লিখেছেন : বিপ্লব কর্মকার
সেনাবাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার অনেক খারাপ কাজের মধ্যে কিছু ভালো কাজও করেছে- যা আমাদের বুঝতে কিছুটা সময় লাগবে। তাদের অন্যতম ভালো একটা কাজ হল- তথ্য কমিশন গঠন করা। পরবর্তী গনতান্ত্রিক সরকার সংসদে আইন পাশ করে এই কমিশনকে স্থায়ী রুপ দেয়।
যে আইনের মুল বিষয় হল- জনগনই হল দেশের মালিক, তারাই সরকারী কাজের মুল অডিটর।তথ্য অধিকার আইনের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে-
প্রতিষ্ঠার প্রথমদিকে জনগনের মাঝে এই কমিশন বেশ সাড়া জাগিয়েছিল। কিন্তু আজ যে কোন কারনেই হোক অর্ধযুগ পার করা এই প্রতিষ্টান তার পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে যথারীতি অন্য আর দশটা অনিয়মে ভরপুর প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়েছে। অবশ্য সেটাতথ্য অধিকার আইন বা প্রতিষ্ঠানের সমস্যা নয়,এর পেছনের মানুষের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা এর মুল কারন ।
আপনারা সবাই জানেন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস একটি অপরাধ। এই অপরাধ সম্পর্কে আমরা সবাই জানি, এর ভয়াবহতা নিয়েও আমরা সচেতন। এটি নিয়ে আমরা সোচ্চার কারন পরীক্ষার আগেই আমাদের হাতে প্রশ্নপত্র এসে যায়, প্রমান একেবারে হাতেনাতে । পরীক্ষা সংক্রান্ত অন্য আরেকটি অপরাধ নিয়ে আমরা অতটা উচ্চবাচ্য করি না, কারন তার প্রমান আমাদের হাতে আসে না- তা হল মেধাতালিকা। নিয়োগ পরীক্ষায় এই মেধাতালিকায় জালিয়াতির কারনে অনেক অযোগ্য প্রার্থীর ভাগ্য খুলে যায় আর যোগ্য প্রার্থীর ভাগ্য বেঈমানী করে। সবাই মুখ বুঝে সহ্য করে কারন তাদের হাতে প্রমান নেই। খাদ্য অধিদপ্তরের নিয়োগ কেলেংকারি, রেলওয়ের নিয়োগের দুর্নীতি সব একই সুত্রে গাঁথা।
২০১২ সালের ২ ডিসেম্বর এমনই একটি রহস্য উদঘাটনে অভিযানে নামি- বাংলাদেশের সকল দুর্নীতির শেকড়, যে বিষবৃক্ষটি আজ আমাদের সামনে মহীরুহ হয়ে দাঁড়িয়েছে সেই বাংলাদেশ সরকারী কর্মকমিশন (পিএসসি) আয়োজিত প্রথম শ্রেনীর বিসিএস কর্মকর্তা নিয়োগের অসচ্ছতার বিরুদ্ধে।
এদিন আমি বিসিএস পরিক্ষার সুনির্দিষ্ট ৩ টি তথ্য চেয়ে আবেদন করি।
তারা আমাকে এই জবাব দেয় –
তথ্য না পেয়ে অভিযোগ করি তথ্য কমিশনে।সেখান থেকে আমাকে জানানো হয় আমার অভিযোগ গ্রহন করা হয়নি। কারন, আমি যথাযথ কত্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করিনি। আমাকে পিএসসির তথ্য কর্মকর্তা আর আপীল কর্মকর্তার কাছে আবার আবেদন করতে বলা হয়।
পিএসসিতে ফোন দিয়ে জানলাম এই ধরনের কোন পদ তাদের প্রতিষ্ঠানে নেই। অথচ তথ্য অধিকার আইনে বলা হয়ছে এই আইন পাশ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে তথ্য কর্মকর্তা আর আপীল কর্মকর্তা নিয়োগ করা বাধ্যতামুলক।
পিএসসি তা পালন করেনি। অবশেষে আমি তথ্য কমিশনের কাছেই জানতে চাইলাম পিএসসির তথ্য কর্মকর্তা ও আপীল কর্মকর্তা কে?
তারা আমাকে মেইল দিয়ে তাদের নাম জানাল।
ইতিমধ্যে পিএসসি আমাকে আরেকটি চিঠি দিয়ে আগের কথাই বলল।উল্লেখ্য, পিএসসির আইনজীবী প্রতিটি শুনানীর শুরুতে এই চিঠিই বারবার পড়ত। যে কোন প্রশ্নের জবাবে যে কথা জোর গলায় বলত, তা হল পিএসসি একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান।
আমি আবার নবনিয়োগপ্রাপ্ত পিএসসির তথ্য কর্মকর্তার কাছে আবেদন করলাম, কোন সাড়া না পেয়ে আপীল কর্মকর্তার কাছে দরখাস্ত করলাম।
এবারও কোন সাড়া শব্দ নেই। অভিযোগ করলাম তথ্য কমিশনে। অবশেষে অভিযোগ গৃহীত হলো, নিস্পত্তির উদ্দেশ্যে সমন জারী হল।
নির্ধারিত তারিখে হাজির হলাম। প্রথমেই অভিযোগ করলাম পিএসসি তথ্য অধিকার আইন লংঘন করেছে কারন, এই আইন পাশ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে তথ্য কর্মকর্তা আর আপীল কর্মকর্তা নিয়োগের বিধান থাকলেও পিএসসি তা করেনি। কোন কমিশনার ব্যাপারটা গুরুত্ব দিলেন না ।
মুল অভিযোগের শুনানী শুরু হল।
পিএসসির আইনজীবী আমাকে দেয়া তাদের প্রথম চিঠিই পড়তে লাগল। কিন্তু তথ্য কমিশনের মত হল পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর তা পাব্লিক ডকুমেন্ট। কেউ জানতে চাইলে তা জানাতে বাধ্য। কমিশন অধিকতর শুনানীর জন্য আরেকদিন ধার্য্য করে।
২য় শুনানীর দিন জেরার জবাবে পিএসসির তথ্য কর্মকর্তা একটি যুগান্তকারী তথ্য ফাঁস করে দেয় – পিএসসিতে আদৌ কোন মেধা তালিকা হয়না(অডিও ক্লিপ শুনুন) । এরপর তিনি সময় চেয়ে আবেদন করেন এই বলে যে,পিএসসির অফিস তেজগাঁও থেকে আগারগাঁও স্থানান্তরের কারনে তাদের স্বাভাবিক কাজ কর্ম ব্যহত হচ্ছে ।সময় দিলে তারা তথ্য দিবে। কমিশন সময় মঞ্জুর করে আরেকটি শুনানীর দিন ধার্য্য করে। এদিন প্রধান তথ্য কমিশনার একটা মুল্যবান কথা বলে বসেন । তিনি পিএসসি কর্মকর্তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, একজন পরীক্ষার্থীর লিখিত আর ভাইভা নম্বরের মধ্যে একটা কোরিলেশন থাকবে। প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় পাবে ৭০, ভাইভা পাবে ২০ বা ৩০ তা কিভাবে হয়।
সেদিনের শুনানীর পর আগারগাঁও পিএসসির অফিসে গেলাম । অফিস স্থানান্তরের তেমন কোন লক্ষন দেখলাম না। সামনের একটি চা দোকানে বসলাম। সেখানে আগে থেকেই দুজন লোক বসা ছিল। আমাকে দেখে জিজ্ঞেস করল বিসিএস পরীক্ষার্থী কিনা। বললাম, না । জেরার সুরে জিজ্ঞেস করলেন , তাহলে কেন এখানে এসেছেন। জবাব দিলাম চা খেতে। এ কথায় তারা আমার প্রতি নজর না দিয়ে তাদের কথাবার্তা চালিয়ে যেতে থাকল। কথা শুনে বুঝলাম এদের একজন ডাক্তার বিসিএস পরীক্ষার্থীর অভিভাবক, অন্য জন পিএসসি বা স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে চাকুরী করে বা ঘুষের লেনদেনের দালাল। অভিভাবকের কথা হল আঠার লাখ দেয়া হয়ে গেছে আর সামান্য ক টাকা বাকী, এত অবিশ্বাসের কি আছে। কর্মকর্তা বা দালালের কথা হল দুই ধাপ পার করে দিয়েছি এই সামান্য ক টাকা না দিলে পুরোটাই জলে যাবে। অভিভাবককে বেশ চিন্তিত মনে হল।
যাহোক সেখান থেকে ফিরে তথ্যকমিশনে এই দরখাস্ত দিলাম। মেধা তালিকার পুরো বিষয় উদঘাটনের এবং মিথ্যা তথ্য দিয়ে সময় বৃদ্ধির আবেদন বাতিলের অনুরোধ জানালাম।
৩য় শুনানীর দিন তথ্য কর্মকর্তা বদলে গেল। অনুমান করলাম তথ্য কমিশনে দেয়া আমার দরখাস্ত পিএসসির হাতে চলে গেছে। তাদের আইনজীবী যথারীতি সেই চিঠি পড়া শুরু করে দিল। সেই চিঠির প্রতিটা যুক্তি কমিশনাররা যুক্তি দিয়ে খন্ডন করতে লাগল। কমিশনারদের যুক্তি শুনে আইনজীবী মাঝে মাঝেই চলে যাওয়ার হুমকি দিয়ে যাচ্ছিল। আইনজীবী বারবার অপ্রসাংগিকভাবে সংবিধান আর রাস্ট্রপতিকে টেনে এনে বক্তব্য দিতে থাকল। অভিযোগ নিষ্পত্তির সময়সীমা ৭৫ দিন পার হওয়ার পর সর্বশেষ তৃতীয় শুনানীর দিন আমার একটি প্রশ্ন বাদ দিয়ে আমাকে তথ্য প্রদানের রায় দেয়া হল। বাদ দেয়া প্রশ্নটি যথাযথভাব আবেদন করতে বলা হল।
রায়ের আদেশ অনুসারে সাতদিনের মধ্যে তথ্য দেয়ার কথা থাকলেও পিএসসি তথ্য কমিশনকে বৃদ্ধাংগুল প্রদর্শন করল।
একজন কমিশনার বলেছিল, আমি যদি এই রায় হাতে করে পিএসসিতে যাই তাহলে পিএসসি তথ্য দিতে বাধ্য থাকবে। আবার সেই কমিশনারই পরের আরেকটা শুনানীতে বলেছেন, আমরা যদি পিএসসিকে জরিমানা করি তাহলে দেশবিদেশের খবর কাগজে নিউজ ছাপা হলে পিএসসির সম্মানহানি হবে।
আর তথ্য কমিশন অথর্ব হয়ে গেলে দেশের মানুষের কাছে সেই খবর পৌছালে- কি হবে তা নিয়ে তারা অতটা চিন্তিত নন। আমি আবার বাকী তথ্য চেয়ে আবেদন করলাম।যথারীতি পিএসসি গভীর নিদ্রায় মগ্ন। আবার তথ্য কমিশনে জানালাম পিএসসি আগের তথ্য দেয়নি । বর্তমান তথ্যও দেয়নি।
আবার অভিযোগ নিস্পত্তির উদ্দেশ্যে সমন জারি হল । শুনানীতে গিয়েই আমি ভাবলাম আদেশ অমান্যের কারনে পিএসসিকে তথ্য কমিশন জরিমানা করবে নিশ্চিতভাবে ।পিএসসির আইনজীবী যথারীতি সেই চিঠি রিডিং পড়া শুরু করে দিল। কমিশনারদের প্রশ্নবানে জর্জরিত হয়ে হুমকি দিল , এভাবে তাকে প্রশ্ন করা হলে সে বেরিয়ে যাবে। শেষ পর্যন্ত টিকতে না পেরে আরেকটি বড় মিথ্যা কথা বলে বসে যে, তথ্য কমিশনেররায়ের কপি পিএসসি পায়নি, তাই তারা কোন তথ্য দিতে পারেনি। রায়ের কপি পেলে তারা তথ্য দিয়ে দিত। কিন্তু তথ্য কমিশনে থাকা কাগজপত্রে দেখা যায় যে, পিএসসি রায়ের কপি যথাসময়ে পেয়েছে। এই পর্যায়ে আমি পিএসসির আইন কর্মকর্তা ও তাদের নিয়োজিত আইনজীবীর “যা বলিব সত্য বলিব…… “ এই শপথবাক্য পাঠ করেও মিথ্যাবলার অভিযোগ তুলে ধরলাম। একজন কমিশনার আমাকে পরামর্শ দিলেন আদালতে মামলা করতে। শপথ নিয়ে মিথ্যাকথা বলেছে তথ্য কমিশনে আর আমি মামলা করব বাইরের আদালতে গিয়ে। মানে আমার জিনিস হারিয়েছে আগারগাঁও আর খুজব ধানমন্ডিতে গিয়ে। শপথ নিয়ে মিথ্যা বললে তথ্য কমিশনের যদি কোন ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা না থাকে তাহলে শুনানী শুরুর আগে হাস্যকর শপথ বাক্য পাঠ কেন করায় তা বোধগম্য নয়। বিদেশের আদালতে কোন ব্যক্তি মিথ্যা কথা বলছে এই কথা যদি আদালত বুঝতে পারে তাহলে তার আর কোন কথাই আমলে নেয়া হয় না। দেখা যাচ্ছে তথ্য কমিশনে নির্জলা মিথ্যা কথা বললেও কোন সমস্যা নেই। যাই হোক তথ্য কমিশন পরবর্তী শুনানীতে আইনজীবীকে তথ্য নিয়ে আসার লিখিত অংগীকার করিয়ে নিল।
এই পর্য্যায়ে তথ্য কমিশনের প্রতি আমার রাগ হল। ৭৫ দিন সময় চলে গেছে , তার উপর আইনজীবীর টাউট-বাটপারী মুলক কথাবার্তার পরও তারা জরিমানা করল না। নিজেরাই নিজেদের আইন ভংগ করল, আর আমার হয়রানী বাড়িয়ে দিল।
ইতিমধ্যে তথ্য না পাওয়ার যে অভিযোগটি করেছিলাম তার উপর ২৯/২০১৪ আরেকটি অভিযোগ নম্বর বসিয়ে দেয়া হলো। আমি স্পষ্ট বুঝতে পারলাম আমার ৮৮/২০১৩ অভিযোগ ২৯/২০১৪ অভিযোগে রুপান্তরিত হয়ে আবার ৭৫ দিনের ধাক্কায় পড়তে যাচ্ছে। তথ্য কমিশনের অফিসে দেখা করে আমার ক্ষোভের কথা জানালাম। কমিশন রায় দিবে তথ্য দেয়ার জন্য, তথ্য প্রদানকারী কতৃপক্ষ তথ্য দিবে না , কমিশনও জরিমানা করবে না। অভিযোগকারীর কাছ থেকে তথ্য না পাওয়ার দরখাস্তের উপর আরেকটি অভিযোগ নম্বর ফেলে আবার ৭৫ দিনের হিসেবে পাঠালে, এভাবে ৭৫ দিন, ৭৫ দিন করে ক্রমাগত চলতেই থাকবে কাজের কাজ কিছুই হবে না। এরকম ফাঁক বের করার কথা তথ্য অধিকার আইনে নেই। আইনে আছে-
কতৃপক্ষ আমার কথা শুনল। ২৯/২০১৪ নং অভিযোগ চিরতরে উধাও করে দেয়া হল।
০৯ ই জুন চুড়ান্ত রায়ের দিন ধার্য করা হল। যেহেতু আইনজীবী লিখিত অংগীকার করে গেছেন যে তথ্য দিবেন তাই আমি ভাবলাম সত্যিই এবার আমি তথ্য পেতে যাচ্ছি, এদিন আর কোন যুক্তি তর্কের বিষয় থাকবে না। টেনশন, শারিরীক অসুস্থতা আর পড়াশুনার ঝামেলার কারনে এদিন আমি না গিয়ে একজন প্রতিনিধি পাঠালাম। তথ্য পাওয়ার পর ব্যাংকে টাকা জমা দেয়ার পদ্ধতি তাকে বুঝিয়ে দিলাম। আর একটি সাদা কাগজে সইসহ খালি কাগজ পাঠিয়ে দিলাম যেখানে “আমি সঠিকভাবে তথ্য বুঝে পেয়েছি” এই কথা লিখে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের হাতে যেন দেয়া হয়। অর্থ্যাত ঝামেলা সবার দিক থেকে যেন শেষ হয়েছে বলে গন্য করা হয়।
কিন্তু না। সেদিনও পিএসসি কোন তথ্য না দিয়ে সময়ের আবেদন করল। আমার প্রতিনিধি কমিশনকে শুনানী করার অনুরোধ করলে কমিশন জানায় যে, তথ্য কমিশনে বাদী-বিবাদী অথবা তাদের মনোনীত আইনজীবীই শুনানীতে অংশ নিতে পারবে অন্য কেউ নয়। তথ্য না পাওয়া আর আমার গরহাজিরার কারনে আমার সেই সাদা কাগজ হয়ে গেল সময় বৃদ্ধির আবেদনে। আবার শুনানীর দিন ধার্য হল, সমন জারী হল।
২৯ জুন বিকেল বেলা। তথ্য কমিশনে বিশেষ শুনানী, শুধুমাত্র এই একটি অভিযোগের। তখন চলছিল বিশ্বকাপ ফুটবল । ফুটবলে বিচিত্র ধরনের ফাউল করার উপায় আছে। কিন্তু এবার উরুগুয়ের খেলোয়াড় সুয়ারেজ প্রতিপক্ষ দলের একজন খেলোয়াড়কে কুকুরের মত কামড়ে দিয়ে বিরল এক ফাউল করার রেকর্ড গড়েন । সেই দুইদিন ফুটবল প্রেমীদের মুখে মুখে জোর আলোচনা- এটা কী ধরনের ফাউল!
আমি সেইদিন আরেক ধরনের ফাউল প্রত্যক্ষ করি তথ্য কমিশনে। লিখিতভাবে অংগীকার করে যাওয়া আগের আইনজীবী কবির সেদিন অনুপস্থিত। তিনি পিএসসির এই মামলায় আসতে রাজী হননি বলে স্বীকার করেন নতুন আইনজীবী। এছাড়াও উপস্থিত ছিল পিএসসির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নেছার উদ্দিন, একজন মহিলা আইন কর্মকর্তা সহ আরো প্রায় পাঁচ ছয় জন। একের বিরুদ্ধে ছয়।
পিএসসির আইনজীবী শুনানীর শুরুতেই শুয়ারেজের মত সম্পুর্ন অপ্রাসংগিকভাবে ব্যক্তিগত আক্রমন করে বসেন তখনকার তথ্য কমিশনার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ সাদেকা হালিমকে। তাকে ব্যক্তিগত আক্রমনের পাশাপাশি ঐ আইজীবীর মুল বক্তব্য হল- এই মামলা দেশের বৃহত্তর স্বার্থে (!)৭৫ দিন নয় ৭৫ বছর চললেও কোন সমস্যা নেই। সে তখনই এই নতুন ফতোয়া দিয়ে পিএসসির সময়ের যৌক্তিকতা তথ্য কমিশনকে জোর করে হলেও গিলতে আহবান জানাল। তার আক্রমনে সবাই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল।
আমি একটু জোর গলায় আপত্তি জানিয়ে বললাম যে প্রত্যেকটা শুনানীতে পিএসসির আইনজীবী বা তথ্য কর্মকর্তা মুল প্রসংগের বাইরে গিয়ে কথা বলে। তাদের কথা না শুনাটাই ঠিক হবে। এই পর্যায়ে পিএসসির মহিলা আইন কর্মকর্তা যিনি নিজেকে ঢাকার সাবেক এডিসি বলে দাবী করলেন, তিনি আইনজীবীর এই ধরনের বক্তব্য দেয়া সঠিক হয়নি বলে মন্তব্য করলেন। তিনিও সময় দিলে তথ্য দিবেন বলে অংগীকার করলেন।
এবার দৃশ্যপটে আসেন পিএসসির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক। তিনি জানালেন তার কিছু কথা আছে। পিএসসির বিসিএস পরীক্ষার সকল কিছু পুলিশ প্রহরাধীন রুমে থাকে । সেই রুম খুলতে হলে বোর্ড মিটিং্যের প্রয়োজন হয়। এই পর্যায়ে আমি প্রধান তথ্য কমিশনারকে উদ্দেশ্য করে বললাম, দরখাস্তের সাথে আমি যে মার্কসীট জমা দিয়েছি, সেখানে একজন প্রোগ্রামার আর একজন সিস্টেম এনালিস্টের স্বাক্ষর আছে ,তার মানে পিএসসি কম্পিউটারে ডাটা সংরক্ষন করে। এই পর্যায়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হাস্যকর এক কথা বলে বসে যে সেই কম্পিউটারও নাকি পুলিশ প্রহরার রুমে থাকে।
ডিজিটাল বাংলাদেশের চিন্তাবিদেরা এ ধরনের কর্মচারীদের দিয়ে কিভাবে এগুবেন তা এক বিস্ময়কর বটে। অথবাতিনি নিজেও জানেন এটা ফালতু কথা, ফালতু এই যুক্তি দেখিয়ে তথ্য কমিশন থেকে বাড়তি সময় আদায় করে আমাকে হয়রানি করাই তার উদ্দেশ্য।
এই পর্যায়ে কমিশনারগন বিশ মিনিট সময় চাইলেন।বিশ মিনিট পর সরাসরি রায় ঘোষনা হল।
রায়ে বর্নিত ১৫ দিন সময় পার হয়ে গেল। পিএসসি কোন তথ্য দেয়নি। তথ্য কমিশনকে দরখাস্ত দিয়ে জানালাম।
তথ্য কমিশন কি আগের মতো জনগনের কমিশন আছে?
যাত্রার শুরুতে জনগনের কমিশন হিসেবে তথ্য কমিশনের যে অগ্রযাত্রা ছিল তা কি অব্যাহত আছে? না থমকে গেছে। অবশ্যই থমকে গেছে।
এখানে উল্লেখ্য যে, জনগন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাছে সেই তথ্যই জানতে চায় যার উপর ভিত্তি করে অতীতে কোন কাজ হয়ে গেছে ।তেমন একটি কাজের তথ্য প্রদান করতেও সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রদানকারী কতৃপক্ষকে ৭৫ দিন সময় দেয়া হয়েছে। তার উপর তথ্য কমিশনকে ও দেয়া হয়েছে নিম্নের ক্ষমতা।
তথ্য অধিকার আইনের কোথাও বলা নেই কমিশনে অভিযোগ দাখিলের পর তথ্য দিতে হলে বোর্ড মিটিংয়ের জন্য সময় মঞ্জুর করতে হবে, অফিস স্থানান্তর হলে সময় মঞ্জুর করতে হবে, পুলিশ প্রহরাধীন কক্ষের তালা খুলতে সিন্ধান্ত নেয়ার জন্য সময়ের আবেদন মঞ্জুর করতে হবে।
আসুন আরো কি কি তথ্য অধিকার আইনে নেই কিন্তু বর্তমান কমিশনের কারনে জনগন হয়রানীর শিকার হচ্ছে তা দেখি –
১। তথ্য অধিকার আইন পাশ হওয়ার পর ৬০ দিন পার হয়ে গেলেও এখনো বহু প্রতিষ্ঠান তথ্য কর্মকর্তা ও আপীল কর্মকর্তা নিয়োগ করেনি। জেলা পর্যায়ে জনগণ সবচেয়ে বেশী সরকারী সেবা পেতে হয়রানীর শিকার হয় ভুমি আফিস ও জেলা জজ আদালতে। প্রায় সব জেলায় এসবস্থানে তথ্য কর্মকর্তা ও আপীল কর্মকর্তা নেই।
সমাধানঃ কোন নাগরিকের দরখাস্ত যথাযথ কত্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়নি মর্মে বাতিল করা হলে, যে চিঠিতে তাকে জানানো হবে বাতিলের কথা- একই চিঠিতে ওই প্রতিষ্ঠানের তথ্য কর্মকর্তা ও আপীল কর্মকর্তার নামও জানিয়ে পুনরায় আবেদন করতে পরামর্শ দেয়া যেতে পারে। যদি কোন প্রতিষ্টানে তথ্য কর্মকর্তা ও আপীল কর্মকর্তা না থাকে তাহলে ধরে নিতে হবে তথ্য কমিশনের কারনেই জনগন ওই প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য বঞ্চিত হচ্ছে।
২। “যাহা বলিব সত্য বলিব—-“ শপথ বাক্য পাঠ করার পর তথ্য কর্মকর্তা ও আইনজীবীর মিথ্যা কথা বললে তথ্য কমিশনের কিছু করার ক্ষমতা আছে কিন্তু করে না।
সমাধানঃ বাদী বা বিবাদী বা তাদের আইনজীবী মিথ্যা বলছে এমন অভিযোগ উঠলে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠবে তার কোন কথাই আর না শুনা বা তাকে কথা বলতে না দেয়া। অথবা শুরুতে “যাহা বলিব সত্য বলিব—-“ এই শপথবাক্য পাঠের রীতি তুলে দেয়া।
৩। তথ্য কমিশন দেশের ৬৪ টি জেলায় জনসচেতনতা মুলক কার্যক্রম পরিচালনা করেছে।বিভিন্ন সরকারী অফিস ও মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষন দিয়েছে, কিন্তু তাদের বাড়ির পাশের একটি প্রতিস্টান পিএসসি থেকে তারা তথ্য উদ্ঘাটনে ব্যর্থ।
সমাধানঃযদি উক্ত অফিসের কর্মকর্তারা মনে করে যে তারা তাদের প্রাপ্য সম্মানীকে বৈধ বা হালাল করা উচিত, তাহলে অন্তত ঢাকা শহরে থাকা কোন প্রতিস্টান যদি তথ্য প্রদানে গড়িমসি করে তাহলে ভবিষ্যতে সেখানে সরেজমিনে অভিযান চালাবে।
৪।মেধাবী, সাহসী, দেশপ্রেমিক , নেতৃত্ব দেয়ার মত লোক তথ্য কমিশনে নেই। যদিও তথ্য কমিশনারদের ব্যপারে এই আইনেই বলা আছে-
সমাধানঃ বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো তথ্য কমিশন নিজেরাই নিজেদের কর্মকর্তা নিয়োগ দিবে।এটা কোন ক্রমেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বা নতুন স্থাপিত বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রয়োজনের অতিরিক্ত জনবল হবে না, আবার কমও হবে না। অর্থ্যাত লোকের অভাবে সময়ের কাজ সময়ে করা যাবে না- এমন হতে পারবে না। তথ্য কমিশনারদের ব্যপারে দেশের একজন সিনিয়র নাগরিক,সুশীল সমাজের সম্মানীত বুদ্ধিজীবী ও জুনিয়র ননসেন্স নাগরিকের এই চিঠির বিষয় বিবেচনা করা যেতে পারে-
সমস্যা ৫ঃ বর্তমান তথ্য কমিশন ৭৫ দিনের ভেতর বা সামান্য কিছুদিন পরে তথ্য দেয়ার জন্য রায় দেয়। তথ্যপ্রদানকারী প্রতিস্টান নির্দিস্ট সময়ের মধ্যে তথ্য দেয় না । ভুক্তভোগী আবার তথ্য কমিশনে তথ্য না পাওয়ার অভিযোগ করে। তথ্য কমিশন আবার সেই অভিযোগের উপর নতুন নম্বর দিয়ে আবার নতুন করে শুনানী করতে থাকে। তথ্য কমিশন আবিষ্কৃত নতুন এ পন্থায় ৭৫ দিন , ৭৫ দিন করে আজীবন একটি অভিযোগ অনিস্পন্ন থাকার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
সমাধানঃ রায় দেয়ার পর ভুক্তভোগির কাছ থেকে তথ্য না পাওয়ার অভিযোগের উপর নতুন অভিযোগ নম্বর না দিয়ে পরবর্তী প্রথম শুনানিতেই জরিমানার দৃস্টান্ত স্থাপন করতে হবে। বর্তমানে তথ্য কমিশন যে অপচর্চা করছে তথ্য কমিশনের আইনের কোথাও নেই।
সমস্যা ৬ঃ তথ্য কমিশনের রায়ে এক পক্ষের যুক্তি তর্কের কথা লেখা হয়, ঐ যুক্তির বিপক্ষে অন্যপক্ষ কি বলেছে তা ার লেখা হয় না। যেহেতু এটা ওয়েবসাইটে যায় আপামর জনগন দেখে, তাই দুই পক্ষের যুক্তিই রায়ে লেখা উচিত।
সমাধানঃ দুই পক্ষের যুক্তি রায়ে লেখতে হবে অথবা দুই পক্ষের যুক্তি শুনে “ তথ্য কমিশন মনে করে যে- ” এভাবে তার রায়/ সিন্ধান্ত লেখা হবে। অর্থাৎ লিখলে দু’পক্ষের কথা লিখতে হবে, না লিখলে কারোই নয়। তবে স্বচ্ছ বিচারের জন্য দুপক্ষের কথাই লেখা বাঞ্চনীয়।
এবার আবার আগের প্রসঙ্গে আসি। বিসিএস পরীক্ষায় কিভাবে কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়, নিয়োগের মাপকাঠি কী? প্রথমে আসি পিএসসির সদস্য কিভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন? টি আই বি বলে-
এবার আসি বিসিএস কর্মকর্তা কিভাবে নিয়োগ হয়-
উভয়ের মাঝে স্বার্থের সংঘর্ষ হলে আমরা খবর পাই-
এছাড়া আরো কিছু উপায় আছে-
এখানে লক্ষনীয় ব্যপার হল, ১০ ট্রাক অস্র চোরাচালান মামলায় একজন সাবেক প্রতিমন্ত্রীর ফাঁসি হয়। বিচারকের পর্যবেক্ষন ছিল, আসামিরা দেশের সার্বভৌমত্বকে হুমকীর মুখে ঠেলে দিয়েছিল, তাই তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রাপ্য। প্রতিমন্ত্রীর চেয়ে ক্ষমতাধর দেশের জন্য গুরত্বপুর্ন হলো সচিব কারন, আত্মীয়কে চোরাচালানে সহযোগিতা করার জন্য লোক নিয়োগে দেশের সার্বভৌমত্ব বিবেচনার চেয়ে সচিবের পদমার্যাদা গুরুত্বপুর্ন বিষয়।খবরে সংশ্লিষ্ট সচিবের নাম প্রকাশ করা হয়নি। এখন আমি যদি তথ্য অধিকার আইনে তার নাম জানতে চাই তথ্য কমিশনে থাকা বন্ধুরা আমাকে স্মরন করিয়ে দিবে-
অথচ আমরা সাধারন বিবেচনায় বুঝতে পারি দেশদ্রোহীদের কোন আইনী রক্ষাকবচ থাকতে পারে না।
লিখিত পরীক্ষার খাতা মুল্যায়ন যোগ্য পরীক্ষকের হাতে হয়না, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই খাতাই মুল্যায়ন হয় না। খাতায় চিহ্ন রেখে পছন্দের প্রার্থীদের বেশি নম্বর দেয়া হয়,ভাইভায় ফেল করানো বা অস্বাভাবিক নম্বর দেয়া বিষয় তো আছেই।
তথ্য না পাওয়ার দরখাস্ত তথ্য কমিশনে দাখিল করার পর আজ পর্যন্ত কমিশন থেকে কোন জবাব পাইনি। তবে আনঅফিসিয়াললি একজন কর্মকর্তা আমাকে জানিয়েছেন, পিএসসি হাইকোর্টে রিট করেছে। পিএসসি একটি চিঠিতে রিট করার কথা তথ্য কমিশনকে জানিয়েছে। সেই চিঠির কপি আমাকে দেয়া হয়নি, তথ্য কমিশনের একজন কর্মকর্তার হেফাজতে রক্ষিত আছে। একথা জানার পর পিএসসির আইনজীবী ও কর্মকর্তাদের মিথ্যা কথা বলার দক্ষতা স্মরন করিয়েতথ্য কমিশনের কর্মকর্তার কাছে জানতে চাই রিটের কাগজপত্রের কপি তাদের কাছে জমা দিয়েছে কি না। হাইকোর্টের একটি রিট নাম্বার মানে তো এটা পিএসসির রিট নয় বা পিএসসির রিট হলে এটা অন্য কোন বিষয়েও তো হতে পারে,তার তো এ ধরনের হঠকারীতায় দক্ষ । কর্মকর্তা আমার প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গেলেন।
আমার আইনজীবী বন্ধু ও তথ্য অধিকার আইন বিশেষজ্ঞ ব্যরিস্টার আব্দুল হালিমের কাছে জানতে চাই, পিএসসি রিট করতে পারে কিনা বা পারলে গ্রাউন্ড কি হতে পারে। তিনি আমাকে জানান, পিএসসি আপীল বা রিট কিছুই করতে পারে না। একটি সরকারী প্রতিষ্ঠান আরেকটি সরকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে রিট করতে পারে না। তথ্য কমিশনের এই রায়ে কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ ক্ষুন্ন হয়নি। বরং আপনি হাইকোর্টে যেতে পারবেন। তথ্য কমিশনের এই মামলার রায়ে জরিমানার করা উচিত ছিল কিন্তু তারা করেনি। আপনি তাদের জরিমানা করার জন্য এবং তথ্য আদায়ের জন্য হাইকোর্টে যেতে পারেন। পিএসসি বিভ্রান্ত করছে তথ্য কমিশনকে, তথ্য কমিশন বিস্তারিত তথ্য না জানিয়ে বা চুপ থেকে বিভ্রান্ত করছে আপনাকে । তার কথার সত্যতা পাই তথ্য অধিকার আইনের এই ধারায়-
তথ্য অধিকারের উপর জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে তথ্য কমিশন “তথ্য পেলেন কাশেম চাচা” শীর্ষক ক্ষুদ্র নাটক প্রচার করে । সেখানে দেখা যায় কাশেম চাচা কত সহজে তথ্য পেয়ে যায়, কাশেম চাচাকে হয়রানী করার জন্য তথ্য কর্মকর্তার জরিমানা করা হয়। বাস্তবে আসলে তা হয় না, হয় উল্টো- তথ্য কমিশনই তথ্য প্রদানকারীদের সুবিধার জন্য জনগনকেই হয়রানীর চর্চা করে।
[…] […]
পুরো লেখাটা পড়লাম এবং আরো একবার পিএসসির অপকর্ম সম্পর্কে জানলাম। আপনার জন্যে দুঃখ হচ্ছে, সেই সাথে আপনার সাহস দেখে বাহবা দিতে মন চাইছে। এক দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আপনি গেছেন, কিন্তু দুর্নীতির আখড়া থেকে আপনার তথ্যসমূহ উদ্ধার করতে পারেননি। পিএসসির প্রত্যেক শিরা ও উপশিরায় অপকর্ম ছড়িয়ে আছে। যে হেলেনা আখতার আপনার একটি শুনানিতে পিএসসির তথ্য কর্মকর্তা ছিলেন, তিনি মূলত পিএসসির গ্রন্থাকারিক। প্রথমে দ্বিতীয় শ্রেনীর কর্মকর্তা ছিলেন, তারপর প্রথম শ্রেনীর কর্মকর্তা হয়েছেন। আমি আমার গবেষণার কাজে পিএসসিতে গিয়েছিলাম বার্ষিক প্রতিবেদনের জন্য। তো লাইব্রেরি বিভাগের ওনাকে বহু কষ্টে রাজী করালাম প্রতিবেদন দেখার জন্যে। আমি নিচ থেকে ফোন করে বহু কষ্টে ওনার সাথে যোগাযোগ করি। তারপর অনেকগুলো শর্ত আমাকে ধরিয়ে দেন। যেমন-
এদিক ওদিক তাকাতে পারবেন না, শব্দ করতে পারবেন না, কারো সাথে কথা বলতে পারবেন না । সোজা আসবেন , সোজা বের হবেন। ফোন বন্ধ রাখবেন, এদিক সেদিক যেতে পারবেন না।
আমি ওনার সব শর্ত মেনে নিয়ে ভিতরে ঢুকি। আবদুল আউয়াল যে মানসিক নির্যাতনের কথা বলেছিলেন, সেটার মধ্যে দিয়ে আমিও গেছি। ওই মূহুর্তে মনে হবে ছেড়ে দে মা , কেঁদে বাঁচি। তারপর ভেতরে ঢুকে দেখি ভদ্রমহিলা সরকারি ফোন দিয়ে কার সাথে যেন আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলছেন। তারপর দু’ঘন্টা মানসিক অত্যাচারের মধ্য দিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করলাম। একটা রিপোর্ট আনে, আরেকটা নেয়, এভাবে একটা একটা করে রিপোর্ট এনে দেয়। একটা রিপোর্টের কোনো তথ্য মিস করলে আরেক বার চাওয়ার ধৃষ্টতা দেখানোর সু্যোগ ছিলো না। যদি মনে করেন আমিতো ওই তথ্যটা নিতে ভুলে গেছি, তাহলে শুধু আফসোসই করতে হবে। তারপর এভাবে তথ্য নিলাম, আর ওই ভদ্র মহিলা অভদ্রের মতো একটা পা চেয়ারের উপর তুলে সরকারি খরচে কথা বলে যাচ্ছেন তাঁর আত্মীয়ের সাথে।
ওখানে তথ্য নিতে গিয়েই দেখলাম আবদুল আউয়াল প্রথম হয়েছেন ২৯তম বিসিএসে কিন্তু তারনাম দু’বছরের পরের প্রতিবেদনে সংশোদন করে বাদ দেওয়া হয়েছে, তখনি আমার খটকা লাগে।
তখন মনে হয়েছে দুর্নীতি আসলে ভেতরে হলে আসলে কারো ধরার সাধ্যি নেই। একটা রিপোর্ট তৈরির পর কতোজনের হাত দিয়ে যায়। এটা কি কারো চোখে পড়লো না।
তারপরইতো শরিফুল হাসান অনুসন্ধান করে দুর্নীতি বের করে ফেললেন। তাকে অনেক ধন্যবাদ।
আমার মতে প্রিলি পরীক্ষার পর উত্তরপত্র প্রকাশ করলে তেমন ক্ষতি পিএসসির নেই। তারা এটা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে পারে। তারপর কাট অফ মার্ক ও জানিয়ে দিলে সকল ধুম্রজাল চলে যায়। এভাবে লিখিত পরীক্ষার রেজাল্টের পর মার্কস ওয়েবসাইটে দিলে কোনো ক্ষতি কিন্তু নেই। সেই মার্কশীট দেওয়া হয় রেজাল্টের ১ বছর পর। তাও ১ হাজার টাকা লাগে। এই মার্কশীট কি কেউ বাসায় ঝুলিয়ে রাখবে নাকি, যার কিনা কোনো ক্যাডার আসলো না। অথচ রেজাল্টের সময়ই মার্কশীট দিয়ে দেওয়া যায় এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষার মতো। সবাই তা দেখতে পারবে। কিন্তু মার্কশীটের জন্য ১ বছরের অপেক্ষা, সাথে ১ হাজার টাকার ব্যবসা, যেটা আবার কারো কাছে মূল্যহীন। এটা মার্কশীট আকারে নিয়ে কি লাভ পরীক্ষার্থীদের। তারপর নাম্বারে সমস্যা থাকলে পুনর্মূল্যায়নের আবেদন, আরো কাল খেপন। ভাইবার মার্কসও এভাবে প্রকাশ করা যায়। এতে স্বচ্ছতা বাড়বে।
কেউ প্রথম হলে সে লিখেপড়েই প্রথম হয়েছে। তার পরীক্ষা অন্য কেউ দিয়ে দেয় নি। যদি অন্য কেউ দেয় তাহলে সেটা পিএসসির ব্যর্থতা। কারণ আপনারা কাকে হলের দায়িত্ব দিয়েছেন যে একজনের পরীক্ষা অন্য একজন দিয়ে দেন। এভাবে কাউকে বাদ দেওয়াতও সংবিধান লঙ্ঘন। আর পরীক্ষার হলে বই খুলে, নকল করে কেউ প্রথম হতে পারে না । বিসিএস এমন পরীক্ষা যে সব প্রশ্নের উত্তর একসাথে পাওয়া যায়না ।
শরিফুল হাসান ভাই বড় পত্রিকার সাংবাদিক। ওনি অনুসন্ধান করলে আরো অনেক তথ্য বের করতে পারবেন। আমরা সবাই চাই পিএসসি নিয়ে আরো তদন্ত হোক।
সাধারণতো চাকরি শেষের পরে বা চাকরির শেষ পর্যায়ে কেউ পিএসসিতে নিয়োগ পায়। কিন্তু এমরান কবির চোধুরী মাত্র ৪৪ বছরে পিএসসির সদস্য হন, যুবলীগের নেতা হওয়ার কারনে। সদস্য হওয়ার পর নেতার পদ ছাড়েননি। তারপর অন্য একটি প্রতিষ্ঠানে অফিস করতেন। এই লোকই আবদুল আউয়ালের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন। মানসিক নির্যাতন করেন। ওই মুহূর্তের কথা চিন্তা করুন। কি চাপের মধ্যে রাখা হয়েছে তাকে। তিনি নিশ্চয় জোরগলায় কোনো কথা বলতে পারেন নি। কোনো বেয়াদপি যদি হয়ে যায়। তখন মনে হবে ছেড়ে দে মা , চাকরির দরকার নেই।
পিএসসির দুর্নীতি নিয়ে কথা বলার এই সময়। আসুন আওয়াজ তুলি, ঝেড়ে কাশি।
@তারিকুর রহমান সানি,
একবার এক লোকের বাগানের গাছে আম চুরি করছিল একটি ছেলে। বাগান মালিক পথ দিয়ে হেটে যাওয়ার সময় দেখে ফেলে। ছেলেটিকে জোর গলায় ধমক দিয়ে বলে, আমার আম গাছে আম চুরি করছিস, রাখ তোর বাবার কাছে নালিশ করব। তোর পিঠের চামড়া থাকবে না।
এমন সময় পেছন থেকে এক লোক এসে বাগান মালিকের পিঠে হাত দিয়ে বলে, ভাই তার বাবাকে কি বলবেন। পাশের একটা আম গাছের দিকে আংগুল দেখিয়ে বলে, তার বাবাতো ঐ যে পাশের গাছের আম চুরি করছে।
বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যেখানে আইনের রক্ষকই হল ভক্ষক। যাকে আইন রক্ষা করতে দেয়া হয়, সে নিজেই সে আইনকে বিশ্বাস করে না, আইনে যা বলা আছে ঠিক তার উল্টোটা করে ।
এদেশের প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম-দুর্নীতি ঐ প্রতিষ্ঠানের বিবদমান আইনেই বিচার করা সম্ভব। কিন্তু বড়কর্তা-ছোটকর্তা সবাই মিলেমিশে দুর্নীতি করে বলে প্রতিষ্টানের বিবদমান দুর্নীতিবিরোধী আইনগুলো অচল হয়ে যায় ।
সময়ের প্রয়োজনে আইন করে গঠন করতে হয় দুদক, তথ্য কমিশন, মানবাধিকার কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠানের। কিন্তু কিছুদিন যাওয়ার পরই দেখা যায় সবগুলো প্রতিষ্ঠান রসুনের মত। বাকীটা ভালো মত বলেছেন জনাব আকবর আলী খান এখানে।
ধন্যবাদ এই লেখাটির জন্য। আমি নিজেও এর ভুক্তভোগী হয়েছি। আসলে বিসিএস হচ্ছে মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেদের জীবন ধংস্কারী, স্বপ্ন খেকো একটি প্রতিষ্ঠান।
@jahud,
কারো জন্য জীবন ধ্বংসকারী আবার কারো জন্য আশির্বাদ।
আমি যে ৬টি ক্যাডারের তথ্য চেয়েছি সেই ক্যডার গুলোতে গত ২৮ তম থেকে ৩৩ তম বিসিএস পর্যন্ত একজন প্রার্থীকে খুজে পাইনি যার নিয়োগ বৈধভাবে হয়েছে। ফেসবুকে বিজ্ঞাপন পর্যন্ত দিয়েছি যে এরকম সতভাবে কেউ নিয়োগ পেলে তার নাম, রোল, কততম বিসিএস তা জানানোর জন্য। সাড়া পাইনি।
সুতরাং ওইসব প্রার্থীদের জন্য অবশ্যই আশীর্বাদ।
কী বলবো! রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রায় প্রতিটা সেক্টরেই পঁচন ধরেছে। এখন দুর্নীতি ব্যাপারটাই অলিখিত “নিয়মে” পরিণত হয়েছে। আমজনতা নিরুপায়। যতদিন প্রজন্মের সংখ্যাগরিষ্ঠের মধ্যে সচেতনতা না আসবে ততদিন এটা চলতেই থাকবে। আপনি যতটা ধৈর্য্য নিয়ে এগিয়েছেন আমি হলফ করে বলতে পারি আমাদের ৯৯%ই এমনটা করবে না। আপনার মতো চাপ যদি অনেকেই তৈরি করতে পারতো তাহলে হয়তো আশার আলো দেখা যেতো।
আপনার ঐকান্তিক চেষ্টার জন্য আপনাকে স্যালুট :guru:
@ঔপপত্তিক ঐকপত্য,
এই জন্যই আমি শিকড়ে হাত দিয়েছি।
দেখুন, এখন প্রথম শ্রেনীর বিসিএসে পদভেদে ঘুষ দিতে হয় ১৫~২৫ লাখ টাকা । এই প্রথম শ্রেনীর পদবীর কর্মকর্তারা আর কয়েকবছর পর ৩য় ও ৪র্থ শ্রেনীর নিয়োগ পরীক্ষার প্রধান হবেন। দুর্নীতি রিকার্সিভ ওয়েতে চলতে থাকবে। তাই আপনাকে ট্রির রুট বা শেকড়ে হাত দিতে হবে।
এজন্য আমি দেশের ইতিহাসে দুই বড় স্বীকৃত দুর্নীতিবাজ বনের রাজা ওসমান গনি আর রেলওয়ের মৃধাকে মোটেও দোষী মনে করি না । আপনার মনে হবে আমি স্ববিরোধী কথা বলছি, মোটেও না। তারাও লিফ থেকে রুটে উঠে এসেছে। তাদেরকেই শুধু ধরা হয়েছে বাকীগুলা কই?
আপনার উত্তরটা একটু ঘুরিয়ে দিই। দীর্ঘদিন এই পথে থাকার কারনে আমার কিছু ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষন হয়েছে। পিএসসিতে দুই ধরনের কর্মকর্তা রয়েছে- ১) যারা নিয়োগ বানিজ্যের সাথে জড়িত ২) পদমার্যাদার কারনে যারা নিয়োগ বানিজ্যের সাথে জড়িত নয় । দ্বিতীয় গ্রুপের লোকজন মুলত সুযোগের অভাবে সৎ । তারা চায় এই অনিয়ম উদ্ঘাটন হোক । তামাসার বিসিএস পরিক্ষায় স্বচ্ছতা আসুক ।যারা নিয়োগ বানিজ্যের সাথে জড়িত তারা রাজনৈতিক এবং পদ উভয় দিক থেকে শক্তিশালী । উভয় গ্রুপের কেউই আমার প্রতি সাহায্য পরায়ন নয় ।
তথ্য কমিশনের মোটামুটি পুরো টিম আমার প্রতি সদয়, দু একজন ব্যতীত। সে বিছিন্ন দু’একজন আবার প্রভাব শালীও বটে । একজন কমিশনারের এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান না থাকলে আমি তো এগুতেই পারতাম না। বাকীটা লেখার বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে বুঝে নিন । আমাদের সবার লক্ষ্য থাকবে, লাইনচ্যুত তথ্য কমিশনকে লাইনে আনা।
এই বিষয়টা নিয়ে লেখার জন্য লেখককে ধন্যবাদ।
এসব শুনলে পরে হতাশ লাগে,ভীষণ হতাশ লাগে!
তারা বোধহয়,আপনাকে একজন শত্রু হিসেবে ট্রিয়েট করেছিল!
আচ্ছা,আপনি এইযে দীর্ঘ দিন ধরে এতো খাটুনি করলেন,এতে তথ্য কমিশন বা পিএসসি কর্তাদের(যারা এই প্রসেসে যুক্ত ছিল) তাদের চোখে,চিন্তা-ভাবনায় বিরক্তি ছাড়া ,আর কিছু কি চোখে পড়েছিল?
তথ্য দিলে জালিয়াতি করার সুযোগ থাকবে না। এত সহজে বাংলাদেশ থেকে দুর্নীতি চলে যাবে? মনে হয় না। আপনি অনেক কষ্ট করেও তথ্য আদায় করতে পারেননি। এতটা ধৈর্য কিভাবে ধরা সম্ভব? লেখককে অনেক ধন্যবাদ।
@বাসার,
এই চিঠিটা মনোযোগ দিয়ে পড়ুন, গভীর ভাবে চিন্তা করুন। সম্ভব।
Dear XXXXX,
How are you?
Hope you are fine and get little bit free from hard work.
Several times, i attempted to write you something but failed.
The year you passed SSC & HSC you mentioned in your CV, you didn’t
read any anti-corruption article at ssc or hsc level textbook. we are
your next generation students and read so many articles at text books
and various journals. Our teachers in the classroom discussed about
multi-dimension of corruption in our country and encouraged us to
fight against it.In the classroom we read anti-corruption article, in real life we see
corruption is everywhere.This makes our psychology, mind, thinking ability complex.
Mr XXXXX worked administration and reached highest position at the
golden age of corruption in our country.I know you meet decision-making persons and several tv show everyday. If you agree with me, please tell them not to appoint any retired govt service holder as information commissioner. At least one from university teacher who is brave and honest. one from retired judge(highly educated woman, she will be CIC) and one from civil society.
Then wait and see. The corruption level in our country will come down
to zero level.
thanking you