আজ থেকে প্রায় দুহাজার বছর আগের কথা,ঈশ্বরের আশীর্বাদে মানবজাতিকে পাপ থেকে মুক্ত করার জন্য এক কুমারীর ঘরে জন্ম নিলেন যীশু।ঈশ্বর পুত্র যীশু খ্রিষ্ট।সেই যীশু ত্রিশ বছর বয়সে জলে বাপ্তিস্ম নিয়ে ঈশ্বরের ইচ্ছায় নেমে পরলেন মানুষ শিকারে।সেই শিকারের উদ্দেশ্যে তিনি তার শিষ্যদের নির্বাচন করতে শুরু করলেন।শিকারের জন্য প্রয়োজন দক্ষ শিকারি তাই যীশু পিতরের মত জেলেদের এবং মথির মত ঠগবাজ ও বাকপটু শিক্ষিত লোকদের নিজ দলে টেনে নিলেন।এদের মাধ্যমেই শুরু হল যীশুর মানুষ শিকার,যা এখনও অব্যাহেত আছে।যীশুর সেই মানুষ শিকারের কিছু দিক ও কৌশল আজ তুলে ধরার চেষ্টা করবো।

দুহাজার বছর আগে যীশুর মাত্র বারজন প্রধান শিষ্য ও হাঁতে গোনা কয়েকশো খ্রিষ্ট বিশ্বাসী মানুষের সংখ্যা আজ দুইহাজার বছর পর এসে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২২০ কোটি, যা সাড়া বিশ্বের বিশ্বাসী মানুষদের প্রায় ৩০%,কি করে সম্ভব এতো বিশাল জনসংখ্যাকে এক বিশ্বাসের ছাতার নিচে আনা? শুধুই কি যুদ্ধ ও বল প্রয়োগের মাধ্যমে আনা হয়েছে এদের একটি মিথ্যা বিশ্বাসের ছাতার নিচে? নাকি অন্যকোন মাধ্যম ছিল খ্রিষ্ট ধর্ম ব্যবসায়ীদের? আমি বাইবেলের তিনটি জনপ্রিয় বানী তুলে ধরে দেখানোর চেষ্টা করবো কি করে ধনী,গরীব ও সর্বসাধারণ মানুষদের ধর্মের ফাঁদে ফেলে পকেট ভারী করেছে ধর্ম ব্যবসায়ীরা।সেই সাথে তাদের পৌঁছে দিয়েছে খ্রিষ্টের রূপকথার রাজ্যে।

প্রথমে আসি ধনী শ্রেণীর মানুষদের বিষয়ে,
“ধনীদের পক্ষে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ কত কঠিন!
ধনীর পক্ষে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশের চেয়ে বরং

সুচের ছিদ্র দিয়ে উটের প্রবেশ সহজ”
____________________ লূক ১৮ঃ২৪-২৫
উপরের এই বানীটি লক্ষ্য করলে দেখা যায়,এখানে ধনীদের সরাসরি ভীতি প্রদশন করা হয়েছে,সেই সাথে বলা হচ্ছে তাদের পক্ষে স্বর্গে প্রবেশ প্রায় অসম্ভব।তাহলে সেই ধনীরা কি করে স্বর্গের যাবেন? কিসের পরিবর্তে মিলবে তাদের স্বর্গের টিকিট? উত্তরটি খুব সোজা, তোমার সকল সম্পত্তি গরীবদের মাঝে বিলিয়ে দাও। কিন্তু সেই সম্পদ সাধারণ গরীবদের মাঝে বিলানো হতো কি?বিলালেও কততুকু হতো?হে কিছু দান করা হতো গরীব খ্রিষ্ট ভক্তদের মাঝে কিন্তু সিংহভাগ দান করা হতো উপাসনালয়ে,খ্রিষ্ট ব্যবসায়ী এবং খ্রিষ্ট ভক্তদের ও সেবকদের মাঝে। এতে ধনীদের সম্পদের ক্ষমতা হ্রাস পেত এবং তারা ভয়ে খ্রিষ্টের ছায়া তলে আশ্রয় খুঁজতো।সম্পদ কমে আসার কারনে তাদের শক্তি হ্রাস পাওয়ার মাধ্যমে শক্তি বৃদ্ধি পেতো খ্রিষ্ট ব্যবসায়ীদের। তখন তাদের ধরাশায়ী করা যেতো সহজেই।তাদের ধর্মের বিপক্ষে প্রতিবাদের কোন শক্তি জন্মাত না বরং পূর্ববর্তী ক্ষমতা ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হতো।তখন নরকের ভয় দেখিয়ে বাকি সম্পদ পকেটে ভরতে সুবিধা হতো ধর্ম ব্যবসায়ী যাজকদের।
সেই যাজকরা সেই সম্পদের কিঞ্চিৎ অংশ অন্য গরীব খ্রিষ্ট ভক্তদের মাঝে বিলিয়ে দিয়ে ঈশ্বরের মহিমা গাইত এতে ধনীরাও নিয়ন্ত্রণে থাকতো অন্যদিকে গরীবেরাও খুশী হয়ে বিশ্বাসে বিশ্বাসী হয়ে থাকতো। এ যেন কইয়ের তেলে কই ভাঁজা।দরিদ্ররা অর্থের লোভে নিজেদের বিশ্বাস বিলিয়ে দিত অলৌকিকতার দিকে।

এবার আসি গরীবদের ক্ষেত্রে,

“গরীবেরা, তোমরা ধন্য,
কারণ ঈশ্বরের রাজ্য তোমাদেরই।
ধন্য তোমরা, যাদের এখন খিদে আছে,
কারণ তোমরা তৃপ্ত হবে।
যারা এখন কাঁদছো, তোমরা ধন্য,
কারণ তোমরা হাসবে।”
_____________ লূক ৬ঃ২০-২১
উপরের বানীটি গরীবদের দলে ভিড়িয়ে রাখার জন্য সবচেয়ে কার্যকারী কৌশল হিশেবে ব্যবহার হয়ে আসছে সেই আদিকাল থেকে,এমনকি এখনো সমান ভাবে ব্যবহার হয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।এখানে গরীবদের সান্ত্বনার বানী শুনিয়ে পুরুস্কারের লোভে খ্রিষ্ট বিশ্বাসে বিশ্বাসী থাকার আহ্বান করা হয়েছে সরাসরি ভাবে। তারা যেন কোন ভাবে দারিদ্র্যের কষাঘাতে খ্রিষ্টের পথ হতে পথভ্রষ্ট হয়ে অন্য কোন অন্ধত্বের মায়াজালে বন্দি হয়ে না পরে। আর পুরুস্কারের ফল স্বরূপ মাঝে মাঝে ধনীদের হতে প্রাপ্ত অর্থের ছিটেফোঁটা দান করে তাদের জিয়িয়ে রেখেছে গত দুহাজার বছর ধরে। সেই সাথে স্বর্গের লোভ তো আছেই। গরীব মানুষের দারিদ্র চিন্তা চেতনা ও মনে এই বানী সহজে স্থান করে নিয়েছে মুক্তির বানী সরূপে। এই আশার আলো তাদের অন্ধ মনকে করে এসেছে আলোকিত। আসলেই কি তাই? মনে হয় না।

এবার দেখা যাক বাইবেলের আর একটি বানী,যা সর্বসাধারণের জন্য,

“আমিই পথ ও সত্য ও জীবন;আমায় দিয়ে না আসিলে কেউ পিতার নিকট যেতে পারবে না” (যোহন ১৪ঃ৬)
উপরের বাণীটি একটি জনপ্রিয় ও বহুল প্রচারিত বানী। আমি এই বানীর পাশে কোরআনের একটা আয়াত না লিখে পারছি না কারণ দুটির সারকথা একি।
“হে ঈমানদারগন!তোমরা যথাযথ ভাবে আল্লাহ্‌কে ভয় করো আর সাবধান, মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না” (আলে ইমরানঃ১০২)।
কোরআন সরাসরি বলছে মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ না করার জন্য অন্যদিকে বাইবেল ইঙ্গিতে বলেছে খ্রিষ্টান না হয়ে মৃত্যুবরণ না করার জন্য। এখানে যীশুর পথ একমাত্র পথ ও সত্য পথ, যে পথ ছাড়া পিতার নিকট মানে ঈশ্বরের কাছে যাওয়া সম্ভব না। আর পিতার নিকট না যাওয়া মানে স্বর্গের পরিবর্তে নরকের জলন্ত অগ্নিকুণ্ডে জ্বলে কষ্ট ভোগ করা। অথ্যাত যদি স্বর্গের অনন্ত সুখ পেতে চাও তবে যীশুর পথে চল, খ্রিষ্টান হিশেবে মৃত্যুবরণ করো।
এমনি অসংখ্য বানী ও রূপকথার গল্পে ভর করে তিল তিল করে বেড়েছে খ্রিষ্ট বিশ্বাসীদের সংখ্যা। এই বানীগুলো ক্রুসেডের তরোয়াল বা বর্তমানের পারমাণবিক বোমার থেকেও বেশী বিধ্বংসী মানুষের অন্ধত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য।

যাজকরা এমন অসংখ্য বানী ও কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শিকার করে যাচ্ছে মানুষদের।তারা ধর্মের নামে হাসপাতাল খুলছে,বিদ্যালয় খুলছে,কাড়িকাড়ি অর্থ দান করছে গরীব দেশগুলোর গরীব মানুষদের।মানুষও তাদের সু!কর্ম দেখে দলে দলে নাম লিখিয়েছে খ্রিষ্টান ধর্ম নামক এক ভণ্ডামির খাতায়।অনেক হয়তো বলবেন তাদের এমন কর্মকাণ্ড মানুষের উপকারের জন্য। মানুষ উপকৃত হচ্ছে এর দ্বারা। কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য বলি,যদি তা হতো তবে ধর্মের নামে তারা মিশনারি স্কুল ও হাসপাতাল না খুলে সাধারণ স্কুল ও হাসপাতাল খুলে বসতো।কিন্তু তাতে তো ধনী দেশগুলোর বিশাল অংকের টাকা অনুদান আসতো না আর যাজক ও ধর্ম ব্যবসায়ীদের পকেট অর্থে টইটুম্বুর হতো না।