ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা: পূর্ব ও পশ্চিম বাঙলার দ্বন্দ্ব; একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা।

ব্রিটিশরা মূলত: মুসলমান রাজন্য হতে ভারতবর্ষের ক্ষমতা অধিকার করেছিল। শাসক শ্রেণী থেকে প্রজা শ্রেণীতে রূপান্তরিত হওয়ার অভিজ্ঞতা মুসলমানদের জন্য সুখকর ছিল না। যার ফলশ্রুতিতে ব্রিটিশদের সাথে মুসলমানদের দ্বন্দ্বের প্রতিচ্ছবি আমরা সব সময় দেখতে পাই।

১৮৩৭ সালে ভারতের দাপ্তরিক ভাষা পরিবর্তন করে ফারসীর বদলে ইংরেজীর প্রচলন করা হয়। ব্রিটিশদের এই পদক্ষেপকে ভারতের মুসলমানরা তাদের উপর আঘাত হিসেবে বিবেচনা করে।

এর আগে ১৮৩৫ সালে English Education Act প্রবর্তিত হলে, ব্রিটিশ ভারতের ইংরেজী ভাষা ও ব্রিটিশ পদ্ধতিতে শিক্ষা প্রদানের উদ্যোগ শুরু হয় কিন্তু মুসলমানরা সচেতনভাবে ব্রিটিশ প্রবর্তিত শিক্ষা হতে দূরে থাকে। এর পিছনে মূলত: ধর্মীয় কারন সহ পরাজিতের শাসকের আক্রোশটি বেশি কাজ করেছিল। এবং আমরা দেখতে পাই, এই আক্রোশটি পরবর্তীতে ভয়াবহ ধর্মীয় চেহারা ধারণ করেছিল।

আধুনিক শিক্ষা থেকে দূরে থাকার ফলে, অনিবার্য পরিণতি হিসেবে ভারতের মুসলমানরা শিক্ষা, ব্যবসায়-বাণিজ্য, সাহিত্য-সুকুমারবৃত্তির চর্চা, সরকারী চাকুরী সহ সর্বত্র পিছিয়ে পড়েছিল। এই পিছিয়ে পড়া মুসলমানদের মধ্যে বঙ্গের মুসলমানদের কথা বিশেষভাবে বলতে হয়; কারন, ভারতে ব্রিটিশ শাসনামলের যাত্রা বাঙলা হতে শুরু হয়।

ধর্ম, বাঙলা ভাষার আঞ্চলিকতা, ব্যবসায়-বাণিজ্য, শিক্ষা-সাহিত্য চর্চার দিক হতে বাঙলা দুই ভাগে বিভক্ত ছিল; পূর্ববঙ্গ ও পশ্চিমবঙ্গ। পূর্ববঙ্গের বাঙালিদের অধিকাংশ ছিল ধর্মে মুসলমান, ব্যবসায়-বাণিজ্য-শিক্ষা-সাহিত্য চর্চায় ছিল অনগ্রসর; অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের অধিকাংশ ধর্মে হিন্দু, ব্যবসায়-বাণিজ্য-শিক্ষা-সাহিত্য চর্চায় ছিল অগ্রসর, সবচেয়ে বড় কথা হলো ব্রিটিশদের তৎকালীন রাজধানী কোলকাতা ছিল পশ্চিমবঙ্গে এবং ব্রিটিশদের সরকারী কর্মচারী শ্রেণীর একটি বড় অংশ ছিল বাঙালি হিন্দু।
তাই, খুব স্বাভাবিক পরিণতি হিসেবে দুই বাঙলার হিন্দু-মুসলমানদের মাঝে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছিল।

মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব ও মারাঠা সম্রাট শিবাজীর বদ্যনতায় সারা ভারতে মুসলমান-হিন্দুদের মাঝে ধর্মীয় জাতিভিত্তিক দ্বন্দ্ব স্পষ্টভাবে শুরু হয়েছিল। সেই দ্বন্দ্বের প্রভাব ব্রিটিশ শাসনামলেও রয়ে গিয়েছিল। তাই, ব্রিটিশদের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে শিক্ষা-সাহিত্য-আর্থিক দিক থেকে এগিয়ে যাওয়া বাঙালি-হিন্দুদের বাঙালি-মুসলমানরা অপছন্দ করতো।

অবশ্য এই অপছন্দের আরেকটি অনুঘটক আছে, তা হলো- ভারতের মুসলমানরা তাদের মসনদ চুড়ান্তভাবে ব্রিটিশদের কাছে খুঁইয়েছিল। তাই, ব্রিটিশদের মিত্রদের ভারতের মুসলমানরা ঠিক মধুদৃষ্টিতে দেখতো না। সেকারনে, ব্রিটিশদের মিত্র ও সরকারী কর্মচারী শ্রেনী হয়ে উঠা বাঙালী-হিন্দুদের সাথে বাঙালী-মুসলমানের হ্রেষাহ্রেষি ছিল।

আগেই বলেছি, দুই বাঙলার মধ্যে একটি দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছিল আর এই দ্বন্দ্বের পিছনে মূল উপাদান ছিল- ধর্ম ও বাঙলা ভাষার আঞ্চলিকতার পার্থক্য এবং ব্যবসায়-বাণিজ্য-শিক্ষা-সাহিত্য-সরকারি চাকুরিতে পশ্চিমের অগ্রসরতা ও পূর্বের পিছিয়ে পড়ে যাওয়া।

বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে এসে পিছিয়ে পড়া মুসলমান অধ্যুষিত পূর্ববঙ্গের উন্নতির জন্য তোড়জোড় শুরু হয়, পূর্ববঙ্গের জন্য আলাদা প্রশাসনিক কাঠামোর দাবি উঠে। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন, বঙ্গভঙ্গ-রদ-বিরোধী আন্দোলন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা আন্দোলনে আমরা স্পষ্টাবে পূর্ববঙ্গের মানুষদের তাদের ন্যায্য অধিকার সম্বন্ধে সচেতন হতে দেখি।

পূর্ববঙ্গের অনগ্রসতরাকে দূর করতে বাঙলাকে প্রশাসনিকভাবে দুই ভাগ করা তখন সময়ের বাস্তবতা ছিল। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ করা হলে পূর্ববঙ্গের বুদ্ধিজীবি সমাজের প্রায় সবাই খুশি হয়েছিল এবং এতে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছিলেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের বুদ্ধিজীবি সমাজ বঙ্গভঙ্গকে বাঙলাকে দ্বিখন্ডিত করার ব্রিটিশ অপপ্রয়াস হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন।

১৯১১ সালে পশ্চিমবঙ্গীয় বুদ্ধিজীবি সমাজের ব্যাপক বিরোধিতার মুখে বঙ্গভঙ্গ রদ করা হয়। ফলশ্রুতিতে, পূর্ববঙ্গে চরম হতাশা দেখা দেয়। এই সময়টাতে পূর্ব ও পশ্চিম বঙ্গের বিরোধ অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে সুস্পষ্ট হয়ে উঠে। পূর্ববঙ্গের মানুষরা ব্রিটিশরাজ ও পশ্চিমবঙ্গের মানুষদের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ে। বেশকিছু ক্ষেত্রে পূর্ব-পশ্চিমের এই দ্বন্দ্বটি ধর্মীয় তথা হিন্দু-মুসলমান দ্বন্দ্বের চেহারা ধারণ করে। সে সময় পূর্ব-পশ্চিমের সম্পর্ক এতটাই তিরিক্ষে হয়ে গিয়েছিল যে, মজা করে অনেকেই বলতেন, এবার বুঝি ঘটি-বাঙাল যুদ্ধটা বেঁধেই গেল।

বঙ্গভঙ্গ রদ হবার পর পূর্ববঙ্গের মানুষরা নিজেদের নিগৃহীত অবস্থাটি খুব ভালোভাবে বুঝতে পারে। এই সময়টিতে পূর্ববঙ্গের কেন্দ্রবিন্দু ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের আন্দোলন খুব জোরেশোরে শুরু হয়। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পথ খুব সহজ ছিল না। দুই বঙ্গের শিক্ষিত সমাজের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব ও অবিশ্বাস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পথকে বন্ধুর করে তোলে।

১৯১২ সালে ব্রিটিশ ভারতের ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ ঢাকায় এসে পূর্ববঙ্গের শিক্ষিত সমাজ, বুদ্ধিজীবি ও নেতাদের সাথে এক বৈঠক করেন। ১৯১২ সালের ৩১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত এই সভায় নওয়াব সলিমুল্লাহ খান, নওয়াব সৈয়দ আলী চৌধুরী, শের-ই-বাংলা এ. কে. ফজলুল হক সহ পূর্ববঙ্গের প্রতিনিধিত্বশীল অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা বঙ্গভঙ্গ রদে তাঁদের হতাশা ব্যক্ত করেন এবং এই অঞ্চলের তথা পূর্ববঙ্গের উন্নতির জন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব করেন।

পরবর্তীতে, লর্ড হার্ডিঞ্জ পরিস্থিতি বিবেচনা করে ও পূর্ববঙ্গের প্রজাদের সন্তুষ্ট করতে ১৯১২ সালের ০২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করেন। আর এর সাথে শুরু হয় পশ্চিম ও পূর্ববাঙলার বুদ্ধিজীবি ও প্রতিনিধিত্বশীলদের আরেকটি মহাদ্বন্দ্ব।

সরকারিভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেবার পর পশ্চিমবঙ্গের বুদ্ধিজীবিরা এর বিরোধিতা করা শুরু করেন। সংবাদপত্র ও রাজনৈতিক মঞ্চ এই বিরোধিতা প্রকাশের প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই দ্বন্দ্ব হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্বের চেহারা ধারণ করে।

ড. রাসবিহারী ঘোষের নেতৃত্বে একদল পশ্চিমবঙ্গীয় বুদ্ধিজীবি লর্ড হার্ডিঞ্জের সাথে দেখা করেন। তাঁরা তীব্রভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেন এবং একে বাঙলাকে দ্বিখন্ডিত করার ব্রিটিশ ষড়যন্ত্রের একটি অংশ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
তখন ব্রিটিশ সরকার থেকে জানানো হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ পূর্ববঙ্গের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্টীকে আলোকিত করার প্রচেষ্টা বৈ অন্য কিছু নয়।

এই সময় পশ্চিমবঙ্গীয় বুদ্ধিজীবিরা বেশ কিছু সাম্প্রদায়িক বক্তব্যও দেয়া শুরু করেন।
গুরুদাস বন্দোপাধ্যায় বলেছিলেন- “পূর্ববঙ্গের মানুষরা মুসলমান ও কৃষক; ওরা বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে কি করবে? বিশ্ববিদ্যালয় কি কৃষি কাজ করার স্থান?”
সে সময় এমনও রবও উঠে, “মুসলমানদের জন্য আর কত বিশ্ববিদ্যালয় হবে?”
এর জবাবে, পূর্ববঙ্গের বুদ্ধিজীবি ও প্রতিনিধিত্বশীলরা এবং ব্রিটিশরাজ এটা নিশ্চিত করেছিলেন যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শুধুমাত্র মুসলমানদের জন্য নয়, বরং পূর্ববঙ্গের পিছিয়ে পড়া সকল সম্প্রদায় ও জাতির মানুষদের এগিয়ে নেবার জন্য স্থাপন করা হচ্ছে, সকলে এখানে পড়াশুনোর সুযোগ পাবেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় বিরোধিতা করেছিলেন, এমন আরেকজন পশ্চিমবঙ্গীয় বুদ্ধিজীবি হলেন কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আশুতোষ মুখোপাধ্যায়। তিনি রীতিমত আদাজল খেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতায় নেমেছিলেন। পত্রিকায় লেখালেখি, বক্তৃতা, সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করা সহ হেন প্রচেষ্টা নেই, যা উনি করেননি।

আশুতোষ বাবুর এই কর্মযজ্ঞ দেখে লর্ড হার্ডিঞ্জ তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, কিসের বিনিময়ে উনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় তাঁর বিরোধিতা প্রত্যাহার করবেন। আশুতোষ বাবু এই প্রস্তাব প্রত্যাখান করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করে গিয়েছিলেন।

পরবর্তীতে অবশ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় ব্রিটিশরাজের দৃঢ়তা দেখে আশুতোষ বাবুর বরফ গলেছিল; কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে চারটি নতুন প্রফেসর পদ সৃষ্টির অনুমতি প্রাপ্তির বিনিময়ে উনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয প্রতিষ্ঠায় তাঁর বিরোধিতা প্রত্যাহার করেছিলেন।

দু’একজনের বরফ গললেও পশ্চিমবাঙলার অধিকাংশ বুদ্ধিজীবি ও প্রতিনিধিত্বশীলরা গোঁ ধরেছিলেন, কোনভাবেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন হতে দেয়া যায় না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করে দুই বাঙলার বিরোধ বাড়তে থাকে। বিরোধের চেহারা ক্রমশ ধর্ম, ভাষাগত ও জীবনাচরণের পার্থক্যের দিকে রূপান্তরিত হতে থাকে। পশ্চিম ও পূর্ববঙ্গের বিরোধ তিক্ততার সর্বোচ্চ পর্যায়ে চলে যায়।

অবশ্য এটা অস্বীকার করার উচিত হবে না যে, পশ্চিমবঙ্গের এই বিরোধিতা শুধুমাত্র এক-বাঙলা টিকিয়ে রাখার জন্য ছিল না, এক-বাঙলা তত্ত্বের আড়ালে লুকিয়ে ছিল হিন্দু-মুসলমানের ধর্মীয় দ্বন্দ্ব, বাঙলা ভাষার আঞ্চলিকতার পার্থক্য ও ব্যবসায়-বাণিজ্য-শিক্ষা-সাহিত্য-সরকারি চাকুরিতে পুবের চেয়ে পশ্চিমের অগ্রসরতার কারনে তাদের নাক-উঁচা মনোভাব।

পূর্ব-পশ্চিমের এই তুমুল দ্বন্দ্বের মাঝেই ১৯১২ সালের ১২ এপ্রিল ব্রিটিশ-ভারত সরকার বাঙলার প্রাদেশিক সরকারকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার একটি সম্পূর্ণ প্রস্তাবনা পাঠায়। সরকারিভাবে বলা হয়, পূর্ববঙ্গের পিছিয়ে পড়া জনসাধারণকে এগিয়ে নেবার জন্য কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর চাপ কমানোর জন্য ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা জরুরি। এর মাঝে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রক্রিয়া শিথিল হয়ে যায়।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত শত বৈরিতা ও আপত্তি সত্বেও ১৯২০ সালের ২৩ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আলোর মুখ দেখে। আর এর মাধ্যমেই মূলত: পূর্ববঙ্গের আলাদা রাজনৈতিক স্বত্তার পূর্ণ আর্বিভাব ঘটে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ভারতের ব্রিটিশ সরকারের যুক্তিটি পরবর্তী সময়ে বাস্তবতা হয়ে দেখা দিয়েছে। সত্যিই পূর্ববঙ্গের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে আলোকবর্তিকার কাজ করেছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়।

পূর্ববঙ্গের মানুষদের মাঝে উচ্চশিক্ষার বিস্তার ও রাজনৈতিক চেতনা বিকাশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন ও পূর্ববঙ্গ তথা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ঢাবির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বস্থানীয় সম্পৃক্ততা তার স্বাক্ষ্য বহন করে।

পরিশিষ্ট:

বর্তমানে কেমন চলছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়?

এই প্রশ্নের উত্তরটি দু:খজনক; শিক্ষকদের দলাদলি, শিক্ষার্থীদের নোংরা রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ততা, প্রশাসনিক জটিলতা ও সার্বিক মানের স্খলন এক সময়ের প্রাচ্যের অক্সফোর্ডের সুনামকে আজ মৃতবৎ করে ফেলেছে। অবশ্য এই বাস্তবতাটি বাংলাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রযোজ্য। আমার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ও দুর্বাত্তয়নের এই কালো থাবার বাইরে নয়।

সবকিছুর পরও পূর্ববঙ্গ তথা বর্তমান বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নতি বাতিঘর হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা অসামান্য ও চিরস্মরণীয়।

বাংলাদেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যথাযথ শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে আলোকিত মানুষ সৃষ্টি করবে, এই কামনায় আজ উঠছি।

[ লেখাটির তথ্যের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইতিহাসবিদ ড. আর. সি. মজুমদারের “ঢাকার সৃত্মি” নিবন্ধটি এবং John F. Riddick এর The History of British India: A Chronology বইটির প্রতি কৃতজ্ঞ ]