এক হাতে তালি বাজে না, নিশ্চয়ই ধর্ষিতা মেয়েটার চরিত্রেও সমস্যা ছিলো। এমনি এমনি কি ধর্ষণ হয় নাকি। মেয়েরা ছোট ছোট কাপড় পরে ঘুরে বেড়াবে, আর ছেলেরা কিছু করলেই দোষ। এই মেয়েরাই সব নষ্টের গোড়া, একজন পুরুষের শারীরিক প্রবিত্তিই হচ্ছে নারীদেহের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া এবং এটাই স্বাভাবিক। পুরুষদের কিছু দোষ থাকলেও মূল দোষটা আসলে মেয়েদের, মেয়েরা ঠিক থাকলে এত ধর্ষণ হয় না। ঠিকঠাক মত পর্দা করলে কখনোই রেপ হয় না…..

এই ধরণের কথাবার্তা আমাদের সমাজে ব্যাপক প্রচলিত। আসুন এবারে একটু হাতে-নাতে টেস্ট করে দেখি।

ধরেন আপনি রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় ছিনতাইয়ের শিকার হলেন। ছিনতাইকারীর ছুরির মুখে সাধের মোবাইল আর মানিব্যাগটা তুলে দিলেন। তবে আশার কথা হচ্ছে ছিনতাইকারী ধরা পড়লো। বিচার ও হলো। কিন্তু আদালতে উকিল এক অদ্ভুত যুক্তি দেখালো। যেহেতু এক হাতে তালি বাজানো যায় না সুতরাং এই ছিনতাইয়ের পেছনে ছিনতাইয়ের শিকার ব্যাক্তিটিরও সমান অবদান আছে।

একই কথা বলা যায় রাস্তায় পড়ে থাকা একটা লাশের ক্ষেত্রেও। তাকে কেন খুন করা হয়েছে এটার জন্য নিশ্চয়ই সে নিজেও দায়ী। আফটার অল এক হাতে তো আর তালি বাজে না। আজ থেকে আপনার বাড়িতে চুরি হলে আর থানায় যাবেন না, ডাকাত পড়লে থানায় জিডি করতে পারেন, তবে ডাকাতের সাথে নিজের পরিবারের সদস্যদের নামের লিস্টও দিয়ে আসবেন। আফটারঅল এক হাতে তো তালি বাজে না। এত বাসা থাকতে কেন আপনার বাসাতেই ডাকাত পড়লো। নিশ্চয়ই আপনার চলাফেরায় সমস্যা ছিলো। আপনারও বিচার হওয়া দরকার।

একজন মানুষকে জোর-জবরদস্তি করে অস্ত্রের মুখে ধর্ষণ করে যখন তার পোশাকটা দোষ দেন বলেন এক হাতে তালি বাজে না, মেয়েরও দোষ আছে। তখন আমার কাছে বড় অদ্ভুত লাগে সেই যুক্তি। সেই আপনাকেই একাত্তরের তিন লক্ষ ধর্ষণের কথা বললে বলেন পাকিস্তানিরা খারাপ ছিলো পুরান প্যাচাল ছাড়েন। শিশু ধর্ষণ হলে বলেন সিক মেন্টালিটির মানুষ। হিজাব পরা মেয়ে ধর্ষিত হলে বলেন পাগল।

আমাকে একটু বোঝান কোন ধর্ষকটা ভালো ??

আমাকে শুধু একটা কেইস দেখান যে খুব নম্র, ভদ্র, বিনয়ী একটা ছেলে, যার নামে কোন মামলা নাই, বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা ছাত্র, বাবা-মার গৌরব। একটা উগ্র পোশাক মিনি স্কাট পরিহিতাকে দেখে নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে ঝোপে ফেলে ধর্ষণ করলো। এরকম একটা কেইস দেখান।

পোশাকের কারণে ধর্ষিত হয়েছে এরকম শুধু একটা কেইস দেখান।

আমি কয়েকটা কেইস দেখাই।
আপনারা বলেন;

অনেক দিন পর পর মা’কে দেখার জন্য ১৯৯৫ সালের ২৪ আগষ্ট ঢাকা থেকে বাড়ী যাচ্ছিল গার্মেন্টস কর্মী কিশোরী ইয়াসমিন। পথমধ্যে ইয়াসমিনকে নির্মমভাবে ধর্ষণ করে পুলিশ, এবং তাকে হত্যা করে লাশ দিনাজপুর শহরের পাঁচ কিলোমিটার দূরে রাস্তায় ফেলে দেয়। বলেই এই মেয়েটার কি দোষ ছিলো । মিনি স্কাট পরে কি সে পুলিশের সামনে…

২৮ অক্টোবর ২০১৩, ইয়াং ওয়ান গার্মেন্টস এর এক কর্মী সকালে কর্মস্থলে যাবার উদ্দেশ্যে সাভার বাস স্ট্যান্ড থেকে আনন্দ সুপার পরিবহনের একটি গাড়িতে উঠে। ওই গার্মেন্টস কর্মী গাড়িতে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে অন্যযাত্রী না নিয়ে দরজা বন্ধ করে গাড়ি ছেড়ে দেয় সুপারভাইজার। গাড়িটি সাভারের আমিন কমিউনিটি সেন্টার ছেড়ে আসার পর গাড়ির হেলপার ও সুপারভাইজার গার্মেন্টস কর্মীকে জড়িয়ে ধরে তার গলায় থাকা চেইনটি ছিনিয়ে নেয়। এরপর তাকে ধর্ষণ করে। বলেন এই ঘটনায় কিভাবে জড়াবেন মেয়েটার পোশাক ?

৩০-১১-২০১২, সাজিয়া দক্ষিণখানের নোয়াপাড়া আমতলার একটা ক্লিনিকের খণ্ডকালীন চিকিৎসক ছিলেন। ঘটনার আগের রাত বৃহস্পতিবার ওই ক্লিনিকে তাঁর রাতের পালায় দায়িত্ব ছিল। কাজ শেষে রাত ১২টার দিকে ওই ক্লিনিকের বিশ্রামাগারে ঘুমাতে যান। এরপর দুবিত্তরা ধর্ষণ করার চেষ্টা করে তাঁকে এরপর হত্যা করা হয় রাজিয়াকে। মজার ব্যাপার হচ্ছে রাজিয়া নিয়মিত হিজাব করতেন। হিজাব করার কারণে রাজিয়াকে ছেড়ে দেয়নি ধর্ষক।

পরিমল জয়ধর রাজধানীর একটি নামকরা স্কুলের শিক্ষক। নিজের ছাত্রীকে ধর্ষণ করে তার ভিডিওচিত্র ধারন করে। পরবর্তীতে সেই ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে নির্যাতিতা মেয়েটাকে আরও অনেকবার নির্যাতন করে। মেয়েটার জীবন থমকে গ্যাছে। ক্লাস এইটের মেয়ে, পোশাক কে কিভাবে দুষবেন বোঝান..

এভাবে একটার পর একটা লিখতে থাকলে রাত পার হয়ে যাবে। আমি মাত্র কয়েকটা ঘটনার উদাহরণ দিলাম। এই সবগুলো ঘটনাই আলোচিত। আপনি আমাকে শুধু এমন একটা ঘটনার কথা বলেন যেখানে শুধুমাত্র পোশাকের কারণে একটা মেয়েকে রেপ করা হয়েছে এবং ছেলেটা নিরীহ ছিলো।

একটা শুধু একটা…

কথা দিচ্ছি… আমি মেনে নেবো…
লেখা সরিয়ে নেবো… আর লিখবো না…

জানি পারবেন না। কোন দিন পারবেন না।
আচ্ছা আপনার কি লজ্জা করে না। ধর্ষকের হয়ে সাফাই গাইতে।
একবার নিজের বোন কে নির্যাতিতা মেয়েটার জায়গার দাঁড় করিয়ে ভাবুন তো।

আমাদের সমস্যাটা এক জায়গায়, নিজেকে কখনো ঐ জায়গায় দাঁড় করিয়ে ভাবি না। দাঁড়া করালে বুঝতে পারতেন এক হাতে তালি বাজে কি বাজে না।

সুব্রত শুভ’দার অনেক পুরনো একটা লেখা থেকে খানিকটা কোট করছি ;

“ভাইয়েরা আমার!!! পিলিজ বিষয়টি এড়িয়ে যাবেন না দয়া করে।

আমরা চলাফেরার সময় আপনারা অসচেতনার সহিত অনেক কিছু গায়ে জড়িয়ে বের হন, যা আপাদের করা উচিত না। যেমন- আপনারা ফরমাল ড্রেস পরে বের হন। একবার ভাবুন আপনাদের পেছনের শেপ বোঝা যায়, আপনাদের বুকের মাপ বোঝা যায় আপনাদের অনেক আর্কষনীয় লাগে এতে মেয়েরা আপনাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। এবং এর জন্য মেয়েটি দায়ী নয় বরং আপনি দায়ী কারণ আপনি এমন পোশাকটি পরে আসছেন।

ভাইয়েরা, একবার ভেবে দেখুন; আপনি যখন টি র্শাট গায়ে দেন তখন আপনার বাহু দেখা যায় তাতে একটি মেয়ে উত্তেজিত হতে পারে তাই এমন পোশাক অবশ্যই পরা উচিত না। আর যদি আপনি বডি বিল্ডার বা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হোন তাহলে তো কথাই নেই প্রতিটি মেয়ে আপনাকে ডেব ডেব করে দেখবে। আপনি কেন আপনার বাপ, ভাই কে এমন টি শার্ট গায়ে দিয়ে রাস্তায় বের হতে দেন। একবার ভাবুন তো কেউ আপনার ভাই ও বাবার দিকে তাকালে আপনার কেমন লাগবে? আসুন এই পোশাক পরিহার করি।

ভাই একবার ভাবুন আপনি যখন থ্রি কোয়াটার পরে বের হোন তখন আপনার সুন্দর পা দেখে কী মেয়েরা খাদকের মতন তাকিয়ে থাকে না? তাহলে কেন আপনি সেই পোশাকটি পরেন। অনেকেই না বুঝে পরে তাই পোশাক বাছাইয়ে সাবধান হোন এবং সুন্দরের পথে আসুন। ভাইয়েরা আপনার গরম লাগে বলে হাফ হাতা জামা পড়েন যা একেবারেই উচিত না। কারণ আপনার বাহু বের হয়ে থাকে যা একদম অনুচিত। আপনে ধর্ষিত হলে কিন্তু মেয়েটার দোষ নেই বরং আপনার পোশাকটি ও আপনি দায়ী।

ভাইরা আমার, চুল দেখিয়ে হাঁটবেন না প্লিজ। আপনার সুন্দর সিল্কি চুল দেখলে মেয়েরা চুলে হাত বুলাতে চাইবে। আপনার চুলের দিকে তাকিয়ে থাকবে। প্লিজ ভাইয়েরা মাথা ঢেকে চলাফেরা করুন।

ভাইয়েরা, আপনারা স্টাইল করে বুকের বোতাম খুলে চলা ফেরা করেন। একবারও কি ভেবে দেখেছেন আপনার খোলা বুক সাথে যদি পশম থাকে তাহলে মেয়েদের কেমন অবস্থা হয়। ধর্ষন হলে কিন্তু আপনাকে দায় নিতে হবে। কারণ যে কোন মেয়ে খোলা বুক দেখলে উত্তেজনা অনুভব করবে। এটাই স্বাভাবিক। লক্ষ্মী ভাইরা আমার প্লিজ বুকের বোতাম লাগিয়ে রাস্তায় বের হোন। কোন মেয়ে যাতে উত্তেজিত না হয় সে রকম পোশাক পরে বের হোন। একটি মেয়ে আপনার বাপ, ভাইয়ের দিকে ডেবডেব করে তাকিয়ে থাকুক তা নিশ্চই চান না। আসুন ভাইয়েরা আমরা সত্যের পথে আসি, সুন্দরের পথে আসি।“

………………………………………………………………………………………………

অনেকে ভাবতাসেন মালডা কি মেন্টাল কেস। পাগল-টাগল হইয়া গেলো। উপরের লেখাটা শুভ’দার মস্তিষ্ক প্রসূত; কিন্তু শুধু লিঙ্গ’টা পরিবর্তন করে দিলেই খুবই স্বাভাবিক বহুল প্রচলিত একটা ফেসবুক স্ট্যাটাসে পরিণত হবে। উপলক্ষটা হচ্ছে আমাদের সমাজের বহুল প্রচলিত মিথ “ধর্ষণের জন্য মেয়েদের পোশাক দায়ী”

ধর্ষণের জন্য কি সত্যিই নারীর পোশাক-আশাক, আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গি দায়ী?

তাই যদি হত তাহলে একাত্তরে আমাদের মা-বোনেরা কি এমন পোশাক পরেছিলেন ও আচরণ দেখিয়েছিলেন যে, পাকিবাহিনী তাদের নির্মমভাবে ধর্ষণ করেছিল? কেউ কি পাকিদের ধর্ষণের জন্য উন্মত্ত করেছিলেন সে সময়? প্রাসঙ্গিক ভাবেই সেসময়ের নারী নির্যাতনের কিছু উদ্বৃতি দিচ্ছি;

“……. এরপর উলঙ্গ মেয়েদের গরুর মতো লাথি মারতে মারতে, পশুর মতো পিটাতে পিটাতে ওপরে হেডকোয়ার্টারে দোতলা, তেতলা ও চারতলায় উলঙ্গ অবস্থায় দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। পাঞ্জাবি সেনারা চলে যাওয়ার সময় মেয়েদেরকে লাথি মেরে আবার কামরার ভেতর ঢুকিয়ে তালা বন্ধ করে চলে যেত। এরপর বহু যুবতী মেয়েকে হেডকোয়ার্টারের ওপর তলায় বারান্দায় মোটা লোহার তারের ওপর চুলের সাথে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয় প্রতিদিন পাঞ্জাবিরা সেখানে যাতায়াত করত। সেই ঝুলন্ত উলঙ্গ যুবতীদের, কেউ এসে তাদের উলঙ্গ দেহের কোমরের মাংস ব্যাটন দিয়ে উন্মত্তভাবে আঘাত করতে থাকত, কেউ তাদের বক্ষের স্তন কেটে নিয়ে, কেউ হাসতে হাসতে তাদের যৌনিপথে লাঠি ঠুকিয়ে আনন্দ উপভোগ করত, কেউ ধারালো চাকু দিয়ে কোনো যুবতীর পাছার মাংস আস্তে আস্তে কেটে আনন্দ উপভোগ করত, কেউ উঁচু চেয়ারে দাঁড়িয়ে উন্মুক্ত বক্ষ মেয়েদের স্তনে মুখ লাগিয়ে ধারালো দাঁত দিয়ে স্তনের মাংস তুলে নিয়ে আনন্দে অট্টহাসি করত……

……… প্রতিদিন এভাবে বিরামহীন প্রহারে মেয়েদের দেহের মাংস ফেটে রক্ত ঝরছিল, মেয়েদের কারও মুখের সামনের দিকে দাঁত ছিল না, ঠোঁটের দু’দিকের মাংস কামড়ে, টেনে ছিঁড়ে ফেলা হয়েছিল, লাঠি ও লোহার রডের অবিরাম পিটুনিতে প্রতিটি মেয়ের আঙুল, হাতের তালু ভেঙে, থেতলে ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল। এসব অত্যাচারিত ও লাঞ্ছিত মহিলা ও মেয়েদের প্রস্রাব ও পায়খানা করার জন্য হাতের ও চুলের বাঁধন খুলে দেওয়া হতো না একমুহূর্তের জন্য। হেডকোয়ার্টারের ওপরতলায় বারান্দায় এই ঝুলন্ত উলঙ্গ মেয়েরা হাত বাঁধা অবস্থায় লোহার তারে ঝুলে থেকে সেখানে প্রস্রাব-পায়খানা করত……

……উন্মত্ত পাঞ্জাবি সেনারা এই নিরীহ বাঙালি মেয়েদের শুধুমাত্র ধর্ষণ করেই ছেড়ে দেয় নাই পাকসেনারা সেই মেয়েদের ওপর পাগলের মতো উঠে ধর্ষণ করছে আর ধারালো দাঁত বের করে বক্ষের স্তন ও গালের মাংস কামড়াতে কামড়াতে রক্তাক্ত করে দিচ্ছে, ওদের উদ্যত ও উন্মত্ত কামড়ে অনেক মেয়ের স্তনসহ বক্ষের মাংস উঠে আসছিল, মেয়েদের গাল, পেট, ঘাড়, বক্ষ, পিঠের ও কোমরের অংশ ওদের অবিরাম দংশনে রক্তাক্ত হয়ে গেল। যে-সকল বাঙালি যুবতী ওদের প্রমত্ত পাশবিকতার শিকার হতে অস্বীকার করলে তৎক্ষণাৎ পাঞ্জাবি সেনারা ওদের চুল ধরে টেনে এনে স্তন ছোঁ মেরে টেনে ছিঁড়ে ফেলে দিয়ে ওদের যৌনি ও গুহ্যদ্বারের মধ্যে বন্দুকের নল, বেয়নেট ও ধারালো ছুরি ঢুকিয়ে দিয়ে সেই বীরাঙ্গনাদের পবিত্র দেহ ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছিল……

……অনেক পশু ছোট ছোট বালিকার ওপর পাশবিক অত্যাচার করে ওদের অসার রক্তাক্ত দেহ বাইরে এনে দু’জনে দু’পা দু’দিকে টেনে ধরে চড়চড়িয়ে ছিঁড়ে ফেলে দিল। পাঞ্জাবিরা শ্মশানের লাশ যে-কোনো কুকুরের মতো মদ খেয়ে সব সময় সেখানকার যার যে মেয়ে ইচ্ছা তাকেই ধরে ধর্ষণ করছিল। শুধু সাধারণ পাঞ্জাবি সেনারাই এই বীভৎস পাশবিক অত্যাচারে যোগ দেয় নাই, সকল উচ্চপদস্থ পাঞ্জাবি সামরিক অফিসারই মদ খেয়ে হিংস্র বাঘের মতো হয়ে দুই হাত বাঘের মতো নাচাতে নাচাতে সেই উলঙ্গ বালিকা, যুবতী ও বাঙালি মহিলাদের ওপর সারাক্ষণ পর্যায়ক্রমে ধর্ষণ কাজে লিপ্ত থাকত। কোনো মেয়ে, মহিলা যুবতীকে এক মুহূর্তের জন্য অবসর দেওয়া হয় নাই, ওদের উপর্যুপরি ধর্ষণ ও অবিরাম অত্যাচারে সেখানেই রক্তাক্ত দেহে কাতরাতে কাতরাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে অনেকে, পরের দিন এ সকল মেয়ের লাশ অন্যান্য মেয়েদের সম্মুখে ছুরি দিয়ে কেটে কুটি কুটি করে বস্তার মধ্যে ভরে বাইরে ফেলে দিত। এ সকল মহিলা, বালিকা ও যুবতীদের নির্মম পরিণতি দেখে অন্য মেয়েরা আরও ভীত ও সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ত এবং স্বেচ্ছায় পশুদের ইচ্ছার সম্মুখে আত্মসমর্পণ করত………

……যে-সকল মেয়ে প্রাণে বাঁচার জন্য ওদের সাথে মিল দিয়ে ওদের অতৃপ্ত যৌনক্ষুধা চরিতার্থ করার জন্য সর্বতোভাবে সহযোগিতা করে তাদের পেছনে ঘুরে বেড়িয়েছে, তাদের হাসি-তামাশায় দেহ দান করেছে তাদেরও ছাড়া হয় নাই। পদস্থ সামরিক অফিসাররা সেই সকল মেয়েদের ওপর সম্মিলিতভাবে ধর্ষণ করতে হঠাৎ একদিন তাকে ধরে ছুরি দিয়ে তার স্তন কেটে, পাছার মাংস কেটে, যৌনি ও গুহ্যদ্বারের মধ্যে সম্পূর্ণ ছুরি চালিয়ে দিয়ে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে ওরা আনন্দ উপভোগ করত………

প্রতিদিন রাজারবাগ পুলিশ লাইনের ব্যারাক থেকে এবং হেডকোয়ার্টার অফিসের ওপরতলা হতে বহু ধর্ষিত মেয়ের ক্ষতবিক্ষত বিকৃত লাশ ওরা পায়ে রশি বেঁধে নিয়ে যায় এবং সেই জায়গায় রাজধানী থেকে ধরে আনা নতুন নতুন মেয়েদের চুলের সাথে ঝুলিয়ে বেঁধে নির্মমভাবে ধর্ষণ আরম্ভ করে দেয়। এসব উলঙ্গ নিরীহ বাঙালি যুবতীদের সারাক্ষণ সশস্ত্র পাঞ্জাবি সেনারা প্রহরা দিত। কোনো বাঙালিকেই সেখানে প্রবেশ করতে দেওয়া হতো না…”

(পাকিস্তানী জেনারেলদের মনঃ মুনতাসির মামুন)

২)

“২৬ মার্চ ১৯৭১, বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেয়েদের ধরে আনা হয়। মেয়েরা আসা মাত্রই সৈনিকরা উল্লাসে ফেটে পড়ে। তারা ব্যারাকে ঢুকে প্রতিটি মহিলা এবং বালিকার পরনের কাপড় খুলে সম্পূর্ণ উলঙ্গ করে লাথি মেরে মাটিতে ফেলে ধর্ষণে লিপ্ত হতে থাকে। …পাকসেনারা ধর্ষণ করেই থেকে থাকেনি, সেই মেয়েদের বুকের স্তন ও গালের মাংস কামড়াতে কামড়াতে রক্তাক্ত করে দেয়, মাংস তুলে নেয়। মেয়েদের গাল, পেট, ঘাড়, বুক, পিঠ ও কোমরের অংশ তাদের কামড়ে রক্তাক্ত হয়ে যায়। এভাবে চলতে থাকে প্রতিদিন। যেসব মেয়ে প্রাথমিকভাবে প্রতিবাদ করত তাদের স্তন ছিড়ে ফেলা হত, যোনি ও গুহ্যদ্বারের মধ্যে বন্দুকের নল, বেয়নেট ও ধারালো ছুরি ঢুকিয়ে হত্যা করা হত। বহু অল্পবয়স্ক বালিকা উপর্যুপরি ধর্ষণে নিহত হন। এর পরে লাশগুলো ছুরি দিয়ে কেটে বস্তায় ভরে বাইরে ফেলে দেওয়া হত।”

(যুদ্ধ ও নারী)

৩)

ধর্ষণে লিপ্ত এক পাকিস্তানী মেজর তার বন্ধুকে চিঠি লিখেছে;

“আমাদের এসব উশৃঙ্খল মেয়েদের পরিবর্তন করতে হবে যাতে এদের পরবর্তী প্রজন্মে পরিবর্তন আসে, তারা যেন হয়ে ওঠে ভালো মুসলিম এবং ভালো পাকিস্তানী”

“We must tame the Bengali tigress and change the next generation Change to better Muslims and Pakistanis”

স্বাধীনতার পর ধর্ষিতা বাঙালী মহিলাদের চিকিৎসায় নিয়োজিত অষ্ট্রেলিয় ডাক্তার জেফ্রি ডেভিস গনধর্ষনের ভয়াবহ মাত্রা দেখে হতবাক হয়ে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে আটক পাক অফিসারকে জেরা করেছিলেন যে তারা কিভাবে এমন ঘৃণ্য কাজ-কারবার করেছিল। অষ্ট্রেলিয় চিকিৎসক বিচলিত হলেও পাক অফিসারদের সাচ্চা ধার্মিক হৃদয়ে কোন রকম রেখাপাত ঘটেনি। তাদের সরল জবাব ছিল,

“আমাদের কাছে টিক্কা খানের নির্দেশনা ছিলো যে একজন ভালো মুসলমান কখনই তার বাবার সাথে যুদ্ধ করবে না। তাই আমাদের যত বেশী সম্ভব বাঙালী মেয়েদের গর্ভবতী করে যেতে হবে।”

“We had orders from Tikka Khan to the effect that a good Muslim will fight anybody except his father. So what we had to do was to impregnate as many Bengali women as we could.”

আপনারা কি লক্ষ্য করেছেন টিক্কা খান কতোটা সফল ছিলেন ?

পাকিস্তানীরা হেরে গেলেও আমাদের সাচ্চা পাকিস্তানী করে রেখে গেছে। রাস্তা ঘাটে পাকিস্তানের পক্ষে কথা বলার লোকের অভাব হয় না। লোকটা আসলেই মাস্টারমাইন্ড ছিলো। খেয়াল করবেন এরা সবসময় গুড মুসলিম আর গুড পাকিস্তানী শব্দদুটো একসাথে বসায়। অর্থাৎ “গুড মুসলিম=গুড পাকিস্তানী”। একদম এ প্রজন্মের বাঙ্গালীদের মত যারা বলে, পাকিস্তানীরা মুসলিম তাই ওদের সমর্থন করি।

আর পরবর্তী প্রজন্মেও এই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে পাকিস্তানের বীজ ঔরসে ধারণ করতে
তাই আজও গ্যালারিতে প্ল্যাকাড উঁচু হয়।

“আফ্রিদি ম্যারি মি…”

পাকিবাহিনী বলুন আর যে কোনো ধর্ষণকারীই বলুন- এরা আসলে মানুষের পর্যায়ে পড়ে না। এদেরকে পশু বললেও পশুজাতির অবমাননা করা হয়। তাই এদের শুধুই ঘৃণ্য ধর্ষণকারী নামে গণ্য করা হোক। এখন বলুন মোদ্দা কথা একাত্তরের নারী ধর্ষণে নারী সমানভাবে দায়ী হয় কিভাবে। যখন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা হয়, যখন সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে তাদের স্ত্রী-কন্যাদের উপর পাশবিক নির্যাতন করা হয়, তখনও কি আপনারা বলবেন যে নারী নিজেই তার ধর্ষণের জন্য দায়ী?

কারো কাছে কি কোনো যুক্তি আছে কেন ২ বছরের শিশুকে ধর্ষিতা হতে হয়?
উপরের সবগুলো ঘটনায় নারী কিভাবে ধর্ষণের জন্য সমানভাবে দায়ী কেউ কি বলতে পারে?

আসলে ধর্ষণের জন্য নারী নয়, শুধুমাত্র এবং শুধুমাত্র ধর্ষনকারীর বিকৃত মানসিকতাই এককভাবে দায়ী। ধর্ষণকারী কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের কেউ নয়। ধর্ষণকারী নারীর পোশাক, বয়স, আচরণ কোনো কিছুই আমলে নেয় না। বিকৃত কাম চরিতার্থে নারীরা এদের শিকার হয়। ধর্ষণকারীর পক্ষে তাই কোনো সাফাই নয়। এদের দরকার উপযুক্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং সেইসঙ্গে যথাযথ চিকিত্সা।

৯১ সাল থেকে মোটামুটিভাবে দেশ পরিচালনা নারীদের হাতে ছিল। এবার মন্ত্রীসভায় শুরুতে স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র, শ্রম সবকিছুতেই নারীরা ছিল। কিন্তু তাতে দেশের নারী সমাজের বিড়ম্বনা কমেনি বরং বেড়েছে। কিছুদিন আগেই সংসদে মন্ত্রীর তথ্য অনুযায়ী নারী নির্যাতন, নারীর প্রতি সহিংসতা এবং নারী ধর্ষণ বেড়েছে। সংসদে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে ৫০ হাজার ৬৯৯টি নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এসময়ে ১২ হাজার ৭৫০ জন নারী ধর্ষিত হয়েছেন। এটি আগের সকল রেকর্ডকে ছাড়িয়ে

যাদের মনে হয় পোশাক ধর্ষণের কারণ তারা আদতে আত্মমর্যাদাহীন পুরুষ, এরা এমনই নিচ যে নিজের মাতৃগর্ভকেও এরা প্রতিদিন কলঙ্কিত করে, ধর্ষণের সমর্থনকারী আদতে একজন মানসিক রোগী এবং একজন অপরাধীও বটে। কারণ এদের সাফাই আরেকটা ধর্ষণের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দেশে,

মোদ্দা কথা ধর্ষণে উস্কানিদাতা, এক হাতে তালি বাজে না টাইপের কথা যারা বলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা জরুরী। কি কি আচরণ ‘যৌন হয়রানী’ তা পরিস্কার ভাবে উল্লেখ করা নতুন আইন করতে হবে। যৌন হয়রানী’র শাস্তি কি হবে তা নতুন করে আইনের আওত্তায় আনতে হবে। হেনস্থামূলক লোভাতুর দৃষ্টি; কামাতুর দৃষ্টি, কথা মন্তব্য চাকুরি ব্যবসা যে কোন স্থানে করলে তার শাস্তি কি সেসব আইনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

এবং এসব প্রতিষ্ঠিত হলেই, ধর্ষকদের সাথে সাথে এসব সাফাইকারিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা গেলেই কেবল ধর্ষণের হার কমানো সম্ভব।