আচ্ছা, মানুষ কি যৌন মর্ষকামী, বিকৃত যৌনকামী?
পত্রিকা, টিভি, ফেসবুক, চোখের সামনে সবখানে মানুষের যৌন মর্ষ ও বিকৃতকামিতার হাজারো উদাহরণ।

চিন্তাটা মাথায় এলো টিপু কিবরিয়ার ঘটনা শোনার পর।
টিপু কিবরিয়া শিশুদের দিয়ে পর্ণ বানাচ্ছে আজ নয় বছর; লোকটা আবার জনপ্রিয় শিশু সাহিত্যিক।

এখানে চাহিদা যোগানের বিষয় মাথায় এলো।
শিশুপর্ণের চাহিদাটা মানুষ হিসেবে খুব বেমানান লাগে, মেনে নিতে পারি না।
সারাবিশ্বে শিশু পর্ণগ্রাফীতে প্রতিবছর ২০ বিলিয়ন ডলারের বেশি (১,৬০,০০০ কোটি টাকার বেশি) লেনদেন হয়, যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। (সূত্র)
ভাবা যায় !

বেশ কয়েকবছর আগে মানুষের সেক্স বিষয়ক মনোজগত নিয়ে কাজ করতে যেয়ে বিভিন্ন মানুষের যৌন জীবন সম্পর্কে জানতে পেরে বিষম খেয়েছি।
অজাচার (ইনসেস্ট), শিশুদের প্রতি যৌনকাম, যৌন মর্ষকামিতার চর্চা মানুষের মাঝে খুব দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এদের যুক্তিগুলোও খুব অদ্ভুত; সবকিছুর উপরে এরা নিজেদের আত্মতৃপ্ততাকে প্রাধান্য দেয়।
কিন্তু এতে করে কার কি ক্ষতি হলো, তা এদের ভাবনা জগতে নাড়া দেয় না।

অজাচারে অভ্যস্ত ছিলেন এমন একজন ছোটবেলায় লুকিয়ে লুকিয়ে প্যারেন্টসদের শারীরিক সম্পর্ক দেখতেন এবং এটা তার অভ্যস্ততায় পরিণত হয়েছিল।
তার যৌন ভাবনার উত্তেজনার অংশটুকু তার খুব নিকটাত্মীয়দের ঘিরে গড়ে উঠেছিল।
পরবর্তীতে তিনি জোর করে নিকটাত্মীয়াদের সাথে অজাচারে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন।
অনেক সময় পরে যেয়ে, মানসিক ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হয়ে তিনি ওই জগত থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছিলেন কিন্তু ততদিনে যা ডেমেজ হবার হয়ে গেছে।
অনেকগুলো জীবন ভয়ংকর জটিল মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে গেছে।

একজন ভদ্রমহিলা আমার কলিগ ছিলেন, যার সৎ-পিতা তাঁর প্রতি যৌনাসক্ত ছিলেন; নব্বইয়ের দশকে উনার কৈশোর বেলায় জোর করে শারীরিক সম্পর্ক করেছিল।
এই ঘটনার পর স্বাভাবিক কারণে ভদ্রমহিলার জীবন এলোমেলো হয়ে যায়।
উনি এখনো স্বাভাবিকভাবে কোন বয়স্ক পুরুষের সাথে মিশতে পারেন না; উনার প্রেসার বেড়ে যাওয়া, মেজাজ খারাপ হয়ে যাওয়া, থ্রেটেন্ড ফিল করা জাতীয় নানান সমস্যা দেখা দেয়।

শিশুদের উপর যৌন নির্যাতন বাংলাদেশে খুব কমন বিষয়।
ধর্মীয় শিক্ষাগুরু, বয়সে বড় কাজিন, পরিবারের গুরুজন, শিক্ষক, পিতা-মাতার ঘনিষ্টজনেরা, ব্যাক্তি বিশেষের কাছে সম্মানিত ব্যাক্তিদের দ্বারা শিশু যৌন নির্যাতনের ঘটনা খুবই কমন।
তবে, এই ক্ষেত্রে শুধুমাত্র শিশু না বলে সব বয়সের মানুষকে অর্ন্তভুক্ত করা যায়।
গল্পছলে যৌনাবেগ নিয়ে গায়ে হাত দেয়া, হাত ধরা, পিঠে হাত বোলানো, স্পর্শকাতর জায়গায় ভুল করে হাত লেগে গেছে ভাব দেখিয়ে স্পর্শ করা সবই কিন্তু বিকৃত কাম রুচির অর্ন্তভুক্ত।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় আমার এক সহপাঠীকে খেয়াল করতাম, বান্ধবীদের সাথে এই ধরণের আচরণ করতো।
পরে একদিন খোলাখুলি ওর সাথে এসব নিয়ে কথা বলার পর, সে স্বীকার করে, সে আসলে বন্ধুত্বের দাবি নিয়ে নয়, ইচ্ছে করে যৌনাবেগ নিয়ে বান্ধবীদের স্পর্শ করে।
এই করে সে যৌনতৃপ্ততা লাভ করে।
স্বমেহনের সময় এই স্পর্শের সৃত্মিগুলোকে সে ব্যবহার করে।

মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ একজন জেষ্ঠ্য বন্ধুর কাছে এক দম্পতির কথা শুনেছিলাম।
পুরুষ সঙ্গীটি সঙ্গীনিকে কষ্ট দিয়ে সহবাস করতে আনন্দবোধ করে।
বেশ অনেকদিন ট্রিটমেন্ট করার পর ভদ্রলোক পরিবর্তন হয়েছিলেন।

প্রশ্ন জাগে, কেন মানুষ এরকম হয়?
কেন মানুষ এরকম বিকৃত কামাসক্ত হয়?
এরা কি বুঝে না যে, যে তার ভিক্টিম হচ্ছে, সে কষ্ট পায়।
উত্তরটা আমাদের অজানা নয়; নিপীড়ক মাত্রই জানে নিপীড়নের শিকার হওয়া ব্যাক্তি কষ্ট পায় এবং এই কষ্ট দেখে সে সুখ লাভ করে।

আমাদের সমাজের হিপোক্রেসী অবাক করে দেয়।
আমরা অনাগ্রাসী সমকামীকে সহ্য করতে পারি না কিন্তু ধর্ষক, শিশু যৌন নিপীড়ককে ঠিকই স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করি।

যে প্রসঙ্গে ছিলাম- টিপু কিবরিয়া…
টিপু কিবরিয়া বা তার মতো মানুষরূপী পশুদের হাত থেকে কিভাবে সমাজকে বাঁচানো যাবে?
উত্তরটি আমার মতে, দ্রুত বিচার ও কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা এবং মানবিক বিষয়ে মানুষে সচেতন করে তোলা।

এই সব অন্যায়, অনাচার সমাজে প্রশ্রয় পায়, ফ্রিকুয়েন্টলি ঘটতে থাকে, তার কারন আমাদের বিচার ব্যবস্থার দুর্বলতা।
বিচার ও শাস্তি না হওয়া বা বিচার-শাস্তির দীর্ঘসূত্রিতা মানুষের অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধির একটি বড় অনুঘটক।

বাংলাদেশে প্রচলিত “তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন-২০০৬” বলছে-
অনলাইনে যেকোন প্রকার পর্ণজাতীয় যেকোন ছবি, অডিও, ভিডিও, লিখা, বই প্রদর্শন-প্রচার এবং বাণিজ্য ও সংরক্ষণ করা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ও শাস্তিযোগ্য।
এর শাস্তি হিসেবে ৫৭ ধারায় বলা হয়েছে দশ বছরের কারাদন্ড ও/অথবা, দশ কোট টাকা অর্থদন্ড।

“নারী ও শিশুর উপর সহিংসতা প্রতিরোধ আইন” বলছে-
বাংলাদেশে আইন অনুসারে শিশুদের দিয়ে পর্ণগ্রাফি করানোর শাস্তি আজীবন কারাদন্ড অথবা মৃত্যুদন্ড।

টিপু কিবরিয়ার বিচার দ্রুততম সময়ে শেষ হোক এবং তার উপর দৃষ্টান্তমূলকভাবে সর্বোচ্চ শাস্তির রায় কার্যকর হোক, এটাই চাওয়া।

লেখা শেষ করার আগে, একটা কথা না বললেই নয়, সবকিছুর উপরে আমাদের সত্যিকার অর্থে মানুষ হতে হবে।
আমাদের মনে রাখতে হবে, আমরা মানুষ, নিম্নবর্গের কোন প্রাণী নই।
যৌন মর্ষকামিতা, বিকৃত যৌনকামিতা, শিশু যৌনাগ্রহ কোন মানুষের মাঝে থাকতে পারে না।
মানবিক বিষয়ে, মানবিক গুনাবলীর বিষয়ে আমরা যতদিন সচেতন হবো না, ততদিন এই দৈত্যবৃত্তি থেকে আমাদের নিস্তার নেই।

মানুষের সুকুমারবৃত্তি জাগ্রত হোক…

[ টিপু কিবরিয়া বিষয়ক খবরের প্রাসঙ্গিক লিংক ]