছে? যিনি বিশ্বজাহানের সৃষ্টিকর্তা, যিনি আপনাকে মৃত্যুর পর অসীম জীবনের নিশ্চয়তা দিচ্ছেন, আপনাকে এতো সুন্দর অবয়বে সৃষ্টি করেছেন লালন-পালন করেছেন এবং সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ বলে ঘোষনা দিয়েছেন তিনি করুণাময় হবেন না তো কে হবে?
“আল্লাহর হুকুম ছাড়া গাছের পাতা নড়ে না” এখানে প্রকৃতির নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হচ্ছে। মানুষকে দিয়ে জোড় করে কাজ করানোর কথা বলা হয়নি। তাছাড়া তাঁর ক্ষমতার বিশালতার কথাও এখানে বুঝানো হচ্ছে, তিনি যদি চান মানব জাতিকে ধ্বংস করে দিতে পারেন, কিন্তু তিনি তা করছেন না-এটাই বুঝানো হয়েছে।
আর আপনি এস.এস.সি পরীক্ষা ইচ্ছা করলে দিতেও পারেন আবার নাও দিতে পারেন। কিন্তু না দিলে যে আপনার ক্ষতি হবে সেটা আপনি ভালো করেই জানেন। স্রষ্টার পরীক্ষা না দিলেও ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই থাকবে না কপালে।
শ্রদ্ধেয় অভিজিৎ রায়ের বইগুলোর কিছু অংশ আমি পড়েছি। সবগুলোই পড়বো ইনশাল্লাহ। ইচ্ছা করলেই এগুলোর বিপক্ষে যুক্তি দেখিয়ে বই প্রকাশ করা যায়……………কিন্তু তাতে লাভ নেই,কারণ অভিজিৎ রায় তখন আবার আরেকটি বই বের করবেন সেগুলোর যুক্তি খন্ডন করার জন্য………..তারপর আমি আবার…………..এভাবে চলতেই থাকবে পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত।
মানবজাতির সমস্যাগুলো যেমন: ইভটিজিং, ধর্ষণ, ডাকাতি, চুরি, দুর্ভিক্ষ ইত্যাদি সমস্যাগুলোর উপর কোরআনের আইন প্রয়োগ করলে সেগুলো কি বৃদ্ধি পায়? একই অবস্থানে থাকে? নাকি কমে যায়? সেটা আমি পরিসংখ্যান দেখিয়ে আগেই প্রমাণ করেছি। মানলে মানেন, না মানলে না মানেন সেটা আপনার ইচ্ছা।
ভাই মৃত্যুর পরে কি হবে না হবে সেটা আপনিও দেখেননি আমিও দেখেনি। কিন্তু এই ব্যাপারে মানবজাতির প্রতি বহু সতর্কবাণী পাঠানো হয়েছে; আল-কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন:
# ” সে দিন (শেষ বিচারের দিন) কিছু সংখ্যক চেহারা শুভ্র সমুজ্জ্বল হয়ে যাবে (নিজেদের পাপ/পূণ্য দেখে) আবার কিছু সংখ্যক মানুষের চেহারা (ব্যর্থতার নথিপত্র দেখার পর) কালো (ও বিশ্রী) হয়ে পড়বে, (হাঁ) যাদের মুখ (সেদিন) কালো হয়ে যাবে (জাহান্নামের প্রহরীরা তাদের জিজ্ঞেস করবে), ঈমানের (নেয়ামত পাওয়ার) পরও কি তোমরা কুফরীর পথ অবলম্বন করেছিলে? অতপর তোমরা নিজেদের কুফরীর প্রতিফল (হিসেবে) এ আযাব উপভোগ করতে থাকো! ” (সূরা আল ইমরান : ১০৬)
বিশ্বাস-অবিশ্বাস আপনার ইচ্ছা। আমার দায়িত্ব জানানো তাই জানিয়ে দিলাম।
……………আল্লাহ হাফেজ
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং সাম্প্রদায়িক চেতনার দ্বন্দ্ব সবসময় থাকবে।কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এই দুই চেতনা একই সাথে চলতে পারে না। সাম্প্রদায়িক চেতনার আগ্রাসনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়িত হতে পারে না। আর্থ সামাজিক কারনে আমাদের দেশে একটি হতাশ প্রজন্ম সৃষ্টি হচ্ছে।হতাশার কারনে তারা সাম্প্রদায়িকভাবে আগ্রাসী হয়ে যাচ্ছে।ফলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তাদের মধ্যে উদ্দীপনা সৃষ্টি করে না।
@রসি মজুমদার,
সারা দুনিয়াতে ইসলামী জেহাদী, মৌলবাদীর কারণ ঠিক এভাবেই চিহ্নত করা হয়। কারণ ভাসুরের নাম মুখে নেয়া বারন!
@সুষুপ্ত পাঠক,
ভাসুরের নাম মুখে নিলে সমাজ মন্দ বলে। এটা আরোপিত প্রথা। প্রথা কারা মানে?যাদের না মানা ছাড়া কোন উপায় নেই। যারা ভিন্ন কোন প্রথার কথা ভাবতে পারে না। কারন শাসকগোষ্ঠীর জন্য সেটা সমস্যা সৃষ্টি করে।মৌলবাদী চেতনার সাথে সামন্তবাদি এবং পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থার সম্পর্ক রয়েছে।ধর্মপ্রচারকরা মৃত। কিন্তু তাদের অনুসারীরা গুরুর abstract ধারনা ধারন করছে।এই abstract ধারনাকে ভাঙতে হলে সমাজকে ভাঙতে হবে।সমাজকে ভাঙতে হলে অর্থনৈতিক কাঠামোর আমূল পরিবর্তন করতে হবে।
@রসি মজুমদার,
Crime statistics :
Saudi Arabia VS USA
http://www.nationmaster.com/country-info/compare/Saudi-Arabia/United-States/Crime
http://www.numbeo.com/crime/compare_countries_result.jsp?country1=Saudi+Arabia&country2=United+States
@সামুরাই নিনজা,
প্রথমে বুঝতে হবে আপনার কাছে অপরাধের সংজ্ঞা কি?আরবে জোরপূর্বক বিয়ে করে সহবাসে বাধ্য করা হলে সেটাকে ধর্ষণ বলে না।বিয়ের নামে এবং ধর্মের নামে আরব শেখরা যা করে সেটা শিশুকামিতা।যদিও আরবে সেটা সুন্নত পালন হিসেবে ধরা হয়।বিচার বহির্ভূতভাবে গলা কর্তন করা সে দেশের আইন।নারীদেরকে সকল অধিকার থেকে বঞ্ছিত করা সে দেশে অপরাধ নয়।সাম্রাজ্যবাদীদের দালালী করতেও আরব নেতারা পিছপা হন না।
@রসি মজুমদার,
আপনার জ্ঞানগর্ভ বক্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
এবার আমার কিছু যুক্তি পর্যালোচনা করা যাক:
অপরাধের সহজ সংজ্ঞা: “কোন কাজ করা বা কোন কাজ করা থেকে বিরত থাকা যা রাষ্ট্র কর্তৃক প্রণীত ও বলবৎকৃত বিধি-নিষেধের পরিপন্থী এবং দন্ডনীয়, তাই হল অপরাধ।” এখন USA এর আইন এবং সৌদি আরবের আইন এক নয়। এর মধ্যে কোন আইন শ্রেষ্ঠ তা আমাদের যাচাই করে নিতে হবে………….
“আরবে জোরপূর্বক বিয়ে করে সহবাসে বাধ্য করা হলে সেটাকে ধর্ষণ বলে না” এ প্রসঙ্গে:
#সৌদি আরবে বর্তমান শিক্ষার হার ৮৭%। আরবের অধিকাংশ নারীই শিক্ষিতা। মোহাম্মদ (সা:) বলেছেন ” কুমারী মেয়েদের সম্মতি ব্যতিত তাদের বিবাহ দিও না” (বুখারী: ৪৭৬৪)। সৌদি আরব যেহেতু ইসলামী আইন মেনে চলে সেহেতু নারী/পুরুষ উভয়ের সম্মতিক্রমেই বিবাহ সম্পন্ন হয়। এখানে জোরজবরদস্তির কোন প্রশ্নই আসে না, এবং অন্যান্য আইনের মতো ইসলামী আইনে নারী উপযুক্ত কারণ সহকারে তার Husband কে তালাক দেওয়ার অধিকার রাখে। ইসলাম নারীকে যে অধিকার দেয় তা অন্য কোন ধর্মে তো দেয়-ই না এমনকি পশ্চিমা বিশ্বেও দেয় না। ইসলামে নারীর অধিকার সম্পর্কে জানতে হলে পবিত্র কোরআন এর বাংলা অনুবাদ পড়ুন।
শিশুকামিতা প্রসঙ্গ:
বিজ্ঞান বলে, মেয়েদের যখনই ঋতুস্রাব শুরু হয় তখনই তারা প্রজননক্ষম হয় এবং এইটাই প্রজননের ক্ষেত্রে উত্তম সময়। বিশেষ করে যখন বাবার তুলনায় মায়ের বয়স বেশ কয়েক বছর কম হয় তখন সন্তান ও মায়ের মৃত্যুর সম্ভাবনা কম থাকে। এবং কমবয়সী নারী অপেক্ষাকৃত স্বাস্থ্যবান সন্তান প্রসব করে, কিন্তু বেশী বয়স্ক নারীর ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম।
(সূত্র: http://www.scientificamerican.com/article/what-is-the-best-age-difference-for-husband-and-wife/)
আর নাবালক শিশুদের বিবাহ বাংলাদেশের মতো কুসংস্কার এবং স্বল্প শিক্ষিত দেশেই সম্ভব। সৌদি আরবের মতো শিক্ষিত দেশে সম্ভব নয়। কারণ সৌদি আরব কুসংস্কারমুক্ত এবং সঠিক কোরআনের আলোয় আলোকিত।
“বিচার বহির্ভূতভাবে গলা কর্তন করা সে দেশের আইন” এ প্রসঙ্গে:
বিচার বহির্ভূতভাবে গলা কর্তন নয় বরং তা বিচারেরই অন্তর্ভুক্ত। চুরি করলে হাত কাটা, ধর্ষণ করলে জনসম্মুখে মৃত্যুদন্ড দেয়া আপনার কাছে বর্বর আচরণ মনে হতেই পারে। আমেরিকার এক জরিপে দেখা গেছে, যখন কাউকে জিজ্ঞাসা করা হয় “যদি আপনার মা-বোনকে ধর্ষণ করা হয় তাহলে আপনি আসামীর কি শাস্তি আশা করেন? অধিকাংশ নাগরিক মৃত্যুদন্ডের পক্ষেই ছিল। তবে কেন এই দ্বিমুখী নীতি? নিজের বেলায় মৃত্যুদন্ড আর পরের বেলায় শৈথল্য প্রদর্শন। আরেক জরিপে দেখা যায় ধর্ষণের আসামী যখন ছাড়া পায় তাদের অধিকাংশ-ই আবার ধর্ষণ করে। একজন সুস্থ মষ্তিষ্কের মানুষের বুঝার কথা, যেখানে জনসম্মুখে কাউকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়, এবং সব লোকজন সেটা দেখে তাদের মধ্যে ভয়-ভীতির সঞ্চার হয় আর তারা ধর্ষণ করার কথা ভুলেও চিন্তা করে না। এটা Psychology-র ব্যাপার। আপনি হয়তো মনে করবেন, গণহারে এভাবে মৃত্যুদন্ড দিলে Public শান্তিতে থাকবে কীভাবে? কিন্তু যে এলাকায় এ আইন পুরোপুরি বাস্তবায়িত হবে সে এলাকায় অপরাধের তো কোন অস্তিত্বই থাকবে না, আর অপরাধ না থাকলে কাউকে শাস্তি দেওয়ারও প্রয়োজন পড়বে না। তবে হাতে গোনা ২-১ টা কুলাঙ্গার থাকতেই পারে। তারা হয়তো মৃত্যুদন্ডের শিকার হতে পারে, কিন্তু দেশের বাকি নাগরিকরা নি:সন্দেহে শান্তিতে থাকবে। আর এ জন্যেই আমি আপনাকে Crime Statistics দেখিয়েছিলাম যেন আপনি দুটি জাতি এবং তাদের আইনের পার্থক্য বুঝতে পারেন।
“নারীদের সকল অধিকার থেকে বঞ্চিত করা সে দেশে অপরাধ নয়” এ প্রসঙ্গে কিছু কথা:
আমার মনে হয় আপনি নারীদের হিজাব এবং কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার ব্যাপারে বলছেন। সৌদি আরবে ৪ ভাগের ৩ ভাগ নারীই শিক্ষিত। একসময় তা স্বাভাবিকভাবেই শতভাগের কোঠায় পৌঁছবে ইনশাল্লাহ। সুতরাং তাদের শিক্ষাক্ষেত্রে বঞ্চিত করা হয়নি। আপনি নিশ্চয় জানেন আমেরিকা ধর্ষণের দিক দিয়ে সবার শীর্ষে। এমনকি কোন দেশই এর ধারের কাছেও নেই। আপনি জানেন কি? বিল ক্লিনটন তার আমলে USA মেলেটারীতে women সেকশন চালু করেছিলেন, এবং সেখানকার নারী সৈনিকরা ধর্ষিত হয়েছিল তাদের সুপিরিয়রের কাছে। যখন তারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করবে তখন কী হবে? পরে অবশ্য বিল ক্লিনটন এর জন্য ক্ষমা চেয়েছিলেন। ২০১২ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী U.S military -তে ২৬০০০ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। অর্থাত, প্রতি মাসে গড়ে ২১৬৬ টি ধর্ষণ! আমার এই লেখা লেখতে গিয়ে কতোজন ধর্ষণের শিকার হয়েছে কে জানে?
http://www.motherjones.com/politics/2014/09/sexual-violence-american-military-photos
এখানে আমার কথা হচ্ছে আমেরিকান নারীরা কি সমান অধিকার পায় না? তারা কি পুরুষের কাঁধে-কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে না? আমার মতে United States of America-র নারীরা যথেষ্ট আধুনিকা। আমার খুবই আশ্চর্য লাগে যখন Atheist -রা নারীদের সমান অধীকারের কথা বলে অথচ তাদের Safety-র কথা চিন্তা করে না। নারীরা কি ঘরের বাইরে আসলেই নিরাপদ? কোথায় তাদের যুক্তি? কোথায় তাদের বিজ্ঞান? কর্মক্ষেত্রে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হওয়া ভালো? নাকি ঘরে বসে নিরাপদ গৃহিণী হিসেবে সন্তান লালন-পালন করা better? প্রতি বছর ইভটিজিং ও ধর্ষণ জনিত কারণে শত শত নারী Suicide করছে।
http://en.wikipedia.org/wiki/Rape_statistics#United_States
এ ব্যাপারে ইসলাম কী বলে?
# “(হে নবী,) তুমি মোমেন পুরুষদের বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে (নিম্নগামী ও) সংযত করে রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানসমূহকে হেফাযত করে; এটাই (হচ্ছে) তাদের জন্যে উত্তম পন্থা; (কেননা) তারা (নিজেদের চোখ ও লজ্জাস্থান দিয়ে) যা করে, আল্লাহ তায়ালা সে সম্পর্কে পূর্ণাংগভাবে অবহিত রয়েছেন।” (সূরা আন-নূর : ৩০)
#”আর তোমরা (নারীরা) পূর্বেকার জাহেলিয়াতের যুগের (নারীদের) মতো নিজেদের সৌন্দর্য্য প্রদর্শনী করে বেড়াবে না” (সূরা আল-আহযাব :৩৩)
বাইবেলেও হিজাব/পর্দা সম্পর্কে বলা আছে-
“If a woman does not cover her head, she should have her hair cut off; and if it is a disgrace for a woman to have her hair cut or shaved off, she should cover her head”
(The bible 1 Corrinthians 11:3-6)
ইসলাম কি নারীদের কর্মক্ষেত্রে নিষেধ করে? মোটেই না। বরং শালীনতা বজায় রেখে কর্মক্ষেত্রে গমন করতে পারে যেখানে শুধু নারীরাই কাজ করে। কিন্তু বরই আফসোস যে নারী-পুরুষের আলাদা কর্মক্ষেত্র তৈরি করতে আমরা রাজি নই। নারীদের ভরণ-পোষণ এর দায়িত্ব মূলত পুরুষকে দেয়া হয়েছে। বর্তমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে ঘরে বসেও নারীদের ভালো অর্থ উপার্জন করা সম্ভব।
তাই বলা যায়, ইসলামই নারীকে উপযুক্ত অধিকার, সম্মান, মর্যাদা ও নিরাপত্তা দান করেছে।
@সামুরাই নিনজা,
মানুষ এবং প্রকৃতির দ্বান্দিক প্রতিক্রিয়া থেকে ধর্মীয় মতবাদের আবির্ভাব হয়। অর্থনৈতিক ভিত্তির উপর নির্ভর করে সমাজ কাঠামো গড়ে উঠে।ধর্ম হচ্ছে গড়ে উঠা আর্থ সামাজিক কাঠামোর একটি উপরিকাঠামো।প্রাচীনকালে রাজতন্ত্রের প্রাথমিক পর্যায়ে প্রজাদেরকে বশে রাখার জন্য অলৌকিক দেবতার ধারনা সৃষ্টি করতে হয়েছিল।প্রজাদেরকে বলা হয়েছিল রাজাদের সাথে দেবতার পবিত্র সম্পর্কের কথা।কিন্তু মানুষকে সব সময় অন্ধকারে রাখা যায় না। তাই এক সময় সাধারন মানুষ বিজ্ঞানের অগ্রসরের ফলে এসব ধ্যান ধারনা থেকে বেরিয়ে আসে। সামাজিক বিবর্তনের ফলে রাজতন্ত্রের পতন হয়।
শাসকগোষ্ঠী সব সময় তাদের বিধান আমজনতার উপর চাপিয়ে দেওয়ার জন্য এক এক যুগে সে যুগের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ধর্মীয় মতবাদকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যাবহার করেছে।অপরদিকে অন্ধকারে থাকা মানুষ আধ্যাত্মিক ধ্যান ধারণাকেই খড়কুটোর মত আঁকড়ে ধরেছিল। ব্রুন এবং গ্যালিলীয়র পরিনতির কথা আমরা সবাই জানি। চার্চ যে কোন মুল্যে তাদের দমন করতে চেয়েছিল। কারন তাদের ভয় ছিল মানুষ সত্য জানতে পারলে অবিশ্বাসী হয়ে যাবে।সব ধর্ম প্রচারকদের মধ্যেই সর্বদা এই ভয় কাজ করে।কারন তারা জানে মানুষ যদি নিরপেক্ষ ভাবে অনুসন্ধান করে তবে তাদের তৈরি তাসের ঘর যে কোন সময় ভেঙে পরতে পারে।
সকল ধর্মই পরম সত্যের কথা বলে থাকে। বিভিন্ন ধর্মের বর্ণিত পরম সত্য বিভিন্ন রকম।কিন্তু আপনি ইসলাম ধর্মে বর্ণিত পরম সত্যে বিশ্বাস করেন।কারন আপনার জন্ম একটি মুসলিম পরিবারে।শৈশব থেকে মতবাদিক বিশ্বাস আপনাকে সম্মোহিত করে ফেলেছে। তাই মুক্তিবেগের কথা জানলেও আপনাকে বিশ্বাস করতে হয় দেড় হাজার বছর পূর্বে কেউ একজন এই বেগ ভেঙ্গে ফেলেছিল।অন্য ধর্মেও একই কাহিনী রয়েছে।কিন্তু সেগুলোকে আপনি ভণ্ডামি বলবেন।অন্য ধর্মের পরম সত্যকে আপনি গ্রহন করবেন না।কিন্তু নতুন বোতলে ঢুকানো পুরানো মতবাদে আপনি বিশ্বাসী। কারন সত্যকে জানার জন্য আপনি অনুসন্ধান করেননি বরং আপনার উপর চাপিয়ে দেওয়া বিশ্বাসকে আঁকড়ে ধরেছেন।
সব ধর্মীয় মতবাদের মতই ইসলাম ধর্মও একটি পুরুষতান্ত্রিক মতবাদ।নারী কোন জন্তু নয় যে তার উপর বিধান চাপিয়ে দিতে হবে।হিন্দু ধর্মে নারীকে গাভীর সাথে তুলনা করা হয়েছে।ইসলাম ধর্মে নারীকে প্রহার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এগুলো ধর্মের আবরনে সামন্তবাদি ভাবনার বহিঃপ্রকাশ। কারন কোন ধর্ম প্রচারকই নিজের যুগের ধ্যান ধারনাকে অতিক্রম করতে পারেনি।
আপনি শিক্ষার কথা বলেছেন।সৌদি আরবে বিজ্ঞান শিক্ষা অবহেলিত। শিক্ষার মুল উদ্দেশ্য সত্যকে যানা। বিজ্ঞানী এবং দার্শনিকরা যুগ যুগ ধরে সে সাধনা করে আসছে।ফলে সামাজিক বিবর্তন হচ্ছে।কিন্তু আরব শাসকরা ঠিক একই কাজ করছে যা রাজতন্ত্রের শাসকগোষ্ঠী পূর্বে করেছিল।ধর্মীয় শিক্ষার ফাঁদে ফেলে মানুষকে শাসন করার এই কৌশল নতুন নয়।কিন্তু ইতিহাস পড়লেই আপনি বুঝতে পারবেন যে মানুষকে সব সময় অন্ধকারে রাখা যায় না।
আপনি পশ্চিমা বিশ্বের সমস্যার কথা বলেছেন।সে সমস্যা সামাজিক এবং রাজনৈতিক।পশ্চিমা বিশ্বের ধ্যান ধারনা আমার যাচাই বাছাইয়ের মানদণ্ড নয়।আমার যাচাই বাছাইয়ের মানদণ্ড হচ্ছে বিজ্ঞানের আলোকে যৌক্তিক বিশ্লেষণ।
আপনার ধর্ম আপনি পালন করতে পারেন।কিন্তু কাউকে সে ধর্ম পালনে বাধ্য করাটা অপরাধ।আবার আমি যদি আপনাকে ধর্ম পালন করতে না দেই তবে সেটা আমার অপরাধ হবে।তাই কাউকে হিজাব পড়তে বাধ্য করা কিংবা হিজাব খুলতে বাধ্য করা দুটোই মানবধিকারলঙ্ঘন। আমি পরম সত্যে বিশ্বাস করিনা।তাই বৈচিত্র্যকে সুন্দর মনে হয়।
ভালো থাকবেন।
@রসি মজুমদার,
আপনার অধিকাংশ ব্যাপারেই আমি একমত। কিন্তু কিছু ব্যাপারে দ্বিমত না হয়ে পারছি না। সেটা হচ্ছে ইসলাম ‘পুরুষতান্ত্রিক’ ধর্ম।
আমি আস্তিক আর আপনি নাস্তিক হলেও আমাদের উভয়ের উদ্দেশ্য এক, তা হলো মানবতার কল্যাণ সাধন। কোরআনে যদি মানবতার বিরুদ্ধে কোন কথা থাকে তবে আমি কোরআন পরিত্যাগ করতে প্রস্তুত আছি।
* এবার যুক্তির কথায় আসি:
“ইসলাম পুরুষকে নারীদের প্রহার করার নির্দেশ দেয়” এই প্রসঙ্গে:
আপনি নিশ্চয় আমার সাথে একমত হবেন যে, নারী ও পুরুষের শারীরিক ও মানসিক বৈশিষ্ট্য আলাদা। আর নারীদের এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আপনি সমগ্র মানব জাতির পরিসংখ্যান দেখলেই বুঝবেন যে, নারীরাই শুধু ধর্ষণের শিকার হয় তাদের এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যের জন্য। পুরুষরা ধর্ষণের শিকার হয় না (হলেও তা খুবই Rare)।
সূত্র: http://en.wikipedia.org/wiki/Rape_by_gender
তাই তাদের এই বিজ্ঞানসম্মত পার্থক্য থাকার কারণে তাদের আইনের পার্থক্য রাখা হয়েছে। কিন্তু তাদের মধ্যে বৈষম্য রাখা হয়নি। ইসলামে পুরুষদের নারীদের সামান্য প্রহারের কথা আছে এবং তা সেই ক্ষেত্রে যেখানে নারীরা অন্যায় করে। কিন্তু স্বামী যদি স্ত্রীর উপর অত্যাচার শুরু করে দেয় স্ত্রীর অধিকার আছে স্বামীকে Divorce দেয়ার তা আমার আগের Comment এ উল্লেখ করেছি (সূরা বাকারা :২২৯)। নিচের লেখাগুলো পড়লেই বুঝতে পারবেন:
# তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম (তিরমিযী : ৩, ১১০০)
# তোমরা স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার কর (ইবনু মাজাহ : ১৮৫১)
# মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত (ইবনে মাজাহ,সুনান : ২৭৭১)
এখানে “বাবার পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত” বলা হয়নি। তবে কি পুরুষদের অধিকার কম বলা হয়েছে? নিশ্চয়ই নয়। বরং কিছু ক্ষেত্রে পুরুষদের অধিকার বেশি দেওয়া হয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে নারীদের অধিকার বেশী দেওয়া হয়েছে এবং সব মিলিয়ে তাদের অধিকার সমান রাখা হয়েছে। আশা করি বিজ্ঞানসম্মতভাবে ইসলামে নারীর অধিকার প্রমাণ করতে পেরেছি।
ইতিহাস পড়লেই বুঝতে পারবেন যে, অতীতে নারীকে শুধুই ভোগবিলাসের সামগ্রী হিসেবে ব্যবহার করা হতো। এমনকি তাদের জীবন্ত কবর দেয়া হতো। বর্বর যুগের বিলুপ্তি সাধনের জন্যই ইসলামী বিধান প্রবর্তিত হয়েছিল। আর আমি বিশ্বাস করি যিশুর ঈশ্বর, মূসার ঈশ্বর এবং মুহাম্মদের ঈশ্বর আলাদা আলাদা কোন ঈশ্বর নয়। তাদের ঈশ্বর একই। মানুষই তাদের ধর্মগ্রন্থের বিকৃতিসাধন করে নিজের ক্ষতি সাধন করেছে। তবে কোরআন সবচেয়ে Latest ধর্মগ্রন্থ তাই এর বিকৃতি করা এখনো সম্ভব হয়নি। এর মূলগ্রন্থ এখনো সংরক্ষিত আছে।
আপনি বৈজ্ঞানিক যুক্তিতে বিশ্বাসী অথচ বিজ্ঞান স্রষ্টার অস্তিত্বকে অস্বীকার করে না। আমি কাউকে ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য করি না। আপনি পরম সত্যকে বিশ্বাস করেন না, তাই সব বৈচিত্র্যকে সুন্দর মনে হয়। কিন্তু আপনি যদি পবিত্র কোরআনের অনুবাদ A to Z পড়েন তার থেকেও বেশি বৈচিত্র্য খুঁজে পাবেন।
কোরআনে কোন কোন বিষয় আপনার নিকট অবৈজ্ঞানিক/অযৌক্তিক/অমানবিক বলে মনে হয় তা দয়া করে আমাকে জানাবেন। আমি বিজ্ঞানসম্মতভাবে তার যথাযথ উত্তর দেয়ার চেষ্টা করব।
…………………ভালো থাকবেন।