এটি একটি হালকা ধরণের লেখা। ঠিক মুক্তমনার উপযুক্ত নয়। মূলত ফেইসবুকের জন্যে লেখা হয়েছিলো এটি। একজনের হৈ হল্লার চোটে মুক্তমনায় দিতে বাধ্য হলাম। হল্লাকারীর ব্যক্তির বক্তব্য হচ্ছে যে, আমি মুক্তমনাকে একেবারেই উপেক্ষা করছি। তাঁকে বোঝাতে আমি অক্ষম হয়েছি যে, আমার ইদানিংকালের লেখাগুলো অনেক হালকা প্রকৃতির লেখা। ভাবনা-চিন্তাবিহীন একটানের লেখা। এগুলো মূলত ফেইসবুককেন্দ্রিক। সে কারণেই এই জীর্ণ দশা। ওগুলোকে ফেইসবুকের মতো   ব্যক্তিগত পাতায় শোভা পাওয়ানো সম্ভবপর, মুক্তমনার মতো  মুক্ত ফোরামে  তা আনা যায় না। বিশেষ করে যেখানে, সিরিয়াস লেখার ক্ষেত্রে মুক্তমনার একটা বিশেষ সুনাম রয়েছে।

——————————————–

পেটের মধ্যে গুড়গুড় শব্দ শুনতে পেলেন অখিলচন্দ্র সেন।

ভয়ে হিম হয়ে গেলেন তিনি। ভয়ের কারণেই কিনা কে জানে, পেটের মধ্যে মোচড় দিয়ে আবারও মেঘ ডাকলো। এবারে আগের চেয়েও আরো জোরে, আরো দীর্ঘ সময় ধরে। ভয়াবহ আতংকে কপালে ঘাম জমতে শুরু করেছে তাঁর। ট্রেনের মধ্যেই যদি এই দুর্ঘটনা ঘটে যায়তাহলে কেলেংকারীর আর সীমা পরিসীমা থাকবে না। 

শ্বশুরবাড়িতে বিদায়ী খাওয়াটা একটু বেশিই হয়ে গিয়েছিলো তাঁর। শাশুড়ি এমন যত্ন আর আদর করে সবকিছু পাতে তুলে দিচ্ছিলেন যেমানা করতে পারেন নি তিনি। এমনিতেই তাঁর খাওয়াদাওয়ার প্রতি কিঞ্চিৎ আসক্তি আছে। এরকম আদরে সেই আসক্তি আর বাধ মানে নি। জামাই আবার কতদিন পরে আসবে তার ঠিক নেইকাজেই এই সুযোগটাকেই শাশুড়ি কাজে লাগিয়েছেন পুরোদমে। 

জামাইয়ের কাঁঠাল খুব পছন্দ। লোক দিয়ে বড়সড় একটা কাঁঠাল আনিয়ে রেখেছিলেন তিনি হাট থেকে। ওটাকে ভেঙে দুধের সাথে মিশিয়ে জামাইকে দিয়েছেন সকাল বেলা। অখিলবাবুও তাঁর প্রিয় ফল পেয়ে বাহ্যজ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন। উদরপুর্তি করে একেবারে গলা পর্যন্ত আসার পরেই থেমেছেন তিনি। 

এখন এই চলন্ত ট্রেনে, সকালের সেই লোভের ধকল সামলাচ্ছেন তিনি। শ্বশুরবাড়ি থেকে বের হবার সময়েই পেট ফুলে অস্বস্তিবোধ করছিলেন তিনি। ট্রেন ছাড়ার পর থেকেই পেট কামড়ানো শুরু হয়েছে। আর এখনতো রীতিমতো পেটের মধ্যে ঘূর্নিঝড় পাক খেয়ে প্রবল নিম্নচাপ হয়ে বের হয়ে আসার উপক্রম হয়েছে। 

তাঁকে স্বস্তি দিতেই যেনো হঠাৎ করে ট্রেনের গতি কমে গেলো। সামনেই আহমদপুর স্টেশন। ট্রেন ওখানে থামছে। অধীর আগ্রহে অখিলবাবু ট্রেন থামার অপেক্ষায় থাকেন। 

ট্রেন স্টেশনে পুরোপুরি থেমে দাঁড়ানোর আগেই তড়িঘড়ি করে অখিলবাবু নেমে এলেন প্লাটফর্মে। তাঁরপর একটা লোটায় পানি ভরেই তীরের মতো ছুটে গেলেন পাশের জঙ্গলের দিকে। 

কাঁঠালের অত্যাচারে পেটে কম আবর্জনা জমে নি। সেগুলোকে বের করতে বেশ খানিকটা সময়ই লাগছিলো তাঁর। ত্যাগে সময় লাগলেও, সুখের কোনো ঘাটতি ছিলো না তাঁর। আনন্দে ঘ্যোঁত ঘ্যোঁত করে বিচিত্র এক ধরণের শব্দ করছিলেন তিনি। ঠিক এরকম আনন্দময় মুহুর্তে ট্রেন ছাড়ার বেরসিক হুইসেল শুনতে পেলেন তিনি। ঘটর ঘটর করে ধাতব একটা শব্দ ভেসে এলো সাথে সাথেই। ট্রেনটা স্টেশন ছেড়ে যাচ্ছে। ত্যাগের কাজটা তখনও সম্পূর্ণ হয় নি তাঁর। এই ত্যাগ সম্পূর্ণ করতে গেলে ট্রেনটাকে ত্যাগ করতে হবে তাঁকে। সেটা যে খুব একটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না, তিনি জানেন। 

অতএব, এক হাতে লোটা আর অন্য হাতে ধুতি সামলে অখিলবাবু ছুট লাগালেন ট্রেনের দিকে। ট্রেন তখন গতি নিতে শুরু করেছে। বের হয়ে যাচ্ছে প্লাটফর্ম থেকে। জানবাজি রেখে অখিলবাবু দৌঁড়াতে লাগলেন পলাতক ট্রেনটাকে ধরার জন্য। 

আজ অখিলবাবুর দিন নয়। শ্বশুরবাড়িতে সকালটা হয়তো ছিলো, এখন নয়। জোরে ছুটতে গিয়ে পা হড়কে গেলো তাঁর। ধড়াম করে প্লাটফর্মের উপরে পড়লেন তিনি। লোটা ছুটে গেলো হাত থেকে। আছাড়ের ধাক্কায় তাঁর ধুতিও বেসামাল। ট্রেন থেকে জানালা দিয়ে মাথা বের করে লোকে মজা দেখছে। প্লাটফর্মেও ভিড় জমে গিয়েছে। বত্রিশ পাটি দাঁত বের হয়ে গিয়েছে সবার। এমন মজাদার দৃশ্য সহজে মেলে না। মানুষের দুর্দশার দেখার আনন্দ অপরিসীম। সবাই সেই আনন্দই উপভোগ করছে দন্ত বিকশিত করে। 

তাঁর এই চরম বিব্রতকর এবং লজ্জাজনক ঘটনাকে মেনে নিতে পারেন নি অখিলচন্দ্র সেন। প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত এবং ক্ষুব্ধ হন তিনি। এর একটা বিহিত করতেই হবে। মানসম্মান বলে কথা। প্রতিকার চেয়ে রেল কর্তৃপক্ষের কাছে ভুলভাল ইংরেজিতে হাস্যকর একটা চিঠি লিখে অভিযোগনামা ঠুকে দিলেন তিনি। ভুলে ভরা সেই চিঠিটি এরকমঃ

I am arrive by passenger train Ahmedpur station and my belly is too much swelling with jackfruit. I am therefore went to privy. Just I doing the nuisance that guard making whistle blow for train to go off and I am running with ‘lotaah’ in one hand and ‘dhoti’ in the next when I am fall over and expose all my shocking to man and female women on plateform. I am got leaved at Ahmedpur station. 

This too much bad, if passenger goes to make dung that dam guard not wait train five minutes for him. I am therefore pray your honour to make big fine on that guard for public sake. Otherwise I am making big report to papers.” 

এই ঘটনাটি ঘটেছিলো ১৯০৯ সালে। অখিলচন্দ্র সেনের সেই ভুল ইংরেজিতে লেখা কৌতুককর অভিযোগের চিঠিটা আজ ইতিহাসে পরিণত হয়ে গিয়েছে। এটি এখন স্বযত্নে রক্ষিত রয়েছে দিল্লির দ্য ন্যাশনাল রেলওয়ে মিউজিয়ামে। কী কারণে এই চিঠি ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলো, বলছি সেটা। 

অখিলচন্দ্র সেনের এই চিঠি পাবার পরেই টনক নড়ে রেল কর্তৃপক্ষের। পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে রেল চালু হলেওতৃতীয় শ্রেণীর কামরাগুলোতে কোনো টয়লেট ছিলো না। বিভিন্ন স্টেশনে ট্রেন একটু বেশি সময় ধরে থামতো। এই সময়ে যাত্রীরা স্টেশনের পাশের বনেজঙ্গলে গিয়ে প্রাকৃতিক কর্মটা সেরে নিতেন। এর পরেই রেলের সমস্ত কামরায় টয়লেট সংযোজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। 

উপমহাদেশে রেলের প্রতিটা কামরায় আজ যে আমরা টয়লেটে দেখিতা এই অর্ধশিক্ষিত বাঙালি বাবুটি আর জাতীয় ফলের যৌথ উদ্যোগের কারণেই চালু হয়েছিলো। 

জয়তু বাঙালিজয়তু কাঁঠাল বলা ছাড়া আর কোনো গতি দেখছি না আমি।